‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’ ও ‘প্রথম দিনের সূর্য’ : পুনর্বিচার

রবীন্দ্রনাথের প্রভাতসংগীত  কাব্যটির (প্রকাশকাল বৈশাখ ১২৯০) দীর্ঘ 888sport app download apk ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গে’ ‘আজি এ প্রভাতে রবির কর’ – এই কাব্যপঙক্তিতে রবি তথা সূর্যকে সংবর্ধিত করার যে উচ্ছ্বসিত গীতময়তা তা মিলে যায় জীবনের শেষ কাব্য শেষ লেখার ‘প্রথম দিনের সূর্য’ 888sport app download apkর সূর্যের সঙ্গে। তবে শেষোক্ত 888sport app download apkটি অতিসংহত, সংবৃত, মন্ত্রবাণীর মতো। এই দুই কাব্যের 888sport app download apkদুটি মিলিয়ে পড়লে আমরা রবীন্দ্রকাব্যাদর্শের একটা বৃত্তায়ন রচনার লেখচিত্র পাই – যা আংটির মতো গোল – শুরু ও শেষ একই, যে-কোনো জায়গায় যেন শুরু ও শেষ হতে পারে। সারাজীবনের অভিজ্ঞতার জটিল সংশ্লেষ, উপনিষদ-ঈশ্বরভাবনা, পাশ্চাত্য দর্শনচিন্তার অভিঘাত, সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক বাস্তবতায় গড়ে-ওঠা তাঁর চৈতন্য শেষ পর্যন্ত নানা বাঁক ঘুরে, পরিবর্তন-রূপান্তরের মধ্য দিয়ে এই সূর্য-প্রতিমার একটি অপরিবর্তনীয় সূত্র বেঁধে দিয়েছিল। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাঁর বদলে-যাওয়া কালচেতনা – ক্ষণকালের উদ্ভাস আর নিত্য পরিবর্তনশীল – ‘সবকিছু চলিয়াছে নিরন্তর পরিবর্তনবেগে,/ সেই তো কালের ধর্ম।’ (শেষ লেখা, ২নং 888sport app download apk) অপরিবর্তনীয় সূত্রটি তাই শেষ পর্যন্ত অবিকল ছিল না।

‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’ রবীন্দ্রনাথের আত্মজাগৃতি ও চৈতন্য বিস্তারের আরম্ভকাল। 888sport app download apkটি লেখার সময় তিনি ছিলেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে জাদুঘরের কাছে দশ নম্বর সদর স্ট্রিটের এক বাসায়। সেখানে একদিন ‘এক অভূতপূর্ব আনন্দ-আবেগ’ তাঁর চেতনায় নতুন সুর সঞ্চার করে দেয়। তিরিশ বছর পরে লিখিত জীবন888sport sign up bonusতে তাঁর ভাষ্যে সেই সুরের কথা আছে –

সদর স্ট্রিটের রাস্তটা যেখানে গিয়া শেষ হইয়াছে সেইখানে বোধ করি ফ্রী-স্কুলের বাগানের গাছ দেখা যায়, একদিন সকালে বারান্দায় দাঁড়াইয়া আমি সেইদিকে চাহিলাম। তখন সেই গাছগাছালির পত্রান্তরাল হইতে যেন একটা পর্দা সরিয়ে গেল। দেখিলাম, একটি অপরূপ মহিমায় বিশ্বসংসার সমাচ্ছন্ন, আনন্দে এবং সৌন্দর্যে সর্বত্রই তরঙ্গিত। আমার হৃদয়ে স্তরে স্তরে যে-একটা বিষাদের আচ্ছাদন ছিল তাহা এক নিমিষেই ভেদ করিয়া আমার সমস্ত ভিতরটাতে বিশ্বের আলোক একেবারে বিচ্ছুরিত হইয়া পড়িল। সেই দিন ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’ 888sport app download apkটি নির্ঝরের মতোই যেন উৎসারিত হইয়া বহিয়া চলিল। লেখা শেষ হইয়া গেল, কিন্তু জগতের সেই আনন্দরূপের উপর তখনো যবনিকা পড়িয়া গেল না। এমনই হইল আমার কাছে তখন কেহই এবং কিছুই অপ্রিয় রহিল না।

(জীবন888sport sign up bonus, ১৩৫৪, পৃ ২৮০)

এই আকস্মিক চৈতন্য-উন্মীলন এবং সৌন্দর্য-আনন্দ লাভের দিব্যদৃষ্টি তা রোমান্টিক 888sport app download apkর epiphany বা দৈবমুহূর্তের মতোই একটি ব্যাপার। ঋগ্বেদের ঋষিরাও এভাবে প্রকৃতি দর্শনের আকস্মিক উদ্ভাসনে শ্লোকমন্ত্র উচ্চারণ করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর কাব্যযাত্রার প্রারম্ভ পর্যায়ে উচ্ছ্বাস আর ধ্বনিতরঙ্গিত দিব্যমুহূর্তের আবির্ভাব দেখতে পান সদর স্ট্রিটের বারান্দায় দাঁড়িয়ে প্রভাতে। এর আগে কবিকাহিনি, শৈশবসংগীত বা সন্ধ্যাসংগীত ইত্যাকার অপরিণত কাব্যের আধেয় ছিল প্রকৃতি-বিচ্ছেদ, যৌবনবেদনা, একাকিত্ব, আবার প্রকৃতির সঙ্গে মিলন – এসব ভাববুদ্বুদ। ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গে’ ঘটে তাঁর আত্মজাগরণ ও ছন্দিত উচ্চারণ – একইসঙ্গে। এরকম এপিফ্যানির আরো নমুনা পাব পরবর্তীকালের পত্রপুট কাব্যের প্রথম 888sport app download apkয়। তখন কবি প্রাজ্ঞ ও স্থিতধী, তবু বিশ্বলোক নিয়ে বিস্ময়াপ্লুত :

দাঁড়িয়ে রইলেম স্থির হয়ে।

এস্রাজটা নিঃশব্দ পড়ে রইল মাটিতে,

পৃথিবী কেমন উন্মুখ হয়ে আছে

তার সকল কথা থামিয়ে দিয়ে।

 

মন্ত্ররচনার যুগে জন্ম হয় নি,

মন্দ্রিত হয়ে উঠল না মন্ত্র

উদাত্তে অনুদাত্তে

এমন সময় পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি

সামনে পূর্ণচন্দ্র,

বন্ধুর অকস্মাৎ হাসির মতো।

…অপূর্ব সুর যেদিন বেজেছিল

ঠিক সেইদিন আমি ছিলেম জগতে,

বলতে পেরেছিলেম –

আশ্চর্য।

(পত্রপুট, ১নং)

এখানে চাঁদ রূপকল্পটি ব্যবহৃত হলো। কারণ পত্রপুটে কবি অনেক বেশি পরিণত ও আত্মজৈবনিক। চাঁদ তো অবচেতন মনেরই দ্যোতক। কবি আত্মজৈবনিকতার বীণায় পূর্ণচন্দ্রের হাস্যমুখ দেখে সুরসংগীত সৃষ্টির আদিমুহূর্তে লগ্ন হয়ে যান। কিন্তু শেষ লেখায় কবি চাঁদ নয় – সূর্যস্তব করছেন, যখন ‘মৃত্যুর নিপুণ 888sport live chat বিকীর্ণ আঁধারের’ মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছেন। তবে কেন ও কোন তাৎপর্যে সূর্যের কথা এলো? না-কি এ আর ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গে’র সূর্যস্তব নয়, অন্য অর্থ নির্দেশক? দুয়ের মধ্যে কোনোরকম যোগসূত্র আছে কি?

এই 888sport app download apkটি প্রকাশের পরপরই অগ্রহায়ণ ১২৮৯ বঙ্গাব্দে অক্ষয়চন্দ্র চৌধুরীর ‘অভিমানিনী নির্ঝরিণী’ 888sport app download apkটি প্রকাশিত হয়। প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় রবীন্দ্রজীবনী ও রবীন্দ্র888sport live football প্রবেশক গ্রন্থের প্রথম খণ্ডে যে-তথ্য দেন তাতে ধারণা জন্মায়, অক্ষয়চন্দ্র চৌধুরী রবীন্দ্র888sport app download apkটি পড়ে আবেগাপ্লুত হয়ে নিজের 888sport app download apkটি লেখেন। প্রভাতসংগীতের প্রথম সমালোচক ভূদেব মুখোপাধ্যায় রবীন্দ্রনাথকে সম্বোধন করেন ‘আর্যকবি’ নামে। সূর্য-উপাসক বৈদিক আর্যদের অনুরূপ বন্দনা 888sport app download apkটিতে খুঁজে পান। (দ্রষ্টব্য, জীবন888sport sign up bonus, গ্রন্থপরিচয় অংশ, ২৫৭-৬০) ঊনবিংশ শতাব্দীর সমাজচিন্তক ও জাতীয় ঐতিহ্যের একজন প্রবক্তা হিসেবে ভূদেবের মধ্যে আর্য ঐতিহ্যের প্রণোদনা ওই অভিধার নির্ণায়ক ছিল। রবীন্দ্রনাথও প্রাচীন উপনিষদে নিত্য সত্য সন্ধান করেছেন, ১৯০১ সালে লেখা নৈবেদ্যের 888sport app download apkয় তার স্বাক্ষর আছে। কিন্তু প্রথম মহাযুদ্ধ থেকে তিনি ক্রমশ পরিবর্তমান, শেষ লেখায় তাই দেখি উপনিষদের নান্দনিক অংশকে নিজ কাব্যধ্বনির সঙ্গে মিলিয়েছেন। নিত্যতার আদর্শ অনেকখানি খসে পড়েছে। সূর্যবন্দনার পরিবর্তে সূর্যকে ব্যবহার করেছেন অস্তিত্ব ও সত্তার প্রতীকরূপে।

 

দুই

এদেশে উপনিবেশ বাস্তবতায় জন্মপ্রাপ্ত ও বর্ধিত শিক্ষিত শ্রেণির প্রায় সকল কবি-888sport live footballিকেরই ছিল জীবন নিয়ে সীমাবদ্ধতার বোধ, দেশজ মূল ঐতিহ্য-শিকড় থেকে বিচ্ছিন্নতার দ্বন্দ্ব এবং চিত্তবিকাশের নানা অন্তরায়ে সংকুচিত মনমানসিকতা। রবীন্দ্রনাথও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না, তদুপরি তাঁর ছিল সনাতন হিন্দু সমাজ-বিচ্ছিন্নতা, আপন মনোদৈহিক প্রেমযৌনতা-সৌন্দর্যের জন্যে আকুলতা, ছিল স্বাধিকারবোধ ও আত্মবিস্তারের আকাঙ্ক্ষা। তাঁর সংবেদনশীল মন এসব থেকে নিষ্ক্রমণের পথ খুঁজছিল। সেই পথটিই হলো ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গে’র উন্মুখর গতিময়তায় নিজেকে চলচঞ্চল করে তোলা। কেবলই কল্পিত মায়ায় রচিত মনোদেশের ব্যথাবিবশ-চেতনা। চিত্তবিকাশ ঘটাতে পারে না, তার জন্যে প্রয়োজন বাইরের বিশ্বলোকের সংস্পর্শ, তার সঙ্গে দ্বান্দ্বিক বোঝাপড়া, ‘আঘাত-সংঘাত মাঝে’ এসে দাঁড়ানো। ‘নির্ঝর’ এখানে কবির মনোদেশ যা অলীক স্বরচিত স্বপ্নবিভোর ছিল। ভাবাকুলতায় ছিল আচ্ছন্ন। প্রভাতের সূর্যকিরণ স্পর্শে শুধু নয়, পাখির গানেও স্বপ্নভঙ্গ হলো। এই ‘প্রভাতবিহগের’ সুর অতি দূর আকাশ থেকে ভেসে এলো। রবীন্দ্র-ভাবাদর্শে আকাশের তাৎপর্য বহুতর। আকাশ অর্থে চিত্তাকাশ, ঘটাকাশ ছাড়াও অসীমতার দ্যোতনা আনে। সীমাবদ্ধ বাস্তবতার বিপরীত দ্যোতক তাই আকাশ। আর রইল গান – ‘কী গান গাইল রে।’ – বাংলা 888sport app download apkর জগৎ তো অধিক ধ্বনিময় – চিত্রের চেয়ে। রবীন্দ্রনাথও ছবি ও গান কাব্যের আগে 888sport app download apkয় ধ্বনি-চিত্রের সার্থক যুগলবন্দিতা রচনা করতে পারেননি। জীবনানন্দ বাংলা 888sport app download apkর ধ্বনিময়তাকে চিত্রময়তায় রূপান্তর করে দিলেন সার্থকভাবে। ধ্বনিময়তায় 888sport app download apk ব্যক্তিকবির পারসোনার স্বরকে যেমন ধারণ করতে পারে, তেমনি 888sport app download apkর ছন্দকাঠামোর দুর্বলতাকে দূর করতে পারে। চর্যাপদ, মধ্যযুগের 888sport app download apk এজন্যেই সুরপ্রধান, যাতে ছন্দের মাত্রার সমতা না থাকলেও সুরে তা ভরিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গে’র মাত্রা অসম নয় বিচিত্র, স্তবক গঠনেও বিভিন্ন ছাঁদ ও কাঠামো রয়েছে। তাই বলা চলে ‘প্রভাতবিহগের’ সুর অন্য কোনো ইশারার দ্যোতক।  ‘অতিদূর দূর’ শব্দদুটিও রাবীন্দ্রিক অসীমতার সূচক। এই অসীমতা হচ্ছে আত্মসম্প্রসারণশীলতা – বদ্ধতা ভেঙে সীমাকে বাড়িয়ে তোলা। এটি রবীন্দ্রনাথের ভাবদর্শনের মূল সূত্র। সুর তার সৃষ্টির পাথেয়।

শব্দদ্বৈতের প্রয়োগ ঘটিয়ে রবি সাংগীতিক আকুলতা রচনা করেন – ‘আঁধার গুহায় ভ্রমিয়া ভ্রমিয়া/ গভীর গুহায় নামিয়া নামিয়া/ আকুল হইয়া কাঁদিয়া কাঁদিয়া/ ছুঁয়েছে আমার প্রাণ।’ এখানে গুহা হচ্ছে কবির মনোদেশ। ক্রিয়াপদের বারংবার প্রয়োগ ঘটিয়ে সুরের সক্রিয়তা বোঝানো হচ্ছে, একইসঙ্গে কবির প্রাণেরও গতিশীলতা। পাখির তান প্রাণ ছুঁয়ে গেল – এরকম ভাববোধি রবীন্দ্র888sport app download apkয় বিপুল, ডিকশনকে নতুন ধারায় নিয়ে আসেন তিনি, যেখানে কল্পনাকুশল চিত্তের নির্ভার ভাষা তৈরি হয় এবং 888sport app download apkকে ধ্বনিকেন্দ্রিক করে তোলে। প্রভাতের ‘পথহারা রবিকর’ আর কোনো আশ্রয় না পেয়ে ‘আমার প্রাণের ’পর’ আলয় গড়ে তুলেছে। এ-ভাবনায় কবির একদিকে আত্মজাগরণ আরেক দিকে অহংবোধের প্রকাশ ঘটেছে। প্রভাত রবিকর শুধু রবীন্দ্রনাথকেই স্পর্শ করছে। যেমনটি দেখি সোনার তরী কাব্যের ‘নিরুদ্দেশ’ 888sport app download apkয় তরিচালিকা শুধু কবিকেই তরিতে ঠাঁই দেয় – সকল লোকের মাঝ থেকে। এ হচ্ছে নিজেই নিজের উদ্বোধন ঘটানোর পরিকল্প। নিজের মনোগুহার আঁধার সলিলে ‘একটি কণকরেখা’ হয়ে সূর্যকিরণ পতিত হলো, কবির আবেগ অন্ধ কারাগার-ঘোর ভেঙে ‘জাগিয়া উঠিছে প্রাণ’।

ত্রিপদী ও সমপদীর সমাহারে দীর্ঘ 888sport app download apkটি ঢেউয়ের মতো ভাসছে, কখনো তীরে আছড়ে পড়ছে। যে-তীরটি হলো কবির মনোগুহা। যেখানে তিনি ‘আপনার মাঝে আপনি’ বাঁধা রয়েছেন। হতাশামগ্ন আত্মবন্ধনজর্জরিত কবির এতদিন ছিল ‘আকাশেতে নাই আলো,/ পড়িয়া মেঘের ছায়া জল হল কালো।’ – মোহ, বদ্ধতার জন্যেই আকাশে তথা চেতনায় এতদিন আলো দেখা দেয়নি। আজকে যে জাগরণ ও গতিশীলতা এলো তা কিন্তু নিজের মনোগুহা থেকে নয়, তা এলো বাইরের সূর্যকিরণ থেকে, বিশ্বলোক থেকে। এখনো রবীন্দ্রনাথ অন্তরের আলোর দিশা পাননি, যা পেয়েছেন শেষ কাব্যচতুষ্টয়ে। সূর্যও নয় এখানে জ্যোতিপুঞ্জ, তেজোময়তা, এই সূর্য নিছকই আলোর উৎস, সৃষ্টির প্রাণদাতা। এ-সূত্রে আরেকটি দ্যোতকের 888sport sign up bonus মনে আসে। সেটি হলো মাতৃগর্ভের অন্ধকারে শিশুর জন্মলাভের ঘটনা। কবিও সৃষ্টিপ্রকৃতির অংশ, সূর্যকিরণে কারার আগল ভেদ করে নতুন করে জন্মাতে চাইছেন। আত্মবিবর থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে ‘জন্ম’ হচ্ছে ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গে’র প্রতিরূপক (allegory) একে reberth archetype-ও বলা যেতে পারে। জৈবিক জন্মের পরে এ হচ্ছে সৃষ্টিশীল সত্তারূপে পুনর্জন্ম। কবির নিছক ভাবাকুলতা থেকে প্রাণলোকের দিকে যাত্রা। আলোকের দিকে অভিগমন।

চার নম্বর স্তবকটি উদ্ভাস, কম্পন, উল্লম্ফন, তরঙ্গায়নের ধ্বনি-প্রতিধ্বনি আর চিত্রলতার চলচ্ছবি – ‘মাতিয়া যখন উঠিছে পরান/ কিসের আঁধার, কিসের পাষাণ।/ উথলি যখন উঠিছে বাসনা,/ জগতে তখন কিসের ডর।’ বেগোদ্দামে কবি এখন শুধু মনোগুহার কারা ভেঙে বেরই হননি, নির্ভয় ও নির্ভারও হয়েছেন। আর জগতের সঙ্গে ঘটছে নবপরিচয়। ‘জগৎ দেখিতে হইব বাহির/ আজিকে করেছি মনে,/ দেখিব না আর নিজেরি স্বপন,/ বসিয়া ঘরের কোণে।’ আত্মনাভিকেন্দ্র থেকে মুখ ফিরিয়ে জগৎ দেখার এই বাসনাই রবীন্দ্রনাথের ডিজায়ার, যা তাঁকে রোমান্টিকতার কল্পস্বর্গে পথ হারাতে দেয়নি। জগতের বিপুল প্রাণপ্রবাহ আর প্রাণী-জৈব-অজৈব – সকলের সঙ্গে তাঁর আত্মীয়তার বন্ধন, মানবমৈত্রী, করুণা ধারায় অভিষিক্ত তিনি। আমাদের মনে আসে ‘জীবন যখন শুকায়ে যায়,/ করুণা-ধারায় এসো।’ – এই গান। রবীন্দ্র888sport app download apk-গানের প্রেরণাদাত্রীও (the spirit of muse) করুণাময়ী। এবং আরেক মাত্রায় রহস্যময়ী। এসবই অবশ্য পরবর্তী পর্যায়ের ভাবনা।

তিন

বিপুল প্রাণাবেগে কবি বিশ্ববিস্তারী, মহাসাগরের কলতানে নিমজ্জনের আকাঙ্ক্ষায় উদ্বেলিত। কেন এই প্রাণাবেগ? সীমাবদ্ধতার কারাগার ভেঙে দিগ্বিদিকে বিস্তারের বাসনা জেগেছে ওই পাখির গানে, রবির কিরণস্পর্শে। ‘এসেছে রবির কর’ – বাক্যটি দ্ব্যর্থক। একদিকে এই রবি হচ্ছে সূর্য – প্রভাতসূর্য, আত্মজাগৃতির দিশাময়তা, আরেক দিকে ‘রবি’ হচ্ছে স্বয়ং কবিসত্তা। কারাগারবন্দি বাস্তব জীবনের রুদ্ধ অস্তিত্বে সত্তার জাগরণ – যে-সত্তা অনুভূমি ও দিগন্ত – দুয়ের মধ্যেই আত্মবিস্তারী। ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’ তাই নিশ্চল অস্তিত্বের জন্ম চলচঞ্চল চরৈবেতি। সত্তার মধ্যে উত্তরণের এরকম আনন্দিত, সর্বব্যাপী বিস্তারকামী বোধের জন্যেই রবীন্দ্রনাথ জগৎযুক্ত আনন্দবাদী কবি।

সত্তার এ-ধরনের উদ্বোধনের সংহত সমাপ্তি ঘটেছে শেষ লেখা কাব্যের ‘প্রথম দিনের সূর্য’ 888sport app download apkয়।

আলোচনার সুবিধার জন্যে পুরো 888sport app download apkটি উদ্ধৃত করা যাক :

প্রথম দিনের সূর্য

প্রশ্ন করেছিল

সত্তার নতুন আবির্ভাবে –

কে তুমি।

মেলেনি উত্তর।

বৎসর বৎসর চলে গেল,

দিবসের শেষ সূর্য

শেষ প্রশ্ন জারিন পশ্চিমসাগরতীরে,

নিস্তব্ধ সন্ধ্যায় –

কে তুমি।

পেল না উত্তর

এখানে দুটি সূর্যের রূপকল্প আছে, যা ভিন্নার্থক। চিরপ্রবাহী অস্তিত্ব – যা অবিরত রূপান্তরের মধ্য দিয়ে সত্তার জন্ম দেয়। কবি যেদিন প্রথম চৈতন্য ও ছন্দময় 888sport app download apk আবিষ্কার করলেন তখন অস্তিত্ব বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে সত্তার পরিচয় জানতে চাইছে। কিন্তু সর্বদা রূপান্তরশীল সত্তাকে স্থির কোনো পরিচয়ে চিহ্নিত করা যায় না। এটি নানারূপী। জীবনের শেষপ্রান্তে এসে এই সত্তা বিপুলকায় হয়, হিরণ্ময় আত্মতার রূপ পায়। ছোট ছোট বাক্যে মন্ত্রবাণীর মতো কবি উচ্চারণ করছেন তাঁর অভিজ্ঞতাধৃত জীবনপুঞ্জের শেষ পরিণামকে। এখন সত্তা হয়ে উঠেছে সূর্যপ্রতিম এবং প্রশ্ন করে জীবনে অস্তিত্বের রূপটি কী? বহু সত্তা যে-অস্তিত্বকে ঘিরে পল্লবিত, রূপান্তরিত ও পরিণত হলো সেই অস্তিত্ব যা ছিল ‘প্রথম দিনের সূর্য’ তাকে সত্তারূপী দিবসের শেষ সূর্য জীবনের অসত্মায়মান মুহূর্তে অস্তিত্বকে বুঝে নিতে চাইছে। অস্তিত্বের সর্বোচ্চ মাত্রা এতদিন জীবন ও সৃষ্টিকে গড়েছে। এখন এই শক্তিময়, প্রাণময় অস্তিত্বের স্বরূপ জানাবোঝার সংহত উচ্চারণে 888sport app download apkটি নিটোল রূপ নিয়েছে। কিন্তু অস্তিত্বকেও বোঝা গেল না ‘কে তুমি।/ পেল না উত্তর।’ এক উত্তরবিহীন নিরন্তর শূন্যতাই যেন কবির প্রাপ্য হলো। দীর্ঘ জীবনে প্রাণময়দেহের বহু বৈচিত্র্যময় প্রকাশলীলা আর পরমসত্তায় আশ্বস্ত রবীন্দ্রনাথ তবে কি শেষে এসে অজ্ঞেয়বাদে চলে গেলেন? অস্তিত্ব ও সত্তা – কোনোটাকেই আমরা শেষপর্যন্ত জানতে পারি না। যে-সূর্যকিরণে কবি ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গে’ ছিলেন বিশ্বপিপাসু, আতীব্র জীবনরসপানে উন্মুখ, আজ জীবনের উপান্তে এসে তিনি কী হারিয়ে ফেললেন সেসব পরমতা, জীবনবীক্ষণ, হৃদয়াত্মা-উৎসারী বাক্য ছন্দসুর? প্রথম দিনের সূর্য আর শেষ দিবসের সূর্য – এখন অস্তিত্ব ও সত্তার পরম্পরাও যেন আর নেই। কবি বিমূঢ়, উত্তরবিহীন।

‘প্রথম দিনের সূর্য’ নিয়ে সমালোচনা 888sport live footballে অনেক মত ও মতান্তর রয়েছে, দ্রষ্টব্য অমরেন্দ্র চক্রবর্তী-সম্পাদিত 888sport app download apk-পরিচয় গ্রন্থটি। আমরা খুব সহজভাবে দুই সূর্যের নামকরণ করতে চেয়েছি ও 888sport app download apkর অর্থ অনুধাবন করেছি। অস্তিত্ব ও সত্তার প্রজ্ঞান শুধু অর্জিত হতে পারে মাত্র, কিন্তু এদের স্বরূপ বোঝা যায় না। এ যেন আধুনিক দার্শনিক সার্ত্রের মতো জিজ্ঞাসা, বিয়িং অ্যান্ড নাথিংনেস – সত্তা ও শূন্যতা ব্যাখ্যা করে যিনি দর্শনশাস্ত্রে নতুন দিক উন্মোচন করেছেন। রবীন্দ্রনাথ অনুরূপ দার্শনিক প্রশ্ন তোলেননি বটে, তবে তাঁর অন্তিমে উচ্চারিত এই দুই সূর্য দার্শনিকতারই প্রতীকায়ন, যেমন গীতাঞ্জলিতে অস্তিত্বের বিরহের দর্শন খুঁজে পেয়েছেন জগন্নাথ চক্রবর্তী, তাঁর গীতাঞ্জলি : অস্তিত্ববিরহ গ্রন্থে – সার্ত্রের তত্ত্বের আলোকে।

 

সহায়ক গ্রন্থপঞ্জি

১.   রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রবীন্দ্র-রচনাবলী, প্রথম খণ্ড, বিশ্বভারতী, ১৩৪৬

২.   রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রবীন্দ্র-রচনাবলী, বিংশ খণ্ড, বিশ্বভারতী, ১৩৫২

৩.  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রবীন্দ্র-রচনাবলী, ষড়বিংশ খণ্ড, বিশ্বভারতী, ১৩৫৫

৪.   রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবন888sport sign up bonus, বিশ্বভারতী, ১৩৫৪

৫. প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, রবীন্দ্রজীবনী ও রবীন্দ্র888sport live football প্রবেশক, প্রথম খণ্ড, বিশ্বভারতী, ১৩৪০

৬.  অমরেন্দ্র চক্রবর্তী (সম্পাদক), 888sport app download apk-পরিচয়, দে’জ পাবলিকেশনস্, কলকাতা, ১৯৮১

৭.   জগন্নাথ চক্রবর্তী, গীতাঞ্জলি : অস্তিত্ববিরহ, আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা, ১৯৮৮

৮. Jean Paul Sartre, Being and Nothingness, Editions Gilmarrd, 1943