888sport app একটি নির্মীয়মাণ মহানগর। এখানে বিরামহীন সুসজ্জিত দালান দেখার সুখ পাওয়া যায় না। বিপণিবিতানই হোক বা আবাসিক এলাকাই হোক, দালান কোথাও নিরবচ্ছিন্ন নয়। গড়া-গাঁথা চলছেই। লোহার রড, ইট-সিমেন্ট-পাথর সবই নগ্ন। সেই সঙ্গে বিচিত্র কর্কশ শব্দ। চোখ-কান খোলা রেখে এখানে খুব সাবধানে চলতে হয়। কিন্তু চোখ-কান অবিশ্রাম খোলা থাকলে স্নায়ু বিবশ হয়ে পড়ে। বৈদ্যুতিক সংযোগের খুঁটির সঙ্গে ডিশ সংযোগের তারের জট, পাক, গুটলি একদিকে, অন্যদিকে মানুষের ও যানবাহনের জট; সবদিকে দৃষ্টির পীড়ন। এই কোলাহল ও জট-পাকানো তারের মধ্যেও কি ছন্দ আছে? ছন্দ আছে কি নেই – এ-প্রশ্নই হয়তো অবান্তর। তবে বাসন্তবতা হচ্ছে, এর মধ্যে আমরা বেঁচে আছি। বেঁচে থাকা মানে অসিন্তত্ব টিকিয়ে রাখার ভারসাম্য তৈরি করা। যখন আমাদের মাথার ওপর খোলা আকাশ ছিল, তখন আকাশের দিকে তাকাইনি; যখন দালানে দালানে আকাশ ঢেকে গেল, তখন বলতে শুরু করলাম আকাশ দেখা যায় না কেন। কেননা, তখনই আমরা বুঝলাম, আকাশ মানে আকাশ নয়, আকাশ মানে আলো। আলো না থাকলে তো বাঁচা যায় না। একটুখানি আলো আর রোদের জন্য আমরা আকুল হলাম। একটুখানি আলো এলে সে-আলোর পাশের ছায়াটুকুও বেশি করে চোখে পড়ে। 888sport live chatী আনিসুজ্জামান সেই নগরের জাল-জালিকার গ্রন্থি, নির্মীয়মাণ দালানের রড-সিমেন্টের বিন্যাসের দিকে তাকিয়ে 888sport live chatের রসদ সংগ্রহ করেছেন। ছাপচিত্রের 888sport live chatী বলে টেক্সচারের বিন্যাসে তাঁর বোধ বিশেষ মুখরতা পেয়েছে। কাঠ ঠুকে ঠুকে আর চেঁছে-ছেনে যে রেণুময়, বিন্দুময় স্পেস তিনি 888sport live chatায়িত করেছেন, তাতে প্রমাণিত হয় নির্মীয়মাণতাও প্রকৃতির ধর্ম। বৃক্ষ যেমন প্রতিদিন বদলায়, তেমনি বদলায় দালানের রূপ।
অনুভব নিরাকার; তা প্রকাশ পায় রূপে। অর্থাৎ আকারে। আকার সীমায়িত, নিরাকার অসীম। অসীমে আকার সৃষ্টি করা 888sport live chatের সারকথা। নির্মীয়মাণ মহানগর আমাদের আকার দেখার মহোৎসবের আয়োজন করে রেখেছে। জীবন আমাদের বিচিত্র জ্যামিতির মধ্যে বাঁধা। আমরা বুঝি আর না-ই বুঝি, আমাদের চোখ এখন স্থাপত্যের গড়নের মধ্যে কেবলই জ্যামিতি পাঠ করে। আগে এই স্থাপত্যিক বা আর্কিটেকটনিক অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ ছিল না আমাদের জীবন। গ্রামপ্রধান 888sport appsের মানুষের চোখ এখন চৌকোণ আকাশ দেখে, অনুভব করে ত্রিকোণ রোদের উষ্ণতা। আমাদের নাগরিক যাপন যত দীর্ঘ হচ্ছে, ততই বুঝতে হচ্ছে স্পেসের গুরুত্ব। ইঞ্চি-সেন্টিমিটার হিসাব করে খুঁজতে হচ্ছে জীবনের সুখের পরিসর।
আমাদের সময়ের এক মেধাবী ছাপচিত্রী আনিসুজ্জামানের কাজের বিষয়ে নিবন্ধ রচনা করতে গিয়ে প্রাসঙ্গিক কথা ব্যাপ্ত করে বলার বিশেষ তাগিদ অনুভব করেছি। যদি থাম, দেয়াল, জানালা, দরজা, সিঁড়ি, ছাদের নগ্ন প্রকাশ পাঠের সুযোগ এ-888sport live chatী না পেতেন, তাহলে কখনো তাঁর ছবিতে এসব কম্পোজিশন আমরা দেখতে পেতাম না। সম্প্রতি এজ গ্যালারিতে আনিস এক বিশাল প্রদর্শনীর আয়োজনে তাঁর পনেরো বছরের কাজ উপস্থাপন করেছেন। রূপের সংগঠন আর এর অন্তর্গত বিন্যাস ও ছন্দই দেখাতে চেয়েছেন এই 888sport live chatী। শুদ্ধ নিরপেক্ষ জ্যামিতি নয়, আনিসের কম্পোজিশন এই নগরের কথাই বলে। জ্যামিতিতে সিধা হতে গিয়ে ইউক্লিডের মাথা এখানে ডিশ টিভির কানেকশনের তারে জড়িয়ে পড়েছে। মহীয়ান দালানের পাশে তারের কু-লী কী যে কুৎসিত আচরণ করে! তবু তা আনিসের কম্পোজিশনের বদৌলতে নয়নাভিরাম হয়ে যায়।
আনিসের কাজ স্থাপত্যিক আকারের মহাপ্রদর্শনী। আকারের ভেতর দিয়ে আকার এবং তারপরও এ-888sport live chatী আরো ত্রিকোণ-চৌকোণ অজস্র আলো-অন্ধকারের প্রথম চোখ-চেনা বিষয় পাঠ করাতে চেয়েছেন, তারপর আধো-চেনা রূপ দেখিয়েছেন এবং সবশেষে অচেনাকে জানান দিতে চেয়েছেন। আনিসের ছবি বাসন্তবধর্মী। আচ্ছা, সব ছবিই কি বাসন্তবধর্মী হতে বাধ্য নয়! মানুষ তো তার বাসন্তবিক বেঁচে থাকার বাইরে যেতে পারে না। জীবন যখন বিবিধ জ্যামিতিক পরিসরে বাস করে, অভিজ্ঞতা অর্জন করে, তখন তা-ই তো তার বাসন্তবতার প্রধান অনুষঙ্গ। আনিস এ-অভিজ্ঞতাই 888sport live chatরূপে প্রকাশ করেছেন। যে-888sport live chatীর কাজ দর্শককে নতুন স্পেসে নিয়ে যেতে পারে না, তাকে আমরা সৃজনশীল বলতে পারি না। আনিস সৃজনশীল। তিনি আমাদের চোখকে নতুন অভিজ্ঞতা দিয়েছেন। আমরা পরিচিত লোক থেকে এক ভিন্ন লোকের স্বাদ পেয়েছি তাঁর কাজে।
কাঠের সঙ্গে আনিসের সংলাপ অনুচ্চস্বরে নিবিড়। প্রচুর কথা তিনি বলেছেন, কিন্তু মৃদুস্বরে। জ্যামিতির রূঢ় রূপটার দাপট নাকচ হয়ে গেছে তাঁর কাজে কাঠের সুরেলা মাহাত্ম্যের কারণে। চেনা পৃথিবীতে হাঁটতে হাঁটতে দৃষ্টিশেষে বস্ত্তনিরপেক্ষ বিন্দুরাশির মধ্যে সাঁতার দিয়ে নির্ভার হয়ে পড়ে। এটাই আনিসের শৈল্পিক খেলা। এ-প্রসঙ্গে একটা ছবির কথা সবিস্তারে বলা বাঞ্ছনীয়। ‘রিডিমিং স্পেস-২’ নামের কাজটি তিনটি পর্বে বিভাজিত। ওপরের প্রথম পর্ব হ্রস্ব। এই আনুভূমিকভাবে আয়তকার পর্বটি আসলে জ্যামিতিমুখরিত একটি সিটিস্কেপ বা নগরদৃশ্য। দ্বিতীয় অংশটুকু আগেরটার চেয়ে প্রশসন্ত। এখানে কিছু নেই। কিছু নেই বলে তো কিছু থাকতে পারে না। এখানে পরিচিত কোনো চিহ্ন নেই। কেবল আছে কাঠের মিহিদানা অর্থাৎ বিন্দুর বুনট বা টেক্সচার। এখানে তাই দৃষ্টির বিরাম। কারণ এখানে কোনো কিছু অধ্যয়ন করতে হয় না। ওই মিহি দানাদার অঞ্চল সংগীতের সহোদর, তাই এ-এলাকা কান দিয়ে শুনতে হয়। সবশেষ পর্বে ছায়া ও কায়ার বুনট। তারে ঝোলানো কাপড় নেই কিন্তু তার ছায়াগুলো এই পর্বের সবচেয়ে রহস্যময় কুশীলব। কোথাও তারে ঝুলছে কাপড়গুলো কিন্তু এখানে পড়েছে শুধু ছায়া। এ-জগৎ কায়াময় আর ছায়াময়; এই দ্বন্দ্ব-সূত্রের শৈল্পিক প্রকাশকে স্বচ্ছ জ্যামিতিতে রূপায়িত করেছেন আনিস। ছায়ার উৎস কায়া হলেও ছায়ার নিজস্ব কারসাজি আছে।
আমার মনে হয় ছাপাই ছবি আমাদের চোখকে অন্য অনেক মাধ্যমের চেয়ে বেশি অভিজ্ঞ করে তুলেছে। সফিউদ্দীন, কিবরিয়া, রফিকুন নবী, মনিরুল ইসলাম, শহীদ কবির প্রমুখ অগ্রজের পথের পরিচয় পাঠ করে আনিসুজ্জামান নতুন 888sport live chatভাষায় কথা বলার সামর্থ্য অর্জন করেছেন এবং আবারও আমরা ছাপচিত্রে অভিনব কিছু দেখার সুযোগ পেয়েছি। বিমূর্ত চিত্রকলা পাঠে আমাদের অনীহা আছে। কিন্তু একান্তভাবে রেখা, রূপ আর টেক্সচারের সুন্দর যখন ছাপচিত্রে দেখি, তখন আমাদের আগ্রহ নিরঙ্কুশ থেকে যায়। সংগীত শোনার মতো আমরা ছন্দ আর সংগঠনই শুধু গভীর মনোনিবেশে পাঠ করি। 888sport live chatী কী এঁকেছেন বা কী বোঝাতে চেয়েছেন, এ-প্রশ্ন আমাদের আর বিচলিত করে না। আমাদের ভেতরটা অকস্মাৎ বলে ওঠে – সুন্দর তো! কী সুন্দর? কয়েকটি রেখার ছন্দময় প্রকাশ, কয়েকটি বিপুল আয়তনের জ্যামিতির পারস্পরিক সম্পর্ক ও ভারসাম্য অথবা বিন্দুরাশির মেঘের মতো সঞ্চরণ; – এসব আমাদের মোহাবিষ্ট করে রাখে। যেমন আবিষ্ট হয়ে থাকে আমাদের মন, প্রকৃতিতে চোখ পেতে রেখে। আনিসের ছবি প্রকৃতিরই শুদ্ধস্বরের অনুসন্ধান। তবে বাসন্তববাদী শৈলীর ব্যাকরণ অনুসরণ না করে রেখা ও বিরেখার (anti-line) পারস্পরিক সম্পর্কে, হালকা ছাপ ও গাঢ় ছাপের সমন্বয়ে চোখ জানালা খুলে দূর দেখতে পায়।
কাঠখোদাই মাধ্যমের সঙ্গে 888sport live chatীর যে বহুকালের নিবিড় সম্পর্ক, তা-ই যেন বিশেষ বিবৃতি পেয়েছে স্পেসের বহুসন্তরী ছাপে ও কম্পোজিশনের ভেতরকার রেখা এবং গড়নের জঙ্গম বিন্যাসে। ড্রাফটম্যান, আর্কিটেক্ট আর আর্টিস্ট – এই তিন মনের সমন্বিত প্রয়াস যেন আনিসুজ্জামানের ছবি। তবে তিন মনের মিলন হয়েছে সুরেলা 888sport app download apk ভালোবাসার জন্য আর সংগীতের আন্তর্বয়ন বোঝার তাগিদে। তাহলে কি আনিসের ছবি দেখতে দেখতে আমরা সেই প্রবাদের তীরবর্তী হলাম! স্থাপত্য হিমায়িত সংগীত – তাঁর ছবির দালানের অংশবিশেষ কি এক টুকরো সংগীত – স্বরলিপির ছিন্ন অংশ! r

