নীরব-সরব মানুষটি

888sport appর বাইরে থাকি। 888sport appয় এলেই সুবীরকে (বেঙ্গল 888sport live chatালয়ের প্রয়াত পরিচালক সুবীর চৌধুরী) ফোন দিই : সুবীর, 888sport appয় এসেছি, একদিন আড্ডার আয়োজন করো। সাধারণত সেদিনই আয়োজনটি হয়ে যেত, কারণ সুবীরের আগ্রহ আমার চেয়ে কম নয়। আড্ডায় সস্ত্রীক আমি ছাড়া অবশ্য-সদস্য কাইয়ুম স্যার (আমার শিক্ষক হলেও পরবর্তীকালে বন্ধুসম), তাহেরা ভাবি (কাইয়ুম চৌধুরীর স্ত্রী) আর হাসনাতভাই। অনিয়মিত হলেও প্রায়শ থাকতেন নবী স্যার (আমার শিক্ষক রফিকুন নবী), মাহমুদভাই (888sport live chatী মাহমুদুল হক), মাঝে মধ্যে আরো কেউ কেউ। আড্ডাটির শেষ নিয়মিত সদস্যটিও চলে গেলেন – হাসনাতভাই (কালি ও কলম সম্পাদক আবুল হাসনাত)।

কী আশ্চর্য দ্রুততার সঙ্গে একে একে নিভে গেল দেউটি। সুবীর আর্ট কলেজে আমার বছরতিনেকের জুনিয়র, তবে সব কাজে এগিয়ে এসে নিজেকে পরিচিত করে তুলেছিল। সুবীর যে আর্টিস্ট হবে না – সংগঠক হবে, সেটি জানা ছিল, তবে দায়িত্বের এত বোঝা নেওয়ার ক্ষমতা যে ওর রয়েছে সেটি জানা ছিল না। তার অকস্মাৎ চলে যাওয়া স্তম্ভিত করেছিল, কানে বাজছে সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে ফোনে তার বাঁচার আকুল আকুতি। কাইয়ুম স্যার চলে গেলেন পিছু পিছু, বেঙ্গলের উচ্চাঙ্গসংগীতের আসরে বক্তৃতার মঞ্চে চোখের সামনে, যেন সুবীরের প্রস্থান তাঁর ভেতরের প্রদীপটি নিবিয়ে দিয়েছিল। সারাদিন একসঙ্গে কাটানো সুস্থ হাসিখুশি মানুষটি আমার পাশের চেয়ার ছেড়ে বক্তৃতার মঞ্চে গেলেন, মাইকে বলতে বলতে চলে গেলেন, এমন অভিজ্ঞতা আমার জীবনে আর নেই। এবার গেলেন হাসনাতভাই, স্বভাবের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নীরবে। করোনাকালে বন্দিজীবনেও মাঝে মাঝে কথা হতো, কাজের কথার বাইরেও কিছুটা। এখানেও অপ্রত্যাশিতের আকস্মিকতা। হাসপাতালে যাওয়ার সম্ভবত সপ্তাহখানেক আগে ফোন এলো তাঁর। প্রথমেই কুণ্ঠিত কৈফিয়ত : ‘কোনো কাজ না, এমনিই ফোন করলাম। বোঝেন তো, আজকাল কথা বলবার মতো লোকও তেমন নেই।’ এরপর নানান বিষয়ে প্রায় আধঘণ্টা কথা চালাচালি, হাসনাতভাই কোনো প্রয়োজন ছাড়া আধঘণ্টা আমার সাথে কথা বলছেন এটি আমার কাছে অবিশ্বাস্য। যে-লোকটি প্রয়োজন শেষ হলে ‘রাখি’ শব্দটিও উচ্চারণ না করে ফোন রেখে দেন, কখনো কখনো রীতিমতো হতভম্ব করে, তাঁর তরফে এই দীর্ঘ আলাপকে কী বলব? বিদায়ের আগে না-বলা সব কথা? ঠিক জানি না।

হাসনাতভাইয়ের সাথে পরিচয় কবে থেকে, ঠিক মনে করতে পারি না। এটুকু মনে আছে, ১৯৮২ সালে ভারত থেকে 888sport live chatকলার ইতিহাস বিষয়ে উচ্চতর পড়াশোনা করে এসে যখন নিয়মিত লেখালেখি শুরু করি তখন 888sport live football-সংস্কৃতিবান দৈনিক ছিল শুধুই সংবাদ। এর সাপ্তাহিক 888sport live footballপাতার সম্পাদক ছিলেন হাসনাতভাই, এখানেই নিয়মিত লেখালেখির সূচনা। অবশ্য বিশদ 888sport liveজাতীয় লেখা বিভিন্ন জার্নালে। দৃশ্যকলা বিষয়ে লেখালেখিতে আমার যেটুকু পরিচিতি তার অনেকটাই সংবাদের কল্যাণে, অর্থাৎ হাসনাতভাইয়ের প্রশ্রয়ে। এরপর কালি ও কলম, 888sport live chat ও 888sport live chatীতে নিয়মিত লেখালেখি – অনেকটাই হাসনাতভাইয়ের তাগাদার চাপে। ষাটের দশকের শেষভাগে যখন আর্ট কলেজে পড়ি তখন 888sport live football-888sport live chat-সংস্কৃতি জগতের বয়োজ্যেষ্ঠ ও সমবয়সীদের প্রায় সকলের সঙ্গেই আমার পরিচয় ছিল। বাঙালির জাগরণের সে অবি888sport app download for androidীয় দিনগুলিতে আর্ট কলেজ হোস্টেল ছিল কর্মকাণ্ডের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র, কে না সেখানে আসতেন, হাসনাতভাইও নিশ্চয়। সংবাদে নিয়মিত লিখলেও পরিচয় তত গাঢ় ছিল না, সেটি হয়েছে হাসনাতভাই সংবাদ ছেড়ে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের প্রকাশনা-প্রধান হিসেবে যোগ দেওয়ার পর। পত্রিকাগুলিতে লেখালেখি ছাড়াও সুবীরের তাড়নায় বিভিন্ন প্রদর্শনীর মুখবন্ধ লেখা, বেঙ্গল থেকে আমার নিজের বই বেরোনো, কখনো অনুষ্ঠানে নির্দিষ্ট বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকা – সবটা মিলে কাইয়ুম চৌধুরী ও সুবীরের সঙ্গে হাসনাতভাইও হয়ে উঠলেন নিয়মিত দেখা-সাক্ষাতের মানুষ।

সুবীরের অফিসকক্ষেই বসত আমাদের আড্ডা। সুবীরের অফিস, সেও এক আশ্চর্য বস্তু। এর কোনো টাইমটেবল নেই, সর্বক্ষণই খোলা। এর দরজায় কখনো তালা দেওয়ার প্রয়োজন হতো বলে মনে হয় না। সকাল-বিকেল-সন্ধ্যা-রাত্রি, যখনই গেছি উঁচু উঁচু ফাইলের আড়াল থেকে মুখ তুলে সুবীরের মুচকি হাসির আমন্ত্রণ। আড্ডায় আমরা কজন রাজা-উজির মারি, হাসনাতভাই মাঝেমধ্যে একটু-আধটু যোগ করেন। সুবীরও অল্প কথার মানুষ, ফাইলের আড়াল থেকে একটু হেসে সহমত অথবা প্রবল বিক্রমে দু-এক বাক্যে বিরোধীমত। রাত বেড়ে গেলে আমাদের তার গাড়িতে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব সে ভুলত না। হাসনাতভাইও সময় সময় নামিয়ে দিতেন। সুবীর আমার চেয়ে ছোট, হাসনাতভাই বছর দু-তিনের বড় হবেন, কাইয়ুম স্যার অনেকটাই বড়। তিন প্রজন্ম না হলেও বিভিন্ন বয়সের তিন অন্তরঙ্গ মানুষ পরপর চলে গেলেন আকস্মিক আঘাতের ঘোরে ফেলে। সে-আড্ডাটি ইতিহাসের পাতায় স্থান হয়তো পাবে না, তবে 888sport sign up bonusকাতরতায় আমাকে আন্দোলিত করবে বহুদিন।

হাসনাতভাইয়ের জীবন বাম রাজনৈতিক চেতনা আর সংস্কৃতির সেবায় আচ্ছন্ন এক মানুষের কাহিনি। ছাত্র ইউনিয়ন, সংস্কৃতি সংসদ, ছায়ানট, মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়তার মাধ্যমে বাঙালির যাত্রার প্রতিটি ধাপে তিনি যুক্ত থেকেছেন, রেখেছেন স্বকীয়তার স্বাক্ষর। সম্পাদনা করেছেন গণ888sport live football নামের রাজনৈতিক অঙ্গীকারযুক্ত 888sport live footballপত্রিকা। সংবাদের 888sport live footballপাতা দীর্ঘকাল ধরে প্রগতিশীল সংস্কৃতির মোটামুটি একমাত্র পাটাতন হিসেবে লড়াই চালিয়ে গেছে তাঁরই সম্পাদনায়। মাহমুদ আল জামান নামে লিখেছেন সংবেদনশীল 888sport app download apk, মৃত্যুর আগে যে একটি আত্মজীবনী লিখেছিলেন সেটি জানতেই পারিনি। এসব কথা উল্লেখ করলে তিনি ভীষণভাবে সংকুচিত হয়ে পড়তেন। সংবাদে মাসের পর মাস বেতন না পেয়ে, আর্থিক অনটনের মধ্যে থেকেও কারো সম্পর্কে কটূক্তি হাসনাতভাইয়ের কণ্ঠে অসম্ভব। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন তাঁকে সম্মান ও আর্থিক স্বস্তি দিয়েছিল, তবে তাঁর মতো মানুষ জীবনের কাছে কী চেয়েছিলেন সেটি বোঝা সহজ নয়।

কালি ও কলমের সম্পাদক হিসেবে তাঁকে পাদপ্রদীপের আলোতে টেনে এনেছিল বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। এ যেন তাঁর জন্য এক চেপে বসা বিড়ম্বনা। সম্পাদক হিসেবে পত্রিকাটির বিভিন্ন আয়োজনে মঞ্চে বসতে হবে, কিছু বলতে হবে – এ ফাঁড়া না কাটা পর্যন্ত প্রচণ্ড নার্ভাস হয়ে থাকতে দেখেছি তাঁকে। একবার চট্টগ্রামে লিটল ম্যাগাজিনবিষয়ক এক প্রতিষ্ঠান তাঁকে এবং কলকাতার একজন সম্পাদককে লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশে অবদানের জন্য সংবর্ধনা প্রদান করে। চট্টগ্রামে মোটামুটি আমার জিম্মাতেই ছিলেন হাসনাতভাই। বেশ বড়সড় অনুষ্ঠান। দুই সম্পাদককে মঞ্চে আহ্বানের মুহূর্তে হাসনাতভাই হঠাৎ আমাকে একধারে ডেকে নিয়ে কম্পিতকণ্ঠে বললেন, ‘মনসুর, আমি কিছু বলতে পারব না, আপনি ওদের একটু বুঝিয়ে বলুন।’ সেটি তো হয় না, মফস্বলের লোকজন রাজধানীর সেরা 888sport live football পত্রিকার সম্পাদকের মুখ থেকে কিছু শুনতে প্রবল আগ্রহে অপেক্ষা করছে। সামান্য দু-কথা বলবেন, ধন্যবাদ-টন্যবাদ দিয়ে শেষ করে দেবেন – এভাবে আশ্বাস দিয়ে কোনোমতে তাঁকে মঞ্চে পাঠিয়েছিলাম। হাসনাতভাই ব্যতিক্রম, তবে শুধু জনসমক্ষে আসার বা বলার ক্ষেত্রেই নন। পোশাকে, চলনে, বলনে, সার্বিক আচরণে নিজেকে সর্বক্ষণ প্রকাশে নয়, আড়াল করার জন্যই ব্যতিব্যস্ত – এমন মানুষ জীবনে এ-পর্যন্ত এই একজনই দেখেছি। নীরব থেকেও আমার ভেতরে সর্বক্ষণ সরব তিনি। হাসনাতভাই একজনই ছিলেন, একজনই থাকবেন।