নীরেনকাকা

কী –আশ্চর্য! দু-মাস হয়ে গেল নীরেনকাকা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন (নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর মৃত্যু ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮), অথচ এখনো হঠাৎ হঠাৎ ওঁর গলায় আমার নাম ধরে ডাকটা যেন আমি শুনতে পাই। মনে হয় একতলা থেকে সিঁড়ির মুখে দাঁড়িয়ে নীরেনকাকা ‘মিলু, মিলু’ বলে ডাকছেন। সিঁড়িতে গিয়ে দাঁড়ালেই বলবেন, ‘লিখতে লিখতে আটকে গেছি, বলো তো এই লাইনটার পরের লাইন কী?’ সেগুলো সাধারণত হতো রবীন্দ্রনাথের 888sport app download apk অথবা গানের লাইন। কখনো কখনো রামায়ণ, মহাভারত থেকেও জিজ্ঞাসা করতেন। আমার জানা থাকলে তখনই বলে দিতাম, আর না জানলে বই দেখে বলতে হতো। কর্মজীবন থেকে অবসর নেবার পর তিন-চার বছর ওঁর সঙ্গে কাজ করেই আমার সময় দিব্যি কেটে যেত। ৯০ পূর্ণ করার পরেও, ৯০ কেন, ৯২-৯৩ বছর বয়সেও ছ-ফুটের ওপর লম্বা নীরেন্দ্রনাথ ছিলেন সটান এবং সজীব। তখনো পূর্ণোদ্যমে টেলিভিশনে ওয়ার্ল্ডকাপ ফুটবল দেখেন এবং তৎক্ষণাৎ 888sport app download apk লিখে পাঠিয়ে দেন খবরের কাগজের দপ্তরে। সমাজ-সচেতন এই কবিকে তাঁর পাঠকরা বলতেন সমাজের বিবেক। আবার বর্ষীয়ান এই কবি বাংলা 888sport live football-সমাজের অভিভাবকও ছিলেন। নীলনির্জনে, অন্ধকার বারান্দা, নীরক্ত করবী, উলঙ্গ রাজা, কলকাতার যীশু, সময় বড় কম এবং শেষ কাব্যসংকলন অনন্ত গোধূলি বেলায় নিয়ে তাঁর কাব্যগ্রন্থের 888sport free betও ত্রিশ পার হয়েছে। গদ্যে লিখেছেন, কাব্যতত্ত্বের ওপর 888sport app download apkর কী ও কেন, ছন্দের ওপর 888sport app download apkর ক্লাস এবং 888sport app download apkবিষয়ক আরো একটি 888sport liveসংকলন 888sport app download apkর দিকে ও 888sport app রচনা। এছাড়া আছে আত্মজীবনীমূলক 888sport alternative link

পিতৃপুরুষ, প্রায় কুড়িটির মতো ডিটেকটিভ 888sport alternative link ভাদুড়ী মশাই সমগ্র এবং লিখেছেন আত্মজীবনী নীরবিন্দু। কর্মজীবনে নীরেন্দ্রনাথ ছিলেন ছোটদের পত্রিকা আনন্দমেলার সম্পাদক। ৮০ বছর বয়সে অবসরগ্রহণের আগে পর্যন্ত ছিলেন আনন্দবাজার পত্রিকার এডিটোরিয়াল অ্যাডভাইজর। মৃত্যুর মাসকয়েক আগে পর্যন্ত প্রতিদিন সকালে নিজের পড়ার ঘরে লিখতে বসতেন, কোনো অসুস্থতাতেও এর ব্যতিক্রম হতো না। মৃত্যুর ঠিক এক মাস আগে, ২৪ নভেম্বর ২০১৮, লেখেন বইমেলা নিয়ে তাঁর শেষ 888sport app download apk।

এরকমই একদিন গল্প করতে করতে নীরেনকাকা বলছিলেন তাঁর শৈশবের কথা। সেই কাহিনি তাঁর কথাতেই বলি, – ‘আমার জন্ম অবিভক্ত বাংলার ফরিদপুরের চন্দ্রা বা চান্দ্রা গ্রামে ১৯২৪ সালের ১৯ অক্টোবর। তখন পাকিস্তান বা 888sport apps হয়নি, ফরিদপুর ভারতের মধ্যেই ছিল। প্রায় সাত বছর বয়স পর্যন্ত আমি ওই দেশের বাড়িতেই ছিলাম। আমি আমার বাবা-মায়ের জ্যেষ্ঠপুত্র কিন্তু জ্যেষ্ঠ সন্তান নই। আমার আগে মা আরো দুটি কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে প্রথমজন আঁতুড়ঘরেই মারা যান আর পরের জন আমার দিদি লতিকা।

আমার বাবা জিতেন্দ্রনাথ ছিলেন ইংরেজির অধ্যাপক। অধ্যাপনা করতেন কলকাতায়। থাকতেন আমহার্স্ট স্ট্রিটের ক্রাউন বোর্ডিং হাউসে। মা, প্রফুলস্ননলিনী সন্তানদের নিয়ে দেশের বাড়িতেই থাকতেন। কিন্তু আমাদের সেই ছোট্ট চান্দ্রা গ্রামে তখন একটা ইস্কুলও ছিল না। তাই দিদি একটু বড় হতে তার এবং আমার কাকা, পিসির পড়াশোনার জন্য কলকাতায় একটা বাসাবাড়ির প্রয়োজন হলো। আমার দুবছর বয়সের সময় সেই বাসাবাড়ির দেখাশোনার জন্য মা-ও দেশের বাড়ি থেকে কলকাতায় চলে আসেন। দিদিও মায়ের সঙ্গে চলে এলো। কিন্তু ঠাকুর্দা আমাকে ছাড়লেন না। দুই থেকে সাত বছর বয়স পর্যন্ত আমি ঠাকুমা-ঠাকুর্দার কাছে দেশের বাড়িতেই থেকে যাই। কখনো কখনো পড়াশোনার কথা বলে আমাকে কলকাতায় নিয়ে আসতে চেয়ে মা হয়তো ঠাকুমার কাছে কান্নাকাটি করে চিঠি দিয়েছেন, ঠাকুমা সে-কথা ঠাকুর্দার কাছে বললে ঠাকুর্দা বলেছেন, ‘খোকা অ আ ক খ, এ বি সি ডি পড়তে, লিখতে পারে, ১-২০ ঘর নামতা ওর মুখস্থ, সাঁতরে পুকুর পারাপার হয়, গাছে উঠতে পারে, তোমাকে আমাকে রামায়ণ, মহাভারত পড়ে শোনায়, ১ টাকা দিয়ে বাজারে পাঠালে কেনাকাটা করে বাকি পয়সার হিসেব  দিতে পারে, শহরের কোন্ স্কুল একটা পাঁচ বছরের বাচ্চাকে এর থেকে বেশি শেখাবে?’ তাই আমার আর কলকাতায় আসা হয় না। ঠাকুর্দার মৃত্যুর পর আমি কলকাতায় আসি।

ছোটবেলায় দুপুরে আমি ঠাকুমা-ঠাকুর্দাকে রামায়ণ-মহাভারত পড়ে শোনাতাম। আমার বাবা রবীন্দ্রভক্ত ছিলেন ঠিকই কিন্তু দেশের বাড়িতে ৫-৬ বছর বয়স পর্যন্ত আমি রবীন্দ্রনাথের নামও শুনিনি। ঠাকুর্দা ছিলেন মাইকেল মধুসূদনের ভক্ত। মাঝে মাঝে মধুসূদনের মেঘনাদ বধ কাব্য থেকে আবৃত্তি করতেন। ঠাকুর্দা মনে করতেন কলকাতাটা থাকার জায়গাই নয়। সেখানে লোকে কাজে যায়,

মামলা-মোকদ্দমা করতে যায়, কিন্তু ওখানে চিরকাল বসবাস করা যায় না। এই বিশ্বাস থেকেই আমার ঠাকুর্দা, লোকনাথ চক্রবর্তী তাঁর পঞ্চাশ বছর বয়সে কাজকর্মের পাট চুকিয়ে কলকাতার বাস উঠিয়ে দেশের বাড়িতে থাকতে শুরু করেন, এবং আমৃত্যু সেখানেই ছিলেন। এখনো মনে পড়ে আমাদের দেশের বাড়িটি ছিল দোতলা কাঠের বাড়ি। বাড়িতে ছিল দুটি উঠোন। একটি বাইরের বাড়ির উঠোন, তার সঙ্গে ছিল কাছারিবাড়ি, আর একটি ছিল ভিতরের বাড়ির উঠোন, তার উত্তর কোণে ছিল আমাদের দোতলা কাঠের বাড়ি।’ এই পর্যন্ত শুনে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘রবীন্দ্রনাথের নাম কবে এবং কীভাবে শুনলেন?’ উনি উত্তর দিলেন, ‘ও, সেটা একটা গল্প বটে। বাবা, মা সাধারণত পুজোর সময় দেশের বাড়িতে আসতেন না। যদি কখনও পুজোর সময় আসতেন তাহলে সে বছর আমরা সকলে মিলে বাবার মামার বাড়ি অর্থাৎ আমার ঠাকুমার বাপের বাড়ি যেতাম। ওঁরা খুব অবস্থাপন্ন ছিলেন। ওখানে খুব জাঁকজমক করে দুর্গাপুজো হতো। আসলে আমাদের চান্দ্রা গ্রামটি ছিল ছোট্ট একটি গ্রাম। মাত্র ১৮টি পরিবার সে-সময় সেখানে বসবাস করত। বাবা মা সাধারণত গ্রীষ্মের ছুটিতে দেশের বাড়ি আসতেন। সেরকম একবার ওঁরা গ্রীষ্মের ছুটিতে বাড়িতে এসেছেন। ওঁদের আসা উপলক্ষে পাড়ার কয়েকজনও সেদিন আমাদের বাড়িতে এসেছেন। মা দিদিকে বললেন, ‘লতু তুই একটা রবিঠাকুরের গান কর।’ দিদি গান ধরল ‘ভীষ্ম যখন নিদ্রামগন গগন অন্ধকার’। দিদি হয়তো ঠিকই গেয়েছিল, কিন্তু আমার কানে ‘বিশ্বটা ‘ভীষ্ম’ হয়ে পৌঁছেছিল। ব্যস, আমি আর গানের কোনো শব্দ শুনতে পাইনি। সেই ছোট্ট বয়সে আমার চোখের সামনে তখন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ চলছে এবং ভীষ্ম শুয়ে আছেন শরশয্যায়। এভাবেই রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে আমার প্রথমেই একটা ভুল পরিচয় হয়েছিল। আমি এখনো দাবি করি না যে রবীন্দ্রনাথ যা পড়েছি সবই ঠিক বুঝেছি, তবু শুরুর সেই ভুল বোঝাটা আমার মনে রয়ে গেছে।’

এই গানের প্রসঙ্গে একটা কথা বলি, ত্রিশের দশকের আভিধানিক বাংলা থেকে সুভাষ মুখোপাধ্যায় বা নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী সাধারণ মানুষের মুখের ভাষাকে 888sport app download apkয় নিয়ে এসেছিলেন, এ নিয়ে অনেকে অনেক মত দিতে পারেন বা গবেষণা হতে পারে। কিন্তু খুব কম মানুষই যা জানেন তা হলো নীরেনকাকা খুব সুন্দর গান গাইতে পারতেন। তাঁর গানের ব্যাপারে একটা 888sport sign up bonusর কথা বলি। ঠিক 888sport sign up bonus নয় আমার বাবার কাছে শোনা কথা। আমার বাবা 888sport live footballিক সমেত্মাষকুমার ঘোষের বন্ধু ছিলেন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। পরবর্তীকালে ওঁর পুত্র কৃষ্ণরূপের সঙ্গে আমার বিবাহ হয়।

যে-কথা বলছিলাম, সময়টা গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি। দিলিস্নর রাজপথে একটি ট্যাক্সি চলেছে। যাত্রী সমেত্মাষকুমার ঘোষ এবং নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। সেসময় সমেত্মাষকুমার চাকরি সূত্রে সাত-আট বছর দিলিস্নতে ছিলেন। নীরেন্দ্রনাথ বন্ধুর কাছে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেদিন নীরেন্দ্রনাথ কলকাতা ফিরে যাচ্ছেন, আর সমেত্মাষকুমার বন্ধুকে দিলিস্ন স্টেশনে পৌঁছে দিতে যাচ্ছেন। দুজনেরই মন বিষণ্ণ। কেউ কোনো কথা বলছেন না। নীরেন্দ্রনাথ গান গেয়ে চলেছেন, ‘চলে রাধেরানি, আঁখিওসে পানি আপনা মোহন সে মুখরা মোড়কে।’ একসময় দিলিস্ন স্টেশন এসে গেল। ওঁরা ট্যাক্সি থেকে নেমে ভাড়া দিতে গেলে অশ্রম্নসজল চোখে ট্যাক্সি-ড্রাইভার বলেছিলেন, ‘কোনোভাবেই ভাড়া নিতে পারব না। আপনি যে গান শুনিয়েছেন, তারপর ভাড়া নিলে আমার পাপ হবে।’

গান সম্পর্কে নীরেনকাকা বলতেন, সুর অবশ্যই গানের একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তবে গানের ক্ষেত্রে সুরই সব নয়। সুরের সঙ্গে  বাণীর ভাবটা গলায় না আনতে পারলে গান সংগীতে উত্তীর্ণ হয় না। উনি ওঁর পৌত্রীকে কখনো কখনো গান শেখাবার সময় উদাহরণ দিয়ে এইভাবেই ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিতেন। যেমন, ‘ধীরে ধীরে আ-রে বাদল ধীরে ধীরে যা’ গাইতে হলে গানের বাণীর এই জলভরা বাতাস গলায় বইয়ে দিতে হবে তবেই সেটা গান হয়ে উঠবে। যে বয়সে বাচ্চারা বর্ষার গান বলতে ‘মেঘের কোলে রোদ হেসেছে’ ধরনের গানই গেয়ে থাকে সেই ছয়-সাত বছর বয়সে উনি ওঁর নাতনিকে শেখাতেন ‘আমারে যদি জাগালে আজি নাথ’, অথবা শরৎকে চোখের সামনে ফুটিয়ে তোলার জন্য ‘অমল ধবল পালে লেগেছে’ গানটির এই স্তবকগুলি বারবার শোনাতেন – ‘পিছনে ঝরিছে ঝরঝর জল/ গুরুগুরু দেয়া ডাকে/ মুখে এসে পড়ে অরুণ কিরণ/ ছিন্ন মেঘের ফাঁকে।’

সমস্ত কাজেই খুব নিয়মনিষ্ঠ, নিখুঁত, নিপুণ ছিলেন নীরেনকাকা। সেটা প্রতিদিন সকালে উঠে দাড়ি কামানোই হোক বা 888sport app download apk লেখা। এতটাই নিপুণ ছিলেন যে লেখার টেবিলের ড্রয়ারে ওঁর 888sport app download apkর বই কোনটি, কবে, কোন প্রকাশন সংস্থা থেকে বেরিয়েছে তার তালিকাও পাওয়া যায়। নিজের সব 888sport app download apk যা বই হয়ে প্রকাশিত হয়নি তা সবই কোনদিন লেখা হয়েছে তার তারিখসহ খাতায় তুলে রাখতেন। একবার বলেছিলেন, ‘আমি চার বছর বয়স থেকে পদ্য লিখছি। বাড়িতে একমাত্র বাবা ছাড়া আর কেউ আমার 888sport app download apk লেখা তেমন পছন্দ করতেন না। একবার সারা বিকেল সন্ধে খেলাধুলা করে এসে আমার বড় কাকিমাকে বলেছিলাম, রাত হলো ভাত দাও। শুনে বড় কাকিমা বলেছিলেন, ‘ওমা তুই দেখি কবিদের মতো কথা বলিস।’ ওই বাক্যে কোনো অমত্ম্যমিল ছিল না তবু কাকিমার মনে হয়েছিল কবিদের মতো কথা।’ প্রসঙ্গত নীরেন্দ্রনাথের বড় কাকিমা ছিলেন 888sport live footballিক জরাসন্ধের ভাইঝি।

একবার একটি বক্তৃতায় নিজের 888sport app download apk সম্পর্কে নীরেনকাকা বলেছিলেন, ‘888sport app download apk কল্পনালতা বলে একটা কথা আছে না? – আমি তাতে বিশ্বাস করি না। যা চোখে দেখিনি তা লিখতে পারি না। চোখের সামনে যা ঘটতে দেখি আমি তাই নিয়েই 888sport app download apk লিখি। যেমন ‘বাতাসি’ বা ‘জঙ্গলে এক উন্মাদিনী’ এই দুটো 888sport app download apkই আমার চোখের সামনে দেখা ঘটনা। ‘বাতাসি’র কথাই ধরা যাক, সত্যিই দোতলা বাসের জানালা দিয়ে একটি লোককে চিৎকার করতে করতে ছুটে যেতে দেখেছিলাম। কিন্তু 888sport app download apk লেখার সময় দোতলা বাসটা চলন্ত ট্রেন হয়ে যায়।

‘বাতাসি! বাতাসি।’ – লোকটা ভয়ংকর চেঁচাতে চেঁচাতে

গুমটির পিছন দিকে ছুটে গেল।

ধাবিত ট্রেনের থেকে এই দৃশ্য চকিতে দেখলুম।

চারদিকে যা দেখি তাই আমার 888sport app download apkর উপকরণ। এই জন্যই আমার 888sport app download apkয় প্রকৃতি আসে, আসে মানুষের প্রতিদিনের কষ্টকর জীবনযাত্রা।’

‘আমার ওপর কোনও কবির বিশেষ প্রভাব আছে কি না আমি জানি না। যাঁকেই পড়েছি তাঁরই প্রভাব আমার লেখায় এসেছে। যেমন, আমি যার সঙ্গে মিশি তার দ্বারাই প্রভাবিত হই। আমার

নাতি-নাতনির দ্বারাও প্রভাবিত হই। বাচ্চাদের কথা শুনতে আমার খুব ভাল লাগে। নিজের অজামেত্মই ওদের দুষ্টুমি আমার লেখায় ছায়া ফেলে। তবে ছেলেবেলায় কাশীরাম দাসের মহাভারত ও কৃত্তিবাসের রামায়ণ পড়তে পড়তেই আমি প্রথম 888sport app download apk লেখার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলাম।’

দীর্ঘ জীবন যাপন করেছেন নীরেন্দ্রনাথ। ৯৪ বছর পূর্ণ করে ৯৫-এ পদার্পণ করে তিনি প্রয়াত হয়েছেন। বাঁচতে তিনি ভালোবাসতেন। ‘এবারে মৃত্যুকে মারো’ – ১৩৯৮-এ লেখা এই 888sport app download apkর মধ্য দিয়ে জীবনের জয়ধ্বনি দিয়েছেন।

তাহলে নূতন করে জীবনের জয়ধ্বনি দাও।

যা মারে মৃত্যুকে, সেই উদ্বোধনী সংগীত শোনাও।

কিন্তু মৃত্যুচিন্তা তার অনেক আগেই তাঁর মধ্যে এসে গিয়েছিল। তাঁর শ্রাদ্ধের কার্ডে তাঁরই একটি 888sport app download apk মুদ্রিত করব বলে যখন আমরা তাঁর 888sport app download apkসমগ্রর বিভিন্ন খ- ওলটাচ্ছি তখন 888sport app download apkর বদনে 888sport app download apk কাব্যগ্রন্থের প্রথম 888sport app download apkটি চোখে পড়ে, ১৩৮১ সনে লেখা, ‘অর্থাৎ 888sport sign up bonusর মধ্যে’ 888sport app download apkয় নীরেন্দ্রনাথ বলছেন, –

মৃত্যু কি সকলই নেয়? মৃত্যু কি সকলই নিতে পারে?

তাহলে কী নিয়ে থাকে, যাদের নেয়নি মৃত্যু তারা?

আসলে যে যায়, সেও সমগ্রত যায় না ও-ধারে,

লুকিয়ে থেকেও তবু বন্ধুদের দিয়ে যায় সাড়া।

তখনও সে ভালবাসে; মনে রাখে, কাছে ছিল কারা;

নির্জন মুহূর্তে এসে চিত্তের দুয়ারে কড়া নাড়ে।

সহসা শ্রাবণে ঝরে তারই অমলিন হাস্যধারা

অর্থাৎ 888sport sign up bonusর মধ্যে বেঁচে থেকে মৃত্যুকে সে মারে।

অথচ ১৩৮১-তে নীরেন্দ্রনাথের বয়স মাত্রই পঞ্চাশ। ওপারের 888sport app download apkর বন্ধুরা বারবার ফিরে এসেছে তাঁর 888sport app download apkয়। বন্ধুদের মৃত্যু তাঁকে খুব কষ্ট দিত। ঘুমিয়ে পড়ার আগে কাব্যগ্রন্থের নাম 888sport app download apkয় ১৩৯৩-তে তিনি সেই চলে যাওয়া বন্ধুদের কথাই আবার বলছেন –

হাঁটতে হাঁটতে যখনই আমি

পিছন ফিরে সেই

ছাইবর্ণ পথের দিকে তাকাই,

তখনই আমি বুঝতে পারি যে,

আমারই মৃত পরিজন ও বন্ধুরা তার

দখল নিয়ে নিয়েছে।

এই 888sport app download apkতেই বলছেন, –

পঞ্চাশ পেরুবার পরে যে আর ভুলেও কক্ষনো

পিছনে তাকাতে নেই,

তাকালে যে শুধু কষ্ট আর কষ্ট আর

কষ্টই পেতে হয়,

নিজেও তা আমি ভালই জানতুম।

১৪২৫-এর অর্থাৎ এই বছরের দুর্গাপুজোয় শারদাঞ্জলি পত্রিকায়

তাঁর ‘আকাশে একাকী’ 888sport app download apkটি প্রকাশিত হয়। এখানেও তিনি লিখছেন –

সব ঘুড়ি পড়েছে কাটা দেখি

এখন একটিই মাত্র রয়েছে আকাশে।

শুধু সে-ই

সঙ্গীহীন নিতান্ত একাকী

রক্তবর্ণ এই বিধুর দিনান্তবেলায়

গর্বভরে দেখিয়ে বেড়াচ্ছে তার খেলা।

তার কোনো শত্রম্ন নেই। বন্ধু? তাও নেই।

সে বিজয়ী, অবশ্য তা জানি, কিন্তু একা।

আশ্চর্যের কথা এই যে, এই 888sport app download apkটি তিনি লিখেছিলেন ১৪২১ সালে অর্থাৎ চার বছর আগে, কিন্তু কোথাও প্রকাশের জন্য দেননি। অপেক্ষা করে ছিলেন। কিন্তু কেন? ২০১৮-র জানুয়ারিতে স্ত্রী-বিয়োগের পর এই বন্ধুহীন-নিঃসঙ্গতা তাঁকে আরো বেশি কষ্ট দিত। মাসকয়েক আগে একদিন সকালে ওঁকে খাবার দিয়ে আমি সামনে বসে আছি, হঠাৎ বললেন, ‘আমি আমার আগের বন্ধুদের সঙ্গে অনেক কথা বলি।’ আমি আমার বুদ্ধিমতো বলেছিলাম, ‘স্বপ্নে?’ উনি বলেছিলেন, ‘না, জেগেও অনেক সময়ই বলি, তারা উত্তরও দেয়।’ এ-কথার মানে আমার কাছে স্পষ্ট হয়নি; কিন্তু ওঁর মনে নিশ্চয় কোনো বিশ্বাস ছিল।

২০০৮ সালে নীরেন্দ্রনাথের শেষ কাব্যগ্রন্থ অনন্ত গোধূলি বেলায় প্রকাশের পর উনি আর কোনো কাব্যগ্রন্থ বা 888sport app download apkসমগ্রর কোনো খ- প্রকাশ করেননি। 888sport app download apkসমগ্র পঞ্চম খ–র ভূমিকায় লিখে দিয়েছিলেন এরপর যে-888sport app download apk লেখা হবে তা পঞ্চম খ–ই সংযোজিত হবে। কিন্তু তার পরেও বহু 888sport app download apk লেখা হচ্ছিল এবং এক একটি খাতা ভর্তি হয়ে গেলে উনি আমার কাছে তা রাখতে দিতেন। এভাবে খাতা-১ এবং খাতা-২-এর পর খাতা-৩ও যখন আধাআধি ভরে এলো তখন আমি বলেছিলাম, এত 888sport app download apk কোনো খ– সংযোজন হিসেবে যেতে পারে না, 888sport app download apkসমগ্র ষষ্ঠ খ- প্রকাশ করতেই হবে। সেই মতো আমি প্রেস কপি তৈরি করে ‘আনন্দ পাবলিশার্সে’ দিয়ে আসি এবং ওঁরা অক্টোবর ২০১৮-তেই সেটি প্রকাশ করে। আমাদের সৌভাগ্য যে, নীরেনকাকা বইটি দেখে গেছেন এবং ভূমিকাও লিখে দিয়েছেন।

এবার আসি সম্পাদক নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কথায়। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময়ে প্রকাশিত ছোটদের পত্রিকা আনন্দমেলার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন নীরেনকাকা। ছোটদের পত্রিকাকে কতটা আকর্ষণীয় করা যায় সে-সময়কার আনন্দমেলা তার দৃষ্টান্তস্বরূপ। মতি নন্দী, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় প্রমুখকে দিয়ে বাচ্চাদের লেখা লেখানো তাঁরই অবদান। এছাড়া ব্যাকরণ বা বানানের মতো ভীতিপ্রদ বিষয় বাচ্চাদের কাছে কতটা আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করা যায়, সে-বিষয়েও সম্পাদক হিসেবে ছিল তাঁর সজাগ দৃষ্টি। শঙ্খ ঘোষ বা পবিত্র সরকারের মতো লেখকদের দিয়ে সেরকম লেখা লিখিয়েও নিতেন। নিজে সম্পাদকীয় লিখতেন ছড়ায়। নিজে সম্পাদক ছিলেন বলেই বোধহয় সম্পাদকদের অসুবিধার কথাটা উনি সবসময় মনে রাখতেন। আমার সম্পাদনায় বর্তমান শারদীয়া 888sport free betয় প্রতিবছর তিনি একটা করে রহস্য 888sport alternative link লিখেছেন। এছাড়া বর্তমান পত্রিকার রবিবারের 888sport live footballের পাতায় ধারাবাহিকভাবে লিখেছেন রহস্য 888sport alternative link। ১৭-১৮টি 888sport alternative link উনি আমার সম্পাদনায় লিখেছেন কিন্তু লেখা নিয়ে আমাকে কখনো ভাবতেও হয়নি। সকালবেলায় অফিস যাবার সময় ‘বেরোচ্ছি’ বলার আগেই উনি লেখার কিস্তি আমার হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন। সম্পাদক হিসেবে এরকম নিয়মনিষ্ঠ আরেকজন লেখককেও দেখেছি। তিনি আশাপূর্ণা দেবী। প্রতিবছর ৩০ এপ্রিলের মধ্যে ওঁর লেখা আমার দপ্তরে চলে আসত। জীবনের শেষে কয়েক বছর 888sport appর কালি ও কলম পত্রিকার কলকাতা সংস্করণের সম্পাদক হয়েছিলেন নীরেন্দ্রনাথ। ওঁর ইচ্ছায় আমিও পত্রিকাটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলাম। একাধিক দিন আমাদের বাড়িতে এই পত্রিকার জন্য মিটিং হয়েছে। এসেছেন আনিসুজ্জামান, আবুল হাসনাত, লুভা। আমিও থেকেছি সেইসব আলোচনায়। তখনো নির্দিষ্ট দিনের আগেই নীরেনকাকা ওঁর সম্পাদকীয়টা আমার হাতে দিয়ে দিতেন।

সম্পাদক হিসেবে ওঁর নিরপেক্ষতার কথাটা না বললে বিষয়টা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। কবি প্রণবকুমার মুখোপাধ্যায়ের একটা লেখায় পড়েছিলাম, ’৫৬-৫৭ সালে প্রণবকুমারের একটি 888sport app download apk নীরেন্দ্রনাথ কীভাবে আনন্দবাজার পুজো 888sport free bet থেকে বাদ দিয়েছিলেন। প্রণবকুমার সম্পর্কে নীরেন্দ্রনাথের পিসতুতো ভাই। ওঁরা এক বাড়িতেই থাকতেন। সেবার শারদীয়া আনন্দবাজারের ভারপ্রাপ্ত মন্মথ সান্যালের কথায় প্রণবকুমার একটি 888sport app download apk জমা দেন। ওই দপ্তরে মন্মথবাবুর সহকারী ছিলেন নীরেন্দ্রনাথ। একদিন বাড়ি ফিরে নীরেন্দ্রনাথ প্রণবকুমারকে বলেন, ‘তোর 888sport app download apkটা দেশ পত্রিকায় দিয়ে দিয়েছি। কারণ আনন্দবাজারে তোর থেকেও একটা ভাল 888sport app download apk ডাকে এসেছিল, লেখক পরিমলকুমার ঘোষ। লেখাটি এত ভাল যে ওটাই মনোনীত করলাম।’ প্রাথমিকভাবে অত্যন্ত দুঃখ পেলেও এই নিরপেক্ষতাকে প্রণবকুমার সম্মান করেন। সে-সময় নিজে যেখানে সম্পাদনায় যুক্ত থাকতেন সেখানে নিজেও লিখতেন না নীরেন্দ্রনাথ। এই নিরপেক্ষতা জীবনের শেষদিন পর্যন্ত রক্ষা করেছিলেন। মাত্রই বছরখানেক কি দেড়েক আগেকার কথা। আনন্দ পাবলিশার্সের ষাট বছরপূর্তি উপলক্ষে ওঁরা দুটি সুবর্ণ সংকলন প্রকাশ করেছিলেন। একটি গল্পের, অন্যটি 888sport app download apkর। গল্পের সংকলনটি সম্পাদনা করেছিলেন রমাপদ চৌধুরী এবং 888sport app download apkরটি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। সে-বিষয়ে নীরেনকাকার সঙ্গে কথা বলে ওঁরা বাড়িতে প্রয়োজনীয় বই পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। সে-সময় উনি বাড়িতে ছিলেন না, ওঁর বড় মেয়ের বাড়িতে সল্টলেকে ছিলেন। আমি ফোন করে বললাম, ‘আনন্দ পাবলিশার্স বই পাঠিয়েছে আমি কি বইগুলি আপনার কাছে পাঠিয়ে দেবো?’ উনি বললেন, ‘না, তোমার সাহায্য ছাড়া পারব না। আমিই বাড়ি যাব।’ উনি এলেন। আমরা 888sport app download apk নির্বাচন করছি। উনি প্রথমেই বললেন, ‘রবীন্দ্রনাথের পাঁচটা 888sport app download apk, জীবনানন্দের তিনটি এবং তারপর থেকে একেবারে এখন পর্যন্ত সকলের দুটি করে 888sport app download apk থাকবে।’ আমি বললাম, ‘একেবারে এই সময় যারা লিখছে তাদেরও দুটো করে থাকবে, আপনাদেরও দুটো? আপনাদের দুটো থাকলে তাদের একটা হওয়া উচিত।’ উনি বলেছিলেন, ‘আমার সম্পাদনায় প্রকাশিত হলে আমার 888sport app download apk কখনোই 888sport free betয় বেশি থাকতে পারে না।’ এবং সেইভাবেই 888sport app download apk বাছাই করা হয়েছিল। এবং সে-সংকলন প্রকাশিতও হয়ে গেছে।

নিজের লেখাপড়া, ছেলের সঙ্গে বসে টিভিতে খেলা দেখা, প্রতিদিন অত্যন্ত আগ্রহভরে খবর শোনা এসবের সঙ্গে মাঝে মাঝে আমার সঙ্গে নানান গল্প করতেন। সেরকমই একদিনের গল্প দিয়ে লেখাটা শেষ করি, – ‘আমি আমার শেষ কাব্যসংকলনের নাম দিয়েছি ‘অনন্ত গোধূলি বেলায়’। আমার জীবনে তো অনন্ত গোধূলি বেলাই চলছে, অনেক দিন ধরে। ইটার্নাল টুইলাইট। এখন আমার জীবনে দিনের আলো নেই অথচ সম্পূর্ণ অন্ধকারও নেমে আসছে না। একটা আবছা আলো-অন্ধকারের মধ্য দিয়ে অনেকদিন ধরে হেঁটে চলেছি। তবে এখনও আমার শরীরে মনে যেটুকু শক্তি আছে, তা দিয়ে শুধু 888sport app download apkই লিখব।’ জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘আর একবার মানবজন্মের সুযোগ পেলে গ্রহণ করবেন?’ একটুক্ষণ থেমে বলেছিলেন, – ‘রবীন্দ্রনাথ জীবনে এত দুঃখ পেয়েছেন, তাঁর তিন তিনটি সন্তানের মৃত্যু পর্যন্ত দেখেছেন তবু বলেছেন ‘আবার যদি ইচ্ছা কর আবার আসি ফিরে।’ আমি রবীন্দ্রভক্ত, ফলে তাঁর মতেই মত দিই। তবে আর একটা মানবজীবন ফিরে পাওয়ার ব্যাপারে আমার একটা শর্ত আছে, – আমি যদি আমার এই সংসার, আমার সব পুরনো বন্ধুবান্ধব, যারা আজ আর কেউ নেই, তাদেরই ফিরে পাই – তাহলে আর একটা মানবজীবন নিতে পারি।’