সৃষ্টিশীল মানুষমাত্রই শুভ্র-সুন্দর-আলোকিত আগামীর স্বপ্ন দেখেন এবং সে-স্বপ্নকে সবার চোখে মেলে ধরার নানা আয়োজনে বিচিত্র উপায়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখেন। আলোর গতিবিধি বুঝে নেওয়ার জন্য অন্ধকারকেও তাঁকে নিবিড়ভাবে পাঠ করতে হয়, বুঝে নিতে হয় দৃশ্য ও অদৃশ্যের ভেতর-বাহির, খুঁজে নিতে হয় যাপিত ও প্রত্যাশিত জীবনের নাড়িনক্ষত্র। এই বোঝাপড়ার সঙ্গে স্রষ্টার নিবেদন আন্তরিক হলেই তাঁর সৃষ্টির সমুদ্রে অবগাহন করে আমরা আরাম ও আনন্দ লাভ করি। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী (১৯ অক্টোবর ১৯২৪-২৫ ডিসেম্বর ২০১৮) সেই বিস্ময়কর আরাম ও আনন্দের নাম যিনি বৃষ্টিস্নাত অন্ধকার বিকেলের বিষণ্ণতাকে রঙিন রোদ্দুরে ঢেকে দিতে জানেন। নীরেন্দ্রনাথের 888sport app download apkর পাঠক হিসেবে আমরাও একজন অমলকান্তির মতো ‘ক্ষান্তবর্ষণ কাকডাকা বিকেলের সেই লাজুক রোদ্দুর’ খুঁজে বেড়াই। অন্ধকারের দেয়াল ভেঙে আলোর দিকে হাত বাড়িয়ে রাখি, রোদ্দুরের কথা ভাবতে ভাবতে বেরিয়ে পড়ি নীরেন্দ্রনাথের 888sport app download apkর দেশে।
নীরেন্দ্রনাথের 888sport app download apkর সঙ্গে পরিচয়ের অনেক আগেই আমি তাঁর 888sport app download apkর ক্লাশে ঢুকে পড়েছিলাম। ফলে তাঁর একজন দুর্বল ছাত্র হিসেবে ছন্দ নিয়ে ভাবতে শুরু করেছিলাম অল্প বয়সে, যখন 888sport app download apk বলতে ছন্দ, বিশেষ করে অমত্ম্যমিলের মগ্নতাই আমাকে তাড়া করতো। নীরেন্দ্রনাথ তাঁর 888sport app download apkর ক্লাশের নিয়মিত শিক্ষার্থীদের কয়েকজনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। ভাবতে ভালো লাগছে, সেই পরিচয়সূত্রে আমিও ভবতোষ দত্ত, শঙ্খ ঘোষ, প্রবোধচন্দ্র সেনসহ বহু প্রথিতযশা 888sport live chatস্রষ্টার সহপাঠী। নীরেন্দ্রনাথ ছন্দের ব্যাকরণভীতি থেকে পাঠককে মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন, তাঁর ভাষায় 888sport app download apkর ক্লাশ ছন্দের জটিল-গভীর ‘সেই ব্যাকরণ সম্পর্কে পাঠকের ভয় কাটাবার বই’। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে এটুকু বলা যায়, এই ভয় কাটানোর নাম করে আমার মতো অনেক কাব্যানুরাগীকে নিশ্চয়ই তিনি বিস্ময়করভাবে নির্ভীক করে তুলেছিলেন যার পরিণতি অনেকের ক্ষেত্রে বিপজ্জনক হয়েছে।
888sport live chat-888sport live football-সংস্কৃতির খোঁজখবর রাখেন এমন কারো সঙ্গেই নীরেন্দ্রনাথকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রথমত এবং প্রধানত তিনি কবি হলেও 888sport live footballের 888sport app ক্ষেত্রে তাঁর অবদান 888sport apk download apk latest versionর সঙ্গে 888sport app download for androidযোগ্য। তাঁর 888sport live chatস্বভাবে এমনসব বৈপরীত্য সমান্তরালে প্রবাহিত যে, তাঁকে পাঠ করতে গেলে বিস্মিত হতে হয়। 888sport app download apkর এমন ভাষা তিনি কোন মন্ত্রবলে আয়ত্ত করেছেন তার পুরোটা নিশ্চয়ই জানা যাবে না কোনোদিন। কবি ও 888sport app download apk অভিন্ন – এই বিশ্বাসে ভর করে নিজের সম্পর্কে তিনি তেমন কিছু বলতে চাননি। একাল এবং ভাবীকালের পাঠকের নীরেন্দ্রনাথ তাঁর 888sport app download apkর মধ্যেই মুদ্রিত হয়ে আছেন। শিশু888sport live footballের যে বিশাল ভা-ার তিনি সৃষ্টি করেছেন, সেখানে প্রবেশ করলে বড়োরাও যথেষ্ট উপকৃত হতে পারেন। এই সৃষ্টিশীল মানুষটিই ভাষা888sport apkের গুরুগম্ভীর নানা বিষয়ে আনন্দের সঙ্গে লিখেছেন। বুঝিয়ে দিয়েছেন, ভাষা888sport apkও সৃষ্টিশীল কর্ম, যা রসবোধসম্পন্ন লেখক-পাঠককে আলোড়িত-আলোকিত করতে পারে। বাংলা ভাষার মৌল চরিত্রটি চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছেন তিনি। এই চিহ্নায়নের পুরো প্রক্রিয়াটি তাঁর সৃজনশীল সত্তায় স্নাত বলেই পাঠকের প্রবেশাধিকার তাতে অবারিত।
প্রত্যেক সৃষ্টিশীল মানুষই তাঁর অন্তর্গত সৃজনশীল সত্তার অভিমুখ চিহ্নায়নে তৎপর থাকেন, একটু অন্যরকম আলাদা হতে চান – সকল লোকের মাঝে বসেও একা, আলাদা হতে চেয়ে জীবনানন্দ দাশ যেমন লিখেছেন, ‘কেউ যাহা জানে নাই কোনো এক বাণী -/ আমি বহে আনি।/ একদিন শুনেছ যে সুর -/ ফুরায়েছে পুরনো তা – কোনো এক নতুন কিছুর/ আছে প্রয়োজন।’ এই নতুন কিছু সৃষ্টির মধ্য দিয়েই মানুষ মৃত্যুকে জয় করতে চায়। জীবন যতোই যন্ত্রণা ও হতাশায় ক্লিষ্ট হোক না কেন, তবুও জীবন মানেই বেঁচে থাকার আশা। বেঁচে থাকতে হলে দায়িত্বশীল হতে হয়, দায় নিতে হয় নিজের এবং আরো অনেকের, যাকে আমরা 888sport live chatীর দায় বলে চিহ্নিত করি। নীরেন্দ্রনাথ নীল নির্জন কাব্যের একটি 888sport app download apkয় 888sport live chatী ও স্রষ্টা হিসেবে তাঁর দায়বদ্ধতার কথা উল্লেখ করেছেন। পৃথিবী যে পুষ্পশয্যা নয় এ-কথা সমস্ত সংবেদনশীল মানুষই অনুভব করেন। এই অনুভব ও উপলব্ধির তারগুলো সবার ক্ষেত্রে সমান তালে বাজে না বলেই বিচিত্র সংগীতের জন্ম অনিবার্য হয়ে ওঠে। ‘ধ্বংসের আগে’ শীর্ষক 888sport app download apkটিতে ব্যর্থতার দীর্ঘ ফিরিস্তি দিয়েছেন কবি, ‘ব্যর্থবীর্য শয়তানের আবির্ভাব’ মেনে নিয়েছেন, ‘পাতালের সর্বনাশা অন্ধকার গাঢ় হয়ে এলে’ কবি দৃঢ়হাতে যবনিকা টেনে দেওয়ার কথা বলেছেন, বিষাদ বেদনার দৃঢ় পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘ঢালো গ্লানি, ঢালো মৃত্যু, 888sport live chatীর বেহালা ভেঙে ফেলে/ অন্ধকার রঙ্গমঞ্চে অট্টহাসি দু’হাতে ছড়াও।’ তবু কবির পথচলা, মানুষের জন্য কথা বলা কখনো থামবে না। এই অক্লান্ত পরিক্রমণের যে-শক্তি, তারই নাম হয়তো সৃষ্টিশীলতা –
কেননা আমি তো 888sport live chatী। যে মন্ত্রে সমস্ত হাহাকার
ব্যর্থ হয়, মজ্জামাংস জোড়া লাগে ছিন্নভিন্ন হাড়ে,
যে-মন্ত্রে উজ্জ্বল রক্ত নেমে আসে অস্থি-র হাড়ে
প্রাণের রক্তিম ফুল ফুটে ওঠে মৃত্যুহীন গাছে,
সে-মন্ত্র আমার জানা, – তাই মৃত্যু হানো যতবার
যে জানে প্রাণের মন্ত্র, কতটুকু মৃত্যু তার কাছে।
(‘ধ্বংসের আগে’, নীল নির্জন)
‘ধ্বংসের আগে’ 888sport app download apkর সমান্তরালে ‘পূর্বরাগ’ 888sport app download apkটি পাঠ করলে আমাদের বিশ^াস জন্মে, যে-প্রাণের মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে তিনি মৃত্যুকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন, তার শক্তি কতো তীব্র ও তীক্ষন হতে পারে। এ-888sport app download apkয় লেখার চেয়ে দেখার দিকে কবির পক্ষপাত প্রকাশ পেয়েছে। লেখা-লেখা খেলায় আগ্রহ নেই তাঁর, বরং তিনি দেখেছেন ‘লুকিয়ে রাতের প্রগাঢ় পর্দা সরিয়ে উঁকিঝুঁকি মারে সোনালি সকাল,/ হিজলের ফ্রেমে ফুটে ওঠে শিশুসূর্যের মুখ?/ আলোর স্নিগ্ধ ঘ্রাণে উন্মন দু-একটা ছোট পাখি উড়ে যায়/ মৃদু উৎসুক/ চঞ্চল দুটি ছোট পাখা নেড়ে;/ মানুষেরা মাঠে নামে। পথেঘাটে কলরব ব্যস্ত হাওয়ায়।’ এই দেখার তালিকা অনেক দীর্ঘ। গভীর ও নিবিড়ভাবে মানুষ ও প্রকৃতির আমত্মঃসম্পর্ক পর্যবেক্ষণ করেছেন কবি। দেখতে দেখতে নিজের ভেতরও কখনো কখনো উঁকি দিয়েছেন কবি। কখনো কাউকে চেয়েছিলেন কিনা সেই বিষয়টিও এড়িয়ে যান না তিনি। এইভাবে যিনি দেখতে জানেন, জীবন তাঁকে ফাঁকি দিতে পারে না। এই দেখার শক্তিই তাঁকে ঠেলে দেয় লেখার দিকে। কবি লিখেছেন –
সারাদিন গান বাঁধবার ছলে
কিছু না চাইতে
জীবনের কাছে যেটুকু পেলাম,
ফাঁকি দিয়ে পাওয়া যাবে না, হৃদয়, তারও পুরো দাম
দিয়ে যেতে হবে, নইলে সে-দেখা
কিছু না, সে-পাওয়া কিছু না। তা হলে
আরও কত কাল এভাবে কলম ঠেলতে বলো,
আরও কত কাল সন্ধ্যাসকাল লেখা-লেখা খেলা খেলতে বলো?
(‘পূর্বরাগ’, নীল নির্জন)
নীরেন্দ্রনাথ লিখেছেন। আমৃত্যু কলম সক্রিয় ছিল তাঁর। লেখালেখি কখনোই তাঁর কাছে খেলা ছিল না। জীবনকে ভালোবেসেছেন। সেই ভালোবাসার কথাই তিনি তাঁর নানা লেখায় ছড়িয়ে দিয়েছেন। সেই লেখা উড়ে বেড়ায়, ঘুরে বেড়ায়, ছড়িয়ে যায়, গড়িয়েও চলে কখনো কখনো। গড়িয়ে যেতে যেতে পাঠককে এমনভাবে জড়িয়ে ধরে যে, তা সংবেদনশীল মনকে প্রবলভাবে নাড়িয়ে দিয়ে যায় এবং তাতে সাড়া না দেওয়া পর্যন্ত কিছুতেই স্বস্তি মেলে না।
নীরেন্দ্রনাথের সৃজনপ্রতিভার প্রকাশ ঘটেছে বিচিত্র পথে। কবি ও ছড়াকার তিনি। প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক, এমনকি গোয়েন্দা-গল্পকার হিসেবেও তিনি খ্যাতি কুড়িয়েছেন। শিশু888sport live footballিক ও 888sport slot gameকাহিনির লেখক হিসেবেও তিনি নমস্য। সম্পাদক হিসেবেও তিনি অনুসরণযোগ্য। বানান-বিশেষজ্ঞ হিসেবে তিনি দুই বাংলায়ই সম্মান ও স্বীকৃতি পেয়েছেন। তবে এই লেখায় নানা নীরেন্দ্রনাথের মালা গাঁথা আমার উদ্দেশ্য নয় এবং তাঁর সৃষ্টিশীল সত্তার সকল দিকে দৃষ্টি দেওয়ার সামর্থ্যও আমার নেই। 888sport app download apk লেখি, পড়ি ও পড়াই এবং বুঝে-না-বুঝে 888sport app download apkর সঙ্গেই সংসারযাপন করি বিধায় এ-বিষয়ে দুয়েকটি কথা বলতে পারলে ভালো লাগে। নীরেন্দ্রনাথকে ভালোবেসে পাঠ করি এবং বলতে দ্বিধা নেই, তাঁর ভালোবাসার 888sport app download apkই আমাকে অধিকতর আকর্ষণ করে। নীরেন্দ্রনাথ আমাদের শিখিয়েছেন, ভালোবাসাই মানুষের সৃষ্টিশীল সত্তাকে সজীবতা দেয়, তাঁর অন্তর্গত অনুভব ও উপলব্ধিকে সবল, সক্রিয় ও গতিশীল করে তোলে। সেই সূত্রে তাঁর সমুদয় 888sport app download apkর শরীরেই ভালোবাসার উষ্ণতা টের পাওয়া সম্ভব। নীরেন্দ্রনাথের কাব্যগ্রন্থের তালিকা খুব সংক্ষিপ্ত নয়। নীল নির্জন (১৩৬১), অন্ধকার বারান্দা (১৩৬৭), নীরক্ত করবী (১৩৭১), নক্ষত্র জয়ের জন্য (১৩৭৬), কলকাতার যিশু (১৩৭৬), উলঙ্গ রাজা (১৯৭১), খোলা মুঠি (১৩৮১), 888sport app download apkর বদলে 888sport app download apk (১৩৮৩), আজ সকালে (১৯৭৮), পাগলাঘণ্টি (১৩৮৭), ঘর দুয়ার (১৯৮৩), সময় বড় কম (১৩৯০), যাবতীয় ভালবাসাবাসি (১৩৯২), ঘুমিয়ে পড়ার আগে (১৯৮৭), জঙ্গলে এক উন্মাদিনী (১৯৮৯), আর রঙ্গ (১৯৯১), চলিস্নশের দিনগুলি (১৯৯৪), সত্য সেলুকাস (১৯৯৫) ইত্যাদি কাব্যের আড়ালে নিশ্চয়ই আমরা একজন নীরেন্দ্রনাথ নয়, নানা নীরেন্দ্রনাথের দেখা পাবো এবং অবশেষে কবির সব পথ হয়তো একই পথে এসে মিলিত হতে চাইবে। একটি লেখায় নীরেন্দ্রনাথের সমগ্র কবিসত্তায় আলোকপাত করা অসম্ভব বলেই আমরা মনে করি। তাই এ-যাত্রায় তাঁর প্রথম পর্যায়ের কয়েকটি কাব্যগ্রন্থের আলোকে তাঁর 888sport live chatসত্তার সৌরভ ও সমৃদ্ধি, গতি ও গভীরতা অনুধাবনের চেষ্টা করব। বুঝে নিতে চাইব নীরেন্দ্রনাথ কীভাবে শব্দের শরীরে তাঁর ভেতর ও বাহিরকে গেঁথে দেন; খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করব সেই নীরেন্দ্রনাথকে, যিনি 888sport app download apk ও জীবনকে একই সমান্তরালে স্থাপন করে পাঠকচিত্তে অক্ষয় আসন নির্মাণ করে নেন।
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর 888sport app download apkর বৈষয়িক পরিধির দিকে দৃষ্টি দিলে বিস্মিত হওয়ার মতো কিছু খুঁজে পাওয়া যাবে বলে আমি বিশ^াস করি না। কোনো কবিকেই তাঁর 888sport app download apkর বিষয়ের নিক্তিতে মূল্যায়নে আমার আস্থা নেই। প্রত্যেক কবিই মানুষ ও প্রকৃতির সান্নিধ্যে 888sport live chatিত বোধে প্রাণিত হন, শুদ্ধ ও শাণিত হন। মানুষ ও প্রকৃতির বাইরে আর যা-কিছু আছে, তাও মানুষের উপলব্ধির দীপ্তিতেই বিশেষ ও ব্যক্তিত্বখচিত হয়ে থাকে। নীরেন্দ্রনাথের প্রথম কাব্যগ্রন্থ নীল নির্জন পাঠের অভিজ্ঞতা থেকে এ-কথা বলা যায়, এর নামকরণে প্রকৃতির যে আভাস, সেই প্রকৃতির সান্নিধ্যে কোনো স্বস্তিদায়ক ভূখ–র প্রতিশ্রম্নতি নির্মিত হয়নি, বরং বেদনায় নীল নিঃসঙ্গ মানুষের দুঃখ ও দীর্ঘশ^াসই এতে ধরা পড়েছে। প্রকৃতির শান্ত-স্নিগ্ধ পরিবেশে আরামযাপনের কথা তিনি বলেননি, ‘কাঁচ-রোদ্দুর, ছায়া-অরণ্য, হ্রদের স্বপ্ন’ ব্যর্থ হয়ে যায়, যখন দেখি কবির ‘বনে-বাদাড়ে শত্রম্ন ঘোরে,/ তাজা রক্ত, – শয়তান অব্যর্থ।’ ‘কাঁচ রোদ্দুর, ছায়া অরণ্য’ শীর্ষক 888sport app download apkর এই দৃশ্যপট আমাদের মনে করিয়ে দেয়, যন্ত্রণাক্লিষ্ট মানুষের রক্তাক্ত হদয়ের ছায়া পড়েছে কবির চারপাশের পৃথিবীতে –
ঝানু আকাশ ঝুঁকে পড়ে অবাক।
কাঁচা চামড়ার চাবুক হেনে
ছিঁড়ে টেনে খেলা জমছে :
এরা কারা, এ কী করছে?
লোহা-গলানো আগুন জ্বলছে, সাঁড়াশি –
যন্ত্রণার দুঃস্বপ্ন।
আপ্রাণ চেষ্টায় জলের উপর মাথা জাগিয়ে
আকাশ! আকাশ!
বাতাস টেনে শ^াসযন্ত্র আড়ষ্ট।
(‘কাঁচ রোদ্দুর, ছায়া অরণ্য’, নীল নির্জন)
রোদ্দুরের প্রতিশ্রম্নতি এখানে সুখকর নয়। তাই ‘প্রান্তরে জরায়ু-ভাঙা রক্তভ্রূণ’ এবং সেই অবসরে নড়ে ওঠে শকুনের ছায়া। এই 888sport app download apkয় আমরা যে ইয়াসিনের পরিচয় পাই, তাকে নিশ্চয়ই বিশ শতকের চলিস্নশের দশকের 888sport live chatস্রষ্টাদের প্রগতি888sport app download apkয় নানা অবয়বে মুদ্রিত হতে দেখব। পুরো 888sport app download apkয় যে-দৃশ্যকল্প ধরা পড়েছে, তাতে কোথাও আশা, ভরসা কিংবা ভালোবাসার কথা নেই। তাই এ-পথের যাত্রীরা ঘুমিয়ে পড়ে, পথও ক্লান্তিতে অবসন্ন হয়ে যায়। ফলে কবি দেখেন, ‘আকাশ ভিজিয়ে অন্ধকার জ্বলছে,/ আর/ মরা অরণ্যে হঠাৎ-আগুন-লাগা কানুসের চাঁদ উঠল,/ রাত্রি।’ এই অন্ধকার, মরা অরণ্য কিংবা রাত্রি আমাদের নিয়ে যায় সমর সেনের 888sport app download apkর দিকে, যদিও এই রচনায় আমরা নীরেন্দ্রনাথেই দৃষ্টি রাখব এবং দেখব, সময় কীভাবে তার স্বকালের স্রষ্টাদের দিয়ে নিজের ইতিহাস লিখিয়ে নেয়।
কবিপ্রতিভার মৌলসূত্র প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, 888sport app download apkয় ‘আপাত-নির্বোধ কতকগুলি শব্দের ভিতর থেকে আশ্চর্য সব আনন্দ ও যন্ত্রণাকে তৈরী করে তুলতে পারে। শব্দকে সে করুণ কিংবা আনন্দিত গানের মতো বাজাতে পারে।’ নীরেন্দ্রনাথ তাঁর কাব্যযাত্রার শুরুতেই শব্দকে গানের মতো বাজাতে পেরেছেন সন্দেহ নেই, কিন্তু এ-গান বড়ো বেদনার। কে জানে হয়তো দুঃখের বলেই এ-গানের ঢেউ এত তীব্রভাবে আমাদের বুকে আঘাত করে। এ-প্রসঙ্গে নীরেন্দ্রনাথের আরেকটি 888sport app download apkর কথা বলে ফেলি – ‘ঢেউ’। 888sport app download apkটিতে ঢেউহীন এক শুকনো হৃদয়ের কথা বলেছেন কবি। অকৃপণ হৃদয়ের অভাববোধ তাঁকে ব্যথিত করেছে। তাই ভাবছেন, অন্য কোথাও চলে যাবেন তিনি। কবির ভাষায় –
যে-মাঠে সোনা ফলানো যায়, আগাছা জমে ওঠে
সেখানে। এরা জানে না কেউ – কী রঙে ঝিলমিল
জীবন, – তাই বাঁচে না কেউ; দুয়ারে এঁটে খিল
নিজেকে দূরে সরায়, দিন গড়ায়। সেই সোনা
ঝরে না, ভেঙে পড়ে না ঢেউ – দুয়ারে মাথা কোটে,
এখানে মন বড় কৃপণ – এখানে থাকব না।
(‘ঢেউ’, নীল নির্জন)
না, চাইলেই অন্য কোথাও চলে যাওয়া যায় না। কবি যেহেতু ‘শাপভ্রষ্ট দেবশিশু’, তাই তাঁকে এই বৈরী বাস্তবতায়ই থেকে যেতে হয়, রেখে যেতে হয় হয় তাঁর দিনযাপনের 888sport sign up bonusলিপি। নীরেন্দ্রনাথও মাটি ও মানুষের নিকটবর্তী থেকে প্রাণের কথাগুলো গানের মতো করে বলতে চেয়েছেন।
নীরেন্দ্রনাথের অন্ধকার বারান্দা কতোটা তমসাচ্ছন্ন এবং কতটা আলোর প্রত্যাশায় উজ্জ্বল সেই সমীকরণে যাব না। কিন্তু এই গ্রন্থভুক্ত কয়েকটি 888sport app download apkর কাছে না গেলে নীরেন্দ্রনাথে অবগাহন অপূর্ণ থেকে যাবে। ‘দেয়াল’ 888sport app download apkয় একটু খেয়াল করলেই চোখে পড়বে, চারপাশে প্রতিবন্ধকতার বিচিত্র আয়োজন সত্ত্বেও যে-গান তিনি গেয়েছেন, শেষ পর্যন্ত তা দেয়াল ভাঙার গান : ‘ভাঙো আমার দেয়াল, আমার দেয়াল।’ ‘বারান্দা’ 888sport app download apkয় অরিন্দম সেনের মানসিক বিবর্তন দেখান কবি। সেই বিবর্তনের পথ বেয়ে উপস্থিত হয় কোনো এক উচ্ছিষ্ট কন্যা যা ‘সত্যসন্ধ নিষ্পাপ প্রেমিক’ অরিন্দম সেনকে এক দ-ও শান্তি দিতে পারে না। তাই ‘মেঘ-নদী-বৃক্ষলতাপাতার প্রণয়ে’ আশ্রয় নেয় সে। বাস্তবের প্রণয়িনী থেকে অরিন্দম যখন কল্পিত ‘এক আশ্চর্য প্রণয়িনী’কে আবিষ্কার করে, তখন প্রেম সম্পর্কে এক নতুন সিদ্ধান্তে উপনীত হয় সে। কবির ভাষায় –
তাই সমস্ত প্রগল্ভ ছিনিমিনি
শেষ হয়ে গেলে সেই প্রেমিক আবারও বুঝি পারে
হৃদয়ে জ্বালিয়ে নিতে আর-এক প্রসন্ন ভালোবাসা
বারান্দার এই মৌন বসন্তবাহারে।
(‘বারান্দা’, অন্ধকার বারান্দা)
নীরেন্দ্রনাথের একটি জনপ্রিয় 888sport app download apk ‘প্রিয়তমাসু’। এই 888sport app download apkয় প্রিয়তমার সমুদয় সংশয়কে মিথ্যে প্রমাণ করে দিয়ে প্রেমিক হৃদয়ের ক্ষমাশীলতার জয়গান গেয়েছেন। ক্ষোভকে অন্তরে আশ্রয় দিলেই নিষ্ঠুরতা ডালপালা বিস্তার করে। মনের ভেতর অন্ধকার ধরে রাখলে বাইরের আলোও মস্নান হয়ে যায়। অন্তরকে জাগানো ও জ্বালানোর জন্য যা দরকার তার নাম প্রেম। সেই প্রেমের কথাই এই 888sport app download apkয় ধারণ করেছেন কবি। এই 888sport app download apkয় কবি অন্ধকারকে পরাজিত হতে দেখেছেন :
তুমি বলেছিলে, তমিস্রা জয়ী হবে।
তমিস্রা জয়ী হল না।
দিনের দেবতা ছিন্ন করেছে অমারাত্রির ছলনা;
ভরেছে হৃদয় শিশিরের সৌরভে।
তুমি বলেছিলে, বিচ্ছেদই শেষ কথা।
শেষ কথা কেউ জানে?
কথা যে ছড়িয়ে আছে হৃদয়ের সব গানে, সবখানে;
তারও আছে বাঙ্ময় নীরবতা।
(‘প্রিয়তমাসু’, অন্ধকার বারান্দা)
প্রকৃতির সর্বত্রই যখন ক্ষমার আদর্শ চিত্রিত, তখন মনকে প্রসন্ন রাখাই শোভন। ‘নীলাভ রৌদ্রকিরণে ঝরে প্রশান্ত ক্ষমা,/ এবং পৃথিবী রৌদ্রকে ধরে প্রসন্ন করপুটে।/ দ্যাখো কোনোখানে কোনো বিচ্ছেদ নেই;/ আছে অনন্ত মিলনে অমেয় আনন্দ, প্রিয়তমা।’ এই আনন্দে প্রিয়তমার ওষ্ঠে কাঁপন লাগে কিনা কবি তা আমাদের জানাননি; কিন্তু তাঁর অন্ধকার বারান্দা নিশ্চয়ই নড়েচড়ে ওঠে।
‘মাটির হাতে’ শীর্ষক 888sport app download apkয় যন্ত্রণাদগ্ধ দিনরাত্রির কথা বলেছেন কবি। আকাশকুসুম কল্পনায় মানসিক প্রশান্তি নষ্ট করার কথা এই 888sport app download apkয় ধরা পড়েছে। কবি লিখেছেন : ‘বোঝেনি, রাত্রির ঝোড়ো হাওয়ায়/ যখন চলে মাতামাতি,/ জ্বলতে নেই কোনো আকাঙক্ষায়/ জ্বালাতে নেই মোমবাতি।’ যখন দেয়াল জুড়ে নিষেধ নড়েচড়ে, তখনো মন যেতে চায় অনেক দূরে। সুখের কথা হলো, কবি যার কথা বলছেন, সে এই বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায় এবং মোমবাতি জ্বেলে আকাশের মুখ দেখে নেয়। কবির ভাষায় : ‘তবু সে গিয়েছিল বারান্দায়,/ কাঁপেনি তবু তার বুক;/ তবু সে মোমবাতি জ্বেলেছে, হায়,/ দেখেছে আকাশের মুখ।’ সকল প্রতিবন্ধকতাকে পরাস্ত করে আকাশের মুখ দেখা এই মানুষটিকে আমরা নীরেন্দ্রনাথের 888sport app download apkয় বারবার ফিরে আসতে দেখি।
নীরেন্দ্রনাথের 888sport app download apkয় আকাশের উপস্থিতি সচেতন পাঠকের দৃষ্টি এড়ানোর কথা নয়। আলোর প্রসঙ্গে তিনি আকাশের কথা বলেন। অন্ধকারের রূপকল্প নির্মাণেও তিনি আকাশে হাত বাড়ান। মুক্তির অনুষঙ্গেও তাঁকে আকাশের শরণ নিতে হয়। তাঁর ‘অল্প-একটু আকাশ’ 888sport app download apkয় মুক্তির দ্যোতক হিসেবেই আকাশের দেখা মিলছে। 888sport app download apkর মানুষটি যখন বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন সেখানকার বাতাস জুঁইয়ের গন্ধে মন্থর হয়ে আছে। রেলিংয়ে হেলান দিয়ে লোকটি আকাশের দিকে তাকায় :
আকাশ!
এতক্ষণে তার মনে পড়ল,
সারাটা সকাল, সারাটা বিকেল আর সন্ধ্যা
কাজের পাথরে মাথা ঠুকতে-ঠুকতে, মাথা ঠুকতে-ঠুকতে
মাথা ঠোকাই তার সার হয়েছে।
কোনো কিছুই সে শুনতে পায়নি :
না একটা গান, না একটু হাসি।
এখন শুনবে।
কোনো-কিছুই সে দেখতে পায়নি;
না একটা ফুল, না একটু আকাশ।
এখন দেখবে।
(‘অল্প-একটু আকাশ’, অন্ধকার বারান্দা)
মধ্যবিত্তের রুটিনে বাঁধা দৈনন্দিন জীবনচিত্র 888sport app download apkটিতে অসাধারণ 888sport live chatসংহতি পেয়েছে। কাজের ভিড়ে নিজের জন্য একটু সময় বের করার সময় পান না অনেকেই। এই আকাশকে শ্রমক্লান্ত মানুষের মনের রূপকল্প হিসেবেও পাঠ করা সম্ভব। এই আকাশ দেখা অনেকটা নিজেকেই দেখা। নিজের সঙ্গে বোঝাপড়ার জন্য একটুকরো সময় বের করে নেওয়া। এই আকাশ দেখার পাশেই কবি নির্মাণ করেন দায়িত্বশীল দাম্পত্যজীবনের ছবি, রোগজর্জর বিমর্ষ দৃশ্যপট : ‘রুগ্ণ স্ত্রীকে মেজার-গ্লাসে-মাপা ওষুধ খাইয়ে,/ কুঁচকে-যাওয়া বালিশটাকে গুছিয়ে রেখে,/ ঘুমন্ত ছেলের ইজেরের দড়িটাকে আর-একটু আলগা করে দিয়ে,/ সে তাই বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল।’ এই লোকটির দাঁড়ানোর ভঙ্গিটি আমাদের চোখে ভাসে, আকাশের দিকে তাকিয়ে যে দীর্ঘশ্বাস ফেলে লোকটি, সেই দীর্ঘশ^াসের শব্দও আমরা শুনতে পাই।
‘জলের কল্লোলে’ কবি একটি নির্বান্ধব বাবলা গাছের শোকগাথা শুনিয়েছেন। নদীর ধারের এই বাবলা গাছটিকে একটি মানুষের রূপকল্পে হাজির করেছেন তিনি। দুঃখক্লান্ত বিপর্যস্ত মানুষ প্রকৃতির সান্নিধ্যে শক্তি সঞ্চয় করতে চায়, কিন্তু প্রকৃতির বুকেও যে দুঃখ লুকিয়ে থাকে, তা বোঝার মতো মন সবার থাকে না। যে বাস্তবতায় একটি গাছকে যখন গাছ বলে মনে হয় না, তখন মানুষই বা কতটুকু মানুষ হিসেবে জীবনযাপন করতে পারে? এ-প্রশ্নের উত্তর 888sport app download apkয় নেই। কিন্তু পাঠকের মনে এই প্রশ্নটিই ‘জলের মতো ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়’। কবির চোখে এই দৃশ্যকল্পটি দেখে নেওয়া যাক :
জলের কল্লোলে যে কারও কান্না ধ্বনিত হতে পারে,
অরণ্যের মর্মরে কারও নিশ্বাস,
সে তা বোঝেনি।
এবং ভাবেনি যে, নদীর ধারের সেই বাবলা গাছটাকে আজ
বিষণ্ণ একটা মানুষের মতো দেখাবে।
নদীকে সে তার দুঃখ জানাতে এসেছিল;
জানাল না।
সন্ধ্যার আগেই সে তার ঘরে ফিরে এল।
(‘জলের কল্লোলে’, অন্ধকার বারান্দা)
নীরেন্দ্রনাথ ‘তোমাকে বলেছিলাম’ 888sport app download apkয় ফিরে আসার প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছিলেন। কোন পথে ফিরে আসবেন তার চমৎকার বর্ণনা দিয়েছেন তিনি। ‘ডগডগে লালের নেশায় আকাশটাকে মাতিয়ে দিয়ে/ সূর্য যখন ডুবে যাবে,/ নৌকার গলুইয়ে মাথা রেখে/ নদীর ছল্ছল্ জলের শব্দ শুনতে-শুনতে’ ফিরে আসার ইচ্ছে ছিল তাঁর। কিন্তু ইচ্ছে হলেই যেমন চলে যাওয়া যায় না, তেমনি ইচ্ছে হলেই ফেরাও যায় না কখনো কখনো। চরম অতৃপ্তির দুঃখ এবং প্রতিশ্রম্নতি ভঙ্গ করার দীর্ঘশ^াসে ভারাক্রান্ত এই 888sport app download apkটি। এই দীর্ঘশ্বাসের সমান্তরালেই প্রবাহিত ও প্রসারিত হয়েছে নীরেন্দ্রনাথের ‘অমলকান্তি’ 888sport app download apkটি। এই জনপ্রিয় 888sport app download apkটি নিয়ে বিসত্মৃত আলোচনা অনাবশ্যক। অমলকান্তির অচরিতার্থ আত্মার রোদন পাঠকের মন থেকে মুছে যায় না সহজে। মাস্টার-ডাক্তার-উকিলের মতো বস্ত্তবাদী কিংবা বাস্তববাদী নয় বলেই বোধকরি অমলকান্তির এই ভোগান্তি। অন্ধকার ছাপাখানায় কাজ করা এই মানুষটির জন্য পাঠকের উপচেপড়া দরদ ও দীর্ঘশ^াস কাল থেকে কালান্তরে ছড়িয়ে পড়ে। এই রোদ্দুর-হতে-চাওয়া মানুষটার কথা ভুলে যাওয়ার আগেই কবি মেঘ-হতে-চাওয়া একজন মানুষের গান শোনান। ‘হলুদ আলোর 888sport app download apk’য় নীরেন্দ্রনাথ লিখেছেন –
আকাশে গৈরিক আলো। হেমন্ত-দিনের মৃদু হাওয়া
কৌতুকে আঙুল রাখে ঘরের কপাটে,
জানালায়। পশ্চিমের মাঠে
মানুষের স্নিগ্ধ কণ্ঠ। কে জানে মানুষ আজও মেঘ
হতে গিয়ে স্বর্ণাভ মেঘের স্থির ছায়া
হয়ে যায় কি না। তার সমস্ত আবেগ
হয়তো সংহত হয় রোদ্দুরের হলুদ উত্তাপে।
আলো কাঁপে। সারাদিন কাঁপে।
(‘হলুদ আলো 888sport app download apk’, অন্ধকার বারান্দা)
নীরেন্দ্রনাথ পাঠককে কেবল দৃশ্যের সম্মোহনেই ধরে রাখেন না, কখনো কখনো তিনি নিয়ে যান ‘দৃশ্যের বাইরে’। এই 888sport app download apkয় কবি একজন সিতাংশুর গল্প শোনান যার সব কথাই কবি জানেন। এই সিতাংশুর কোথাও শান্তি নেই। না ঘরে না বাইরে, কোথাও স্বস্তির নিশ^াস নেওয়ার সুযোগ নেই। কেবলি অন্ধকারের জটিল আবর্তে ঘুরপাক খায় সিতাংশুর জীবন। সিতাংশুর উদ্দেশে কবি বলছেন, ‘তোর ঘরের চরিত্র আমি জানি।/ ওখানে অনেক কষ্টে শোয়া চলে, কোনোক্রমে দাঁড়ানো চলে না।/ ও-ঘরে জানালা নেই, আর/ ও-ঘরে জানালা নেই, আর/ মাথার দু’ইঞ্চি মাত্র ঊর্ধ্বে ছাত। মেঝে/ স্যাঁতসেতে। দরোজা নেই। একটাও দরোজা নেই।/ তোর চারদিকে কাঠের দেয়াল।’ এই সিতাংশুর সঙ্গে বস্ত্তবিশে^ নিমগ্ন যে-কোনো মানুষের ভাগ্যলিপিই মিলিয়ে নেওয়া যায়। এই 888sport app download apkয় যে ঘরের কথা কবি বলেছেন, এই রকম ঘরের দেখা আমাদের ঘরে ঘরে মিলবে, কিন্তু এ-রকম নীরেন্দ্রনাথের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব হয় না, যিনি চোখে আঙুল দিয়ে আমাদের দুরবস্থার চিত্রপট তুলে ধরবেন। তাই সিতাংশুর সঙ্গে মিলিয়ে নিতে ইচ্ছে করে মধ্যবিত্তের এই বিভঙ্গ রূপ –
সিতাংশু, আমি যে তোর সমস্ত কথাই জেনে গেছি।
আমি জেনে গেছি।
দৃশ্যের ভিতর থেকে দৃশ্যের বাহিরে
প্রেম-ঘৃণা-রক্ত থেকে প্রেম-ঘৃণা-রক্তের বাহিরে
গিয়ে তোর শান্তি নেই, তোর
শান্তি নেই, তোর
ঘরের ভিতরে বড় অন্ধকার, বড়
অন্ধকার, বড়
বেশি অন্ধকার তোর ঘরের ভিতরে।
(‘দৃশ্যের বাহিরে’, অন্ধকার বারান্দা)
এই সিতাংশুর দর্পণে কবি হয়তো নিজেকেই দেখে নিয়েছেন এবং সেইসঙ্গে আমাদেরও সুযোগ করে দিয়েছেন নিজেদের নেড়েচেড়ে দেখার। অন্ধকারে অন্ধকার ঘষতে ঘষতে একদিন সিতাংশুর ঘরেও কি আলো জ্বলবে না? হয়তো জ্বলবে। নীরেন্দ্রনাথের 888sport app download apkয় তো আমরা সেই আলো জ্বালাবার মন্ত্রও উচ্চারিত হতে দেখি।
আগেই বলেছি, তাঁর 888sport app download apkর অন্ধকার স্বকালপ্রসূত এবং তাঁর সমকালের প্রত্যেক কবিকেই আমরা এই অন্ধকার-সন্দর্শনে লিপ্ত হতে দেখি। কাব্য-সমালোচক মাসুদুজ্জামান 888sport apps ও পশ্চিম বাংলার 888sport app download apk : তুলনামূলক ধারা শীর্ষক বইয়ে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর 888sport app download apkর প্রধান প্রসঙ্গ হিসেবে হৃদয় ও প্রকৃতির কথা উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, ‘রোমান্টিকতার বিভিন্ন অন্তর্লক্ষণ-অনির্দেশ্য বেদনাবোধ, বিস্ময়, রহস্যময়তা, স্বপ্নকল্পনা, বিষণ্ণতা’ ইত্যাদিও নীরেন্দ্রনাথের প্রথম পর্যায়ের 888sport app download apkয় বিশেষভাবে লক্ষ করা যাবে। সমালোচকের এই বিবেচনায় আমাদের সমর্থন আছে। কারণ হৃদয় ও প্রকৃতির বাইরে আর যা আছে তাও হৃদয়ঙ্গম করার সামর্থ্য প্রত্যেক সৃষ্টিশীল মানুষেরই সহজাত। দ্বিতীয় গ্রন্থ অন্ধকার বারান্দা বিষয়ে মাসুদুজ্জামানের মূল্যায়ন, ‘দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ থেকে তাঁর 888sport app download apkয় ঘটতে শুরু করে একধরনের রূপান্তর। এই কাব্যগ্রন্থে কবির বেদনাবোধ সর্বপ্রথম খুঁজে পায় বাস্তবতার ভিত্তি। বিবর্তন দেখা দেয় প্রকৃতিচেতনায়। এছাড়া এই সময় থেকেই দেখতে পাওয়া যাবে 888sport app download apkয় হৃদয়ের ব্যক্তিগত ভূমিকাও হয়ে পড়ছে কিছুটা নিষ্প্রভ। কবি জড়িয়ে পড়েছেন নানা নতুন প্রসঙ্গে। মানুষ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর প্রসঙ্গ সরাসরি উপজীব্য হয়েছে তাঁর 888sport app download apkয়, তীব্র মানবিকতার দ্বারাও বিব্রত হচ্ছেন তিনি।’ সমালোচকের এই মূল্যায়ন অন্ধকার বারান্দা প্রসঙ্গে হলেও, আমাদের বিবেচনায়, নীরেন্দ্রনাথের সমগ্র কাব্যের কেন্দ্রে জায়গা করে নিয়েছে মানুষ, বিশেষভাবে মধ্যবিত্ত শ্রেণির নানা আশা-নৈরাশ্যের দোলাচলতা। যে-জীবন তিনি যাপন করেছেন, সেই জীবনকেই তিনি 888sport live chatের দর্পণে দেখে নিতে চেয়েছেন যা তাঁর ভক্তপাঠকের জীবনচর্চারও সমান্তরাল। রবীন্দ্রনাথের বরাত দিয়ে হয়তো বলা যায়, এর নাম সত্য মূল্য দেয়া। জীবননিষ্ঠ 888sport live chatস্রষ্টার কাছেই আশাবাদী মানুষ জীবন ও মনুষ্যত্বের নতুন পাঠ নিতে চায়।
নীরক্ত করবী কাব্যগ্রন্থের নামকরণের মধ্যেই রক্তশূন্যতার আভাস মুদ্রিত, যদিও দুঃখ-যন্ত্রণা-হতাশা-আঘাত-মৃত্যু-রক্তপাতের কথাই এই কাব্যগ্রন্থে অধিকতর প্রকাশ পেয়েছে। রক্তকরবীর বুক থেকে রক্ত শুকিয়ে গেলে তা কেবল শক্ত হাতের প্রত্যাখ্যানেই জর্জরিত হয়, কোমলতা কিংবা স্নিগ্ধতার মতো মায়াবী ও মানবিক প্রতিশ্রম্নতি মেলে না। তাই প্রতিশ্রম্নতিহীন সময় ও মানুষের কথা নীরক্ত করবীতে বারবার চিত্রিত হতে দেখি। প্রসঙ্গত ‘মিলিত মৃত্যু’ 888sport app download apkর কথা বলা যাবে, যেখানে সম্মতি ও সহমতের একাধিক মৃত্যুদৃশ্য ধারণ করেছেন কবি। তাঁর পরামর্শ দ্বিমত হওয়ার, দ্বিতীয় বিদ্যায় আস্থা রাখার, প্রশ্নের পাথরে বিক্ষত হওয়ার, বুদ্ধির নখে শাণ দিয়ে প্রতিবাদ করতে শেখার। কবি বলছেন, ‘অন্তত আর যা-ই করো, সমস্ত কথায়/ অনায়াসে সম্মতি দিও না।/ কেননা, সমস্ত কথা যারা অনায়াসে মেনে নেয়,/ তারা আর কিছুই করে না,/ তারা আত্মহননের পথ/ পরিষ্কার করে।’ কবির এই উচ্চারণকে যুক্তিবাদী হওয়ার পরামর্শ হিসেবে মেনে নিয়ে স্বস্তি পাওয়ার সুযোগ এই 888sport app download apkয় নেই। এই 888sport app download apkয় ‘কায়মনোবাক্যে এক হতে’ যাওয়া শুভেন্দু ও সুধার যে পরিণতি দেখিয়েছেন নীরেন্দ্রনাথ, তাতে বোঝা যায় কবির পক্ষপাত সম্মতির দিকেই প্রসারিত। একই ঘটনা লক্ষ করি মৃণ্ময় পাকড়াশি ও মায়ার বেলায় : ‘মৃণ্ময় আর মায়া নিজেদের মধ্যে কোনো বিভেদ রাখেনি।/ তারা বেঁচে নেই। চিল্কায় একান্নবর্তী হতে গিয়ে কেউই বাঁচে না।’ মধুর ও প্রত্যাশিত সম্মতির এই পরিণাম থেকে বোঝা যায়, এই 888sport app download apkয় অসম্মতি ও দ্বিমত প্রকাশের যে-কথা কবি বলেছেন, তা তাঁর মনের কথা নয়। মিলিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচার জন্য ‘যে যার আপন রঙ্গে’ থাকার প্রস্তাব দিয়েছেন নীরেন্দ্রনাথ। 888sport app download apkটি শেষ হয়েছে যুগল নয়, বরং সম্মিলিত মৃত্যুদৃশ্যের আশঙ্কায় :
ওই দ্যাখো কয়েকটি অবিবাদী স্থির
অভিন্নকল্পনাবুদ্ধি যুবক-যুবতী হেঁটে যায়।
পরস্পরের সব ইচ্ছায় সহজে ওরা দিয়েছে সম্মতি।
ওরা আর তাকাবে না ফিরে!
ওরা একমত হবে, ওরা একমত হবে, ওরা
একমত হতে-হতে কুতুবের সিঁড়ি
বেয়ে ঊর্ধ্বে উঠে যাবে, লাফ দেবে শূন্যের শরীরে।
(‘মিলিত মৃত্যু’, নীরক্ত করবী)
সম্মত যুবক-যুবতীর ইচ্ছের স্বাধীনতা যারা হরণ করে, তাদের কথা এই 888sport app download apkয় অনুপস্থিত। কিন্তু পাঠক হিসেবে আমরা সহজেই তাদের চিনে নিতে পারি। নীরেন্দ্রনাথের এই ব্যঙ্গাত্মক বাকভঙ্গি এই 888sport app download apkর শরীরে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে।
সাহস হারানো, বিবরবাসী, প্রতিবাদহীন মানুষ বাঘের দৃঢ়দৃপ্ততা ও দুঃসাহসে পুলক বোধ করে, কিন্তু পছন্দ করে বেড়ালের মতো জীবনযাপন করতে। ‘বাঘ’ 888sport app download apkয় নীরেন্দ্রনাথ বাঘের অবাধ গতিবিধির ছবি এঁকেছেন। ‘অন্ধকার বনের নিয়তি’ এই বাঘের ‘প্রকা- শরীরে/ চমকায় হলুদ জ্বালা। বড় জ্বালা। শোণিতে শিরায়/ যেন ঝড়-বিদ্যুতের গতি/ সংবৃত রাখার জ্বালা বুঝে নিতে-নিতে/ বাঘ যায়। বনের আতঙ্ক হেঁটে যায়।’ এই 888sport app download apkয় শেষ চরণে এসে কবির উদ্দেশ্য আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়, যখন তিনি বলেন, ‘আমরা নিশ্চিতে বসে বাঘ দেখি ডিস্নির ছবিতে’।
নীরক্ত করবীর নাম888sport app download apkয় পূর্বাকাশের শুদ্ধ উদ্ভাস দেখা পূর্বপুরুষের কথা বলেছেন কবি। এ এক আশ্চর্য উদ্ভাস ‘যাকে দেখে মনে হত, নিহত সিংহের পিঠে গর্বিত পা রেখে/ স্বর্গের শিকারী দাঁড়িয়েছে।’ এই উচ্চারণে আমাদের সাহসী পূর্বপূরুষের সৌভাগ্যের 888sport sign up bonus ধরা পড়েছে। ক্রমশ সাহস হারানো কবির স্বকালের মানুষগুলো যে রোদ্দুরে স্নান করে, তার পেটেও জমাটবদ্ধ অন্ধকার : ‘যেহেতু উদরে অমস্ন, রক্তে বমনের ইচ্ছে নিয়ে/ তবু সহাস্য হাঁটে সুবেশ যুবক,/ যেহেতু শয়তান তার শখ/ মেটাবার জন্য পারে ঈশ^রের মুখোশ ভাঙাতে,/ অতএব অন্ধকার রাতে/ মায়ারী রোদ্দুর দেখা অসম্ভব নয়।’ দুঃসময়ে জৌলুস ও পৌরুষ-হারানো মানুষগুলো অসুস্থতা শরীরে লালন করে মরার মতো বেঁচে থাকতে চায় বলেই শয়তান সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং ঠিক তখনই ঈশ^রের আসল চেহারা উন্মোচিত হয়। শরীর ও মনে সমুদয় শক্তি যারা শুষে নেয়, এই 888sport app download apkয় তাদের কথা নেই, কিন্তু শক্তিহীন মানুষ রৌদ্রযাপন করে স্বপ্নের ভেতর। এই কল্পবিলাসের পরিণতি যে সুখকর হয় না, এই 888sport app download apkয় আমরা তারই আভাস পাই :
রৌদ্রের বাগানে রক্তকরবীনিচয়
ফুটেছে, ফুটুক।
আমি রক্তকরবীর লজ্জাহীন প্রণয়ে যাব না।
এখন যাব না।
রৌদ্র যে মুখোশ নয়, ঈশ^রের মুখ,
আগে তা সুস্থির জেনে নেব।
না-জেনে এখনই আমি বাহির-দুয়ারে দাঁড়াব না।
(‘নীরক্ত করবী’, নীরক্ত করবী)
রৌদ্রের বাগানে রক্তকরবীর সম্মোহন সত্ত্বেও কবি তা অনায়াসে প্রত্যাখ্যান করছেন, কারণ হিসেবে দাঁড় করাচ্ছেন এর লজ্জাহীন প্রণয় নিবেদনকে। কবি জানেন, প্রকৃত রৌদ্রে কোনো মুখোশই অক্ষত থাকে না। ঈশ^রের মুখ দেখার এই ব্যাকুলতার আড়ালে সত্য উন্মোচনের আশাবাদ পরিব্যাপ্ত। বাহির-দুয়ারে না-দাঁড়ানোর কথা থেকে বুঝে নেওয়া যায়, অন্তরের দুয়ার খুললেই সত্য-মিথ্যের প্রভেদ স্পষ্ট হতে পারে।
‘স্বর্গের পুতুল’ 888sport app download apkয় নীরেন্দ্রনাথ সম্রাট, সৈনিক, বেশ্যা, জাদুকর, 888sport live chatী ও কেরানি, কবি, অধ্যাপক সবাইকে উজ্জ্বল আলোর নিচে নত হতে দেখেছেন। প্রত্যেকের এই ভূমিকা যেন পূর্বনির্ধারিত। এই উজ্জ্বল আলো হয়তো পার্থিব সমৃদ্ধির ঝলকিত বাস্তবতার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে। বিত্ত ও বৈভব সমগ্র বিশ^কেই তার করায়ত্ত দেখতে চায়, মানুষ ও যন্ত্রের ব্যবধান মুছে দিতে চায়। পুঁজিবাদের তীব্র থাবার নিচে নত হওয়ার এই নিয়তি থেকে তাই কেউ রেহাই পাচ্ছে না :
কেউ বেশি, কেউ কম, কিন্তু প্রত্যেকেই নত হবে
উজ্জ্বল আলোর নীচে একবার।
না-কেনা বেচা পণ্য, স্বর্গের তটিনী
সারাদিন জ্বলে;
এবং সৈনিক, বেশ্যা, কলাবিদ, ভাড়াটিয়া গু-া, কারিগর
একবার যেখানে যায়, যে-যার ভূমিকা অনুযায়ী
নত হয়; স্বর্গ থেকে প্রলম্বিত আলোর সলিলে
মুখ প্রক্ষালন করে নেয়।
ঘরের বাহিরে জ্বলে দৈব জলধারা;
দ্যাখো আলো জ্বলে, দ্যাখো আলোর তরঙ্গ জ্বলে, আলো –
সকালে দুপুরে সারাদিন।
স্বর্গের তটিনী জ্বলে, আলো জ্বলে, আলো,
যেখানে দাঁড়াও।
(‘স্বর্গের পুতুল’, নীরক্ত করবী)
নীরেন্দ্রনাথের 888sport app download apkয় রোদ্দুর কিংবা আলো উজ্জ্বল আগামীর দ্যোতক হিসেবে ধরা দিলেও এই 888sport app download apkয় যে আলো ঝলমল দৃশ্যপট মুদ্রিত, তা মোটেও স্বস্তিদায়ক নয়। ধনতন্ত্রের মন্দিরে প্রণত হওয়ার এক ভয়াল ছবি এই 888sport app download apkর শরীরে এঁটে দিয়েছেন কবি। ‘স্বর্গের পুতুলে’র মতোই ‘সূর্যাস্তের পর’ 888sport app download apkয় নীরেন্দ্রনাথ বৈরী বাস্তবতার কথা বলেছেন। ‘শত্রম্নরা নিপাত যাক’ বলা হলেও শত্রম্ন চিহ্নিত করার কোনো প্রয়াস এখানে লক্ষ করি না। এই 888sport app download apkয় শিকারি জন্তুর মতো রাত্রির উপস্থিতি সত্ত্বেও এই রাত্রিপূজায় পারদর্শী মানুষগুলোকে আরো হিংস্র ও ভয়ংকর মনে হয় : ‘দিগন্ত থেকে গুঁড়ি মেরে/ ঠিক একটা শিকারি জন্তুর মতন/ রাত্রি এগিয়ে আসছে।’ এই রাত্রিপূজার জন্য নিষ্পাপ ফুলগুলোকেও তাই ঘাড় মুচড়ে নিয়ে আসতে হয়। ‘নরকবাসের পর’ 888sport app download apkয় কবির পুরনো বন্ধুদের মধ্যে অমল, স্নেহাংশু, অমিতাভের নাম করে উল্লেখ করেছেন। নরক থেকে ফিরে আসার পর সবার খোঁজখবর নিচ্ছেন তিনি। নরকে আগুন থাকলেও নিশ্চয়ই রোদ্দুর নেই, আঁধার
থাকলেও আকাশ নেই। কবি জানাচ্ছেন : ‘আমি দীর্ঘ এক যুগ রোদ্দুরের ভিতরে যাইনি।/ আকাশ দেখিনি।’ নরক-যন্ত্রণাকাতর একজন মানুষ সুস্থতার জন্য প্রকৃতির কাছে ফিরে যেতে চাচ্ছে :
উপরে আকাশ, নীচে অনন্ত সুন্দর জলরাশি,
পিছনে পাহাড়,
শোণিতে দৃশ্যের আলো জ্বলে।
আমি এইখানে এই বান-ডাকা রৌদ্রের বিভায়
অবিকল মাননীয় বৃক্ষের মতন
দু’দ- দাঁড়াব।
স্বাস্থ্য ফিরাবার জন্য এখন খানিক পথ্য প্রয়োজন হবে।
আমি এইখানে এই সমুদ্রবেলায়
অফুরন্ত নীলিমার নীচে
প্রত্যহ এখন যদি একগ্লাস টাট্কা রোদ খেয়ে যেতে পারি,
তবে আমি সুস্থ হয়ে যাব।
(‘নরকবাসের পর’, নীরক্ত করবী)
সুস্থতার এ এক আশ্চর্য কৌশল। নীরেন্দ্রনাথের অনেক 888sport app download apkয়ই আমরা রোদ্দুর দেখেছি এবং সেই রোদ্দুরে হাত-পা ছড়িয়ে স্বস্তিও পেয়েছি। কিন্তু রৌদ্রসেবনের মাধ্যমে ভগ্নস্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের চেষ্টা অভিনবই বলতে হয়। এই অভিনবত্বের আড়ালে লুকিয়ে আছে আরেক নির্মম বাস্তবতা। যে-নরকের ক্ষত তিনি শরীর ও মন থেকে মুছে ফেলতে চাইছেন, তা নিশ্চয়ই দূরকল্পিত খ- নয়। রৌদ্র সেখানে প্রবেশ করে না, দেখা যায় না নীল নির্মল আকাশ। এই দূষিত দৃশ্যের খোঁজ নিতে হলে কবির স্বকালের দিকেই আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে।
নক্ষত্র জয়ের জন্য কাব্যগ্রন্থে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী অনেক বেশি নিমগ্ন হয়েছেন নিজের মধ্যে। বাইরের ঝড়-ঝাপটা তাতে কম নেই, কিন্তু সবকিছুকেই সোজাসাপটা ঘটনার আড়ালে না সাজিয়ে নিজের মধ্যে সেঁটে দিয়েছেন কবি। ফলে 888sport app download apkয় ভাষাও আগের চেয়ে অনেক বেশি স্নিগ্ধ ও সাবলীল মনে হয়। নিজের সঙ্গে কথোপকথনের এই ভঙ্গিতেই নীরেন্দ্রনাথ অনেক বেশি স্বতঃস্ফূর্ত। পূর্বে আলোচিত কাব্যগ্রন্থের অনেক 888sport app download apkর শরীরেও কবির এই আত্মলীন মুগ্ধতা বা আত্মকথনের সজীবতা ছায়া ফেলেছে। এই কাব্যের ‘888sport app download apk কল্পনালতা’ নামটি তিনি এমন এক কবির কাছ থেকে ধার করেছেন, যাঁর ঋণ শোধ করার কথা আমরা ভাবি না। তাঁর 888sport app download apkর পরিপ্রেক্ষিত ১৯৬৫ সালের সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক বাস্তবতায় কীভাবে পালটে গেছে, তারই কিছু কৈফিয়ত এই 888sport app download apkয় উচ্চারিত হয়েছে। 888sport app download apk কল্পনালতায় কবির অবিশ^াস। 888sport live footballক্যাফে শীর্ষক এই অনলাইন পত্রিকায় সৈয়দ হাসমত জামিলকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেছেন, ‘888sport app download apk কল্পনালতা’য় আমি বিশ্বাস করি না। আমি এমন কোনও মানুষ নিয়ে লিখিনি যাকে আমি দেখিনি, যার কথা আমি শুনিনি বা যে আমার ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। এমন কোনও রাস্তা নিয়ে আমি লিখিনি যার ধুলো আমাকে স্পর্শ করেনি। এমন কোনও গাছ নিয়ে লিখিনি যে গাছ আমি চিনি না। তবে 888sport app download apkর বাড়তি একটা ব্যাপার থাকে – যেটুকু বলছি, শুধু সেইটুকুই বলছি কি? যদি 888sport app download apkর মধ্যে বাড়তি কোনও ব্যঞ্জনা উঁকি না দেয়, তাহলে বুঝতে হবে সে লেখা হয়নি।’ এ তো গেল তাঁর গদ্যভাষ্য। কিন্তু 888sport app download apkয় এই উপলব্ধি কীভাবে 888sport live chatসংহতি লাভ করেছে, সেটা বিবেচনার দাবি রাখে। 888sport app download apk কী? 888sport app download apk কীভাবে 888sport app download apk হয়ে ওঠে? – এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই তিনি বুঝেছেন, কল্পনার শরীরে লতিয়ে ওঠা কথামালাই 888sport app download apk নয়। 888sport app download apk অন্যকিছু, যেখানে বিচিত্র আকার-ইঙ্গিত ও আভাস থাকে, যা কথিত বাস্তব কিংবা সত্যের চেয়েও অধিক লক্ষ্যভেদী হয়। শুধু কল্পনাদেবীর আশীর্বাদে পুষ্ট হয়ে 888sport app download apkচর্চার দিন ফুরিয়ে গেছে বলেই তিনি দৈবশক্তির ওপর ভরসা করতে রাজি হচ্ছেন না :
আমিও কি বসে থাকব? আমিও কি একবার বুঝব না
কুয়াশার অন্তরালে অন্য কোনো মূর্তি নেই?
এই অবয়বহীন ধবধবে দৃশ্যের আড়ালে
অন্য কোনো দৃশ্য নেই?
থাকলেও দ্বিতীয় এক কুয়াশার দৃশ্য পড়ে আছে,
জেনে কি একেই আমি 888sport app download apkর সম্মান দেব না?
888sport app download apk মানে কি আজও কল্পনালতায় কিছু কুসুম ফোটানো?
888sport app download apk মানে কি এই কুয়াশার ভিতরে একবার
বাঘ সিংহ হায়েনা ইত্যাদি
পশুর দাঁতের শক্তি বুঝে নেওয়া নয়?
(‘888sport app download apk কল্পনালতা’, নক্ষত্র জয়ের জন্য)
888sport app download apkর প্রকৃতি ও পরিসর পালটে দেওয়ার যে-প্রতিশ্রম্নতি এই 888sport app download apkয় বিধৃত তা স্পষ্ট এবং লক্ষ্যাভিমুখী। কবি বিশ^াস করেন, ‘স্পষ্ট কথাটাকে আজ অন্তত একবার খুব স্পষ্ট করে বলে নেওয়া ভাল।’ কবির সামনের পৃথিবী যে-সকল দৃশ্যের দখলে, সেখানে কেবলই ‘ধোঁয়া বা পাহাড় কিংবা পরস্পর-আলাপনরত ক্ষিপ্ত পশু’। ধোঁয়া ও কুয়াশার আড়ালে অদৃশ্য হয়ে যায় কল্পনালতার ফুল, মগজে বসবাসরত কুয়াশার বিরুদ্ধে যে 888sport app download apk লড়াই করতে জানে, সংগত কারণেই তার অন্তর ও অবয়ব, স্বভাব ও সংবেদন হবে অন্যরকম :
888sport app download apkকে ভালবেসে, ক্রমাগত ভালবেসে-বেসে
তোমাকে আমাকে আজ অন্তত একবার
ভিতর-বাহিরে ব্যাপ্ত অন্তহীন কুয়াশায়
আলাপে-উৎসুক ধূর্ত বাঘের খাঁচার মধ্যে হেঁটে যেতে হবে।
(‘888sport app download apk কল্পনালতা’, নক্ষত্র জয়ের জন্য)
নীরেন্দ্রনাথের একটি অসাধারণ 888sport app download apk ‘বাতাসি’। কোনো অচেনা অদেখা বাতাসি কবির মনে যে জায়গা করে নিয়েছে, পুরো পৃথিবী জুড়ে তিনি তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। ট্রেনে যেতে যেতে বাতাসির খোঁজে অস্থির একজন মানুষের ছবি তিনি মন থেকে মুছে ফেলতে পারছেন না। বাতাসিকে খুঁজে চলা লোকটির ‘টুকরো টুকরো কথাগুলি যেন বড় বেশি/ গোঁয়ার মাছির মতো/ জ্বালাচ্ছে’ কবিকে। বাতাসির ভাবনার স্রোত বেয়ে কবির মনে ভেসে ওঠে একজন হেমাঙ্গের মুখ কিংবা ‘ট্রাম-স্টপে দাঁড়িয়ে পাশের/ মেয়েটিকে অদ্ভুত কঠিন স্বরে’ ‘সেইরকম শাস্তি দেব বলে’ শাসিয়ে চলা ছেলেটির কথাও কবিকে অস্থির করে তোলে। সকল চিমত্মা ও কর্মের ভেতরে যে-দৃশ্যাবলি নড়েচড়ে ওঠে তা পূর্ণাঙ্গ গল্পের অবয়ব লাভ করে না কিছুতেই। কবি বলছেন :
গল্পের সবটা আমি নাগালে পাব না।
শুনে শুনে যাব। শুধু এখানে-ওখানে,
জনারণ্যে, বাসের ভিতরে, হাটেমাঠে
অথবা ফুটপাথে, কিংবা ট্রেনের জানলায়
টুকরো-টুকরো কথা শুনব, শুধু শুনে যাব। আর
হঠাৎ কখনও কোনো ভূতুড়ে দুপুরে
কানে বাজবে : ‘বাতাসি! বাতাসি!’
(‘বাতাসি’, নক্ষত্র জয়ের জন্য)
এই বাতাসির জন্য কবির বিহবল অস্থিরতার কোনো নাম হয় না। কবিমন কীভাবে সহজ-স্বাভাবিক-তুচ্ছ ঘটনায় শিহরিত হয়, এই 888sport app download apk পাঠে তার কিছুটা আঁচ করা যায়। 888sport app download apkটিতে মানুষের জন্য ভালোবাসার কথা বিশেষ ঘটনাসূত্রে গ্রথিত হয়েছে, যদিও অমানুষের জন্য কবির ভালোবাসায় ভাটা পড়েনি। ‘অমানুষ’ 888sport app download apkয় শিম্পাঞ্জির সঙ্গে আলাপ-প্রসঙ্গে তা ধরা পড়েছে। একটি বিমর্ষ শিম্পাঞ্জিকে দুঃখিতভাবে ঝিলের কিনারে বসে থাকতে দেখে কবির মন বিষণ্ণ হয়ে যায়। কবি দেখলেন, ‘চাঁপাকলা, বাদাম, কাবলি-ছোলা – সবকিছু/ উপেক্ষিত ছড়ানো রইল’ কিন্তু শিম্পাঞ্জি কোনো সাড়া দিলো না, শুধু ‘দুঃখী মানুষের মতো হাঁটুর ভিতরে মাথা গুঁজে’ ঝিলের ধারে চুপ করে বসে রইল। এই শিম্পাঞ্জির দুঃখ বোঝার চেষ্টা করছেন কবি, শিম্পাঞ্জির উদ্দেশে বলছেন, ‘তুমি মানুষের মতো/ হতে গিয়ে লক্ষ-লক্ষ বছরের সিঁড়ি/ ভেঙে এসেছিলে, তবু মাত্রই কয়েকটা সিঁড়ি টপকাবার ভুলে/ মানুষ হওনি। এই দুঃখে তুমি ঝিলের কিনারে/ বসে ছিলে নাকি?’ কবির ধারণা, এই মানুষ না-হতে-পারার দুঃখেই শিম্পাঞ্জির মন আজ বিষণ্ণ। বিবর্তনবাদের 888sport apkসম্মত ব্যাখ্যার একটি 888sport live chatসম্মত দৃশ্যপট ধারণ করেছেন কবি, যদিও তাঁর ধারণা, শিম্পাঞ্জির চেয়ে বানরের সঙ্গেই মানুষের ঐক্য অধিক : ‘হয়তো দেখনি তুমি, কিংবা দেখেছিলে,/ দর্শকেরা পুরোপুরি বাঁদুরে কায়দায়/ তোমাকে টিট্কিরি দিয়ে বাঘের খাঁচার দিকে চলে গেল।’ স্বভাবে বাঁদুর হলেও বাঘের দিকেই মানুষের আগ্রহ বেশি, যদিও বাঘের সাহস তাকে প্রতিবাদ-প্রতিরোধে উদ্দীপিত করে না।
নীরেন্দ্রনাথের জীবনদর্শন ধরা পড়েছে ‘তার চেয়ে’ 888sport app download apkয়। এ-888sport app download apkয় সকলকে না জ্বালিয়ে একা একা জ্বলে যাওয়ার কথা বলেছেন কবি। জ্বলতে জ্বলতে ফুরিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন, ‘মুখের কশ বেয়ে/ যতদিন রক্ত না গড়ায়’ ততদিন জ্বলার পরামর্শ দিয়েছেন। এই ফুরিয়ে যাওয়া যেহেতু নিয়তির মতোই অনিবার্য, তাই পালিয়ে বেড়ানোর কোনো মানে হয় না। এই জ্বলতে থাকার মধ্যেই কবি এঁকে দিয়েছেন মনুষ্যত্বের দীপ্তি, ‘আর যেন না-জ্বলি’ – এই উক্তির মধ্যে পরাজয়ের গ্লাি নিহিত। তাই কবি বলছেন –
না না, তা বোলো না।
তার চেয়ে বরং
বোলো, ‘‘আমি দ্বিতীয় কাউকে
না-জ্বালিয়ে একা-একা জ্বলতে পেরেছি,
সে-ই ভালো;
আগুনে হাত রেখে তবু বলতে চেয়েছি,
‘সবকিছু সুন্দর’ –
সে-ই ভালো।’’
বোলো যে, এছাড়া কিছু বলবার ছিল না।
(‘তার চেয়ে’, নক্ষত্র জয়ের জন্য)
অসাধারণ এই উচ্চারণ। চমৎকার এই জীবনার্থের উপলব্ধি। ‘পৃথিবীর মাঝখানে দাঁড়িয়ে’ আজন্ম একা এক প্রকৃত মানবের আত্মদান। পলায়নপর মানসিকতাকে পরাস্ত করে প্রতিকূল বাস্তবতায় মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো এক মহাপুরুষের নির্ভীক নিবেদন।
এই উজ্জ্বল উপলব্ধির পাশেই নীরেন্দ্রনাথ দাঁড় করিয়ে দেন একজন ছাপোশা মধ্যবিত্তকে, যিনি আন্দোলন-সংগ্রাম-রাজপথের কোনো খবরেই বিচলিত নন। ‘রাজপথে কিছুক্ষণ’ 888sport app download apkয় আত্মকথনের ভঙ্গিতে জীবনযুদ্ধে বিধ্বস্ত একজন মানুষের ছবি এঁকেছেন কবি। রাজনীতি ও ভূগোলের বিস্তারিত না জেনে নিয়মমাফিক অফিস করা, বউ-বাচ্চা সামলানো, বাজার করা – এসবের বাইরের ভাববার অবসর নেই তার। কবি বলছেন, ‘কেন কৃষ্ণমাচারী গেলেন এবং/ শচীন চৌধুরী এলেন,/ তার বিন্দুবিসর্গও আমি জানি না।/ আমি একজন ধিনিকেষ্ট,/ কলম পিষতে বড়বাজারে যাই,/ পিষি/ সাবান কিংবা তরল আলতার শিশি/ কিনে বাড়ি ফিরি, গিন্নি/ কলঘরে ঢুকলে বাচ্চা সামলাই।’ এই মধ্যবিত্তের মুখস্থ মানচিত্র ঘিরে যে লজ্জা ও গ্লানির উন্মাদনা, তারই আঘাতে বিক্ষত একজন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীকে আমরা এই 888sport app download apkয় খুঁজে পাই।
এ-গ্রন্থের নাম888sport app download apkয় রবীন্দ্রনাথের ‘পরশপাথর’ 888sport app download apkর ক্ষ্যাপার মতোই একটি জুতসই শব্দ খুঁজে বেড়াচ্ছেন নীরেন্দ্রনাথ। ‘নক্ষত্র জয়ের জন্য’ 888sport app download apkয় কবি এমন একটি শব্দ খুঁজছেন যার ওপর সওয়ার হয়ে কবি নক্ষত্রলোকে পৌঁছে যেতে পারেন। যেমন-তেমন শব্দে কবির এ-উদ্দেশ্য পূর্ণ হবে না। তাঁর ‘স্প্রিং লাগানো দারুণ মজবুত একটা শব্দের দরকার।/ সেইটের উপরে গিয়ে উঠতে হবে।/ প্রাণপণে বাতাস টেনে ফুসফুস ফুলিয়ে/ নক্ষত্রলোকের দিকে গর্বিত ভঙ্গিতে একবার/ চোখ রাখতে হবে।’। শব্দের পাঁজরে লাথি মেরে তিনি তাঁর গন্তব্যে পৌঁছাতে চান এবং এই কাজে তিনি ‘রক্তের ভিতরে একটা বিপরীত বিরুদ্ধ গতিকে’ কাজে লাগাতে চান। এই শব্দের খোঁজে বের হয়ে তিনি নানান শব্দের দেখা পেয়েছেন, সেই শব্দাবলির স্বভাব ও প্রভাবের বর্ণনা দিয়েছেন, যদিও শব্দগুলি তাঁর উদ্দেশ্যের অনুকূল নয়। ‘জাহাজ, পতন, মৃত্যু, মাস্ত্তল’ শব্দগুলো এখন ‘ইঁদুরের মতন ছুঁচলো-মুখ হয়ে যাচ্ছে’। শব্দের খোঁজে পাগলপ্রায় কবির ‘সব নাট-বল্টু একে-একে খুলে যাচ্ছে’, তাই ফাঁসানো নৌকার রূপকল্পে হাজির করছেন নিজেকে। কবির এই অসাধারণ ইচ্ছে যে-ভাষায় মূর্ত হচ্ছে, যে-চিত্রকল্পে দৃশ্যমান হচ্ছে, তা পাঠককে বিস্মিত করে : ‘অথচ এখনও আমি নক্ষত্রলোকের দিকে যেতে চাই।/ অথচ এখনও আমি মেঘের পৈঠায় পা দুলিয়ে/ জ্যোৎস্নায় কুলকুচো করব, এইরকম আশা রাখি।’ এই আশাবাদী মানুষটি কাঙিক্ষত শব্দের অভাবে বিপর্যস্ত। 888sport app download apkর শেষ অংশটুকু এরকম :
রক্তের ভিতরে ঘোর জলস্তম্ভ ঘটিয়ে যা মুহূর্তে আমাকে
শূন্যলোকে ছুড়ে দেবে –
চাঁদমারি-ঘসানো আমি এমন একটাই মাত্র শব্দ চাই।
নেই নাকি?
তবে দিন,
বুলেটের মতো একটা শব্দ দিন। আমি
যেটাকে বন্দুকে পুরে, ট্রিগারে আঙুল রেখে – কড়াক পিৎ –
নকল বুঁদির কেল্লা ভেঙে দিয়ে ফাটা কপালের রক্ত মুছে
হেসে উঠতে পারি।
(‘নক্ষত্র জয়ের জন্য’, নক্ষত্র জয়ের জন্য)
একজন প্রতিশ্রম্নতিশীল কবি শব্দাস্ত্রেই তাঁর প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে চান। সুভাষ মুখোপাধ্যায় ‘উত্তরপক্ষ’ 888sport app download apkয় লিখেছেন, ‘যা বলবার আমরা জোর গলায় বলি,/ শব্দ আমাদের ব্রহ্ম।’ নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীকে নিশ্চয়ই শব্দেশ^রবাদী 888sport live chatস্রষ্টা বলা যাবে না, কিন্তু শব্দরূপ ব্রহ্মাস্ত্রের শক্তি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা ছিল তাঁর। এই শব্দ খোঁজাকে হয়তো সময়োপযোগী, যুগ-চিহ্নিত ও চিত্ত-পস্নাবিত 888sport app download apkর ভাব ও রূপকল্প খোঁজার নামান্তর বলা যায়।
নীরেন্দ্রনাথের একটি কালজয়ী 888sport app download apk ‘দুপুরবেলায় নিলাম’। রক্তে তুফান তোলা এই প্রেমের 888sport app download apkটি বাংলা 888sport app download apkর অনেক মুগ্ধ পাঠকই 888sport sign up bonus থেকে আউড়ে যেতে পারেন। বুকের মধ্যে উঁকি মারতে গিয়ে চমকে ওঠা, খাঁ-খাঁ বাড়িতে রেলিং থেকে শাড়ির একগলা রোদ্দুরে ঝাঁপিয়ে পড়া, মনের গভীরে এইসব দৃশ্যপটের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব, একান্তে বুকের মধ্যে কারো বুকের শব্দ শুনতে পাওয়া – সবকিছু মিলে প্রগাঢ় প্রেমের রূপকল্পই হাজির করে। সকল ধরনের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের সীমানা ছাড়িয়ে 888sport app download apkটি পাঠকচিত্তে অদ্ভুত প্রভাব ফেলেছে। 888sport app download apkটির অংশবিশেষ নীরেন্দ্রনাথের ভাষায় পাঠ করা যাক :
‘‘নিলাম নিলাম!’’ কিসের নিলাম? দুপুরে দুঃসহ
সকাল বেলার ভুলের?
এক বেণীতে ক্ষুব্ধ 888sport promo codeর বুকের-গন্ধবহ
বাসী বকুল ফুলের?
‘‘নিলাম নিলাম!’’ ঘণ্টা বাজে বুকের মধ্যে, আর
ঘণ্টা বাজে দূরে।
‘‘নিলাম নিলাম!’’ ঘণ্টা বাজে সমস্ত সংসার
সারা জীবন জুড়ে।
(‘দুপুরবেলায় নিলাম’, নক্ষত্র জয়ের জন্য)
এই 888sport app download apkয় কী নিলাম হয়ে যাচ্ছে? কারো স্বপ্ন বুঝি? কারো প্রিয়তমা? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ইচ্ছে করে না। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই রক্তে আগুন জ্বেলে দেয় 888sport app download apkটি। তাই ‘রক্তে ঝাঁকি দিয়ে’ কে চেঁচিয়ে ওঠে, তার দিকে দৃষ্টি দেওয়ার সময় পাই না আমরা।
888sport live chat888sport live football বিশেষ করে 888sport app download apk-বিষয়ে নীরেন্দ্রনাথের 888sport app download apkর 888sport free bet উল্লেখ করার মতো। ‘নিজের কাছে স্বীকারোক্তি’ 888sport app download apkয় কবি তাঁর সৃষ্টির সঙ্গে কথোপকথনে লিপ্ত হয়েছেন। তিনি পাহাড় থেকে পড়ে যেতে যেতে 888sport app download apkকে ধরে বেঁচে ওঠেন, পাতালে ডুবে যেতে যেতেও ভেসে ওঠেন 888sport app download apkর হাত ধরে। বিশ^জয়ের আনন্দ কবিকে অহংকারী করে না, বরং তিনি 888sport app download apkর কাছে নতজানু হতে ভালোবাসেন। পৃথিবীর সমুদয় দরোজা কবির জন্য খোলা থাকলেও নীরেন্দ্রনাথ 888sport app download apkর রুদ্ধ দরোজায় মাথা কুটে মরেন। কবির বিশ^াস, 888sport app download apk তাকে যেভাবে চেনে জানে, পৃথিবীর আর কেউ তাঁকে সেভাবে জানে না, বোঝে না। প্রবল জনস্রোতে থেকেও তিনি 888sport app download apkর পায়ে সমর্পণের জন্য সমুদয় শোক গোপন রাখেন। 888sport app download apkর আশীর্বাদ পেলেই তিনি শ্মশানে ফুল ফোটাতে পারবেন। 888sport app download apkর সঙ্গে নীরেন্দ্রনাথের আত্মীয়তার গতিবিধি ধরা পড়েছে 888sport app download apkটিতে –
আমি সকল সুখ মিথ্যে মানি,
তোমার সুখ পূর্ণ হোক, 888sport app download apk।
আমি নিজের চোখ উপড়ে আনি,
তোমাকে দিই, তোমার চোখ ফোটাতে।
তুমি তৃপ্ত হও, পূর্ণ হও,
জ্বালো ভূলোক, জ্বালো দ্যুলোক, 888sport app download apk।
(‘নিজের কাছে স্বীকারোক্তি’, নক্ষত্র জয়ের জন্য)
888sport app download apkটিতে নীরেন্দ্রনাথ 888sport app download apkর সঙ্গে কথা বলেছেন, কিন্তু 888sport app download apkর নাম রেখেছেন ‘নিজের কাছে স্বীকারোক্তি’। বোঝা যায়, 888sport app download apkর সঙ্গে একাত্ম হওয়ার মধ্যে তিনি তাঁর অস্তিত্বের সৌরভ ও সমৃদ্ধি খুঁজেছেন। আত্মকথনের এক এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
আত্মকথনের এই ধরনটি নীরেন্দ্রনাথের 888sport app download apkয় বহুল ব্যবহৃত একটি করণকৌশল, যদিও আত্মনিবেদনের ভাব ও রূপগত বৈচিত্র্য তাতে অনুপস্থিত নয়। এই বৈচিত্র্যের অনুরোধেই তাঁর 888sport app download apkয় ঘনিষ্ঠজনেরা এসে উপস্থিত হন, মিছিলের মতো উপস্থিত হয় প্রিয় বন্ধুদের নাম। অপরিচিত কিংবা অল্পপরিচিত মানুষ, এমনকি হঠাৎ-দেখা-হওয়া পথিকের উপস্থিতিও চোখে পড়ার মতো। কেবল মানুষ নয়, বৃক্ষ ও পশুদের সঙ্গেও কবিকে কথা বলতে হয়, তাদের মনের ভাব বুঝে নিতে হয় কখনো কখনো। এই সবকিছুর আড়ালে দৃশ্যমান নীরেন্দ্রনাথের সঙ্গে আরো একজন অদৃশ্য নীরেন্দ্রনাথ এগিয়ে চলেন – জীবনানন্দের ‘বোধ’ 888sport app download apkর মতো, ‘আমি চলি, সাথে সাথে সেও চলে আসে!’ কবিকে নিজের মুখোমুখি দাঁড়াতেই হয়, হাত বাড়াতে হয় নিজের দিকে এবং কোনো এক অন্তর্গত হাতের স্পর্শেই চেনা ভাব ও রূপ, দৃশ্য ও শব্দের শরীরে বিস্ময়ের সম্মোহন ছড়িয়ে পড়ে।
নীরেন্দ্রনাথ বিষয়ক যে-কোনো আড্ডা, আলাপচারিতা ও আলোচনায় অনিবার্যভাবে উপস্থিত হয় তাঁর কলকাতার যিশু, উলঙ্গ রাজা, খোলা মুঠি, পাগলা ঘণ্টিসহ পরবর্তী কাব্যগ্রন্থসমূহ। এই গ্রন্থসমূহের নীরেন্দ্রনাথ দুই বাংলার 888sport app download apkভক্তদের ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছেন। সমাজ ও রাজনৈতিক বাস্তবতার মুখোশ উন্মোচনের মোক্ষম অস্ত্রসমূহ যে কেবল এই কাব্যগ্রন্থসমূহেই মূর্ত হয়েছে, এ-কথা বিশ^াস করা কঠিন। আমাদের আলোচনা অন্তত এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে অনুপ্রাণিত করে যে, তাঁর উন্মেষপর্বের 888sport app download apkবলির অন্তর ও অবয়বেও একালের অধিক উদ্ধৃত ও আলোকিত নীরেন্দ্রনাথকে খুঁজে পাওয়া যায়।
কলকাতার যিশু কাব্যের ‘সম্পূর্ণ উলঙ্গ একটি শিশু’র জন্য আমাদের মন কেমন করে। ‘ভিখারি-মায়ের শিশু’ কবির চোখে আজ ‘কলকাতার যিশু’ যে কিনা মন্ত্রবলে সমস্ত ট্রাফিক, ‘জনতার আর্তনাদ, অসহিষ্ণু ড্রাইভারের দাঁতের ঘষটানি’ উপেক্ষা করে টলতে টলতে এগিয়ে যায়, মৃত্যু-ভয় যার পথ রোধ করতে পারে না। সে যেন নীরেন্দ্রনাথের চোখে বিশ^জয়ের মূর্ত মানবতা। উলঙ্গ রাজার সেই শিশুটির কথাও আমরা ভুলতে পারি না। চাটুকার-ভীতু-ফন্দিবাজ-নির্বোধ পরিবৃত্ত প্রশাসনযন্ত্রের বিচিত্র অনিয়মের বিরুদ্ধে মুখ খোলার মতো সাহসী মানুষের অভাব যখন তীব্র হয়ে ওঠে, তখন ‘সত্যবাদী, সরল, সাহসী একটি শিশু’র প্রয়োজনীয়তা আমরা প্রবলভাবে অনুভব করি। এরকম শিশুদের খোঁজেই চিরশিশু নীরেন্দ্রনাথ কলকাতার অলিগলি, রাজপথ, পাহাড়, নির্জন নদীর ধার ও গাছের ছায়ায় আমৃত্যু ঘুরে বেড়িয়েছেন। উলঙ্গ রাজার ‘জোড়া খুন’ 888sport app download apkয় লোভ ও ভয়কে নিশ্চিহ্ন করার একটি চমৎকার পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়নের দারুণ কিছু দৃশ্যপট চিত্রিত হয়েছে। লোভ ও ভয় থেকে মুক্ত হওয়ার যে-আনন্দ, তা সূর্যোদয়ের গান হিসেবে ধরা দিয়েছে 888sport app download apkটিতে। অনেক দূরে চলে গেছেন তিনি। দূর থেকে ভেসে আসা গান তবু মনে করিয়ে দেয়, তিনি আমাদের সঙ্গেই আছেন। আকাশ, আগুন, আলো কিংবা রোদ্দুরের কাছে নীরেন্দ্রনাথের এই যে বারবার ফিরে যাওয়া, তা হয়তো সূর্যোদয়ের সম্ভাবনারই ইঙ্গিতবহ।
888sport app download apkর জন্য নীরেন্দ্রনাথ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছেন। দীর্ঘ, সক্রিয় ও গতিশীল একটি জীবন তিনি যাপন করেছেন। পঁচানববই বছরের পথপরিক্রমায় 888sport app download apkর সঙ্গে কোনো দিনই বিচ্ছেদ রচিত হয়নি তাঁর। আর 888sport app download apkর বাইরে যা-কিছু লিখেছেন, সেখানে কবি নীরেন্দ্রনাথের আধিপত্যই নানা মাত্রায় উদ্ভাসিত। তাঁর গদ্য আক্ষরিক অর্থেই আপাদমস্তক একজন কবির গদ্য। গদ্যের সভায় তিনি কখনো আগন্তুক ছিলেন না, তাঁর পদচারণা রাজাধিরাজের মতো। একটি 888sport app download apkয় তিনি লিখেছেন –
কবি, তুমি গদ্যের সভায় যেতে চাও?
যাও।
পা যেন টলে না, চোখে সবকিছুকে-তুচ্ছ করে-দেওয়া
কিছুটা ঔদাস্য যেন থাকে।
যেন লোকে বলে,
সভাস্থলে
আসবার ছিল না কথা, তবুও সম্রাট এসেছেন।
(‘কবি’, 888sport app download apkর বদলে 888sport app download apk)
হ্যাঁ, গদ্যের সভায় তিনি সম্রাটের মতোই দৃপ্ত পায়ে হেঁটেছেন। যেটুকু ঔদাস্য ছিল তাঁর চোখে, তা কবিসুলভ সরল, সবল, সক্রিয় ও সচেতন ঔদাস্য, যা শব্দের শরীরে যোগ করে গৌরবময় দীপ্তি, অভিধান যার সাক্ষাৎ পায় না কোনোদিন। গদ্যের এই সম্রাটকে নিয়ে অন্য অবসরে বিসত্মৃত আলোচনার ইচ্ছে রইল। আমাদের এই নিবেদনের নাম কবি প্রণাম – কবি নীরেন্দ্রনাথের প্রতি বিনম্র 888sport apk download apk latest version।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.