নো

হাসনাত আবদুল হাই

জাপানের নো থিয়েটার তার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ এবং সৌন্দর্যময় প্রকাশ। একে বিশ্ব-সভ্যতার অমূল্য সম্পদ হিসেবেও অভিহিত করা হয়েছে। নাটকের জগতে অনেক পরিবর্তন এসেছে, নতুন আঙ্গিক সৃষ্টি হয়েছে কিন্তু নো থিয়েটারের খ্যাতি একটুও ম্লান হয়নি, বরং এই খ্যাতি বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। নো থিয়েটারকে এখন কেবল জাপানি সংস্কৃতির অংশ হিসেবে দেখা হয় না, তার গৌরবজনক সৃষ্টি হিসেবেও বিবেচিত হয়। এই নাটক ক্লাসিকের মর্যাদা পেয়েছে। নো থিয়েটার কেবল বিনোদনের মাধ্যম নয়, এর দ্বারা জাপানি সৌন্দর্যবোধ ও সৌন্দর্য-দর্শনেরও পরিচয় পাওয়া যায়। জাপানি সংস্কৃতির দার্শনিকতার ব্যাখ্যায় এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

নো থিয়েটার সংগীত ও নৃত্যের সমন্বয়ে সৃষ্ট উঁচু মাত্রায় পরিকল্পিত এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উঁচুমাত্রায় পরিকল্পনার জন্য বাস্তবের তুলনায় এখানে অতিরঞ্জন (স্টাইলাইজেশন) রয়েছে। কণ্ঠস্বরের লালিত্য এবং সূক্ষ্ম অঙ্গভঙ্গি নো নাটকের বৈশিষ্ট্য। এই দুটি উপকরণের ওপর ভিত্তি করেই নো তার সফলতা অর্জনে সচেষ্ট হয়। খুব সিরিয়াস নো নাটকের আবহ হালকা করার জন্য কিওগেন নামের হাস্য-কৌতুকপূর্ণ নাট্যাংশ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই কিওগেনই ছিল নো নাটকের আদি রূপ। বহু শতাব্দী যাবত এই দুটি অংশের (নৃত্য-গীতসম্পন্ন নাটক এবং কমিক রিলিফ দেওয়ার জন্য কিওগেন) পাশাপাশি চর্চা করা হয়েছে। দুটি অংশকে একত্রিত করে নাম দেওয়া হয়েছে নো গাকু।

নো থিয়েটারের বিষয় এবং নাটকীয়তা বেশ সরল। বিশেষ দৃশ্য, নাটকের গঠন কাঠামো, নাচ এবং সংগীতের সাহায্যে একটি আবেগের ক্রমাগত উঁচু মাত্রায় আরোহণ উপস্থাপন করা হয় এই নাটকে। নাচ এবং কাহিনি নো নাটকের অন্তর্ভুক্ত হলেও সব নাটকে এসব থাকে না। গান এবং সংগীত-ধ্বনিই নো নাটকের আবশ্যিক উপাদান। যেসব বিষয় নো নাটকের অন্তর্ভুক্ত তার মধ্যে রয়েছে – পিতৃস্নেহ, ভালোবাসা, ঈর্ষা, প্রতিহিংসা এবং সামুরাই যোদ্ধার চেতনা। নো নাটকের স্ক্রিপ্টে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভারসাম্যের অভাব দেখা যায় এবং কাহিনি কিছুটা অবিন্যস্ত মনে হয়। নাটকে যে স্বাভাবিক বৈপরীত্য ও অগ্রগতি তা সযত্নে এড়িয়ে চলাও এর বৈশিষ্ট্য। কাহিনিপ্রধান নাটকের ফর্ম নেই নো নাটকে। দৃশ্যের পর দৃশ্য সাজিয়ে কাহিনি বর্ণনা করা হয় না নাটকীয়ভাবে। একটি বিশেষ মুহূর্তকে নির্বাচিত করে তার 888sport live chatসুলভ ও সৌন্দর্যময় উপস্থাপনাই এর উদ্দেশ্য। এই জন্য শব্দ, কথা, সংগীত এবং নাচের সমন্বয় করা হয়।

সূচনা পর্ব থেকেই নো থিয়েটার লেখা হয়েছে এর অভিনেতাদের দ্বারা। তারাই এর ভেতরকার সংগীত ও নৃত্য সৃষ্টি করেছে। নো থিয়েটার প্রবর্তনের পর থেকে প্রজন্মের পর প্রজন্মের অভিনেতারা নাটক এবং তার উপস্থাপনার মার্জনা করেছে। এইভাবে নো থিয়েটার ধীরে ধীরে কিন্তু ক্রমাগত উৎকর্ষ অর্জন করেছে। এজন্য চতুর্দশ শতকে সৃষ্টি হলেও নো নাটক এখনো                    দর্শক-শ্রোতাকে আকর্ষণ করে। নো থিয়েটারের ভান্ডারে রয়েছে কানামির (১৩৩২-৮৪) আগের নাটক এবং তাঁর পুত্র যিয়ামির (১৩৬৪?-১৪৪৩?) নাটকসমগ্র। তাঁদের নাটক যারা পরিশীলিত করেছে সেসব নাটক এবং পঞ্চদশ ও ষষ্ঠদশ শতকে পরবর্তী প্রজন্মের নাটকসমগ্রও এই ভান্ডারের অন্তর্ভুক্ত। বিগত দেড়শো বছরের লেখা নতুন নো নাটকগুলোও এই হিসাবের মধ্যে ধরা হয়। যেহেতু পুরনো নো নাটকগুলোর পরিমার্জনা অব্যাহত রয়েছে সেজন্য সেগুলো তাদের আদি রূপে উপস্থাপিত হয় না।

নো থিয়েটার অনেকটা অপেরার মতো। এই অনন্য নৃত্য-সংগীত নাটকের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ উপাদান হলো : এর বিশেষ মঞ্চ, মুখোশের ব্যবহার, অভিব্যক্তি প্রকাশের জন্য নৃত্যের ব্যবহার, কণ্ঠস্বর ব্যবহারের বিশেষ পদ্ধতি, স্ক্রিপ্টের লিরিকধর্মিতা, এর বিশাল যন্ত্রসংগীত যার মধ্যে রয়েছে হাতে বাজানো ড্রাম (ও-সুজুমি), ছোট আকারের হাতে বাজানো ড্রাম (কো-সুজুমি), লম্বা সমান্তরালভাবে ধরা বাঁশি (ফু), কাঠি দিয়ে বাজানো ড্রাম (টায়কো), শিটের (প্রধান অভিনেতা) অভিনয়ের ওপর গুরুত্ব প্রদান।

নো নাটক আদিতে, একাদশ শতকে, হাস্য-কৌতুক প্রধান হলেও এই নাট্যরূপটি বৌদ্ধমন্দিরে উৎসব এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানে গুরুগম্ভীর রূপে অভিনীত হতে থাকে। এভাবে হাস্য-কৌতুকপূর্ণ হালকা প্রকৃতির নো নাটকের স্থানে সিরিয়াস নাটক রূপে নো অভিনয়ের প্রচলন হয়। অবশ্য এরপরও কিওগেন নামে হাস্য-কৌতুকপূর্ণ নাটকের অভিনয় অব্যাহত থাকে। নো নাটক অচিরেই মন্দিরের সীমানা অতিক্রম করে বাইরে অভিনীত হতে থাকে। এই পর্বে তার বিষয় নির্বাচনে স্বাধীনতা আসে। ধর্মীয় শিক্ষার পরিবর্তে গান ও নাচের মাধ্যমে সৌন্দর্যময় 888sport live chatের উপস্থাপনা হয় এর উদ্দেশ্য।

 

মঞ্চ

নো যে-মঞ্চে অভিনীত হয় তার সঙ্গে প্রচলিত প্রসেনিয়াম মঞ্চের পার্থক্য রয়েছে। এটি বিশেষ ধরনের মঞ্চ যার গঠন শুধু নাটক অভিনয়ে সাহায্য করে না, নাটকের উপস্থাপনাও সৌন্দর্যমন্ডিত করে। প্রাচীনকালে 888sport app সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মতো নো নাটকও খোলা আকাশের নিচে প্রাঙ্গণে অভিনীত হতো। তখন মাঠই ছিল মঞ্চ। পরবর্তীকালে মন্দিরের অভ্যন্তরে পবিত্র কাগুরা (?) নাচ প্রদর্শনের জন্য মঞ্চ তৈরি করা হয়। নো নাটকের অগ্রযাত্রায় কাগুরা মঞ্চ বেশ প্রভাব বিস্তার করে। বর্তমানে যে মঞ্চ ব্যবহার করা হয় সেটি তোকুগাওয়া পর্বে এদো দুর্গে শোগুনের তৈরি মঞ্চের আদলে। তখন মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে বাইরে উন্মুক্ত স্থানে যেখানে দর্শকরা বসতো মঞ্চের সামনে একটি ভবনে এবং মঞ্চ ও ভবনের মাঝখানে থাকতো খালি জায়গা। মঞ্চের ওপরকার ছাদ এবং মধ্যবর্তী স্থানে যে সাদা রং পায়ে চলার পথ (শিরাসু?) ছিল তা এখনো নোর পুরনো মঞ্চের শৈলীর কথা মনে করিয়ে দিয়ে রয়ে গিয়েছে। সাদা পথটি মাঠের ওপর থাকতো মঞ্চ ও দর্শকের মধ্যে সেতুবন্ধ হয়ে। পুরনো নো মঞ্চে এই সাদা পায়ে চলার পথের ভূমিকা ছিল সূর্যের প্রাকৃতিক আলো যেন মঞ্চ আলোকিত করতে পারে।

নো মঞ্চের মেঝে তৈরি হতো জাপানি সাইপ্রেস গাছের গুঁড়ি দিয়ে। মঞ্চে অভিনয়ের স্থান চার ভাগে বিভক্ত : প্রধান মঞ্চ, প্রধান মঞ্চের পেছনে (আতোজা) উঁচু মঞ্চ, বাঁদিকে পোর্চের মতো সংযুক্ত এলাকা (জিউতাই-যা) এবং আতোজার ডানদিকে কৌণিকভাবে নির্মিত ব্রিজের আকারে স্থাপনা (হাসি-গাকারি)। হাসি-গাকারির শেষে পর্দার পেছনে (আগে-মাকু?) থাকে গ্রিনরুম অথবা আয়না ঘর (কাগামি-নো-মা) সমগ্র স্টেজের পেছনের এলাকায় থাকে সাজসজ্জার ঘর (গাক-ইয়া)। মূল মঞ্চ দর্শকদের দিকে প্রসারিত। এর ওপরে যে-ছাদ সেটি চারটি কাঠের স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে। মূল মঞ্চের স্থান প্রায় ৩০ বর্গমিটারের সমান। মেঝেতে যে-কাঠ তা সম্মুখভাগ থেকে পেছনে চলে গিয়েছে এবং এর উপরিভাগ বেশ মসৃণ। এই মসৃণতা অভিনেতাকে সামনে-পেছনে যাওয়ার সময় সাহায্য করে।

আতোজা (মূল মঞ্চের পেছনে উঁচু মঞ্চ) প্রায় তিন মিটার জায়গা নিয়ে তৈরি। এটি মূল মঞ্চের পেছনে ডান থেকে বাঁয়ে চলে গিয়েছে। আতোজার সামনে অর্কেস্ট্রার সদস্যরা (হায়াসি-কাটা?) সারিবেঁধে বসে। মঞ্চের বাঁ থেকে ডান দিকে বসে বংশবাদক (ফু-কাটা), ছোট আকারের ড্রামবাদক (কো-সুজুমি কাট?), বড় আকারের ড্রামবাদক (ও-সুজুমি-কাতা) এবং কাঠি দিয়ে ড্রাম বাজিয়ে (তাইকো-কাতা)। আতোজার কাঠের মেঝে মূল মঞ্চের আড়াআড়ি প্রসারিত। মূল মঞ্চের ডানদিকে সরু পোর্চের মতো জায়গায় (জিউতাই-জা?) কোরাসের সদস্যরা দুই সারিতে বসে। সাধারণত ছয় থেকে আটজন গায়ক থাকে কোরাসে; কিন্তু কখনো এই 888sport free bet বেশিও হতে পারে।

আতোজার ডানদিকের সামনে থেকে তাকালে বাঁদিকে ব্রিজের মতো স্থাপনা দেখা যায় (হাসি-গাকারি)। এর বাঁয়ে থাকে উত্তোলনের জন্য তৈরি বড় পর্দা (আগে-মাকু) যার ভেতর দিয়ে অভিনেতারা মঞ্চে প্রবেশ এবং ত্যাগ করে। মঞ্চে আর কোনো পর্দা নেই যার জন্য অভিনেতা মূল মঞ্চের মাঝখানে দাঁড়িয়ে তার ভূমিকার চরিত্রে নাটকের শেষ দৃশ্যে অভিনয় করার পর তাকে পেছনে ফিরে ধীরে ধীরে হাসি-গাকারি দিয়ে সঙ্গে হেঁটে যেতে হয়। আগে-মাকু দিয়ে নির্গমনের পর অভিনেতা মঞ্চ থেকে অদৃশ্য হয়। হাসি-গাকারি কেবল হেঁটে যাওয়ার প্যাসেজ নয়, মঞ্চের সম্প্রসারণও বটে। প্রায়ই অভিনয়ের জন্য এটি অতিরিক্ত অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

আতোজার পেছনের দেয়ালের একমাত্র অলঙ্করণ একটি প্রাচীন পাইনগাছ। এর নাম কাগামি ইতোশা আক্ষরিকভাবে যার অর্থ আয়নার ফ্রেম। অভিনয়ের সমস্ত অংশ এই পটভূমির সামনেই উপস্থাপিত হয়। দেয়ালে পাইনগাছ ছাড়া নো মঞ্চে আর কোনো সাজসজ্জা নেই। এই পাইনগাছের তাৎপর্য কেবল নো এবং কিওগেনের পটভূমি হিসেবে নয়, ধর্মীয় আবহসূচক এবং নো নাটকের ঐতিহ্যিক অংশ হিসেবেও দেখা হয়। পুরনো পাইনগাছ বা কাগামি ইতোশা নো মঞ্চের শূন্যতায় বিশাল এবং শক্তিশালী এক আবহের সৃষ্টি করে। নো এবং কিওগেন নাটকের নৃত্যগীত এভাবে একটি সাজসজ্জাহীন শূন্য মঞ্চে পরিবেশিত হয়। নো নাটকের নান্দনিক সৌন্দর্যে এই বিশেষ মঞ্চের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

আতোজার বাঁদিকে মঞ্চে যে-দেয়াল দাঁড়িয়ে তার নাম ওয়াকি-কাগামি-ইতা, আক্ষরিক অর্থে পার্শ্ববর্তী প্রতিধ্বনির বোর্ড, যেখানে কচি বাঁশগাছের ছবি অাঁকা থাকে। এই দেয়ালের বাঁদিকে নিচের অংশের কোনায় রয়েছে একটি ছোট স্লাইডিং দরজা (কিরদো-গুচি) যার ভেতর দিয়ে কোরাসের সদস্য এবং মঞ্চের সহকারীরা মঞ্চে প্রবেশ এবং সেখান থেকে প্রস্থান করে। নো এবং কিওগেন নাটকে ছোট ভূমিকার অভিনেতারাও প্রবেশের জন্য এই দরজা ব্যবহার করে থাকে কিন্তু কখনোই মঞ্চ থেকে প্রস্থানের জন্য নয়।

যেহেতু নো নাটকের বর্গাকার মঞ্চ দর্শকদের দিকে প্রসারিত, সে কারণে মঞ্চের অভিনয় সামনে এবং দুই দিকের পার্শ্ববর্তী স্থান, উভয় দিক থেকেই দেখা যায়। অভিনেতাকে সেই জন্য মঞ্চের ওপর কোন স্থানে দাঁড়াতে হবে সে সম্বন্ধে সচেতন হয়ে পদচারণা করতে হয়। এই বৈশিষ্ট্য আধুনিক উন্মুক্ত মঞ্চ অথবা ঘূর্ণায়মান মঞ্চের যে কৌশল তার মতো, যা থেকে বোঝা যায় বিগত সাড়ে চারশো বছর পর্যন্ত নো নাটকের মঞ্চ আধুনিক শৈলীর পথিকৃৎ হয়ে রয়েছে।

মঞ্চের সামনে ডানদিকে যে-স্তম্ভ তার নাম মেতসুকে-বাশিরা যার অর্থ যে-স্তম্ভের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়। এই নামকরণের কারণ প্রধান অভিনেতা (শিটে) এটি ব্যবহার করে মঞ্চে তার অবস্থানের জায়গা নির্ণয় করে নেয়। যে-মুখোশ তাকে পরতে হয় সেখানে চোখের ছিদ্র সরু হওয়ার জন্য এটা অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়ে। দর্শকদের দৃষ্টিকোণ থেকে মেতসুকে-বাশিরা মঞ্চের কিউবসদৃশ স্পেসে বলিষ্ঠতার মাত্রা যোগ করে। অভিনেতাদের দেহ সঞ্চালন এবং অঙ্গভঙ্গি তৃতীয় মাত্রা এনে ভাস্কর্যের বৈশিষ্ট্য দান করে। অভিনেতা মঞ্চে দাঁড়িয়ে পার্সপেক্টিভের চরিত্র সৃষ্টিতেও সমর্থ হয়। সম্প্রতি মেতসুকে-বাশিরা তুলে ফেলে দর্শকদের মঞ্চের পূর্ণ দৃশ্য দেখার সুবিধাদানের পক্ষে কেউ কেউ মত রেখেছেন। কিন্তু এটা করা হলে নো নাটকের যে বিশেষ এবং অনন্য প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়, তা ব্যাহত হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন। নো নাটকের মঞ্চের গঠনে কোনো কিছুই অর্থহীন ও অপ্রয়োজনীয় নয়। অভিনয়ের সঙ্গে তার মঞ্চের কাঠামো এবং সাজসজ্জার অঙ্গাঙ্গি সম্পর্ক রয়েছে। আর কোনো নাটকে এই কথা এত জোরের সঙ্গে বলা যায় না। নো নাটকে মঞ্চ শুধু গুরুত্বে না, তার পরিপূরক ভূমিকার জন্যও উল্লেখযোগ্য।

হাসি-গাকারির (ব্রিজের মতো সম্প্রসারণ) দৈর্ঘ্য চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হয় না। এদো দুর্গে এই দৈর্ঘ্য ছিল ১৭ মিটার কিন্তু সম্প্রতি হাসি-গাকারির দৈর্ঘ্য আরো হ্রস্ব। হাসি-গাকারি মঞ্চের ওপর উল্লম্ব অবস্থায় নির্মিত হয় না, চওড়া ও কৌণিকভাবে অগ্রসর হয়। প্রথম দিকে হাসি-গাকারি মঞ্চের মাঝখান থেকে সরাসরি পেছনে চলে যেত। এর কৌণিকতা ক্রমান্বয়ে হ্রস্ব করা হয় যার ফলে ষষ্ঠদশ শতকের শেষে হাসি-গাকারি বর্তমান আকার লাভ করে। মঞ্চের পেছনে যেখানে হাসি-গাকারি মূল মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত তার নাম শিটে-বাশিরা। এখানেই মূল অভিনেতা (শিটে) এসে দাঁড়ায় এবং নিজের নাম ঘোষণা করে। অর্থাৎ এখান থেকেই নাটকের ক্রিয়াকর্ম শুরু হয়। নাটক শুরু হলে প্রতিটি ক্রিয়ার (নাচ-গান) পর অভিনেতা এই স্থানে নিয়মিত প্রত্যাবর্তন করে। এটাই তার অবস্থানের কেন্দ্র (হোম বেজ)। মঞ্চের সামনে বাঁয়ে থাকা জিউতাই-যার সামনের স্তম্ভটির নাম ওয়াকি-বাশিরা। ওয়াকি নামের দ্বিতীয় শ্রেণির অভিনেতারা এই স্থানে অবস্থান গ্রহণ এবং মঞ্চে অভিনয়ের পর নিয়মিত এখানে প্রত্যাবর্তন করে।

যেহেতু মঞ্চের পেছনে বাঁয়ের স্তম্ভ বংশীবাদকের আসনের কাছে সেই জন্য এর নামকরণ হয়েছে ফু-বাশিরা (বংশীস্তম্ভ)। ফু-বাশিরার নিচের দিকে একটি বড় লোহার গোলাকার বলয় রয়েছে। এই গোলাকার লৌহবৃত্ত মঞ্চের ওপর ছাদ থেকে যে-ঘণ্টা নেমে এসেছে তার সঙ্গে যুক্ত। এর কাজ ঘণ্টাটিকে উত্তোলিত করে রাখা। অন্য কোনো কাজে এর ব্যবহার করা হয় না।

মঞ্চের মেঝে প্রাঙ্গণ থেকে এক মিটারের কম উঁচু। আতো-জা এবং জিউতাই-জা সমান্তরাল এবং প্রলম্বিত। ওয়াকি-বাশিরা থেকে হাঁটু সমান উঁচু রেলিং রয়েছে যার পেছনে বরাবর চলে গিয়েছে মঞ্চ। হাসি-গাকারির দুই দিকেও একই উচ্চতার রেলিং থাকে এবং সেটিও সোজা চলে গিয়েছে। হাসি-গাকারির সামনে সাদা নুড়িভরা পথের (শিরাসু) ওপর তিনটি ছোট পাইনগাছ লাগানো হয়। পাইনগাছ দেখে বোঝা যায় যে আদিতে নো নাটক বাইরে, খোলা আকাশের নিচেই মঞ্চস্থ হতো। হাসি-গাকারিতে অভিনয় সবসময় তিনটি পাইনগাছের একটির পেছনে হয়। নো নাটকের মঞ্চায়নে তিনটি পাইনগাছ অভিনয়ের স্থান নির্দেশ করার ভূমিকা পালন করে।

আজ-মাকু নামের পর্দা পাঁচটি পৃথক রঙের সিল্ক কাপড়ে সেলাই করে লম্বালম্বি ঝোলানো। দুটি লম্বা বাঁশ দ্বারা এটি উত্তোলিত হয়। অভিনেতাদের আগমন ও নির্গমনের সময় দুজন সহকারী (কোকেন) গ্রিনরুমের মেঝেতে বসে এই পর্দা ওঠায় এবং নামায়। দর্শক এবং অভিনেতার মনের ভাব প্রকাশে এবং সার্বিক আবহ সৃষ্টিতে এই পর্দার ওঠা-নামার ছন্দ এবং গতি গুরুত্বপূর্ণ।

মঞ্চের সামনে মধ্যবর্তী অংশ থেকে দর্শকদের দিকে তিন ধাপের ছোট সিঁড়ি রয়েছে। এর নাম শিরাসু বাশি নো (?)। অতীতে মন্দির অথবা 888sport sign up bonusসৌধের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এই সিঁড়ি দিয়ে মঞ্চে উঠে নাটকের শুরু এবং সমাপ্তি ঘোষণা করতেন। সামরিক কর্মকর্তাদের পরিচারকরা এই সিঁড়ি দিয়ে উঠে প্রভুর উপহার অভিনেতাদের হাতে তুলে দিত। এখন সিঁড়ির সেই ভূমিকা নেই, কেবল মঞ্চের ঐতিহ্যিক রূপ সংরক্ষণের জন্যই এটা রাখা হয়েছে।

নো নাটকে মঞ্চের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য এর সম্পর্কে ধারণা থাকা সমীচীন। অভিনয় উপলব্ধিতে মঞ্চের বিভিন্ন অংশ সম্বন্ধে জ্ঞান সাহায্য করে। নাম জানা না থাকলেও মঞ্চের বিশেষ বিশেষ স্থানের ভূমিকা সম্বন্ধে ধারণা থাকা প্রয়োজন।

 

আলোকসম্পাত

অতীতে দিনের বেলা সূর্যালোকে এবং রাতে মোমবাতি অথবা আগুন জ্বালিয়ে মঞ্চে আলোকসম্পাত করা হতো। ১৮৯৪ সালে সর্বপ্রথম বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবহার করা হয়। ঐতিহ্য সচেতন অভিনেতারা এর বিরোধিতা করেছিল। প্রথমদিকে আবরণহীন বাল্ব মঞ্চের চারদিকে ঝোলানো হয়েছিল। এ ছাড়া আরো কয়েকটি স্থানেও বাল্বের ব্যবহার করা হয়। বৈদ্যুতিক আলোর 888sport live chatসম্মত ব্যবহার নিয়ে প্রচুর আলোচনা হয় কিন্তু দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর মঞ্চ পুনর্নির্মাণের পরই এর প্রতি মনোযোগ দেওয়া হয়। সেই সময় ফ্লুরোসেন্ট বাতি ব্যবহার শুরু হয়। এর বিরুদ্ধেও সমালোচনা হয় কেননা ফ্লুরোসেন্ট বাতি খুব বেশি উজ্জ্বল যার জন্য মুখোশ এবং পোশাকের রং সম্পূর্ণ বদলে যেত। এরপর ফ্লুরোসেন্ট বাতির ব্যবহারে উন্নতি সাধিত এবং বিভিন্ন কৌশলের উদ্ভাবন করা হয়। কিন্তু এ সত্ত্বেও মঞ্চে আলোকসম্পাত এখনো পুরোপুরি সন্তোষজনক তা বলা যাবে না। নো নাটক ঐতিহ্যগতভাবে অভিনেতার 888sport live chat হিসেবে পরিচিত যেখানে তার অভিনয়ই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এখানে অন্য সাজসজ্জার বাহুল্য, বিশেষ করে আধুনিক আলোকসম্পাত ব্যবস্থা, যেমন স্পটলাইট অথবা রঙিন আলোর ব্যবহার নো নাটকের 888sport live chatগুণকে ক্ষুণ্ণ করে বলে মনে করেন অনেকে। আলোকসম্পাত নিয়ে চিন্তা-ভাবনা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এ থেকে বেশ বোঝা যায় যে, আধুনিক কলাকৌশল যতই চোখ ধাঁধানো হোক না কেন তার সবই নো থিয়েটারের নান্দনিকতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

 

শব্দ

নো থিয়েটারকে বলা যায় সংগীত-নাটক। এর সংগীত তিনটি উপাদানের সৃষ্টি। প্রথমে রয়েছে অভিনেতা এবং কোরাসের কণ্ঠস্বর। এরপর আসে বাঁশি। তৃতীয়ত রয়েছে ড্রামের বাজনা। ওপরে সিলিংয়ের কৌণিকতা এমন যে শব্দ অনেকগুণ গভীর হতে পারে যার ফলে সব দর্শক-শ্রোতাই সংগীত এবং উচ্চারণ শুনতে পায়। বড় বড় মাটির মটকা প্রধান মঞ্চের মেঝেয় এবং হাসি-গাকারির নিচে রাখা হয় যেন নাচের সময় অভিনেতার পদচারণার শব্দ  সজোরে শোনা যায়। এই মটকাগুলো রাখার স্থান এবং যে-কৌণিকতায় তাদের নিচে বসানো হয় সে-বিষয়ে অতীতকাল থেকেই স্টেজ নির্মাতা গোপনীয়তা রক্ষা করতো। কিন্তু দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর মেঝের নিচে কংক্রিটের তৈরি চোঙায় বালিভর্তি করে বিশেষ শব্দ সৃষ্টির প্রচলন হয়েছে। কংক্রিটের চোঙায় বালির পরিমাণ দিয়ে শব্দের ধ্বনি এবং প্রতিধ্বনি নিয়ন্ত্রিত করা হয়। শব্দ সৃষ্টিতে এই নতুন পদ্ধতি বেশ সহায়ক হয়েছে এবং এ নিয়ে কোনো বিতর্ক দেখা দেয়নি।

 

নো অভিনেতা

নো থিয়েটার মুখোশ, সংগীত এবং অভিনয়ের সমন্বয়ে অতিরঞ্জিত শৈলীর নাটক। কারো মতে সংগীত, আবার কারো ধারণা নাচকে নো থিয়েটারের প্রধান অংশ বলে মনে করা হয়। প্লট নির্মাণে বিশেষ মনোযোগ না দিয়ে নো থিয়েটারের স্ক্রিপ্ট একটি বিশেষ আবেগ অথবা আবহকে তীব্রতার সঙ্গে উপস্থাপন করে। এর মাধ্যমে প্রকাশ পায় সৌন্দর্য এবং সত্য। নাটকের অন্যসব ক্রিয়া (নাচ, গান, অভিনয়) এই উদ্দেশ্যে এমনভাবে সহজ এবং পরিশীলিত করা হয়েছে যেন মূল উদ্দেশ্যের বাইরে অন্য কিছু প্রাধান্য না পায়। নো নাটক তাই একান্তভাবে জাপানি সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এক ভাব প্রকাশ পদ্ধতি। এই একই আদর্শ ও উদ্দেশ্য জাপানের 888sport app যেসব 888sport live chat মধ্যযুগে বিকশিত হয়েছে সে-সবের মধ্যে দেখা যায়। যেমন – চা অনুষ্ঠান, ইকেবানা, হাইকু 888sport app download apk, সুমি-এ চিত্রকলা। নো থিয়েটার জাপানি সংস্কৃতি ও সৌন্দর্যবোধের মূলধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং একই আদর্শে গঠিত ও পরিচালিত। নো নাটক দেখার সময় জাপানি সংস্কৃতির বিভিন্ন অংশের মধ্যে বিদ্যমান ঐক্য উপলব্ধি করা যায়।

নো থিয়েটারে খুব বেশি অভিনেতার প্রয়োজন হয় না। এই নাটকে নিটোল এবং ঠাস বুননের তৈরি যে 888sport live chatরূপ তা একজন অভিনেতাই সূক্ষ্ম, সহজ এবং মার্জিত নাচের সাহায্যে সৃষ্টি করতে পারে। কখনো দ্বিতীয় একজন অভিনেতারও প্রয়োজন হয় নাচের প্রয়োজন ও উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করার জন্য। এই দ্বিতীয় অভিনেতার সাহায্যে গভীরতর ভাব প্রকাশ করে মূল অভিনেতা।

 

শিটে এবং ওয়াকি

সব নো নাটকে মূল অভিনেতাকে বলা হয় শিটে এবং কম গুরুত্বপূর্ণ দ্বিতীয় অভিনেতাকে বলা হয় ওয়াকি। ওয়াকির ভূমিকা হলো মূল অভিনেতা শিটেকে মঞ্চে আহবান করা, তাকে প্রশ্ন করা এবং নাচার জন্য প্রণোদনা প্রদান করা। ওয়াকির ভূমিকা সর্বদাই দ্বিতীয় পর্যায়ের এবং তার ভূমিকা শেষ হয়ে গেলে সে মঞ্চের প্রায় অদৃশ্য স্থানে দাঁড়িয়ে থাকে যেন দর্শক-শ্রোতার সব মনোযোগ শিটের ওপরই নিবদ্ধ হয়। অন্য যেসব ছোটমাপের চরিত্র মঞ্চে আসে তাদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। শিটের ওপর এই পরিপূর্ণ এবং একাগ্রচিত্তে মনোযোগ দেওয়া নো নাটকের অনন্য বৈশিষ্ট্য। এই অর্থে নো নাটককে বলা যায় একক চরিত্রের নাটক।

কখনো কখনো শিটেকে দেখা যায় বন্ধু, ভৃত্য অথবা আত্মীয়ের সঙ্গে। এদের ভূমিকাকে বলা হয় তসুরে (আক্ষরিক অর্থে ‘আনীত ব্যক্তি’), টোমো (এমন একজন যে শিটের আজ্ঞাবহ) এবং কোকাটা (শিশু)। কোকাটা বা শিশু অভিনেতার বয়স দশ বছরের কাছাকাছি হয়। শিশুসুলভ ভূমিকায় অভিনয় করা ছাড়াও কোকাটা প্রাপ্তবয়স্কদের ভূমিকাতেও অভিনয় করে। অপ্রকৃতিস্থ 888sport promo code চরিত্রের নাটকে কোকাটা বা শিশু অভিনেতাকে প্রায়শই দেখা যায়। এইসব নাটকে 888sport promo codeকে মায়ের ভূমিকায় পুত্র বিয়োগের শোকে উন্মাদের মতো দেখায়। মাতৃরূপী এই 888sport promo code তার হারানো শিশুকে সশরীরে দেখে অথবা তার অস্তিত্ব কল্পনা করে স্বাভাবিক হয়ে আসে। অনেক নাটকে উচ্চপদস্থ ব্যক্তি বা সম্রাটের ভূমিকায় কোকাটাকে দেখা যায়। চরিত্রের নির্মল নিষ্পাপ গুণের প্রতীক হিসেবে শিশু অভিনেতাকে ব্যবহার করা হয়। কোকাটা চরিত্র ব্যবহারের আরেকটি কারণ সম্রাট বা উচ্চপদস্থ ব্যক্তির ভূমিকায় অভিনয় করার ফলে মূল অভিনেতা (শিটে) ওপর থেকে যেন দর্শকদের মনোযোগ সরে না আসে। প্রেমিক-প্রেমিকার অভিসারের দৃশ্যেও কোকাটার ব্যবহার হয় যেন শিশু অভিনেতাকে দেখে দশর্কদের মনে ইন্দ্রিয়জ আবেগের সঞ্চার না ঘটে। নো নাটকে এইভাবে সুচিন্তিতভাবে মূল চরিত্র শিটের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

নো নাটকে কোকেন নামে একজন মঞ্চ সহকারী থাকে যার দায়িত্ব প্রধান অভিনেতার (শিটে) পোশাক ঠিকঠাক রাখা এবং তাকে প্রয়োজনীয় বস্ত্ত এগিয়ে দেওয়া ও কাজ শেষ হয়ে গেলে              সে-সব ফিরিয়ে নেওয়া।

নো নাটকের কোরাসের যেসব সদস্য কণ্ঠস্বর যোগ করে একসঙ্গে গায় তারাও শিটের দলের অন্তর্ভুক্ত। যেসব অভিনেতা এসব ভূমিকা গ্রহণ করে তাদের সমন্বিত নাম ‘শিটে অভিনেতা’। ওয়াকিরও কখনো কখনো সঙ্গী থাকে অথবা সাহায্যকারী। এসব ভূমিকাকে বলা হয় ওয়াকি-জুরে (ওয়াকি কর্তৃক আনীত)। প্রত্যেক নো অভিনেতাকে হয় শিটে অথবা ওয়াকি চরিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তারা সর্বদা নিজ নিজ ভূমিকায় অভিনয় করে অর্থাৎ শিটে কখনো ওয়াকি হয় না কিংবা ওয়াকির ভূমিকা পরিবর্তিত হয়ে শিটেতে রূপান্তরিত হয় না। এভাবে একটি ভূমিকায় অভিজ্ঞতা অর্জনের ফলে শিটে এবং ওয়াকি চরিত্রের মধ্যে বৈপরীত্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

ওয়াকির চরিত্র তিন ধরনের হয় : (ক) মন্ত্রী (দাইজিন ওয়াকি) যে-সম্রাটের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করে। গুরুত্বপূর্ণ মন্দির ও 888sport sign up bonusসৌধের রক্ষণাবেক্ষণকারীও এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত; (খ) পুরোহিত (সো-ওয়াকি) যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত সকল ধর্মীয় শাখার সদস্য এবং পদবিধারী ব্যক্তি; (গ) সাধারণ মানুষ (ওতোকো-ওয়াকি) যেখানে থাকে যোদ্ধা, নগরবাসী এবং গ্রামীণ চরিত্র। ওয়াকি সবসময়ই একজন জীবিত পুরুষ। সে কখনোই প্রেতাত্মা, দানব, দেবতা অথবা 888sport promo codeর প্রতিনিধিত্ব করে না। ওয়াকির পোশাক তার ভূমিকাই নির্দিষ্ট করে দেয়, তার মুখ থাকে অবারিত। কোনো মুখোশ বা মেক-আপ তার চেহারা অদৃশ্য কিংবা অস্পষ্ট করে তোলে না। সে তার কণ্ঠস্বর এবং অঙ্গভঙ্গি দ্বারাই নিজের ভূমিকাকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে।

শিটে বা প্রধান অভিনেতা এক বিশাল ব্যাপার। তাকে যে-কোনো চরিত্রের ভূমিকায় অভিনয় করতে হয়। এর মধ্যে থাকে বৃদ্ধ, দেবতা, বলদৃপ্ত যোদ্ধা, 888sport promo code, প্রেতাত্মা এবং জন্তু। বিভিন্ন ধরনের নো নাটক আছে এবং যেহেতু শিটে চরিত্রই সব নাটকে মুখ্য সেই জন্য শিটেকে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করতে হয়। এই কারণে শিটের ব্যবহারের উদ্দেশ্যে নানা ধরনের পোশাক ও মুখোশের প্রয়োজন হয়। কেবল মানুষের চরিত্রের বাইরের চরিত্রের জন্য না, শিটেকে যখন পূর্ণবয়স্ক পুরুষ হিসেবে এবং 888sport promo code চরিত্রে অভিনয় করতে হয় অথবা বৃদ্ধ কিংবা যুবকের চরিত্রে সে অবতীর্ণ হয় তখন তার মুখ ঢেকে রাখার প্রয়োজন দেখা দেয়। কাবুকি এবং পিকিং অপেরায় সাদা রঙের জমিনে পুরু মেক-আপ ব্যবহার করে এই সমস্যার সমাধান করা হয়। নো নাটকে এই প্রয়োজন মেটানো হয় মুখোশ ব্যবহার করে।

 

মুখোশ

মুখোশ নো নাটকের অভিনয়ে প্রাণস্বরূপ। একজন অভিজ্ঞ অভিনেতা মাঝারি চরিত্রের মুশোখ পরেও তার অভিনয়ের সাহায্যে মুগ্ধ করতে পারে। কিন্তু একটি অপূর্ব সুন্দর মুখোশ তার অভিনয়কে অমর করে রাখে। একটি মুখোশের মূল্য বা গুরুত্ব প্রকাশ পায় যখন একজন অভিনেতা সেটি পরে মঞ্চে প্রবেশ করে। অভিনেতার অভিনয়-কুশলতার জন্য একটি উঁচুমানের মুখোশ তার দেহের অংশ হয়ে যেতে পারে। একে তখন রক্ত-মাংসে তৈরি জীবন্ত মনে হয়। এসব মুহূর্তে মুখোশের প্রকৃত তাৎপর্য উপলব্ধি করা যায়। এসব মুখোশই নো নাটকের চেতনাকে পরিস্ফুট করে।

অভিনেতার সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা হলো মুখোশের অভিব্যক্তি প্রকাশ করা। 888sport promo code চরিত্রের মুখোশগুলো খুবই সাদামাটা, অভিব্যক্তি রহিত। গবেষকরা বলতে চেয়েছেন যে, এমন অভিব্যক্তিহীন মুখোশ দিয়ে 888sport promo codeর সৌন্দর্যকে বাহুল্যহীন বা অতিরঞ্জিত না করে দেখানোই উদ্দেশ্য। মুখোশটি প্রতীক হয়ে 888sport promo code চরিত্রের মূল সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তোলে। ‘ইউগেন’ জাপানের অন্যতম নান্দনিক সূত্র। আদর্শের অনুসরণে 888sport promo codeর মুখোশে আনা হয় প্রতীকী ব্যঞ্জনা। 888sport promo code চরিত্রে ব্যবহৃত এই মুখোশে ‘অন্তর্বর্তী অভিব্যক্তি’ রয়েছে বলে মনে করা হয়। অভিনেতা নিজের অভিনয়-কুশলতা দিয়ে এই ‘অন্তর্বর্তী অভিব্যক্তি’ ব্যবহার করে চরিত্রের অনুভূত আনন্দ বা শোক প্রকাশ করে।

কোনো কোনো চরিত্রের ভূমিকায় অভিনয় মুখোশ ছাড়াই করা হয়। এসব ক্ষেত্রে অভিনেতার মুখই হয় মুখোশ। এই অভিনয়ে অভিনেতার মুখের অভিব্যক্তিতে থাকে তার ব্যক্তিত্বের ছাপ। মুখোশহীন চরিত্রে অভিনয়ে অভিনেতার অন্তর্নিহিত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রাধান্য পায়। মুখোশ পরে অভিনেতা যেমন মুখোশের দ্বারাই অভিব্যক্তি প্রকাশ করে, মুখোশহীন অভিনয়ে এই প্রকাশ ঘটে সব ধরনের অভিব্যক্তি মুছে ফেলে সেগুলো কণ্ঠস্বর এবং দেহের অংশ সঞ্চালনে প্রবিষ্ট করার ভেতর। উভয় ক্ষেত্রেই যে সৌন্দর্যের সৃষ্টি হয় তার মধ্যে থাকে অবাস্তবতা (স্টাইলাইজেশন) যার সঙ্গে অন্য কোনো নাটকে অভিনেতাদের অভিনয়শৈলীর মিল নেই।

মুখোশ ছাড়া জটিল চরিত্রের অভিনয় সম্ভব হলেও নো নাটকে অভিনেতার প্রতীক হলো মুখোশ। মঞ্চে প্রবেশের আগে যে-মুহূর্তে সে মুখোশ লাগায় তখনই দৈনন্দিন জীবনের ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে সে প্রবেশ করে 888sport live chatের জগতে। পরিধানের আগে অভিনেতা মুখোশের দিকে গভীরভাবে দৃষ্টিপাত করে, যেন সে মুখ আর মুখোশকে একাকার করে নিতে চায়। মুখোশের আকার মুখের চেয়ে ছোট হয় যার পেছনে রয়েছে বড় আকারের দেহের ওপর ছোট আকারের মুখের সৌন্দর্য সৃষ্টির আদর্শ। একই কারণে মুখোশের কপাল দেখানো হয় বেশ প্রশস্ত ও উঁচু করে। একই নান্দনিক বিবেচনায় তরুণী/যুবতী চরিত্রের জন্য ব্যবহৃত মুখোশের কপাল বেশ উঁচু করে তৈরি। তার ভ্রু জোড়া চেঁছে ফেলায় কপালের উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। পরবর্তীকালে নতুন ধরনের মুখোশ তৈরি হয়েছে এবং সেখানে সমকালের রুচি দেখা যায়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে নো নাটকের মতো মুখোশও পঞ্চদশ শতকের আদর্শ অনুসরণ করে। তখনকার নো নাটকই এখনো আদর্শ বলে ধরা হয় সব দিক দিয়ে।

প্রথমদিকের নো নাটক মন্দির এবং মঠে অভিনীত হতো সেখানে ব্যবহৃত মুখোশে বৈচিত্র্য ছিল। কিছু মুখোশ ছিল একান্তই বাস্তবভিত্তিক। দৈনন্দিন জীবনে দেখা নর-888sport promo codeর মুখের মতো ছিল এই সব মুখোশ। এই জন্য মুখোশ নো নাটক যখন সাধারণ মানুষের দর্শনীয় ও উপভোগ্য অনুষ্ঠান ছিল তার কথা মনে করিয়ে দেয়। ত্রয়োদশ এবং চতুর্দশ শতকে নো নাটক ছিল জনপ্রিয় বিনোদন মাধ্যম। এসব নো নাটকে ধর্মীয় অনুভূতির গাম্ভীর্য কিংবা আভিজাত্যের ছাপ এবং উঁচু মানের সৌন্দর্য ছিল না। ইউগেন আদর্শের প্রতিফলন ঘটেনি এই সব মুখোশে। অভিনেতার মুখের সৌন্দর্যের অতিরিক্ত সৌন্দর্য সৃষ্টি এই সব মুখোশের উদ্দেশ্য ছিল না। যে-সব চরিত্রে অভিনয় করা হতো (888sport promo code, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, যোদ্ধা, প্রেতাত্মা) তাদের প্রতীক হিসেবেই তৈরি করা হতো এগুলো যার জন্য তখনকার মুখোশে একই ধরনের নির্দিষ্ট অভিব্যক্তি থাকতো। যেমন, কম বয়সের মেয়েদের মুখোশে দেখা যেত হাসিভরা মুখ, উল্লাসে ছোট হয়ে আসা চোখ। এ থেকে বোঝা যায় সেই সময়ে নো নাটকে বিষণ্ণ বিষয়ের অবতারণা করা হতো না যা পরবর্তীকালে করা হয়েছে। ‘মনো নো আওয়ারে’র যে নান্দনিক সূত্র তার উপস্থিতি দেখা যায় চতুর্দশ শতকের পরই যখন অভিজাত শ্রেণি এর পৃষ্ঠপোষকতা করতে শুরু করে। দুঃখ-বিলাস অভিজাত শ্রেণির পক্ষেই চর্চা করা স্বাভাবিক,              এ-কথা মনে করা যেতে পারে। নো নাটকের চারিত্রিক পরিবর্তনের সঙ্গে মুখোশের অভিব্যক্তিতেও পরিবর্তন আসে।

 

পোশাক

জাপানি ভাষায় পোশাককে বলা হয় ‘ইশো’। কিন্তু নো নাটকে ব্যবহৃত পোশাককে বলা হয় ‘শোজোকো’। নো মঞ্চ প্রায় সাজসজ্জাহীন, অলঙ্কারবিহীন। এর সরলতা এতই বেশি যে দর্শকের মনোযোগ আকর্ষণে ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মঞ্চের এই অতি সাধারণ দৃশ্যের তুলনায় অভিনেতার পোশাক খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, রঙিন এবং উজ্জ্বল। বিশেষ করে শিটে চরিত্রের পোশাক এমন জাঁকজমকপূর্ণ হয় যে তা চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। শতাব্দীর পর শতাব্দীব্যাপী এ-পোশাকের উন্নতি করা হয়েছে যার ফলে এটি পরিণত হয়েছে একটি 888sport live chatবস্ত্ততে। এর মধ্যে ডিটেইলের কাজ, রঙের বহুল ব্যবহার এবং আকারের বৈশিষ্ট্য সৃষ্টিতে অতিরঞ্জন রয়েছে। চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব ছাড়াও দর্শকদের বিমোহিত করার ভূমিকা রয়েছে নো নাটকের পোশাকে। এই পোশাক ব্যবহার করেই নো নাটকের বিষয়ে এবং মঞ্চ নির্মাণে যে কাঠিন্য, বন্ধ্যাত্ব এবং গাম্ভীর্য তা কিছুটা নমনীয় করে তোলা হয়। গায়কের কর্কশ কণ্ঠস্বর এবং নর্তকের আনুষ্ঠানিক অঙ্গভঙ্গিরও ক্ষতিপূরণ করে পোশাক। প্রথম পর্বের নো নাটকে ব্যবহৃত পোশাক সাধারণ ধরনের ছিল যা আজকের মানদন্ডে দেখা হলে মোটেও সন্তোষজনক মনে হবে না।

নো পোশাক সব ক্ষেত্রেই দৃষ্টিনন্দন, অভিনেতা যে-ভূমিকাতেই অবতীর্ণ হোক না কেন। জেলের মেয়ে, সেনাপতি অথবা পুরোহিত, কেউই চোখে পড়ার মতো পোশাক না পরে মঞ্চে আসে না। তবে তাদের পোশাকের ডিজাইন এবং রঙে তারতম্য থাকে। মেয়েদের পোশাক রঙিন এবং রঙহীন, এই দুই শ্রেণিতে বিভক্ত। রং বলতে এখানে লালই বোঝায়, যা তরুণী/ যুবতী চরিত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে ধরা হয়। কো-ওমোতে, ওয়াকা-গুন্না অথবা মাগোজিরো নামের মুখোশের সঙ্গে লাল রঙের পোশাক পরা হয়। শুকুমি এবং ফুকাই নামের মুখোশের সঙ্গে রঙহীন পোশাক পরা হয়। বৃদ্ধার পোশাকে অবশ্য লাল রং থাকে না যদিও এর কিছু ব্যতিক্রম আছে। শোতোবা কোমাচি নো নাটকে শিটে চরিত্র যদিও একশ বছরের বৃদ্ধা। তার পোশাকের কোমরবন্ধ অথবা আলখাল্লায় লাল রঙের ছোপ থাকে। এর দ্বারা বোঝানো হয় যে, বৃদ্ধার মধ্যে এখনো সৌন্দর্যের রেশ রয়েছে। যুবক বয়সের দেবতার চরিত্রের অভিনয়ে উজ্জ্বল লাল রঙের কোমরবন্ধ থাকে যার সঙ্গে বৈপরীত্য সৃষ্টি হয় তার পোশাকের সাদা রঙে। এর দ্বারা যৌবনের তেজস্বিতার পরিচয় দেওয়া হয়।

শিটের মূল পোশাক বেশ ঢিলা হয়, এর নিচে থাকে যে পোশাক বা কিমোনো তা কেবল গলার কাছেই দেখা যায়। গলার কাছে দৃশ্যমান এই অন্তর্বাস বা ভেতরের কিমোনো, নাটকে চরিত্রের মর্যাদার পরিচয় দেয়। এখানে রং এক, দুই কিংবা তিন ধরনের হতে পারে এবং প্রতিটি রঙেরই চরিত্রের সূত্রে নির্দিষ্ট অর্থ রয়েছে। মূলত এখানে সাদা, লাল, হালকা নীল, গাঢ় নীল, আলট্রামেরিন নীল, হালকা সবুজ, মরচে পড়া রং, হলুদ-পিঙ্গল এবং পিঙ্গল রং ব্যবহার করা হয়। সাদা রং সবচেয়ে মর্যাদাব্যঞ্জক, সবুজ এবং পিঙ্গল তার বিপরীত অর্থ বহন করে। লাল যৌবনের তেজি স্বভাব এবং সৌভাগ্যের প্রতীক। হালকা নীল দ্বারা শান্ত স্বভাব বোঝানো হয়। গাঢ় নীল এবং আলট্রামেরিন নীল বলিষ্ঠ চরিত্রের প্রতীক। পিঙ্গল রং বয়স্ক চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই  অন্তর্বাসের (ভেতরের কিমোনো) যেটুকু গলার কাছে দেখা যায় তার এক ফালির রং লাল এবং দ্বিতীয় ফালি সাদা হয়ে থাকে। এই দুটি অন্তর্বাসই রঙে লাল হয় দৈত্য বা রাক্ষসের চরিত্রে। ওয়াকি চরিত্র সাধারণত হালকা নীল অন্তর্বাস পরে। কোকাতা পরে লাল রঙের অন্তর্বাস, কেননা এটি সাদার চেয়ে কম মর্যাদাপূর্ণ। কোকাতা চরিত্র শিটের চেয়ে নিচের বলে রঙের এই পার্থক্য করা হয়।

প্রথমে অভিনেতার সমস্ত শরীর সাদা অন্তর্বাসে ঢেকে দেওয়া হয়। এরপর পরিধান করা হয় সিল্কের পোশাক যার সঙ্গে থাকে উপযুক্ত রঙের অন্তর্বাস যা কেবল গলার কাছে বাইরে থেকে দেখা যায়। গলার এই অংশের রং দিয়েই চরিত্রের মর্যাদা বা স্তর বোঝানো হয়। এই পোশাকের ওপর পরা হয় জাঁকজমকপূর্ণ ব্রোকেডের কিমোনো। বাইরের এই কিমোনো শিটে এবং 888sport app অভিনেতা সযত্নে বেছে নেয়। এই কিমোনো দিয়েই অভিনেতাকে ব্যাখ্যা করতে হয় অভিনীত চরিত্রটি। এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি কোমরবন্ধ থাকে। সবার ওপর পরা হয় ওপরের জ্যাকেট বা ঢোলা হাকামা এবং পরচুলা। চরিত্রের ওপর নির্ভর করে অভিনেতার মাথায় পরা হয় টুপির মতো আবরণ।

অভিনেতা গ্রিনরুমে পরিহিত পোশাক পরার পর আয়নায় নিজেকে দেখে এবং সন্তুষ্ট হওয়ার পর মুখোশ গ্রহণ করে। নো নাটক দেখতে অভিজ্ঞ দর্শক মঞ্চে অভিনেতা প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারে সে কীভাবে চরিত্রটি ব্যাখ্যা করবে। পোশাক নো নাটকে তাই বেশ গুরুত্বপূর্ণ কেননা, যেসব উপকরণের সাহায্যে চরিত্রটির উপস্থাপনা করা হয় তার মধ্যে এটি অন্যতম। এই জন্য প্রত্যেক অভিনেতা মঞ্চে প্রবেশের আগে অভিনয়ের চরিত্র অনুযায়ী তার পোশাক বেছে নেয়। যে-মুখোশ পরবে তাও পোশাক নির্বাচনে ভূমিকা রাখে। যখন অনেক বছর পর একটি নো নাটক মঞ্চস্থ হয় সেই সময় পোশাকের বিষয় খুব গুরুত্ব পায়। পোশাক দিয়েই পুরনো নো নাটকটি দর্শকদের উপলব্ধির কাছাকাছি নিয়ে আসার প্রয়াস থাকে।

মুখোশ ছাড়া পুরুষ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রায় আটাশটি পোশাক নির্বাচিত হয়েছে। শিটে যখন মেয়ে চরিত্র অভিনয় করে তার জন্য প্রায় বিশটি পোশাক রয়েছে। নো নাটকে 888sport app ভূমিকায় অভিনেতাদের জন্য এবং কিওগেনের অভিনেতাদের জন্য রয়েছে প্রায় একই সংখ্যক পোশাক। নো নাটকের পোশাক আদিতে সাধারণ প্রকৃতির হলেও পরবর্তীকালে রাজদরবারের অভিজাতদের এবং উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাদের ব্যবহৃত পোশাকের আদলে তৈরি হয়েছে। নাটকে ব্যবহারের জন্য রাজদরবারের এবং সেনাপতি ও পুরোহিতের পোশাক সংশোধিত করা হয়। সংশোধনের ফলে অভিনেতাদের পোশাক নো মঞ্চের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়ে যায়, অন্য কোনো নাটকে এর ব্যবহার হয় না।

দর্শকদের চোখ শিটের পোশাক দেখে ধাঁধিয়ে যায়। কিন্তু পোশাক আর মুখোশের কাজ কেবল দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা নয়, পোশাকের সাহায্যে দর্শকদের এক অনির্বচনীয় সৌন্দর্যের জগতে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়।

 

সংগীত

শিক্ষানবিশদের কাছে নো নাটক হলো কণ্ঠস্বরের 888sport live chat এবং এর অভিনেতারা গায়ক-গায়িকা। যারা নাচ শেখে তারা অবশ্য সংগীতের এই প্রাধান্য মানে না, তাদের কাছে নো মানেই নাচ। পন্ডিত-গবেষকদের কাছে নো হলো কাব্য-নাট্য যেখানে নাচ এবং গান উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ। কারো কাছে মনে হবে নো নাটকের গানে বৈচিত্র্য নেই, যেমন রয়েছে 888sport app নাটকে। মুড পরিবর্তনের জন্য নো নাটকে সংগীতের ভূমিকা খুব স্পষ্ট নয়, নো সংগীতে আবেগ পরিবর্তনের সহায়ক উপকরণ নেই বলে মনে হয়। সব সংগীতই এক ধরনের, যেন একই সংগীত রচয়িতার সৃষ্টি। অনেক অভিনেতার ক্ষীণ কণ্ঠস্বরের জন্য সংগীতের গুরুত্ব সম্বন্ধে সন্দেহ জাগে। যখন খুব লিরিকধর্মী হয় তখনো নোর সংগীত শিটের কণ্ঠে স্বতঃস্ফূর্ততার সঙ্গে সুরেলা হয়ে ওঠে না। কেবল কোরাসের ক্ষেত্রেই সুরেলা ধ্বনি শনাক্ত করা যায়। এই সুরেলা স্বরের সঙ্গে তুলনা করা যায় খ্রিষ্টান ধর্মের উপাসনায় ব্যবহৃত গ্রেগরিয়ান চ্যান্টের।

প্রথম নো নাটক দেখার সময় দর্শক-শ্রোতা এর সংগীত প্রায় উপলব্ধিই করতে পারে না। সংগীতের এই দুর্বোধ্যতার পেছনে রয়েছে এর জটিলতা এবং পাশ্চাত্যের সংগীতের সঙ্গে পার্থক্য। নো নাটকে অভিনেতার গান নির্ভর করে সে-চরিত্রটির মর্যাদা (কুরাই), গুরুত্ব বা অর্থ কতটুকু বুঝতে পেরেছে তার ওপর। পাশ্চাত্যের সংগীতের বিপরীতে তাকে গানের সাহায্যে চরিত্রের অন্তর্নিহিত অর্থের ব্যাখ্যা দিতে হয়। নো নাটকে গানের গুরুত্ব এই জন্য বেশি।

নো নাটকের কণ্ঠসংগীতের সঙ্গে যন্ত্রসংগীত থাকলেও তা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত নয়। নাটকের শুরুতে নাম ঘোষণার (নানোরি) সময় বাঁশির শব্দ শোনা গেলেও এই বাঁশির সুর অভিনেতার কণ্ঠস্বরের সঙ্গে মিশে যায় না অথবা তার বিপক্ষেও কাজ করে না। বাঁশির সুর স্বাধীনভাবেই গীত সংগীতকে অলংকৃত করে, কোনো মন্তব্য ছাড়াই। অর্থাৎ যন্ত্রসংগীতের নাটক ব্যাখ্যার কোনো ভূমিকা নেই। এমনকি ড্রামের বাদ্যও গায়কের কণ্ঠস্বরের সঙ্গে তাল রেখে চলে না। প্রকৃতপক্ষে নো সংগীতের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর অনিয়মিত সঞ্চরণ। নো অভিনেতার কণ্ঠে গীত সংগীতের সুরের পরিধি খুব সীমিত থাকে যার জন্য কণ্ঠস্বর একটু উঁচু-নিচু হলেই তা খুব তাৎপর্যপূর্ণ হয়। এর সঙ্গে যখন যন্ত্রসংগীত যুক্ত হয় সেই সময় সংগীতে লিরিকধর্মিতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। যন্ত্রসংগীত সম্পূরক বা পরিপূরক হলে কণ্ঠস্বরের এই সূক্ষ্ম প্রকাশ বিঘ্নিত হতো।

অনেকের কাছে নো নাটকের আকর্ষণ তার সংগীত কিন্তু অভিনেতার কাছে মুখের শব্দ এবং তার অর্থের যে মর্যাদা, গাম্ভীর্য তার স্বাভাবিক সম্প্রসারণ মাত্র। অভিনেতা সংগীতকে অভিনয় থেকে পৃথক কিছু বলে মনে করে না। বাঁশির সুর যা নাটকের প্রথমেই শোনা যায় অথবা কোরাসের কণ্ঠের সংগীত কোনো বিশেষ নাটকের বৈশিষ্ট্য নয়, সব নাটকেই এদের উপস্থিতি রয়েছে যা থেকে এদেরকে সাধারণ আবহ সংগীত বলাই সংগত। কণ্ঠস্বর ব্যবহার করে যে গায়ক অথবা বাদ্যযন্ত্র যে বাজায় তারা যদি সংগীতের ভূমিকা সম্বন্ধে সচেতন না হয় তাহলে অভিনেতার পক্ষে মঞ্চে প্রবেশই কঠিন হয়ে পড়তে পারে। তখন তার পক্ষে হাসি-গাকারি দিয়ে হেঁটে যাওয়াও হবে বেশ কঠিন।

নো নাটকের অভিনেতা যখন গান গায় তার সেই গান পাশ্চাত্যের মানদন্ড দিয়ে বিচার করা যায় না, কেননা কণ্ঠস্বরের মাধুর্য বা ওঠা-পড়ার সাহায্যে শ্রোতাকে আনন্দ দেওয়ার কোনো প্রয়াস থাকে না এর মধ্যে। কণ্ঠস্বরের যে বিভিন্ন মাত্রা যেমন – টেনর, ব্যারিটন অথবা বাস্, সেসব ইচ্ছে করে পৃথক করা হয় না এবং কণ্ঠস্বরের যে চূড়ান্ত প্রকাশ, অর্থাৎ খুব উঁচু বা নিচু লয়, তার প্রতিও মনোযোগ দেওয়া হয় না। একজন অভিনেতা বৃদ্ধ চরিত্রেরও অভিনয়ে যদি কর্কশ বা কাঁপা কাঁপা স্বরে গান গায় তবে তা তার ব্যর্থতা বলে ধরা হয় না যদি অভিনেতা বৃদ্ধ চরিত্রের যথার্থ উপস্থাপনায় সমর্থ হয়।

নো নাটকের তুলনায় কিওগেনের সংগীত খুব সহজ এবং সরল। গানের সব লাইন এখানে ছন্দের সঙ্গে, সুরের তালে তাল মিলিয়ে পরিবেশ করা হয়। যখন গদ্যকে সংগীতের মতো উচ্চারণ করা হয় তখন প্রতিটি সিলেবলের ওপর আরোপ করা হয় ছন্দোময় চরিত্র। সিলেবলের প্রতিটি গুচ্ছকে একই সময় এবং উচ্চারণ দিয়ে ব্যক্ত করে ‘কিওগেন স্বর’ সৃষ্টি হয়।

 

নো নাট্যরীতি

নো নাটককে বলা হয় গীতিনাট্য। গানের লিরিকের নাম দেওয়া হয়েছে ইয়োকইয়ুক (গানের সংগীত, ইংরেজিতে সং মিউজিক)। নো নাটকে নাচ রয়েছে যা চার যন্ত্রবিশিষ্ট অর্কেস্ট্রা ও লিরিকের সমভিব্যহারে সম্পাদিত হয়। প্রকৃতপক্ষে নো নাটক অভিনীত হয় না, সংগীতের সঙ্গে নৃত্যের আকারে পরিবেশিত হয়। আদিতে এই নাটকের উৎপত্তি জনপ্রিয় ধর্মীয় গান ও নাচ থেকে। নো নাটকে নাচের যেসব অংশ এবং দেহ-সঞ্চালনে যা একত্রে গ্রথিত সেগুলো এমন বুননিতে বা কাঠামোর ভেতর থাকে যার মধ্যে কোনো আকস্মিকভাবে সৃষ্ট অসমান উত্তরণ নেই। অর্থাৎ অংশগুলো মসৃণভাবে অগ্রসর হয়। দেহের সঞ্চরণ বা ভাব-ভঙ্গি ব্যাখ্যা প্রদানকারী অর্ধ-বাস্তবভিত্তিক মূক অভিনয়ই হোক অথবা প্রতীকী উপস্থাপনা, মসৃণতার এই বৈশিষ্ট্য সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। নো নাটকে নাচ সাধারণত যেমন লাফ দেওয়া বা দ্রুতগতিতে দেহ সঞ্চালনের মাধ্যমে হয়ে থাকে, তেমন নয়। এই নাচ শান্ত, সমাহিত ভঙ্গিতে প্রদর্শিত হয়। মঞ্চের মেঝের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত এই নাচ নিয়ন্ত্রিত, বৃত্তাবদ্ধ এবং প্রশান্ত যা আত্মার প্রতিনিধিত্ব করে। জাপানি ভাষায় নাচকে ওদোরি নাম না দিয়ে বলা হয় ‘মাই’, যার প্রচলিত অর্থ নাচ।

নো নাটকের লিরিকে কথ্য এবং গীত অংশ রয়েছে। কথ্য অংশের উচ্চারণ অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ, যার সঙ্গে প্রচলিত সংলাপের মিল নেই। এভাবে নো অন্য সব ধরনের নাটকে রূপের তুলনায় সার্বিকভাবে পৃথক। মিউজিক্যাল কমেডির চেয়ে নো আরো বেশি মিউজিক্যাল কিন্তু অপেরার মতো লিরিকসমৃদ্ধ মিউজিক্যাল নয়। পাশ্চাত্যের নাটকের মতো সংলাপপ্রধান এবং বাস্তবসম্মতও নয় নো নাটক। নো নাটকে কণ্ঠস্বরের উচ্চারণের সঙ্গে তুলনা করা যায় খ্রিষ্টধর্মের লিটার্জির অথবা গ্রেগরিয়ান চ্যান্টের।

আদি রূপ থেকে নো নাটকের পরিশীলন এবং সম্ভ্রান্ত 888sport live chat হিসেবে রূপান্তর হয়েছে মূক অভিনয়, সংগীত এবং নাচের সমন্বয়ে। এর বিশেষ শৈলী যা বেশ অবাস্তব (স্টাইলাইজেশন), সেটি সম্পূর্ণ হয় তোকুগাওয়া ইয়েআশুর সময়ে (১৬০৩) যখন তিনি শোগুন পদে আসীন হন। সামুরাই যোদ্ধার আদর্শ ও ন্যায়নীতির প্রভাবে এর চূড়ান্ত রূপ নির্ধারিত হয়। নো নাটকই একমাত্র 888sport live chat যেখানে সামুরাই যোদ্ধাদের চেতনা বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। পরে অবশ্য তাদের প্রভাব হ্রাস পেয়েছে নতুন উদ্ভাবনের ফলে। তোকুগাওয়া ইয়েআশু নো নাটককে তাঁর সরকারের স্বীকৃত 888sport live chat হিসেবে ঘোষণা করেন। বৌদ্ধমন্দির ও মঠের প্রভাবও এর সঙ্গে যুক্ত হয়। নো নাটকের ইতিহাস এভাবে জাপানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে।

 

নো নাটকের বিষয়

সাধারণত নো নাটকের শ্রেণি বিভাগ করা হয়েছে তার বিষয়ের ভিত্তিতে। এই সব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে : (ক) ঈশ্বরবিষয়ক নাটক, (খ) 888sport promo codeবিষয়ক নাটক, (গ) বাস্তবভিত্তিক (যেমন, উন্মাদ চরিত্রভিত্তিক) নাটক, (ঘ) যোদ্ধাবিষয়ক নাটক এবং (ঙ) রাক্ষস-বিষয়ক নাটক।

নো নাটকের যে-সংগ্রহ সমগ্র (রিপারটোয়ার) সেখানে যুদ্ধ বিষয়ক নাটকের 888sport free bet ১৬টি আর বাস্তবভিত্তিক নাটকের 888sport free bet ৯৪টি, যা থেকে শুধু দর্শকদের পছন্দ সম্বন্ধে ধারণা করা যায় না, নাটকের যে-বিষয় নাট্যকারের কাছে গুরুত্ব পেয়েছে তার পরিচয়ও পাওয়া যায়। 888sport promo code এবং বাস্তবভিত্তিক (উন্মাদ চরিত্রবিশিষ্ট) নাটককেই মনে করা হয় নো সমগ্রের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সেরা।

ঈশ্বরবিষয়ক নো নাটকে দেখা যায় একই সঙ্গে জাঁকজমকপূর্ণ এবং ভাবগম্ভীর কাহিনির বর্ণনা। যুদ্ধবিষয়ক নাটকে থাকে যুদ্ধের ভয়াবহতা ও রক্তপাতের বিভীষিকা। 888sport promo codeবিষয়ক নাটকে দেখা যায় কাব্যিক মাধুর্য। এই ধরনের নাটকে মঞ্চে ঘটনা ধীরলয়ে ঘটে। রাক্ষসবিষয়ক নাটকে থাকে তীব্রতা এবং আকস্মিক ঘটনা। সব ধরনের নাটকেই কম-বেশি কাব্যিক দ্যোতনা ব্যবহার করা হয়।

নো নাটকের বিষয় যা-ই হোক এর বর্ণনায় ব্যবহার করা হয় সংলাপ, সংগীত (বাজনাসহ), নাচ এবং অভিনয়। এর মধ্যে নাচই কিছুটা উচ্চকিত থাকে, বাকি তিনটির আবহ নম্র, বিনয়াবনত এবং প্রায়ই বিষণ্ণ। নো নাটকের সংলাপ বেশ অসাধারণ অর্থাৎ স্টাইলাইজড এবং সেজন্য দর্শকের আগে থেকে জানা না থাকলে দুর্বোধ্য। বিষয়ের ওপর নির্ভর করে সংলাপ, সংগীত ও অভিনয়ের মাত্রা।

ঈশ্বর বিষয়ক নো নাটকে শিটে বা প্রধান অভিনেতা ঈশ্বরের ভূমিকায় অভিনয় করে। শিটে দেশের শান্তি ও উন্নতি কামনা করে এবং নাচের মাধ্যমে উৎসবের আমেজ আনে। এই নাটকগুলো দর্শকদের অভিনন্দন জানানোর উদ্দেশ্যে লেখা। নাটকের মাধ্যমে দর্শকদের আনন্দ প্রকাশের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়।

দ্বিতীয় শ্রেণির নো নাটক অর্থাৎ যুদ্ধবিষয়ক নাটকে শিটে প্রধান অভিনেতা টাইরা বা মিনামোটো গোষ্ঠীর একজন বিখ্যাত যোদ্ধার ভূমিকায় অভিনয় করে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই যোদ্ধার প্রেতাত্মা মঞ্চে এসে তার মানসিক কষ্টের কথা বলে। কিন্তু এই ধরনের কিছু নাটকে বিষণ্ণ ও দুঃখের পরিবর্তে মার্জিত রুচি ও সুন্দর মানসিকতার স্ফুরণ ঘটে।

তৃতীয় শ্রেণির নো নাটকে শিটের চরিত্র হয় একজন যুবতী ও সুন্দরী রমণীর। এখানে যে-আবহ সৃষ্টি করা হয় তা সর্বোপরি নম্রতার এবং মার্জিত সৌন্দর্যের। নাচের দৃশ্য ছাড়া এ ধরনের নাটকে খুব একটা মুভমেন্ট থাকে না। এখানে সংগীত হয় সুমধুর যা অন্য শ্রেণির নাটকে দেখা যায় না। নাটকের বক্তব্য উপস্থাপনে সংগীতের ভূমিকা বেশ প্রধান। নো নাটকের প্রকৃত আদর্শ এই শ্রেণির নাটকেই দেখা যায়। খুব ভালোভাবে অভিনীত ও উপস্থাপিত হলে এই শ্রেণির নাটকই নো নাটকের প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত হতে পারে।

চতুর্থ শ্রেণির নাটকের 888sport free bet অন্য শ্রেণির তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এই শ্রেণিতে বিভিন্ন টাইপ রয়েছে। অন্য শ্রেণির তুলনায় এই শ্রেণির নাটকে নাটকীয়তার মাত্রা বেশি হয়। টাইপের মধ্যে রয়েছে উন্মাদ পুরুষ, উন্মাদ 888sport promo code, বর্তমান জীবন যেখানে পুরুষই শিটে চরিত্র অভিনয় করে এবং মুখোশ ছাড়া। মোহগ্রস্ততা-বিষয়ক নাটকও একটি টাইপ।

পঞ্চম শ্রেণির নো নাটকে শিটে চরিত্রকে দেখানো হয় অতিপ্রাকৃতিক শক্তি বা ঈশ্বররূপে অথবা শয়তানের প্রতিনিধি হিসেবে। এই শ্রেণির নাটক দুই অঙ্কবিশিষ্ট হয় এবং নাটকের গতি অন্য শ্রেণির নাটকের তুলনায় ক্রমান্বয়ে তীব্রতা লাভ করে।

জিয়ামির সময় থেকে নো নাটকে ওপরে যেভাবে বলা হয়েছে সে ধরনের শ্রেণি বিভাগ করা হয়। নো নাটকের উপস্থাপনায় প্রতিটি শ্রেণি থেকে একটি বেছে নিয়ে ওপরের ক্রমানুসারে অভিনয় করার রীতি বেশ পুরনো। বর্তমানে সময়ের অভাবে দুটি কি তিন শ্রেণির নো এবং একটি কিওগেন কমেডি দিয়েই নো নাটকের অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ করা হয়। নো নাটকে প্রচলিত শিমাই নাচ দুটি শ্রেণির নাটকের মধ্যে প্রদর্শিত হয়ে থাকে।

 

নো নাটকের নান্দনিকতা

গাম্ভীর্য নো নাটককে 888sport app নাটক থেকে পৃথক করেছে। জাপানিরা হাস্য-কৌতুক পছন্দ করলেও নো নাটক গুরুগম্ভীর প্রকৃতির। নো নাটকের গাম্ভীর্য যেন একঘেয়ে হয়ে না যায় তার জন্য মাঝে মাঝে অভিনীত হয় কিওগেন নামের নাট্যাংশ যা হাস্য-কৌতুকপূর্ণ। আদিতে নো নাটক যেভাবেই মঞ্চস্থ হয়ে থাকুক না কেন (কিওগেনের মতো হয়েছে বলে সবাই মনে করে) বর্তমানে পবিত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠানের গাম্ভীর্য নিয়েই এই নাটক উপস্থাপিত হয়। নো নাটকের প্রায় সব ট্র্যাজিক প্রকৃতির। ব্যতিক্রমী কিছু ক্ষেত্রে যখন অভিনেতাকে প্রফুল্ল দেখায় সেই সময়ও তার মধ্যে এক ধরনের বিষণ্ণতা থাকে। মনো নো আওয়ারের যে-দার্শনিকতা তার প্রভাব দেখা যায় নো নাটকে।

অন্যসব নাটকের তুলনায় নো নাটক দর্শকদের কাছ থেকে বেশি মনোযোগ দাবি করে। নো নাটকের টেক্সট মধ্যযুগীয় ভাষায় লেখা। এর ভেতর যে-সব ক্লাসিকের উদ্ধৃতি রয়েছে তা আরো প্রাচীন। খুব স্পষ্ট করে উচ্চারণ করলেও নো নাটকের সংলাপের অর্থোদ্ধার বেশ কঠিন। নাটকের উপস্থাপনে নাটকীয়তার ব্যবহারকে অভিনেতারা অপছন্দের মনে করে। বাস্তবতার প্রতি মনোযোগ দেওয়া সম্বন্ধেও একই কথা প্রযোজ্য।

নো নাটকের দর্শকরা এই নাট্যরীতির প্রতি সমর্থন জানিয়ে অল্প বয়সের মেয়ের ভূমিকায় থুরথুরে বুড়ির লোলচর্ম বিশিষ্ট মুখ ও হাত এবং কাঁপা কাঁপা কণ্ঠস্বর স্বাভাবিক বলেই গ্রহণ করে। একটি কিশোর দানব বা রাক্ষসের ভূমিকায় অভিনয় করলেও তা বিশ্বাসযোগ্য হয় তাদের কাছে। মুখোশের ব্যবহারের জন্য সুন্দর নয় এমন মুখ নিয়ে অভিনেতা দেবতা বা সুন্দরী রমণীর চরিত্রে অভিনয় করতে সমর্থ হয়।

নো নাটকের বর্তমান পরিশীলিত রূপ এসেছে ছয়শো বছরের বিবর্তনে। অতীতের প্রতি 888sport apk download apk latest version জানিয়ে সবাই মনে করে আদিতে যেসব অভিনেতা ছিল বর্তমানে সে-মাপের কেউ নেই। নো নাটকের ইতিহাসে সবচেয়ে খ্যাতনামা প্রবক্তা ও লেখক যিয়ামির মতে, সমকালের কোনো অভিনেতা তাঁর পিতা কান্নামির অভিনয় কৌশলের কাছাকাছি যেতে পারে নি।

নো নাটকে প্রযোজ্য ও ব্যবহৃত বিশেষ শব্দাবলি অনেকের কাছেই দুর্বোধ্য মনে হবে। নো নাটকের বিচারে ‘ইওগেন’ একটি গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি। এর অর্থ ব্যাখ্যা করা সহজ নয়। একসময় ইওগেন বলতে বোঝাতো রহস্যাবৃত বা অজ্ঞাত বিষয় যার মধ্যে রয়েছে অনিশ্চয়তা ও অমঙ্গলের ছায়া। দ্বাদশ শতকের কাব্য সমালোচনায় সৌন্দর্যের বর্ণনায় এর বহুল ব্যবহার হয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ইওগেনের অর্থ হলো, এমন বিষয় যা স্পষ্ট করে বলা হয় না, কেবল আভাস দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে ইওগেনের এই অর্থের পরিবর্তন হয়। এর দ্বারা বোঝানো হয় প্রীতিকর, স্নিগ্ধ কোনো কিছু যেমন – মঠে বা 888sport sign up bonusসৌধে নৃত্যরত বালকেরা অথবা রাজদরবারে বিনোদনের খেলা। যিয়ামি যখন তাঁর পরিচিত ব্যক্তিদের আচার-আচরণ, চেহারা ও কথাবার্তার দৃষ্টান্ত দিয়ে ইওগেনের ব্যাখ্যা দেন তখন স্নিগ্ধতা (প্রেম), মার্জিত রূপ (এলিগেন্স) বুঝিয়েছেন। তিনি যখন বলেন যে, নো নাটকে ইওগেন থাকবে, তখন এই অর্থই বোঝায়। ভয়ংকর কিংবা কুৎসিত চরিত্রকেও মার্জিতভাবে, স্নিগ্ধতার সঙ্গে উপস্থাপিত করতে হবে, এই ছিল তাঁর বক্তব্য। বর্তমানে মুখোশ ব্যবহার করে এই শর্ত পূরণ করা হলেও অতীতে অভিনেতাদের চেহারা, চেহারার মাধুর্য এই ভূমিকা পালন করে।

যিয়ামি ইওগেনের সহজ-সরল অর্থ ব্যাখ্যা করেই সন্তুষ্ট ছিলেন, এমন মনে করা যায় না। তিনি পরবর্তীকালে যেসব সমালোচনামূলক 888sport live লেখেন সেখানে ইওগেনের অর্থে ক্ষতিকর, অন্ধকারাচ্ছন্ন, রহস্যাবৃত এই সব ব্যঞ্জনা অন্তর্ভুক্ত হয়। দ্বাদশ শতকের 888sport app download apkর বিশ্লেষণের পরিপ্রেক্ষিতে ইওগেনের এই ব্যাখ্যায় যদি কেউ যিয়ামি-অভিনীত নাটক সম্বন্ধে বলে যে, এর মধ্যে ইওগেন রয়েছে, তাহলে তিনি কেবল মার্জিত বা স্নিগ্ধতার উল্লেখ করেন না, অর্থাৎ সুলিখিত কিংবা সুন্দরভাবে অভিনীত হওয়ার বিষয় এখানে প্রাধান্য পায় না। ইওগেন প্রকৃতপক্ষে সৌন্দর্যের যে প্রচলিত অর্থ বা ব্যাখ্যা তা বর্জন করে। যদি 888sport promo codeর সৌন্দর্যের উপস্থাপনা প্রধান উদ্দেশ্য হয়, 888sport promo code-অভিনেত্রী সেই ভূমিকায় অভিনয় করতে পারে যদিও যিয়ামির সময় তারা অভিনয় করার সুযোগ পায় নি। কিন্তু রাজ নর্তকীর ভূমিকায় কোনো মেয়ে অভিনয় করবে বলা হলে তা নো-প্রেমীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না কেননা, তাদের মতে, ষাট বছর বা তার ঊর্ধ্বে বয়স্ক পুরুষ যার কণ্ঠস্বর ভাঙা এবং হাত দীর্ঘ ও লোলচর্ম বিশিষ্ট তার মধ্যেই রয়েছে বেশি মাত্রায় ইওগেন।

ইওগেন সম্বন্ধে যিয়ামির পরিবর্তনশীল মতামত তাঁর নাটক লেখায় কতটুকু বা কীভাবে প্রতিফলিত, এ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। তার সমালোচনার কাজগুলো বেশ পুরনো এবং নাটকগুলোও পরিবর্তিত হয়েছে। যিয়ামি নিজেই বলেছেন, নাটক নিয়মিত সংশোধিত হওয়া প্রয়োজন যেন নতুন প্রজন্মের দর্শকদের রুচিসম্মত হয়। এখানে তিনি আপসকামী বলে মনে হবে। এক হিসাবে, যিয়ামি ২৫টির মতো নো নাটক লিখেছেন যার মধ্যে 888sport promo code চরিত্রের নাটকগুলোতে ইওগেন সম্পর্কে তাঁর ধারণার নিখুঁত প্রতিফলন ঘটেছে বলে মনে করা হয়। যিয়ামি তাঁর নাটক সম্বন্ধে খুব কমই লিখেছেন তাঁর সমালোচনামূলক 888sport liveে; কিন্তু অভিনয় সম্পর্কে তাঁর লেখা উঁচুমানের এবং বেশ সমৃদ্ধ। তাঁর নয় শ্রেণির অভিনেতা সম্বন্ধে লেখা নো নাটকের 888sport live chat সম্বন্ধে প্র্যাকটিকাল এবং দার্শনিকতা বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য দেখা যায়। অভিনয় সম্পর্কে ‘ফুলে’র উল্লেখ করে তিনি অভিনেতা যে বিশেষ সৌন্দর্য উপস্থাপিত করে তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এই বিশেষ সৌন্দর্য হলো ‘রহস্য’।পাশ্চাত্যের ললিতকলার আলোচনায় যদিও রহস্য সর্বজনগৃহীত নান্দনিক আদর্শ নয়, তবু এই রহস্য বলতে তিনি কী মনে করেছেন তা উপলব্ধি করা কঠিন নয়। সম্ভবত এই ‘রহস্যে’র ব্যাখ্যা পাওয়া যায় হলিউডের বিখ্যাত অভিনেত্রী গ্রেটা গার্বোর জীবনে। তিনি পরিপার্শ্বের কদর্যতা এড়িয়ে নির্জনতার ভেতর রহস্যময় চরিত্র হিসেবে জীবনযাপন করে তাঁর সৌন্দর্যের খ্যাতি বহুগুণ বিস্তৃত করেছেন। ‘রহস্যে’র পরই যে-‘ফুল’ অভিনয় যিয়ামির উদ্দিষ্ট তা হলো অভিনয়ে খুঁত বা ত্রুটি যোগ করা যেন দর্শক নিখুঁত অভিনয় দেখে ক্লান্ত বা অমনোযোগী হয়ে না পড়ে। ফরাসি নর্তকী সারাহ বার্নাডের মধ্যে এই ‘ফুলে’র গুণ ছিল। তৃতীয় যে-‘ফুল’ যিয়ামিকে আকৃষ্ট করে তা হলো শান্ত-সমাহিত ভাব বা স্থৈর্য। একটি পাত্রে বরফ জমিয়ে রাখা হলে এই ‘ফুলে’র ব্যাখ্যা দেওয়া যায়। শান্ত-সমাহিতের অন্য অর্থ পবিত্রতাও করা যায়। যিয়ামি ইওগেনকে তাঁর পছন্দের অভিনয়ে উৎকর্ষের পরাকাষ্ঠা মনে করলেও ‘মনো মানে’ বা বস্ত্তর অনুকরণকে গুরুত্বহীন বলে মনে করেননি। খুব স্টাইলাইজড হলেও নোর অভিনয়ে ডিটেইলের প্রয়োজন তিনি উপলব্ধি করেছেন, যেন অভিনেতার অভিনয় বিশ্বাসযোগ্য হয়। যিয়ামি ছিলেন একাধারে নাট্যকার, অভিনেতা এবং সুরকার। তিনি প্র্যাকটিকাল ছিলেন এবং সেই কারণে অভিনেতার কথা যেমন ভেবেছেন তেমনি মনে রেখেছেন দর্শকদের উপলব্ধির ক্ষমতা ও তাদের প্রত্যাশার বিষয়।