নোবেলজয়ী গল্পকার অ্যালিস মনরো

বৃহস্পতিবার ১০ অক্টোবর ২০১৩ 888sport live footballে নোবেল 888sport app download bd পেলেন কানাডার কথা888sport live footballিক ৮২ বছর বয়েসি অ্যালিস মনরো। নোবেল কমিটির প্রেস রিলিজে তাঁকে বর্ণনা করা হলো Master of the contemporary short story হিসেবে। তিনি 888sport live footballে কানাডার প্রথম নোবেলজয়ী, লেখিকাদের মধ্যে ত্রয়োদশ। মনরোর রচনায় কোনো নাটকীয়তা নেই, ঘটনার ঘনঘটা নেই – যা আছে তা হলো 888sport promo code-পুরুষের সম্পর্ক, মফস্বল শহরের জীবনযাত্রা, দুই প্রজন্মের সম্পর্ক ও সংঘাত, আবেগের টানাপড়েন ও চোরাটান। তিনি কানাডার আন্তন চেকভ, ছোটগল্পের দক্ষ স্রষ্টা; তিনি সমসাময়িক লেখকদের থেকে যোজন দূরত্ব এগিয়ে।

তাঁর গল্পের চরিত্রেরা সাধারণ মানুষ; শৈলী নিয়ে তাঁর কোনো মাথাব্যথা নেই; জীবন, মৃত্যু, প্রেম ও বিরহ মিলে তাঁর লেখার জগৎ। তিনি বাস করেন কানাডার অন্টারিও প্রদেশের ক্লিনটন নামে একটি ছোট শহরে। নোবেল জয়ের সংবাদ পেয়ে তিনি জানালেন – ‘I would really hope this would make people see the short story as an important art, not just something you play around with until you got a novel.’

ছোটগল্পের সূক্ষ্ম 888sport live chatী তিনি, গল্পের মাধ্যমে মৃদু মোচড় লাগান পাঠক-পাঠিকার হৃদয়ে। তিন দশক আগে লেখা এমনই একটি গল্প ‘প্রু’ আমি বাংলায় 888sport app download apk latest version করেছি।

প্রু

অ্যালিস মনরো

 

এক

প্রু থাকতো গর্ডনের সঙ্গে। সে-সময় গর্ডন তার স্ত্রীকে ছেড়ে যায় এবং যে-সময়ে সে ফিরে আসে তার স্ত্রীর কাছে – এই দুটো ঘটনার মাঝের সময়টুকুতে – অর্থাৎ সব মিলিয়ে এক বছর চার মাস। এর কিছু সময় পরে ডিভোর্স হয়ে যায় গর্ডন এবং তার স্ত্রীর – তারপর বেশ কিছুদিন চলে অনিশ্চয়তার দোলাচল, মানে সাময়িক সহবাস আবার না-সহবাস; শেষ পর্যন্ত তার স্ত্রী ভেগে যায় ন্যুজিল্যান্ডে, খুব সম্ভবত চিরকালের জন্যে।

প্রু কিন্তু আর ফিরে গেল না তার জন্মভূমি ভ্যানকুভার দ্বীপে – সেখানকার এক রিসর্ট হোটেলের ডাইনিংরুমে সে খাবার পরিবেশনের কাজ করতো এবং সেই কাজের সূত্রেই গর্ডনের সঙ্গে তার পরিচয়। গর্ডনের পেছন পেছন টরন্টো শহরে এসে সে চাকরি খুঁজে নেয় এক মরশুমি ফুল আর চারাগাছের দোকানে। কিছুদিনের মধ্যেই সেখানে তার অনেক বন্ধু-বান্ধবীও জুটে যায়, তবে তাদের বেশির ভাগ হয় গর্ডনের বন্ধু অথবা গর্ডনের স্ত্রীর বন্ধু। তারা সকলেই কম-বেশি পছন্দ করতো প্রুকে এবং তৈরি থাকতো তার দুর্ভাগ্যে সমব্যথী হবার জন্যে; কিন্তু প্রু একবাক্যে হেসেই উড়িয়ে দিতো সব। তার সঙ্গে আলাপ হলেই তাকে ভালো না লেগে উপায় নেই। প্রুর কথাবার্তায় পূর্ব উপকূলের কানাডীয়রা যাকে বলে ব্রিটিশ টান, তাই নাকি রয়েছে; যদিও তার জন্ম কানাডায় – ভ্যানকুভার দ্বীপের ডানকান নামক আধাশহরে। বাচনভঙ্গিতে এই তথাকথিত ব্রিটিশ টানের সূত্রেই সে অনেক সমালোচনামূলক অথবা নাক-সিঁটকানো কথা বলে ফেলতে পারে হালকা মেজাজে এবং ঝগড়াঝাটি না বাধিয়ে। নিজের জীবনের অনেক কথাই সে বন্ধুদের বলে নানা মজার ঘটনার মাধ্যমে – সেসব ঘটনার মধ্যে কিন্তু থাকে আশাভঙ্গ, চুরমার হওয়া স্বপ্ন, অন্যের ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ, জীবন চলতে থাকে উলটোদিকে, সবকিছু পালটে যায় খাপছাড়া ও অস্বাভাবিক ছন্দে এবং সেসবের কোনো ব্যাখ্যাও দিতে পারে না সে। তা সত্ত্বেও লোকের মন খুশ হয়ে যায় তার সঙ্গে কথা বলে। স্থানীয় মানুষদের মতে, প্রুর সঙ্গে আলাপ হওয়া একটা স্বস্তির ব্যাপার। সে নিজেকে কোনো গুরুত্বই দেয় না, কখনোই মাত্রা ছাড়িয়ে যায় না, সে সবসময় ভদ্র এবং শালীন এবং সবচেয়ে বড় কথা, কারুর ওপরে তার কোনো দাবি নেই, নেই কোনো অভিযোগ কারুর বিরুদ্ধে।

তবে একটা বিষয় নিয়ে সর্বদাই অভিযোগ করতে এক পায়ে খাড়া, সেটা হলো তার নিজের নাম। ‘প্রু’ হলো বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী, বাচ্চা একটা মেয়ের নাম; আর ‘প্রুভেন্স’ শুনলেই মনে হয় এক অক্ষতযোনি, চিরকুমারী বুড়ি। তার মা-বাবার সত্যিই কান্ডজ্ঞানের অভাব ছিল তার মতে – যেন তারা ভেবেও দ্যাখেনি যে, এই নামের মেয়ের জীবনে বয়ঃসন্ধি আসতে পারে। যদি তার  স্তনজোড়া এমন নিটোল সুন্দর হতো যে, দেখে মাথা ঘুরে যেত পুরুষদের – তাহলে? অথবা তার কটাক্ষে থাকতো কাম-জড়ানো মোহ? কিন্তু তার এই নামকরণের ফলেই হয়তো সেরকম কিছু অঘটন ঘটতে পারেনি, তাই না? এখন তার বয়েস চল্লিশের শেষদিকে, ফর্সা ও ছিপছিপে হাসিখুশি মানুষটির সর্বদাই কর্তব্যপরায়ণ মনোযোগ তার দোকানের খদ্দেরদের প্রতি; বাড়িতে ডিনারে অতিথিরা এলে তাদেরকে আনন্দে মাতিয়ে রাখে সে – তার মা-বাবা বোধহয় এমনই এক ভবিষ্যৎ কল্পনা করেছিলেন তার জন্যে; উজ্জ্বল এবং চিন্তাশীল, প্রসন্ন দর্শকের ভূমিকায়। সে যে-কোনোদিন দায়িত্বশীল, প্রাপ্তবয়স্ক হবে, অথবা মা হবে, অথবা বিরাট কোনো ঝামেলায় পড়বে, এমন কথা চিন্তা করাও মুশকিল।

কিন্তু মা সে হয়েছিল, খুব অল্পবয়েসে ভ্যানকুভার দ্বীপে এক বিয়ে করার পরে সেই দাম্পত্য জীবনকে সে বর্ণনা করে এক ‘স্বর্গীয় দুর্যোগ’ হিসেবে, তবে তার ছেলেমেয়েরা এখন ডাগর হয়েছে, মাঝে মাঝে এসে দেখে যায় মাকে; এবং অন্যের ছেলেমেয়েরা যেমন দেখা হলেই টাকা-পয়সা চায় মা-বাবার কাছে, তার পেটেরগুলো একেবারেই তেমন নয়। তারা হাতে করে উপহার নিয়ে আসে, ব্যাংকের চেকবুকের হিসাব মিলিয়ে দেয় তার অথবা শীতকালে ঘর গরম রাখার সুব্যবস্থা করে দেয়। আর প্রু নিজে খুব আনন্দ পায় তাদের মনোযোগে এবং উপহারে; মন দিয়ে শোনে তাদের পরামর্শ ও উপদেশ; আর চিন্তাশীল মায়ের বদলে অমনোযোগী কন্যা হয়ে দেরি করে তাদের চিঠিপত্রের উত্তর লিখতে।

তার ছেলেমেয়েদের ভয় যে, সে টরন্টো শহরে পড়ে রয়েছে গর্ডনের আশায় আশায়। বন্ধুরাও আশা করে যে, সত্যি নয় সে-কথা; আর প্রু নিজে তো হেসেই উড়িয়ে দেয়। সে মাঝে মধ্যে কারো বাড়ি পার্টিতে যায়, কখনো নিজের বাড়িতেও পার্টির আয়োজন করে; এবং গর্ডন ছাড়া অন্য পুরুষের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ অভিসারে যেতে তার আপত্তি নেই। তার বন্ধু ও বান্ধবীরা যেমন যৌনতা বিষয়ে আবেগতাড়িত এবং ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়ে এবং লঘু-গুরু জ্ঞান লোপ পেয়ে যায় তাদের, সে কিন্তু ওইসব তুচ্ছ ভাবনার ঊর্ধ্বে। যৌনতা তার কাছে এক স্বাস্থ্যকর, নৈতিক অভিজ্ঞতা – উপভোগ্য এবং রমণীয়, আবার হালকা কিছু আশকারা বা আবদারের মতোও হতে পারে। যেমন চেনা গানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে নাচা অথবা প্রিয় রেস্তোরাঁয় গিয়ে ভালো-মন্দ খাওয়ার সঙ্গে সমতুল – অর্থাৎ তা নিয়ে কারোর সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হওয়া বা বন্ধুত্ব ঘুচে যাওয়া তার কাছে অর্থহীন।

বউ পালিয়েছে চিরকালের মতো, তাই গর্ডন মাঝে মাঝেই এসে হাজির হয় প্রুর আস্তানায়, কখনো কখনো তাকে সঙ্গে নিয়ে ডিনার খেতে বেরোয়। কোনোদিন আবার তারা রেস্তোরাঁয় না গিয়ে যায় গর্ডনের বাড়িতে এবং প্রু থেকে যায় রাত্তিরে। গর্ডন রাঁধে ভালো, যদিও সে-কর্মটি তার সম্প্রতি শেখা। যখন সে স্ত্রীর সঙ্গে বা প্রুর সঙ্গে থাকতো, তখন সে রান্না করতো না বললেই চলে; কিন্তু একা থাকার সূত্রে শিখে নিয়েছে চটপট; একান্ত মনোনিবেশের ফলে সে এখন তাদের দুজনের থেকেই ভালো রাঁধে এবং নিজমুখেই বলে সে-কথা।

সম্প্রতি প্রু গিয়েছিল গর্ডনের বাড়িতে ডিনারে। গর্ডন রেঁধেছিল ‘চিকেন কিয়েভ’ এবং শেষপাতে মিষ্টিমুখের জন্যে ‘ক্রিম ব্রুলে’। যে-কোনো নতুন সিরিয়াস রাঁধুনির মতোই সে সেদিন কথাবার্তা বলছিল কেবল খাদ্যসামগ্রী নিয়ে। গর্ডনের আর্থিক অবস্থা ভালো – ধনীই বলা যায়; প্রুর তুলনায় তো বটেই, এমনকি অন্য যে-কোনো মাপকাঠিতেও। সে পেশায় স্নায়ুরোগের চিকিৎসক। তার বাড়িটাও আনকোরা নতুন, শহরের উত্তরে পাহাড়ের ঢালুতে – আগে সেখানে ছবির মতো দেখতে চাষবাসের খামার ছিল, কিন্তু লোকসানের ফলে তারা বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছে। এখন সেখানে খ্যাতনামা আর্কিটেক্ট দিয়ে প্ল্যান-করানো, বিলাসবহুল, প্রাসাদোপম, আকাশছোঁয়া দামের নতুন নতুন বাড়ি – একেকটা বাড়ি আধা একর জমিজুড়ে। প্রু তার বন্ধুদের কাছে গর্ডনের বাড়ির গল্প করে, ‘জানো, চার চারটে বাথরুম? চাইলে চারজন মানুষ একই সময়ে স্নান করতে পারে – কাউকে অন্যের জন্যে অপেক্ষা করতে হবে না। একটু হয়তো বাড়াবাড়ি, তা বলতেই পারো, কিন্তু চমৎকার ব্যবস্থা; আর বাথরুমগুলো ঘরের লাগোয়া, বাথরুমে যেতে হলে ঘর থেকে বেরিয়ে বারান্দায় আসতে হয় না।’

গর্ডনের বাড়িটা উঁচু-নিচু, সপ্লিট লেভেল – ডাইনিং এলাকাটা উঁচুতে, একটা বেদির মতন, খানিকটা নিচে বসে গল্প করার জায়গা, একটা গান শোনার  জায়গা, আর সেখানে ঢালু কাচের ছাদ – তার ঠিক নিচে প্রচুর গাছপালার সমারোহ। সদর দরজা থেকে ডাইনিং এলাকাটা সোজাসুজি দেখা যায় না, কিন্তু যেহেতু মাঝে কোনো দেয়াল নেই, দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কেউ কথাবার্তা বললে তার অনেকটাই শোনা যায় খাবার টেবিল থেকে।

খেতে বসেছে তারা, এমন সময় বেল বাজে দরজায়। গর্ডন যাওয়া ছেড়ে উঠে সিঁড়ি বেয়ে নেমে গেল দেখতে, কে এসেছে। প্রু শুনতে পেল 888sport promo codeকণ্ঠ। তবে যার কণ্ঠ সে তখনো দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে, তাই কথাগুলো সঠিক বোঝা মুশকিল। গর্ডনের গলা শুনতে পেল সে – চাপা, মৃদু, সাবধানী। দরজা বন্ধ করা হয়নি, অথবা আগন্তুককে ডাকাও হয়নি ভেতরে – কথাবার্তা চলতে থাকে সংযত অথচ ক্রুদ্ধ। একসময় হঠাৎ সে দেখতে পায় গর্ডনকে সদর দরজা আর খাবার ঘরের মাঝামাঝি, হাত-পা নেড়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করছে তারপর তার ডাকও শোনা যায়।

‘ক্রিম ব্রুলে – তুমি খেয়াল রাখবে একটু?’ – সে আবার দ্রুতপায়ে এগোয় সদর দরজার দিকে। প্রু ছুটে যায় রান্নাঘরে মিষ্টান্ন যাতে পুড়ে না যায় সেদিকে নজর রাখতে। কাজ সেরে সে যখন ফিরছে খাবার টেবিলে, সে দ্যাখে ধীরপায়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠছে গর্ডন – তার মুখে উদ্বেগ ও ক্লান্তি। ‘ও কিছু না, একজন বন্ধু’, সে বিষণ্ণ মুখে বলে, ‘সব ঠিক আছে তো?’ কয়েক নিমেষ সময় লাগে প্রুর বুঝতে যে গর্ডন জিজ্ঞেস করছে ক্রিম ব্রুলের কথা; উত্তরে সে বলে, ‘হ্যাঁ, চমৎকার, আমি ঠিক সময়ে গিয়ে বাঁচিয়ে দিয়েছি’; মৃদু হেসে গর্ডন ধন্যবাদ জানায় তাকে, কিন্তু মেঘ ছেয়ে থাকে তার মুখমন্ডলে। সহজেই বোঝা যায় তার সমস্যাটা শেষপাতের মিষ্টিমুখ নিয়ে নয়, বরং দরজার বাইরে যা ঘটেছে, তাই নিয়ে। বন্ধুর মন শান্ত করতে সে প্রসঙ্গ পালটায় এবং ঘরের নানান গাছপালা নিয়ে শুরু করে তার পেশাদারি প্রশ্ন।

‘আমার কোনো ধারণাই নেই’, গর্ডন গম্ভীর মুখে বলে, ‘আর তুমি তো জানো সে-কথা।’

‘আমি ভেবেছি যে, এতদিনে শিখে নিয়েছ তুমি। যেমন রান্না করতে শিখেছ।’

‘না, ওই মহিলাই পরিচর্যা করে তাদের।’

‘মানে মিসেস কার?’ প্রু শুধোয়, পরিচারিকার নাম করে।

‘তোমার কি মনে হয় অন্য কেউ?’

গর্ডনের প্রশ্নে লজ্জা পায় প্রু, তার সন্দেহবাতিক একেবারেই নেই।

‘মোদ্দা কথাটা হলো যে, তোমাকে বিয়ে করতে চাই আমি’, গর্ডন হঠাৎ বলে ফেলে, কিন্তু কোনো পরিবর্তন বা লঘুতা দেখা যায় না তার মেজাজে। গর্ডন মানুষটা বড়োসড়ো, বিশালকায় – মুখচোখ সবই যেন ভারী। পরেও সে ভারিক্কি জামাকাপড়, ঢলঢলে মোটা সোয়েটার। তার নীল চোখে প্রায়ই দেখা যায় রক্তের ছিটে এবং তাদের দিকে তাকালে মনে হবে যে, সে এক সহায়-সম্বলহীন ঘাবড়ে যাওয়া মানুষ – এই দুর্ভেদ্য দুর্গে যে পদে পদে হোঁচট খায়।

‘হ্যাঁ, খুবই কঠিন সমস্যা’, প্রু হালকাভাবে বলে যদিও গর্ডনের সঙ্গে দীর্ঘ সহবাসের সূত্রে সে জানে যে সমস্যাটা কঠিনই।

বেল বেজে ওঠে আবার দরজায়, পরপর দুবার, তিনবার গর্ডন উঠে যাওয়ার আগেই। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই দুমদাম শব্দ, কেউ কিছু ছুড়ে দিলো সজোরে, সশব্দে দুড়দাড় করে তা পড়লো মেঝেয়। দড়াম শব্দে দরজা বন্ধ তারপর এবং গর্ডনকে দেখা গেল দৃষ্টির সীমানায়। সে পা টেনে টেনে সিঁড়ি বেয়ে ওঠে, এক হাতে ধরে থাকে তার মাথা আর অন্য হাতে ইশারা করে প্রুকে জানায় যে, আঘাত গুরুতর কিছু নয়; হাত নেড়ে সে প্রুকে বসতে বলে।

‘ওই বিশাল, ভারী ওভারনাইট ব্যাগ’, গর্ডন বলে, ‘শালি সোজা ছুড়লো আমার দিকে।’

‘তোমার লেগেছে নাকি?’

‘কান ঘেঁষে চলে গেছে।’

‘ওভারনাইট ব্যাগ থেকে এমন জোরালো শব্দ। তার মধ্যে কী পাথর ভরা রয়েছে?’

‘খুব সম্ভবত, তার প্রসাধনের পমেটম, বেশিরভাগই ধাতব স্প্রে ক্যান।’

‘ও, তাই!’

প্রু দ্যাখে গর্ডনকে গ্লাসে মদ ঢালতে। ‘আমার কফির তেষ্টা পেয়েছে, যদি কিছু মনে না করো, তাহলে কফি বানাই।’ এই বলে প্রু রান্নাঘরের দিকে যায়, গর্ডন তার পেছন পেছন আসে।

‘আমার মনে হয় আমি মেয়েটার প্রেমে পড়েছি’, সে বলে।

‘মেয়েটি কে?’

‘তুমি চিনবে না, বয়েস খুব কম মেয়েটির।’

‘ও, আচ্ছা।’

‘তবে তোমাকে আমি বিয়ে করবোই, হয়তো কয়েক বছর পরে।’

‘তোমার এই প্রেমপর্ব সমাপ্ত হলে, তার পরে?’

‘ঠিক তাই।’

‘ঠিক আছে, কে বলতে পারে কয়েক বছর পরে কী ঘটবে।’

 

 

দুই

সেই দিনটির কথা প্রু যখন সাতকাহন করে বর্ণনা দেয়, সে বলে, ‘আমার মনে হয় যে গর্ডনের মনে ভয় ছিল, আমি হয়তো হেসে ফেলবো। সে জানে না কেন মানুষ হাসে, আর কেনই বা মানুষ ওভারনাইট ব্যাগ ছুড়ে মারে, কিন্তু সে লক্ষ করে দেখেছে, এমনটাই ঘটে। সত্যিই ধোপদুরস্ত ভদ্রলোক। চমৎকার, সুস্বাদু ডিনার। তার মধ্যে সেই 888sport promo codeর আগমন আর দড়াম করে ওভারনাইট ব্যাগ ছুড়ে মারা। কয়েক বছর পরে ভাববে যে, আমাকে বিয়ে করার কথা – ব্যাপারটা মন্দ নয়, একেবারেই। তবে আগে তার প্রেমপর্বগুলো কাটিয়ে ফেলতে হবে। আমার মনে হয় আগেই কথাটা সে বলে নিল আমায়, যাতে আমি অকারণে দুশ্চিন্তা না করি।’

কিন্তু একটা কথা সে কখনোই মুখ ফুটে বলে না। সেই রাত্তিরটা গর্ডনের বাড়িতে কাটিয়ে সকালবেলা বাড়ি ফেরার আগে সে কিছু না ভেবেই গর্ডনের ড্রেসার থেকে তার একটা কাফলিংক তুলে নেয়। কাফলিংকটা হলুদ পাথরের এবং সে জানে যে, রাশিয়াতে কেনা – গর্ডন আর তার স্ত্রীর মধ্যে মিটমাট হয়ে যাওয়ার পড়ে তারা দুজনে বেড়াতে গিয়েছিল রাশিয়ায়। বর্গাকার মিছরির মতন কাফলিংক – সোনালি, অনচ্ছ এবং হাতের মুঠোয় ধরলে তার উষ্ণতা অনুভব করা যায়। জিনিসটা সে টুপ করে রেখে দেয় জ্যাকেটের পকেটে। ঘটনাটিকে চুরি বলা ঠিক নয় – দুটোই নিয়ে নিলে তাকে চুরি বলা যেত। এটা তাদের অভিজ্ঞান, 888sport app download for androidচিহ্ন, ঘনিষ্ঠ রঙ্গরসিকতা অথবা একটুকরো অর্থহীন পাগলামি।

সেই সকালে প্রু গর্ডনের বাড়িতে একা; গর্ডন সকাল সকাল বেরিয়ে গেছে হাসপাতালে, প্রতিদিন যেমন যায়। পরিচারিকা মিসেস কার আসবে সকাল নটায়। সকাল দশটা নাগাদ প্রুর দোকানে হাজিরা দিলেই চলবে। সে প্রাতরাশ বানিয়ে নিয়ে যেতে পারে, তারপর মিসেস কারের সঙ্গে (তার অনেক দিনের বন্ধু) এক কাপ কফি। কিন্তু কাফলিংক পকেটে থাকার জন্যে সে আর অপেক্ষা করে না, বেরিয়ে পড়ে। বাড়িটাকে কেমন শীতল আর ক্লান্তিকর মনে হয়, সেখানে আর এক মুহূর্তও কাটানো সম্ভব নয়। অথচ প্রুই গর্ডনকে সাহায্য করেছিল জমিটা বেছে নিতে। কিন্তু বাড়ির নকশা যখন তৈরি এবং অনুমোদিত হলো, তখন আর তার কোনো অবদান ছিল না। ততদিনে ফিরে এসেছে গর্ডনের স্ত্রী।

বাড়ি ফিরে এসেই সে কাফলিংকটা রেখে দেয় পুরনো এক তামাকের টিনের মধ্যে। ঝড়তি-পড়তি পুরনো জিনিসের এক দোকানে তার মেয়ে সেই টিনটা কিনে উপহার এনেছিল তার জন্যে। তখন সে ধূমপান করতো নিয়মিত এবং তার স্বাস্থ্যের জন্যে দুশ্চিন্তায় মেয়ে তাকে টফি, জেলি বিন এবং গাম ড্রপ ভরে দিয়েছিল সেই টিনে সঙ্গে একটা চিঠি ‘ক্যান্সারে মরার বদলে মোটা হও।’ কয়েক বছর আগে তার জন্মদিনের ঘটনা।

এখন সেই টিনের মধ্যে কাফলিংক ছাড়াও আরো বেশ কয়েকটা জিনিস রয়েছে – টুকিটাকি সামগ্রী – দামি কিছুই নয়, আবার সম্পূর্ণ মূল্যহীনও নয়। একটি ছোটো এনামেল ডিশ, একটা স্টারলিং রুপোর চামচ – নুন নেবার জন্যে, স্ফটিক পাথরে বানানো ছোট্ট মাছ একটা। মনে করে রাখার মতন কিছু নয় – সে কোনোদিন টিন খুলেও দ্যাখে না – মাঝে মাঝে ভুলেও যায় যে, তার মধ্যে কী রেখেছে। লুটের মাল নয় সেগুলো এবং পরে সে গর্ডনের পারিবারিক জীবনে কোনো ঝামেলা বাধাবে এমনও নয়। প্রতিবার গর্ডনের বাড়িতে গেলে, বা তার বিছানায় রাত কাটালেই সে একটা কিছু হাতে করে তুলে এনে তাদের মিলনকে 888sport app download for androidীয় করে রাখবে, তাও নয়। সে কিন্তু কাজটা একটা ঘোরের মধ্যেও করে না এবং সে-ব্যাপারে তার কোনো বাধ্যবাধকতাও নেই। তবে কখনো-সখনো সে গর্ডনের বাড়ি থেকে ছোট একটা কিছু জিনিস হাতে তুলে নেয়, ঘরে এনে রেখে দেয় পুরনো তামাকের টিনের অন্ধকারে এবং পুরো ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ভুলে মেরে দেয়।

 

টীকা

– লেখিকার পদবি ‘Munro’ কিন্তু উচ্চারণ ‘মনরো’, বিভিন্ন বাংলা সাময়িক পত্রে নামটি ‘মুনরো’ ছাপা হয়েছে ভুলক্রমে।

– ‘Prue’ গল্পটির রচনাকাল ১৯৮০; দ্য ন্যু ইয়র্কার পত্রিকায় প্রথম প্রকাশ মার্চ ৩০, ১৯৮১ 888sport free betয়। ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত লেখিকার বৃহস্পতির চাঁদেরা গল্পগ্রন্থে গল্পটি সংকলিত হয়।

– ‘চিকেন কিয়েভ’ – ইউক্রেনের খাবার (কিয়েভ ইউক্রেনের রাজধানী), তবে মস্কো অথবা লন্ডনের রেস্তোরাঁয়ও খুব জনপ্রিয়। দেখতে কাটলেটের মতন, খেতেও ভীষণ ভালো, তবে ভেতরে মাখনের পুর থাকে বলে আমার খাওয়া নিষেধ!

– ‘ক্রিম ব্রুলে’ – মিষ্টান্ন বিশেষ; ‘বার্নট ক্রিম’ অর্থাৎ ‘পোড়া ননী’ নামেও পরিচিত। রান্নার পদ্ধতি বেশ জটিল – প্রথমে আভেনে বেক করে তারপর ফ্রিজে ঠান্ডা করতে হয় ঘণ্টা দু-তিন; পরিবেশনের আগে চিনিকে পুড়িয়ে ছড়াতে হয় তার ওপরে।

– ভ্যানকুভার দ্বীপ কানাডার দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রদেশে। আর টরন্টো শহরটি দেশের দক্ষিণ-পূর্বে অন্টারিও প্রদেশে। দুই অঞ্চলের দূরত্ব প্রায় আড়াই হাজার মাইল।

 

লেখক-পরিচিতি

অ্যালিস অ্যান লেডলসের জন্ম ১০ জুলাই ১৯৩১, কানাডার অন্টারিও প্রদেশের উইংগহ্যাম গ্রামে। বাবা রবার্ট সম্পন্ন কৃষক, মা অ্যান স্থানীয় স্কুলের শিক্ষিকা। স্কুলের পড়া শেষ করে অ্যালিস পশ্চিম অন্টারিও বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি 888sport live football ও সাংবাদিকতার পাঠ শুরু করেন; কলেজে পড়ার ফাঁকে ফাঁকে পরিশ্রমের কাজ – রেস্তোরাঁর সেবিকা, ক্ষেতে তামাক পাতা তোলার কাজ এবং গ্রন্থাগারের কেরানি। সহপাঠী জেমস মনরোকে বিয়ে করে তিনি লেখাপড়া অসমাপ্ত রেখেই কলেজ ছেড়ে দেন।

তাঁর প্রথম গল্প ‘ছায়ার পরিমাপগুলি’ প্রকাশিত হয় ১৯৫০ সালে। ১৯৫১ সালে বিয়ের পর তাঁরা চলে যান ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রদেশের ডান্ডারেভ শহরে। সেখানে জেমস চাকরি করতেন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে এবং অ্যালিস বাড়িতে বসে লিখতেন। ছোটগল্প লেখা তাঁর কাছে ছিল 888sport alternative link লেখার প্রস্ত্ততি, কিন্তু সারাজীবন তিনি ছোটগল্পই লিখলেন।

তিনটি কন্যা তাঁর – শীলা (জন্ম ১৯৫৩), ক্যাথারিন (১৯৫৫) এবং জেনি (১৯৫৭)। ক্যাথারিন মারা যায় জন্মের ১৫ ঘণ্টা পরে। ২০০২ সালে শীলা মনরো তাঁর শৈশব 888sport sign up bonus প্রকাশ করেন মা ও মেয়ের জীবন : অ্যালিস মনরোর সঙ্গে বড়ো হওয়া গ্রন্থে। চতুর্থ কন্যা আন্দ্রেয়ার জন্ম ১৯৬৬; ১৯৭২ সালে ডিভোর্স হয়ে যায় দম্পতির। অসংখ্য গল্প লিখেছেন অ্যালিস, প্রতি তিন-চার বছরে একটি করে গ্রন্থ সুখী ছায়াদের নাচ (১৯৬৮), মেয়েদের আর 888sport promo codeদের জীবন (১৯৭১), একটা কথা তোমায় বলতে চাইছি (১৯৭৪), তুমি নিজেকে কী ভাবো (১৯৭৮), বৃহস্পতির চাঁদেরা (১৯৮৩), প্রেমের অগ্রগতি (১৯৮৬), আমার যৌবনের বন্ধুরা (১৯৯০), মুক্ত রহস্য (১৯৯৪), ন্যায়নিষ্ঠ 888sport promo codeর প্রেম (১৯৯৮) ও 888sport app। ২০১২ সালে প্রকাশ সাম্প্রতিকতম গল্পগ্রন্থ প্রিয় জীবনের।

গত জুলাই মাসে তিনি জানিয়েছেন, তিনি আর লিখবেন না। আশা করি নোবেল 888sport app download bd পাওয়ার পরে তাঁর নতুন করে ইচ্ছে হবে লিখতে।

(১৩ অক্টোবর ২০১৩)

[888sport app download apk latest version, অনুষঙ্গ, অনুজীবনী ও টীকা – অংকুর সাহা।]