‘আমার আদিনিবাস খুলনা জেলায়। গ্রামের নাম পয়োগ্রাম। সেসব এখন 888sport appsে চলে গেছে। আমার বাবার নাম শচীন্দ্রনাথ সেন, মা সুধা দেবী। আমার দুই দাদা রবীন্দ্রনাথ সেন আর আর্যকুমার সেন। অবশ্য ওরা কেউই আজ আর বেঁচে নেই। আমার কোনো বোন নেই, আমিই সবার ছোট।’ (সাক্ষাৎকার : করুণা বন্দ্যোপাধ্যায়, পৃ ৫৯)
প্রখ্যাত কথা888sport live footballিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের (১৮৯৪-১৯৫০) প্রথম 888sport alternative link পথের পাঁচালী (১৯২৯) অবলম্বনে বিশ্বখ্যাত বাঙালি live chat 888sportকার সত্যজিৎ রায়ের (১৯২১-৯২) নির্মিত পথের পাঁচালী (১৯৫৫) সিনেমায়
অপু-দুর্গার মা ‘সর্বজয়া’র চরিত্রে অভিনয়888sport live chatী করুণা বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯১৯-২০০১) পিতৃপরিচয়ে খুলনার মেয়ে। পিতা শচীন্দ্রনাথের গ্রামের বাড়ি ছিল বর্তমান 888sport appsের খুলনা জেলার ফুলতলা উপজেলার পয়োগ্রাম বা পয়োগ্রাম কসবার সেনবাড়ি। পেশায় চিকিৎসক শচীন্দ্রনাথ কর্মসূত্রে বা পেশাগত কারণে বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করেন।
তিনি যখন সপরিবারে সাঁওতাল পরগনার মহেশপুরে ছিলেন তখন সেখানেই জন্মগ্রহণ করেন তাঁর কন্যা করুণাকণা সেন, পরবর্তীকালে যিনি বিখ্যাত অভিনেত্রী করুণা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পেশাগত কারণে শচীন্দ্রনাথ এবং তাঁর ভাইদের কেউ কেউ বাইরে বাইরে কাটালেও গ্রামের বাড়িটি ছিল
সাজানো-গোছানো। ঘরবাড়ি, বাগান, পুকুর, চাকরবাকর, নায়েব সব মিলিয়ে একটি জমজমাট অবস্থা। ছুটিছাটায় বিশেষত শারদীয় দুর্গাপূজার ছুটিতে শচীন্দ্রনাথ এবং তাঁর প্রবাসী ভাইয়েরা সপরিবারে গ্রামে আসতেন। প্রতিবছর মূলত এই ছুটির সময়টুকুই গ্রামের বাড়িতে বসবাস করার অভিজ্ঞতা লাভ করেন করুণা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছুটির অবসরে দেশগ্রামে আসা ছাড়া একটানা বেশিদিন তিনি এখানে থাকেননি। তাঁর সেই 888sport sign up bonusটুকুই হীরকখণ্ডের মতো উজ্জ্বল হয়ে ছিল আজীবন।
ভৈরব নদের তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা খুলনার একটি বিশিষ্ট জনপদ ফুলতলা। রবীন্দ্রনাথের সূত্রেও এই ফুলতলা বাংলার ইতিহাস ও 888sport live footballে 888sport app download for androidীয় হয়ে আছে। ফুলতলারই একটি গ্রাম তখনকার পয়োগ্রাম। এই গ্রামের বিখ্যাত সেনবাড়ি – ‘পশ্চিমবাড়ি’ নামে পরিচিত – করুণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাবার বাড়ি। করুণার বাবা-কাকাদের অধিকাংশই কর্মসূত্রে গ্রামের বাইরে থাকতেন বলে আক্ষরিক অর্থে বিশ্বস্ত চাকর-বাকর এবং নায়েবমশাই বাড়িটির সবকিছু দেখাশোনা করতেন। তাঁরা বাড়ির সদস্যদের মতোই ছিলেন এবং তাঁদের কারো কারো থাকার জন্য এই বাড়িতে আলাদা ঘরের ব্যবস্থাও ছিল। বাইরে থাকা বাড়ির সদস্যরা সপরিবারে বাড়িতে আসতেন মূলত পূজার ছুটিতে। বাড়িতেই প্রতিবছর ঘটা করে দুর্গাপূজা হতো। করুণা-জননী সুধা দেবী বলতেন, ‘আমরা আট পুরুষ একসঙ্গে।’ এই ‘পুরুষ’ নিশ্চয়ই প্রজন্ম অর্থে নয়, পুরুষবাচক শব্দার্থে। অর্থাৎ ধারণা করা যায়, বিশাল এই যৌথ পরিবারে আটজন পুরুষ সদস্য স্ত্রী-পুত্র-কন্যা নিয়ে একসঙ্গে বসবাস করতেন। ছেলেবেলায় করুণা গর্ব এবং মজা করে বলতেন, ‘আমরা ষাটটি ভাইবোন পুজোর সময় জড়ো হই একসঙ্গে।’ করুণাদের বাড়িতে মস্তবড় একটি চণ্ডীমণ্ডপ ছিল। এখানেই মূলত দুর্গাপূজা হতো। এটা ছিল একান্তভাবেই পারিবারিক পূজা। তখনো গ্রামাঞ্চলে সেইভাবে বারোয়ারি বা সর্বজনীন দুর্গাপূজার প্রচলন হয়নি। কারো পারিবারিক পূজাতেই গ্রামবাসী প্রতিবেশীরা নিজের মনে করে সমান উৎসাহে অংশগ্রহণ করতেন। পূজায় সন্ধ্যারতির সময় এক হাতে কাঁসর ঘণ্টা আরেক হাতে ধুনুচি নিয়ে নাচতেন পুরুতমশাই। মন্দিরজুড়ে ধূপধুনোর গন্ধ ছড়াতো। শাঁখ বাজত। মেয়েরা উলু দিত। বিসর্জনের দিন গৃহবধূরা সিঁদুর খেলত। পূজার আনন্দে ভিন্নমাত্রা সংযোজন করার জন্য করুণার কাকা-দাদারা মিলে থিয়েটার করতেন। বাড়ির একপ্রান্তে একটি বড় আটচালা ঘরে হতো এই থিয়েটার। বড়দের পাশাপাশি ছোটরাও উপভোগ করত এই অভিনয়। এই নাটকে ছোটদের অংশগ্রহণের সুযোগ না থাকলেও তারা খুব মজা পেত নাটকের মহড়া দেখে। তখন পাত্র-পাত্রীদের বিশেষ সাজপোশাক থাকত না। করুণার এক কাকা ‘বিজয়া’ চরিত্রে অভিনয় করতেন। তাঁর মেয়েলি পোশাক, মেয়েলি ঢঙে চলা এবং কথা বলার ধরন সবাইকে আনন্দ দিত। মহড়া দেখতে দেখতে বাড়ির শিশুদেরও নাটকের কোনো কোনো সংলাপ মুখস্থ হয়ে যেত।
করুণাদের বাড়ির সামনে এবং পেছনে একটি করে পুকুর ছিল। সামনের পুকুরে চলত স্নানের কাজ আর পেছনের পুকুরে হতো বাসনকোসন মাজা এবং কাপড়-চোপড় কাচাধোয়া। দুটো পুকুরই ছিল বাঁধানো ঘাট। কয়েক ধাপ সিঁড়ি বেয়ে জলে নামতে হতো। পরিষ্কার এবং স্বচ্ছ ছিল উভয় পুকুরের জল। পাড়ের গাছপালার ছায়া প্রতিবিম্বিত হতো পুকুরের জলে। করুণার ভাইবোনেরা স্নানের সময় পুকুরে সাঁতার কাটতেন। পরস্পরের দিকে জল ছোড়াছুড়ি করতেন। সাঁতার প্রতিযোগিতায় একে অপরকে ঠেলে পেছনে সরিয়ে দিতেন। কিন্তু করুণা সাঁতার জানতেন না। সাঁতার শেখার শখও ছিল না তাঁর। তিনি ছিলেন জলভীতা। একবার পুকুরের সিঁড়িতে পা ফসকে পড়ে গিয়ে পুকুরের জলে ডোবার উপক্রম হলে করুণার লম্বা চুলের গোছা ধরে টেনে তুলে মা সেই যাত্রা রক্ষা করেছিলেন। অবশ্য মাও সাঁতার জানতেন না। সেখান থেকেই করুণা পুকুর এবং জলকে ভীষণ ভয় পেতেন। তবে দক্ষ সাঁতারু ছিলেন তাঁর বাবা ডাক্তার শচীন্দ্রনাথ সেন। বাবার সাঁতার দেখার অভিজ্ঞতা নিয়ে করুণা লিখেছেন :
মনে পড়ে, একদিন দেখেছিলাম, আমার বাবা সোজা সামনের পুকুরের মধ্যে দিয়ে হেঁটে আসছেন। একে নাকি বলে দাঁড়-সাঁতার। আমি জানতাম না, বাবা সাঁতার জানেন। ভয়ে কাঁটা হয়ে আমি চ্যাঁচাচ্ছি। বাবা, উঠে এস, পড়ে যাবে। বাবা মোটেই উঠলেন না, মুখ দিয়ে একটা উ-উ আওয়াজ করে দিব্যি এপার থেকে ওপারে চলে গেলেন। সেদিন থেকে বাবার উপরে আমার 888sport apk download apk latest version বেড়ে গেল। এতো একেবারে অসাধ্য সাধন। অন্যেরা যে সাঁতার কাটত, তাতে আমি ঘাবড়াতাম না। কারণ, জানি তারা সাঁতার জানে। কিন্তু বাবা? বাবা যে ডাক্তারি ছাড়া অন্য কিছুও করতে পারেন এই প্রথম দেখলাম। ভুলে গেছলাম বাবা গ্রামেরই ছেলে (পৃ ১১) ।
করুণাদের বাড়িতে অনেক ঘর ছিল। সেগুলোর মধ্যে মূলবাড়ির পেছন দিকে ছিল মস্তবড় একটি মাটির ঘর। সেই ঘরটি ব্যবহৃত হতো পূজাবাড়ির ভাণ্ডার হিসেবে। সেই ঘরে বসেই
মা-কাকি-জেঠিমারা মিলে নারকেলের নাড়ু আর নানারকম মিষ্টি তৈরি করতেন। বাড়ির বাগানে ছিল অনেক নারকেলগাছ। পয়োগ্রামে এখনো প্রতিটি বাড়িতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারকেলগাছের উপস্থিতি চোখে পড়ে। নারকেলের নাড়– ছাড়াও তৈরি হতো পদ্মচিনির সাজ, জিরে চিরে নারকেলের তক্তি প্রভৃতি। আরেকটি ছিল হবিষ্যিঘর। হবিষ্যিঘরের রাঁধুনিদের হাতে বিশেষ গুণ ছিল। তার সঙ্গে খাঁটি গাওয়া ঘি যুক্ত হয়ে খাবারকে অধিকতর আকর্ষণীয় করে তুলতো। হবিষ্যিঘরের ডাল ছিল সকলের কাছে বিশেষ লোভনীয় বস্তু। বাইরের ভাগীদারও এসে ভাগ বসাতো হবিষ্যিঘরের ডালে। ফলে হবিষ্যিঘরের মূল সদস্যদের পাতে ডালের টানাটানি পড়ত। এই ঘরের অল্প আলোতে পিঁড়ি পেতে বসে করুণারা মিষ্টি আলু ভাজা দিয়ে ভাত খেতেন। সকালবেলার জলখাবার ছিল গরম ফেনাভাত, তার সঙ্গে ঘি আর নানারকম সবজির মিশেল। সমবয়সী মেয়েরা মিলে করুণারা বড় একটি থালার চারধারে গোল হয়ে বসতেন। মা গল্প বলতে বলতে সকলকে খাইয়ে দিতেন। সদর দরজা দিয়ে ডানদিকে ঢুকেই একটি মাটির ঘরে থাকতেন নায়েবমশাই। কে এই নায়েব, তাঁর কী কাজ – এসব বোঝার বয়স তখন হয়নি করুণার। আবার উঠোনের একপাশে আরেকটি মাটির ঘর ছিল উঁচু পোতার ওপর। কয়েক ধাপ সিঁড়ি ভেঙে সেই ঘরে উঠতে হতো। এত উঁচু ঘর নির্মাণে মাটির উৎস সন্ধান করে বিস্মিত হতেন করুণা। এই ঘরটি ছিল করুণার কাকা-দাদাদের আড্ডাখানা। পূজার শেষে শিশুরা আড়ং বা মেলা দেখতে যাওয়ার খরচ সংগ্রহের জন্য এই ঘরে গিয়ে হানা দিত। আড্ডারত কাকা-দাদাদের কাছ থেকে এক আনা, দুই আনা, তিন আনা, চার আনা পয়সা পাওয়া যেত। করুণাদের বসতগৃহটি ছিল পাকা দালান। সারি সারি কক্ষ এবং সামনে টানা লম্বা বারান্দা। বাকি সব ঘরই ছিল মাটির। সম্ভবত খড়, শন বা গোলপাতার ছাউনি দেওয়া। দেশভাগের পর করুণার বাবার বাড়ি, করুণার গ্রাম, তাঁর শৈশবের লীলাভূমি সবই চলে যায় অন্য দেশের ভূগোলে। দেশের বাড়ি বলে আর কিছুই রইল না, 888sport sign up bonusটুকু ছাড়া। পরবর্তীকালে, জীবনের প্রায় গোধূলিবেলায় এসে খুলনার পয়োগ্রামে বাবার বাড়ির 888sport sign up bonusচারণ করতে গিয়ে করুণা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন :
আমি শহরের মেয়ে, কিন্তু শৈশবে ও কৈশোরে আমাদের দেশের বাড়ির সঙ্গে উৎসবে পার্বণে যোগাযোগ থাকায় তার পারিপার্শ্বিক একেবারে অচেনা নয় আমার কাছে। যদিও তা খুবই সীমিত, কারণ আমাদের আট পুরুষের যৌথ পরিবারের ছেলেমেয়েরা যখন একত্র হতাম, তখন হইচইটা হত নিজেদের মধ্যেই, বিশেষ করে আমাদের বাড়িতে দুর্গাপুজো আর সেইসঙ্গে কাকা ও দাদাদের থিয়েটার করার উত্তেজনায় আটচালা আর নায়েব মশাইয়ের ঘর তখন সর্বদাই সরগরম। আমার বিধবা জেঠিমারা (যাঁদের জ্ঞান হওয়া অবধি থান পরাই দেখেছি) কত রকমের নারকেলের মিষ্টি বানাতেন, নাড়ু আর তক্তি থেকে পদ্মচিনির সাজ অবধি। মনে পড়ে, লক্ষ্মীপুজোর দিন নুন ছাড়া ময়দার লুচি, মাটির রান্নাঘরে পিঁড়ি পেতে একপ্রস্থ ভাইবোনের মাটির হাঁড়ি থেকে বেড়ে দেওয়া গরম ভাত আর মিষ্টি আলু ভাজা খাওয়া। হবিষ্যি ঘরের ডাল-তরকারী মুখে লাগত অমৃতের মতো। জেঠিমারা কী ভালোই রাঁধতেন! ক্রমে অবশ্য জীবনে শহর এগিয়ে এল, গ্রাম পিছিয়ে গেল। বাড়ির সদরে ও খিড়কিতে দুই পুকুরের জলে সাঁতার কাটার লোকও কমে এল আস্তে আস্তে। (পৃ ২৩)
পয়োগ্রামে শৈশবে কাটানো দিনগুলোর 888sport sign up bonus, যাপিত জীবনের নানান অভিজ্ঞতা করুণাকে সাহায্য করেছিল পরবর্তী জীবনে পথের পাঁচালী সিনেমায় সর্বজয়া চরিত্রে অভিনয় করার সময়। তার আগে অভিনয়ের প্রস্তুতি হিসেবে পথের পাঁচালী 888sport alternative linkটি পড়তে গিয়ে যে গ্রামীণ পরিবেশ ও জীবনপ্রবাহের সঙ্গে করুণার পরিচয় ঘটে, তার কোনো কোনো অংশ পয়োগ্রামের সেই শৈশবের দিনগুলোর সঙ্গে মিলে যায়। অথবা পথের পাঁচালী এবং পয়োগ্রাম কোথায় যেন মিলেমিশে একটি বৃত্ত তৈরি করে, যার মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকেন করুণা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন :
‘পথের পাঁচালী’তে সর্বজয়ার ভ‚মিকায় অভিনয়ের জন্য যখন ডাক এল, যখন বোড়াল গ্রামের ভাঙা বাড়ির এক ঘরে সিঁদুরের টিপ পরতাম, গলায় মাদুলি, হাতে শাঁখা, উঁচু করে পরা শাড়ি, তখন কি অবচেতনে মনে আমার সাময়িক গ্রামজীবন, ভিজে, নাম-না-জানা লতানো জঙ্গলের ঝরে পড়া পাতাভরতি মেঠো, সরুপথ কোনো কাজ করেছিল মনের মধ্যে? সচেতনভাবে করেনি, এটা বলতে পারি। তবে হয়তো সেই কারণেই সহজ হয়েছিল সেই গ্রাম-পরিবেশে নিজেকে খাপ খাওয়ানো। (পৃ ২৪)
দেশভাগের পর পাকিস্তান শাসনামলে করুণার পয়োগ্রামে আসা হয়ে ওঠেনি। দু-দেশের মধ্যে বিরূপ সম্পর্ক, গ্রামের বাড়িতে নিজেদের কেউ না থাকা, ব্যক্তিগত জীবনের কর্মব্যস্ততা নানাবিধ কারণে পয়োগ্রামে আসার কথা চিন্তা করাটাও যথেষ্ট সহজ স্বাভাবিক ছিল না। তবে সুযোগ ঘটে 888sport apps স্বাধীন হলে। স্বাধীনতার পর করুণার স্বামী সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় 888sport apps হাইকমিশনে কালচারাল কাউন্সিলর – সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা নিযুক্ত হয়ে 888sport appয় আসেন। এই সময়ে করুণা 888sport appয় এসে কিছুদিন বসবাস করেন। তখন খুব স্বাভাবিকভাবেই তাঁর খুলনার কথা, ফুলতলার কথা, পয়োগ্রামের কথা মনে পড়ে। ভেতরে ভেতরে তীব্র একটি আবেগ জেগে ওঠে। যদি একবার শৈশবের লীলাভূমি ঘুরে আসা যেত। করুণার ভাগ্য সেবার বোধহয় প্রসন্ন ছিল। তাই পয়োগ্রাম দেখার সুযোগ আলাদাভাবে পরিকল্পনা করতে হলো না। সুযোগ আপনিই মিলে গেল। এটা ১৯৭৩ সালের কথা। করুণার স্বামী সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতীয় হাইকমিশনের পক্ষ থেকে খুলনায় এলেন ২৫টি কলেজে বই বিতরণ করতে। (বর্তমান প্রাবন্ধিকের সুযোগ ঘটেছে সরকারি ব্রজলাল কলেজের গ্রন্থাগারের ১৯৭৩ সালে ভারতীয় হাই
কমিশন-প্রদত্ত বই দেখার এবং পড়ার)। এই সুযোগে করুণাও স্বামীর সঙ্গী হয়ে খুলনায় এলেন পৈতৃকবাড়িটি, গ্রামটি দেখার আশায়। শৈশবে করুণা যখন পয়োগ্রামে আসতেন তখন খুলনা শহরটি দেখার সুযোগ তাঁর কখনোই হতো না। তাই পরিণত বয়সে খুলনা শহরটি দেখে তিনি লিখেছেন, ‘খুলনা শহরটা বেশ বড়। রাস্তাঘাট চওড়া, বেশ বোঝা যায় এককালে খুবই সুন্দর শহর ছিল। ছোটবেলায় সেই কথাই শুনেছিলাম।’ পয়োগ্রাম দেখার অভিজ্ঞতা জানিয়ে খুলনা থেকে মেয়ের কাছে লেখা চিঠিতে (২০. ১১. ৭৩) করুণা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন :
মামনি, শেষ অবধি পয়োগ্রাম দেখা হলো, তখন সূয্যি প্রায় ডুবু ডুবু। খেয়ে উঠেই রওনা হয়েছিলাম, কিন্তু মধ্যপথে গাড়ি বিকল, ব্যর্থ সারানোর প্রচেষ্টা, Telephone-এর প্রচেষ্টা ইত্যাদির পরে DC-র অফিসে এসে আর একটা গাড়ি যোগাড় করে রওনা হতে চারটে বাজল। ফুলতলা থানার O.C. আমাদের পয়োগ্রাম নিয়ে গেলেন; বাড়ি পৌঁছে কান্না পেল। আমার ছোটবেলার সেই জমজমাট বাড়ি এখন প্রায় ভাঙাচোরা, লোকে তুলে নিয়ে গেছে জানলা দরজা। দুটো পুকুর হাজা-মজা, জঙ্গলে ভরা। বাড়িতে এক কুমোর পরিবার আমাদের কেউ বসিয়ে গেছল; কিন্তু তারা এমন জঙ্গল সাজিয়ে বসে আছে। অবাক কাণ্ড! নমিতা, রমা, মায়ার কথা বলল একজন। ওদের ছোট দেখেছে। আমাকে চিনল না। পাকা বাড়িটা আছে, কিন্তু মাটির যা কিছু ছিল ধূলিস্যাৎ। নায়েব মশায়ের ঘর, আটচালা রান্নাঘর, হবিষ্যি ঘর, একটা বিরাট ভাঁড়ার ঘর – কিছুই নেই। চণ্ডীমণ্ডপটা অক্ষত মনে হল, কিন্তু জঙ্গলের জন্যে যেতে পারলাম না। (পৃ ২১৪)
মেয়েকে চিঠি লিখে পিতৃভিটা দেখার হতাশাজনক অভিজ্ঞতা জানানো ছাড়াও করুণা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি 888sport sign up bonusকথায় লিখেছেন :
888sport apps হবার পর একটা সুযোগ পাওয়া গেল আমাদের এই ছোট্ট গ্রামটিকে দেখতে যাবার। জানতাম ও বাড়ি ছেড়ে সবাই চলে গেছে, তবু কৌত‚হল হল। কিন্তু গিয়ে কী দেখলাম? দেখলাম নায়েব মশাইয়ের ঘর একটা মাটির স্তূপ। পাকা বাড়িটা থেকে জানলা দরজা তুলে নিয়ে গেছে, সে যেন এক নখদন্তহীন আধমরা প্রাণী। হবিষ্যি ঘর, ভাঁড়ার ঘরের চিহ্ন নেই। পিছনদিকের সেই পুকুরটা দেখতে দৌড়ে গেলাম। কিন্তু থানা থেকে যিনি আমাদের নিয়ে এসেছিলেন, বললেন, যাবেন না, ওদিকটা একেবারে জঙ্গল, সাপে ভরতি। এর আগে সামনের পুকুরটা দেখে এসেছি, সেটা এখন পানাপুকুর। একমাত্র চণ্ডীমণ্ডপটা একেবারে নষ্ট হয়ে যায় নি। আমাদের শোবার ঘরগুলোর সামনে পড়ে আছে কুমোরদের তৈরি হাঁড়ি, কলসি, এখন বাড়িটা ওদেরই দখলে। কোথাও দরজা নেই, না সদর, না অন্দর। অবস্থাটা পোড়ো বাড়িরও অধম। রান্নাঘরটা খুঁজেই পেলাম না। সেটা একেবারে সমতলভূমি। (পৃ ১২)
888sport sign up bonusর সরণি বেয়ে হাঁটতে হাঁটতে তখন সন্ধ্যা নেমে এসেছে পয়োগ্রামে। চাঁদ উঠতে শুরু করেছে পয়োগ্রামের আকাশে। সেই চাঁদের মায়াবী আলোয় ভেসে এলো একঝাঁক মুখ। তারা এই বাড়িতে একদিন সত্যি সত্যি ছিল। তারা আজ কোথাও নেই। এত মুখ উঁকি দিতে লাগলো কিন্তু একটি বিশেষ মুখ যেন কিছুতেই মনে এলো না। করুণার এক জেঠতুতো দাদা বিলেত যাওয়ার লোভে বন্ধুর বোনকে বিয়ে করেছিলেন। তারপর বিলেতে গিয়ে বিয়ের কথা গোপন রেখে এক ইংরেজ ললনার প্রেমে পড়েছিলেন সেই দাদা। মেয়েটিকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে বিয়ে করার আগেই মেয়েটি মা হওয়ার আভাস টের পায়। ইতোমধ্যে সে তার প্রেমিকের বিবাহিত স্ত্রীর খবর জেনে যায়। প্রেমিককে প্রত্যাখ্যান করে সে। করুণার সেই দাদা একসময় দেশে ফিরে আসেন। বউদির সঙ্গে জোড়াতালি দিয়ে দাম্পত্য জীবন চলে। মা হতে গিয়ে বউদির মৃত্যু হয়। সেই বউদির মুখটি কিছুতেই মনে এলো না করুণার। সেই বউদির ভেঙে যাওয়া, গুঁড়িয়ে যাওয়া, হারিয়ে যাওয়া জীবনের সঙ্গে বর্তমান এই বাড়িটির কোথায় যেন একটি মিল খুঁজে পান করুণা। তিনি লিখেছেন –
মনটা অন্যদিকে চলে যাচ্ছে। এই জন্যেই যাচ্ছে যে, যাকে, যে বাড়িতে খুঁজতে এখানে এসেছিলাম, সে এখানে নেই, দৃশ্যত কোথাও নেই, এ বাড়িকে আমি চিনি না। এই ভাঙাবাড়ির স্তূপের মধ্যে কোথায় আছে সেই আরেকটি মনুষ্যজগৎ? যেখানে সন্ধেবেলায় শাঁখের আওয়াজে রনরনিয়ে ওঠে আকাশ-বাতাস? তার সঙ্গে এসে মেলে ঘরমুখো পাখির কলরব? দুটোতে মিলে সৃষ্টি হয় এক সংগীতের? ঘরে ঘরে লণ্ঠন জ্বলে, সেই লণ্ঠনের আলোয় ছেলেমেয়েরা পড়তে বসে মাদুর পেতে? খেলাধুলোর পরে তাদের তখন ঘুম পেয়ে গেছে। আধো ঘুমন্ত গলায় তারা 888sport app download apk মুখস্থ করে, মনে হয় যেন একটা কাঁদুনি। জঙ্গলের দিকটা অন্ধকার। সেখানে রাতে শোনা যায় হুক্কা হুয়ার বাজনা। ফেরার সময় হল। গ্রামে রাস্তায় আলো থাকে না। অন্ধকার হবার আগেই তাই রওনা হতে হয়। আবার সেই কচুরিপানায় ভরতি পুকুরটার দিকে চোখ পড়ল। তার সারা মুখ যেন কচুরিপাতার চাদর দিয়ে 888sport app। সবুজ চাদর, কিন্তু এখন ঘনিয়ে আসা সন্ধের ক্ষীণ আলোয় সবুজ রং আর খুঁজে পাওয়া যায় না। (পৃ ১৩)
অদেখার বেদনাভার লাগবের জন্য মানুষ 888sport sign up bonusর কাছে ফিরে আসে। 888sport sign up bonus যেমন তার বেদনার কিছুটা উপশম করে, তেমনি নতুন বেদনাভারও চাপিয়ে দেয়। কেননা, 888sport sign up bonusর সঙ্গে যখন বাস্তবতা মেলে না মানুষ তখন নতুন বেদনার পাথরে আঘাত পায়। যা দেখবে বলে মানুষ ফেলে যাওয়া আঙিনায় ফিরে আসে, সময়ের আঁচড়ে সেই আঙিনার দৃশ্যপট বদলে যায়। করুণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মনের মধ্যে তোলা শাড়ির মতো শৈশবের যে বাড়িটির ছবি এত সযতেœ পরম মমতায় সাজানো ছিল, বাস্তবতার আঘাতে সেটা নিমেষেই ভেঙে গুঁড়িয়ে যায়। তাই এই ভগ্নস্তূপ থেকে যতটা দ্রæত পালানো যায় ততই যেন মুক্তির আনন্দ। করুণা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে মনে প্রণাম জানালেন তাঁর শৈশবের খেলাঘর, পিতামাতাসহ পূর্বপুরুষের 888sport sign up bonusবিজড়িত পয়োগ্রামের সেনবাড়িটিকে।
* এই 888sport liveের সকল উদ্ধৃতি সুদেষ্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়-সম্পাদিত সর্বজয়াচরিত্র ২, করুণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনাসমগ্র (থীমা, কলকাতা, ২০১৭) থেকে গৃহীত।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.