পরবাসীর আত্মকথন

মার্টিন কেম্পশেন

প্রায় সারাটা জীবন আমি পরবাসীই থেকে গেলাম। ষোলো বছর বয়সে আমার জন্মভূমি জার্মানি ছেড়ে এক বছরের জন্য পড়াশোনা করতে গিয়েছিলাম মার্কিন মুলুকে। ফিরে এসে স্নাতক শ্রেণির পাঠ (Abituar Degree) শেষ করার জন্য একটা বছর দেশে থাকলাম। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য আবার বাইরে, এবার ভিয়েনায়। সেখানে কাটল জার্মান 888sport live footballে পিএইচ-ডি করা পর্যমত্ম। মাঝে এক বছর প্যারিসে। ভিয়েনা ছাড়ার পরে মোটে তিনটে মাস আমি কাটিয়েছি মা-বাবার সঙ্গে, তারপর বিমান ধরে সোজা ভারতে। সে সেই ১৯৭৩ সালে, সেই থেকে আমার আসত্মানা ভারতেই।

আমার দীর্ঘ বিদেশবাসের অভিজ্ঞতা আমি ভাগাভাগি করে নিই লাখ লাখ পরবাসী, পরিযায়ী আর উদ্বাস্ত্ত মানুষের সঙ্গে। আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি মানুষ আইনি বা বেআইনিভাবে অন্য দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছে। যুদ্ধ আর বুভুক্ষা, রাজনৈতিক স্বৈরাচার আর সামাজিক বৈষম্য অসংখ্য হতভাগ্য মানুষকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করছে। অনেকে আবার আর্থিক সমৃদ্ধির সন্ধানে পশ্চিমের দেশগুলোয় যাচ্ছে। বিশ্বপরিস্থিতি যেদিকে গড়াচ্ছে, ভবিষ্যতে আমাদের আরো বড়মাপের জনসঞ্চালন সমস্যার কবলে পড়ার পূর্বাভাস দেখা যাচ্ছে।

তা সত্ত্বেও অন্যদের সঙ্গে আমার সুস্পষ্ট পার্থক্য আছে। অর্থনৈতিক তাগিদে কিংবা রাজনৈতিক বা সামাজিক চাপে আমি জার্মানি ছেড়ে আসিনি। আমার মধ্যবিত্ত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের বাতাবরণ আমি ছেড়ে এসেছি অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য, এসেছি পৃথিবীকে জানার কৌতূহল নিয়ে। সেই অর্থে আমি বর্তমান প্রজন্মের জার্মান ছাত্রছাত্রীদের পথিকৃৎ। পাঠ্যসূচির অঙ্গ হিসেবে তাদের এখন পড়াশোনা বা কর্মজীবনের শুরুতে কয়েক মাস বা কয়েক বছর দেশের বাইরে কাটাতে হয়। তারা যায় আবার ফিরে আসে কোনো পেশায় ইউরোপে স্থায়ীভাবে থাকার জন্য। আমারও ইচ্ছা তাই ছিল। কিন্তু শামিত্মনিকেতনের রাঙামাটিতে আমার পা ‘আটকে’ গেছে। এখনো পড়ে আছি এখানে, তাও নিজের মর্জিতে।

সম্প্রতি আবার আমার ভারতীয় ভিসার নবীকরণ করিয়েছি, চলিস্নশ বছর পরেও যা আমার দরকার হয়। এ-ভিসা গবেষণার জন্য, আমি গবেষণাই করছি। শিক্ষকতার কাজে যোগ দেওয়ার জন্য দুবার আমাকে ডাকা হয়েছে। ভিয়েনায় আমার অধ্যাপক আমাকে তাঁর সহকারী নির্বাচন করেছিলেন, তখনো আমার গবেষণাপত্র শেষ হয়নি। সমসত্ম কাগজপত্রে সই-সাবুদ হয়ে গিয়েছিল। কয়েক সপ্তাহ পরে অধ্যাপকমশাই আমাকে তাঁর অফিসে ডেকে সত্যি কথাটি জানালেন। আমার বিভাগের পিএইচ-ডির অস্ট্রিয়ান ছাত্ররা বিদ্রোহ করেছে। তাদের দাবি, তাদের কাউকেই সহকারী হিসেবে নিতে হবে। আমাকে নয়, কোনো বিদেশিকে নয়।

বিশ্বভারতীতে কয়েক বছর পিএইচ-ডির কাজকর্ম করার পরে একই দৃশ্যের অবতারণা হলো। জার্মান ভাষার শিক্ষক অবসর নেওয়ায় তাঁর পদটি শূন্য হয়েছিল। আমার গবেষণা-তত্ত্বাবধায়কের অনুরোধে আমি পদটির জন্য আবেদন করলাম। সাক্ষাৎকার নেওয়া হলো, তাতে নির্বাচিত হলাম। জার্মান 888sport live footballে ডক্টরেট ডিগ্রিধারী যোগ্য প্রার্থী একমাত্র আমিই ছিলাম। কয়েক সপ্তাহ পরে আমাকে জানানো হলো, দিলিস্ন থেকে সরকার চাপ দিয়েছে কোনো ভারতীয়কে ছিলেন নাট্যগতপ্রাণ। তিনি নাটক-সম্পর্কিত প্রচুর পড়াশোনা করেছেন; অভিজ্ঞতার আলোকে নাটক লিখেছেন; ছাত্রছাত্রী, সহকর্মী ও স্বজনদের নিয়ে তা মঞ্চস্থ করেছেন এবং এভাবেই নাটকের প্রাণপুরুষ হয়ে উঠেছেন। মানুষ হিসেবেও তিনি বড়মাপের। অন্যকে সহজেই কাছে টানতে পারতেন। অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের অভিমত, ‘মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা সবাই বুঝি জীবন্মৃত। কিন্তু যখন মুনীর চৌধুরীর মতো মানুষের সংস্পর্শে আসি তখন জীবনের অর্থ খুঁজে পাই।’ [থিয়েটার, ওই]

প্রগতিশীল স্বাধীনতাকামী মুনীর চৌধুরীর কার্যক্রম পাকিসত্মানপন্থী প্রতিক্রিয়াশীল দল মেনে নিতে পারেনি বলেই ১৯৭১-এ শহিদ বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে তাঁকেও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। যিনি বৈরী পরিবেশে, সীমিত সুযোগে নাট্যচর্চার সুষ্ঠু পথনির্মাণ করতে চেয়েছিলেন, স্বাধীন দেশে সে-পথ যখন আলোকিত হতে থাকে, তখন তিনি কেবলই 888sport sign up bonus, সম্বল শুধু তাঁর রচিত নাট্যরাজি। স্বাধীন দেশে কেউ বলেছেন, যুদ্ধ করে স্বাধীন হলো 888sport apps, 888sport appsে নাটক এলো – যেন হইহই করে রাজার হাতি ছুটে এলো। কেউ বলেন, একদল তরুণ মুক্তিযোদ্ধা, যাঁরা যুদ্ধকালে পশ্চিমবঙ্গে নাটক দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন, তাঁরাই 888sport appsের নাটকে নতুন বিষয় ও আঙ্গিক আনেন। এ-বক্তব্য অমূলক নয়, আবার পুরো সত্যও নয়। কারণ, পঞ্চাশ-ষাটের দশকেই মুনীর চৌধুরী, সৈয়দ ওয়ালীউলস্নাহ্, সাঈদ আহমদ আধুনিকমনস্ক ও নিরীক্ষাপ্রিয় নাট্যকার হিসেবে প্রশংসিত হন। তবে তখনো আমাদের পাঠক-দর্শক পুরোপুরি পাশ্চাত্য নিরীক্ষাধর্মী নাটকের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেননি। অ্যাবসার্ড, অসিত্মত্ববাদ, চেতনাপ্রবাহ, অভিব্যক্তিবাদ, স্যুরিয়ালিজম-সম্পর্কিত নাটক তাঁদের কাছে প্রায় অচেনা-অজানা। তাই সৈয়দ ওয়ালীউলস্নাহ্ ফ্রান্সে একাধিকবার মঞ্চস্থ হওয়া উজানে মৃত্যুর মতো আরো আটটি নাটক লিখতে চেয়েছিলেন, অথচ এদেশে নাটকটি মঞ্চস্থ হওয়া তো দূরের কথা, অনেকে পড়েও দেখেননি জানতে পেরে হতাশ হয়েছিলেন। কিন্তু মুনীর চৌধুরী ছিলেন সর্বদা আশাবাদী। তিনি দেশের সহজ-সরল মানুষকে ভালোভাবেই জানতেন। তাই বিশ্বনাটকের কলাকৌশল সম্পর্কে অভিজ্ঞ হয়েও নাটকে সরাসরি তার প্রয়োগ করেননি। তিনি দেশের ইতিহাস, পুরাণ, ঐতিহ্য, মিথ ও সমকালীন ঘটনাপ্রবাহ নির্দিষ্ট মাত্রায়, সুনিপুণ দক্ষতায় কোনো কোনো নাটকে প্রয়োগ করেছেন। তাঁর এ-নাট্যসৃষ্টি বিষয়ের গুরুত্বে ও 888sport live chatগুণে কালোত্তীর্ণ। তাঁর অবি888sport app download for androidীয়, শুদ্ধচেতনাসঞ্চারী ও ‘দৃষ্টি উন্মোচনকারী’ নাটক কবর। তাই ভাষা-আন্দোলনের পটভূমিতে রচিত এ-নাটকের গুলিবিদ্ধ লাশের কণ্ঠে প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়, ‘আমরা কবরে যাবো না। আমরা বাঁচবো।’ এই বাঁচা-লড়াইয়ের ফলেই একাত্তরের স্বাধীনতা অর্জন। এখানেই প্রজন্মের পর প্রজন্মব্যাপী মুনীর চৌধুরীর নাটক গুরুত্ব বহন করে আসছে। 888sport cricket BPL rateে ফেব্রম্নয়ারি এলেই আজো আমাদের ফিরে যেতে হয় কবর নাটকের কাছে, হতে হয় উজ্জীবিত।

মুনীর চৌধুরী সাম্প্রদায়িক শক্তির কাছে মাথা নত করেননি। মানবিক উদার চেতনাকে লালন করেছেন। পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধে মুসলমানদের যে-বিজয় হয়, তাঁকে দিয়ে সেই বিজয়গাথা রচনার চেষ্টা হয়েছিল। তিনি সেই যুদ্ধকে প্রেক্ষাপটে রেখে রক্তাক্ত প্রামত্মর নাটকে যুদ্ধবিরোধী ও হৃদয়বৃত্তিক চেতনার প্রাধান্য দিয়েছেন। গতানুগতিক ঐতিহাসিক নাট্যধারা-বহির্ভূত, মিথ্যাশ্রয়ী ট্র্যাজেডিধর্মী নাটকটি কবরের মতোই নবোদ্ভূত আঙ্গিকে গঠিত এবং সমকাল অতিক্রমী নন্দিত 888sport live chatকর্ম।

মুনীর চৌধুরী গুণী শিক্ষক, ছাত্রদের সঙ্গে ছিল তাঁর নিবিড় সম্পর্ক। তিনি ছাত্রছাত্রীদের মান-অভিমান, আনন্দ-বেদনা, স্নেহ-ভালোবাসার আলোকে রচনা করেন নাটক চিঠি, আপনি কে?, দ-ধরদ-কারণ্য নাট্যগ্রন্থটি উৎসর্গ করেন ছাত্রছাত্রীদের ‘কোমল কঠিন করে’। নাটক রচনার পর তিনি সমমনা সহকর্মী, ছাত্র ও স্বজনদের পড়ে শোনাতেন। শ্রোতাদের খোলামেলা মতামত প্রত্যাশা করতেন। রণেশ দাশগুপ্ত ও মমতাউদ্দীন আহমেদ কবর নাটকের শেষাংশ মূল নাটকের উত্তাপকে খানিকটা শীতল করেছে বলে মমত্মব্য করেন। উদারচেতা মুনীর চৌধুরী এর উত্তরে বলেন, প্রয়োজন হলে প্রযোজক নাটকের শেষাংশই বর্জন করতে পারেন।

মুনীর চৌধুরী মৌলিক নাটক রচনার পাশাপাশি বিদেশি নাটকের 888sport app download apk latest version ও রূপামত্মর করেছেন। এ-পর্যায়ের নাটক নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাঁর গভীর জীবনবোধ, নিখুঁত 888sport live chatদৃষ্টি ও আধুনিক নাট্যজ্ঞানের পরিচয় মেলে। পাশ্চাত্য নাট্যকলা সম্পর্কে বাঙালি নাট্যকর্মীদের অবগত করানো এবং বাংলার নাট্যমঞ্চকে সমৃদ্ধকরণের অভিপ্রায়ে তিনি 888sport app download apk latest version-রূপামত্মরকর্মে মনোযোগী হন। তাঁর অনূদিত-রূপামত্মরিত নাটক বেতার-টেলিভিশনে অভিনীত হয়, পাঠক-দর্শকপ্রিয়তা পায়। তুলনামূলক বিচারে দেখা গেছে, যদি একই নাটক মুনীর চৌধুরীসহ দু-তিনজন 888sport app download apk latest version-রূপামত্মর করেন, সে-ক্ষেত্রে মুনীর চৌধুরীর 888sport app download apk latest version-রূপামত্মরই শ্রেয় বিবেচিত হয়েছে। ট্র্যাজেডির চেয়ে কমেডি নাটকের প্রতি তাঁর ঝোঁক ছিল বেশি। শেক্সপিয়র, বার্নার্ড শ, গল্সওয়ার্দি, স্ট্রিন্ডবার্গ প্রমুখ নাট্যকারের নাটক তাঁর 888sport app download apk latest version-রূপামত্মরের অমত্মর্ভুক্ত হয়েছে। বর্তমানে মুনীর চৌধুরীর উত্তরসূরি বহু 888sport app download apk latest versionক বিশ্বের বিভিন্ন ভাষা থেকে বাংলাভাষায় নাটক 888sport app download apk latest version-রূপামত্মর করছেন। ফলে বাংলা নাট্যভাণ্ডার সমৃদ্ধ হচ্ছে।

মুনীর চৌধুরী ছিলেন নাট্যসংগঠক ও নির্দেশক। তাঁর অনুপ্রেরণায় 888sport promo code 888sport live chatীরা মঞ্চে পারতাম না কি। জার্মানিতে গিয়ে স্বাভাবিক মধ্যবিত্ত জীবন শুরু করতে পারতাম। সংসার পাততে পারতাম, চাকরি করতে পারতাম, গাড়ি-বাড়ি কিনতে পারতাম…

সে-রাসত্মা তো খোলা ছিল সবসময়। তা সত্ত্বেও এদেশে কয়েক বছর কাটানোর পরে এমন কিছু কাজে ডালে-মূলে জড়িয়ে গেলাম, যা শুধু ভারতে থেকেই করা সম্ভব। যেমন, শ্রীরামকৃষ্ণ বা রবীন্দ্রনাথের 888sport app download apk latest version। যেমন সাঁওতাল গ্রামের কাজকর্ম, ভারত ও ইউরোপের মধ্যে সাংস্কৃতিক বার্তাবিনিময়। ইউরোপে ফেরা মানে নতুন একটা জীবন শুরু, সেই সঙ্গে নতুন কিছু যোগাযোগ তৈরির স্বাভাবিক হ্যাপা। না-ফেরার সিদ্ধামত্মই তাই বেছে নিতে হয়েছে। এজন্য অবশ্য অনুতাপ হয়নি কখনো।

এছাড়া বিদেশি হিসেবে, আমার ক্ষেত্রে একজন জার্মান হিসেবে, আরো কিছু জটিলতা ছিল। ইউরোপের গত একশ বছরের ইতিহাসে তাকালে আমরা বুঝতে পারি, জার্মানি দু-দুটো মহাযুদ্ধের হোতা। প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। সেই যুদ্ধ ইউরোপে এবং এশিয়ার কোনো-কোনো অঞ্চলেও অকল্পনীয় দুর্দশা ডেকে এনেছে। বন্দিশিবিরে ষাট লাখ ইহুদিকে খুন করা হয়েছে। আমার জন্ম যদিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে, কিন্তু আমাদের প্রজন্মকেই প্রথম বড় হতে হয়েছে সেই যৌথ অপরাধের দায়ভার মাথায় নিয়ে, মানুষ হিসেবে তামাম জার্মান জাতিকে যা স্বীকার করতে হয়েছে। এ-কথা জেনেই আমরা বড় হয়েছি যে, আমাদের দেশ গুরুতর পাপ করেছে। আমাদের আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে এমন এক সমাজ সৃষ্টির, যেখানে এ-ধরনের বর্বরতা আর অন্যায় যেন কখনো না ঘটে।

আমার প্রজন্ম তাদের বাবা-মা আর শিক্ষকদের প্রশ্ন করতে বাধ্য যে, তৃতীয় রাইখের (Third Reich) সময় তাঁরা কে কী করেছিলেন। তাঁরা কি নাৎসি বাহিনীর সদস্য হয়েছিলেন, এমনকি তাদের ঘাতক বাহিনী এসএসেরও? তাঁরা কি শাসকপক্ষকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করেছিলেন, যুদ্ধের সময় তাঁরা কি মানুষ খুন করেছিলেন, তাঁরা কি কুখ্যাত বন্দিশিবিরের সঙ্গে কোনোভাবে যুক্ত ছিলেন? কেন তাঁরা প্রতিরোধ বা বিদ্রোহ করেননি, অন্যেরা যেমন করেছিলেন? অনুসন্ধিৎসু এই জিজ্ঞাসায় আমাদের নিজেদের বাবা-কাকারা যদিবা শুদ্ধহসত্ম প্রমাণিত হন, পরিচিত কিছু সহপাঠী বা বন্ধুবান্ধব আমরা অবশ্যই পাব, যাদের বাবা-মায়েরা দলের তৎকালীন নেতাদের দুহাত তুলে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন।

এই ঘটনা আমাদের মনে নৈতিক চাপ সৃষ্টি করেছে। এই চাপই আমাদের জীবন গড়েছে, অমত্মত আমার প্রজন্মের যারা অকপট, তাদের জীবন। যখন আমাকে সেনাদলে কাজ করতে বলা  হয়েছিল, তখন এই বোধ থেকেই আমি খুব শামিত্মকামী আর সংজ্ঞাবান প্রতিবাদী (conscientious objector) হয়ে উঠেছিলাম।

এই ক্ষত আমি গভীরভাবে উপলব্ধি করি, বিশেষ করে যখন দেশের বাইরে থাকি। চোদ্দো বছর বয়সে আমি প্রথম যাই ইংল্যান্ডে। নরউইচে (Norwich) এক পরিবারের সঙ্গে থাকতাম, তারা কখনো আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেনি। কিন্তু খবরের কাগজে পড়তাম বা চারপাশের মানুষের সঙ্গে কথা বলার সময়, তাদের প্রশ্ন আর কথার ঠারে আন্দাজ পেতাম, জার্মান যুবক হিসেবে আমার ব্যাপারে তাদের অবিশ্বাস, এমনকি বিদ্বেষও।

ষোলো বছর বয়সে আমি একটা বৃত্তি পাই, তাতে এক বছর, স্কুলের শেষ শিক্ষাবর্ষটা, কাটাই আমেরিকায়। তখন আমার সবচেয়ে 888sport app download for androidীয় সখ্য গড়ে ওঠে পোল্যান্ডের অধ্যাপক লিটকা ডে বার্কজার (Litka de Barcza) সঙ্গে। তিনি নাৎসি জার্মানির উদ্বাস্ত্ত; অশেষ দুর্দশা ভোগ করেছেন। তিনি মহীয়সী 888sport promo code। একটা নিজস্ব শৈলী ছিল তাঁর, জগৎটা চিনতেন, আর অমত্মরে ছিল গভীর দরদ। তাঁকে ভুলতে পারব না কোনোদিন। ১৯৭৩ সালে তাঁর অকালমৃত্যু পর্যমত্ম আমাদের যোগাযোগ ছিল। আমার জাতি পরিচয়ের জন্য তিনি কখনো আমাকে অপরাধবোধ বা অস্বসিত্মতে ভুগতে দেননি।

কিন্তু লিটকা একবার আমাকে বয়সটা কয়েক বছর কমিয়ে নিতে বলেছিলেন, যাতে আমার জন্ম যে যুদ্ধের পরে তা আরো স্পষ্ট হয়। শিকাগোতে (Chicago) তাঁর এক পোলিশ বান্ধবীর সঙ্গে তিনি আমার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি চিত্রকর, চিত্র-ঐতিহাসিক এবং লিটকার মতোই বনেদি বংশের। তাঁর হাতে উল্কি কুঁদে একটা 888sport free bet খোদাই করা ছিল, তিনি যে আউসউইটস (Auschwitz) বন্দিশিবিরে অমত্মরীণ ছিলেন, 888sport free betটা তার প্রতীক। যখন বোঝা গেল তিনি বেশ মজার আর দরদি, আমি অনেকবার তাঁর অতিথি হয়েছি।

যতদিন ছোট ছিলাম, জার্মানি তথা পূর্ব ইউরোপের বন্দিশিবিরের বিভীষিকা অনেকটাই অজানা ছিল আমাদের কাছে। কিছু মামলা-মোকদ্দমা চলছিল, কিছু 888sport sign up bonusচারণ। কিন্তু পরে-পরে আরো অনেক জীবিত ভুক্তভোগী মুখ খুলেছেন, আরো বিশদ গবেষণা হয়েছে। আরো দাগি বন্দিশিবিরের কর্তাব্যক্তিরা, সক্রিয় ইহুদি ঘাতকেরা শনাক্ত হয়েছেন। জাতীয় লজ্জার কুনাট্যরঙ্গের যবনিকা উত্তোলন হয়েছে আমাদের আতঙ্কবিহবল দৃষ্টির সামনে।

ফলে আমাদের জাতীয় পরিচয় মস্নান, দেশপ্রেম প্রায় উবে গেছে, শুধু ওই তথাকথিত ‘অর্থনৈতিক দেশপ্রেম’ ছাড়া। অর্থনৈতিক দেশপ্রেম আবাহন করেছে শক্তিশালী এক জার্মান অর্থনীতির, যুদ্ধোত্তরকালের অর্থনৈতিক ইন্দ্রজাল (Wirtschaftswunder), যার সৃষ্টি কিনা ধ্বংসসত্মূপ থেকে। একমাত্র ২০০৬ সালে জার্মানিতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ফুটবল জয়ের সঙ্গে সঙ্গে, অনেকের বিস্ময় জাগিয়ে জাতীয় গর্বের ব্যাপক বহিঃপ্রকাশ লক্ষ করা গিয়েছিল।

এবং অবশ্যই, দুই জার্মানির নতুন ঐক্যও একটা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। পশ্চিম জার্মানির বিধি-ব্যবস্থার সঙ্গে মানাতে গিয়ে জার্মান ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক (GDR) খানিকটা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। আনন্দ অবিমিশ্র হয় না, জার্মানির নতুন ঐক্য অনেকের মনে আরো একটা ক্ষতের সৃষ্টি করেছে।

বিস্ময়ের কথা, যখন ভারতে থাকি তখন এর কোনোটাই আমাদের বৌদ্ধিক আলোচনায় ঠাঁই পায় না। জার্মানির ইতিহাস, তার অপরাধ, 888sport app জাতিগোষ্ঠীতে নতুন করে তার অমত্মর্ভুক্তির তাগিদ – এ সবকিছুই আলোচ্য বিষয় হয় না, এমনকি আমার শিক্ষিত বন্ধুমহলেও নয়। এখানে কাজ করছে ইতিহাসের অন্য পরম্পরা : দেশভাগ, উত্তর উপনিবেশবাদ। এখানে সন্ধান চলেছে প্রথমে নির্জোট জাতিগোষ্ঠীতে অমত্মর্ভুক্তির স্বীকৃতির, তারপর স্বীকৃতি সোভিয়েত ইউনিয়নের এবং শেষে বৃহত্তর পরিসরে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের। এখানে লক্ষ্য সফল অর্থনীতির স্বীকৃতি, স্বীকৃতি সনাতন ঐতিহ্যবাহী দেশের, তার সংস্কৃতির জন্য গর্বের হকদারির। নানা সংঘর্ষ-সংঘাত, দুর্নীতি, অযোগ্যতা, যা এখানের দৈনন্দিন বৈশিষ্ট্য, তার মধ্যেই চলেছে এসবের পেছনে ছুটে চলা।

এরকম মানসিক আবহে জার্মানির উপরোক্ত যন্ত্রণাবিকার নিয়ে চিমত্মাভাবনার জায়গা বিশেষ নেই। আরো একটা ব্যাপার বিস্মিত করে আমাকে : হিটলারকে এদেশে আদর্শ মানা হচ্ছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে জার্মানির অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন ঘটিয়েছিলেন তিনি, নিছক এই কারণেই তাঁকে মহাপুরুষ বানানো হলে কমবয়সী বা অল্প-শিক্ষিতদের ক্ষমা করা যেতে পারে; কিন্তু অনেক বিজ্ঞজনও তাঁদের বিচারে তাঁকে কেবল ব্রিটিশের প্রতিপক্ষ হিসেবেই দেখেন। r