পরিশীলিত জলের আখ্যান

দ্রাবিড় সৈকত

‘এই পদ্মা এই মেঘনা এই যমুনা সুরমা নদীতটে

আমার রাখাল মন গান গেয়ে যায়…’

এমন সুরলহরীর অবারিত ধারা যেন  কুলকুল ধ্বনি-সহযোগে ছুটে এলো কাঠখোট্টা শহরের একেবারে প্রাণকেন্দ্রে; ভুলিয়ে-ভালিয়ে এই স্রোতস্বিনীদের         পাষাণ মহলে  নিয়ে আসার কুশীলব 888sport live chatী আনিসুজ্জামান। হ্যামিলনের বাঁশিওলার মতো মাতাল নদীগুলোকে মায়ার জালে বন্দি করে হাজির করেছেন দর্শকের  সামনে। উত্তাল ঊর্মিমুখর জলতরঙ্গ এখানে শান্ত-সমাহিত ঢঙে বিমুগ্ধ করে চলেছে কলারসিকদের। জলবর্ণে এখানে রচিত হয়েছে এলায়িত বাক্যের অর্থবোধক          প্রশস্তিগাথা। নদী-নৌকা সংসারের সকল দুঃখ-বেদনা ধুয়ে দিয়েছে আনিসুজ্জামানের জলরং; তবু কোথায় যেন বেজে ওঠে বিষাদের সুর। বিষাদের মন কেমন করা দিনগুলো ফিরিয়ে এনে দর্শকের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন 888sport live chatী; হয়তো এই গুরুভার একাকী  বহন করা দায় হয়ে উঠেছিল, তাই নান্দনিক আবহে 888sport live chatানুরাগীদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন নস্টালজিক সময়ের লিরিক।

গুলশানের ইনস্টিটিউট অব এশিয়ান ক্রিয়েটিভসের গ্যালারিতে ৬ থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলেছে 888sport live chatী আনিসুজ্জামানের ‘জলজ পঙ্ক্তিমালা’ শীর্ষক জলরঙের 888sport live chatকর্ম-প্রদর্শনী। প্রিন্টমেকিংয়ের বরপুত্র আনিসুজ্জামান এবার দর্শকের সামনে নিয়ে এসেছেন জলজ পঙ্ক্তিমালা। জলরঙে তার পরিশীতল পরিমিতিবোধ দর্শক-বোদ্ধা ও 888sport live chatীমহলে নতুন উপগ্রহ আবিষ্কারের মতো আনন্দদায়ক। কোমল, মসৃণ ও পরিচ্ছন্ন রঙের ব্যবহারে আনিসুজ্জামানের নদী-নৌকা, তীরবর্তী ঘরবাড়ি, ফসলের মাঠ আমাদের শহুরে মুখগুলোকে গ্রামের দিকে ফিরিয়ে দেয়। ক্রমাগত ইঁদুরদৌড়ে ক্লান্ত, শ্রান্ত ও উদ্ভ্রান্ত নাগরিকজীবনে এমন জলজ প্রশান্তির প্রলেপ দেওয়ার মায়াময় ক্ষমতাই সম্ভবত 888sport live chatের ম্যাজিক। 888sport live chatের ভাষায় অভিব্যক্তি প্রকাশের পথ কেমন গভীরতর হতে পারে ‘জলজ পঙ্ক্তিমালা’য় তা-ই দেখিয়েছেন তিনি। মৃদুভাষী এই 888sport live chatীর কাজেও রয়েছে পাতলা প্রলেপের অনুচ্চ অভিব্যক্তি; বর্জিত হয়েছে রঙের বাহুল্য; কোথাও নেই কোনো উচ্চকিত টোন, রং কিংবা কম্পোজিশন। তাঁর ‘জলজ পঙ্ক্তিমালা-৫’ অথবা ‘জলজ পঙ্ক্তিমালা- ১৮’-তে দেখা যায় গুটিয়ে রাখা মাছধরার জাল অথবা নীল রঙের পলিথিন; পাতলা কোবাল্ট ব��য়ের সঙ্গে ধূসর রঙের মিশ্রণে বাস্তবতা তৈরি হয়েও যেন ঠিক বাস্তব নয়; এমনই এক অধরামাধুরী সৃষ্টি করেছেন 888sport live chatী আনিসুজ্জামান।

জলরঙের চিত্রকর্মগুলোর শীতল নীরবতার পেছনে কাজ করেছে কম্পোজিশনের অগতানুগতিক বিন্যাস। কম্পোজিশনে অবজেক্টিভ স্পেসের পরিকল্পিত বৈচিত্র্য চিত্রপটে এনেছে নতুনত্বের আস্বাদ। ‘জলজ পঙ্ক্তিমালা-২৩’-এ একাকী নদীতীরে নিঃসঙ্গ নৌকার কম্পোজিশন দর্শকমনে শূন্যতার অনুভূতি উসকে দেয়; কিংবা ‘জলজ পঙ্ক্তিমালা-২৬’-এ ঈষৎ ভার্টিক্যাল বিন্যাসের বার্ডস আই ভিউ নৌকার বুক থেকে উঠে আসা উষ্ণতাকেও  অবজ্ঞা করার সুযোগ থাকে না। তবে 888sport live chatী আনিসুজ্জামান কম্পোজিশনের ক্ষেত্রে বড় কোনো ঝুঁকি নিতে নারাজ। অধিকাংশ কম্পোজিশনে কিছুটা উঁচুতে দাঁড়িয়ে জল-নদী-নৌকা অবলোকনে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে; যদিও এই ভিজ্যুয়াল ডিসটেন্স দর্শকের আত্মার সঙ্গে সেতুবন্ধনে বাধা হিসেবে দাঁড়ায় না। নদীপাড়ের উঁচু ভূমি থেকে এই দেখার ভেতর কেমন যেন একটা হাহাকার কাজ করে; 888sport live chatী হয়তো দর্শকের ঠিক এখানেই ছুঁয়ে যেতে চেয়েছেন। তিনি জানেন, বিশেষত তাঁর প্রিন্টমেকিংয়ের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে – 888sport live chatকর্মের দৃষ্টিনন্দন ব্যাকরণ।

জলজ পঙ্ক্তিমালার কালার প্যালেট একটি উলে�খযোগ্য বিষয়, রং-ব্যবহারে 888sport live chatীর পরিমিতিবোধ ও মুন্শিয়ানা তাঁর পরিণত মানসিকতারই প্রতিলিপি। প্রশান্ত কালার স্কিমের এমন চমৎকার ব্যবহারে জলরঙের মাহাত্ম্যকেই যেন আবার দর্শকের সামনে তুলে ধরলেন 888sport live chatী আনিসুজ্জামান। হালকা ওয়াশে ব্যাকগ্রাউন্ড তৈরি করে নৌকার ডিটেইলিংয়ের মাধ্যমে তিনি দৃষ্টিকে পুঞ্জীভূত করেছেন ছবির সুনির্দিষ্ট কেন্দ্রবিন্দুতে। তবে কোথাও কোথাও ডিটেইলিং তৈরি করেছে ফটোগ্রাফিক ইল্যুশন এবং আলো-ছায়ার কনট্রাস্ট ব্যবহারেও এমন বিভ্রম আরো জোরালো হয়ে উঠেছে। ছায়ার প্রান্তভাগ নরম হয়ে পশ্চাৎপটের সঙ্গে মিলে যাওয়ায় জলরঙের মোলায়েম আনন্দ রসোত্তীর্ণ হয়ে ওঠে আনিসুজ্জামানের কাজে।

নদীতীর, ধূসর খেয়াঘাট, মাছধরার নৌকা, তীর-সংলগ্ন বসতি, দূরে ফসলের মাঠ কিংবা নদীর বুকে জেগে থাকা বিশাল বালুচর সবই জনমানবহীন; এমনকি জলচরে কোনো পাখিরও কোনো হদিস কোথাও নেই। এটা কি 888sport live chatীর পূর্বপরিকল্পিত? প্রাণহীন হাহাকারে ভরে উঠুক জল ও জলচর নৌকার খোল? কেমন যেন একটা অপূর্ণতা এসে ভর করে জলজ পঙ্ক্তিমালায়। মাছধরার নৌকায় যদি খলবল করে উঠত মাছ অথবা নদীর পাড়ে ঘুরে বেড়াত কোনো ভাটিয়ালি গান, ফসলের মাঠে যদি উড়ে যেত কৃষাণীর ছায়া – নিঃসঙ্গতার নস্টালজিয়া হয়তো আরো জমাট হয়ে ঢুকে যেত দর্শকহৃদয়ের গহিন তলদেশে।

নদ-নদী-হাওরবিধৌত বাংলায় যোগাযোগের প্রধান পথ জালের মতো বিছিয়ে থাকা  নদী-নালা ও হাওর-বাঁওড়ের বিশাল জলরাশি। আর এই জলরাশির বুক চিড়ে ধেয়ে চলা নৌকাই আমাদের প্রধান বাহন। বাংলায় নদী-নৌকার রয়েছে সুপ্রাচীন ইতিহাস ও সমৃদ্ধ ঐতিহ্য। নৌকা ও নদীর অসংখ্য আকার-গড়ন ও বাহারি রঙের ছই, পালের দৃষ্টিসুখকর দৃশ্য এই নদীমাতৃক দেশে সবার জন্যই অবারিত। জল ও জলের বুকে ছড়িয়ে থাকা প্রাণচঞ্চল নৌকাগুলোকে উপেক্ষা করার ক্ষমতা 888sport live chatীমাত্রই হারিয়ে ফেলেন। নদী-নৌকার প্রতি যেন এক অমোঘ আকর্ষণ বোধ করেন বাংলার চিত্র888sport live chatীরা। 888sport live chatাচার্য জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, এসএম সুলতান থেকে শুরু করে আজকের নবীনতম 888sport live chatীও বোধ করি জলের ডাকে উতলা হয়ে ওঠেন। 888sport live chatী আনিসুজ্জামান তাঁদেরই একজন, যিনি নদী, নৌকা ও জলরাশির গভীর নৈঃশব্দ্যের কাছে তাঁর সমস্ত 888sport live chatীসত্তা নিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন। শৈশবে পাবনায় দেখেছেন উত্তাল পদ্মার অথই জলের অনির্বচনীয় রূপ,  জলের সেই গেঁথে যাওয়া রূপকেই তিনি ফিরিয়ে আনলেন পরিণত ও স্থিতধী                রং-তুলির সার্থক পরিচালনায়। 888sport live chatী প্রিন্টমেকিংয়ের কাজের পরিচ্ছন্ন,              পরিপাটি ও নিখুঁত বিন্যাসকেই যেন অফুরান জলের ধারায় জড়িয়ে নিলেন ‘জলজ পঙ্ক্তিমালা’য়। মূলত প্রিন্টমেকিং আর্টিস্ট আনিসুজ্জামানের এই জলরং-চিত্রপ্রদর্শনী 888sport live chatী-দর্শকের কাছে যেন বাড়তি আনন্দের উপলক্ষ। r