পল গঁগা হৃদয় ভেঙে চলে গেলেন তাহিতিতে

স্ত্রী  মেটিকে ফেলে এসেছিলেন প্যারিসে। মেটি তাঁদের সংসার যেমন আসবাবে পরিপূর্ণ করেছিল তেমনি সন্তানসন্ততিতে। ‘এসব আমার ভালো লাগে না। এমন জীবন আমার কাম্য নয়।’ – এভাবেই জীবন শেষ হবে সেটি তিনি চাননি। এর মধ্যে বিখ্যাত 888sport live chatী কামিল পিসারোর সঙ্গে পরিচয় হয়েছে তাঁর। যেন এতোদিন পর তিনি বুঝতে পারছেন ছবি আঁকার জন্যই তাঁর জন্ম। তাই একদিন মেটির আসবাব আর সন্তানে পরিপূর্ণ জীবন ফেলে চলে এলেন প্যারিসে। স্টকব্রোকার গঁগা এবার হতে চান আঁকিয়ে গঁগা।

প্যারিসের পন্ট আভোনে সে-সময় পৃথিবীর নানা জায়গা থেকে অনেক 888sport live chatী এসে সমবেত হয়েছিলেন। তাঁদের অনেককেই পোজ দিচ্ছেন এমিল বারনার্ডের বোন সতেরো বছরের রূপসী ম্যাডেলিন বারনার্ড। তিনি ঝড় তুলেছেন সব 888sport live chatীর মনে। কিন্তু গঁগার অনুভূতি সবার থেকে আলাদা। বলা যায় তখন তিনি বারনার্ডের প্রেমে ক্রীতদাস। গঁগা বারবার বলছেন তাঁর প্রেমের কথা। এর আগে অনেক বারবণিতার ঘরে রাত কাটিয়েছেন গঁগা, যেমন আর সব 888sport live chatী কাটান। সেখানে যা হয় সেটা হৃদয়বিবর্জিত শরীরের ব্যাপার। আর এখানে হৃদয় তোলপাড় প্রেম এবং বিশুদ্ধ যন্ত্রণা। পিগ্যালে 888sport live chatীরা এসব  করে  থাকেন।  এটা  এমন  কোনো  নতুন  ব্যাপার নয়। রক্ত-মাংসের শরীর যেমন উল্লাসে মেতে ওঠে; কিন্তু সতেরোর ম্যাডেলিন গঁগার জীবনে ঘটালেন প্রমাদ। ম্যাডেলিন মিষ্টি হেসে প্রত্যাখ্যান করলেন প্রেম। এমিল বারনার্ডের লোকজন গঁগাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিলো। তাঁকে বাড়ি আসতে নিষেধ করে দিলো।

অনেকে ভেবেছেন, কেন গঁগা পালিয়েছিলেন তাহিতিতে? দক্ষিণ সমুদ্রের দ্বীপ তাহিতি। এখন সব আর্ট ক্রিটিক বলেন, এই পালিয়ে যাওয়ার কারণ আর কিছু নয়; হৃদয়ের গভীর বেদনা ভুলে যেতে অনেক দূরে যেতে চেয়েছিলেন তিনি। এমন দূরে যেখানে প্যারিস সভ্যতার কোলাহল বা গর্জন কিছুই যায় না। এসবের আগে কিছুদিন ভ্যান গগের সঙ্গে সময় কাটিয়েছিলেন। আর্লস-এ। তখন ওঁদের ঝগড়া চরমে ওঠে। ভ্যান গগ তাঁকে ক্ষুর নিয়ে কাটতে যান। তিনি পালান। সকলে বলেন, তাঁদের দুজনের সম্পর্ক ছিল সমকামিতার। সে যাই হোক, গঁগা ঠিক করলেন তিনি পালাবেন। আসলে সম্পর্ক ঠিক কেমন ছিল সেটা জানতে একটি টাইম মেশিন দরকার।

ম্যাডেলিন নেই। ভ্যান গগের বৈরী আচরণ। গঁগা ঠিক করলেন, এবার তিনি চলে যাবেন পলিনেশিয়ান কালচারের ভেতর। যেখানে আকাশ, গাছ, চাঁদ, জোছনা সব অন্যরকম। আর ছাগলের চাইতেও সস্তা 888sport promo code। গঁগার পছন্দ ছিল কেবল ফুটে ওঠা 888sport promo code, যারা অনাঘ্রাত ও স্বাদু বলে তিনি বিশ্বাস করতেন। তেরো, চৌদ্দো – এই মতো বয়স তাঁর পছন্দের। পেতেন নির্বিচারে। এখানে ছিলেন প্রায় চৌদ্দো বছর। অনেকে এসেছিলেন তাঁর জীবনে। আর পলিনেশিয়ান কালচারে হাটে যে ‘মিট মার্কেট’ বসত তা দেখতেও ভালো। ওদের কেবল সামান্য মূল্যে ঘরে আনা। মায়েরা বলতেন – আমার মেয়েকে খেতে-পরতে দিও। তারপর যা বলো করবে। আর গঁগা এসব মেয়েকে ছেনেছুঁয়ে নিয়মিত চিঠি লিখতেন ম্যাডেলিনকে। – ‘ম্যাডি আমি তো তোমাকে ভুলতে পারি না। তুমি কিন্তু কখনো নিজের স্বাধীনতা বিসর্জন দিয়ে অন্য কারো হয়ে যেও না। মনে রেখো নিজের স্বাধীনতার চাইতে বড় আর কিছু নেই।’ বলেছেন – ‘আমি আবার ফিরে আসব।’ কিন্তু ম্যাডেলিন অবশেষে চার্লস ল্যাভেলের বাকদত্তা হন। শোনা যায়, চার্লস ল্যাভেলও গঁগাকে ভালোবাসতেন ঠিক ভ্যান গগের মতো করে। ম্যাডেলিনকে প্রায় পেয়ে গিয়েছিলেন চার্লস ল্যাভেল। কিন্তু বাগদত্তা ম্যাডেলিন কেন যে শেষ পর্যন্ত চার্লস ল্যাভেলকে বিয়ে করেননি সে এক রহস্য।

চব্বিশ বছর বয়সে ম্যাডেলিন মারা যান। তখন তাহিতিতে গঁগা নানা 888sport promo codeশরীর ছেনেছুঁয়ে মজে আছেন নিজের পছন্দের জগতে। চিঠিলেখা ম্যাডেলিন কোন স্বর্গে চলে গেলেন সে-খবর পেয়েছিলেন অনেক পরে। গঁগা শরীর ছুঁয়ে ছবি এঁকে চলেছেন একটির পর একটি। সেখানে ম্যাডেলিনের ভূমিকা কী, কে বলবে?

এঁকেছেন ম্যাডেলিনকে, যে তাঁকে হৃদয়ে আঘাত দিয়েছে, পাঠিয়ে দিয়েছে সুদূর তাহিতিতে, তাকে সুন্দর করে আঁকেননি গঁগা। তার কান দুটো খাড়া খাড়া আর চোখ এঁকেছেন এমন করে যা কেবল ডাইনি মেয়েদের চোখ হয়। তিনি যদি জানতেন কার কথা ভেবে ম্যাডেলিন বিয়ে করলেন না চার্লসকে, তাহলে ছবির চেহারা কি বদলে যেত? কে জানে, কে বলবে সে-কথা। ‘ডেভিলিশ’ ম্যাডেলিন তাঁকে ক্ষতবিক্ষত করেছে, হৃদয় চূর্ণ করেছে, তাঁকে দেবদূত করতে হবে বা পরীর মতো মেয়ে বানাতে হবে, তা তো হতে পারে না। তা না হোক, আজকের ক্রিটিক খুঁজে পেয়েছেন গঁগার পালানোর কারণ। তবে গঁগার অনেক ছবিতেই ফুটে উঠেছিল ম্যাডেলিনের মুখ। এখন সকলে এক বাক্যে বলেন – এই সেই কারণ যেজন্য গঁগা পালিয়ে গিয়েছিলেন তাহিতিতে।

গঁগা মারা যান ১৯০৩ সালে, তাহিতিতে। ততদিন ম্যাডেলিনের ছবি ঝাপসা হয়ে গেছে। অনেকদিন ভুগেছিলেন সিফিলিসে। যে-অসুখ রাতারাতি কাউকে মেরে ফেলে না, কেবল অবর্ণনীয় কষ্ট দেয়। অসুখের ব্যথা সারাতে তাকে আনতে হতো ওষুধ সেই জগৎ থেকে যাকে একদিন তিনি ফেলে এসেছিলেন। মরফিন, আর্সেনিক – এইসব। পয়সা মেটাতেন ছবি দিয়ে। নিরাময়ী ব্যথা-তাড়ানিয়ার নানা ওষুধ আর অনেক 888sport promo code। মেয়েরা শুয়ে আছে, মেয়েরা বসে আছে, মেয়েরা দাঁড়িয়ে আছে। কেউ কেউ জড়ো হয়েছে গাছের নিচে। কেউ কেউ স্তনের মতো পরিপূর্ণ ফল পাড়ছে। তখন যে-জিসাসকে এঁকেছিলেন তিনিও ছিলেন পলিনেশিয়ান কালচারের একজন। হলুদ যিশু। কখনো গঁগা নিজের বাড়িতে থাকতেন পৃথিবীর প্রথম মানুষ আদমের মতো বিবস্ত্র হয়ে। কতসব ইভ ঘিরে থাকত তাঁকে। তাদের অনেকেই থাকত বস্ত্রহীন।

১৯৪৪ সালে একজন সাধারণ লোকের কাছ থেকে গঁগার একটি ছবি উদ্ধার করা হয়েছিল। তিনি আসলে ছিলেন মাঝিমাল্লাদের একজন। যাঁর কাছে ছবি দিয়ে ওষুথ বা ব্যথা-নিরাময়ী আনতে বলতেন। সৃষ্টিরহস্যের একটি অসাধারণ ছবি এঁকেছিলেন তিনি। সে-ছবি যখন প্যারিসে যায়, সমাদৃত হয়। তাহিতিতে

 খবর পেয়েছিলেন তাঁদের একটি মাত্র মেয়ে মারা গেছে। কষ্ট পেয়েছিলেন এমন খবরে। কিন্তু আদম আর ইভের ভাবনায় ছবি আঁকা তখনো শেষ হয়নি। সাধারণ মানুষের কাছে পাওয়া সেই ছবি ‘সদাবিতে’ অনেক টাকায় বিক্রি হয়েছিল। একটি নগ্ন মেয়ে আর একজন জাদুকর সেই ছবির বিষয়বস্তু। ‘লা আপারিশন’ অনেক টাকার ছবি তখন। মানে দশ মিলিয়ন পাউন্ড তখন এর দাম। কিন্তু যখন ছবিটি একজন মাঝিমাল্লার হাতে তুলে দিয়েছিলেন তার দাম নির্ধারণ করেছিলেন কয়েক ভরি মরফিন, যা তাঁকে ভুলিয়ে দেবে অসহ্য যন্ত্রণা। তিনি ছবি আঁকবেন। কী সব জীবন – ভাবা যায় না। কী করে একজন 888sport live chatী এভাবে 888sport live chat সৃষ্টি করে যান! ‘দি মুন অ্যান্ড সিক্স পেন্সে’র ডাক্তারও পেয়েছিলেন এমন একটি ছবি। রোগী দেখার ভিজিট। সে-ছবি হয়তো ছুড়ে ফেলেছিলেন বিনে। এখন তা কোথায় আছে, কেমন আছে, বলতে পারবেন আর্ট নিয়ে যাঁদের ব্যবসা, তাঁরা।

তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ওয়ালডামার জানুসাক একটি ছবি বানিয়েছিলেন। যেখানে গঁগার জীবন এবং তাঁর অনেক অজানা তথ্য ছিল। জানুসাক এসব ডকুমেন্টারি করে 888sport app download bd পেয়েছেন। গভীর তলদেশ থেকে এমনসব তথ্য তুলে আনেন, যা অনেকের অজানা। তিনি ম্যাডেলিনের প্রেমে ডুবে যাওয়া গঁগার কথা বলেন। বলেন – ‘এটিই তাঁর তাহিতিতে চলে যাওয়ার কারণ।’ আগে একবার গিয়েছিলেন চার্লস লাভেলের সঙ্গে। পরে গেলেন থাকতে। ছবি আঁকতে।

গঁগা যখন পরের বার তাহিতি যান ততদিনে খ্রিষ্টান মিশনারি মেয়েদের পোশাক পরাতে শিখিয়েছিল আর শিখিয়েছিল বিনা পয়সায় নয়, সেক্স বিক্রি করাও যায় – তেমন কোনো কথা। তবে গঁগার উঠোনের অনেক ইভ বিনে পয়সায় এসেছিল। তারা 888sport live chatীর জন্য রাঁধত, বিছানা-উঠোন পরিষ্কার করত, পোজ দিত আর দরকার হলে উদ্দাম আদমের শরীরের উল্লাস মেনে নিত। অনেক সন্তানসন্ততিও তাঁর হয়েছিল সেখানে। বর্তমানে তাহিতিতে এর বংশধর হয়তো আছে; কিন্তু তাঁর মতো বিখ্যাত হওয়ার যোগ্যতা কারো থাকলে সেটার খবর পাওয়া যেত।

যে-তিনজন 888sport live chatী ছবি আঁকায় নতুন প্রাণ, নতুন ভাবাবেগ, নতুন রস এনেছিলেন তাঁরা হলেন ভ্যান গগ, সেজান আর গঁগা। ঊনবিংশ শতাব্দীর বিপ্লব তাঁরা।

সে-সময় দক্ষিণ সমুদ্রের অনেকেই ভুগত সিফিলিসে। এটা ছিল পুরোপুরি ইউরোপের রোগ। টিটি নামে একজন মেয়ের সঙ্গে দীর্ঘ আঠারো মাস কাটিয়েছিলেন গঁগা। মেয়েটিকে নিয়ে ঘুরতেন সাগরের তীরে। পর্বতে। জনপদে। এর ভেতরে আঁকা চলত। গঁগার সন্তান পেটে করে আঠারো মাস পর টিটি চলে গিয়েছিল। গঁগার তখন সিফিলিস। হাসপাতালে গিয়ে সেরে উঠতে টাকা লাগে – সেটা তাঁর ছিল না। সে-সময় হাসপাতালে থাকতে রোজদিন বারো ফ্রাংক করে লাগত। কোথা থেকে আসবে সে-টাকা? যখন কাশির সঙ্গে রক্ত উঠেছিল, ভেবেছিলেন যক্ষ্মা জাতীয় কিছু হয়েছেড়; কিন্তু সে ছিল তাঁর সিফিলিসের দ্বিতীয় স্টেজ। ১৮৯২ সালের ভেতর অনেক দামি ছবি এঁকেছিলেন। এর সঙ্গে করেছিলেন ‘উড কার্ভিং’-এর কাজ। ১৮৮২ সালে তাহেমন নামে এক তাহিতি 888sport promo code তাঁকে এনে দিয়েছিল সত্যিকারের সুখ। একজন 888sport live chatীর সত্যিকারের সুখ কী সেটা ঠিক জানা যায় না। খুব কি ভালো ছিল তাহেমন? একদিনও ঝগড়া করত না? রান্না কি খুব মজার ছিল? মডেল হিসেবে তুলনাহীন? না সে বুঝত পাগল 888sport live chatীর অন্তর? কে বলবে সে-কথা। নাকি সেবানিপুণ তাহেমন ক্ষতবিক্ষত গঁগাকে পৌঁছাতে পেরেছিল শান্তি নামে পাখিটার ডানার কাছে? কেউ কেউ বলেন, কারো হাতে ‘হিলিং পাওয়ার’ থাকে। তেমন কিছু হয়তো তাহেমনের ছিল। নামটি তাহেমন, তাহুরা বা তেমন কিছু হতে পারে। তাহিতি ভাষায় দক্ষ একজন নামটি ঠিকমতো উচ্চারণ করতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস।

১৮৯২ গঁগার জীবনের সবচেয়ে সৃষ্টিসফল কাল। তবু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই তাহেমন চলে গেল গঁগার জীবন থেকে, যেমন আর সকলেই যায়। ১৮৮৩ সালে বউ মেটির কাছে একবার এসেছিলেন। সেখানে একটি স্টুডিও বানিয়েছিলেন। আর পেয়ে গেলেন তেরো বছর বয়সের এক জাভানিজ মেয়েকে। তারপরেও  ভাবলেন, এ তাহিতির জীবন নয়। এই যে ‘মিথ’ তখন তাকে ঘিরে সেসব বজায় রাখতে ফিরে গেলেন তাহিতিতে। তিনি তাহিতির আদম, না  ঈশ্বর – কে বলবে?

চাচা জিজি মরার সময় কিছু টাকা-পয়সা রেখে গিয়েছিলেন তাঁর নামে। তাই নিয়ে চলে এলেন দক্ষিণের সমুদ্রে। একটি বাঁশের ঘর বানালেন নিজের জন্য। তাহেমন নাকি তার হিলিং অস্তিত্ব নিয়ে ফিরে এসেছিল। কিন্তু নগ্ন শরীরের গঁগাকে একবার দেখে পত্রপাঠ বিদায়। কিন্তু মেয়ে ছাড়া আদম বাঁচেন কী করে? একজন স্থানীয় মেয়েকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে বাড়িতে এনেছিলেন। তখনো তাহিতির মেয়ের দাম ছাগলের চাইতে বেশি নয়। এই মেয়েটিকে তিনি ডাকতেন পাহুরা বলে। মেয়েটি নিজেকে তেরো বললেও আসলে সে পনেরো-ষোলো। মেয়েটির স্তনের মাপ গঁগাকে বুঝতে দেয়নি সে তেরো নয়। যাই হোক, এই মেয়ে তাঁর বাঁশের ঘর গুছিয়ে দিত। ফল-পাকুড় এনে দিত। চাচা জিজির টাকা ফুরিয়ে এসেছে। আর তেমন কিছু নেই যা দিয়ে তিনি বেঁচে থাকেন। অসুখে মরো মরো। চলার শক্তি, চোখের শক্তি যেতে বসেছে। তখন এঁকেছিলেন নিজের ছবি। বাকি দশ বছর অর্থহীন, অসুখে মরো মরো তিনি বেঁচে ছিলেন। আর্সেনিক লাগত পায়ের ক্ষতে দিতে আর মরফিন কষ্ট ভুলতে।

তখন স্ত্রী জানালেন – ‘শোনো আমাদের একটি মাত্র মেয়ে, সে মারা গেছে।’ সে-আঘাত বুকে শেল হানলেও ছবি আঁকা বন্ধ ছিল না। চিরকাল এভাবে নিজের ক্ষত-দুঃখ ভুলতে চেয়েছিলেন গঁগা। মেটিকে লিখেছিলেন – ‘একটি মাত্র কন্যার মৃত্যুর পর আমি আর ঈশ্বর বিশ্বাস করতে পারি না। ওখানে নয়, আমার মেয়ের কবর আমার চারপাশে। আমার চোখের জল ফোঁটায় ফোঁটায় সেখানে ঝরে পড়ছে।’ এর সঙ্গে আরো কিছু কথা ছিল; কিন্তু মেটি এবং তাঁদের ছেলেরা গঁগার খবর তেমন আর জানতেন না। সংসার তাঁকে ছাড়াই চলছে। মাঝখানে একবার গিয়ে ফিরে এসেছিলেন চাচার রেখে যাওয়া টাকা নিয়ে। সেটা এখন শেষ। উপার্জন নেই, কেবলই খরচ।

১৮৯৭ সালে বড় এক হার্ট অ্যাটাক হয়। এরপরেও তিনি অনেকদিন মরে বেঁচে ছিলেন।  কিছু আঁকা তখনো বাকি ছিল। বড় ক্যানভাসে আঁকলেন জীবন ও মৃত্যু নিয়ে একটি অসাধারণ ছবি। ক্যানভাসটি ছিল দৈত্যের মতো বড়। ‘আমরা কোথা থেকে এসেছি, আমরা কে, আমরা কোথায় যাব’ – এইসব। সেখানে ছিল মানুষ। তাদের শুরু আর তাদের শেষ। মানুষ গাছ থেকে আপেল পাড়ছে। বলতে চেয়েছেন স্বর্গ থেকে পতনের কারণ কেবল 888sport promo code নয়, পুরুষও বটে। এরপর নিজে নিজে মরে যেতে চাইলেন। পারলেন না। ‘আমার সবচেয়ে বড় আঁকা শেষ হয়েছে। এখন আর বেঁচে থেকে কী লাভ!’ ঘরে যত আর্সেনিক ছিল সব খেলেন। তবু মরা হলো না। তিনি বেঁচে উঠলেন। সিফিলিস রোগটি অনেক সময় রোগীকে খেলনার মতো ব্যবহার করে। কখনো ভালো করে, কখনো মেরে ফেলে। এই ভালো থাকা আর মন্দ থাকার মাঝখানে পাপিটোতে গিয়ে মজুরের কাজ করেছিলেন। ফল-পাকুড় না হয় পাহুরা এনে দিলো। তারপরেও কিছু দরকার হয়।

দৈত্য ক্যানভাসের ছবির সুখ্যাতি তাঁর কাছে আসতে সময় নিয়েছিল। ‘আমরা কোথা থেকে এসেছি, আমরা কে, আমরা কোথায় যাব’ – ছবিটিকে তিনি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন প্যারিসে। বিশাল চিন্তা ও দর্শনের ছবি।

ইতোমধ্যে প্যারিসে দু-একটি ছবি বিক্রি হতে শুরু হয়েছে। তিনি হ্যাভোতে ছিলেন তখন। একটি ‘প্লেজার হাউসও’ বানিয়ে রাখলেন। যেখানে অনেক নগ্ন মেয়ের ছবি টানিয়ে রাখলেন। চলছে পান ও পাহুরার সঙ্গ। এরপর পাহুরা চলে গিয়েছিল। তাঁর জীবনের শেষ মেয়েটি ভায়িহু। যাকে কিনতে তাঁর দুশো ফ্রাংক খরচ হয়েছিল। তিনি মারা যাওয়ার আগে ভায়িহু বিদায় নিয়েছিল। একটি মেয়ের জন্ম দিয়েছিল। যে-মেয়েটিকে তিনি দেখেননি।

চুয়ান্ন  বছর  বয়সে  ঘুমের  ভেতর  মারা  গেলেন  গঁগা।  এপাশ-ওপাশ করছিলেন ব্যথায়, যন্ত্রণায়। মৃত্যু করুণা করল তাকে। আর কত? কত আগেই তো তাঁর চলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গঁগা জানতেও পারেননি সে-সময় তাঁর খ্যাতি প্যারিসের মধ্যগগনে। বলেছিলেন – ‘দর্শকের কাছে আমার কোনো ঋণ নেই। ঋণ সেইসব আঁকিয়ের কাছে যারা জানে না একজন 888sport live chatীর জন্য অখণ্ড স্বাধীনতার দরকার কতটা।’

ম্যাডেলিনকে ভুলতে তাহিতি আসেন। পেয়েছিলেন অনেক ইভ; কিন্তু সেটা তাঁর বিষয় নয়। তিনি সৃষ্টিশীলতায় অসাধারণ একজন মানুষ, যাঁকে ব্যথা-বেদনা অসুখ-যাতনা কিছুই ফেরাতে পারেনি আঁকা থেকে।

জন্ম ৭ জুন ১৮৪৮, মৃত্যু ৮ মে ১৯০৩। পুরো নাম ইউজিন হেনরি পল গঁগা। ৫১৬টি ছবি এঁেকছিলেন। এর সঙ্গে কাঠখোদাই, সিরামিকের কাজ – এসবও করেছেন। তাঁর প্রভাব পড়েছিল পরবর্তী আঁকিয়েদের ওপর। তাঁর একটি ছবি কাতার মিউজিয়ামে ৩০০ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়। হিভা

’ও-তে তাঁর সমাধি আছে। মডার্ন আর্ট, পোস্ট ইমপ্রেশনিজম, সিম্বলিজম, প্রিমিটিভজম, সিনথেটিজম – এসবই ছিল তাঁর ধারার নাম। বস্টন ম্যাসাচুসেটসে আছে  তাঁর সেই বিখ্যাত ছবি – ‘আমরা কোথা থেকে এসেছি, আমরা কে, আমরা কোথায় যাব’।

ভাবতে অবাক লাগে, সৃষ্টির বেদনা অস্বীকার করেছিল শরীরের আর সব কষ্ট। কেমন করে? সে-উত্তর তিনিই দিতে পারবেন, আর কেউ নয়।

ছবি : ইন্টারনেট