মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির অহংকার। অতুলনীয় আত্মত্যাগ, তারুণ্যের তুমুল সাহসিকতা, অশ্রু আর রক্তভেজা সেই সব দিন বাঙালির চৈতন্যের প্রাণশক্তি। বাঙালির অমিত গৌরবের সেই শ্রেষ্ঠ অধ্যায় আমাদের 888sport sign up bonusর দরজায় কড়া নাড়ে; অসাম্প্রদায়িক, আধুনিক, 888sport apkমনস্ক ও সমৃদ্ধ এক 888sport appsের স্বপ্ন দেখায়।
এই স্বপ্নের সোপান বাঙালি সৃজন করেছে হাজার বছর ধরে। ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে বাঙালি যে শিক্ষার আলো পেয়েছিল, তা তাদের অশিক্ষা আর অজ্ঞানতার অন্ধকার থেকে বের হওয়ার পথ দেখিয়েছে এবং তাদের আকাক্সক্ষা পূরণের উৎসাহ জুগিয়েছে।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের সমাপ্তি হলো, পাকিস্তান নামের নতুন একটি রাষ্ট্র হলো, কিন্তু তাতে বাঙালিদের শোষণ-নিপীড়নের কোনো অবসান হলো না। এই নতুন উপনিবেশবাদী শক্তির বিরুদ্ধে বাঙালিরা প্রতিরোধ গড়ে তুলল। একসময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে রাজনৈতিক-সামাজিক সংগ্রাম শুরু হলো। ১৯৭১-এ এসে সেই সংগ্রাম হলো সশস্ত্র। একাত্তরের মার্চে সারাদেশ গর্জে উঠল। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ল বাঙালিদের ওপর। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হলো। কিন্তু তার আগেই তিনি 888sport appsের স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন। পুরো একাত্তর জুড়ে তাঁরই নেতৃত্বে যুদ্ধকালীন সরকারের দিকনির্দেশনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বে, অসংখ্য মা-বোনের সম্ভ্রমের মূল্যে, হানাদার বাহিনীর পৈশাচিক গণহত্যায় প্রাণ হারানো ত্রিশ লাখ বাঙালির জীবনের বিনিময়ে, তাঁদের রক্তাক্ত আত্মদানের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা অর্জিত হলো।
১৯৭১-এর ২৫শে মার্চ কালরাত থেকে শুরু করে চূড়ান্ত পরাজয়ের আগ পর্যন্ত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যে নারকীয় গণহত্যা চালিয়েছে, বিশ্বের ইতিহাসে তা বর্বরতম।
পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানিদের এদেশীয় দোসর ইসলাম ও মানবতার শত্রু রাজাকার-আলবদররা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাঁদের চোখ বেঁধে তুলে এনে নির্মমভাবে হত্যা করে মৃতদেহগুলি ফেলে রেখেছিল জলাভূমিতে, ময়লার ভাগাড়ে। বাংলার নানা প্রান্তে ওরা চালিয়েছে নারকীয় সন্ত্রাস, 888sport promo codeদের ওপর পাশবিক নির্যাতন-ধর্ষণ ও নির্বিচারে নৃশংস গণহত্যা। 888sport appsের অনেক স্থান এখন বধ্যভূমি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, 888sport sign up bonusফলক স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু বাঙালির অন্তরে এক গভীর ক্ষত রয়ে গেছে – এত শহিদের আত্মদানের এত বছর পরেও এই গণহত্যার যথাযথ স্বীকৃতি না পাওয়ার হতাশা।
আশার কথা, মুক্তিযুদ্ধের গৌরব, বাঙালির আত্মত্যাগের ইতিহাস ও 888sport sign up bonusকে ধরে রাখতে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তবুদ্ধির অনুসারীরা একটি সমষ্টিগত উদ্যোগ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর গড়েছেন। তেমনই আরেকটি অসামান্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে খুলনায়। সমাজ ও ইতিহাস সচেতন কয়েকজন গুণী মানুষের অংশগ্রহণে সেখানে গড়ে উঠছে গণহত্যা জাদুঘর। বরেণ্য ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন এই জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি।
গণহত্যা জাদুঘর বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের গৌরব ও বীরত্বের 888sport sign up bonus সংরক্ষণ এবং হানাদারদের আগ্রাসী ও নৃশংস আক্রমণে নিহত শহিদদের আত্মদানকে স্বীকৃতি দেওয়া ও সম্মান জানানোর এক মহতী উদ্যোগ। এই অসাধারণ কাজটিকে পরিকল্পিত ও 888sport live chatিত উপায়ে এবং এক তরুণ ভাস্করের 888sport live chatীত স্পর্শে দর্শকের সামনে মেলে ধরার প্রয়াসটি এককথায় অনবদ্য।
গণহত্যা জাদুঘরের অষ্টম বর্ষপূর্তিতে 888sport appর জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শনশালায় পাঁচজন তরুণ ভাস্করের ভাস্কর্য নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রদর্শনী আয়োজিত হয়েছিল। সমবয়সী পাঁচজন ভাস্কর মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানিদের বর্বরতার শিকার নির্যাতিত বাঙালিদের নানা আলোকচিত্র অবলম্বনে ছোট ছোট কিছু ভাস্কর্য গড়েছেন, যেগুলির 888sport live chatসম্মত উপস্থাপন সেই সময়ে তোলা আলোকচিত্রীদের ছবির আবেদনকে ছাড়িয়ে যায়। যুদ্ধকালীন নানা ঘটনা ও অনুভূতিকে কেন্দ্র করে ভাস্কর্য গড়া এই পঞ্চভাস্কর হলেন রবিউল ইসলাম, ফারজানা ইসলাম মিল্কি, মুক্তি ভৌমিক, রেহানা ইয়াসমিন ও সিগমা হক অংকন। এই প্রদর্শনী আয়োজনে ও প্রকাশনায় অবদান রেখেছেন স্থপতি নাজনীন হক মিমি। সপ্তাহব্যাপী এ প্রদর্শনী চলেছে ২০শে মে থেকে ২৭শে মে ২০২২ পর্যন্ত।
পাকিস্তানি সৈন্যদের পৈশাচিকতার অসংখ্য নমুনার একটি ছিল, পুরুষের পরনের লুঙ্গি খুলে গোপনাঙ্গ দেখে নিশ্চিত হওয়া তারা হিন্দু না মুসলমান। সেই বিষয়টিকে ভাস্কর্যে তুলে ধরেছেন 888sport live chatী রবিউল ইসলাম। তিনি এর শিরোনাম দিয়েছেন ‘অস্তিত্বের পরীক্ষা’। চারুকলার মৃৎ888sport live chat বিভাগের শিক্ষক রবিউল ইসলামের মাটি দিয়ে তৈরি ভাস্কর্যের গঠন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম নামী ভাস্কর আলবার্তো জিয়াকোমেতির সিলিন্ডার পদ্ধতির মতো। এ-রীতিটি প্রয়াত ভাস্কর অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক প্রয়োগ করেছেন জয়দেবপুরে ‘জাগ্রত চৌরঙ্গী’তে, যেটি 888sport appsের মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক প্রথম ভাস্কর্য।
রবিউলের অন্য ছয়টি ভাস্কর্যেই বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি সৈন্যদের নির্যাতনের নানা পদ্ধতির প্রতিফলন ঘটেছে। এই ছয়টি কাজ হলো – ‘ভূলুণ্ঠিত মানবতা’, ‘নির্মমতা’, ‘রক্তস্নাত কসাইখানা’, ‘বীভৎসতা’, ‘একাত্তরের বর্বরতা’ এবং ‘দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা’। শেষোক্ত কাজটিতে বুদ্ধিজীবীদের চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে যাওয়ার নির্মমতাকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। গুলি বাঁচাতে জবাই করে মানুষ হত্যার মতো নির্মম ঘটনাও রবিউল তুলে ধরেছেন তাঁর একটি ভাস্কর্যে।
মেটাল বিশেষ করে পিতল ও অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে ভাস্কর্য গড়ায় ফারজানা ইসলাম মিল্কির সুনাম আছে। একক ও দলীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনীতে তাঁর বেশ কিছু কাজ প্রশংসিত ও পুরস্কৃত হয়েছে। যুদ্ধকালে উন্মূল মানুষের ‘আশ্রয়ের খোঁজে’ দলবেঁধে সীমান্ত পেরিয়ে যাত্রা, ‘গণহত্যার বীভৎসতা’, ‘একাত্তরের 888sport promo code’ ও ‘বীরাঙ্গনা’ শিরোনামে তিনি চারটি কাজ করেছেন।
শেষোক্ত ভাস্কর্যে এক ঘরের সামনে জানালাকে পেছনে রেখে এক 888sport promo code দু-হাতে মুখ চেপে লজ্জায় ও কষ্টে ভেঙে পড়ে স্থাণুর মতো বসে আছেন। ভাস্করের উপস্থাপনাগুণে আমরা সেই 888sport promo codeর অন্তরের বেদনার গভীর ক্ষতকে দেখতে পাই। ‘একাত্তরের 888sport promo code’ শিরোনামে এক হাতে রাইফেল ও রান্নার সামগ্রী আর অন্য হাতে জ্বালানি খড়ি বহনকারী এক 888sport promo code মুক্তিযোদ্ধার ছবির আদলে যে ভাস্কর্য তিনি গড়েছেন, সেটি 888sport promo codeর জীবনযুদ্ধ ও দেশের মুক্তির জন্য সর্বাত্মক যুদ্ধের সমার্থক হয়ে উঠেছে।
মুক্তি ভৌমিকও বাস্তুচ্যুত বাঙালি পরিবারের ছবি দেখে ভাস্কর্য গড়েছেন ‘নিশ্চিত গন্তব্যের খোঁজে’ শিরোনামে। পরিবারের ছোট-বড় সদস্যদের নিরাপদ আবাসন খুঁজে বের করার জন্য এই
হাঁটা এখনো চলছে বিশ্বের নানা প্রান্তে। সর্বজনীন এই আবেদন চমৎকার কুশলতায় প্রায় বাস্তবানুগ নির্মিতিতে ফুটিয়ে তুলেছেন মুক্তি। তিনি মাটি, সিমেন্ট ও মেটাল মাধ্যমে ভাস্কর্য গড়েন। তাঁর কাজগুলিতে আমরা উপস্থাপিত বিষয়ের প্রতি তাঁর আত্মনিবেদন প্রত্যক্ষ করি।
মুক্তির কয়েকটি ভাস্কর্যের শিরোনাম হচ্ছে – ‘হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী’, ‘হানাদার বাহিনীর পৈশাচিকতা’, ‘গণহত্যা ১৯৭১’, ‘বীরাঙ্গনা’ ও ‘জয় বাংলা’। ‘বীরাঙ্গনা’ ভাস্কর্যটি নির্যাতিত, ধর্ষিত ও মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখা বিস্রস্ত মা-বোনের প্রতীক হয়ে উঠেছে। এরই বিপরীতে শেষের কাজটি যুদ্ধ জয় করে ফিরে আসার অপার আনন্দ ধারণ করেছে।
রেহানা ইসলাম তাঁর পাঁচটি ভাস্কর্যেই স্বাধীনতাকামী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর চাপিয়ে দেওয়া অসম যুদ্ধ ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নির্মমতার নানা ঘটনা প্রায় বাস্তবানুগ রীতিতে প্রতীকায়িত। মাটি দিয়ে কাজ করে চুল্লিতে পুড়িয়ে এসব ভাস্কর্য উপস্থাপন করেছেন তিনি। ‘একাত্তরের দুঃখ’ শিরোনামে তাঁর ভাস্কর্যে দেখা যায়, অর্ধপোড়া এক ঘরের সামনে গুলিবিদ্ধ আহত সন্তানকে কোলে নিয়ে এক মা হাহাকার করছেন। বাড়ির দাওয়ায় এলোমেলো স্যান্ডেল পড়ে আছে।
তাঁর আরেকটি ভাস্কর্য ‘রায়ের বাজারের বধ্যভূমি’। হাত-পা-চোখ বাঁধা সদ্য খুনের শিকার বাঙালির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের মরদেহের প্রতিরূপ তৈরি করে পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের এদেশীয় দোসরদের নৃশংসতাকে প্রতীকীভাবে তুলে ধরেছেন তিনি।
সিগমা হক অংকন এই 888sport live chatায়োজনের কনিষ্ঠতম ভাস্কর। তাঁর পাঁচটি কাজের তিনটি অ্যালুমিনিয়াম ও দুটি পিতলের ঢালাই ভাস্কর্য। তাঁর কাজেও একাত্তরের গণহত্যা ও পাকিস্তানিদের বর্বরতার নজীর বিধৃত হয়েছে। অংকন মানবদেহকে ঠিক বাস্তবিকভাবে নয়, দেহভঙ্গিমাকে ঠিক রেখে তাকে ফর্মের মাধ্যমে 888sport live chatিতভাবে উপস্থাপন করেন।
তাঁর কাজগুলিতে আমরা দেখতে পাই গণহত্যা, নির্যাতন ও মুক্তির জন্য বাঙালির যুদ্ধযাত্রা। ‘নিয়ত মৃত্যু-৭১’ ও ‘নিয়তি-৭১’ শীর্ষক দুটি ভাস্কর্য পিতল মাধ্যমে ওয়েল্ডিংয়ের সাহায্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। ‘নিয়ত মৃত্যু’ নামের ভাস্কর্যে আমরা প্রত্যক্ষ করি একটি ট্রাকের পেছনে লাশের স্তূপ। রিকশায় মৃতদেহ পড়ে আছে ‘নিয়তি-৭১’-এ।
দর্শকের সামনে উপস্থাপিত সমুদয় এই কাজ আমাদের নতুন প্রজন্মের দেখা উচিত, যাতে তারা উপলব্ধি করতে পারে, ১৯৭১-এ কী নির্মম পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয়েছে তাদের পূর্বসূরিদের। আমরা যেন ভুলে না যাই আমাদের অহংকার, গৌরব রক্ত আর অশ্রু মেশা একাত্তরকে।
এমনিতেই 888sport sign up bonusবিস্মৃত এক জাতি হিসেবে বদনাম আছে বাঙালির। আমরা আশা করি, একাত্তর নিয়ে যেন এই বি888sport sign up bonus আমাদের না থাকে। খুলনায় সদ্য প্রতিষ্ঠিত গণহত্যা জাদুঘর আমাদের আত্মত্যাগের ইতিহাসকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে জাগরূক রাখবে, এরকম আশাবাদ আমরা করতেই পারি।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.