পাথরের প্রাণভোমরা

মোবাশ্বির আলম মজুমদার

হাতের তালুতে দেখ অসংখ্য পাথর,

ওসব পাথর নয় – মানুষের চোখ।

– হোসাইন কবির

প্রস্তরযুগে পাথরের ব্যবহার আদিম জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রায় জড়িত ছিল। পাথরে পাথরে ঘষে আগুন জ্বালানোর কথা আমাদের জানা। মানুষের অস্তিত্বের সঙ্গে সেই প্রস্তরযুগ থেকে পাথর জড়িয়ে আছে। প্রাণহীন এ-জড়বস্ত্ত মাইকেলেঞ্জেলো, পিকাসো, রামকিংকর, হামিদুর রহমান, নভেরা, আবদুর রাজ্জাক, নিতুন কুন্ডু, সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদের হাতে এসে স্পন্দন খুঁজে পেয়েছে। ভাস্কর্যের গড়নের কথা ভাবলে মাটির কথা প্রথমে মনে আসে। হামিদুজ্জামান খান প্রথাগত কাদামাটির বাইরে ধাতব বস্ত্তর সাহায্যে ভাস্কর্য নির্মাণে আগ্রহী হন। আশির দশকে মসৃণ, অমসৃণ বস্ত্তর গায়ে যুক্ত করে দেন ঝিলিক দেওয়া লোহার পাইপ। বিষয়ে নতুনত্ব আনেন।

888sport live chatের ভাষা বদলে যায়। স্বাধীনতা-উত্তরকালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ভাস্কর্য-নির্মাণ 888sport live chatীদের পক্ষে দুরূহ ছিল। ধর্মীয়, সামাজিক রক্ষণশীল আচরণ 888sport live chatের এ-শাখার অগ্রগতির প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করেছে। ভাষা, স্বাধীনতা, 888sport live chatের মুক্তির জন্যে লড়াকু 888sport live chatীদের মধ্যে ভাস্কর সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ, নভেরা আহমেদ, হামিদুর রহমান, আবদুর রাজ্জাক, হামিদুজ্জামান খান, নিতুন কুন্ডু ভাস্কর্য নির্মাণে এগিয়ে আসেন।

১৯৫২ সালে ভাষা-আন্দোলনে শহীদদের 888sport app download for androidে নির্মিত শহীদ মিনার স্থাপনের মধ্য দিয়ে হামিদুর রহমান এ-অঞ্চলে 888sport sign up bonusসৌধ বা ভাস্কর্য888sport live chatে আধুনিকতার প্রকাশ দেখান। পরবর্তী সময়ে প্রাচ্যের পরিশীলিত বাস্তবধর্মী নির্মাণরীতি যেমন খাজুরাহো, কোনারখ, রামকিংকরের নির্মাণরীতির বিপরীতে পাশ্চাত্যের আধুনিক মাধ্যমে ভাস্কর্য নির্মাণ শুরু করেন হামিদুজ্জামান খান। মাধ্যমের বৈচিত্র্য আর বিষয়ে জ্যামিতির মিশেলে হামিদুজ্জামান প্রথাগত ভাস্কর্য নির্মাণের ধারণা পালটে দেন। গ্যালারি কায়ায় হামিদুজ্জামান খানের এবারের প্রদর্শনীতে রেখেছেন একত্রিশটি পাথরের, দুটি ক্যানভাসে অ্যাক্রিলিক ও কাগজে কালিতে আঁকা ষোলোটি ছবি। পাথরের কাজের প্রসঙ্গে আলোচনার পূর্বে ক্যানভাস ও কালিতে আঁকা ছবির কথা বলা যাক। এখানে সবকটি 888sport live chatকর্মের বিষয় ‘মুখ’। আলোকিত মুখচ্ছবি। কোনো কোনো কাজে গাঢ় কালো রঙের ওয়াশে এঁকেছেন মানুষের মুখ। মানুষের মুখাবয়বের অভিব্যক্তিকেই প্রধান করে এসব চিত্রকর্ম গড়েছেন। পাথরের তৈরি ভাস্কর্যের সঙ্গে দেয়ালে থাকা মুখচ্ছবির যোগাযোগ তৈরি করা 888sport live chatীর একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। পাথরে তৈরি জ্যামিতিক আকৃতির নির্মাণের সঙ্গে কোমল রেখা যুক্ত করে দেওয়াই এ-প্রদর্শনের লক্ষ্য। একত্রিশটি পাথরের কাজের উচ্চতায় নির্দিষ্ট সীমা বেছে নিলেও গ্যালারির বাইরে রাখা ভাস্কর্য দুটির উচ্চতায় ঊর্ধ্বমুখীন ভাব বোঝা যায়। মসৃণ পাথরের সঙ্গে বুনটধর্মী, সাদার সঙ্গে রঙিন পাথরের কোলাজ নির্দিষ্ট ভর তৈরিতে সাহায্য করে। হামিদুজ্জামানের ভাস্কর্যের গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ভূমি, উচ্চতা, মাধ্যম ও পরিবেশের সমন্বয়। পাথরের ভাস্কর্য উপস্থাপনে ভাস্কর্যের তল কাঠামো নিয়ে তিনি পরিকল্পনা করেন। তার অংশ হিসেবে পাথরের (Base) তলে কাঠের পাটাতন তৈরি করেছেন। পাথরের অমসৃণ পাশ ঘেঁষে যে-আলো বিচ্ছুরিত হয় তা কাঠের পাটাতনে মিলে যায়। নিজস্ব উপস্থাপনরীতির কারণে দর্শকদের কাছে ভাস্কর্যগুলো মোহনীয়। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যে ভাস্কর্য প্রদর্শনীর জন্যে থাকা বড় পরিসরের গ্যালারি আমাদের দেশে হয়তো নেই। সেজন্যে আমাদের 888sport live chatীরা ভাস্কর্যের উচ্চতা নিয়ে ভাবেন। বড় আকৃতির ভাস্কর্যের নন্দনরূপ সহজে ধরা দেয়। এক্ষেত্রে দর্শক নন্দনরূপ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

হামিদুজ্জামানের এবারের প্রদর্শনীর উল্লেখযোগ্য কাজ প্রসঙ্গে বলা যায়, বস্ত্তর আকৃতি পরিবর্তন করে নির্দিষ্ট মাপে স্থাপন করা পাথরের কাজে গতির সঞ্চার করেছেন কৌণিক স্থাপনা দিয়ে। ‘স্টোন-২০’ কাজটিতে আয়ত আকৃতির চারখন্ড পাথরে তৃতীয় খন্ডকে উল্লম্বভাবে স্থাপন করে তার ওপর স্থাপন করেন আরেকটি আয়তক্ষেত্র। সবচেয়ে ভারী বস্ত্তর এমন উড্ডীন অবস্থা তৈরির চেষ্টাকে আধুনিকতার চূড়ান্ত রূপ বলা যায়। কঠিন পাথরের গায়ে হামিদুজ্জামান যে প্রাণ খুঁজে পান তা 888sport live chatীর নিজস্ব প্রাণেরই প্রতিচ্ছায়া। 888sport live chatী মননে এমন করে উড্ডীন হয়ে যান আকাশে আবার জড়তুল্য পাথর হয়ে কখনো নিজেই থেকে যান ভূমিতে। আকাশ, বায়ু আর ভূমির মাঝামাঝি এই প্রস্তরখন্ডের প্রাণভোমরা মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যের সুর তোলে। গ্যালারি কায়ায় গত ২৪ অক্টোবর শুরু হওয়া এ প্রদর্শনী শেষ হয় ৭ নভেম্বর ২০১৪।