888sport app download apk latest version : আন্দালিব রাশদী
আমি মেক্সিকো থেকে ফ্রান্সে এসেছি, রৌদ্রালোক ও আনন্দে পরিপূর্ণ। আমি এসেছি প্রেমিকের কুঞ্জে, অন্তরঙ্গ ও গোপন। আমি এসেছি বুকভরা আশা নিয়ে। এমনকি খুব সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য এলেও পাবলোর সঙ্গে আমার দেখা হবে। প্যারিসের সঙ্গে আমার চেনাজানা হবে, আলোর এই শহরকে দেখার স্বপ্ন আমার অনেক দিনের।
আমি আমার স্যুটকেসের পাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি, আনন্দে উদ্বেল কয়েক মিনিট কেটে যায়, মনে হয় যেন অনন্তকাল। আমি ভাবতে থাকি, ‘তার নিশ্চয়ই আসতে দেরি হবে।’ আমি প্রতীক্ষায় থাকি, আমি কল্পনা করি আমি দুই হাত ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাকে আলিঙ্গন করার জন্য প্রস্তুত, কিন্তু কিছুক্ষণ পর দেখি আমার হাতদুটো শূন্য।
পাবলো এসে পৌঁছল না।
আমি ট্যাক্সি ডাকি, ড্রাইভারকে পাবলোর বাসার ঠিকানা দিই। সেই বাসায় যাওয়ার পথে আমি আরো আশাবাদী হয়ে উঠি।
আমি ধরে নিলাম পাবলো আমার টেলিগ্রাম পায়নি, কাজেই আমি তাকে বিস্মিত করে ছাড়ব। চোখ বড় বড় করে তাকাবে, বলবে, ‘চিলির ভবঘুরে।’
ড্রাইভারকে বললাম রাস্তাটার নাম পিয়েরে মিলে। আমার জন্য পাবলো একটা ছোট্ট অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া করেছে। সেই ভবনেই, যেখানে সে থাকছে।
আমার মাথাটা ঝাপসা হয়ে ছিল, বিচলিতও। আগের রাতে আমার ভীষণ বাজে ঘুম হয়েছে, কারণ আমাদের এই মিলন নিয়ে কল্পনা করা আমি বন্ধ রাখতে পারিনি। আমি পিয়েরে মিলে রোড এবং সঠিক নম্বরের বাড়িটা পেয়ে গেছি। ট্যাক্সি-ড্রাইভার স্যুটকেসটা নামিয়ে দিলো, সেখানে অগোছালো বাগানসহ একটি বাড়ির সামনে আমি দাঁড়িয়ে রইলাম। দক্ষিণ চিলিতে আমার জন্ম শহরের একটা বাড়ির মতোই এ-বাড়িটি।
আমার হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেল। আমাদের এই মুখোমুখি সাক্ষাতে আমি কী প্রত্যাশা করতে পারি আমি নিশ্চিত হতে পারছি না।
সামনের দরজাটা যে খুলল, আমি তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমার জন্য কী যে এক বিস্ময় – যে দরজা খুলেছে সে আমার পুরনো এক বন্ধু, তার স্বামীর সঙ্গে এ-বাড়িতেই থাকছে। আমি তাকে পেয়ে খুব খুশি। বলল, সে আমাকে প্রত্যাশা করছিল, তারপর ব্যাখ্যা করল যে, পাবলোকে ফ্রান্সে আসার অনুমতি দেওয়া হয়নি। প্যারিসে কর্মরত চিলির রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে চিলির প্রেসিডেন্ট গঞ্জালেস ভিদেলা নতুন করে পাবলোর জন্য বহিষ্কারাদেশ জারি করিয়েছে। সৌভাগ্যবশত পাবলোর কিছু বন্ধু ছিল যারা তাকে আগাম সতর্ক করেছে যে, তাকে ফ্রান্সে ঢুকতে দেওয়া হবে না।
আমি এতদিন ধরে প্যারিসে যে অভিসারের কল্পনা করে এসেছি একজন স্বৈরাচার তা নস্যাৎ করে দেবে? পাবলো যেখানে গিয়েছে, গঞ্জালেস ভিদেলা তার পেছনে লেগে থেকেছে।
আমাকে দেখে আমার বন্ধু উৎফুল্ল হয়ে ওঠে এবং আমাকে আমার সেই অ্যাপার্টমেন্ট দেখিয়ে দেয়, ওপরতলায় ঠিক তার মাথার ওপর। এটা একটা ছোট চিলেকোঠা, খুব পছন্দ হয়েছে আমার, সবচেয়ে বড় কারণ এখানে আমি আমার বন্ধুদের কাছাকাছি থাকব।
আমি ঘুমোতে চাইলাম, কিন্তু পারলাম না। আমি বড্ড বেশি উদ্বেলিত। আমি ঠিক করলাম, ভালো হবে যদি বাইরে বেরোই, প্যারিস শহরটা ঘুরে দেখি।
আমি একটা ম্যাপ কিনলাম আর কিনলাম মেট্রোর একটি পাস, যে শহর এমনিতেই আমার মন জয় করে আছে, আমি একা একাই সে শহরের সঙ্গে নিজেকে পরিচিত করাব। তখন গ্রীষ্মকাল, আমি প্রথম সিন নদীর দিকে এগোলাম। সবকিছুই আমাকে বিমুগ্ধ করছে, আমি হাঁটছি, এতটুকু ক্লান্তি নেই। শহর আমার জন্য একটার পর একটা বিস্ময় তুলে ধরছে।
কী চমৎকার জায়গা – কত কিছু এখনো আবিষ্কার করার বাকি। এখানে সত্যিকারভাবে থাকতে হলে, দেখতে হলে, ভালোবাসতে হলে গোটা শহর আমাকে চষে বেড়াতে হবে।
বিকেলে দেখলাম আমি ইলে সেইন্ট লুই জাহাজ জেটিতে।
এখান থেকে আমি সবচেয়ে বিস্ময়কর সূর্যাস্ত দেখলাম, আকাশে আলোর ছায়া গোলাপি থেকে নীল হতে হতে সূর্যাস্তের দৃশ্যটি যেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিরাজ করল। এমন একটি দৃশ্যের অস্তিত্ব থাকতে পারে আমি কখনো কল্পনা করিনি। চিলিতে সূর্যাস্ত খুব দ্রুত ঘটে, কয়েক মিনিটের মধ্যে রাত নেমে আসে। এমনকি মধ্যরাতে আমি যখন বাড়ি ফিরে যাচ্ছি কিছু ক্ষীণ আলোর রেখা তখনো আকাশে রয়ে গেছে। প্যারিসে আমার প্রথম দিনের পুরোটাই ব্যয় করেছি। শেষ পর্যন্ত আমি বিছানায় যাই এবং ঘুমিয়ে পড়ি। কী অদ্ভুত আমার সেই অনুভূতি।
পরদিন সকালে আমি একটি বিস্ময় উপহার পাই। পাবলো আমাকে একটি টেলিগ্রাম পাঠিয়েছে – আমাকে স্বাগত জানিয়েছে, বার্লিনে একটি উৎসবে যাওয়ার নিমন্ত্রণ জানিয়েছে, সেখানেই আমাদের রাঁদেভু – আমাদের প্রণয়ের লীলাভূমি। আমি শিগগির তাকে দেখতে পাব – এর চেয়ে বেশি খুশি আমার হওয়ার কথা নয়।
গত কবছর ধরে পাবলো এবং আমি বন্ধু। আমরা কিছু অদ্ভুত রহস্যময় অনুভূতি ভাগাভাগি করে নিয়েছি – এটা যে কেমন ব্যাখ্যা করা কঠিন। আমরা প্রেমিক-প্রেমিকার মতো সাক্ষাৎ করেছি, আমরা উন্মত্তের মতো একসঙ্গে হেসেছি – কিন্তু কী নিয়ে আমি কখনো মনে করতে পারিনি, সম্ভবত সবকিছু নিয়ে – এমনকি আমাদের নিজেদের নিয়ে। তারপর আমরা পরস্পরের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছি – কোনো রকম প্রতিজ্ঞা না করেই এ বিদায়। আমি তাকে বিদায় জানিয়ে আমার নিজের তৈরি করা পাখায় ভেসে আমি উড়ে যাই। আমার নিজেকে একজন বন্ধনহীন মানুষ ভাবতে ভালো লাগে – আমি নিজেকে স্বদেশ চিলি থেকে বঞ্চিত বলে মনে করছি না। চিলি আমাকে খুব সামান্য কিছুই দিয়েছে – এটাই সত্য আমি মেক্সিকোকে পছন্দ করেছি – মেক্সিকো আমাকে আমার নিজের দেশের চেয়েও বেশি মোহিত করেছে। পাবলোর সঙ্গে প্রতিটি অভিসারের পর আমি তাড়াতাড়ি করে মেক্সিকো ফিরে এসেছি।
পূর্ব জার্মানিতে প্রবেশের ভিসা পেতে আমার সমস্যা হচ্ছিল কিন্তু যখন পাবলোর টেলিগ্রামটা হাতে এলো আমি সহজে ভিসা পেয়ে গেলাম। ধন্যবাদ টেলিগ্রামটাকে।
আমি কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নই, আসলে আমি রাজনীতির কিছুই জানি না। রাজনীতির এই সংগ্রামে নিজেকে জড়িয়ে নেওয়ার সামান্য তাগাদাও আমি কখনো অনুভব করিনি। যখন রাজনীতির কথা এসেছে আমার মনে হয়েছে আমি ভিন্ন জগতের বাসিন্দা।
এখন অনেক বছর পর পেছন ফিরে আমি সেই সময়টার কথা মনে করি – যখন আমার বয়স কম ছিল, যখন মেক্সিকোতে বাস করতাম – কত না শূন্য ছিল আমার জীবন।
আমার ছোট অস্তিত্বটাই ছিল আমার একমাত্র বাতিক। আমি সংগ্রাম করেছি, যাতে আমার জীবনের একটি ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয় আর এটাই ছিল আমার অহংকারের প্রধান উৎস। আমি সুখী ছিলাম, নিজেকে পরিতৃপ্ত ঘোষণা করলাম।
ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আয়নায় আমি আমার প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়েছি। আমি কখনো বুঝিনি, কতটা ফাঁপা ও অর্থহীন আমার জীবন। আমার সুখটা ছিল মিথ্যা, যে মিথ্যাটা আমিই নিজের জন্য সৃষ্টি করেছি।
প্রফুল্ল অনুভব নিয়ে বার্লিনে পৌঁছি। যে বন্ধুরা এয়ারপোর্টে আমার সঙ্গে দেখা করে তারা বলল, তাড়াতাড়ি থিয়েটারে চলে যাও, পাবলো তোমার প্রতীক্ষায় আছে।
যখন তাকে পেলাম, উদ্ভাসিত হয়ে উঠল তার অবয়ব, আমরা আলিঙ্গন করলাম।
পাবলো বলল, ‘আগে কী হয়েছে ভুলে যাও। আর কখনো তোমার কাছ থেকে দূরে থাকতে চাই না।’ তার কথা আমার কাছে আপ্তবাক্য হয়ে উঠেছে। কেমন করে তার কথায় সাড়া দেব আমার জানা ছিল না।
জায়গাটাও অন্তরঙ্গতার জন্য খুব অনুকূল নয়। অনেক বড় থিয়েটার হল, তরুণ-তরুণীতে পূর্ণ। তারা হইচই করছে, গান গাইছে। আমার তখনো পাবলোকে দেখার ঘোর কাটেনি। আমি হতভম্ব হয়ে কেবল তার দিকে তাকিয়ে আছি।
যখন বললাম, ‘আচ্ছা, ঠিক আছে।’ আমি নিশ্চয়ই হেসে উঠেছি। আমি তাকে কী প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি তা জেনে, না ভেবে আমি বলে দিই, আচ্ছা।
সে মুহূর্তে আমার আনন্দ আমি তার পাশে আছি। পাবলো আমার দিকে তাকায়, হঠাৎ তার অভিব্যক্তি বদলে যায়। তাকে উদ্বিগ্ন দেখায়।
এতক্ষণ পর্যন্ত আমরা আমাদের দুজনের মধ্যকার উন্মত্ত প্রেম আড়াল করে রেখেছি। ঠিক একই সঙ্গে একই সময়ে আমরা এই বেদনাটি অনুভব করি। আমাদের সাদামাটা হাসিমুখর বন্ধুত্ব – যা আমরা দুষ্টুমি বলেই মনে করেছি। হঠাৎ করে তা আবেগের জটিল যুদ্ধে পর্যবসিত হলো। আমাদের দুজনের সম্পর্ক এখন আমাদের যাতনা দেবে। একদিকে আমাদের দেবে অপরিসীম আনন্দ, আবার যন্ত্রণা ও হতাশা নিয়ে আসবে।
অনেক বছর পর আমি যখন সেই আবেগ তুলে ধরতে চাইছি, পর্যাপ্ত শব্দের জন্য আমি সংগ্রাম করছি। এসব শব্দ সহজে আসে না, সম্ভবত এসব শব্দের আদৌ কোনো অস্তিত্বই নেই।
পাবলোর বন্ধু সুপরিচিত তুর্কি কবি নাজিম হিকমতের সঙ্গে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হলো। হইচই করা আনন্দমুখর, লম্বা, সোনালি চুল, খুব হ্যান্ডসাম, নাজিম উৎফুল্ল একজন মানুষ। তার চোখে ঝলক, মুখে যেন সারাক্ষণই হাসির প্রস্তুতি। দীর্ঘক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে তিনি ঘোষণা করলেন, ‘বাহ্বা, বাহ্বা। তুমি হচ্ছো অরোকানিয়ান চিলিয়ান বিউটি। আমি তোমাকে খুব পছন্দ করে ফেলেছি।’
তার বিশাল হাতে তিনি আমাকে এমনভাবে তুলে নিলেন যে, আমার মুখ ঠিক তার মুখের মুখোমুখি; তিনি আমাকে চুম্বন করলেন।
এ সবকিছু আমাকে হতবুদ্ধি করে ফেলল। এক ঘণ্টা আগে আমি উড়োজাহাজে ছিলাম, মেঘের ওপরে। আমি ছিলাম আমার অন্তরঙ্গ লীলাভূমি অভিমুখে, কিন্তু হঠাৎ অতিকায় এক থিয়েটারের মধ্যে আমি একসঙ্গে এতজনের দেখা পাচ্ছি।
পাবলো আমাকে ব্রাজিলের লেখক জার্জ আমাদু, আফ্রো-কিউবান কবি নিকোলাস গুইলেনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলো। গুইলেন পাবলোর খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সেসব বন্ধুর একজন যারা পাবলোকে সবসময় রক্ষা করে চলেছে। সেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের চিত্র888sport live chatী ও সংগীত888sport live chatীর জমায়েত।
আগে থেকে ঠিক করা ছিল পরদিন উৎসবে আমি গান গাইব এবং গিটার বাজাব। আমি কজন তরুণ চিলিয়ানকে বললাম, আমার সংগীতের শেষাংশে আমাদের জাতীয় লোকনৃত্য লা কুয়েকা পরিবেশন করতে হবে। সন্ধ্যায় আমি আমার হোটেলে ফিরে আসি, হোটেলের নামটা মনে নেই; কিন্তু ঘোরানো-পেঁচানো হলওয়ে অতিক্রম করে আমার রুম খুঁজে পেতে অনেক সমস্যা হয়েছে। পাবলো আমাকে আগেই বলেছে, সেই রুমে একটি উপহার আমার অপেক্ষায় থাকবে।
আমি দরজা খুলে দেখলাম ভিতরে নাজিম হিকমত পাবলোকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমার সঙ্গে এই কৌতুকটি করতে পারার আনন্দে দুজন ছোট্ট শিশুর মতো হাসতে থাকে। নাজিম পাবলোর হাত ধরে টেনে এনে আমাকে বলল, ‘মাদাম, এই আপনার উপহার’ – এই বলে নাজিম হিকমত চলে গেল।
পাবলো আমাকে বলল, কেমন করে নাজিম আর সে তাদের হোটেলে পাবলোর স্ত্রী ডেলিয়াকে বলেছে যে তাদের কমিউনিস্ট পার্টির জরুরি বৈঠকে অংশগ্রহণ করতে হবে এবং বৈঠক শেষ হতে হতে রাত পেরিয়ে যাবে। আর এখন সারা রাত আমাদের – পাবলো আর আমার। একসঙ্গে থাকার এমন একটি বিশেষ দিক আছে – আমরা গভীরভাবে অনুভব করলাম, আমাদের দুজনের একই অনুভূতি, আমাদের আনন্দের প্রতিধ্বনি যেন আমরা শুনতে পাচ্ছিলাম – যেন একই তালে বেজে ওঠা হাজার ঘণ্টার ধ্বনি শুনছি। কী যে অবর্ণনীয় আনন্দের অনুভব – আমি তার বুকে মাথা রাখি এবং আমার চোখ বন্ধ করে বলি, ‘তোমার মধ্যে কোমলতার সুঘ্রাণ।’
পাবলো আমাকে সতর্ক করে দেয়, ‘সাবধান, তোমার কথা 888sport app download apkর মতো শোনাচ্ছে, আমার ওপর 888sport live football চাপাতে যেও না!’
পরদিন আমার যে কতশত কাজ – চিলির দলটিকে নৃত্য পরিবেশন করতে হবে। ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে তরুণ নৃত্য888sport live chatীরা এলো। আমরা দেশ নিয়ে খুব গর্বিত – আমাদের পরিবেশনা শেষ হলে প্রবল করতালি পেলাম।
সম্প্রতি সেদিনের ছবিগুলো দেখতে গিয়ে একটাতে তিনজনকেই পেলাম – পাবলো, নাজিম ও গুইলেন। তারা আমাদের লা কুয়েকা পরিবেশনা দেখে হাততালি দিচ্ছে। নাজিম সত্যিই আমাদের জাতীয় নৃত্য খুব পছন্দ করেছে। পরিবেশনা শেষ হওয়ার পর আমাকে ও নৃত্য888sport live chatীদের অভিনন্দন জানিয়েছে। সে দলটিকেও বলেছে, ‘এ নাচটির বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। আমি যত আঞ্চলিক নাচ দেখেছি এটিই সর্বোৎকৃষ্ট।’ আমরা যারা চিলিয়ান, এটা আমাদের জন্য শ্লাঘার বিষয়।
পাবলো এবং আমি উৎসবের বাকি দিনগুলো পরস্পরকে চাওয়ার তাড়নায়, পরস্পরের জন্য প্রবল কামনায়, টেবিল অতিক্রম করে কক্ষ পেরিয়ে পরস্পরের দিকে গোপন চাহনি ফেলে কাটিয়ে দিলাম। আমরা ষড়যন্ত্র করেছি, একই সঙ্গে পাপী হওয়ার অনুভূতি উপভোগ করেছি। অন্যদের চোখ এড়িয়ে থাকার জন্য দুজনই অন্যদের সঙ্গে অবিরাম মিথ্যা কথা বলে চলেছি।
আমাদের এ অবৈধ সম্পর্কের দুষ্কর্মে দুজনের সহযোগিতা আমাদের ভালোবাসা আরো আবেগময় করে গড়ে তুলতে থাকে। আমরা শুধু একসঙ্গে থাকতে চেয়েছি, পরস্পরকে স্পর্শ করতে চেয়েছি। এ কামনা আমাদের গিলে খাচ্ছে। এ তাড়না আমাদের মধ্যে এমন একটি বিশ্বাস সৃষ্টি করল যে আমরা আর কখনো পরস্পরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বসবাস করতে পারব না। এই প্রথম আমি যন্ত্রণা অনুভব করতে শুরু করলাম। আমি জানি আমাদের সম্পর্কটি কেবল ‘মজা করো’ ধরনের প্রেম-সম্পর্ক নয়, আমি বুঝতে পারছি এ সম্পর্ক আমাকে কেবল বিশুদ্ধ আনন্দই দেবে না, তিক্ততাও দেবে। সেই যন্ত্রণার কথা ভেবে আমি আতঙ্কিত হই এবং সক্ষমতা থাকতে থাকতে আমি পালিয়ে যেতে চাই। হতবুদ্ধি করা এসব চিন্তা আমার মন এফোঁড়-ওফোঁড় করতে থাকে, আমি একসঙ্গে লক্ষ বিষয় ভাবতে শুরু করি। আমি ঠিক তখনই মেক্সিকোর উদ্দেশে বেরিয়ে পড়তে চাই। আমার জীবনের ও কাজের প্রতিরক্ষা ব্যূহের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকব। যে-ভালোবাসা আমাকে এত সুখ এনে দিয়েছে তা বিস্মৃত হতে আমি প্রলুব্ধ হব।
আমি কতটা বদলে যাচ্ছি বুঝতে পারিনি। এর মধ্যেই আমি আমার সরলসিধে মেক্সিকো-জীবন থেকে সরে এসেছি, আমি জানি আমি কখনো সেই শান্তিপূর্ণ শূন্যগর্ভ জীবনে আর ফিরে যাব না। বরং আমার জীবন হাঙ্গামা, আশা-আকাক্সক্ষা এবং সত্যিকারের ভালোবাসায় এতটাই ভরে গেছে যে, জীবনের শেষ পর্যন্ত আমাকে তা বহন করতে হবে।
আমি চেকোশ্লোভাকিয়ায় একটি রেডিওতে গান গাইবার নিমন্ত্রণ পেলাম। অবশ্যই পাবলো আমার সঙ্গে আসবে। আমি আর পাবলো একটি গাড়িতে চেপে বার্লিন থেকে প্রাগ এলাম। এখানে পাবলো ও তার স্ত্রী ডেলিয়া নির্বাসিত জীবনের জন্য একটি আবাসনের ব্যবস্থা করে রেখেছে।
জার্জ আমাদু ও তার স্ত্রী জেলিয়ার সঙ্গে ডোবরিচ ক্যাসলে ওরা দুজনও বসবাস করছে। কিন্তু আমি ও পাবলো প্রাগের একটি হোটেলে একত্রে থাকছি, রোমানিয়া যাত্রা করার আগে আমরা এ শহরে মাত্র দুই দিন থাকব; রোমানিয়ায় বন্ধুদের সঙ্গে থাকার আমন্ত্রণ আমরা পেয়েছি।
প্রাগের বন্ধুরা আমাদের জন্য চমৎকার একটি ফেয়ারওয়েল পার্টি দিলো। আমরা বুখারেস্ট এলাম। আমাদের জন্য একটি বড় ব্যক্তিমালিকানাধীন বাড়ি ঠিক করে রাখা হয়েছে। সন্ধ্যায় আমাদের সঙ্গে দেখা করতে বেশ কজন রোমানিয়ান বন্ধু এলো। তারিখটা ২৮ আগস্ট, ১৯৫১। একসময় পাবলো তার ডেস্কে চলে গেল, ফিরে এলো ছোট এক টুকরো কাগজ নিয়ে, চুপি চুপি তা আমার কাছে চালান করে দিলো। কাগজে কী লেখা পড়তে আমি ওখান থেকে সরে নিজের রুমে চলে এলাম। এটাই আমাকে নিয়ে লেখা পাবলোর প্রথম 888sport app download apk ‘অলওয়েজ’। তখন আমরা কেউই কী ঘটতে যাচ্ছে সে সম্পর্কে অবহিত ছিলাম না, কিন্তু সে-রাতেই দ্য ক্যাপ্টেনস ভার্সেস নামের বইটি জন্মগ্রহণ করল। আমরা একত্রে খুব সুখকর দিন কাটাতে চলেছি।
আমাদের বাড়িটার দেখাশোনা করত এক রোমানিয়ান 888sport promo code। আমাদের যখনই দেখত – হাসত এবং রোমানিয়ান ভাষায় কথা বলত। তার কথা আমরা কিছুই বুঝতাম না। এখানে আমাদের একত্রে ছুটি কাটাবার প্রথম দিনটিতে সকালের নাশতার সময় পাবলো তাকে ডিম ভেজে দিতে বলল। সে জানতে চাইল কটা ডিম। যাতে সহজে বোঝে সেজন্য পাবলো দুই আঙুল উঁচিয়ে দেখাল। হাসিমুখে সে রান্নাঘরে চলে গেল। যখন সে ট্রে ভর্তি ডিম ভাজা নিয়ে ফিরে এলো আমরা অবাক হয়ে গুনলাম – এগারোটা। এর পর থেকে যখনই তার ওপর আমাদের চোখ পড়েছে আমরা দুজন অট্টহাসি না দিয়ে থাকতে পারিনি।
ধীরে ধীরে ভীষণ একটি উদ্বেগ আমাকে পেয়ে বসে, আমি আর কোনো কিছু সম্পর্কেই নিশ্চিত হতে পারছি না। আমি সবসময় পাবলোর সঙ্গে আমার সম্পর্কটি ঘটনা থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখতে চেষ্টা করেছি, আমি জানি পাবলো বিবাহিত পুরুষ, এটা মেনে নিতে আমার সমস্যা হয়নি।
আমি কখনো ডেলিয়ার প্রতি ঈর্ষাপরায়ণ হইনি। বরং আমি তাকে দেখেছি পাবলোর প্রতি মাতৃমূর্তি হিসেবে কিংবা একজন বড় বোন, যে তার প্রতি স্নেহপরায়ণ। কিন্তু এখন যে পাবলো আর আমি একই ঘরে থাকার একটি পথ খুঁজছি; আমার জীবনটা যে একটা মিথ্যা কিছু হয়ে উঠছে। আমি এতদিন দাবি করে এসেছি কেবল ভীরুরা মিথ্যা বলে, কারণ তারা সত্যের মোকাবিলা করতে পারে না, আমি নিজেকে খুব হীন অনুভব করলাম। এ পরিস্থিতি আমার জন্য ক্ষতিকর – যেন আমার হতভম্ব অবস্থায় জনসমক্ষে প্রকাশ্য ঘোষণা দিতে হবে; আমার শরীরে রক্তস্ফোট দেখা দিলো, আমার ঘাড়জুড়ে বড় লালচে ফোস্কা।
যে বিকেলে আমি রক্তস্ফোটে আক্রান্ত, আমার জন্য উদ্বিগ্ন পাবলো আমার রুমে এলো। একটি কথাও না বলে আমার দিকে এগিয়ে এলো, নুইয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আমার মাথার ওপর একটি কাগজ ধরে রেখে ঘোষণা করছে : ‘আমার ভালোবাসা, দয়া করে এই নৈবেদ্য গ্রহণ করো।’ এই মধুর ও সূক্ষ্ম আনুষ্ঠানিকতা দেখে আমি হাসতে থাকি, পাবলো রুম থেকে বেরিয়ে যায়। কেবল প্রেমই এমন কিছুতে অনুপ্রাণিত করতে পারে। মাথার ওপরের কাগজটি ছিল পাবলোর লেখা, ‘অ্যাট ইয়োর ফিট’ 888sport app download apk। আর একপ্রস্ত কাগজের ওপর পরদিন সকালে লিখে দিলো আর একটি 888sport app download apk ‘দ্য কুইন’।
আমি এ 888sport app download apkগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে পড়ছি, প্রতিটি শব্দের স্বাদ নিচ্ছি। তার 888sport app download apkর মধ্য দিয়ে পাবলো প্রকাশ করল সবচেয়ে অন্তরঙ্গ, সবচেয়ে অগম্য মানবিক তন্তু – আমি আমার মধ্যে আবিষ্কার করেছি। আমি তখন সম্পূর্ণ সচেতন – কী সম্পদ আমি তার কাছ থেকে পেয়েছি; আমি জানি আমার বাকি জীবনের জন্য এ সম্পদ কেবল আমারই।
আমার শরীরের রক্তস্ফোট মিলিয়ে যাচ্ছে না, আমরা সাগরপারে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। আমি জানি সেখানে আমি ভালো বোধ করব, কারণ আমি সাঁতার কাটতে পারব, সূর্যস্নান করতে পারব। আমি তৃপ্ত বোধ করতে থাকি।
আমরা সকালে বেরিয়ে পড়ি, রোমানিয়ার সুন্দর গ্রামাঞ্চলে ঘুরে বেড়াই, অনেক কৃষকের সঙ্গে দেখা হয়, তবে পথে কোথাও বিরতি দিইনি।
আমরা কনস্ট্যানজা পৌঁছি, সরাসরি ছোট একটি চমৎকার হোটেলে গিয়ে উঠি। রুমগুলো ছোট্ট কেবিনের মতো, পেঁচানো হাঁটাপথে একটার সঙ্গে অন্যটার সংযোগ, পথে ফুলের সারি। আমার রক্তাক্ত ফুস্কুড়ি নিয়ে অস্বস্তিতে ছিলাম, আমি ডাক্তার ডাকতে বলি। ডাক্তার দেখলেন, বুখারেস্টে আমাকে যে ওষুধ দেওয়া হয়েছে তাতে কোনো কাজ হয়নি। তিনি বললেন, ‘নার্ভাস অবস্থা থেকে এমনটা হয়েছে, তোমাকে বিশ্রাম নিতে হবে, কেবল বিশ্রাম।’
শেষ পর্যন্ত আমি বুঝতে পারি আমার ভারসাম্য কতটা নষ্ট হয়েছে। সবকিছু বদলে গেছে; হালকা চালের আনন্দমুখর ভালোবাসা এখন ট্র্যাজেডির দিকে মোড় নিচ্ছে। আমরা একজন অন্যজনের দিকে তাকাই এবং হাত ধরতে এগিয়ে আসি। মনে হচ্ছে সবকিছুই যেন আমাদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। আমরা কখনো একা হতে পারছি না – যতবারই এই দুঃসাহসিক পদক্ষেপ নিতে যাই, আমাদের সঙ্গ দিতে কেউ না কেউ এসে যায়। সবাই আমাদের এত ভালোবাসে – কী ভয়ংকর!
একদিন বিকেলে সঙ্গোপনে একটি গাড়ি ডাকলাম, আমাদের কাছাকাছি কোনো পর্যটন কেন্দ্রে নিয়ে যাবে। ঠিক সময়মতো আমরা দ্রুত ভাড়া করা গাড়িতে উঠে পড়লাম এবং ড্রাইভারকে পথনির্দেশ দিলাম। আমাদের এই পলায়ন সফল হয়নি, কারণ গাড়িতে উঠে দেখি বসে আছেন আমাদের কবিবন্ধু বেনিউক (সে সময় বেনিউক লেখক সংঘের সভাপতি)। আমরা গ্রামীণ মোহনীয় দৃশ্য উপেক্ষা করে নিঃশব্দে গাড়িতে বসে রইলাম। তারপর আকস্মিক ও অবচেতন জোশে আমি ও পাবলো পরস্পরকে আলিঙ্গন করতে ও চুমো খেতে শুরু করলাম। তখন কবি বেনিউক, গাড়ির ড্রাইভার, গ্রামীণ দৃশ্যপট সবই যেন গায়েব হয়ে গেছে – কেবল আমরা দুজনই অস্তিত্বমান। আর তারপর আমি কাঁদতে শুরু করলাম। আমরা আমাদের আবেগ আর ধরে রাখতে পারছিলাম না। আমরা একটি আতঙ্কজনক ঢালু বাঁকের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু আমরা নিজেদের সংবরণ করতে পারিনি। সে সময় বেনিউক যে দৃষ্টিতে তাকিয়েছে সেই মুখম-লের ছবি আমি কখনো ভুলব না।
যখন আমরা ধাতস্থ হই কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসি, আমরা এতক্ষণ কী করেছি, বুঝতে পারি। আমরা বেনিউকের দিকে তাকাই। সে নিশ্চুপ ছিল, তারপর হঠাৎ উন্মত্তের মতো কথা বলতে শুরু করল।
আমার নার্ভাস অবস্থার কারণে এটা অনুধাবন করতে পারিনি যে, আমরা তার সঙ্গে ফ্রেঞ্চ ভাষায় কথা বলছি। আর সে যা বলছে সবই রোমানিয়ান ভাষায়। আমাদের সৌভাগ্য বেনিউক আমাদের কী বলেছে আমরা তার কিছুই বুঝিনি।
এভাবে চলতে পারে না। আমি প্যারিসে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। আমি পাবলোকে বললাম, ‘আমি তোমার সঙ্গে থাকতে পারব না, আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি, তবে আমার কী হয়েছে আমি জানি না। আমি কাল চলে যাচ্ছি।’ আমার মনে হলো সেও তা-ই অনুভব করছে। আমরা দীর্ঘক্ষণ পরস্পরের দিকে তাকিয়ে থাকি – যতক্ষণ না পাবলো মুখ খুলে বলে, ‘তুমি কি বুঝতে পারছ, এখানেই সব শেষ হয়ে যেতে পারে।’
রুদ্ধ কণ্ঠ ঠেলে আমি বলি, ‘হ্যাঁ, এটাই শেষ। আমি কাল চলে যাচ্ছি। আমি ঘুমের বড়ি খেয়ে ঘুম দেব, কাল বুখারেস্টের ট্রেন ধরব।’
আমি ঠিক করলাম উঠে পড়ব, পার্শ্ব-সড়ক ধরে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করব – রাস্তার দুই পাশে ফুলের সমারোহ। ফুলগুলো কত প্রাণবন্ত আর আমি কতটা বিষণœ।
তারপর আমি শহর ঘুরে বেড়ানো বাদ দিয়ে পুরো বিকেল ঘুমিয়ে কাটাবার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমি দুশ্চিন্তা বাদ দিতে চাইলাম – কিন্তু সেটা যে কত কষ্টকর হবে তাও মনে হয় ভুলে গেলাম।
শেষ পর্যন্ত আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। স্বপ্নে দেখলাম মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে আসা ঘন মূলের একটি অরণ্যের ভিতর দিয়ে আমি হাঁটছি; পায়ের তলায় পিছলে মাটি। হাজার হাজার ছোট বৃক্ষ, বহুবর্ণের ছোট্ট ফুলগুলো পুষ্ট পাতাসহ আমার সামনে উপস্থিত, আমি ফুল তোলার জন্য মাথা নুইয়ে আনি, কিন্তু ফুল যেন আমার কাছ থেকে সরে যাবে, আমাকে আরো দূরে পৌঁছতে হবে। হঠাৎ আমি অনুধাবন করি কালো কাদা আমাকে গিলে ফেলছে। ঠিক একই সময় আমি দেখছি দূরে পাবলো বন্ধু নিকোলাস গুইলেনকে নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। আমি তাদের ডাকলাম, কিন্তু তারা আমার ডাক শুনল না।
কাদা আমায় ঢেকে ফেলছে। আমি কেবল একটু নড়তে পারছি। কাদা থেকে বেরোতে চেষ্টা করে যাচ্ছি, কিন্তু পারছি না।
দরজায় একটি টোকা আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দিলো – পাবলো এসেছে। আমি রুষ্ট, বললাম, ‘তুমি আমাকে শান্তিতে ঘুমোতে দেবে না। আমি মাত্র একটি ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন দেখেছি।’
আমি আমার স্বপ্নের বর্ণনা দিলাম আর সে খুবই বিস্মিত হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। বলল, ‘তুমি যখন ঘুমোচ্ছিলে, নিকোলাসের সঙ্গে আমি সমুদ্রসৈকতে হাঁটতে বেরিয়েছিলাম, সেই সৈকত কালো কাদায় পূর্ণ।’
যখন আমি নিকোলাসকে বলছিলাম যে, ‘তুমি আমাকে ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছ। কাদায় আমার পা আটকে গিয়েছিল।’
যে কালো কাদা আমাকে গিলে ফেলতে চেয়েছে সেই হুমকির কথা মনে করে পাবলোকে বললাম, ‘এটা একটা সতর্কসংকেত, আমাদের আর কখনো দেখা হবে না। আমাদের সম্পর্কটা চিরদিনের মতো শেষ হয়ে গেছে।’ আমি খুবই বিপর্যস্ত অবস্থায় আছি, আমার ত্বক বিদ্রোহ করছে। প্রতি মুহূর্তে রক্ত ফুস্কুড়ি উঠছে এবং আমাকে আরো বেশি বিরক্ত করছে।
পাবলো ততক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়ে দীপ্ত হয়ে উঠেছে। সে ঠিক বুঝেছে আমাদের ভাবনা ছড়িয়ে গেছে, আমরা আর আমাদের নিয়তির প্রভু নই – এ-কথাটা সে-ই আমাকে বলেছে, কিন্তু তার কথা আমি শুনছি না – রাতের দুঃস্বপ্নের যাতনায় আমি দিশাহারা হয়ে আছি – আমাদের আসন্ন বিচ্ছেদের যন্ত্রণার কথা ভাবছি, আমার শরীরের রক্তস্ফোটের বিরক্তির কথা মনে হচ্ছে।
আমি বুঝতে পারছি আমাকে দৃঢ় একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমি কাতর হয়ে পাবলোকে বললাম, ‘আমাকে একা থাকতে দাও, আমি একা একা সৈকতে হাঁটব।’
আমার মনে আছে সেই বিকেলটা ছিল সুন্দর। আমি জুতা খুললাম, ঢেউ এসে আমার পায়ের পাতার সঙ্গে খেলতে লাগল। বিচলিত অবস্থার কারণে আমার মাথায় চিন্তার ছোটাছুটিতে আমি দ্রুত হাঁটি। শিগগির সূর্য অস্ত যেতে শুরু করে, সন্ধ্যার বেগুনি বর্ণের আভা আমার যন্ত্রণাকাতর আত্মাকে শান্ত করল। এই প্রেমকে আমার শেকলবন্দি করতে হবে, আমার যাই হোক, এর টুঁটি চেপে ধরতে হবে। আমি হাজারবার নিজেকে বললাম, আমাকে অদৃশ্য হয়ে পড়তে হবে।
আমি আবার আমার ভারসাম্য ফিরে পাব। আমি বিষণœতার বিশেষজ্ঞ হিসেবে জন্মগ্রহণ করিনি। আমি হাসতে, গান গাইতে পছন্দ করতাম। যারা বেশ ভালো করে দ্বন্দ্ব কাটিয়ে উঠতে জানে আমি তাদের একজন নই। আমি দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিলাম কটা দিন প্যারিসে কাটাব, তারপর রৌদ্রস্নাত মেক্সিকো চলে যাব। মেক্সিকো সিটির ক্যাম্পে রিফর্মাতে আমার ছোট্ট অ্যাপার্টমেন্ট যে আমার প্রতীক্ষায় আছে সে কথা ভাবলাম। আমার চাকরির কথা ভাবলাম, কাজটা আমি উপভোগ করতাম। সপ্তাহান্ত কাটাতাম কুয়ের্নাভাকা শহরে। সেখানে আসা-যাওয়াটাও আনন্দের।
আমি এ শহরের ছবির মতন বাজারটার কথা মনে করলাম – মানুষ যা চাইতে পারে সবই এখানে আছে। প্যারিস ও ইউরোপের বাজার বড্ড বেশি রকম সভ্যতাপ্রাপ্ত – যা আমার পছন্দের নয়। ইউরোপীয়রা বড্ড তাড়াহুড়ো করে, একজন সাধারণ মানুষের যে আনন্দ, তা উপভোগ করার ফুরসত তাদের নেই।
এ শহর আমি এখনো উপভোগ করি – আমি যেভাবে চিলিতে বেড়ে উঠেছি, যেখানে বাজারগুলো চাষিতে পূর্ণ, তারা তাদের ওয়াগন নিয়ে এসেছে, সঙ্গে আলু, পেঁয়াজ, লাকড়ি ও সবজির বস্তা।
মেক্সিকো চিলির মতো একই ধাঁচের নয়, তবে মেক্সিকানরা চিলির মানুষের মতো সবসময় বসে গল্পগুজব করার জন্য তৈরি থাকে। সময় কাটানোটা তারা খুব উপভোগ করে। দক্ষিণ চিলিতে আমার শৈশব আমার জীবনে অনপনেয় 888sport sign up bonus হয়ে আছে। গাছপালা এবং অযতœ-বর্ধিত বাগানে আমি বড় হয়েছি। গোলাপ ও ক্যামেলিয়া লেটুসের সঙ্গে মিশেছে, সেলারির গর্বিত ডাঁটা রসুনের নড়বড়ে পাতার পাশে চৌকস ভঙ্গিতে সৌম্য ও স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আমাদের পছন্দের অনেক পেঁয়াজ সিলাত্রো আর তেজপাতার মাঝখানের জায়গাটাতে জন্মেছে। আমার কাছে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ – আমি এ রকম অপ্রথাগত স্থানেই স্বস্তিবোধ করি। এ কারণেই মেক্সিকো আমি পছন্দ করেছি, মেক্সিকোর 888sport sign up bonus এ-কারণেই প্রবল। আমি রোমানিয়ার সৈকতে দাঁড়িয়ে ডাক দিয়েছি, ‘মেক্সিকো আমাকে বাঁচাও।’
আমি মেক্সিকোতেই আমার জীবন কল্পনা করেছি। এ কল্পনা আমাকে শান্ত করতে সাহায্য করেছে। সেখানে ফিরে যাওয়ার মনস্থির করে আমি হোটেল রুমে ফিরে আসি। রক্ত ফুস্কুড়িগুলো তেমন কিছু নয়, সেরে যাওয়ার মতোই, তবু আমার চোখে অশ্রু। আমি অবশ্যই পাবলোকে ছেড়ে চলে যাব।
পাবলোও সিদ্ধান্ত নিয়েছে চলে যাবে, পরদিনই যাবে বুখারেস্ট। সেখান থেকেই আমরা বিচ্ছিন্ন হব – যার যার পথে। সে যাবে চেকোসেøাভাকিয়া আর আমি যাব প্যারিস, সেখান থেকে মেক্সিকো।
কদিন আগে আমরা বুখারেস্টে যে বাড়িটাতে ছিলাম, আবার এসে সেখানেই উঠলাম। আমাদের রোমানিয়ান বন্ধুটি চমৎকার, আমরা খুব উপভোগ করেছি। সকালে মহিলাটি যখন নাশতা নিয়ে আসত, আমাদের অনেক গল্প শোনাত। তার দিকে তাকিয়ে থাকতে এবং তাকে শুনতে আমার ভালো লাগলেও একটি শব্দের মানেও আমি বুঝিনি। এটা অনেকটা গানের সুর শোনার মতো।
আমাদের বিচ্ছেদের দিন এসে গেল। যতই মুহূর্ত গড়াচ্ছে বিচ্ছেদের ধারণাটি ততই দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। আমরা কখন আবার পরস্পরকে দেখতে পাব? আমাদের শেষ দিনটিতে আমাদের অনেক কষ্ট হচ্ছিল। আমরা পরস্পরের চোখের দিকে তাকিয়ে কেবল যাতনা দেখেছি। পাবলো আমাকে একটি খাম দিয়ে প্রতিজ্ঞা করাল – ট্রেনে ওঠার আগে আমি এটা খুলব না।
সন্ধ্যায় বন্ধুরা আমাদের জন্য একটি বিদায়ি নৈশভোজের আয়োজন করল। খাবার সময় আমাদের চোখাচুখি হলো – আমি দীর্ঘক্ষণ সরাসরি পাবলোর চোখের দিকে তাকাতে পারিনি, আমার ভয় হচ্ছিল আমি কান্নায় ভেঙে পড়ব।
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি খাবার টেবিল থেকে উঠে পড়ি। পাবলো বলল, আমাকে হোটেল পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসবে। সরু রাস্তাটিতে না ঢোকা পর্যন্ত আমরা সম্পূর্ণ একা হতে পারিনি। আমরা মুখে যা বলতাম সে কথাগুলো বলার জন্য আমরা পরস্পরের হাত চেপে ধরলাম। আমরা নিঃশব্দে একত্রে দাঁড়িয়ে রইলাম, তারপর পরস্পরকে চুমো খেতে শুরু করলাম।
আমরা ভীষণ আবেগাক্রান্ত। পাবলো বলল, ‘বড্ড বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে, আমি আর সহ্য করতে পারছি না।’
যন্ত্রণায় চিৎকার করে কাঁদতে চাইলাম। কিন্তু আমার ফোঁপানোর শব্দ বেরিয়ে এলো, কিন্তু তা এত সশব্দ, গভীর ও অনিয়ন্ত্রিত ছিল যে পাবলোর পরের কথাগুলো চাপা পড়ে যায়।
আমি তার আলিঙ্গন থেকে নিজেকে বের করে নিই, তারপর দৌড়ে ছুটতে থাকি। আমি রাস্তার শেষ প্রান্তে না পৌঁছা পর্যন্ত দৌড় অব্যাহত রাখি। তারপর ফিরে তাকাই। দূরে পাবলো দাঁড়িয়ে, সেই একই জায়গায়, কালো বিন্দুর মতো পড়ে আছে, তার দেহ থেকে প্রাণ বেরিয়ে গেছে। আমি হোটেলে পৌঁছা পর্যন্ত দৌড়াতেই থাকি।
আমি বিধ্বস্ত হয়ে গেছি। নিয়ন্ত্রণযোগ্য নয় এমন কিছু একটা আমার ভিতর মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, যা আমাকে এক শ্বাসরুদ্ধকর হুমকি দিচ্ছে।
আমি হাতে ধরে আছি পাবলোর চিঠি। আমি ট্রেনে ওঠার আগে এ-চিঠি খুলব না – আমি ভাবতে থাকি পাবলো কী লিখেছে!
খামটি খোলার প্রলোভন এড়াতে আমি এটি আমার স্যুটকেসে লুকিয়ে রাখি। নিশ্চয়ই এটা শেষ বিদায়। আমি ভীষণ নিঃসঙ্গবোধ করলাম।
আমার কী করা উচিত? কোথায় আমি আমার শান্তির অনুভব খুঁজে পাব? এটা সত্য, আমি পাবলোকে ছেড়ে চলে যেতে চাচ্ছি। কিন্তু আমার ভিতরের গহিন গোপন কিছু একটা চিৎকার করছে – এটা সম্ভব নয়। তাহলে আমি কী করব? আমি কি আবার তাকে খুঁজব এবং বলব তাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারব না। এটা সম্ভব নয়, এটা তো পাগলামি।
আমি আমার পৃথিবীর সব দরজা বন্ধ করে নিজেকে কাঁদতে সুযোগ করে দিলাম। আমি কাঁদতে থাকলাম, সবকিছুর জন্য এ কান্না – আমার শূন্য জীবনের জন্য, আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা ত্যাগ করার জন্য, পাবলোর প্রতি আমার ভালোবাসার জন্য। আমার নিঃসঙ্গতার জন্য কাঁদলাম, অপরিপূর্ণ আকাক্সক্ষার জন্য, জীবন আমার কাছে যে ভালোবাসা এনে দিয়েছে তাতে নিবেদিত থাকতে আমার ব্যর্থতার জন্য। আমি কেঁদেই চলেছি।
আমি কাঁদলাম কারণ কঠিন পরিশ্রম ও আত্মোৎসর্গের একটি জীবনে আমার জন্ম। আমি কী চাই তাও জানি না, কাঁদি সেজন্য। আমি কাঁদি আমার হিসাবি মন আমার অন্তরের আকাক্সক্ষাকে ডুবিয়ে দিচ্ছে, আমি পাবলোর জন্য কাঁদি। সবকিছুর ওপরে আমার এ কান্না পাবলোর জন্যই। আমি তো জানি পাবলো আমাকে কতটা ভালোবাসে, সে মুহূর্তে আমি তো তাকে সুখী করতে জীবন দিতেও তৈরি ছিলাম।
তাহলে আমাদের বিচ্ছিন্ন হতে হবে কেন? আমি কি পাগল হয়ে গেছি?
একসময় আমি কান্না থামাতে সমর্থ হই এবং আমি ঘুমিয়ে পড়ি। যখন ভোরের প্রথম আলো দেখা দেয়, আমার জন্য তা নিয়ে আসে ভয়ংকর এক উপলব্ধি। আমার এখন আর করার কিছু নেই। পাবলো ভোরের ফ্লাইটে প্রাগের পথে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার বন্ধু ইয়েভেত্তি ইয়দ আমাকে স্টেশনে পৌঁছে দিতে আসবে।
ইয়েভেত্তি মেধাবী সাংবাদিক ও বন্ধু, হাতেগোনা কজনের একজন যে আমাদের ভালোবাসার সম্পর্কের ব্যাপারটি জানে। আমি যখন স্যুটকেস গোছাচ্ছিলাম আমাকে আনন্দ দেওয়ার জন্য সে হাজারটা মজার মজার কাহিনি শুনিয়ে যাচ্ছিল।
তার কথাগুলো শুনে আমি অনেক কৃতজ্ঞ, কিন্তু যে অসীম বেদনা আমাকে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ইয়েভেত্তি আমাকে সেখান থেকে টেনে তুলতে পারল না। আমি উদ্বিগ্ন যে, এখান থেকে চলে যাচ্ছি – আমি একা থাকতে চেয়েছি।
সবচেয়ে ভয়ংকর অনুভূতিটি হচ্ছে যে, আমি সবকিছু তালগোল পাকিয়ে ফেলেছি – এটাই আমার অন্তর্গত বিশ্বাস, আমার এ সিদ্ধান্তের জন্য বাকি জীবন আমাকে পস্তাতে হবে।
এই আমি, যে সারা জীবন বহু কিছুর জন্য লড়াই করেছি, আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয় সেই ভালোবাসার জন্য আমি লড়াই করছি না?
এখন আমি আর কী করতে পারি? এ এমন এক জ্বলন্ত প্রশ্ন, যা আমার এই বন্ধুর সামনে উত্থাপন করার নয়। এটা সে বুঝতে পারবে না। আমি নিজেও তো বুঝতে পারছি না। আমার ভাবনায় কঠিন গিঁট লেগে গেছে।
আমার মুখম-ল গড়িয়ে পড়া অশ্রু নিয়ে ট্রেনের কম্পার্টমেন্টে ঢুকলাম। আমি কান্না লুকোনো বা শুকোনোর চেষ্টা বন্ধ করে দিলাম। আমি পরাজিত বোধ করছি, এখন আমার কিছুতেই কিছু এসে যায় না। ইয়েভেত্তির আলতো করে হাত নেড়ে বিদায় জানানোর জবাব দিলাম। ট্রেন চলতে শুরু করেছে। আমি পাবলোর চিঠিটা খাম থেকে টেনে বের করলাম। এটি ছিল একটি 888sport app download apk, নাম ‘দ্য পটার’ –
তোমার হাঁটু তোমার স্তন
তোমার কোমর
আগুনপোড়া মাটির শূন্য গহ্বরের মধ্যে
আমি হাতড়ে বেড়াই, পাই না – তাদের
আকার
মিলিয়ে গেছে
একত্রে আমরা একক নদীর মতো সম্পূর্ণ
এককণা বালুর কণিকার মতো।
আমি তার কাছে ফিরে যেতে চাচ্ছি। আমি এখন উদ্বিগ্ন আমি তার পাশেই থাকতে চাই, দ্বিতীয় একটি কাগজে পাবলো আর একটি 888sport app download apk লিখেছে ‘দ্য ওয়েস্ট্রেল’।
ইউরোপে আসার আগে আমি পাবলোর সন্তান ঠিকভাবে ধারণ করতে পারিনি, নষ্ট হয়ে গেছে। তখন আমার তিন মাসের গর্ভাবস্থা। আমি নিজের যতœ নিইনি, সেজন্য পাবলো আমাকে অভিযুক্ত করেছে। আবারও সে আমাকে বকাঝকা করছে :
আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করছি,
আমার ছেলে কোথায়?
আমি কি আমাকে তোমার ভিতর চাইনি,
নিজেকে চিনে নিতে, নিজেকে কি বলিনি,
‘তোমার সংগ্রাম চালিয়ে যেতে, আর
তোমার গান’
আমাকে ডেকো মাটিতে নেমে আসতে
আমাকে আমার ছেলে ফিরিয়ে দাও!
আমি পাবলোর সন্তান ধারণ করতে পারিনি, এর চেয়ে বড় কিছু কখনো ঘটেনি। আমি যখন তার 888sport app download apkর এ পঙ্ক্তিগুলো পড়ি আমার মনে হয়েছে যেন কথাগুলো ভিন্ন এক 888sport promo codeকে উদ্দেশ করে বলা হয়েছে।
মেক্সিকোয় আমি যখন পাবলোর সন্তান ধারণের সিদ্ধান্ত নিই আমি কেবল নিজের কথাই ভেবেছি। আমি ভেবেছি আমি একজন স্বতন্ত্র ও স্বাধীন 888sport promo code হিসেবে দাঁড়াব। সেই সন্তানের মধ্য দিয়ে নিজের সত্তাকে অনুধাবন করব, তার পৃথিবীকে অস্বীকার করব। শিশুটির বাবার নাম কী কেউ কোনো দিন জানবে না। আমি তখন সানন্দে নিজেকে একজন মা হিসেবে ভেবেছি, সেই ভাবনা এখন অনেক দূরে। এখন যদি আমাকে পাবলোর সন্তান ধারণ করতে হয়, তবে সে সন্তান হবে আমাদের দুজনেরই। শিশুটির দরকার হবে তার উষ্ণতা এবং কোমল আদর। পাবলোর ভালোবাসা আমাকে কেমন করে বদলে দিলো। আমি সেই আগের মাতিলদে নই।
আমি ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকি, নিশ্চল, অবশ হয়ে আছি, আমার আশপাশে যা কিছু আছে সেসব থেকে অনেক দূরে। আমি জানালাপথে বাইরে তাকাই, হাতে ধরা থাকে পাবলোর চিঠি। আমি মরে যেতে চাই।
ট্রেনে আমি আমার কম্পার্টমেন্টের চারদিকে তাকাই। কৌতূহল নিয়ে সামনের 888sport promo code আমার দিকে তাকায়; আমি কেন কাঁদছি সম্ভবত তাই ভাবছে। তার সদয় চোখ ও ঠোঁটে ঈষৎ হাসি। মনে হয় সে নিজেকে বলছে, ‘ভালোবাসা কতটা করুণ।’
আমি ধরে নিই এই 888sport promo code ইতালিয়ান। আমি তার ওপর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিই, কারণ আমি একা থাকতে চাই, 888sport app download apkগুলো আবার পড়তে চাই, এগুলো তো আমাকে নিয়েই।
লাল কার্পেটে কালো চোখ পড়ে না
হাঁটার সময় তুমি যখন তা পা মাড়িয়ে যাও।
‘দ্য কুইন’ 888sport app download apkয় আমাকে নিয়ে পাবলো এ কথা বলেছে। কিন্তু আমি যে এক করুণ বেদনার্ত রানি, কাঁদতে কাঁদতে গুটিয়ে পড়া, মনে হয় আমিই পৃথিবীর সবচেয়ে বিপন্ন মানুষ।
আমার সহযাত্রী 888sport promo codeর কথা আমার কানে পৌঁছতে লাগল। আমি তার দিকে তাকাচ্ছি না, কিন্তু কথা শুনতে পাচ্ছি। তিনি তার মেয়ে সম্পর্কে বলতে শুরু করেছেন, কেমন করে মেয়েটি অনুপযুক্ত একটি লোকের প্রেমে পড়ল।
তিনি বললেন, মেয়েকে বোঝানোর চেষ্টা করা অর্থহীন, কিন্তু মেয়েটি সুন্দর ও বুদ্ধিমতী ছিল। মেয়ে মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা বন্ধ করে দিয়েছিল, তবে তার ছেলে হওয়ার পর আবার দেখা-সাক্ষাৎ শুরু হয়েছে। তিনি তার নাতির চোখ, চুল, মুখ এবং সুন্দর নাক নিয়ে কথা বললেন। তিনি নিশ্চিত তার এ নাতিটির মতো আর একটি শিশু পৃথিবীতে নেই। অবশ্যই সে মেধাবী হবে, কারণ যখন সে তাকায়, মনে হয় তার চোখ দিয়ে অনেক কিছু বলছে।
‘যখন শিশুটি হাসে শব্দ সিস্টিন চ্যাপেলের পরিদের মতো শোনায়, হুবহু দেবদূতের মতো, শুধু আমার নাতির ছোট দুটি ডানা নেই।’
তিনি সুন্দরী ইতালীয় 888sport promo code, দয়ালু চেহারা, মাতৃসুলভ। আমি নিজেকে আমার যন্ত্রণার পৃথিবীতে হাবুডুবু খাওয়া থেকে বিরত রাখতে পারছিলাম না। যা-ই ঘটুক তিনি একটার পর একটা বিষয় নিয়ে কথা বলেই যাচ্ছেন। মার্চেন্ট মেরিন হিসেবে তার স্বামীর কাজ বরাবরই সমুদ্রে। একাই তাকে ছেলেমেয়েদের বড় করতে হয়েছে। নাবিকের বউ হওয়াটা বড় কষ্টের। ‘সে যখন অবসরে গেল কী যে আনন্দ হলো, আর কখনো আমার পাশ থেকে চলে যাবে না। আমার নিঃসঙ্গ রাতগুলো অতীতের 888sport sign up bonus। সেগুলো ছিল সবচেয়ে নির্জন, তাই না?’
আমি কাঁপছিলাম। আমি এখনো জানি নিঃসঙ্গতার দিন ও রাতগুলো কেমন।
তিনি অবিচলিত। বলতে থাকলেন, যখন একত্রে কেমন সুখী ছিলেন দুজন। আবার দুজন যৌবনে ফিরে যান, একসঙ্গে হাসেন, গান গেয়ে যান। তার চোখের ঝলক এবং হাতের ইশারা তার মুখের কথার চেয়ে আরো বেশি প্রকাশ করে। তারপর একদিন যুদ্ধ শুরু হলো, তারপর টাকার অবমূল্যায়ন হলো, সবার সঞ্চয় হঠাৎ করে শূন্যে নেমে এলো। তখন তার স্বামী বুড়ো মানুষ। রুজি-রোজগারের জন্য তাকে আবার কাজে ফিরে যেতে হলো। আবার নিঃসঙ্গ হয়ে গেলেন। কিন্তু ম্যাডোনা এবার তার কথা ভুললেন না, তার ঘরে এনে দিলেন নাতি, সে-ই এখন ঘরের আলো।
‘আমি কখনো আশা ছেড়ে দিইনি, কারণ জীবন সবসময়ই ভালো কিছু নিয়ে আসে। তুমি চারদিকে তাকিয়ে দেখো – তুমি এখন যন্ত্রণার মধ্যে আছ, চোখ খুলে দেখো, ভালো কিছুই ঘটবে। ঈশ্বর কখনো আমাদের পুরোপুরি ভুলে যান না।’
এ কথা বলে তিনি মায়ের কোমলতা নিয়ে আমার দিকে তাকালেন – তার বড় সুন্দর চোখ দিয়ে। তিনি আমাকে প্রবোধ দিতে চেষ্টা করছিলেন। আমি আমার যন্ত্রণার কথা তাকে বলতে পারিনি।
আমার ভালোবাসার কথা, আমার ভালোবাসা পরিত্যাগ করে আমার কথা তাকে কেমন করে বলি? কেমন করে ব্যাখ্যা করি যে, আমিও অনেক ভালোবাসা পেয়েছি – তারপর আমি শূন্য জীবনে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেখানে অন্য কোনো প্রেম আমার প্রতীক্ষায় নেই। তারপর যা ঘটেছে তার ফলে আমার কাছে ছয়টি 888sport app download apk আছে, ছয়টি সম্পদ – কিন্তু তা আমি বহন করে চলেছি কেন? আমি উঠে দাঁড়াই এবং তাকে চুমো খেয়ে বলি, ‘ঈশ্বর আপনাকে এ কম্পার্টমেন্টে পাঠিয়েছেন – আমার জন্য যা করেছেন অনেক ধন্যবাদ।’
আমার কথায় তার ঔজ্জ্বল্য বেড়ে যেতে থাকে, তার সঙ্গে খাবার খেতে নিমন্ত্রণ জানান। সঙ্গে তিনি অনেক খাবার নিয়ে বসেছেন। তার খিদেটা এমন – একা খেতে পারেন না। আমার সঙ্গে খাবার ভাগাভাগি করতে পেরে তিনি আনন্দিত।
তিনি বললেন, স্বামী ও নাতি নিয়ে এত কথা বলতে পেরে অনেক খুশি, তার মনে হয়েছে তারা তো এখানেই আছে। তারপর তিনি ঝুড়ি খুললেন, একটা গোটা পরিবারকে খাওয়ানোর মতো প্রচুর খাবার। আমি গিলতে পারব না, আমার মুখ শুকিয়ে আছে। আমি তাকে বললাম, আমার পক্ষে এক কামড়ও খাওয়া সম্ভব নয়।
তিনি হেসে উঠলেন এবং বারোলো ওয়াইনের বোতল খুলে বললেন, ‘এটাতে তোমার খিদে ফিরে আসবে। তোমার অনেক ভালো লাগবে। এটা ভাবতে আমার ভালো লাগছে তুমি যখন নিজের দেশ চিলিতে ফিরে যাবে তোমার মনে পড়বে ট্রেনে ইতালির এক 888sport promo code তোমাকে তার সন্তানের মতো যতœ করেছে। আমি যদি তোমার বয়সী হতাম! তোমাকে দেওয়ার মতো জীবনের গুদামে যে কত কিছু আছে! দুঃখও আছে, কারণ জীবনটা এমনই; আমরা যত হালকা হতে পারি ততই মঙ্গল।’
সেই গ্লাসের উষ্ণ ওয়াইন ছিল টনিকের মতো। আমি যখন পান করছিলাম, আমার গলায় স্বস্তি এনে দেয়, আমি একটু শক্তি পাই, আমি ভালো বোধ করতে থাকি।
এই 888sport promo codeর এক ধরনের লোককথার জ্ঞান ছিল। তিনি আমাকে তার রুটি ও মদের ভাগ দিলেন। তার প্রত্যাশা ভাগ করে নিতে আমন্ত্রণ জানালেন। আমি যে তেমন কোনো কথা বলিনি এটা তিনি আমলেই নিলেন না – আমি যে তার কথা শুনেছি তিনি তাতেই সুখী। আমার অশ্রু শুকিয়ে এসেছে, আমি এখন রুটি খাচ্ছি, মদের গ্লাস মুখে তুলছি, নিয়তি তার গুদামে আমার জন্য কী রেখেছে, এ নিয়ে কথোপকথন চালাচ্ছি।
আমরা বন্ধু হিসেবে বিদায় নিই, পরস্পরকে ঠিকানা দিই; যা একসময় দুজনই হারিয়ে ফেলি। আমরা জানি জীবন আমাদের দুজনকে আবার কখনো দেখা করিয়ে দেবে, সে-সম্ভাবনা তেমন নেই।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.