চরণিক। শব্দটা আমাদের ইশ্কুলের ছেলেমেয়েদের কাছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম অতিপরিচিত ছিল, এত পরিচিত যে ওই শব্দটা যে অতটাও চেনা নয় বাইরের বড় পৃথিবীটার কাছে সেটা যাচাই করতে আমরা যাইনি কখনো। আমরা জানতাম, অবন ঠাকুরের নাতির লেখা চরণিক নামের এই মজাদার 888sport slot gameকাহিনি আমাদের পাঠ্য এবং তার মজায় মশগুল ছিলাম, কখনো এর চেয়ে সুখপাঠ্য কোনো পাঠ্যপুস্তক আর পড়িনি। তা সে ছোটবেলার সেই চরণিক বইটার কথা যখন বড় বয়সে লোকজনের কাছে বলেছি তাতে আশ্চর্য হয়েছি যে অনেকেই তা পড়েননি, যদিও লেখকের নাম তাঁরা জানেন এবং জোড়াসাঁকোর পাঁচ নম্বর বাড়ি নিয়ে বিখ্যাত 888sport sign up bonusকথা দক্ষিণের বারান্দা অনেকেরই পড়া। অথচ চরণিকের কথা তেমন কেউ জানেন না, বলেনও না, লাফা-যাত্রা তো ছেড়েই দিলাম, যদিও হলফ করে বলতে পারি মোহনলাল গঙ্গোপাধ্যায়ের এই 888sport slot gameকাহিনি বাংলা 888sport live footballের এমন এক গুপ্তধন যা আবিষ্কার যে-কোনো বয়সের পাঠকের কাছেই রোমাঞ্চকর।
পর্যটক হিসেবে বাঙালির নামডাক কম নয়, খ্যাতি ও অখ্যাতি তার দুই-ই আছে এ বিষয়ে। বাঙালিকে আর যাই হোক ঘরকুনো বলা যায় না, সে আরামপ্রিয় বটে কিন্তু আবার একই সঙ্গে পায়ের তলায় তার শর্ষেটাও রয়েছে। তাই আমাদের বিশ্বকবি একদিকে যেমন লেখেন মনে ছিল আশা, এতটুকু বাসা, তেমনি তাঁর আরব বেদুইন হওয়ার ইচ্ছেও খাঁটি তা আপনারা যাঁরা ওঁর পারস্য 888sport slot gameের আখ্যান পড়েছেন তাঁরা জানবেন। মোহনলাল অবন ঠাকুরের দৌহিত্র হলেও বেড়ানোর অভ্যাসে ছিলেন তাঁর বাবামশাইয়ের থেকেও কত্তাবাবা রবি ঠাকুরের মতো। অবন ঠাকুর পারতপক্ষে শহরের বাইরে যেতে চাইতেন না, আর রবীন্দ্রনাথ তো সেকালের প্রায় ভূপর্যটক, এমন কোনো মহাদেশ নেই যে যাননি, আর সে নিয়ে কিছু না কিছু লেখেননি। সেসব লেখা আজ বাংলা ভাষা ও 888sport live footballের সম্পদ। রবীন্দ্রনাথই শুধু নন কিন্তু, বাঙালির 888sport slot game ও তার 888sport slot game888sport live footballের ইতিহাস বড় কম নয়। আধুনিক যুগে সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, জলধর সেনরা যে-888sport slot gameকাহিনি লেখা শুরু করলেন তারপর থেকে তা সহস্রধারা হয়েছে। বাংলা 888sport slot game888sport live football নিয়ে এ 888sport live নয়, তবু দু-চার কথা না বললেই চলে না। 888sport slot gameকাহিনি 888sport live footballের একটা স্বতন্ত্র ধারা যার আধুনিক রূপ আমরা উনিশ শতক থেকে দেখতে পাই বাংলা ভাষায়। বাঙালির 888sport slot game-পিপাসা কম নয় এবং তার 888sport live footballে সেই ছাপও দেখতে পাই, মঙ্গলকাব্যে ধনপতির সিংহলযাত্রা থেকে শুরু করে চৈতন্যজীবনীতে তাঁর যাত্রাপথের সুদীর্ঘ বর্ণনার মধ্যে সে-বীজ রয়েছে এ-কথা বললে ভুল হয় না। কিন্তু তা নিছক ঘোরার আনন্দে ঘোরা নয় বা তার বৃত্তান্ত নয়। সে-বৃত্তান্তের শুরু উনিশ শতক থেকেই এবং 888sport slot gameকাহিনির রসিক পাঠক মাত্রই জানেন যে সে-888sport live footballের প্রাণ তার রসবৈচিত্র্যে। কত দুর্গম জায়গায় যাচ্ছেন বা কত জ্ঞানান্বেষণ করলেন সেটা 888sport slot gameকাহিনির প্রাণ নয়, বরং কতটা স্ফূর্তির সঙ্গে নতুন অভিজ্ঞতা হলো বা পুরনো অভিজ্ঞতাকেই নতুন চোখে দেখলেন, তা-ই রসিক পাঠকের খোঁজ। অর্থাৎ 888sport slot gameকাহিনি ভূগোলের বা নৃতত্ত্বের বই নয়, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের জার্নাল নয়, ওর আনন্দ লেখকের নিজের চোখে দেখার ও বর্ণনার। এই ব্যক্তিত্বের ছোঁয়াই 888sport slot gameকাহিনিকে রসগ্রাহী করে তোলে। সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখার কথা 888sport app download for android করুন; তাহলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে, আলী সাহেবের বৈদগ্ধ্য ও অভিজ্ঞতা হিমালয়-সমান, তা ছোঁয়ার ক্ষমতা আমাদের কজনের, কিন্তু তাঁর 888sport slot gameকাহিনি বাংলা কেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ লেখাগুলির একটা, সেটার কারণ তাঁর ব্যক্তিত্বের ছোঁয়া। সে যতটা জ্ঞানের ততটাই রসের জিনিস, যা দিয়ে তিনি আমাদের মজিয়ে রেখেছেন তাঁর সমস্ত 888sport slot gameকাহিনিতে। অজানাকে জানাটা হয় না তাতে এমন নয়, কিন্তু সে-জানা হয় সাবলীলভাবে, অসেচতনভাবে ঢুকে যায় ভেতরে।
মোহনলাল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা সম্পর্কেও একই কথা বলা যায়। ঠাকুরবাড়ির একটা নিজস্ব লিখনশৈলী দেখতে পাওয়া যায়, তার মজলিশি একটা ঢং থাকে যেন বসার ঘরে বসে কেউ আড্ডা দিতে দিতে গল্পটা বলছে। মোহনলালও সেই পথের পথিক, অবনীন্দ্র-রবীন্দ্রনাথের ভাষার ঝলমলে ভাবখানা বাদ দিলে সেই সহজ মজলিশি ভঙ্গিমায় বর্ণনা করেছেন তাঁর 888sport slot gameবৃত্তান্তগুলি। আশ্চর্য বিষয় হলো, তাঁর 888sport slot game কিন্তু আমাদের চেনা ছকের আরামের ঘোরাঘুরি নয়, বরং সম্পূর্ণ তার উলটো। গত শতকের ত্রিশের দশকের শেষে তিনি ইউরোপে ঘুরেছেন কাঁধে রুকস্যাক নিয়ে পায়ে হেঁটে পাহাড়-জঙ্গলে, যেটার কথা তিনি লিখেছেন চরণিকে, আর করেছেন হিচ-হাইকিং যার নাম তিনি বাংলায় দিয়েছিলেন ‘লাফা-যাত্রা’। এই দুই সেই সময় দাঁড়িয়ে এই উপমহাদেশের কোনো মানুষ করছেন – এ-কথা ভাবা যায় না। এই প্রচারসর্বস্ব যুগে এমনসব কাজ করলে দুর্ধর্ষ এক অ্যাডভেঞ্চার করেছি বলে চারগুণ বাড়িয়ে লিখে ও কাগজে-টিভিতে মুখ দেখিয়ে তারকা খ্যাতির চেষ্টা করত অন্য কেউ হলে, এদিকে মোহনলাল লিখেছেন কৌতুকের ছলে, যেন তিনি এ গোটা ব্যাপারটার নায়ক নন, বরং একজন বিস্মিত বালক যে এর মধ্যে জড়িয়ে পড়েছে – এমন একটা ঢঙে। অথচ তিনি যা করছেন তা করতে সাহস লাগে। প্রথমে আসি চরণিক প্রসঙ্গে।
আজকাল পাহাড় জঙ্গলে কাঁধে ঝোলা নিয়ে ব্যাকপ্যাকার দেখলে আমরা আশ্চর্য হই না, এমনকি বাণিজ্যিক সংস্থা পর্যন্ত হয়ে গেছে যারা ট্রেক করার বন্দোবস্ত করে দেয়। কিন্তু আজ থেকে প্রায় একশ বছর আগে ইয়োরোপে এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল এবং তার সেই প্রাথমিক যুগে একজন বাঙালি তরুণ শামিল হয়েছিলেন – এ শুনলে বিস্মিত হতে হয় বইকি। আর শুধু শামিলই হননি, তাঁর সেই অভিজ্ঞতা লিখে গেছেন বাংলা ভাষায় অননুকরণীয় ঢঙে। তাঁর লেখা থেকেই জানতে পারি প্রথম বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী ইয়োরোপে, বিশেষত জার্মানিতে যখন যুদ্ধ-পরবর্তী মন্দার সময়, ছেলেমেয়েদের হাতে টাকা-পয়সা নেই এবং একটা বিষাদগ্রস্ত অবস্থা, সে-অবস্থাতেই যৌবনের নতুন জয়যাত্রা শুরু হয়। ভান্ডারফোগেল ও ইউথ হোস্টেল আন্দোলন উনিশ শতকের শেষের দিকে শুরু হলেও এই সময় থেকে দানা বাঁধতে থাকে। আধুনিক পৃথিবীর যন্ত্র888sport live chatায়ন ও নাগরিক বদ্ধ জীবন থেকে বাইরে বেরিয়ে গ্রাম, মাঠ, ঘাট, পাহাড়, পর্বতকে আবিষ্কার করা ও তার মধ্যে ফিরে যাওয়ার আর্তি নিয়ে যুবক-যুবতীরা বেরিয়ে পড়ে – সঙ্গে একটা রুকস্যাক, আর একটা ম্যাপ। ইউথ হোস্টেলগুলি যেন ছিল তাদের একেকটা দুর্গ বা শিবির। সারাদিন হেঁটে কোথায় মাথা গুঁজবে তারা, হোটেল ইত্যাদির পয়সা তাদের নেই, আর এসব পাণ্ডববর্জিত জায়গায় কে-ই বা খুলবে হোটেল। ইউথ হোস্টেল অর্গানাইজেশন এলো এগিয়ে তাদের সমস্যা সমাধানে। নানা পোড়ো বাড়ি, ইশ্কুুল বাড়ি, ভাঙা আস্তাবল, গোয়ালঘর ইত্যাদি নিয়ে তারা খুলে ফেলল মাথা গোঁজার ঠাঁই। জার্মানিতে শুরু হলেও এই আন্দোলন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে গোটা ইউরোপে। দলে দলে ছেলেমেয়ে বেরিয়ে পড়ে রাস্তায়। মোহনলাল গঙ্গোপাধ্যায় লন্ডনে যান ত্রিশের দশকের শেষ দিকে, পড়াশোনা করতে, তিনি ছিলেন লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের ছাত্র। সে-সময় গ্রীষ্মের লম্বা ছুটিতে তিনি সাবেক চেকোসেøাভাকিয়ায় বেড়াতে যান এবং এক চেক বন্ধু মিরেক নামের, সঙ্গী হন তাঁর। মিরেকই তাঁকে এভাবে ঘোরার কথা বলেন এবং আস্তে আস্তে তিনি হয়ে ওঠেন একজন পাক্কা ট্রেকার বা তাঁর নিজের করা বাংলায় ‘চরণিক’।
সহজ নয় সেই ব্যাকপ্যাকারের জীবন, পায়ে হেঁটে চেকোসেøাভাকিয়ার গ্রামে, জঙ্গলে, পাহাড় চষে ফেলার কাজটা একদিনে সহজ হয়নি তাঁর কাছে। তাঁর লেখা পড়লে জানা যায়, আস্তে আস্তে কীভাবে তিনি একজন ওস্তাদ চরণিক হয়ে উঠছেন। এবং সেই বর্ণনার মধ্যে নিজের বাহাদুরির থেকেও ফুটে উঠেছে সেই জীবনের আনন্দের কথা। আর এসেছে এই যাত্রাপথে দেখা মানুষজন ও জায়গা। পূর্ব ইয়োরোপের সাধারণ গ্রামীণ মানুষ থেকে তাঁর মতো আরো সব চরণিকের সজীব বর্ণনা পড়লে মনে হয় আমরা পাঠকেরাও যেন তাঁর সঙ্গে হেঁটে চলেছি। এখানেই এই বইটার মজা।
চরণিক অভিজ্ঞতার পরের বছর তিনি বেড়াতে যান স্ক্যান্ডিনেভিয়া, সঙ্গী সেই মিরেক। যদিও এবার আর চরণিক শুধু নয় তার সঙ্গে যোগ হয় হিচহাইকিং। হিচহাইকিং ব্যাপারটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গ্রেট ডিপ্রেশনের সময় থেকে চালু হলেও স্ক্যান্ডিনেভিয়ায় সে-উপায়ে ঘুরে বেড়ানো সে-সময় যথেষ্টভাবেই প্রচলিত ছিল। এবং হিচহাইকিংয়ের উৎপত্তি কোথায় তা নিয়ে তর্ক থাকলেও শব্দটার উৎপত্তি স্ক্যান্ডিনেভিয়ায়। এবং এর যে বাংলা নাম লিখছেন ‘লাফা-যাত্রা’, সেটা শব্দটার আদি অর্থের কাছাকাছি। এর থেকে বোঝা যায়, মার্কিন হিচহাইকিং নয়, বরং স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অর্থেই বুঝেছিলেন মোহনলাল। পাঁচ ও ছয়ের দশকের মার্কিন হিপি ও বিট আন্দোলন থেকে হিচহাইকিং বিশ্বজুড়ে পরিচিত হয় অথচ মোহনলাল হিচহাইকিং করেন তার এক দশক আগে। যদি কেউ অবগত না থাকেন হিচহাইকিং সম্পর্কে তাঁদের জানাই, রাস্তায় হাত তুলে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে গাড়ি থামিয়ে তার থেকে ‘লিফট’ চেয়ে গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাওয়া হলো হিচহাইকিং বা লাফা-যাত্রা। এক গাড়িতেই যে পৌঁছান যাবে তা নয়, তাই এমন একটা গাড়ি করে কিছুদূর পৌঁছে আবার আরেকটা গাড়ি ধরার চেষ্টা এই হলো লাফ, যা দিয়ে দিয়ে শেষ পর্যন্ত গন্তব্যে পৌঁছান যায়।
এই বিচিত্র 888sport slot gameপদ্ধতি মোহনলাল ও তাঁর বন্ধু মিরেকের ভালো লেগে যায়, ডেনমার্ক ও সুইডেন ঘোরেন এইভাবে। তাঁদের সেই বিচিত্র ঘোরার গল্পই হলো লাফা-যাত্রা। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতেই হয় জ্যাক কের্যুরয়াকের পৃথিবীবিখ্যাত 888sport alternative link অন দ্য রোড-এর কথা। এই 888sport alternative linkটির অনেকটা জুড়েই রয়েছে হিচহাইকিং। সল প্যারাডাইস আর ডিন মরিয়ারটি, দুই বন্ধু গোটা আমেরিকা ঘুরছে এইভাবে আর তাদের এই জীবনের উদ্যাপন নিয়ে গল্প। বিট আন্দোলন ও পরবর্তী হিপি আন্দোলনের কেন্দ্রে রয়েছে এই বইখানি। কাল্পনিক দুই চরিত্রকে নিয়ে 888sport alternative linkটা হলেও এর পেছনে রয়েছে কের্যুরয়াক ও তাঁর বন্ধু নিল ক্যাসিডির যাযাবর জীবন যাপনের সত্য কাহিনি। কের্যুরয়াকদের এই যাপনের এক দশক আগে মোহনলাল গঙ্গোপাধ্যায় ও তাঁর বন্ধু মিরেক ইয়োরোপে প্রায় একই কাজ করেছেন, এবং পরবর্তীকালে মোহনলাল লিখেছেনও সেই অভিজ্ঞতা – এটা ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। একশ বছর আগে একজন বাঙালি হিচহাইকার ও ব্যাকপ্যাকার ইয়োরোপ চষে ফেলছেন এই কথাটা আমাদের নিজেদেরই অজানা রয়ে গেছে। অথচ এমন একই সঙ্গে উত্তেজক ও সরস 888sport slot gameবৃত্তান্ত বাংলায় বিরল, এবং মোহনলাল ও মিরেক এই দুই বন্ধুর 888sport slot gameকাহিনি কের্যুরয়াক ও ক্যাসিডির থেকে কোনো অংশে কম নয়।
যে-সময় মোহনলাল ইয়োরোপ 888sport slot game করছেন, সে কিন্তু বড় সুখের সময় নয়, উনিশশো সাঁইত্রিশ আটত্রিশ মানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কয়েক বছর আগে, অথচ আশ্চর্যভাবে দেখি আমরা তখনো ইয়োরোপের মানুষ বিশেষ করে যুবসমাজ প্রাণবন্ত। কাঁধে ব্যাগ নিয়ে যারা ঘুরে বেড়াচ্ছে কিছুদিনের মধ্যেই তারা জড়িয়ে পড়বে প্রাণঘাতী এক মারাত্মক যুদ্ধে, যা গোটা বিশ্ব আর কখনো দেখেনি। চরণিকে যে ভান্ডারফোগেল আন্দোলনের কথা বলা হয়েছে, যে জার্মান যুবসমাজ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর তাদের দেশজ জীবন ও সংস্কৃতির খোঁজে বেরোচ্ছে, তাদের একটা বড় অংশ হিটলার’স ইউথ হয়ে নাৎসি বাহিনীর অংশ হবে, ইতিহাসের এই কৌতুককে মোহনলাল এড়িয়ে গেছেন। নাকি মোহনলালই সত্যি, এই পৃথিবীর রণ রক্ত সফলতা সত্য; তবু শেষ সত্য নয়, জীবনানন্দের মতো তিনিও বুঝেছিলেন। তাই ইতিহাসের গ্র্যান্ড ন্যারেটিভ বা বড় চালের বাইরে তিনি লিখেছিলেন একেবারে সাধারণ ইয়োরোপীয়দের কথা, অত ভয়ংকর যুদ্ধের পরও আবার কী করে তারা উঠে দাঁড়াল মোহনলালের এই লেখা থেকে বোঝা যায়। একটা প্রাণশক্তি টের পাওয়া যায়, যা হয়তো ইয়োরোপকে আবার নতুন করে তৈরি করতে সাহায্য করেছে, বিশ্বযুদ্ধ যাকে শেষ করে দিতে পারেনি। মোহনলালের 888sport slot gameকাহিনির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এই এক অচেনা ইয়োরোপকে আমাদের সামনে হাজির করা। আমরা ইয়োরোপ 888sport slot gameের বৃত্তান্ত বলতেই বুঝি বড় বড় নামজাদা শহর আর তার জীবনের বর্ণনা, অথবা নানা ঐতিহাসিক নিদর্শন দেখে এসে সেগুলির ঠিকুজি কুষ্ঠি, প্রকৃতি বলতে বড়জোর আল্পস আর সুইৎজারল্যান্ড – কিন্তু কার্পেথিয়ান পাহাড়ের কোন জঙ্গলের আড়ালে লুকিয়ে কোন গ্রাম, কেমন সেখানকার মানুষজনের জীবিকা, খাবারদাবার, হাতের কাজ, কী আনন্দে তারা সে সব নিয়ে থাকে – এর খোঁজখবর আমরা বাংলা 888sport live footballে খুব একটা পাইনি। বসুধৈবকুটুম্বকম কথাটা যে মিথ্যে নয় তার খানিক আঁচও পাওয়া যায়, এই যে কোন সুদূর ভারতবর্ষের এক মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছেন অচেনা দেশে, তাঁর আচার-আচরণ-ভাষা কিছুই জানা নেই, তবু তাঁকে আপন করে নিয়েছেন সেই মানুষগুলি। তাঁদের সামর্থ্য অনুযায়ী আপ্যায়ন করেছেন, করেছেন সাহায্য – আমরা যে নিষ্ঠুরতম ইয়োরোপের সময়ের কথা পড়ি, ঠিক সেই সময়ে মোহনলালের এই 888sport slot gameকাহিনি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, না মানুষ আদপে খারাপ নয়, সমষ্টিগতভাবে সে নানা উত্তেজনায় হিংস্র হয়ে উঠতে পারে, কখনো জাতি কখনো ধর্ম ইত্যাদির নামে; কিন্তু ব্যক্তি মানুষ মানুষের সাহচর্য ভালোবাসে, তাকে আপন করতে চায়। না হলে সত্যিই কী মোহনলাল পারতেন ওই সময় ওইভাবে ইয়োরোপ জুড়ে ঘুরে বেড়াতে? স্ক্যান্ডিনেভিয়া হোক কী চেকোসেøাভাকিয়া সর্বত্রই আমরা পাই একেবারে সাধারণ মানুষদের সঙ্গে তাঁর মোলাকাতের গল্প, এবং তাদের জীবনের টুকরো কথাগুলি মিলে একটা অচেনা ইয়োরোপকে আমরা দেখতে পেতে শুরু করি।
মোহনলাল পরবর্তীকালে বিয়ে করেন এক চেক মহিলাকে, যিনি মিলাডা গঙ্গোপাধ্যায় নামে পরিচিত। বিশ্বযুদ্ধের পরপরই তাঁরা আবার চেকোসেøাভাকিয়ায় গেলেও 888sport slot game বলতে যা বোঝায় সেটা হয়নি, সে-সুযোগ আবার ঘটে ষাটের দশকে এসে যখন তিনি সস্ত্রীক এবং সপুত্রকন্যা চেকোসেøাভাকিয়ায় ঘোরার সুযোগ পান। তিনি নিজেই লিখেছেন যে, বিশ্বযুদ্ধ শেষে ঠান্ডা যুদ্ধের কারণে যাওয়ার সুযোগ পাওয়া সহজ ছিল না। সেই পুনর্বার দেখার অভিজ্ঞতার কাহিনির নাম দিলেন পুনর্দর্শনায় চ, যা ছাপা হয় ষাটের দশকের মাঝামাঝি। এই 888sport slot gameবৃত্তান্ত যেন তাঁর আগের লেখার পরিপূরক, এই লেখাটা পড়লে বোঝা যায় তার ধারণাগুলো। মার্কিন-সোভিয়েত টানাপড়েনের মধ্যেও গঠনাত্মক যে ইয়োরোপ, বিশেষ করে সোভিয়েত ব্লকের ভেতরে যে অংশ পড়েছে, তার জীবনযাপনের গল্প আমরা জানতে পারি। কমিউনিস্ট চেকোসেøাভাকিয়ার চেহারা, যৌথ খামার ও যৌথ জীবনে মানুষের অংশগ্রহণ সম্পর্কে সরেজমিনে এত তথ্য বোধহয় আর কোনো বাংলা বইয়ে নেই। এই লেখায় 888sport slot gameের সঙ্গে সঙ্গে এসেছে রাজনীতির কথাও। নন-অ্যালাইনমেন্ট-মুভমেন্ট ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বশান্তির জন্য তৃতীয় যে একটা ব্লক তৈরি করার প্রচেষ্টা এসবের অভিঘাত সেদেশেও পড়েছিল বোঝা যায়। বোঝা যায় কমিউনিস্ট অর্থনীতিতে যুদ্ধের পর ধ্বংসপ্রাপ্ত পূর্ব ইয়োরোপের অভাব দূর হয়নি, কিন্তু একটা স্বতঃস্ফূর্ত চেষ্টা ছিল আম-জনতার মধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর। এবং সোভিয়েত পরবর্তীকালে তাদের কাছে যেমন সাম্রাজ্যবাদী শাসক হয়ে উঠেছিল, তখনো তেমন ঘটেনি। অন্তত মোহনলালের চোখ দিয়ে দেখি সাম্যবাদী একটা সমাজ গঠনের চেষ্টা চলছে এবং তাতে সাধারণ মানুষ যোগ দিয়েছে স্বতঃস্ফূর্তভাবেই, তার বর্ণনা মেলে মোহনলালের সরস কলমে।
মোহনলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে তাই দেশ-কাল সম্পর্কে অসচেতন বলা যাবে না। বরং চরণিকের শুরুতে আমরা দেখি হাঁটার সম্পর্কে তিনি যা লিখছেন তা ইয়োরোপের 888sport slot game সম্পর্কে যে দার্শনিক ধারণা তাকেই প্রতিধ্বনি করে। কী করে মধ্যযুগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতেন পড়াশোনা করতে পায়ে হেঁটে, ও তাঁদের এই 888sport slot gameে অভিজ্ঞতার মাধ্যমে জ্ঞান সঞ্চয় হতো, এ যেন রেনেসাঁস আমলের ইংরেজ দার্শনিক ও 888sport liveকার ফ্রান্সিস বেকনের কথা। বেকনও এমন কথাই বলেছিলেন 888sport slot game সম্পর্কে তাঁর ‘অফ ট্রাভেল’ 888sport liveে।
এই পায়ে হেঁটে ঘোরা বা চরণিক বৃত্তান্ত একে আন্দোলন বলার মধ্যেও ইয়োরোপের মানসকে বোঝার একটা ব্যাপার রয়েছে। পাশ্চাত্যে রোমান্টিকতা ও বস্তুতান্ত্রিক উপযোগিতার যাপনের মধ্যে টানাপড়েন শাশ্বত। এই দুয়ের দ্বান্দ্বিক সম্পর্কেই তার সভ্যতার বিকাশ। আমরা যতবার দেখি সেখানে উপযোগিতাবাদের রবরবা ততবার আবার দেখা যায় একটা মরমিয়া যৌবনের ডাক – অষ্টাদশ শতকের রোমান্টিক কবি ওয়ার্ডসওয়ার্থকে দেখি এই পা-চালানোর গান গাইতে তখন, উনিশ শতকে শুরু হয় এই ভান্ডারফোগেল আন্দোলন, বিশ শতকে আমেরিকায় দেখি বিট কবি গিনসবার্গ, কের্যুরয়াকদের যাযাবর জীবনে মেতে উঠতে। এই বিষয়টা মোহনলাল বুঝে ফেলেছিলেন, তাই তাঁর লেখা পড়লেই আমাদের এই পাশ্চাত্য রোমান্টিকতার ইতিহাস আপসে-আপ মাথায় চলে আসে। আমেরিকার বিট ও হিপি আন্দোলন যে বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়, এ এক প্রবহমান ঐতিহ্যের অংশ সেটার ধারণা চরণিক বা লাফা-যাত্রা থেকে আমরা হাতে-কলমে পাই।
মোহনলাল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখার বিষয় ছাড়াও তাঁর লেখার শৈলীও আমাদের মুগ্ধ করে। ত্রিশের দশকের শেষে চল্লিশের দশকের শুরুতে অমন ঝরঝরে আধুনিক বাংলা লেখা বড় সহজ কাজ নয়। মোহনলাল লিখেছেন চলিত বাংলায়, একেবারে মুখের ভাষায় – এমনকি তাঁর বাংলায় কলকাতার ডায়ালেক্ট পর্যন্ত রয়ে গেছে, খেলুম-গেলুম ইত্যাদি। এ-ভাষায় লিখতেন অবন ঠাকুর, এ-ভাষায় চিঠি লিখতেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁদের সেই মৌখিক, মজলিশি ভাষার অনুরণন পাই মোহনলালের লেখার ছত্রে ছত্রে বুঝতে পারি এ খাস ঠাকুরবাড়ির ভাষা। লেখকের রসিক মন তাঁর দাদামশায় অবনীন্দ্রনাথের মতোই যে, সে-পরিচয়ও মেলে। এই যে লাফা-যাত্রা বা চরণিকের মতো বাংলা শব্দ তৈরির প্রয়াস, এ তো অবন ঠাকুরের মতোই। শুধু এই দুই শব্দই নয়, আরো অসংখ্য শব্দ তিনি তৈরি করেছেন, যেমন রুকস্যাককে পিঠের থলি বা চা বানানোর জন্য চা-কুম্ভ এমনসব মজাদার বাংলা শব্দ তৈরি করেছেন। ফলে লেখাটা হয়েছে যেমন ঝরঝরে, তেমনি লেখার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে আমাদের কতই আপনার, মনেই হয় না এ অন্য মহাদেশ, অন্য সংস্কৃতি। সুবচনীর খোঁড়া হাঁসের পিঠে চড়ে বসার মতোই, আমাদের মতো সাধারণ পাঠক এই বইগুলির পিঠে চড়ে বসে স্বচ্ছন্দে পাড়ি দিতে পারে লেখকের সঙ্গে। যাঁরা মোহনলালের দক্ষিণের বারান্দা পড়েছেন তাঁরা জানেন তাঁর লেখার এই বিশেষ গুণটির কথা। 888sport slot gameবৃত্তান্তগুলির মধ্যেও তা রয়েছে আরো চমৎকারভাবে।
বাংলা 888sport live footballের ধারায় 888sport slot gameকাহিনির খুব কদর নেই, সিরিয়াস 888sport live football হিসেবে ধরা হয় না বলে ক্রিটিক্যাল আলোচনা থেকে দূরে রাখা হয়। অথচ অন্নদাশংকর রায়, সৈয়দ মুজতবা আলীকে বাদ দিয়ে যেমন বাংলা গদ্য 888sport live football হয় না, মোহনলাল গঙ্গোপাধ্যায়ের 888sport slot gameকাহিনিও তেমনই জরুরি ও উৎকৃষ্ট 888sport live football। রসিক পাঠক একে আপন করে নিলে তার নান্দনিক উপলব্ধির রসদ বাড়বে বলেই মনে হয়। তাই কিছুটা আড়ালে চলে যাওয়া এই লেখাগুলি বাঙালির পুনঃপাঠের প্রয়োজন
আছে। ছবি : ইন্টারনেট


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.