888sport app download apk latest version : আলম খোরশেদ
ইবসেনের পর নরওয়ের সম্ভবত সবচেয়ে পরিচিত, আলোচিত ও শক্তিশালী 888sport live footballিক কার্ল ওভে কনাউসগর (Karl Ove Knausgard)-এর জন্ম ১৯৬৮ সালে রাজধানী অস্লো শহরে। 888sport live footballের ছাত্র কনাউসগর বরাবর লেখকই হতে চেয়েছিলেন, তাই কর্মজীবনের শুরুতে বিবিধ খুচরো কাজ করলেও দ্রুতই লেখালেখিকে পূর্ণকালীন পেশা হিসেবে বেছে নেন। তিনি একপর্যায়ে স্বদেশ ত্যাগ করে সুইডেনের অভিবাসন গ্রহণ করেন এবং সেখানেই ১৯৯৮ সালে তাঁর প্রথম 888sport alternative link Out of the World প্রকাশিত হয়, যা প্রকাশের পরপরই পাঠক-সমালোচক মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলে এবং নরওয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ 888sport live football888sport app download bdও অর্জন করে। এর ছয় বছর বাদে প্রকাশিত হয় তাঁর দ্বিতীয় 888sport alternative link A Time for Everything, যার শিরোনামটিই বলে দেয় বইটির উপজীব্য কিংবা অনুপ্রেরণা আসলে বাইবেলের গল্প।
তবে যে-888sport alternative linkটি কনাউসগরের খ্যাতিকে বিশ^ব্যাপী ছড়িয়ে দেয়, সেটি ছয় খণ্ডে সমাপ্ত একটি আত্মজৈবনিক 888sport alternative linkমালা, যার নাম My Struggle। ২০০৯ থেকে ২০১১ সাল অবধি রচিত ও প্রকাশিত এই 888sport alternative linkটি খোদ নরওয়েতেই প্রায় পাঁচ লক্ষ কপি বিক্রি হয় এবং বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়। একজন লেখকের প্রাত্যহিক ও পারিবারিক জীবনের বিবিধ খুঁটিনাটির খোলামেলা ও বিশদ বর্ণনার জন্য বিখ্যাত, কখনোবা নিন্দিত, প্রায় সাড়ে তিন হাজার পৃষ্ঠার এই বিশালাকার গ্রন্থটি সম্পর্কে New Yorker পত্রিকার 888sport live footballসমালোচক James Wood মন্তব্য করেছিলেন, ‘There is something ceaselessly compelling about Knausgard’s book : even when I was bored, I was interested.’, যা বইটির প্রকৃত বৈশিষ্ট্য ও চরিত্রকে সঠিকভাবে উন্মোচিত করে।
আলোচ্য 888sport alternative linkমালারই দ্বিতীয় খণ্ড A Man in Love-এর একটি আকর্ষণীয়, দার্শনিকতায় উদ্ভাসিত, নিগূঢ় মনস্তাত্ত্বিক আখ্যান নিয়ে বিলেতি প্রকাশনা সংস্থা Vintage প্রকাশ করে একটিক্ষুদে পুস্তিকা, যার শিরোনাম তারা দেয় Fatherhood। ২০১৭ সালে প্রকাশিত এই সংস্করণটির 888sport app download apk latest versionক Don Bartlett। বস্তুত মাত্র শ’খানেক পৃষ্ঠার এই 888sport alternative linkিকাটিতে গ্রন্থকার কার্ল ওভে কনাউসগর তাঁর নিজস্ব পারিবারিক জীবনের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে প্রেম, পরিণয় ও পিতৃত্বকে যে অকপট সারল্য ও সততার সঙ্গে ব্যাখ্যা, বর্ণনা ও বিশ্লেষণ করেন এবং একইসঙ্গে 888sport alternative linkের 888sport live chatকে এক নতুন ও মহত্তর উচ্চতায় স্থাপন করেন, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। আর এ-কারণেই তাঁর এ-888sport alternative linkটি একইসঙ্গে এতটা পাঠকনন্দিত এবং সমালোচকবন্দিত হতে পেরেছে। Wall Street Journal-এর মতো একটি বিশ্বখ্যাত পত্রিকা এই গ্রন্থটিকে আখ্যায়িত করেছে, ‘One of the 21st century’s greatest literary sensations’ বলে। ‘পিতৃত্ব’ সেই পুস্তিকাটিরই বঙ্গানুবাদ।
প্রথম কিস্তি
২৯শে জুলাই ২০০৮
এবারের গ্রীষ্মটা বেশ লম্বা ছিল এবং এখনো শেষ হয়নি তা। 888sport alternative linkের প্রথম অংশটা আমি জুনের ২৬ তারিখ শেষ করি, এবং সেই থেকে, এক মাসেরও বেশি, বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ, ফলে ভানইয়া ও হ্যাইদি আমাদের সঙ্গে বাড়িতেই রয়েছে, বাড়তি কাজের বোঝাসমেত। আমি কোনোদিনই ছুটির অর্থ বুঝিনি, কোনোদিন তার প্রয়োজনও বোধ করিনি এবং সবসময়ই বেশি বেশি কাজ করতে চেয়েছি। কিন্তু ছুটি যদি নিতেই হয়, তাহলে নেব নিশ্চয়ই। আমরা ঠিক করেছিলাম প্রথম সপ্তাহটা লিন্দার কিনে দেওয়া কেবিনটাতেই কাটাব, যেটা সে মূলত আমার লেখালেখি এবং সপ্তাহান্ত কাটানোর জায়গা হিসেবেই কিনেছিল, কিন্তু সেখানে তিনদিন থাকার পরেই আমরা হাল ছেড়ে দিই এবং শহরে ফিরে আসি। চারদিকে মানুষবেষ্টিত ছোট্ট একটা ঘরে তিনটে বাচ্চা ও দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের, বাগানের আগাছা তোলা আর ঘাস কাটা ছাড়া যাদের আর করার কিছু ছিল না, একত্রবাসের চিন্তাটা মোটেও সুবিবেচনাপ্রসূত ছিল না, বিশেষত যখন সেখানে বেড়াতে আসার আগে থেকেই তাদের মধ্যকার সম্পর্কটা তেমন সম্প্রীতিপূর্ণ নয়। সেখানে আমাদের একাধিক উত্তপ্ত কলহের ঘটনা ঘটেছিল, ধরেই নেওয়া যায় প্রতিবেশীদের বিনোদনের খোরাকস্বরূপ; তদুপরি চারদিকের শতশত নিখুঁতভাবে সাজানো বাগান আর তার মাঝখানে অর্ধনগ্ন বৃদ্ধদের উপস্থিতিতে আমার নিশ্বাস আটকে আসছিল, আমি ক্ষিপ্ত বোধ করতে থাকি। বাচ্চারা বড়দের এইসব মানসিক অবস্থা দ্রুত টের পায় এবং তার সুযোগ নিতে চায়, বিশেষ করে ভানইয়া, আমাদের কণ্ঠস্বরের সামান্য রূপান্তরেও সে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে, এবং সেগুলো দীর্ঘস্থায়ী হলে সে আমাদের সবচেয়ে অপছন্দের কাজগুলো করতে শুরু করে এবং একপর্যায়ে আমরা মেজাজ হারাই, যদি সে তা চালিয়েই যেতে থাকে। ইতোমধ্যেই হতাশায় পরিপূর্ণ আমাদের পক্ষ নিজেদের রাশ টেনে ধরাটা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠলে আমরা পুরোদস্তুর ফেটে পড়ি : চিৎকার, চেঁচামেচি এবং যন্ত্রণায় মাখামাখি হই। পরের সপ্তাহে একটা গাড়ি ভাড়া করে আমরা গোতেনবার্গের উপকণ্ঠে ইয়োর্ন যাই, যেখানে লিন্দার বন্ধু মিকায়েলা, যে আবার ভানইয়ার ধর্মমাতাও, তার সঙ্গীর গ্রীষ্মকুটিরে আমাদের থাকার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। আমরা তাকে জিজ্ঞেস করি, তিনটা বাচ্চার সঙ্গে থাকাটা ঠিক কেমন, এ-বিষয়ে তার কোনো ধারণা আছে কি না, এবং আমরা তার ওখানে বেড়াতে আসি
এ-ব্যাপারে সে নিশ্চিত কি না; সে তার নিশ্চয়তা দেয় এবং বলে, সে বাচ্চাদের নিয়ে কেক বানানো, সাঁতার কাটতে যাওয়া এবং কাঁকড়া ধরার পরিকল্পনাও করে রেখেছে, যেন আমরা নিজেদের মধ্যে কিছুটা সময় কাটাতে পারি। আমরা তার প্রস্তাব গ্রহণ করি। গাড়ি করে তিয়োর্ন পর্যন্ত যাই, সুরলান্দ তথা দক্ষণের চমৎকার গ্রামাঞ্চলের কিনারে অবস্থিত তাদের গ্রীষ্মকুটিরের বাইরে গাড়ি থামাই এবং বাচ্চাকাচ্চা ও বাক্সপ্যাঁটরাসহ ঘরের ভেতরে হামলে পড়ি। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল পুরো সপ্তাহটাই সেখানে থাকা, কিন্তু তিনদিন পরই আমরা আবার গাড়িতে সব মালপত্র ভরে দক্ষণের দিকে রওনা দিই, দৃশ্যতই মিকায়েলা ও এরিকের মনে স্বস্তির সঞ্চার করে।
যাদের বাচ্চাকাচ্চা নেই, তারা কদাচিৎ এর কী তাৎপর্য তা বুঝতে পারে, সে তারা যত বুদ্ধিমান ও প্রাজ্ঞই হোক না কেন, অন্তত আমার নিজের বাচ্চা হওয়ার আগ পর্যন্ত ব্যাপারটা ঠিক এমনই ছিল আমার কাছে। মিকায়েলা ও এরিক দুজনেই জীবনে প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সচেতন : মিকায়েলাকে যতদিন ধরে আমি চিনি, সে সবসময় সাংস্কৃতিক দুনিয়ার বড় বড় পদে অধিষ্ঠিত ছিল, আর এরিক সুইডেনভিত্তিক একটি বহুজাতিক সংস্থার পরিচালক। তিয়োর্নের পরে পানামাতে একটা মিটিং আছে এরিকের, তারপর তাদের দুজনের ছুটি কাটাতে প্রোভঁস যাওয়ার কথা, এরকমই তাদের জীবন : যে-জায়গাগুলোর কথা আমি কেবল বইয়ে পড়েছি, সেগুলো তাদের রীতিমতো প্রিয় গন্তব্য। এরকম একটি জীবনের মধ্যে ঢুকে পড়ে আমাদের সংসার, বাচ্চাকাচ্চার ত্যানা ও তোয়ালেসমেত, যেখানে সারাবাড়িতে হামাগুড়ি দিয়ে বেড়ায় ইয়ন; হ্যাইদি আর ভানইয়া চিৎকার, চেঁচামেচি, কান্নাকাটি ও হাসাহাসি করতে থাকে, বাচ্চারা টেবিলে বসে খায় না কখনো, তাদের যা করতে বলা হয় কক্ষনোই তা করে না, অন্তত কারো বাড়িতে বেড়াতে গেলে তো নয়ই, যখন আমরা খুব করে চাই তারা ঠিকঠাক ব্যবহার করুক, যেহেতু তারা বোঝে কী ঘটছে চারপাশে। যেখানে আমাদের মানসম্মানের ব্যাপারটা বেশি থাকে, সেখানেই তারা যেন আরো অবাধ্য হয়ে ওঠে, আর এই গ্রীষ্মকুটিরটা যথেষ্ট বড় ও খোলামেলা হলেও অতটা বড় নয় যে, তাদের পুরোপুরি উপেক্ষা করা চলে। এরিক ভান করছিল যেন তার কোনো অসুবিধা হচ্ছে না, সে নিজেকে উদার ও শিশুবান্ধব হিসেবে দেখাতে চাইছিল, কিন্তু এটা তার দেহভাষার দ্বারা বারবার অপ্রমাণিত হচ্ছিল; তার শরীরের দু-পাশে স্থিরনিবদ্ধ দু-হাত, সে যেভাবে জিনিসপত্রসমূহকে তাদের সঠিক জায়গায় এনে রাখছিল, আর তার চোখের সেই সুদূর দৃষ্টি, সবই এর সাক্ষ্য দিচ্ছিল। সে সারাজীবন যে জিনিস ও জায়গার সঙ্গে পরিচিত ছিল, তার সঙ্গেই ছিল তার অন্তরঙ্গতা, এই মুহূর্তে সেখানে যারা এসে আসন গেড়েছে, তারা তাদের চেয়ে অনেক দূরবর্তী, লোকেরা
যে-চোখে সজারু কিংবা উদ্বেড়ালকে দেখে, অনেকটা সেভাবেই তাদের দেখছিল সে। আমি জানি তার কীরকম লাগছিল তখন, এবং আমি তাকে পছন্দই করতাম। কিন্তু আমিই তো এসবকে আমার সঙ্গে বহন করে এনেছি, সত্যিকারের মনের মিলন তখন অসম্ভব ছিল। সে পড়াশোনা করেছে অক্সফোর্ড এবং ক্যামব্রিজে, এবং
নগর-কর্তৃপক্ষের হয়ে কয়েক বছর মধ্যস্থতাকারীর কাজও করেছে, কিন্তু একদিন সমুদ্রের ধারের পর্বতের পাশে সে ও ভানইয়া হাঁটার সময় ভানইয়াকে নিজের থেকেই তার আগে আগে কয়েক মিটার উঁচুতে পাহাড়ে চড়তে দেয় এবং নিজে পেছনে স্থির দাঁড়িয়ে থেকে সেই দৃশ্যের প্রশংসা করে, কিন্তু এই বিবেচনাটুকু করে না যে, তার বয়স মাত্র চার এবং সে ঝুঁকি পরিমাপ করতে অক্ষম, ফলে হ্যাইদিকে কোলে নিয়েই আমাকে দৌড়ে গিয়ে তাকে থামাতে হয়। এর আধ ঘণ্টা বাদে আমরা যখন একটা ক্যাফেতে বসে ছিলাম – আচমকা দৌড়ের কারণে আমার পা-জোড়া কিছুটা বেকায়দায় – এবং তাকে বলি, তার পাশে আমি যে রুটিটা রেখেছি সেখান থেকে কয়েক টুকরো ছিঁড়ে ইয়নকে দিতে, যেহেতু আমাকে হ্যাইদি ও ভানইয়ার দিকে নজর রাখতে হচ্ছে এবং তাদের খাবারের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে; সে মাথা নেড়ে সায় দেয়, বলে, সে তা করবে, কিন্তু সে যে খবরের কাগজটা পড়ছিল সেটা নামিয়ে পর্যন্ত রাখে না, মুখ তুলে চায় না পর্যন্ত, এবং খেয়াল করে না, ইয়ন, যে তার থেকে মাত্র আধা মিটার দূরেই রয়েছে, ক্রমে অস্থির হয়ে উঠছে, এবং হঠাৎ এত লম্বা একটা চিৎকার দিয়ে ওঠে যে, হতাশায় তার মুখ লালাভ হয়ে ওঠে, যেহেতু যে-রুটিটা সে চাচ্ছিল সেটা তার সামনেই রয়েছে তবু তার নাগালের বাইরে। টেবিলের অপরপ্রান্তে বসা লিন্দাকে এই পরিস্থিতি রীতিমতো ক্রুদ্ধ করে তোলে – আমি সেটা তার চোখেমুখে দেখতে পাচ্ছিলাম – কিন্তু সে তার জিব কামড়ে ধরে, কোনো কথা বলে না, আমরা বাইরে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে, যতক্ষণ না আমরা কেবল নিজেরাই আছি, তখন সে বলে, আমাদের বাড়ি যাওয়া উচিত। এখনই। তার ভাবসাবের বিষয়ে অভ্যস্ত আমি তাকে মুখ বন্ধ রাখতে বলি, এবং এভাবে হুট করে সিদ্ধান্ত নিতে বিরত থাকতে বলি, বিশেষত যখন তার মেজাজ এমন খারাপ। বলা বাহুল্য, এটা তাকে আরো খেপিয়ে তোলে, এবং ব্যাপারটা সেরকমই থাকে, যতক্ষণ না পরদিন সকালে আমরা বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য আবার গাড়িতে উঠি।
মেঘহীন নীলাকাশ, খোলা প্রান্তরের চৌখুপি নকশা, বাতাস-প্লাবিত অপূর্ব গ্রামীণ নিসর্গ, বাচ্চাদের আনন্দ, এবং আমরা যে ট্রেনে নয়, প্লেনে নয় গাড়িতে বসা রয়েছি, যা ছিল গত কয়েক বছরে আমাদের 888sport slot gameমাধ্যম, তা পরিবেশটাকে হালকা করে দেয়; তবে আবারো তা ভারি হয়ে উঠতে বেশি সময় লাগে না, কেননা আমাদের খাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছিল এবং আমরা যে রেস্তোরাঁটিতে থামি, সেটা দেখা গেল একটা ইয়ট ক্লাব, তবে তার পরিচারক আমাদের জানায়, আমরা যদি হেঁটে হেঁটে কোনোমতে সেতুটা অতিক্রম করে শহরে প্রবেশ করি, আন্দাজ আধা কিলোমিটার দূরে, তাহলে সেখানে আরেকটা রেস্তোরাঁ পাব, ফলে কুড়ি মিনিট বাদে আমরা নিজেদের আবিষ্কার করি একটা উঁচু, সরু, ব্যস্ত ব্রিজের ওপর, দুটো বাচ্চাদের স্ট্রলার সামলাতে ব্যস্ত, ক্ষুধার্ত এবং আমাদের সামনে কেবল একটি 888sport live chatাঞ্চলের আভাস। লিন্দা ক্রুদ্ধ, তার চোখ কালো, আমরা প্রায়ই এরকম পরিস্থিতিতে পড়ে যাই কেন, সে হিসহিসিয়ে বলে, আর কারো তো এমন হয় না, আমরা আসলে অপদার্থ, আমাদের এখন খাওয়ার কথা, পুরো পরিবার মিলে, খুব আনন্দের সঙ্গে, তার বদলে আমরা এখানে ঝোড়ো বাতাসের সঙ্গে যুদ্ধ করছি, দুপাশে ছুটন্ত গাড়ি, তাদের থেকে নির্গত ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে আসছে আমাদের এই নচ্ছার সেতুতে। আমি কি এরকম পরিস্থিতিতে আর কোনো তিন বাচ্চাঅলা পরিবারকে দেখেছি? আমরা যে রাস্তা ধরে যাচ্ছিলাম সেটা একটা ধাতব গেটের সামনে এসে শেষ হয়, যার গায়ে একটা নিরাপত্তা কোম্পানির লোগো উৎকীর্ণ। শহরে পৌঁছাতে হলে, যেটাকে পরিত্যক্ত ও বিষণ্ণ মনে হচ্ছিল, আমাদের সেই 888sport live chatাঞ্চলের ভেতর দিয়ে আরো পনেরো মিনিটের মতো ঘুরপথে যেতে হবে। আমি তাকে ফেলেই যেতাম, কেননা সে সবসময় গাঁইগুঁই করছে, সে সবসময় অন্যকিছু একটা চায়, পরিস্থিতির উন্নয়নে কিছুই করে না, কেবল অভিযোগ করা আর অভিযোগ করা, কঠিন পরিস্থিতিকে কিছুতেই মোকাবিলা করতে জানে না, এবং পরিস্থিতি তার অনুকূলে না হলে, ছোট-বড় যে-কোনো বিষয়ে সে আমার ওপরেই দোষারোপ করে। স্বাভাবিক অবস্থায় আমরা যে যার পথ ধরতাম, কিন্তু বরাবরের মতোই বাস্তবতা আমাদের আবারো এক করে দেয় : আমাদের একটা গাড়ি, দুটো বাচ্চাদের স্ট্রলার, ফলে তোমাকে এমন ব্যবহার করতে হবে যে, যা বলা হয়েছে তা আসলে বলা হয়নি, হাড়জিরজিরে স্ট্রলার দুটোকে ঠেলে ঠেলে ব্রিজের ওপর দিয়ে আবারো সেই অভিজাত বোট ক্লাবে ফিরে আসা, স্ট্রলারের ভেতরে ঢুকিয়ে বাচ্চাদের ভালো করে বেঁধে, নিকটতম ম্যাকডোনাল্ডসে যাওয়া, যেটি আসলে গোতেনবার্গ শহরকেন্দ্রের বাইরে একটি পেট্রোল স্টেশনের মধ্যে, যেখানে একটি বেঞ্চিতে বসে আমি সসেজ খাই, আর লিন্দা ও ভানইয়াও একই জিনিস খায়, তবে গাড়িতে বসে। ইয়ন ও হ্যাইদি ঘুমিয়ে আছে। লিসেবার্গ অ্যামিউজমেন্ট পার্কে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করি আমরা, আমাদের বর্তমান মানসিকতার পরিপ্রেক্ষিতে এতে বরং অবস্থার অবনতিই হবে; তার বদলে, কয়েক ঘণ্টা পরে, অনেকটা ঝোঁকের মাথাতেই আমরা একটা ফালতু তথাকথিত ফেইরিটেইল ল্যান্ডে ঢুকে পড়ি, যেখানে সবকিছুরই মান খুবই বাজে, এবং প্রথমেই বাচ্চাদের নিয়ে একটা ছোটখাটো সার্কাসে যাই, যেখানে একটা কুকুর হাঁটু-উচ্চতায় রাখা একটা চাকতির ভেতর দিয়ে লাফ দেয়, এক বড়সড় পুরুষালি চেহারার 888sport promo code, সম্ভবত পূর্ব ইউরোপের কোনো অঞ্চলের, বিকিনি পরা, একই চাকতিগুলোকে বাতাসে ছুড়ে দিয়ে তার কোমরের চারপাশ দিয়ে ঘোরায় – যা আমার প্রথম স্কুলের প্রত্যেকটা বাচ্চা মেয়েই খুব ভালো আয়ত্ত করেছিল – এবং আমার বয়সী একজন সাদাচুলো পুরুষ, বাঁকানো ছুঁচলো জুতো, মাথায় পাগড়ি, তার হারেম ট্রাউজার্সের ওপর দিয়ে কয়েকটি খুচরো টায়ার গড়িয়ে নেয়, তারপর মুখে পেট্রোল ভরে চারবার নিচু সিলিং বরাবর অগ্নিনিশ্বাস ফেলে। ইয়ন ও হ্যাইদি তা এমন বড় বড় চোখ করে দেখে যে তাদের চোখজোড়া বেরিয়ে আসার উপক্রম হয়। ভানইয়ার মন পড়ে ছিল একটু আগে আমাদের পেরিয়ে-আসা লটারির স্টলটির ওপর, যেখানে যে-কেউ খেলনা-পুতুল জিততে পারে, এবং বারবার সে আমাকে চিমটি কাটছিল আর জিজ্ঞেস করছিল সার্কাস কখন শেষ হবে। আমি একটু পরপর লিন্দার দিকে তাকাচ্ছিলাম। সে হ্যাইদিকে কোলে নিয়ে বসে ছিল, এবং তার চোখে জলের স্রোত। আমরা ছোট্ট মেলাপ্রাঙ্গণে বেরিয়ে এসে দুজনেই একটা স্ট্রলার ঠেলে, বড় স্লাইডসমেত সুইমিং পুলের – যার মাথার পেছনে একটা বিশাল স্প্রিংবোর্ড, সম্ভবত ত্রিশ মিটার উঁচু – পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়, আমি তাকে তার কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করি।
‘আমি জানি না’, সে বলে। ‘তবে সার্কাস আমাকে সবসময় আবেগাপ্লুত করে।’
‘কেন?’
‘কারণ এটা এত বিষণ্ণ, ছোট ও সসত্মা। আবার একইসঙ্গে এত সুন্দর।’
‘এটাও?’
‘হ্যাঁ। তুমি হ্যাইদি ও ইয়নকে দেখোনি? তারা একেবারে মন্ত্রমুগ্ধ ছিল।’
‘তবে ভানইয়া নয়’, আমি একটা হাসি দিয়ে বলি। লিন্দাও ফিরতি হাসে।
‘কী?’ ভানইয়া ঘুরে বলে। ‘তুমি কী বললে, বাবা?’
‘আমি শুধু বলেছি যে তুমি সার্কাসে বসে সারাক্ষণ সেই পশমি পুতুলগুলোর কথা ভাবছিলে।’
ভানইয়া প্রায়শই যেভাবে হেসে থাকে, আমরা যখন তার সম্পর্কে কোনো সত্য কথা বলি, সেভাবেই হাসে। খুশি, তবে বরাবরের মতোই আরো উৎসুক, আরো নতুন কিছুর জন্য।
‘আমি কী করেছি?’ সে জিজ্ঞেস করে।
‘তুমি আমার হাতে চিমটি কেটেছিলে’, আমি জবাব দিই। ‘এবং বলেছিলে তুমি সেই লটারিতে যেতে চাও।’
‘কেন?’ সে জানতে চায়।
‘আমি কীভাবে জানব?’ আমি বলি। ‘আমার মনে হয় তুমি সেই খেলনাটা চাইছিলে।’
‘আমরা কি এখন তা করব?’ সে জিজ্ঞেস করে।
‘হ্যাঁ।’ আমি বলি। ‘এটা তো ওই ওখানে।’
আমি মেলার অ্যামিউজমেন্ট পার্কের দিকে যাওয়ার বাঁধানো পথটা দেখাই, গাছের ফাঁক দিয়ে যেটি দেখা যাচ্ছিল।
‘হ্যাইদিও কি একটা পেতে পারে?’ সে জানতে চায়।
‘সে যদি চায়’, লিন্দা বলে।
‘সে চায়’, ভানইয়া বলে, হ্যাইদির দিকে নুয়ে পড়ে, যে তার স্ট্রলারের মধ্যে শোয়া। ‘তুমিও একটা চাও, হ্যাইদি?’
‘হ্যাঁ’, হ্যাইদি বলে।
আমাদের টিকিটের জন্যই নববই ক্রোনার খরচ করতে হয়েছিল, যতক্ষণ না প্রত্যেকের হাতে একটা করে কাপড়ের ইঁদুর ওঠে। আকাশ থেকে সূর্য আগুন ঢালছিল; গাছের নিচের বাতাস স্থির, অ্যামিউজমেন্ট পার্ক থেকে সবরকমের চিৎকার, চেঁচামেচির শব্দ এসে মিশছিল আমাদের পাশের স্টলের আশির দশকের ডিসকো মিউজিকের সঙ্গে। ভানইয়া হাওয়াই মিঠাই চাইছিল, ফলে দশ মিনিট পরে আমরা ঝুপড়ির বাইরের একটা টেবিলে গিয়ে বসি; কয়েকটা ক্রুদ্ধ, সহিষ্ণু বোলতা বাচ্চাদের নিরানন্দ চিৎকারের মাঝে আমাদের চারপাশে ঘুরঘুর করছিল এই চামড়া সিদ্ধ-করা রোদে, যেনবা নিশ্চিত করতে যে, তারা যার সংস্পর্শেই আসবে তার গায়েই চিনি লেগে যায় – টেবিলের কাচ, স্ট্রলারের পেছনে, হাতে, বাহুতে – এটা বাচ্চাদের কল্পনায় ছিল না, যখন তারা সেই বাক্সের ভেতরে চিনির দলাকে ঘুরপাক খেতে দেখেছিল ঝুপড়িতে। কফিটাকে আমার তেতো, প্রায় পানের অযোগ্য বলে মনে হচ্ছিল। একটা ছোট নোংরা ছেলে তার ট্রাইসাইকেলে চড়ে আমাদের দিকে এগিয়ে আসে, সোজা হ্যাইদির স্ট্রলার বরাবর, তারপর আমাদের দিকে প্রত্যাশাভরা চোখে তাকায়। তার ছিল কালো চুল ও কালো চোখ, হয়তোবা রোমানিয়ান বা আরমেনিয়ান বা গ্রিক। তার ট্রাইসাইকেলটা আরো কয়েকবার স্ট্রলারটার ওপর চালিয়ে দিয়ে সে নিজে এমনভাবে দাঁড়ায় যে, আমরা সেখান থেকে আর বেরুতে পারি না এবং সে সেখানে মুখ নিচু করে দাঁড়িয়েই থাকে।
‘আমরা কি যাব?’ আমি জিজ্ঞেস করি।
‘হ্যাইদি একটা রাইড চড়তে চেয়েছিল’, লিন্দা বলে। ‘আমরা কি সেটা আগে করতে পারি না?’
একজন শক্তপোক্ত, কান-ঝোলা লোক, সেও কালো চামড়ার, এসে ছেলেটাকে সাইকেলসুদ্ধ কোলে তুলে ঝুপড়ির সামনের খোলা জায়গায় নিয়ে যায়, তার মাথায় দুবার চাপড় দেয় এবং সে যে যান্ত্রিক অক্টোপাসটা চালাচ্ছিল সেখানে চলে যায়। অক্টোপাসের বাহুগুলোতে একটা করে ছোট ঝুড়ি লাগানো যেখানে বসা যায় এবং যেগুলো ঘোরার সঙ্গে সঙ্গে ওঠানামাও করে। ছেলেটি প্রবেশপথের মুখে তার সাইকেল চালাতে থাকে, আর তখন গ্রীষ্মকালীন পোশাক পরিহিত দর্শনার্থীরা অবিরত আসা-যাওয়া করছিল।
‘নিশ্চয়ই’, আমি বলি, এবং উঠে গিয়ে ভানইয়া ও হ্যাইদির হাওয়াই মিঠাই দুটো নিয়ে ময়লার ঝুড়িতে ফেলি এবং ইয়নের স্ট্রলারটাকে ঠেলতে থাকি – যে কেবল এদিক-ওদিক মাথা ঘোরাচ্ছিল মেলার মজাদার দৃশ্যগুলো দেখার জন্য – চত্বরের ওধারের পথটি লক্ষ করে, যেটা ‘কাউবয় শহর’-এর দিকে যায়। কিন্তু কাউবয় শহর, যা আসলে একটা বালির সত্মূপ ও তিনটি ছোট্ট ঘরমাত্র, যাদের গায়ে লেখা, যথাক্রমে, খনি, শেরিফ, জেলখানা, শেষ দুটোর গায়ে ‘ধরিয়ে দিন জীবিত কিংবা মৃত’ পোস্টার সাঁটা, যার একদিকে কিছু বার্চবৃক্ষ ও একটা ঢালু পথ, যার ওপর কিছু বাচ্চা ছেলে স্কেটবোর্ড চালাচ্ছিল, আর অন্যদিকে একটা ঘোড়ায় চড়ার জায়গা, যা তখন বন্ধ ছিল। বে’নীর ভেতরে, খনির ঠিক উল্টোদিকে, পূর্ব ইউরোপীয় 888sport promo codeটি একটা পাথরের ওপর বসে ধূমপান করছিল।
‘নাগরদোলা!’ চারদিকে তাকিয়ে হ্যাইদি বলে।
‘আমরা গেটের কাছে গাধার দোলনায় চড়ব’, লিন্দা বলে।
ইয়ন তার পানির বোতলটা মাটিতে ফেলে দেয়। ভানইয়া বেড়ার নিচ দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে খনির কাছে চলে যায়। হ্যাইদি সেটা দেখে তার স্ট্রলার থেকে নেমে তাকে অনুসরণ করে। আমি শেরিফের অফিসের পেছনে লাল-সাদা কোকের মেশিন আবিষ্কার করি, আমার হাফ প্যান্টের পকেটে পড়ে থাকা জিনিসগুলো খনন করে দেখি : দুটো চুলের ক্লিপ, একটা চুলের কাঁটা, লেডিবার্ড মোটিফঅলা, একটা লাইটার, তিনটা পাথর ও দুটো ছোট্ট সাদা কড়ি, যা ভানইয়া তিয়োর্নে খুঁজে পেয়েছিল, একটা কুড়ি ক্রোন নোট এবং দুটো পাঁচ ক্রোন ও নয় ক্রোনের মুদ্রা।
‘আমি একটা সিগারেট খাব এর মধ্যে’, আমি বলি। ‘আমি, ওই সেখানে থাকব।’
এলাকার শেষমাথায় একটা গাছের গুঁড়ির দিকে এগোই আমি। ইয়ন দুই হাত তোলে।
‘যাও তাহলে’, লিন্দা বলে, ইয়নকে কোলে তুলে নিয়ে। ‘তোমার কি খিদে পেয়েছে, ইয়ন?’ সে জিজ্ঞেস করে। ‘ওহ এখানে এত গরম। আশেপাশে কি কোনো শেড নেই যে আমি ওকে নিয়ে একটু বসতে পারি?’
‘ওই ওখানে’, আমি পাহাড়ের ওপরের রেসেত্মারাঁটাকে দেখিয়ে বলি। সেটাকে দেখতে একটা ট্রেনের মতো, ইঞ্জিনঘরে কাউন্টার আর কামরাগুলোর মধ্যে খাবার টেবিল। সেখানে কোনো কাকপক্ষীকেও দেখা যাচ্ছিল না। চেয়ারগুলো টেবিলের গায়ে হেলান দেওয়ানো।
‘আমি সেটাই করব’, লিন্দা বলে। ‘এবং বাচ্চাটাকে খাওয়াব। তুমি কি মেয়েদুটোর দিকে নজর রাখবে?’
আমি মাথা নাড়ি, কোক-মেশিনের কাছে গিয়ে একটা ক্যান সংগ্রহ করি, গাছের গুঁড়িতে বসে সিগারেট ধরাই, তাড়াহুড়ো করে তৈরি শেডটার দিকে তাকাই, যেখানটায় ভানইয়া ও হ্যাইদি দরজার ভেতর দিয়ে ঢুকছিল ও বেরুচ্ছিল।
‘খুব অন্ধকার এখানে!’ ভানইয়া চিৎকার করে বলে। ‘এসে দেখে যাও।’
আমি হাত তুলি ও নাড়ি, যা সৌভাগ্যক্রমে তাকে সন্তুষ্ট করে। সে তখনো এক হাত দিয়ে তার ইঁদুরটাকে বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে ছিল।
ভালো কথা, হ্যাইদির ইঁদুরটা কোথায়?
আমি আমার দৃষ্টিকে পাহাড় বেয়ে উঠতে দিই। এবং সেখানেই সেটা পড়ে আছে, শেরিফের অফিসের ঠিক বাইরে, বালির মধ্যে তার মাথা গোঁজা। রেস্তোরাঁয় লিন্দা একটা চেয়ারকে দেয়ালের কাছে টেনে আনে, বসে, এবং ইয়নকে বুকের দুধ খাওয়াতে থাকে, যে প্রথমেই একটা লাথি ছুড়ে পরে শান্ত, স্থির হয়ে পড়ে থাকে। সার্কাসের মাহিলাটি পাহাড় বেয়ে উঠতে থাকে। আমার পায়ে একটা ঘাসফড়িং কামড় দেয়। আমি সেটাকে এমন জোরে চপেটাঘাত করি যে সেটি আমার সারা শরীরের চামড়ায় ছড়িয়ে যায়। গরমের মধ্যে সিগারেটটাকে রীতিমতো বিস্বাদ লাগছিল, কিন্তু আমি গোঁয়ারের মতো সেটার ধোঁয়া টেনে নিই ফুসফুস ভরে, গাছগুলোর ওপরের দিকে চেয়ে থাকি, এমন সুতীব্র সবুজ, যেখানে রোদ এসে আটকে থাকে। আরেকটি ফড়িঙ আমার হাঁটুর নিচে বসে। আমি সেটাকে তক্ষুনি তাড়িয়ে দিই, সিগারেটটা ছুড়ে ফেলি মাটিতে, তারপর আধা খালি/ পূর্ণ কোকের ক্যানটা হাতে নিয়ে মেয়েদের দিকে এগিয়ে চলি।
‘বাবা, তুমি পেছনে গিয়ে দেখো তো এর ফাঁক দিয়ে ভেতরে আমাদের দেখা যায় কি না?’ ভানইয়া আমাকে চোখ টিপে বলে।
‘ঠিক আছে, তাহলে’, আমি বলি এবং শেডের চারপাশে হাঁটতে থাকি। তাদের ভেতরে খিলখিলিয়ে হাসতে ও কী একটা দিয়ে পেটাপেটি করতে শুনি। একটা ফাটলের মধ্যে আমার মাথা নুইয়ে আমি ভেতরে উঁকি মারি। কিন্তু বাইরের আলো আর ভেতরের অন্ধকারের পার্থক্য আমাকে কিছুই দেখতে দেয় না।
‘বাবা তুমি কি বাইরে?’ ভানইয়া চিৎকার করে বলে।
‘হ্যাঁ’, আমি বলি।
‘তুমি কি আমাদের দেখতে পাচ্ছ?’
‘না। তোমরা কি অদৃশ্য হয়ে আছ?’
‘হ্যাঁ।’
তারা যখন বেরিয়ে আসে আমি তখন ভান করি যে, আমি তাদের দেখতে পাচ্ছি না। আমি ভানইয়ার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে তার নাম ধরে ডাকি।
‘আমি এখানে’, সে হাত নেড়ে বলে।
‘ভানইয়া।’ আমি চিৎকার করি। ‘কোথায় তুমি? বেরিয়ে এসো এক্ষুনি। এতে আর কোনো মজা নেই।’
‘আমি এখানে। এখানে।’
‘ভানইয়া।’
‘তুমি আমাকে সত্যি দেখতে পাচ্ছ না? আমি কি আসলেই অদৃশ্য?’
তাকে সীমাহীন সুখী দেখায়, যদিও তার স্বরে আমি সামান্য অস্বস্তির ছোঁয়াও টের পাই। সেই সময়ে ইয়ন চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে। আমি ওপরের দিকে তাকাই। লিন্দা তাকে বুকের মধ্যে আঁকড়ে ধরেই উঠে দাঁড়ায়। ইয়োন সচরাচর এমন করে কাঁদে না।
‘ওহ, তুমি এখানে?’ আমি বলি। ‘তুমি কি সারাটা সময়ই এখানে ছিলে?’
‘হ্যাঁ তো।’ সে বলে।
‘তুমি কি ইয়নের কান্না শুনতে পেয়েছো?’
সে মাথা নেড়ে ওপরের দিকে তাকায়।
‘আমাদের তাহলে যেতে হবে।’ আমি বলি। ‘এসো তো।’
আমি হ্যাইদির হাত ধরতে যাই।
‘আমি চাই না’, সে বলে। ‘আমি হাত ধরতে চাই না।’
‘ঠিক আছে’, আমি বলি। স্ট্রলারে ওঠো তাহলে।
‘আমি তাও চাই না’, সে বলে।
‘আমি কি তাহলে তোমাকে কোলে করে নিয়ে যাব?’
‘না আমি কোলেও উঠতে চাই না।’
আমি নিচে নেমে স্ট্রলারটা নিয়ে আসি। ফিরে এসে দেখি সে বেড়ার ওপর চড়ে বসেছে। ভানইয়া মাটিতে বসে ছিল। পাহাড়ের ওপরে লিন্দা রেসেত্মারাঁ থেকে বেরিয়ে এসেছে; সে তখন রাসত্মার ওপর থেকে নিচের দিকে তাকিয়ে ছিল, এক হাত দিয়ে আমাদের দিকে ইশারা করছিল। ইয়ন তখনো চিৎকার করছে।
‘আমি হাঁটতে চাই না’, ভানইয়া বলে। ‘আমার পা ক্লান্ত হয়ে গেছে।’
‘তুমি সারাদিনে এক পাও হাঁটোনি’, আমি বলি। ‘তোমার পাগুলো ক্লান্ত হবে কীভাবে?’
‘আমার কোনো পা নেই। আমাকে তোমার কোলে নিতে হবে।’
‘না, ভানইয়া, এটা বাজে কথা। আমি তোমাকে কোলে করে নিতে পারব না।’
‘হ্যাঁ, তুমি পারবে।’
‘গাড়িতে ওঠো, হ্যাইদি’, আমি বলি। ‘তারপর আমরা নাগরদোলা চড়তে যাব।’
‘আমি স্ট্রলারে উঠতে চাই না’, সে বলে।
‘আমার কোনো পা-আ-আ নেই!’ ভানইয়া বলে। সে শেষ শব্দটা চিৎকার করে বলে।
আমার ভেতরে ক্রোধ জেগে উঠছে, টের পাই আমি। আমার ইচ্ছে হয় তাদের দুজনকে টেনে তুলে দুই হাতের নিচে ঝুলিয়ে নিয়ে যাই। এটাই প্রথম নয় যে আমি ধৈর্যহারা হয়ে তাদের চিৎকার ও লাথি উপেক্ষা করে তাদের আমার হাতের নিচে ঝুলন্ত অবস্থায় বহন করছি, পথচারীদের বিষয়ে সম্পূর্ণ উদাসীন, যারা প্রতিবারই আমাদের এইসব দৃশ্যের দিকে এমন আগ্রহ নিয়ে তাকিয়েছে যেন আমি কোনো বাঁদর-টুপি বা সেরকম কিছু একটা পরে আছি।
তবে এবার আমি আমার স্বাভাবিকতা ধরে রাখতে সক্ষম হই।
‘তুমি কি স্ট্রলারে উঠবে, ভানইয়া?’ আমি জিজ্ঞেস করি।
‘তুমি যদি আমাকে তুলে দাও’, সে বলে।
‘না, এটা তোমাকে নিজেকেই করতে হবে।’
‘না’, সে বলে। ‘আমার কোনো পা নেই।’
আমি যদি নত না হতাম তাহলে আমাদের কাল সকাল অবধি এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে, কেননা ভানইয়ার যদিও ধৈর্য কম এবং প্রথম প্রতিরোধেই সে হাল ছেড়ে দেয়, কিন্তু যখন তার মর্জির প্রশ্ন ওঠে তখন সে অসীমরকম গোঁয়ার।
‘ঠিক আছে’, আমি বলি, তাকে স্ট্রলারে তুলে দিতে দিতে। ‘তুমি আবারো জিতলে।’
‘কী জিতলাম?’ সে জানতে চায়।
‘কিছু না’, আমি বলি। ‘এসো হ্যাইদি। আমরা যাচ্ছি।’
আমি তাকে বেড়া থেকে টেনে তুলি, এবং কয়েকটা আবছা ‘না, চাই না’র পর দেখা যায় আমরা পাহাড় বেয়ে উঠছি, আমার এক বাহুতে হ্যাইদি, আর স্ট্রলারে ভানইয়া। আমরা যখন যাচ্ছিলাম পথ থেকে আমি হ্যাইদির কাপড়ের ইঁদুরটি তুলে নিই, ধুলো ঝাড়ি, এবং বাজারের ব্যাগে ভরে রাখি।
‘আমি জানি না ওর কী হয়েছে’, লিন্দা বলে আমরা ওপরে উঠে আসার পর। ‘সে হঠাৎ করে কাঁদতে শুরু করে। হয়তো কোনো বোলতা বা সেরকম কিছু ওকে কামড়েছে। দেখো …’
সে তার জাম্পার তুলে একটা ছোট লাল দাগমতো দেখায় আমাকে। সে তার কোলের মধ্যে হাঁসফাঁস করে, তার চোখমুখ লাল এবং কান্নাকাটির কারণে চুল ভেজা।
‘আহারে বাচ্চাটা’, সে বলে।
‘আমাকেও একটা ফড়িঙ কামড়েছে’, আমি বলি। ‘হয়তো ওর ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে। তাকে স্ট্রলারে নামিয়ে রাখো এবং আমরা রওনা হই চলো। এটা নিয়ে আমরা এখন আর কিছুই করতে পারব না।’
তাকে যখন স্ট্রলারে বাঁধা হচ্ছিল, সে গা মোচড়াতে থাকে এবং মাথাটা নিচু করে রাখে, তখনো চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে।
‘চলো গাড়িতে উঠি আমরা’, আমি বলি।
‘হ্যাঁ,’ লিন্দা জবাব দেয়। ‘কিন্তু আমাকে প্রথমে তার কাপড় পালটাতে হবে। নিচে একটা ডায়াপার পালটানোর ঘর রয়েছে।’
আমি মাথা নাড়ি ও নিচে নামতে থাকি। আমাদের এখানে আসার পর কয়েক ঘণ্টা কেটে গেছে, সূর্য নিচুতে ছিল আকাশে, এবং গাছের ওপর সেটা যে আলো ঢালছিল তার মধ্যে এমন একটা কিছু ছিল, যা আমাকে মনে করিয়ে দেয় গ্রামের বাড়ির গ্রীষ্মকালীন বিকেলগুলোর কথা, যখন আমরা হয় মা-বাবার সঙ্গে গাড়িতে করে দ্বীপের শেষপ্রামেত্মর দিকে যেতাম সমুদ্রে সাঁতার কাটতে অথবা এলাকার বাইরে ছোট্ট পাহাড়টায় হেঁটে বেড়াতাম। এইসব 888sport sign up bonus কয়েক সেকেন্ডের জন্য আমার চেতনা জুড়ে থাকে, কোনো নির্দিষ্ট ঘটনার আকারে নয়, বরং একধরনের পরিবেশ, অনুভূতি কিংবা ঘ্রাণের মতো। যেভাবে আলো, যা এই দিনের মধ্যভাগে অনেক বেশি সাদা ও নিরপেক্ষ ছিল, বিকেলের দিকে যা আরো পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে, এবং রংগুলোকে আরো গাঢ় করে তোলে। আহা সত্তরের দশকে গ্রীষ্মে ছায়াঘেরা বনের পথ দিয়ে দৌড়ে যাওয়ার দিনগুলো! লবণাক্ত জলে ঝাঁপ দিয়ে পড়া এবং সাঁতার কেটে অপর পারের ইয়েস্তাহলমেনে পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়া। সমুদ্র-মসৃণ পাথরে সূর্যের চিকচিকে আলোতে তাদের প্রায় সোনালি দেখাতো। তাদের ভেতরে ফোকরগুলোতে ইয়োন্মানো শুকনো ঋজু ঘাসগুলো। জলতলের নিচেকার গভীরতার বোধ, পর্বতের ছায়ার নিচে পড়ে থাকা তারা কী প্রগাঢ় অন্ধকার। মাছেরা পাশ দিয়ে সাঁতরে যায়। আর আমাদের ওপরে গাছেদের শীর্ষদেশ, সমুদ্রের বাতাসে তাদের নধর শাখাদের দুলুনি! তাদের পাতলা বাকল এবং মসৃণ পায়ের মতো নিচের গাছেরা। সবুজ বনভূমি …
‘এই তো সেই ঘরখানা’, লিন্দা বলে, একটা ছোট অষ্টভুজা কাঠের বাড়ির দিকে ইশারা করে। ‘তুমি কি অপেক্ষা করবে?’
‘আমরা ধীরেসুস্থে নিচে নামতে থাকব’, আমি বলি।
বেষ্টনীর ভেতরের ছোট্ট বনের গাছগুলোতে দুটো বনদেবতার মূর্তি বানানো। এভাবেই এই জায়গাটি তার ফেইরিটেইল ল্যান্ড নামের যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠা করে।
‘দেখো, তমপেন।’ হ্যাইদি চিৎকার করে বলে। তমপেন, অথবা শুদ্ধ সুইডিশে টমটেন, একটি বনদেবতার নাম।
সে বেশ কিছুদিন ধরে বনদেবতাদের বিষয়ে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। বসমেত্মর বহুদিন পর্যন্ত সে বিশ্বাস করত ক্রিসমাসের রাতে বারান্দায় বনদেবতাদের আগমন ঘটেছিল এবং সে বলে চলেছিল ‘তমপেন আসছে’, এবং সে যখন তাকে দেওয়া উপহারগুলোর একটি নিয়ে খেলত তখন বরাবরই সবার আগে বলে নিত সেটি কোত্থেকে এসেছে। তার কাছে সেই বনদেবতার কী অবস্থান ছিল সেটা বলা সহজ নয়, কেননা ক্রিসমাসের পর সে যখন আমার ক্লজেটে বনদেবতার পোশাকটি দেখে তখন একটুও অবাক কিংবা উত্তেজিত হয়নি। আমরা একটা কথাও বলিনি; সে শুধু সেটাকে দেখিয়ে চিৎকার করে বলেছিল ‘তমপেন’, যেন বা সেখানেই সে তার পোশাক পালটায়, এবং আমরা যখন সাদা দাড়িঅলা বুড়ো ভামটাকে দেখি, যে আমাদের বাড়ির বাইরের চত্বরে ঘোরাফেরা করছিল, সে তার স্ট্রলারের মধ্যে উঠে দাঁড়িয়ে, গলা ফাটিয়ে বলে উঠতো, ‘তমপেন।’
আমি সামনে ঝুঁকে তার ফোলা-ফোলা গালে চুমু খাই।
‘চুমু নয়’, সে বলে।
আমি হাসি।
‘আমি কি তোমাকে চুমু খেতে পারি, ভানইয়া?’
‘না’, ভানইয়া বলে।
একটা হালকা, কিন্তু বিরতিহীন মানুষের স্রোত আমাদের পাশ দিয়ে হেঁটে যায়, অধিকাংশের পরনেই গরমকালের পোশাক – হাফ প্যান্ট, টি-শার্ট, চপ্পল – কারো কারো পরনে জগিংয়ের পোশাক, ব্যায়ামের পোশাক, একটা বড় অংশই তাদের বেশ মোটাসোটা, এবং প্রায় একজনও সুবেশী নয়।
‘আমার বাবা জেলখানায়!’ হ্যাইদি দুষ্টুমিমাখা আনন্দের সঙ্গে চিৎকার করে বলে।
গাড়ির ভেতর ভানইয়া পাশ ফেরে।
‘না, বাবা জেলখানাতে নয়!’ সে বলে।
আমি আবারো হাসি এবং থামি।
‘আমাদের এখানে মায়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে’, আমি বলি।
তোমার বাবা জেলখানায় : এটা নার্সারির বাচ্চারা একে অপরকে বলত। হ্যাইদি এটাকে একটা দারুণ প্রশংসাবাক্য হিসেবে বুঝেছে, এবং প্রায়ই তা উচ্চারণ করত যখন সে আমাকে নিয়ে গর্ব করতে চাইত। গতবার আমরা কেবিন থেকে ফিরছিলাম, লিন্দার কথা অনুযায়ী, সে আমাদের পেছনে বসা এক বয়স্ক 888sport promo codeকে এটা বলেছিল। আমার বাবা জেলখানায়। আমি যেহেতু সেখানে ছিলাম না, আসলে বাসস্টপে অপেক্ষা করছিলাম ইয়নকে নিয়ে, মন্তব্যটি বাতাসেই ঝুলে থাকে কোনোপ্রকার প্রতিবাদবিহীন।
আমি সামনে ঝুঁকে আমার টি-শার্টের খুঁট দিয়ে কপালের ঘাম মুছি।
‘আমি কি আরেকটা টিকিট পেতে পারি, বাবা?’ ভানইয়া বলে।
‘না’, আমি বলি। ‘তুমি তো এরই মধ্যে একটা খেলনা পুতুল জিতে নিয়েছ।’
‘লক্ষ্মী বাবা, আরেকটা?’ সে বলে।
আমি ফিরে দেখি লিন্দা হেঁটে আসছে। ইয়ন স্ট্রলারের ওপর খাড়া হয়ে বসে আছে এবং তার সূর্য-টুপিতে তাকে সুখী দেখায়।
‘সব ঠিক আছে?’ আমি বলি।
‘হুঁ। আমিক্ষতটাকে ঠান্ডা জলে ধুয়ে দিয়েছি। সে একটু ক্লান্ত যদিও।’
‘তাহলে সে গাড়িতে ঘুমাবে’, আমি বলি।
‘কটা বাজে বলে মনে হয় তোমার?’
‘সাড়ে তিনটা হয়তোবা?’
‘তাহলে আটটার মধ্যে বাড়ি ফেরা হবে?’
‘সেরকমই।’ আমরা আবারো সেই ছোট মেলাপ্রাঙ্গণটা অতিক্রম করি, দস্যুজাহাজটার পাশ দিয়ে, একটা শোচনীয় কাঠের কাঠামো, যার সিঁড়িটা পেছনের দিকে, যেখানে এক পা-অলা অথবা হাত-অলা লোকেরা মাথায় পাগড়ি বেঁধে তলোয়ার ঝলসায়; ইয়ামা ও উটপাখির খাঁচা, ছোট পিচঢালা পথ যেখানে বাচ্চারা চার চাকার সাইকেল চালায়, এবং শেষমেশ প্রবেশমুখে পৌঁছাই, যেখানে একটা প্রতিবন্ধক পরিক্রমার মতো রয়েছে, কয়েকটা গাছের গুঁড়ি, এবং কাঠের দেয়াল, মাঝখানে জালের ঝালর, একটা স্ট্যান্ডে বাঙ্গি ট্রাম্পোলিন ও গাধায় চড়ার চত্বর, যেখানে এসে আমরা থামি। লিন্দা হ্যাইদিকে নিয়ে যায়, লাইনে দাঁড়ায়, তার মাথায় একটা হেলমেট পরায়, আর আমি ও ভানইয়া ইয়নকে নিয়ে বেড়ার পাশে দাঁড়িয়ে দেখি। (চলবে)


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.