কালি ও কলমের দ্বিতীয় 888sport free betয় হরিপ্রভা তাকেদাকে নিয়ে চমৎকার একটি রচনা উপহার দেওয়ার জন্য শুরুতেই ধন্যবাদ জানাতে হয় 888sport app শহরের অতীত ইতিহাস খুঁজে দেখার নেতৃস্থানীয় গবেষক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনকে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগ ও বিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্নের বিভিন্ন সূত্রের আশ্রয় নিয়ে হরিপ্রভা তাকেদার জীবনের না-জানা কিছু কিছু দিকের উপর আলোকপাতে তাঁর প্রয়াস প্রশংসার দাবি রাখে। তবে হরিপ্রভা ও উয়েমন তাকেদার জীবনের কোনো কোনো দিক নিয়ে দেখা দেওয়া বিভ্রান্তি এতে যে সম্পূর্ণ দূর হয়েছে তা অবশ্য বলা যায় না। তা সত্ত্বেও আগামীর গবেষকদের জন্য উৎসাহের যে-দরজা তিনি তাঁর সেই রচনার মধ্য দিয়ে খুলে দিয়েছেন, সেই পথে অচিরেই আরো অনেক কিছু আমাদের পক্ষে জানা হয়ত সম্ভব হয়ে উঠবে।
হরিপ্রভা তাকেদার হারিয়ে যাওয়া বই নতুন করে পাঠকের সামনে উপস্থিত করার প্রক্রিয়ায় বাংলার অসাধারণ সেই মহিলার জীবনের বিভিন্ন দিক খুঁজে দেখার চেষ্টা আমি নিজে করে গেলেও প্রবাস-জীবনের সীমাবদ্ধতা আর নানারকম প্রতিকূলতায় সেই ক্ষেত্রে বেশি দূর অগ্রসর হওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তবে তারপরও বিস্মৃত সেই জীবনের অনুসন্ধান বন্ধ থাকেনি এবং সেই প্রক্রিয়ায় পরবর্তীকালে হরিপ্রভা-সম্পর্কে আরো যা কিছু জানা আমার পক্ষে সম্ভব হয়, সে-বিষয়ে পাঠকদের অবহিত করা হলে 888sport app শহরের প্রথম আধুনিক 888sport promo code হরিপ্রভা তাকেদাকে আরেকটু ভালোভাবে উপলব্ধির জন্য তা হয়ত সহায়ক হবে।
জাপানের এশিয়াটিক সোসাইটিতে বছরতিনেক আগে হরিপ্রভাকে নিয়ে একটি নিবন্ধ আমি উপস্থাপন করি, সংগঠনের বার্ষিক সাময়িকীতে কিছুদিন পরে যা ছাপা হয়েছে। সেই কাজে সংশ্লিষ্ট থাকার সময় জাপানে হরিপ্রভার খোঁজ করতে গিয়ে আবারো রেডিও জাপানের সুহৃদ কাযুহিরো ওয়াতাবের শরণাপন্ন আমাকে হতে হয়েছিল। সেবার তিনি কোবে শহরের একটি দৈনিক সংবাদপত্রে ১৯১২ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত উয়েমন তাকেদার একটি সাক্ষাৎকার আমার সেই গবেষণার জন্য সংগ্রহ করে দিয়েছিলেন। বঙ্গমহিলার জাপান যাত্রার পাঠকদের হয়ত 888sport app download for androidে থাকবে, তাকেদা সান যে কোবে পৌঁছানোর পর দুটি সংবাদপত্রের সাংবাদিককে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন, হরিপ্রভা নিজেই সে-কথা তাঁর বইয়ে উল্লেখ করেছেন। কোবে শহরের সংবাদপত্র-আর্কাইভ থেকে কাযুহিরো ওয়াতানাবের সংগ্রহ করা সেই সাক্ষাৎকার হচ্ছে তারই একটি, যেটি ছাপা হয়েছিল অধুনালুপ্ত কোবে ইয়ুশিন নিপ্পোর ১৯১২ সালের ১৬ই ডিসেম্বরের 888sport free betয়। দ্বিতীয় সাক্ষাৎকারটিও ছাপা হয় প্রায় একই সময়ে কোবে শিম্বুনে। তবে পরবর্তী সময়ে যুদ্ধ আর দুর্যোগের কাল জাপানকে অতিক্রম করতে হওয়ায় কোবে শিম্বুনের ১৯১২ সালের শেষদিকের কোনো 888sport free betই এখন আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। ফলে বিলুপ্ত সেই পত্রিকার সাথে হারিয়ে গেছে উয়েমন তাকেদার দেওয়া দুর্লভ সেই সাক্ষাৎকারও।
কোবে ইয়ুশিন নিপ্পোর সাক্ষাৎকারভিত্তিক 888sport world cup rateের শিরোনাম ছিল ‘কৃষ্ণকায় বধূ’। এর সম্পূর্ণ বঙ্গানুবাদ হরিপ্রভার জীবনের কিছু কিছু দিকের ওপর নতুন করে আলোকপাত করতে পারবে বিধায় এখানে তা সংযোজিত হলো:
ভারতীয় কোনো মহিলাকে বিয়ে করা প্রথম জাপানী নাগরিক (আইচি জেলার কোচিনো শহরের শিম্মোমিয়ার আদি নিবাসী) সাঁইত্রিশ বছর বয়সী কাযুয়েমন তাকেদা দশ বছর পর গতকাল কলকাতা থেকে দেশে ফিরে এসেছেন। কৃষ্ণকায় ভারতীয় বধূর হাত ধরে অনেকটা যেন গর্বের সাথে কোলোসিও মারু নামের জাহাজ থেকে তিনি নেমে আসেন এবং দীর্ঘ 888sport slot gameের শেষে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য সমুদ্র তীরবর্তী হোটেল কোবে-কানে গিয়ে উঠেন।
তিনি হচ্ছেন ভারতীয় কোনো মহিলাকে বিয়ে করা প্রথম জাপানী এবং সেদিক থেকে জাপানের বিবাহের ইতিহাসে নতুন এক রেকর্ডের তিনি দাবিদার। ব্যতিক্রমি এক বধূকে সঙ্গে নিয়ে ফিরে এসে দেশে নিজের আত্মীয়স্বজনকে তৃপ্তির চমক তিনি দিতে চাইছেন বলে মনে হয়।
কৃষ্ণকায় সেই বধূ, বাইশ বছর বয়সী ওকুবুরুয়া (নামের বিভ্রান্তি লক্ষণীয় – 888sport app download apk latest versionক), সোনালি আর রুপালি রঙের কাজ করা একটি চাদরে মাথা ঢেকে রেখেছিলেন। পরনে তাঁর ছিল খয়েরি রঙের একটি কোট ও পায়ে ছোট সাইজের জুতো। সেই সঙ্গে তাঁর হাত ও আঙুলে ছিল বেশ কিছু চুড়ি
আর আংটি।
এক হাতে ব্যাগ আর অন্য হাত রোদে-পোড়া স্ত্রীর হাতে রেখে হোটেলের দিকে স্বামী হেঁটে যান। স্বামীর মুখে আছে গোঁফ আর তার পরনে তখন ছিল লাউঞ্জ সুট। স্ত্রী লজ্জা পেলেও একই সঙ্গে তৃপ্তির অনুভূতিও তাঁর মধ্যে দেখা যাচ্ছিল।
এখানে বলা দরকার যে, এই কাযুয়েমন, একসময় যিনি পেঙ্কাসপাকে (আবারো নাম-বিভ্রাট – 888sport app download apk latest versionক) নামে ভারতের একটি সাবানের কারখানায় চাকরি করতেন, দশ বছর আগে কলকাতা থেকে ২৫০ রি (প্রায় চার কিলোমিটারে এক রি – 888sport app download apk latest versionক) দূরে অবস্থিত বঙ্গদেশের 888sport appর গিরিগ্রামে (সম্ভবত খিলগ্রাম, বর্তমানের খিলগাঁও – 888sport app download apk latest versionক) নিজস্ব ব্যবসা শুরু করেন। তিনি হচ্ছেন অত্যন্ত সফল একজন ব্যবসায়ী।
ভারতে কোনো কোনো লোকজন তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, স্থানীয় লোকজনের মধ্যে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে হলে ভারতীয় রমণীকে তাঁর বিয়ে করা উচিত। ছ’বছর আগে তাঁদের বিয়ে হয়। বধূ হচ্ছেন অত্যন্ত সম্মানিত এক ব্রাহ্ম-পরিবারের কন্যা। তাঁর পিতা ওই এলাকার বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব এবং ব্রাহ্ম-সমাজের শিক্ষক হিসেবে যথেষ্ট সম্মানিত। এমনকি সেই এলাকার রাজার সাথেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক পিতার রয়েছে।
ব্রাহ্মরা ঈশ্বর নামের এক সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী এবং বছরে দুটি বড় উৎসব তারা পালন করেন।
ব্রাহ্মদের ধর্মীয় নীতি অনুসরণ করে এক ব্রাহ্মমন্দিরে এই যুগলের বিয়ে হয় এবং বিয়ের অনুষ্ঠানে পুরোহিতের মন্ত্র শ্রবণের মধ্য দিয়ে বিয়ের আংটি তারা বদল করেন। তাকেদা সান বাঁ-হাত বাড়িয়ে আঙুলের সেই আংটি আমাকে দেখালেন এবং হেসে বললেন, “এটাই হচ্ছে সেই আংটি।”
“স্ত্রীকে আমি জাপানী শেখাচ্ছি। মনে হয় জাপানী ভাষা সে কিছুটা বুঝতে পারে, যদিও জাপানীতে কথা বলা এখনও ওর জন্য বেশ কষ্টকর। ভাষা ভালোভাবে শেখার জন্য টোকিওর মহিলা কলেজে ভর্তি করাবো বলে জাপানে ওকে আমি নিয়ে এসেছি।” – জানালেন তাকেদা সান। তিনি আরো বললেন, “জাপানী খাদ্যে অভ্যস্ত করে তোলার জন্য জাপানী খাবার স্ত্রীকে আমি দিচ্ছি। তবে ওর পছন্দ ভারতীয় খাবার। ওর সখ? সঙ্গীত ও পছন্দ করে। সাথে ওর সবসময় এশ্রাজ (এটা হচ্ছে ভারতীয় বাদ্যযন্ত্র, দেখতে জাপানের কোতোর মতো এবং লম্বায় তিন জিয়াকু) থাকে।
হ্যাঁ, ঠিক তাই। আমি হচ্ছি আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতীয় কোনো রমণীকে বিয়ে করা প্রথম জাপানী। ভারতীয় মহিলার সঙ্গে বসবাসকারী আরেকজন জাপানী অবশ্য রয়েছেন। তিনি হলেন কলকাতার জাপানী কনস্যুলেটের সচিব মোকিচি শিমিযু। গো-মাংস ভক্ষণ ব্রাহ্মদের জন্য নিষিদ্ধ। তবে সেই বালিকা একসময় অজান্তে গো-মাংস খেয়ে ফেলায় সমাজ থেকে তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে কীভাবে যেন সাহায্যের জন্য শিমিযু সানের শরণাপন্ন সে হয়। আমার? না, কোনো সন্তান আমাদের এখনও নেই।”
চোখে-মুখে বিভ্রান্তির ছাপ নিয়ে স্ত্রী পাশে বসে থাকা অবস্থায় ভারতের চমৎকার নানারকম গল্প তাকেদা সান আমাকে রসিয়ে শোনালেন। খুব একটা তাড়া না থাকায় দু’দিন এখানে কাটিয়ে তারপর নিজ শহরের উদ্দেশ্যে তারা রওয়ানা হবেন।
জাপানি পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তাকেদা-পরিবার সম্পর্কে বেশ কিছু নতুন তথ্য আমরা জানতে পারি। সাক্ষাৎকার অবশ্য পরিবারের আর্থিক দুর্দশার আভাস দেয় না, উলটো পরিচয়ই বরং আমরা এতে পাই। উয়েমন তাকেদার বক্তব্য থেকে জানা যায়, সাবানের কারখানা নিজেই তিনি চালু করেছিলেন এবং সেই সময় তিনি ছিলেন খুবই সফল এক ব্যবসায়ী। হরিপ্রভার পিতার অবস্থা সম্পর্কেও ভিন্ন তথ্য তিনি তুলে ধরেছেন। আর ভারতীয় রমণীকে বিয়ে করার কারণ হিসেবে তিনি বর্ণনা করেছেন সমাজে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তোলার ইচ্ছার কথা, ভালোবেসে মন দেওয়া-নেওয়ার প্রসঙ্গ নয়।
স্বামী-স্ত্রীর জাপান-888sport slot gameের উদ্দেশ্যের পেছনে যে পরিবারের সাথে মিলিত হওয়ার বাইরে হরিপ্রভার উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পরিকল্পনাও অন্তর্ভুক্ত ছিল, সেই তথ্যও আমরা জানতে পারি উয়েমন তাকেদার বক্তব্য থেকে। হরিপ্রভার বইয়ে অবশ্য এ-দিকটির কোনো উল্লেখ নেই। ফলে ধরে নেওয়া যায় সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন পরিবারের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
জাপান থেকে ফিরে আসার পর উয়েমন আর হরিপ্রভা তাকেদার জীবনে ঠিক কী ঘটেছিল তার অনেকটাই আমাদের অজানা রয়ে গেছে। হতে পারে 888sport appর ব্রাহ্মসমাজ ক্রমশ অতীতের ঔজ্জল্য হারিয়ে ফেলায় বঙ্গ-জাপানি সেই দম্পতিও একসময় বি888sport sign up bonusর অতলে হারিয়ে যান। তবে অনেক পরে, ১৯৭২ সালে হরিপ্রভা তাকেদার মৃত্যুতে সম্ভবত স্মারক কোনো অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সুরজিৎ দাশগুপ্ত কলকাতা থেকে যে ক্ষুদ্রাকারের 888sport app download for androidিকা প্রকাশ করেছিলেন, হরিপ্রভার জীবনের পরবর্তী অধ্যায় সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আকারে বেশ কিছু তথ্য সেখানে পাওয়া যায়। সুরজিৎ দাশগুপ্ত অবশ্য উল্লেখ করেছেন, হরিপ্রভার পিতা শশীভূষণ বসুমল্লিক নিজেই 888sport appয় বুলবুল সোপ ফ্যাক্টরি স্থাপন করেন এবং উয়েমন তাকেদা ছিলেন ফ্যাক্টরির প্রধান টেকনিশিয়ান। সুরজিৎ দাশগুপ্ত আরো জানাচ্ছেন যে, পিতা নিজেই উপযাচক হয়ে উয়েমন তাকেদার সঙ্গে তাঁর জ্যেষ্ঠা কন্যা হরিপ্রভার ব্রাহ্মপ্রথায় বিবাহ দেন। তবে হরিপ্রভা তাকেদার বিবাহ-উত্তর জীবনের কিছু তথ্যগত ভুল সুরজিৎ দাশগুপ্তের দেওয়া বর্ণনায় সহজেই চোখে পড়ে।
সুরজিৎ দাশগুপ্ত লিখেছেন, হরিপ্রভা ছিলেন জাপানের মাটিতে পদার্পণ করা প্রথম ভারতীয় মহিলা। এই তথ্য যে ঠিক নয়, হরিপ্রভার নিজের রচনাতেই তার প্রমাণ আমরা পাই, টোকিওতে এক ভারতীয় পরিবারের অতিথি হওয়ার বর্ণনা যেখানে তিনি অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
সুরজিৎ দাশগুপ্ত আরো উল্লেখ করেছেন যে, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের শুরুতে উয়েমন ও হরিপ্রভা তাকেদা জাপানে চলে যান এবং জাপান থেকে ভারতের স্বাধীনতা-সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। জাপান-প্রবাসী ভারতীয় সংগ্রামী রাসবিহারী বসু ও নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু হরিপ্রভাকে জাপান বেতার থেকে আজাদ হিন্দ্ ফৌজের পক্ষে প্রচারের কাজে নিয়োগ করেছিলেন বলেও সুরজিৎ দাশগুপ্ত জানাচ্ছেন।
জাপান বেতার, সেই সময়ে রেডিও টোকিও নামে যে বেতারের অনুষ্ঠান প্রচারিত হতো, যুদ্ধকালীন সময়ে সেখানে ভারতীয় বিভাগে কর্মরত লোকজনের তালিকায় হরিপ্রভার কোনো উল্লেখ কোথাও পাওয়া যায় না। রেডিও জাপানের যুদ্ধকালীন বেতার-সম্প্রচার নিয়ে কাজ করা জাপানি গবেষক কিতাইয়ামা সেৎসুরোও হরিপ্রভা তাকেদার কোনো উল্লেখ কোথাও খুঁজে পাননি। এছাড়া সেই সময়ে জাপানে অবস্থানরত ভারতীয়দের মধ্যে পরবর্তীকালে আত্মজীবনী যারা লিখে গেছেন, তাঁদের রচনাতেও নেই হরিপ্রভার নাম। রাসবিহারী বসুর সচিবের দায়িত্ব পালনকারী সেই সময়ের তরুণ, দক্ষিণ ভারতীয় সি ভি লিঙ্গম এখনো জীবিত এবং টোকিওতে তাঁর নিবাস। ব্যক্তিগতভাবে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনিও 888sport app download for android করতে পারেননি হরিপ্রভা তাকেদা নামের কোনো মহিলাকে।
সত্তরের দশকের শেষদিকে টোকিওর ফরেন প্রেসক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব পালনকারী প্রয়াত ভারতীয় সাংবাদিক স্বদেশ দে রায়ের কল্যাণে চল্লিশের দশকের প্রথমার্ধে জাপানে বসবাসরত ভারতীয়দের সম্পর্কে ব্রিটিশ দূতাবাসের সংগ্রহ করা গোয়েন্দা-তথ্যাবলির বিস্তারিত যে ফাইল বর্তমানে আমার সংগ্রহে এসেছে, সেখানেও কোথাও হরিপ্রভা কিংবা উয়েমন তাকেদার নামের কোনোরকম উল্লেখ দেখা যায় না। ফলে, সেই সময়ে ঠিক কোথায় তাঁরা অবস্থান করছিলেন সে-সম্পর্কে সন্দেহ থেকেই যায়।
১৯৪১ সালের ২২শে অক্টোবর টোকিওর ব্রিটিশ দূতাবাস থেকে আর এল ক্রেইগি জাপানে ভারতীয় কর্মকাণ্ডের ওপর ৭০ পৃষ্ঠার বিস্তারিত যে রিপোর্ট লন্ডনের ফরেন অফিস ও ভারত সরকারের বহিঃসম্পর্ক বিভাগে পাঠিয়েছিলেন, তাকেদা পরিবারের অবস্থান-নির্ধারণের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে সেটিকে গণ্য করা যেতে পারে। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত জাপান-প্রবাসী ভারতীয়দের সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণই কেবল সেখানে অন্তর্ভুক্ত নেই, একই সঙ্গে কোন কোন সংগঠন জাপানে ব্রিটিশবিরোধী তৎপরতায় জড়িত থেকে ভারতীয়দের সাহায্য করে চলেছে এবং প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যে কাকে অর্থের লোভ দেখিয়ে কিনে নেওয়া সম্ভব, কাদেরকে ‘ভালো’ ভারতীয় হিসেবে গণ্য করা যায় এবং কারাই বা ক্ষয় হয়ে যাওয়া শক্তিতে পরিণত, তারও বিস্তারিত বর্ণনা অত্যন্ত গোপনীয় সেই রিপোর্টে আমরা পাই।
আরেকটি যে-তথ্যের উল্লেখ ক্রেইগ তাঁর সেই গোপন রিপোর্টে করেছেন, তা হলো, যুদ্ধ ঘনিয়ে আসার মুখে ভারতীয়দের জাপান ছেড়ে চলে যাওয়ার বর্ণনা। ১৯৪১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২৬ তারিখে ব্রিটিশ দূতাবাসের সহায়তায় এস এস আনহুই জাহাজে চেপে মোট ২২৭ জন ভারতীয় জাপান ত্যাগ করেন। এর বাইরে আরো পঁচাত্তর জন নিজেদের করে নেওয়া ব্যবস্থায় আগেই দেশের উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন।
উদ্ধারকারী জাহাজ এস এস আনহুইয়ের আরোহী হয়ে ভারতীয়দের একটি বড় অংশ জাপান ছেড়ে চলে যাওয়ার পর জাপানে থেকে যাওয়া মোট ভারতীয়দের 888sport free bet দাঁড়ায় ২১০ জনে। এদের মধ্যে পাত্র পঁচিশ জন টোকিওতে এবং পঁয়ত্রিশ জন ইয়োকোহামায় বসবাস করায় টোকিওর ব্রিটিশ দূতাবাসের জন্য ভারতীয়দের উপর নজর রাখা, এরপর থেকে স্বাভাবিকভাবেই অনেকটা সহজ হয়ে গিয়েছিল। নতুন করে জাপানে আসা কোনো ভারতীয়র উল্লেখ ক্রেইগ তাঁর সেই রিপোর্টে করেননি। ফলে হরিপ্রভা তাকেদার সেই সময়ে জাপান আসার সমর্থনে কোনোরকম তথ্য কোথাও মেলে না।
ভিন্ন এক সূত্রে অবশ্য জানা যায় যে, যুদ্ধের পুরো সময় ধরে তাকেদা-পরিবার ভারতেই অবস্থান করছিলেন এবং শত্রুদেশের নাগরিক হিসেবে উয়েমন তাকেদাকে তখন কারাবন্দি করা হয়েছিল। সম্ভবত জেল থেকে বের হয়ে ভগ্ন স্বাস্থ্যে তাঁকে মৃত্যুবরণ করতে হয়, যে-তথ্যের খোঁজ সুরজিৎ দাশগুপ্তের দেওয়া নির্দেশিকাতেও মেলে।
মুনতাসীর মামুন বড় যে-কাজটি তাঁর 888sport liveে করেছেন, তা হলো, আমাদের ইতিহাস ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে হরিপ্রভা তাকেদার অবস্থান সঠিকভাবে তিনি চিহ্নিত করে দিয়েছেন। হরিপ্রভা যে আসলেই ছিলেন 888sport app শহরের প্রথম আধুনিক চিন্তাভাবনা পোষণকারী মহিলা, সে-বিষয়ে সন্দেহ থাকার কোনো সুযোগ এখন মনে হয় আর নেই। ফলে যা প্রয়োজন তা হলো, বিদুষী সেই রমণীর জীবনী-রচনায় কারো এগিয়ে আসা। মুনতাসীর মামুন নিজেই হতে পারেন এই কাজে সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি। আর আমরা যারা হরিপ্রভা-ভক্ত, দূর থেকে সবরকম সাহায্য যুগিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি তাদের পক্ষ থেকে রইল।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.