কয়েক বছর আগে বাংলা একাডেমী থেকে যখন ইংরেজি-বাংলা অভিধান প্রকাশিত হলো তখন 888sport app শহরে রীতিমতো আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। মানুষজনকে লাইন দিয়ে অভিধানটি কিনতে দেখেছি। এর অবশ্য অনেক কারণ থাকতে পারে। বাজারে সস্তায় অভিধান না পাওয়া এবং ইংরেজির চাহিদা। তবে, এ. টি. দেবের অভিধান বাজারে সবসময়ে পাওয়া যেত বা কলকাতা থেকে আমদানি করা অভিধানও। তবে, 888sport appর বিশেষজ্ঞরা এটি তৈরি করেছেন। এর মধ্যে এক ধরনের চাপা অহংবোধও ছিল। এ-অভিধান এখানকার ছাত্রদের চাহিদা মিটিয়েছে এবং এখনো তা বেস্ট-সেলার তালিকায় আছে।
এ-প্রসঙ্গে একটি কথা বলা যেতে পারে। নিজেদের সম্পর্কে আমরা এতো কম জানি যে, যা দেখি তাতেই বিস্মিত হই এবং ভাবি এ-ধরনের কাজটি বোধহয় প্রথম হলো। এ-বিষয়টি আমাদের মনে হয় কিনা জানি না যে, অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের ঐতিহ্য আছে এবং তা বেশ পুরনোও।
সেই অষ্টাদশ শতকেই বাংলাভাষা নিয়ে অভিধান প্রকাশিত হয়েছিল। বাংলাভাষায় কিন্তু রোমান হরফে ছাপা বইও প্রথম প্রকাশিত হয় লিসবনে। ১৭৪৩ সালে, প্রায় একই সঙ্গে তিনটি বই মুদ্রিত হয়েছিল। এর মধ্যে একটির রচয়িতা পাদরি মানোএল দা আসসুম্পসাম। তাঁর রচিত গ্রন্থের নাম কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ। রোমান ক্যাথলিক ধর্মের বিশ্বাস ও অনুষ্ঠানাদি নিয়ে মানোএল ভাওয়ালে বসে গ্রন্থটি রচনা করেছেন বলে অনুমিত।
অন্যদুটি বই হলো ব্রাহ্মণ-ক্যাথলিক-সংবাদ ও পর্তুগীস-বাংলা শব্দকোষ। অধিকাংশ গবেষক মনে করেন, অভিধানটির রচয়িতাও মানোএল, কিন্তু কিছুদিন আগে তারাপদ রায় বিভিন্ন তথ্য পরীক্ষা করে দেখিয়েছেন যে, শেষোক্ত দুটি গ্রন্থের রচয়িতা দোম আন্তনিও দো রোজারিও। ভাওয়ালে বসেই এ-দুটি পাণ্ডুলিপি তিনি রচনা করেছিলেন। তারাপদ রায়ের ব্যাখ্যা মেনে নিলে বলতে হয়, প্রথম অভিধানটির রচয়িতা একজন বাঙালি এবং তিনি বসবাস করতেন ভাওয়ালে অর্থাৎ পূর্ববঙ্গে।
যতীন্দ্রমোহন ভট্টাচার্য বাংলা অভিধান গ্রন্থের পরিচয় নামে একটি বই লিখেছিলেন। সে-বইটিতে উনিশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রকাশিত বিভিন্ন অভিধানের পরিচয় আছে। তিনি জানিয়েছেন, বাংলাভাষায় মুদ্রিত প্রাচীনতম অভিধানটি মুদ্রিত হয়েছিল ১৭৯৩ সালে। আদি গবেষকরা ফরস্টারকে বাংলা অভিধানের পথিকৃৎ বলে সম্মানিত করেছেন। এইচ. পি. ফরস্টারের ‘ইংরাজী-বাঙলা’ অভিধানের প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয় ১৭৯৯ সালে। যতীন্দ্রমোহন যে-অভিধানটি খুঁজে পেয়েছেন তার নামপত্র পাওয়া যায়নি, তবে সে-সম্পর্কিত কিছু বিজ্ঞাপনের উল্লেখ তিনি করেছেন। গ্রন্থের ভূমিকায় এর নাম দেওয়া আছে – ইঙ্গরাজি ও বাঙ্গালি বোকেবিলরি। বিজ্ঞাপনসূত্রে জানা যায়, আপজন নামে জনৈক ইংরেজ কলকাতার ক্রনিকাল প্রেসে এটি ছাপাচ্ছিলেন। গ্রন্থের অগ্রিম অর্ডারও তিনি গ্রহণ করছেন। সাধারণত সেই সময় লেখকই বিজ্ঞাপন দিয়ে অগ্রিম অর্ডার সংগ্রহ করতেন। সে-সূত্রে অনুমান করে নিতে পারি অভিধানটির রচয়িতা আপজনই।
যতীন্দ্রনাথ অভিধানটির ভূমিকা উদ্ধৃত করেছেন – ‘‘ইঙ্গরাজি ও বাঙ্গালি বোকেবিলরি/ An Extensive/ Vocabulary,/ Bengalese and English/ very useful/ To Teach the Natives English,/ And/ To Artist Beginners in Learning/ The Bengal Language,/ Calcutta,/ Printed at the Chronicle Press/ MDCCXCIII (1793)/ pp 445.’
-Preface
The Author spent ten years in compiling and revising this work. He is very sensible of its defects; but as it is the first of the kind, and promises much utility in diffusing the English language among the Natives, he hopes it will be candidly received by the publick. The Printer engages to furnish to every Purchaser a complete Index, as soon as it can be prepared gratis.’ বাঙালি-রচিত প্রথম ইংরেজি-বাংলা অভিধান রচনার কৃতিত্ব দেওয়া যেতে পারে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের সহকারী গ্রন্থাগারিক মোহনপ্রসাদ ঠাকুরকে। তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। রেভারেন্ড লং উল্লেখ করেছেন, মোহনপ্রসাদের অভিধানটি ১৮০৫ সালে প্রকাশিত হয়েছিল, যতীন্দ্রমোহন লিখেছেন ১৮১০ সালে। লংয়ের ক্যাটালগে উল্লেখ করা হয়েছে :
“ThakurÕs Bengali and English Vocabulary, 1st ed. 1805, 3rd ed. 1852. Sanders Cones Co., pp 166, 8 as; Compiled originally for Fort William College, at the suggestions of Dr. Carey. It gives terms on the following subjects : Theology, Physiology, Natural History, History, Domestic Economy in Bengali and the Romanised Bengali character. It also gives the names of plants used in the Materia Medica, and of useful trees and plants. The author was Assistant Librarian to Fort William College.Ó
যতীন্দ্রমোহন বাংলা বইয়ের একটি পঞ্জি তৈরি করেছিলেন। সেখানে উল্লেখ করেছেন, ১৮৫৭ সালে [888sport appর] বাঙ্গালা যন্ত্র থেকে একটি অভিধান প্রকাশিত হয়েছিল। ওই সময়ে 888sport appয় দুটি মুদ্রণযন্ত্র ছিল বটে কিন্তু অভিধান ছাপার মতো হরফ ও দক্ষ কম্পোজিটর ছিল না। তাছাড়া, বাঙ্গালা যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছিল ষাটের দশকে। আসলে, এটি ছাপা হয়েছিল কলকাতা থেকে, যতীন্দ্রমোহনের অভিধান বিষয়ক গ্রন্থেই তার পরিচিতি আছে।
এ-পর্যন্ত জানা তথ্য অনুসারে, পূর্ববঙ্গের যিনি প্রথম অভিধান রচনা করেছিলেন তাঁর নাম নবকুমার নাথ। যতীন্দ্রমোহন তাঁর রচিত অভিধানের প্রথম ৮ পৃষ্ঠা দেখেছিলেন। আমি এর অনেক খোঁজ করেছি কিন্তু কোনো কপি পাইনি। ছাত্রদের জন্য ইংরেজি-বাংলার একটি সংক্ষিপ্ত অভিধান নবকুমার তৈরি করেছিলেন, কিন্তু তা প্রকাশিত হয়েছিল শ্রীরামপুর থেকে। নবকুমার হয়ত কোনো স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। তাঁর অভিধানের নামপত্র ছিল এরকম :
“A/ Vocabulary / English and Bengalee / with their / English meaning / for the use of students / By Nobocoomar Nauth / Serampore: / Printed at the Tomohaur Press./ 1861. / Price Six Annas, … মূল্য / ছয় আনা মাত্র।”
নবকুমার কয়েক লাইনের একটি ভূমিকা লিখেছিলেন:
“Preface :- The want of a vocabulary of common but hidden words, has led me to compile a book of the kind. I will think myself highly rewarded, if it meets with the approbation of the readers. Jessore, N.C. Nauth Ó
July, 1861
যতটুকু খোঁজ পেয়েছি তাতে মনে হয়, পূর্ববঙ্গ থেকে প্রকাশিত প্রথম অভিধান শব্দদীধিতি অভিধান। শ্যামাচরণ চট্টোপাধ্যায়-সংকলিত সংস্কৃত-বাংলা এ-অভিধানটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৬৪ সালে 888sport app থেকে। সে-হিসেবে এটিকে 888sport app থেকে প্রকাশিত প্রথম অভিধান হিসেবেও চিহ্নিত করা যায়। ৭০৮ পৃষ্ঠার বইটির দাম ছিল চার টাকা। মুদ্রিত হয়েছিল ‘বাঙ্গালা যন্ত্রে’।
শ্যামাচরণ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। তাঁর ভূমিকা থেকে অনুমান করে নিতে পারি তিনি শিক্ষাবিভাগে চাকরি করতেন। বহরমপুর কলেজে অধ্যাপনা করার সময়ে বা তার আগে অভিধানটি রচনা করেছিলেন। তবে, বহরমপুর থাকার সময়েই কলকাতায় অভিধানটির মুদ্রণ শুরু হয়। এ-সময়ে শ্যামাচরণ বদলি হয়ে যান 888sport app নর্মাল স্কুলে। ফলে, বাকি অংশ মুদ্রিত হয় বাঙ্গালা যন্ত্রে।
যতীন্দ্রনাথ শ্যামাচরণের আরো ৭টি গ্রন্থের সন্ধান পেয়েছেন। তাতে মনে হয়, অধ্যাপনার পাশাপাশি শ্যামাচরণ নিয়মিত লেখালেখি করতেন এবং এমন সব বিষয় বেছে নিয়েছিলেন যাতে ছাত্ররা উপকৃত হয়। তাঁর রচিত 888sport app গ্রন্থগুলো হচ্ছে ঋজু বিবৃতি, ১৮৮০; জনৈক ডেপুটি কালেকটারের আত্মবিবরণ, ১৮৭৭; জ্যোতির্ব্বিদ, ১৮৬৫; নেপোলিয়ন বোনাপার্টের জীবনী, ১৮৬৯; বাঙ্গালা ব্যাকরণ, ১৮৬৭-এর আগে; বিবিধ পাঠ, ৩য় সংস্করণ, ১৮৫৭, ভূগোলাঙ্কুর, ১৮৬৩ এবং সরল অভিধান, ১৮৮০। সরল অভিধান খুব সম্ভবত শব্দদীধিতির সংক্ষিপ্ত সংস্করণ।
১৮৬৪ সালে কলকাতার সোমপ্রকাশ পত্রিকা শব্দদীধিতির একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেছিল :
“ধাতু ও লিঙ্গ বিনির্ণয় সমেত শব্দদীধিতি অভিধান প্রচারিত হইয়াছে। প্রাচীন দেশ নগরাদির বর্তমান নাম যতদূর সংগ্রহ করিতে পারা গিয়াছে, সন্নিবেশিত হইয়াছে। পুস্তকখানি আট পেজী ফর্মার ৭০৮ পৃষ্ঠা হইয়াছে। মূল্য স্বাক্ষরকারির প্রতি (ডাকমাসুল সমেত) ৩ ॥ টাকা এবং বিনা স্বাক্ষরকারীর প্রতি ৪ টাকা। যাঁহার প্রয়োজন হয়, 888sport app নর্ম্মাল বিদ্যালয়ে আমার নিকট মূল্য প্রেরণ করিলে অবিলম্বে পুস্তক পাইবেন। স্বাক্ষরকারীরা দুই মাসের মধ্যে পুস্তক গ্রহণ না করিলে বিনা স্বাক্ষরকারীর মধ্যে গণনীয় হইবেন ইতি।
888sport app
নর্ম্মাল বিদ্যালয়
শ্রী শ্যামাচরণ চট্টোপাধ্যায়
৪ আষাঢ় ১২৭১
অভিধানের নামপত্রটি বাংলা ইংরেজি দুভাষায়ই মুদ্রিত হয়েছে –
Shubda Didhitee / A/ Dictionary / in / Sanscrit and Bengali / by / Shama Churn Chatterjeea / Second Master / Dacca Normal School.শব্দদীধিতি অভিধান/ প্রচলিত সংস্কৃত শব্দ, নতুন সংকলিত শব্দ ও বাঙ্গলা ভাষায়/ তাহাদের অর্থ, ধাতু এবং লিঙ্গ বিনির্ণয় সমেত/ শ্রী শ্যামাচরণ চট্টোপাধ্যায় সংকলিত/ 888sport app বাঙ্গালা যন্ত্রে/ মুদ্রিত/ সন ১২৭১/ জ্যৈষ্ঠ/ মূল্য চার টাকা।
শ্যামাচরণ কেন অভিধানটি রচনা করেছিলেন তার ব্যাখ্যা তিনি ভূমিকায়ই দিয়েছিলেন :
“দিন দিন বাঙ্গালা ভাষার উন্নতি ও তৎসঙ্গে সঙ্গেই বিবিধ নূতন শব্দ ব্যবহৃত হইতেছে। বাঙ্গালা ভাষায় বিবিধ ভাবপ্রকাশক শব্দের অত্যন্ত অভাব আছে, সুতরাং বাঙ্গালা গ্রন্থপ্রণেতা মাত্রেই নূতন নূতন শব্দ প্রণয়ন ও অনেক অব্যবহৃত শব্দ প্রয়োগ করিয়াছেন, সেই সমুদায় শব্দের অর্থ প্রায় কোন অভিধানেই পাওয়া যায় না, তন্নিমিত্ত বাঙ্গালা পাঠকগণের নিকট এই ভাষা সময়ে সময়ে এক অভিনব ভাষা বলিয়া প্রতীয়মান হয়; আমি সেই অভাব পরিহারে কৃতসঙ্কল্প হইয়া প্রথমতঃ নানাবিধ বাঙ্গালা পুস্তক পাঠ করিয়া বহুসংখ্যক নূতন শব্দ সংগ্রহ করি। পরে নানাবিধ কোষ হইতে যাবতীয় প্রয়োজনীয় শব্দ সংগ্রহ করিয়া ধাতু ও লিঙ্গ সহিত শব্দদীধিতি নামে এই অভিধানখানি প্রচারিত করিলাম। ইহাতে ইতরভাষাশব্দ প্রায় পরিত্যক্ত হইয়াছে। প্রাচীন দেশ নগরাদির বর্তমান নাম যতদূর সংগ্রহ করিতে পারিয়াছি সন্নিবেশিত করিয়া দিয়াছি। ইংরাজীভাষাভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সুগমার্থ ইংরাজী হইতে 888sport app download apk latest versionিত নূতন সঙ্কলিত শব্দের অর্থ মধ্যে মধ্যে ইংরাজীতেও লিখিত হইয়াছে।”
শ্যামাচরণ ভূমিকায় লিখেছিলেন – “দুইটি ব থাকিলেও বাঙ্গালা ভাষায় উহার কোনো প্রভেদ না থাকাতে বর্গীয় ব লিখিবার সময় সমুদায় ব-কারাদি শব্দ লিখিত হইয়াছে। ক ও মূর্ধণ্য ষ মিলিয়া ক্ষ হয়। ইহা স্বতন্ত্র বর্ণ নহে; এই নিমিত্ত ক্ষ স্বতন্ত্র না লিখিয়া ক-কারের পর সন্নিবেশিত হইয়াছে।”
শ্যামাচরণের অভিধান থেকে উদাহরণস্বরূপ কিছু শব্দ ও অর্থের উদ্ধৃতি দিচ্ছি :
অনুগামিন্ (ক্রি) পশ্চাদগামী, সঙ্গী।
ইক্ষ¡াকু (পু) সূর্য্যবংশীয় প্রথম রাজা।
ঈশা (স্ত্রী) লাঙ্গলের ইষ্। দুর্গা।
উত্তমাঙ্গ (ক্লী) মস্তক।
ঊষা (স্ত্রী) অনিরুদ্ধের ভার্যা।
কলম্ব (পু) বাণ। শাকের ডাঁটা।
গন্ধজাত (ক্লী) তেজপত্র, তেজপাতা।
ঘনসার (পু) কর্পূর। পারদ। জল।
চাত্বাল (পু) গর্ত, গহ্বর।
ধীরস্কন্ধ (পু) মহিষ।
সত্তরের দশকে প্রকাশিত আমরা আরো তিনটি অভিধানের নাম পাই, যেগুলো ঠিক সাধারণ অভিধান ছিল না। সেগুলো ছিল গারোভাষা, চিকিৎসা ও ভাষা বিষয়ক।
গগনচন্দ্র ধর সংকলন করেছিলেন বাংলা-গারো অভিধান – গারোভাষা। মুক্তাগাছার আনন্দ যন্ত্রে চন্দ্রকুমার সরকার তা মুদ্রিত করেছিলেন। গগনচন্দ্র হয়ত সুসং দুর্গাপুরে কার্যোপলক্ষে থাকতেন এবং গারোদের সংস্পর্শে এসেছিলেন। ৫৫ পৃষ্ঠার বইয়ের দাম ছিল ২ আনা ৬ পাই। ছাপা হয়েছিল ৫৪১ কপি।
সিদ্ধেশ্বর কবিরাজের অভিধানটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৭৮ সালে যশোর থেকে, কিন্তু ছাপা হয়েছিল কলকাতায়। এর নাম দ্রব্যার্থ চন্দ্রিকা, প্রথম খণ্ড। বাকি খণ্ডগুলো হয়তো ছাপা হয়নি, কারণ, প্রথম খণ্ডের পর আর কোনো খণ্ড চোখে পড়েনি। অক্টেভো আকারের অভিধানটি খুব বড় কিছু নয়, ৬৮ পৃষ্ঠার। ছাপা হয়েছিল ৫০০ কপি কিন্তু দাম সে-সময়ের তুলনায় ছিল অত্যন্ত বেশি – ১২ আনা। বেঙ্গল লাইব্রেরি ক্যাটালগে কিন্তু এর ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে এ বলে :
A valuable dictionary. It was a long desideratum. The work contains descriptions of drugs from approved word of Hindu medicine. The corresponding European scientific nomenclature is also given. 888sport app থেকে ১৮৭৯ সালে প্রকাশিত হয়েছিল কাশীনাথ দাসগুপ্তের শব্দদীপিকা। অভিধানটি গিরিশযন্ত্রে ছেপেছিলেন মওলা বক্স। অক্টেভো আকারের অভিধানটি ছিল ১৬০ পৃষ্ঠার। ছাপা হয়েছিল ৫০০ কপি। দাম ১ টাকা।
বেঙ্গল লাইব্রেরি ক্যাটালগ অভিধানটি সম্পর্কে মন্তব্য করেছিল – ‘This dictionary is stated to be prepared on a novel plan, which consists in arranging words by a reference, not to their initial, but to their final letters. The sanskrit dictionary Medini is prepared on this plan.
888sport app বা পূর্ববঙ্গ থেকে এরপর নিশ্চয় আরো কিছু অভিধান প্রকাশিত হয়েছিল, যার সন্ধান আমাদের জানা নেই। তবে আশির দশক থেকে আবার কিছু কিছু অভিধানের নাম পাই। নামের তালিকা থেকে যে-বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে তা হলো, বিচিত্র বিষয়ে সব অভিধান প্রকাশিত হচ্ছে এবং সে-ধারা অব্যাহত ছিল বিশ শতকের দ্বিতীয় দশক পর্যন্ত। পূর্ববঙ্গ/888sport appর জাগরণের সময়কালটি উনিশ শতকের আশির দশক। বিভিন্ন বিষয়ের অভিধান-প্রকাশ জাগরণের সময়ের কৌতূহলই তুলে ধরে।
কাশীনাথের অভিধানের পর যে-অভিধানটির খোঁজ পেয়েছি তা বিশালই বলতে হবে। কালীমোহন রায়চৌধুরী-সংকলিত তিন খণ্ডে, দু হাজার পৃষ্ঠার অভিধানটির নাম ছন্দোবোধ শব্দসাগর। প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৮৩ সালে রংপুর থেকে। কালীমোহন কালেকটারিতে সেরেস্তাদারি করতেন। চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর অভিধানটি রচনা করেন। নিচে তিন খণ্ডের পরিচিতি তুলে ধরছি –
কালীমোহন রায়চৌধুরী
ছন্দোবোধ শব্দসাগর
১ম খণ্ড,
কালাচাঁদ দাস কর্তৃক হরিদেবপুর লোকরঞ্জন শাখা যন্ত্রালয় থেকে মুদ্রিত।
পৃ. ৫৮০। ১২ ডিমাই । মূল্য ২ টাকা ৪ আনা। মুদ্রণ888sport free bet ১০০০। ১৮৮৩।
কালীমোহন রায়চৌধুরী
ছন্দোবোধ শব্দসাগর
দ্বিতীয় খণ্ড
ত-ন পর্যন্ত
কালাচাঁদ দাস কর্তৃক হরিদেবপুর লোকরঞ্জন শাখা যন্ত্রালয় থেকে মুদ্রিত।
পৃ. ৫৮১-১২৮৮। ১২ ডিমাই । মূল্য ২ টাকা ৪ আনা। মুদ্রণ888sport free bet ১০০০। ১৮৮৩।
কালীমোহন রায়চৌধুরী
ছন্দোবোধ শব্দসাগর
তৃতীয় খণ্ড
ন-হ পর্যন্ত
কালাচাঁদ দাস কর্তৃক হরিদেবপুর লোকরঞ্জন শাখা যন্ত্রালয় থেকে মুদ্রিত।
পৃ. ১২৮৯-১৯৯৯। ১২ ডিমাই । মূল্য ২ টাকা ৪ আনা। মুদ্রণ 888sport free bet ১০০০। ১৮৮৩।
লেখক প্রথম খণ্ডে চার পাতার এক 888sport app download apkয় তাঁর বংশপরিচয় দিয়েছেন। উল্লেখ করেছেন, মহারাজ আদিশূর যজ্ঞের জন্য কনৌজ থেকে যে-পাঁচজন ব্রাহ্মণ এনেছিলেন তাঁদের একজন তাঁর পূর্বপুরুষ। তাঁর পূর্বপুরুষ কুণ্ডী পরগণার ছোটখাটো জমিদার ছিলেন। তবে, জমিদারি অনেক আগেই হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল। তাঁর বাবার নাম হরমোহন রায়চৌধুরী। কালীমোহন সেরেস্তাদার ছিলেন। সে-পদ থেকে অবসর নিয়ে তিন খণ্ডে এ-অভিধানটি রচনা করেন। 888sport app download apkয় তিনি জানিয়েছেন :
“জজের কেরাণীগিরি রংপুর জেলায়
একটীন্ ম›সফি আদি করেন তথায়।।
জলপাই কমিস্নর কর্ণেল হটন।
কার্য্যরে দক্ষতা দেখি হ’য়ে হৃষ্ট মন।।
তদধীনে সেরেস্দারী পদ দিল তাঁয়।
সেই কালে কিছু দিন তথায় কাটায়।।
সেই এবলিসে লইয়া পেন্সন।
বাড়ীতে বসিয়া তিনি আছেন এখন।।
উপযুক্ত পুত্র এক আছিল তাঁহার।
তদভাবে এবে তাঁর নাম থাকা ভার।।
তাতেই বাঙ্গালাভাষা অভাব মোচন।
মনে করি করে এই গ্রন্থের সৃজন।।
যদি ইহা সাধারণে সমাদৃত হয়।
হইবে অক্ষয় কীর্ত্তি ভুবনে নিশ্চয়।।
গ্রন্থকার পরিচয় বিখ্যাত যেমন।
মুকুটী অমৃত লাল করিল রচন।।”
অভিধানটিতে কী ছিল? নামপত্রেই সে-সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় – “বাঙ্গালা ভাষায় প্রচলিত সংস্কৃত, বাঙ্গালা, যাবনিক, ইংরেজি ও রঙ্গপুরের ব্যবহার্য্য যাবতীয় শব্দনিচয়ের উচ্চারণক্রমে ছন্দোবন্ধাদি লিখনোপযোগী শ্রেণীবদ্ধ অভিধান।’’
ভূমিকায় কালীমোহন এ-বিষয়ে আরো বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন – “…মূল বাঙ্গালায় প্রচলিত ভাষেত্যাদির শব্দসিন্ধু আলোড়ন করিয়া নূতন প্রণালীতে এই অভিধানখানি আবিষ্কার করা হইল, অর্থাৎ বাঙ্গালা ভাষায় যে-সকল অভিধান আছে তদ্দ¡ারা গান, 888sport app download apk কি ছন্দোপযোগী শব্দনিচয়ের একত্র সমাবেশসূচক কোনো গ্রন্থ না থাকায় ছন্দানুরাগী মহোদয়গণের মনের ভাব অনেক সময়ে মনেই বিলীন হইয়া থাকে, উপরন্তু তন্মধ্যে যদিও শব্দসমুদয় শ্রেণীবদ্ধমতে লিখিত হওয়ার কোনো ত্রুটি নাই, তথাপি সময়ে ২ হঠাৎ দৃষ্টিতে একটী শব্দ অনুসন্ধান করিতে বিশেষ বৈরক্তি অনুভূত হইয়া থাকে। তত্তৎ অভাব দূরীকরণ মানসে সংস্কৃত ও সাধুভাষা ও বাঙ্গলার প্রচলিত ইংরেজী, যাবনিক ও রঙ্গপুরের ভাষেত্যাদির যাবদী[য়] শব্দের উচ্চারণ প্রতি দৃষ্টি করিয়া, একাক্ষরাদি পর্য্যায়ে, শেষ অক্ষরের অকারাদি ক্রমে মিল রাখিয়া নিম্নের লিখিত শ্রেণীবদ্ধমতে বহু পরিশ্রমে, এই ছন্দোবোধ শব্দসাগর নামক পুস্তকখানি প্রস্তুত হইল…’’
১৮৯৪ সালেও কালীমোহন রায় চৌধুরী-সংকলিত একই শিরোনামে একটি সংকলনের খোঁজ পাই। এটি নতুন কোনো সংকলন কিনা তা জানতে পারিনি। তবে এর দাম ২ টাকা ৪ আনা থাকলেও পৃষ্ঠা888sport free bet ৭১৪। কোনো খণ্ডের দ্বিতীয় সংস্করণও নয়। খুব সম্ভব ২০০০ পৃষ্ঠার অভিধানটির একটি সংক্ষিপ্ত রূপ হতে পারে ১৮৯৪ সালে প্রকাশিত ছন্দোবোধ শব্দসাগর। সেক্ষেত্রে এটিকে স্বতন্ত্র খণ্ড হিসেবে বিবেচনা করাই শ্রেয়।
এরপর আশির দশকে প্রকাশিত আরো তিনটি অভিধানের খোঁজ পাই যেগুলো প্রকাশিত হয়েছিল চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও 888sport app থেকে। চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত অভিধানটির নাম সংস্কৃত শব্দসাধন। রায়গোবিন্দ চক্রবর্তী কর্তৃক শারদ যন্ত্রে মুদ্রিত। প্রকাশকাল ১০-১-১৮৮৫। ৪৮ পৃষ্ঠার অভিধানটির আকার ছিল ১২ ডিমাই। মুদ্রণ888sport free bet ১০০০। দাম ৬ আনা।
বাংলা-গারো আরেকটি অভিধান প্রকাশিত হয়েছিল ময়মনসিংহ থেকে। মাত্র ২৬ পৃষ্ঠার অভিধানটি সংকলন করেছিলেন গোবিন্দচন্দ্র দে। নাম – আমোদ বা গারোভাষা। আকার ১২ ডিমাই। মুদ্রণ888sport free bet ১০০০। মূল্য ১ আনা ৬ পাই।
তবে, উল্লেখযোগ্য ছিল 888sport app থেকে প্রকাশিত চিকিৎসাবিষয়ক অভিধানটি।
১৮৮৯ সালে 888sport app থেকে প্রকাশিত হয় এ-অভিধান – ডাক্তারি অভিধান। লেখক হরিপ্রসাদ চক্রবর্তী। হরিপ্রসাদ চক্রবর্তী সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারিনি। তবে তাঁর এই অভিধানটি ছাড়াও আমি তাঁর লেখা আরো সাতটি বইয়ের খোঁজ পেয়েছি। এতে মনে হয়, হরিপ্রসাদ ডাক্তার ছিলেন এবং চিকিৎসাশাস্ত্রের বিভিন্ন বিষয়ে লিখতেন। 888sport appয় মিটফোর্ড মেডিক্যাল স্কুল চালু হওয়ায় বাংলায় লেখা বইয়ের চাহিদাও ছিল। হরিপ্রসাদের 888sport app যেসব বইয়ের খোঁজ পেয়েছি, সেগুলো হলো :
১. হোমিওপ্যাথিক ভৈষজ্যতত্ত্ব ও চিকিৎসা প্রদর্শিকা, ১৮৮৬
২. হোমিওপ্যাথিক ঔষধের ক্রম ও মাত্রা, ১৮৮৬
৩. হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা প্রদর্শিকা, ১৮৮৬
৪. ভৈষজ্য বিধান, ১৮৯৩
৫. হোমিওপ্যাথি-মতে জ্বর-চিকিৎসা
৬. হোমিওপ্যাথিক নব ঔষধাবলি
৭. হোমিওপ্যাথি-মতে ওলাওঠার চিকিৎসা, ১৮৯৮
উল্লেখ্য, সবগুলো বই-ই প্রকাশিত হয়েছিল 888sport app থেকে। ডাক্তারি অভিধানের নামপত্র – ডাক্তারি অভিধান। অর্থাৎ “ডাক্তারি বাঙ্গলা পুস্তকে ব্যবহৃত ইংরেজি ও বাঙ্গলা দুরূহ পারিভাষিক শব্দের অর্থ ও ব্যাখ্যা।’’ পৃষ্ঠা888sport free bet ২০৪, সঙ্গে ছিল ৬৭ পৃষ্ঠার একটি পরিশিষ্ট। সচরাচর প্রচলিত আয়ুর্বেদোক্ত দুরূহ শব্দের অর্থ দেওয়া হয়েছিল পরিশিষ্টে। ১৯০১, ১৯১২ ও ১৯২৬ সালেও এর সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল। হরিপ্রসাদ ভূমিকায় জানিয়েছিলেন, “ডাক্তারি বাঙ্গলা পুস্তকে ব্যবহৃত কঠিন কঠিন পারিভাষিক শব্দের অর্থ ও উচ্চারণ সহজে জানিতে পারা যায় বাঙ্গলায় এরূপ কোনো পুস্তক প্রায় দেখা যায় না। তাই ইংরেজি ভাষানভিজ্ঞ প্রথম শিক্ষার্থীদিগের সাহায্যার্থে এই ক্ষুদ্র অভিধান সংকলিত হইল।” উদাহরণস্বরূপ কয়েকটি শব্দের পরিভাষা উদ্ধৃত করছি :
ardent fever অভিন্যাস জ্বর
osteology অস্থিবিদ্যা
ওন্ট এল কালি ক্ষারঘ্ন ঔষধ
ভাইব্রেশন পরিদোলন
laxative মৃদু বিরেচক
নিউমোনিয়া ফুসফুস প্রদাহ
piamater মৃদু মাত্রিকা
scapula স্কন্ধাস্থি
fatty রসাময়
puberty বয়স্থতা
নব্বই দশকে প্রকাশিত চারটি অভিধানের খোঁজ পাই। এগুলো প্রকাশিত হয়েছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বগুড়া এবং রংপুর থেকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য উর্দু-বাংলা অভিধান। অভিধানটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৯৪ (১৩০১) সালে, তা-ও আবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে। মুন্সি কুলচন্দ্র গুপ্ত সংকলন করেছিলেন অভিধানটি, নাম সংক্ষিপ্ত উর্দ্দু ভাষাভিধান। ৪২ পৃষ্ঠার অভিধানটি মুদ্রিত হয়েছিল হিতৈষিণী যন্ত্রে। দাম ৪ আনা। কুলচন্দ্র আরো কয়েকটি বই লিখেছিলেন।
উর্দ্দু ভাষাভিধান কেন তৈরি করেছিলেন কুলচন্দ্র? কারণটি ভূমিকায়ই উল্লেখ করেছেন –
“যাহাতে গুরূপদেশ বিনা নবোৎসাহী উর্দ্দু শিক্ষার্থিগণ অল্পায়াস ও সহজ উপায়াবলম্বনে উর্দ্দু ভাষাভ্যাসে সমর্থ হইতে পারেন, তন্মানসে অনেক বিজ্ঞজনানুরোধে ইতিপূর্ব্বে বহুল পরিশ্রম স্বীকারে অত্যুৎকৃষ্ট উর্দ্দু ভাষায় বিরচিত বাগবাহার সংজ্ঞক পুস্তক বঙ্গাক্ষরে বিন্যস্ত করত, উর্দ্দু শিক্ষা সোপান নামে সহস্রখণ্ড মুদ্রাঙ্কন করা হয়। উক্ত পুস্তক উর্দ্দুভাষাগত স্বতঃ সংশ্লিষ্ট কথঞ্চিৎ আরবী ও পারস্য ভাষা বিমিশ্রিত থাকায় উর্দ্দু শিক্ষাভিলাষী ভ্রাতৃগণের মধ্যে অনেকে তদভ্যন্তরস্থ গুরূপদেশ বিনা অনববোধগম্য শব্দসমূহের একখানা বঙ্গার্থ বহি প্রকটনার্থ আগ্রহাতিশয় প্রকাশ করেন। তদনুরোধে অবরুদ্ধ হইয়া বাগবাহারার্থ ও তদতিরিক্ত সচরাচর ব্যবহার্য্য বহুল শব্দ সংযোজন ও পরিবর্দ্ধনে সংক্ষিপ্ত উর্দ্দু ভাষাভিধান নামকরণে এই ক্ষুদ্র পুস্তক প্রস্তুত ও প্রকাশ করিলাম।”
বইটি কয়েকভাগে বিভক্ত : ‘উর্দ্দু ভাষাভিধান, পরিশিষ্ঠ[ষ্ট], উর্দ্দো 888sport free betবাচক শব্দ ১ হইতে ১০০ পর্যন্ত, হিন্দী ও পারস্য ভাষায় দিবসের নাম, হিন্দী মাসের নাম।’ যেমন,
আগাজ আরম্ভ
আদালত বিচার
আবাদ উথিত
আছ্দা সন্তৃপ্ত
আমন্ নিরুদ্বেগ।
পরিশিষ্টে কথোপকথনের নমুনা দেওয়া হয়েছে। যেমন –
“১৩। জাহাঁগীর নগরছে আতাহুহাঁ, ফরীদ্পুর জ্জানেকা এরাদা রাক্ষ্তাহোঁ।
১৩। জাহাঁগীরনগর হইতে আসিতেছি, ফরীদপুর যাওয়ার বাসনা রাখি।”
‘উর্দ্দো 888sport free betবাচকে’র উদাহরণ –
১ এক
২ দো
৩ তিন
৪ চার
৫ পাঁচ।
হিন্দী ফার্সী ও বাংলা শব্দের কিছু অর্থও দেওয়া হয়েছে। যেমন – “হিন্দী পারস্য বাঙ্গালা
১। ছনীচর সম্বা শনি
২। এতোয়ার এক সম্বা রবি।”
হিন্দী মাসের নাম –
“চুয়েৎ আছার কোঞার পোছ
বয়ছাখ ছাওন কাতেক মাঘ।”
১৮৯৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে প্রকাশিত হয় সংস্কৃত-বাংলা অভিধান – নমস্কার দীপিকা । চন্দ্রকিশোর ন্যায়রত্ন এটি সংকলন করেছিলেন। ৫০ পৃষ্ঠার অভিধানটির আকার ৮ ডিমাই। মূল্য ৮ আনা। অভিধানটি প্রকাশিত হয়েছিল ১০০০ কপি।
রামানন্দ দাশ লস্করের পকেট বঙ্গীয় শব্দাবলী প্রকাশিত হয়েছিল রংপুর থেকে ১৮৯৬ সালে। এটি মুদ্রিত হয়েছিল কলকাতায়। তবে এর পৃষ্ঠা888sport free bet ছিল মাত্রা ৩২। আকার ১৮ ডিমাই । ছাপা হয়েছিল ১০০০ কপি। দাম ৩ আনা।
১৮৯৫ সালে (১৩০২) বগুড়া থেকে প্রকাশিত হয়েছিল অন্য ধরনের একটি অভিধান। পশ্চিমবঙ্গ থেকেও এ-ধরনের অভিধান প্রকাশিত হয়েছিল কিনা জানি না। এটি ছিল মন্ত্রতন্ত্র-সম্পর্কিত অভিধান। কিশোরীলাল রায় এটি প্রকাশ করেছিলেন। নাম মন্ত্রার্থ-সংবলিত তান্ত্রিক অভিধান। ৬০ পৃষ্ঠার অভিধানটি ছাপা হয়েছিল বগুড়া রায় প্রেসে। প্রথম খণ্ডটির সন্ধান পেয়েছি। পরে আর কোনো খণ্ড প্রকাশিত হয়েছিল কিনা জানি না। এর অগ্রিম মূল্য ছিল ১ টাকা।
নামপত্রে ইংরেজি শিরোনামও ব্যবহৃত হয়েছে।
“Tantric Abhidhan, Part 1, Being a Vocabulary of the Mantras other Technical Terms used in Tantra Shastras.”
লেখক জানিয়েছেন :
“মন্ত্রার্থ সম্বলিত তান্ত্রিক অভিধানের অসদ্ভাব দেখিয়া বিপুল পরিশ্রমে এই অভিধান প্রকাশ করিলাম। শব্দকল্পদ্রুম, তন্ত্রসার, শ্রীযুক্ত কালীপ্রসন্ন বিদ্যারত্ন সংগৃহীত বৃহৎ তন্ত্রকোষ মহামূল্য উপনিষদ প্রভৃতি প্রকাশক শ্রীযুক্ত মহেশচন্দ্র পাল-প্রকাশিত দশমহাবিদ্যা ও গায়ত্রীতন্ত্র, শ্রীযুক্ত উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়-প্রকাশিত মহানির্ব্বাণতন্ত্র প্রভৃতি গ্রন্থের সাহায্যে এই পুস্তক সংকলিত করিলাম। সর্ব্বতন্ত্রে শ্রেষ্ঠ মহানির্ব্বাণ তন্ত্র প্রভৃতি গ্রন্থের সাহায্যে এই পুস্তক সংকলিত করিলাম। সর্ব্বতন্ত্রশ্রেষ্ঠ মহানির্ব্বাণ তন্ত্রই সর্ব্বাতন্ত্রাপেক্ষা সমধিক আলোচিত হওয়া উচিত।”
১৯০৮-১৯১২ সালের মধ্যে 888sport app থেকে তিনটি উল্লেখযোগ্য অভিধান প্রকাশিত হয়েছিল। আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে উপেন্দ্রচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের চরিতাভিধান। উপেন্দ্রচন্দ্র ছিলেন 888sport app নর্ম্মাল স্কুলের শিক্ষক। তিন বছর পর বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল কলকাতা থেকে, কিন্তু ছাপা হয়েছিল 888sport appর স্বর্ণ প্রেসে। দ্বিতীয় সংস্করণটি আমি দেখেছি, অসম্পূর্ণ, ৫৩৬ পৃষ্ঠার [স পর্যন্ত], দাম ছিল তিন টাকা। চরিতাভিধানের ইংরেজি শিরোনামটি ছিল দীর্ঘ –
‘CHARITABHIDHAN or A Dictionary of Biography and Indian ¸thology’ চরিতাভিধান-রচনায় তাঁকে 888sport appদের মধ্যে সাহায্য করেছিলেন নবাব আলী চৌধুরী ও কাজী ইমদাদুল হক। দ্বিতীয় সংস্করণের ভূমিকা থেকে বইটি-সম্পর্কে একটি ধারণা নেওয়া যায়। তিন ভাগে বিভক্ত ছিল চরিতাভিধান। “প্রথম খণ্ডে পৌরাণিক কালের এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় খণ্ডে ঐতিহাসিক সময়ের জনগণের জীবনী সন্নিবদ্ধ হইয়াছে। ঐতিহাসিককালে যে-সমুদয় ব্যক্তি ভারতবর্ষে প্রাদুর্ভাব হইয়াছেন তাঁহাদের জীবনী দ্বিতীয় খণ্ডে এবং যে-সমুদয় ব্যক্তি ভারতবর্ষভিন্ন অপর দেশে জন্মগ্রহণ করিয়া জগতে খ্যাতি লাভ করিয়া গিয়াছেন, তাঁহাদের জীবনী তৃতীয় বা শেষ খণ্ডে সন্নিবিষ্ট হইয়াছে।… ইহাতে অন্যূন তিনশত নূতন জীবনী দেওয়া হইয়াছে; ইহাদের মধ্যে একশত মুসলমান ও দুইশত হিন্দু।… জীবিত ব্যক্তির জীবনী লিখা বাঞ্ছনীয় নহে। প্রথম সংস্করণে কয়েকজন বৈদেশিক প্রসিদ্ধ জীবিত ব্যক্তির জীবনী প্রদত্ত হইয়াছিল, কিন্তু এই সংস্করণে উহা পরিত্যক্ত হইল। প্রথম সংস্করণে বাঙ্গলা কাব্য হইতে চাঁদ সদাগর, খুল্লনা প্রভৃতি যে-কয়টি কাল্পনিক চরিত্র প্রদত্ত হইয়াছিল, তাহাও পরিত্যক্ত হইল।…”
সমসাময়িক বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তিবর্গ অভিধানটিকে ‘nwe of its kind’, ‘being the only work of its kind’ বলে অভিহিত করে বলেছেন, This being the first attempt at compiling a comprehensive biogra-phical dictionary in Bengali…”
888sport live footballবোধ অভিধানটি সংকলন করেছিলেন দুজন – জগদীশচন্দ্র ঘোষ ও অখিলচন্দ্র সেন। ৬৬৮ পৃষ্ঠার অভিধানটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯১২ সালে। নারায়ণ মেশিন প্রেসে ছাপা অভিধানটির মূল্য ছিল ১ টাকা ২ আনা। জগদীশচন্দ্র কিছু পাঠ্যপুস্তকও রচনা করেছিলেন, যেমন, ছাত্রবোধ বাঙ্গালা ব্যাকরণ, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ইতিহাস প্রভৃতি। তাঁরা 888sport live footballবোধের ভূমিকায় জানিয়েছিলেন
“বাঙ্গালা অভিধান সঙ্কলন অতি সহজ এবং অতি কঠিন ব্যাপার। সাধারণত দেখা যায় এই শ্রেণীর গ্রন্থ প্রণয়নে পূর্ব্ববর্ত্তিগণের আবশ্যক অনুকরণ করা হয় মাত্র। ইহা তত কঠিন কাজ নহে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ভাষার গতি-পরিণতির আলোচনা করিয়া, আধুনিক বাঙ্গালা ভাষার আদর্শ সম্মুখে রাখিয়া, নূতন শব্দাদির সংগ্রহ ও তাহাদের প্রচলিত অর্থ ও প্রয়োগাদি প্রদর্শন করিয়া শব্দব্যুৎপত্তি ও পদ পরিবর্ত্তনাদি যাবতীয় প্রয়োজনীয় বিষয় সম্বলিত সর্ব্বতোপূর্ণ অভিধান সঙ্কলন অতি কঠিন কার্য্য।”… ‘কঠিন কার্য্য’টি তাঁরা সুষ্ঠুভাবেই সম্পন্ন করেছিলেন। ওই একই বছর আশুতোষ ধর প্রকাশ করেছিলেন আশুবোধ অভিধান। এরপরও নিশ্চয় আরো কিছু অভিধান প্রকাশিত হয়েছিল। আমি আদি অভিধানগুলোর শুধু পরিচয় তুলে ধরেছি। গুণ বিচার করতে চাইনি, প্রয়োজনও নেই। বিভিন্ন ধরনের অভিধান তৈরি ও প্রকাশ মানুষের কৌতূহল, শিক্ষিতজনের সচেতনতা, নতুন যুগকে বোঝার চেষ্টাই তুলে ধরে। ওই সময়ে পূর্ববঙ্গ – যা ছিল অপাংক্তেয়, সেই পূর্ববঙ্গের অখ্যাত সব অঞ্চলে বসে লেখকরা একক প্রচেষ্টায় একেকটি অভিধান তৈরি করে প্রকাশ করেছিলেন। এটি যে কতো বড় একটি ব্যাপার, তা এখন অনুধাবন করা একটু কষ্টকর বৈকি।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.