ইকবাল বাহার চৌধুরী
তখনকার দিনে অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের দেশ-বিভাগের পর 888sport app ছিল একটি ছোট্ট শহর। এখানে ছিল একটি সরকারি রেডিও স্টেশন। ১৯৩৯ সালে প্রতিষ্ঠিত অল ইন্ডিয়া রেডিওর 888sport app কেন্দ্র। তা হয়ে হয়ে গেল রেডিও পাকিস্তান, 888sport app। সেকালে রেডিওর 888sport live chatী হওয়া, সংবাদ পাঠক হওয়া বা ঘোষক হওয়া সহজ ছিল না। যাঁরা এসব দায়িত্বে ছিলেন এবং রেডিওতে বিভিন্ন পদে কাজ করনে তাঁরা সবাই ছিলেন দক্ষ এবং অত্যন্ত যোগ্য। কার্জন হল আর মেহবুব আলি রেলওয়ে ইনস্টিটিউট – এসব জায়গায় নাটক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো সেই যুগে।
দেশ-বিভাগের আগে আমার মা, প্রয়াত আনোয়ারা বাহার চৌধুরী, বেগম রোকেয়া-প্রতিষ্ঠিত কলকাতার সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুলের প্রধান শিক্ষেকা ছিলেন। ১৯৪৭-এর স্বাধীনতার পর এ সরকারি স্কুল থেকে তাঁকে ময়মনসিংহ বিদ্যাময়ী স্কুলের প্রধান শিক্ষেকা নিযুক্ত করা হয়। ১৯৪৯ সালে আবার বদলি হয়ে তাঁকে 888sport appয় কামরুন্নেসা স্কুলে প্রধান শিক্ষেকার দায়িত্ব দেওয়া হয়। তখনকার রক্ষণশীল সমাজে সংস্কৃতিচর্চা এবং সংস্কৃতির প্রসার ও প্রচার ছিল বেশ কঠিন ব্যাপার, আজকের দিনে যা ভাবা যায় না। ১৯৫০ সালে আমার মা স্কুলের ছুটির দিনে শুক্রবার ও রোববারে কামরুন্নেসা স্কুলে মেয়েদের জন্য নাচ ও গানের একটি স্কুল শুরু করেন। স্কুলের নাম দিয়েছিরেন ‘সুরবিতান’। পূর্ব পাকিস্তানে এটাই ছিল প্রথম নৃত্যসংগীত বিদ্যায়তন।
কণ্ঠসংগীত আর যন্ত্রসংগীতের জন্য ভালো শিক্ষক প্রয়োজন। মা রেডিও পাকিস্তানের 888sport app কেন্দ্রের তৎকালীন আঞ্চলিক পরিচালক এহসানুল হককে চিঠি দিলেন এ-ব্যাপারে সাহায্য করার জন্য। তিনি তাৎক্ষণিক সাড়া দেন। এরই ফলে আবদুল আহাদ, আবদুল লতিফ, খাদেম হোসেন খান, সুরুজ মিয়া এলেন ‘সুরবিতানে’র শিক্ষক হয়ে। রেডিওর আঞ্চলিক পরিচালক এঁদের সবাইকে স্কুলে যোগ দেওয়ার অনুমতি দিলেন। ফলে মায়ের শিক্ষক সংগ্রহ করে স্কুল চালু করার কাজটা অনেক সহজ হলো। রবীন্দ্রসংগীত শেখানোর দায়িত্ব নিলেন আবদুল আহাদ সাহেব। তাঁর সঙ্গে ছিলেন হুসনা বানু খানম। লায়লা আরজুমান্দ বানু শেখাতেন নজরুল-গীতি। সংগীত বিভাগে আরো ছিলেন আবদুল লতিফ।
‘সুরবিতানে’ সেতার আর গিটার এই দুই যন্ত্রসংগীত শেখানো হতো। খাদেম হোসেন খান সেতার আর সুরুজ মিয়া গিটার শেখাতেন। নৃত্যশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন গওহর জামিল। নাচের ক্লাসেই ছাত্রী888sport free bet ছিল সবচাইতে বেশি। ‘সুরবিতান’ সেই যুগে ছিল নৃত্য ও সংগীতের প্রথম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পর এক শ্রেণির অতিরক্ষণশীল লোক এর বিরোধিতা শুরু করেন; পত্রপত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি চলে। সুখের কথা, স্কুলের সমর্থনেও অনেকে এগিয়ে আসেন এবং পত্রপত্রিকায় তাঁদের সমর্থন ব্যক্ত করেন। এখানে উলেস্নখ্য যে, অনেক কট্টরপন্থী সেই সময়ে 888sport appর ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা মর্নিং নিউজের Letters to the editor কলামে মায়ের বিরুদ্ধেও চিঠি লিখতে শুরু করেন। মা চিমিত্মত হলেও পিছপা হননি। মোল্লাদের এসব চিঠিপত্রের জবাব দেয় 888sport app মেডিক্যাল কলেজের ছাত্ররা। কিছুদিন এসব লেখা ও পালটা প্রতিবাদ চলে। সম্ভবত মোল্লারা ক্লান্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত থেমে যায়।
১৯৫৫ সালে আমার মা কামরুন্নেসা স্কুল থেকে বদলি হয়ে Education Directorate-এ Special Officer for Women Education নিযুক্ত হন। তখনই স্থানাভাবে ও 888sport app কারণে ‘সুরবিতান’ বন্ধ হয়ে যায়। পাঁচ-ছয় বছর সফলভাবে এই স্কুল পরিচালনার পরে স্কুলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মা খুবই দুঃখ পেয়েছিলেন।
১৯৫৪ সালের ১৭ মে প্রথিতযশা নৃত্য888sport live chatী বুলবুল চৌধুরী পরলোকগমন করেন। বুলবুল চৌধুরীর আসল নাম রশিদ আহমেদ চৌধুরী। ত্রিশের দশকে কলকাতায় আমার বাবা হবীবুল্লাহ বাহার চৌধুরী ও ফুপু শামসুন্নাহার মাহমুদ বুলবুল নামে একটি পত্রিকা সম্পাদন করতেন। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শরৎচন্দ্র, প্রমথ চৌধুরী, অন্নদাশঙ্কর রায়সহ সেই যুগের বিশিষ্ট কবি ও লেখকদের লেখা ছাপা হয়েছে বুলবুলে। ওই সময়ে একদিন, রশিদ আহমদ চৌধুরী তখন ছাত্র, বাবার সঙ্গে দেখা করার জন্য কলকাতায় আমাদের বাড়িতে আসেন। বাবাই প্রথম তাঁর নৃত্যরত ছবি তাঁর কাগজ বুলবুলে ছাপেন। তখনকার বিশিষ্ট নৃত্য888sport live chatী সাধনা বোসের সঙ্গে বুলবুল চৌধুরীর ছবি। এই নৃত্য888sport live chatীর নাম বুলবুল বাবারই দেওয়া। তিনি ছিলেন তখনকার দিনে কলকাতায় একমাত্র মুসলমান নৃত্য888sport live chatী। এভাবে বাবা তাঁর প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেছিলেন। ১৯৫০ সালে বুলবুল চৌধুরী তাঁর দল নিয়ে 888sport appয় এসেছিলেন। পূর্ব বাংলার স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে বাবা তখন যক্ষ্মা নিবারণী অভিযান শুরু করেছেন জোরদারভাবে। এই অভিযানের জন্য অর্থসংগ্রহের উদ্দেশ্যে বুলবুল চৌধুরীর দল নৃত্য প্রদর্শন করে।
১৯৫৩ সালে বুলবুল চৌধুরী তাঁর দল নিয়ে ইউরোপ সফর করেন। নৃত্য-পরিচালক বুলবুল ছিলেন অপূর্বসুন্দর চেহারার মানুষ। আমার বয়স তখন বেশি না হলেও 888sport appয় আমাদের বাড়িতে এবং মঞ্চে নৃত্যানুষ্ঠানের সময়ে তাঁকে দেখার সুযোগ আমার হয়েছিল। তাঁর চেহারা এবং নৃত্যানুষ্ঠানে মুখ্য ভূমিকায় বা নায়ক হিসেবে তিনি ছিলেন অপূর্ব, অসাধারণ। তাঁর সঙ্গে, আমার মতে, তুলনা করা যায় শুধুমাত্র চিত্রনায়ক উত্তমকুমারের। বুলবুলের বিপরীতে বিভিন্ন নাচে নায়িকার ভূমিকায় থাকতেন তাঁর নৃত্যসঙ্গী ও সহধর্মিণী আফরোজা বুলবুল। সংগীত পরিচালনায় ছিলেন তিমিরবরণ।
বুলবুল চৌধুরী পঞ্চাশের দশকে তাঁর দলকে নিয়ে ‘দুন্দুভির আহবান’, ‘হাফিজের স্বপ্ন’, ‘ইরানের এক পান্থশালায়’, ‘চাঁদ সুলতানা’, ‘জীবন ও মৃত্যু’, ‘Lest We Forget’ বা ‘যেন ভুলে না যাই’ – ১৯৪৩-এর দুর্ভিক্ষের ওপর রচিত – নৃত্য পরিচালনা করেন। তাঁর এসব অমর সৃষ্টি ভোলার নয়।
বুলবুল চৌধুরীর অকালমৃত্যুর পর ১৯৫৪ সালে 888sport appর কার্জন হলে অনুষ্ঠিত হয় বুলবুল মেমোরিয়াল কনভেনশন। সেখানেই গঠিত হয় বুলবুল মেমোরিয়াল কমিটি। বুলবুল মেমোরিয়াল কমিটি এই 888sport live chatীর মৃত্যুর ঠিক এক বছর পর বুলবুল ললিতকলা একাডেমী বা Bulbul Academy of Fine Arts সংক্ষেপে BAFA গড়ে তোলেন। ১৯৫৫ সালের ১৭ মে 888sport appর ৭ নম্বর ওয়াইজঘাটে একটি বিশাল বাড়িতে এই একাডেমির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। উদ্বোধন করেন 888sport app হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি মোহাম্মদ ইব্রাহিম। এ-প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলায় মুখ্য ভূমিকা পালন করেন বুলবুল চৌধুরীর বাল্যবন্ধু মাহমুদ নূরুল হুদা।
বুলবুল একাডেমীতে প্রথমে নাচ, গান আর যন্ত্রসংগীত শেখানোর আয়োজন করা হয়। আফরোজা বুলবুল প্রিন্সিপাল নিযুক্ত হন। ১ জুলাই ১৯৫৫ সাল থেকে ক্লাস শুরু হয়। চার বছরের সার্টিফিকেট কোর্স। রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, পল্লীগীত, উচ্চাঙ্গসংগীত, নৃত্য, সেতার, বাঁশি, গিটার আর বেহালা – প্রথমে এই বিভাগগুলি চালু হয়। শিক্ষকরা হলেন নজরুলসংগীত, পল্লীগীত, দেশাত্মবোধক গান এসব বিভাগে আবদুল লতিফ, শেখ লুৎফর রহমান, বেদারউদ্দিন আহমদ, উচ্চাঙ্গসংগীতে বিমল দাস, বারীন মজুমদার, রবীন্দ্রসংগীতে নিখিল দেব, নৃত্যে অজিত সান্যাল, সেতারে খাদেম হোসেন খান, গিটারে ওয়ারেস আলি ও বোরহান আহমদ, বেহালায় মমতাজ মিয়া। ১৯৫৬ সালে আমরা গোটা পরিবার কলকাতায় গিয়েছিলাম। এক মাস আমরা সেখানে ছিলাম। এক পর্যায়ে মা সংগীত বিদ্যায়তন – ‘দক্ষিণী’র শুভ গুহঠাকুরতার সঙ্গে দেখা করেন এবং বাফায় রবীন্দ্রসংগীত শিক্ষক হিসেবে কলকাতার কাউকে নেওয়া যায় কি-না সে-ব্যাপারে তাঁর পরামর্শ নেন। তিনি মাকে বলেন যে, ভক্তিময় দাশগুপ্ত একজন শিক্ষক হিসেবে এবং রবীন্দ্র-নৃত্যনাট্য বিশারদ হিসেবে খুবই উপযোগী হবেন। তারপরই ভক্তিময়বাবু 888sport appয় এসে রবীন্দ্রসংগীত বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগদান করেন। সম্ভবত আরো দু-তিন বছর পর শামিত্মনিকেতনে শিক্ষাগ্রহণ শেষে 888sport appয় ফিরে বাফায় যোগ দেন 888sport live chatী আতিকুল ইসলাম। বুলবুল চৌধুরীর দলের দুজন বিশিষ্ট সদস্য অজিত সান্যাল ও খাদেম হোসেন খান, আগেই বলেছি, শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।
নিজের গড়া ‘সুরবিতান’ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মা মনে দারুণ দুঃখ পেয়েছিলেন। কয়েক মাসের মধ্যে বুলবুল একাডেমীর ক্লাস শুরু হওয়ায় তিনি সে-দুঃখ অনেকটাই ভুলতে পেরেছিলেন। মা সপরিবারে নিজেকে বাফার কাজে নিয়োজিত করেছিলেন। আমার বোন সেলিনা বাহার জামান আর আমাকে সাংগঠনিক কাজে, ছোট বোন শাহীন ও নাসরীনকে গানের ছাত্রী হিসেবে। সবচেয়ে ছোট বোন তাজিনের বয়স তখন মাত্র চার বছর। একটু বড় হলে মা ওকে রবীন্দ্রসংগীত ক্লাসে ভর্তি করিয়ে দেন। এভাবে আমরা গোটা পরিবার বুলবুল একাডেমীর সঙ্গে নিজেদের জড়িয়ে ফেলেছিলাম।
বুলবুল একাডেমীর Founder member বা প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন তেইশজন। এঁদের প্রায় সবাই এখন প্রয়াত। সবার নাম মনে নেই। যাঁদের কথা মনে পড়ছে তাঁরা হলেন – সৈয়দ আজিজুল হক (নান্না মিয়া), শামসুন নাহার মাহমুদ, এম মোহসিন, বদরুন্নেসা আহমদ, আনোয়ারা বাহার চৌধুরী, নাজমুননেসা মজিদ, মোহাম্মদ মোদাবেবর, অজিত কুমারগুহ, ডাক্তার এম.এন নন্দী, অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, বাসমত্মী গুহঠাকুরতা, এম.এ মোহায়মেন, মাহমুদ নূরুল হুদা, অজিত সান্যাল, কামরুল হাসান, সৈয়দ মোহাম্মদ হোসেন, আনিসুজ্জামান, সৈয়দ আহমদ হোসেন ও সেলিনা বাহার জামান। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ছাড়া এঁদের মধ্যে আর কেউ বেঁচে নেই। এঁদের মধ্যে যাঁদের বয়স কম ছিল, যেমন আনিসুজ্জামান, সৈয়দ আহমদ হোসেন ও সেলিনা বাহার, তাঁরাও বুলবুল একাডেমীর কাজে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন গোড়া থেকে। গঠনতন্ত্র-অনুযায়ী প্রতিষ্ঠাতা সদস্যরা সে-সময় বাফার কাউন্সিলের সদস্য, বাকিরা সাধারণ সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত। কাউন্সিল সদস্যদের মধ্যে যাঁরা সক্রিয় ছিলেন তাঁদের মধ্যে তফাজ্জল হোসেন, সৈয়দ আসাদুজ্জামান বাচ্চু, ফজলুল করিম, আমিনা মাহমুদ আর আমিও ছিলাম। বাফা কাউন্সিলের প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হক।
বুলবুল একাডেমীর নাচ, গান আর যন্ত্রসংগীত শিক্ষাদান প্রথম শুরু হয় মূলত ‘সুরবিতানে’র ছকেই। পরবর্তী সময়ে নাট্য বিভাগ এবং Arts & Craft বিভাগ খোলা হয়। আর একটি বিভাগ BAFA Kindergarten-ও খোলা হয়। জাহানারা ইমাম (পরে ‘শহীদ জননী’ নামে সুপরিচিত) KG স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব পালন করেন। এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, বাফা সেই সময়ে কেবল একটা সংগীত বিদ্যায়তন ছিল না, ছিল ললিতকলার বিশাল এক মহাবিদ্যালয়।
১৯৫৫ সালের নভেম্বর মাসে বাফা Pakistan Artistes Convention-এর অয়োজন করে। উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী আবু হোসেন সরকার। প্রথিতযশা রবীন্দ্রসংগীত888sport live chatী দেবব্রত বিশ্বাস ও সুচিত্রা মিত্র এ-সম্মেলনে বাফার আমন্ত্রিত 888sport live chatী হিসেবে সংগীত পরিবেশন করে সকলকে আনন্দ দিয়েছিলেন।
বুলবুল একাডেমী প্রতিষ্ঠার মাত্র এক বছর পর ১৯৫৬ সালে এই একাডেমীর আমন্ত্রণে শামিত্মনিকেতন থেকে একটি প্রতিনিধিদল 888sport appয় এসেছিল। রবীন্দ্র-সংগীত-বিশেষজ্ঞ বিশ্বভারতীর সংগীত ভবনের অধ্যক্ষ শামিত্মদেব ঘোষের নেতৃত্বে 888sport appর আরমানিটোলা অঞ্চলে নিউ পিকচার হাউস সিনেমা হলে এই দল শ্যামা নৃত্যনাট্য মঞ্চস্থ করে। শ্যামার ভূমিকায় কণ্ঠ দিয়েছিলেন কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় আর নৃত্যরূপ দিয়েছিলেন উমা গান্ধী; তিনি তখন নৃত্যভবনের ছাত্রী। বজ্রসেনের ভূমিকায় সংগীতে কণ্ঠ দেন শামিত্মদেব ঘোষ আর নৃত্যে ছিলেন প্রফেসর হরিদাস নায়ার। শামিত্মনিকেতন থেকে একটি সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিদলের এটাই ছিল প্রথম পূর্ব পাকিস্তান সফর।
একই বছরের ১৯৫৬ সালে, চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই 888sport app সফর করেন। তৎকালীন পাক-চীন মৈত্রী সংস্থার অনুরোধে বাফা চীনা নেতার সম্মানে 888sport appর গুলিস্তান সিনেমা হলে Eternal Friendship বা চিরন্তন বন্ধুতব নৃত্যনাট্য মঞ্চস্থ করে। এর সার্বিক পরিচালনায় ছিলেন বাফার রবীন্দ্রসংগীত বিভাগের প্রধান শিক্ষক ভক্তিময় দাশগুপ্ত, নৃত্য পরিচালনা করেন অজিত সান্যাল, আবহ সংগীতে ছিলেন খাদেম হোসেন খান। আমাদের দেশ ও চীনের মধ্যেকার ঐতিহাসিক সম্পর্ক এবং চীনা নেতার আগমনে বন্ধুত্ব দৃঢ়তর করার অভিলাষ ব্যক্ত হয়েছে এ-নৃত্যনাট্যে। নৃত্যনাট্যে অন্যদের মধ্যে চৌ এন লাইয়ের ভূমিকায় অংশ নেন সেলিনা বাহার। অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই নৃত্যনাট্যের চৌ এন লাইকে অভিনন্দন জানান মঞ্চে এসে। চীনা নেতার সঙ্গে সেদিন পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীও এ-অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
বুলবুল একাডেমী প্রতিষ্ঠার মাত্র দেড় বছর পরে ১৯৫৭ সালের জানুয়ারি মাসে 888sport appর নিউ পিকচার হাউস সিনেমা হলে এই একাডেমির উদ্যোগে মঞ্চস্থ হয় দুটি নৃত্যনাট্য – রবীন্দ্রনাথের চ-ালিকা এবং শিশু-নৃত্যনাট্য প্রকৃতির লীলা। নতুন একাডেমি বাফার ছাত্রছাত্রীরা তখন মুখ্য ভূমিকার জন্য তৈরি ছিল না। ফলে অতিথি888sport live chatীদের প্রয়োজন দেখা দেয়। বিশিষ্ট সংগীত888sport live chatী লায়লা আরজুমান্দ বানু চ-ালকন্যা প্রকৃতির ভূমিকায় কণ্ঠ দিয়েছিলেন। প্রকৃতির মায়ের ভূমিকায় কণ্ঠ দেন জনপ্রিয় রবীন্দ্রসংগীত888sport live chatী ফাহমিদা খাতুন, যিনি তখন কামরুন্নেসা স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী। ভক্তিময় দাশগুপ্ত নিজে বৌদ্ধভিক্ষু আনন্দের ভূমিকায় কণ্ঠদান করেন। নৃত্যে অঞ্জলি চক্রবর্তী প্রকৃতির ভূমিকায়, মায়ের ভূমিকায় মেহের আহমদ এবং বৌদ্ধভিক্ষু আনন্দের ভূমিকায় ছিলেন মন্দিরা নন্দী। এ ছাড়া 888sport app ভূমিকায় – রাহিজা খানম ঝুনু, শাহেদা আহমদ, সেলিনা বাহার ও শীলা চৌধুরী অংশ নেন।
কোরাস গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন বাফার যেসব ছাত্রছাত্রী, তাঁদের মধ্যে ছিলেন – জাহেদুর রহিম, চৌধুরী আবদুর রহিম, বাশিরা বারি মালিক এবং শাহীন ও নাসরীন চৌধুরী। চ-ালিকা সেই সময়ে সাংস্কৃতিক মহলে দারুণ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। অন্য একটি নৃত্যনাট্য প্রকৃতির লীলা বাফার শিশু888sport live chatীদের দ্বারা পরিবেশিত হয়। দুটি নৃত্যনাট্যের সামগ্রিক পরিচালনায় ছিলেন ভক্তিময় দাশগুপ্ত, নৃত্য পরিচালনা করেন অজিত সান্যাল আর সংগীত-পরিচালনায় ছিলেন খাদেম হোসেন খান। 888sport appয় এবারই প্রথম স্থানীয় কোনো সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান রবীন্দ্রনাথের নৃত্যনাট্য মঞ্চস্থ করে।
১৯৫৭ সালের মে মাসে ‘বহুরূপী’ নাট্যদল এসেছিল কলকাতা থেকে বুলবুল একাডেমীর আমন্ত্রণে। বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব শম্ভু মিত্র ও তাঁর স্ত্রী তৃপ্তি মিত্র এসেছিলেন – সঙ্গে ছিল তাঁদের ছোট্ট মেয়ে শাঁওলী মিত্র; দশ বছরের ফ্রক-পরা মেয়ে। আরো ছিলেন গঙ্গাপদ বসু, অমর গাঙ্গুলী, মোহাম্মদ জাকারিয়া, নির্মল চ্যাটার্জি, কুমার রায়, শোভন মজুমদার, শামিত্মরঞ্জন, পরেশ ঘোষ ও লিলি গনি। ছিলেন 888sport live chatী খালেদ চৌধুরী, আলোক-পরিচালক তাপস সেন ও অন্যরা। রবীন্দ্রনাথের রক্তকরবী আর তুলসী লাহিড়ীর ছেঁড়া তার এই দুটি নাটক বহুরূপী মঞ্চস্থ করে নিউ পিকচার হাউসে চারদিন ধরে। সেই যুগে 888sport appয় বহুরূপীর এই দুটি নাটক যথেষ্ট আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। বহুরূপী নাট্যদলের রক্তকরবী নাটকের পরে 888sport app ড্রামা সার্কেল একই নাটক মঞ্চস্থ করতে আগ্রহী হয় এবং মকসুদুস সালেহীনের পরিচালনায় সফলভাবে রবীন্দ্রনাথের এই নাটক মঞ্চস্থ করে।
১৯৪৭-পরবর্তী সময়ে পূর্ব পাকিস্তানে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়মত্মী পালন করা হতো। তবে সবই হতো সীমিতভাবে। বেতারে রবীন্দ্রসংগীত গাওয়া হতো। 888sport live chatী888sport free bet ছিল সীমিত। বিশিষ্ট সংগীত-পরিচালক ও রবীন্দ্রসংগীত-বিশেষজ্ঞ আবদুল আহাদ 888sport app বেতারে কর্মরত ছিলেন। মঞ্চে তাঁকে গান গাইতে তেমন একটা দেখা যেত না। বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীত888sport live chatীদের মধ্যে ছিলেন আফসারী খানম, হোসনা বানু খানম, হাফিজ ও আরো অনেকে। লায়লা আরজুমান্দ বানুও অনেক সময়ে রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করতেন। প্রথিতযশা রবীন্দ্রসংগীত888sport live chatী কলিম শরাফী চট্টগ্রামে এবং পরে 888sport appয় স্থানীয়ভাবে বসবাস করতেন এবং রবীন্দ্র-সংগীত পরিবেশন ছাড়াও এর প্রসার ও প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন সে-আমলে।
জনপ্রিয় রবীন্দ্রসংগীত888sport live chatীদের মধ্যে এরপরে যাঁদের নাম করতে হয় তাঁরা হলেন – সন্জীদা খাতুন, আতিকুল ইসলাম, ফাহমিদা খাতুন, বিলকিস নাসিরউদ্দিন, মালেকা আজিম, ফজলে নিজামী ও অজিত রায়। বাফার প্রথম ব্যাচের ছাত্রছাত্রী, যাঁরা চার বছরের সার্টিফিকেট কোর্স শেষ করেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন জাহেদুর রহিম (পরে ছায়ানটের শিক্ষক), চৌধুরী আবদুর রহিম, আবু হেনা সাদউদ্দিন, নাসরীন চৌধুরী, বাশিরা বারি মালিক, মন্দিরা নন্দী, রাহিজা খানম ঝুনু, শাহিদা আহমেদ, পান্না আহমেদ, হেমায়েত ও নীনা হামিদ।
১৯৬৪ সালে নাসরীন চৌধুরী ও চৌধুরী আবদুর রহিমের সংগীত-পরিচালনায় এবং রাহিজা খানমের নৃত্য পরিচালনায় 888sport appয় রবীন্দ্রনাথের নৃত্যনাট্য মায়ার খেলা মঞ্চস্থ হয় সফলভাবে। বাফার এই নৃত্যনাট্য প্রযোজনায় ছিলেন সেলিনা বাহার। পূর্ব পাকিস্তানে সেবারই প্রথমবারের মতো মায়ার খেলা মঞ্চস্থ হয়।
বুলবুল একাডেমী রবীন্দ্রনাথের গান ও রচনা অবলম্বনে ১৯৬৩ সালে শ্যামল মাটির ধরাতলে নামে একটি নৃত্যনাট্য পরিবেশন করেছিল। ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ার্স হলে এটি মঞ্চস্থ হয়। আবু হেনা সাদউদ্দিন ও সেলিনা বাহারের প্রচেষ্টায় সফলভাবে এই নৃত্যনাট্য উপস্থাপন করা হয়, যা কিনা সকলের প্রশংসা অর্জন করে। নৃত্যে মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন লায়লা হাসান, নাসরিন চৌধুরী ও দুলাল তালুকদার। সংগীতে বিলকিস নাসিরুদ্দীন, খুরশীদ আজিম, তাজিন চৌধুরী ও চৌধুরী আবদুর রহিম।
এর আগে ১৯৬১ সালে মহাসমারোহে রবীন্দ্রজন্মশতবার্ষিকী পালিত হয়েছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে। সরকার সেই সময় এই উৎসবের ব্যাপারে মোটেই আগ্রহী ছিল না, বরং নানাভাবে বাধা সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়েছিল। কিন্তু এসব প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও 888sport appর ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে কয়েকমাস ধরে রবীন্দ্রজন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপিত হয়। ১৯৬১ সালের মে মাস থেকে কয়েকমাস ধরে রবীন্দ্রনাথের গান, আবৃত্তি, নৃত্যনাট্য ও নাটক মঞ্চস্থ হয় এবং সেইসঙ্গে আলোচনা-সভারও আয়োজন করা হয় অত্যন্ত সফলভাবে। সে-যুগে টেলিভিশন না থাকায় এসব অনুষ্ঠান রেকর্ড করে রাখার কোনো সুযোগ বা উপায় ছিল না। শতবর্ষ পালনের জন্য, যতদূর মনে পড়ে, তিনটি পৃথক কমিটি গঠন করা হয়। বিচারপতি এস.এম মোর্শেদের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি প্রথম ২৫ বৈশাখ অনুষ্ঠান শুরু করে। এই কমিটির সেক্রেটারি ছিলেন প্রফেসর খান সারোয়ার মুরশিদ। সরকারের অনিচ্ছাসত্ত্বেও রেডিও পাকিস্তানের সংবাদে ছোট করে খবরটি সেদিন প্রচারিত হয়েছিল। পত্রপত্রিকায় ভালোভাবে এর খবর দেওয়া হয়।
রবীন্দ্রজন্মশতবার্ষিকীর প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে বুলবুল একাডেমী যথাক্রমে চ-ালিকা এবং চিত্রাঙ্গদা নৃত্যনাট্য মঞ্চস্থ করেছিল। মজার ব্যাপার, ২৫ বৈশাখ চ-ালিকা নৃত্যনাট্য হওয়ার ঠিক আগে, ২৮ এপ্রিল বাফার শিক্ষক ভক্তিময় দাশগুপ্তের পরিচালনায় এই নৃত্যনাট্যের প্রথম অংশ 888sport appর কার্জন হলে মঞ্চস্থ হয়। উদ্যোক্তা ছিল 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়ন (ডাকসু)। আমিনুল ইসলাম তখন ডাকসুর ভিপি, আমি ডাকসুর কমিটি মেম্বার ছিলাম।
চ-ালিকায় প্রধান দুই চরিত্রে নৃত্যে অংশ নিয়েছিলেন – মন্দিরা নন্দী ও সেলিনা বাহার। সংগীতে প্রকৃতির ভূমিকায় কণ্ঠ দিয়েছিল হামিদা বানু (বুলু)। প্রকৃতির মায়ের গানগুলো গেয়েছিল শিরিন বেগম (শীলা), তখনকার প্রবীণ সাংবাদিক মোহাম্মদ মোদাবেবরের মেয়ে।
২৬ বৈশাখ (৮ মে ১৯৬১) বাফা পরিবেশন করল আরো একটি নৃত্যনাট্য চিত্রাঙ্গদা। সামগ্রিক পরিচালনায় ছিলেন ভক্তিময় দাশগুপ্ত। চিত্রাঙ্গদা নৃত্যনাট্যের নায়িকার ভূমিকায় ছিলেন জান্নাত গনি। অর্জুনের চরিত্রে ছিলেন অজিত দে। 888sport live chatী বিলকিস নাসিরুদ্দিন চিত্রাঙ্গদার ভূমিকায় গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন। অর্জুনের গানগুলো গেয়েছিলেন জাহেদুর রহিম। নাচে 888sport app ভূমিকায় অংশ নেন – লায়লা হাসান, ডালিয়া নিলুফার, ঝুলা রশিদ, লাইলী চৌধুরী ও ডালিয়া সালাউদ্দিন। শতবার্ষিকীর প্রথম অনুষ্ঠানগুলোর পরে কিছুটা বিরতি যায়। তারপরে অন্য দুটি কমিটি জোরালো অনুষ্ঠান করে। এসব কাজে যাঁরা সক্রিয় নেতৃত্ব দিয়েছেন বা অংশ নিয়েছেন তাঁরা হলেন – বেগম সুফিয়া কামাল, জহুর হোসেন চৌধুরী, আহমেদুর রহমান, সাইদুল হাসান ও মিসেস হাসান, মোকলেছুর রহমান (সিধু মিয়া), শামসুন্নাহার (রোজ বু), হোসেন আরা (মাক্কী আপা), মিসেস মহিউদ্দিন, জোহরা আহমদ, বিলকিস নাসিরুদ্দিন, সৈয়দ মোহাম্মদ হোসেন, সৈয়দ আহমদ হোসেন, ওয়াহিদুল হক, সন্জীদা খাতুন, কামাল লোহানী, এনায়েতুল্লাহ খান, আবদুল জলিল, সাইফুদ্দিন মানিক ও আরো অনেকে। আবদুল আহাদ, কলিম শরাফী, ফজলে নিজামী, বিলকিস নাসিরউদ্দিন, সন্জীদা খাতুন, ফাহমিদা খাতুন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অত্যন্ত সক্রিয় ও সফলভাবে অংশ নিয়েছিলেন।
এরপরে শ্যামা নৃত্যনাট্য মঞ্চস্থ হলো সফলভাবে। ড. নন্দী আর শামিত্ম নন্দীর বাড়িতে চলে রিহার্সাল। শ্যামা হয়েছিল মন্দিরা নন্দী আর বজ্রসেন কামাল লোহানী। উত্তীয় সেজেছিল দুলাল তালুকদার। শ্যামার গান গেয়েছিলেন ফাহমিদা খাতুন আর জাহেদুর রহিম বজ্রসেনের গান করেছিলেন। জাহেদুর রহিম সম্ভবত ভক্তিময় দাশগুপ্তের হাতে তৈরি সবচেয়ে গুণী ও ভালো ছাত্র। ভক্তিময়বাবুর ছাত্রদের মধ্যে একজন বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম করতে হয়, যিনি বাফার প্রথম যুগের ছাত্র – বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও রবীন্দ্রসংগীতবিশেষজ্ঞ ড. আনিসুর রহমান। নাচে, গানে সব মিলিয়ে শ্যামা নৃত্যনাট্য দারুণ সফল হয়েছিল। যতদূর মনে পড়ে, শতবার্ষিকী উদ্যাপনের শেষ ভাগে চিত্রাঙ্গদা নৃত্যনাট্য দ্বিতীয়বার মঞ্চস্থ হয়। সেবার মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন রাহিজা খানম ঝুনু। শতবার্ষিকীতে আরো হয়েছিল 888sport app download apk পাঠের আসর। ফতেহ লোহানী, সৈয়দ মোহাম্মদ হোসেন, সৈয়দ আহমদ হোসেন, গোলাম মুসত্মফা, হোসনে আরা (বিজু), হাসান ইমাম, লিলি চৌধুরী, খুরশিদি আলম, সেলিনা বাহার, সাবিয়া মুহিত আর সেইসঙ্গে আমিও অংশ নিয়েছিলাম। গানের আসরও হয়েছিল একাধিক। তখনকার 888sport appর প্রবীণ-নবীন সব 888sport live chatী এসব অনুষ্ঠানে যোগ দেন। যতদূর মনে পড়ে, একই মঞ্চে গান গেয়েছিলেন আবদুল আহাদ ও কলিম শরাফী। ছিলেন বিলকিস নাসিরুদ্দিন, সন্জীদা খাতুন, ফাহমিদা খাতুন, খুরশীদ আজিম, নাসরীন শামস, ফরিদা বারী মালিক, ফাহমিদা মালিক, ফজলে নিজামী, জাহেদুর রহিম, চৌধুরী আবদুল রহিম ও আরো অনেকে। ভক্তিময় দাশগুপ্ত সংগীত পরিবেশন ছাড়াও বিভিন্ন নৃত্যনাট্য পরিচালনার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখেছিলেন।
অনেক ক্ষেত্রেই তাঁকে সাহায্য করেছিলেন বাফার রবীন্দ্রসংগীতের অপর শিক্ষক আতিকুল ইসলাম। পূর্ব বাংলায় রবীন্দ্রসংগীত-চর্চার ব্যাপারে আতিকুল ইসলামের ভূমিকা ছিল বিশেষ উলেস্নখযোগ্য। 888sport appয় স্বাধীনতা-পূর্বকালে ঐকতান নামে একটি সংগীতগোষ্ঠী সেই যুগে রবীন্দ্রসংগীতের অনুষ্ঠান পরিবেশন করে যথেষ্ট সুনাম কুড়িয়েছিলেন। ‘ঐকতান’ গোষ্ঠীর সাংগঠনিক কাজে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন নাসিরুল হক। ঐকতানের বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপস্থাপনে বিশেষ ভূমিকা রাখেন আতিকুল ইসলাম ও সেইসঙ্গে তাঁর ভাই ফারুকুল ইসলাম।
পূর্ব পাকিস্তান আমলে ‘শ্রোতার আসর’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন জামিল চৌধুরী ও অন্যরা। সেই যুগে সিডি ছিল না, ছিল লং পেস্নইং রেকর্ড, কিন্তু 888sport appয় তৈরি হতো না। ‘শ্রোতার আসর’ যত্নের সঙ্গে এ-কাজে হাত দিয়ে বেশকিছু পেস্নইয়িং রেকর্ড বার করেছিল। প্রথম রেকর্ডটি ছিল তখনকার দিনের বিশিষ্ট রবীন্দ্র-সংগীত888sport live chatীদের নিয়ে। নাম – ‘বাঁশরী ও নির্মাল্য’। 888sport live chatীরা হলেন – সন্জীদা খাতুন, জাহেদুর রহিম, ইফ্ফাত আরা খান (দেওয়ান), হামিদা হক, পাপিয়া সারওয়ার, কাদেরী কিবরিয়া, কলিম শরাফী, ফাহমিদা খাতুন, নাসরীন শামস, তাজিন চৌধুরী, সেলিনা মালেক, মালেকা আজিম খান। দেশের গান বা দেশাত্মবোধক গানের সমন্বয়ে – ‘888sport appsের হৃদয় হতে’ নামে অপর এলপি বের হয়। 888sport live chatী ছিলেন – রফিকুল আলম, আবদুল লতিফ, রবীন্দ্রনাথ রায়, সাবিনা ইয়াসমীন, আপেল মাহমুদ, ফাহমিদা খাতুন। আবৃত্তিতে ছিলেন গোলাম মুস্তাফা।
রবীন্দ্রজন্মশতবার্ষিকীর আর একটি আকর্ষণ ছিল নাটক। তখনকার দিনের নামকরা নাট্যগোষ্ঠী ড্রামা সার্কল, যতদূর মনে পড়ে, গোটা তিনেক নাটক মঞ্চস্থ করে এ-উপলক্ষে। রক্তকরবী, তাসের দেশ আর রাজা ও রানী। পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন মকসুদুস সালেহীন আর বজলুল করিম। মনিরুল আলম মঞ্চ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। এসব নাটকে অভিনয়ে অংশ নেন – সৈয়দ রওশন (রানু), কামেলা খান মজলিশ, আজমেরী জামান (রেশমা), ভবেশ মুখার্জী, মাসুদ আলি খান, খন্দকার রফিকুল হক, হাসান ইমাম, আনোয়ার হোসেন, কেরামত মওলা, তওফিক আজিজ খান, আমজাদ হোসেন, মোর্শেদ খান চৌধুরী, লিটন, জাফর রসুল এবং আরো অনেকে, যাঁদের নাম এখন মনে পড়ছে না। আমি রক্তকরবী আর তাসের দেশে অংশ নিয়েছিলাম।
শতবার্ষিকী উদ্যাপন প্রসঙ্গে একটি কথা বলতে চাই। সন্জীদা খাতুন, ওয়াহিদুল হক এবং আরো কিছু রবীন্দ্রপ্রেমী যাঁরা ১৯৬১-র শতবার্ষিকী উৎসবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন, ওই বছরের শেষে শতবার্ষিকী উৎসবের পরে, সম্ভবত অক্টোবর মাসে, গড়ে তোলেন – ‘ছায়ানট’। ছায়ানট গঠনের পর সম্ভবত দু-এক বছরের মধ্যেই ‘ছায়ানট সংগীত বিদ্যায়তন’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। শতবার্ষিকীতে ‘ছায়ানট’ ছিল না বটে, তবে ‘ছায়ানটে’র ভিত গড়ে উঠেছিল সেই সময়ে। পরবর্তী সময়ে পূর্ব পাকিস্তান আমলেই। ‘ছায়ানট’ রমনার বটমূলে পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন শুরু করেছিল নানা বাধা-বিপত্তি, হুমকি ও সাম্প্রতিককালে বোমা হামলা সত্ত্বেও, আজো তার আয়োজন অব্যাহত রয়েছে। রবীন্দ্রচর্চা এবং বাঙালির 888sport live chat-সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে ‘ছায়ানট’ দারুণ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।
তৎকালীন পূর্ব বাংলায় প্রথমে ‘সুরবিতান’ আর বুলবুল একাডেমীর পরে বেশ কয়েকটি নৃত্য ও সংগীত বিদ্যালয় গড়ে তোলা হয়েছিল। তাদেরও অবদান বিশেষভাবে উলেস্নখযোগ্য। এর মধ্যে মনে পড়ে গওহর জামিল ও রওশন জামিল-প্রতিষ্ঠিত জাগো আর্ট সেন্টার, জি.এ মান্নানের ‘নিক্কণ’ আর বারীন মজুমদার ও এ.কে.এম মুজতবা (ময়নাভাই) এঁদের উদ্যোগে গঠিত হয় কলেজ অফ মিউজিক।
বুলবুল একাডেমী পূর্ব পাকিস্তান আমলে রবীন্দ্রনাথের বেশ কয়েকটি নৃত্যনাট্য মঞ্চস্থ করেছে সফলভাবে। তবে ১৯৫৯ সালের দিকে কবি জসীমউদ্দীনের নকশী কাথার মাঠ নৃত্যনাট্য ছিল বাফার নৃত্য-প্রযোজনার ক্ষেত্রে একটা উলেস্নখযোগ্য মাইলফলক। এক্ষেত্রে 888sport app download for android করি বাফার শিক্ষক এ.কে.এম মুজতবার (ময়নাভাই) কথা, যিনি এই উদ্যোগ-আয়োজনে, নাট্যরূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে, অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন। বাফার তৎকালীন প্রধান নৃত্যশিক্ষক জি.এ মান্নান নৃত্য-পরিচালনা করেন। কণ্ঠসংগীত-পরিচালনায় ছিলেন বেদারউদ্দিন আহমদ এবং সামগ্রিক সংগীত-পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন খাদেম হোসেন খান। 888sport appয় এই নৃত্যনাট্যের সফল মঞ্চায়নের পরে নকশী কাথার মাঠ নিয়ে একটি সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিদল ইরান ও ইরাক সফর করে এবং পূর্ব বাংলার সংস্কৃতিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরে সফলভাবে। এই নৃত্যনাট্যে নাচে মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন জি.এ মান্নান ও রাহিজা খানম। অন্যদের মধ্যে ছিলেন দুলাল তালুকদার, কামাল লোহানী, মহীউদ্দিন, লায়লা হাসান, ডালিয়া নিলুফার, শাহেদা আহমেদ এবং ঝর্ণা বসাক (পরবর্তীকালে উপমহাদেশের বিশিষ্ট চিত্রতারকা শবনম)। গানে বেদারউদ্দিন আহমদ, নীনা হামিদ ও তাজিন চৌধুরী।
আজ 888sport apps ও ভারতে এবং 888sport app দেশেও রবীন্দ্রনাথের সার্ধশতজন্মবার্ষিকী সরকারি ও বেসরকারি প্রচেষ্টায় উদ্যাপিত হচ্ছে। কিন্তু ১৯৬১ সালে প্রবল বাধা-বিপত্তির মধ্যে পালিত হয়েছিল রবীন্দ্রজন্মশতবার্ষিকী, যে কারণে সেই যুগে বাংলার 888sport live football-সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যাঁরা অবদান রেখেছিলেন আজকের দিনে বিশেষভাবে তাঁদের 888sport app download for android করি – 888sport apk download apk latest versionর সঙ্গে।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.