রবীন্দ্রনাথের পাঠক ও পাঠপরিক্রমা ব্যাপক। মৃত্যুর প্রায় একশ বছর পরেও পাঠকের রবীন্দ্র-আগ্রহ কমেনি। কালের গভীরতা যত বাড়ছে রবীন্দ্র-অধ্যয়নের পরিসরও ততই বিস্তৃত হচ্ছে। অবিভক্ত ভারতের প্রাদেশিক ভাষার কবি। আজ ভৌগোলিক অধিবৃত্ত অতিক্রম করে ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বব্যাপী। রবীন্দ্রনাথের বিশালতা 888sport live footballের সীমা ছাড়িয়ে সংগীত ও চিত্রকলার কারুকার্যময় জগতেও গেড়েছে সার্থকতার সুনিপুণ শিকড়। তার সঙ্গে আছে নিজ দেশ-কাল, সমাজ-রাষ্ট্র এবং মাটি-মানুষের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত সুদীর্ঘ আশি বছরের একটি মহৎ জীবন। যে-জীবন কর্মে-জ্ঞানে-প্রেমে অনন্য। দেশের ধুলায় পা রেখেও বিশ্বজগতে যার অবাধ বিচরণ। তাই সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নানা বিষয়ে নানাভাবে নতুন করে গুরুত্ব লাভ করছে রবীন্দ্রনাথের প্রাসঙ্গিকতা। বেড়ে চলেছে সচেতন রবীন্দ্রচর্চা এবং গবেষণা।
রবীন্দ্র-গবেষণায় বেগম আকতার কামাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি নাম শুধু 888sport appsে নয়, পশ্চিমবঙ্গেও। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে তাঁর গবেষণা সুধীসমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। রবীন্দ্র888sport app download apkর বাতায়ন তাঁর অতি গুরুত্বপূর্ণ গবেষেণা গ্রন্থ। প্রথম আলো বর্ষসেরা 888sport app download bd পেয়েছেন রবীন্দ্রনাথের ব্রহ্মভাবনা লিখে। আমাদের বর্তমান আলোচনার বিচার্য বিষয় বেগম কামালের সদ্য প্রকাশিত গবেষণাগ্রন্থ রবীন্দ্রনাথের এশিয়া দর্শন।
রবীন্দ্রনাথ আমার বিবেচনায় বাংলা ভাষার সবচেয়ে দুর্বোধ্য লেখক। অনেক ধরনের কষ্টসাপেক্ষ মনন সমৃদ্ধি দিয়ে তাঁকে বুঝতে হয়। তার ওপর আছে ভাষার কারুকার্যময় আপাত সারল্যের মধ্যে বহু ব্যঞ্জাত্মক বক্ররৈখিকতা। বুদ্ধদেব বসু তাঁর এক 888sport liveে লিখেছেন, বুদ্ধি যার যত বেশি ভাষাকে বিকৃত করবার ক্ষমতা তার তত বেশি। বিকৃতি অর্থে তিনি ভাষার নানা ধরনের কূটচালকে বুঝিয়েছেন। কথাটি তিনি বলেছিলেন ভারতীয় ভাষা কমিশনের সুপারিশের সমালোচনা প্রসঙ্গে তাঁর লেখা একটি দীর্ঘ 888sport liveে। কথাটিকে আমি অন্যভাবে বলতে চাই, প্রতিভার ধার যার যত বেশি ভাষার অতলান্তিক ইঙ্গিতময় রহস্যও তার রচনায় তত বেশি। রবীন্দ্রনাথই বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ প্রতিভা। অন্তত এখন পর্যন্ত। তাই তাঁর লেখাতেই রহস্যময়তা সবচেয়ে বেশি। চিত্তের প্রসারতা আর বহুমাত্রিক জ্ঞানের উজ্জ্বল আলোক শিখায় চিরে চিরে সেই রহস্যের উন্মোচন ঘটাতে হয়। নইলে রবীন্দ্রপাঠ বিফল হবার সম্ভাবনা ষোলো আনা। বুদ্ধদেব বসু খুব সম্ভব এই কারণেই রবীন্দ্রনাথকে পাঠ করবার ক্ষেত্রে পাঠকের সক্ষমতাকে সন্দেহ করে লিখেছেন, ‘যদি পাঠক অযোগ্য না হন।’ সৈয়দ মুজতবা আলী যদিও লিখেছেন, রবীন্দ্রনাথের ব্যাখ্যা রবীন্দ্রনাথ নিজেই। তাঁর প্রতি 888sport apk download apk latest version রেখেই বুদ্ধদেব বসুর কথার প্রতিধ্বনি করে বলা যায়। রবীন্দ্রনাথকে পাঠ করবার এই যোগ্যতা অর্জন সহজ নয়। আর সহজ নয় বলেই সাধারণ পাঠককে শরণাপন্ন হতে হয় বিজ্ঞজনের রবীন্দ্রপাঠের। রবীন্দ্রনাথের এশিয়া দর্শন আমার বিবেচনায় এ যেন যথার্থ অর্থেই বিজ্ঞজনের রবীন্দ্রপাঠ।
বেগম আকতার কামাল 888sport app download apkর পোস্টমোর্টেমে তাঁর মেধা ও সৃষ্টিশীলতার নির্মেদ নিপুণতা দিয়ে আমাদের বিদ্যায়তনিক পণ্ডিতমহলে যেমন প্রশংসিত হয়েছেন তেমনি অপ্রাতিষ্ঠানিক নিষ্ঠাবান বিদগ্ধ পাঠকেরও প্রিয়ভাজন হয়েছেন। বিষ্ণু দে, রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ দাশ, নজরুল, শামসুর রাহমানের 888sport app download apk নিয়ে রচিত গ্রন্থমালা তার প্রমাণ। কিন্তু 888sport liveের অন্তরানুসন্ধান সম্ভবত রবীন্দ্রনাথকে দিয়েই শুরু। রবীন্দ্র888sport live footballের দুর্ভেদ্যতার প্রসঙ্গ আমরা আগেই বলেছি। কিন্তু তাঁর অ888sport live রচনাবলি ছাড়াও 888sport live জাতীয় রচনা আলোচনায়ও একটি বাড়তি বিপদ আছে। বিপদটি হলো, 888sport live footballের প্রকরণতাত্ত্বিকেরা 888sport liveের যে-সংজ্ঞা কাগজে-কলমে দাঁড় করিয়েছেন তার চৌহদ্দির মধ্যে আর যাই হোক রবীন্দ্রনাথের 888sport live দাঁড়াতে পারে না। মনীষী আহমদ শরীফ রবীন্দ্রনাথের 888sport liveকে 888sport live বলতে রাজি হননি। তাই রবীন্দ্রনাথের 888sport live পর্যালোচনার জন্যও বাড়তি প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। 888sport live বিশ্লেষণের চেনা পথ ছেড়ে বিশ্লেষককে তাই সন্ধান করতে হয় নতুন পথের। বিদুষী আকতার কামাল সচেতনভাবেই এই কঠিন কর্মে ব্রতী হয়েছেন। রবীন্দ্রনাথের এশিয়াবিষয়ক গদ্যকে তিনি অবলম্বন করেছেন রবীন্দ্রনাথের প্রাসঙ্গিক চিন্তা বা দর্শনকে বোঝার জন্য। আর এক্ষেত্রে বেগম আকতার কামাল মূলত নির্ভর করেছেন রবীন্দ্রনাথের অবলোকনের ওপরই। রবীন্দ্র-উদ্ধৃতির অসংকোচ উল্লেখ এই নির্ভরতার নিশ্চিত প্রমাণ। বারোটি 888sport liveের সুবিস্তৃত পরিসরের মধ্যে শ্রমনিষ্ঠ বিশ্লেষণের মাধ্যমে লেখক রবীন্দ্রনাথের এশিয়াভাবনার চেহারাটি শনাক্ত করার চেষ্ট করেছেন। এবং এই চেষ্টা তিনি করেছেন নির্মোহ যৌক্তিকতাবোধ দিয়ে। রবীন্দ্রমূল্যায়নের প্রচল ভারসাম্যহীন নিন্দা অথবা ঠাকুরতুল্য পূজা কোনোটিই বেগম আকতার কামালের বিশ্লেষণে পাওয়া যায় না। তিনি সাধ্যমতো সবটুকু আয়োজন রক্ষা করেছেন যথার্থ যুক্তির পথে হাঁটার জন্য। রবীন্দ্রনাথের মতের সঙ্গে বহু জায়গায়ই দ্বিমত পোষণ তাঁর নিজস্ব যুক্তিবোধ ও অন্ধ রবীন্দ্রানুরাগহীনতার পরিচায়ক। অন্যদিকে তিনি তাঁর দ্বিমতকে বাড়তি রবীন্দ্র-বিদূষণের বিষবাষ্পে পরিণত করেননি। যেটি হরহামেশই দেখা যায়। দায়িত্বশীল বিবেচনাবোধ থেকে নিজের অভিমত ব্যক্ত করেছেন। আরেকটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যা রবীন্দ্রনাথকে মূল্যায়নের জন্য অত্যন্ত জরুরি। তা হলো, একটি সামগ্রিকতার দৃষ্টি থেকে বিচার করা। রবীন্দ্রনাথের কোনো একটি একক প্রকরণ বা বিষয়কে বিচ্ছিন্নভাবে বিচার করলে তার সত্যিকার তাৎপর্য উপলব্ধি করা যাবে না। বেগম আকতার কামাল রবীন্দ্রনাথের 888sport live পর্যালোচনা করতে গিয়ে এই দুরূহ কাজটি অবলীলায় করেছেন। 888sport live-পর্যালোচনায় প্রাসঙ্গিকভাবেই অবতারণা করেছেন বিশেষভাবে রবীন্দ্রনাথের 888sport app download apk কিংবা অন্য কোনো 888sport live football প্রকরণের। ‘প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সভ্যতা : বৈপরীত্য ও স্বাতন্ত্র্য/ গোরা প্রসঙ্গ’ (পৃ ৬২)-এর মধ্য দিয়ে তাঁর রবীন্দ্রপাঠের বিশাল ব্যাপ্তির পরিচয় যেমন পাওয়া যায় তেমনি একটি সামগ্রিকতার বোধ থেকে রবীন্দ্রনাথের দর্শনকে উপলব্ধি করার সুযোগ মেলে।
শিলাইদহ-শাহজাদপুর-পতিসরে অতিবাহিত রবীন্দ্রজীবনের প্রাত্যহিকতার অনুষঙ্গে রচিত হলেও ছিন্নপত্র (১৩১৯) ভৌগোলিক
প্রাকৃতিক মনস্তাত্ত্বিক কিংবা আর্থসামাজিক দিক থেকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ রচনা। শুধু ছিন্নপত্র নিয়েই পরিপূর্ণ উচ্চতর গবেষণা হতে পারে। বিশাল ব্যাপ্তির ব্যঞ্জনাত্মক ক্যানভাস থেকে বেগম আকতার কামাল কেবল এর দার্শনিক সূত্রটিকেই চিহ্নিত করতে চেয়েছেন। ছিন্নপত্রের কাল মূলত রবীন্দ্রমানসের মুক্তির কাল। খোলা হাওয়া থেকে নির্বাসিত, মাতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত পারিবারিক নিয়ম ও প্রথার অনড় বন্ধনে আবদ্ধ অন্তরীণ গৃহবাসকে অতিক্রম করে বাইরের বিশাল প্রকৃতি ও জীবনের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার কাল। বিচ্ছিন্ন একক ভাবজগৎ থেকে মুক্ত হয়ে বহুবর্ণিল কর্মময় বস্তুজগতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কাল। প্রকৃতিই হয়ে উঠছে যেন রবীন্দ্রনাথের বিকল্প মা। এই সময়ে প্রেমে কর্মে সৃষ্টিশীলতায় রবীন্দ্রনাথ সম্পূর্ণই বিশ্বজাগতিক বাস্তবতার মৃত্তিকাময় অনুভূতি ও বোধের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গড়ে উঠছেন। ছিন্নপত্রের দার্শনিক সূত্র তাই বিচ্ছিন্নতা নয়, মিলনের আনন্দে উজ্জীবিত। পূর্ব বাংলার নদীমাতৃক জীবনের অকিঞ্চিৎকর রূপবৈচিত্র্যের সঙ্গে যার গভীর সম্পর্ক। দার্শনিক শিলার, হাইডেগার, কান্ট, মার্কস, রণজিৎ গুহ, প্লেটো, ভিট্গেনস্টাইন প্রমুখের প্রাসঙ্গিক নানা তত্ত্ব ঘেঁটে অধ্যাপক আকতার কামাল উদ্ঘাটন করেছেন ছিন্নপত্রে উদ্ভাসিত রবীন্দ্রদর্শনের সূত্রসার। পূর্ববঙ্গের নদীবিধৌত নিসর্গের একটি দীর্ঘ উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি যথার্থই মন্তব্য করেছেন, ‘রবীন্দ্রনাথের দার্শনিক ভাবনার মৌল উপাদানটি আহরিত হয়েছে এই নির্ভার অথচ কর্মপ্রবাহে চলমান নিসর্গজগতের সঙ্গে আত্মতাকে যুক্ততার মধ্যে দিয়ে – সত্তার মুক্ততা গড়ার বাসনায়।’ (পৃ ২৫)
গ্রন্থটির পরবর্তী পাঁচটি 888sport live পারস্পরিকভাবে গভীর ঐক্যে আবদ্ধ। ‘ভারতবর্ষ : ঐতিহাসিকতা ও নিত্যতার পরিকল্প’ 888sport liveটিতে আলোচনার উপক্রমণিকা হিসেবে ভারতবর্ষ (১৩১২) গ্রন্থটির সংক্ষিপ্ত পটভূমি প্রদান করে লেখক পরবর্তী চারটিতে ‘নববর্ষ’, ‘ভারতবর্ষের ইতিহাস’, ‘ব্রাহ্মণ’ ও ‘প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সভ্যতা’ 888sport liveের বিশদ ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন।
‘নববর্ষ : অতীতপ্রীতি, তপোবনাদর্শ’ 888sport liveের লক্ষ্য ‘নববর্ষ’ 888sport liveের দার্শনিক গুরুত্ব বিচার। এখানে লেখক রবীন্দ্রনাথের অতীতমুখী তপোবনাদর্শের ধরনটি ব্যাখ্যা করেছেন কবির ‘ধারণাবিদ্ধ’ তপোবনের প্রাতিষ্ঠানিক তাৎপর্যকে উপলব্ধি করেই। এই তাৎপর্যের মধ্যে আছে ইতিহাসকে উত্তম ধারণার গুদামঘর হিসেবে ব্যবহার করে ভালো ভালো চিন্তা খুঁজে বের করা। বেগম আকতার কামালের বিবেচনায়, “নববর্ষ’ 888sport liveটি 888sport sign up bonus ও বর্তমানের প্রজ্ঞালালিত অভিজ্ঞানের রাবীন্দ্রিক ব্যাখ্যা।’ (পৃ ৩১) যে-ব্যাখ্যার মধ্যে আছে পুঁজিবাদী সভ্যতার 888sport live chatায়নধর্মী কর্মব্যবস্থার বিরোধিতা এবং উপনিবেশবাদী শিক্ষা-সংস্কৃতির বিপরীতে ভারতীয় তপোবনাশ্রয়ী আদর্শের শরণাপন্ন হওয়া। গবেষকের ভাষায়, ‘উপনিবেশবাদী সংস্কৃতি ও শিক্ষার বিপরীতে রবীন্দ্রনাথের আয়ুধ হচ্ছে অতীত ভারতবর্ষীয় শান্তি, উদার গাম্ভীর্য ও কাঠিন্য যাতে নিহিত ছিল সংযম, বিশ্বাস, ধ্যান ও মৃত্যুভয়হীন আত্মসমাহিত শক্তি, আর এসবই তিনি খুঁজে পান ব্রাহ্মণ বর্গের মধ্যে, তপোবনাশ্রয়ী মুনিঋষিদের মধ্যে।’ (পৃ ৩৩)
বেগম আকতার কামাল যদিও রবীন্দ্রনাথের ভারতবর্ষীয় প্রত্যয় নিয়ে প্রশ্নের পর প্রশ্ন তুলে তাকে শনাক্ত করার প্রয়াস চালিয়েছেন। তার মূল্যায়নে : রবীন্দ্রনাথ ঐতিহাসিকতা দিয়েই উপনিবেশকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। ‘যে ইতিহাস বেদ-পুরাণ-888sport live chat888sport live football থেকে আহরিত।’ (পৃ ৩৩) বাইরের আঘাত বিপর্যয় থেকে যে-আত্মবল ভারতবর্ষকে রক্ষা করে সেই আত্মবল আবিষ্কারের অন্বেষাতেই রবীন্দ্রনাথ ইতিহাস-পুরাণের আলোকে দাঁড় করান মানুষের নিত্যতার সূত্র – যেখানে ঐতিহাসিকতাই চিরকালীনতা, নিত্যতা। এই নিত্যতার সূত্র ধরেই রবীন্দ্রনাথ ইতিবাচকভাবে দেখেন ‘বর্ণশ্রেণিবৈষম্য’কেও। গৌরব ও কর্মের প্রতি ভালোবাসা হিসেবে দেখেন গৃহাবদ্ধ 888sport promo codeর গৃহকর্ম করার বাধ্যবাধতাকে। তাঁর কাছে ‘সামাজিক বন্ধুতাই বর্ণবৈষম্যের প্রতিষেধক’, ‘গৃহকর্মের নিপুণতাই’ 888sport promo codeকে অসামান্য করে তোলার হাতিয়ার’। ইউরোপীয় ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের গৌরবময় ধারণার বিপরীতে ভারতীয় আত্মরক্ষার এই রবীন্দ্রপ্রত্যয়ের অর্থ – ‘সকলের সব হইবার অধিকার নাই।’ সংবেদনশীল রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকলে তাঁর এই প্রত্যয়ের জন্য সংকোচ বোধ করতেন। একবিংশ শতাব্দীর বৈশ্বিক বাস্তবতায় রবীন্দ্রনাথের এই ‘মানুষের নিত্যতার সূত্র’ মেনে নেওয়া যায় না। মানেননি বেগম আকতার কামালও। লিখেছেন, ‘সমাজসৃষ্ট বৈষম্য তো প্রাকৃতিক নয়, তা সভ্যতার কাঠামো, যেমনটি প্রাচীন বর্ণপ্রথাও একটা বিধিবদ্ধ কাঠামো। সমতার প্রশ্নে রবীন্দ্রনাথ এই রচনা লেখার সময়ে অন্তত সাম্যবাদী নন, যতটা ধনতন্ত্র বিরোধী ততটাই প্রাচীন সামন্তিক ধারণাপুষ্ট।’ (পৃ ৩৫) ইউরোপীয় ফ্রিডমের অসম্পূর্ণতা ও অযথার্থতা স্বীকার করেও ‘পুরাতনের মধ্যে প্রবেশ করে রবীন্দ্রনাথ আত্মমুক্তি ও সমষ্টির স্বাধীনতার যে ভাবাদর্শ দাঁড় করান’ তার ‘চিরনবীনতা’ ও ‘কার্যকারিতা’ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বেগম আকতার কামাল। তাঁর এই প্রশ্ন যথার্থ। একইভাবে ইউরোপীয় ‘কর্মবাসনা’র সকল সীমাবদ্ধতাকে স্বীকার করেও বলা যায়, আজ এই 888sport apkের যুগে রবীন্দ্রনাথের পরম কাম্য হিসেবে গণ্যকৃত ‘ব্রহ্মবাসনা’ তত্ত্বের নবীনতা ও কার্যকারিতাও প্রশ্নসাপেক্ষ। আমরা অকার্যকর বলেই মনে করি। ‘ব্রহ্ম’ শব্দের যে-ব্যঞ্জনাত্মক গভীর ব্যাখ্যা লেখক দিয়েছেন হাল আমলের যান্ত্রিক বাস্তবতায় তার দিকে নজর দেওয়ার অবকাশও মানুষের কম বলেই মনে হয়। ব্রহ্ম নয়, 888sport apkেই এ-যুগের মানুষের আগ্রহ।
‘নববর্ষ’ 888sport liveের প্রতিপাদ্যই আরো প্রগাঢ় পর্যবেক্ষণে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে ‘ভারতবর্ষের ইতিহাস’ 888sport liveে। এখানে আমরা রবীন্দ্রনাথের ইতিহাসচর্চার মধ্যে পাই ‘অতীতের প্রজ্ঞা-মনন-সংস্কৃতি’ দিয়ে ভারতবর্ষের গৌরবকে ‘আজকের স্বদেশচেতনায় প্রবাহিত করা’। পুঁজিবাদী নাগরিক 888sport live chatনির্ভর বিচ্ছিন্নতাপ্রবণ জীবনবোধ এবং ঔপনিবেশিক ইতিহাসকে প্রত্যাখ্যান করে শিক্ষা ও সংস্কৃতির চর্চায় নতুন ঐক্যতাত্ত্বিক জীবনাদর্শের অবলম্বন, রবীন্দ্রদর্শনে যাকে বলা হয়েছে তপোবনাশ্রয়ী জীবনাদর্শ। “শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠ্য ইতিহাস ‘ভারতবর্ষের নিশীথকালের একটা দুঃস্বপ্ন কাহিনীমাত্র” – প্রাবন্ধিক-উদ্ধৃত ‘ভারতবর্ষ’ 888sport liveের সিদ্ধান্তমূলক সূচনাবাক্য তাই অত্যন্ত গুরুত্ববহ এবং আশাবাহী। এর মধ্যে আছে ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে’ উচ্চারণের মতোই অমিত সাহস, যার মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ ব্রিটিশ উপনিবেশ প্রভু ও তাদের তল্পিবাহকদের রচিত ইতিহাস ও আধিপত্যবাদের বাস্তবতাকে ‘নিশীথকালের দুঃস্বপ্ন কাহিনীমাত্র’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের ঐক্যতাত্ত্বিক জীবনবোধ যতই মহিমান্বিত মনে হোক বাস্তবতার নিরিখে তার অনেক কিছুই সমর্থনযোগ্য নয়। বেগম আকতার কামাল অত্যন্ত মার্জিত 888sport live chatবোধের সঙ্গেই তাই লিখেছেন – ‘রবীন্দ্রনাথ ফরাসি বিপ্লবেও কোনো সদ্গুণ দেখেন না যা দূরপ্রসারী হয়েছিল।’ যদিও ‘পরিবর্তিত রবীন্দ্রনাথ পাঠান-মোগল-হুনকে একদেহে লীন হওয়ার কথাই বলেন যা অনুপস্থিত রাখে রক্তপাত-যুদ্ধঝঞ্ঝার রণলোককে। এটাও ঐক্যতত্ত্বের (ঐকতত্ত্ব?) প্যারাডাইম।’ (পৃ ৪১) সংস্কৃতিক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের ধর্মচেতনাকে উপলব্ধির জন্য গবেষকের দুটি মন্তব্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং পাঠকমনে তা নতুন চিন্তার উদ্রেক ঘটায়। তিনি লিখেছেন : ১. ‘আমরা এটাই বলতে চাইছি যে ব্রাহ্মধর্মের একেশ্বরবাদ ছিল তাঁর ধর্মসাধনা, তাতে মিশেছে ঈশোপনিষদের নান্দনিক অংশ, আর সংস্কৃতিক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ সনাতন ধর্মে তথা হিন্দু ধর্মের ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কারণ এই ধর্মকে ‘ভারতবর্ষ দ্যুলোকভূলোকব্যাপী মানবের সমস্ত জীবনব্যাপী একটি বৃহৎ বনস্পতিরূপে দেখিয়াছে।’ (পৃ ৪৩) ২. ‘কান্টের মতোই এখানে রবীন্দ্রনাথও ধর্মকে – যা সবসময় আমাদের অন্তর্গত স্বার্থপরতা ও অনৈতিকতা জয় করার ক্ষেত্রে সক্রিয় থেকেছে, তারই একটি ‘সেক্যুলার যৌক্তিক সংস্করণ’ তৈরি করতে চেয়েছিলেন। এই যৌক্তিকতা আমাদের আরও বেশি উত্তম করতে সমর্থ হবে – যদিও সেটি রবীন্দ্রদৃষ্টিকোণে চর্চিত ভারতীয় সনাতন ধর্ম – যা তাঁর মতে, অনেক গুণের গুদামঘর, যা মানবত্বকে দিশাময় করে, তা শেষ পর্যন্ত চিরন্তন মানুষের মনুষ্যত্বধর্ম – এই বোধিতে পরিণত হতে পেরেছিল রবীন্দ্রভাবাদর্শে।’ (পৃ ৪৪)
আমাদের প্রশ্ন হলো ‘পাঠান-মোগল-হুন একদেহে লীন হয়ে থাকলে সংস্কৃতিক্ষেত্রে সেগুলোর কি কোনোই ভূমিকা ছিল না? তা হলে শুধু সনাতন তথা হিন্দু ধর্মকে ‘ভারতবর্ষ দ্যুলোকভূলোকব্যাপী মানবের সমস্ত জীবনব্যাপী একটি বৃহৎ বনস্পতিরূপে’ দেখে কীভাবে? ‘কেবলমাত্র ধর্মের ক্ষেত্রে নয়, ব্যবহারিক জীবনেও নানাভাবে নানাদিকে হিন্দু-মুসলমানের সম্মিলিত সাধনা সেদিন সমাজ ও 888sport live chat সৃষ্টিতে আত্মপ্রকাশ করেছে। স্থাপত্য ও ভাস্কর্য, চিত্রকলা ও সংগীত – এককথায় ভারতীয় জীবনের যতদিকে বিকাশ’ (বাঙলার কাব্য, বাংলা একাডেমি, ২০১৫, পৃ ১০-১১) হুমায়ুন কবিরের এই উক্তির সঙ্গে উল্লিখিত চেতনা কি সাংঘর্ষিক নয়? কবিরের এই মন্তব্য কি সম্পূর্ণ সারহীন? আর এই দেখা মধ্যপ্রাচ্যীয় একদা প্যানইসলামিজমের মতো এক ধরনের প্যানহিন্দুইজমিক ব্যাপার নয় কি? এ-যুগে তার সারবত্তাই বা কতটুকু? দ্বিতীয়ত : কান্ট এবং রবীন্দ্রনাথ যা-ই বলুন ধর্ম কি ‘সবসময় আমাদের অন্তর্গত স্বার্থপরতা ও অনৈতিকতা জয় করার ক্ষেত্রে সক্রিয় থেকেছে?’ অন্তত কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম? জীবনের বর্তমান বা ঐতিহাসিক বাস্তবতা কি তার সাক্ষ্য দেয়? ভারতীয় সনাতন ধর্ম কি ‘মানবত্বকে দিশাময় করে, তা শেষ পর্যন্ত চিরন্তন মানুষের মনুষ্যত্বধর্ম?’ আর ‘চিরন্তন মানুষের মনুষ্যত্বধর্ম’ যদি মানবত্বকে দিশাময় করে তাহলে ‘সেটি রবীন্দ্রদৃষ্টিকোণে চর্চিত ভারতীয় সনাতন ধর্ম’ হয় কী করে? ধর্মসংস্কৃতির এই বোধেই বিদ্যাসাগর রবীন্দ্রনাথের চেয়েও অগ্রসর পথের পথিক।
রবীন্দ্রনাথের ‘ব্রাহ্মণ’ 888sport liveের চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়েছে ‘ব্রাহ্মণ : প্রাচীনত্ব ও বর্তমানের বৈপরীত্য’ 888sport liveে। ‘ব্রাহ্মণ’ 888sport liveে ব্যক্ত আধুনিক সমাজনেতা হিসেবে ব্রাহ্মণকে প্রতিষ্ঠিত করার অতীতাশ্রয়ী বর্ণপ্রথা সমর্থিত রাবীন্দ্রিক শুদ্ধতাবাদকে 888sport apkের এই যুগে সমর্থন করা সহজ নয়। বেগম আকতার কামালের গভীর প্রজ্ঞাসম্পন্ন বিশ্লেষণে এই বক্তব্যই প্রাধান্য পেয়েছে। এ-ব্যাপারে তাঁর বক্তব্য অত্যন্ত পরিষ্কার। তিনি লিখেছেন, ‘বর্ণশ্রেষ্ঠ 888sport apk download apk latest versionচারী ব্রাহ্মণই হবে সমাজনেতা – এটাই রবীন্দ্রনাথের সমাজতন্ত্রের মূল কথা।’ (পৃ ৫০) প্রাচীন ভারতের ব্রাহ্মণের সঙ্গে আধুনিক ব্রাহ্মণের সংযোগ গড়ে তোলার ব্রাহ্মণ্য নেতৃত্বের যে-প্রত্যয় রবীন্দ্রনাথ ব্যক্ত করেন সে-সম্পর্কে অধ্যাপক আকতার কামালের সউদ্ধৃধি অভিমত : ‘বড় এক-ঝোঁকা এই বক্তব্য। তবে যদি আমরা শূদ্রকে নিছক কর্মজীবী ধরে নিই তবে বলা যায় বিদ্বান, মননবুদ্ধ, কর্তব্যপরায়ণ ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়-বৈশ্যদের কর্মক্রিয়াকেই তিনি প্রাধান্য দিয়েছেন। ভারতের বৃহৎসংখ্যক শূদ্রদের বাইরেই রাখা হয়েছে আর ভিন্ন ধর্মাবলম্বী মুসলিম সমাজ তাঁর এই সময়কার ব্রাহ্মণত্ব চিন্তার বাইরেই রয়ে গিয়েছিল।’ (পৃ ৫৫) এখানেও কথা থাকে, শূদ্ররা নিছক কর্মজীবী তাই বিদ্বান, মননবুদ্ধ, কর্তব্যপরায়ণ নয়। তাদের কর্মক্রিয়া রবীন্দ্রনাথের কাছে প্রাধান্য পায় না। প্রাধান্য পায় ‘বিদ্বান, মননবুদ্ধ, কর্তব্যপরায়ণ ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়-বৈশ্যদের কর্মক্রিয়া?’ রবীন্দ্রনাথের এই ভাবনার পরিবর্তন যে পরে ঘটেছিল তার উল্লেখও লেখক করেছেন। ‘রবীন্দ্রনাথের ‘ব্রাহ্মণ’ একটি জাতিগত রূপক – national allegory-র বিনির্মাণ’ উল্লেখ করে তিনি সমাপনী বাক্যে লিখেছেন : ‘বঙ্কিমচন্দ্র পৌরাণিক দশপ্রহরণধারিণী দুর্গাকে জাতীয়তাবাদের প্রতীক করেছিলেন আর রবীন্দ্রনাথ যে ব্রাহ্মণ-রূপকপ্রতিমা সৃষ্টি করেন তা কতিপয় সদ্গুণের সমাহারবিশিষ্ট স্বাদেশিকতা, যা বিতর্ক/ প্রশ্নবিদ্ধ হলেও পুরাণ জগৎ থেকে মুক্ত কিন্তু ঐতিহ্যশক্তিতে স্থানিক ও বীর্যবন্ত।’ (পৃ ৫৬) এই সিদ্ধান্ত তথ্যসমৃদ্ধ এবং সঠিক।
‘ব্রাহ্মণ’ 888sport liveের কিছু বিষয়ের পুনরালোচনা থাকলেও ‘প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সভ্যতা’ 888sport liveে রবীন্দ্রনাথ এই দুই সভ্যতার তুলনামূলক বিচার প্রসঙ্গে দৃষ্টিপাত করেছেন অনাগত কালের মানবসভ্যতার অস্তিত্বের সংকটের দিকে আর এর থেকে পরিত্রাণের সম্ভাব্য উপায় অনুসন্ধান করেছেন ‘অখণ্ড ভারতবর্ষের অস্তিত্বে অন্তনির্হিত গুণাবলি আবিষ্কার করে করে।’ ‘প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সভ্যতা : বৈপরীত্য ও স্বাতন্ত্র্য’ 888sport liveে বেগম আকতার কামাল রবীন্দ্রনাথের এই ভাবাদর্শেরই ইতিবৃত্ত উদ্ঘাটন করেছেন। করেছেন অত্যন্ত কালসচেতন সাম্প্রতিক বৈশ্বিকবাস্তবতা এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে সংযুক্ত করেই। পূর্ববর্তী 888sport liveটিতে যার অনুপস্থিতির উল্লেখ আমরা করেছি। বর্তমান করোনা মহামারি আক্রান্ত পৃথিবীতে বিষয়টি এতটাই প্রাসঙ্গিক এবং প্রয়োজনীয় যে আমরা বাধ্য হচ্ছি লেখকের দীর্ঘ সমাপনী স্তবকটি উদ্ধৃত করতে। ‘প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সভ্যতা’ 888sport live সম্বন্ধে তিনি লিখেছেন :
888sport liveটি বর্তমান কালেও খুবই প্রাসঙ্গিক ও বিবেচনাযোগ্য এই কারণে যে ভারতবর্ষ ত্রিখণ্ডিত হয়েছে, কিন্তু সমাজবৈচিত্র্য সত্ত্বেও, ঐক্য রক্ষার উক্ত রাবীন্দ্রিক সূত্রগুলি আমাদের জাতীয়তাবোধকে একমাত্রিক রাষ্ট্রীক করে তুলছে কিনা, তাতে কোনো সঙ্কট সৃষ্টি হচ্ছে কি না তা যাচাই করে নেয়া। বিশ্ব আজ আন্তঃসংযোগে যুক্ত হয়ে প্রযুক্তি, অর্থব্যবস্থা তথা পুঁজিবাদের শৃঙ্খলে যেভাবে বাঁধা সেটি মনুষ্যত্বের অবমাননা, কিংবা বিশ্বপ্রকৃতির বিপরীতে চলে গিয়ে কোনো বিপর্যয় ডেকে এনে পৃথিবীকে অ্যাবসার্ডিটির দিকে নিয়ে যাচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে কারা সতর্ক থাকবে? ব্যক্তি সমাজ না রাষ্ট্র কিংবা সম্পূর্ণ বিশ্ব? এ প্রশ্নের উত্তর নিহিত আছে ভবিষ্যতের গর্ভে। 888sport apk-প্রযুক্তির অতিশায়ী ও বিস্ময়কর আবিষ্কার, রাষ্ট্রকাঠামোতে ভারসাম্যহীন ক্ষমতায়ন, পুঁজিবাদী বিশ্বায়ন কবলিত মানবপ্রজাতিসহ সকল প্রাণজগৎ কীভাবে অস্তিত্ব রক্ষা করবে, সৃষ্টিশীল সত্তা ও স্বাধীনতা বয়ে বেড়াবে, আত্মিক শুদ্ধতা রক্ষা করবে, তা বলা দুষ্কর। ভয়ঙ্কর মারণাস্ত্র, দূরারোগ্য (দুরারোগ্য) মরণব্যাধির প্রকোপে যদি বিশ্ব কখনও আক্রান্ত হয় তবে সেক্ষেত্রে আমাদের মনুষ্যত্ব, প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের ঐক্য-সহযোগিতার শৃঙ্খলা বজায় রাখাই যে তাৎপর্য পাবে তা বলা দুষ্কর নয়। হয়তো তখন মানুষ হবে আরও সহমর্মী, মৈত্রী-মমতাঘন, ভারসমতায় পারস্পরিক সম্পর্কান্বিত – এটাও প্রকৃতিরই দাবি ও নিয়ম। এই মহাপ্রকৃতি বৈচিত্র্যময়তায় বিপুল কিন্তু বিকার ও ভারসাম্যহীনতায় ধ্বংসকামী হয়ে ওঠে। এই মহাপ্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যবিধান, সভ্যতা-সংস্কৃতিকে আরও বেশি মানবিক করে তোলা – এটাই ইকোলজির মূল কথা। রবীন্দ্রনাথ এই ইকোলজিকে সেই বাল্যবয়স থেকে জীবনের উপান্ত পর্যন্ত বারংবার ব্যক্ত করেছেন 888sport live chatে-888sport live footballে-কর্মে ও দার্শনিক ভাবনার মধ্যে। তাঁর ঐতিহাসিকতা আর নিত্যতার ডিসকোর্সই মানবিক শুদ্ধসত্তার হাত ধরে একটি পরিণামী রূপান্তরবাদ তথা টেলিওলজিক্যাল অভিব্যক্তির রূপ ধারণ করতে চেয়েছে। আর তার বাস্তবতা ও মডেল বিনির্মিত হয় অখণ্ড ভারতবর্ষের অস্তিত্বে অন্তর্নিহিত গুণাবলি আবিষ্কার করে-করে। (পৃ ৬৩)
‘রবীন্দ্রনাথের রাষ্ট্রনৈতিক মত : সাম্প্রতিকতা ও নিত্যতা’ 888sport liveে লেখক ‘রবীন্দ্রনাথের রাষ্ট্রনৈতিক মত’ 888sport liveের পর্যালোচনা করেছেন। 888sport liveটি রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন ১৩৩৬ বঙ্গাব্দে শচীন সেন-রচিত Political Pholophy of Rabindeanath (১৯২৯) পড়ে নিজের অভিমত সম্পর্কে সন্তুষ্ট হতে পারেননি বলে। 888sport liveটিতে পরিব্যক্ত অভিমত ১৯১৪-পরবর্তী ইংরেজের কলোনিকেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থার হিংস্রতার নগ্ন প্রকাশে বীতশ্রদ্ধ রবীন্দ্রনাথের অভিমত। যে মত তাঁর পূর্ববর্তী মত থেকে ভিন্ন। বেগম আকতার কামালের পর্যালোচনায় রবীন্দ্রনাথের এই পরিবর্তিত অভিমত, রাজনৈতিক মতাদর্শ অত্যন্ত সাবলীল হয়ে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি দেখিয়েছেন, অভিজ্ঞতাবাদী রবীন্দ্রনাথের রাজনৈতিক চিন্তায় সমাজ ও রাষ্ট্রের চলমান ঘটনাপ্রবাহ যতটা কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে নির্দিষ্ট কোনো মত-পথ-তত্ত্ব বা আদর্শ ততটা করেনি। ব্রিটিশদের শিক্ষাকাঠামোর আধিপত্যবাদ ও অন্তঃক্ষতিকর প্রবণতা, লর্ড কার্জনের দরবারব্যবস্থার অসম্মানজনক আচরণ, যে-কোনো প্রয়োজনীয় বিষয়ে ভারতবাসীর রাষ্ট্রের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকা রবীন্দ্রনাথের রাজনীতি-ভাবনার এই বিষয়গুলো সুন্দরভাবে 888sport liveটিতে ব্যক্ত হয়েছে। বাদ যায়নি রবীন্দ্রচেতনায় স্পষ্ট হয়ে ওঠা আইন-আদালত ও থানা-পুলিশ দ্বারা ব্রিটিশ উপনিবেশ-প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রকাঠামোর ক্ষতিকর দিকটিও। রবীন্দ্রনাথের রাজনৈতিক ধারণা মূলত সমাজধারণারই বিকশিত সম্প্রসারণ। বেগম আকতার কামাল যথার্থই বলেছেন, ‘তাঁর রাষ্ট্রনৈতিক মত এ অর্থে সমাজনৈতিক মত, আগে সমাজতন্ত্র তারপর রাষ্ট্রকাঠামো।’ (পৃ ৭০) অত্যন্ত বাস্তব কারণেই তিনি বর্তমানের স্বাধীন-সার্বভৌম দেশেও সকল কিছু নিয়ন্ত্রণকারী রাষ্ট্রকাঠামোর ভয়াবহতা প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সমাজনির্ভর রাজনীতিভাবনার কথা 888sport app download for android করেছেন। রবীন্দ্রনাথের রাষ্ট্রনৈতিক মত বিশ্লেষণে লেখকের যুক্তিনিষ্ঠ নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি প্রশংসনীয়।
অভিজ্ঞতাবাদী রবীন্দ্রনাথ চিন্তাজগতে বিবর্তিত হলেও পরিবর্তনের মধ্যে যে একটি অপরিবর্তনীয় নিত্যতাকে রজ্জুর মতো ধরে রেখেছেন তা তাঁর সমস্ত সৃষ্টিকাজ আর দিনযাপনের মধ্যেই লক্ষ করা যায়। আংশিকভাবে তাঁর মত বিচার করলে স্ববিরোধিতা খুঁজে পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু সমগ্রভাবে দেখলে চিন্তার প্রবহমানতায় পাওয়া যায় ঐক্যসূত্র। এটাই রবীন্দ্রস্বভাবের বৈশিষ্ট্য। (পৃ ৬৫)
‘দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সৌহার্দ্য, ঐক্য ও শান্তির অনকল্প’ 888sport liveে লেখক রবীন্দ্রনাথের রূপান্তরশীল মানসপরিণ্ডলের একটি বিস্তৃত বিশ্লেষণ তুলে ধরেছেন। তুলে ধরেছেন রবীন্দ্রনাথের ব্রহ্মভাবনা, মানুষের ধর্ম অর্থে মনুষ্যত্ব, কেন্দ্র-প্রান্ত ধারণা সমন্বিত ভারতীয় ঐক্যবোধ, বিশ্ব মানবপ্রজাতির অন্তর্গত মানুষ হিসেবে ‘বিশ্বস্বভাব সম্পর্কিত সত্যের তত্ত্ব’ এবং রাজনৈতিক চিন্তার সারাৎসার। রবীন্দ্রভাবনার আলোকে স্পষ্ট করেছেন বিশ্বজনীনতা ও আন্তর্জাতিক আন্তর্মানবিক বন্ধন সৃষ্টির প্রয়োজনে দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রসমূহের প্রেক্ষাপট। দেখিয়েছেন এশিয়ায় নবজাগ্রত জাতীয়তাবাদের উজ্জীবনে আনন্দিত হয়েও রবীন্দ্রনাথ কীভাবে জাপানের পশ্চিমা উগ্র জাতীয়তার আগ্রাসী অনুসরণে আতঙ্ক বোধ করেছেন। বিশ্বের শান্তি ও কল্যাণের লক্ষ্যে পশ্চিমের ওপর আস্থা হারিয়ে রবীন্দ্রনাথ মেনে নেন পশ্চিমী দুনিয়ার সঙ্গে লেনদেনকে এবং শেষ পর্যন্ত অটুট রাখেন এই প্রত্যয় ‘মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো পাপ।’ যৌক্তিক উপস্থাপনায় প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে এই সকল প্রসঙ্গও। 888sport liveটিতে সবল-দুর্বলের কর্মযোগপন্থামূলক সহযোগিতার যে রবীন্দ্রতত্ত্বের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যার অন্তর্নিহিত সূত্র অধ্যাত্মবোধ Ñ তার সঙ্গে অনেকেই দ্বিমত পোষণ করবেন বলে আমাদের বিবেচনা।
‘চীনেম্যানের চিঠি’ (১৩০৯) 888sport live রবীন্দ্রনাথ রচনা করেন জন চীনেম্যানের চিঠি নামক ইংরেজিতে লেখা একটি ছোট বই পড়ে। বইটি সম্পর্কে তিনি লিখেছেন :
এই ছোটো বইখানি পড়িয়া আমরা বিশেষ আনন্দ ও বল পাইয়াছি। ইহা হইতে দেখিয়াছি, এশিয়ার ভিন্ন ভিন্ন জাতির মধ্যে একটি গভীর ও বৃহৎ ঐক্য আছে। চীনের সঙ্গে ভারতবর্ষের প্রাণের মিল দেখিয়া আমাদের প্রাণ যেন বাড়িয়া যায়। শুধু তাহাই নহে; এশিয়া যে চিরকাল য়ুরোপের আদালতেই আসামী হইয়া দাঁড়াইয়া তাহার বিচারকেই বেদবাক্য বলিয়া শিরোধার্য করিবে, স্বীকার করিবে যে আমাদের সমাজের বারো-আনা অংশকেই একেবারে ভিতসুদ্ধ নির্মূল করিয়া বিলাতি এঞ্জিনিয়ারের প্ল্যান-অনুসারে বিলাতি ইঁটকাঠ দিয়া গড়াই আমাদের পক্ষে একমাত্র শ্রেয়, এই কথাটা ঠিক নহে – আমাদের বিচারালয়ে য়ুরোপকে দাঁড় করাইয়া তাহারও মারাত্মক অনেকগুলি গলদ আলোচনা করিয়া দেখিবার আছে, এই বইখানি হইতে সেই ধারণা আমাদের মনে একটু বিশেষ জোর পায়। প্রথমত ভারতবর্ষের সভ্যতা এশিয়ার সভ্যতার মধ্যে ঐক্য পাইয়াছে ইহাতেও আমাদের বল; দ্বিতীয়ত এশিয়ার সভ্যতার এমন একটি গৌরব আছে যাহা সত্য বলিয়াই প্রাচীন হইয়াছে, যাহা সত্য বলিয়াই চিরন্তন হইবার অধিকারী, ইহাতেও আমাদের বল।’ (রবীন্দ্র-রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, ঐতিহ্য, 888sport app, ২০০৪, পৃ ৭৬৭)
এই কথাগুলোরই বিস্তারিত বিবরণ ও ব্যাখ্যা রবীন্দ্রনাথের 888sport live। সঙ্গে আছে রবীন্দ্রনাথের চিরায়ত ভারতবন্দনা ও চীনেম্যানের চিঠির বিবরণসহ নানা অভিমতের সত্যাসত্য বিচার। তিনি এই কাজটি করেছেন তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভাষার অকল্পনীয় জাদুমাদকতায় আবিষ্ট করেই। ‘চীনেম্যানের চিঠি’ 888sport liveের সামগ্রিক চিন্তা এবং ১৯২৪ সালে রবীন্দ্রনাথের চীন888sport slot gameের অভিজ্ঞতা ও তাঁর নিজের জীবন ও দর্শনে এই অভিজ্ঞতার তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাবের প্রজ্ঞাময় বিশ্লেষণ বেগম আকতার কামালের ‘চীনেম্যানের চিঠি প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ এবং পরবর্তী অভিজ্ঞতা’ 888sport live ।
‘জাপান-যাত্রী’, ‘জাভাযাত্রীর পত্র’ ও ‘পারস্যে’ রবীন্দ্রনাথের এই তিন বিখ্যাত 888sport slot game888sport live footballের ইতিবৃত্ত বেগম কামালের ‘জাপান-যাত্রী : সূর্যোদয়ের দেশে পশ্চিমের কিরণ’, ‘জাভাযাত্রীর পত্র : নানা অনুভূতির একগাছি মালা’ ও ‘পারস্যে : প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা’ 888sport live। 888sport slot game888sport live football নতুন স্থান, স্থাপনা ও নিসর্গের নিছক বিবরণ নয়। নয় কোনো জনপদ-জনগোষ্ঠীর সমাজতত্ত্ব বা জীবনবেদও। এ যেন প্রাণের সঙ্গে প্রাণের সম্মিলনে নতুন প্রাণের উৎসারণ। যিনি দেখেন যা দেখেন এই দুইয়ের রসায়নে দেশ-কালের বৈচিত্র্যে বোধের গভীর অনুরণনে যখন সৃষ্টি হয় ব্যঞ্জনাময় রসভাস্য তখনই 888sport slot gameকাহিনি অমর 888sport live footballের অভিব্যক্তি অর্জন করে। রবীন্দ্রনাথের 888sport slot gameবৃত্তান্ত এই অমর 888sport live footballেরই অবিনাশী উদাহরণ। তাঁর 888sport slot gameযাত্রার সহযাত্রী হয় দেশ, কাল, 888sport live chatকলা, নন্দনতত্ত্বসহ জীবনের সকল অনুষঙ্গ। গতির মধ্যে স্থিরতার অমোঘ আনন্দকে সঞ্চারিত করার জন্যই তিনি বেছে নেন সমুদ্রপথ। পূর্ববঙ্গের জীবনকালে তিনি যাপন করতেন বজরার নদী888sport slot game। গবেষকের দূরদর্শী বিশ্লেষণেও যে-প্রসঙ্গটি প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। রবীন্দ্রনাথের এই 888sport slot game নিষ্কাম যোগীর ধ্যানবিহার নয়। তা দেশ কাল সমাজ রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে হয়ে ওঠে চিরন্তন মানুষের কল্যাণকামী শাশ্বত দর্শন। কখনো-বা 888sport live chatজিজ্ঞাসার অমিয় সূত্রও। বেগম আকতার কামাল তাঁর সংবেদনশীল পাঠকমন ও ক্ষুরধার মনন দিয়ে রবীন্দ্র888sport slot game 888sport live footballের অনবদ্য অনুসন্ধান আমাদের সামনে হাজির করেছেন যা স্বকীয় সৃষ্টিশীলতায় সমৃদ্ধ। তিনি দেখিয়েছেন জাপান-যাত্রীতে রবীন্দ্রনাথের পর্যবেক্ষণ কতটা তীক্ষè, সংবেদ্য ও সমাজমনস্ক। ‘যাত্রাপথের 888sport live football ভাবনা’ (পৃ ১০১), ‘জাতি সম্প্রদায়ের চরিত্র্যবৈশিষ্ট্য’ (পৃ ১০৩)সহ তিনি উদ্ঘাটন করেছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিতে ইউরোপের কর্তৃত্ববোধের অনুশীলনকারী জাপানের দখলদারিত্বের কালিমাকেও। জাভাযাত্রীর পত্র থেকে তিনি দেখিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ কীভাবে ‘চোখ মেলে প্রসারণশীল চলমান জগৎ দেখতেন, বিচিত্র মানব সংস্পর্শে এসে প্রাণের সামঞ্জস্য খুঁজতেন এবং কাব্য প্রতীতি সৃষ্টিতে বাস্তব করে তুলতেন তাঁর প্রেক্ষণকে।’ (পৃ ১১৫) ইউরোপ কেন উপনিবেশ বিস্তারে আগ্রাসী ঘরছাড়া পথের পথিক? ভারতবর্ষ কেন নয়? তারও আর্থসামাজিক দার্শনিক তত্ত্বের পরিচয় লেখক তাঁর বিশ্লেষণে হাজির করেছেন (পৃ ১২৮)। পারস্যে 888sport live পর্যালোচনায় উঠে এসেছে রবীন্দ্রনাথের ‘মানবব্রহ্ম’তত্ত্ব (পৃ ১৩৪), ‘পাশ্চাত্য জড়বাদের নিন্দা’ (পৃ ১৩৬), ‘প্রাকৃতিক প্রতিকূলতায় প্রচল পশ্চিম-এশিয়ার জীবনসংগ্রাম’সহ (পৃ ১৪১) ইউরোপীয়দের দ্বারা সৃষ্ট আর্য-অনার্য জাতিদ্বন্দ্বের চিন্তাপ্রকল্প দ্বারা প্রভাবিত রবীন্দ্রনাথের নৃতাত্ত্বিক ইতিহাসচিন্তা (পৃ ১৪৩)। এসব বিষয় বিশ্লেষণে বিশ্লেষকের চিন্তাকাঠামোর যুক্তিবাদিতা অত্যন্ত স্পষ্ট। ‘কথামুখ’-এ গ্রন্থকার লিখেছেন, “দর্শন’ শব্দে দেখা ও ফিলোসফি দুই-ই বোঝায়। দেখার ক্ষেত্রে যদিও চক্ষুরিন্দ্রিয়ই প্রধান, কিন্তু তাতে অন্তর্দৃষ্টির সংযোগ থাকে, আর এই অন্তর্দৃষ্টিই বহির্জগতের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিশিষ্ট ভাষিকরূপে প্রজ্ঞামণ্ডিত ফিলসফিতে উত্তীর্ণ হয়।’ পুরো গ্রন্থ সম্পর্কেই প্রযোজ্য হলেও শেষ তিনটি 888sport liveের ক্ষেত্রে এই বক্তব্য বিশেষ আক্ষরিকভাবে সত্য।
রবীন্দ্রনাথের 888sport slot game প্রসঙ্গে লেখকের সমাপনী মন্তব্য শুধু গুরুত্বপূর্ণই নয়, এই গ্রন্থেরও নির্যাসজ্ঞাপক :
রবীন্দ্রনাথ শুধু 888sport slot gameই করতেন না, এর মধ্যে দিয়ে পেতেন নিজের স্থানটিও, দেশ হয়ে উঠত বৈশ্বিকতার অঙ্গবিশেষ, আকাশভরা সূর্যতারাসহ বিশ্বভরা প্রাণের মধ্যেই খুঁজে পেতেন নিজের অস্তিত্ব যা মাধুর্যে পরিপূর্ণ – মধুময় পৃথিবীই তাঁর কল্পনাবিভা। শুধু এশিয়ার বহুমুখী আত্মতাকেই নয়, এর সঙ্গে মিলিয়ে নিতেন বিশ্বজগৎকেও। তাই রবীন্দ্রনাথের এশিয়া দর্শন এক অর্থে বিশ্বজাগতিকতায় সম্পৃক্ত। (পৃ ১৪৪)
রবীন্দ্রনাথের চিন্তা ও দর্শনের যে গভীর জ্ঞানদীপ্ত ব্যাখ্যা গ্রন্থটিতে করা হয়েছে তা বাঙালির মনন ঐতিহ্যে এক অনন্য সংযোজন। পরিশেষে লেখকের প্রিয় প্রসঙ্গ ফুকোতত্ত্বের প্রতিধ্বনি করে আমরা বলতে চাই, রবীন্দ্রনাথের চিন্তা ও দর্শন আমাদের অতুল ঐশ্বর্যের গুদামঘর। তাঁকে নিজ দেশ-কালের ছাঁকনিতে ছেঁকেই গ্রহণ করতে হবে। এমন একটি প্রতিকূল সময়ে এ-রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ প্রকাশ করে কথাপ্রকাশ জাতীয় দায়িত্ব পালন করেছে । এ জন্য তারা প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু বইটির নানা রকম ভুল [(পৃ ১৪, ৪২, ৪৭, ৪৮, ৬৩, ১০৮); বিশেষভাবে প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায় স্থলে প্রভাত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ছাপা হওয়া (পৃ ৯২ ও ৯৪)] পোঠকের জন্য যেমন ক্লেশকর প্রকাশনাটির জন্যও গৌরবের নয়।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.