সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
মাইকেল মধুসূদন দত্তের মেঘনাদবধ কাব্যে একটি অত্যন্ত অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে। সেটি প্রমীলার সহমরণ। মেঘনাদের চিতাতে তার স্ত্রী প্রমীলার স্বেচ্ছায় এবং সানন্দে আত্মাহুতি দেওয়ার ঘটনার সমর্থন বাল্মীকির রামায়ণে নেই; রক্ষোকুলে অমন প্রথা চালু ছিল বলেও জানা যায় না। মধুসূদন তাঁর সময়ে বাংলায় প্রচলিত এই ভয়ংকর ও সম্পূর্ণ অমানবিক 888sport promo code-নির্যাতন প্রথাকে লঙ্কার স্বর্ণপুরীতে নিয়ে গেছেন, উৎসাহের সঙ্গে।
লঙ্কার সামাজিক জীবন রামের বনজীবনের তুলনাতে তো অবশ্যই, এমনকি অযোধ্যার রাজকীয় জীবনের চেয়েও উন্নত ছিল, যেমন নৈতিকতায়, তেমনি সম্পদে। অতিপ্রত্যুষে অদৃশ্য অবস্থায় লক্ষ্মণ যখন লঙ্কায় প্রবেশ করছে তখন নগরের ঐশ্বর্য দেখে তার বিস্ময় ঘোচে না,
পথপ্রদর্শক বিভীষণকে সে বলে, ‘এ হেন বিভব, আহা, কার করতলে?’ এ যেন রবার্ট ক্লাইভের মুর্শিদাবাদ দর্শন, এবং দর্শনে বিস্মিত হওয়া। ক্লাইভের মনে হয়েছিল যে, ঐশ্বর্যের দিক থেকে মুর্শিদাবাদ লন্ডনের চেয়েও সেরা। পার্লামেন্টে তাঁর ইমপিচমেন্টের সময় ক্লাইভ মুর্শিদাবাদের সম্পদ ও তা লুণ্ঠনের অপ্রতিরোধ্য সুযোগ থাকার পরিপ্রেক্ষিতে নিজের আত্মসংযমের যে-প্রশংসা করেছিল টমাস মেকওলের ইতিহাস-বিষয়ক 888sport liveে তার বিবরণ আছে। সেটি ১৮৩৪ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। তাই ধারণা করা সম্ভব যে, মুর্শিদাবাদে অনুপ্রবেশকারী ক্লাইভের অনুভূতির ছায়া অনুপ্রবেশকারী লক্ষ্মণের বিস্ময়ের ভেতর পড়েছে। আমরা দেখি, লঙ্কায় মেয়েরা স্বচ্ছন্দে চলাফেরা করে, সব কাজে অংশ নেয়, রাবণপত্নী চিত্রাঙ্গদা প্রকাশ্য রাজসভায় দাঁড়িয়ে পুত্র বীরুবাহুর মৃত্যুর জন্য স্বামীকে অভিযুক্ত করে, কুলাঙ্গার রাজদ্রোহী বিভীষণপত্নী সরমা লঙ্কায় বসবাস করে ও নির্বিঘ্নে সীতার সঙ্গে সময় কাটায়, অশোককাননে বন্দি সীতাকে জয় করার জন্য রাবণ বহুবিধ চেষ্টা চালায় ঠিকই, কিন্তু অসম্মান করে না। আর্য কবি বাল্মীকি অনার্য লঙ্কাকে রাক্ষসপুরী হিসেবে চিত্রিত করেছেন; এই রাক্ষসরা দেখতে ভয়ংকর, কিন্তু এরা যে নরমাংসভোজী তা নয়। মধুসূদন ওই অনার্যদের ভেতর উচ্চস্তরের মনুষ্যত্ব দেখেছেন। রাবণের কথা আলাদা, সে পাপ করেছে, এবং এখন পাপের ফল ভোগ করবে; কিন্তু অন্য রাক্ষসদের নৈতিকতাবোধ উন্নত – দেবদেবীদের তুলনায় তো অবশ্যই, আদর্শ মানুষ রাম-লক্ষ্মণের তুলনাতেও। তস্করের মতো মন্দিরে প্রবেশ করে নিরস্ত্র মেঘনাদকে আক্রমণ করছে দেখে মেঘনাদ যখন লক্ষ্মণকে ধিক্কার দেয়, তখন লক্ষ্মণের মুখে কোনো যুক্তি নেই। সে কেবল গালি দেয়, বলে, তোর জন্ম রাক্ষসকুলে, তোর সঙ্গে আবার নীতি-দুর্নীতি কি? তোকে হত্যা করব, কেননা তোকে আমি বাগে পেয়েছি; ‘মারি অরি, পারি যে কৌশলে।’ ঔপনিবেশিকরাও ঠিক ওই যুক্তিই দিয়ে থাকে, স্থানীয়দেরকে বলে থাকে, তোরা নীচু স্তরের মানুষ, তোদের দেশ দখল করে তোদেরকে আমরা সভ্যতা শেখাবো, তোরা আমাদের বিরুদ্ধাচরণ করেছিস, তোদেরকে যেভাবে সম্ভব পরাভূত করা চাই।
প্রমীলাকে মধুসূদন রূপে-গুণে-যৌবনে অসামান্য এক 888sport promo code হিসেবে অঙ্কিত করেছেন। ভিখারি রাঘবকে সে থোড়াই পরোয়া করে। তার আছে নিজস্ব বাহিনী। প্রমীলাকে দেখে রামের শিবিরে হৃৎকম্পের সৃষ্টি হয়। অবরুদ্ধ নগরে প্রমীলা প্রবেশ করবে। দূতী পাঠিয়েছে রামের কাছে, দ্বার উন্মুক্ত করে দিতে। সেই দূতীকে প্রত্যক্ষ করে রামের যুদ্ধস্পৃহা উবে যাওয়ার উপক্রম। সিংহী যদি সিংহের সঙ্গে যুক্ত হয় তা হলে মৃগপালের কী দশা, এ নিয়ে রামের দুশ্চিন্তা। প্রমীলাকে দেখে হনুমানের বিস্ময় ঘোচে না। তার বক্তব্য, রক্ষোঃকুলবধূদের দেখেছি, অশোককাননে শোকাকুলা সীতাকেও দেখেছি, ‘কিন্তু নাহি হেন এ রূপ-মাধুরী কভুও ভুবনে।’ রামের বিস্ময় আরো অধিক; বান্ধব ও পরামর্শদাতা বিভীষণকে সে বলছে, ‘কি আশ্চর্য্য, নৈকষেয়? কভু নাহিক দেখি,/ কভু নাহি শুনি এহেন তিন ভুবনে।/ নিশার স্বপন আজি দেখিনু কি জাগি?’ বিভীষণ তাকে নিশ্চিত করে যে, প্রমীলা নিশার স্বপ্ন নয়, বাস্তবিক ঘটনা।
যে-888sport promo code শেষ পর্যন্ত আত্মাহুতি দেবে তাঁকে অমন বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করা কেন? সহজ ব্যাখ্যা, ট্র্যাজেডির বোধটাকে তীব্র ও গভীর করা। কিন্তু কেবল আত্মাহুতি দেওয়ার ঘটনাই যে দেখানো হয়েছে, তা তো নয়, ওই যে অতিবর্বর স্ত্রী-হনন প্রথা তাকে মহিমান্বিতও করা হয়েছে। নবম সর্গে মহাকাব্যের সমাপ্তি; একেবারে শেষে দেখা গেল, চিতা প্রজ্বলিত হয়েছে, আগ্নেয়রথ গগন পথে উঠে যাচ্ছে, সুবর্ণ আসনে বসে আছে মেঘনাদ, তার বাঁপাশে ‘প্রমীলা রূপসী/ অনন্ত যৌবনকান্তি শোভে তনুদেশে;/ চিরসুখ হাসিরাশি মধুর অধরে।’ আগুনে পুড়ছে, কিন্তু অধরে স্বয়ম্ভরা বধূর মধুর হাসি। ওদিকে দেখা যাচ্ছে, এই মহৎ দৃশ্য দেখার জন্য আদি দেবতা ও ঋষিগণ, ‘আর প্রাণী যত ত্রিদিবনিবাসী’ সকলেই আকাশে সমবেত। এটি কবিকল্পনার আতিশয্য বইকি; বর্বরতাকে মাহাত্ম্য দান। এমন মাহাত্ম্য দান গ্রাম্য ব্রাহ্মণদের পক্ষে অশোভন নয়, কিন্তু মধুসূদনের কাছ থেকে অপ্রত্যাশিত।
অনুমান করা যায় যে, সতীদাহের প্রতি মধুসূদনের সমর্থন রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, মধুসূদনের রাবণ এর অনুমোদন দেয়, কিন্তু মধুসূদন নিজে অনুমোদন নয়, সমর্থনই করেন। প্রমীলার যে-মূর্তি তিনি গড়ে তুলেছিলেন তাকে যে বিসর্জন দেন তা নয়, রীতিমতো অগ্নিদগ্ধ করে ফেলেন। এ-কাজ কেবল অপ্রত্যাশিত তো অবশ্যই, অমানবিকও বটে।
কেমন করে এ-কাজ সম্ভব হলো এটা জিজ্ঞাস্য বটে। এই জিজ্ঞাসার বিশেষ কারণ এই যে, তাঁর 888sport live footballের অন্যত্র আমরা মেয়েদের মহিমার গান শুনি। মেয়েদেরকে পুরুষের ভোগের বস্ত্ত হিসেবে দেখাকে তিনি কীভাবে ঘৃণা করেন, সে-কথা তিনি চিঠিতে লিখেছেন; সে-বক্তব্য খুবই প্রত্যাশিত। ভারত-ইতিহাসের এক অসামান্য 888sport promo code হচ্ছেন রিজিয়া সুলতানা, তাঁকে নিয়ে মধুসূদন একটি 888sport app download apk লিখেছেন, ইচ্ছা ছিল একটি পূর্ণাঙ্গ নাটক লিখবেন। কিন্তু তাঁর বন্ধুরা তাঁকে নিরুৎসাহিত করেছেন। বন্ধুদের আশঙ্কা ছিল, মুসলমানকে নিয়ে নাটক লিখলে তা গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। মধুসূদন নিজে অবশ্য সে-বিবেচনার দ্বারা পরিচালিত ছিলেন না; সাম্প্রদায়িকতা তাঁকে কখনোই স্পর্শ করে নি। হতে পারে নাটকটি লেখা হয় নি সময় ও সমর্থনের অভাবে। কিন্তু অত্যন্ত অগ্রসর সেই মধুসূদন কী করে প্রমীলাকে সহমরণে পাঠান, এবং সবলাকে ‘অবলায়’ পরিণত করে তাকে দিয়ে বলিয়ে নেন, পতি বিনা অবলার কি গতি জগতে? একথা বলার আগে অবশ্য প্রমীলা ‘সহসা নয়নজলে’ ভেসেছে, এবং কেঁদেছেও, ‘হাহাকার রবে’। কান্নাটাই স্বাভাবিক।
মধুসূদন মূর্তি ভেঙেছেন। রাবণকে বীর, রামকে ভিখারি, লক্ষ্মণকে তস্কর হিসেবে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। মূর্তি ভাঙায় তাঁর ঐতিহাসিক অগ্রগামী ছিলেন রামমোহন ও বিদ্যাসাগর; কিন্তু সতী সাধ্বীর সহমরণে প্রেরণের ব্যাপারে তিনি চলে গেছেন রামমোহন-বিদ্যাসাগরের পেছনে। এর ব্যাখ্যা কী? ব্যাখ্যা হচ্ছে ঔপনিবেশিককালে ব্যক্তি-স্বাধীনতার সীমা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যিনি স্বাধীন ও বিদ্রোহী, কোথাও-কোথাও তিনিই আবার আবদ্ধ। সেটি 888sport promo codeর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিতেও দেখা যাচ্ছে বইকি। প্রচলিত সামাজিক ধারণার সম্পূর্ণ বাইরে চলে যাবেন এটা এই বিপস্নবীর পক্ষেও সম্ভব হয় নি। ব্যাপারটা সম্প্রদায়গত নয়, শ্রেণিগত।
মধুসূদনের রচনায় মেঘনাদের সঙ্গে প্রমীলার সহমরণ আমাদেরকে বিস্মিত করে। অন্য অনেক ক্ষেত্রে মধুসূদন-বিরোধী হলেও সতীদাহের প্রতি অল্পবয়সে রবীন্দ্রনাথের যে অনুমোদন ছিল তার প্রমাণ তাঁর তখনকার লেখাতে রয়েছে : ‘পূর্বে ভারতবর্ষের কার্যপ্রণালী অতি সহজ সরল, অতি প্রশান্ত অথচ দৃঢ় ছিল। […] সতী স্ত্রী অনায়াসেই স্বামীর চিতায় আরোহণ করিত […] সমাজরক্ষার জন্য চূড়ান্ত দুঃখ ভোগ এবং ধর্মরক্ষার জন্য প্রাণ বিসর্জন করা তখন অত্যন্ত সহজ ছিল।’ সেই সময়ে বিধবা-বিবাহের নিষেধ এবং
বাল্য-বিবাহের বিধিকেও তিনি সমর্থন জানিয়েছেন। বলেছেন, ‘পরিবারের দৃঢ়তা ও অখ-তা রক্ষা করিতে হইলে ক্ষতি স্বীকার করিয়াও এই সকল নিয়ম পালন করিতে হয়।’
দুই
১৯৭১ 888sport appsের অবস্থা মেঘনাদবধের লঙ্কার মতোই। শত্রুর দখলে রয়েছে জনগণ। কিন্তু একটা তফাৎ ছিল, সেটা হলো মেয়েদের দুর্দশা। প্রমীলারা সেখানে সহমরণে যান নি বটে, কিন্তু যেভাবে নির্যাতিত হয়েছেন তার তুলনা বিরল।
সে-কাহিনি নানাভাবে পাওয়া যাচ্ছে। পরি888sport free betন একটা আছে, কিন্তু প্রত্যেকটি 888sport free betর পেছনে একজন জীবন্ত মেয়ে রয়েছে, যাঁদের খবর পরি888sport free betন দেয় না। দিতে পারে না। তাঁদের একের কাহিনি অন্যের কাহিনি থেকে প্রায় অভিন্ন, কিন্তু আবার স্বতন্ত্রও; কারণ তাঁরা প্রত্যেকে একেকজন রক্তমাংসের মানুষ, এবং দুজন মানুষ তো কখনো এক হয় না, নানাদিক থেকে পৃথক থাকেন।
বীরাঙ্গনাদের আত্মকথন নামের একটি বই সম্প্রতি বের হয়েছে (সংগ্রহ ও সম্পাদনায় শেখ আবদুস সালাম ও 888sport live chatী বেগম)। সকল বই এক রকমের নয়, কোনো-কোনো বই আছে যেগুলো প্রচলিত অর্থে আনন্দ দেয় না, কিন্তু পড়ার সময়ে এবং পড়ার পরে উদ্বিগ্ন, বেদনার্ত ও চিন্তিত করে। বীরাঙ্গনাদের আত্মকথন সেই রকমেরই একটি বই। এ-বই কেউ একা লেখেন নি, এটি বিশজন নির্যাতিত 888sport promo codeর আত্মকথন, যাঁরা একাত্তরের যুদ্ধে ছিলেন, এবং ওই নয় মাস ও তারপরে চার দশক ধরে অমানবিক যন্ত্রণা সহ্য করেছেন।
একাত্তর সালে পাকিস্তানি হানাদারেরা বাংলার মানুষের ওপর কী ধরনের নির্যাতন করেছে তার নানা বিবরণ আমরা পেয়েছি, আরো পাবো, পাওয়া দরকার; কিন্তু এই বিশজনের আত্মকথনে নির্যাতনের যে-ছবি জীবন্ত হয়ে উঠেছে, তেমনটা দুর্লভ। কারণ এখানে যে-কাহিনি আছে তাতে কোনো আবরণ আভরণ নেই, কোথাও কল্পনার আশ্রয় নেওয়া হয় নি, তার সুযোগও ছিল না। বিবরণ এসেছে প্রত্যেকের নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে এবং এসেছে বক্তাদের নিজ-নিজ ভাষায়। কখনো-কখনো সত্য যে হার মানিয়ে দেয় কল্পনাকে তার নিদর্শন মূর্ত হয়ে উঠেছে বর্ণনায়।
888sport live chatের একটা বড় গুণ আন্তরিকতা, সে-আন্তরিকতা প্রতিটি কাহিনিতে রয়েছে। অন্যত্র আমরা পরি888sport free betন পেয়েছি, এখানে পাবো জীবন্ত মানুষকে। বলতে-বলতে এঁরা কেঁদেছেন, এ-বই অশ্রম্নতে ভরপুর। সেইসঙ্গে রয়েছে ঘৃণা ও ধিক্কার। ‘গোস্যাও’ আছে। গোস্যা যারা অত্যাচার করেছে তাদের ওপর; কিন্তু তাদের ওপরও বটে যারা এই মেয়েদেরকে নিরাপত্তা দিতে পারে নি। সর্বোপরি যে-সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা এদের জীবন থেকে নিরাপত্তা কেড়ে নিয়েছে, এদেরকে পরিণত করেছে নিঃস্ব মানুষে, তার ওপরও। কান্না যদি ভাসিয়ে নিয়ে যাবার ক্ষমতা রাখত, গোস্যা যদি পারত দগ্ধ করতে, ঘৃণা ও ধিক্কারে যদি ভেঙে পড়ত, তাহলে অমানবিক ওই ব্যবস্থাটার টিকে থাকবার কথা নয়। কিন্তু সে টিকে আছে, ক্ষমতাবান ও সুবিধাভোগীরা তাকে টিকিয়ে রেখেছে, নিজেদের স্বার্থে। ক
নির্যাতিত 888sport promo codeদেরকে বীরাঙ্গনা উপাধি যাঁরা দিয়েছিলেন তাঁদের আন্তরিকতায় কোনো ত্রুটি ছিল না। তাঁরা আশা করেছিলেন, ওই পরিচয় গৌরব বহন করবে। সে-আশা পুরোপুরি বিফলে গেছে, বীরাঙ্গনা পরিচয় দুঃসহ বোঝায় পরিণত হয়েছে। উপাধিবহনকারীরা দেখেছেন, শিরস্ত্রাণটি কণ্টকশোভিত, ওটি ফেলে দিতে পারলে তাঁরা বাঁচেন। সমাজ তো বটেই, অতি আপনজনেরাও এই মেয়েদেরকে পদে-পদে অপমানিত করেছে। কটুবাক্য, অশস্নীল মন্তব্য, হাসিঠাট্টা কোনো কিছু বাদ রাখে নি। অবজ্ঞা-উপেক্ষা এঁরা সহ্য করতে পারতেন, সার্বক্ষণিক সরব ও নীরব অপমান সহ্য করা কঠিন হয়েছে। একাত্তরে এঁরা পালাতে চেয়েছেন, একাত্তরের পরেও লুকিয়ে থাকতে হয়েছে, পালাতেও হয়েছে। পরিবারে আশ্রয় পাননি অনেকে, যাঁরা পেয়েছেন তাঁরা সম্মান পান নি। পালিয়ে শহরে চলে এসেছেন, কেউ চিনবে না এমন জায়গা খুঁজেছেন, চেয়েছেন আত্মপরিচয় পুরোপুরি লুপ্ত করে দিতে। ‘দেশান্তরিত’ হয়েছেন তাঁরা। ভিখিরি হয়েছেন কেউ, কেউ কাজ নিয়েছেন ভৃত্যের,
কেউ-বা আশ্রয় নিয়েছেন গার্মেন্টসে। সস্তা 888sport promo code শ্রমিকের কাতার দীর্ঘ হয়েছে। দৃশ্যমান হয়েছে বোরখার আধিক্য। সম্মান যে কতটা অসম্মানের হতে পারে, তার একটা দৃষ্টান্ত এখানে পাওয়া যাচ্ছে। কেউ-কেউ হয়তো আত্মহত্যাই করেছেন। যাদের খবর আমরা রাখি না। নির্যাতনের সময়েও ‘সাহসী’ মেয়েদের কেউ-কেউ আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন মুক্তির উপায় হিসেবে। যাঁরা পারেন নি তাঁদেরকে বহন করতে হয়েছে অভিশপ্ত জীবনের গস্নানি। গ্রামে কাজ নেই, উলটো অপমান রয়েছে, গ্রামে তাঁরা থাকবেন কী করে? স্বাধীন দেশে তাঁরা উৎপাটিত।
কিন্তু কেন এমনটা ঘটলো? মুক্তিযুদ্ধ তো আমাদেরকে অসামান্য সম্মান এনে দিয়েছিল। সে-সম্মান কেন আমরা ধরে রাখতে পারলাম না? কারণ হলো এই যে, সম্মানকে আমরা ভাগাভাগি করে নিতে পারি নি। গৌরব কুক্ষিগত করে ফেলতে চেয়েছে অল্পকিছু মানুষ, যারা ক্ষমতাবান ও সুযোগপ্রাপ্ত। এ-কাজটি করার প্রক্রিয়াতে তারা আচার-আচরণ দ্বারা অসম্মানিত করেছে নিজেদেরকে, অসম্মান বয়ে নিয়ে এসেছে গোটা দেশের জন্য।
নির্যাতিত মেয়েরা কিন্তু সম্মান চান নি, গৌরব তাঁদের কাঙ্ক্ষিত ছিল না, তাঁরা চেয়েছেন স্বাভাবিক জীবন। সে-জীবন তাঁরা পান নি। একাত্তরে পান নি, তারপরেও পান নি। হানাদারেরা সে-সুযোগ তাঁদেরকে দেয় নি, সুযোগ তারাও দেয় নি স্বাধীন 888sport appsে যারা ক্ষমতায় এসেছে। ব্যাপারটা তাহলে কী দাঁড়াল? দাঁড়াল এই যে, রাষ্ট্র ভেঙেছে, কিন্তু ব্যবস্থার বদল হয় নি। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা আগের মতোই রয়ে গেছে। বরঞ্চ আরও খারাপ হয়েছে। আরো বেশি দুঃসহ হয়ে উঠেছে ব্যবস্থার নিপীড়ন। দুদিক থেকে ঘটেছে ঘটনা। একদিকে স্বাধীনতা আগের তুলনায় বেশি করে স্বাধীন করে দিয়েছে ক্ষমতাবানদের। তারা সেই স্বাধীনতা ক্রমাগত বৃদ্ধি করেছে। বৃদ্ধি করার অর্থ দাঁড়িয়েছে বঞ্চিতদেরকে বঞ্চিত করা। এদের বৃদ্ধিতে অন্যদের হ্রাস। অন্যদিকে অকল্পনীয় যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতাপ্রাপ্তি যে-আশার সৃষ্টি করেছিল, অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রে সেটা বাস্তবায়িত হয় নি। আশাভঙ্গের বেদনা বঞ্চনার দুঃখে নতুন মাত্রা যোগ করে দিয়েছে।
ব্যবস্থাটা বৈষম্যমূলক। বৈষম্য পুরনো। একাত্তরের হানাদারেরা সকল বাঙালিকেই এক চোখে দেখত। ভাবত তারা শত্রু। বাঙালিরাও এক হয়ে গিয়েছিল, পাঞ্জাবিদের বিরুদ্ধে। সত্যি-সত্যি এক হয়েছিল কি? না, হয় নি, হওয়া সম্ভব ছিল না। পার্থক্য ছিল হিন্দু-মুসলমানে, ধনী-গরিবে এবং 888sport promo code-পুরুষে। হানাদার দস্যুদের লোলুপ দৃষ্টি ছিল মেয়েদের ওপর। মেয়েদেরকে তারা ভোগ্যবস্ত্ত মনে করেছে। তারা অবাধে সম্পদ লুণ্ঠন করেছে এবং উন্মত্ত হিংস্রতায় ধর্ষণ করেছে মেয়েদেরকে। মেয়ে-পুরুষ সকলেই পালিয়েছে, কিন্তু মেয়েদের পক্ষে পালানোটা কঠিন ছিল। অনেকেরই সন্তান ছিল, এবং কেউই জানতেন না কোথায় যাবেন, কোন পথে যাবেন; প্রস্ত্ততি ছিল না কোনো প্রকারের। তাছাড়া হানাদাররা যে এমন অপরাধ করতে পারে, সেটা ছিল কল্পনার বাইরে। উলটোদিকে ওই সারমেয়রা বিশেষভাবে খুঁজছিল মেয়েদেরকেই। পাশবিক লোলুপতা ছিল তাদের দৃষ্টিতে। পালের গোদা ব্যাঘ্রের ছদ্মবেশধারী সারমেয় লে. জে. নিয়াজি ছিল হানাদারের জন্য দৃষ্টান্ত ও অনুপ্রেরণাদানকারী। সে তার সৈন্যদের লেলিয়ে দিয়েছে এবং নিজেও একই কাজ করায় তৎপর থেকেছে। শুনতে পাই এখনকার ইরাকে নাকি আইএসের দুর্বৃত্তরা তবু ধর্ষণের একটি বিধিমালা প্রণয়ন করেছে, পাকিস্তানি দুর্বৃত্তরা ছিল পুরোপুরি মুক্ত। বাড়িতে-বাড়িতে গিয়ে তারা ‘মুক্তি’দের খুঁজতো। আর খুঁজতো সেয়ানা মেয়েদের। ‘মুক্তি’ পেলে হত্যা করতো, সেয়ানা মেয়ে পেলে যা করতো তা হত্যার অধিক।
নির্যাতিত এই মেয়েরা তাঁদের কথা বলতে চান নি। এই বইয়ের রচনাকারীদেরকে অভিনন্দন, তাঁরা একটি অত্যন্ত দুরূহ ও প্রয়োজনীয় কাজ করেছেন। বিশজনকে খুঁজে বের করা নিশ্চয়ই সহজ ছিল না, যাঁদের সন্ধান পেয়েছেন তাঁদেরকে কথা বলতে রাজি করানো কম কঠিন হবার কথা নয়। এঁরা সেটা করেছেন। এই বিশজনের কাহিনিতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা করার জন্য মূল্যবান তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাবে। সে-ইতিহাস লিখিত হচ্ছে, হতে থাকবে। এঁদের কাহিনি হারিয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে। যে-বিশজন
888sport promo code-যোদ্ধা তাঁদের নিজেদের কথা বলেছেন, তাঁরা সকলেই এখন বৃদ্ধা, একজন ইতিমধ্যে মারা গেছেন, চার-পাঁচজন মৃত্যুপথযাত্রী। এঁরা চলে যাবেন, এঁদের কাহিনিও হারিয়ে যাবে; সে-জন্য কাহিনি সংগ্রহ করাটা জরুরি ছিল। এই কাহিনিগুলো আরো অসংখ্য কাহিনির প্রতিচ্ছবি ও মুখপাত্র।
নির্যাতিত মেয়েরা সকলে এক রকম নন, তাঁরা প্রত্যেকেই স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব, কিন্তু নির্যাতন তাঁদেরকে এক জায়গায় নিয়ে এসেছে, এবং তাঁদের ভিন্ন-ভিন্ন কাহিনি একটি মহাকাহিনির অংশ হয়ে গেছে। এই মেয়েদের সঙ্গে আমাদের কোনো দিন দেখা হবে না, কিন্তু এঁরা সকলে আমাদেরই আপনজন, এবং এঁদের সকলের মুখ মিলেমিশে যেন একটি মুখচ্ছবি, সেটি 888sport appsের। তাঁদের ওপর ওই যে নির্যাতন, বেনামে সেটা ছিল 888sport appsের সকল মানুষের ওপরই নির্যাতন। পরবর্তীকালে তাঁদেরকে যে অবহেলা ও অপদস্থকরণ, সেটাও আমাদের ইতিহাসেরই অংশ। ইতিহাসটি অখ-। সেটি প্রবলের অত্যাচারের, দুর্বলের ওপর। প্রবলের পক্ষে আছে রাষ্ট্র ও সমাজ; দুর্বলের পক্ষে কেউ নেই। দুর্বল একা। একাত্তরে দুর্বলেরা এক হয়েছিল, তারা হাঁকিয়ে দিয়েছিল হানাদারদের; কিন্তু ব্যবস্থাটা তো বদলালো না, এবং না-বদলানোর সুযোগ নিয়ে নতুন শাসকেরা কর্তা হয়ে বসলো। বঞ্চিতরা দেখলো, তারা যেখানে ছিল সেখানেই রয়ে গেছে।
নির্যাতিত মেয়েরা দেখলেন, সমাজের চোখে তাঁরা অপরাধী হয়ে গেছেন। তাঁদের জন্য লুকানোর কোনো জায়গা নেই। নির্যাতনের ছাপ তাঁদের দেহে পড়েছে, অনেক অধিক পরিমাণে পড়েছে গিয়ে মনে। সেটা দুর্মোচনীয়। লোকে চিনে ফেলে, চিনিয়ে দেয়। স্বামী ঘরে তোলে না, স্বামী যদি ক্ষমা করে দেয় তো শাশুড়ি অপমান করে, স্বামীও এক সময়ে মত বদলে ফেলে। মেয়েটি যেন নিজেই দায়ী তাঁর নিজের দুর্দশার জন্য।
মুক্তিযুদ্ধে আমাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা অসম্ভব। আমরা বলি যে, ত্রিশ লাখ মানুষের প্রাণ এবং দুই লাখ 888sport promo codeর ইজ্জতহানির বিনিময়ে আমরা স্বাধীন হয়েছি। ‘বিনিময়’ কথাটা অন্যায় ও অসংগত। স্বাধীনতা ক্রয় করা হয় নি, এটি বিনিময়যোগ্য কোনো পণ্য নয়, স্বাধীনতার জন্য আত্মত্যাগ করতে হয়েছে। এবং আত্মত্যাগ যাঁরা করেছেন তাঁদের কয়েকজনের পরিচয় এখানে পাওয়া যাচ্ছে। বলা বাহুল্য, এঁরা নাম-না-জানা লাখ-লাখ মানুষের প্রতিনিধি। এঁরা কেউই বিত্তবান ছিলেন না। অধিকাংশই দরিদ্র। বাইরে কী ঘটছে সেটা তাঁরা জানতেন না। শুনেছেন কে রাজা হবেন তা নিয়ে ঝগড়া চলছে। তাতে যে উলুখাগড়াদের প্রাণ যাবে সেটা টের পেয়েছেন তখন যখন যুদ্ধ এসে একেবারে ঘাড়ের ওপর হামলে পড়েছে। কেউ তাঁদের সতর্ক করে দেয় নি, বলে নি কী ঘটতে যাচ্ছে, জানায় নি কী করণীয়। জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক নেতাদের চরম ব্যর্থতা এখানে। তাঁরা পালিয়ে গেছেন, জনগণকে সারমেয়দের মুখে ফেলে রেখে। মেয়েরা কেউ লড়েছেন দা-বঁটি নিয়ে। কামড়ে দিয়েছেন দাঁত দিয়ে। যুদ্ধ শেষে অধিকাংশই আগের মতোই বঞ্চিত রয়ে গেছেন। কারো-কারো দুর্ভোগ বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। যুদ্ধপরবর্তী চার যুগের ইতিহাস এঁদের দুর্ভোগ পোহানোর বিরামহীন ইতিহাস বইকি।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কখনোই পূর্ণাঙ্গ হবে না যদি নয় মাসের সঙ্গে পরবর্তী সময়ের দুর্ভোগের কাহিনিকেও যুক্ত না করা যায়। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে জানতে ও বুঝতে চাইবেন, যুদ্ধ নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ 888sport live football রচনা করতে উদ্যোগ নেবেন তাঁদেরকে অবশ্যই যেতে হবে এসব কাহিনির কাছে। মুক্তিযুদ্ধের ওপর অনেকেই লিখেছেন, আত্মকথনের অভাব নেই; ওই লোকেরা সকলেই সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেণির মানুষ, তাঁদের কাহিনি আত্মগৌরবের, সেখানে মুক্তিযুদ্ধের ছবি পাওয়া যাবে, কিন্তু বিপুলসংখ্যক মানুষের জীবনে যুদ্ধ কী যন্ত্রণা নিয়ে এসেছিল, নয় মাসে তাদের জীবনের ওপর দিয়ে কোন প্রলয় বয়ে গিয়েছিল, তার খবর পাওয়া যাবে মেয়েদের আত্মকথনে।
মেয়েদের জন্য জীবনের ভয় ছিল; তার চেয়েও বড় ভয় ছিল সম্ভ্রমহানির। স্বামী মারা গেছেন, অথবা পালিয়ে বেঁচেছেন, স্ত্রী রক্ষা পান নি। প্রাণে বেঁচেছেন, কিন্তু সে-বাঁচা দুঃসহ, দুর্বিষহ। বছরের পর বছর ধরে প্রাণ ধারণের গস্নানি তাঁদেরকে সহ্য করতে হয়েছে। 888sport apps যে সারা বিশ্বে আজ এমন অপমানিত তার কারণের মধ্যে রয়েছে দেশের অধিকাংশ মানুষের কষ্ট। বিশেষ কষ্ট যুদ্ধবিধ্বস্ত 888sport promo codeদের। তাঁদের অপমানে 888sport appsের সকল মানুষ অপমানিত। অপমানটা একাত্তরে ঘটেছে, চলছে এখনো। আর সেটা করছে কে? করছে রাষ্ট্রীয় সামাজিক ব্যবস্থা। যে-ব্যবস্থা মুক্তিযুদ্ধ ভাঙতে পারে নি।
উন্নতি হয়েছে। অবশ্যই। কিন্তু কার উন্নতি? উন্নতি সুবিধাভোগীদের। বাদবাকিদের কী অবস্থা তার ছবি লাঞ্ছিত 888sport promo codeদের কাহিনিতে পাওয়া যাবে। আর পাওয়া যাবে গভীরে, খুব গভীরে আছে যে-ব্যাধি তার ছবিতে, ব্যাধিটির নাম বৈষম্য। পুঁজিবাদ যাকে লালন করে। উন্নতি চেপে বসে আছে লাখো কোটি মানুষের বঞ্চনা ও আত্মত্যাগের বুকের ওপর। যে-মেয়েরা ধর্ষিত হয়েছেন তাঁরা সকলেই বলেছেন, তাঁরা অসহায় ছিলেন হানাদারদের বন্দুকের মুখে। ওই দস্যুরা বন্দুক দেখিয়েছে এবং বুটের তলায় মেয়েদেরকে চেপে ধরেছে। বন্দুক ও বুট দুটোই ক্ষমতার প্রতিনিধি। এখন যারা ক্ষমতাবান তাদের হাতেও অস্ত্র রয়েছে। প্রকাশ্য ও আচ্ছাদিত, উভয়বিধ। অল্পসংখ্যক মানুষের এই উন্নতি জনগণকে ভয় দেখায় এবং জব্দ করে। বঞ্চিত মানুষ কাঁদে, অভিশাপ দেয়। কিন্তু তাতে কাজ হয় না। কাজ হবে যদি একত্র হয়ে যুদ্ধে যাওয়া যায়, যেমনটা ঘটেছিল একাত্তরে।
তেমন ঘটনা কবে ঘটবে জানি না। না-ঘটা পর্যন্ত আমাদের মুক্তি নেই। ততদিন উন্নয়নের অভিশাপ আমাদেরকে বহন করে চলতে হবে। প্রসঙ্গত, ধর্ষিত 888sport promo codeদের কতগুলো অভিজ্ঞতার কথা 888sport app download for android করা যাক। এগুলো আপ্তবাক্য নয়, সাজানো কথা নয়, সংলাপ নয় নাটকের; অভিজ্ঞতার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা সত্য। কথাগুলো ধিক্কার দেয় উন্নতিকে। যেমন,
১. যুদ্ধের পরে সাড়ে চার বছর আমি হাসপাতালে রইছি। পাঁচটা অপারেশন করাইয়া আর চিকিৎসা করাইতে পারি নাই। ডাক্তার কইছে আর অপারেশন চলতো না। আমারে সব সময় একটা কাপড় পিন্দাইয়া রাখতো। আমার চারদিকে তখন বালিশ আর বালিশ। বুকের ওপর বাসুন (পেস্নট) রাইখা মা খাওয়াইয়া দিত। নড়তে পারি নাই। যুদ্ধের বহু বছর পরেও আমি লাঠি ভর কইরা কইরা হাঁটছি, আমি কই, হায়রে! মরি না কেরে।
২. হঠাৎ কইরা আইসা থাবা দিয়া ধরল আমাকে। বাবাকে ধরে পিছমোড়া বাইন্ধা রাখল। বাবার চক্ষের সামনে পাঁচজন আমাকে ধর্ষণ করল। আমার বাবা চায় না যে সে আমার দিকে ওই অবস্থায় তাকায়া থাকে। আমার দিকে না চাইলে আমার বাবারে রাইফেলের গোড়া দিয়ে খালি বাড়ি মারে। আমাকে যে তারা ধর্ষণ করতেছে তা আমার বাবাকে তাকাইয়া থেকে দেখতে হবে। এসব কথা মনে অইলে এখনো আমার কলজেডা ছিঁড়ে যায়।
৩. একটা মেয়েরে চার পাঁচটায় ধরে।… শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কামড়ায়।… একেবারে ছিন্নি মিনি কইরা হালাইছে।
৪. যুদ্ধের কারণে আমার জীবনডা এমন অইছে।
৫. যুদ্ধের লাইগাই খারাপ হইল জীবনডা।
৬. যুদ্ধের কারণেই জীবনডা, সংসারডা একদম তছনছ হইয়া গেছে।
৭. মুক্তিযুদ্ধ আমারে টোকাই বানাইয়া দিচ্ছে।… যুদ্ধ আমার বাপ-মায়ের নাম ভুলাইয়া দিছে। আমি আমার নিজ বাড়ি চিনি না। মাইনষে জিজ্ঞাসা করলে ঠিকানা বলতে পারি না।
৮. আজ যদি দেশে যুদ্ধ না লাগত তাইলে আজকা আমার জীবনডা এমন তছনছ হইত না।
৯. এই মুক্তিযুদ্ধের কারণে সারা জীবনটাই কষ্ট কইরা গেলাম।
১০. কি অইবো মুক্তিযুদ্ধের কথা কইয়া।… চলিস্নশ বছর এই বক্তৃতা দিয়া যায়।
১১. যুদ্ধের পর আমার মাথা আর উঁচু হয় নি। সেই দুঃখ সারা জীবন ধইরা আমারে এই কথাটা কইছে। আমার কি দোষ আছে?
১২. সব সময়ে মনের মধ্যে একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খায় যে কেনইবা 888sport apps স্বাধীন হইল আমরাই বা কেন যুদ্ধ করলাম? আর কেনইবা আমরা আজকে মান-সম্মান ইজ্জত হারায়ে ফেললাম।
রাষ্ট্র মূল্যায়ন করে না, সমাজ সম্মান দেয় না। একজন বলছেন,
আমি সম্মান দিয়া কি করুম? নিজে কামাই কইরা খাই। নিজে কামাই কইরা খাটলে খাও, না খাটতে পারলে নাই।
সমাজকে এঁরা ‘ডরান’। সাংবাদিক ও গবেষকরা যে খোঁজাখুঁজি করেন, সে-বিষয়ে অন্য একজনের মত :
এরকম কইরা কথা কইলে ওহানের সমাজের মানুষ তো আমারে কিছুদিন পর ভালা পাইতো না।
যুদ্ধের পরে নির্যাতিত যে-মেয়েটি হারিয়ে যান নি, বাড়িতে ফিরে এসেছেন, তাঁর অভিজ্ঞতা :
[কাঁদতে কাঁদতে মা বলেছেন] আহা রে! তোরে আলস্নায় বাঁচাইয়া রাখলো ক্যা? তুই মইরা যা।
অন্য একজন ভাবছেন :
মরি নাই। মরণ আমার কপালে ছিল না।
আরেকজন বলছেন,
[…] অপবাদের প্রতিবাদ করি নাই। খালি কানছি (কান্না)। প্রতিবাদ আর কী করুম? মানুষ আমারে ঘিন্না করছে।
হানাদারেরা গুলি করে স্বামীকে মেরেছে। তরুণী স্ত্রী দুঃখ করবেন এমন সুযোগ নেই। পালাতে হচ্ছে। বলছেন, ‘কোন বাঁশ কাপড় ছাড়াই লাশ মাটিতে চাপা দিয়ে শুইয়ে দিলাম।’ একজনের স্বামী গেছেন হালচাষ করতে। ক্ষেতের মধ্যেই পাঞ্জাবিরা তাঁকে মেরে ফেলেছে। লাশ সেখানেই পড়ে ছিল। পরে আত্মীয়দের দুয়েকজন মিলে লাশ নিয়ে এসেছে, রেখেছে উঠানে। স্ত্রী 888sport app download for android করছেন :
আমি তো আর পাঞ্জাবির ভয়ে লাশের কাছে একলা একলা বসে থাকতে পারি না। আবার ওই মুহূর্তে খবর আইলো পাঞ্জাবিরা আইয়া পড়তাছে।… তখন ওই মরা মানুষ থুইয়া দৌড় দিয়া পশ্চিম বাড়ি চলে গেলাম।… আমার শাশুড়ি ওই লাশের পাশে বইসা থাকছে।… কোরান পড়ছে।
আরেকজনের স্বামীকে মেরে ফেলেছে ঘরের ভেতরেই। তেতালিস্নশ বছর আগের সেই ঘটনা 888sport app download for android করে স্ত্রী বলছেন :
এহন আমি কি করি? লাশ মাটি দেই কেমনে? আমি ঘরের দুয়ারে বইয়া কানতাছি।
পরে ওই লাশ গলি ঘরে (গোয়ালঘরে) নিয়া থুইছি। আমার মেয়ের জন্য নতুন পায়জামা বানাইছিল হেই পায়জামা দিয়া লগে ৫টা খেতা (কাঁথা) দিয়া মুইড়া রাখছি যাতে কুত্তায় না নেয়। আমার ননদের জামাইডারে মারছে। হেরেসহ
তিন-চারজনের সাথে মাটি দিছি।
বাপের বাড়িতে গিয়ে লুকিয়েছিলেন ওই স্ত্রী। তিন দিন পরে ফিরে এসেছেন। এসে দেখেন ভিটা শূন্য। ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে হানাদারেরা। লুট হয়ে গেছে সবকিছু। আর স্বামীকে যেখানে মাটি দিয়েছিলেন সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে হাড়গোড়, মাথার খুলি। কুকুরে খেয়ে নিয়েছে মাংস।
নির্যাতিত মেয়েরা সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীদেরকে বলছেন :
আমরা দেশের জন্য কিছু করি নাই? মান দিলাম, সম্মান দিলাম, ইজ্জত দিলাম, যুদ্ধে গেলাম। তো হেইডা যদি সরকার বুইঝাও না বোঝে তা আমাদের কিছু করার নাই।
বন্দি অবস্থা থেকে মুক্তিযোদ্ধারা নির্যাতিতাদের একজনকে উদ্ধার করেছিলেন। মেয়েটির জন্য সেই দুঃসাহসিক মুক্তির ঘটনাও কোনো সান্তবনা নয়।
[…] আমি এগুলো মনে রাখতেও চাই না, কেন চাই না; কারণ যে দেশের জন্য সবই হারাইলাম, তারপর বাঁচতে না পাইরা বাপ-মারে ছেইড়া 888sport app আইসা মাইনসের বাড়ি কাম করছি (কান্না) সে-কথা মনে কইরা কি হইব?
মুক্তিযুদ্ধ এই মানুষদেরকে কিছুই দেয় নি, জ্বালাযন্ত্রণা, অসুখ, অপমান, দারিদ্র্য ছাড়া। যুদ্ধশেষে তরুণী মায়ের কাছে ফিরে এসেছেন, আশ্রয় ও সান্তবনা পাবেন আশা করে। কিন্তু সেখানে এক গস্নাস পানিও পান নি, বেরিয়ে এসেছেন চোখের পানি ফেলতে ফেলতে।
এঁরা নিজেদের ভাষায় কথা বলেছেন। এ-ভাষা 888sport live footballের নয়, জীবনের। সাক্ষাৎগ্রহণকারীদের কৃতিত্ব এটাও যে, তাঁরা ওই ভাষাটিকে হুবহু ধরে রাখতে পেরেছেন। এঁদের ভেতর দুজন ছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের। কিন্তু হিন্দু-মুসলমান সবার ভাষা একই রকমের – তাঁদের পরিচয়ের মতোই। তাঁদের ভাষা কাজের ভাষা। দরিদ্র, নিম্নমধ্যবিত্ত ও প্রান্তিক পরিবারের এই মানুষেরা অনার্জিত আয়ের ওপর নির্ভরশীল নন, তাঁদেরকে কাজ করে খেতে হয়। তাঁদের কাজ নানা ধরনের। তাঁদের জীবনে বিয়েও একটা কাজ বইকি। ‘কাজকাম’ বলতে আসলে অনেক কিছুই বোঝায়, বিবাহসহ। একাত্তরে এঁরা প্রায় সকলেই বিবাহিত ছিলেন। অল্পবয়সে বিয়ে এদের বিধিলিপি বইকি। কিন্তু একাত্তরের পরে এঁরা নিজেদের বাড়িতে কাজকাম পান নি; উৎপাটিত হয়েছেন, উৎপাটনের পর জীবন আর স্বাভাবিক থাকে নি। এঁরা কাজকে ভয় পান না, ভয় পান কাজের অভাবকে। মূল্যায়ন চান না, স্রেফ বাঁচতে চান – মানুষের মতো।
একাত্তরে শুধু যুদ্ধ হয় নি, গণহত্যাও ঘটেছে। 888sport promo codeনির্যাতন ছিল এই গণহত্যারই অংশ। হানাদারেরা যুদ্ধ করবে ভাবে নি, ভেবেছে নির্ভয়ে হত্যা, লুণ্ঠন ও ধর্ষণ চালাবে। যখন দেখল যুদ্ধ করতে বাধ্য হচ্ছে তখন নৃশংস ও বেপরোয়া হয়ে উঠল। এ-বইতে এক বৃদ্ধার প্রলাপ শুনতে পাই। হানাদারদের উদ্দেশ করে তিনি বলছেন, ‘তোরা দেশ রক্ষা করবার আইছস, না মা-বোনের ইজ্জত মারবার আইছস?’ তারা ইজ্জত নিয়েছে। যুদ্ধে তাদের শোচনীয় পরাজয় ঘটেছে।
আমরা জয়ী হয়েছি। কিন্তু সে-জয় পরিপূর্ণ নয়। প্রমাণ? প্রমাণ যুদ্ধাপরাধী হানাদারদের বিচার না-হওয়া। অন্তত ১৯৫ জন বিশেষ অপরাধীর বিচার হওয়াটা অত্যাবশ্যক ছিল। তাদের বিরুদ্ধে
সাক্ষ্য-প্রমাণের অনেক দলিলের একটি হলো নির্যাতিত 888sport promo codeদের কাহিনি। আর সামগ্রিক বিজয়ের অপূর্ণতার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হলো গিয়ে সমাজ না-বদলানো। সমাজ তো মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের মানচিত্র বই অন্যকিছু নয়। সে-সম্পর্ক আগে যে মানবিক ছিল তা নয়, একাত্তরের পরেও মানবিক হয় নি, বরঞ্চ অনেক ক্ষেত্রে খারাপ হয়েছে। স্বাধীন 888sport appsে আজ মেয়েরা ধর্ষিত হচ্ছে, দেশে হচ্ছে, বিদেশে হচ্ছে।
জাতীয়তাবাদীরা যা করবার ইতিমধ্যে করে ফেলেছে। তাদের দৌড় ওই পর্যন্তই; স্বাধীনতা অর্জন ও পুরনো ব্যবস্থার রক্ষণাবেক্ষণে তারা নিয়োজিত। বাকি কাজটা সমাজতন্ত্রীদের। সমাজ-পরিবর্তনের সংগ্রামটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব তাদেরই। ওক্ষেত্রে অনেকগুলো বাধা ও বিঘ্ন রয়েছে। একটি হচ্ছে কে যে শত্রু কে-ই বা মিত্র সেটা পরিষ্কারভাবে চিনতে না-পারা। এক্ষেত্রে নির্যাতিত মহিলাদের একজনের উক্তি সত্য-নির্দেশক। তিনি বলেছেন, ‘কোনডা রাজাকার বুঝছি না। পাঞ্জাবি বুঝি, মুক্তি বুঝি।’ হ্যাঁ, তাই। পাঞ্জাবিদের চেনা যায়, মুক্তিদেরও চেনা যায়, কিন্তু রাজাকারদের চেনা কঠিন। কারণ তারা যেমন বিশ্বাসঘাতক তেমনি কাছের। একাত্তরে এরা ছিল জনবিরোধী ও বিদ্যমান ব্যবস্থার রক্ষকবাহিনী। পাঞ্জাবিদের চেনা যেত তাদের চেহারা, অস্ত্র ও আচরণের পাশবিকতা দেখে। মুক্তিদেরও চেনা যেত তাদের কাজ দিয়ে। রাজাকারদের চেনার উপায় কী? দেখতে তো তারা বাঙালিই।
মুক্তিরা এখন অনুপস্থিত, রাজাকারেরা সর্বত্র তৎপর। মুক্তিরা এগিয়ে না-এলে মানুষকে বাঁচাবে কারা? মেয়েদের একজন বলেছেন, ‘দুঃখিতের দুঃখ যায় না, সুখীর সুখ যায় না।’ একেবারে নির্ভুল কথা। দুঃখ বদলায় না, সুখও বদলায় না, কারণ ব্যবস্থা বদলায় না। ব্যবস্থা বদলায় নি। একাত্তরে এক কোটি মানুষ চলে গেছিল শরণার্থী হয়ে; এখন দেশের ভেতরে শরণার্থীর 888sport free bet কত? দেশে কান্না আছে, ধিক্কারও আছে, শোনার লোকেরই যা অভাব।
তিন
সাধারণ সত্যের অভ্যন্তরে আরো একটি ব্যাপার রয়ে যায়। সেটা যেন না ভুলি। সেটি হলো প্রমীলাদের দুর্দশা। সমাজ পিতৃতান্ত্রিক। সেটা রামায়ণের যুগে সত্য ছিল, মেঘনাদবধের যুগে মিথ্যে হয়ে যায় নি, এবং এখনো বিদ্যমান রয়েছে। সমাজের মুক্তি যাঁরা চান তাঁদের অবশ্যকরণীয় কর্তব্য হবে ব্যবস্থাটিতে বৈপস্নবিক পরিবর্তন সাধন করা। সে-পরিবর্তনের একটা নিরিখ হওয়া চাই পিতৃতান্ত্রিকতার অবসান ঘটানো। পরিবর্তনের ওই কাজে মেয়েদের অংশগ্রহণ হবে খুবই জরুরি। তাঁরা যে প্রস্ত্তত তাতে সন্দেহ কী!

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.