প্রসঙ্গ : গোলাম মুরশিদ-সম্পাদিত বিদ্যাসাগর

পিয়াস মজিদ

১৯৭০-এর ডিসেম্বরে অর্থাৎ প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে গোলাম মুরশিদের সম্পাদনায় প্রকাশ পায় বিদ্যাসাগর সার্ধশতবর্ষ স্মারকগ্রন্থ বিদ্যাসাগর। ২০২০ সালে বিদ্যাসাগরের দ্বিশততম জন্মবার্ষিকীতে যখন এ-আলোচনা লিখছি তখন আমাদের হাতে রয়েছে ফেব্রুয়ারি ২০১১-তে শোভাপ্রকাশ-প্রকাশিত এই গ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণ। উৎসর্গিত হয়েছে ‘বিদ্যাসাগরের পুণ্য888sport sign up bonusর উদ্দেশে।’

অন্তর্ভুক্ত লেখক যথাক্রমে – আহমদ শরীফ, সুনীলকুমার মুখোপাধ্যায়, জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, রমেন্দ্রনাথ ঘোষ, মুখলেসুর রহমান, সনৎকুমার সাহা, মযহারুল ইসলাম, বদরুদ্দীন উমর, গোলাম মুরশিদ, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, অজিতকুমার ঘোষ, আলী আনোয়ার। পরিশিষ্টে সংযুক্ত হয়েছে বিদ্যাসাগর-বর্ষপঞ্জি।

গোলাম মুরশিদের (১৯৪০) ত্রিশ বছর বয়সে প্রকাশিত হয় বিদ্যাসাগর। এর আগে ১৯৬৮-তে প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর আর একটি সম্পাদনাগ্রন্থ বৈষ্ণব পদাবলী প্রবেশক। সম্পাদনাগ্রন্থের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করলেও এ-দুটি গ্রন্থেই তাঁর মননের রেখাচিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠেছে পাঠকের পটে, কারণ তাঁর সম্পাদনা-ভাষ্য মৌলিক গবেষণাকর্মেরই সম্পূরক সৃষ্টি যেন।

মুরশিদ এই বইয়ের প্রকাশনা ইতিহাস জানান এভাবে –

এ গ্রন্থ প্রথমবার প্রকাশিত হয় ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর মাসে। সেপ্টেম্বর মাসে বিদ্যাসাগরের জন্মের ১৫০তম বার্ষিকীর দু দিন আগে সনৎকুমার সাহা আর আমি এ গ্রন্থ প্রকাশের পরিকল্পনা করি। সঙ্গে সঙ্গে লেখক নির্বাচন-সহ সম্ভাব্য বিজ্ঞাপনদাতাদের একটা তালিকাও তৈরি করি। এঁদের চিঠিপত্র লেখার কাজও শেষ করি দু দিনের মধ্যে। যথাসময়ে নিমন্ত্রণ পেয়ে লেখকরা লিখতে আরম্ভ করেন। আর মুদ্রণের কাজ শেষ হয় ডিসেম্বর মাসে। সবই শেষ হয় তিন মাসের মধ্যে। এটা সম্ভব হয়েছিলো দুটো কারণে – এক. আমরা বয়সে খুব তরুণ ছিলাম, আর দুই. আমাদের উৎসাহ ছিলো অফুরন্ত।

সম্পাদকের নতুন সংস্করণ-ভূমিকা থেকে জানা যাচ্ছে এই বইয়ের প্রকাশনা উৎসব হয় ১৯৭১-এর ১৭ জানুয়ারি। রয়টার, আকাশবাণী দিল্লিসহ 888sport appর পত্রপত্রিকায় সগুরুত্বে এর প্রকাশ-সংবাদ ছাপা হয়। এমন পরিস্থিতিতে বইটি প্রকাশিত হয় যখন বিদ্যাসাগরের স্বপ্নের একটি ধর্মনিরপেক্ষ সার্বভৌম ভূগোল প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চলছিল 888sport appsে। বইটি কোনো রাজনীতির বই না হয়েও শিকার হয়েছে রাজনৈতিক আক্রোশের। এই গ্রন্থের সম্পাদক, অন্যতম লেখক সনৎকুমার সাহা এবং মযহারুল ইসলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পাকিস্তান সামরিক কর্তৃপক্ষের হত্যা-তালিকায় নিজেদের নাম ওঠার খবর জেনেছেন। ভূমিকা থেকে জানা যাচ্ছে, এই বইয়ের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা মুক্তিযুদ্ধের এক অজানা অধ্যায় –

আমরা পাকিস্তানি গোয়েন্দা বাহিনীর বিশেষ নজরে পড়ি মার্চ মাসের ২১ তারিখে। সেদিন পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে 888sport appsের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিব আর প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সঙ্গে আলোচনার জন্যে জুলফিকার আলী ভুট্টো আসেন 888sport appয়। কাজেই রাত সাড়ে দশটায় আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্রের ‘সংবাদ সমীক্ষা’ শোনার জন্যে সবাই কান খাড়া করে রেখেছিলেন। সেই পরিবেশে প্রণবেশ সেনের লেখা এই গ্রন্থের একটি আবেগমূলক সমীক্ষা ততোধিক আবেগের সঙ্গে পড়ে শোনান দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতে এই গ্রন্থের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করা হয়েছিলো বিশেষ করে এর মাধ্যমে পূর্ব বাংলায় ধর্মনিরপেক্ষতার আন্দোলন যে যথেষ্ট জোরালো, সেটার ওপর বিশেষ ঝোঁক দেওয়া হয়। কাজেই এ গ্রন্থের লেখকরা যে সবাই ‘ভারতের দালাল’ সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া হয়। গোয়েন্দা বিভাগের 888sport sign up bonus যদি-বা দুর্বল হয়ে থাকে, সেটাকে আবার শানিয়ে দেয় এই ‘সংবাদ সমীক্ষা’। সুতরাং আসামিদের সম্পর্কে গোয়েন্দা বিভাগ আরও এক দফা সচেতন হয়ে ওঠে।

বইটি কলকাতা থেকেও প্রকাশিত হয় এর অন্তর্গত গুরুত্বে। কবি শঙ্খ ঘোষের লিখিত সমালোচনায়ও স্থান পায় এই গ্রন্থ প্রসঙ্গ।

দুই

স্মারকের শুরুই হয়েছে মাইকেল মধুসূদনের নিবেদিত সনেটে –

বিদ্যার সাগর তুমি বিখ্যাত ভারতে

করুণার সিন্ধু তুমি, সেই জানে মনে,

দীন যে দীনের বন্ধু! – উজ্জ্বল জগতে

হেমাদ্রির হেম-কান্তিম্লান কিরণে।

কিন্তু ভাগ্য-বলে পেয়ে সে মহা পর্বতে,

যেজন আশ্রয় লয় সুবর্ণ চরণে,

সেই জানে কত গুণ ধরে কত মতে

গিরীশ। কি সেবা তার সে সুখ-সদনে

দানে বারি নদীরূপ বিমলা কিঙ্করী;

যোগায় অমৃত ফল পরশ আদরে

দীর্ঘ-শিরঃ তরুদল, দাসরূপ ধরি;

পরিমলে ফুল-কুল দশ দিশ ভরে;

দিবসে শীতল-শ্বাসী ছায়া, বনেশ্বরী,

নিশায় সুশান্ত নিদ্রা, ক্লান্তি দূর করে!

বারোটি হ্রস্বদীর্ঘ 888sport liveের সংকলন এই বই। এর মধ্যে জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর ‘ভ্রান্তিবিলাস’, মুখলেসুর রহমানের ‘শকুন্তলা ও সীতার বনবাস’, অজিতকুমার ঘোষের ‘গদ্য888sport live footballে বিদ্যাসাগর’, সুনীলকুমার মুখোপাধ্যায়ের ‘বিদ্যাসাগর : সংস্কারক এবং 888sport live chatী’ এবং সম্পাদক গোলাম মুরশিদের ‘বিদ্যাসাগরের রচনায় রঙ্গব্যঙ্গ’ 888sport live-পাঁচটি 888sport live football বিশ্লেষণমূলক, রমেন্দ্রনাথ ঘোষের ‘বিদ্যাসাগরের নীতিবোধ এবং কর্মনিষ্ঠা’, মযহারুল ইসলামের ‘বিদ্যাসাগর : একটি ব্যক্তিত্ব’, সনৎকুমার সাহার ‘বিদ্যাসাগর-ছোটদের জন্যে’ এবং আবু হেনা মোস্তফা কামালের ‘একজন বিপন্ন মহাকবি ও তাঁর বন্ধু’ 888sport live-চারটি আলো ফেলেছে তাঁর ব্যক্তিবিভায়। অন্যদিকে আহমদ শরীফের ‘বিদ্যাসাগর’, বদরুদ্দীন উমরের ‘ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর’, সনৎকুমার সাহার ‘পরাজিত নায়ক বিদ্যাসাগর’, গোলাম মুরশিদের ‘বিদ্যাসাগর মানস’ এবং আলী আনোয়ারের ‘বিদ্যাসাগর ও ব্যক্তির সীমানা’ 888sport live-চতুষ্টয় কালিক পরিপ্রেক্ষিতে বিচারের প্রয়াস পেয়েছে বিদ্যাসাগরকে।

আহমদ শরীফ তাঁর মুক্তরচনায় এক জরুরি বিষয়ে তর্ক তুলেছেন এবং উপনীত হয়েছেন সিদ্ধান্তে। সে-সিদ্ধান্তে প্রতিভাত তাঁর বিদ্যাসাগর-ভাবনার মৌলিকত্ব ভাবিত করে পাঠককে –

বাঙালী মুসলমান সমাজের রামমোহনের মতো সংশয়বাদী আন্তর্জাতিক চেতনাসম্পন্ন কর্মী পুরুষ কিংবা বিদ্যাসাগরের মতো মানবহিতবাদী নাস্তিক সংগ্রামী পুরুষ একজনও জন্মান নি। হয়তো যে কালিক প্রয়োজনে রামমোহন বিদ্যাসাগরের আবির্ভাব, প্রতীচ্য-চেতনাবিমুখ মুসলিম সমাজে তেমন কাল অনুভূত হয়নি। অথবা রামমোহন-বিদ্যাসাগর সমাজের জন্যে যা করেছেন, তা জাগরণ মুহূর্তে প্রতীচ্য বিদ্যাপ্রাপ্ত মুসলিম সমাজকেও দিশা দিয়েছেন। পথিকৃতের চাইতে অনুগামীর স্বাচ্ছন্দ্য যে অনেক বেশি তা কে অস্বীকার করবে? বাঙালি মুসলমান প্রতিবেশী পশ্চাদ্‌গামী ছিল বলেই অনায়াসেই অনেক সমস্যার অনুকৃত সমাধান পেয়েছিল। তবু বোধহয় প্রশ্ন থেকে যায় – রামমোহন ও বিদ্যাসাগরের মতো প্রত্যাশিত মুক্তচিত্ত দ্রোহী ও নাস্তিক মানববাদীর অনুপস্থিতি মুসলমান সমাজের সৌভাগ্যের না দুর্ভাগ্যের কারণ?

‘বিদ্যাসাগর : সংস্কারক এবং 888sport live chatী’ সাধারণ আলোচনায় শীর্ষক সুনীলকুমার মুখোপাধ্যায় অসাধারণ উদ্ভাসন ঘটিয়েছেন তাঁর এমতো সংশ্লেষণ-বিশ্লেষণে – একটা কথা স্বীকার করতেই হয় যে বিদ্যাসাগরের যাবতীয় কর্মপ্রচেষ্টা, এমন কি সমাজকে তিনি ব্যাপক শিক্ষা ও সমাজ-সংস্কারমূলক কাজের মধ্য দিয়ে সুস্থ ও সবল করে পুনর্গঠিত করতে চেয়েছিলেন। ঐ একই উদ্দেশ্য সামনে রেখে তিনি বাঙালী শিক্ষার্থীর জন্যে ‘an enlightened Bengali Literature’সৃষ্টির প্রয়াস পেয়েছিলেন। বাংলা গদ্যভাষার একটি সুষ্ঠু প্রকাশক্ষম রূপ আবিষ্কারের চেষ্টা থেকে শুরু করে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন, হিন্দী, সংস্কৃত ও ইংরেজির ভাণ্ডার থেকে মালমশলা সংগ্রহ করে নতুন 888sport live footballের ভিত নির্মাণের অক্লান্ত সাধনা ঐ একই সংস্কার প্রয়াসেরই বিচিত্র ভঙ্গিমা। মৌলিক 888sport live football সৃষ্টির প্রয়াস তিনি পান নি; তার অবকাশ হয়নি বলেই বোধ হয়। মানব-কল্যাণ কামনায় অধীর অসহিষ্ণু এই মানুষটি এদেশের আপামর জনসাধারণের মূক মুখে ভাষা যোগানোর কাজকে, নিজের স্বাধীন বড় কাজ মনে করেছিলেন। তাই স্বাধীন কল্পনাপুঞ্জ ‘মৌলিক’888sport live football রচনার পথে না গিয়ে তিনি বাংলার শিশু এবং কিশোর শিক্ষার্থীদের জন্যে, বাংলা ভাষায় প্রাঞ্জল, সহজবোধ্য জ্ঞানগর্ভ পাঠ্যগ্রন্থ রচনায়ই মনোনিবেশ করেছিলেন বেশী করে। সবচেয়ে বড় কাজ যেটি তিনি করেছিলেন সেটি হল নিতান্ত শ্রীবর্জিত, অবিন্যস্ত ও ভারসাম্যহীন বাঙলা গদ্য ভাষাকে তিনিই সর্বপ্রথম ভদ্রসমাজের উপযোগী করে মার্জিত ও পরিশীলিত রূপ দান করলেন। আর এই গদ্য ভাষারই প্রকাশক্ষমতা যাচাই করার উদ্দেশ্য নিয়ে সংস্কৃত, ইংরেজী ও হিন্দী থেকে কাহিনী সংগ্রহ করে লিখেছিলেন ‘বেতালপঞ্চবিংশতি’, ‘শকুন্তলা’, ‘সীতার বনবাস’ ও ‘ভ্রান্তিবিলাসে’র মত গ্রন্থ। এসব গ্রন্থে তাঁর গদ্যরচনাশৈলী চূড়ান্ত বিকাশ লাভ করেছে।  

শেক্সপিয়রের কমেডি অব এররসের বিদ্যাসাগরকৃত রূপান্তর ভ্রান্তিবিলাস সম্পর্কে জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী 888sport live লিখেছেন। তিনি সউদাহরণে শনাক্ত করেছেন রূপান্তরিত রচনার সীমা-কাঠামোর মধ্যে থেকেও বিদ্যাসাগরের স্বাতন্ত্র্য –

ভ্রান্তিবিলাসের প্রকৃত স্থান বাংলা গদ্যের ইতিহাসে ঈশ্বরচন্দ্রের গদ্যরচনার ধারায়। এখানে যে সাবলীলতা, ঋজুতা ও স্থান বিশেষে দেশজ কথ্যরীতির ব্যবহার দেখা যায়, তা তাঁর পূর্বতন রচনায় অতেটা স্পষ্ট নয়। সেদিক দিয়ে বাংলা গদ্যের অগ্রগতির ধারায় ভ্রান্তিবিলাস একটি পদক্ষেপ। শুধু সমাসবদ্ধ, বা অলংকৃত বা প্রাঞ্জল বা পোশাকি বাংলা নয়, প্রয়োজন মতো যা সহজেই ঘরোয়া, আটপৌরে রূপ নিতে পারে, দেশজ শব্দ বা কথ্যরীতিকে আয়ত্ত করে নেয়, অথচ ভব্যতা ও পরিচ্ছন্নতা পুরোপুরি রক্ষা করে চলে, ভ্রান্তিবিলাসে সেই শালীন অথচ লৌকিক গদ্যের উন্মেষ আমরা লক্ষ করি।

‘বিদ্যাসাগরের নীতিবোধ এবং কর্মনিষ্ঠা’ 888sport liveে রমেন্দ্রনাথ ঘোষের প্রারম্ভ-পঙ্ক্তিই যেন এই গ্রন্থের মর্মকথার বাহক –

মানুষ এবং সমাজ ছিল ঈশ্বরচন্দ্র ধর্ম।

এবং এই 888sport liveের শেষাংশও বিদ্যাসাগরকে কেন্দ্র করে আমাদের জাতিগত ভূতভবিষ্যবর্তমানের সারাৎসার উৎকলন করেছে যেন –

যাঁরা সত্যিকারের মানবপ্রেমিক, যাঁরা বিদ্রোহী তাঁদের কর্মনীতির আধুনিক ব্যাখ্যা না করে চিরকাল সনাতন মর্মরমূর্তিতে আবদ্ধ করে রাখলে, সে-মূর্তি ভাঙবেই; মূর্তি বিচূর্ণ বা অপসৃত হলেও বিদ্যাসাগরের কর্ম-নীতি ছদ্মবেশে ভাবীকালকেও প্রেরণা যোগাবে।

‘শকুন্তলা ও সীতার বনবাস’ 888sport liveে মুখলেসুর রহমান এই দুই কালোত্তর সৃষ্টিতে বিদ্যাসাগরের যুগপৎ হৃদয়বান ও বলবান 888sport live chatীসত্তার উপস্থিতি দেখেছেন –

শকুন্তলা বিদ্যাসাগরের মৌলিক রচনা, একথা অবশ্য আমাদের বক্তব্য নয়। প্রকৃত প্রস্তাবে, 888sport app download apk latest version অর্থে সচরাচর যা বোঝায়, এ গ্রন্থখানি ঠিক সেই শ্রেণির নয়। মূল নাটকের সাতটি অঙ্কের অনুসরণে শকুন্তলার সাতটি পরিচ্ছেদ রূপ নিয়েছে, ঠিক নাটকের ঘটনাক্রম আর সংলাপের অনুসরণও করেছেন বিদ্যাসাগর, কিন্তু মূল থেকে যা বর্জন করেছেন, তার পরিমাণ নিতান্ত কম নয়। গ্রহণ-বর্জনের ব্যাপারে যথেষ্ট স্বাধীনতা অবলম্বন করলেও শকুন্তলার রচনা কোথাও অস্বাভাবিকতা দোষে দুষ্ট নয়, বা তার ভাষার স্বচ্ছতা এবং কাহিনীর রস কোথাও ব্যাহত হয়নি। এর কারণ হল বিদ্যাসাগরের অসাধারণ 888sport live chatসচেতনতা। রসের রাজা কালিদাসের রচনার সঙ্গে এখানে বিদ্যাসাগর যে আধুনিক মনোভাব, পরিমাণবোধ আর স্বাভাবিকতার সমন্বয় সাধন করেছেন, একমাত্র সৃজনধর্মী লেখকের পক্ষেই তা সম্ভব।

এবং –

সীতার জীবনের শেষ অঙ্কের বিয়োগান্ত দৃশ্যটি বিদ্যাসাগর যেভাবে আমাদের সম্মুখে উপস্থিত করেছেন, রামায়ণের প্রাসঙ্গিক সর্গটির তুলনায় তা অনেক বেশী বাস্তব, সংযত, 888sport live chatগুণমণ্ডিত। সীতার মত পতিপ্রাণা চিরদুঃখিনী 888sport promo codeর জীবনের এই স্বাভাবিক পরিণতি।

এভাবে 888sport live footballের মূল টেক্সটের নবীনীকরণে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মৌলিকত্ব ও মুন্সিয়ানা আবিষ্কার করতে প্রয়াস পেয়েছেন মুখলেসুর রহমান।

‘পরাজিত নায়ক বিদ্যাসাগর’ 888sport liveে সনৎকুমার সাহা সমকালীন সমাজের প্রেক্ষায় আলো ফেলেছেন বিদ্যাসাগরের সদর-অন্দরে। মহতের জন্য পরাজয়েই যার প্রকৃত জিত সে বিদ্যাসাগর উদ্ভাসিত হয়েছেন সনৎকুমার সাহার অনন্য গদ্যে –

মাটির কাছাকাছি এই সব মানুষকে তিনি তাঁর একক প্রচেষ্টায় কোন বৃহত্তর চরিতার্থতায় উত্তীর্ণ করতে পারেননি। কাল তাঁর অনুকূল ছিল না। তিনি পরাজিত হয়েছেন। কিন্তু এ পরাজয় নিজের মনের অন্ধকারের কাছে আত্মসমর্পণ নয়, অদৃষ্টের হাতে অকারণ মার খাওয়াই নয়। মহাকাব্যের মহানায়কের পরাজয়ের মত এই পরাজয়, যা বিস্মৃত করে না, অমর করে।

‘বিদ্যাসাগর : একটি ব্যক্তিত্ব’ শীর্ষক গদ্যে মযহারুল ইসলামের মূল্যায়ন আজকের সময়েও সমান প্রাসঙ্গিক –

অধ্যাপক বিদ্যাসাগর, 888sport live footballিক বিদ্যাসাগর, 888sport live chatী ও স্রষ্টা বিদ্যাসাগর তাই অকুতোভয়ে সত্য কথা বলেছেন। আমাদের একালের চরিত্রহীন বুদ্ধিজীবীদের পীড়াদায়ক নিরাসক্তি ও নপুংসক নির্বিকারত্ব নিয়ে তাই আমরা হাত যত লম্বা করেই বিদ্যাসাগরের প্রোজ্জ্বল আলোক স্পর্শ করতে চাই না কেন আমরা ব্যর্থ হব। 

‘ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর’ শিরোনামে সংক্ষিপ্ত অথচ তীব্র গদ্যে বদরুদ্দীন উমর তাঁকে পর্যালোচনা করেছেন শ্রেণিগত

পরিপ্রেক্ষিতে –

বঙ্কিমচন্দ্রর মতো ঈশ্বরচন্দ্র কৃষক স্বার্থের বিরুদ্ধে সরাসরি কোন বক্তব্য উপস্থিত না করলেও তার প্রতি ঔদাসীন্যই তাঁর চিন্তার একটা বিশেষ পরিধি নির্দিষ্ট করে। এবং এই পরিধিকে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূল্যায়নে সঠিকভাবে বিচার ও বিবেচনা করা প্রগতিশীল চিন্তার ক্ষেত্রে অপরিহার্য।

‘বিদ্যাসাগর-মানস’ এবং ‘বিদ্যাসাগরের রচনায় রঙ্গব্যঙ্গ’ 888sport live- দুটোতে সম্পাদক গোলাম মুরশিদ তার শক্তি ও সীমাবদ্ধতা দুই-ই নির্দেশ করেন। বিদ্যাসাগর মূল্যায়নে ভক্তিবাদের প্রাবল্য থেকে মুক্ত হয়ে উদার আলোয় তিনি পাঠককে আহ্বান করেন বিদ্যাসাগরের ভুবনে –

বিদ্যাসাগরের দৃষ্টি সমাজকে ছাড়িয়ে আর একটু প্রসারিত হয়ে দেশ এবং শাসন ও শোষণের দিকে অগ্রসর হলে তাঁকে অতুলনীয় প্রগতিবাদী বলে আখ্যায়িত করা যেতো। দৃষ্টির সেই প্রশস্ততার অভাবে, তিনি শুধু মানবপ্রেমিক ও মানবতাবাদী হয়েই রইলেন। মানুষের মুক্তির সন্ধান দিতে পারলেন না।

‘একজন বিপন্ন মহাকবি ও তাঁর বন্ধু’ 888sport liveে আবু হেনা মোস্তফা কামালের তথ্যঋদ্ধ নিবেদন বিদ্যাসাগর ও মধুসূদনের মহান মানবিক সম্পর্ককে নতুন করে আমাদের সামনে নিয়ে আসে –

মহাকবির মৃত্যুর পর তাঁর অন্থিপঞ্জর রক্ষণ ও ‘তদুপরি কোন প্রকার 888sport sign up bonusচিহ্ন’ প্রতিষ্ঠার একটি উদ্যোগ গৃহীত হয়। উদ্যোক্তারা যখন বিদ্যাসাগরের কাছে গেলেন, বিদ্যাসাগর তাঁদের ফিরিয়ে দিলেন। এই বলে ফিরিয়ে দিলেন ‘প্রাণপণ চেষ্টা করে যার প্রাণ রাখতে পারিনি, তার হাড় রাখার জন্যে আমি ব্যস্ত নই।’ জীবনীকার লিখেছেন, বিদ্যাসাগরের চোখ তখন অশ্রুশূন্য ছিলো না।

‘বিদ্যাসাগর ও ব্যক্তির সীমানা’ 888sport liveে আলী আনোয়ারের যে-মূল্যায়ন তা একই সঙ্গে বিদ্যাসাগরের কাল এবং জাতির মূল্যায়নও বটে –

ব্যক্তির চারিত্রিক গুণাবলী তার আবেগপ্রবণতা বা মনঃসংন্যাস, তার নিজস্ব আত্যন্তিক পরিবেশ সামগ্রিক আন্দোলনে নিজস্ব বৈচিত্র্য দেয়, কিন্তু মূল প্রবাহকে নিয়ন্ত্রিত করে না। বিদ্যাসাগরের সমসাময়িক সামন্তপ্রধানদের সঙ্গে যোগাযোগ তাঁর রাজনৈতিক মতামত প্রভাবিত করে থাকতে পারে অথবা ইয়ং বেঙ্গলদের সম্বন্ধে সংশয় সিভিল ম্যারেজ আন্দোলন (১৮৭৩) তাঁকে নিরুৎসাহিত করে থাকবে কিন্তু তাঁর সামগ্রিক সংস্কারপ্রচেষ্টার সাফল্য বা ব্যর্থতা এ জাতীয় আপতিক ঘটনাবলী দ্বারা ততটা সীমাবদ্ধ নয়। তাঁর আন্দোলনের সাফল্য যেমন শুধুমাত্র ব্যক্তি নেতৃত্বের ফলাফল নয়, তাঁর ব্যর্থতাও শুধুমাত্র ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতা দিয়ে বিচার্য নয় – এটাই বিদ্যাসাগরের চরিত্রের তাৎপর্য আজকের সমাজে।

তিন

বিদ্যাসাগরের সমগ্রতাকে ধারণ করতে তাঁর চিন্তা ও কর্মের প্রতি 888sport apk download apk latest versionর অঞ্জলিমাত্র নয় গোলাম মুরশিদ-সম্পাদিত এই সংকলন বিদ্যাসাগর বরং একই সঙ্গে তা বাঙালি সমাজের বুদ্ধিবৃত্তিক স্তরানুসন্ধানও বটে। সংস্কারের বিরুদ্ধে প্রগতির এবং বদ্ধতার বিরুদ্ধে মানসমুক্তির লড়াইয়ের সূত্রানুসন্ধানও বটে। গোলাম মুরশিদের এ-সম্পাদনাকর্ম তাঁর পরবর্তীকালের উচ্চাভিলাষী সব গবেষণাকর্মের ভিত্তিভূমি যেন। বিদ্যাসাগর দিয়ে মুরশিদের যে-গবেষণাযাত্রা শুরু তারই ফলবতী রূপ যেন বিদ্যাসাগর-সখা মাইকেল মধুসূদন দত্ত নিয়ে তাঁর যুগান্তকারী গবেষণা আশার ছলনে ভুলি।