প্রাণ কি? – এ-প্রশ্ন অনেক পুরনো। সম্ভবত জন্ম-মৃত্যুর শুরু থেকেই মানুষের মনে এ-প্রশ্ন জেগেছিল। জীবজগতে জন্ম-মৃত্যুর খেলা চিরন্তন। প্রাণবায়ু বেরিয়ে যাওয়ার কথা মানুষ বলে এসেছে বহুকাল ধরে, কিন্তু প্রাণ আসলে বায়ু কিনা সে-কথা কারো জানা ছিল না তখন। ‘জীবনকে মনে করা হতো ঈশ্বরের দান, তাঁরই অপার করুণার ফল। সমস্ত ধর্মবিশ্বাসের মধ্যে আত্মাকে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দেওয়া হয়েছে। বলা হয়, আত্মাকে কেন্দ্র করে জীবন আছে, আত্মা অবিনশ্বর, মৃত্যুর পর আত্মা দেহত্যাগ করে এবং দেহ পঞ্চভূতে বিলীন।’ তবে ধর্মবিশ্বাসে যাই বলা হোক না কেন, 888sport apkীরা কিন্তু প্রাণের স্বরূপ অনুসন্ধান থেকে নিবৃত্ত হলেন না। এই অনুসন্ধানেরই বিবরণ তুলে ধরেছেন রসায়নের অধ্যাপক ও 888sport apk লেখক অপরাজিত বসু তাঁর প্রাণের রহস্য সন্ধানে 888sport apk গ্রন্থে।
প্রায় তিনশো ষাট পৃষ্ঠার বইটিতে আছে নয়টি অধ্যায়। সেগুলোর নাম যথাক্রমে – ‘আছে জন্ম, আছে মৃত্যু’, ‘কোষের পরে কোষ’, ‘একটি রাসায়নিক কারখানা’, ‘সচল পদার্থ, সংবাদ ও শক্তি’, ‘নির্দেশনা ও নিয়ন্ত্রণ’, ‘প্রাণের উৎস সন্ধানে’, ‘বিবর্তনের পথে পথে’, ‘ইতিহাস ও দর্শনে জীব888sport apk’ এবং ‘জীবন যে রকম’। বলা বাহুল্য, অধ্যায়-শিরোনামগুলো থেকেই বুঝতে পারা যাচ্ছে – সেসব অধ্যায়ের বিষয় কি!
এ-কথা তো সত্য যে, প্রাণরহস্য সমাধানের পথটি খুব সহজ পথ ছিল না এবং এখনো নয়। লেখক তাঁর বইয়ের ভূমিকাতেও সে ইঙ্গিত দিয়ে লিখেছেন, ‘শারীরবৃত্ত, শরীর স্থান, প্রাণরসায়ন, অণুজীববিদ্যা, বিবর্তনবাদ, সাইবারনেটিকস প্রভৃতির আলোতে ও ইতিহাসের পর্যায় ধরে জীবন নামের জটিল বস্ত্তগত সংগঠনকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে এখানে।… জড়ের সঙ্গে জীবনের সম্পর্ক এবং তাদের দ্বন্দ্ব – আর একটি আলোচ্য বিষয়। জীবনের জটিলতার উৎস তার বহুত্ব। বস্ত্তগত উপাদানের বহুত্ব সম্পর্কের বহুত্বকে আহবান করে। জীবনের পরিম-লে ক্রিয়ারত বস্ত্ত ও শক্তিকে পরিমাণগত অনুসন্ধান সমস্যা-সমাধানের পথ বলে দিতে পারে। অবশ্য এ-কথাও ঠিক যে, প্রাণের বস্ত্তগত ভিত্তি সম্পর্কে 888sport apkীরা নিঃসংশয় হলেও প্রাণকে সংজ্ঞায়িত করা বা নিখুঁতভাবে তার অবস্থানকে নির্দেশিত করা তাঁদের পক্ষে এখনো সম্ভব হয়নি।’
অন্য আরো অনেক বিষয়ের মতো প্রাণের বস্ত্তস্বরূপের কথাও প্রথম বলেছিলেন গ্রিক 888sport apkীরা। ‘নিষ্ক্রিয় বস্ত্তপি–র সঙ্গে সক্রিয় জীবাত্মার উদ্দেশ্যপূর্ণ মিলনের মধ্য দিয়ে জীবন আসে’ – অ্যারিস্টটলের এই তত্ত্ব ভিত্তি পাওয়ার আগেই থালেস (Thales) বা থেলিস ‘বস্ত্তর মধ্যে জীবনের উপাদান আছে’ বলে মনে করতেন কিন্তু বস্ত্তবাদী 888sport apkের এই ধারণা সেকালের মানুষ গ্রহণ করেনি, যেহেতু এ-বক্তব্যের পরীক্ষণগত প্রমাণ তখন সম্ভব ছিল না।
প্রাণের বস্ত্তগত ভিত্তি অন্বেষণের একটি বড় ধাপ হচ্ছে জীবকোষের আবিষ্কার। সে-কাহিনি লেখক বিবৃত করেছেন ‘কোষের পর কোষ’ অধ্যায়ে। ‘১৬৬৫ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজ জীব888sport apkী রবার্ট হুক অণুবীক্ষণের তলায় মৃত বল্কলের পর্দা রেখে উদ্ভিদ কোষের আবিষ্কার করলেন।… মৃত বল্কলে তিনি দেখলেন – সারি সারি কোটর একের সঙ্গে অন্যে সংলগ্ন।’ এই কোটরগুলোর নাম দিলেন তিনি কোষ। তাঁর বই মাইক্রোগ্রাফিয়ায় তিনি লিখেছিলেন – ‘মৌচাকের আকৃতির ন্যায় উদ্ভিদ কোষগুলো পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত এবং জল গমনাগমনের উপযুক্ত।’ এরপর ১৮৩৮ সালে জার্মানির প্যাথিয়াস স্নেইডেন ও থিয়োডর সোয়ান ‘কোষ মতবাদ’ প্রচার করেন। এই মতবাদেই প্রথম বলা হলো – সমস্ত প্রাণী ও উদ্ভিদের দেহে কোষ আছে।
পরের অধ্যায়গুলোতে আছে প্রোটিন-সম্পর্কিত আলোচনা, ডিএনএ শৃঙ্খলের কথা, বিবর্তনের কথা ইত্যাদি। তৃতীয় অধ্যায় ‘একটি রাসায়নিক কারখানা’। এতে রাসায়নিক কারখানার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে মানবদেহকে। তবে লেখকের বিশেষত্ব এখানে যে, তিনি চটজলদি তথ্য উপস্থাপনের পথটি পরিহার করে বর্ণনা করেছেন মানবদেহের রাসায়নিক উপাদানসমূহ চিহ্নিত করার ইতিহাস। সে-ইতিহাসের বর্ণনায় বিভিন্ন 888sport apkীর কাজের বিবরণও তিনি এতে বিবৃত করেছেন সবিস্তারে ও সযত্নে। এসব বিবরণের মধ্যে আছে ‘জল ও কার্বন ডাই অক্সাইড’, ‘প্রোটিন’, ‘উৎসেচক’, ‘নিউক্লিক অ্যাসিড’, ‘শর্করা’, ‘স্নেহ’, ‘ভিটামিন’, ‘হরমোন’, ‘ধাতু’, ‘পরফিরিন’ ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা। এ-আলোচনা বইয়ের পাঠকদের কাছে বিশেষভাবে উপভোগ্য হবে বলেই মনে করা যায়, যেহেতু মানবদেহে সংঘটিত রাসায়নিক বিক্রিয়াসমূহ সম্পর্কে সাধারণভাবে আগ্রহী আমরা সবাই।
চতুর্থ অধ্যায় ‘সচল পদার্থ, সংবাদ ও শক্তি’কে শিথিলভাবে তৃতীয় অধ্যায়ের সম্প্রসারণ বলা যায়। এ-অধ্যায়ের শুরুতেই লেখক বলেছেন, ‘জীবরাসায়নিক সচলতা ও অবয়বের পুনরাবৃত্তি হলো জীবনের প্রধান দুটি লক্ষণ। প্রকৃতপক্ষে দুটি লক্ষণই রাসায়নিক প্রকৃতির। যে-কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়ায় পদার্থ ও শক্তির আদান-প্রদান হয়। কাজে কাজেই জীবন যতদিন যাপিত হবে ততদিন জীবনের আধারে, অর্থাৎ দেহে চলবে পদার্থ ও শক্তির আনাগোনা।’ পঞ্চম অধ্যায়টির নাম ‘নির্দেশনা ও নিয়ন্ত্রণ’। বলা বাহুল্য, জীবদেহে বিশেষত জীবিত দেহে নির্দেশনা ও নিয়ন্ত্রণের বড় ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। লেখক উলেস্নখ করেছেন, ‘জীবিতদের শুধু পদার্থ না বলে একটা ‘ব্যবস্থা’ বলা ভালো। অবশ্যই জীবিতেরা নানা পদার্থ দিয়ে গড়ে উঠেছে; কিন্তু জীবিতের যে প্রকাশ ঘটে, যে রূপের সঙ্গে আমরা পরিচিত তাকে শুধু পদার্থের নিজস্বতার সমাবেশ বললে ভুল হবে। নানা জাতের পদার্থরা জীবনের চৌহদ্দিতে মিলিত হয়ে একটা ব্যবস্থাপত্র গড়ে তোলে।’
এই ব্যবস্থাপত্র পড়ে তোলার ক্ষেত্রে নির্দেশনা ও নিয়ন্ত্রণের প্রকৃতি, কীভাবে জীবিত প্রাণিদেহে তা ঘটে এবং প্রাণিদেহের এরূপ জটিল রাসায়নিক বিক্রিয়ার স্বরূপ উদ্ঘাটনে 888sport apkীদের প্রয়াস ও সাফল্য লেখক এ-অধ্যায়ে তুলে ধরেছেন। সে-বিবরণ আকর্ষণীয়।
বইটির ষষ্ঠ ও সপ্তম অধ্যায়, যথাক্রমে ‘প্রাণের উৎস সন্ধানে’ এবং ‘বিবর্তনের পথে পথে’, 888sport apkীদের সাধনার ইতিহাস বর্ণনায় নিয়োজিত এবং সে-কারণেই বিশেষভাবে আকর্ষণীয়। প্রাণের স্বরূপ সন্ধানের প্রয়াসে দেশে দেশে 888sport apkীদের নিরলস সাধনার পরিচয় এ-দুটি অধ্যায়ে সংক্ষিপ্তভাবে বিধৃত হয়েছে। 888sport apkীরা ক্রমে ক্রমে প্রোটিন, এনজাইম, নিউক্লিক অ্যাসিড প্রভৃতির গঠন জেনেছেন। পরিচিত হয়েছেন তাদের ক্রিয়া-বিক্রিয়ার সঙ্গে। এমনিভাবেই প্রাণের বস্ত্তস্বরূপের রহস্য খ- খ-ভাবে আবিষ্কার করেছেন তাঁরা। এই বইতে আছে তারই বর্ণনা। একই সঙ্গে লেখক এই বর্ণনার সঙ্গে মিলিয়েছেন আরো নানা বিষয়। ‘জীবন যে রকম’ অধ্যায়টিতে আছে সেসব আলোচনার উপসংহার খোঁজার প্রয়াস। সব মিলিয়ে বইটি উপভোগ্য। তবে 888sport apkের মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে কিছুটা প্রাথমিক ধারণা না থাকলে বইটির বক্তব্যবিষয় উদ্ধার হয়তো তেমন সহজ হবে না। তবু বিষয় এবং রচ888sport promo codeতির সারল্য-সহজতার কারণে জিজ্ঞাসু পাঠকদের কাছে বইটি উপভোগ্য হবে নিঃসন্দেহে।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.