মঞ্জু সরকারের সাম্প্রতিক গল্পগ্রন্থের নাম অগস্ত্যযাত্রা ও 888sport app গল্প। গত শতাব্দীর আশির দশকে কথা888sport live football অঙ্গনে পদার্পণ মঞ্জু সরকারের। প্রথম গল্পগ্রন্থ অবিনাশী আয়োজন 888sport live footballমোদীদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। প্রথম গল্পগ্রন্থ থেকেই স্পষ্ট হয়েছিল যে, মঞ্জু সরকারের 888sport live footballকর্মের অন্যতম বৈশিষ্ট্য সমসাময়িকতা। মূলত ছোটগল্প আর 888sport alternative linkই তাঁর মনোযোগের বিষয়। সময়ের সঙ্গে তাঁর গল্প বা 888sport alternative linkের ফর্ম পাল্টেছে, এসেছে বিষয়বৈচিত্র্য।
আমাদের অস্থির সমাজ-সংস্কৃতি-রাজনীতির পরিচয় মঞ্জু সরকারের 888sport live footballকর্মে পাওয়া যায়, সঙ্গে পাওয়া যায় এক ধরনের সামাজিক দায়, যে কারণে কথা888sport live footballিক হিসেবে জননন্দিত হওয়ার তাগিদ তাঁর লেখায় নেই, বরং তিনি যেন সামাজিক গলি-ঘুঁজিতে সন্ধান করেন সেই আলোকবর্তিকা, যার স্ফূরণে একদিন উদ্ভাসিত হবে এদেশের সামূহিক ভবিষ্যৎ।
অগস্ত্যযাত্রা ও 888sport app গল্প গ্রন্থে গল্প888sport free bet ১২টি। বিষয়বৈচিত্র্য গল্পগুলিকে বিশিষ্ট করেছে। বিগত ৩০-৪০ বছর আমাদের সমাজ-সংস্কৃতিতে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে আছে বিদেশি টাকা। এই টাকা বিদেশে উপার্জন করে যাঁরা দেশে পাঠাচ্ছেন, তাঁরা যেমন এক বিশেষ পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন, তেমনি দেশের ভেতর কোনোরকম উৎপাদন প্রক্রিয়া বহির্ভূত এই টাকা দেশীয় আর্থ-সাংস্কৃতিক-সামাজিক ক্ষেত্রেও এক ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে, যা প্রভাবিত করছে আমাদের মূল্যবোধকে।
এই পটভূমিতে লেখা গল্পগ্রন্থের গল্পগুলি হলো : ‘শিকড়ের রস’, ‘সৌদি পার্কে একদিন’, ‘ক্লিনার’, ‘কালো গোলাপের ঘ্রাণ’, ‘মরু-পাহাড়ের এক বিমূর্ত চাষী’ ও ‘ভালবাসার হালখাতা’।
গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত দেশের পটভূমিতে লেখা গল্পগুলি হলো : ‘অগস্ত্যযাত্রা’, ‘বেকার দিনের দায়’, ‘তুমি মরো আমি বাঁচি’, ‘সন্দেহ জাগানো সহবাস’, ‘ক্ষমতার সঙ্গে থাকা’ এবং ‘বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত আত্মীয়-স্বজন’। প্রায় সব গল্পেরই শ্রেণিভিত্তি হলো নিম্নবিত্ত শ্রমজীবী মানুষ আর ক্ষুদ্র কৃষক।
‘শিকড়ের রস’ অসাধারণ গল্প। অসাধারণ এই অর্থে যে, এই গল্পের উপজীব্য বা বিষয় বাংলা কথা888sport live footballে নতুন। বিদেশে অধ্যয়নরত পিয়া ছুটিতে দেশে ফিরে গ্রামের বাড়িতে অশীতিপর দাদিকে জড়িয়ে ধরলে ‘মন অনাবিল সুখে ভরে ওঠে’। কেন? এ-প্রশ্ন পিয়ার। রক্তের টান, নাকি শেকড়ের টান? শিক্ষা আর কাজের সূত্রে মানুষ বিদেশে যাচ্ছে। একসময় যে মানুষের সীমানা ছিল গ্রামের গণ্ডিটুকু, সেই মানুষ আজ ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বময়; কিন্তু তাতে যে বিচ্ছিন্নতা বাড়ছে নিজের দেশের সঙ্গে, দেশের মানুষের সঙ্গে – এ-গল্পে তার পরিচয় আছে আর আছে এক ভয়াবহ নিঃসঙ্গতার আভাস। যে-নিঃসঙ্গতা পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় মানুষকে করে তোলে একক, আত্মকণ্ডুয়ন যার অনিবার্য পরিণতি। পিয়ার দাদির ছেলেরা থাকে শহরে, সুপ্রতিষ্ঠিত; কিন্তু দাদি নিজে থাকেন গ্রামে, নিজের মতো করে। আসলে মানুষ তো চায় স্বকীয়তা, যেখানে সেই স্বকীয়তা নিশ্চিত হয় সেখানেই তার টান আর এই টান জোরাল হয়ে ওঠে যদি তার সঙ্গে যুক্ত হয় শেকড়ের রস। জার্মানপ্রবাসী পিয়া দেশে এসে দাদির সঙ্গে দেখা করতে ছুটে যায় গ্রামে। দাদি শুধু সম্পর্কসূত্রের বিষয় না, দাদি অতীত আর বর্তমানের সেতুবন্ধ, যে সেতুবন্ধ উপেক্ষা করা যায়; কিন্তু লঙ্ঘন করা যায় না। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত জার্মানপ্রবাসী পিয়া পিতৃপুরুষের ভিটায় এসে গ্রামীণ প্রকৃতি আর মানুষের সঙ্গে যেন অদৃশ্য আত্মিক সংযোগের সন্ধান পায়। ভালো লাগে গ্রামের সম্ভাবনাময় শিক্ষিত যুবক আজাদ মাস্টারের ছেলে বক্করকে। পিয়ার নিঃসঙ্গ স্থবির জীবনে এসব ক্ষীণ তরঙ্গ তুললেও অকস্মাৎ সে আবিষ্কার করে এক দুর্লঙ্ঘ্য বাধা, যে-বাধা তার নিঃসঙ্গতায় অতিরিক্ত মাত্রা যোগ করে। ‘মাটি হইতে রস না পাইলে গাছ বাঁচে না। মানুষও তেমনি রে পিয়া, সংসারে আপনজনের মায়া-মমতার মধ্যে না থাকলে একলা যতই লেখাপড়া কর, যত টাকা কামাও, সুখ শান্তি পাবি না।’ – নাতির মাথায় হাত রেখে দাদি সান্ত্বনা দেয়; কিন্তু এ কি সান্ত্বনা শুধু? না, এ সেই চিরন্তন বাণী, মানুষের জীবনে যা অপরিহার্য দিকদর্শন হয়ে আছে। তারপরও জাগতিক উৎকেন্দ্রিকতা মানুষকে ভোগ-বিলাস-আধিপত্যের অতল গহ্বরে নিক্ষেপ করে চলেছে, আবার তাকে করে তুলছে একক, অসহায়ও। যে-উপলব্ধি পিয়ার মধ্যেও আছে। কান্নাজড়ানো গলায় দাদিকে জড়িয়ে সে তাই বলে, ‘আমি আসলে তোমার চাইতেও একা। তোমার তবু জায়নামাজের আশ্রয় আছে, আমার যে তাও নাই। রস পাওয়ার মত তোমার এই ভিটা আছে, আমার যে তাও নাই দাদি। কতদিন একলা উড়ে বেড়াতে হবে জানি না।’ গল্পের শেষে পিয়ার এই দীর্ঘশ্বাস শুধু গল্পের চৌহদ্দির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, বর্তমানের আন্তঃবিশ্ব উন্নয়ন আর ব্যক্তি-সাফল্যের উন্মত্ত আকাক্সক্ষাকেও যেন প্রশ্নবিদ্ধ করে। প্রশ্ন তোলে, গন্তব্য কোথায়? এই মনুষ্য প্রজাতির গতিমুখ কোনদিকে?
‘সৌদি শহরের পথে পথে 888sport appsি সোলায়মান সোনা খুঁজে ফেরে’ – এই বাক্য দিয়ে ‘ক্লিনার’ গল্পের শুরু। সৌদি আরবে বিদেশ থেকে আসা কর্মসন্ধানী মানুষদের নিয়ে গল্প আছে পাঁচটি। তার মধ্যে একটি গল্প ভিন্নমাত্রার – ‘সৌদি পার্কে একদিন’। উত্তম পুরুষের বয়ানে লেখক এখানে বহিরাগত একজন। তার শিশু নাতি পার্কে খেলতে গিয়ে নিতান্ত অনিচ্ছায় এক সৌদি শিশুকে সামান্য আহত করলে লেখক বিপদগ্রস্ত হন আবার বিপদ থেকে তিনি উদ্ধারও হন জনৈক সৌদি বৃদ্ধার সহায়তায়। এই সংক্ষিপ্ত কাহিনির মধ্য দিয়ে লেখক মানুষের চরিত্রের এমনই এক মানবিক দিকের সন্ধান দিয়েছেন দেশ-কালভেদে যার রূপ একই। স্থান-কাল-পাত্র-ভাষা-সংস্কৃতি ইত্যাদি ছাড়িয়ে যা জায়মান এবং মানবিক। বাকি চারটি গল্প এদেশ থেকে যাওয়া শ্রমজীবীদের দিনযাপনকে কেন্দ্র করে লেখা। ‘ক্লিনার’ গল্পে সোলায়মান যে-সোনা খুঁজে ফেরে সে-সোনা তাদের সমৃদ্ধির প্রতীক, আকাক্সক্ষা। যে-আকাক্সক্ষার তাড়নায় দেশের পরিবার-পরিজন 888sport sign up bonus-সংস্কৃতিকে তুচ্ছ করে নিতান্ত অজ্ঞাত-অচেনা-অজানা সৌদি আরবে তারা ঠাঁই নিয়েছে। নানা দেশের নানা জাতের মানুষ সেখানে। সোলায়মানের কাজ রাস্তায় কিংবা বাড়ির সামনে ফেলে রাখা আবর্জনা নির্দিষ্ট গাড়িতে তুলে দেওয়া। সৌদি ভাষায় এই কাজের শ্রমিকদের বলা হয় ‘বলদিয়া’। সোলায়মানের সঙ্গে কাজ করে অন্ধ্র প্রদেশের অমুসলমান সমবয়সের সমসামাজিক অবস্থানের ‘আঁধরু’। প্রকৃত নাম তার এটা না হলেও অন্ধ্র প্রদেশ থেকে এসেছে বলে সোলায়মান তাকে এই নামে ডাকে। রেগে গেলে বলে ‘আঁধরু হালা’। দুজনের দেশ আলাদা শুধু নয়, ভাষা আলাদা, সংস্কৃতিও আলাদা; কিন্তু তারপরও ‘পারস্পরিক রাগ বিরাগ সহমর্মিতা কিংবা তার অভাব এমনকি গোপন চালাকি পর্যন্ত বুঝতে অসুবিধা হয় না তাদের’। সোলায়মান আর আঁধরুর চোখ দিয়ে লেখক দেখাতে চেয়েছেন সৌদি সমাজকে, যদিও তাতে সমাজের কতটুকু অংশই বা দেখা যায়? তারপরও এসব বিদেশি শ্রমিকের প্রতি সৌদিদের মনোভাব অমানবিক বলে মনে হয় না। কারণটা এরকম হতে পারে যে, প্রান্তিক কাজে নিয়োজিত এসব বিদেশি শ্রমিক যে তাদের বিলাসী জীবনযাত্রার ভগীরথ সে-ব্যাপারটা হয়তো তাদের উপলব্ধিতে থাকে। বলার কথা এটাই, সৌদি আরবের মানুষেরা লেখকের গল্পে যথাযথ স্থান পেলেও জুগুপ্সার প্রকাশ কোথাও তেমন দেখা যায় না।
সমপেশায় একধরনের পেশাগত দ্বন্দ্ব থাকে। সোলায়মান আর আঁধরুর মধ্যেও স্বাভাবিকভাবেই সেটা ছিল; কিন্তু তার থেকেও বড় বিষয় সমশ্রেণির মানুষের মানসিক ঐক্য। যে-কারণে আঁধরুর স্ত্রীর মার মৃত্যুসংবাদে শোকগ্রস্ত সোলায়মান দাঁড়ায় তার পাশে। পরিচ্ছন্নকরণ কাজের মধ্যে কুড়িয়ে পাওয়া একটি ব্যাগ, যার মধ্যে আছে মূল্যবান মেয়েলি সামগ্রী, সে- সান্ত্বনা হিসেবে আঁধরুর স্ত্রীর জন্য দিয়ে দেয়। ‘সোলায়মানের উপহার পেয়ে খুশি হয় সে। এক সৌদি সেদিন তাকে পেপসির বোতল দিয়েছিল একটা। পরে খাবে বলে বোতলটা পকেটে রেখেছিল। সেই বোতল সোলায়মানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে – ‘লে ভাইয়া তোম পিও।’ উভয়ের পেপসি পানের মধ্যে দিয়ে এই গল্পের সৌহার্দ্যমূলক সমাপ্তি।
আগেই বলা হয়েছে, দেশের নিম্নবিত্ত শ্রমজীবীদের নিয়ে গল্প আছে ছয়টি। প্রায় সব গল্পের পটভূমি গ্রাম। গ্রামের শ্রমজীবী মানুষের চারিত্রিক বৈচিত্র্য শহরে বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের থেকে বেশি। তার একটা কারণ হয়তো গ্রামীণ শ্রমিকদের বৈচিত্র্যময় জীবনসংগ্রাম। ‘অগস্ত্যযাত্রা’ গল্পটি উত্তম পুরুষে লেখা। ‘যার যে স্থানে জন্ম, সেই জন্মস্থানের মাটিতে মিশে যাওয়ার অন্তিম বাসনা অনেকেরই হয়’ – এই বাসনা নিয়েই গল্পের মূল চরিত্র লেখক অবসর জীবনে নিজের পিতৃপুরুষের ভিটেয় ফিরে আসে বাকি জীবনটুকু শান্তিতে কাটানোর আশায়। ‘888sport appয় রাস্তায় হাঁটার সময় কেউ ফিরেও তাকায় না, কিন্তু গাঁয়ের পথে হাঁটতে বেরুলেই চেনা-অচেনা বহু লোকের সালাম পাই।’ এই সালাম পাওয়ার অর্থ নিজের গুরুত্ব-উপলব্ধি, যে উপলব্ধি লেখককে গ্রামজীবনের প্রতি শুধু যে আকৃষ্ট করে এমন নয়, সেখানে বসবাসের একটা স্বাপ্নিক ঘোরও নির্মাণ করে দেয়। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন। গ্রামীণ সমাজজীবনের জাব্দা ভিতে শুধু উত্তরাধিকার আইনের জোরে ভিন্ন কেউ তার কল্প-বিলাসের শেকড় চাড়াবে; বিষয়টা এতো সহজ নয়। সে-কারণে দেখা গেল, পুকুরপাড়ে বসে মাছ ধরার কল্পনা, সবজি ক্ষেত, বিশ বছরমেয়াদি মেহগনি চারার সাজান বাগান, রাতারাতি তছনছ হতে সময় লাগলো না। ‘শেষ বয়সে আমার এত বৃক্ষপ্রেম আর মৎস্য প্রেম ব্যর্থ হওয়ায় বাঁচার আনন্দ আর কোথায় খুঁজব আমি? মনে হয় আমার ইহকাল নেই, পরকালও নেই, জীবিত থাকতেই অসীম এক কালো গহ্বরে বিলীন হয়ে যাচ্ছি।’ কিন্তু প্রকৃত অর্থে তাকে বিলীন হতে হয় না। গল্পের শেষে যখন তার কাজের সাহায্যকারী দিনমজুর উবেদ আলীর ছেলে ছক্কা মহানন্দে এসে খবর দেয় যে, পুকুরে শত্রুতা করে বিষ দেওয়া সত্ত্বেও সব মাছ মারা যায়নি, তখন শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে হলেও ছক্কার আনন্দের ভাগ নিতে সে উঠে দাঁড়ায়। এই দাঁড়ানোর মধ্যেই যেন লেখক বলতে চান, শত প্রতিকূলতার মধ্যেও সবকিছু শেষ হয়ে যায় না। শেষের মধ্যেই শুরু থাকে।
গ্রামীণ সমাজের জটিল-কুটিল অষ্টাবক্রের ছবি আমরা এই গল্পের মধ্যে পাই। এই গ্রাম প্রথাগত চিরকালীন গ্রাম নয়, হাল আমলের। যখন গ্রামীণ সমাজকাঠামোর আমূল পরিবর্তন হয়েছে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে যুক্ত হয়েছে রেমিট্যান্সের টাকা। এতোদিনের সরল-স্বাভাবিক গ্রামীণ জীবনে ভোগ-বিলাসের টোপ সাজিয়েছে বাজার অর্থনীতির বেপরোয়া কারিগররা আর গ্রামীণ ক্ষমতাকাঠামোয় শেকড় চাড়িয়েছে রাষ্ট্রীয় রাজনীতির দুর্বিনীত আয়ুধ।
গ্রামীণ সমাজের ওপর ভিত্তি করে লেখা এই গল্পগ্রন্থের পাঁচটি গল্পের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় ‘বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত আত্মীয় স্বজন’ গল্পটি। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখার ঝুঁকি অনেক, কিন্তু লেখকের সততা আর নির্মোহ নিরীক্ষা তাঁকে সাহস জুগিয়েছে।
একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এদেশের নিম্নবিত্ত দরিদ্র বিপুলসংখ্যক কৃষকের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ছিল ব্যাপক জনপ্রিয়তা। বাঙালি জাতীয়তাবাদের সম্ভাবনার সুপ্ত বীজ তিনি রোপণ করেছিলেন তাদের মধ্যে। ভক্তের অভাব ছিল না, এমনকি তাঁর ডাকে জাগতিক সবকিছু উৎসর্গ করতেও প্রস্তুত ছিলেন এদেশের বিপুলসংখ্যক দরিদ্র কৃষক। চেংটু সাবেদ ছিল তাঁর এমনই এক ভক্ত। হতদরিদ্র কৃষক কিন্তু স্বাধীন দেশের স্বপ্নে সে ছিল বিভোর। ‘বাঙালির এত বড় বন্ধু এ দুনিয়ায় আর কাঁয়ও নাই বাহে’ – শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে এই ছিল তার সরল কিন্তু নিষ্ঠ সিদ্ধান্ত। একবার চেংটু পগার থেকে ধরা বিপুল পরিমাণ জিয়ল-মাগুর-কই মাছ বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে পাঠানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু নিজে গ্রাম থেকে কোনোদিন বের হয়নি বলে সে চেষ্টা সফল হয়নি। মুক্তিযুদ্ধে চেংটু নিজে অংশগ্রহণ করেনি সত্যি কিন্তু নিজের পোষ্য দশ বছরের আপন ভাগ্নে মজিবরকে পাঠিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রণের জন্যে, ‘নেতা কয় নাই – যার যা আছে তাই দিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। মজিবরই আমার বড় অস্ত্র বাবা।’ এই গল্পে মুক্তিযুদ্ধ আছে, আছে সেই যুদ্ধের গ্রামীণ অবয়ব। শারীরিকভাবে অনুপস্থিত থাকা সত্ত্বেও মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবিসংবাদী প্রভাবের পরিচয় এই গল্পে পাওয়া যায়। গ্রামীণ সমাজবিন্যাস অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধের গাম্ভীর্য ধরা পড়ে নানা মাত্রায়। মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী পরিস্থিতিও খুব উজ্জ্বল এই গল্পে। ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস, ’৭৪-এর মহামঙ্গা, ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার ঘটনা – এসবই গল্পের উপজীব্য। আকারে ছোট হলেও 888sport appsের একটা ছোট গ্রামের নানা শ্রেণির কিছু মানুষের জীবনযাত্রাকে কেন্দ্র করে মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে একেবারে জিয়াউর রহমানের খাল কাটা বিপ্লব পর্যন্ত ঘটনাবহুল বিস্তৃত সময়ের যে-সংক্ষিপ্ত অথচ সূক্ষ্ম রেখাচিত্র অংকন করা হয়েছে তার ঔজ্জ্বল্যে বিস্মিত না হয়ে পারা যায় না। বঙ্গবন্ধুর প্রাণান্ত ভক্ত চেংটু সাবেদের জীবনে দুটি প্রশ্ন অমীমাংসিত থেকে যায়। তার একটি স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাক্কালে ২৫শে মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর ধরা পড়াকে কেন্দ্র করে। বিষয়টি ছিল তার কাছে অসম্ভবরকম অবিশ্বাস্য। পরবর্তীকালে স্বাধীন বাংলা বেতারে নেতার বজ্রকণ্ঠ শুনে লেখককে সে উপহাস করে বলেছিল : ‘888sport appয় থাকিয়া কি বালের পলিটিক্স করেন বাহে। আমি কই নাই মুজিবকে বন্দি করা এত সোজা না। মুজিব আছে কি নাই, নিজের কানে শোনো সবাই।’ বাস্তবতা যা-ই হোক, শুরুতে শেখ মুজিবের বন্দি হওয়ার খবরটা সে কোনোভাবেই মানতে পারেনি। তার স্বাভাবিক বুদ্ধিতে মনে প্রশ্ন জেগেছিল, ‘সবাইকে যুদ্ধ করার হুকুম দিয়ে পাক বাহিনীর হাতে ধরা দিয়ে আবার জেলে যাবে, নেতা এমন বোকা হয়?’ স্বপ্নের স্বাধীন দেশে জিয়াউর রহমানের উৎপাদন বৃদ্ধি আর খাল কাটা বিপ্লবের সময় ‘অভাব-অনটনে অসুখ-বিসুখে’ ভুগে একরাশ হতাশায় জর্জরিত চেংটু সাবেদের জীবনাবসান হয়। তখন তার মনে প্রশ্ন আরো একটা ছিল। বলা যায়, 888sport appsের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের নানা জটিল-কুটিল-তত্ত্ব-তথ্যের ঘূর্ণি চেংটুর মতো হতদরিদ্র এক কৃষকের উত্থাপিত এই দুটি প্রশ্নকে ঘিরে আজো সক্রিয়। দ্বিতীয় প্রশ্নটি সে করেছিল তার মৃত্যুশয্যায় আর এই প্রশ্নের মধ্য দিয়েই সমাপ্তি ঘটে গল্পের। দীর্ঘদিন পর গ্রামে লেখকের সঙ্গে দেখা হলে মৃত্যুপথযাত্রী চেংটু সাবেদ জানতে চেয়েছিল : ‘যার কণ্ঠ শুনিয়া পাকিস্তানি দুশমনরা বাঙলার মাটি থাকি পালায় গেল, সেই দয়ার সাগর, রক্ষীবাহিনী আর লাল ঘোড়া দাবড়ায় ঘরের শত্রু দমন করতে পারে নাই কেন বাহে?’
মঞ্জু সরকারের গদ্য গতিশীল। মেদহীন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার কালোয়াতি সেখানে নেই। প্রকৃতি বর্ণনার ক্ষেত্রেও তিনি উচ্ছ্বাসহীন, সংযত। ব্যক্তি সেখানে নিছক সামাজিক উপাদান; সমাজবিচ্ছিন্ন সক্রিয় কোনো উপকরণ নয়, যে-কারণে ব্যক্তির একক বিচ্ছিন্ন সংকটের প্রতি লেখকের আগ্রহ কম। সমাজ সংগঠনের নিয়ত পরিবর্তনশীলতায় যেটুকু যেরকম সাড়া ব্যক্তির আচরণে পড়ে, সেখানেই লেখকের আগ্রহ। সেই আচরণটুকু তিনি মেলে ধরতে চান সমাজের গতিমুখের নিদর্শন হিসেবে। সম্ভাবনার খোঁজও করেন সেখানে।
আমাদের দেশে কথা888sport live footballের ভোক্তা এখনো পর্যন্ত শহুরে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণি। 888sport live football অনেকের কাছে বিনোদন উপকরণ, স্বপ্ন-সহচর – জীবন-জিজ্ঞাসার বহুমুখী সামাজিক দর্পণ নয়। যে-কারণে মঞ্জু সরকারের 888sport live football-মনোভঙ্গি বোধ বা রুচির সঙ্গে পাঠকের মানসিক সাযুজ্য বিঘ্নিত হয়। এই বিঘ্নতা 888sport live footballবিচারের মানদণ্ড নয় সত্যি; কিন্তু পাঠকপ্রিয়তার ক্ষেত্রে প্রভাব রাখে। পাঠকের কাছে কথা888sport live footballের বিস্তীর্ণ চারণভূমি বিনোদনসামগ্রীর অধিক জীবন-জিজ্ঞাসার আকর উপাদান হয়ে না উঠলে কথা888sport live footballের মর্যাদা বা গুরুত্ব প্রয়োজনের আবশ্যিক তালিকায় অনিবার্য হয়ে ওঠে না – একথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।
আশা করা যায়, সমাজ-নিরীক্ষায় মঞ্জু সরকারের 888sport live footballপ্রয়াস তাতে নিরস্ত হবে না।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.