ইভলিনের সঙ্গে তাঁর প্রথম প্রেম এবং বিয়ে। তিনি তখন ছাবিবশ বছরের যুবক। বিয়ের দু-বছর আগে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সদস্য হয়েছেন। একদিন ইভলিনকে বললেন, জানো, আমার প্রিয় দৃশ্য কী?
ইভলিন হেসে বললেন, এ-বিষয়ে আমরা তো কখনো আলাপ করিনি।
তিনিও হেসে বললেন, তোমার সঙ্গে শেয়ার করব বলেই তো প্রশ্নটি করলাম।
বলো শুনি। ইভলিন তাঁর ডান হাত টেনে নিজের হাতের মুঠোয় নেয়। আলতো করে চুমু দেয়।
আমার প্রিয় দৃশ্য সূর্যাস্ত। আমি একা বসে এই দৃশ্য দেখতে ভালোবাসি। সঙ্গে গান থাকবে।
মৃদুলয়ের সংগীত।
বেশ তো ভালো কথা। প্রত্যেক মানুষেরই একা কিছু বিষয় উপভোগ করার আনন্দ থাকতে হয়। অন্যকে সঙ্গী করার দরকার হয় না।
তোমার তাই মনে হয়? আমি চেয়েছিলাম তুমি আর আমি একসঙ্গে সূর্যাস্ত দেখব।
একদিন-দুদিন দেখতে পারি। তবে বেশিদিন না।
খুব মৃদুভাবে তিনি একটি ধাক্কা খেলেন। মন খারাপ হয়ে গেল তাঁর। ইভলিন সামনে নেই। কোনো কাজে ঘরের কোথাও গেছে। রান্নাঘর বা শোবার ঘরে হতেই পারে। তাঁর মনের ভেতরে জেগে ওঠে দৃশ্যপট। সূর্যটা বিদায় নিচ্ছে। চারপাশ লাল হয়ে উঠেছে। রক্তাভ আকাশ, তিনি নিজেকেই বলেন। মনে পড়ে কুনু গ্রামে দেখা সেই সূর্যাস্তের কথা। শৈশবের নয় বছর কেটেছে ওখানে। আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতেন, আকাশ তোমার লাল রং আমাকে সারাদিন দেখাও। লাল আকাশ শুধু তুমি আমার। তোমার সূর্যাস্তের সবটুকু আমার। দু-বছরের মাথায় যখন বয়স নয় হয়েছে তখন ভেবেছেন, আকাশ কেন একা আমার হবে। এসব ন্যাংটো ছেলে, যারা মাঠে ছাগল-ভেড়া চরায় তাদেরও। আমি ছাগল-ভেড়া না চরালে কী হবে, আমরা সবাই এক। কুনু গ্রাম আমাদের সবার। এ-কথা ভাবার সঙ্গে সঙ্গে সেদিন বিস্ময়ে নিজের দিকে তাকিয়েছিলেন। ছেলেদের জড়ো করে বলেছিলেন, বাড়ি যাওয়ার সময় হলো আমাদের। তার আগে এই লাল আকাশ দেখব। ওজালা হি-হি করে হেসে বলেছিল, দেখার কী আছে। ও তো আমরা রোজই দেখি। সূর্য তো ডুববেই। আবার উঠবে। আমরা তো রোজই দেখব।
তোরা কি ভাবিস সূর্যাস্তের দৃশ্যটা তোদের?
এটা নিয়ে ভাবাভাবির কী আছে? পাগল, পাগল। হি-হি হাসি ছড়িয়ে যায় খোলা প্রান্তরজুড়ে।
তিনি গম্ভীর স্বরে বলেছিলেন, আমি ভাবি সূর্যাস্তের দৃশ্য আমার। আমার।
আবার সেই হা-হা হাসির ধ্বনি খোলা প্রান্তরে ছড়ায়। ওরা নিজ নিজ ছাগল-ভেড়া জড়ো করে বাড়ির পথে রওনা করে। তাঁর কোনো ছাগল-ভেড়া নেই। তিনি ওদের সঙ্গে খেলতে আসেন। ওদের সঙ্গে যেতে যেতে তিনি বুঝেছিলেন, এই দৃশ্য ওদেরও। ওদের সবার। কুনু গ্রাম আমাদের। বাইরের কোনো লোকের না।
এখন তিনি রোবেন দ্বীপে। জেলখানায় বন্দি। তাঁকে বাগান দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কাজটি তিনি মনের আনন্দে করেন। কেপটাউন থেকে পঁচাত্তর কিলোমিটার দূরের এই দ্বীপটিতে বন্দি দিন কাটিয়ে ভাবছেন, জেলখানা তো শুধু দেয়াল মাত্র নয়। এই গাছের সারিতে তিনি কুনু গ্রামের গাছপালা প্রান্তর দেখতে পান। সূর্যাস্তের আগে তাঁকে ঘরে ঢোকানো হয়। তাতে তাঁর কিছু এসে-যায় না। তিনি বুকের ভেতরের আকাশে সূর্যাস্ত দেখতে পান। শৈশবের খেলার সাথিদের হাসি শুনতে পান। মাটি আর মানুষের ভেতর থেকে ফুটে ওঠা প্রিয় স্বদেশের স্বাধীনতা দেখতে পান।
খ্রিষ্টান মিশনারি স্কুলে পড়ার সময় একদিন ক্লাসটিচার বললেন, তোমার বড় নামটি ডাকতে অসুবিধে হয়। আজ থেকে সবাই তোমাকে নেলসন ডাকবে।
ছেলেরা একসঙ্গে চেঁচিয়ে বলেছিল, নেলসন। নেলসন। নেলসন ম্যান্ডেলা।
ছেলেরা উৎফুল্ল স্বরে তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিল। সবাই তাঁকে ভালোবাসে। তিনি এক মেধাবী বালক। পড়ালেখায় ভালো। খেলাধুলায় চৌকস। কথায় সাহসী। যা বলার তা সাহসের সঙ্গে বলেন। তাঁর ভয় নেই।
হ্যাঁ, ভয় তো নেই। কাকে তিনি ভয় করবেন? যারা মানুষকে ন্যায্য অধিকার দেয় না তাদেরকে? ফুঃ। তারা ক্ষুদ্র পোকার চেয়েও নিকৃষ্ট।
তিনি জেলখানার ঘরে বাতি বন্ধ করে রাখেন। বলেন, অন্ধকার আমার কাছে কালো গোলাপ। তেরো বছরের বিবাহিত জীবন কাটিয়ে যেদিন সংসার ভাঙল সেদিন তিনি ইভলিনকে একটি কালো গোলাপ হাতে দিয়ে বলেছিলেন, আমাদের জীবনের সবটুকুই আলো। তোমাকে ভালোবাসি। এতদিনে তুমি বুঝতে পেরেছ অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে আমি নেমেছি। সংসার ঠিকমতো করা হয়নি। এটা মেনে নেওয়া তোমার পক্ষে কঠিন ছিল। কিন্তু পরিবার ছেড়ে আন্ডারগ্রাউন্ডে দিন কাটানোকে আমি সংগ্রামের অংশই মনে করেছি। কখনো কালো গোলাপ পেলে সেটাকে ছুঁয়ে দেখো। মনে করো আমাকে ছোঁয়া হলো। সেদিন ইভলিন দুটো সন্তান নিয়ে চলে যাবার সময় তাঁর হাতে আলতো করে চুমু দিয়েছিল। তাঁর দিকে তাকায়নি একবারও। বলেনি, যাচ্ছি। তাঁর ভেতরে ব্যাকুলতা ছিল কি? তিনি এখন তাঁর নিজের হিসাব আর মেলাতে চান না।
কারাবাসের দিনগুলোতে এখন তাঁর সঙ্গে আছেন উইনি। ছাবিবশ বছর বয়সে বিয়ে করেছিলেন ইভলিনকে। আটত্রিশ বছর বয়সে বিয়ে করেন উইনিকে। তখন তিনি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আসামি ছিলেন। জোহান্সবার্গ ছেড়ে অন্যত্র যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। বিয়ের জন্য সরকারি ছাড়পত্র নিতে হয়েছিল তাঁকে। এবং অনুমতি পেয়েছিলেন চারদিনের। বিয়ে হয়েছিল বিজানার মেথোডিস্ট চার্চে। সামাজিক প্রথামতো বিয়েতে বর পণ দিতে হয়েছিল। বিয়ের রেজিস্ট্রেশনও হয়েছিল। বিয়ের পর উইনিকে নিয়ে চলে গিয়েছিলেন কুনু গ্রামে নিজ পৈতৃক ভিটায়। ইচ্ছা ছিল এখানে কিছুদিন কাটানোর। কিন্তু সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আগে তিনি একদিন উইনিকে বলেছিলেন, আমার প্রিয় দৃশ্য সূর্যাস্ত। আমি তোমাকে নিয়ে সূর্যাস্ত দেখব আর গান শুনব।
উইনি আবেগে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন, আমি তোমাকে ভালোবাসি। একসঙ্গে তোমার প্রিয় দৃশ্য দেখব সেটা আমার অনেক আনন্দের ব্যাপার হবে।
সেই সময় আমরা গানও শুনব।
কার গান? উইনির উৎসুক কণ্ঠের জিজ্ঞাসা ছিল।
পল রবিনসন।
ওহ, পল রবিনসন আমারও প্রিয় 888sport live chatী।
সেই মুহূর্তে দুজনের সুখের অনুভব গান হয়ে উঠেছিল। যেন এ-জীবনের স্বপ্ন কোনোদিনই ফুরোবার নয়। উইনি একই উৎফুল্ল কণ্ঠে বলেছিলেন, আফ্রিকার গণসংগীতও তোমার খুব প্রিয়।
তিনি উইনিকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন, এখন এক আশ্চর্য সময় এসেছে আমাদের জীবনে। আমরা এই সময়কে অতিক্রম করতে পারব।
একসঙ্গে? উইনির দৃষ্টি গভীর ভালোবাসায় প্রস্ফুটিত হয়ে থাকে। তিনি সেই দৃষ্টি নিজের বুকের ভেতর টেনে নিয়ে বলেন, হ্যাঁ, একসঙ্গেই তো। শুধু আমাকে পিছু ছাড়বে না দেশের শে^তাঙ্গ সরকার। ওরা আমাকে তাড়া করবে সর্বত্র। আমার পারিবারিক জীবন সংগ্রামের অংশ হবে।
ভয় নেই নেলসন। আমি তোমার পাশেই থাকব।
রোবেন দ্বীপের জেলখানায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত নেলসন ম্যান্ডেলা এখন পাঁচশো শব্দের চিঠি লেখেন উইনিকে। ইচ্ছে হয় হাজার হাজার শব্দ দিয়ে চিঠি লিখতে। কিন্তু উপায় নেই। কারা কর্তৃপক্ষ পাঁচশো শব্দের বেশি চিঠি অনুমোদন করবে না। সে চিঠি পৌঁছাবে না প্রিয়তম উইনির কাছে। উইনি এখন তাঁর মুক্তির লক্ষ্যে তোলপাড় করছেন সবখানে।
বিয়ের পরে গ্রেফতারের ছাড়া পেয়েছিলেন তিনি। দুজনের সংসার শুরু হয়েছিল জোহান্সবার্গের অরল্যান্ডের বাড়িতে, বাড়ির সামনে বাগান করেছিলেন উইনি। ফুটিয়েছিলেন কালো গোলাপ। তিনি উইনিকে বলতেন, শে^তাঙ্গদের চোখের সামনে আমরা সবাই কালো গোলাপ মায়াবী রানী।
ঠিক তাই। আমিও এরকমই ভাবি। আমরা ফুল এবং বিদ্রোহী।
উইনির দিকে তাকিয়ে হা-হা করে হেসেছিলেন তিনি। আসলেই উইনি তাঁর জীবনে মায়াবী 888sport promo code। যেমন স্নিগ্ধতায় ভরিয়ে দেন তাঁকে, তেমন দ্রোহে শক্তিমান করে রাখেন। দুজন মানুষের একসঙ্গে বসবাস তো এমনই হতে হবে। তিনি উইনিকে বিছানায় পাওয়ার জন্য ব্যাকুলতা বোধ করেন কারাগারের এই কুঠুরিতে। তিনি নিজেকে বলেন, যে-কোনো মানুষের জন্য সুখী পারিবারিক জীবন খুবই দরকার। না হলে বোধের ভেতরে শূন্যতা মাকড়সার মতো জাল ছড়ায়। মানুষ অনেক সময়ই দুর্বল হয়ে পড়ে। নিজ ভাবনার সঙ্গে কুঠুরির অন্ধকার তাঁর সামনে ঘনীভূত হয় না। অদৃশ্য আলো ছড়ায়। তিনি জানেন, উইনি এখন নানা সংকটের ভেতরে দিনযাপন করছে। শে^তাঙ্গ সরকার তাকে চাকরি থেকে ছাড়িয়ে দিয়েছে। আর কোনোদিন চাকরি পাওয়ার আশা নেই। অভাবের জাঁতাকল পিষ্ট করছে উইনিকে। তারপরও আমার প্রিয়তম স্ত্রী সাহস হারায়নি। নতজানু হয়নি।
তাঁর মেয়ে জিন্দজির বয়স যখন চার তখন তাঁর যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়। বড় মেয়ের বয়স ছিল পাঁচ। ছেলেটি বেশ ছোট। মাঝখানে কত কত বছর কেটে গেছে। দু-মেয়ের বিয়ে হয়েছে। আর ছেলেটি গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যায়। শেষবারের মতো ছেলেটিকে দেখার অনুমতি দেয়নি সরকার। সেও এক আশ্চর্য সময় ছিল জীবনের! তিনি বালিশে মাথা রেখে শুয়ে পড়েন। কুঠুরির ছাদের দিকে তাকান। ভাবেন, কাল সকালে বাগান পরিষ্কার করার সময় কালো গোলাপের কয়েকটি পাপড়ি বাতাসে ছুড়ে দিয়ে বলবেন, আমার ভালোবাসা তোমাকে স্পর্শ করুক সোনার ছেলে।
এখন তিনি কেপটাউনের পলসমুর কারাগারের বন্দি সেলে দিন কাটাচ্ছেন।
তাঁকে রোবেন দ্বীপ থেকে এখানে পাঠানো হয়েছে। কারণ তিনি রোবেন দ্বীপের বন্দি কিশোরদের জন্য পড়ালেখার সুযোগ তৈরি করেছিলেন। অনেকেই জেলখানায় থেকে পরীক্ষা দিয়ে স্নাতক ডিগ্রি পেয়েছিল। এই ব্যবস্থা ‘ম্যান্ডেলা বিশ^বিদ্যালয়’ নামে পরিচিত হয়ে উঠল। প্রমাদ গুনল কারা কর্তৃপক্ষ। তাঁকে সরানো হলো জেলখানা থেকে। পলসমুরে তাঁকে অনেক বড় একটি ঘরে রাখা হলো। ভালো খাবার দেওয়া হতো। কিন্তু ঘর থেকে বের হওয়ার অনুমতি ছিল না। রোবেন দ্বীপে পায়ের নিচে ঘাস ছিল। চারপাশে লতা-পাতা-ফুল ছিল। পাখি-প্রজাপতি-কীটপতঙ্গ ছিল। সাধারণ বন্দিদের সঙ্গে দেখা হতো, কথা হতো। যাদের জন্য তাঁর এই কারাজীবন সেই মানুষের দেখা পেয়ে দিন তাঁর ভালোই কাটছিল। হঠাৎ করে কখনো প্রিয় দৃশ্য সূর্যাস্ত দেখার সুযোগ ছিল। পলসমুর কারাগার পুরো বন্দিজীবনে আটকে রাখল।
তাঁর ঘরটি ছিল ভীষণ স্যাঁতসেঁতে। ফাটা দেয়াল চুঁইয়ে বৃষ্টির পানি ঢুকত। ভিজে যেত মেঝে। এমন ঘরে দিনের পর দিন তো কাটতে পারে না। ঠান্ডাজ্বর তাঁকে অসুস্থ করল। উইনি দেখা করতে এলে তাঁর সঙ্গে কথা বলতেও কষ্ট হয়। কুড়ি বছরের বেশি হয়ে গেল কারাগারের জীবন।
উইনি কেঁদে ফেলেন। চোখের জল মুছে বলেন, আর কতদিন চলবে এভাবে?
তিনি মুঠোর মধ্যে উইনির হাত চেপে ধরে বলেন, হয় আদর্শের জন্য বেঁচে থাকা, নয় মৃত্যু। আমার সামনে এখন দুটোই পথ।
উইনি দু-হাতে মুখ ঢাকেন। কান্না থামাতে কষ্ট হয়। তিনি সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, তুমি তো এই আদর্শেরই পথের মানুষ গো –
হ্যাঁ, আমিও। তোমার জন্য চোখের জল আমার ভালোবাসা। তোমাকে আমি বিনা চিকিৎসায় মরতে দেব না।
দেখো, আমাকে বাধ্য করা হচ্ছে এই ছোট আকারের জুতো পরার জন্য। পায়ের আঙুলে চাপ লাগায় আঙুলের মাথায় ঘা হয়েছে। আমার হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে। ওরা ভেবেছে এভাবে আমাকে দমন করতে পারবে।
আমি তো জানি যে ওরা তোমার কিছুই করতে পারবে না প্রিয়তম।
তুমি আমার সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করো।
ও হ্যাঁ, তুমি কি টলস্টয়ের ওয়ার অ্যান্ড পিস বইটি পেয়েছিলে? আমি পাঠিয়েছিলাম।
ওরা আমাকে বইটি দেয়নি। আরো বলেছে, কমিউনিস্ট 888sport live football রাজবন্দিদের পড়তে দেওয়ার অনুমতি নেই। জোয়েল জোফ যে কাগজপত্র এনেছিল সেগুলো পেয়েছি।
তোমার কাছে এখন কী বই আছে উইনি?
নাডিন গর্ডিমারের বার্গার্স ডটার 888sport alternative linkটি পাঠাব তোমার জন্য।
ওহ, নাডিন! ও খুব ভালো লেখে।
যেদিন তোমাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয় সেদিন ও কোর্টে ছিল। ওর বইটি খুব গোপনে তোমাকে দিতে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকায় বইটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
কারারক্ষী এসে সামনে দাঁড়ায়।
ম্যাডাম আপনার সময় হয়ে গেছে।
উইনি ম্যান্ডেলার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায়। চলে যাওয়ার সময় হলেই তাঁর মনে হয় তাঁর শক্তি ফুরিয়ে যাচ্ছে। বিষণ্ণ হয়ে যান তিনি নিজেও। একসময় পরস্পরের হাত ছেড়ে দিতে হয়। বিদায়ের ঘণ্টা বাজে দুজনের বুকের ভেতর।
এই মুহূর্তে বিদায় একটি আপাত সত্য। উইনি জানেন এই সত্যের ভেতর তাঁর ব্যক্তিগত ইচ্ছার স্ফুরণ আছে। বর্ণবাদবিরোধী সংগ্রাম জেলজীবনের সময়কে বিমূর্ত করছে। উইনি নিজেকে সামলান। ওদের দুজনের পথ তো একটাই। পথের শেষের কুঁড়েঘরও একটাই। দুজনের তিনটি সন্তান আছে। ছোট মেয়ে জিন্দজির সঙ্গে বাবার সম্পর্ক বেশি। বাবা ওর কাছে আদর্শের শিরোমণি। উইনি মনের আনন্দে জেলখানার চত্বর ছেড়ে আসেন।
জেলখানার সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েন নেই – উইনি চলে যাওয়ার পর এমনই ভাবেন নেলসন। কয়েক বছর আগে বৃষ্টির দিনে উইনি বলেছিলেন, খুব ইচ্ছে করে একদিন জেলখানায় থেকে তোমার সঙ্গে সূর্যাস্ত দেখি।
সত্যি! নেলসন গভীর আচ্ছন্নতায় উইনির হাত চেপে ধরে বলেছিলেন, আজ তোমাকে আমি একটি দীর্ঘ চুমুতে ভরিয়ে দেব।
সেদিন দুজনের দীর্ঘ চুমুর শেষে কারারক্ষী এসে বলেছিল, আপনার সময় শেষ ম্যাডাম।
ক্রুদ্ধ স্বরে উইনি বলেছিলেন, শাটআপ, আমার সময় শেষ বলে কোনো কথা নেই।
আপনাকে যেতে হবে। কারারক্ষী মাথা ঠান্ডা রেখেই বলেছিল। বিরক্তি প্রকাশ করেনি।
নেলসন অনুরাগের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলেছিলেন, আমার কাছে তোমার কোনো চলে যাওয়া নেই উইনি।
আমি জানি। আজ যাচ্ছি।
আবার কবে আসবে?
কবে অনুমতি পাব তা তো জানি না।
উইনি বেরিয়ে আসেন। শেষবারের মতো পেছন ফিরে তাকালে দেখেছিলেন নেলসন একই ভঙ্গিতে বসে তাকিয়ে আছেন ওঁর দিকে। ওঁ ফিরে তাকালে হাত ওঠাননি। ঘাড় নাড়েননি। উইনি মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিলেন। বুঝতে পারেন বুকের ভেতর ঝড়। মুষড়ে আছে ভেতরের সবটুকু। কিন্তু মন খারাপ করলেও নেলসনের মূল জায়গায় প্রাণশক্তি মুষড়ায় না। উইনি যেতে যেতে চারদিকে তাকিয়ে বললেন, এমন প্রাণশক্তির মানুষকে কি বর্ণবাদী পাহারায় আটকে রাখা যায়?
উইনি দূরের সাগরের দিকে তাকান। আশাবাদী হন। ভাবেন, সব নির্যাতনের অবসান আছে। আফ্রিকার শে^তাঙ্গ আধিপত্যবাদীরা কালোদের আর ক-দিনইবা আটকে রাখবে?
একদিন বাড়িতে ব্রেকফাস্টের সময় ছোট মেয়ে জিন্দজিকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, বাড়িতে বাবা নাই দেখে তোমার কি মন খারাপ থাকে মা?
জিন্দজি জোরের সঙ্গেই বলেছিল, একটুও না। আমার চার বছর বয়স থেকেই তো আমি বাবাকে ছাড়া বড় হয়েছি। বাবাকে দেখতে আসার পথ তুমি আমাকে দেখিয়েছ মা। একদিন আমি শহরের স্টেডিয়ামে বাবার পক্ষে জনসভা করব। তুমি কি নাডিন গর্ডিমারের বইটি পড়েছ মা?
উইনি হেসে বলেছিলেন, পড়েছি। বিপ্লবীদের ছেলেমেয়ের জীবন নিয়ে লেখা 888sport alternative link। সেসব ছেলেমেয়ে নিজেদের মা-বাবার আদর্শ নিয়ে বড় হচ্ছিল। তাদের সামনে ছিল জেল-জুলুমের হুমকি।
জিন্দজি মায়ের দিকে তাকিয়ে বলেছিল, আমি মনে করি বইটিতে আমার ছায়া আছে। আমিও ওই 888sport alternative linkের ছেলেমেয়েদের একজন।
হা-হা করে হেসেছিলেন উইনি। বলেছিলেন, আমার সাহসী মেয়ে।
যে দেশের স্বাধীনতার জন্য নিজের সাহসকে উৎসর্গ করে না সে কাওয়ার্ড মা।
উইনির মনে হয়েছিল জিন্দজি দেশের তরুণদের প্রতিনিধি হয়ে কথা বলছে। দক্ষিণ আফ্রিকার এই তারুণ্যের সূচনা হয়েছে এখন থেকে আরো পঞ্চাশ বছর আগে। যখন নেলসন আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সদস্য হচ্ছে, তারও আগে যারা এনসিসির সদস্য তাদের কাছ থেকে দীক্ষা নিয়ে। বড়রা পথ দেখাবে। তরুণরা এগিয়ে যাবে। নিজেদের অধিকার যারা বোঝে না তারা নিজ দেশে পরবাসী হয়ে যায়। জিন্দজির মতো অন্যরা কোনোদিনই নিজ দেশে পরবাসী হবে না। যে-দেশ তাদের মাতৃভূমি, যার ভৌগোলিক সীমানায় আছে দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগর আর দক্ষিণ-পশ্চিমে ভারত মহাসাগর। দেশের উত্তরে আছে বৎসোয়ানা, উত্তর-পূর্বে নামিবিয়া। উত্তর-পশ্চিমে মোজাম্বিক। উইনি নিজের ছোট মেয়েটির অবয়বে নিজ দেশের মানচিত্র দেখতে পান। আর ভাবেন, দিন বেশি দূরে নয়, যেদিন দুজনের যৌথ জীবনের নতুন দিন শুরু হবে। উইনি ফিরে যাচ্ছেন নিজ বাড়িতে। একাই ফিরছেন। মাথার ওপর প্রবল রোদ। আকাশ মেঘশূন্য। উইনির মনে হয়, তিনি হেঁটে যাচ্ছেন বছর বছর ধরে। তাকে তো হাঁটতেই হবে। যতদিন দুজনে স্বাধীনতার পাটাতনে দাঁড়াবেন না, ততদিন পর্যন্ত তো বটেই।
নেলসন ম্যান্ডেলার মুক্তির দাবিতে বিশে^র চারদিকে তোলপাড়। দক্ষিণ আফ্রিকার বোথা সরকার বলছে, তাঁকে মুক্তি দেওয়া যেতে পারে তিনি যদি আর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না থাকেন।
কারাগারের দেয়াল উড়িয়ে তিনি চিৎকার করে বললেন, দেশের সাধারণ মানুষের অধিকারের দাবি উপেক্ষা করে আমি মুক্তি চাই না। অস্ত্র আর শক্তি দিয়ে অধিকার আদায়ের লড়াই দমন করা যায় না। এটা আমার কোনো নতুন কথা নয়। আমার রাজনীতির যাত্রার শুরুতে আমি এ-কথা উচ্চারণ করেছি। কুড়ি বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেছে।
বোথা সরকারের শর্তযুক্ত মুক্তির আদেশ নিয়ে পলসমুর কারাগারে গেলেন উইনি আর তাঁদের অ্যাটর্নি। ম্যান্ডেলাসহ সব রাজবন্দির মুক্তির বিষয়ে তিনি কী বলবেন তা শুনবেন তাঁরা। তিনি বললেন, আমার যা কথা তা আমি জনসাধারণের সামনে বলব। কিন্তু সরকার সে অনুমতি দিলো না। এমনকি উইনিকেও কোনো কথা বলার অনুমতি দেওয়া হলো না। সোয়েটোর ফুলবানি স্টেডিয়ামের এক জনসভায় বাবার হয়ে কথা বললেন জিন্দজি। বললেন, আমার বাবা দেশের সব রাজবন্দির পক্ষ হয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, শুধু আমাদের কয়েকজন রাজবন্দির কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য আমরা সরকারের চাপিয়ে দেওয়া কোনো শর্ত মেনে নিতে পারি না। এতে দেশের গণমানুষের রাজনৈতিক অধিকার হরণ করা হয়।
আমাদের প্রিয় সংগঠন এএনসি যখন নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়ে আছে তখন কেমন মুক্তি দেওয়া হবে আমাকে?
যখন পাস আইনে যে-কোনো সময় বন্দি করার আইন আমাদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা হচ্ছে তখন এ কেমন মুক্তি আমাদের সামনে?
যখন আমার প্রিয়তম স্ত্রীকে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ব্যান্ডফোর্টে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে তখন কেমন মুক্তির কথা শোনানো হচ্ছে আমাকে?
শহরে বাস করার জন্য যখন অনুমতি লাগে, কাজের অধিকার চাইতে যখন পাশ-বইয়ের অনুমোদন লাগে, দক্ষিণ আফ্রিকার নাগরিক হিসেবে যেখানে আমার কোনো মর্যাদা নেই, সে-দেশের শে^তাঙ্গ সরকার আমাকে কেমন মুক্তির শর্ত দিচ্ছে?
আমার দেশবাসীর মুক্ত জীবনে বেঁচে থাকার অধিকার নেই। আমি তো তাদেরই একজন। আমার আবার শর্তযুক্ত মুক্তি কী? সবার স্বাধীনতা ও মুক্তি থেকে আমার মুক্তি কোনোভাবেই বিচ্ছিন্ন নয়।
দেশবাসী তাঁকে অভিনন্দন জানায়। আর দেশের শে^তাঙ্গ সরকার তাঁকে ভিক্টর ভার্সটার জেলখানায় বদলি করে দেয়। আবার একটি নতুন স্থান। সূর্যাস্ত দেখার সুযোগ নেই। কারাজীবনের ছাবিবশ বছর চলছে। জিন্দজি একদিন বলেছিল, বাবা, আমি ভেবেছিলাম তুমি হতাশায় ভোগ, জেলজীবনের শুরুতে তোমাকে দিয়ে শ্রমিকের কাজ করানো হয়েছিল, আমি ভেবেছিলাম তুমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছ, তোমাকে একজন বুড়ো মানুষের মতো দেখাবে। কিন্তু দেখলাম আমার ধারণা একদম ভুল। তোমার স্বাস্থ্য ভালো আছে, তুমি আমার বয়স্ক তরুণ বাবা! সেদিন জিন্দজির খিলখিল হাসি শুনে তিনি ভেবেছিলেন, স্বাধীনতার স্বপ্ন এমনই সুন্দর। জিন্দজির মুখ তাঁর সামনে পুরো দক্ষিণ আফ্রিকা হয়ে গিয়েছিল।
নেলসনের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি আবারো বিশ^জুড়ে জোরদার হয়ে ওঠে। হাজার হাজার মানুষ নেলসনের মুক্তির দাবিতে স্বাক্ষর করে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সভায় দক্ষিণ আফ্রিকার শে^তাঙ্গ সরকারের কাছে নেলসনের মুক্তির দাবি করা হয়। কিন্তু সরকার এই দাবি মানতে রাজি হয় না। ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী তাঁর জন্মদিনে শুভেচ্ছা বাণীতে তাঁকে অভিনন্দন জানান। দক্ষিণ আফ্রিকার জনগণের বিপ্লবী সংগ্রামকে বর্ণবৈষম্যবাদী শাসকের বিরুদ্ধে এক দৃষ্টান্ত হিসেবে অভিনন্দন জানান। তিনি কারাগারের ছোট কুঠুরিতে বই পড়ে আর প্রতিদিনের খবরের কাগজ পড়ে দিন কাটান। বুঝতে পারেন, সূর্যাস্তের লাল আভা তার চারপাশে ঘনীভূত হচ্ছে। আকাশের রং এক আশ্চর্য লাল আভায় প্রতিদিন ভরে তুলছে। তিনি বুকের আকাশের অনুভবে নিজেকে বলেন, যেভাবে শুরু করেছিলাম আমার সময়, এখন সেই দিন আমার সামনে। আমি তোমাকে ছুঁতে পারি সূর্যাস্ত।
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বোথা প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে যান। প্রেসিডেন্ট হন ডি. ক্লার্ক। তিনি দেশের রাজনৈতিক অবস্থা বুঝে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। নববইয়ের ফেব্রুয়ারি মাসে নেলসনসহ সব রাজবন্দিকে মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। শেষ পর্যন্ত এগারো ফেব্রুয়ারি সাতাশ বছরের কারাজীবন শেষ হয় তাঁদের। ভিক্টর ভার্সটার জেলখানা থেকে উইনি ম্যান্ডেলার হাত ধরে বেরিয়ে আসেন তিনি। শত শত মানুষ এই দৃশ্য দেখে। স্লোগান দেয়। গেয়ে ওঠে আফ্রিকার সংগীত – ‘নকসি সিকেলেল! আফ্রিকা! – ঈশ^র আফ্রিকাকে রক্ষা করবে।’ তিনি বলেন, শর্ত মেনে আমরা মুক্ত হইনি। মুক্ত মানুষই আলোচনায় বসতে পারে। বন্দিরা কখনো চুক্তি স্বাক্ষর করতে পারে না। আমরা শান্তি চাই। কৃষ্ণাঙ্গ-শে^তাঙ্গ মানুষেরা মিলেমিশে থাকব।
দুজনে আবার পারিবারিক জীবন শুরু করেন।
দু-বছরের মাথায় একদিন নাডিন গর্ডিমার জানতে পারেন যে, উইনি আর ম্যান্ডেলা আলাদা বসবাস করছেন। তাঁর ভ্রূ কুঁচকে যায়। কেন? ম্যান্ডেলার জেলজীবনের পুরো সময় উইনি তাঁর পাশে থেকেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁরা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। একচুলও সরেননি তাঁর কাছ থেকে। তিরিশ বছর পর তাঁদের কী হলো? একদিন জর্জ বিজোস তাঁকে বললেন, মি. ম্যান্ডেলা আপনাকে দেখা করতে বলেছেন।
দেখা করতে? কেন? তিনি কি আমার সঙ্গে আমার 888sport alternative link নিয়ে কথা বলবেন?
জর্জ মৃদু হেসে বলে, হতে পারে। গিয়েই দেখুন। তাঁর কথা তিনি নিজেই বলবেন।
নাডিন গর্ডিমার জোহান্সবার্গের উপশহরে ম্যান্ডেলার বাড়িতে গেলেন। তখন সকাল শেষে বেশ খানিকটা বেলা হয়েছে। তিনি বেশ দেরিতে ঘুম থেকে উঠে নাশতা খেতে বসেছেন। নাডিনকে ব্রেকফাস্ট টেবিলেই বসতে বললেন। চা দিতে বললেন। চা খেয়ে ড্রইংরুমে এলেন দুজনে। এটা-ওটা কথা শেষে তিনি বললেন, আপনি আমার প্রিয় ঔপন্যাসিক। আপনাকে আমি আমার একটি আবিষ্কারের কথা বলব।
নাডিন বিস্ময়ের সঙ্গে উচ্চারণ করেন, আবিষ্কার!
নেলসন ম্যান্ডেলা সরাসরি তাকিয়ে বললেন, আমি আবিষ্কার করেছি উইনির একজন প্রেমিক আছে।
নাডিন গর্ডিমার কথা বললেন না। তাঁরা দক্ষিণ আফ্রিকার শে^তাঙ্গ অধিবাসী। আফ্রিকার মুক্তি সংগ্রামের পক্ষে কাজ করেছেন। তাঁদের বাড়িতে এএনসির গোপন বৈঠক বসত। তিনি কখনো আলোচনায় বসেননি। ট্রেভর্তি চায়ের কাপ দিয়ে আসতেন বৈঠকখানায়। নাডিন কথাই বলতে পারেন না।
তাঁর আবিষ্কারের কথা বলে, নেলসন মৃদু হেসে তাঁর স্বামী রিনহোল্ড কাসিরার কেমন আছে জানতে চাইলেন। বললেন, তিনি আমাদের অনেক উৎপাত সহ্য করেছেন।
নাডিন দ্রুত কণ্ঠে বললেন, তিনি সানন্দে কাজটি করেছেন। এএনসির গোপন বৈঠক তাঁর কাছে কখনো উৎপাত ছিল না।
তাঁকে আমার অভিবাদন জানাবেন।
হ্যাঁ, অবশ্যই জানাব। আজ তাহলে উঠি।
আবার আসবেন। শুনুন, আমি উইনির কথা কাউকে বলিনি। আমি ব্যক্তির স্বাধীনতাকে সম্মান করি।
নাডিন বিদায় নিয়ে বেরিয়ে আসেন।
চমৎকার সুন্দর বাড়িটির সামনে দাঁড়িয়ে ভাবেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের দীর্ঘ সময়ে তাঁরা একজন আর একজনের জীবনের অংশ ছিলেন। জীবন এমনই! তারপরও মন খারাপ করে বাড়ি ফিরলেন। সবকিছু মেনে নেওয়া কঠিন, এমনই ভাবলেন নাডিন।
নাডিন দেখলেন তাঁর প্রিয় মানুষটি তাঁর আশি বছর বয়সে বিয়ে করলেন গ্রাসা মিশেলকে। গ্রাসার স্বামী সামারা মিশেল ছিলেন মোজাম্বিকের প্রেসিডেন্ট। তিনি বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান। মোজাম্বিক যখন ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিল তখন মিশেল সেই লড়াইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার পর নাডিন শুনলেন গ্রাসা বলছে, আমার নামের মিশেল অংশটি আমি রাখতে চাই।
অন্যরা যখন এ ব্যাপারে নেলসনের অভিমত জানতে চাইলেন তিনি বললেন, ভালো সিদ্ধান্ত। তাঁর নামের অংশ আমার নামের সঙ্গে গ্রহণ করতে হলো না। নাডিন গর্ডিমার ভাবলেন, এ-ও এক 888sport alternative linkের প্লট। তিনি এটি নিয়ে ভাবতে পারেন। ব্যক্তির বিচিত্র আকাঙ্ক্ষা তার বহুমুখী চেতনাকে ছড়িয়ে দেয়। মানুষের অব্যর্থ প্রেমের দিনগুলো তাঁর কাছে ফুটে থাকে, নাকি ঝরে পড়ে পাপড়ি? বিষয়টি তাকে ভাবায়। নাডিন নতুন 888sport alternative linkে ঢোকার পরিকল্পনা নিয়ে বাড়ি ফেরেন।
নেলসন ম্যান্ডেলা এখন 888sport appsে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দাঁড়িয়ে দেখতে পান পশ্চিম আকাশে সূর্য লাল আলো ছড়িয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার 888sport appsের স্বাধীনতার পঁচিশ বছর পূর্তি উপলক্ষে তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তিনি এখন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট। তাঁর জীবনে দ্রোহ আছে, প্রেম আছে। হাঃ জীবন! সবচেয়ে বেশি মনে পড়ছে উইনিকে। প্রেমে-দ্রোহে তাঁকেই তো সবচেয়ে বেশি কাছে টেনেছিল উইনি। মনে হচ্ছে, সূর্যাস্ত আকাশ কালো করে পৃথিবীর অন্য প্রান্তে যাবে না। সূর্যাস্ত এখন একটি কালো গোলাপ।
তিনি তখন বক্তৃতা দিচ্ছেন, আমরা 888sport appsে এসেছি এ-দেশের মানুষের প্রতি 888sport apk download apk latest version জানাতে। কারণ তারা জানে কীভাবে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করতে হয়। যখন দক্ষিণ আফ্রিকার গণতন্ত্র মাত্র শৈশবে, তখন আমরা বর্ণবাদের অন্ধকার থেকে হামাগুড়ি দিয়ে স্বাধীনতার সূর্যালোকের দিকে যাত্রা শুরু করেছি, তখন 888sport apps তার স্বাধীনতার পঁচিশতম বার্ষিকী উদযাপন করছে। …
সোহরাওয়ার্দীর মাঠের ওপর দিয়ে ভেসে যায় নেলসনের কণ্ঠস্বর। প্রেসিডেন্ট হিসেবে যা বলার দরকার তা বলছেন, তাঁর চারপাশে বসে আছেন অন্য দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা। তখন তাঁর বুকের ভেতর অন্যরকম শব্দ – ইভলিন বলছে, আমি তোমাকে ভালোবাসি। উইনি বলছে, আমাদের প্রেমের ব্যর্থতা নেই। আমরা স্বাধীনতার লড়াইয়ের মানুষ। গ্রাসা বলছে, এখন স্বাধীনতার স্বপ্ন বোনার সময়।
নেলসন ম্যান্ডেলা বক্তৃতা শেষ করার আগে নিজেকেই বললেন, এসো, আমরা 888sport appsের আকাশের সূর্যাস্ত দেখি। আমার প্রিয় দৃশ্য। শোনো গাওয়া হচ্ছে সংগীত – ‘আমার সোনার বাংলা’ –
দক্ষিণ এশিয়ার একটি দেশে এসে তিনি স্বাধীনতার কথা বলছেন। স্বাধীনতার সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাঁর জীবন। তিনজন জীবনসঙ্গী তাঁকে সে-কথা মনে করাচ্ছে। মানুষের সম্পর্ক ব্যাখ্যায় তিনি এ মুহূর্তের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক বিশাল সূর্যাস্ত। আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবলেন, যেখানেই থাকি না কেন, প্রিয় দৃশ্য দেখতে চাই। প্রিয় দৃশ্য ভরে দেয় ড্রিম অ্যান্ড রিয়ালিটি।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.