প্রেমেন্দ্র মিত্রের জনপ্রিয় চরিত্র ঘনাদা

কলকাতার ৭২নং বনমালী নস্কর লেনের মেসবাড়ি। সেখানেই জমাটি আড্ডা। আড্ডায় ঢুকে কারো কাছ থেকে সিগারেট নিয়ে তাকে ধন্য করে দামোদরের বন্যার প্রসঙ্গটাকে কেড়ে নিয়ে তাহিতি দ্বীপের টাইডাল ওয়েভ বা ভয়ংকর সমুদ্র-জলোচ্ছ্বাসে নিয়ে গিয়ে ফেলেন বিস্ময়াহত মুখ্য শ্রোতাদের এবং আমাদেরও। তিনি আর কেউ নন, স্বয়ং ঘনাদা ওরফে ঘনশ্যাম দাশ, যার রূপকার প্রেমেন্দ্র মিত্র। 

প্রেমেন্দ্র মিত্রের জন্ম ৪ সেপ্টেম্বর ১৯০৪ সালে উত্তর প্রদেশের বারানসীতে। তাঁর পৈতৃক নিবাস ২৪ পরগনা জেলার রাজপুরে। তিনি ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার কোন্নগরের সম্ভ্রান্ত মিত্র বংশের সন্তান। পিতার নাম জ্ঞানেন্দ্রনাথ মিত্র ও মাতার নাম সুহাসিনী দেবী। প্রেমেন্দ্র মিত্র কলকাতার ২৮নং গোবিন্দ ঘোষাল লেনের মেসবাড়িতে থাকতেন। পরবর্তীকালে পড়াশোনার জন্য তিনি 888sport appতে আসেন এবং ১৯২৩ সালের নভেম্বর মাসে আবার ফিরে আসেন কলকাতার ওই মেসবাড়িতে। এখানে থেকেই তাঁর 888sport live footballজীবন শুরু। 

১৯৪৫ সালে যখন ঘনাদাকে নিয়ে ‘মশা’ গল্পটি প্রকাশিত হচ্ছে তখন বিশ্ব-ইতিহাসে প্রশাসনিক দিক থেকে বিভক্ত ‘শাখালিন’ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই দ্বীপের পটভূমিকায় লিখলেন গল্পটি। প্রশান্ত মহাসাগরের ওপর অবস্থিত এই দ্বীপটি তৎকালীন বিশ্ব-ইতিহাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। প্রথমে পুরোটা রাশিয়ার দখলে থাকলেও বিংশ শতাব্দীর প্রথমে রাশিয়াকে পরাজিত করে জাপান দ্বীপটির কর্তৃত্ব লাভ করে। পরবর্তীকালে যদিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রাশিয়া সমগ্র দ্বীপের ওপর দখল ফিরে পায়; কিন্তু তৎকালীন সময়ে অর্থাৎ ‘ঘনাদা’র গল্প প্রথম প্রকাশের সময় প্রেমেন্দ্র মিত্র ঘনাদার বয়ানে এই বিশ্ব-ইতিহাসের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি দিয়েই তাঁর প্রথম ঘনাদার গল্প ‘মশা’র পটভূমি রচনা করেন। এছাড়া এই গল্পের যে-খলনায়ক কীটতত্ত্ববিদ মি. গিশিমারা – যাকে ঘনাদা শায়েস্তা করবেন – তিনি জাপানি। কাজেই এখানে সাম্রাজ্যবাদী জাপান বা জাপানিদের ঘনাদা বা প্রেমেন্দ্র মিত্র যে সমর্থন করেননি তা পরিস্ফুট হয়েছে। এ থেকেই বোঝা যায় লেখকের অদ্ভুত প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টির পরিচয়। এই দূরদৃষ্টিটাও তিনি পরিস্ফুট করেছেন তাঁর সৃষ্ট ঘনাদার মধ্যে। 

‘মশা’ গল্পটিতে ঘনাদা মেসের যে-কোনো বোর্ডারের কাছ থেকে সিগারেট ধার করে খেলেও পরবর্তীকালে দেখা যায় শুধু শিশিরের কাছেই তিনি এ-ব্যাপারে ঋণী। দু-হাজার তিনশো সাতান্নতম সিগারেটটি ধার করা হয় ‘মাছ’ গল্পে। এই মজার প্রসঙ্গটি ঘনাদার গল্পের এক অবি888sport app download for androidীয় তথ্য হয়ে ওঠে। এমনকি তিন হাজার দুশো তেইশ না তিন হাজার দুশো ঊনিশতম সিগারেট ধার – এ নিয়ে তর্কে শিশিরের সঙ্গে ঘনাদার কথা বন্ধ ও পরে আবার সন্ধি। 

গল্প, না গুল্প। যদি গুল মিশ্রিত গল্প বা গুল্প হয়, তাহলেও এমন জ্ঞানগর্ভ স্বাদু গল্প, যেন বা মোপাসাঁর ছোটগল্পের মতো রোমহর্ষে পড়ে ফেলার পরেই বুঝতে পারা যায় – এ তো গুল্প। তবুও দৃঢ়তার সঙ্গে বলা চলে, হ্যামলেট চরিত্রের মতো – এই পাগলামির মধ্যেও একটা ছন্দ আছে। বিশ্ব888sport live footballে শেরিডনের কমেডি ‘এভরিম্যান ইন হিজ হিউমারে’র বিখ্যাত চরিত্র বোবাডিল – যে-লোকটি সদাসর্বদা চলন-বলন-কথাবার্তায় অতি উচ্চপর্যায়ে বিরাজ করে – হঠাৎই একজন ক্রুদ্ধ সামান্য মহিলার হাতে ঝাঁটাপেটা হয়েও চুপচাপ বলেন – বিশ্বশান্তি বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কায় তিনি চুপচাপ আছেন। এই বিশেষ চরিত্রটি ঘনাদার খুব কাছাকাছি। ঘনাদাও – যিনি ভূতের ভয়কে মুখে উড়িয়ে দিয়েও মেসের পেছনে চিলেকোঠার একলা বন্ধঘরের বাইরে মেসের রাঁধুনিকে শুইয়ে রাখেন এবং সারারাত তাকে আশ্বস্ত করেন – ‘তুমি জেগে আছো তো। ভয় কি, আমি তো আছি।’ কিংবা বিখ্যাত গুণ্ডাষণ্ডা মারকুটে হিংস্র নিগ্রো বক্সারের নাম শুনে বক্সিং প্রতিযোগিতায় রেফারি হওয়া এড়াতে নিজের ঘরে খাটের তলায় যিনি লুকিয়ে থাকেন; তারপর হাতেনাতে ধরা পড়ে যাওয়াতে ভাঙা কাচ হাতে খাটের তলা থেকে বেরিয়ে এসে প্রত্যুৎপন্নমতিত্বের সঙ্গে কেন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে লন্ডনের ওপর প্রথম অ্যাটম বোমা না পড়ে হিরোশিমা-নাগাসাকিতে পড়লো – তার ইতিহাসভিত্তিক স্বয়ং নায়ককেন্দ্রিক এক নিটোল গুল্প শুরু করেন। এই গল্পের মধ্যে নিহিত চমকে দেওয়া তথ্য হলো যে, আমেরিকা অ্যাটম বোমা আবিষ্কার করলেও তার জনক জার্মানি। পরবর্তীকালে কিন্তু এই ঘটনা ঐতিহাসিক সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। 

আসলে ঘনাদার একটু আগে থেকেই ‘শুক্রেশুক্রে যারা গিয়েছিল’ গল্পের কল্পধর্মিতা, ‘পৃথিবী ছাড়িয়ে’ গল্পে মিসাইল আবিষ্কারের অনেক আগে মিসাইলের মতো ক্ষেপণাস্ত্রের উল্লেখ – এসব গল্প লিখতে লিখতে তিনি খুব সহজে সরল ভাষায় গল্পচ্ছলে 888sport apkভিত্তিক মৌলিক 888sport live football সৃষ্টির পথ খুলে দেন। এমনকি 888sport apkের জ্ঞান সহজ করে পরিবেশন করার নতুন পথ খুলে দেন বেঙ্গল ইমিউনিটির বিজ্ঞাপনে। একবার আকাশবাণীর 888sport apkধর্মী অনুষ্ঠান ‘অন্বেষা’য় তিনি বলেছিলেন – এনসাইক্লোপিডিয়া, সায়েন্টিফিক ওয়ার্ল্ড, অ্যাটলাস, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, সায়েন্স ইন ইউএসএ, ব্রিটানিকা, সায়েন্স ইউএসএসআর – এরকম বিভিন্ন গভীর 888sport apkধর্মী, রোমাঞ্চকর, অভিযানপূর্ণ একাধিক বিশ্বখ্যাত আধুনিক তথ্যপূর্ণ গ্রন্থ পড়ে, বছরে একটিমাত্র ঘনাদার গল্প লিখতেন তিনি। কতখানি সত্যতা দায়বদ্ধতা যে ঘনাদার স্রষ্টার ছিল, এই একটি তথ্য থেকেই বোঝা যায়। সেজন্যেই আমরা দেখি ঘনাদার গল্পের উপস্থাপনে যেসব তথ্য, তত্ত্ব বা বিবরণ রয়েছে তা একেবারে 888sport apkসম্মত, নির্ভেজাল ও চমকে দেওয়ার মতো জ্ঞানগর্ভ; যদিও অত্যন্ত সহজ সাবলীলভাবে পরিবেশিত। তাই কেবল সাধারণ পাঠক কেন, অসাধারণ পাঠকও জ্ঞানের গভীরে ডুব দিয়ে উঠে গল্পশেষে বুঝতে পারতেন ঘনাদা সত্য, কিন্তু গল্পটা গুল্প। 

বাংলার মজলিশি 888sport live footballের এরকম কয়েকটি বরেণ্য নাম ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের ‘ডমরু’, সৈয়দ মুজতবা আলির ‘চাচা’, পরশুরামের ‘কেদার চাটুজ্যে’, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বরদা’, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘টেনিদা’, রূপদর্শীর ‘ব্রজদা’, সাধারণ জ্ঞানের দিক থেকে সত্যজিৎ রায়ের ‘ফেলুদা’। কিন্তু ঘনাদা একমেবাদ্বিতীয়ম্। ঘনাদা স্রষ্টার ভাষায়, ‘সায়েন্স ফিকশান লিখতাম। মনে হল 888sport apkভিত্তিক এসব গল্প তো বানিয়ে লিখি, এমন একটা চরিত্র হোক না যে বানিয়ে বানিয়ে বলে। তারপর সেই চরিত্র (ঘনাদা) নিয়ে প্রথম গল্প দেব 888sport live football কুটিরের ছোটদের পূজাবার্ষিকীতে বেরনোর পর আর থামবার উপায় নেই। পাঠকও ঘনাদা চায়, সম্পাদকও।’ আসলে সম্পাদক সুধীরচন্দ্র সরকারের অনুরোধে ‘ঘনাদা’ শুরু করে সেটা এমন জনপ্রিয় হতে থাকে যে ছোটদের জগৎ ছাড়িয়ে বড়দের জগতে সে স্থায়ী আসন পেতে থাকে। বছরে একটা ঘনাদার গল্প তাঁকে লিখতেই হতো। ১৩৫২ বঙ্গাব্দের (১৯৪৫) দেব 888sport live football কুটিরের পূজাবার্ষিকী আলপনাতে প্রথম ঘনাদার গল্প ‘মশা’ প্রকাশিত হয়। কিশোর-কিশোরীদের জন্য লেখা হলেও প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে সব বয়সের পাঠকদের মধ্যে সাড়া পড়ে যায়। একটা সামান্য জলবিন্দুর ওপর যেমন মহাকাশ প্রতিবিম্বিত হয়, তেমনি বিন্দুতে সিন্ধুর মতোই ঘনাদার গল্পগুলো পরপর এসেছে কত সামান্য নামে – ‘মশা’, ‘পোকা কাঁচ’, ‘মাছ’, ‘টুপি’, ‘ছড়ি’, ‘লাট্টু’, ‘ঘড়ি’, ‘কুটো’, ‘সুতো’ – এরকম। কিন্তু এই সামান্যনামা গল্পগুলোর মধ্যেই আছেকোনো ভয়ঙ্কর বুদ্ধিমান ও শক্তিধর অপরাধীর হাত থেকে পৃথিবীর মানুষকে বাঁচানোর রোমাঞ্চকর কাহিনি। 

‘নুড়ি’ ঘনাদা সিরিজের তৃতীয় প্রকাশিত গল্প (ঘনাদার গল্প, প্রথম গ্রন্থ প্রকাশ ১৩৬৩ বং)। যদিও এই একবারই আড্ডায় মেসের বোর্ডারদের ঘনাদা ‘তুই’ সম্বোধন করেছেন। এখানে ঘনাদার কৃতিত্বস্থল ‘নিউ হেরাইডিজ্’। নিউ হেরাইডিজ্ হলো নিউজিল্যান্ডের ঠিক উত্তরে অস্ট্রেলিয়ার উত্তর-পূর্ব কোণে কয়েকটি ছোট্ট দ্বীপের জটলা। পৃথিবীর পঞ্চাশ মাইল ওপর থেকে দেখলে মনে হবে যে সমুদ্রের ওপর কটা পাথরকুচি ফাঁক ফাঁক করে সাজিয়ে ইংরেজি ওয়াই অক্ষরের লেখা। এই ওয়াই-এর তিনটে হাতা যেখানে এসে মিশেছে সেখানকার ‘এফাটা’ দ্বীপটাই হলো সমস্ত দ্বীপপুঞ্জের রাজধানী। লেখক খেলাচ্ছলে বলেছেন, যেখানে ২০ ডিগ্রি অক্ষরেখা ও ১৭০ ডিগ্রি দ্রাঘিমা কাটাকুটি করেছে, সেখানেই অ্যানিওয়া দ্বীপ। 

কিন্তু এমন গোটা দুনিয়া টহলদারি করা ঘনাদা মেসের ‘বিনি পয়সার বোর্ডার’! যিনি একটা বড় নারকুলে পোকার আতঙ্কে রাতদুপুরে ভয় পান, তিনিই পৃথিবীর শস্যভাণ্ডারের আতঙ্ক আকাশ কালো করা বিশেষ এক ধরনের পঙ্গপালকে সূক্ষ্ম বৈজ্ঞানিক বুদ্ধিতে নির্মূল করেন ঘরে বসে, আর পৃথিবী বাঁচে আসন্ন দুর্ভিক্ষ থেকে। আমরা যেন কোথা থেকে কোথায় এসে পড়ে ভাবতে থাকি পরম বিশ্বাসে যে, এই সুপারস্টার ঘনাদাকে ভয় পাওয়া বেশি কোথাকার কোন বোকা? 

বোধকরি সেই কারণেই ঘনাদাকে মেসের বোর্ডার সুবিনয় দেখেছে কখনো খাঁচার ভেতরে থাকা সিংহের মতো, যে মাঝে মাঝে দুর্বল দু-পেয়ে মানুষগুলোকে চারপাশে দেখে ক্লান্তিতে হাই তোলে। তাই কোনো একটা সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন শুনে ঘনাদার অভিব্যক্তি এমন যেন তেনজিং নোরগেকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, কে প্রথম এভারেস্টে উঠেছে, অথবা আইনস্টাইনকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, তিনি যোগ-বিয়োগ জানেন কি না। 

বিশ্বের খ্যাতিমান মানুষেরা যেমন ঘনাদার বন্ধু, তেমনি তাঁর শত্রুরা অর্থক্ষমতায় বিপুল শক্তিমান। এমনকি পেশিশক্তিতেও। কিন্তু কোথাও ঘনাদা একবারের জন্যও প্রকাশ্যে মারপিট, তথা পেশিশক্তি প্রদর্শন বা রক্তপাতের ধারেকাছেও যাননি। তাঁর শত্রুরা তো ক্বচিৎ-কদাচিৎ মারা গেছে। যারা মারা গেছে তারা এমন ভয়ংকর অপরাধী যে তাদের সংশোধনের কোনো সুযোগ ছিল না, তাই মৃত্যুই তাদের শাস্তি। বাকি তো সব ডট্ ডট্ ডট্ ফুলস্টপেই ঘনাদা সেরেছেন। মাত্র একজন অপরাধী বেনিটোই প্রথমবার ‘দাঁত’ গল্পে ও দ্বিতীয়বার ‘সুতো’ গল্পে ফিরে এসেছে। এই ‘সুতো’ গল্পের ক্লাইমেক্সে ঘনাদা বেনিটোর কাছে প্রথমবার জুজুৎসুর প্যাঁচে ও দ্বিতীয়বার জাপানি কুস্তি সুমোর পয়জারে পরপর দুবার ধরাশায়ী। বেনিটোর হাসি আর থামতেই চায় না; কিন্তু মাঝপথে হঠাৎই হাসি বন্ধ হয়ে গেল। সে তখন মাটিতে পড়ে গোঙাচ্ছে। ঘনাদা শুধু বললেন – ‘সবই শিখেছ, শুধু এই বাংলা কাঁচিটাই শেখোনি।’ 

ঘনাদা এমন হবেন না-ই বা কেন? তাঁর পূর্বপুরুষ কে ছিলেন তা দেখতে হবে তো! সে-কথা জানতে হলে ‘সূর্য কাঁদলে সোনা’ পড়তে হবে। পেরুর অত্যন্ত উন্নত প্রাচীন ইনকা সভ্যতাকে নৃশংস নির্মম বিশ্বাসঘাতকতা আর লুটতরাজের মধ্য দিয়ে যারা ধ্বংস করেছিল, সেই দস্যু স্পেনীয়দের একক প্রচেষ্টায় ধ্বংস করে ইনকা রাজকুমারীকে (কয়া) উদ্ধার করে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছিলেন যিনি, সেই গানাদোরই উত্তরপুরুষ ঘনাদা। ঘনাদা তো একটা এনসাইক্লোপিডিয়া। ‘ইউস্পাঞ্জিয়া অকসিনালিস মলিসিমা’ নামে সাগরতলের বনেদি জাতের দামি স্পঞ্জ ‘কাইজার উইলোহেল্মষ্ট্রাস’ নামে জার্মানির রাস্তা, ইনকাদের সুতোর ভাষায় লেখা লুকানো গুপ্তধনের সাংকেতিক চিহ্ন ‘কিপু’, ‘ব্রেজিলের মত্তো গ্রসসোর” জঙ্গলে ‘কিং কাজু’ থাকে কি না, এমন কত কথা তিনি অক্লেশে আমাদের জানান। বুঝিয়ে দেন ভেন্টিলোকুইজমের কেরামতিও। 

কলকাতার ৭২ নম্বর বনমালী নস্কর লেনের মেসের সম্মাননীয় এবং শ্রদ্ধেয় বোর্ডার ঘনশ্যাম দাস বৈঠকখানা ঘরে তাঁর আরামকেদারায় বসে পৃথিবীর অসাধারণ সব সমস্যা নিয়ে যতবারই আলাস্কা থেকে আমাজন অথবা পেরু থেকে পামির – এমন সারা দুনিয়ায় টহলদারি করে বেড়িয়েছেন, আমরাও অদম্য উৎসাহে বারংবার তাঁর সঙ্গী হয়েছি। মজলিশি তথা বৈঠকি বাঙালি আমরা, আমাদের নতুনত্বহীন তেলে-জলে বাঁচা মধ্যবিত্ত মন যেন ঘনাদার মধ্যেই খুঁজে পায় তাঁর ইচ্ছাপূরণকারী হিরোকে, সুপারস্টারকে। বাস্তব জীবনের অপূর্ণ কামনা-বাসনা যেন কল্প888sport apk, রহস্য আর অ্যাডভেঞ্চারে ঘনাদাকে অবলম্বন করে জেগে উঠেছে। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের টেনিদার ভাষায় বোঝা যায়, বাংলার ‘দাদা’ 888sport live footballের (টেনিদা, ফেলুদা, শঙ্কু, ডমরু, কেদার চাটুজ্যে, ব্রজদা, বরদা ইত্যাদির) মধ্যে ঘনাদার কৌলীন্য কোথায়। টেনিদার 888sport apk download apk latest versionবনত মন্তব্য – ‘প্রেমেন মিত্তিরের ঘনাদা। কী যে ব্যক্তিত্ব। তার পায়ের ধূলো একটু মাথায় নিতে পারলে বর্তে যেতুম রে’ (পটলডাঙার টেনিদা)। আর কেউ বা কোনো দাদা ঘনাদার আসন টলাতে পারবে কি না ঘনাদার, ‘দাদা’ গল্পেই তার উত্তর আছে। ঘনাদার ফাঁকা ঘর দখলকারী সবজান্তা দাদা ঘনাদার মুখে ‘বীজ আগে না গাছ আগে’ এই প্রশ্ন শুনে নির্বাক নিরুত্তর হয়ে ঘনাদার পায়ের ধুলো নিয়ে ঘর ছেড়েছিলেন। 

সরল, অনাড়ম্বর, অন্তর্মুখী অথচ ভীষণ অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয়, অনিকেত আর দিকচিহ্নহীন জীবনসাগরে ছুটন্ত নৌকার মতো প্রেমেন্দ্র মিত্রের জীবনদর্শনই যেন 888sport live footballের পাতা থেকে লাফ দিয়ে চেয়ে অর্ধচেতনে অথবা অবচেতনে আমাদের মনে জায়গা করে নিয়েছে ঘনাদার মধ্য দিয়ে। তাঁর লেখা ‘মান্ধাতার টোপ ও ঘনাদা’ কিংবা মৃত্যুর (৩.৫.১৯৮৮) আগে লেখা ‘ঘনাদা ও চিংড়ি বৃত্তান্ত’ অসাধারণ। শেষদিন পর্যন্ত কোথাও ঘনাদার গল্প একটুও টাল খায়নি এবং ঘনাদা যে দেশ-বিদেশেও জনপ্রিয় হয়েছিল তা তিনি জানতে পেরেছিলেন আমেরিকা 888sport slot gameের সময়। সেখানকার বাঙালি 888sport apkীরা তাঁকে প্রণাম করে জানিয়েছিলেন, ঘনাদা পড়েই তাঁরা অনেকে 888sport apkী হওয়ার প্রেরণা পেয়েছেন। 

তথ্যসূত্র

১.        দেশ, প্রেমেন্দ্র মিত্র 888sport app download for android 888sport free bet, ৪ঠা জুন ১৯৮৮। 

২.       কিশোর জ্ঞান 888sport apk, বিশেষ ঘনাদা 888sport free bet, জুন ১৯৮৬।

৩.       নানা রঙের বোনা, প্রেমেন্দ্র মিত্র।

৪.       ঘনাদার গল্প, ইন্ডিয়ান এসোসিয়েটেড পাবলিশিং কোম্পানি।

৫.       অদ্বিতীয় ঘনাদা, প্রেমেন্দ্র মিত্র।

৬.       ‘এক অনন্য সত্তার জন্য’, প্রেমেন্দ্র মিত্র, 888sport live football ও সংস্কৃতি, কার্তিক-পৌষ 888sport free bet, ১৯৩৮ বং।

ছবি : ইন্টারনেট