প্রেম ও মুক্তির অন্বেষা

এদেশের অবহেলিত জনগোষ্ঠী বেদে সম্প্রদায়কে নিয়ে লেখক-গবেষক রঞ্জনা বিশ্বাসের 888sport alternative link মেম্ রি। বাংলা 888sport alternative linkের চিরাচরিত ধারার বাইরে তাঁর বিষয়বস্তু স্বভাবতই আগ্রহ সৃষ্টি করে।

বেদে, যারা মান্টো নামেও পরিচিত, 888sport appsের একটি যাযাবর ইন্দো-আর্য জনগোষ্ঠী। বেদেরা ঐতিহ্যগতভাবে নদীতে বাস করে, 888sport slot game করে এবং জীবিকা নির্বাহ করে, তাই তাদের ‘জল-যাযাবর’ও বলা হয়ে থাকে। তারা ইউরোপীয় যাযাবরদের অনুরূপ। 888sport appsে প্রায় আট লাখ বেদে আছে। বেদেরা একটি প্রান্তিক গোষ্ঠী। তাদের প্রায় ৯৮ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে।

রঞ্জনা বিশ্বাস দীর্ঘদিন ধরে বেদে জনগোষ্ঠীকে নিয়ে কাজ করছেন। মেম্ রি  888sport alternative linkে তিনি বেদে গোষ্ঠীর জীবন ও জীবনবোধ তুলে আনার চেষ্টা করেছেন। মেম্রি শব্দটি দিয়ে মা, মেয়ে, এমনকি শাশুড়ি বোঝানো হয়। অর্থাৎ স্ত্রী-বাচক শব্দ এটি। এই গোষ্ঠীর প্রধান 888sport promo code চরিত্র কুশনি। সে তাদের সমাজের ভবিষ্যৎ সর্দারনি।

বেদেদের সমাজে একটি নিয়ম আছে। নৌকায় নৌকায় তাদের জীবন। ডাঙার যতটুকু সময় সে কেবল গাওয়ালের জন্য, অর্থাৎ কামাই করার জন্য। সেটা করে বেদেনি বা বেদে মেয়েরা। পিতৃতান্ত্রিক হলেও এই সমাজে মেয়েদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। বেদে সমাজে মূল উপার্জক 888sport promo code। প্রাচীন এই জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্য-বিশ্বাস-রীতিনীতি এবং বৃহত্তর জনসমাজের জীবনযাত্রা – এই দুইয়ের মধ্যে পড়ে একজন 888sport promo code কীভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে স্বাধীনতার অন্বেষণ করে তার আখ্যান মেম্ রি। 

কিছু মানুষ আছে যারা বরাবরই পরিবর্তনে বিশ্বাসী। গৎবাঁধা জীবন তাদের পছন্দ নয়, তাই তারা বিদ্রোহী। তেমনি এক বেদেনি কুশনি।

বেদে-জীবনের চিরাচরিত রীতিনীতি, আচার-বিশ্বাসে বিষণ্ন হয়ে ওঠে সে। কুশনি জানত, তার কোনো ঘর হবে না। গৃহস্থের মতো একটা ঘরের স্বপ্ন দেখা তার অপরাধ। কিন্তু বেদে সমাজের মতো এমন জীবন কাঙ্ক্ষিত নয় কুশনির। সে পরিবর্তন চায়।

কুশনি শিশুকাল থেকেই ডানপিটে ধরনের। সে যখন ছোট, তখন তার বাবাকে চুরির অপবাদ দিয়ে থানায় ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। সে-সময় তাদের দলের সরদার নানা চেষ্টা করেও কুশনির বাবাকে থানা থেকে ছাড়াতে পারেনি। কুশনির আজো বাপের জন্য মন কেমন করে। তার বাপ ছাড়া পেল কি না জানে না সে। ছাড়া পেলেই বা কী? কোথায় খুঁজে পাবে সে কুশনিকে? বেদেরা যে এক ঘাটের জল দুবার খায় না। কোন ঘাটে খুঁজবে তার বাপ তাকে। তাই কুশনি ভাবে, যদি তার নিজের একটা ঠিকানা হতো। একটা খোগছিয়ারি (একখণ্ড জমি) থাকত তাহলে বাপ তার এখানে ছুটে আসতে পারত।

কুশনিরা একদিন ইছামতি নদীর ঘাটে তাদের নৌকা ভেড়ায়। ওই বেদেদের অন্যতম চরিত্র সে। তাদের ডেরায় বেশি মাছ শিকারের আশায় একদিন শোল মাছ রেখে আসার সময় ডাঙার মালেক মোল্লার শ্যালক রহমালীর সঙ্গে কুশনির প্রথম দেখা হয়। তাকে প্রথম দেখাতেই রহমালীর ভালো লাগে। কুশনিও বেণি নাড়িয়ে রহমালীর সামনে এসে দাঁড়ায়। অকারণে হিল হিল করে  হাসে। বলে – ‘ইস বাবু – ছেমলো তো দিলি আর কিছু নি দেগলে পাও?’ রহমালী তার মুখের দিকে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে চেয়ে থাকে আর কুশনি হাসতে থাকে। সে আবার বলে ‘হি বাবু তু কেমন বিহুচ্ছে বাবু? কুশনি জানতে চায় কেমন আছে সে। রহমালী কেবল তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। সেই থেকে তাদের মধ্যে প্রেম জাগ্রত হয়। তাদের মনে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দানা বাঁধে। সে স্বপ্ন আস্তে আস্তে ডালপালা মেলতে থাকে। তারা ক্রমশ একে অন্যকে দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে।

 একদিন কুশনিকে দেখার ছলে সকালে উঠে মুখ ধুতে রহমালী নদীর ঘাটে যায়। রহমালী যে-ঘাটে যায়, সে-ঘাট থেকে বেদের বহর দেখা যায় না। এর পরও নদীর ঘোলা জলে কুশনির মুখ কল্পনা করা মাত্র সেখানে কুশনিকে দেখতে পায় সে। এভাবে আস্তে আস্তে কুশনি বাইদ্যার মাঝিপাড়ার গল্পের রসালো এক গাছ হয়ে ওঠে।

কুশনি নিজের সমাজের আইন ভেঙে তাকে পছন্দ করা বেদে নলুয়াকে ছেড়ে রহমালীকে তার মন সঁপে দেয়। একদা নদীর ঘাটে যেখানে তাদের নৌকাগুলি বাঁধা এর পাশেই শতবর্ষী বটগাছের শরীরে চোখ বুলিয়ে নিয়ে ব্যস্ততার সুরে কুশনি এক লোককে দেখে ডাকে – ‘ই বাবু  – জলদি খেউল, জলদি খেউল।’ রহমালী নামে সেই লোক মুখ তুলে ডানদিকে তাকায়। চকচক করে ওঠে তার চোখ। রহমালী কুশনির কথা বুঝতে পারে না। সে হাতের ইশারায় কাছে ডাকে। কুশনির গলায় পরিষ্কার আতঙ্ক। রহমালী এবার সত্যি সত্যি উঠে আসে। রহমালীকে সাপে কামড়াবে এ-ভয় কুশনিকে যেন ব্যাকুল করে তোলে। রহমালী হাসে – কুশনির থুতনি দু-হাতে নিজের দিকে তুলে চোখে চোখ রাখে। বলে – ‘বাইদ্যানির সাপের ভয়?’ কুশনি লজ্জা পায়। এভাবে তারা প্রণয়সূত্রে বাঁধা পড়ে।

বেদে সমাজে একটা নিয়ম আছে। কেউ বেদেনিদের চুলের খোঁপা খুলে দিলেই সে তার রক্ষিতা হয়ে যায়। বেদে গোত্রের নলুয়া কুশনিকে রহমালীর সঙ্গে দেখেই তার সঙ্গীদের নিয়ে সেখানে হাজির হয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই কুশনির খোঁপায় হাত রাখে নলুয়া। হাসতে হাসতে খুলে দেয় খোঁপা। পিঠময় কালো চুলগুলি ছড়িয়ে পড়ে মেঘের অন্ধকার নিয়ে। তার প্রতি  কুশনির মন বিষিয়ে ওঠে। এর পরও তার মন পড়ে থাকে রহমালীর কাছে।

কুশনির এ ‘বেহায়াপনা’ তার মাসহ কেউ মেনে নিতে পারে না। একদিন কুশনির মা তাদের নৌকারই এক বাইদ্যানি ডুকনিকে ডেকে জানিয়ে দেয়, যেমন করে হোক কুশনিকে এ-পথ থেকে সরিয়ে আনতে হবে। প্রয়োজনে বান মারতে হবে। এতকিছুর পরও কুশনির মনে জায়গা জুড়ে থাকে কেবলি রহমালী।

বেদেদের এক ঘাটে বেশিদিন নৌকা ভিড়িয়ে রাখার নিয়ম নেই। তাই বাইদ্যা সমাজের এক বাইদ্যা খলিলের এ ঘাটেই মৃত্যু হওয়ায় তাকে সেখানকার শ্মশানখোলার পরিত্যক্ত জায়গায় দাফন করে সেদিন রাতেই বিষু সরদারের বাবা প্রবীণ মান্তা ঝন্টুমালের নির্দেশে সে-ঘাট ত্যাগ করে নতুন ঘাট কাচিকাটার সন্ধানে তারা যাত্রা করে।

এ স্থানান্তর কুশনির ভালো লাগে না। ভবিষ্যতের কথা ভেবে সে তলে তলে কিছু টাকা সঞ্চয় করে। প্রায় হাজারখানেক টাকা। কুশনি ভাবে, এই সঞ্চয় থেকে ডাঙ্গায় সে এক টুকরা জমি কিনবে। সেখানেই সংসার গড়বে। মল্লারী নামে এক  বেদেনি ভবিষ্যৎ বিপদ আঁচ করতে পেরে কুশনির মা ডুকনিকে বিষয়টা বলে দেয়। কুশনির জমার ওপর মন পড়েছে জেনে কুশনির মার বুকটা ধড়াস করে ওঠে।

এরই মধ্যে একদিন ডাঙার তালুকদারবাড়ির রাঙা বউটার মুখ মনে পড়ে কুশনির। সে পালিয়ে এসেছিল প্রেমিকের হাত ধরে। এটা মনে পড়তেই হঠাৎ কুশনির মনের মধ্যে রহমালীর মুখটা কেমন কাঁটার মতো বিঁধতে লাগল। রাঙা বউটা তাকে বলেছে – এখন তার আড়াই ভরি সোনা আছে। বাজারে সোনার যে দাম, তাতে সে কমসে কম পাঁচ বিঘা জমি কিনতে পারে। কুশনি স্বপ্ন দেখে, একদিন সে রাঙা বউয়ের মতো সোনার মালিক হবে। কিন্তু পরক্ষণেই নলুয়ার মুখটা মনে পড়ে তার। তখনই তার মন থেকে সুখস্বপ্ন হারিয়ে যায়।

একদিন কুশনি হঠাৎ রণরূপ ধারণ করে। দলের সরদার বিষু যেদিন তাকে খুন করতে উদ্যোগী হয়, সেদিন সেই মুহূর্তে কুশনি প্রমাদ গোনে। সে মাথার খোঁপা খুলে দেয়। ছুটে গিয়ে নৌকায় ওঠে। তার পিছু পিছু আসে সবাই। কুশনি নৌকা ছেড়ে দেয়। বিষু মান্তার গর্জন শোনা যায় – ‘ধর ওকে। ধর।’ উন্মত্ত বিষু মান্তার দিকে তাকিয়ে কুশনি হাসতে হাসতে লগিতে ভর দিয়ে উজান ঠেলে নৌকা বাইতে শুরু করে। কুশনি জানে – বেদেদের একটি নৌকাও উজান ঠেলে কুশনিকে ধরতে আসবে না। আর এভাবে দলছুট কুশনির মুক্তি ঘটে।

মেম্ রি ছাড়াও বেদে জনগোষ্ঠীর ওপর রঞ্জনা বিশ্বাসের আরো কয়েকটি বই রয়েছে। সেগুলি হলো 888sport appsের বেদে জনগোষ্ঠী, বেদে জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা, 888sport appsের বেদে জনগোষ্ঠীর নৃতাত্ত্বিক পরিচয় ও বেদে জনগোষ্ঠীর ভাষা : উৎস ও তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য।

রঞ্জনা বিশ্বাস বেদে জনগোষ্ঠী ও 888sport appsের লোকঐতিহ্য নিয়ে গবেষণা করে বেশ খ্যাতি অর্জন করেছেন। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ ও লোক888sport live football তাঁর গবেষণার অন্যতম প্রধান বিষয়। তাঁর ভাণ্ডারে জমা হয়েছে একাধিক 888sport live football 888sport app download bd।

বেঙ্গল পাবলিকেশন্ স থেকে প্রকাশিত বইটিতে বেদে সমাজের বিস্তৃত পরিসর সম্বন্ধে জানার সুযোগ রয়েছে।