‘ফা ইবার অপটিকস’ বিষয়টি কী তা ভালোভাবে না জানলেও আমাদের দেশের মানুষ ‘ফাইবার অপটিকস’ কথাটির সঙ্গে খুব ভালোভাবে পরিচিত। পৃথিবীর প্রায় সব দেশই ফাইবার অপটিক ক্যাবল দিয়ে আন্তর্জাতিক তথ্যপ্রবাহের মূলধারার সঙ্গে যোগাযোগ করে ফেলেছে, সাবমেরিন ক্যাবল ব্যবহার করে আমরা এখনো সেই যোগাযোগটি করতে পারিনি। যখন বিষয়টি খুব সহজ ছিল তখন সরকারি নির্বুদ্ধিতার কারণে সেটি নেওয়া হয়নি। গত এক দশক থেকে দেশের মানুষের চাপে সরকার ‘নিচ্ছি’ ‘নেবো’ করছে, শুনে শুনে আমরা কখনো ক্লান্ত কখনো হতাশ হয়ে যাই। সামনের বছর হয়তো এই যোগাযোগটি সত্যি হয়ে যাবে, কিন্তু আমরা সবাই ঘরপোড়া গরু, যতক্ষণ পর্যন্ত সত্যি ব্যাপারটি না ঘটছে ততক্ষণ আমরা নিশ্চিত হতে পারছি না। আমাদের দেশের ইন্টারনেট-যোগাযোগ হয় ভিস্যাট দিয়ে। সারাদেশে হয়তো শখানেক ভিস্যাট আছে – অথচ একটি অপটিক্যাল ফাইবার দিয়েই লাখখানেক ভিস্যাটের সমান তথ্যবিনিময় করা যেতে পারে, তাই আমরা সবাই যে ফাইবার অপটিকস নিয়ে একটু অস্থির হবো তাতে অবাক হবার কী আছে?
ফাইবার শব্দটির অর্থ তন্তু এবং অপটিকস হচ্ছে আলোসংক্রান্ত 888sport apk, কাজেই ফাইবার অপটিকস কথাটি দিয়ে কোনো সূক্ষ্ম তন্তু দিয়ে আলো আনা-নেওয়ার 888sport apkকে বোঝানোর কথা। তবে সাধারণ অর্থে আমরা ফাইবার অপটিকস বলতে কাচের সূক্ষ্ম তন্তু দিয়ে তথ্য পাঠানোর প্রযুক্তিটিকে বুঝিয়ে থাকি। তথ্য আদান-প্রদানের 888sport app পদ্ধতি থেকে এটি ভিন্ন, কারণ এখানে সেই কাজটি করার জন্যে আলো ব্যবহার করা হয়।
আলো ব্যবহার করে তথ্য পাঠানো খুব অস্বাভাবিক কিছু নয়। মাত্র কিছুদিন আগে এক রাতের ট্রেনে আমি একজন স্মাগলারকে দেখেছি। সে হাতের টর্চলাইট জ্বালিয়ে এবং নিভিয়ে তার সাঙ্গপাঙ্গদের একটি সংবাদ দিল! ফাইবার অপটিকস ব্যবহার করে তথ্য পাঠানোর মূল বিষয়টি অনেকটা সে-রকম। আলো জ্বালিয়ে এবং নিভিয়ে তথ্য পাঠানো। তবে সেটি করা হয় অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে। স্মাগলার যেখানে তার আলোটি সেকেন্ডে একবার জ্বালাতে বা নেভাতে পারে ফাইবার অপটিকসের লেজার রশ্মি সেটি করে সেকেন্ডে হাজার কোটি বার থেকে বেশি (দশ বিলিয়ন)! স্মাগলারের টর্চলাইটের আলো যায় সোজা, সামনে দেয়াল থাকলে সেই আলো আটকে যায়, দেয়াল ভেদ করে যেতে পারে না। ফাইবার অপটিকসে সেটি যায় সূক্ষ্ম কাচের তন্তু দিয়ে, সেই কাচের তন্তু দেয়াল ঘর-বাড়ি এমনকি সমুদ্র-মহাসমুদ্র পর্যন্ত পাড়ি দিতে পারে।
তথ্য পাঠানোর এই প্রক্রিয়ায় যে-সূক্ষ্ম কাচের তন্তু ব্যবহার করা হয় তাকে বলে অপটিক্যাল ফাইবার। যে-888sport apkী প্রথম অনুমান করেছিলেন তথ্য পাঠানোর জন্যে কাচের তন্তু বা অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহার করা যেতে পারে, নিঃসন্দেহে তিনি ছিলেন একজন সত্যিকারের ভবিষ্যৎদ্রষ্টা। জানালায় বা ছবির ফ্রেমে কাচ দেখে আমরা ধারণা করছি কাচ একটি স্বচ্ছ জিনিস, সেটি স্বচ্ছ তার কারণ কাচটি পাতলা। আমরা যদি কাচের একটি দণ্ড নিই তাহলে আবিষ্কার করব কাচ আসলে তেমন স্বচ্ছ নয়। সাধারণ কাচের ভেতর দিয়ে আলো পাঠালে মাত্র বিশ মিটার যেতে যেতেই তার শতকরা নিরানব্বই ভাগ শোষিত হয়ে যায়। এরকম একটি জিনিস দিয়ে একদিন শত শত কিলোমিটার দূরে তথ্য পাঠানো যেতে পারে বিষয়টি আগে থেকে অনুমান করতে পারেন শুধু সত্যিকারের একজন ভবিষ্যৎদ্রষ্টা।
তথ্য পাঠানোর জন্যে কাচের স্বচ্ছতা বাড়ানোর কাজে 888sport apkী আর প্রযুক্তিবিদরা কাজ শুরু করে একটা অভাবনীয় কাজ করে ফেললেন। তাঁরা কাচকে এমনই স্বচ্ছ করে ফেললেন যে, আলোর শতকরা নিরানব্বই ভাগ শোষিত হওয়ার জন্যে বিশ মিটার নয় এখন যেতে হয় পঞ্চাশ কিলোমিটার। মানুষ কোনো কিছুকে একগুণ বা দ্বিগুণ উন্নত করতে পারলেই খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। সেই হিসাবে এ-উন্নতি হচ্ছে আড়াই হাজার গুণ! পৃথিবীর ইতিহাসে এরকম উদাহরণ খুব বেশি নেই।
কাচকে স্বচ্ছ করার পর তার ভেতর দিয়ে আলো পাঠানোর আগে আরো একটি প্রশ্ন এসে যায় সেটি হচ্ছে এই স্বচ্ছ কাচের ভেতর আলো আটকা থাকবে কেন? আলো তো সরলরেখায় যায়, কাচের তন্তু একটু বাঁকা হলেই তো আলো কাচের দেয়ালে এসে আঘাত করে বের হয়ে যাবে। আলোকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিতে হলে তাকে তো কাচের তন্তুর ভেতরে আটকে রাখতে হবে, সেটি করা হবে কেমন করে?
আসলে এ-ব্যাপারটি খুব কঠিন নয়, পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন নামে একটি প্রক্রিয়া এ-কাজটিকে খুব সহজ করে দিয়েছে। বিষয়টি ১নং ছবিতে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এক মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে যাবার সময় আলো বেঁকে যায়। ১নং ছবির প্রথম অংশে সেটি দেখানো হয়েছে কাচ এবং বাতাসের জন্যে। খানিকটা কাচ ভেদ করে বাতাসে চলে গেছে এবং খানিকটা প্রতিফলিত হয়ে কাচের ভেতরেই ফিরে এসেছে। এখন কোনো ভাবে যদি আলোকরশ্মিটি আরো বাঁকা করে পাঠানো যায় তাহলে দেখা যাবে একটি নির্দিষ্ট কোণ থেকে বেশি হলে কোনো আলোই আর কাচ ভেদ করে বাতাসে যেতে পারছে না, পুরোটিই কাচের ভেতরে ফিরে আসছে। ঘন মাধ্যম থেকে হালকা মাধ্যমে যাবার সময় আলো যখন বের হতে না পেরে পুরোটিই প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসে সেটিকে বলে পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন। অপটিক্যাল ফাইবারে আলো আটকা পড়ে থাকে এ-কারণে, অস্বাভাবিক স্বচ্ছ হওয়ার পরেও আলো বের হতে পারে না।
অপটিক্যাল ফাইবারে আলোর পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনকে ব্যবহার করার জন্যে সেটিকে খুব সূক্ষ্মভাবে তৈরি করা হয়। অনেকেই হয়তো জানে না যে, অপটিক্যাল ফাইবার আসলে চুল থেকেও সূক্ষ্ম! এত সূক্ষ্ম কাচ অত্যন্ত ভঙ্গুর বলে তার উপরে প্লাস্টিকের আবরণ থাকে এবং সে-কারণে সেটিকে হয়তো সুতোর মতো মোটা দেখায়। তবে সেটিকে ব্যবহার করার জন্যে তার উপরে আরো নানারকম আবরণ দেওয়া হয় এবং শেষ পর্যন্ত সেটি টেবিল ল্যাম্পের ইলেকট্রিক তারের মতো আকার নেয়। মাটির নিচ দিয়ে বা সমুদ্রের নিচ দিয়ে যে-অপটিক্যাল ফাইবার নেওয়া হয় সেগুলো অবশ্য রীতিমতো রাক্ষুসে ক্যাবল। তার ভেতরে-বাইরে নানা ধরনের আবরণ থাকে, পুরো ক্যাবলটিকে শক্ত করার জন্যে ভেতরে শক্ত স্টিলের পাত পর্যন্ত ঢুকিয়ে রাখা হয়।
ফাইবার অপটিকসে যে-কাচের তন্তু ব্যবহার করা হয় তার দুটি অংশ। ভেতরের অংশটি কোর বা কেন্দ্র এবং বাইরের অংশটি ক্ল্যাড বা বহিরাচ্ছাদন। আলো যেন পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন হয়ে অপটিক্যাল ফাইবারে আটকা থাকতে পারে সে-জন্যে সবসময়েই ক্ল্যাড থেকে কোরের প্রতিসরাংক বেশি হয়।
তথ্যবিনিময় করার জন্যে ফাইবার অপটিকস কমিউনিকেশন্সে দুরকম ফাইবার ব্যবহার করা হয়। এক ধরনের ফাইবারের কোর হচ্ছে ৫০ মাইক্রন, তার নাম মাল্টিমোড ফাইবার। অন্য আরেক ধরনের ফাইবারের কোর আরো অনেক ছোট, ১০ মাইক্রনের কাছাকাছি, তার নাম সিংগল মোড ফাইবার। কোরের বাইরে ক্ল্যাডের আচ্ছাদন দিয়ে দুধরনের ফাইবারকেই ১২৫ মাইক্রনের কাছাকাছি নিয়ে আসা হয়েছে। ২নং ছবিতে এ-দুধরনের ফাইবারকে দেখানো হয়েছে। মাল্টিমোড ফাইবারে আলোকরশ্মি নানাভাবে যেতে পারে, কিন্তু সিংগল মোড ফাইবারে সেটি যেতে পারে মাত্র একভাবে, ফাইবারগুলোর নামকরণটি হয়েছেও এ-কারণে। যদি দীর্ঘ দূরত্বে যেতে হয় এবং তথ্যবিনিময় করতে হয় অনেক বেশি, তাহলে সবসময়েই সিংগল মোড ফাইবার ব্যবহার করতে হয়। 888sport apps রেলওয়ের ফাইবারগুলো সিংগল মোড। সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে যে-সাবমেরিন ক্যাবল 888sport appsে আসছে সেটিও সিংগল মোড। সিংগল মোডের আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি জটিল, তার খরচও বেশি। যদি ছোটখাট দূরত্বে যেতে হয় তাহলে মাল্টিমোড ফাইবার ব্যবহার করা যায়। আমাদের শাহজালাল 888sport apk ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নেটওয়ার্ক তৈরি করার সময় মাল্টিমোড ফাইবার ব্যবহার করেছি, ক্যাম্পাস ছোট বলে দূরত্ব বেশি নয় সেটি একটি কারণ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বলে অর্থের টানাটানি সেটি আরেকটি কারণ।
এতক্ষণ আমরা শুধু কাচের তন্তু বা অপটিক্যাল ফাইবারের কথা বলেছি, এর ভেতর দিয়ে কী ধরনের আলো পাঠানো হয় সেটি নিয়ে কোনো কথা বলিনি। যেহেতু আলোর কথা বলা হচ্ছে, একটি খুব স্বাভাবিক প্রশ্ন আলোর রংটি কী? লাল নীল হলুদ না-কি অন্য কিছু? মজার ব্যাপার হচ্ছে, এ-প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই, কারণ ফাইবার অপটিক কমিউনিকেশন্সে যে-আলো ব্যবহার করা হয় সেটি দৃশ্যমান আলো নয়, আমরা যেটি চোখেই দেখতে পাই না সেটির আবার রং কীভাবে হবে?
ব্যাপারটি আরেকটু পরিষ্কার করে বলা যায়। আলো আসলে বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ। যে-কোনো তরঙ্গের একটি তরঙ্গ-দৈর্ঘ্য থাকে, কাজেই বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গেরও তরঙ্গ-দৈর্ঘ্য আছে। এ-তরঙ্গ-দৈর্ঘ্য নির্দিষ্ট করা নেই, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র থেকে শুরু করে কয়েকশ কিলোমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এ-বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গের তরঙ্গ-দৈর্ঘ্য যখন ০.৪ থেকে ০.৭ মাইক্রনের ভেতর হয় শুধুমাত্র তখন আমরা সেটি দেখতে পাই, অন্য কখনো দেখতে পাই না। ৩নং ছবিতে বিভিন্ন তরঙ্গ -দৈর্ঘ্যরে জন্যে বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গকে কী নামে ডাকা হয় সেটি দেখানো হয়েছে। দৃশ্যমান আলোর পাশে যে-ইনফ্রারেড আলো রয়েছে সেটি ফাইবার অপটিক কমিউনিকেশন্সে ব্যবহার করা হয়। ইনফ্রারেড আলোর ব্যাপ্তি বেশ বড়, তার পুরোটুকু ব্যবহার করা যায় না, তরঙ্গ-দৈর্ঘ্য ১.৩ থেকে ১.৫ মাইক্রন পর্যন্ত ছোট অংশটিকে ব্যবহার করা হয়।
ফাইবার অপটিকস কমিউনিকেশন্সে ইনফ্রারেড আলোটি দেওয়া হয় লেজার দিয়ে। সত্তরের দশকে লেজার-প্রযুক্তিটি ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে। একদিকে লেজার অন্যদিকে ফাইবার Ñ এ-দুটি প্রযুক্তি একই সঙ্গে গড়ে ওঠে পৃথিবীকে তথ্য-আদান-প্রদানের যে- দরজাটি খুলে দিয়েছে প্রযুক্তির ইতিহাসে সেটি সবসময়ে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। আর সে-খোলা দরজা দিয়ে সম্ভাবনার যে- আলো এসে পড়েছে, পৃথিবীকে সেটি সারাজীবনের জন্যে পালটে দিয়েছে।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.