ফারাবীকে যেমন দেখেছি

মনজুরুল হক

চার দশকের বেশি হয়ে গেল ফারাবী আমাদের মাঝে নেই। বেঁচে থাকলে বয়স হতো ওর পঁয়ষট্টি বছর এবং এই জীবনে আরো অনেক কিছুই হয়তো সে দিয়ে যেতে পারত। আক্ষেপটা আমাদের সেখানেই। ফারাবী আমাদের হানাহানির এই সংসারে এসেছিল দেওয়ার জন্য, নিজের ভাণ্ডারে পাওয়ার হিসাব জমা করার জন্য নয়। মাত্র যখন সে তার প্রতিভার সঞ্চয় উন্মুক্ত করা দানবাক্স আমাদের জন্য খুলে বসেছিল, ঠিক তখনই হঠাৎ করে আমাদের হতবাক করে দিয়ে ওর চলে যাওয়া। হতবাক এজন্যে হতে হয়েছিল যে ওর বেঁচে থাকা ছিল, আমাদের মধ্যে অনেকে যারা জগৎসংসারকে ভারি করে দিয়ে বার্ধক্যের প্রান্তে এসে এখনো জীবনের জাবর কেটে চলেছি, তাঁদের চাইতে অনেক বেশি জরুরি আর প্রয়োজনীয়। মাত্র 888sport cricket BPL rate বছর বয়সে ফারাবী চলে গেলেও এই অল্প সময়ের মধ্যে যেটুকু সে আমাদের জন্য রেখে গেছে তা সম্ভবত মানুষের চিন্তার খোরাক জোগাবে আরো কয়েক প্রজন্ম ধরে। ক্ষণজন্মা মানুষ বোধহয় এমনই হয়। ঝট করে এসে উজ্জ্বল আলোয় চারদিক রাঙিয়ে দিয়ে ঝট করেই এঁদের চলে যাওয়া।

ফারাবীর সঙ্গে প্রথম কবে আমার পরিচয় তা এখন আর মনে নেই। ১৯৬৯ সালে স্কুল শেষ করে 888sport app কলেজে আমাদের প্রবেশ। মনে পড়ে উনসত্তরের আন্দোলনের মুখে পড়ে যাওয়ায় আমাদের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা মাস তিনেক পিছিয়ে গিয়েছিল। ফলে 888sport app কলেজে আমাদের কলেজজীবন শুরু হতে সেপ্টেম্বর মাস এসে যায়। ল্যাবরেটরি স্কুলের অনেকটা কঠোর নিয়মকানুনের জীবন শেষ করে 888sport app কলেজে এসে আমরা যেন হঠাৎ করেই পেয়ে গিয়েছিলাম মুক্ত এক আবহাওয়া। আমরা যাঁরা কলা বিভাগের ছাত্র, আগেই তাঁরা জেনে গিয়েছিলাম, মেধা-তালিকায় স্থান পাওয়া ছাত্রদের মধ্যে কারা আমাদের কলেজে ভর্তি হচ্ছে। ফারাবী যে সেই দলে আছে, সেটা কেন জানি অজান্তেই আমাকে আশ্বস্ত করেছিল, যদিও তখন পর্যন্ত ওর দেখা আমি পাইনি। আমাদের সেই কালে কলা বিভাগে পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়া ছাত্রদের 888sport free bet ছিল 888sport apkের ছাত্রদের চাইতে অন্তত পাঁচগুণ বেশি। তবে তা সত্ত্বেও কলা বিভাগ যেন ছিল অনেকটা বঞ্চিতদের ভিড়ের জায়গা। 888sport apkের স্টার নম্বর পাওয়া ছাত্রদের ভিড়ে কলা বিভাগে প্রথম কুড়িজনের মেধা-তালিকায় জায়গা করে নেওয়া আমরা কয়েকজন যেন ছিলাম নিতান্তই অবহেলার পাত্র। সেই কলা বিভাগে দ্বিতীয় স্থানটি পেয়েছিল ফারাবী এবং শুরু থেকেই সে প্রমাণ করে দিতে পেরেছিল যে, 888sport apk আর কলার ছাত্রদের মধ্যে পরীক্ষায় পাওয়া নম্বরের ভিত্তিতে বিভাজন বাস্তবতার প্রতিফলন কোনো অবস্থাতেই নয়।

সেপ্টেম্বর মাসে ক্লাস শুরু হওয়ার পর থেকেই ফারাবীর সঙ্গে আমার পরিচয় এবং ঘনিষ্ঠতা। এর অল্প কিছুদিন পর ছাত্ররাজনীতির উন্মুক্ত হাওয়া আমাদের আন্দোলিত করতে শুরু করলে আমাদের পরিচয় অল্পদিনেই বন্ধুত্বে রূপ নিয়েছিল এবং আমরা হয়ে উঠেছিলাম ছাত্র ইউনিয়নের নিষ্ঠাবান কর্মী। ফারাবীর লেখালিখিতে হাতেখড়ি অবশ্য স্কুলজীবন থেকেই। মনে পড়ে, পরিচয়ের অল্প কিছুদিনের মধ্যে আমাকে ও বলেছিল, মামার বিয়ের বরযাত্রী নামে একটি কিশোর 888sport alternative link সে লিখেছে। আমার বেলায় সেটা ছিল লেখালেখির দুয়ারে করাঘাত করার সময় মাত্র। ফলে কলেজজীবনের শুরুতে এমন একজন বন্ধু পেয়ে যাওয়ায় নিজেকে আমি ভাগ্যবান মনে করেছিলাম।

ফারাবীর অনেক গুণের মধ্যে অবাক করে দেওয়া দিকটি ছিল ওর নিরহংকার আচরণ। ভালো ছাত্র, গুণী ছাত্র হিসেবে পরিচয়ের বাইরেও ক্ষুরধার বিতার্কিক এবং অসম্ভব পাণ্ডিত্য ওর মধ্যে থেকে গেলেও এসব নিয়ে কোনোদিন বুক চিতিয়ে কোনো কিছু বলা তো দূরের কথা, এমনকি সামান্য দাবিও ওকে কোনোদিন করতে দেখা যায়নি, যেমনটা দেখা গেছে আমাদের অন্য কিছু স্বঘোষিত পণ্ডিতবন্ধুদের বেলায়। জ্ঞানের গভীরতা ওর কতটা ছিল, ওর লেখাই সে-কথা বলে দেয়।

কলেজে ক্লাস শুরু হওয়ার অল্প কিছুদিনের মধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচন এসে গেলে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতারা ফারাবীকে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচনে প্রার্থী হতে বললে ফারাবী খুশি হয়ে রাজি হয়ে যায়, যদিও আমাদের জানা ছিল জাতীয়তাবাদী চেতনার পালে জোর হাওয়া দিয়ে যাওয়ায় নির্বাচনে জেতা ফারাবী কিংবা আমাদের অন্য প্রার্থীদের জন্য সহজ হবে না। তবে আমাদের প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই মেধাবী ছাত্র হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় আমরা ধারণা করেছিলাম সময়ের সেই স্রোতকে আমরা হয়তো কিছুটা হলেও ঠেকিয়ে রাখতে পারব। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আমাদের সেই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায় এবং সাধারণ সম্পাদক পদের নির্বাচনে বর্তমান সাংসদ রবিউল আলম ওবায়দুল মুক্তাদিরের কাছে ফারাবী পরাজিত হয়। তবে নির্বাচনের ফলকে স্বাভাবিকভাবেই ফারাবী নিতে পেরেছিল এবং আমরা আবারো ফিরে গিয়েছিলাম আমাদের 888sport live football-সংস্কৃতিঘেঁষা কর্মকা-ে।

কলেজ সংসদ নির্বাচনের ঠিক পরপর ১৯৭০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এগিয়ে আসার মুখে আমরা 888sport app কলেজের ছাত্র ইউনিয়ন কর্মীরা সেবার ফারাবীর নেতৃত্বে একটি সংকলন প্রকাশের কাজে জড়িত হয়েছিলাম। আমাদের সে-সংকলনের নাম কী হবে, কোন কবি-888sport live footballিকদের কাছে লেখা সংগ্রহের জন্য আমরা ধরনা দেবো এবং সংকলনের প্রচ্ছদই বা কোন 888sport live chatীকে দিয়ে আঁকিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করব – এর সবকিছুতেই ছিল ফারাবীর উৎসাহী সম্পৃক্ততা। সংকলনের নাম ছিল ফারাবীর ঠিক করে দেওয়া। সেই ১৯৭০-এই ফারাবী আসন্ন বিজয়ের জয় কেতনের আঁচ করতে পেরে সেটার নাম রেখেছিল জয়ধ্বনি। সে-সময়ের আলোকে এতটাই জুতসই নাম সেটা ছিল যে, স্বাধীনতার ঠিক পরপর ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসে 888sport apps ছাত্র ইউনিয়ন নিজেদের একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ নিলে সেটারও নাম রাখা হয়েছিল ফারাবীর রাখা সেই নামের অনুকরণে জয়ধ্বনি।

আমাদের 888sport app কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের জয়ধ্বনি নামের সেই সংকলন প্রকাশের সঙ্গে আরো যুক্ত হয়েছিল কলেজে সদ্য বন্ধুত্ব হওয়া হাসান ফেরদৌস এবং আমার ল্যাবরেটরি স্কুলের বন্ধু হায়দার আলী খান। ডিসেম্বর মাসের শেষ দিক থেকেই বিজ্ঞাপন ও লেখা সংগ্রহের কাজে আমরা জড়িত হয়ে পড়েছিলাম। তবে তখন পর্যন্ত সংকলন প্রকাশের অনেকটাই ছিল অনিশ্চিত। প্রায় মাসখানেক পর কয়েকটি বিজ্ঞাপনের প্রতিশ্রুতি লাভ এবং কিছু লেখা সংগ্রহ হয়ে যাওয়ায় আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছিলাম যে, সংকলন প্রকাশ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে। ফারাবী তখন সংকলনের প্রচ্ছদ এঁকে দেওয়ার জন্য 888sport live chatী দেবদাস চক্রবর্তীর শরণাপন্ন হলে খুবই দৃষ্টিনন্দন একটি প্রচ্ছদ তিনি এঁকে দিয়েছিলেন। আমাদের সেই সংকলন পরবর্তী সময়ে সে-বছরের শ্রেষ্ঠ একটি 888sport cricket BPL rateে সংকলন হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছিল। এর পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান ছিল ফারাবীর।

আমাদের 888sport cricket BPL rateের সেই সংকলন বিক্রি করা নিয়ে মধুর এক 888sport sign up bonus আজো আমার মনে পরিষ্কার হয়ে গেঁথে আছে। ছাপাখানা থেকে সংকলনের কপি আমরা পেয়েছিলাম ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে। ছাপাখানার বিল পরিশোধের বিষয়টি জড়িত থাকায় আগে থেকে কপি নিয়ে আসা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। যে-কটি বিজ্ঞাপন আমরা পেয়েছিলাম, ছাপাখানার মূল্য পরিশোধে তা যথেষ্ট হলেও ছাপা হয়ে যাওয়ার আগে বিজ্ঞাপনের অর্থ পাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। এখানেও ফারাবী সাহায্যের হাত প্রসারিত করে এগিয়ে আসে। শেষ পর্যন্ত ফারাবীর বাবা-মায়ের কাছ থেকে ধার করা অর্থে ছাপাখানার মূল্য পরিশোধ করা হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় সংকলন হাতে আসার পর তৃপ্তির সঙ্গে এর একটি কপি সযতেœ নেড়েচেড়ে ফারাবী আমাকে বলেছিল যে, আমি আর সে কিছু কপি নিয়ে সেগুলো বিক্রি করার জন্য সেখান থেকেই চলে যাব ধানমণ্ডি সাত নম্বর রোডে 888sport live chatী কলিম শরাফীর বাসভবনে। সেই দিনগুলোতে মধ্যরাতে 888sport live chatীর সেই বাসভবনে সংগীতের আসর বসত এবং সেখান থেকে খুব ভোরে সবাই প্রভাতফেরিতে যোগ দিতেন। ফলে ফারাবী বুঝতে পেরেছিল, অন্যদের চাইতে আগে নিজেদের সংকলন আমরা সেখানে নিয়ে যেতে পারলে বেশকিছু কপি সে-রাতেই বিক্রি করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে। আর তাই পুরনো 888sport appর সেই ছাপাখানা থেকে বের হয়ে নিজেদের প্রকাশিত সংকলনের বেশকিছু কপি বগলদাবা করে আমরা ছুটেছিলাম ধানমণ্ডির দিকে। পথে অবশ্য রাতের খাবার আমরা সেরে নিই।

888sport cricket BPL rateের প্রথম প্রহরে শহিদমিনারে যাওয়ার প্রচলন তখনো হয়নি। প্রভাতফেরি ছিল সত্যিকার অর্থেই অতি প্রত্যুষে পদযাত্রা, আজিমপুর কবরস্থান হয়ে শহিদমিনারে গিয়ে যে-পদযাত্রা শেষ হতো। সময়টা তখনো ছিল ইয়াহিয়া খানের সামরিক শাসনের যুগ। তবে রাজনৈতিক নেতাদের সবাই কারামুক্ত এবং রাজনীতির অঙ্গনে তখন বইছিল আসন্ন নির্বাচনের আগাম মৃদু হাওয়া। 888sport cricket BPL rateের সেই প্রথম প্রহরে বুদ্ধিজীবী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং সমাজের 888sport app বিশিষ্টজনের অনেকেই সমবেত হয়েছিলেন কলিম শরাফীর বাসভবনে গানের আসরে। সমবেতদের মধ্যে সংকলন বিক্রি করার এক ফাঁকে আমি আর ফারাবী চলে এসেছিলাম গেটের সামনে। উদ্দেশ্য ছিল নতুন যাঁরা সেখানে আসবেন, অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আগেই তাঁদের কাছে আমরা যেন আমাদের সংকলন বিক্রি করতে পারি।

মধ্যরাত এগিয়ে আসার মুখে অতিথিদের সকলে বাড়ির ভেতরে সমবেত হওয়ায় সামনের জায়গাটি ছিল কিছুটা অন্ধকার এবং নির্জন। হঠাৎ সেখানে এসে থামে খোলা একটি জিপ। জিপ থেকে নেমে দুই ব্যক্তি গেট বরাবর এগিয়ে আসেন। এঁদের মধ্যে একজন বেশ লম্বা। অন্ধকারে মুখ দেখা যাচ্ছিল না। তবে ফারাবী কীভাবে যেন ঠিকই চিনে ফেলেছিল সেই ব্যক্তির পরিচয় এবং আমার কাছে এসে বলেছিল ‘বঙ্গবন্ধু আসছেন’। আমরা কথা বলা অবস্থায় বঙ্গবন্ধু গেটের কাছে চলে এলে ফারাবী তাঁর হাতে একটি সংকলন তুলে দিয়ে বলেছিল, ‘এটা আপনার জন্য, বঙ্গবন্ধু।’ মুহূর্তে হাঁটা থামিয়ে বঙ্গবন্ধু সেই সংকলন হাতে তুলে নিয়ে পাতা ওলটাতে থাকেন এবং এক ফাঁকে আমাদের তিনি বলেন, ‘তোরা দেখছি ছাত্র ইউনিয়ন করিস। তবে ভালোই তো করেছিস তোদের এই সংকলন। দাম কত রেখেছিস?’ উত্তরে আমরা দুজন একসঙ্গে বলে উঠেছিলাম, ‘এটা আপনার জন্য এবং কোনো মূল্য আপনাকে দিতে হবে না।’ আবারো তিনি আমাদের দিকে তাকিয়ে কিছুটা ধমকের সুরে বলে উঠেছিলেন, ‘এটা বের করতে তোদের পয়সা খরচ হয়নি?’ এরপর আর কথা না বাড়িয়ে জিপের চালকসঙ্গীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেছিলেন, ‘মহিউদ্দিন, এদের টাকা দিয়ে দে।’ এই বলে তিনি বাড়ির ভেতরে চলে গেলে সেই দিনগুলোতে বঙ্গবন্ধুর দেহরক্ষীর দায়িত্ব পালন করা মহিউদ্দিন আমাদের হাতে পাঁচ টাকার একটি নোট ধরিয়ে দিয়েছিলেন, যদিও আমাদের সংকলনের বিক্রয়মূল্য ছিল পঞ্চাশ পয়সা।

এভাবেই সে-সময়ের নিষ্পাপ ছাত্র-রাজনীতির সূত্রে ফারাবী হয়ে উঠেছিল আমার কাছের বন্ধুদের একজন। পরবর্তী দিনগুলোতে সাধারণ নির্বাচন এগিয়ে আসার মুখে ফারাবীর সঙ্গে আমার সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে। নির্বাচনের আগে সে-বছর অক্টোবরে বরিশালের দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হানা প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের পর ত্রাণকাজে আমাদের ছাত্র ইউনিয়নের যে-দলটি উপদ্রুত অঞ্চলে গিয়েছিল, ফারাবীও তার একটিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে সম্ভবত একই দলভুক্ত হয়ে সেখানে আমরা যাইনি। 888sport appsের রাজনৈতিক অঙ্গনে ঘটনাপ্রবাহ তখন দ্রুত বহমান এবং দেখতে দেখতে চলে আসে ১৯৭১-এর মার্চ মাসের উত্তাল দিনগুলো। পহেলা মার্চের পর থেকেই আমরা ছাত্র ইউনিয়ন কর্মীরা 888sport appয় প্রকাশ্যে ডামি রাইফেল নিয়ে ট্রেনিং শুরু করলে ফারাবীও তখন আমাদের সঙ্গে ছিল। ফলে মুক্তিযুদ্ধে ফারাবীর যোগ দেওয়া ছিল খুবই স্বাভাবিক, যদিও ঘটনাক্রমে যুদ্ধে যাওয়া ওর পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

ছাত্র ইউনিয়ন কর্মীদের ছোট যে-দলের সঙ্গে আমি জুলাই মাসে সীমান্ত পার হয়ে আগরতলায় পৌঁছেছিলাম, সে-দলে ফারাবীরও যোগ দেওয়ার কথা ছিল। ফারাবীকে নিয়ে আমাদের দলের মোট সদস্য হওয়ার কথা ছিল ছয়জন, যে-দলের নেতৃত্বে ছিলেন বর্তমানে দৈনিক সংবাদের সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামান। কোন ছয়জন আমরা আগরতলার উদ্দেশে যাত্রা করব, একমাত্র মুনির ভাই সেটা জানতেন। অন্যদের কেবল এটুকুই বলা হয়েছিল যে, নির্দিষ্ট জায়গায় মিলিত হওয়ার পর দলে কারা অন্তর্ভুক্ত আছে তা আমরা জানতে পারব। অন্য তিনজনের মধ্যে দুজন এখন 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং তৃতীয়জন বিশিষ্ট চিকিৎসক। 888sport app থেকে বিচ্ছিন্নভাবে রওনা হয়ে নরসিংদী পার হয়ে পূর্বনির্ধারিত একটি জায়গায় আমরা মিলিত হলে দেখা যায় ষষ্ঠ ব্যক্তি সেখানে নেই। সেই ষষ্ঠ ব্যক্তিটি যে ছিল ফারাবী, নিরাপত্তার খাতিরে দলনেতার বাইরে আর কারো তা জানা ছিল না। তবে আমাদের আগে থেকে নির্দেশ দেওয়া ছিল যে, ছয়জনের মধ্যে সময়মতো কেউ আসতে না পারলে অন্যরা যেন অযথা অপেক্ষা করে সময় নষ্ট না করে। কেননা এমনও হতে পারে যে, উপস্থিত না হওয়া এক বা একাধিক ব্যক্তি হয়তো পথে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে গেছে। ফলে আগরতলা যাওয়ার পুরো পথ ধরে ষষ্ঠ ব্যক্তির পরিচয় নিয়ে বেশ উৎকণ্ঠায় ছিলাম আমি। আগরতলা পৌঁছে যাওয়ার বেশ কয়েকদিন পর মুনীরভাই আমাকে বলেছিলেন, সেই ষষ্ঠ ব্যক্তি হচ্ছে ফারাবী এবং সেদিন কোনো কারণে আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে না পারলেও 888sport appয় সে আমাদের গোপন দলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে।

কেন সেদিন ফারাবী যুদ্ধে যেতে পারেনি, সে-কারণ আমি অবশ্য ওর মুখেই শুনেছিলাম বিজয়ের শেষে আমার 888sport app ফিরে আসার পর। আগের রাতে ফারাবী যুদ্ধে যাওয়ার বিষয়টি মাকে জানিয়েছিল। মা শুরুতে সম্মতি দিয়েছিলেন, তবে খুব ভোরে যাত্রা শুরুর প্রস্তুতি নিতে ঘুম থেকে উঠে ও দেখতে পায় যে, ওর ঘরের দরজা বাইরে থেকে তালা দেওয়া। অনেক ডাকাডাকিতেও সেই তালা খোলা হয়নি এবং যখন তা খোলা হয়, ততক্ষণে যাত্রার সময় পার হয়ে গিয়েছিল। মায়ের মন সম্ভবত রাতে অজানা শঙ্কায় কেঁপে উঠেছিল এবং আগে সম্মতি দিলেও গভীর রাতে ফারাবীর মা ওর ঘরের দুয়ার তালা লাগিয়ে বন্ধ করে দিয়েছিলেন।

এটা নিয়ে ফারাবীর মনে আক্ষেপ থেকে গেলেও মায়ের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ সে কখনো করেনি এবং 888sport app শহরে ছাত্র ইউনিয়নের গোপন যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে পুরো সময় ধরে সে কাজ করে গেছে। ফলে ফারাবীকে আমি সবসময় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেই দেখে এসেছি।

যুদ্ধ-পরবর্তী 888sport appsে দেশ গড়ার কাজে নতুন উদ্যমে ফারাবী ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ওর মধ্যে তখন সবসময় দেখা যেত প্রাণচাঞ্চল্য। আমরা আবার একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাই ছাত্র ইউনিয়নের নিজস্ব সাপ্তাহিক জয়ধ্বনি প্রকাশিত হতে শুরু করলে। মুকুলভাই আর জাহাঙ্গীরভাই জয়ধ্বনির সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকলেও পেছনে মূল দায়িত্ব পালনে ফারাবী আর হাসান ফেরদৌসের সঙ্গে আমিও যুক্ত হয়েছিলাম। সেই দিনগুলো ছিল আমাদের আশা-আনন্দে পরিপূর্ণ দিন, নতুন একটি দেশের জন্য অনেক কিছু করার স্বপ্ন যখন আমরা দেখেছিলাম। লেখালেখিতে ফারাবী তখন পুরোপুরি নিবেদিত। 888sport app download apkর পাশাপাশি 888sport live footballের জটিল দিকগুলো নিয়ে একের পর এক নিবন্ধ লিখে গেলেও রাজনীতি বরাবর ছিল ওর পছন্দের বিষয়। তবে সেই রাজনীতির গণ্ডি অবশ্যই ছিল গতানুগতিকতার বাইরে মানুষের সার্বিক মুক্তির স্বপ্ন দেখার রাজনীতি। ফলে হিরোশিমা থেকে ভিয়েতনাম – সমকালীন বিশ্বরাজনীতির উত্তপ্ত সব বিষয় নিয়ে ফারাবী ভেবেছে এবং লিখেছে।

ফারাবী ছিল 888sport live football-অনুপ্রাণ। পাঠন-পাঠনের ঈর্ষণীয় ব্যক্তি ছিল। অল্পবয়সে সে যে-888sport live রচনা করেছে তাতে প্রতিভার স্বাক্ষর ও সম্ভাবনা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। রচনা করেছে নাটক।

১৯৭২ সালের সেপ্টেম্বরে আবুল হাসনাতের সম্পাদনা ও প্রযতেœ মাসিক গণ888sport live football যখন বেরোল, ফারাবী ছিল এই পত্রিকার আগ্রহী সহযোগী। সে এবং হাসান ফেরদৌস হয়ে উঠেছিল এই গোষ্ঠীর মেধাবী ও উজ্জ্বল সুহৃদ। পত্রিকাকে উন্নতমানের করার বিষয়ে নানা পরামর্শ দিত। সেই সময় গণ888sport live footballে প্রকাশিত 888sport appsের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এলেন গিন্সবার্গের 888sport app download apk ‘যশোর রোড’ 888sport app download apk latest versionে তাঁর শক্তিমত্তা প্রতিভাত হয়েছিল। 888sport app download apk latest versionে সে কত বিশ্বস্ত ছিল,  এ-888sport app download apkটিতে তার স্বাক্ষর আছে।

এছাড়া কিছুদিন আগে তাঁর রচিত দুটি 888sport live ও একটি নাটক রীতিমতো বাংলা 888sport live football অঙ্গনে ঝড় তুলেছিল। গদ্যের প্রসাদগুণে, রচনাশৈলীতে ও বক্তব্যে তাঁর 888sport liveে জিজ্ঞাসা, মননের ছাপ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। 888sport appর সারস্বত সমাজ একজন ভাবী প্রাবন্ধিকের সম্ভাবনা ও পদধ্বনি শুনতে পেয়েছিল। ফারাবীর তখন একটি মোটরসাইকেল ছিল। সে মোটরসাইকেলে করে সম্পাদককে নিয়ে যেত বিজ্ঞাপন সংগ্রহে। কখনো মতিঝিল, কখনো দিলকুশা এভিনিউয়ে। 888sport live footballে নিবেদিত এই মানুষটি কতভাবে যে সাহায্য করেছে গণ888sport live footballকে।

স্বাধীন 888sport appsে ফারাবীর সরাসরি সান্নিধ্য খুব বেশিদিন আমি পাইনি। ১৯৭২ সালের আগস্টে মস্কোর উদ্দেশে দেশ

ছেড়ে যাওয়ার আগে শেষবারের মতো ওর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল আমাদের যাত্রা শুরুর অল্প আগে। পরে অবশ্য চিঠিপত্রের যোগাযোগ ফারাবী অসুস্থ হওয়ার আগে পর্যন্ত নিয়মিত বজায় ছিল। ফারাবীর অসুস্থ হওয়ার খবর ওর নিজের লেখা চিঠিতেই আমি জানতে পেরেছিলাম এবং কখনো মনে হয়নি অল্পদিনের মধ্যেই সে আমাদের ছেড়ে যাবে। শেষ চিঠিতে ফারাবী লিখেছিল, চিকিৎসার জন্য সে লন্ডন যাচ্ছে এবং সুস্থ হয়ে ফিরে এসে বিস্তারিত সবকিছু আমাকে জানাবে। ফারাবী 888sport appয় ঠিকই ফিরে এসেছিল, তবে সুস্থ হয়ে নয়, বরং জীবনের শেষ দিনগুলো দেশের মাটির সান্নিধ্যে কাটাতে।

ওর সেই শেষ দিনগুলোর কথা আমাদের বন্ধু সিদ্দিক এখনো বলে। সিদ্দিক গিয়েছিল হাসপাতালে ফারাবীকে দেখতে। কেবিনের জানালা দিয়ে বাইরে দেখা যাচ্ছিল রক্তিম কৃষ্ণচূড়ার বাহারি শোভা। সেদিকে চোখ রেখে বিষণœ ফারাবী সিদ্দিককে বলেছিল, ‘জানো সিদ্দিক, আগামী বছর আবারো এই কৃষ্ণচূড়া ফিরে আসবে। তবে থাকবো না আমি।’ আজো সিদ্দিকের সেই দুঃখভরা উক্তি শুনলে চোখ দুটি আমার ভিজে আসে। আমার সেই অকালে হারিয়ে যাওয়া বন্ধুর 888sport sign up bonusর উদ্দেশে হিরোশিমা-নাগাসাকি নিয়ে লেখা বইটি উৎসর্গ করতে পেরে সামান্য হলেও সান্ত¡না খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা আমি করেছি। 

(টোকিও, ২৮ জুলাই ২০১৮)