ফিরে দেখা : জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী

সনৎকুমার সাহা

সিদ্দিকী স্যারও চলে গেলেন। জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী। আমাদের শিক্ষা ও সংস্কৃতির জগতে উজ্জ্বলতম নক্ষত্রের একটি। তাঁর মতো যাঁরা, একে একে চলে যাচ্ছেন সবাই। মাত্র কদিন আগে সালাহ্উদ্দীন স্যার চলে গেলেন। বরেণ্য ঐতিহাসিক সালাহ্উদ্দীন আহ্মদ। কাছাকাছি সময়ে কবি আবুল হোসেন। গত দু-বছরের ভেতরে আরো চিরবিদায় নিয়েছেন অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, খান সারওয়ার মুরশিদ, সরদার ফজলুল করিম, মুশাররফ হোসেন। অন্য আকাশের কথা ভাবছি না। এই আকাশে আলো নিভছে। তাঁদের সময়ের। এমনটাই স্বাভাবিক। তবু শোক অপ্রতিরোধ্য। অভাববোধের শূন্যতাও। সময়টা হারিয়ে যাচ্ছে। যাকে অবলম্বন করে দাঁড়িয়ে আছে বর্তমান, সেই সময়। একজন-দুজন এখনো আছেন। ফাঁকা জায়গাটাই তাঁরা চিনিয়ে দেন। আমাদের অসহায়তাও। বোধহয়, তাঁদের নিরুপায় নিঃসঙ্গতাও।

তাঁদের সময় ও তাঁদের ভূমিকা নিয়ে যখন ভাবি, তখন অবাক না হয়ে পারি না। এমন নয় যে, তাঁরা এক ঝাঁকে থেকেছেন, বা একই রকম ভেবেছেন। ব্যক্তিত্বের গড়নও  এক-একজনের এক-এক রকম। তবু মানবিক বোধে ও মননের ঝোঁকে এঁরা প্রত্যেকে নিজের নিজের মতো করে একটা জায়গায় এসে পৌঁছেছেন, যার যৌক্তিক পরিণাম আমাদের গণপ্রজাতন্ত্রী 888sport apps। তাঁদের কর্মজীবনের শুরু কিন্তু কার্যকরভাবে ১৯৪৭-এ পাকিস্তান হওয়ার পর থেকে। বলা যায়, পাদপ্রদীপের সামনে আসতে থাকেন তাঁরা গত শতকে পঞ্চাশের দশকে। খুবই সংগত ছিল তাঁদের পাকিস্তানি দ্বিজাতিতত্ত্বে অনুগত থাকা। এদেশে রাষ্ট্রক্ষমতার প্রশ্রয়ে ও শিক্ষাজগতে অবাধ সুযোগের মুখে তার প্রলোভন কম ছিল না। কিন্তু তাঁরা সেদিক থেকে মুখ ফিরিয়েছেন সবাই। একে কোনোক্রমেই ছোট করে দেখা যায় না। পরিণাম-ফল ব্যক্তিগত মাত্র থাকেনি। শিক্ষায় ও চিন্তায় সমাজে প্রাতিষ্ঠানিক সব কর্মকান্ডে তা ছড়িয়েছে। আজ পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি মুক্তচিন্তার সৃষ্টিশীল প্রবাহকে ফলপ্রসূ কর্মকান্ডে পরিচালিত করায় তাঁদের যে-অবদান, তার তুল্য-কিছু সমগ্র বঙ্গভাষী অঞ্চলে তাঁদের জীবদ্দশায় আর কোথাও সেভাবে ঘটেনি। তাঁরা নিজেরাও এ-বিষয়ে পুরো সচেতন ছিলেন কিনা জানি না। কিন্তু এইটিই বাস্তব।

সত্য কথা, পেছনে বেগম রোকেয়া ছিলেন, সওগাত পত্রিকা – বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন ছিল, কাজী নজরুলের আবির্ভাব ছিল, প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় বাহান্নর ভাষা-আন্দোলনের গনগনে ঝাপটা ছিল, কিন্তু তারপরেও পাকিস্তানি সুবিধাবাদের সহজ-সুলভ পন্থাও উন্মুক্ত ছিল। তাঁরা সে-পথ প্রতিদিনের সচেতন জীবনচর্চায় প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে, জনসমাবেশে অসংখ্য ছেলেমেয়ে তাঁদের আচার-আচরণ লক্ষ করেছেন, তাঁদের কথা শুনেছেন। কোনো উদ্দেশ্য ছাড়াই নিজেদের অজ্ঞাতে পরবর্তী প্রজন্মের অনেকের তাঁরা আদর্শ হয়ে উঠেছেন। পাকিস্তানি ধ্যান-ধারণা নব্য-শিক্ষিত সমাজে সেই অনুপাতে দূরে সরেছে। তাঁদের দূরমনস্ক মেধার উজ্জ্বলতাও আকর্ষণ করেছে অনেককে। জেনে হোক, না-জেনে হোক 888sport appsের মনননির্ভর সামাজিক-সাংস্কৃতিক ভিত রচনায় এভাবে তাঁরা রসদ জুগিয়েছেন। এবং তা ঝুটো-মাল ছিল না। অনেকটা দূরে থেকে নির্মোহভাবে দেখলে ধরা পড়ে, তাঁদের সাধনা ছিল উচ্চমার্গের। যে-কোনো দেশের মানদন্ডে সেরাদের সারিতেই তাঁরা উঠে আসতেন। আজ অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর চিরবিদায়, তাঁদের সবার কথাই মনে করিয়ে দেয়। আবার তাঁদের বৃত্তে সিদ্দিকী স্যারকে রেখে তাঁর কথা ভাবি। নিজেদের অকৃতার্থ জীবনের অকিঞ্চিৎকরতার সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিপ্রভার দূরত্বটাও মাপি।

 

জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী পড়াশোনায় বরাবর অসাধারণ, যশোর জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশনে (আজ যা সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট এক্সামিনেশন) চোখ-ধাঁধানো ভালো ফল করে তখনকার রেওয়াজে সবচেয়ে বনেদি কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে একই রকম কৃতিত্বের সঙ্গে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। দেশভাগের হিংস্র ডামাডোলে আর কলকাতায় থাকা সম্ভব হয় না। 888sport appয় এসে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। সেখান থেকে মাস্টার্সে একই বিষয়ে প্রথম শ্রেণি। দুটো পরীক্ষাতেই ফার্স্টক্লাস পান তিনি একা। সরস্বতীর বরপুত্রই যেন। এমন ফলের দৌলতে অনায়াসে মিলে যায় বিলেতে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্কলারশিপ। ইংরেজি-অনার্সে ঈর্ষণীয় ফল করে ফিরে আসেন। কর্মজীবন তাঁর পুরোটা কাটে উচ্চতর শিক্ষকতায় ও শিক্ষা প্রশাসনে, মেধার স্বীকৃতিতে একবার জাতীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারে উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্যও হন, দেখাশোনা করেন শিক্ষা-মন্ত্রণালয়ের। তাঁর প্রশাসনিক দক্ষতা নিয়ে আজ কিছু বলতে চাই না। তেমন কিছু জানিও না। বাইরে থেকে মনে হয়েছে, মেধায় ও মনীষায় সর্বজনশ্রদ্ধেয় হওয়াতেই তাঁকে সাময়িক ওই উপদেষ্টার পদ নিতে অনুরোধ করা।

সিদ্দিকী স্যার যখন 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, তখন একবার হল-ছাত্র সংসদের নির্বাচনেও ভোটে জেতেন। তাঁর সঙ্গী ছিলেন পরবর্তীকালে প্রধান বিচারপতি-মনীষী মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ও 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য প্রফেসর ফজলুল হালিম চৌধুরী। দুজনই আজ প্রয়াত। একটা জিনিস এখান থেকে ফুটে ওঠে, – ওই সময়ে মেধাবী ছেলেমেয়েরাও ছাত্র-রাজনীতিতে আসতেন। রেওয়াজটা উঠে যায় আইয়ুব-মোনেম চক্রের জুলুমশাহি চলাকালে। তখন ন্যাশনাল স্টুডেন্টস ফেডারেশন নামে এক ঠেঙাড়ে বাহিনী তৈরি করে প্রশাসনের ছত্রছায়ায় তাদের দিয়ে সব রকম ছাত্র-অসন্তোষ পিটিয়ে স্তব্ধ করার অপকৌশল জোরেশোরে চালু হয়। মেধাবী ছেলেমেয়েরা এদিকে ভিড়তে সাহস পায় না। নিরুপায় হয়ে সব গণতান্ত্রিক সংগঠনও পেশিশক্তির ওপর নির্ভর করা শুরু করে। তারই পরিণামে ধ্বংস হয়  আইয়ুব-মোনেমের হল-জবরদখলের জঘন্য অপকৌশল। কিন্তু ছাত্র-রাজনীতি মর্যাদা হারায়। সিদ্দিকী স্যারকেও এই অবস্থার মুখোমুখি হতে হয়। ১৯৬৬-৬৮, তিন বছর, তিনি ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রাবাসের প্রভোস্ট। এরকম জুলুমবাজির অাঁচ তাই তাঁকেও সহ্য করতে হয়।

সবার জানা, 888sport appয় ছাত্রজীবনে কবি শামসুর রাহমান ছিলেন তাঁর অভিন্নহৃদয় বন্ধু। কত দিন-কত রাত কেটেছে তাঁদের 888sport app download apkচর্চায়। চমৎকার আবৃত্তির কণ্ঠ দুজনের। রবীন্দ্রনাথের অনেক 888sport app download apk মুখস্থ। সেটা পরেও টের পেয়েছি। তবে চমক জাগায় নতুন কবিরা। বিশেষ করে টিএস এলিয়ট। বাংলাতেও সুধীন দত্ত, বিষ্ণু দে। হঠাৎ হাতে আসে জীবনানন্দের বই। যেন নতুন পৃথিবী আবিষ্কার। একটা ঘোরের ভেতরে থাকেন দুজনই। বোধহয় বেশি আচ্ছন্ন করে শামসুর রাহমানকে। অবশ্য তাঁকে আত্মস্থ করেই তিনি হয়ে ওঠেন এক ও অদ্বিতীয় শামসুর রাহমান। কেউ কবি হয়ে ওঠেন এইভাবেই। জীবনানন্দই বলেছেন তাঁর 888sport app download apkর কথায়। সিদ্দিকী স্যারের সঙ্গে কবি শামসুর রাহমানের আত্মিক সম্পর্ক পরেও অটুট থেকেছে। যখন তাঁরা কখনো এক জায়গায় হয়েছেন, তখনই এটা চোখে পড়েছে। শামসুর রাহমান আজীবন জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর 888sport app download apk-ভাবনাকে মূল্য দিয়ে এসেছেন। এটা পোশাকি হিসেব-নিকেশ নয়, সত্যিকারের আন্তরিক বোধের মেধাবী প্রাণোচ্ছল বিনিময়।

কবি-খ্যাতি সিদ্দিকী স্যারও পেয়েছেন। ১৯৭৯-তে তিনি যে বাংলা একাডেমি 888sport live football 888sport app download bd পান, তা 888sport app download apkর জন্যেই। তবে তাঁর 888sport app download apkর মেজাজ শামসুর রাহমানের মতো নয়। বৈদগ্ধ্য তাঁর 888sport app download apkয় মেশে। তাতে আলাদা মাত্রা যোগ করে। আমরা চমৎকৃত হই। কিন্তু তার স্বতঃস্ফূর্ততা বুঝি ক্ষুণ্ণ হয়। দীক্ষিত রুচিশীল পাঠকের কাছেই তাঁর আবেদন। এবং তা খাঁটি। গড়পড়তা যাঁরা, তাঁরা একটু প্রতিহতই হন। যদিও তাঁর মাপের যাঁরা, তাঁরা পান আশাতীত আরো কিছু। তিনি যে অসাধারণ ছাত্র ছিলেন, তার প্রভাব বুঝি পড়ে তাঁর 888sport app download apkতেও। ‘ভিড়ের হৃদয়ে’ তা ঘা দেয় কদাচিৎ। শামসুর রাহমান কিন্তু জানতেন, 888sport app download apk কেবল হুজুগের জিনিস নয়। দীর্ঘায়ু হওয়ার মতো মূল্যও সে আপন সত্তায় ফুটিয়ে তুলতে চায়। সিদ্দিকী স্যারকে পেয়েছিলেন তিনি পাকা-জহুরি। একই সঙ্গে মর্মার্থী ও সহৃদয়-হৃদয়সংবেদী।

আমার মনে হয়েছে, সিদ্দিকী স্যারের নিজের ঝোঁক ছিল ক্ল্যাসিক্যাল ভাবাদর্শের দিকে। মাইকেলের তিনি অনুরাগী ছিলেন। এবং সুধীন দত্তেরও। কথায় কথায় একদিন বলেছিলেন, সুধীন্দ্রনাথের শব্দের পরিমিতিবোধ অসাধারণ। ছোট্ট পাটাতনেও নাচের ঘূর্ণি পুরো করে সমে ফেরেন। তার মানে এ নয়, জীবনানন্দ তাঁর তারিফ পাননি। তবে নিজে তিনি জীবনানন্দ ঘরানার ছিলেন না। 888sport app download apkর ভাষায় শৃঙ্খলা ও সংযমের ব্যাপারে তিনি সচেতন ছিলেন। আবেগের বেহিসেবি খরচে তাঁর সায় ছিল না। অনুমান করি, বাঙালি ঐতিহ্যে যত্নের সঙ্গে ইংরেজি ক্ল্যাসিক্যাল 888sport live footballপাঠে যে-শিক্ষা, তার নির্যাস তিনি অনায়াস দক্ষতায় মিশিয়ে নিয়েছিলেন। তাঁর গদ্য রচনাতেও তার ছাপ ধরা পড়ে। জনপ্রিয় হওয়ার প্রলোভন তাঁকে বিচলিত করে না। কিন্তু জনজীবনে গভীরভাবে প্রাসঙ্গিক তাঁর অধিকাংশ লেখা। এটা মনে রাখার দায়িত্ব আমাদেরই। কাগজে কলামও তিনি লিখেছেন – ইংরেজি-বাংলা, দু-ভাষাতেই। একটু ওপর থেকে যেন। প্রাত্যহিকতার রাগ-ঝাল সরাসরি উগরে দেন না। তাতে জনগণের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া খুব একটা বোধহয় হতো না। তবে চিন্তাশীল পাঠকেরা ভাববার বিষয় পেতেন নির্ভুল। সবটাই নৈর্ব্যক্তিক। কোনো ফন্দি-ফিকিরের ছোঁয়া এতটুকু থাকত না। ছোটখাটো, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথাও যে কখনো এতটুকু থাকত না, তা নয়। তবে তিনি তা তুলে ধরতেন নৈরাত্মিক নির্লিপ্ততায়। তাঁর ক্ল্যাসিক্যাল দৃষ্টিভঙ্গি এসবেও ফুটে উঠত।

তাঁর 888sport app download apk সংগ্রহ প্রকাশিত হয় ২০০১ সালে। অধিকাংশ 888sport app download apkই অনেক আগের লেখা। জীবনের সায়াহ্নবেলায় 888sport app download apkর সৃষ্টিকলা সেভাবে তাকে মগ্ন রাখেনি। আরো অনেক জরুরি কাজ তাঁকে ব্যস্ত রেখেছে। তখন 888sport app download apkর প্রতি অসৎ অনুরাগ তিনি দেখাননি। তবে এই সংকলনে তাঁর কবি-মনের চারিত্র্যকে আমরা ধারাবাহিক চিনে নিতে পারি। কটি নমুনা তুলে ধরি,

১. শুধু এই ভাঙা হাটে ফেরে যত সতর্ক হাটুরে।

দুটি একটি পাল ছেঁড়া, নৌকো এসে ভেড়ে শূন্য ঘাটে

সোয়ারী নিখোঁজ হু হু মাঠ ভেঙে নির্জন দুপুরে

উদাম গোরুর গাড়ি ফিরে আসে, কুকুর চৌকাঠে

খালি ঘর আগলায়, ঘুঘু ডেকে যায়

দমকা হাওয়া ছুটে যায় মাঠে –

দিনের ছায়ারা সব মিশে যায় রাতের ছায়ায়।

 

২. পুঞ্জিত ছায়ায় শুয়ে দূরাগত বৈশাখ জিরায়।

৩. নেই, কোন দুঃখ নেই, কোন গ্লানি নেই

বিবাহ বাসরে এই 888sport appsে। মন্ত্রী ঠিকাদার

বিচারক, অধ্যাপক, সম্পাদক সকল বিবাদ

বিসম্বাদ ভুলে গিয়ে বন্ধুতার অমৃত সাগরে

হাবুডুবু খাচ্ছেন বেবাক। বিরক্ত ফাঁসির জজ

হেসে কুটি কুটি হয়ে গড়িয়ে পড়েন পার্শ্ববর্তী

জেলখাটা, বর্তমান জননেতা গন্ডারের গায়ে।

কোথাও কোনো অস্পষ্টতা নেই। ক্ল্যাসিক-তদাত্মিক ভাবনাচিত্র সব। নির্মেদ, কিন্তু যথেষ্ট।

আমরা চমৎকৃত হই। বুদ্ধিজাত আবেগ শুদ্ধ চেতনায় ঘা দেয়। মৌলিক 888sport live footballকর্মের পাশাপাশি প্রতিস্পর্ধী মহিমায় মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে তাঁর 888sport app download apk latest versionের কাজ। আধুনিক 888sport app download apkর 888sport app download apk latest version কিছু করেছেন। অতি সার্থক 888sport app download apk latest version। বিশেষ করে টিএস এলিয়টের ‘দ্য লভ সং অফ জে. আলফ্রেড প্রুফ্রকে’র তিনি যে বাংলা তর্জমা করেছেন, নিঃসন্দেহে তা  এ-888sport app download apkর অন্যতম সেরা বাংলা 888sport app download apk latest version। আমার জানা সবচেয়ে ভালো।

মূলে 888sport app download apkটির শুরু এই রকম :

Let us go then, you and I,

When the evening is spread out against

the sky

Like a patient etherized upon a table

 

তিনি 888sport app download apk latest version করেন :

এসো যাই তুমি আর আমি

যখন আকাশজুড়ে সন্ধ্যাটা এলিয়ে পড়ে আছে

যেন টেবিলের পর ইথারে বেহুঁশ কোন প্রাণী।

আমরা খেয়াল করি, ‘তাহলে এসো যাই -’ দিয়েও তিনি শুরু করতে পারতেন। কিন্তু তাহলে যোগ করার প্রলোভন তিনি সামলেছেন। আসলে বাংলায় ‘এসো যাই’ দিয়ে শুরু করলেও চমকটা তার অঙ্গীভূত হয়ে যায়। ভাষার সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রয়োগে চিত্ররূপে এমনটিই চেতনায় ঘা দেয়। জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী ‘শব্দের সীমানা’ যাচাই করার সময় তার দ্যোতনায় নিশ্চয় এতেই মূলভাবের প্রকাশ যে পূর্ণ হয়েছে, তা দেখে থাকবেন। 888sport app download apk latest versionে শব্দ-ব্যবহারে সব সময়ে তিনি ছিলেন অতিমাত্রায় সতর্ক। আর সবার তা শিক্ষণীয়ও বটে। আমরা ভুলে যাই না, অধ্যাপনা ছিল তাঁর পেশা। ছেলেমেয়েদের যা শেখান, নিজে তার উলটোটা করার কথা তিনি ভাবতেও পারতেন না। কি মৌলিক রচনায়, কি 888sport app download apk latest versionে। 888sport app download apk latest versionের বেলায় এটা একরকম আত্মপরীক্ষাও বটে। ভাষার শৃঙ্খলা এই পথে তাঁর ব্যক্তিত্বেও মিশে যায়।

তবে এখানেও তিনি কিংবদন্তি-প্রায় ক্ল্যাসিকের অনুসরণে – শেক্সপিয়র-সনেট ও মিল্টন-রচনার 888sport app download apk latest versionে। শেক্সপিয়র (১৫৬৪-১৬১৬) সনেটের 888sport app download apk latest version হয়তো তিনি জীবনের বিভিন্ন সময়ে দুটো-একটা-করে করে গেছেন। কিন্তু মিল্টনের (১৬০৮-৭৪) অ্যারিওপ্যাজিটিকা 888sport app download apk latest versionের পেছনে ছিল তাঁর দেশ-কালে বাস্তব অবস্থার বিশেষ এক তাগিদ। ১৯৬৯-এ ক্ষুব্ধ স্বদেশভূমিতে পাকিস্তানি সমরশাসনে রুদ্ধ কণ্ঠস্বরের জ্বালা নিয়ে তিনি তাঁর আবেগ ও আক্ষেপ প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে বেছে নেন অ্যারিওপ্যাজিটিকা 888sport app download apk latest versionের কাজটিকে। আগে জানতাম না, তাঁর কাছ থেকেই জেনেছি, মিল্টন এই পুস্তিকাটি রচনা করেন ১৬৪২-৪৩ সালে, ওই সময়ে জনগণের বাক-স্বাধীনতাবিরোধী একটি আইনের প্রতিবাদে প্রচারের জন্য। প্রচারের জন্য হলেও তার ভাষা আজ আমাদের কাছে সহজবোধ্য নয়। সিদ্দিকী স্যার গদ্য-888sport app download apk latest versionে এই দুরূহ গদ্য ও 888sport app download apk latest versionের চ্যালেঞ্জটি স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে গ্রহণ করলেন; সেইসঙ্গে রাষ্ট্রীয় বিবর্তনের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থানের ইঙ্গিতও স্পষ্ট করলেন। আমরা জানি, বইটি ছেপে বের করার মতো অবস্থা তখনো দেশে তৈরি হয়নি। তাই বলে তাঁর এই 888sport app download apk latest version বিষয়ে কেউ কিছু জানত না, তাও নয়। তখনকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এবং অন্যত্রও সমমনাদের বিভিন্ন পাঠচক্রে তিনি এই পান্ডুলিপি পড়েছেন, এইভাবে আমরাও এর পূর্ণপাঠ শুনি। মূল ভাষার জটিলতা ও গাম্ভীর্যকে তরলিত না করে 888sport app download apk latest versionে তিনি যে তার ঋজুতা বজায় রেখেও সততার সঙ্গে তা আমাদের কাছে বোধগম্য করে তুলতে পারেন, এটা এক অসামান্য কাজ বলেই মনে হয়। তাঁর অ্যারিওপ্যাজিটিকার ভূমিকা সংবলিত সঠিক 888sport app download apk latest version প্রথম ছেপে বেরোয় ১৯৭১-এ। এছাড়া মিল্টনেরই স্যামসন অ্যাগনস্টিজের কাব্যানুবাদ তাঁর প্রকাশিত হয় ১৯৭৩-এ। এ-বইটি আমি পড়িনি, এবং এর গুণাগুণ বিষয়ে কিছু জানি না।

তবে তাঁকে খ্যাতির শীর্ষে নিয়ে যায় তাঁর শেক্সপিয়র-সনেটের 888sport app download apk latest version। মিলটনের আগে শেক্সপিয়রের আবির্ভাব। কিন্তু তাঁর সনেট বেশির ভাগ অনুরাগে সংরক্ত। একই সঙ্গে নিয়মমাফিক আয়াম্বিক পেন্টামিটার (Iambiqe Pentameter) কঠোর অনুশাসনে আবদ্ধ। এছাড়া চতুর্দশপদী রচনায় চরণান্তিক মিলে তিনি যে নিজস্ব ধারা চালু করেন ababcdcdefefgg – তা গুনে গুনে নিষ্ঠার সঙ্গে অনুসরণ করে চলেন। তারপরেও কোনো আড়ষ্টতা নেই। প্রতিটি 888sport app download apkর প্রাণস্পন্দন একই রকম সতেজ। যুগ যুগ ধরে মানব-মানবীর হৃদয়ে সুসম্বন্ধ আলোড়ন তুলে চলেছে। শেক্সপীয়রীয় প্রতিভার এই বিরল নিদর্শনকে অনুরূপ দক্ষতায় বাংলায় রূপান্তরিত করেছেন জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী। প্রজ্ঞা ও  হৃদয়-বাসনার ভারসাম্য তিনি এতটুকু ক্ষুণ্ণ করেননি। সনেটের যথাযথ বিধিও লঙ্ঘিত হয়নি। তাঁর মনস্বিতা অটুট থেকেছে।

তাঁর গদ্য-রচনা আবর্তিত হয়েছে প্রধানত সমাজ, 888sport live football ও শিক্ষা নিয়ে। বেশির ভাগের পেছনে কাজ করেছে কোনো উদ্বেগ অথবা কোনো প্রশ্ন। এখানে কল্পনাশক্তি নয়, ধীশক্তিই তাঁর বাহন। মেধার যোগ্য প্রকাশ ঘটেছে এসবে। তবে মনে হয় ক্ল্যাসিক দার্ঢ্য যেন অনুশীলনের সুবাদেই তাঁর স্বভাবে মিশে গিয়ে তাদের ভিত্তিমূলে জমাট বাঁধে। অবসর-বিনোদনের বিষয় এরা নয়। গভীরভাবে ভাবনার অথবা সুচারু সুবিন্যস্ত চিন্তার দ্বার উন্মোচনই যেন তাদের লক্ষ্য। শব্দ-চয়নে তার যথার্থতার সঙ্গে সমুচিত শোভনতার দিকেও ছিল তাঁর নজর। তাঁর গদ্য রচনাও তাই নিরবচ্ছিন্ন মনঃসংযোগ দাবি করে। যদিও তাড়িত হন তিনি প্রত্যক্ষের ভাবনা-দুর্ভাবনায়।

এইখানে আসে তাঁর পত্রিকা-সম্পাদনে দায়িত্ব পালনের কথা। অবশ্য তিনি একা নন, সঙ্গী ছিলেন আর এক দিকপাল, মুস্তাফা নূরউল ইসলাম। তবে যখন শুরু তাঁদের সম্পাদনার অভিযান, তখন তাঁরা অত কেউকেটা নন। আমাদের সংস্কৃতির ইতিহাসে এই পত্রিকা তাঁদের অমর করে রাখবে। পেছনে অবশ্য ছিল সওগাত ও শিখা গোষ্ঠীর অভিজ্ঞতা। সমসাময়িক আরো ছিল, বোধহয় আরো বিখ্যাত, সিকান্দার আবু জাফরের সমকাল। তার কথা এখন থাক। আমরা প্রফেসর সিদ্দিকীর দিকেই নজর দিই।

১৯৫৪ সালে অক্সফোর্ড থেকে ফিরে ১৯৫৫-তে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে যোগ দেন। পরের বছর ওই অল্প বয়সেই তিনি বিভাগীয় প্রধান। এদিকে ১৯৫৮ সালে চালু হয়েছে আইয়ুব খানের সমরশাসন। তার দামামা বাজতে শুরু করেছে সবখানে। যেন ত্রাতা তিনি। রাজশাহীতেও আসেন ১৯৫৯-এ। কত শিক্ষক তাঁকে দেখে অভিভূত। যেন দেবদর্শন। ক্ষুদ্রকায় বাঙালি দেহে চোখ কপালে তুলে তাঁর মুখাবয়ব অবলোকন করতে হয়, এতেই গদগদ কতজন।  এখনো তাঁর 888sport sign up bonusচারণে লজ্জিত নন, বরং গর্বিতই, এমন চোখে পড়ে দু-একজন। ভাষা-আন্দোলন যাঁদের চেতনার অগ্নিমশাল, গণতন্ত্র যাঁদের স্বপ্ন, তাঁরা বিব্রতবোধ করেন। সন্ত্রস্তও। মনে করেন তাঁরা, অন্তত নিজেদের কথা বলতে পারেন – সুস্থ, সাংস্কৃতিক ও মুক্ত মানবিক, এমন একটা সমাজ-888sport live football-সংস্কৃতি-বিষয়ক পত্রিকা তাঁদের চাই। জগতের জ্ঞানভান্ডার তাঁদের প্রেরণা। মানুষের অগ্রযাত্রায় তাঁদের আস্থা। সব সমমনা লেখকের কাছে তাঁদের আহবান। তাই বলে আবশ্যিকভাবে একমনা নয়। খোলা থাকে তর্ক-বিতর্কের জায়গাও। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশন নয়, ব্যাপক অর্থে বাঙালির প্রকাশন। অবশ্য এই বাংলার – তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের; কিন্তু চেতনায় তাদের গোটা বাঙালির ঐতিহ্য।

এই পত্রিকা পূর্বমেঘ। ত্রৈমাসিক 888sport live footballপত্রিকা। প্রথম প্রকাশকাল, ১৯৬১। দশ বছর চলেছিল। যথেষ্ট নিয়মিত ছিল, বলা যায় না। তবে বাংলার চিন্তাশীল মানব-মানবীদের মনে একটা উল্লেখযোগ্য জায়গা করে নিয়েছিল। এখানে প্রকাশনায় যাঁরা উৎসাহ জোগাতেন, তাঁরা প্রায় সবাই ছিলেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক : ইতিহাসের ডক্টর এ আর মল্লিক, ডক্টর সালাহ্উদ্দীন আহ্মদ, অঙ্কশাস্ত্রের, পরে, শহিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, ডক্টর রশীদুল হক, অর্থনীতির ডক্টর মুশাররফ হোসেন, বরেন্দ্র জাদুঘরের ডক্টর মুখলেসুর রহমান, দর্শন/ রাষ্ট্র888sport apkের অধ্যাপক বদরুদ্দীন উমর, ইংরেজির অধ্যাপক আলী আনোয়ার ও এই রকম আরো কোনো কোনো গুণীজন। এছাড়া দেশের প্রায় সব উল্লেখযোগ্য মানবিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী লেখকই তখন কোনো না কোনো সময়ে এতে তাঁদের অবদান রেখেছেন। ওই পর্বে হাসান আজিজুল হকের সেরা গল্পগুলোর বেশিরভাগ এখানে এই পত্রিকায় প্রথম ছাপা হয়। পত্রিকার মান ছিল ঈর্ষণীয়। শুরুর দিকে 888sport live footballের কোনো কোনো ছাত্রও এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এই মুহূর্তে মনে পড়ছে আবদুল হাফিজ ও নূরুল আরেফিনের নাম। পরে আবদুল হাফিজ 888sport live888sport live footballে ও রাজনীতিতে এবং নূরুল আরেফিন 888sport app download apkয় পরিচিতি পেয়েছেন।

তবে ওই সময়ে এদেশে বাঙালি চেতনার বিকাশে পূর্বমেঘ যে-ভূমিকা রাখে, তাতে সবচেয়ে বেশি ইন্ধন জোগান বদরুদ্দীন উমর। ষাটের দশকের মাঝামাঝি থেকে তাঁর প্রথম তিনটি বই – সাম্প্রদায়িকতা, সংস্কৃতির সংকট ও সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতার উল্লেখযোগ্য প্রায়-সব 888sport live প্রথম ছাপা হয় পূর্বমেঘে। দেশের শিক্ষিত মহল তাদের লুফে নেয়। গণমানসেও তাদের যৌক্তিক রূপকল্প সঞ্চারিত হতে থাকে। সবটাই কিন্তু পাকিস্তানি রাষ্ট্রশক্তির ভ্রূকুটি উপেক্ষা করে।

সম্পাদক হিসেবে জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী ও মুস্তাফা নূরউল ইসলাম যে শান্ত সাহস ও যুক্তিসিদ্ধ বিবেচনার পরিচয় দিয়েছিলেন, বারবার সশ্রদ্ধ 888sport app download for androidেও তাদের গুরুত্ব যথেষ্ট বোঝানো যায় না। রাষ্ট্রশাসিত প্রলোভনের বাজারকে তাঁরা সম্পূর্ণ উপেক্ষাই করেছেন। এর তুল্য ছিল 888sport appর সমকাল পত্রিকায় সিকান্দার আবু জাফরের ‘বাংলা ছাড়’ 888sport app download apkর দ্ব্যর্থহীন উচ্চারণ। পত্রিকা-সম্পাদনায় এগুলো আমাদের বাতিঘরের আলোকশিখা।

জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী নিজেও প্রকাশ্য প্রতিবাদে সুর মেলান। তবে তাঁর মতো করে রুচিস্নিগ্ধ, কিন্তু দৃঢ় প্রত্যয়ে। সম্ভবত ১৯৬৮-৬৯-এ দেশে তখন রবীন্দ্রসংগীত গাইবার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আইয়ুব-মোনেম শাসকচক্র। এখানে সাংস্কৃতিক জগতে তুমুল বিক্ষোভ। বিতৃষ্ণা ছড়ায় গণমানসেও। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শামসুর রাহমান লেখেন তাঁর প্রসিদ্ধ 888sport app download apk, ফাহমিদা খাতুনের গান শুনে। ফাহমিদা বাংলার শ্রেষ্ঠ রবীন্দ্রসংগীত গায়ক-গায়িকাদের একজন। ওই 888sport app download apkও আকুতি জাগায়। সিদ্দিকী স্যার সেই সময়ে লেখেন তাঁর অসামান্য 888sport live, ‘রবীন্দ্রনাথ ও আমরা’। ভয় পান না। পূর্বমেঘেই ছাপা হয়। আমরা অনুপ্রাণিত হই। একই সঙ্গে দেখি ভাষার সংযমে কী করে তিনি তাঁর রাবীন্দ্রিক শ্রেয়ভাবনার সঙ্গে বিপরীতে ক্রোধ ও প্রতিবাদকেও বেঁধে রাখেন। বিষয়-নিরপেক্ষ ভাবেও এই ভাষার নির্মাণ শিক্ষণীয়। উত্তেজনায় দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য না হয়ে চেতনার সমস্তটায় আমরা সমভাবে আলোকিত হই। তাঁর ও অধ্যাপক মুস্তাফা নূরউল ইসলামের সম্পাদনায় পূর্বমেঘ ওই দশ বছর ক্রোধ ও ভয় তুচ্ছ করে এক জাতীয় দায়িত্ব পালন করে চলে। জাতীয় কিন্তু সর্বাংশে মানবিক।

১৯৭১-এর পর রাজশাহীতে পূর্বমেঘ-বাহিনী মিলিয়ে যেতে থাকে। আগেই রাজশাহী ছেড়েছেন ডক্টর এআর মল্লিক ও অধ্যাপক বদরুদ্দীন উমর। এবার একে একে চলে যেতে থাকেন প্রফেসর মুশাররফ হোসেন, প্রফেসর মুস্তাফা নূরউল ইসলাম, প্রফেসর সালাহ্উদ্দীন আহ্মদ, প্রফেসর ফজলুল হালিম চৌধুরী ও আরো কেউ কেউ। একাত্তরে শহিদ হন প্রফেসর মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ও প্রয়াত হন প্রফেসর মুখলেসুর রহমান। প্রফেসর জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীও রাজশাহী ছাড়েন ১৯৭৩-এ। জীবিত যাঁরা, তাঁদের সবার গন্তব্য 888sport app। এখন 888sport appsের রাজধানী। সেখানে তাঁদের অনেক কাজ। পূর্বমেঘ পরিবার ভেঙে যায়। তবে 888sport appয় এসেও তার দুই সম্পাদক আলাদা-আলাদা পত্রিকা বের করেন। মুস্তাফা নূরউল ইসলাম সুন্দরম এবং জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী দীপঙ্কর (মাসিক 888sport live footballপত্র ১৯৮৬-৯০)। পূর্বমেঘের ঐতিহাসিক ভূমিকার পুনরাবৃত্তি এরা কেউ করতে পারেনি। সময়ের সওয়ার হয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা তাঁদের সফল হয়নি।

888sport app এসে প্রফেসর জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী যোগ দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে। সেখানে উপাচার্য নিযুক্ত হন তিনি ১৯৭৬-এ। ১৯৮৪ পর্যন্ত দুদফা তিনি এই পদে ছিলেন। পরে ফিরে আসেন তিনি অধ্যাপনায়। তখন তিনি দেশের বিশিষ্ট চিন্তাবিদ, সম্ভ্রান্ত নাগরিক। উচ্চশিক্ষা বিষয়ে তাঁর অভিমত বাড়তি গুরুত্ব পায়। উদার মানবিক ধারায় তাঁর অবস্থান – ব্যক্তিক ও সামষ্টিক, দুই-ই – তাঁকে আলাদা মর্যাদার আসনে বসায়। শুধু বিদ্যার ছটায় চোখ-ধাঁধানো তাঁর কাজ নয়। এতে তাঁর সিদ্ধি প্রবাদতুল্য। তারপরেও তাঁর ভাবনা সচেতনভাবে চারপাশের মানবসমগ্র নিয়ে। তাদের সার্বিক কল্যাণে শিক্ষার  প্রসার ও তার ধারাবাহিকতা নিয়ে।

কিন্তু এতেই তাঁর বিবেচনা সর্বজনগ্রাহ্য, এমনকি বহুমানুষের গ্রাহ্য হবে, এটা আশা করা যায় না। কারো বেলাতেই নয়। কারণ বিষয়টি মানবভাগ্যের সম্ভাবনা নিয়ে, তার ভবিষ্যতের রূপরেখা নিয়ে। এই মানবভাগ্য কোনো সমতলীয় বাস্তবতা নয়; একক কোনো শীর্ষবিন্দুও নয়। শিক্ষা তাতে সর্বোত্তম সংযোগরেখা খোঁজে। প্রত্যয়ের বিভিন্নতায় সেই রেখাটিও নানা দিকে যায়। অথবা এমনকি, টুকরো-টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। সিদ্দিকী স্যার এ-বিষয়ে সচেতন ছিলেন। পরিবর্তনশীল, কোথাও-কোথাও তালগোল পাকানো, বাস্তব অবস্থায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার সঠিক পথটি নিরাসক্তভাবেই খোঁজ করেছিলেন। সেটা যে মরীচিকা, এটা বুঝতে তাঁর দেরি হয়নি। তাঁর ক্ল্যাসিক্যাল মানসতার প্রয়োগ-কাঠামো থেকে সরেও আসেননি। আমরা এইটিই 888sport apk download apk latest versionর সঙ্গে মনে রাখি। তিনি তাঁর 888sport appsে উচ্চশিক্ষা : সংকট ও সম্ভাবনা (২০০০), বইতে, অথবা আমার চলার পথে (২০০৩), আত্মজীবনীতে যে-স্বগতোক্তি করেছেন, তাতে কপটতার লেশমাত্র নেই। এসব থেকে শিক্ষণনীয় অনেক কিছু পাই। তবে সবকিছু নয়। তা আশা করাটাও এক যৌক্তিক ভ্রান্তি।

জীবনের শেষ প্রহরে তিনি ছিলেন ‘ছায়ানটে’র সভাপতি। তখনো তাঁকে ‘ছায়ানটে’র নানা অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দলবলের সঙ্গে ছুটে যেতে দেখেছি। অনেকেই আমরা নানা অজুহাত খাড়া করে দূরে সরে থাকি। তিনি তা করেননি। নির্বিকার প্রসন্নতা তাঁর অটুট থেকেছে সবসময়। শারীরিক গ্লানির ছাপ মুখে এতটুকু পড়েনি। আত্মপ্রচারের চেষ্টাও কখনো চোখে পড়েনি। তিনি তা পেছনে ফেলে এসেছেন বহুদূর। অথবা তা তাঁকে কখনোই বশীভূত করেনি। ক্ল্যাসিক জীবনবোধ এখানেও তাঁকে অবিচল রেখেছে। আমাদের বিস্ময় দিগন্ত পেরোয়।

তাঁর আশিতম জন্মবার্ষিকীতে প্রকাশিত সংবর্ধনা গ্রন্থের সম্পাদকীয়তে তাঁর অনুজ, আমার প্রিয় বন্ধু, আবদুল কাদের সিদ্দিকীর সম্পাদকীয় থেকে একটি অনুচ্ছেদের অংশবিশেষ উদ্ধৃত করে আমার এই অক্ষম রচনাটির ইতি টানি।  –

…(তিনি) একজন অপ্রতিদ্বন্দ্বী শিক্ষাবিদ, লব্ধপ্রতিষ্ঠ কবি, উচ্চমানের প্রাবন্ধিক, প্রসিদ্ধ কলাম লেখক, অতি উন্নতমানের সমাজসচেতন এবং সর্বোপরি অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তিত্ব – সবকিছু এক করলেও তাঁর পরিচয় অসম্পূর্ণ থেকে যায়। আমার সহজ চিন্তায় তাঁকে সজ্জন, অজাতশত্রু, দেশপ্রেমিক এবং স্বীকৃত অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তি ছাড়াও একজন আদর্শ পুত্র, যোগ্য স্বামী, স্নেহপ্রবণ ভ্রাতা, দায়িত্ববান পিতা ও অত্যন্ত আদরের পিতামহ – এক কথায় একজন পরিপূর্ণ ব্যক্তি নির্দ্বিধায় বলা যায়।

শুধু বলি, এতে দ্বিমত নেই।