ফিরে দেখা পূর্বদিগন্তে সেই রক্তলাল সূর্য

খণ্ড খণ্ড আকাশ আর জমি। র‌্যাডক্লিফ সাহেবের কেটে দেওয়া স্বাধীনতার মোটা দাগের ফল – ধর্মের নামে দাঙ্গা আর ক্ষমতার টানাহেঁচড়া। আজো চলে ! ইংরেজ হটানো যেন কারো ব্যক্তিগত স্বার্থ ছাড়া আর কিছুই ছিল না। হাস্যকর, বোকা ভারতবর্ষ বরাবর বিভাজনে আর টুকরো ভূখণ্ডের ক্ষমতার লোভে এতটাই মত্ত ছিল যে, জমিপ্রাপ্তির জন্য নিজের অস্তিত্বের নাম ক্ষয়ে গেছে, বুঝতেই পারেনি। কাদের জন্য ছিল, স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা? সাধারণ মানুষের জীবনে কীই-বা বদলে গেল? গদি ঠিক থাকে। একটা গদির জায়গায় দশটা গদি তৈরি হয়। তারপর? তারপর আর কিছুই বদলায় না। সাধারণ মানুষ সাতচল্লিশ, একাত্তরের স্বাধীনতার নামে ব্যবহৃত হয় বারবার! স্বপ্ন দেখে! তারপর, সোনালি স্বপ্নের চাপে পিষ্ট হয়। সবশেষে, বিভেদ আর বিভাজনের কোনো শেষ দেখতে পায় না কেউ।

১৬ই আগস্ট, ২০২৪। দুপুর তিনটা তিরিশ মিনিট। সেদিনের আকাশ ঝকঝকে নীল। চারদিনের ভারী বৃষ্টি শেষে হালকা মিষ্টি রোদ। পান্থপথের উদ্দেশে রিকশা নিয়ে ধানমণ্ডি পেরিয়ে যাচ্ছি। আশেপাশে তাকাতেই দেয়ালের গ্রাফিতিগুলো চোখে পড়ে যায়। দেখতে দেখতে মনে পড়ে আঠারো শতকের ফ্রেঞ্চ চিত্র888sport live chatী Eugène Delacroix-এর আঁকা ‘The Massacre at Chios’ ছবিটি। রোমান্টিক ঘরানার এই 888sport live chatী সমকালীন বা ঐতিহাসিক নানা ঘটনাকে বিষয় করে ছবি আঁকতেন সে-সময়ে। যাক, 888sport live chatীর এই বিশেষ ছবিটির প্রসঙ্গে পরে আসছি। আমি যে কারণে বেরিয়েছিলাম, সে প্রসঙ্গে বলে শেষ করি। যাচ্ছিলাম দৃক গ্যালারিতে ‘বুক পেতেছি, গুলি কর’ প্রদর্শনীটি দেখতে। বেশ কিছুদিন ধরে বৃষ্টির কারণে যেতে পারছিলাম না। দৃকের লেভেল-টু’র প্রদর্শনীটিতে ঢুকতেই নাক বরাবর চোখে পড়লো সাইদের মায়ের সেই আর্তনাদ ভরা কান্না – ‘হামার বেটাক মারলু কেনে’।

বাঁ দিক থেকে হেঁটে দেখা শুরু করলাম। সাধারণত আলোকচিত্রের একটা নিজস্ব ভাষা আছে, যে-ভাষার বেশির ভাগটাই সত্য, কল্পনার আশ্রয় তাতে তেমন একটা নেই বললেই চলে। আজ থেকে প্রায় একশ বছর আগে যখন ফটোগ্রাফি বিপুল জনপ্রিয়তা পেতে থাকল, তখন রিয়েলিস্টিক পেইন্টিং বা মডেল দাঁড় করিয়ে ছবি এঁকে সময়কে ধরে রাখার প্রবণতা কমতে থাকল। নিঃসন্দেহে, ফটোগ্রাফির আগমন একটা বৈপ্লবিক আবিষ্কার। চিত্র888sport live chatে অ্যাবসট্রাক্ট এক্সপ্রেশনিজমের জন্ম হওয়ার পেছনে এই ফটোগ্রাফিই উনিশ শতকে ইউরোপজুড়ে প্রভাব বিস্তার করেছিল। গ্যালারিময় হেঁটে বেড়াচ্ছি আর খুব কাছে দাঁড়িয়ে ছবিগুলো দেখছি। প্রতিটা ছবির পাশে যে ছোট-ছোট মন্তব্য ছিল, খুঁটিয়ে পড়ছি। বিপ্লবের ছবির রং লাল হয়, জানতাম। কেন লাল হয়, তার অনেক কারণ নানাভাবে জেনে এসেছি। তবে, এই প্রদর্শনীর এক-একটা ছবিতে লাল রঙের প্রকোপ দেখে শিউরে উঠতে হয়। দৃক গ্যালারির লেভেল-টু’তে যেন রক্তের লালের ছড়াছড়ি। আসলে তো গ্যালারির ভেতরটা লাল নয়, পূর্বদিকে সূর্য উঠবে বলে রক্তলাল হয়েছিল 888sport apps। ঢুকতেই আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের লেখনীটি বড় করে চোখে পড়ল। প্রদর্শনীর বৃত্তান্ত ছিল তাতে। বামদিকে ইংরেজিতে আর ডানদিকে বাংলায় লেখা ছিল সে-বৃত্তান্ত। লক্ষ করলাম, রেভল্যুশনের শব্দার্থ হিসেবে আরবি ‘ইনকিলাব’ শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে। দ্বন্দ্ব নেই তাতে। বাংলার মাটিতে এই রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে যেদিন দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা’ শুনেছিলাম, সেদিন মনে হয়েছিল – সব আমাদের এই 888sport appsের দামাল ছেলে। দু-হাত পেতে নির্ভয়ে দাঁড়িয়ে যায় চিরচেনা সবুজ আর নীল মিশেলের অস্ত্রধারী ইউনিফর্মের সামনে। ছাত্রলীগকর্মীরা ছাত্রদের পিটিয়ে মারছে – এমন অনেক আলোকচিত্র দেখলাম। ভাবি, সহপাঠীকে এইভাবে রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য মেরে ফেলা যায়? সমাজটা কোথায় এসে উপস্থিত হয়েছে। ভাবনাহীনতার কালে জুলাই মাসে এই প্রজন্ম ঠিকঠাক ভাবিয়ে তুলেছিল। যে-ইউনিফর্মের কথা বললাম, তাও কোনো ভিনদেশি ইউনিফর্ম নয়; স্বাধীন দেশের স্বীকৃত রক্ষা বাহিনীর ইউনিফর্ম।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক 888sport world cup rateে বলা হয়েছে, গত ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অন্তত ৬৩১ জন ছাত্র-জনতা প্রাণ হারিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১৯ হাজার ২০০ জনের বেশি। 888sport world cup rateে আরো বলা হয়েছে, ৪৫০ জনেরও বেশি মানুষকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল এবং এই ২১ দিনের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮১ জন মারা গেছেন। (তথ্য : দ্য ডেইলি স্টার, ৯ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪)

প্রদর্শনীর আলোকচিত্রগুলো ক্রমান্বয়ে সাজানো হয়েছিল, তাই এক-একটি গল্প জীবন্ত ও চলমান হয়ে উঠছিলো চোখের সামনে। মুগ্ধ আর সাইদের গল্প নিয়ে আমরা সবাই অবগত। অনেক আলোকচিত্রে তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে আরো বহু আন্দোলনকারীকে দু-হাত দুপাশে ছড়িয়ে পুলিশের সামনে দাঁড়িয়ে যেতে দেখা গেছে। ছবিগুলো  দেখছিলাম আর ভাবছিলাম, আমার প্রাণের শহর, আমার দেশ এত নির্মম রূপ ধরতে পারে? কারফিউ চলাকালের ছবি দেখে, আর্মির গাড়ির বহর দেখে বুক কেঁপে উঠেছিল নতুন করে। স্বাধীন দেশে যুদ্ধবিধ্বস্ত দশা বলে কিছু থাকতে পারে আসলে? মনে হচ্ছিল, মুক্তিযুদ্ধের সেইসব সিনেমার মতো। তখন পশ্চিম পাকিস্তানিরা বাঙালিদের ওপর চড়াও হয়েছিল। আর এখন? এখন নিজ দেশের ছাত্রদের ওপর আক্রমণ চালালো একটি স্বাধীন দেশের মূল রক্ষাকর্তা। অবশ্য প্রদর্শনীতে সেনাবাহিনী আর ছাত্রদের সম্মিলিত উল্লাসের ছবিও দেখা গেছে বেশকিছু। আসলে, ঘটনাক্রমেই সব আলোকচিত্রকে টানানো হয়েছিল কি না।

প্রদর্শনীতে আরো দেখা গেছে আন্দোলনকারী ছাত্ররা তাঁদের নিহত ছয় সহযোদ্ধার প্রতীকী লাশ সামনে রেখে দাঁড়িয়ে আছে। শিক্ষার্থীদের আঁকা নানা গ্রাফিতির ছবি আর স্লোগান যেমন – ‘স্বৈরাচার দাদি, ছেড়ে দে গদি’, সঙ্গে স্বৈরাচারের মুখের দানবীয় প্রকাশ দেয়ালচিত্রে আলাদা করে পরিলক্ষিত হয়েছে।

আবার দেয়ালে বড় করে আন্দোলনকারীদের নানা বিখ্যাত হয়ে ওঠা আঁকা স্লোগান – ‘উন্নয়ন লাগবে না, পেট ভরে খেতে চাই’ দেখা গেল।

মর্মান্তিক সব দৃশ্য চোখে ভাসছিল। আলোকচিত্রের ভাষা যে কতটা স্পষ্ট আর সত্য হতে পারে, প্রদর্শনীটি দেখে অনুভব করতে পারলাম, যখন দেখলাম, ছোট্ট আহাদকে কোলে নিয়ে তার পিতা হাসপাতালের উদ্দেশে উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটে বেড়াচ্ছেন। গুলি আহাদের চোখে কোথা থেকে এসে বিঁধেছে, স্পষ্ট করে বলা যায় না, এমন লেখাও ছবির বর্ণনাতে লেখা আছে। আসলে ফটোগ্রাফিতে কোনো ভনিতা বা আরোপিত ঘটনার প্রতিফলন থাকা সম্ভব নয়। ফটোগ্রাফিতে হাতে আঁকা চিত্রকর্মের মতো কল্পনা ফুটে ওঠে না। সব ছবিই কখনো না কখনো সোশাল মিডিয়ার কল্যাণে দেখা হয়েছে আগে। কিন্তু এইভাবে একসঙ্গে দেখা হয়নি। একসঙ্গে এত মানবতার পরাজয়ের ঘটনা দেখার ভার বইতে পারা কষ্টসাধ্য। সাইদের মায়ের সেই আর্তনাদ বারবার কানে বাজছিল যেন – ‘তুই মোর ছাওয়াক চাকরি না দিবু না দে কিন্তু হামাক ছাওয়াক মারলু কেনে।’

অপঘাতের কোনো মৃত্যুই কাম্য নয়। মন ভারী হয়ে এসেছিল প্রদর্শনীতে হাঁটতে হাঁটতে। এ-আন্দোলন কি সত্যিই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিপক্ষ ছিল? মেট্রোরেলে আক্রমণকারী নিশ্চয়ই সাধারণ ছাত্রছাত্রী নন! মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নিশ্চয়ই তরুণ সমাজও বাঁচে। আমি বাঁচি। আপনিও বাঁচেন। মুক্তিযোদ্ধারাও নিশ্চয়ই এই দিন দেখার জন্য দেশটাকে আমাদের কাছে এনে দেননি। আমরা এই কোটা পদ্ধতির কারণে নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সম্মানটাও বাঁচাতে ব্যর্থ হয়েছি বোধহয়! মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান বাঁচাতে পারিনি অন্যায়ভাবে কোটাপদ্ধতি চালু করে।

পৃথিবীর কোনো দেশে এমন কোটাপদ্ধতির নজির নেই। জবরদস্তি করে, দমন-পীড়ন করে তরুণসমাজকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আরো প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলেছি কি না – এখন এখানে দাঁড়িয়ে বোঝা মুশকিল। দৈনিক যায়যায়দিনের ইউটিউট চ্যানেলের একটি সাক্ষাৎকারে ছাত্র-আন্দোলনের শহিদ ফাইয়াজের খালা বলছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়েছিলাম, বীরেরা কীভাবে জীবন দেন, পড়েছিলাম। ফারহান দেশের জন্য সেইভাবেই জীবন দিয়েছে।’

তাঁর এই বক্তব্য শুনে মনে হলো, ফারহান মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধ কোনো চেতনা থেকে উঠে আসেনি। তাহলে এই তরুণ প্রজন্মকে আমরা অনেকভাবেই ভুল বুঝেছি। বুঝতে পারিনি, তারা দেশ নিয়ে ভাবে। বুক চিতিয়ে দাঁড়ায় মৃত্যুর মুখোমুখি। আর স্বাধীন একটি দেশে নানা মানুষের নানা মত থাকতেই পারে। তাই বলে ভিন্ন চেতনার হলেই মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা যায় না।

৫ই আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর দুর্বৃত্তদের দ্বারা যত নাশকতা ঘটেছে, সেসব আলোকচিত্রও দেখলাম প্রদর্শনীতে। মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ভাঙা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে জুতার মালা পরানো, ধানমণ্ডি বত্রিশ নম্বরের বাড়ি পোড়ানোসহ গণভবনের উল্লাস মিছিল থেকে শুরু করে লুটপাট – সবকিছুর ধারণকৃত চিত্রের দেখা মিলল প্রদর্শনীতে।  মৃত্যুমিছিলে ৫ তারিখের আগে-পরে মানুষের জয়-পরাজয়, মানবতার জয়-পরাজয় সবটাই আছে। আমরা স্বপ্ন দেখি, এত মানুষের রক্ত বৃথা যাবে না। দেশ একটা সুবিচারের, দুর্নীতিমুক্ত দিশা খুঁজে পাবে। আমরা কামনা করি, ঠিক যে-কারণে পথে নেমেছিল সকলে, তারপর জীবন দিয়েছিল – সে-স্বপ্ন হয়তো একদিন বাস্তব রূপ নেবে।

জুলাই ও আগস্ট মাস জুড়ে অনেক কিছুই দেখলাম। প্রদর্শনী থেকে ফেরার পথে আবার সেই গ্রাফিতিগুলোতে চোখ পড়ছিল। আরবি ক্যালিগ্রাফি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিরূপ মন্তব্যও দেখেছিলাম একবার। আমরা বিভাজন থেকে, হিংসার লড়াই থেকে কিছুতেই মুক্ত হতে পারছি না যেন। ক্যালিগ্রাফি একটা শক্তপোক্ত 888sport live chatমাধ্যম। দেয়ালে অপূর্ব হাতের কাজ দেখে মুগ্ধ হয়েছি। যে-কোনো 888sport live chatের বিরুদ্ধে চট করে না বুঝে অবস্থান নেওয়া যায় না। যেমন, ভাস্কর্য হটিয়ে ক্যালিগ্রাফি করছে, এমনটা প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। তেমনি, ক্যালিগ্রাফিগুলো আরবি ভাষায় লেখা মানেই সেটা 888sport live chat নয়, এমন ধারণা পোষণ করাও ভুল। বৈষম্যহীন সহাবস্থানের জন্যই যদি এত সংগ্রাম হয়ে থাকে, তবে এদেশে ভাস্কর্য, চিত্রকলা, সংগীত – সবকিছুই থাকতে হবে। 888sport appsের 888sport live chat ও সংস্কৃতির উপাদানগুলো হলো 888sport appsের অস্তিত্বের পরিচায়ক। আমার এ-লেখার শুরুর কয়েকটা বাক্যে ফেরত যাই আবার, 888sport apps বিভাজনের নয়। দেশ আমাদের সবার। ব্রিটিশ গেল, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গেল, দেশ স্বাধীনের পরও একের পর এক স্বৈরাচার পতন হলো।

এত কাণ্ডের পর বিভাজন থেকে আমরা সাধারণ মানুষ কতটা বের হতে পেরেছি – আজো প্রশ্ন। সহনশীলতার ঊর্ধ্বে কিছু নেই। রাষ্ট্রকে একটি সম্মানজনক অবস্থানে নেওয়ার লক্ষ্যে কোনো ধরনের বিভেদে পা না দিয়ে মিলেমিশে একটি বড় শক্তি হয়ে পৃথিবীকে দেখিয়ে দেওয়ার সময় এসেছে। তা না হলে অতলে তলিয়ে যাবো জাতি হিসেবে, এটুকু নিশ্চিত। সবশেষে, ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে গিয়ে আমরা পরিবর্তন, সংস্কার, উত্তরণ চেয়েছিলাম – ভুলে যাওয়া চলবে না।

ডেলাক্রোয়ার সেই বীভৎস ছবিতে ফেরত আসি। অটোমান সাম্রাজ্যের গ্রিসের ওপর দীর্ঘ চারশো বছরের শোষণের ফলে ১৮২১ সাল থেকে গ্রিসের সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রতিবাদ দানা বাঁধতে শুরু করে স্যামোস আইল্যান্ড থেকে। অটোমানরাও আক্রমণ করে, ঝাঁপিয়ে পড়ে স্যামোস আইল্যান্ডের নিরস্ত্র মানুষের ওপর। পৃথিবীর ইতিহাসের বড় ম্যাসাকার ঘটে যায় তখন। নব্বই হাজার মানুষ নিহত হয়, পঞ্চাশ হাজার আহত হয় এবং পঁচিশ হাজার মানুষ গ্রিস ছাড়তে বাধ্য হয়। পুরো ইউরোপ স্তব্ধ হয়ে যায় এমন ঘটনায়। ফ্রেঞ্চ 888sport live chatী তখন আঁকেন ‘The Massacre at Chios’। মানুষের আর্তনাদ, কষ্ট, অটোমান যুদ্ধঘোড়া আর সৈনিকের নৃশংসতা খুব স্পষ্টভাবে চোখে পড়ে ছবিটিতে।

পঁচিশে মার্চের কালরাতের বিভিন্ন আলোকচিত্র, ২০২৪ সালে দৃকের এ-প্রদর্শনীতে দেখা ভ্যানের ওপর স্তূপীকৃত লাশের ছবি আর ডেলাক্রোয়ার এই পেইন্টিং ‘The Massacre at Chios’ মগজে সেদিন মিলেমিশে একাকার হচ্ছিল। আসলে যুগে যুগে স্বৈরাচারীর একটাই চরিত্র। তাদের পতনের ধরনটাও একই রকম রক্তের মধ্য দিয়ে হয়। ইতিহাস এমনটাই বলে। আর নিরস্ত্র, সাধারণ মানুষ যুগে যুগে, দেশে দেশে – সকল ভোগান্তির ফল ভোগ করে।

২০২৪ সালে 888sport appsে যা ঘটে গেল; সে-আন্দোলন সর্বজনীন – এটা প্রথমে বিশ্বাস করা বাঞ্ছনীয়। এই আন্দোলন গণমানুষের। তাই নাম হয়েছে – ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’। সংস্কার যদি সত্যি করতে হয়, প্রতিহিংসার রাজনীতির পুরনো খেলা বন্ধ করে দেশের মানুষের মুখে দীর্ঘমেয়াদি হাসি ফিরিয়ে আনতে হবে আমাদের। বাংলার কৃষিশ্রমিক, পোশাকশ্রমিক, শিক্ষাশ্রমিক – সবার পক্ষ হয়ে কাজ করতে হবে। বেতন, মজুরি বাড়াতে হবে। পোশাকখাতে শান্তি ফিরিয়ে আনতে হবে। খেটে খাওয়া মানুষ কিছু দেখে না; সোশ্যাল মিডিয়া বোঝে না। পেট চেনে শুধু। পেটে টান পড়লে নিশ্চিতভাবে হুংকার তুলবে আবার। মানুষ অনেকটা বিশ্বাস নিয়ে পথে নেমেছিল, বাকস্বাধীনতার জন্য, অর্থনৈতিক স্বস্তির জন্য, দুর্নীতিমুক্ত 888sport appsের জন্য। আশা করি, আমরা সে-উদ্দেশ্য থেকে এক বিন্দুও ছিটকে পড়ব না।