888sport free bet login

প্রামত্মজনের মুক্তিযুদ্ধ

স্বপন নাথ

 

চা বাগানে গণহত্যা : ১৯৭১

অপূর্ব শর্মা

888sport live football প্রকাশ, 888sport app, ২০১৬

২৫০ টাকা।

অপূর্ব শর্মা তৃণমূলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চায় নিবিষ্ট একজন লেখক। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণা ও সাংবাদিকতায় তিনি অর্জন করেছেন কালি ও কলম তরুণ লেখক এবং বজলুর রহমান 888sport sign up bonus 888sport app download bd। চা বাগানে গণহত্যা : ১৯৭১ গ্রন্থে অপূর্ব শর্মা মুক্তিযুদ্ধের একটি অনালোচিত এলাকা উন্মোচন করেছেন। চা বাগানে বসবাসরত শ্রমিকরা সাধারণত জন্মবঞ্চিত, লাঞ্ছিত-শ্রেণির মানুষ, যেখানে শ্রমের মর্যাদা প্রজন্মামত্মরে উপেক্ষেত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সাধারণ বাঙালির সঙ্গে বিভিন্ন বাগানে অসংখ্য চা শ্রমিককে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। এ ছাড়া নির্বিচারে ধর্ষণসহ শারীরিক নির্যাতন পরিচালনা করে পাকিস্তানি সেনা ও এদেশীয় রাজাকার-আলবদর বাহিনী। মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে অনেকেই লিখেছেন, লিখছেন; কিন্তু নিসত্মরঙ্গ, নির্জন চা বাগানে নির্যাতন, গণহত্যার বিষয়কে কেউ নিষ্ঠার সঙ্গে খেয়াল করেননি। চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে চা শ্রমিকরা শামত্ম স্বভাবের। বাগান ও কোম্পানির নিজস্ব নিয়ম, বিধিসহ পরিস্থিতির কারণে তারা খুব নীরবেই জীবনযাপন করেন। ফলে, এত নির্যাতনের পরও যাঁরা বেঁচে আছেন তাঁরা মুখ খোলেননি। তাঁরা নিশ্চুপ থেকেছেন আত্মসম্মানবোধ ও দারিদ্র্যকেন্দ্রিক ভয়ের কারণে। বস্ত্তত, চা বাগানের সংরক্ষেত পরিবেশের ভেতর থেকে অপূর্ব শর্মা উদ্ধার করেছেন চা শ্রমিকের আত্মত্যাগের মহান গাথা ও হারিয়ে যাওয়া 888sport sign up bonusর যন্ত্রণাবিদ্ধ কথামালা। গ্রন্থটির পরিসর ছোট হলেও পঁচাত্তরটি শিরোনামীয় অধ্যায়ে বিভিন্ন ঘটনার বিবরণ তিনি উপস্থাপন করেছেন। বিভিন্ন ঘটনার চুম্বক-বিষয়কে তিনি শিরোনামভুক্ত করেছেন। ফলে, শিরোনামেই পাঠকের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। তিনটি পরিশিষ্টে যুক্ত করেছেন শহিদ চা শ্রমিক, জেলাভিত্তিক বাগান ও শ্রমিকদের বংশপদবির তালিকা। এ-তালিকায় চট্টগ্রাম ও পঞ্চগড়ের বাগানের উলেস্নখ থাকলেও মূল পাঠে তা আসেনি। লেখক তাঁর আলোচনা সিলেট বিভাগের চা বাগানগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছেন। পঞ্চগড়ে চা বাগান গড়ে উঠেছে স্বাধীনতা-উত্তরকালে আর চট্টগ্রামের প্রসঙ্গ কী কারণে বাদ পড়েছে, তা লেখক উল্লেখ করেননি। মাঠ পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণা এখনো অপ্রতুল। এর মধ্যে অপূর্ব শর্মা তৃণমূল সত্মর থেকে মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রহ করে অনন্য একটি কাজ সম্পন্ন করেছেন। ফলে, তিনি তাঁর স্বতন্ত্র অবস্থান চিহ্নিত করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণায়। তাঁর লিখিত ও প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর আলোচনা প্রাসঙ্গিক এ-কারণে যে, ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা বিভিন্ন 888sport live বা বই থাকলেও তৃণমূল পর্যায়ে সেগুলো তথ্যবহুল ও গবেষণাসুলভ নয়। একজন সাধারণ পাঠক হিসেবে আমার মনে হয়েছে যে, মুক্তিযুদ্ধে ব্যক্তিগত অবদান বা দুঃসাহসিক ঘটনা বিরল নয়। তবে মাঠ পর্যায়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহকৃত পূর্ণাঙ্গ সংকলন আরো প্রকাশ হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি। তৃণমূল পর্যায়ে যাঁরা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ বা গবেষণাকর্মে নিয়োজিত রয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে সৃজনশীল ব্যক্তি অপূর্ব শর্মার নামও যুক্ত হলো। আঞ্চলিক পরিসরে হলেও তিনি এ-বিষয়ে উদাহরণতুল্য কয়েকটি গ্রন্থ লিখেছেন।

যুদ্ধকালীন ঘটনাবলির তথ্য তিনি মাঠ পর্যায়ে সংগ্রহ করেছেন। একইসঙ্গে যাঁরা শরণার্থী না হয়ে এখানে রয়ে গেছেন, নিশ্চিত তাঁরা প্রতিদিন অতিবাহিত করেছেন ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে, সে অন্ধকারাচ্ছন্ন দিনগুলোর তথ্যও সংগ্রহ করেছেন তিনি। কারণ, জনমানুষের প্রাত্যহিক সংগ্রাম ও জীবনের লড়াই ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবেই বিবেচিত। প্রসঙ্গত, ১৯৭১-এ সাধারণ বাঙালিসহ চা শ্রমিক যাঁরা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন, তাঁদের অনেকেই জনসমাবেশে অপ্রকাশিত থাকার চেষ্টা করেছেন। সময়ের পরিবর্তনে বিপরীত শক্তির উত্থানে অনেকেই কষ্ট বুকে চেপে রেখে পরিচয় গোপন রাখেন। মুক্তিযুদ্ধে সম্পদ-সম্পত্তি ও স্বজন হারিয়ে ’৭১-এর পর অনেকে নিঃস্ব হয়েছেন। এ ছাড়া সামূহিক বাসত্মবতায় তাঁদের আর্থিক ও সামাজিক শক্তি ক্ষয় হয়েছে। ফলে সাহস করে আর দাঁড়াতে পারেননি। মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষাবলম্বনকারী মানুষের এ আর্থ-সামাজিক সমস্যা হয়তো অনেকেই বিবেচনা করেন না। এসব বিষয়ও অপূর্ব শর্মা তাঁর গ্রন্থগুলোতে নিয়ে এসেছেন। যে স্বপ্নে ও বাসনায় নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও যুদ্ধে গেছেন, তাঁরা এদেশে মুক্তিযুদ্ধোত্তর, বিশেষত ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকা–পরবর্তী পরিস্থিতি আশা করেননি। এসব ঘটনার নিরিখে, বিশেষত চা বাগানে শ্রমিকদের জীবন আরো বেশি বিচ্ছিন্ন ও ক্ষয়িষ্ণু।

লেখক অপূর্ব শর্মা নিজে ঘুরে-ঘুরে মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রহ করে চা বাগানে গণহত্যা : ১৯৭১সহ কয়েকটি বই লিখেছেন। তিনি গ্রহণ করেছেন মুক্তিযোদ্ধা, সংগঠক ও শহিদ পরিবারের উত্তরাধিকারী এবং সহযোদ্ধাদের সাক্ষাৎকার। তাঁর আলোচিত গ্রন্থসমূহে তিনি অনেক অজানা তথ্য দিয়েছেন, যা আমরা এর আগে কখনো জানতে পারিনি। একজন পর্যবেক্ষক ও তথ্যসংগ্রহকারী হিসেবে নির্মোহ থাকার চেষ্টা করেছেন। বলা বাহুল্য, লেখক অপূর্ব শর্মা এ-বিবেচনায় অসামান্য কাজ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক তাঁর গ্রন্থগুলো হলো :

অনন্য মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি (২০০৯-১৪), সিলেটে যুদ্ধাপরাধ ও প্রাসঙ্গিক দলিলপত্র (২০১০), ফিরে আসেনি ওরা : মুক্তিযুদ্ধের এক অসমাপ্ত অধ্যায় (২০১৩), বীরাঙ্গনা কথা (২০১৩), মুক্তিসংগ্রামে 888sport promo code (২০১৪), মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর (২০১৬)।

উলেস্নখ্য, এদেশে শুধু নয়, সারা ভারতবর্ষে চা 888sport live chat প্রবর্তনের সঙ্গে এ-888sport live chatে নিয়োজিত শ্রমজীবনের বেদনাময় ইতিহাসও যেন একসূত্রে গাঁথা। অবিভক্ত ভারতে চা বাগান প্রতিষ্ঠা ও শ্রমিক নিয়োগকালে অনেক শ্রমিককে অকারণে প্রাণ দিতে হয়েছে। জঙ্গলাকীর্ণ পাহাড়, টিলা ও জমিতে নতুন আবাদে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে। সে-সময় থেকে পরবর্তীকালে বাসস্থান, খাদ্যসহ ন্যূনতম অধিকার প্রতিষ্ঠায় অনেক শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন। বারবার নির্যাতিত হয়েছেন। জীবনের কানাগলির বৃত্তে আটকে থাকায় তাঁদের জীবন কখনো আলোর স্পর্শ পায়নি। ১৯৭১-এ বঙ্গবন্ধুর আহবানে সাড়া দিয়ে তাঁরা ঊনসত্তরের গণআন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। শহিদ হয়েছেন প্রতিটি চা বাগানের অসংখ্য চা শ্রমিক। অপ্রিয় হলেও সত্য, প্রজন্মামত্মরে চা শ্রমিকরা আজো নিপীড়িত, নির্যাতিত এক জনগোষ্ঠী। উৎপাদনের সঙ্গে জীবনকে নিয়োজিত রেখেছেন না খেয়ে, জীবনের মূল্য না বুঝে। প্রায় দু-শতক থেকেই তাঁরা এ-সভ্যতার আলো থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। ভয়ে, আতঙ্কে পরাজিত হয়েছেন; কিন্তু কখনো তাঁরা নীতির প্রশ্নে আপস করেননি।

১৯৭০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৌকায় সামষ্টিক প্রত্যয়ে তাঁরা বিশ^াস স্থাপন করে এখনো অবিচল রয়েছেন। এ-বিশ^াস থেকে কেউ তাঁদের টলাতে পারেনি। তাঁরা অকাতরে দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা সামষ্টিক স্বার্থে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন; কিন্তু ব্যক্তিস্বার্থে কখনো কোনো বিষয়ে বিচলিত হননি। বাসত্মবতা হলো, ব্যক্তিস্বার্থের অস্থিরতা সাধারণত চা শ্রমিকদের মধ্যে লক্ষ করা যায় না। এত ত্যাগ ও কষ্টের জীবন তাঁদের, কিন্তু চা শ্রমিকদের অবদানের কথা কোথাও তেমন উলেস্নখ নেই। চা উৎপাদনে তাঁদের অবদান অস্বীকার করা হচ্ছে না, কিমত্ম মানুষ হিসেবে তাঁদের অধিকার পূরণে কোনো পক্ষই এগিয়ে আসেনি।

উলেস্নখ্য, চঞ্চল শর্মা, হেনা দাস, আবু কয়ছর খান, নিবেদিতা দাশ পুরকায়স্থ, রসময় মোহামত্ম, আহমদ সিরাজ, দীপঙ্কর মোহামত্ম, ইসহাক কাজল, ফিলিপ গাইন, মেসবাহ কামাল প্রমুখ চা 888sport live chatের প্রতিষ্ঠা, চা শ্রমিকদের আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ ও অবদান সম্পর্কে লিখেছেন। তবে
১৯৭১-এ চা শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন ও বাগানে গণহত্যা সম্বন্ধে প্রথম লেখক হলেন অপূর্ব শর্মা। অন্য বিশেষত্ব হলো, মাঠ পর্যায় থেকে সংগৃহীত তথ্য ও বিবরণ আর কোথাও নেই। লেখক অপূর্ব শর্মা এ-গ্রন্থ লিখে শূন্যতা পূরণের দায়িত্ব পালন করেছেন নিঃসন্দেহে। মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে নয় মাসব্যাপী চা বাগানে ব্যাপক গণহত্যা হয়েছে। এর মধ্যে লেখক পাঁচ শতাধিক শহিদের তালিকা উলেস্নখ করেছেন। প্রসঙ্গত, চা শ্রমিকরা সংঘবদ্ধ অবস্থায় বসবাস করেন। ফলে, প্রতি বাগানে বস্তি থেকে বস্তি হত্যা-নির্যাতনে  তাঁরা আক্রামত্ম হয়েছেন। বাগানের প্রথাগত নিয়মানুসারে তাঁদের বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগও ছিল না। অন্যদিকে ওই নিয়ম অনুযায়ী সংরক্ষেত বাগান-সীমানার বাইরে সাধারণ বস্তিবাসীর সঙ্গে মেলামেশার কোনো অধিকার তাঁদের নেই। এ-অবস্থায় চেষ্টা থাকলেও বাইরে বের হয়ে বাঁচার অবস্থাও তাঁদের ছিল না। এক ধরনের বন্দিত্বের মধ্যে আরোপিত নির্যাতন ও মৃত্যুকে মেনে নিতে হয়েছে। অপূর্ব শর্মার তথ্য থেকে জানা যায়, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যেদিন, যখন যে-বাগানে প্রবেশ করেছে, সেদিন তারা খুব সহজেই হত্যাকা- পরিচালনা করতে পেরেছে। কারণ, বাগানে সেনাবাহিনী, রাজাকার-আলবদররা প্রবেশ করতে কোনো বাধার সম্মুখীন হয়নি। অত্যমত্ম সাবলীলভাবে শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন চালাতে পেরেছে। লেখক বাগান থেকে বাগানে ঘুরে এ-ধরনের তথ্য সংগ্রহ করেছেন। সাধারণ মানুষের মতোই তাঁরা ১৯৭১-এর নির্যাতনের ভয়াবহ ঘটনাবলি গোপন রাখতে চেষ্টা করেছেন। লেখক অপূর্ব শর্মাসহ যাঁরা এ-বিষয়ে কাজ করেন, তাঁরা এগিয়ে না এলে ঘটনাবলি সবার অগোচরে থেকে যেত বলেই মনে হয়। বইয়ের শেষ মলাটে এমন মমত্মব্য করা হয়েছে। ‘গণহত্যার স্বরূপ বিশেস্নষণে বাংলার প্রামিত্মক সমাজভুক্ত চা শ্রমিকদের জীবনবাসত্মবতার দিকে ফিরে তাকিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-সন্ধানী নবীন গবেষক অপূর্ব শর্মা। চা বাগান বরাবরই ছিল লোকচক্ষুর আড়ালে, সেখানকার বহিরাগত শ্রমিকদের দুর্বিষহ জীবন আরো ভয়ংকর ট্র্যাজেডি-আক্রামত্ম হয়েছিল পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা অভিযানে। অথচ একাত্তরে চা বাগানে গণহত্যার অনেকাংশে আছে অন্ধকারে 888sport app, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে প্রামিত্মক অবস্থানে। একাত্তরে চা বাগান ও চা শ্রমিকদের জীবন-ভাগ্যে কোনো ভাষ্য তৈরি সহজ কাজ নয়।’  লেখক অপূর্ব শর্মা এ দুঃসাধ্য কাজটি সম্পন্ন করেছেন। চা বাগানে ব্যাপক গণহত্যার বাসত্মবচিত্র তিনি উপস্থাপন করতে সমর্থ হয়েছেন।  যেভাবে গণহত্যা হয়েছে, সেখানে অনেক মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদের নাম-পরিচয় অজানা থেকে যেতে পারে। অপূর্ব শর্মা যাত্রা শুরু করেছেন, হয়তো একদিন বেরিয়ে আসবে সেসব বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম, পরিচয় ও 888sport sign up bonus।

চা বাগানে গণহত্যার পেছনে অনেক যন্ত্রণাময় কাহিনি অনুক্ত থেকে গেছে। চা বাগানে পাকিস্তানি সেনারা যে নির্মমভাবে নির্যাতন করেছে, তা ভাষায় প্রকাশ করাও কঠিন। অপূর্ব শর্মা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মেজর শের খান ও সিন্দুর খান বাগানের তথ্য সংগ্রহে এমনই সাক্ষ্য দিয়েছেন, ‘বাগানবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, সীমামেত্মর বিভিন্ন বাগান থেকে ধরে এনে শুধু চা শ্রমিক জনগোষ্ঠীর কম করে হলেও অর্ধশত লোককে হত্যা করেছে সে।’
(পৃ ২১) এমনও হয়েছে, কোনো পরিবারের একজনও বেঁচে নেই। চা শ্রমিকরা স্বভাববৈশিষ্ট্যে নির্বিরোধ ও শামত্ম স্বভাবের। তাদের মাঝে সচেতনতারও অভাব রয়েছে। সেক্ষেত্রে ১৯৭১-এর গণহত্যার দুঃখভারাক্রামত্ম 888sport sign up bonus বহন করা ছাড়া তেমন কিছু করার ক্ষমতাও তাদের নেই। চা বাগানগুলোতে শুধু গণহত্যা নয়, ধর্ষণ ও ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে সীমাহীন। চা বাগানে এত নির্যাতনের কারণ কী? – এ-প্রশ্নের উত্তর-অনুসন্ধানে লেখক জানাচ্ছেন,

‘প্রথমত, চা-শ্রমিকদের অধিকাংশই সনাতন ধর্মের অনুসারী এবং তারা আওয়ামী লীগের সমর্থক;

দ্বিতীয়ত, সত্তরের নির্বাচনে শ্রমিকদের নৌকা মার্কায় ভোট দেয়া পরবর্তীকালে অসহযোগ আন্দোলনে যোগদান; তৃতীয়ত, ভাষাগত দিক দিয়ে চা শ্রমিকরা হিন্দিভাষী এবং ভারত থেকে আগত।’ (পৃ ১৩)

এ ছাড়া লেখক পর্যবেক্ষণ করেছেন যে, চা শ্রমিকদের ওপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্ষক্ষাভ আগে থেকেই জমাটবদ্ধ ছিল। তবে শুধু শ্রমিক নয়, এদেশীয় দোসরদের মাধ্যমে যখন নিশ্চিত হয়েছে যে, কোনো মালিক বা ব্যবস্থাপক মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক, তাঁকে তারা রেহাই দেয়নি।

১৯৭১-এর 888sport sign up bonus নিয়ে যাঁরা এখনো বেঁচে আছেন, পরিস্থিতি ও জীবনের কঠিন বাসত্মবতায় তাঁরা ক্ষতকে অংশত চেপে রেখেছিলেন। দ্বিধা ও আতঙ্কে 888sport app download for android করতে তাঁরা এখনো আটকে যান। লেখক কৌশলে একাত্তরের ভয়াল 888sport sign up bonus তাঁদের মনে জাগিয়ে দিয়েছেন। বর্ণনায় বোঝা যায়, তাঁরা ভুলে যাননি। লেখকের 888sport app গ্রন্থের মতো এ-গ্রন্থেও মর্মন্তুদ, বিষাদের আখ্যান লক্ষণীয়। খেজুরিছড়া বাগানের রামধন কৈরির স্ত্রী মুরতিয়া কৈরিকে যেভাবে হত্যা করা হলো তা মুরতিয়া কৈরির ছেলে মহেষ কৈরির বর্ণনায় লক্ষণীয় : ‘রাত ৮টায় বাগানের বাসিন্দা রাজাকার গফুর মিয়া এসে বাবার নাম ধরে ডাকাডাকি শুরু করে। বিপদ যে আসন্ন তা আর আমাদের বুঝতে বাকি থাকে না। তাৎক্ষণিকভাবে বাবা মাকে শোবার পালঙ্কের নিচে প্রবেশ করতে বলেন।… ঘরের মধ্যে মাকে না পেয়ে একজন সেনাসদস্যকে নিয়ে লাইটের আলো ফেলতেই মাকে পেয়ে যায়। টেনেহিঁচড়ে তাকে সেখান থেকে বের করে। আমরা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলে বন্দুকের বাঁট দিয়ে আমাদের পেটায় তারা। মাকে নিয়ে যায় ক্যাম্পে। নিরুপায় হয়ে আমরা বাগান ব্যবস্থাপক ফিলিপস সাহেবের কাছে যাই।

তিনি তাৎক্ষণিকভাবে তার গাড়িতে করে আমাদের নিয়ে ক্যাম্পের উদ্দেশে রওয়ানা হন। আমরা পৌঁছাতে পৌঁছাতে যা ক্ষতি হওয়ার তা হয়ে যায়। তিনি সেখান থেকে প্রায় অর্ধমৃত অবস্থায় মাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন; কিন্তু মাকে আমরা বাঁচাতে পারিনি।’ (পৃ ২৬)

888sport appsের বিভিন্ন স্থানে সাধারণ নিরপরাধ মানুষকে একই সঙ্গে জমায়েত অবস্থায় হত্যা করা হয়েছে – এমন ঘটনা অনেক। চা বাগানে শ্রমিকরা বস্তিতে একই সঙ্গে বসবাস করেন, সেক্ষেত্রে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণে সুবিধাও ছিল বেশি। যখন কোনো বাগান আক্রামত্ম হয়েছে, তখন তারা একই অপারেশনে অনেক শ্রমিককে হত্যায় সফল হয়েছে। এজন্য পৃথিবীতে তুলনা দেওয়ার মতো এরকম কোনো গণহত্যা আছে কিনা, তা আমাদের জানা নেই। বাগানের সবুজ প্রামত্মরে শুধু রক্ত আর রক্ত, আর মানুষের হাহাকার। দেওরাছড়াসহ কয়েকটি বাগানে এক দিনে ৬০ জনের অধিক শ্রমিক হত্যার ঘটনা লেখক উলেস্নখ করেছেন। এ হত্যাকা- থেকে বেঁচে যাওয়া ও মুক্তিযোদ্ধা অনুকূল গঞ্জু লেখককে জানিয়েছেন, ‘সেদিন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাই আমি। হায়েনারা যখন আমাদের লাইনে প্রবেশ করে, তখন ঘরের পেছনের দরজা দিয়ে আমি পালিয়ে চারাগাছের নিচে আত্মগোপন করি, যার ফলে আমাকে পায়নি।… শামিত্ম কমিটির সদস্যরাই সেদিন হায়েনাদের নিয়ে এসেছিল বাগানে। খায়রুল ইসলাম, জহুর মিয়া, আবদুল মিয়া, রমজান মিয়া, আহাদ মিয়া, গফুর মিয়া নিয়ে এসেছিল তাদের।’ (পৃ ৪৯)

শুধু হত্যায় তারা থেমে যায়নি। মৃত্যু নিশ্চিত করতে লাশ একত্রে সত্মূপ করে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। হত্যাকা–র পর বস্তিতে ঘরে-ঘরে আতঙ্কে জড়ো হয়ে থাকা 888sport promo codeদের ধর্ষণে তাদের কর্তব্য সম্পন্ন করেছে। এ হচ্ছে চা বাগানের মর্মামিত্মক একাত্তর। লেখক অপূর্ব শর্মা এমন ট্র্যাজিক ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া কলাপাড়ার চা শ্রমিক লখিন্দর ও নিমাইয়ের বিবরণ থেকে জানিয়েছেন, ‘শ্রমিকদের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পরও সেদিন নৃশংসতা থামেনি পাকিস্তানিদের। তারা পেট্রোল ঢেলে লাশগুলোকে জ্বালিয়ে দেয়। হত্যাকা–র শেষে বস্তির ঘরে ঘরে প্রবেশ করে চালায় 888sport promo code নির্যাতন। এ দেশীয় দোসররা চালায় লুটপাট।’ (পৃ ৮২)

প্রসঙ্গত, অপূর্ব শর্মা, তাঁর বীরাঙ্গনা কথা (২০১৩) গ্রন্থে চান্দপুর বাগানের চা শ্রমিক হীরামণি সাঁওতালসহ বারোজন 888sport promo codeর অবদানের কথা বিসত্মৃত উলেস্নখ করেছেন। মুক্তিযোদ্ধা হীরামণি সাঁওতালের ত্যাগের যে-উদাহরণ, তা থেকেই সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে চা শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন ও জীবনবাসত্মবতার অস্বাভাবিক প্রতিচ্ছবি।

আমরা সকলেই জানি তেলিয়াপাড়া যুদ্ধের কথা। তেলিয়াপাড়ায় ৩ নম্বর সেক্টরের দপ্তর স্থাপন করা হয়েছিল। এখানে অসামান্য সাহসিকতায় মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানিদের প্রতিরোধ করেন। প্রতিশোধ হিসেবে তেলিয়াপাড়ায় নিরীহ শ্রমিকদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়। তা ছাড়া তারাপুর চা বাগানে ৪০ জনকে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। এ ছাড়া যাঁদের হত্যা করা হয়েছে, তাঁদের ঘর থেকে মেয়েদের ক্যাম্পে নিয়ে যায় এবং ক্ষত-বিক্ষত কিংবা অর্ধমৃত অবস্থায় ছেড়ে বা রাস্তায় ফেলে দেয়।

অসংখ্য মৃত্যু আর রক্তের আখ্যানে অঙ্কিত চা-বাগানগুলোর সবুজ প্রামত্মর। লেখক তাঁর মতো সচেষ্ট ছিলেন সেসব আখ্যান গ্রন্থনে। এ-গ্রন্থের প্রতিটি পাতায় হত্যা-নির্যাতনের ঘটনা
পড়তে-পড়তে বিষাদের একটি কালো ছায়া গ্রাস করে নেয় মনোজগৎ। আপন অস্তিত্বের দিকে ফিরে তাকাতে প্রণোদিত করে। এখানেই এ-গ্রন্থের সার্থকতা। এ ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চায় একটি অনন্যগ্রন্থ হলো চা বাগানে গণহত্যা : ১৯৭১। বইয়ের পরিশিষ্টাংশে সংযোজিত হয়েছে বাগানভিত্তিক শহিদ চা শ্রমিকদের তালিকা, যা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। অপূর্ব শর্মা গ্রন্থের ভূমিকায় বলেছেন, ‘শুধু চা শ্রমিক নন, একাত্তরে বাগানে বসবাসকারী যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন তাঁদের প্রত্যেকের নাম, পিতার নাম, ঘটনার মাস, সম্ভব হলে তারিখ, কীভাবে হত্যা করা হয়েছে তা তুলে আনতে চেষ্টার কোনো ত্রম্নটি করিনি। যুদ্ধের ৪৩ বছর অতিক্রামত্ম হয়ে যাওয়ায় অনেক ঘটনায়ই আসত্মরণ পড়েছে; কিন্তু কালের গর্ভে এখনও হারিয়ে যায়নি সেসব বেদনার আখ্যান।’ লেখক সে-আসত্মরণ সরিয়ে সুপ্ত রক্তাক্ত চিহ্নগুলো স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তা বলা বাহুল্য। একই সঙ্গে তিনি আমাদের হয়ে সম্পাদনা করেছেন একটি অসামান্য কাজ।

এ-বইয়ের সূত্র ধরে চা বাগানগুলোতে একটি নিবিড় জরিপ চালানো যেতে পারে, যাতে বাদ পড়ে যাওয়া তথ্য, ঘটনা হয়তো বের হয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। লেখক অপূর্ব শর্মা বাগানের একাধারে সুন্দর ও দুর্গম পথ থেকে পথে হেঁটে এসব তথ্য সংগ্রহ করেছেন। ফলে, তিনি উপেক্ষেত একটি ক্ষেত্র নতুন করে উপস্থাপনে সমর্থ হয়েছেন।

চা বাগানে ক্রমশ নীরব থেকে মূক হয়ে থাকা মানুষের দুঃখের কথা শোনা কঠিন কাজ। পারিপাশি^র্ক বাসত্মবতা তাঁদের জীবনকে এভাবেই গড়ে নিয়েছে। তাঁদের উচ্চারণ তুলে বয়ানে গাথা আরো বেশি দুরূহ। এ গ্রন্থপাঠে এসব বিষয়াবলি এবং দুরূহ কাজটি সম্পন্ন করতে লেখকের সাহস প্রশংসনীয় ও স্পষ্ট। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক ইতিহাস, ঘটনার বিবরণসহ বহু গ্রন্থ লেখা ও প্রকাশিত হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ-উত্তর প্রজন্মের কাছে যা অত্যমত্ম গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রীয় আর্কাইভসের দলিল, তথ্যাদি ইতিহাসের আকর, সেসব নির্ভর করেই ইতিহাস চর্চায় সমৃদ্ধি ঘটবে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চায় মাঠ পর্যায়ের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং তৃণমূলের ইতিহাস জাতীয় ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করতে সহায়তা করবে বলে আমরা মনে করি। তৃণমূল মানুষের ত্যাগ, সংগ্রাম ও জীবনালেখ্য অত্যমত্ম গুরুত্বপূর্ণ; এর স্বীকৃতি ও ঋণ স্বীকার করতেই হবে আমাদের। আলোচিত চা বাগানে গণহত্যা : ১৯৭১ গ্রন্থটি প্রমাণ করে, লেখক অপূর্ব শর্মা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা, চর্চায় সৃজনশীল দায়িত্ব পালনে নিবিষ্ট রয়েছেন। r

 

 

 

 

মুক্তিযুদ্ধে এক 888sport promo code

আবুল হাসনাত

 

নিন্দিত নন্দন

ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী

শব্দশৈলী, 888sport app, ২০১৬

৪০০ টাকা।

 

লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে 888sport appsের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সে-সময়ে অবরুদ্ধ 888sport appsে কয়েক লাখ 888sport promo code সম্ভ্রম হারান। সে ছিল বড়ই দুঃখের সময়। অন্যদিকে প্রয়োজনে বাঙালির শৌর্য কত যে শিখরস্পর্শী হয়ে ওঠে, তা মুক্তিযুদ্ধে প্রমাণিত হয়েছে। বাঙালির দীর্ঘ ইতিহাসে এমন বীরত্ব, এমন
অসম সাহসের কোনো পরিচয় আর আছে কিনা ঐতিহাসিকরা সে-কথা নানাদিক থেকে বিশেস্নষণ করছেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সে-সময়ে বাঙালি নিধনযজ্ঞে মেতে উঠেছিল। 888sport appsের প্রত্যমত্ম অঞ্চলের গ্রামগঞ্জেও পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যে-হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল তা মানবেতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে আছে। হত্যাযজ্ঞে তিরিশ লাখ লোক প্রাণ হারান, কয়েক লাখ 888sport promo code ধর্ষিত হন।

যুদ্ধশেষে রাষ্ট্র ব্যাপক অর্থে এই 888sport promo codeদের নিয়ে কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করেনি বা সম্মান জানায়নি। তাঁরা দেশের জন্য লাঞ্ছিত হয়েছেন – গর্বভরে একথা উচ্চারণ করে  তাঁদের আখ্যা দেওয়া হয়েছিল ‘বীরাঙ্গনা’। পরবর্তীকালে সামাজিক ও অবহেলাজনিত কারণে তাঁদের অনেকেই লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান। অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করেন। যদিও কয়েক বছর থেকে তাঁদের অনেককে রাষ্ট্র ও সমাজ নানাভাবে সম্মান জানাচ্ছে।

যুদ্ধশেষে জানা যায়, বহু 888sport promo code আত্মসম্মানে ঘা লাগায় আত্মঘাতী হন। ধর্ষণের শিকার বহু 888sport promo code গর্ভবতী হয়ে পড়েন। এসব মেয়েকে পরিবার গ্রহণ না করায় তাঁরা 888sport promo code পুনর্বাসন কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণে বাধ্য হন। পুনর্বাসন কেন্দ্রে ও হোমে বহু শিশুকে রাখা হয়। অনেক শিশুকে বিদেশে দত্তক গ্রহণে ইচ্ছুক দম্পতিদের প্রদান করা হয়। পাশ্চাত্যের বেশ কয়েকটি দেশেও উলেস্নখযোগ্যসংখ্যক এই যুদ্ধশিশুদের পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মাদার তেরেসাও এই মানবিক কর্মে এগিয়ে আসেন। তাঁর পরিচালিত হোমে প্রতিপালনের জন্য তিনি কয়েকটি শিশু গ্রহণ করেন। মাতৃ-পিতৃ পরিচয়হীন বহু শিশু কালের প্রবাহে পাশ্চাত্যের কয়েকটি দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আজো কখনো-সখনো 888sport apps দেখতে আসেন। কে তাঁর মা তাঁরা জানেন না, তবু দেশমাতৃকা তাঁদের টানে।

বিগত শতকের একাত্তরে যখন 888sport appsে মুক্তিযুদ্ধ চলছে, সেই দুঃসময়ের কথা লিখিত হয়েছে একটি গ্রন্থে। গ্রন্থটি লিখেছেন এমন একজন 888sport promo code, যিনি ভাস্কর; যাঁর কাজ দেখলে অবন ঠাকুরের কথা মনে পড়ে যায়। প্রথাবদ্ধ ভাস্কর্য শিক্ষা নেননি বটে, তবে তাঁর কাজে ভাস্কর্যগুণ আছে। ছন্দ আছে। প্রকৃতির পরিব্রাজক তিনি। শুকনো কাঠ ও বৃক্ষের ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র কা- দিয়ে যে-অবয়ব গঠন বা সৃষ্টি করেন, তা 888sport live chatগুণে অনন্য হয়ে ওঠে। অবয়ব নতুন বিন্যাস পায়। এবং এই অবয়বেই তিনি  স্থাপন করেন গুল্মলতা। সবকিছু ছাপিয়ে এ হয়ে ওঠে 888sport live chatগুণসম্পন্ন এক ভাস্কর্য। অন্যদিকে বর্তমানে তিনি প্রতিবাদী এক কণ্ঠস্বরও। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকার্যে পাকিস্তানিদের লোমহর্ষক নির্যাতনের সাক্ষ্যও দিয়েছেন। কীভাবে তিনি নির্যাতিত হয়েছিলেন, সে-কথাও বলেছেন। কতভাবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাঁকে লাঞ্ছিত ও তাঁর সম্ভ্রমহানি করেছিল, তার বিবরণ দিয়েছেন।

ফেব্রম্নয়ারি বইমেলায় শব্দশৈলী প্রকাশনালয় থেকে বইটি প্রকাশিত হয়েছে। ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী লিখিত বইটির নাম নিন্দিত নন্দন।  বইটি পাঠ করলে আমাদের হৃদয় আর্দ্র হয়ে ওঠে এবং মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি বাহিনীর সকল পর্যায়ের সেনারা মানুষ হত্যার সঙ্গে যে কত 888sport promo codeলোলুপ হয়ে উঠেছিল, তা চোখের সামনে ভেসে ওঠে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অবরুদ্ধ 888sport appsে কয়েক লাখ 888sport promo codeকে ধর্ষণ ও নির্যাতন করেছিল – এ কথা জানা থাকলেও একজন 888sport promo code যখন সে-অভিজ্ঞতার অনুপুঙ্খ বর্ণনা দেন গ্রন্থে,  নবীন প্রজন্ম যাঁরা মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতা দেখেননি, তাঁদের জন্য এ এক অভিজ্ঞতা হয়ে উঠবে এবং যে-কোনো পাঠক নতুন করে বুঝতে বা জানতে পারবেন, 888sport appsে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরতা কতভাবে সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী-লিখিত বইটি যেন এক দলিল হয়ে উঠল।

নিন্দিত নন্দন গ্রন্থে ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী তাঁর সম্ভ্রম হারানোর বেদনা ও কষ্টের কথা লিখেছেন বিস্তারিতভাবে। এ-লেখা যেন হয়ে ওঠে তাঁর মনের ভার লাঘব। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানি সেনাদের লালসার বহিঃপ্রকাশ যে কতভাবে হতো, মুক্তিযুদ্ধের এত বছর বাদে বুকচাপা এক কষ্ট নিয়ে তিনি সে-কথা লিখেছেন।

দীর্ঘদিন তিনি তা বহন করেছেন বিষাদে ও যন্ত্রণায় বিদ্ধ হয়ে। মুক্তিযুদ্ধকালে অধিকৃত সেনাবাহিনী ছলে-বলে 888sport promo code ধর্ষণের ভেতর দিয়ে এক মানসিক উলস্নাসের স্বাদ পেত। বল প্রয়োগ, নির্যাতন ও বন্দুকের নলই ছিল তখন 888sport promo codeর সম্ভ্রমহানির উপায়। বহু 888sport promo code ধর্ষিত হলেও ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর মতো কেউ এই দুঃসহ কষ্টের কথা লেখেননি। সেদিক থেকে এ-বই হৃদয় মথিত করা তাৎপর্যময় এক আলেখ্য হয়ে উঠল।

প্রথম দিন যেদিন বুকচাপা কান্না নিয়ে ধর্ষিত হন তার বিবরণ পাঠ করার পর মন বিষণ্ণ হয়ে ওঠে। পরে বারবার নানা স্থানে তাঁকে সেনাবাহিনী ধর্ষণ করে। এক নৌবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা তাঁকে তার বাংলোতে ডেকে পাঠায় এবং বলে, তিনি মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করছেন। ছল করে আটকিয়ে মধ্যবয়সী এই অফিসার তাঁর সম্ভ্রমহানি করে।

জীবন বাঁচাতে ও সম্ভ্রম রক্ষার প্রাণামত্ম চেষ্টা করেও তিনি ব্যর্থ হন। নানাভাবে বহু লোকের দ্বারা তিনি ধর্ষিত হতে থাকেন। কখনো একজনের হাত থেকে পরিত্রাণ পেলেও আরেকজন যেন ওত পেতে থাকে ধর্ষণের অভিলাষ নিয়ে। তাঁর রচিত এই গ্রন্থ মনকে বিষণ্ণ ও বিষাদগ্রসত্ম করে তোলে। এ গ্রন্থ পাঠ করার পর বিসত্মৃতভাবে গুছিয়ে লেখাও অসম্ভব হয়ে ওঠে।

ফেরদৌসী মুক্তিযুদ্ধের সময়ে খুলনার একটি জুট মিলে চাকরি করতেন। অবরুদ্ধ খুলনায় চাকরিতে যোগদানের পর তিনি এক ঘেরাটোপে বন্দি হন ও ধর্ষিত হতে থাকেন। আর ’৭১-এর এপ্রিলের পর থেকে খুলনা ও খালিশপুর 888sport live chatাঞ্চলে পাকিস্তানপন্থী অবাঙালি, রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনী স্বাধীনতাকামী বাঙালিকে নিধন করার জন্য যে-যজ্ঞে মেতে উঠেছিল তা বিশদভাবে উঠে এসেছে এ-গ্রন্থে।

 

দুই

তাঁর বাল্য ও কৈশোর কেটেছে খুলনায়। খুলনায়ই মায়ের স্নেহে তিনি এক রুচিময় পরিবেশে বড় হয়ে ওঠেন। বাল্য ও কৈশোরকাল তাঁর  যে খুব সুখের ছিল, তা নয়।

গ্রন্থটিতে তাঁর বাল্য ও কৈশোরকালের বিকাশপর্বটিতে ধরা আছে সুখ ও দুঃখের আবরণে আচ্ছাদিত নানা ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধের এত বছর বাদে বুকচাপা এক কষ্ট নিয়ে অত্যমত্ম সরল ভাষায় তিনি সেই সময়ের কথা বর্ণনা করেছেন। কৈশোরকালের জীবনযুদ্ধের ও বেঁচে থাকার আকুতির কথা আছে একটি অধ্যায়ে। তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন মধ্যবিত্তের বেঁচে থাকার খুঁটিনাটি, অসচ্ছলতা ও প্রাত্যহিক নানা অনুষঙ্গ। এতদসত্ত্বেও কৈশোরকালে সে-সময়টা ছিল তাঁর বর্ণময়। গৃহের পরিবেশে ছিল সংস্কৃতিচর্চার আবহ। পিতার চাকরিসূত্রে খালিশপুর ও 888sport appয় অধ্যয়ন করেন তিনি। খুলনা থেকে দৌলতপুর, কখনো 888sport app, আবার খুলনায় কৈশোরকালে তাঁর যে পরিক্রমা এবং শিক্ষাগ্রহণকালে যে-জীবন অভিজ্ঞতা হয়েছিল, তা অত্যমত্ম মনোগ্রাহী ভাষায় তিনি বর্ণনা করেছেন। একসময় মাতামহ যখন প্রাদেশিক পরিষদের স্পিকার হন তখন 888sport appর স্পিকার ভবনের জৌলুসেও বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হয়। এই ভবনের কেতা এবং জৌলুসেরও কথা আছে বইটিতে। এই ভবনে তিনি বিস্ময়মিশ্রিত দৃষ্টিতে যা অবলোকন করেছিলেন তার বর্ণনাও খুব কৌতূহলোদ্দীপক। যদিও রাজনৈতিক কারণে মাতামহ বেশিদিন স্পিকার থাকতে পারেননি। 888sport appর সিদ্ধেশ্বরী স্কুলে পাঠ গ্রহণকালে শিক্ষক হিসেবে পান জাহানারা ইমামকে। স্কুলের শিক্ষা শেষে তাঁর বিয়ে হয়। এই বিয়ে খুব একটা সুখের হয়নি। স্বামীর পীড়নের ফলে তাঁর বিবাহিত জীবন হয়ে পড়েছিল দুর্বিষহ।

এই পর্যায়ে তিনি উপলব্ধি করেন, তিনি প্রতারিত হয়েছেন। তবু সংসার ও বিবাহিত জীবনকে সুখময় করার জন্য তাঁর চেষ্টা ও সংগ্রাম ছিল। মামা এই সময় আর্থিক সাহায্য ও নির্ভরতা না দিলে হয়তো তিনি মানসিকভাবে বিপর্যসত্ম হয়ে যেতেন। পরবর্তীকালে স্বামী তিন সন্তান ও স্ত্রীর দায় বহন না করায় এবং জীবনসংগ্রামে বিপর্যসত্ম হতে-হতে যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়, তখন তিনি খুলনা জুট মিলে অনেক চেষ্টার পর চাকরি পান। এই চাকরি কিছুদিনের জন্য স্বস্তি এনে দিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এই স্বস্তি অপসৃত হয়। এই সময় অবাঙালি অধ্যুষিত জুট মিলের পরিবেশ ও নানা অভিজ্ঞতার কথা আছে গ্রন্থে।

স্বামীর প্রতারণার কথা তিনি অকপটে বর্ণনা করেছেন। পতি প্রতারক, দায়িত্বহীন হওয়া সত্ত্বেও দশটি বাঙালি রমণীর মতো জীবনসংগ্রামে পর্যুদসত্ম না হয়ে একটি পথ খুঁজে নেন। চাকরি নিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। মা এই সময় তাঁকে সর্বাত্মক সাহায্য করেছিলেন। আজ থেকে ছেচলিস্নশ বছর আগেকার কথা লিখতে গিয়ে তাঁর মন যে কত বিষণ্ণ ও ফের রক্তাক্ত হয়েছে, তা পাঠ করলে উপলব্ধি করা যায়। সন্তান পালন ও জীবনধারণের জন্য এই চাকরি যে কত অত্যাবশ্যকীয় হয়ে উঠেছিল সে-কথাও তিনি বলেছেন এ-গ্রন্থে। এই চাকরিজীবনে তাঁকে নিরমত্মর সংগ্রাম করতে হয়েছে। সে-সময় তিনি দেখতে ছিলেন সুশ্রী ও সুন্দরী। উর্দু, বাংলা ও ইংরেজি ভালো বলতে পারতেন বলে অনেকের কাছে আকর্ষণীয় এবং লোভনীয় এক 888sport promo code বলে বিবেচিত হয়েছিলেন।

জীবনসংগ্রাম ও নানা অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে একাত্তরের ভয়াবহ দিনগুলোর সম্মুখীন হন। বাড়ির সম্মুখে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে ব্রাশফায়ারে একসঙ্গে চোদ্দোজনকে মেরে ফেলতে দেখেছেন তিনি। এই হত্যাযজ্ঞ তাঁর হৃদয়কে দীর্ঘদিন বিষাদগ্রসত্ম করে রেখেছিল। এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছিল খুলনা-খালিশপুরে রাজাকারদের মুক্তিবাহিনীর খোঁজে নানা ধরনের পীড়ন। নবীন-যুবা কেউ তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। মৃত্যুদৃশ্য অবলোকন, ভয় এবং ত্রাসের মধ্যে জীবনযাপন, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও অবাঙালিদের প্রতাপ নিত্যসঙ্গী ছিল। গ্রন্থটির ’৭১-এর অধ্যায়টিতে তাঁর নিজের বেঁচে থাকার সংগ্রাম ও সম্ভ্রমহানি যেমন বিধৃত হয়েছে, তেমনি আছে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের কথাও। অবরুদ্ধ খুলনা-খালিশপুরে অস্ত্রে ও মারণাস্ত্রে সুসজ্জিত একটি আধুনিক বাহিনীর প্রবল তর্জন-গর্জন হত্যাযজ্ঞ সত্ত্বেও মুক্তিযোদ্ধারা বেশ কয়েকটি সাহসী অপারেশন পরিচালনা করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে বিপর্যসত্ম করে তুলেছিল। তাঁর বিবরণও উঠে এসেছে এ-গ্রন্থে। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বামী তাঁকে পরিত্যাগ করে এবং সন্তানদের নিয়ে কিছুদিনের জন্য তিনি নিরুদ্দিষ্ট হন। পাকিস্তানিদের পীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ তাঁকে উদ্ভ্রামত্ম করে দেয়। পালানোরও কোনো পথ খুঁজে পাননি তিনি। অসহনীয় সেই পরিবেশ সুস্থ চিন্তাশক্তিকে বিনষ্ট করে দিয়েছিল। সন্তানদের জন্য এবং সম্ভ্রমহানির  যে শূন্যতা এসেছিল তাঁর জীবনে তা সত্যিকার অর্থেই ছিল অসহনীয়। বেঁচে থাকার সমসত্ম অবলম্বন যখন চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গিয়েছিল, সেই সময় জীবন বিপন্ন জেনেও একজন উদার হৃদয়ের মানুষ নির্ভরতা নিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন তাঁর কাছে। পাকিস্তানিরা তাঁকে  উপর্যুপরি ধর্ষণ করেছে জেনেও পরম বন্ধু হিসেবে যিনি তাঁকে গ্রহণ করেন ও জীবনসঙ্গী হন তাঁর। তাঁর সঙ্গে সখ্যেরও বর্ণনা দিয়েছেন তিনি। এই সখ্য আজো অব্যাহত আছে। যদিও সেই পরিবার তাঁকে গ্রহণ করেনি ও যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়নি। মানসিক চাপ তাঁর সঙ্গে পারস্পরিক 888sport apk download apk latest version ও ভালোবাসার এবং বিশ্বাসেরও এক ছবি পাই আমরা। ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর এই জীবনসঙ্গীর প্রণয় ও ঔদার্য গুণও আমাদের মুগ্ধ করে।

ভেবেছিলাম, বইটি প্রকাশ হওয়ার পর বিভিন্ন সাময়িকী ও এ দেশের মননজীবী ওদের মধ্যে এক আলোড়ন সৃষ্টি হবে এবং এ নিয়ে
কথাবার্তা হবে। তা হলো না দেখে একটু ব্যথিত হলাম।

এ-বই পাঠ করলে যে-কোনো পাঠকের হৃদয়মন বিষাদগ্রসত্ম হবে এবং একই সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর অসমসাহস ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নৃশংস বর্বরতার দিকটি চোখের সম্মুখে ভেসে উঠবে। r

 

 

 

সংগীতের বিস্মৃত জগৎ

শুচিশ্রী রায়

 

বিঠ্ঠনবাঈ | রেবা মুহুরী |

সম্পাদক :

ঋতপ্রভ বন্দ্যোপাধ্যায়,

দে’জ পাবলিশিং কলকাতা,  ২০১৫ ১৮০ টাকা।

 

যাব কি যাব না ভাবতে-ভাবতে পৌঁছতে অনেক দেরি হয়ে গেছিল। রেবাদি তখন বেশ অসুস্থ। 888sport sign up bonus হারাচ্ছেন মাঝে-মাঝে; কিন্তু গান শুরু করলে আর তাঁকে সেই সময়ের পরিপ্রেক্ষেতে ধরে রাখা যেত না। কলকাতার একটি বিশিষ্ট প্রকাশনা কর্তৃপক্ষ আমাকে বলেছিলেন রেবাদির সাক্ষাৎকার নিতে। তাঁরা বইও প্রকাশ করবেন। ওঁর অসুস্থতার কথা ভেবে সেই কাজেও দেরি করে ফেলি স্বভাববশত। উনিও চলে গেলেন। ঋতপ্রভ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পাদনায়, দে’জ পাবলিশিং থেকে প্রকাশিত বিঠ্ঠনবাঈ বইটি চোখে পড়া মাত্র চমকে উঠেছিলাম। অনেক কথা সুগন্ধের মতো ভেসে এসেছিল পাতা উল্টানো মাত্র। এসব কথা কতবার যে শুনেছি রেবাদির কাছেই। তবে বিঠ্ঠনের কথা, নাম কখনো শুনিনি। হয়তো মনে-মনে গল্প গাঁথছিলেন তখন। লেক গার্ডেনসের একতলার নিরাভরণ ফ্ল্যাটের ঘরটিতে ঢোকার আগেই দেখতাম রাস্তার দিকের জানালার পরদা সরিয়ে তাকিয়ে আছেন। ছোট খাটের ওপর বসে থাকতেন। মাথাভরা সাদা চুল উঁচু করে আলগা খোঁপায় বাঁধা। গায়ের রং আর চুলের রঙে তফাৎ নেই। দেয়ালের দিকে তাকিয়ে থাকতেন আধবোজা চোখে। ইষ্টদেবতা কৃষ্ণ থাকেন সেই ঘরের সর্বত্র, এমনকি আসবাবপত্রেও, এমনটাই বিশ্বাস করতেন। আমি মাটিতে বসতাম গান শিখতে। হঠাৎ একদিন হাতের ইশারায় ডাকলেন আমায়। খাটের মাথার দিকের অল্প উঁচু কাঠের তক্তায় আঙুল দিয়ে টোকা মেরে কান পেতে আমাকেও সেখানে কান রাখতে বললেন। ‘ওখানে তানপুরা বাজছে, শুনতে পাচ্ছো?’ আমি যথারীতি কিছু শুনতে পেলাম না। উনি কিন্তু পেতেন। কানে হাতের মুঠো রেখে গান ধরতেন, ‘ঝুক অঙ্গনা পবন ঝকোরে/ নিদ না আয়ে হায় রাম’। এই গানটির মাঝে বিদ্যুৎ চমকের মতো হঠাৎ রাগ বসমত্মর সুর লাগাতেন। এমন তার আকস্মিকতা আর ভাব যে, আমার সর্বাঙ্গে কাঁটা দিয়ে উঠত। এখনো মনে করলে একই রকম অনুভূতি হয়। বিঠ্ঠন যখন বসমত্মরাগে গান ধরল, রেবাদি লিখছেন, ‘রাগ বসমত্ম যাবার সময় চন্দ্রকোষকে ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে যেন বলে, ‘ভাই আমাকে ভুলো না। তোমার মধ্যেই আমি আছি’। বিঠ্ঠন আর রেবা মুহুরী এক মানুষ অবশ্যই নন; কিন্তু মনের অবচেতনে আর সুরের আশ্রয়ে কোথায় যেন অল্প আলাপ-পরিচয় রয়েছে দুজনের। গোপন এক গভীর বেদনা আর আশ্রয় হারাবার শঙ্কায় অসহায় দুটি মানুষের মধ্যে সাঁকো তৈরি করেছে সংগীত।

মানুষ হিসেবে রেবাদি ছিলেন ছটফটে, প্রাণোচ্ছল ও স্পষ্টবাদী। গানেও সেই ব্যক্তিত্ব পরিষ্কার ধরা পড়ত। ঋতব্রত বেনারসের ঠুমরির বৈশিষ্ট্য হিসেবে একাধিক রাগের আসা-যাওয়ার কথা বলেছেন, যা ছিল রেবাদির গানের অন্যতম আকর্ষণ। সত্মম্ভিত হয়ে যেতে হয় রাগের প্রয়োগে অনেকটা এমন যা বিঠ্ঠনের গায়কিতেও পাওয়া যায় এই বইয়ে। রেবাদি যে বড়ী মোতিবাঈয়ের কাছে গিয়েছিলেন সেই ঘটনার কথা বলতেন যখন, কতই যে উদাস হয়ে যেতেন। আর ছিল সংগীত888sport live chatীদের প্রতি 888sport apk download apk latest version।

মামাবাবু, আমার গুরু, কুমার প্রসাদ মুখার্জি রেবাদির গানের অনুরাগী ছিলেন। ওনার কাছে কত যে গল্প শুনেছি। শতরঞ্জকে খিলাড়িতে গাইবার আগে সত্যজিৎ রায়কে রেবাদির গান শোনান মামাবাবুই, নিজের বাড়িতে গানের আসর করে। বিঠ্ঠনবাঈতে রয়েছে সেই কথা।

জ্যোতিষচর্চায় খুব আগ্রহী ছিলেন রেবাদি। আমার মনে আছে, উনি আমাকে বিশেষ যত্নে বানানো পান খাবার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তার খিলিটি হতে হবে নিখুঁত আর খাবার সময়ও নির্দিষ্ট। বিঠ্ঠনবাঈ বইটিতে প্রতিটি বিষয় এত সুন্দর করে ছুঁয়ে গেছেন সম্পাদক, যা কিনা প্রশংসার দাবি রাখে।

রেবাদির কোনো রেকর্ডিং কাছে ছিল না। আমাকে দিয়েছিলেন ঘরে রেয়াজ করার সময় ফ্যানের আওয়াজ, বাসন পড়ার শব্দ আর ছেলেপুলের হইহলস্নার মাঝে রেকর্ড করা দু-একটি গান। তার মধ্যেই ছিল ‘অব ক্যায়সে অঙ্গনা মে যাওগে গোরি’। পরে গানটি আমাকে শিখিয়েও দিয়েছিলেন। জয়পুরে থাকার সময় কেনা চায়ের সরঞ্জাম আর সাহেবি আমলের পিতলের অপূর্ব টি-সেটদুটি খুব স্নেহভরে আমাকে দিয়েছিলেন। সেই সমসেত্মর ভিতর থেকেও গুনগুন গান ভেসে আসে।

দে’জ পাবলিশিং থেকে প্রকাশিত বিঠ্ঠনবাঈ বইটির অন্যতম আকর্ষণ হলো সঙ্গে পাওয়া গানের সংকলনটি। বারোটি অবি888sport app download for androidীয় গান রেবা মুহুরীর নিজের গলায় গাওয়া। বিঠ্ঠনবাঈ যে-গানটি সমসত্ম সময় মনের মধ্যে নিয়ে চলতেন, ‘যোবন কি সবরস লে গয়ো’, সেটিও রেবাদি গেয়েছেন।

বিঠ্ঠনবাঈ একটি সময়ের ছবি। যে-সময়কে ঘিরে সংগীতের উত্থান, যার ভেতর সৃষ্টির তৃপ্তি আর জীবনের অতৃপ্তি, বঞ্চনা, অসহায়তা। এই গল্প কেবল বাইজি কুসুম বা সারেঙ্গিওয়ালা মেহের আলি অথবা বিঠ্ঠন হয়ে যাওয়া হিন্দু দুর্গাবতীর গল্পই নয়।

ধন্যবাদ জানাই দে’জ পাবলিশিং এবং ঋতপ্রভ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। আশা রাখছি আগামীতে তাঁদের এ-ধরনের প্রয়াস নিয়মিত থাকবে, যা আমাদের ভুলে
যাওয়া সময়কে বি888sport app download for androidের আসত্মরণ মুছে সযত্নে বুকে তুলে নেওয়ার সুযোগ করে দেবে। r

 

 

 

নির্জনে প্রতিধ্বনি

কামরুল হাসান

 

বাংলা 888sport app download apkর এক দারুণ টালমাটাল ও অস্থির সময়ে কবি মিনার মনসুরের কাব্যাঙ্গনে প্রবেশ। কেবল বাংলা 888sport app download apkই বলি কেন, পুরো 888sport apps তখন এক অস্থির ও টালমাটাল সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশটি মোকাবিলা করছে যুদ্ধবিধ্বসত্ম অর্থনীতি, বিপর্যসত্ম প্রশাসন এবং বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র। প্রবল আবেগের মাঝে তখন জেগে উঠছে প্রবল হতাশাও। মুক্তির বন্ধনহীন উচ্ছ্বাসের চূড়ামত্মরূপ সর্বত্র প্রতিফলিত, 888sport app download apkতে আরো অধিক। স্বাধীনতা-উত্তর সেই ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ সময়ে সকল কবিই ছিলেন উচ্চকিত ও আবেগতাড়িত। তাঁদের 888sport app download apkর ভাষা ছিল আগুনের মতো গনগনে, সেস্নাগানের মতো ঝাঁঝাল। এতটাই রাগী যে রাগ তখন 888sport app download apkর বিপক্ষে গিয়ে দাঁড়াচ্ছিল। যে-দশকে মিনার মনসুর 888sport app download apk লিখতে শুরু করেন সেই সত্তর দশক এক রাগী অথচ কাব্যসুষমাদীন অবয়ব নিয়ে দাঁড়িয়েছে মহাকালের সমুখে। কালের প্রভাবে মিনার মনসুরের 888sport app download apkয়ও সেই রাগ বা দ্রোহ এসে আগুনরং ছড়িয়েছে, কিন্তু তাঁর স্বাতন্ত্র্য হচ্ছে তিনি পরিমিতির ভাষা জানেন, জানেন কোথায় গিয়ে থামতে হয়। সম্প্রতি প্রকাশিত নির্বাচিত 888sport app download apkগ্রন্থে তিনি যেভাবে নিজের রচনা ছাঁটাই করেছেন, নির্বাচনে যে পরিমিতি দেখিয়েছেন – তা প্রশংসনীয়। নিজস্ব স্বভাবের মতোই তাঁর 888sport app download apk জনারণ্যে নির্জন, নির্জন তবু প্রামত্মরে প্রতিধ্বনিময়।

দীর্ঘকাল ধরে 888sport app download apk র্চ্চা করেও কবি মিনার মনসুর নিজের 888sport app download apk বা নিজেকে প্রচারের  দৃশ্যযোগ্য পথে হাঁটেননি। প্রবল ব্যক্তিত্ববোধের কারণে হতে পারেননি আপসকামী কিংবা স্তাবক; প্রকৃত কবি বলেই নিজেকে গুটিয়ে রাখা তাঁর স্বভাব। আশির গোড়ার দিকে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ এই অবরুদ্ধ মানচিত্রে (১৯৮৩) প্রকাশের সময় থেকে এ বছর  প্রকাশিত পা পা করে তোমার দিকেই যাচ্ছি পর্যমত্ম তাঁর কাব্যগ্রন্থের 888sport free bet মাত্র আট। এতে বোঝা যায়, তিনি বাহুল্য বা অধিক রচনায় বিশ্বাসী নন; এক্ষেত্রে তিনি অনেক বহুলপ্রজ সহযাত্রীর চেয়ে আলাদা। বর্তমান বছরটি কবি মিনার মনসুরের কাব্যপঞ্জিকায় এ-কারণে গুরুত্বপূর্ণ যে, এ-বছর তাঁর বাছাই 888sport app download apkর সংকলন নির্বাচিত 888sport app download apk প্রকাশিত হয়েছে। চলিস্নশ বছরের অধিককাল কাব্যর্চ্চা করে নির্বাচিত 888sport app download apk প্রকাশে তাঁর এই স্বেচ্ছাকৃত বিলম্ব প্রমাণ করে কাব্যসিদ্ধিতে তিনি প্রস্ত্ততি, অনুশীলন ও অভিজ্ঞতার নির্যাসকে মূল্যবান মনে করেন।

গত বছর বইমেলায় একই সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছিল প্রেমের 888sport app download apk ও দ্রোহের 888sport app download apk। বাংলা 888sport app download apkর দুই প্রধান আবেগ মিনার মনসুরের 888sport app download apkয় বারবার বিভিন্ন কাব্যিক প্রকাশে অনুরণিত হয়েছে। প্রেম ও দ্রোহ তাঁর 888sport app download apkরও প্রধান সুর ও আবেগ। যিনি বেড়ে উঠেছেন ষাটের উত্তাল দিনগুলোয়, 888sport app download apk রচনায় ব্রতী হয়েছেন সত্তরের গনগনে আগুনলাগা সময়ে – যখন একটি সদ্যস্বাধীন দেশ অস্থির সময় পার করছে; যার প্রথম কাব্য প্রকাশিত হয়েছে আশির স্বৈরশাসক শাসিত সময়ে, তিনি যে দ্রোহী হবেন – সেটাই সঙ্গত ও স্বাভাবিক। প্রেমের ভেতর যেমন দ্রোহ রয়েছে, তেমনি দ্রোহের ভেতর রয়েছে প্রেমের অধিষ্ঠান। এ দুটি প্রধান আবেগের মাঝে কবির পক্ষপাত প্রেমের প্রতি। তিনি সুস্পষ্টই বলেছেন, ‘যদি প্রশ্ন করা হয় আমার 888sport app download apkর মূল সুর কোনটি – প্রেম না দ্রোহ – তাহলে আমি বলব, অবশ্যই প্রেম। আর যা কিছু তা সবই এ-প্রেমেরই গর্ভজাত।’ যদিও এ পর্যমত্ম প্রকাশিত তাঁর আটটি কাব্য ও কিছু অগ্রন্থিত 888sport app download apk থেকে পাখির দুটি ডানার মতো উড়াল দিয়ে একপক্ষে প্রেমের 888sport app download apk আর অন্যপক্ষে দ্রোহের 888sport app download apk জড়ো করা হয়েছে, তবু দ্রোহের 888sport app download apkর ভূমিকায় তিনি এ সংশয় প্রকাশ করেছেন – ‘888sport app download apk কি আসলেই শতভাগ রাজনৈতিক বা প্রেমের হয় বা হওয়া সম্ভব – আমি নিশ্চিত নই।’ বিশুদ্ধ রাজনৈতিক 888sport app download apk বা প্রেমের 888sport app download apkকে কবির কাছে ‘সোনার পাথরবাটি’র মতোই মনে হয়েছে। তার এই সংশয় যৌক্তিক, কেননা একটি 888sport app download apkয় বিভিন্ন আবেগ ও চিন্তা ছায়া ফেলে যায়।

প্রেম – এই চিরমত্মন মানবিক আবেগ চর্যাপদের কাল থেকে শুরু করে মধ্যযুগের বৈষ্ণবকাব্য ও পুঁথি888sport live football ঘুরে, মাইকেল, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ প্রমুখ মহারথীর প্রতিভাবান হাত গড়িয়ে সাম্প্রতিক তরুণতম কবিকেও আলোড়িত করছে। তবে কালের পরিক্রমায় 888sport app download apkর গতিপথ পালটে গেছে, রোমান্টিক কবিদের কাল অবসিত হয়ে উদ্ভাসিত হয়েছিল আধুনিক কালের ঊষা, এখন সে-কালও উত্তরাধুনিক যুগের কাছে অপস্রিয়মাণ। উত্তরাধুনিকতার এই যুগপর্বে প্রেম প্রকাশের ধরনও পালটে গেছে। রোমান্টিক যুগের কামহীন শুদ্ধাচারী প্রেম আধুনিক কবিদের হাতে দেহময় যৌনগন্ধী হয়ে উঠেছে, কেবল সৌন্দর্য নয়, তাঁরা প্রত্যক্ষ করেছেন ক্ষয় ও বিনষ্টি। উত্তরাধুনিক যুগে প্রেম ব্যক্তিক আবেগের সংকীর্ণ গ– ছাড়িয়ে সামগ্রিকতার দিকে যাত্রা শুরু করেছে, হয়েছে শেকড়-অভিমুখী। মিনার মনসুরের প্রেমের 888sport app download apkর মূল সূত্রটি আধুনিকতার সঙ্গে গাঁথা। প্রেমের 888sport app download apkর ভূমিকায় তিনি বলেছেন তাঁর হৃদয়ের সুস্পষ্ট পক্ষপাত সহজ প্রকাশের দিকে। সামগ্রিকভাবে সে চেষ্টাই তিনি করেছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি যেন বাংলার মরমি কবিদের উত্তরসূরি। কতটা সহজবোধ্যভাবে কবির হৃদয়াবেগ পাঠকের কাছে তুলে ধরা যায়। সে ক্ষেত্রে প্রচলিত কাব্যিক অলঙ্কারসমূহ তিনি অনেকটাই এড়িয়ে গেছেন। 888sport app download apkর দেহকে প্রসাধন ও অলঙ্কারসর্বস্ব না করে মেদমুক্ত রাখতে চেয়েছেন। আজকের আধুনিক 888sport promo codeর প্রসাধন ও অঙ্গসজ্জার মতোই তাঁর 888sport app download apkর রূপ – নিরাভরণ নির্মেদ সৌন্দর্যে আলোকিত। মধ্যযুগের প্রেমের 888sport app download apkয় যেমনটা দেখা যায়, প্রেমিকার রূপবর্ণনা, তেমনটা কিছু নেই মিনার মনসুরের 888sport app download apkয়। রূপবর্ণনার চেয়ে তিনি জোর দিয়েছেন নায়িকার মানবিক সত্তার ওপর; বিচ্ছিন্ন নয়, সমগ্রতার ওপর। 888sport promo codeকে তিনি প্রসাধিত পুতুল হিসেবে দেখেননি, দেখেছেন মানবিক গুণাবলিতে ভাস্বর এক সামগ্রিক সত্তা হিসেবে।

মিনার মনসুরের প্রথম দিককার 888sport app download apkয় প্রেমের প্রকাশটি সরল আবেগে ঠাসা, কিন্তু সময়ের অগ্রগমনে সেখানে ক্রমশ ফুটে উঠেছে না-পাওয়ার ক্ষোভ, প্রেমিকার প্রতারণার প্রতি ঘৃণা। নরম প্রেমিকসত্তাটি নম্র উচ্চারণ ছেড়ে দ্রোহী উচ্চারণে উচ্চকিত হয়েছে। যে কাব্যদশকে কবি মিনার মনসুরের আবির্ভাব সেই সত্তরের দশক পরিচিত দ্রোহীকাল হিসেবে, যেখানে উচ্চকিত বিদ্রোহীর পোশাকের নিচেই রয়েছে অতৃপ্ত প্রেমিকসত্তা। মিনার মনসুরেও তাই দেখি। কবি মিনার মনসুরের 888sport app download apkয় একটি হাহাকারবোধ ছড়িয়ে আছে পঙ্ক্তিসমূহে, না-পাওয়ার বেদনায় নীল এ কবি, সেই নীলে ছোপানো নীলরঙা তাঁর 888sport app download apk। দ্রোহের লালের পাশে তা এক বৈপরীত্য সৃষ্টি করে বইকি! প্রাপ্তি নয়, অপ্রাপ্তি থেকেই তাঁর 888sport app download apkর জন্ম। এক্ষেত্রে আবদুলস্নাহ আবু সায়ীদের একটি উক্তি মনে পড়ছে। তিনি বলেছেন, ‘না পাওয়াই প্রেম, আর পাওয়া হলো বিবাহ।’ মিনার মনসুরের 888sport app download apkয় না পাওয়াই পরম পাওয়া, প্রেরণার উৎসস্থল। তবে অবাক হই যে প্রেমের 888sport app download apkর প্রথম 888sport app download apkটিই একটি রাগী 888sport app download apk, যেখানে হতাশ, ব্যর্থ কবি পরিচিত সবকিছু ছেড়ে দ্রোহী মেজাজে চলে যাচ্ছেন। অপ্রাপ্তি থেকে কেবল হাহাকার ও বেদনা নয়, সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভ, কখনো ক্রোধে তিনি ফেটে পড়ছেন। ‘যে যায়’, ‘তবু তুমি থাকো’, ‘এখনো ফিরতে পারো’ 888sport app download apkসমূহে এ ক্ষোভ বেশ প্রকাশিত।

‘এখনো ফিরতে পারো’ 888sport app download apkটি পতিত সময়ের একটি চালচিত্র; ভালোবাসার কোমলতার ভেতরেও সময় তার শ্বাপদ নখর, হিংস্র চোয়াল ঢুকিয়ে দিয়েছে।

সহসাই অন্ধকার গিলে খাবে পৃথিবীর শেষ

আলোটুকু; হলিউডি চৌকশ অভিনেত্রীর মতো

এই মায়াবী নিসর্গ চকিতেই পরে নেবে আরণ্যক বেশ।

মানব খোলসটুকু ছুড়ে ফেলে মুহূর্তেই পড়বে বেরিয়ে

নেকড়ের অগণিত জামত্মব নখর; তরী নয়,

ঘাটে ঘাটে দমত্ম প্রদর্শন করে স্বাগত জানাবে

এ-কালের ভয়াল কুমির!’

(‘এখনো ফিরতে পারো’, আমার আকাশ)

‘হলিউডি চৌকশ অভিনেত্রীর মতো/ এই মায়াবী নিসর্গ চকিতেই পরে নেবে আরণ্যক বেশ’ লাইনটি চমৎকার। তবে প্রতীকায়িত হলেও 888sport app download apkটি বেশ খোলামেলা, আড়ালহীন। ‘তবু তুমি থাকো’-তে তিনি লিখেন, ‘জানি অনন্যা অন্যের পণ্য হবে তুমি;’। পণ্যশাসিত মুনাফালোভী সময়ে কবি তার প্রেমাস্পদকে রক্ষা করতে অসমর্থ। এই অসামর্থ্যতা রূপ নেয় চূড়ামত্ম বিবমিষায়- ‘প্রেমও পচনশীল/ 888sport promo codeও পচনশীল/ 888sport live chatও পচনশীল/ ঈশ্বর মূলত এক পচনতাড়িত/ সম্মিলিত উৎকণ্ঠার নাম।’ শেষ দু’টি পঙ্ক্তি সাহসী ও দারুণ। ‘যে যায়’ 888sport app download apkয় প্রতারিত হবার ক্ষক্ষাভ থেকে উগরে দিয়েছেন ঘৃণা, অভিশাপে জর্জরিত করেছেন প্রেমাস্পদকে, সে অভিশাপ কখনো শালীনতার সীমাও ছাড়িয়েছে। ফুটে উঠেছে কবির সীমাবদ্ধতা, কেননা তিনি বেপথু প্রেমিকাকে ফেরাতে অক্ষম।

 

‘যে নধর মাংসপি- যায় দুলিয়ে বর্ণাঢ্য পাছা-

সেও যাক। যে নির্লজ্জ সত্মন যায়, নগ্ন

কামার্ত ঊরুরা যায়, উগ্র যোনি যায়,

অবিশ্বাসী ঠোঁট যায়, প্রতারক চক্ষু যায়, ভ্রষ্টা

চুল যায়, হন্তারক দুই হাত যায় -’

(‘যে যায়’, আমার আকাশ)

 

আমরা যদি 888sport app download apkকে মোটা দাগে হৃদয়জাত এবং মস্তিষ্কজাত – এই দুই ভাগে ভাগ করি, তবে নির্দ্বিধায় বলা যায়, কবি মিনার মনসুরের বেশিরভাগ 888sport app download apk হৃদয় বা আবেগসঞ্জাত। তাঁর 888sport app download apk যতখানি আবেগতাড়িত করে, ততখানি চেতনাতাড়িত করে না। খুব আবেগাপস্নুতও করে কি? আধুনিক সময়ের কবি হিসেবে তিনি নিরাবেগে প্রকাশ করেন হৃদয়ের তীব্রতম আবেগ। এখানেই বর্তমান সময়ের প্রেমের 888sport app download apk চিরকালীন প্রেমের 888sport app download apk থেকে আলাদা হয়ে যায়। পুরোদস্ত্তর নাগরিক এ কবির হৃদয়জাত 888sport app download apkর মাঝে অবশ্য চেতনা ও বোধের সমাগম আকছারই ঘটে।

যদিও তার আরাধ্য আবেগের, সত্যের সরল প্রকাশ, যেসব 888sport app download apkয় তিনি সরল আবেগ ছেড়ে তির্যক হয়েছেন, শেস্নষ ও হাস্যরস, এমনকি আত্মকরুণা জুড়ে দিয়েছেন, সেসব 888sport app download apk অধিকতর আড়ালসম্পন্ন ও আকর্ষণীয় হয়েছে। প্রথম দিককার কাব্যসমূহের সারল্য ছেড়ে শেষের দিককার কাব্যসমূহে আমরা এই বাঁকবদলটি লক্ষ করি। বস্ত্তত তার প্রথম দিককার 888sport app download apk অতিকথনে ভরপুর, যা ছিল তাঁর দশকের একটি প্রধান দুর্বলতা। পুনরাবৃত্তিতে ঠাসা এসব 888sport app download apk আবৃত্তির মঞ্চে যতটা আলোড়ন তোলে, পাঠে ততখানিই নিষ্প্রভ করে রাখে। সময়ের প্রভাব তিনি এড়াতে পারেননি; যদিও তাঁর ব্যক্তিমানস ও কবিসত্তার ভেতর একটি লাজুক, সংগোপন ও নম্র সত্তা রয়েছে। আচরণ ও ব্যক্তিত্বে এই নম্রপ্রকাশটি দ্রোহী মানুষটিকে প্রেমিক বানিয়েছে, তাঁর 888sport app download apkও অবশেষে দ্বারস্থ হয়েছে প্রেমের।

কবি অবশ্যই তাঁর 888sport app download apkর কথক, কিন্তু নিজেকে যতটা আড়াল করা যায়, 888sport app download apk ততই নৈর্ব্যক্তিক হয়ে ওঠে, একের অভিজ্ঞতা হয়ে ওঠে বহুর অভিজ্ঞতার অংশ। সময়ের হাত ধরে মিনার মনসুরের 888sport app download apk যত এগিয়েছে, এই নৈর্ব্যক্তিকতা তত প্রকাশিত হয়েছে। প্রথাগত প্রেমের প্রকাশ তাঁর প্রথম দিককার 888sport app download apkকে ভারি করে তুললেও তিনি ক্রমশই সামষ্টিক বোধের দিকে এগিয়েছেন।

কথোপকথনের একটি ভঙ্গি মিনার মনসুরের কাব্যদেহে অমত্মঃসলিলা নদীর মতো প্রবাহিত। তিনি যে কেবল তাঁর প্রেমিকার সঙ্গেই অবিরত কথা বলেছেন তা নয়, তিনি কথা বলেছেন প্রকৃতির সঙ্গে, তাঁর প্রবহমান সময়ের সঙ্গে, তাঁর পাঠকের সঙ্গে – যাদের হৃদয়সংবেদ তাঁর 888sport app download apkর গমত্মব্য। হৃদয়ের সরল আবেগ তিনি আড়াল করতে চাননি, সহজবোধ্য এক ভাষায়, উপমা-প্রতীক-রূপক-চিত্রকল্পের কাব্যিক ভার যতটা সম্ভব এড়িয়ে তিনি নিজ হৃদয়ের মর্মবাণী প্রকাশ করতে চেয়েছেন। প্রেমের 888sport app download apk বলেই এসব 888sport app download apkয় প্রথাগত ‘আমি’-‘তুমি’ সর্বনামের আধিক্য রয়েছে, রয়েছে অতিকথন। আমার কাছে বরঞ্চ অধিকতর প্রিয় তাঁর ছোট 888sport app download apkসমূহ। ‘ও আকাশ’, ‘ও তন্বী বিদ্যুৎ’, ‘শ্মশানের কাদাজল’, ‘হরিপদ’, ‘নবকৃষ্ণলীলা’ প্রভৃতি 888sport app download apk কেবল আয়তনে ছোট নয়, ভাবপ্রকাশে সংহত ও ব্যঞ্জনাধর্মী। যেমন ‘হরিপদ’ 888sport app download apkটি পুরোটাই উদ্ধৃত করছি :

 

‘চন্দ্রমলিস্নকার যদি সাধ হয় চলে যাক         চন্দ্রে –

নয়তো চুলায় –

তাতে তোর কী? তুই তো তলাহীন

এক তরকারিওয়ালা – তল্পিবাহক

কিনু গোয়ালা – দরকারের

বারোয়ারি হাটে! ঘাটে-মাঠে

মলিস্নকার কুমারিকা বাটে –

কাঁখের কলসি যদি

তার ভেসে যায় হেসে হেসে

চন্দ্রের চতুর চন্দ্রাতপে –

তাতে তোর কী হে হরিপদ –

গদগদ আদার বেপারি!’

(‘হরিপদ’, জলের অতিথি)

 

এই হরিপদ হচ্ছেন বাংলা প্রবাদের কেরানি, প্রেমের মানদ– আকবর বাদশাহর সঙ্গে যার তেমন কোনো পার্থক্য নেই। 888sport app download apkটির প্রকাশভঙ্গিটি অভিনব।
‘নবকৃষ্ণলীলা’ 888sport app download apkতেও সেই অভিনবত্ব ধরা পড়ে :

 

কালো মেঘ – সে যতোই কালো হোক – বুনো

মোষ রক্তচোখ আস্ফালনে

ভাঙুক আকাশ; রামপুরানিবাসিনী রাধিকার

পাকা চোখ জানে – অই ঘনকৃষ্ণ                 মেঘেদের বনে

চলিতেছে নবকৃষ্ণলীলা; –

(‘নবকৃষ্ণলীলা’, জলের অতিথি)

 

রাধা এখন রামপুরানিবাসী। বাংলা 888sport app download apk ও ঐতিহ্যের যে সমৃদ্ধ ভা-ার তা থেকে কবিরা ঋণ নেবেন – এটাই প্রত্যাশিত, কিন্তু উপস্থাপন করবেন নবতর ব্যঞ্জনায়, যা আমরা এসব 888sport app download apkয় দেখি। ‘ও তন্বী বিদ্যুৎ’ 888sport app download apkটিও প্রতীকায়িত আর পরিমিত বলেই ঋদ্ধ।

 

এই যে আয়ত চোখ – মৌনতার মেঘে

888sport app গহন শ্রাবণ; এবং সহসা

আকাশ বিদীর্ণ করা চোখের বিদ্যুৎ –

কবি কেন বজ্রাহত? ও তন্বী বিদ্যুৎ

কবিকেই খুলে বলো নৈর্ব্যক্তিক

তোমার স্বরূপ।

(‘ও তন্বী বিদ্যুৎ’, আমার আকাশ)

 

ত্রিশের দোলা যেন পাই। সে তুলনায় তার সিরিজ 888sport app download apkসমূহ যেমন অরণ্যের দিনরাত্রি গ্রন্থের ওই একই শিরোনামের ৮টি 888sport free bet-সংবলিত 888sport app download apk; কিংবা আমার আকাশ গ্রন্থের অমত্মর্যাত্রা : ২২ ফ্রেব্রম্নয়ারি ১৯৯০-এর ১৪টি 888sport app download apkর সমাহারে রচিত দীর্ঘ 888sport app download apk আমাকে তেমন টানেনি। আমাকে টেনেছে তাঁর আড়ালসম্পন্ন 888sport app download apkসমূহ। 888sport app download apkসংগ্রহ গ্রন্থের ‘মহান দীনতা’, ‘কুয়াশার কার্ডিগান পরা সেই 888sport promo code’, ‘দুই রমণীর গল্প’, ‘মীন রাশির জাতিকা’, ‘যদিও একাকী তবু’ আমার ভালো লেগেছে। এসব 888sport app download apkয় কবি যে সংশয় প্রকাশ করেছেন ‘শতভাগ প্রেমের 888sport app download apk বলে কিছু নেই’, তা ফুটে উঠেছে, তবে প্রেমই এসব 888sport app download apkর মূল প্রেরণা। মাঝে-মাঝে তিনি অত্যমত্ম মনোহরণ, চিত্তাকর্ষক সব পঙ্ক্তি রচনা করেন –

 

‘দিন বড়ো ম্রিয়মাণ – পার্শ্বচরিত্রেও বেমানান তিনি অধুনা নাটকে। তার হিরণ্ময়ী আলো করে

দীনতার ঘর; দীনতাই নায়ক এখানে। …

(‘মহান দীনতা’, 888sport app download apkসংগ্রহ)

 

 

‘অথচ অদম্য এক শ্রমণের মতো নিয়ত           তোমাকে দেখি

দুর্গম বিবরগামী। বিবরে নির্বাণ নেই –          নেই পাপক্ষয়;

যতই করো না অন্ধ চোখ – বন্ধ হবে না          প্রলয়।

আগুনেই ঝাঁপ দাও – সেখানে উদ্ধার;             আর সব মেকি।’

 

(‘কুয়াশার কার্ডিগান পরা সেই 888sport promo code’, 888sport app download apkসংগ্রহ)

 

‘… প্রশামত্ম দিঘীর মতো গূঢ়

শরীরের জলে যখন উঠতো বেজে

মাছেদের রুপালি ঝিলিক – তখনও মাছ নয়,

জলের রহস্য তার মনে জাগাতো বিস্ময়।’

 

(‘দুই রমণীর গল্প’, 888sport app download apkসংগ্রহ)

 

পুরোটাই 888sport app download apk। একই 888sport app download apkয় তার শৈল্পিক অবলোকন

‘… চোখ তার – পতঙ্গের মতো – উড়ে

উড়ে আলোর পৌরুষ দ্যাখে – দ্যাখে              আকাশকুসুম।’

 

(‘দুই রমণীর গল্প’, 888sport app download apkসংগ্রহ)

 

পতঙ্গ আলোর দিকে অনিবার্য আকর্ষণে ধাবিত হয়, যে আকর্ষণ বিনাশী; কিন্তু উড়ে-উড়ে আলোর পৌরুষ দেখা অভাবিত। ‘মীন রাশির জাতিকা’ 888sport app download apkয় মিনার মনসুর লিখেন, ‘এ কথা যে বলেছিলো তার প্রাণ ছিলো/ মাছেদের মতো খুব সমুদ্র-কাতর।’ ‘মাছেদের মতো খুব সমুদ্র-কাতর’ – এককথায় চমৎকার। প্রকৃতির অবারিত প্রামত্মর ছেড়ে কেবলই গুটিয়ে যাওয়া খাঁচাবন্দী আধুনিক মানুষকে দেখে তার করুণা ‘কেউ বাঁচে অ্যাকুরিয়ামের জলে।’ ‘যদিও একাকী তবু’ 888sport app download apkর শুরুটা এরূপ :

‘যদিও একাকী তবু দুইজন থাকে

এক ঘরে; অনিবার্য এই সহবাস।’

(‘যদিও একাকী তবু’, 888sport app download apkসংগ্রহ)

 

এই দ্বৈতসত্তা কবি মিনার মনসুরের 888sport app download apkয় প্রত্যক্ষ করা যায়। প্রেমের 888sport app download apkয় কখনো তিনি প্রেমিক সত্তা, কখনো অবলোকনকারী কবি সত্তা। প্রথম ভূমিকায় তিনি নিমগ্ন, দ্বিতীয় ভূমিকায় নির্মোহ। তিনি লিখেন,

‘আমি তো বলি না কিছু – অন্য কেউ বলে।’

(‘আমি তো বলি না কিছু’, 888sport app download apkসংগ্রহ)

 

অন্য কেউ দরোজার কড়া নাড়ে, কড়া            নেড়ে যায়…

(‘কে এক জামত্মব স্বর’, 888sport app download apkসংগ্রহ)

 

নিজেকে বিযুক্ত করে নেওয়ার, স্বতন্ত্র হওয়ার এই শক্তি 888sport app download apkয় ব্যক্তি অভিজ্ঞতাকে সামগ্রিক অভিজ্ঞতার অংশ করে তোলে, 888sport app download apk সার্থকতা পায়। তার 888sport app download apkর আরেকটি দিক – সংশয়। প্রেমেও সংশয়িত আধুনিক কবি, কেননা স্বপ্নের পৃথিবীটি আর নেই, পেস্নটোলিক প্রেমের জগৎটি অবসিত।

‘একটু আগেও তুমি ছিলে – ছিলে নাকি?’

(‘একটু আগেও’, আমার আকাশ)

 

‘সেই যে দুপুর তুমি দিয়েছিলে সারাটি দুপুর

সে কি ভালোবেসে? নাকি করুণাবশত!’

(‘ভালবেসে যতোটুকু দাও’, আমার আকাশ)

সিলেটগামী ট্রেনে, ওই কমলালেবুপ্রধান অঞ্চলে, এক সদ্যবিবাহিত দম্পতিকে দেখে তার কমলালেবুর মতো মনে হয়, যারা পরস্পরের রঙিন খোসা ছাড়াতে ব্যসত্ম। নিঃসন্দেহে দারুণ উপমা। ওই একই 888sport app download apkর তৃতীয় অংশে তিনি দম্পতিকে ফিরে আসতে দেখেন খোসাহীন বিবর্ণ কমলার মতো অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে। খোসাহীন কমলা বিবর্ণ হলেও অন্ধকারাচ্ছন্ন কেন হবে? এই প্রশ্নের মীমাংসা না হলেও জীবনের ওই নিষ্করুণ, বিপ্রতীপ পরিণতি আমরা সকলেই জানি, কবির চোখে তা কী অনিন্দ্যরূপে ধরা পড়েছে। তিনি আমাদের মুগ্ধ করেন যখন লিখেন,

 

‘ছেঁড়া শেমিজের মতো বিদ্ধ তার চোখ

বহুকাল; ভেতরের কিশোরী উধাও।’

 

(‘তরুণ, তোমাকে দেখে’, 888sport app download apkসংগ্রহ)

 

‘সে শুধু শব্দেই বাঁচে’ 888sport app download apkয় মিনার মনসুরের উচ্চারণ :

‘তার যতো পত্রপুষ্প শস্যের সম্ভার –              সব, তোমার অজ্ঞাতে –

হেঁশেলের জঞ্জালের মতো প্রত্যহ নিজেই         তুমি দাও তুলে

কালের ময়লাবাহী ভয়ঙ্কর এক ট্রাকে;           কোনো এক ভোরে

মৃত ইঁদুরের মতো তোমাকেও নিয়ে যায়          ট্রাক।

 

তোমার যা কিছু – সে শুধু শব্দেই বাঁচে।’

 

(‘সে শুধু শব্দেই বাঁচে’, 888sport app download apkসংগ্রহ)

 

অর্থাৎ নশ্বর প্রেয়সী অবিনশ্বর হয় কেবল কবির রচনায়, শব্দেই সে বাঁচে। 888sport app download for androidে আসে মিনার মনসুরের প্রথম দিককার একটি কাব্যের নাম অবিনশ্বর মানুষ। তবে সে প্রেক্ষাপট ভিন্ন। পুরোপুরি কামহীন নয় তার 888sport app download apk, হওয়া উচিতও নয় এই আশরীরকামজ আধুনিক যুগে। ‘পিংকি’ 888sport app download apkয় গোলাপি মেয়েটির দেহ নিয়ে রীতিমতো বেহিসেবি হয়ে উঠেছে কবির কলম।

‘জামার ভেতরে তার ঘৃতবর্ণ দেহটাও             হয়ে ওঠে পিংক।

সহসা আছড়ে পড়ে সমুদ্রের যৌনগন্ধী ঢেউ;

ঘুরপাক খায় তার সুডৌল জঙ্ঘাকে                 ঘিরে; আমি শুধু তার

অপরূপ পায়ের গোড়ালি দেখি –                   সেখানেও পিংকের ঝিলিক!’

 

(‘পিংকি’, মা এখন থেমে যাওয়া নদী)

 

কামজ হতে গিয়েও তিনি আত্মবিস্মৃত হন না, হন সংবৃত; পায়ের গোড়ালির রূপ দেখে ফিরে আসেন। মিনার মনসুরের 888sport app download apkয় বিরামচিহ্নের প্রচুর এবং ব্যাকরণসম্মত ব্যবহার দেখে মনে হয় তিনি খুব প্রথাসম্মত কবি। 888sport app download apkপাঠকে নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতি বলেই বিশ্বাস করেন। ‘তোমার কোনো ত্রাণকর্তা নেই’ শিরোনামের টানাগদ্যে লেখা তিনটি 888sport app download apkই দেহজ প্রেমের ইঙ্গিতবহুল; কেবল ইঙ্গিত নয়, প্রকাশ্য বর্ণনায় বাঙ্ময়। কাব্যিক পরি888sport slot gameের এ দীর্ঘপথ পর্যমত্ম দৈহিক লীলা বর্ণনায় মোটামুটি বিরত কবি শারীরিক মিলনের অনিবার্যতাকে কখনো প্রতীকে, কখনো প্রত্যক্ষভাবে উপস্থাপন করেছেন। তবে মানবিক ব্যর্থতাই ঝরে পড়েছে টিকটিকির মিথুনের সঙ্গে পালস্না দিতে ব্যর্থ মানুষের গস্নানি, শরীরী প্রেমের অনিবার্য একঘেয়েমি, গেরস্থ বেড়ালের মতো যেখানেই নির্বাসন দেওয়া হোক না কেন, তা ফিরে আসে, আর অবদমিত আকাঙক্ষা প্রভৃতি ফুটে উঠেছে। ‘জেগে উঠি দংশনে দংশনে’ 888sport app download apkয় কবির সুস্পষ্ট উচ্চারণ –

‘ছবিটি ধরতে চাই – কাম ও ক্রোধের            লালাসিক্ত

আব্রম্নহীন সম্পূর্ণ ছবি;’

 

(‘জেগে উঠি দংশনে দংশনে’, মা এখন থেমে যাওয়া নদী)

 

মিনার মনসুরের প্রেমের 888sport app download apkর ভুবনটি জাগতিক হলেও শেষের দিককার 888sport app download apkয় দেখতে পাই মহাজাগতিক উড়াল। জগতের সীমা ছেড়ে মহাজগতের অসীমের পানে পাড়ি দিতে তৈরি যেন। ‘বহুদিন পর কণ্ঠ তোমার’ 888sport app download apkয় তিনি লিপিবদ্ধ করেন :

‘বহুদিন পর কণ্ঠ তোমার ভেসে আসে             যেন মহাজাগতিক গান –

সুদূরের কোনো অজ্ঞাত গ্রহ থেকে।

কৃষ্ণবিবর আলো করে ফোটে গুচ্ছ গুচ্ছ           তারাদের মতো

অপরূপ কিছু স্বপ্নের ফুল; … ’

 

(‘বহুদিন পর কণ্ঠ তোমার’, মা এখন থেমে যাওয়া নদী)

 

‘শুধু মেয়েটি উড়ুক’ 888sport app download apkয় যাত্রীঠাসা এক ট্রেনের ভিতর হাঁসফাঁস করা মানুষের বর্ণনা রয়েছে, রয়েছে ক্ষুধাতৃষ্ণাহীন একটি যান্ত্রিক রেলগাড়ির পথচলার ইতিবৃত্ত। কিন্তু এর ভেতরেই বিদ্যুচ্চমকের মতো একটি মেয়ে ট্রেনের গরাদ ফুঁড়ে একটি ছেলের দিকে উড়াল দেয়। পরাবাসত্মব ছবিটি অর্থবহ। 888sport app download apkটির শেষ দুটি চরণ :

‘মেয়েটির ডানা হয়; ট্রেনের গরাদ              ফুঁড়ে উড়ে যায় ছেলেটির দিকে।

ছেলেটি কোথায় – তাতে কী বা আসে         যায়! শুধু মেয়েটি উড়ুক!’

 

(‘শুধু মেয়েটি উড়ুক’, মা এখন থেমে যাওয়া নদী)

 

ভালোবাসা অমনি। দমবন্ধ করা খাঁচা ভেঙে যে উড়াল দেয় ডানাঅলা পাখি কিংবা পরী হয়ে। প্রেমিক সেখানে উপলক্ষ মাত্র, মূল লক্ষ্য মুক্তি, সুবাতাস।

 

মূলত 888sport app download apkর প্রথাগত আঙ্গিকে লিখলেও মাঝে মাঝে মিনার মনসুর বেশ কিছু 888sport app download apk টানাগদ্যে লিখেছেন। ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত ‘জলের অতিথি’ কাব্যে ‘ঘুম’, ‘পেচক’, ‘মহিষ’, ‘তোমার কোনো ত্রাণকর্তা নেই’ প্রভৃতি টানাগদ্যে লিখিত 888sport app download apkয় তীব্র শেস্নষ ও রাগ ফুটে উঠেছে। এসব 888sport app download apkর প্রতিনিধিস্থানীয় হতে পারে ‘পেচক’ 888sport app download apkটি – যা মিনার মনসুরের শেস্নষাত্মক 888sport app download apk লেখার দক্ষতাকে প্রশ্নবিহীন করে তোলে। 888sport app download apkটি রূপকধর্মী এবং সার্থক। ‘ঘুম’ এবং ‘তোমার কোনো ত্রাণকর্তা নেই’ কয়েকটি পর্বে বিভক্ত। এসব 888sport app download apkর গদ্যভাষার শক্তি মিনার মনসুরের 888sport app download apkর গদ্যভঙ্গিটিকে আরো স্পষ্ট করে তোলে। আমার ধারণা, তার 888sport app download apkয় গদ্যপ্রবাহ যতটা সচ্ছল, কাব্যিকপ্রবাহ ততটা নয়। তার টানাগদ্যে লেখা 888sport app download apkর মাঝে কথোপকথনের ভঙ্গিটিই বেশি ফুটে ওঠে। এদের মাঝে মা এখন থেমে যাওয়া নদী কাব্যে বেশকিছু ভালো 888sport app download apk রয়েছে। যেমন ‘আমার সবটা শৈশব ডুবেছিলো থইথই জলে’, ‘দৌড় তো থামেনি’
প্রভৃতি 888sport app download apk চমৎকার। প্রথম 888sport app download apkটিতে ভালোবাসা অপত্য সেণহের রূপে প্রকাশিত আর দ্বিতীয় 888sport app download apk প্রবহমান – ছুটে চলা জীবনের ছবি, যে ছুটে চলার প্রবাহে কবির প্রেয়সী নেই, অবেলায় সে ঘুমিয়ে পড়েছে। অগ্রন্থিত 888sport app download apkসমূহের প্রথম 888sport app download apk ‘কানামাছি কানামাছি’ ছড়ার ছন্দে লিখিত; আমাকে টানেনি, তবে এখানে একটি পঙ্ক্তি রয়েছে, ‘যাকে ছুঁই সেই-ই তো নেই হয়ে যায়!’ অসামান্য!  শৈশবের খেলাটির রূপকে আধুনিক মানুষের নিঃসঙ্গতাকে দারুণ লিপিবদ্ধ করেছেন, এ যেন ‘যেখানেই হাত রাখি সেখানেই তোমার শরীর’-এর বিপ্রতীপ উচ্চারণ।

888sport liveের শুরুতেই বলেছি সত্তরের দশকের 888sport app download apk ধারণ করে আছে একটি নতুন ভূখ–র অভ্যুদয়ের অভূতপূর্ব ইতিহাস ও আবেগ : আকাশচুম্বী আশা ও আশাভঙ্গের বিপুল বেদনা। সত্তরের দশকের কবি মিনার মনসুরের 888sport app download apkয় একই ছায়া প্রলম্বিত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণকারী রাজনীতিসচেতন কবিকে পঁচাত্তরের কালরাত্রির কাপুরুষোচিত নৃশংসতা তাড়িয়ে বেড়ায়। দুর্বিনীত বুটের গর্জনতাড়িত শ্বাপদসংকুল দুঃসময়ে তিনি তাঁর কাব্যের ভেলা ভাসিয়েছিলেন আগুননদীতে। তখন দ্রোহই ছিল মূল সুর। স্বৈরাচারের রোষানলে পড়ে নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়া তার প্রথম কাব্যই প্রমাণ করে তিনি কতটা বিদ্রোহী। তবে সময়ের পরিক্রমায় এই দ্রোহী কবি স্থিত হয়েছেন নম্র প্রেমে, সে প্রেম প্রায়শই প্রথাগত ‘আমি-তুমি’ সর্বস্ব ছোট্ট গ– ছাড়িয়ে হয়ে ওঠে বিসত্মৃত, ব্যক্তিগত সংলাপ ধারণ করে মাতৃভূমির যন্ত্রণা ও আকাঙক্ষাকে। উচ্চকিত, সেস্নাগানসংক্ষুব্ধ সময়ের কবি হয়েও নিজস্ব স্বভাবের মতোই শামত্ম ও নির্জন তাঁর কন্ঠস্বর। শামত্ম অথচ দৃঢ়, নির্জন অথচ প্রামত্মরে প্রতিধ্বনিময়!

অমৃত কুম্ভের সন্ধানে live chat 888sport ও 888sport alternative linkে আমরা একজন সাধুর দেখা পাই। তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হলো, ‘সাধু বাবাজী, আপনি কোথায় যাচ্ছেন?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘কোথায় যাচ্ছি, সেটা বড় কথা নয়; যাচ্ছি – সেটাই বড় কথা।’ কবির পথচলাও তেমনি, গমত্মব্য নয়, পথচলাতেই তার আনন্দ। মিনার মনসুরের 888sport app download apkর একটি লক্ষণীয় দিক হলো মরমিদর্শন। মৃত্যুচেতনা ও সবকিছুর মাঝে থেকেও সর্বব্যাপী বিচ্ছিন্নতার আগ্রাসী এক বোধ তাঁর 888sport app download apkকে দিয়েছে বিরল স্বাতন্ত্র্য; তাঁকে করে তুলেছে সত্তরের প্রতিনিধিস্থানীয় কবি। তাঁর 888sport app download apkর মরমিদর্শন ও মৃত্যুচেতনা নিয়ে আর একটি নিবন্ধ লেখা যেতে পারে। কাব্যিক পরি888sport slot gameে ক্লামিত্মহীন মিনার মনসুর এখনো পা-পা করে 888sport app download apkর দিকেই যাচ্ছেন। ‘পা-পা করে তোমার দিকেই যাচ্ছি’ 888sport app download apkটি সে-কথারই সাক্ষ্য দেয়। প্রেমাস্পদকে পাওয়ার জন্য তাঁর হৃদয়ের তীব্রতা কতখানি তা বোঝানোর জন্য রাজনীতি-সচেতন কবি সাতই মার্চের জনসমুদ্রের স্বাধীনতাকামী মানুষের চিৎকারকে তুলে এনেছেন (প্রশংসনীয়)। প্রেমাস্পদের দেখা তিনি আজো পাননি, পাবেন তার নিশ্চয়তাও নেই, (‘তোমার সঙ্গে যে আমার দেখা হবে তা বলার মতো দেবত্ব আমার নেই’)। তবু খুঁজে চলাই তাঁর কাজ। দেখা না হওয়াই বরঞ্চ ভালো; কবির অভিযাত্রা, অনুসন্ধান, ঔৎসুক্য যে তাতে টিকে থাকে! তাঁর এই প্রেমশাসিত, দ্রোহশাসিত পদযাত্রা অব্যাহত থাকুক! কাদামাটি হাতে আশৈশব বসে থাকা এই বিপন্ন শব্দভাস্করকে অভিনন্দন! ‘নির্বাচিত 888sport app download apk’র প্রারম্ভকথায় নিজের ভূমিকা সম্পর্কে তিনি লিখেন ’আমি তো নিমিত্ত মাত্র’। তাতে সুস্পষ্ট যে এ কবি কাব্যসৃজনকে দৈবতাড়িত বলেই মনে করেন। তাঁর একটি 888sport app download apkর নাম ‘আমি তো বলি না কিছু’। যিনি লিখেন ‘যদি-বা মেলে জল, তৃষ্ণা কি মিটিবে?’ – তিনি যে তাঁর পাঠককে সতৃষ্ণ রাখবেন তা নির্দ্বিধায় বলা যায়। নতুন পাত্রে পুরনো জল নয়, তাঁর কাছে চাইব নবতৃষ্ণার নবতর জল!

 

তথ্যসূত্র :

১। নির্বাচিত 888sport app download apk, মিনার মনসুর, অক্ষর-পত্র প্রকাশনী, বইমেলা ২০১৬।

২। মিনার মনসুরের প্রেমের 888sport app download apk, অ্যাডর্ন পাবলিকেশন, ফেব্রম্নয়ারি ২০১৪।

৩। মিনার মনসুরের দ্রোহের 888sport app download apk, আগামী প্রকাশনী, ফেব্রম্নয়ারি ২০১৪। r

 

 

 

অবরুদ্ধ জীবনসুন্দর

পিয়াস মজিদ

 

লিফটে আটকে পড়া যুবক-যুবতীরা

আনিসুল হক

সময় প্রকাশন, 888sport app, ২০১৬

১৫০ টাকা।

 

আনিসুল হকের সাম্প্রতিকতম 888sport alternative link লিফটে আটকে পড়া যুবক-যুবতীরা। অনধিক শত পৃষ্ঠার এ-888sport alternative linkে লিফটে আটকে পড়া
যুবক-যুবতীর কাহিনি বুননের সমামত্মরালে সময়সত্যের সুতোই যেন বুনে তুলেছেন তিনি নিপুণ 888sport live chatীর দক্ষতায়। 888sport alternative linkের শুরুতে বাঙালি কবি রবীন্দ্রনাথের ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির…’ এই 888sport app download apkর উদ্ধৃতির পাশাপাশি চেক কথা888sport live chatী মিলান কুন্ডেরার অস্তিত্বের অসহনীয় লঘুভার বইয়ের যে-বাক্যাংশ উদ্ধৃত করেছেন তাতেই যেন নিহিত এই 888sport alternative linkের কায়াকাঠামো – ‘The novel is not the author’s confession; it is an investigation of human life in the trap the world has become’.

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৌশলবিদ্যা-পড়ুয়া কতিপয় ছাত্রছাত্রীর লিফটে আটকে পড়ার কাহিনি এটি – রূপকের জাল ছিঁড়লে এ তো বিরূপ বিশ্বে আটকে পড়া জীবনচিত্রেরই প্রতিভাস; লিফটের মতোই বিনা নোটিশে যেখানে আটকে পড়ে যেতে পারে যে কেউ। উনিশটি অনুচ্ছেদে কখনো ঔপন্যাসিকের নিজস্ব বর্ণনায় আবার কখনো লিফটে আটকে পড়া আট যুবক-যুবতী – মাজহার, অরূপ, তপন, জাহিদ, শামীম, লিপি, রিয়া কিংবা মুরাদের আত্মবয়ানের মধ্য দিয়ে এই আখ্যান ঘন হয়, পূর্ণতা পায়।

সতেরো দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটিতে লিফটে আটকে পচে-গলে লাশ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা মাথায় আসে আট বন্ধুর। তখন মাজহারের বয়ানে – ‘এই যে আমাদের বন্দিত্ব… বন্দিত্বের ফিলিংস, যে আমি বন্দী, আমার মুক্তি নাই, একটা ভয়, কখন কী হয়ে যায়, এটা কিন্তু আমার মধ্যে সব সময়ই কাজ করে’ – এর মাঝেই 888sport alternative linkের অমত্মর্বস্ত্ত। অন্ধকার লিফটে অজানা আগামীর কথা ভুলতে তারা নিজেরাই আরব্য রজনীর উজিরকন্যা শেহেরজাদ হয়ে যায়, যে নিজের জীবন বাঁচাতে বাদশা শাহরিয়ারকে প্রতি রাতে এক-একটা নতুন গল্প বলে যেত। গল্প যেমন বাঁচিয়ে রেখেছিল শেহেরজাদের জীবন, লিফটবন্দি যুবক-যুবতীরাও তেমনি পরস্পরের কাছে পরস্পরের জীবনের গল্প বিনিময় করে আত্মবন্দিত্বের খোলস থেকে মুক্তি পেতে চাইল অন্ধকার সময় পরিসরে। এখানে বর্ণিত প্রতি বন্ধুর গল্পই এই বিপন্ন-বিকল সময়ের গল্প। এখানকার সব চরিত্রের দর্পণে দাউদাউ দেখা যায় সমসময়ের প্রজ্বলিত ও গুপ্ত সমুদয় অগ্নি।

এই যেমন মাজহার তার প্রাক্তন বাম নেতা বাবার (বর্তমানে ভিন্নমতাদর্শের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত) আদর্শ নয়, বরং আত্মতাড়নায় উদ্বুদ্ধ হয়ে শাহবাগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত হয়। বাবার সঙ্গে তার সংঘাত শাহবাগ ইস্যুতে, সমাজের সঙ্গে সংঘাত বাবার আদর্শিক ইস্যুতে। বাবা ভাবেন, তার সময়টা ছিল শ্রেষ্ঠ, সমাজ ভাবে, ছেলেটা বাবার পতিত আদর্শেরই অনুগামী। গন্ধরাজ গুল্মের কাছে স্নিগ্ধতার আশ্রয়প্রার্থী একটা স্বাধীন যুবককে তাড়া করে ফিরে অজানা ভীতি – কোনো ঘাতকের হন্তারক অনুসরণরেখা, সন্দেহের চোরাস্রোত। এর মধ্যবর্তী জায়গায় দাঁড়িয়ে তার মা যে ভাবে, ‘দুনিয়াটা কেবল বস্ন্যাক অ্যান্ড হোয়াইট না। দুনিয়ায় অনেক গ্রে জায়গা আছে’ – এটাই মনে হয় মাজহারের অভীপ্সিত কথা। এই সময় সবকিছুকেই একই সমীকরণে ফেলে বিচার করতে চায়। ফলে রুক্ষ করুণ কিন্তু সবুজ ডাঙার পৃথিবীতে প্রতিটি সংবেদী মানুষের মতোই  নিজেকে মাজহারের নিয়ত মিসফিট মনে হয়।

অরূপের গল্পেও সমসময়ের ভীষণ আগুনের িআঁচ থেকে বাঁচতে নির্বাণাকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত হতে দেখি। আনিসুল হক তাঁর দরদি কলমে এঁকেছেন সাম্প্রতিক অতীতে কক্সবাজারের রামুতে ঘটে যাওয়া মানবতাবিরোধী অচলায়তনের চিত্র। ফেসবুকে দেওয়া মিথ্যা পোস্টের জেরে সংঘটিত তা-বলীলায় অরূপও আক্রামত্ম। মিথ্যা প্রচারণায় যখন একটি সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হয়, সর্বমানবের দুঃখের উৎসসন্ধানী ও নিদানকামী বুদ্ধের মন্দির পুড়ে যায়, তখন অরূপের শতবর্ষী ঠাকুরমা অশ্বত্থ গাছের আগুনে ঝলসানো পাতার বাসত্মব ছেড়ে পাড়ি জমান নির্জন নির্বাণলোকে, যেখানে ‘জন্ম নেই। জরা নেই, ব্যাধি নেই। মৃত্যু নেই, শোক নেই, মনস্তাপ নেই, এমনকি যেখানে পৃথিবী, জল, তেজ, বায়ু নেই। চন্দ্র-সূর্য-গ্রহ-নক্ষত্রের সংস্থান নেই। অথচ অন্ধকারও নেই।’ ঠাকুরমার এই নির্বাণযাত্রার মধ্য দিয়ে অরূপ বুঝে ওঠে এই সময়ের দহনটা কত অনির্বাণ।

তপনের গল্পও ভীতি-ধরানো। ‘মা ফলেষু কদাচন’-এর কর্মবাদী, ইহজাগতিক তপন 888sport free betলঘুত্বের নিয়তি-নির্মমে বাড়ি ভাড়া পায় না, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় ঘোষণা হলে তার ওপর ঢিল আসে, সবসময় অজানা আতঙ্ক ঘিরে থাকে তাকে আর সবার ওপর থাকে ভিটেমাটি দখলের আশঙ্কা।

জাহিদ ধার্মিক যুবক হয়েও আতঙ্কে থাকে। চারপাশে ধর্মের নামে সন্ত্রাসকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া পরিস্থিতি তাকে সুস্থির থাকতে দেয় না। নিজে সে শামিত্মকামী কিন্তু অশামিত্মর দামামা-বাজা এই সময় তার শামিত্ম ভঙ্গ করে, তার দিকে সন্দেহের আঙুল তোলে, তার স্বাভাবিক জীবন বিপন্ন হয়ে ওঠে।

এরপর শামীমের গল্প; যে লিটল ম্যাগাজিন করে, পরিবেশ রক্ষার্থে বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, দেশের তেল-গ্যাস রক্ষার আন্দোলন করে, প্রগতির মিছিলে বলিষ্ঠ পা বাড়ায়। সে একদিকে যেমন পাড়ার পান্ডাদের কাছে থ্রেট খায়, আবার অন্যদিকে মৌলবাদীদের টার্গেট হয়। তাকে অনুসরণ করে এক নাম-না-জানা আতঙ্ক। তার জবানিতেই ‘কাফকার জগতে বসবাস করছি। কোথায় যাচ্ছি, কী করছি, সব মনিটর করা হচ্ছে।’

লিপির গল্পেও নেই ভিন্ন কোনো রং। জন্মের পরই প্রকৃত বাবা-মা-বিচ্যুত, আমত্মঃধর্মীয় 888sport free betলঘুত্বে পীড়িত, প্রেমদীর্ণ তার বাসত্মবতাও অসহ্য ভীষণ। আর রিয়া উপমহাদেশের সেই অসংখ্য বিড়ম্বিতভাগ্য মেয়েদের একজন, যে বাবার প্রবল পুত্রাকাঙ্ক্ষার মুখে ছাই দিয়ে জন্ম নিয়েছে। রিয়া তার কথা বলে, যে কথায় উঠে আসে সমাজের বর্ণবাদী মানস, দৃষ্টিভঙ্গির স্থূলতা আর 888sport promo codeর প্রতি 888sport cricket BPL rate শতকেও লালন করা মধ্যযুগীয় ধ্যান-ধারণা।

মুরাদের গল্প বাকি থাকে – সবাই ভাবে ক্ষমতাধর ছাত্রনেতা মুরাদ; তার আবার দুঃখ কীসের! কিন্তু তার মতো করে সেও বিপন্ন তার দলে গ্রম্নপিংয়ে আর ভবিষ্যতে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলে বিরোধীপক্ষের নিশ্চিত টার্গেটে পরিণত হওয়ার আশঙ্কায়। তাই সামনে-পেছনে সব সময় দুজনকে রেখে চলাচল করে সে, অর্থাৎ ক্ষমতাভোগ করেও ভীষণ অনিরাপদ মুরাদ। বিপন্নতার এ এক ভিন্ন গল্প যেন।

এভাবে লিফটে আটকে পড়া যুবক-যুবতীদের একামত্ম বিপন্নতার গল্প এসে নোঙর করে সময়-সমাজ-দেশ ও বিশ্বের বিপন্নতার বন্দরে, যেখানে 888sport promo code বিপন্ন, 888sport free betলঘু বিপন্ন, আদিবাসী বিপন্ন, স্বদেশি ও বিদেশি মানুষও বিপন্ন। এরপর যুবক-যুবতীদের ব্যক্তিগত বিপন্নতা আর বড় থাকে না; লিফটের সংকীর্ণ কোটরে আটকে পড়েও তারা প্রসারণ পায়। একত্র মৃত্যুর আসন্ন আতঙ্ক অতঃপর বদলে যায় উন্মাদ আনন্দে। হঠাৎ ছাত্রহিতৈষী বদরুল আলম স্যারের কল্যাণে এই
যুবক-যুবতীদের হদিস পায় পৃথিবী। মরতে-মরতে বেঁচে আসে তারা লিফটের বাইরে, বিশাল পৃথিবীতে। এখানে এসে মনে হয়, জীবন অনেক সুন্দর, 888sport apps সুন্দরতর, পৃথিবী সুন্দরতম। বৃষ্টির ছাঁট এসে ভিজিয়ে দিয়ে যায় বিপন্নতার ধুলোবালি।

এই মিতায়তন আখ্যান মোহন মূর্ততা পায় রবীন্দ্রনাথ, ওয়ান ডাইরেকশন ব্যান্ড কিংবা মারায়া ক্যারির গানে, হুমায়ূন আহমেদের রঙ্গ গল্পে, আর অনিবার্য কিছু 888sport app download apkর সংশেস্নষে। আনিসুল হক কবি। তাঁর কথাকার সত্তায় ভর করে থাকে এক দুর্নিবার কবি – যে কবি তাঁর প্রিয় কবিদের অনায়াসে নিয়ে আসতে পারেন কথাবিস্তারে। তাই তো দেখি লিফটের ইস্পাত-দেয়ালে পিঠে হেলান দেওয়া শামীম দুঃস্বপ্ন থেকে জেগে চারপাশে মৃত্যুর কৃষ্ণ ছায়া সত্ত্বেও দারুণ বেঁচে ওঠে। তখন তার মনে গুনগুন করে তুর্কি কবি নাজিম হিকমত –

মৃত্যু,

দড়ির এক প্রামেত্ম দোদুল্যমান দেহ,

আমার কাম্য নয় সে মৃত্যু।

 

কিংবা স্প্যানিশ কবি লোরকা তার ভেতরে বলে ওঠেন –

মৃত্যু ঘনিয়ে এলে ব্যালকনিটা সরিয়ে দেবেন দোহাই

ছেলেটা কমলালেবু খাচ্ছে

আমার বারান্দা থেকে স্পষ্ট দেখা যায়।

 

এই সব মৃত্যুঞ্জয়ী 888sport app download apkরা বাঁচিয়ে রাখে শামীমদের, তার আর সাত বন্ধুকে এবং আমাদের সবাইকে, যারা বিপন্ন প্রত্যহে বেঁচে নেই বরং বেঁচে থাকতে বাধ্য হচ্ছি।

আপাত পেশিশক্তির যুবক কিন্তু ভেতরে নরম মুরাদ তার প্রিয়া রিয়ার কাছে নিজের অবস্থাটা ব্যক্ত করার জন্য নির্মলেন্দু গুণের এই 888sport app download apk ছাড়া আর কিইবা নিবেদন করতে পারে –

নিজের জলেই টলমল করে িআঁখি

তাই নিয়ে খুব বিব্রত হয়ে থাকি।

চেষ্টা করেও রাখতে পারি না ধরে –

ভয় হয়, আহা, এই বুঝি যায় পড়ে।

 

এমনিই আছি নদীমাতৃক দেশে,

অশ্রম্ননদীর 888sport free bet বাড়াব শেষে?…

 

আমার জলেই টলমল করে িআঁখি,

তোমার চোখের অশ্রম্ন কোথায় রাখি?

 

আর কোনো এক কবির ‘কেবল একটি মুখর জানালা চাই পাখি দেখিবার’ এর মর্ম আস্বাদন করেই যেন লিফটে আটকে পড়া মুরাদ, মাজহার, অরূপ, শামীম নানাভাবে লিফটের দরজা খোলার চেষ্টা করে আকাশের ওপাশে বিসত্মৃত আকাশ দেখার সম্মোহনে। কিন্তু মৃত্যুবৃত্তে নিয়ত আটকে পড়া মানুষ নামের এই মাল্যবানদের খুব সহজ নয় মুখর জানালার সন্ধান পাওয়া। তাই লিফটের দরজা খোলার পরিবর্তে উলটো স্কেলের ধারে হাত কেটে যায়। যেন প্রবল নেতিবাচক স্থিতাবস্থা বজায়ই থাকে; লিফটের ভেতর থেকে মৃদু ধাক্কায় যেমন লিফটের দরজা খোলে না, তেমনি এই সময়ও পালটায় না কাকুতি-মিনতি বা উপরোধ-অনুরোধে।

কাফকার কথা এসেছে এ-আখ্যানে। হ্যাঁ, কাফকার কয়েদ কলোনির মতোই এমন এক সময়ের গল্প বিধৃত এখানে, যখন অমত্মর্দাহে পুড়ছে মানুষ আবার বাইরের আগুনে কয়লা হয়ে যাওয়ার আয়োজন চলছে সমতালে। লিফটে আটকে পড়াটা সাময়িক কিন্তু জীবনে আটকে পড়াটা জীবনসমানই। আনিসুল হক লিফটে আটকে পড়া যুবক-যুবতীরা 888sport alternative linkে তাঁর মায়াময় বয়ানে, নিরুপম ভাষায় জীবনসুন্দরের বন্দিত্বের যে-পর্ব তুলে দিলেন আমাদের হাতে, তাই হয়তো প্রাণিত করবে মেঘজমা আকাশের মধ্য থেকে মিষ্টি আলোর পরিধি আবিষ্কারে।