নানা মাত্রায়
রবীন্দ্র-আবিষ্কার
বিশ্বজিৎ ঘোষ
Rabindranath Tagore and National Identity Formation in Bangladesh : Essays and Reviews
Fakrul Alam
Bangla Academy
Dhaka, 2012
220 Taka
বাঙালি জাতিসত্তার চিরকালের এক উজ্জ্বল সম্পদ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১)। বাঙালির জাতীয়তাবাদী চেতনা নির্মাণে রবীন্দ্রনাথ পালন করেছেন দূরসঞ্চারী ভূমিকা। যে-কোনো গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল আন্দোলনে বাঙালি জাতি সহযোদ্ধা হিসেবে রবীন্দ্রনাথকে পেয়ে যান প্রথম সারিতে। জাতীয়তাবাদ বিকাশে এবং মানবমুক্তির সংগ্রামে রবীন্দ্রনাথ পালন করেছেন ঐতিহাসিক ভূমিকা। 888sport live footballিক হিসেবে বাঙালি রবীন্দ্রনাথকে যেভাবে কাছে টেনে নিয়েছে, ততোটা নিতে পারেনি সামাজিক-রাজনৈতিক চিন্তাবিদ রবীন্দ্রনাথকে। কারণ হিসেবে তাঁর সমাজ উন্নয়নমূলক রচনা ও কর্মপ্রয়াস সম্পর্কে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের অপ্রতুলতাকে শনাক্ত করা যায়। এ প্রেক্ষাপটে ২০১২ সালের জুন মাসে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ডক্টর ফকরুল আলমের Rabindranath Tagore and National Identity Formation in Bangladesh : Essays and Reviews শীর্ষক গ্রন্থটি বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে।
অধ্যাপক ফকরুল আলমের Rabindranath Tagore and National Identity Formation in Bangladesh : Essays and Reviews শীর্ষক গ্রন্থটি গড়ে উঠেছে বারোটি 888sport live এবং পাঁচটি ব্যক্তিগত রচনার সমবায়ে। বক্ষ্যমাণ গ্রন্থের মূল অংশ হিসেবে পাঠকবর্গ Essays-পর্বের বারোটি 888sport liveকেই শনাক্ত করবেন বলে আমাদের বিশ্বাস। এই 888sport liveসমূহে রবীন্দ্রনাথের জীবনদর্শন ও বিশ্ববীক্ষার নানা বিষয় নিষ্ঠার সঙ্গে আলোচিত হয়েছে। 888sport liveগুচ্ছের শিরোনাম দেখেই অনুধাবন করা সম্ভব আলোচ্য গ্রন্থের মৌল চারিত্র্য। সংকলিত 888sport liveগুচ্ছ এরকম : ‘Rabindranath Tagore and National Identity Formation In Bangladesh’, ‘Beyond Fragmented Worldviews and Narrow Domestic Walls : Rabindranath Tagore and Universalism’, ‘An Idealist on the lectern : Rabindranath Tagore’s Lectures and Speeches in English’, “Some Qualities of Permanence” : Rabindranath Tagore’s English Prose’, ‘Rabindranath Tagore and the Idea of a University’, ‘Luminous with Vision : Rabindranath Tagore, Thoreau and Life-centered Education amidst Nature’, ‘The Gitanjali in Transalation : A Miracle of Transformation’, ‘One Hundred Years of Rabindranath Tagore Translations’, ‘Some Problems of Translating Rabindranath Tagore’s Poetry’, ‘Rabindranath Tagore and Eco-Consciousness’, ‘Rabindranath Tagore in the Twenty First Century’ এবং ‘Rabindranath Tagore and the Nobel Prize’। লেখাই বাহুল্য যে, ফকরুল আলমের বিবেচনার চোখটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নির্ভেজাল 888sport live footballের প্রতি নিবদ্ধ হয়নি, তিনি বরং আবিষ্কার করতে চেয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভিন্ন কিছু প্রসঙ্গ-অনুষঙ্গ।
‘Rabindranath Tagore and National Identity Formation In Bangladesh’ বক্ষ্যমাণ গ্রন্থের প্রথম 888sport live। এই 888sport liveের নামেই লেখক নামকরণ করেছেন তাঁর গ্রন্থের। বোঝা যায়, গ্রন্থভুক্ত 888sport liveসমূহের মধ্যে এই 888sport liveটির ওপর লেখক বেশি চাপ দিয়েছেন। 888sport appsি জাতীয় চেতনা বিকাশে রবীন্দ্রনাথ কীভাবে প্রভাব বিস্তার করেছেন, সে-কথাই লেখক বক্ষ্যমাণ 888sport liveে বিশদ ব্যাখ্যা করেছেন। 888sport appsে রবীন্দ্রনাথের জাতীয়তাবাদী চেতনা সম্পর্কে পূর্বসূরি আলোচকদের গ্রন্থসমূহ পর্যালোচনা করেছেন লেখক এবং শেষে উপস্থাপন করেছেন তাঁর নিজস্ব বিবেচনা। ফকরুল আলম পূর্বসূরির অভিমতসমূহ নিষ্ঠার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করেছেন, নির্দেশ করেছেন তাঁদের আলোচনার শক্তি ও সীমাবদ্ধতা। পাকিস্তান শাসনামলে রবীন্দ্রনাথকে বর্জনের যে-অপচেষ্টা, রবীন্দ্রসংস্কৃতি রক্ষার জন্য বাঙালি জনগোষ্ঠীর যে সংগ্রাম – এসব বিষয় ড. ফকরুল আলম ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে দক্ষতার সঙ্গে বিবেচনা করেছেন। স্বাধীন 888sport appsেও রবীন্দ্রনাথ কখনো নন্দিত হয়েছেন, কখনো হয়েছেন নিন্দিত। 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় রবীন্দ্রনাথের তথাকথিত বিরোধিতার কথা খন্ডন করেছেন ফকরুল আলম, নির্দেশ করেছেন পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শক্তির নানামাত্রিক ষড়যন্ত্র থেকে সংঘবদ্ধ বাঙালি কীভাবে রবীন্দ্র-সৃষ্টিশীলতা থেকে সংগ্রহ করেছেন সংগ্রামের-যুদ্ধের-প্রতিরোধের আয়ুধ। 888sport appsি জাতীয় চেতনা সৃষ্টিতে রবীন্দ্রনাথ কীভাবে কাজ করেছেন, সেকথা ব্যাখ্যা করে ডক্টর আলম লিখেছেন :
Is there any Rabindranath-Bashing in Bangladesh nowadays? Rarely and very obliquely, it must be said. Has he been crucial to national identity formation in Bangladesh? Definitely so, we can assert. He has been able to galvanize the movement that had been sparked off by the language movement of the nineteen-fifties and has been inspirational for the cultural resistance that was of the core of the national liberation struggle of Bangladesh. What role has he played in the national imaginary? The answer surely must be sought in the image of repossessing Shonar Bangla that his song focalized for the generation that fought the liberation war and are still striving to make the vision generated by it come true. (p-36).
জাতীয় চেতনাকে ধারণ করেই রবীন্দ্রনাথ হয়ে উঠেছিলেন আন্তর্জাতিক; বাংলার জল-হাওয়ায় বড় হয়েও হয়ে উঠেছিলেন বিশ্ব-নাগরিক। তাঁর চেতনায় প্রাচ্য-প্রতীচ্য অভিন্ন সত্তায় আত্তীকৃত হয়েছিল। আলম লিখেছেন : ‘Rabindranath’s universalism took him beyond the east-west divide or any one institution and sent him on missions for union everywhere.’ (p-52)। বক্ষ্যমাণ গ্রন্থের দ্বিতীয় 888sport live ‘Beyond fragmented worldviews and Narrow Domestic Walls : Rabindranath Tagore and universalism’। এ-888sport liveে ড. আলম রবীন্দ্রনাথের বিশ্বদৃষ্টি এবং বিশ্বনাগরিকতাবোধের স্বরূপ বিশ্লেষণের প্রয়াস পেয়েছেন। বিশ্বায়নের এই সময়-সংক্রান্তিতে রবীন্দ্রনাথের বিশ্বচেতনা আমাদের সদর্থক পথ দেখাতে পারে। একথা ব্যক্ত করে ফকরুল আলম 888sport liveের সমাপ্তি টেনেছেন এভাবে :
In contact with modernity, he was able to envisage an alternative modernity for his people and for the other Asian countries that he visited. This is why we need to focus on him anew as we set out to explore other cosmopolitanisms at this cosmopolitan moment of this new century and millennium in this his sesquicentennial year. (p 57)
বক্ষ্যমাণ গ্রন্থের তৃতীয় অধ্যায়ের শিরোনাম : ‘An Idealist on the Lectern : Rabindranath Tagore’s Lectures and Speeches in English’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ইংরেজি রচনাগুচ্ছ দিল্লির 888sport live football অকাদেমি থেকে চার খন্ডে প্রকাশিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের ইংরেজি রচনার বিষয় ও আঙ্গিক নিয়ে তেমন সমালোচনা চোখে পড়ে না। ইংরেজিতে উপস্থাপিত রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন লেকচার ও ভাষণকে কেন্দ্র করে লেখা বর্তমান অধ্যায়টি নানা কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা। বিভিন্ন ভাষণ-অভিভাষণে রবীন্দ্রনাথের যে-বিশ্ববীক্ষা প্রকাশিত হয়েছে, ড. ফকরুল আলম আলোচ্য 888sport liveে তা বিশদ তুলে ধরেছেন। চতুর্থ অধ্যায়েরও অবলম্বন রবীন্দ্রনাথের ইংরেজি রচনা। জাতি ও জাতিগঠন বিষয়ে রাবীন্দ্রিক ভাবনা গবেষক এখানে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছেন। ড. আলম লিখেছেন : ‘To Rabindranath, the nation is the outcome of capitalist state formation organized to make “a whole population” serve “a mechanical purpose.” (p 83-84)। হিবার্ট লেকচার The Religion of Man (1931) গ্রন্থে প্রতিফলিত রাবীন্দ্রিক মানবধর্ম আলোচ্য নিবন্ধে গভীরভাবে বিশ্লেষিত হয়েছে। ইংরেজি রচনায় রবীন্দ্রনাথকে নতুনভাবে আবিষ্কার করা সম্ভব বলে মনে করেন ড. আলম। তিনি লিখেছেন : ‘…I have come to the conclusion that like many other aspects of the man, his English prose works need to be studied thoroughly anew and that judicious selections of them should be brought out so that the English-reading world can rediscover the extent of his achievement as a major thinker and an important writer of English prose of his time.’ (p 91-92)
আলোচ্য গ্রন্থের পঞ্চম অধ্যায়ের শিরোনাম ‘Rabindranath Tagore and the Idea of a University’। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষা-দার্শনিক। শিক্ষাকে রবীন্দ্রনাথ নামব-উন্নয়নের শ্রেষ্ঠ প্রযুক্তি হিসেবেই বিবেচনা করতেন। তাঁর এ-ভাবনার বাস্তবরূপ হচ্ছে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমান অধ্যায়ে বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠা ও আনুষঙ্গিক নানা সূত্রে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে রাবীন্দ্রিক ভাবনারাশিকে ড. আলম বিশদ ব্যাখ্যা করেছেন। বাংলা গীতাঞ্জলি ইংরেজি Gitanjali এবং রবীন্দ্রনাথের নোবেল 888sport app download bd বিষয়ে একাধিক রচনা পত্রস্থ হয়েছে আলোচ্য গ্রন্থে। বাংলা গীতাঞ্জলির গানসমূহকে রবীন্দ্রনাথ যে-ভাষায় ইংরেজিতে 888sport app download apk latest version করেছেন, এক কথায় ড. ফকরুল আলম তাকে অলৌকিক বা Miracle বলে আখ্যায়িত করেছেন। 888sport app download apk latest versionে রবীন্দ্রনাথের দক্ষতার পরিচয় দিতে গিয়ে ড. আলম লিখেছেন :
But of one thing I am sure : no other translator will succeed like Rabindranath Tagore was able to and no volume will ever have the impact the work has had. The sheer genius of the poet-translator and the daring and e©lan with which he reworked his Bengali verse into English prose-poems and assembled them in a unique volume have ensured that there will be no comparable English Gitanjali ever again. (p 142)
আলোচ্য গ্রন্থের একটি গুরুত্বপূর্ণ 888sport live ‘Rabindranath Tagore and Eco-Consciousness’। এ-888sport liveে পরিবেশবাদী রবীন্দ্রনাথকে নতুনভাবে আবিষ্কার করেছেন ড. আলম। রবীন্দ্রনাথের 888sport app download apk-গান-গল্প ও নাটক অবলম্বনে গবেষক এখানে রবীন্দ্রনাথের পরিবেশ-সচেতনতার দিকটি পাঠকের সামনে চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন। ড. আলম লিখেখেন : ‘He (Rabindranath) is, in sum, a forerunner of ecocriticism and a storehouse of wisdom about the environmental problems besetting the region and ways of overcoming them.’ (p 186)।
বক্ষ্যমাণ গ্রন্থে Reviews and occasional Essays শিরোনামে মোট পাঁচটি রচনা গ্রথিত হয়েছে। লেখাগুলোর শিরোনাম : ‘The Return of khokobabu : the Best of Tagore’, ‘More and more on the Myriad-Minded Man’, ‘Celebrating Rabindranath Tagore in Delhi’, ‘Tomari Modhuro Rupe – Homage to Debobroto Biswas’ এবং ‘Growing Up with Rabindra Sangeet’। এসব রচনায় রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে ড. ফকরুল আলমের ব্যক্তিগত কিছু পর্যবেক্ষণ এবং রবীন্দ্র-সংস্কৃতিতে তাঁর বেড়ে ওঠার চিত্তাকর্ষক বর্ণনা রূপ পেয়েছে। এই রচনাগুচ্ছে একজন রবীন্দ্র-গবেষকের রবীন্দ্র-মুগ্ধতার পরিচয় পাওয়া যায়।
888sport appsে রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে নানা বই প্রকাশিত হয়েছে। এসব বই প্রধানত বাংলা ভাষায় রচিত। ড. ফকরুল আলম তাঁর রবীন্দ্র-অনুসন্ধান উপস্থাপন করেছেন ইংরেজি ভাষায়। ফলে, ভিন্ন মাত্রায়, এটি বিষয়ে এবং আঙ্গিকের মতোই, নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চার করেছে। ইংরেজি-ভাষী জনগোষ্ঠীর কাছে এ-বই আকর্ষণীয় হবে বলে ধারণা করি।
888sport promo code-কথন
হায়দার আলী খান
প্রাচ্যে পুরাতন 888sport promo code
পূরবী বসু
অবসর
888sport app, ২০১৩
৪৫০ টাকা
পূরবী বসুর প্রাচ্যে পুরাতন 888sport promo code 888sport appsের বইয়ের জগতে একটি অভিনব উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি। বইটি মূলত খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০০ সাল থেকে শুরু করে মধ্যযুগের মাঝামাঝি পর্যন্ত (১০০০ থেকে ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দ) প্রাগৈতিহাসিক এবং ঐতিহাসিক কাল ঘিরে বিস্তৃত। শেষে অবশ্য লেখিকা একেবারে উত্তরাধুনিক যুগের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছেন। এ-আলোচনাটি সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্য সে-প্রসঙ্গে পরে আসছি।
উত্তরাধুনিক সমালোচনার ভাষায় এক অর্থে এ-বইকে উপমহাদেশীয় ধর্মশাস্ত্রের Deconstruction বা গ্রন্থন উন্মোচন বলা যেতে পারে। ‘নিবেদন’ অংশে লেখিকা জানিয়েছেন : ‘বহুল প্রচারিত, পঠিত এবং প্রায়-সর্বাংশেই গৃহীত বিপুল শাস্ত্রীয় গ্রন্থের ভান্ডারে কোথাও আক্ষরিক অর্থে, কোথাও বিশ্লেষণের অন্তরালে 888sport promo codeর জন্য করণীয় অগণিত বিধিনিষেধের তালিকার ভেতরে কোনো অপ্রধান জায়গায় বিশেষ কোনো দুর্বল মুহূর্তে অথবা অন্যমনস্কতার ফলে শাস্ত্রীয় পন্ডিত ও মুণিঋষিগণ এমন কিছু কথা হয়তো লিখে গেছেন, যা ভিন্ন রকমের ব্যাখ্যার সুযোগ [করে দিতে পারে]।’
লেখিকার এই উক্তি অবশ্য রামমোহন ও বিদ্যাসাগরের 888sport promo codeমুক্তির প্রয়াসের প্রসঙ্গে, কিন্তু আমার বিবেচনায় খুঁটিয়ে পড়লে পূরবীর নিজের বিশ্লেষণের চাবিকাঠিও এখান থেকে পাওয়া সম্ভব। বইয়ের বেশকটি অধ্যায়েই এই সূত্র ধরে অগ্রসর হওয়া চলে। যেমন ‘প্রাচ্য পুরাণ ও প্রাচ্যে পুরাতন 888sport promo code’, ‘পৌরাণিক কাহিনী ও প্রাচীন 888sport promo codeর কিছু বৈশিষ্ট্য’, ‘প্রাচ্য পুরাণে 888sport promo codeর অবমাননা ও অবদমন’, ‘প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলা 888sport live football ও 888sport promo code’, ‘কিছু পৌরাণিক, মধ্যযুগীয় ও কিংবদন্তীয় 888sport promo code’, ‘সীতাকেই বারবার কেন সতীত্বের পরীক্ষা দিতে হল’, ‘রামায়ণ ও মহাভারতে অপ্সরাদের ভূমিকা’ – এই অধ্যায়গুলোতে ভারতীয় হিন্দু 888sport promo codeদের অবদমনের প্রচেষ্টাকে ব্রাহ্মণ্যবাদের আদর্শে পরিচালিত এই প্রাগৈতিহাসিক ও ঐতিহাসিক দলিলসমূহের semiotic analysis ও deconstruction-এর মারফত পূরবী সাফল্যের সঙ্গে পাঠক-পাঠিকাদের চোখের সামনে তুলে ধরেছেন। কিন্তু পূরবী শুধু পুস্তকপাগল উত্তরাধুনিক সমালোচকই নন, তিনি পেশায় 888sport apkীও বটে। বস্ত্তবাদী 888sport apkীর নির্মোহ দৃষ্টির সঙ্গে তিনি যুক্ত করেছেন একধরনের ঐতিহাসিক বস্ত্তবাদ। তাই তিনি বিশেষ করে ‘সময়ের প্রেক্ষাপটে প্রাচীন প্রাচ্য সভ্যতা’ এবং ‘শাস্ত্রীয় দৃষ্টিতে ও নির্মোহ চোখে স্বর্গ, মর্ত্য, নরক এবং দেবতা, দানব, মানব’ এই দুটি অধ্যায়ে নিষ্ঠাসহকারে ঐতিহাসিক বস্ত্তবাদী বিশ্লেষণই আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। যদিও তথ্য-নির্দেশনা অংশে D.D. Kosambi-র নাম নেই এবং হয়তো বা Kosamtbi-র যুগান্তকারী বস্ত্তবাদী ইতিহাসের সঙ্গে পূরবীর ঘনিষ্ঠ পরিচয় না-ও থাকতে পারে। তবু তাঁর নিজস্ব ঐতিহাসিক বস্ত্ততান্ত্রিক বিশ্লেষণের প্রতিভা আমাদের, বিশেষ করে যারা ইতিহাসের তত্ত্বান্বেষী পড়ুয়া, তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ না করে পারে না। আমার মনে হয়, এর প্রধান কারণ পূরবীর শৈশবকাল থেকেই 888sport promo codeবিদ্বেষী পাকিস্তানি সমাজে বসবাস, ছাত্রীজীবনে গণআন্দোলনে অংশগ্রহণ এবং সর্বশেষে প্রাকৃতিক 888sport apkের ঘনিষ্ঠ চর্চা এবং প্রয়োগ। বিশেষ করে ‘আত্ম প্রতিষ্ঠার সন্ধানে যুগে যুগে 888sport promo code’ (২৩৮-২৬৪) এই শেষ অধ্যায়টিতে তাঁর বস্ত্তঘনিষ্ঠ ও সমাজসম্পৃক্ত আলোচনা সামাজিক বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে 888sport apkমনস্ক মনোভাবের ও প্রখর কান্ডজ্ঞানের পরিচয় বয়ে আনে। ‘888sport promo code ও তার উদ্ভাবনী শক্তি’ শিরোনামের অংশে (২৪৬-২৪৯) তিনি লিখছেন : ‘… এতভাবে 888sport promo codeর হাতে-পায়ে বেড়ি বাঁধার পরেও তারা বহু উদ্ভাবনী শক্তি ও সৃজনশীলতার পরিচয় দিয়েছেন, বিশেষ করে বাস্তবিক ও প্রাত্যহিক জীবনযাত্রার প্রয়োজনে। কৃষিকাজ 888sport promo codeর আবিষ্কার এটা আজ সর্বস্বীকৃত। …শোনা যায়, প্রাচীনকালে 888sport promo codeরা বামকোলে শিশু রেখে ডানহাত দিয়ে ঘর ও বাইরের সকল কাজে প্রবৃত্ত হওয়ায় ডান হাতের কাজের চল আসে সমাজে।’ (পৃ ২৪৭)
এমনকি পঞ্জিকার উদ্ভব সম্পর্কেও 888sport promo code জাতির প্রভাব সম্পর্কিত বৈজ্ঞানিক কল্প পূরবী বেশ মুন্শিয়ানার সঙ্গে পেশ করেন এভাবে : ‘…সৃষ্টির গোড়া থেকে 888sport promo codeর প্রতি মাসে ঋতুস্রাব হওয়ায় তাদের নিজেদের ব্যক্তিগত হিসাবনিকাশ ও সুরক্ষার জন্য মাসের এবং দিনের গণনা ও হিসেব রাখতে হয়েছে। সেই থেকেই 888sport free bet, গণনা, ক্যালেন্ডার ইত্যাদির উদ্ভব বলে অনেকের বিশ্বাস।’ (পৃ ২৪৭)
বৈজ্ঞানিক পূরবী অবশ্য যোগ করতে ভোলেননি : ‘তবে এ ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার জন্য তেমন তথ্যাদি বা প্রমাণ আমার কাছে নেই।’ (পৃ ২৪৭)
এর পরেই তিনি ‘888sport apkসম্মতভাবে স্বীকৃত’ 888sport promo codeদের ‘দশটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন’সমূহের কথা উল্লেখ করেন। এর ভেতরে রয়েছে চক্রাকার করাত, তরল কাগজ, চৌকো তলার বাদামি কাগজের ব্যাগ, উইন্ডশিল্ড ওয়াইপার ইত্যাদি। এগুলোর সঙ্গে ‘পুরাতন সমাজে 888sport promo code’ অংশটিতে (২৪৯-২৫১) তিনি আবারও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন খনার বুদ্ধিমত্তার প্রতি। তিনি ঐতিহাসিক বস্ত্তবাদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এক অবস্থান থেকে লিখছেন : ‘অনেকে কিংবদন্তিসম এ 888sport promo codeকে [অর্থাৎ খনাকে, হা.খা] একটি শ্রেণীবদ্ধ 888sport promo codeর মিলিত কণ্ঠস্বর বলে দাবি করেন। তর্কের খাতিরে আমরা ধরে নেই খনা বলে অত্যন্ত বুদ্ধিমতী, বাস্তববাদী, কৃষি ও পরিবেশ সম্পর্কে অত্যন্ত প্রখর জ্ঞানী এক পুরাতনী 888sport promo codeর অস্তিত্ব ছিল। জ্ঞানচর্চা ও স্বাধীন মত প্রকাশের অপরাধে খনার জিহবা কেটে নেয়া হয়েছিল। জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় বিশিষ্ট এই 888sport promo code… নতুন নতুন পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ, চিন্তাভাবনা দিয়ে ক্ষমতার জন্য হুমকি হয়ে উঠেছিলেন।’ (পৃ ২৫০)
পূরবী আরো জানিয়েছেন লীলাবতির কথা : এই ‘…বিদূষী 888sport promo code ১১/১২শ খ্রিস্টাব্দে প্রখর বুদ্ধি ও উদ্ভাবনী শক্তি খাটিয়ে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছিলেন।… তিনি অঙ্ক ও বীজগণিতে অপূর্ব ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন।… ভাস্করাচার্যের… সিদ্ধান্ত শিরোমণির তিনটি খন্ড লীলাবতি নিজের হাতে লিখে দেন।’ (পৃ ২৫০-২৫১)
আধুনিক যুগের 888sport promo codeদের ভেতরে পূরবী বিশেষ করে উল্লেখ করেছেন বেগম রোকেয়ার নাম। এখানে মতিচূড়ের ‘আমাদের অবনতির’ বাদ দেওয়া অংশটির গুরুত্বপূর্ণ জায়গাটিকে উদ্ধৃত করে লেখিকা পাঠক-পাঠিকাদের বিশেষ উপকার করেছেন। আমার মতে, বেগম রোকেয়ার সার্বিক মূল্যায়ন তো দূরের কথা, 888sport promo codeবাদী চিন্তায় তাঁর অগ্রপথিকের ভূমিকারও সবিশেষ মূল্যায়ন এখনো হয়ে ওঠেনি। বর্তমানের 888sport promo codeবাদী গবেষকদের জন্য এই বিশেষ ক্ষেত্রটি খুবই মূল্যবান।
সবশেষে ‘888sport cricket BPL rate শতকে 888sport promo code’ অংশটিও (পৃ ২৫৫-২৬৪) অত্যন্ত গভীর চিন্তার পরিচায়ক। খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০০ বছর থেকে শুরু করে প্রাচ্যে 888sport promo codeবাদী চিন্তা ও কার্যকলাপকে বর্তমান শতাব্দী পর্যন্ত ধাবিত করেছেন পূরবী বসু। এখানে বর্তমান বাংলা 888sport live footballের 888sport promo code-সম্পর্কিত সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে তাঁর উক্তিও বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য : ‘888sport promo codeকে তার প্রাপ্য অধিকার প্রতিষ্ঠা, তার মুক্তি, তার আত্মসচেতনতা ও তার ন্যায্য দাবি আদায়ের নানা পন্থা ও প্রক্রিয়া উদ্ভাবন, তার ওপর অবদমন ও অত্যাচারের পরিধি মোচন, সন্তান ও সম্পত্তিতে তার সমঅধিকার সংরক্ষণ, জ্ঞান-আহরণে ও কর্মে-রোজগারে তার সমান সুযোগ সৃষ্টির নিশ্চয়তা ইত্যাদি বিষয় বা দাবি হবে 888sport cricket BPL rate শতাব্দীর 888sport live footballের প্রধান উপজীব্য।’ (পৃ ২৫৭)
২৮৮ পৃষ্ঠারও বেশি এই বই আদ্যোপান্ত পড়লে লেখিকার গভীর পরিশ্রম ও নিষ্ঠার – বাংলা 888sport liveের এই বিশেষ ক্ষেত্রে – পরিচয় মেলে। শুধু দুটো জিনিস এখানে তাত্ত্বিক দিক দিয়ে অংশত বাদ পড়ে গেছে। একটি হচ্ছে 888sport promo code ও শ্রেণিসংগ্রামের কথা। দ্বিতীয়টি আদিবাসী সমাজের 888sport promo codeদের বিশেষ নির্যাতনের এবং সংগ্রামের কথা। এই বইয়ের পরিপূরক হিসেবে এই দুটো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আরো দুটো বই লেখার প্রয়োজন আছে। আশা করি পূরবী এবং তাঁর অনুসারীরা এদিকে ভবিষ্যতে নজর দেবেন।
বইটির প্রচ্ছদ, বাঁধাই ও মুদ্রণ যত্নসহকারে করা হয়েছে। পৌরাণিক দৃশ্যাবলির রঙিন ছবিগুলোও বইকে আকর্ষণীয় করেছে। চারটি পরিশিষ্ট যোগ করে পূরবী বইয়ের ব্যবহারিক মূল্য অনেক বর্ধন করেছেন। তাঁর এই সাহসী ও বৈজ্ঞানিক প্রচেষ্টা সত্যই প্রশংসার দাবিদার। আমি এই বইয়ের বহুল প্রচার আন্তরিকভাবে কামনা করি। r
নবান্নের কাছে ফেরা
আমিনুর রহমান সুলতান
লোক-উৎসব নবান্ন
সম্পাদনা : সৌমিত্র শেখর
অবসর
888sport app, ২০১৪
২০০ টাকা
888sport appsে আধুনিক ফোকলোর বা লোকসংস্কৃতির ক্ষেত্রে শামসুজ্জামান খানের নাম পথিকৃতের ভূমিকায়। বিশ শতকের আশির দশকের আগেও ফোকলোর বা লোকসংস্কৃতি বলতে কেবল লোক888sport live footballকেই বোঝানো হতো। কিন্তু মধ্য আশির দশকের পর থেকে শামসুজ্জামান খান সূত্রে ফোকলোর বা লোকসংস্কৃতির Genra-য় লোক888sport live footballকে বিশেষ একটি শাখা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। লোক888sport live footballের পর্যায়ভুক্ত হচ্ছে লোকগল্প, লোকছড়া, কিংবদন্তি, ভাট888sport app download apk, লোক888sport app download apk, পুঁথিপাঠ ও পুঁথি888sport live football প্রভৃতি।
লোক888sport live footballের মতো ফোকলোরের একটি পৃথক Genra হচ্ছে লোক-উৎসব। আর লোক-উৎসবের পর্যায়ভুক্ত হলো বিভিন্ন ধরনের ঐতিহ্যবাহী মেলা ও বৈশাখী উৎসবসহ নবান্ন উৎসব। ফলে বর্তমান সমকালে আমরা নবান্ন উৎসবকে লোক-উৎসব হিসেবেই বিবেচনায় আনব। আর এদিকটাকে বিবেচনায় এনেই যে সৌমিত্র শেখর নবান্ন বিষয়ক ১৭টি লেখা একটি গ্রন্থে সংকলিত করে গ্রন্থের শিরোনাম করেছেন লোক উৎসব নবান্ন – সে স্বীকৃতি দিতেই হয়। সম্পাদক যে আধুনিক ফোকলোর চিন্তার জগতের সঙ্গে পরিচিত তাতে সংশয় নেই। লোকসংস্কৃতি ঐতিহ্যবাহী এবং একটি গোষ্ঠীর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেই পরিবর্তনশীল; তাছাড়া নতুন করে সৃষ্টিশীলও। আর তা কেবল গ্রামীণ প্রতিবেশেই নয়, শহরেও প্রবহমান। ফলে যে-নবান্ন একসময় কেবল কৃষিজীবী সমাজে পার্বণ হিসেবে পালিত হতো তা আজ উৎসবে পরিণত হয়েছে। আর সে-উৎসব শুধু গ্রামে নয়, শহরেও ঘটা করে পালিত হচ্ছে।
লোক উৎসব বলেই যে তা গ্রামীণ লোকসমাজের মধ্যে প্রচলিত তা বললে আধুনিক লোকসংস্কৃতির চিন্তার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা এসে যায়। লোক বলতে এখন আর কেবল গ্রামের অশিক্ষিত সাধারণ কৃষককুলের লোকদের বোঝায় না, শহরের শ্রমজীবী মানুষকেও লোক অর্থে বোঝানো হয়ে থাকে। এককথায় শ্রমজীবী বলতে কৃষক ও শ্রমিক উভয়কে এবং গ্রাম ও শহরের প্রতিবেশের শ্রমজীবীকেই বুঝে থাকি আমরা। এই ধারণা অবশ্য উনিশ শতকের নয়, বিশ শতকের তৃতীয় দশকের। রুশ বিপ্লবের পর এই ধারণার সূচনা হয় ভ্লাদিমির প্রপের সূত্রে।
একথাগুলো বলার পেছনে অন্যতম একটি কারণও রয়েছে। গ্রন্থের সম্পাদক নবান্নের কাছে ফিরে গেছেন, আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে গেছেন সত্য কিন্তু তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি যে কেবল গ্রামীণ লোক ও প্রতিবেশের পক্ষপাতি তা যেন আমরা মনে না করি। সম্পাদকের উদ্ধৃতি স্মর্তব্য, ‘…গ্রামে কোথাও কোথাও পালিত হয় নবান্ন; বিশেষ আয়োজনে নবান্ন উৎসব 888sport appsের শহরে পালন হতে দেখা যায়। 888sport appয় উদ্যাপন পরিষদ গড়ে উঠেছে, 888sport app জেলা সদরের কোথাও কোথাও পালিত হয় নবান্ন; এনজিওদের অর্থায়নে ক্ষুদ্রজাতিগোষ্ঠী নবান্ন (ভিন্ন নামে) অনুষ্ঠান করে। এগুলোর মূল্য তাই কম নয়। কারণ, পারস্পরিক এই বিচ্ছিন্নতা থেকে মুক্তির প্রত্যাশা আছে এসব আয়োজনে। পাশ্চাত্যের সংস্কৃতি গ্রাস করছে আমাদের। আমাদের উত্তর প্রজন্ম ‘নিজেদের’ সব ছেড়ে-ছুড়ে ‘পাশ্চাত্যের-স্বর্গের’ দিকে আজ ধাবিত। ‘বাঙালি শিকড়হীন জাতি’ – হয়তো এই মিথ্যে ভাষণটিও সত্যের মতো করে শুনবে তারা কিছুকালের মধ্যেই। তখন নিশ্চয়ই অনেকে পরিচয়ের সন্ধানে আবার স্বমাটিমুখো হবে। সে সময় শহরে আয়োজিত ঐ বাঙালিই ঋদ্ধ জাতি নিজের অতীত এবং আলোকিত সভ্যতায়।’
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শরৎ’, কাজী নজরুল ইসলামের ‘অঘ্রানের সওগাত’ ও সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘এই নবান্নে’ তিনটি 888sport app download apkসহ শ্রী দীনেন্দ্রকুমার রায়ের ‘নবান্ন’, আশরাফ সিদ্দিকীর ‘আমাদের আবহমান নবান্ন উৎসব’, শামসুজ্জামান খানের ‘নবান্ন উৎসব’, বরুণকুমার চক্রবর্তীর ‘পার্বণে উপেক্ষিতার আর এক নাম ‘নবান্ন’, সোমেন চৌধুরীর ‘নবান্ন : একটি লোক উৎসব’, প্রদ্যোত কুমার মাইতির ‘নবান্ন : বাঙালির জাতীয় উৎসব’, তিতাশ চৌধুরীর ‘নবান্ন উৎসবে গ্রামবাংলা’, আমিনুর রহমান সুলতানের ‘ময়মনসিংহের নবান্ন উৎসব’, বিজন কুমার মন্ডলের ‘নবান্ন-এর রূপরেখা’, দীপককুমার বড় পন্ডার ‘নতুন ধান্যে হবে নবান্ন’, মাধুরী সরকারের ‘নবান্ন : আদিম খাদ্যপ্রাপ্তির উল্লাসের বিবর্তিত রূপ’, সুমহান বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নবান্ন ও আদিবাসী সমাজ,’ শামস আলদীনের ‘গ্রামবাংলার উৎসব নবান্ন’, সৌমিত্র শেখরের ‘নবান্ন সর্বজনীন’ – ১৪টি গদ্য সংকলিত হয়েছে এই গ্রন্থে।
নবান্ন একসময় ছিল কেবল পার্বণ অথবা শস্যোৎসব, কিন্তু কালের বিবর্তনে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান সকল সম্প্রদায়ের ‘অংশগ্রহণ ও গ্রহণযোগ্যতায়’ তা লোক-উৎসবে পরিণত হয়েছে। শুধু তাই নয়, এই উৎসবে বাঙালির প্রাণ খুঁজে পাওয়া যায়।
গ্রন্থে সংকলিত লেখাগুলো থেকে ‘নবান্ন’ সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ না পেলেও লোকসংস্কৃতিতে নবান্ন যে লোক-উৎসব এবং ধর্মনিরপেক্ষ, অসাম্প্রদায়িক চারিত্র্য নিয়ে প্রতিভাত, তার গুরুত্ব নানা মাত্রায় উঠে এসেছে।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ফোকলোরবিদ শামসুজ্জামান খান তাঁর ‘নবান্ন উৎসব’ লেখায় নবান্নের পটভূমিসহ উৎসবের বৈশিষ্ট্য এবং নবান্নের চারিত্র্যও বাঙালির কাছে যে বিশেষ আবেদন নিয়ে উপস্থিত তা তুলে ধরেছেন – ‘উৎসবে এই সামাজিক পরিবর্তন এবং সুখী, শান্তিপূর্ণ ও আনন্দময় নতুন জীবনের যেমন ছাপ পড়ে, তেমনি বিদ্যমান অবস্থাকে বৈচিত্র্যময় আনন্দোপকরণে সাজিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় উৎসবের মধ্যে আদিভারকল্পের (archetype) বিস্তার, প্রসার এবং অর্থব্যাপ্তি ঘটে। কখনো কখনো আদিরূপ একটা প্রতীকে পরিণত হয়ে নতুন তাৎপর্য লাভ করে। নবান্ন তেমনি এক উৎসব।… নবান্নের উৎসবকে ধন্যবাদ বা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের উৎসব বলাই সংগত। নবান্ন ধর্মীয় উৎসব না, কারণ এর কোনো নির্দিষ্ট দিনক্ষণ, তিথি-নক্ষত্রের বা চাঁদের বা অমাবস্যা-পূর্ণিমার ব্যাপার নেই। প্রচুর ফসল হলে এই হৈমন্তিক উৎসবটি অগ্রহায়ণ মাসের যে-কোনো দিন উদযাপন করা যায় এবং এ-অনুষ্ঠানে আনন্দই মুখ্য। তবে এ-উৎসব করার দিন হিন্দুরা ঘরবাড়ি পরিষ্কার করে নিজেরাই শুচিসিদ্ধ হয়ে অংশগ্রহণ করে। পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তি কামনায় নতুন ফসলের পায়েস, ভাত এবং নানা ব্যঞ্জন নদীতীরে বা পাখিদের জন্য নিবেদন করে। এটা একটা প্রাচীন আচার। লোকবিশ্বাস, এতে মৃত পূর্বপুরুষরা খুশি হন এবং তাঁদের আত্মা শান্তি লাভ করে। মুসলমানেরা নতুন চালের পায়েস রেঁধে মসজিদে শিরনি দেন। কেউ কেউ গরিব-দুঃখীকে খাওয়ান। অনেকে বলেন, নবান্ন রন্ধনের উৎসব। রন্ধনকলা কোনো জাতির সাংস্কৃতিক ঋদ্ধির পরিচায়ক। তা নবান্নকে ফসল উৎপাদনের সংস্কৃতি থেকে রন্ধনকলায় বিকশিত করার একটা প্রক্রিয়া হিসেবেও চিহ্নিত করা যায়। প্রখ্যাত ফরাসি নৃ888sport apkী লেভিস্ট্রস ‘র অ্যা দা কুকড’ (Raw and the Cooked) বলতে সভ্যতার যে বিকাশের কথা বলেছেন নবান্ন উৎসবকে সেভাবে দেখলে ফসল উৎপাদন ও তাকে খাদ্যরূপে গ্রহণের আনন্দোৎসব হিসেবেও চিহ্নিত করা যায়।’
শ্রী দীনেন্দ্রকুমার রায়ের ‘নবান্ন’ লেখাটি লেখকের ‘পল্লীবৈচিত্র্য’ নামের গ্রন্থ থেকে সংকলিত করেছেন সম্পাদক। লেখাটি আজ থেকে প্রায় সোয়াশো বছর আগের লেখা। এ-লেখায় সোয়াশো বছর আগের গ্রামবাংলার নবান্নের রূপটি পাওয়া যায়। সম্পাদক যথার্থই মন্তব্য করেছেন তাঁর ভূমিকায়, ‘কেসস্টাডি’ ভিত্তিক লেখাটি চিত্রনাট্যের মতো ছবিবহুল। একটি পরিবারের নবান্নকথার আলোকে কীভাবে গ্রামের ভিখারি, রোগী, গরিব-দুঃখীসহ সব শ্রেণির মানুষের নবান্ন সে সময় হয়ে গেছে, তার সুন্দর ছবি আছে এই লেখায়। নবান্নে শহরে কর্মরত সদস্যরাও পরিবারের অন্যদের সঙ্গে নবান্ন গ্রহণ করার জন্য ছুটি নিয়ে চলে আসতেন বলে উল্লেখ আছে এ-রচনায়।’
‘নবান্ন’ কী এ সম্পর্কে প্রদ্যোত কুমার মাইতি বলেছেন, ‘নবান্ন হল ধান থেকে চাল বের করে রন্ধনপূর্ব একটি লোক উৎসব।’ আর নবান্ন উৎসবের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘নতুন ধান থেকে চাল তৈরি করে সেই চাল রান্না করে 888sport app খাদ্যাদি সহযোগে আহার করার প্রথাকেই নবান্ন উৎসব বলা হয়। তবে অঞ্চলভেদে ‘নবান্ন উৎসবে’র অন্ন নিজেরা খাওয়ার পূর্বে পল্লিবাসীরা পিতৃপুরুষ, দেবতা, আত্মীয়-স্বজন এমনকি পশুপাখিদের উদ্দেশে নিবেদন করে। তাছাড়া গ্রামবাসীরা নবান্ন উৎসবের অন্ন বা 888sport app খাদ্যাদি পরস্পরের মধ্যে বিতরণও করত।’
নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে লক্ষ্মীব্রতের বা লক্ষ্মীপূজার আয়োজন করা হয় আবহমান বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে। নির্দিষ্ট শুভদিনে যেসব অঞ্চলের গৃহে গৃহে নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা হয় সেসব অঞ্চলের গৃহবধূরা শূচিস্নাত হয়ে লক্ষ্মীদেবীকে আহবান জানায়। প্রদ্যোত কুমার মাইতি যথার্থই বলেছেন, ‘যেন তারা লক্ষ্মীদেবীকে নিজ নিজ গৃহে বেঁধে রাখতে চায়। কোনো কোনো বাড়িতে ব্রাহ্মণ পুরোহিত দিয়ে লক্ষ্মীদেবীর পুজোর আয়োজনও করা হয়।’
কোনো কোনো অঞ্চলের আসরে লক্ষ্মীদেবীর মহিমা কীর্তনের মধ্য দিয়ে লক্ষ্মীর ব্রতাচার পালন করে নবান্ন উৎসব পালিত হয়। তবে লোকগল্পের মধ্য দিয়ে লক্ষ্মীদেবীর মহিমা কীর্তির হয় বলে গল্পের রূপান্তর পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু কাহিনির বা লোকগল্পের মূলসুর বা ঐক্য একই, কেবল পাত্র-পাত্রীর পরিচয়টা ভিন্ন ভিন্ন। যে দরিদ্র ঘরের পাত্রটির সঙ্গে ধনী ঘরের পাত্রীটির বিয়ে হয়, সে বরপাত্রটি কাঠুরিয়াপুত্র ঠিকই কিন্তু ধনী ঘরের কনে পাত্রীটি হয় রাজা বা জমিদারের ঘরের, নয়তো বিত্তবান গৃহস্থ ঘরের। লক্ষ্মীর ব্রত পালনের উদ্দেশ্যে যে লোকগল্প তার মূল কাহিনি একই হয়েও রূপান্তর লক্ষণীয় ‘ময়মনসিংহের নবান্ন উৎসব’ ও ‘নতুন ধান্যে হবে নবান্ন’ লেখা দুটিতে। লোকগল্পেরও যে স্থানান্তর রয়েছে তার প্রমাণ রয়েছে লেখা দুটিতে। একটি ময়মনসিংহ অঞ্চলের, অন্যটি কুচবিহার অঞ্চল থেকে সংগৃহীত। অথচ সংগৃহীত লোকগল্প দুটির যথেষ্ট মিল রয়েছে বলে সম্পাদকও তাঁর ভূমিকায় উল্লেখ করে দেখিয়েছেন যে, ‘এসব লোকগল্প সমাজতাত্ত্বিক গবেষণার পরিধিভুক্ত।’ আর এ থেকে এও বলা যায়, লোকসংস্কৃতি বা ফোকলোর কেবল ঐতিহ্যগত বিষয় নয়, এর পরিধি ও পরিসর ব্যাপক। লোকগল্পগুলো লোক888sport live footballের বিষয় হয়েও বৃহত্তর পরিসরে সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে বিশেষ সময়, পরিবেশ ও লোকমানসকেও তুলে ধরে। আর এ-কারণেই বলা যায়, গ্রন্থের সম্পাদক উল্লেখ করেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের লোকসংস্কৃতি গবেষক ড. দীপককুমার বড় পন্ডা তাঁর 888sport live ‘নতুন ধান্যে হবে নবান্ন’ লিখেছেন তত্ত্বালোচনা ও মাঠ গবেষণার নিরিখে। বিশেষ কয়েকটি স্থান ও কয়েক ব্যক্তির আলাপ-আলোকে তিনি দেখাতে চেয়েছেন নবান্ন পার্বণের গতিফের। তাঁর সংগৃহীত একটি লোকগল্পের সঙ্গে 888sport appsের আমিনুর রহমান সুলতান সংগৃহীত গল্পের যথেষ্ট মিল আগ্রহব্যঞ্জক।’
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যেও নবান্ন উৎসবের প্রচলন রয়েছে। এদিকটিও আলোচনায় এনেছেন শামসুজ্জামান খান ও বিজনকুমার মন্ডল, সুমহান বন্দ্যোপাধ্যায়, মাধুরী সরকার প্রমুখ। বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে রয়েছে মান্দি বা গারোদের বসবাস। এ-অঞ্চলের গারোরাও নবান্ন উৎসব পালন করে। আর তাদের ঐতিহ্যবাহী এ-উৎসবের নাম ওয়ানগালা উৎসব। শামসুজ্জামান খান গারোদের এ-উৎসবের যে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়েছেন তা থেকে ওয়ানগালা উৎসবের সামগ্রিক দিক উঠে এসেছে। ওয়ানগালার বর্ণনায় তিনি লিখেছেন, ‘স্রষ্টার উদ্দেশে উৎসর্গ, প্রার্থনা, নাচ গান আলোচনা অনুষ্ঠান ও খাদ্য-খাবার এতে অন্তর্ভুক্ত।’
পার্বত্য চট্টগ্রামের ম্রো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নবান্ন উৎসবের নাম চামোইনাত। তিনি এরও বর্ণনায় লিখেছেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের ম্রো উপজাতি জুমচাষের প্রথম ধান কাটার পর নবান্ন উৎসব পালন করে। …ম্রো সমাজের কোনো বয়োজ্যেষ্ঠ বা ওঝা আনুষ্ঠানিকভাবে অনুষ্ঠান শুরু করেন। এ অনুষ্ঠানে শুয়োর ও মুরগি বলি দিয়ে অতিথিদের খাওয়ানো হয়। ঘরে তৈরি মদও পরিবেশিত হয়। তবে কোনো গান বাজনা হয় না।’ উত্তরবঙ্গের সাঁওতাল ও ওরাওঁ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষও তাদের মতো করে নবান্ন উৎসব পালন করে। মাধুরী সরকার তাঁর লেখায় দেখিয়েছেন, ‘তাঁদের সিংবোঙ্গা উৎসবে তাদের ‘গেরাম থান’কে পশুপাখির রক্তে স্নাত করান বসুমতীকে ঋতুমতী করে প্রজনন-শক্তি বৃদ্ধি ও উর্বরা করে তোলার জাদুবিশ্বাস থেকে। এছাড়া কোনো কোনো জনগোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষেত্রের মাটিতে সিঁদুর মিশিয়ে ভূমিকে ঋতুমতী করার মধ্য দিয়ে উর্বরা বৃদ্ধির জাদু প্রক্রিয়া করা হয়ে থাকে।’ তবে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যেও নবান্ন উৎসবের যে-রূপান্তর লক্ষ করা যায় এদিকটিও তুলে ধরা হয়েছে। বিজনকুমার মন্ডলের লেখায় তা প্রতিভাত। তিনি লিখেছেন, ‘উত্তরবঙ্গের মেচ বা বোড়ো সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত নবান্ন উৎসবের নাম – ‘আংখাম গীলে জানায়’। মূলত অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম দিন এই উৎসব হয় কিংবা ওই মাসের যে-কোনো শুভদিনে অনুষ্ঠানটি হয়ে থাকে। নতুন চালের রান্না প্রথমে উনানে ব্রহ্মাকে দেওয়ার রীতি প্রচলিত। বাড়ির উঠানে পূজার আয়োজন হয়। পুরোহিতরাই এই পূজা করে থাকে। তাদের বিশ্বাস ‘আংখাম গীলে জানায়’ উৎসবে রান্না ভালো হলে তবেই সারা বছর রান্না ভালো হবে। রাঙা জনগোষ্ঠীর মধ্যে নবান্নকে বলা হয় ‘মায় পিদান বানি’ এবং নতুন ধান কাটাকে বলা হয় ‘মায় আক হানি’। এই উপলক্ষে নতুন ধানের চাল দিয়ে ‘রন্তুক’ দেবীর ঘট পূর্ণ করে দেবীকে উৎসর্গ করার রীতি প্রচলিত। নতুন ধানের চাল, চিড়া, ভাত, দই, চকত (মদ) ইত্যাদি তৈরি করে দেবীর কাছে নিবেদন করা হয়। নাচ-গানের মধ্যে দিয়ে পালিত হয় এই ‘মায় পিদান বানি’ উৎসব। নাগোশিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে নবান্ন উৎসবের নাম ‘নাওয়া’। অসুর কিংবা ওরাওঁদের নবান্ন উৎসবের নাম ‘নাওয়াখানে’। কিসান সম্প্রদায়ের নবান্ন উৎসবের নাম ‘নাওয়াখালি’। এই উপলক্ষে কিসানরা নতুন ধানের তৈরি খাবারের সঙ্গে দেবতার কাছে মুরগি নিবেদন করে থাকে। খোন্দ সমাজের সবচেয়ে জনপ্রিয় উৎসব হলো ‘নবানন্দ’। এই উৎসব নবান্ন উৎসব হিসেবে প্রচলিত। পয়লা অগ্রহায়ণ; লক্ষ্মী আসে ঘরে। জমি থেকে শিসসহ ধান গাছ কেটে আনার ‘মুঠ’ বা মুট অনুষ্ঠানে নবান্নের সূচনা হয়।’
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সমাজে যে নবান্ন উৎসবের পরিবর্তন লক্ষ করা যায়, সেজন্য তাদের সমাজের ওপর হিন্দু ধর্মের প্রভাবকেই গুরুত্ব দিয়েছেন অনেকে। এক্ষেত্রে সুমহান বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখাটি উল্লেখযোগ্য। তিনি আবার গুরুত্ব দিয়েছেন ভিন্নমাত্রার প্রভাবের দিকটিতেও। তাঁর মন্তব্য উল্লেখ করা যায়, ‘বহু পূর্বেই আদিবাসী সমাজের উপর হিন্দুধর্মের প্রভাব পন্ডিতদের নজরে পড়েছে। আদিবাসীদের শ্রেণিবিভাজন করতে গিয়েও এই প্রভাবকে তারা স্বীকৃতি দিয়েছেন। ডালটন হিন্দু আদিবাসীদের কথা বলেছেন। এই হিন্দু প্রভাবে কখনও তাদের সম্পূর্ণভাবে নিজেদের মধ্যে আত্তীকৃত করেছে হিন্দুসমাজ; কখনও বিভিন্ন হিন্দু আচার পালনের মধ্য দিয়ে তারা ধীরে ধীরে হিন্দুকরণের দিকে এগিয়ে চলেছে। কিন্তু এখানে প্রশ্নটি হিন্দু প্রভাবের না অর্থনীতির তা বিবেচনা করা উচিত। দেখা যাচ্ছে, নবান্ন শব্দটি থেকে একটি ভিন্ন শব্দ ভিন্ন প্রতীকী আচার সংঘটিত হচ্ছে এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে। কোথাও আবার হিন্দুদের সঙ্গে কোনো যোগসূত্র নেই, এমন জনগোষ্ঠীতেও কৃষি সম্পৃক্ত আচার হিসেবে পালিত হচ্ছে নবান্নর সগোত্রীয় সংস্কার। কোড়া, মাহালিদের মতো জনগোষ্ঠী অনেক সরাসরি নবান্নকে গ্রহণ করেছে। বস্ত্তত প্রতিবেশী কৃষিজীবী হিন্দুসমাজ ব্যবস্থার যখন অংশ হয়ে উঠল নানা আদিবাসী গোষ্ঠী; তখন তারা যে কেবল এদের অর্থনৈতিক ক্রিয়া-প্রকরণ গ্রহণ করল তা-ই নয়; এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মূল্যবোধ বা ভ্যালুসগুলোও তাদের মধ্যে প্রবেশ করে। নবান্নর মধ্যে এই ধরনের মূল্যবোধের প্রতিফলন দেখা যায়।’
888sport appsের আধুনিক ফোকলোর বা লোকসংস্কৃতিচর্চার বিকাশমান ধারায় গ্রন্থটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন। সম্পাদক হিসেবে সৌমিত্র শেখরের লেখাটি সমকালে প্রাসঙ্গিক এ-কারণে যে, তাঁর লেখায় তিনি খানিকটা মিলিয়েছেন অর্থনীতির সঙ্গে সময়টাকে। তাছাড়া ‘নবান্নে আচার অনুষ্ঠান এবং সম্প্রদায় নির্বিশেষে এর উদযাপন পার্থক্য খানিকটা তুলে ধরেছেন’ – যা থেকে বোঝার চেষ্টা আছে, এটি ধর্মনির্বিশেষে সব বাঙালির পার্বণ কিনা।
তিনি তাঁর লেখায় শুরুতে অবশ্য ‘নবান্ন যদি হারিয়ে যায় চিরতরে, বাঙালির জীবনে আনন্দের একটি স্রোত নিশ্চিতভাবেই কমবে’ বলে ধারণা পোষণ করেছেন। এই ধারণা স্বাভাবিক। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, লোকসংস্কৃতি রূপান্তরের মধ্য দিয়েই নানাভাবে টিকে আছে। বাইরের প্রভাব যতই অন্তরায় হোক না কেন, নবান্নের যে-মূল্যবোধ বাঙালির প্রাণে জাগরিত ও রক্তের সঙ্গে মিশে আছে তার প্রকাশ নবতর আঙ্গিকে নতুনতর পরিবেশনায় লোক-উৎসব হিসেবে বেঁচে থাকবে। শামসুজ্জামান খানের মন্তব্য এক্ষেত্রে উল্লেখ করছি – ‘নবান্ন উৎসব মোটামুটি সর্বব্যাপী;’ যা ছিল একসময় পারিবারিক, সামাজিক গোষ্ঠীর মধ্যে প্রবহমান, আজ তা জাতীয়ভাবে উদ্যাপিত হয়ে প্রবহমান। r
দক্ষিণমুখো বারান্দায় পুরনো বন্ধুর সঙ্গে
লীনা দিলরুবা
প্রেম-অপ্রেমের গল্প
আহমাদ মোস্তফা কামাল
নান্দনিক
ফেব্রুয়ারি, ২০১৪
২৭০ টাকা
আহমাদ মোস্তফা কামালের গল্প পড়ার মধ্যে অন্যরকম একটা আনন্দের ব্যাপার আছে। অনেকবার বলতে বলতে কথাটা ক্লিশে হয়ে গেছে হয়ত, তবু বলতে হয়, কোনো কোনো লেখক আছেন, যাঁদের গল্প কেবল একবার পড়লেই মন ভরে না, বারবার পড়তে ইচ্ছে করে। আহমাদ মোস্তফা কামালও সেই গোত্রের লেখক, যদিও, স্বাভাবিকভাবেই, তাঁর সব গল্প সম্বন্ধে হয়ত সেটা বলা যাবে না। ২০১৪-র বইমেলায় ‘নান্দনিক’ থেকে প্রকাশিত তাঁর প্রেম-অপ্রেমের গল্প নামের অসাধারণ সংকলনটি পড়তে গিয়ে পুরনো এ-কথাটা আবার নতুন করে মনে হলো।
প্রেম-অপ্রেমের গল্প নামের এই গ্রন্থে মোট গল্প আছে বাইশটি এবং গল্পগুলো ১৯৯১-২০১৩ সময়কালের মধ্যে লেখা। অর্থাৎ, তিনি যখন অতি-তরুণ লেখক, তখন থেকে শুরু করে একেবারে সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত প্রেম বিষয়টি নিয়ে তাঁর বহুমাত্রিক ভাবনার প্রকাশ আছে গল্পগুলোতে। ভূমিকায় তিনি বলেছেন, ‘১৯৯১ সাল থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে সময়ে লেখা এই গল্পগুলো ফিরে পড়তে গিয়ে মনে হলো – প্রেম বিষয়টি সবসময়ই আমার গভীর মনোযোগ পেয়েছে। পাবেই বা না কেন? মানুষের স্বনির্মিত সম্পর্কগুলোর মধ্যে প্রেমই তো সবচেয়ে মনোহর আর সুন্দর সম্পর্ক। এবং বেদনারও বটে।’ হ্যাঁ, এই সুন্দর-মনোহর-মনোরম আর বেদনাময় সম্পর্ক, সম্পর্কের নানা রূপ আর তার ভেতরকার আনন্দ ও বেদনা, সুখ ও হাহাকার, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি সব হৃদয়গ্রাহী এক ভাষায় এবং বহুবিচিত্র করণকৌশলে মূর্ত হয়ে উঠেছে। একজন লেখক একটি বিষয় নিয়ে জীবনের নানা সময়ে কী ভেবেছেন, সেটি নিশ্চয়ই দারুণ কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় তাঁর পাঠকের কাছে। গ্রন্থটি আমাদের সেই কৌতূহল মেটাতেও সহায়তা করে।
বইয়ের নামকরণ কতটুকু মোক্ষম হয়েছে বলা কঠিন, কারণ নিছক ‘প্রেম’ বা ‘অপ্রেমের’ মধ্যে সবগুলো গল্পকে ব্র্যাকেটবন্দি করা যাবে না। প্রেম আর অপ্রেমকে যদি দীর্ঘ একটি পথের সূচনা আর সমাপ্তিবিন্দু বলে ধরি, তাহলে তাদের মধ্যে যতরকম গন্তব্য আর ঠিকানা হতে পারে তার প্রায় সবগুলোরই বুড়ি ছুঁয়ে গেছেন কামাল। এজন্যই পাঠক যদি প্রথাগত ধারণাকে সঙ্গী করে প্রতিটি গল্পের মধ্যেই প্রেম বা তার অ্যান্টিথিসিসকে খুঁজে বেড়ান তাহলে ভুল হবে। যেমন ‘শরীরের গন্ধ’ গল্পটির কথাই ধরা যাক। ছকে বাঁধা কোনো প্রেম বা প্রেমহীনতার গল্প এটি নয়। পারুল নামে এক গৃহপরিচারিকার গৃহকর্তাদের পোশাক থেকে তাদের শরীরের গন্ধ শুঁকে বেড়ানোকে নিয়ে নাতিদীর্ঘ একটি গল্প এটি। এর মধ্যে প্রেম কোথায়? নিশ্চয়ই আছে। গল্প শোঁকার নাক থাকলে পাঠকও হয়ত তা টের পাবেন। একই কথা বলা যায় ‘আর কিছুই ছিল না হারাবার’, ‘এটি একটি প্রেমের গল্প হয়ে উঠতে পারতো’ কিংবা ‘মৌনমুখরতা’ নামের গল্পগুলো সম্বন্ধেও।
গ্রন্থভুক্ত বাইশটি গল্পের কোনোটিই ধরাবাঁধা কোনো প্রেমের গল্প নয়। ‘বসন্তদিনে’ গল্পটির কথাই ধরা যাক। অকূল সমুদ্রের মতো ট্রাফিক জ্যামে বসে গাড়ির জানালা দিয়ে উদাস তাকিয়ে থাকা চিন্তাক্লিষ্ট-অন্যমনস্ক জামানের দিকে অতি সাধারণ এক পথচারিণী হঠাৎ এক প্রশ্ন ছুড়ে দেয়, আর সে-প্রশ্নটিও বড়ই রহস্যময় – ‘দাদা, আপনে কি কবি?’ আপাতসরল কিন্তু রীতিমতো অর্থপূর্ণ এই প্রশ্ন জামানকে বিমূঢ় করে তোলে। পারম্পর্যহীন, একেবারেই এলোমেলো এই প্রশ্ন তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় তাঁর বহুদিন আগের প্রেমিকা তিথির কাছে। কবির কীর্তি, নাকি কবি নিজে তার বেশি প্রিয় – এরকম এক দ্বন্দ্বের মুখোমুখি হয়েছিল তিথি। এ দোলাচল তিথির সঙ্গে তাঁর প্রেমকে গাঢ়তর করেছিল, নাকি দুজনকে আরো দূরে ঠেলে দিয়েছিল সে-প্রশ্নের জবাব গল্পের শেষে পাবেন পাঠক। একইভাবে নিরীক্ষামূলক গল্প ‘মেয়েটি প্রেম ও মুক্তি একসঙ্গে চেয়েছিল’র কথাও উল্লেখ করা যায়। গল্পের কথক কামাল একজন লেখক। বৃষ্টিমুখর এক রাতে আহসান নামে তার এক কবিবন্ধু হঠাৎ তার বাড়িতে উপস্থিত হয়। আসার কারণ, একটি ডায়েরি হস্তান্তর। লেখক এরপর এই ডায়েরি নিয়ে কী করেন? এই গল্পই পরের গল্প। প্রেম বনাম দেহ, শরীরী সুখ বনাম শরীরবিচ্ছিন্ন প্রেম – কার দাবি মানুষের মনের কাছে বড়? এ-গল্পে এরকমই জটিল আর চিরন্তন এক প্রশ্ন নিয়ে নাড়াচাড়া করেছেন আহমাদ মোস্তফা কামাল। প্রেম আর মুক্তির অসাধারণ এক টানাপড়েনের গল্প এটি, যাতে মানুষের ঘনিষ্ঠতম সম্পর্কটির নতুন একটি সংজ্ঞা নির্মাণে উদ্যোগী হয়েছেন লেখক।
এভাবেই আরো অনেক গল্পের দৃষ্টান্ত দেওয়া যায়। বেশিরভাগ গল্পেরই শুরু খুব সহজ-স্বাভাবিক ভঙ্গিতে, একটুখানি পড়লে মনে হবে, নতুন কোনো কথা তো এখানে নেই! কিন্তু তারপরই তাঁর কুশলী কলমে একের পর এক বাঁক বদল করেন কামাল, আমরাও মনোযোগী সঙ্গী হয়ে কামালের পাশে পাশে হাঁটি। প্রেম-অপ্রেমের গল্পের প্রতিটি গল্প কোনো নিশ্চিত গন্তব্যে পৌঁছে দেবেই – এমন বিশ্বাস নিয়ে বইটি পড়লে হতাশ হতে পারেন পাঠক। অনেক সময়ই মনে হবে, লেখক কি আমাকে চোখ বেঁধে কোনো অচেনা রাস্তার চৌমাথায় নিয়ে ছেড়ে দিলেন কি-না! এমনও মনে হতে পারে, এ-গল্পটির মধ্যে প্রেম বা অপ্রেম কোথায়? আবার একেবারেই বেরসিক কোনো পাঠক যদি মনে করেন, এ-গল্পের মধ্যে গল্পটিই বা কোথায়, তাহলে তাকেও দোষ দেওয়া যাবে না। কামালের গল্প, আগেই বলেছি, নিষ্ঠাবান পাঠকের জন্য, যাঁরা গল্প পড়তে কেবল নয়, গল্প আবিষ্কার করতে বসেন। আহমাদ মোস্তফা কামাল পাঠককে অনুসন্ধানী করে তোলেন, তাঁর মধ্যে জাগিয়ে তোলেন আবিষ্কারের আনন্দ। সে-আনন্দ অনেক পুরনো কোনো অনুভূতিকে নতুন করে আবিষ্কারের, কিংবা মানুষে-মানুষে সম্পর্কের অতিচেনা নকশিকাঁথার মধ্যে নতুন কোনো নকশা আবিষ্কারের।
আহমাদ মোস্তফা কামালের গল্প বলার অননুকরণীয় একটি ভঙ্গি আছে। অনেকটা মুখোমুখি বসে কথা বলার মতো করে গল্প বলেন তিনি এবং সেই বলার মধ্যে কোনো ফাঁকি থাকে না। এ যেন পুরনো কোনো বন্ধুর সঙ্গে দক্ষিণমুখো বারান্দায় বসে আত্মগত গলায় 888sport sign up bonusচারণের মতো। কামালের গল্পগুলো পড়ার সময় আমরা সবাই তাই তাঁর বন্ধু হয়ে যাই। আর রুদ্ধনিশ্বাসে শুনতে থাকি 888sport sign up bonus ও বি888sport sign up bonus, কল্পনা ও বাস্তব, স্বপ্ন আর স্বপ্নহীনতার অসাধারণ সব আখ্যান। বইটি পড়তে গিয়ে যে-কথাটি বারবার মনে হয়েছে তা হচ্ছে, আহমাদ মোস্তফা কামাল কেবল গল্পই বলেন না, দক্ষ জাদুকরের মতোই মাঝে মাঝে আস্তিনের নিচ থেকে ছুড়ে দেন তীক্ষ্ণ সব প্রশ্ন আর জিজ্ঞাসার চাবুক। কাহিনিবর্ণনার মধ্যে হঠাৎ করেই স্বগতোক্তির মতো কথা বলেন তিনি – এত নিচু গলায় যে, সবসময় শোনাও যায় না; আমরা সচকিত হই, নড়েচড়ে বসি। ভ্রু কুঁচকে বোঝার চেষ্টা করি – তিনি কী বলছেন, কেন বলছেন। আর সবকিছুকে বাদ দিলে, আমার বিবেচনায়, গল্পকার আহমাদ মোস্তফা কামালের সার্থকতা এখানেই।
প্রেম-অপ্রেমের গল্প সম্বন্ধে এর বেশি কিছু না বলাই ভালো। শুধু এটি বলা যাক, যাঁরা গল্প পড়ে অল্প সময়ের রোমাঞ্চ নয়, তারও বেশি, তার চেয়েও নিবিড় কিছু পেতে চান তাঁদেরই বরং টোকা দেওয়া উচিত প্রেম-অপ্রেমের গল্পের বন্ধ দরজায়। দরজা খুলে যাবে। পাঠক পা দেবেন অনাবিষ্কৃত আনন্দের এক বিচিত্র পৃথিবীতে। পাঠকের সে-যাত্রা শুভ হোক।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.