888sport free bet login

ব্রিটিশ-ভারতের রাজনীতির চরিত্র

 

১৮৮৫ সালে জাতীয় কংগ্রেস ও ১৯০৬ সালে মুসলিম লিগ প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশভাগ পর্যমত্ম ভারতীয় রাজনীতির চরিত্র গভীর ও অনুপুঙ্খভাবে অনুধাবন করলে ভারত বিভাজনের অনিবার্যতা স্বীকার না করে বোধকরি উপায় থাকে না। তার পরও প্রশ্ন ওঠে, বিভক্তি এড়ানো কি একেবারেই সম্ভব ছিল না? এর একটা সরল উত্তর এই হতে পারে যে, ভাগ এড়াতে গেলে রাজনীতির চরিত্র কল্যাণধর্মের উপাদানে গঠন করতে হতো। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেটা হয়নি বলেই যা ঘটার তা-ই ঘটেছে। অথচ শত শত বছর পাশাপাশি বাস-করা হিন্দু-মুসলমান-শিখ কী ভয়ানক নিষ্ঠুরভাবে পরম্পরের প্রতি যুযুধান হয়ে উঠেছে এই জন্য যে, আর তাদের প্রতিবেশী হিসেবে বাস করা সম্ভব নয়। কিন্তু কেন? এই ‘কেন’র উত্তরের পরিসর বিশাল, প্রায় মহাসমুদ্রের মতো। তাতে সূক্ষ্ম-স্থূল কত ঘটনা-অনুঘটনা-দুর্ঘটনা! ব্রিটিশ-ভারতের ইতিহাস তাই দেশি-বিদেশি বহু গবেষক ও ইতিহাসকারকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করেছে। ভবিষ্যতেও যে করবে, তা জোর দিয়েই বলা যায়। কেননা এ-সংক্রামত্ম, বিশেষ করে দেশভাগ সম্পর্কে, নতুন তথ্য-উপাত্ত পাওয়ার সম্ভাবনা একেবারে তিরোহিত হয়ে যায়নি; দ্বিতীয়ত, নতুন নতুন দৃষ্টিকোণের তথা নবোদ্ভূত ইতিহাসতত্ত্বের আলোকসম্পাতের নিশ্চিত সম্ভাবনা তো থাকছেই।

এই ছোট ভূমিকাটুকু করা হলো 888sport appsের বর্ষীয়ান গবেষক-প্রাবন্ধিক-সমালোচক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সাম্প্রতিক গ্রন্থ জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও জনগণের মুক্তি ১৯০৫-৪৭ সামনে রেখে। প্রায় দুশো বছরের ইতিহাস থেকে কিঞ্চিদধিক এক-চতুর্থাংশ প্রামত্মপর্বীয় সময় বেছে নেওয়া হয়েছে এ-গ্রন্থে। কিন্তু হলে কী হবে, এটি আয়তন নিয়েছে বিপুল, ৮১৫ পৃষ্ঠা। ইতিহাসের পূর্বসূত্রের কথা 888sport app download for androidে রেখেও বলা যাবে, এ-বইয়ের গৃহীত কালপর্ব ভারতেতিহাসের সবচেয়ে ঘটনাবহুল অধ্যায়, যেন ঘটনার ঘনঘটা লেগেছিল সে-সময়ে। সুতরাং গ্রন্থের বিপুল-বিসত্মার অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু তার পরও নামকরণের দিকে তাকিয়ে, পাঠের আগেই মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, এর আয়তন কি কিছু কমতে পারত না? এ পর্যবেক্ষণে সে-দিকটাতেও দৃষ্টি দেওয়া যাবে। তার আগে প্রাসঙ্গিক কিছু তথ্য জেনে নিলে ভালো হয়।

ভূমিকায় লেখক জানিয়েছেন, এ-বই লেখা হয়েছে দশ বছর ধরে, একটানা নয় – ধীরে ধীরে। লিখতে লিখতে কিসিত্মতে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে তাঁরই সম্পাদিত পত্রিকা ত্রৈমাসিক নতুন দিগমেত্ম। এভাবে লেখার কিছু সমস্যা ঘটতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে পুনরাবৃত্তি হতে পারে, ধারাবাহিকতায় ব্যাঘাত ঘটতেও পারে। সে-ব্যাপারে সচেতন থেকে গ্রন্থরূপ দেওয়ার সময় একে যথাসম্ভব সংহত করার চেষ্টা নেওয়া হয়েছে। পাঠককে আগে থাকতে সচেতন করে দেওয়া হয়েছে যে, এ-গ্রন্থের বিষয় ইতিহাস হলেও এটি ধারাবাহিক ইতিহাস নয়। একটা বিশেষ লক্ষ্য সামনে রেখে এ-বই লেখা হয়েছে। সেটা হচ্ছে জনগণের মুক্তি, সর্বার্থে মুক্তি। সেই প্রেক্ষণবিন্দু থেকে পরিচিত ইতিহাসকে এখানে সমাজতান্ত্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে ও বিশেস্নষণ করতে চাওয়া হয়েছে। সুতরাং বলা যেতেই পারে যে, বিশেষত্ব ও মূল্যগত গুরম্নত্বে এ-বই 888sport appsে সমাজেতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে বিশেষ সংযোজন হিসেবে বিবেচনাযোগ্য।

জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও জনগণের মুক্তি (পরে শুধু ‘জনগণের মুক্তি’ লেখা হবে) উপসংহারসহ চৌদ্দোটি পরিচ্ছেদ বা অধ্যায়ে বিন্যসত্ম। পরিচ্ছেদগুলোর নাম জেনে নিলে বইটি সম্পর্কে একটি পূর্বধারণা পাওয়া সম্ভব হবে। সেগুলো হচ্ছে – বঙ্গভঙ্গ এবং তারপর; জাতীয়তাবাদের ধারণা ও প্রবণতা; গান্ধীর চিমত্মা ও ভূমিকা; জিন্নাহ, দ্বিজাতিতত্ত্ব এবং 888sport free betলঘুর ভাগ্য; দেশভাঙার তৎপরতা ও দায়দায়িত্ব; স্বাধীনতা বনাম ঔপনিবেশিক স্বায়ত্তশাসন; সুভাষ বসুর রাজনীতি এবং জাতীয়তাবাদের সীমা; তিনদল, আবার একদলও; দেশভাগের প্রক্রিয়া; ইতিহাসের কৌতুক এবং পরাজিতের স্বাধীনতা; বাংলাভাগ; মঞ্চে, মঞ্চের পেছনে এবং বাইরে; (এবং) জনগণের মুক্তির প্রশ্ন। শেষে উপসংহার ও নির্ঘণ্ট।

ইতিহাসের স্বরূপ-সন্ধানী জানেন, এ হচ্ছে শেকলের মতো। একটার পর একটা অংশ গেঁথে তা তৈরি হয়। সেজন্য ইতিহাস কেবল ঘটনা-পরম্পরা নয়। যেসব অনুঘটক ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে, সেগুলোর অবিচ্ছেদ্য সমাহারই ইতিহাস নির্মাণ করে। সেজন্য অনুঘটকের 888sport free bet একটা নয়, অনেকগুলো – অর্থনীতি, শ্রেণিস্বার্থ ও তজ্জনিত শ্রেণিবৈষম্য, ধর্মবোধ, শিক্ষার ধরন, সামাজিক বিভাজন ইত্যাদি। ইতিহাস তৈরিতে ব্যক্তির ভূমিকা যে থাকে না তা নয়, কিন্তু ব্যক্তি পুরোপুরি স্বাধীন নয়। তিনিও ইতিহাস দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। স্বভাবতই এ-বইয়েও অনেক ব্যক্তির কথা এসেছে। এঁদের সম্পর্কে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ভূমিকায় লিখেছেন, ‘যে-ব্যক্তিদের নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে তাঁদের কাজ রাজনীতিনিরপেক্ষ ছিল না এবং রাজনীতির ওপর ওই কাজ প্রভাব ফেলেছে। তদুপরি রাজনীতির বিভিন্ন ধারা ও প্রবণতার তাঁরা প্রতিনিধিত্ব করেন। রাজনীতি ছিল দৃশ্যমান, ভেতরে বিদ্যমান ছিল সমাজ ও অর্থনীতি। জনগণের মুক্তির জন্য প্রয়োজন ছিল সমাজ ও অর্থনীতিতে মৌলিক পরিবর্তন আনা, যে-পরিবর্তনের অপরিহার্য শর্ত হলো রাষ্ট্রকে বদলে দেওয়া, এবং রাষ্ট্রের ওপর জনগণের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা।’ কিন্তু তা হয়নি। কেন হয়নি তারই উত্তর খোঁজার সবিসত্মার চেষ্টা করা হয়েছে এ-বইয়ে। ফলে বেরিয়ে এসেছে জানা-অজানা বহু বিষয়, কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরোনোর মতো।

শুরম্ন করা যাক জাতিত্ব-চেতনা দিয়ে। এই চেতনারই তত্ত্বনাম জাতীয়তাবাদ। পাশ্চাত্য বিদ্যা-বাহিত এই চেতনা উপমহাদেশে প্রথম উদ্ভূত হয় বাংলার শিক্ষিত মানসে। এই শিক্ষিত শ্রেণিটি নানা কারণে এসেছিল হিন্দু সমাজ থেকে। তাদের জাতি-চেতনা মূলত হিন্দু-চেতনার সমার্থক রূপ নিয়েছিল। এটি ঘটতে ও শক্তি পেতে থাকে উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে হিন্দু পুনরম্নত্থানবাদী মনোভাব জাগ্রত হওয়ার ফলে। রামমোহন-ইয়ং বেঙ্গল-বিদ্যাসাগরের উদারতা ও যুক্তিবাদ সিত্মমিত হতে থাকে। বঙ্কিম-রমেশচন্দ্র প্রমুখের রচনা, রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের ধর্মান্দোলন, আর্যসভা-হিন্দুসভা-শুদ্ধিসভা

প্রভৃতি রাজনৈতিক সংগঠনের তৎপরতা হিন্দু পুনরম্নত্থানবাদী চেতনাকে শাণিত করতে থাকে। হিন্দুমেলা (১৮৬৭) তাই হয়ে যায় জাতীয় মেলা। নবগোপাল মিত্র তাঁর ন্যাশনাল পেপারে খুব জোরের সঙ্গে ঘোষণা করেন যে, হিন্দু নিঃসন্দেহে একটি স্বতন্ত্র জাতি।

তাহলেও এও সত্য যে, এই খ–ত জাতিত্ব-চেতনাবোধের মধ্য দিয়ে ব্রিটিশবিরোধী মনোভাবের জন্ম দিচ্ছিল। ইতোমধ্যে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা হয়ে গেছে। সরকারের ধামাধরা প্রতিষ্ঠানরূপে এর যাত্রা শুরম্ন হলেও কালে-কালে এটি যে ব্রিটিশ-সিংহাসনের প্রতি হুমকি হয়ে উঠবে, চতুর ইংরেজের পক্ষ তা না বোঝার কথা নয়। এও বোঝা সহজ যে, যে-চেতনা তাদের আশঙ্কার মূল কারণ তার উদ্ভব ও শক্তির মূলকেন্দ্র বাংলা। সুতরাং ভয়ের কারণকে অঙ্কুরে বিনষ্ট করে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। যুক্তিও মজুদ ছিল। বিহার-উড়িষ্যাসহ বাংলা প্রদেশের বিশাল আয়তন প্রশাসনের পক্ষ অসুবিধাজনক। তাই একটি প্রদেশ ভেঙে দুটো করা। বিহার-উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে একটি এবং পূর্ববঙ্গ ও আসাম নিয়ে অন্যটি। ১৯০৫ সালে ঘটানো হলো এই বিভাজন। অবধারিতভাবে প্রশ্ন ওঠে বিহার, উড়িষ্যা ও বাংলাকে কেন তিনটি প্রদেশে ভাগ করা হলো না, বঙ্গভঙ্গ রদ করে ১৯১১ সালে যেমনটি করা হয়েছিল? সরকারের উত্তর : পূর্ববঙ্গ ও আসামের মুসলিম সম্প্রদায় বড্ড পিছিয়ে আছে। ওই দুটি অঞ্চল নিয়ে আলাদা প্রদেশ হলে সরকার তাদের প্রতি বিশেষ নজর দিতে পারবে। বাংলার ছোটলাট ব্রম্নমফিল্ড ফুলার বলেছিলেন, হিন্দু-মুসলমান তার কাছে দুই স্ত্রীর মতো, তার মধ্যে মুসলমান প্রিয়তর অর্থাৎ দুয়োরানি-সুয়োরানি। তখনকার মতো এখনো শিক্ষিত মুসলমানদের অনেকে এবং কোনো কোনো ইতিহাসকার বিশ্বাস করেন যে, তাদের সম্প্রদায়ের ভালোর জন্যই সরকার বঙ্গভঙ্গ করেছিল। এ হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদের চরিত্র না বোঝার সহজ-সরল মনোভাব। যা-ই হোক, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর গ্রন্থের শুরম্ন এখান থেকেই।

বঙ্গভঙ্গে বাঙালি মুসলমানের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বলার আগে এই তথ্যটি উলেস্নখ করা দরকার যে, সেন্সাস রিপোর্ট অনুযায়ী তাদের শতকরা 888sport free betর ৮৫ ভাগ তখনো শ্রমজীবী। এদের বেশিরভাগই কৃষক ও তাঁতি, গ্রামবাসী ও অশিক্ষিত। বঙ্গভঙ্গ নিয়ে এদের মাথা ঘামানোর কথা নয়। 888sport free betয় ক্ষুদ্র, সাধারণ ও উচ্চশিক্ষিত মুসলমানের প্রায় আঙুলে-গণনীয় একটি শ্রেণি বঙ্গভাগের বিরোধিতা করেছিল, অন্যরা পক্ষেই ছিলেন। অথচ একে কেন্দ্র করে বড় ধরনের না হলেও পূর্ববঙ্গের দু-এক জায়গায় সাম্প্রদায়িক সংঘাত দেখা দিয়েছিল। মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক, তখনই কি মুসলিম-মনে হিন্দুদের মতো ধর্মীয় জাতি-চেতনার জন্ম হয়েছে? জনগণের মুক্তি সম্পর্কে আলোচনার বিষয়টি গুরম্নত্বের দাবি রাখে বলে ধারণা করি।

উনিশ শতকের প্রায় গোড়া থেকে কলকাতাকে কেন্দ্র করে পাশ্চাত্য বিদ্যার সংস্পর্শে এসে হিন্দু সমাজের একাংশের মনে যখন এক অভূতপূর্ব চিমত্মা-জগৎ ক্রমোন্মোচিত হচ্ছিল, ঠিক সেই সময় থেকে সারা বাংলায় – বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে মুসলমান সমাজে দুটি ধর্মশুদ্ধি আন্দোলন প্রসারিত হচ্ছিল। এর একটির উদ্ভব দিলিস্নতে, অন্যটির ফরিদপুরে। প্রথমটির নাম তরিকা-ই মুহম্মদিয়া, যা সাধারণভাবে কিন্তু ভুলভাবে ওহাবি আন্দোলন নামে পরিচিত; দ্বিতীয়টির নাম ফরায়েজি আন্দোলন। দুটি আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল মূলত একই – ইসলামের নবী-প্রদর্শিত পথ অাঁকড়ে ধরা। দুটি আন্দোলনই মুসলমানদের এই মর্মে সচেতন করতে চাচ্ছিল যে, তারা এক স্বতন্ত্র ‘কওম’ বা জাতি। সেটিই তাদের আইডেন্টিটি বা আত্মপরিচয়। এর ফল হয়েছিল দূরপ্রসারী। পরবর্তীকালে বিশেষ করে বাংলার মুসলমান সমাজ যে আত্মপরিচয়ের সংকটে ভুগেছিল এবং এই ভূমি থেকেই যে তাদের সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক সংগঠন মুসলিম লিগের জন্ম হয়েছিল তাতে অবাক হওয়ার কারণ নেই। সে-কারণে হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রতিক্রিয়ায় মুসলিম জাতীয়তাবাদের সৃষ্টি ও পুষ্টি, এমন ধারণা ইতিহাসের আংশিকতাকে তুলে ধরতে পারে – পুরোটা নয়।

এই যদি হয় ভারতীয় হিন্দু-মুসলিম-মনের প্রবণতা এবং তা যদি দেশের স্বাধীনতা ও ভারতবাসীর মঙ্গলবিধানের প্রয়াস-প্রচেষ্টার নিয়ন্ত্রক শক্তি হয়ে দাঁড়ায় তাহলে তার পরিণতি কেমন হতে পারে তা একরকম চোখ বুজে বলে দেওয়া যায়। যায় এ-কারণে যে, ইতিহাসের নিজস্ব একটি ধর্ম আছে। তাকে চালানো হবে এক পথে, আর আশা করা হবে ভিন্ন ফলের, বোকার স্বর্গে যাদের বসতি তারাই এমনটি আশা করতে পারেন। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী তাঁর গ্রন্থের যে-শিরোনাম ধার্য করেছেন তাতে যুক্তিশাস্ত্রের পারম্পর্য লক্ষণীয়। জাতীয়তাবাদের পরেই সাম্প্রদায়িকতা। এর মানে কি জাতীয়তাবাদ থেকে সাম্প্রদায়িকতা? একেবারেই তা নয়। জাতীয়তাবাদ নামক ধারণার মর্মমূলে যেসব কল্যাণদায়ক চেতনার অধিবাস, ধর্মনিরপেক্ষতা সেগুলোর অন্যতম। ভারতীয় রাজনীতির বহিরাবরণে তার চিহ্ন থাকলেও অমত্মর্মূলে তার পরিচয় কমই পাওয়া গেছে। ফলে লড়াই যতটা না হয়েছে সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে, তার চেয়ে বেশি হয়েছে ভাইয়ে-ভাইয়ে। রামা কৈবর্ত ও হাশিম শেখরা এর বলি হয়েছে বটে, কিন্তু এতে তাদের স্বার্থ ছিল না। সাম্প্রদায়িকতায় তা থাকার কথাও নয়। যাদের তা থাকে তারা উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত। ফলে ইতিহাসের নৈয়ায়িক-পরম্পরায় জনগণ মুক্তি তো পায়ই না, বরং তাদের দুর্ভোগ বাড়ে। দেশ ভাগ হয়, কিন্তু ক্ষত শুকোয় না। কেবল তা-ই নয়, উপমহাদেশ জুড়ে নতুন নতুন ক্ষতের সৃষ্টি হয়েই চলেছে। একেই বলতে চেয়েছি ইতিহাসের অনিবার্য গতি। দক্ষ সমাজতান্ত্রিকের চোখ দিয়ে লেখক এই গতিকে ধরতে চেয়েছেন এ-বইয়ে।

রাজনীতিতে নেতা থাকেন অনেকেই, কিন্তু সবাই নিয়ামকের ভূমিকা পালন করতে পারেন না। ব্রিটিশ-ভারতের রাজনীতিতেও তাই-ই দেখি আমরা। বড় মাপের শ্রেণিতে যাঁরা পড়েন, বিশাল ভারতবর্ষে তাঁদের 888sport free bet নেহাত কম নয়। তাঁদের অনেকের কথাই স্বাভাবিক নিয়মে এ-বইয়ে এসেছে; কিন্তু নিয়ামক হিসেবে চারজনের কথা আলাদা আলাদা পরিচ্ছেদে বিশেষভাবে বলা হয়েছে। এঁরা হলেন গান্ধী, নেহরম্ন, জিন্নাহ ও সুভাষ।

মুসলমানদের দিক থেকে সাধারণভাবে গান্ধীকে সাম্প্রদায়িক অর্থাৎ মুসলিম-বিদ্বেষী বলার একটা প্রবণতা আছে। সিদ্ধামত্মটি ভালো করে জেনে-বুঝে নেওয়া ভালো। তার মানে এই নয় যে, তাঁর বিশেষ মুসলিমপ্রীতি ছিল। আসলে দুর্গত-নিপীড়িত মানুষকে রক্ষা করা ছিল তাঁর ধর্ম। স্বাধীন ভারতে মুসলমানদের অভয় দেওয়া ও রক্ষা করার তিনি ছাড়া বিশেষ আর কেউ ছিলেন না। ঘাতকের হাতে তাঁকে জীবন দিতে হয়েছে এ-কারণে। এক মুসলিম-বিদ্বেষী আরেক ‘মুসলিম-বিদ্বেষী’কে মারবে কেন? আবার সর্বদাই যে তিনি নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাও নয়। একটা ঘটনা উলেস্নখ করা যেতে পারে।

১৯২১ সালের মে মাসে আসামের চা বাগানে শ্রমিক বিদ্রোহ ঘটে। শ্রমিকদের অধিকাংশ আসত বিহার ও উত্তর প্রদেশ থেকে। শ্রমিকরা ভারতীয় চা সমিতির প্রতিনিধি ও স্থানীয় মহকুমা প্রশাসকের দ্বারা ভীষণভাবে অত্যাচারিত হতো। ব্রম্নমফিল্ড কলকাতার স্বদেশী বাবুদেরও নিপীড়নের জন্য দোষী করেছেন। রটে গিয়েছিল যে, গান্ধিরাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং সব শোষণের অবসান আসন্ন। বহু কুলি ‘দেশে’ ফেরার আশায় কর্তৃপক্ষর অনুমতি না নিয়ে চাঁদপুর স্টিমারঘাটে আসে পদ্মা পার হওয়ার জন্য। নিপীড়কদের ইঙ্গিতে সশস্ত্র গোর্খাবাহিনী ২২ মে রাতে সমবেত কুলিদের ওপর আক্রমণ চালায়। পূর্ববঙ্গে এর প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।  যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের নেতৃত্বে আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের ধর্মঘট শুরম্ন হয় ও পদ্মার সব স্টিমারঘাটে তা ছড়িয়ে পড়ে। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন গোয়ালন্দে পৌঁছোন। ভারতবন্ধু অ্যানড্রুজ ঘটনাস্থলে ছিলেন। তিনি বিপন্ন কুলিদের সাহায্য করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ধর্মঘট সমর্থন করেননি। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কুলিদের মধ্যে কলেরা দেখা দিলে তিনি দেশবন্ধুর সাহায্য চান। দেশবন্ধু কুলিদের টিকিটের টাকার জন্য চাঁদা তুলতে রাজি ছিলেন, কিন্তু ধর্মঘট তুলতে নয়। শেষ পর্যমত্ম তাদের দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা হয়। উলিস্নখিত তিন মহৎ ব্যক্তি ও স্বেচ্ছাসেবীদের অকৃপণ সাহায্য ও কুলিদের দুঃখভোগ ধনতন্ত্রের একটা কুৎসিত দিক জনসমক্ষে তুলে ধরে। অথচ এ-ঘটনায় গান্ধীর ভূমিকা ছিল খুবই দুর্ভাগ্যজনক। গান্ধীবাদীরা, বিশেষত পদমরাজ জৈন প্রমুখ মাড়োয়ারি আপত্তি জানালে গান্ধী ২৫ জুনের ইয়ং ইন্ডিয়া পত্রিকায় ‘আসামের শিক্ষা’ শিরোনামে লেখেন, ‘আমরা ধন বা ধনিকদের ধ্বংস করতে চাই না, ধনিক ও শ্রমিকদের সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ করতে চাই। সহানুভূতি দেখানোর জন্য ধর্মঘট চালানো হবে মূর্খতা।’ বোঝা যায়, অসহযোগ আন্দোলনে তিনি শ্রমিক ধর্মঘট প্রয়োগ করতে রাজি ছিলেন না।

(অমলেশ ত্রিপাঠী, স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস, পৃ ১০৫)।

গান্ধী-রাজনীতির স্বরূপ দু-চারটি বাক্যে চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন সুমিত সরকার তাঁর আধুনিক ভারত (888sport app download apk latest version) গ্রন্থে। ১৯২২ সালের ফেব্রম্নয়ারির গোড়ায় গোরখপুর জেলার চৌরিচৌরার হিংসাত্মক ঘটনায় গান্ধী আকস্মিকভাবে অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করেন। এতে নেতা-কর্মী-জনতার বিপুলসংখ্যক মানুষ মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ হন। স্বায়ত্তশাসনের জন্য জোয়ার-জাগা এই আন্দোলনের অকালমৃত্যু ঘটাতে গান্ধী কেন এই হঠকারী সিদ্ধামত্ম নিলেন! গান্ধীর পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে সুমিত সরকার লিখেছেন, ‘… তিনি বারেবারে ও প্রভূত পরিমাণে সতর্কবাণী দিয়েছিলেন যে, তিনি শুধু এক বিশেষ ধরনের নিয়ন্ত্রিত গণ-আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে প্রস্ত্তত এবং শ্রেণী-সংগ্রাম বা বা সমাজ-বিপস্নবে তাঁর আদৌ কোনো আগ্রহ নেই।’ এটি যুক্তি বটে, তবে এই যুক্তির মধ্যেই রয়েছে গান্ধী-রাজনীতির মর্মসত্য। সুমিত সরকার আরো লিখেছেন, ‘গান্ধী যেই আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিলেন, গোটা আন্দোলনই ভেঙে পড়ল – এর থেকেই তার (অর্থাৎ আন্দোলনের – হা.র) নিজস্ব মৌল দুর্বলতাও ধরা পড়ে – ১৯১৯-২২-এর ভারতে দাহ্যবস্ত্ত ছিল পর্যাপ্ত, বোধহয় সময়বিশেষে বিষয়গত দিক দিয়ে বিপস্নবী পরিস্থিতিও ছিল, কিন্তু বিকল্প বিপস্নবী নেতৃত্ব বলতে কিছুই ছিল না।’ (পৃ ১৯২)।

সুমিত সরকার গান্ধী-রাজনীতি সম্পর্কে যা লিখেছেন, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বহু তথ্য-উপাত্ত দিয়ে তা-ই বিসত্মৃতভাবে দেখিয়েছেন ‘গান্ধীর চিমত্মা ও ভূমিকা’ শীর্ষক তৃতীয় পরিচ্ছেদে। ভারতীয় পুঁজির রক্ষাকর্তা হিসেবে অবতীর্ণ গান্ধীর চিমত্মা ও ভূমিকা বহু স্ববিরোধে আকীর্ণ বলে মনে হয়। অথচ এই মানুষটি কংগ্রেসে ছিলেন অবিসংবাদিত। তাঁর ওপরে কথা বলার মতো ক্ষমতা বাংলার চিত্তরঞ্জন দাস ও সুভাষ বসু ছাড়া আর কারো ছিল বলে মনে হয় না। কিন্তু চিত্তরঞ্জনের তো অকালপ্রয়াণ ঘটল, আর সুভাষ গেলেন ভিন্ন খাতে। সুভাষকে কংগ্রেসে টিকতে দিলেন না গান্ধীই। এখানে একটা প্রশ্ন ওঠে যে, এতটা অপ্রতিহত যাঁর ক্ষমতা, তিনি কেন দেশ বিভাগ মেনে নিলেন? প্রশ্নটা এ-বইতেও এসেছে। কিন্তু খুব জোর দিয়ে দলিলপত্র সামনে রেখে এর কারণ দর্শানো সহজ নয়। লেখক তাই তাঁর নিজের কিছু ধারণা ব্যক্ত করেছেন মাত্র। (পৃ ৫৯০)

যে-কালপর্ব নিয়ে জনগণের মুক্তি লেখা, সেই ঘটনাবহুল সময়ে যে-ইতিহাস নির্মিত হচ্ছিল, লেখক মমত্মব্য করেছেন তাতে নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তির ছিল। যাঁরা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাঁদের মেধা, দক্ষতা ও দেশপ্রেমের প্রতি লেখক যথেষ্ট 888sport apk download apk latest version ব্যক্ত করেছেন। তবে তাঁদের মধ্যে তিনজনকে তিনি প্রধান বিবেচনা করেছেন – গান্ধী, জিন্নাহ ও সুভাষকে এবং তাঁদের প্রত্যেককে নিয়ে আলাদা পরিচ্ছেদ সাজিয়েছেন। এর মানে এই নয় যে অন্যদের তিনি যথাযথ গুরম্নত্ব দেননি। সবাইকে তিনি বিবেচনামতো জায়গা দিয়েছেন। তবে আমাদের মনে হয়েছে, দেশবন্ধু যতটা গুরম্নত্ব পেয়েছেন তার চাইতে বেশি গুরম্নত্ব পাওয়ার তিনি দাবিদার। কেবল বেঙ্গল প্যাস্টের জন্য নয়, ভারতীয় রাজনীতিতে অল্প কয়েক বছরে একটা নিয়ন্ত্রক শক্তি হয়ে ওঠায়। হয়তো অকালপ্রয়াত হওয়ায় তাঁর গুরম্নত্ব অতটা চোখে পড়ে না। তবে এ-কথা সত্য যে, জনগণের মুক্তি বলতে লেখক যা বোঝাতে চেয়েছেন তিনি সেই রাজনীতির দিকে যাননি, কংগ্রেসে থেকেই স্বরাজ্য দল গঠন করেছেন। জনমুক্তি অর্থাৎ সমাজতন্ত্রে নেহরম্নর ‘স্পষ্ট’ বিশ্বাস থাকা সত্ত্বেও তিনি তো সে রাজনীতির দিকে যাননি। তাঁর পক্ষে যুক্তি দেখানো হয়েছে তখন (?) এমন কোনো সমাজতান্ত্রিক দল ছিল না যাতে তিনি যোগ দিতে পারতেন। তেমন একটা দল গড়ার আগ্রহও তাঁর ছিল না (পৃ ৭৫৪-৫৫)। তাহলে সমাজতন্ত্রে শুধু বিশ্বাস নিয়ে একজন বড় মাপের রাজনীতিবিদের লাভ কী? বলা হয়েছে, চিত্তরঞ্জনের স্বরাজ্য দলের লক্ষ্য স্থির হয়েছিল আন্দোলন নয়, আইনসভায় যাওয়া (পৃ ৪৫৫)। এই বক্তব্য আংশিক। আন্দোলনের অংশ হিসেবেই আইনসভায় যাওয়ার সিদ্ধামত্ম তিনি নিয়েছিলেন, যাতে ভেতর থেকে সভাকে অচল করে দিতে পারেন। গান্ধী এই নীতির প্রবল বিরোধী ছিলেন বলেই স্বরাজ্য দলের উদ্ভব। উলেস্নখ্য, গান্ধী পরে চিত্তরঞ্জনের ওই নীতি মেনে নিতে বলা চলে বাধ্য হয়েছিলেন।

গান্ধীর পর জিন্নাহ, তারপর সুভাষ। জিন্নাহর প্রসঙ্গ সুভাষের পর তুলব। তার আগে লেখকের দৃষ্টিতে তিন ‘প্রধান’ নেতার বিন্যাস দেখে নেওয়া যাক। গান্ধীর পরপরই সূচিতে জিন্নাহ আছেন, কিন্তু সুভাষ চলে গেছেন পরের পঞ্চম ও ষষ্ঠ এই দুটি পরিচ্ছেদের পর। ‘দেশ ভাঙার তৎপরতা ও দায়দায়িত্ব’ এবং ‘স্বাধীনতা বনাম ঔপনিবেশিক স্বায়ত্তশাসন’ নামাঙ্কিত এই দুটি পরিচ্ছেদ ‘সুভাষ বসুর রাজনীতি ও জাতীয়তাবাদের সীমা’র আগে স্থাপনের যৌক্তিকতা পাওয়া যায় না। জিন্নাহর পরেই সুভাষকে রাখলে সংগত হতো। এছাড়া সুভাষ-সম্পর্কিত পরিচ্ছেদটি ভিন্ন কোনো লক্ষ্যে রচিত হয়েছে বলে মনে হয়। তা না হলে এটি দীর্ঘ ৭০ পৃষ্ঠা না জুড়লেও চলত।

সুভাষ বসুর দেশপ্রেম, বীরত্ব ও আত্মত্যাগ নিয়ে সংশয়ের কোনো অবকাশ নেই। কিন্তু লেখক বহু তথ্য ও ঘটনা বিশেস্নষণ করে দেখিয়েছেন, দেশের স্বাধীনতার জন্য যতটা আগ্রহ তাঁর ছিল, সমাজ-বিপস্নবে ততটা নয়। অবশ্য নেহরম্নর মতো সমাজতন্ত্রের কথা তিনিও বলতেন; কিন্তু তাতে ছিল ভারতীয় আদল অর্থাৎ খানিকটা আধ্যাত্মিকতা-মেশানো। এছাড়া সমাজতন্ত্রের ন্যায়নীতির সঙ্গে ফ্যাসিবাদের শৃঙ্খলা মেলাবেন বলে যে-আশা তিনি করতেন, তা ছিল অবিশ্বাস্য ও বিপজ্জনক (পৃ ৪০৪)। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ও ভারতীয় রাজনীতির চরম সময়ে তাঁর দেশত্যাগ, পরবর্তী কর্মকা- ও আকস্মিকভাবে চিরকালের জন্য নিখোঁজ হয়ে যাওয়া নিশ্চয় এক ট্র্যাজেডি, কিন্তু বেঁচে থাকলে স্বদেশের রাজনীতিতে কী ভূমিকা তিনি পালন করতেন তা বলা সম্ভব নয়।

জনমুক্তির প্রশ্নে জিন্নাহর ভূমিকা সম্পর্কে এই আলোচনায় তেমন কিছু বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। সমাজের উচ্চাসনের মানুষ তিনি, জনতার মাঝে আসার মানসিকতাই তাঁর ছিল না। ‘সম্মানের উচ্চাসন হতে/ নামিতে পারে না সে যে সমসেত্মর ঘোলা গঙ্গাস্রোতে’ – রবীন্দ্রনাথের পক্ষে এ ছিল আক্ষেপ, কিন্তু জিন্নাহর জন্য অমত্মরের সত্য। কাদের স্বার্থে স্বাধীনতা – এ-প্রশ্নে গান্ধীর সঙ্গে জিন্নাহর হয়তো খুব বড় তফাৎ ছিল না, কিন্তু জীবনাচরণে দুজনের পার্থক্য ছিল দুসত্মর। ১৯৪৮ সালের ৮ জুন সৈনিক পত্রিকার সম্পাদক দরিদ্র শ্রমজীবীদের সম্পর্কে পাকিসত্মান সৃষ্টির পূর্বে ব্যক্ত জিন্নাহর একটি উক্তি উদ্ধৃত করেছিলেন। জিন্নাহ বলেছিলেন, ‘আমি দেখেছি লাখো লাখো লোক একবেলা আধপেটা খেতে পায় না, একটুকরো ছেঁড়া কাপড় পরতে পায় না – পাকিসত্মানে যদি এইসব দীনদরিদ্রের অধিকার প্রতিষ্ঠা না হয়, তবে সে পাকিসত্মান আমি চাই না।’ একে কুম্ভীরাশ্রম্ন ছাড়া আর কী বলা যায়?

দেশভাগের ব্যাপারে জিন্নাহ বহুদিন যাবৎ খলনায়ক হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন। এই ধারণা পাল্টাতে থাকে সত্তরের দশকে দেশভাগ ও ক্ষমতা হসত্মামত্মর-সংক্রামত্ম ব্রিটিশ-নথি খ-াকারে প্রকাশ এবং ভারত ও পাকিসত্মানের অভিলেখ্যাগার ও গ্রন্থাগার ব্যবহারের মাধ্যমে কৃত একাধিক গবেষণার দ্বারা। উপমহাদেশের অখ-ত্ব বজায় রেখে ও রক্তপাত এড়িয়ে স্বাধীনতা লাভের জন্য ক্যাবিনেট-মিশন-প্রসত্মাবের চেয়ে উত্তম কিছু সে-সময়ে (জুন ১৯৪৬) কারো সামনে ছিল না। দলের অনেকের আপত্তি সত্ত্বেও জিন্নাহ বেশ দ্রম্নতই প্রসত্মাবটি মেনে নিয়েছিলেন। কংগ্রেসও মোটামুটি মেনেই নিয়েছিল বলা যায়। কিন্তু নেহরম্ন ১০ জুলাইয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সব ভেসেত্ম দিলেন এ-কথা বলে যে, কংগ্রেস গণপরিষদে যোগ দিয়ে কী করবে-না-করবে সে-বিষয়ে সিদ্ধামত্ম নেওয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা তাদের আছে। তারা কাউকে কোনো প্রতিশ্রম্নতি দেননি। জিন্নাহ চূড়ামত্মভাবে বুঝলেন সব আশা শেষ। ২৯ জুলাই লিগ পূর্ব সিদ্ধামত্ম প্রত্যাহার করে এবং তার পরই প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবসের ডাক দেয়। পরের ইতিহাস তো সবারই জানা।

তাহলে জিন্নাহ কেন মুসলমানদের জন্য আলাদা দেশের পক্ষে গোঁ ধরেছিলেন। অনেকের মতে, সেটা ছিল একটি রাজনৈতিক কৌশল – কংগ্রেসের ওপর চাপ সৃষ্টি করে নিজের সম্প্রদায়ের জন্য অধিকতর সুবিধা আদায়। কৌশলটি ভালো, না মন্দ সে-বিচার আলাদা; কিন্তু দেশভাগ তাঁর মনোগত অভিপ্রায় ছিল না। ইতিহাসবিদ অসীম রায় স্পষ্টভাবে লিখেছেন, ‘মুক্ত দৃষ্টিতে বিচার করে আজ আর অস্বীকার করার উপায় নেই যে ক্যাবিনেট মিশনের ব্যর্থতার দায়িত্ব ইতিহাসের পক্ষপাতহীন কঠোর দৃষ্টিতে বহন করতে হবে মুসলিম লীগকে নয়, কংগ্রেসকে। ইতিহাসের কাঠগড়ায় দেশ-বিভাগের সম্পূর্ণ বিরোধী মিশন-পরিকল্পনা হত্যার আসামী ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস।’ (ইসলাম ও বাঙালি মুসলমান সমাজ, পৃ ১১৬)

যশোবমত্ম সিংহ তাঁর জিন্না ভারত দেশভাগ স্বাধীনতা গ্রন্থে (888sport app download apk latest version) অতটা স্পষ্টভাবে না হলেও মিশন-ব্যর্থতার দায় নেহরম্ন তথা কংগ্রেসের ওপরেই দিয়েছেন। তিনি নেহরম্নর সাক্ষাৎকারসহ এ-সংক্রামত্ম বেশ কিছু দলিল হাজির করেছেন। সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে তাঁর মমত্মব্য : ‘সাংবাদিক সম্মেলনের জন্য এর চেয়ে খারাপ সময় খুঁজে বার করা দুষ্কর ছিল। মেনে নেওয়া মুশকিল যে নেহরম্ন জানতেন না যে এই সময় এই রকম একটি সাংবাদিক সম্মেলন বা সাক্ষাৎকারের ফল কী হতে পারে।’ (পৃ ৩২৯)। দেশের দ্বিখ-ীকরণে সিরাজুল ইসলাম জিন্নাহর আগ্রহ লক্ষ করেছেন (পৃ ১৫৩, ২৩৪ ও ৫৯১)। মনে হয় বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে।

এবার কমিউনিস্ট পার্টির ভূমিকার দিকে চোখ ফেরানো যাক, যে-দলের লক্ষ্যই হচ্ছে বিপস্নবের মাধ্যমে জনগণের সার্বিক মুক্তি প্রতিষ্ঠা করা। অন্য কথায় সর্বহারার রাষ্ট্র কায়েম করা। এই দলের কথা এসেছে উপসংহারের আগে ‘জনগণের মুক্তির প্রশ্ন’ শীর্ষক ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদে। এ-কথা বলতেই হচ্ছে যে, কমিউনিস্ট পার্টি ও তাদের ভূমিকা এখানে যতটা জায়গা পেয়েছে তার চেয়ে বেশি পেয়েছে বঙ্কিম-মধুসূদন-শরৎ-নজরম্নল প্রমুখের 888sport live footballকর্মের সমাজতাত্ত্বিক বিশেস্নষণ। বিশেষ করে মধুসূদন সম্পর্কে মোটামুটি একটা দীর্ঘ আলোচনা এ-পরিচ্ছেদের জন্য তো বটেই, এ-বইয়ের জন্যও অপ্রাসঙ্গিক ও ক্লামিত্মকর। এর মানে এই নয় যে, জনমুক্তি প্রসঙ্গে 888sport live footballের আলোচনা অবামত্মর। কিন্তু সেক্ষেত্রে আমাদের বিবেচনায়, পরিসর ও যথার্থের দিকে লেখকের তীক্ষন দৃষ্টি থাকলে আলোচনা সংহত হতে পারে।

কংগ্রেস-লিগ-ব্রিটিশ সরকার মেধাবান 888sport live footballিকদের অনেকে কমিউনিস্টবিরোধী ছিলেন। রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক এই বিরোধিতার মধ্যে পার্টির শক্ত অবস্থান তৈরি করা হয়তো সহজ ছিল না।

কিন্তু দুর্বলতা ছিল পার্টির মধ্যেও এবং তার পরিমাণ নেহাত কম নয়। ৭৬৭-৬৮ পৃষ্ঠায় মাত্র একটি সত্মবকে লেখক সেই দুর্বলতাগুলোর সারাৎসার ব্যক্ত করেছেন। ভাবতে অবাকই লাগে, ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টিকে সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে দেশভাগ যখন সমর্থন করতে দেখি। ফলে জনমুক্তি পরাহত হয়, সেদিনও যেমন আজো তেমনি।

জনগণের মুক্তির পরিচ্ছেদ-বিন্যাস সম্পর্কে অংশবিশেষ আগে বলেছি। আরো কিছু বলা দরকার। ‘দেশভাগের প্রক্রিয়া’ নামে একটি পরিচ্ছেদ (নবম) যেহেতু আছে, সেজন্য ‘দেশভাঙার তৎপরতা ও দায়দায়িত্ব’ নামের পরিচ্ছেদটি (পঞ্চম) রাখার দরকার আছে বলে মনে হয় না। দুটিরই বিষয়বস্ত্ত এক। তাছাড়া ‘দেশভাগের প্রক্রিয়ার পরেই ‘বাংলা ভাগ’ পরিচ্ছেদটি (১১শ) বিন্যসত্ম করলে সঙ্গত হতো না কি? ‘জাতীয়তাবাদের ধারণা ও প্রবণতা’ শীর্ষক দ্বিতীয় পরিচ্ছেদের চতুর্থ উপপরিচ্ছেদে স্বাধীন ভারত ও 888sport appsে ধর্মনিরপেক্ষতার অবস্থা বুঝতে চাওয়া হয়েছে। কালিক বিচারে অংশটি এ-গ্রন্থের জন্য প্রযোজ্য নয়। এটি বরং তাঁর অন্য বই বাঙালীর জাতীয়তাবাদের সঙ্গে খাপ খায় এবং সেখানে তা আছেও।

দুটি তথ্য নিয়ে বিভ্রামিত্ম হতে পারে। হিন্দু কলেজের প্রতিষ্ঠার বছর বলা হয়েছে ১৮১৬ (পৃ ২৯৭)। সালটি ১৮১৭ বলেই জানি। এটি প্রেসিডেন্সি কলেজে রূপামত্মরিত হয় ১৮৫৫ সালে। অথচ অন্যত্র লেখা হয়েছে এই রূপামত্মর ঘটে প্রতিষ্ঠার ৫৬ বছর পর। মনে হয় লেখক অনবধানবশত হিসেবে ভুল করে ফেলেছেন (পৃ ৮৯)।

নির্ঘণ্ট বর্ণানুক্রমিক হওয়া বাঞ্ছনীয়। ‘ব’-এ দেখছি ঢুকে গেছে কাজী কাদের নেওয়াজ। বইটিতে একটি গ্রন্থপঞ্জি থাকা দরকার ছিল। আশা করি ভবিষ্যতে তা পাওয়া যাবে।

‘প্রারম্ভিক’ অংশের শেষে লেখক ২০০০ সালে লেখা তাঁর বাঙালীর জাতীয়তাবাদ বইটির পরিপ্রেক্ষিতে জানিয়েছেন, ‘বর্তমান রচনাটি তার পরবর্তী যেমন, তেমনি পরিপূরকও।’ রচনাকালের বিচারে বর্তমান রচনাটি পরবর্তী বটে, কিন্তু ধারণকৃত সময়ের বিচারে এটি পূর্ববর্তী এবং আগেরটি বরং এটিরই পরিপূরক। তবে দুটি বই-ই যে পরস্পরের পরিপূরক তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও জনগণের মুক্তি যারা পড়বেন, লেখক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী একটা বিষয়ে তাদের একটুখানি সজাগ থাকতে বলেছেন। সেটি হলো, এ-বইয়ের বিষয়বস্ত্ত ইতিহাস হলেও এটি ধারাবাহিক ইতিহাস নয়। সেজন্য ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বহু কিছু, অনাহূত হয়ে নয় – ওই ইতিহাসকে ভালো করে বুঝে নেওয়ার তাগিদে। উপমার সাহায্যে বলা যায়, একটা পথ ঠিক করে নিয়ে লেখক বলেছেন, কিন্তু তাঁর চোখ কেবল পথের দিকে নয়। আশপাশটা দেখতে দেখতে যাচ্ছেন তিনি, বুঝে নিতে চাচ্ছেন আশপাশের সঙ্গে পথটার সম্পর্ককে। ফলে চলা একটু বিলম্বিত হচ্ছে, সেজন্য বাড়ছে রচনার পরিসর। পাঠকের তাতে লাভ ছাড়া ক্ষতি নেই। কেননা কমবেশি পরিচিত ইতিহাসের সঙ্গে একদিকে যেমন তিনি বহু কিছু অবহিত হতে পারবেন, তেমনি পাবেন বিষয়নিষ্ঠ প্রচলিত ইতিহাসপাঠের অতিরিক্ত ভিন্নতর একটা আস্বাদ। তাকে আরো আবেদনময় করেছে লেখকের উৎকৃষ্ট গদ্যশৈলী। প্রাঞ্জলতার সঙ্গে তাতে রয়েছে 888sport live footballগুণ। ব্রিটিশ-ভারতের একটা বিশেষ সময়পর্বের সামাজিক ইতিহাসে গ্রন্থটি যে একটি অবি888sport app download for androidীয় মাত্রা যোগ করেছে তা দৃঢ়তার সঙ্গেই বলা যায়।

 

 

 

মহীরম্নহের বীজ

নাহার মনিকা

জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত ছোটগল্পে যেমন সকলের থেকে স্বতন্ত্র, 888sport alternative linkেও তেমনি।

দীর্ঘকাল লেখালেখির পর, লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠা, স্বীকৃতি এবং 888sport app download bd পাওয়ার পরও একটি 888sport alternative link লিখতে সময় নিয়েছেন তিনি। আর সে-অপেক্ষার পরিণত প্রতিফলন ঘটেছে তাঁর ছোট 888sport alternative link শূন্য নভে ভ্রমিতে।

জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত তাঁর এই রচনাকে ‘ছোট 888sport alternative link’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

বাংলা 888sport live footballে অনুগল্পের সংযোজন খুব বেশিদিন হয়নি। ছোটগল্পের বৈশিষ্ট্য নিয়ে ক্ষুদ্র এক সংস্করণ, যা পাঠক এক লহমায় পড়ে একটি ছোটগল্পের রস আস্বাদন করতে পারেন। বলা যায়, এই ধারাটি 888sport live footballচর্চায় বেশ জনপ্রিয়ও হয়ে উঠছে। ছোট 888sport alternative linkও তেমনি 888sport alternative linkের তাবৎ বৈশিষ্ট্য নিয়ে বড় পটভূমিকে উপস্থাপনের কৌশল, যা এর আগে অন্য কেউ করেছেন বলে জানা নেই।

888sport alternative link-সংক্রামত্ম গতানুগতিক ধারণা থেকে বাংলা কথা888sport live football নিজস্ব গ– পেরিয়েছে কিনা, সে-আলাপে না গিয়ে আমার ব্যক্তিগত মতামত এই যে, দেশ ও মানুষের সময়, ব্যক্তিক কিংবা রাষ্ট্রিক সংকট, পারস্পরিক বিচ্ছিন্নতা এবং যোগাযোগ, সব মিলিয়ে 888sport live footballের সামগ্রিকতা বিপুলভাবে প্রভাবিত হওয়ার আবহ ছড়িয়ে আছে চারপাশে। জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত এ-আবহকে অস্বীকার না করেও লেখনীকে সময়োত্তীর্ণ করেছেন তাঁর 888sport alternative link শূন্য নভে ভ্রমিতে।

একে নভেলা বা 888sport alternative linkিকা বলতে ইচ্ছুক নন তিনি। ছোট পটভূমিকে ইনিয়ে-বিনিয়ে টেনে লম্বা করে বলার পক্ষেও নন। বরং বিশাল প্রেক্ষাপটকে আশ্চর্য পারঙ্গমতায় উপস্থাপন করেন, যেখানে প্রতিটি শব্দে, বাক্যাংশে আর বাক্যে পাঠককে মনোযোগী হতে হয়। বলা বাহুল্য, আমরা তাঁর ছোটগল্প পাঠ-অভিজ্ঞতা থেকে জানি যে, শব্দ ও ভাষার প্রয়োগ-নৈপুণ্য জ্যোতিপ্রকাশ দত্তের করতলগত।

এ-888sport alternative linkে তাঁর শব্দ এবং বাক্য কাব্যময়তার জাদুতে কখনো স্থির, কখনো চলিষ্ণু, পাঠককে একটি পরি888sport slot gameের মুখোমুখি আনে, এর বর্ণনা পাঠককে ঘোরগ্রসত্ম করে। একটি প্যারাতে,  কখনো-কখনো একটিমাত্র বাক্যে অধ্যায়ের ছবি দেখা হয়ে যায়, যেখানে থাকে সংক্ষিপ্ত সংলাপ, অথবা ইমেজারি-নির্ভর নানা ঘটনার বর্ণনা। 888sport alternative linkের পটভূমি বিসত্মৃত থাকে গ্রামীণ নিসত্মরঙ্গ জীবন থেকে যুদ্ধ, যুদ্ধোত্তর শহরের টানাপড়েন, প্রেম আর দ্বন্দ্বের ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র নকশা দিয়ে, যে-নকশাগুলি নির্মাণকৌশলের আলো-অাঁধারিতে অন্যরকম এক জীবনবোধের চিত্র হয়ে ধরা দেয়।

প্রথম পর্বে পাঠক এই আখ্যানের নায়কের সঙ্গে পরিচিত হয়, যে-পরিচয় স্পষ্ট থেকেও পর্দা নামানো মঞ্চের আলোর ভেতর ছায়াদৃশ্য তৈরি করে। অসংখ্য দৃশ্য। আর বাক্যের শুরম্নতে ‘একদা’ শব্দটি মুক্তিকামী, মুক্তিদাতা, এখন প্রবঞ্চিত যুবকের শূন্যদৃষ্টির কথায় যে-দৃশ্যপট ভাসে তা আমাদের স্বাধীনতার অনুভূতি, যুদ্ধ এবং যুদ্ধফেরত মুক্তিযোদ্ধার হতাশা-বঞ্চনার চিত্র দেয়। যুদ্ধের চিত্রটি কোনো স্থান-কাল-পাত্র ভেদাভেদের ধার ধারে না, ফলে আধুনিক যুদ্ধের একটি চিরমত্মন যুদ্ধের অবয়ব দেখি। এক্ষেত্রে যুবকটি হয়তো সেই 888sport free betগরিষ্ঠ ত্যাগী মুক্তিযোদ্ধার প্রতিনিধি, যারা মাতৃভূমিকে মুক্ত করার পরে নিজের পোড়া ভিটেয় ফিরে মাকে দেখতে পায় না, তাদের মায়েরা অপেক্ষা করতে-করতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে।

তার মা অবশ্য ঐ বৎসরাধিক কালের সারা সময়-ই পথ চেয়ে বসেছিল। এমনকি আরো অনেকের সঙ্গে ফসল পোড়ানো মাঠে কি শাল গরানের জঙ্গলে রাতদিন কাটিয়ে যখন ফিরে এসে দেখেছিল পোড়াকাঠের বর্গা, তাপে বাঁকা টিন কি বাঁশবাখারির ছাই তার ঘরের সীমানাজুড়ে ছড়ানো, তখন তার আর জীবনধারণের প্রয়োজন ছিল না। তবু সমত্মানটির ফিরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষ করেছিল সে, এবং দীনহীন আত্মীয়ের বারান্দায় ঠিক সমত্মানের কোলে মাথা রেখে পরপারে চলে না-গেলেও চলেই যায় সে এবং স্বজনহীন, সম্বলহীন সমত্মানটির আর তখন না-জানা     না-দেখা পথে আবার উঠে যেতে কোনো বাধা থাকে না। (শূন্য নভে ভ্রমি)

তারপর সে গ্রাম থেকে শহরে গিয়ে নিজেকে কোণঠাসা আবিষ্কার করতে-করতে নিঃসঙ্গতার শিকারে পরিণত হয়। আর 888sport alternative linkের এ-পর্যায়ে তার মধ্যে ঢুকে পড়ে সংশয়।

তবে ফিরে আসার পথও যে তার জানা ছিল না এমন নয়। তাই শহরে ঢোকার পরে সহস্র ঘরছাড়া ঘরপোড়া মানুষের ভিড়ে হারিয়ে গেলে কেউ যখন তাকে চেনে না কেউ যখন তাকে ডাকে না তখন শহর বে-শহরে ঘুরে বেড়ানো ছাড়া তার আর কী-ই বা করার ছিল। অমনি একদিন হঠাৎই বুঝি, অথবা কে জানে চারপাশে অন্য কোনো পথ না-দেখে অনেক খোঁজাখুঁজির শেষে ফেলে আসা গ্রামের পথেই উঠেছিল সে। (শূন্য নভে ভ্রমি)

শূন্য নভে ভ্রমি মানুষের আখ্যান। মূলত, একজন পুরম্নষ, তাকে ঘিরে একটি 888sport promo code, তাদের চারপাশের ভূমি, জনপদ আর আকাশের কাহিনি। থেকে-থেকে প্রতীকী হয়ে ওঠা এই কাহিনিভাগে পুরম্নষটিকে কেন্দ্র করে কাল নিরবধি বয়ে যায়।

পাঠক তাকে আবিষ্কার করে আকাশের দিকে শূন্যদৃষ্টি মেলে বসে থাকা অচেনা মানুষ হিসেবে। যে আগে থেকেই খোলা নীল আকাশ দেখতে ভালোবাসে। আকাশের গায়ে উড়ে-যাওয়া পাখি দেখতে ভালোবাসে। এমনই চেয়ে থাকতে-থাকতে একদিন উড়োজাহাজ দেখে, তাদের নিশানা লক্ষ করে ছুটতে-ছুটতে পথ হারিয়ে ফেলে।

সকলেই জানতো ঐ রকম সারা রাত চৌদ্দগ্রামে যাত্রা শোনা অথবা তিন দিন ধরে মেঠো রাসত্মায় রোদবৃষ্টিতে ঘুরে বেড়ানো যুবক ঘরে থাকে না। তাছাড়া সকলে যখন বলাবলি করে যে আকাশের কালো রঙ কেবল মেঘের-ই নয়, নানারকম ধোঁয়াও সেখানে আছে – আগুনের – বারম্নদের। আরো অনেকে যখন ঐ আগুন নেভানোর জন্যে ঐ বারম্নদ বুকে ধরার জন্যে নদীর পাড় ধরে, শূন্য মাঠের বুক বেয়ে, কি জলজঙ্গল পেরিয়ে চলে যেতে থাকে, তখন সেও যে পেছনে না-তাকিয়ে কারো কথা না-ভেবে দূর শহরের চারপাশে গড়ে তোলা বেড়া ভাঙ্গতে চলে যাবে, পথ হারিয়ে ফেলবে এ-ও জানা ছিলো। (শূন্য নভে ভ্রমি)

উপরোলিস্নখিত তিন প্যারাগ্রাফের শব্দসম্ভারে একটি পরিপূর্ণ গল্পের দেখা মেলে। যুদ্ধের তা-ব, মায়ের পথ চেয়ে থাকা আর মা চলে গেলে সমত্মানটির পিছুটানহীন যাত্রার প্রারম্ভ দেখতে পাওয়া যায়। আমরা পেয়ে যাই সেই অমোঘ বার্তা যে যুদ্ধ মানুষকে বদলে দেয়। শহরে গিয়ে নিজেকে খাপছাড়া আবিষ্কার করে গ্রামে ফিরে আসে মানুষটি। এখানে আখ্যানে প্রেমের অধিষ্ঠান ঘটে, অনেকটাই একতরফা, যদি পুরম্নষটির নিষ্ক্রিয় উপস্থিতিকে অংশগ্রহণ মনে না করা হয়। কাহিনিতে 888sport promo codeটিকে শ্রী রাধার মতো মনে হয়। সে তার দয়িতের জন্য শঙ্কিত, অস্থিরচিত্ত আর বিচলিত থাকে। পুরম্নষটি কেবলই তার কাছ থেকে হারিয়ে যায়। আর সে তার পিছে-পিছে সমত্মর্পণ অনুচরের মতো থাকে।

পুরম্নষটি বোহেমিয়ান, ঘর তাকে টানে না। আকাশ টানে। কোথাও স্থির হতে পারে না সে, অব্যক্ত অবয়বে কেবলই আকাশ দেখতে বেরিয়ে পড়ে।

এক পর্যায়ে মা হয়ে যাওয়ার পরে 888sport promo codeটির আশার সঞ্চার হয় যে, এবার বুঝি নিজ সমত্মানের জন্য তার কাঙক্ষার মানুষটি ঘরে ফিরে আসে। কিন্তু তার প্রত্যাশামাফিক ঘটনা এগোয় না। ঘটনা পরম্পরা কিংবা জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত তাকে 888sport promo codeবাদী করে তোলে কি?

নিশ্চয়ই তোলে।

888sport promo codeটি তার পুরম্নষের খোঁজে গ্রাম থেকে গ্রামামত্মরে যায়। কতরকম দিগ্বিদিক গল্প তাকে ঘিরে, সেগুলো বানোয়াট কি সত্যি কে জানে, সে শোনে। কিন্তু এর শেষ দেখতেও চায়। তবে শেষাংশে এসে অন্য 888sport promo codeর সংস্রবে তার নিজের পুরম্নষকে দেখবে এমনটা ভাবেনি, কিন্তু দেখে। দেখে যে-পুরম্নষকে সে যাচ্ঞা করে এসেছে এ সে নয়। সন্ন্যাসীর বেশে এই লোক আর আকাশ দেখে না।

যে-আকাশের দিকে পলকহীন চেয়ে থেকে সংসারের বাইরের একজন হয়ে উঠেছিল, সে আর আকাশ দেখে না, তার তালাবদ্ধ ঘর খুলে রাখলেও সে উঠোনে নেমে আসে না। আকাশ দেখার সাধ তার ফুরিয়ে গেছে।

888sport alternative linkের শেষদিকে এসে আমরা 888sport promo codeটিকে তার শিশুকন্যাসমেত প্রস্থান করতে দেখি, পুরম্নষটি ব্যতিরেকেই। বহুকাল ধরে আরাধ্য মানুষটির সন্ধানে যে-888sport promo code বেরিয়েছিল, তার দেখাও পেয়েছিল, অথচ পুরম্নষটি তাকে আর আকর্ষণ করে না। সে বুঝে যায় যে, এই পুরম্নষ তার মুক্তির আশ্রয় হতে পারে না। আর অবশ্যই ধরে নেওয়া যায় যে, পুরম্নষটি নিজেও তার কাঙিক্ষত মুক্তির দেখা পায় না, সে সুতরাং নিজেকে আড়াল, বিচ্ছিন্ন করে। যুদ্ধ আর সমাজ প্রকৃতিও পুরম্নষের, পুরম্নষের জন্য 888sport promo codeর চিরমত্মন আকর্ষণকে প্রভাবিত করেছে, বদলে দিয়েছে, ফলাফলে তারা পরস্পর পরস্পরের কাছ থেকে দূরত্বের আবর্তে কেবলই ঘুরপাক খায়।

জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত যখন ছোটগল্প লিখতে শুরম্ন করেছিলেন, তখন তাঁর ভাবনা ছিল গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে যা অন্যে আগে লেখেনি, সেরকম গল্প লিখতে হবে। তিনি ভিন্ন আঙ্গিকে, নতুন ভাষাভঙ্গি নির্মাণ করে গল্পের ভুবনকে অন্য এক মাত্রা দান করেছেন। তাঁর এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘নিজের কথা বলবার জন্যে, নিজেকে প্রকাশ করবার জন্যে যতো কম কথা বলা যায় সেটিই আমার অন্বিষ্ট।’ (গল্পপাঠ, ‘জ্যোতিপ্রকাশ 888sport free bet’) একইভাবে বলা যায়, ‘ছোট 888sport alternative link’ গতানুগতিকতাকে ছাপিয়ে যাওয়ার তাঁর আরেক প্রয়াস, যেখানে আঙ্গিক, প্রেক্ষাপট আর ভাষার বুনন সচরাচর ঔপন্যাসিকদের থেকে ভিন্নরকম। তাঁর 888sport alternative linkের চরিত্রের কোনো নাম নেই, 888sport promo code, পুরম্নষটি কিংবা তৃতীয় পুরম্নষে বয়ান হয় আখ্যান, ফলে চরিত্রগুলো কোনো গ–তে আবদ্ধ না হয়ে একটি সর্বজনীন মাত্রা পায় শুরম্ন থেকে শেষ পর্যমত্ম।

জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত তাঁর 888sport alternative link শূন্য নভে ভ্রমিতে ব্যক্তির সীমানা পরিবৃত্ত সামাজিক সংকটকে ধারণ করে যুগপৎ তাদের পারস্পরিক বিচ্ছিন্নতাবোধের দ্বন্দ্বকে অাঁকার সফল প্রয়াস করেছেন। তবে তাঁর 888sport alternative link পরিশ্রমী পাঠকের জন্য। শব্দসারির ভেতরকার আলোছায়ার রহস্য আস্বাদনের পর যে পাঠক ঋদ্ধ হন, সমৃদ্ধ হন।

 

 

কথকতার কারম্নকাজ

আলম খোরশেদ

গল্প-888sport alternative link পড়া, বিশেষ করে বাংলা ভাষায় রচিত, প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলাম। এরই মধ্যে কোনো এক নাটকীয় পরিস্থিতিতে একটা আসত্ম 888sport alternative link পড়া হয়ে গেল সম্প্রতি। তাও আবার বাংলা ভাষার এবং একজন 888sport appsি কথা888sport live footballিকের লেখা, ঘটনাচক্রে যাঁর লেখকজীবনের একেবারে প্রথম গ্রন্থটির ওপর আলোচনা লেখার সৌভাগ্যও হয়েছিল এই লেখকের, আজ থেকে প্রায় তেত্রিশ বছর আগে। তো সদ্যপঠিত এই 888sport alternative linkটির নাম আখলাকের ফিরে আসা এবং এর রচয়িতার নাম মঈনুল আহসান সাবের স্বাধীনতা-উত্তর 888sport appsের 888sport live footballাঙ্গনের একজন সুপ্রতিষ্ঠিত লেখক, যাঁর ঝুলিতে জমা গ্রন্থের 888sport free betও একেবারে কম নয়, সব মিলিয়ে আশিটার মতো। উলিস্নখিত এই 888sport alternative linkটি পাঠের অভিজ্ঞতা বর্তমান লেখকের কাছে এতটাই সুখকর, বিস্ময়-জাগানো এবং চিমত্মা-উদ্দীপক ছিল যে, বাংলা কথা888sport live footballের সোৎসাহী পাঠকদের সঙ্গে তা ভাগ করে নিতে প্রলুব্ধ বোধ করছি।

তবে প্রথমেই কবুল করে রাখি যে, গ্রন্থটির শিরোনাম এই লেখকের তেমন মনঃপূত হয়নি এবং এর উদ্বোধনী বাক্যটি – ‘নিজের মৃত্যু আখলাক বুঝতে পারল না। আবার তার দেরি দেখে জেসমিন যখন তাকে ডাকতে এলো, আখলাক তখন বাড়ি ফেরার জন্য রওনা দিল।’ – পড়ে এর ভাষিক দুর্বলতা ও শিথিল বাক্যবিন্যাসের কারণে রীতিমতো হোঁচট খেতে হয়েছিল! কিন্তু কী আশ্চর্য, ঠিক তার পরের বাক্য থেকেই লেখক গল্পের এমন এক মায়াজাল বিসত্মার করতে শুরম্ন করেন এবং ক্রমশ তার ক্রমপ্রসারমাণ ঘেরের মধ্যে এই অপ্রস্ত্তত পাঠককে এমন আষ্টেপৃষ্ঠে আটকে ফেলেন যে, এর শেষ দেখে ওঠা ছাড়া আর কোনো পরিত্রাণ থাকে না। অথচ কি সামান্যই না এই গল্পের কাহিনিসূত্র! গল্পের নায়ক আখলাক চাকরিজীবী, স্ত্রীর সঙ্গে পারিবারিক কলহের জের ধরে সে অফিস ছুটির পর একটু অভিমানী অ্যাডভেঞ্চার করতে গিয়ে ছিনতাইকারীদের পালস্নায় পড়ে প্রথমে সর্বস্ব খোয়ায়, পরে ছিনতাইকারীদলের এক কমবয়সী সদস্যের অকারণ বীরত্বের বলি হয়ে পিতৃপ্রদত্ত প্রাণটাও হারায় বেঘোরে। ব্যস, কাহিনি এখানেই শেষ। কিংবা বলা যেতে পারে সত্যিকারের গল্পের শুরম্ন হয় এখান থেকেই, আর সেটা প্রবল স্ফূর্তিতে ডানা মেলে অপঘাতে মৃত আখলাকের উদ্দাম, বল্গাহীন স্বপ্ন-কল্পনার পিঠে ভর করে।

জাত গল্প-বলিয়ে মঈনুল আহসান সাবের তখন সুযোগ পেয়ে যান কুশলী ও জাদুকরী গল্পকার হিসেবে নতুন করে তাঁর জাত চেনাবার। তিনি আটঘাট বেঁধে তাঁর যাবতীয় গল্পের ঝাঁপি খুলে আখলাকের বয়ানে এমন জমিয়ে গল্প বলা শুরম্ন করেন যে মুহূর্তেই কল্পনা ও বাসত্মবের সীমারেখা ঝাপসা হয়ে যায়, মৃত ও জীবিতের জগৎ পরস্পরের মধ্যে প্রবিষ্ট হয়ে এমন এক জাদুবাসত্মবতার জন্ম দেয় যে পাঠক হিসেবে আমরা তখন এক অনিঃশেষ ঘোরের মধ্যে পড়ে যাই। আমাদের সেই রম্নদ্ধশ্বাস ঘোরলাগা দশায় আমরাও আখলাকের সঙ্গে 888sport slot game করতে থাকি তার শৈশব, কৈশোর, যৌবন; তার পরিবার, কর্মস্থল, বন্ধুম-ল ও তার ধর্ম, রাজনীতি ও যৌনচেতনার ঘটনাজর্জর বহুসত্মর বিপুলা পৃথিবীতে।

আখলাকের কল্পনাটা শুরম্ন হয় খুব নির্দোষভাবে এবং একটি বাসত্মব সমস্যার মোকাবিলা করতে গিয়ে। সে যখন নিশ্চিত হয় যে ছিনতাইকারীর ছুরির আঘাতে তার মৃত্যু হয়েছে তখন প্রথমেই দুশ্চিমত্মা হয় স্ত্রী জেসমিনকে, যার সঙ্গে ঝগড়ার পরোক্ষ পরিণতিতেই তার এই আচমকা অপমৃত্যু, এই দুঃসংবাদটা সে পৌঁছাবে কীভাবে। সে ভাবতে থাকে, ছিনতাইকারীদেরই কারো একজনের মোবাইল ফোনটা চেয়ে নিয়ে স্ত্রীকে তার মৃত্যুর খবরটা দেবে কিনা। আর এরই সূত্র ধরে শুরম্ন হয় নিজেরই হত্যাকারীর সঙ্গে তার কাল্পনিক কথোপকথন, আর সেই কথোপকথনই খুব সমত্মর্পণে গড়িয়ে যায় তার স্ত্রীর সঙ্গে আরেক দীর্ঘ, কাল্পনিক ফোনালাপে। এভাবে এক গল্প থেকে আরেক গল্পে গড়িয়ে যেতে থাকি আমরা, আবিষ্ট ও আচ্ছন্ন পাঠকেরা।

আখলাকের গল্প এরপর প্রধানত তাদের পারিবারিক ও দাম্পত্য জীবনের সুখ-দুঃখ, ঝগড়া-খুনসুটি, প্রেম ও যৌনতা, ঈর্ষা ও মমতা, সমত্মানাকাঙক্ষা ও সমত্মানহীনতার মনোবেদনা, মধ্যবিত্তের স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গ  ইত্যাকার অজস্র চেনা-অচেনা অনুষঙ্গ ঘিরে আবর্তিত হতে থাকে। এ ক্ষক্ষত্রে সাবের তাঁর সৃষ্ট এই দুই প্রধান চরিত্রের মনোজগতের যে গভীর, চুলচেরা ব্যাখ্যা ও বিশেস্নষণ করেন এবং তাঁর অমত্মর্ভেদী দৃষ্টির আলোতে মানবমনের অন্ধকার অবচেতনের অপ্রিয় অথচ চিরমত্মন কিছু সত্যকে উন্মোচন করেন, তা এক কথায় অনবদ্য। এই একটি জায়গায় সাবেরকে প্রায় অমত্মর্যামীতুল্য মনে হয়েছে, যাঁর বিপুল প্রজ্ঞা ও মর্মভেদী সংবেদনশীলতার কাছে একজন তুখোড় ও চৌকস মনোবিদও বুঝি হার  মানবেন। আখলাক-জেসমিনের পারিবারিক জীবনকে গল্পের কেন্দ্রে রেখে এর প্রামত্ম-পরিসীমায় আরো যে কত অগণন ঘটনার জন্ম ও মৃত্যু হতে থাকে একই সমামত্মরালে, যার ভেতর দিয়ে একেবারে রক্তমাংসের শরীর নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হয় এই বহুরঙ্গে ভরা ভঙ্গপ্রবণ বঙ্গদেশের সমাজ, রাজনীতি ইতিহাস, অর্থনীতি, সংস্কৃতি আর নৃতাত্ত্বিক বাসত্মবতার নির্যাসটুকুও। পুলিশি হয়রানি, হাসপাতালের ভোগামিত্ম, অফিস পলিটিঙ, গ্রাম্য রাজনীতি, প্রতিবেশীর মনসত্মত্মত্ত্ব, লুম্পেন জনতার শ্রেণিচৈতন্য – কোনো কিছুই বাদ যায় না আখলাক তথা লেখকের স্বগতকথন কিংবা 888sport sign up bonus রোমন্থনের অনর্গল উৎসার থেকে। ইতোপূর্বে আমরা বুদ্ধদেব বসু, গোপাল হালদার কিংবা ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় প্রমুখের কথা888sport live footballে চেতনাপ্রবাহ রীতি বলে একটি বর্ণনাকৌশলের সাক্ষাৎ পেয়েছি। সাবেরের এই গ্রন্থটিকে বর্তমান লেখকের কাছে সেই ধারারই সর্বশেষ সংযোজন বলে মনে হয়েছে, চরিত্রের দিক থেকে যা আরো আটপৌরে, অমত্মরঙ্গ এবং একেবারে সমসাময়িক বাসত্মবতার প্রতিধ্বনিমুখর।

আখলাকের ফিরে আসা গ্রন্থে মঈনুল আহসান সাবেরের সক্ষমতার একাধিক মাইলফলককে আমরা চিহ্নিত করতে পারি। প্রথমত, গল্প বলার ঈর্ষণীয়, প্রায় অতিলৌকিক ক্ষমতা। পেঁয়াজের খোসা ছাড়ানোর মতো করে তিনি যেভাবে খুব মসৃণ ও পরিপাটিভাবে একের পর এক নতুন গল্পে ঢুকে পড়েন এবং চোখ অশ্রম্নসজল হয়ে উঠবার ঠিক আগমুহূর্তে অবলীলায় প্রসঙ্গামত্মরে চলে গিয়ে পুনরায় ফিরে আসেন গল্পের কেন্দ্রভূমিতে, পরক্ষণেই নতুনতর কোনো গল্পে ঝাঁপ দেবার প্রস্ত্ততিস্বরূপ, তাতে করে তাঁকে পুতুলনাচের একজন নিপুণ ও নিঃসংশয় কারিগর ছাড়া আর কিছু মনে হয় না, যাঁর হাতে ধরা জীবন ও মৃত্যুর সুতোবাঁধা কলকাঠি; তার সামান্য নড়াচড়ায় আমরা কখনো মৃতের জগতে, কখনো জীবিতের পৃথিবীতে, কখনো সত্যের জমিতে কখনোবা কল্পনার আকাশে উৎক্ষক্ষপ্ত হই।

দ্বিতীয়ত, 888sport alternative linkের আঙ্গিক ও প্রকরণ নির্বাচন। গ্রন্থটি দুটি পর্বে বিভক্ত। আখলাকের মৃত্যু-পূর্ববর্তী ও মৃত্যুঘটিত সংক্ষক্ষপ্ত পর্ব, যাকে আমরা তার প্রস্থানপর্ব বলে আখ্যায়িত করতে পারি। আর তার মৃত্যুপরবর্তী দীর্ঘতর আরেকটি পর্ব যেখানে আমরা তাকে কল্পনায়, নাকি বাসত্মবেই কে জানে, ফিরে আসতে দেখি তার সংসারের চেনা চৌহদ্দির দিকে। এটিকে বলা যেতে পারে তার প্রত্যাবর্তনপর্ব। এই দুই পর্বের পরিকল্পনা ও বাসত্মবায়নে লেখক যে দূরদর্শিতা ও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন তা কেবল একজন যথার্থ সৃজনশীল ও ধীমান কথা888sport live chatীর পক্ষক্ষই সম্ভব। সাকল্যে একশ পৃষ্ঠার নাতিদীর্ঘ একটি রচনা হওয়া সত্ত্বেও প্রকরণগত এই অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণেই তা অনেক বেশি বিসত্মার, ব্যাপ্তি ও গভীরতা লাভ করে। সেইসঙ্গে লেখকের অনুপম রচনাশৈলী, বর্ণনানৈপুণ্য এবং ভাষ্য-বিশেস্নষণের অতুল মুন্শিয়ানা যুক্ত হওয়াতে এই ছোটখাটো গ্রন্থটি পাঠেই মানবজীবনের সারাৎসারসমৃদ্ধ দীর্ঘ ও ধ্রম্নপদী এক মহাকাব্য পাঠের অভিজ্ঞতা হয় আমাদের। সাম্প্রতিক বাংলা 888sport alternative linkের খর্বাকৃতি নিয়ে আমাদের অনেকের মধ্যে যে অনুযোগ ও হতাশা বিদ্যমান সাবেরের এই 888sport alternative linkটি হয়তো সেইসব অভিযোগ খ-ন করতে কিছুটা সহায়তা করবে। এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে যায়, মেহিকোর হুয়ান রম্নলফোর এরকমই একটি কৃশতনু 888sport alternative link পেদ্রো পারামোর কথা, যার পটভূমিও অনেকটা এরকমই, মৃতের জগতে সংঘটিত এক পরাবাসত্মব 888sport slot gameের আখ্যান, যা তাঁকে লাতিন আমেরিকান 888sport live footballে অমর করে রেখেছে।

সাবেরের এই 888sport alternative link পড়ে আমাদের লোভ বেড়ে যায়। তাঁর কাছে আক্ষরিক এবং আলঙ্কারিক উভয় অর্থেই একটি বড়মাপের 888sport alternative linkের জন্য আবদার করতে ইচ্ছে করে, যার প্রশসত্ম পাটাতনে নির্মিত হবে 888sport apps ইতিহাস, রাজনীতি সময়, সমাজ ও মানুষের মহা-আখ্যান। আখলাকের ফিরে আসা 888sport alternative linkটি পাঠ করে এমনই প্রত্যয় জাগে মনে যে, আমাদের স্বপ্নে দেখা সেই অলেখা মহা-888sport alternative linkটি যদি কেউ রচনা করতে পারেন তবে মঈনুল আহসান সাবেরের মতো ত্রিকালদর্শী গল্পের জাদুকরই তা পারবেন।

লেখাটা এখানে শেষ করতে পারলেই ভালো হতো, কিন্তু একটি অনুযোগের কথা জানিয়ে না রাখলে মনে হয় একজন 888sport live footballকর্মী হিসেবে নিজের প্রতিই অন্যায় করা হবে। সেটি আলোচ্য বইটির মুদ্রণ প্রসঙ্গ। সাবের নিজে একজন নামী প্রকাশক এবং এই বইটি প্রকাশিত হয়েছে খোদ তাঁর নিজের প্রকাশনী থেকে। অথচ মুদ্রণের কী দীনদশা! পাতায় পাতায় বানান-বিভ্রাট, মুদ্রণপ্রমাদ, অনাকর্ষণীয় পৃষ্ঠাবিন্যাস; ছাপা, বাঁধাই, প্রচ্ছদ কোনোকিছুই এমন একটি গুরম্নত্বপূর্ণ বইয়ের উপযুক্ত হয়নি। এক কথায় বলা যায়, গ্রন্থ প্রকাশের অনিবার্য অনুষঙ্গ যে গ্রন্থ সম্পাদনা এই বিষয়টি এ ক্ষক্ষত্রে সম্পূর্ণ উপেক্ষক্ষত হয়েছে। প্রকাশক মঈনুল আহসান সাবেরকে তাই নিজের লেখালেখির পাশাপাশি এদিকটাতেও আরো মনোযোগী হতে অনুরোধ করব। তবে, এও সত্যি। এমন একটি সর্বাংশে সুখপাঠ্য, 888sport live chatোত্তীর্ণ 888sport alternative link যিনি আমাদের উপহার দেন, পাঠকেরা তাঁর সাত খুন মাফ করে দিতেও দ্বিধা করবেন বলে মনে হয় না। সে যাক, সবশেষে বলি, আমাদের মতো কিছু দুর্মুখ পাঠক, যারা বাংলা 888sport alternative link থেকে নানা কারণে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল তাদেরকে আবার বাংলা 888sport alternative linkমুখী করার কাজে মঈনুল আহসান সাবেরের আখলাকের ফিরে আসা নামক এই অনন্যসাধারণ 888sport alternative linkটি বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি।

 

 

 

রবীন্দ্র-মানচিত্রের অদেখা ভুবন

নওশাদ জামিল

কিছুদিন আগেও অন্য অনেকের মতো ভাবতাম যে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে পুরোপুরি নতুন কিছু লেখা সম্ভব নয় বোধহয়। কবিগুরম্নকে নিয়ে সত্যিই কি নতুন কিছু লেখা সম্ভব? জন্মের শতবর্ষ পেরিয়ে, দেড়শো বছর অতিক্রম করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে কোনো বিষয় কি আছে যা আগে বলা হয়নি? লেখা হয়নি? কিছুদিন আগে হলে এ-সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে সাফ বলতাম, হ্যাঁ সম্ভব নয়; কেননা কবিগুরম্নকে নিয়ে সব কথাই তো বলা হয়ে গেছে নানাভাবে, বিসত্মর লেখা হয়েছে। নতুন আর কিছু বলার নেই, লেখারও কিছু নেই। কিন্তু আমার এ-ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। দেড়শো বছর পেরিয়েও কবিগুরম্ন দেদীপ্যমান, আবিষ্কার হচ্ছেন নতুন রূপে, উদয় হচ্ছেন নতুন অবয়বে। আমার এই উপলব্ধি, যৎকিঞ্চিৎ এই পর্যালোচনা, বলা বাহুল্য, তা রবীন্দ্রনাথের নতুন ভুবন নিয়ে। যদিও এই আলোচনা ব্যক্তিক পাঠ ও মুগ্ধতায় ভরা, তারপরও বলতে হবে, মূলত এই রচনার মধ্য দিয়ে আমরা রবীন্দ্রনাথের এমন এক ভুবনে প্রবেশ করব যে, কবির সৃষ্ট এই ভুবন ছিল বড় অনালোকিত; কবি-প্রাবন্ধিক এবং 888sport app download apk latest versionক রাজু আলাউদ্দিন দীর্ঘদিন চাপাত্রসত্ম থাকা ওই অঞ্চলকে শুধু টর্চ ফেলে দিবালোকের মতো স্পষ্ট করেননি, বাঙালি পাঠকগোষ্ঠীর সামনে উপস্থিত করেছেন অন্য এক রবীন্দ্রনাথকে এবং যাঁর মণিকাঞ্চনের আভায় উদ্ভাসিত হয়েছিল বিশাল একটা মহাদেশ। এশিয়া মহাদেশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রভাবের কথা আমাদের অজানা নয়, ইউরোপে তাঁকে নিয়ে আকস্মিক হইচই কিংবা ম্রিয়মাণ হয়ে যাওয়া নিয়েও নয়, রাজু আলাউদ্দিন প্রত্নতাত্ত্বিকের মতোই আবিষ্কার করেছেন রবীন্দ্রনাথের লাতিন আমেরিকা বিজয়ের গৌরবোজ্জ্বল রূপকথা।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে লাতিনের কথা উঠলেই বাঙালি পাঠকের কাছে বিক্তোরিয়া ওকাম্পোর কথা বলা হয় ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে; কিন্তু শুধু ওকাম্পো নন, তাঁর দেশ আর্হেমিত্মনাও (আর্জেন্টিনা) নয়, গোটা মহাদেশেই গত শতাব্দীতে বিস্ময়কর আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন কবিগুরম্ন। উত্তরের মেহিকো (মেঙিকো) থেকে শুরম্ন করে দক্ষক্ষণের আর্হেমিত্মনা হয়ে গোটা অঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠীর কাছে প্রাচ্যের সুর-বাণী ও দর্শনকে আলোকিত করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ; বাংলা ভাষাভাষী সাধারণ পাঠকের কাছে রবীন্দ্রনাথের এই ভুবন ছিল অজানা, অচেনা; অনেক রবীন্দ্র-গবেষকের কাছেও তা ছিল অনাবিষ্কৃত; দীর্ঘদিন অভিনিবেশসহকারে নিবিষ্ট গবেষকের দৃষ্টিতে তা প্রাঞ্জলভাবে উপস্থাপন করেছেন রাজু আলাউদ্দিন।

একাধারে কবি, প্রাবন্ধিক ও 888sport app download apk latest versionক রাজু আলাউদ্দিন। পেশায় সাংবাদিক হলেও তাঁর প্রধানতম পরিচয় লেখক হিসেবেই। দেশি-বিদেশি 888sport live football নিয়ে নিয়মিত লেখার পাশাপাশি ইংরেজি ও স্প্যানিশ থেকে প্রচুর 888sport app download apk latest version করছেন দীর্ঘদিন ধরে। লাতিন স্টার বোর্হেসকে নিয়ে তাঁর উন্মাদনা শুরম্ন আশির দশক থেকে। 888sport appsে বোর্হেসকে ব্যাপকভাবে পরিচিত করাতে তাঁর ভূমিকা অনন্য। লাতিন আমেরিকার 888sport live footballের প্রতি তাঁর অনুরাগ থেকেই শিখতে শুরম্ন করেন স্প্যানিশ ভাষা। পরে দীর্ঘদিন লাতিন আমেরিকায় কাটানোর ফলে এ-ভাষার 888sport live footballের প্রতি তাঁর ভালোবাসাও প্রগাঢ় হয়। তারপর লাতিনের 888sport live footballের নানা মণিকাঞ্চন আহরণ করে ভরে তোলেন বাংলার 888sport live footballসম্ভার। এ-ধারায় তাঁর ভিন্নমাত্রিক সংযোজন দক্ষিণে সূর্যোদয় শিরোনামের আলোচ্য বইটি। অমর 888sport cricket BPL rateে গ্রন্থমেলা ২০১৫-এ প্রকাশনা সংস্থা অবসর থেকে বের হয়েছে তাঁর গবেষণাধর্মী এ-বই, যেটি মূলত ইস্পানো-আমেরিকায় রবীন্দ্রচর্চার এক মহাকাব্যিক এবং রোমাঞ্চকর ইতিহাস।

রবীন্দ্রনাথ-ওকাম্পো সম্পর্কে বিসত্মারিত আলোচনা হলেও গোটা লাতিন আমেরিকায় রবীন্দ্রচর্চা নিয়ে তেমন বই নেই। আলোচ্য বইটিতে লাতিন888sport live footballে রবীন্দ্রপ্রভাব, চিত্রকর্ম, 888sport app download apk latest version, সংগীতসহ নানা কিছু উঠে এসেছে। রাজু আলাউদ্দিনের এ এক আকরগ্রন্থ, যা পূর্ণাঙ্গ রবীন্দ্রজীবনী রচনায় যেমন, তেমনই পরবর্তী রবীন্দ্র-মূল্যায়নের ক্ষেত্রেও এক অনিবার্য উৎস হয়ে উঠবে। তথ্যের পাশাপাশি বইটিতে স্থান পেয়েছে রবীন্দ্রনাথের দুর্লভ কিছু আলোকচিত্র ও বিভিন্ন সময়ে লাতিন 888sport live chatীদের অাঁকা রবীন্দ্র-প্রতিকৃতি।

লাতিন আমেরিকায় রবীন্দ্রচর্চার নানা দলিল-দসত্মাবেজ, তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন ছাড়াও গোটা অঞ্চলের বিশিষ্ট লেখক, গবেষক, চিমত্মকসহ নানা শ্রেণির মানুষ কীভাবে রবীন্দ্রনাথকে গ্রহণ করেছেন, রবীন্দ্রনাথের সমালোচনা করেছেন; যাঁরা তাঁকে অপছন্দ করেছেন, তাঁদেরও কথামালা উঠে এসেছে বইটিতে। আবার যাঁরা কবিগুরম্নকে চিনতেন না, কখনো দেখেননি, কবির সঙ্গে আলাপও হয়নি; কিন্তু তাঁর রচনা ভালোবেসে গ্রহণ করেছেন, তাঁদের কথাও উপেক্ষক্ষত নয় বইটিতে। ফলে গোটা লাতিন মহাদেশে এবং ওই অঞ্চলের মানুষের কাছে রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে যে-চিমত্মাধারা তার একটা সামগ্রিক অবয়ব প্রতিফলিত হয়েছে সুদৃশ্য বইটিতে।

বৈশ্বিকভাবে রবীন্দ্রনাথকে উপলব্ধি করতে, বিশ্বব্যাপী রবীন্দ্রনাথের ব্যাপ্তি-প্রসার, উত্থান-পতন সম্পর্কে জানতে লাতিন আমেরিকার বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে কবিগুরম্নর প্রভাব বেশ তাৎপর্যময়। বইটিতে এ-মহাদেশে রবীন্দ্র-প্রবেশের শুরম্ন থেকে ষাট বা সত্তরের দশকের শেষ সময় পর্যমত্ম এ অঞ্চলের শীর্ষ ব্যক্তিত্বদের রবীন্দ্রচর্চার একটা রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে; আলোকপাত করা হয়েছে রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকর্মের সঙ্গে সংশিস্নষ্ট পরিচিত, কম পরিচিত এবং সম্পূর্ণই অপরিচিত বেশ কিছু লেখক-888sport app download apk latest versionক নিয়েও। সব মিলিয়ে গোটা বইটি অভিনব ও গুরম্নত্বপূর্ণ। বইটির নান্দনিক প্রচ্ছদ করেছেন বরেণ্য চিত্র888sport live chatী মনিরম্নল ইসলাম। বিষয়-বৈচিত্র্যের জন্যই শুধু নয়, একজন বিশ্বপথিকের নতুন নতুন পথ ও চিমত্মার সমাহারই নয়, বইটিতে উঠে এসেছে বহু আশ্চর্য ঘটনা ও ডকুমেন্ট। বলা যায়, এর মধ্য দিয়ে আবারো নতুন করে চিহ্নিত করতে হবে রবীন্দ্র-মানচিত্রের সীমানা।

 

দুই

সম্পূর্ণ নতুন বিষয় ও বিসত্মারের জন্য দক্ষক্ষণে সূর্যোদয় পড়তে-পড়তে বিহবল হতে হয়। অবাক হতে হয় এই ভেবে যে, রাজু আলাউদ্দিন কী বিপুল কায়িক ও মানসিক শ্রম দিয়ে গড়ে তুলেছেন প্রতিটি 888sport live-নিবন্ধ। শুধু শ্রম নয়, তাঁর সৃজনশীলতার সর্বোচ্চ ব্যবহারও ঘটিয়েছেন বইটির পরতে-পরতে। বস্ত্তত এর ফলে বইটি হয়ে উঠেছে লেখকের সৃজনসম্ভারের এক নবদিগমত্ম। এই কথা বলতেই হবে যে, লেখক তাঁর পরিকল্পনামতো সমগ্রতাকে স্পর্শ করেছেন; শুধু তথ্য-উপাত্ত নিয়ে কাজটি সম্পূর্ণ করেননি, সঙ্গে যোগ করেছেন প্রতিটি ঘটনা কিংবা প্রতিটি চরিত্র সম্পর্কে তাঁর বিসত্মর পড়াশোনা ও জানাশোনা। এজন্য বহুদিন ধরে প্রায় ধ্যানস্থ থেকে বহু উৎস থেকে, বহু জায়গা থেকে তাঁকে তথ্য সংগ্রহ করতে হয়েছে। এজন্য তাঁকে রবি-সমুদ্রমন্থন ছাড়াও নিবিষ্টভাবে পাঠ করতে হয়েছে বহু দেশি-বিদেশি বই, জার্নাল, সংবাদপত্র, সাময়িকীপত্র, চিঠিপত্রসহ বিভিন্নজনের সাক্ষাৎকার। বই-পুসত্মক ছাড়াও ইন্টারনেট থেকে তাঁকে সংগ্রহ করতে হয়েছে নানা তথ্য-উপাত্ত। দীর্ঘদিন লাতিন অঞ্চলে থাকার ফলে, লাতিনের সঙ্গে তাঁর হৃদ্যতা থাকার ফলে, স্প্যানিশ ভাষাটা রপ্ত করার ফলে, অনুমান করি, বৃহৎ কলেবরে এই গুরম্নত্বপূর্ণ কাজ তিনি করতে সমর্থ হয়েছেন; বলা যায়, সার্থক হয়েছেন।

প্রথম দিকেই বলেছিলাম বিক্তোরিয়া ওকাম্পোর কথা, যাঁর কথা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচিত হয়েছে, রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর গূঢ় ও গাঢ় সম্পর্কের জন্যই। অতিকথনের দায় থেকে লেখক এক্ষক্ষত্রে মুক্ত, কেননা বহুল চর্চিত ওকাম্পো ও রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন সামান্যই; বরং তিনি বর্ণনা করেছেন সেইসব বিষয়ে যা ইতিপূর্বে আলোচিত হয়নি। অনুরূপভাবে নেরম্নদা সম্পর্কেও আলোচনা যৎসামান্য; কেননা, রবীন্দ্রনাথ ও নেরম্নদা সম্পর্কে ইতিপূর্বে আলোচিত হয়েছে। তাহলে কী-কী বিষয় নিয়ে আলোকপাত আছে বইটিতে?

সুবিশাল পটভূমিতে লেখা এই বই পাঠশেষে বলা যায়, লেখক প্রথমত এবং শেষ পর্যমত্ম অনুসন্ধান করেছেন লাতিন আমেরিকায় রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে নতুন তথ্য। পরিচিত তথ্য ছাড়াও আড়ালে-পড়ে থাকা তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, বইসহ নানা কিছুর সন্ধান করেছেন গোয়েন্দাদের মতো, দীর্ঘদিন ধরে ধৈর্য ও সাধনা নিয়ে। ফলে লাতিন আমেরিকায় রবীন্দ্রচর্চার সম্পূর্ণ চিত্রই উপস্থাপন করেছেন, কিন্তু জোর দিয়েছেন ওই বিষয়ের ওপরই, বলতে হবে, সেইসব বিষয় এতদিন ছিল অগোচরে, অনাদরে।

বোর্হেসের কথাই বলা যাক। লাতিন 888sport live footballের যাঁরা খোঁজখবর রাখেন,  তাঁরা জানেন যে, রবীন্দ্রনাথকে সুনজরে দেখেননি বোর্হেস। তবে বোর্হেস কোথায়, কীভাবে রবীন্দ্রনাথকে গ্রহণ করেছিলেন, বর্জন করেছিলেন, তাচ্ছিল্য করেছিলেন, অনেকের তা অজানা। রাজু আলাউদ্দিন প্রায় ঘেঁটে ঘেঁটে তা বের করেছেন, রচনা করেছেন এ-সম্পর্কিত দুটি দারম্নণ ও চমকপ্রদ নিবন্ধ। প্রথমটির শিরোনাম  ‘বোর্হেসের রবীন্দ্রচর্চা’, দ্বিতীয়টি ‘একজন তৃতীয় সারির কবি’ : রবীন্দ্র888sport app download apkর বোর্হেস-কৃত মূল্যায়ন’। দুটি রচনাই অত্যমত্ম কৌতূহলোদ্দীপক এবং তাতে তুলে ধরা হয়েছে বৃহত্তর বাঙালি পাঠকগোষ্ঠীর কাছে অপরিচিত কয়েকটি ঘটনা। বোর্হেসের বন্ধু ওকাম্পোর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠলেও একই দেশের বোর্হেসের সঙ্গে তেমনটি নয়, খানিক মুগ্ধতা থাকলেও পরে তা কাটিয়ে ওঠেন বোর্হেস। 888sport live footballিক রম্নচি ও মননের ভিন্নতা ছাড়াও কেন জানি মনে হয়, রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে শুরম্ন থেকেই নেতিবাচক ধারণা ছিল বোর্হেসের। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সাক্ষাতের আগেই বোর্হেস জানতেন কবিগুরম্ন সম্পর্কে, পাঠ করেছিলেন তাঁর রচনা, প্রথমে মুগ্ধতা থাকলেও পরে তিনি বিরূপ মমত্মব্য করেছেন তাঁর রচনা নিয়ে।

রবীন্দ্রনাথ ও বোর্হেস সম্পর্কে এসব তথ্য যদিও অনেকের জানা, কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না যে, স্বয়ং বোর্হেসও 888sport app download apk latest version করেছেন কবিগুরম্নর 888sport app download apk। রাজু আলাউদ্দিন ওই 888sport app download apkটি উদ্ধার করেছেন, পাশাপাশি তিনি উপস্থাপন করেছেন রবীন্দ্রনাথের আর্হেমিত্মনা আগমন উপলক্ষক্ষ তাঁর লেখা সংবাদও। ১৯২৪ সালে প্রোয়া 888sport live footballপত্রিকায় বোর্হেস গভীর উৎসাহে লিখেছিলেন ‘রবীন্দ্রনাথের আগমন’ শীর্ষক সংবাদ, বইটিতে লেখক তা যথাযথভাবে 888sport app download apk latest versionের মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন। এছাড়া 888sport slot gameলেখক এবং ঔপন্যাসিক পল থারোর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে বোর্হেসের দুর্লভ সাক্ষাতের অংশবিশেষও তুলে ধরা হয়েছে। বোর্হেস কেন বিরূপ মমত্মব্য করেছিলেন, রাজু আলাউদ্দিন তারও ব্যাখ্যা খুঁজেছেন, উদ্ধার করেছেন বোর্হেসের মনোকাঠামোগত দিক ও রবীন্দ্র-888sport app download apk latest versionের কিছু অসংগতি। এ ক্ষক্ষত্রে লেখকের মতামত নিঃসন্দেহে গুরম্নত্বপূর্ণ। রাজু আলাউদ্দিন বিশেস্নষণাত্মক ভঙ্গিতে লিখেছেন :

বোর্হেস ছিলেন তাঁর জাতির সেই লেখক যিনি নিজের জাতিগোষ্ঠীর প্রচলিত অনেক স্বভাব-রম্নচির নিষ্ঠুর সমালোচক। তাই কবি রবীন্দ্রনাথকে তিনি সেই সহৃদয় আনুকূল্য থেকে বঞ্চিত করেছেন নির্মমভাবে। আবার বঞ্চনার মধ্য দিয়েই তিনি রবীন্দ্রনাথের 888sport app download apk latest versionক-তালিকার একজন হয়ে দুর্লভ সৌভাগ্যও কি দান করেননি রবীন্দ্রনাথকে, অনিচ্ছাকৃতভাবে?

বোর্হেসের পক্ষে রবীন্দ্রনাথের 888sport app download apk গ্রহণ না করার পেছনে রম্নচির ভিন্নতা অবশ্যই একটি বড় কারণ। 888sport app download apk latest versionের দুর্বলতা তো আছেই। আর এটাও তো সত্য রবীন্দ্রনাথ নিজেই ইংরেজিতে 888sport app download apk নির্বাচনের ক্ষেত্রে খুব বেশি সুবিবেচনার এবং দূরদর্শিতার পরিচয় দেন নি। ফলে ইউরোপে ধূমকেতুর মতো আবির্ভাবের পরপরই দ্রম্নত এক বিলীয়মান 888sport sign up bonusতে পরিণত হয়েছিলেন তিনি। আমাদের উচিত রবীন্দ্রনাথের 888sport app download apkর একটি সুনির্বাচিত সংকলন এবং 888sport app download apk latest versionের প্রকল্প তৈরি করা যাতে অমত্মর্ভুক্ত হবেন উইলিয়াম র‌্যাদিচের মতো বাংলা জানা বিদেশী 888sport app download apk latest versionক। তাহলেই আমরা রবীন্দ্রনাথকে আবার তাঁর প্রাপ্য মর্যাদার জায়গায় ফিরিয়ে নিতে পারবো।

(‘একজন তৃতীয় সারির কবি’ : রবীন্দ্র-888sport app download apkর বোর্হেস-কৃত মূল্যায়ন)

তিন

বোর্হেস গ্রহণ করেননি রবীন্দ্রনাথকে, তাতে কী, গোটা লাতিন আমেরিকার বহু লেখক ভালোবেসেছেন কবিগুরম্নর রচনাকে। রাজু আলাউদ্দিন রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে লাতিনে তর্ক-বিতর্কের কথা যেমন বলেছেন, তেমনই তুলে এনেছেন রবীন্দ্রপ্রীতির আখ্যানও। অনেকেই এটা জানেন যে, রবীন্দ্রনাথের একামত্মই অনুরাগী ছিলেন হিমেনেথ। তাঁর গোটা রচনার এক-তৃতীয়াংশই হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের রচনার 888sport app download apk latest version। নেরম্নদাও প্রবল ভালোবেসেছিলেন কবিগুরম্নকে, প্রভাবিত হয়েছিলেন তাঁর 888sport app download apkর। নেরম্নদার প্রথম বইটির একটি 888sport app download apk, যেটি ছিল কবিগুরম্নর ‘তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা’ গানটির অবিকল 888sport app download apk latest version। অন্যদিকে শঙ্খ ঘোষের মাধ্যমে অনেকেই জানেন, ওকাম্পো ও রবীন্দ্রনাথের বহুল আলোচিত সম্পর্কের রূপরেখা, ওকাম্পোর নিখাদ ভালোলাগা ও মুগ্ধতার চালচিত্র।

মুগ্ধতার কথা আপাত থাক, একদমই অনালোচিত দিকগুলোর কথা জানব; বইটির তেমনই একটি গুরম্নত্বপূর্ণ রচনা ‘স্পানঞল জগতে রবীন্দ্র-প্রসারে হোসে বাস্কোন্সেলোস’। লাতিন আমেরিকায় রবীন্দ্রনাথকে পরিচিত ও জনপ্রিয় করার পেছনে যিনি গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, রবীন্দ্রনাথকে নানাভাবে ছড়িয়ে দিয়েছেন লাতিন অঞ্চলে, তিনি মেহিকোর (মেঙিকো) শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্ব হোসে বাস্কোন্সেলোস। অবাক করার বিষয় এই যে, রবীন্দ্র-গবেষকদের কাছে তিনি প্রায় অপরিচিত এবং উপেক্ষক্ষত এক নাম। লাতিন অঞ্চলে রবীন্দ্র-প্রসারে তাঁর যে-ভূমিকা ছিল অনেকের কাছে তা জানা নেই। রাজু আলাউদ্দিন বাঙালি পাঠকের সামনে শুধু হোসে বাস্কোন্সেলোসকে পরিচিত করেননি, কোন-কোন ক্ষক্ষত্রে তাঁর অবদান ছিল, কেন তিনি গুরম্নত্বপূর্ণ তা বিশদভাবে আলোকপাত করেছেন তাঁর অনুসন্ধানী ও কৌতূহলী নিবন্ধে। তো, কে এই হোসে বাস্কোন্সেলোস? উত্তরটা জানা যাক তাঁর রচনা থেকেই :

মেহিকানোদের মানসগঠনের নতুন রূপকার হোসে বাস্কোন্সেলোস। উচ্চতর আকাঙক্ষা ও চিরায়ত জ্ঞানকে জাতির মধ্যে ছড়িয়ে দেবার ক্ষক্ষত্রে তাঁর ভূমিকা ছিল অসামান্য। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হোসে বাস্কোন্সেলোস ছিলেন লেখক, ভাবুক, সাংবাদিক এবং রাজনীতিবিদ। ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী অল্প সময়ের জন্য। ১৯২৯ সালে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীও হয়েছিলেন। দর্শন, নীতিশাস্ত্র,  নন্দনতত্ত্ব, ইতিহাস, সমাজ888sport apk ও

888sport live chat-সম্পর্কিত তাঁর গ্রন্থগুলো ছিল নতুন ভাবনায় উজ্জ্বল। দেশ ও বিদেশ, প্রাচ্য ও প্রতীচ্যসহ জ্ঞান-888sport apk ও সৃষ্টির এক শাশ্বত মৌচাক হয়ে উঠেছিলেন তিনি। জ্ঞানের সুষমা ও মাধুর্যকে নিজের জাতির বা বলা যায় স্পানঞল ভাষী জগতে ছড়িয়ে দেবার লক্ষক্ষ্য হাতে নিয়েছিলেন দানবীয় সব প্রকল্প যা এর আগে কিংবা পরেও লাতিন আমেরিকায় একক উদ্যোগে আর কেউ করেছেন বলে জানা নেই।

(স্পানঞল জগতে রবীন্দ্র প্রসারে হোসে বাস্কোন্সেলোস)

রাজু আলাউদ্দিন তথ্য ও উপাত্ত দিয়ে আমাদের জানান, হোসে বাস্কোন্সেলোস তাঁর যেসব প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন, সেখানে রবীন্দ্রনাথকে নিয়েও ছিল তাঁর নানা কর্মযজ্ঞ। ১৯২৪ সালে রবীন্দ্রনাথ লাতিন আমেরিকায় পৌঁছানোর আগেই যে তাঁর বই সহজলভ্য হয়ে উঠেছিল, বিভিন্নভাবে অনূদিত হয়েছিল, তার পেছনে এই বাস্কোন্সেলোসের ভূমিকা ছিল অবি888sport app download for androidীয়। তিনি নিজে 888sport app download apk latest version করেননি বটে, তবে রবীন্দ্রনাথের বহু বই 888sport app download apk latest version করিয়েছেন এবং তা প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছেন। পাশাপাশি নিজেও লিখেছেন  ভারতীয় সভ্যতা, দর্শন ও রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে গুরম্নত্বপূর্ণ নিবন্ধ।

হোসে বাস্কোন্সেলোসের মতো না হলেও, বলা যায়, রবীন্দ্র-গবেষকদের কাছে কিছুটা উপেক্ষক্ষত আরেক লেখক গাব্রিয়ালা মিস্ত্রাল। চিলির এ বিখ্যাত লেখকও নানাভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছেন রবীন্দ্ররচনা দিয়ে। তাঁর 888sport app download apkয়, গদ্যে, চিমত্মায় গভীর এবং দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব রেখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। কবিগুরম্নর মধ্যে তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন বহুমুখী আত্মার এক সিণগ্ধ উৎসব। লেখক নানা তথ্য ঘেঁটে এবং বিসত্মর 888sport free bet login থেকে তুলে এনেছেন গাব্রিয়ালার সেই মুগ্ধতার চালচিত্র।

বইটির আরেকটি অন্যরকম রচনা ‘রবীন্দ্রনাথকে কেন্দ্র করে নেরম্নদা-উইদোব্রো সংঘাত’। মূলত এটি রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে 888sport live footballিক বিতর্কের প্রাণবমত্ম দলিল। নেরম্নদার কথা আমরা জানি, জানি তাঁর রবীন্দ্রপ্রীতির কথা। তবে উইদোব্রোর কথা জানি না অনেকেই। কবি বিসেমেত্ম উইদোব্রো এ-অঞ্চলে কম আলোচিত হলেও গোটা লাতিন অঞ্চলে তাঁর গুরম্নত্ব অপরিসীম। রাজু আলাউদ্দিন উইদোব্রোকে স্বল্পপরিসরে পরিচিত করানো ছাড়াও নেরম্নদার সঙ্গে তাঁর ঐতিহাসিক তর্ক-বিতর্ক ও সংঘাতের চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন। বলা বাহুল্য, নেরম্নদা এবং উইদোব্রোর সংঘাতটা ঘটেছিল রবীন্দ্রনাথকে নিয়েই। তথ্য-উপাত্ত দিয়ে রাজু দুই কবির দ্বন্দ্বকেই চিত্রিত করেননি, পাশাপাশি বর্ণনা করেছেন রবীন্দ্রনাথের 888sport live footballিক প্রভাব ও বলয়। রাজু আলাউদ্দিন ওই 888sport liveে লিখেছেন :

সবারই বোধহয় মনে আছে নেরম্নদার 888sport app download apkর বই কুড়িটি প্রেমের 888sport app download apk এবং একটি হতাশার গান বেরিয়েছিল ১৯২৪ সালে। এই গ্রন্থের ১৬ নম্বর 888sport app download apkটি ছিল রবীন্দ্রাথের ঞযব এধৎফবহবৎ-এর ৩০ নম্বর 888sport app download apkটির প্রতিধ্বনি। এই 888sport app download apkটিরই মূল সংস্করণ হচ্ছে ‘তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা’ নামক বিখ্যাত গানটি। নেরম্নদার কাব্যগ্রন্থটি বেরোনোর বছর সাতেক আগেই মাদ্রিদ থেকে ১৯১৭ সালে সেনোবিয়া কামপ্রম্নবি দে হিমেনেথের 888sport app download apk latest versionে ঞযব এধৎফবহবৎ বেরিয়ে গিয়েছিল। নেরম্নদা সে 888sport app download apk latest version দেখে থাকতে পারেন অথবা রবীন্দ্রনাথকৃত ইংরেজি 888sport app download apk latest versionেও পড়ে থাকতে পারেন কাব্যগ্রন্থটি।

(রবীন্দ্রনাথকে কেন্দ্র করে নেরম্নদা-উইদোব্রো সংঘাত)

পরবর্তীকালে এই 888sport app download apkর জন্য নেরম্নদার বিরম্নদ্ধে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ এনেছিলেন অনেকেই এবং তা নিয়ে দীর্ঘদিন চলেছিল তর্ক-বিতর্ক। অভিযোগকারীদের অন্যতম ছিলেন উইদোব্রো স্বয়ং। উইদোব্রো পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথের 888sport app download apk এবং নেরম্নদার 888sport app download apk ছাপিয়ে সমালোচনা করেছিলেন, বিতর্ককে উস্কে দিয়েছিলেন; রাজু আলাউদ্দিন সে-বিষয়েও আলোকপাত করেছেন। বোর্হেসের রবীন্দ্রবিরোধিতা এবং কবিগুরম্নকে নিয়ে নেরম্নদা-উইদোব্রোর

তর্ক-বিতর্ক তো গেল, বইটিতে লেখক গোটা অঞ্চলে রবীন্দ্রপ্রীতির কথাও বলেছেন বিশেষভাবে। ফলে ইতিবাচক ও নেতিবাচক সব দিকই উঠে এসেছে বইটির বিভিন্ন মনোগ্রাহী 888sport liveে।

 

চার

প্রথমেই সমৃদ্ধ একটি ভূমিকা ছাড়াও বইটিতে পত্রস্থ হয়েছে ছোট-বড় ২৫টি 888sport live-নিবন্ধ। আছে পরিশিষ্ট অংশে দুটি গুরম্নত্বপূর্ণ রচনাও। এছাড়া ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বইটির সঙ্গে সংশিস্নষ্ট আলোকচিত্র ও 888sport live chatকর্ম। রাজু আলাউদ্দিন তথ্যের পাশাপাশি আমাদের কাছে পুরোপুরি অজানা ও দুর্লভ রবীন্দ্রনাথের দুটি আলোকচিত্র এবং তিনটি রবীন্দ্র-প্রতিকৃতি আবিষ্কার করে জুড়ে দিয়েছেন বইটিতে। সবমিলিয়ে এ এক অনন্য আয়োজন। রবীন্দ্রনাথের বহুমাত্রিক রচনা ও তাঁর প্রভাব কীভাবে পড়েছিল লাতিন আমেরিকায়, গভীর প্রজ্ঞা ও               অভিজ্ঞতার নির্যাসে সেদিকে আলোকপাত করেছেন রাজু আলাউদ্দিন। রবীন্দ্রনাথকে কেন্দ্র করে লাতিন আমেরিকায় যত ঘটনা ঘটেছে, যত তর্ক-বিতর্ক হয়েছে, যতজন প্রাণিত হয়েছেন প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে, লেখক তাও বলেছেন। পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে যত বই, 888sport live-নিবন্ধ, আলোচনা-সমালোচনা ছাপা হয়েছে, সেইসবেরও খোঁজ দিয়েছেন, চুম্বক অংশ 888sport app download apk latest version করে উপস্থাপন করেছেন।

লাতিন আমেরিকায় রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে লেখক যেখানেই যে তথ্য পেয়েছেন, তা সংগ্রহ করে যত্নের সঙ্গে বইটিতে জুড়ে দিয়েছেন। তবে তথ্য-উপাত্তের ভারে বইটি জবুথবু নয়; কোথাও গল্পের ছলে, কোথাও আবার 888sport liveের আদলে লেখক বলেছেন তাঁর কথাগুলো। অনেক গবেষক তাঁর রচনাকে মনোগ্রাহী ও আকর্ষণীয় করতে ব্যর্থ হন, রাজু আলাউদ্দিন ব্যতিক্রম, প্রচুর তথ্য-উপাত্ত দিয়েও পাঠককে ধরে রাখেন তাঁর রচনার স্টাইল ও লেখনীভঙ্গিমার জন্যই। তাঁর গদ্যভঙ্গিমা অত্যমত্ম স্মার্ট, ঝরঝরে ও মেদহীন। উপযুক্ত বক্তব্যটি প্রকাশে তিনি যেমন সঠিক শব্দ ও বাক্যচয়ন করেন, ঠিক তেমনই সুচারম্নভাবে প্রকাশ করেন বক্তব্যের ভাব ও বিষয়কে। 888sport live footballের নানা শাখায় তাঁর স্বাচ্ছন্দ্য বিচরণ থাকার ফলেই, মনে হয়, রাজু আলাউদ্দিন খুঁজে পেয়েছেন প্রকাশের সঠিক ও কার্যকর ভাষা এবং ওই ভাষাভঙ্গিমাতেই বর্ণনা করেছেন গুরম্নগম্ভীর অনেক বিষয়। বিষয় ভারি হলেও ক্ষক্ষত্রবিশেষে হালকা চালে তিনি তুলে ধরেছেন তাঁর 888sport liveের মানসপ্রতিমা। বইটির সব 888sport liveেই ঘুরেফিরে উঠে এসেছে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে লাতিন আমেরিকার সম্পর্ক, এসেছে রবীন্দ্রনাথের চিত্রকলা, ছোটগল্প, শিশু888sport live footballসহ দর্শন, জ্ঞান-888sport apk, শিক্ষা নিয়ে বিসত্মর আলোচনা।

চিত্রকর রবীন্দ্রনাথের অাঁতুড়ঘর যদি বলা হয় লাতিন আমেরিকাকে, বোধ করি, ভুল বলা হবে না। আর্হেমিত্মনাতেই তাঁর চিত্রকলার জগৎটি যেমন আবিষ্কার হয়েছে, ঠিক তেমনই এ-মহাদেশের অনেকে বরেণ্য লেখক, 888sport live chatসমালোচক, প্রাবন্ধিক গুরম্নত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছেন রবীন্দ্রনাথের চিত্রকর্মকে।

কবিগুরম্নর লেখার খাতায় নানা কাটাকুটি ও হিজিবিজি অাঁকিবুকি দেখে ওকাম্পো কবিকে নানাভাবে উৎসাহ দেন ছবি অাঁকতে।

পরের ইতিহাস সবার জানা। সারাবিশ্বেই রবীন্দ্রনাথের ছবি নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সমালোচনাও হয়েছে বিসত্মর; লাতিন আমেরিকাতেও এর ব্যতিক্রম নয়। অক্তাবিও পাসের কথা বলা যায়, যিনি রবীন্দ্র-চিত্রকলা সম্পর্কে ছিলেন বিশেষ উৎসাহী; বইটির এ-সম্পর্কে দারম্নণ একটা নিবন্ধ ‘অক্তাবিও পাসের রবীন্দ্রনাথ’। চিত্রকর রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে নানাজনের আলোচনা যেমন আছে, তেমনই কথা888sport live footballিক রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কেও আছে আলাদা নিবন্ধ। তাতে রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্পের 888sport app download apk latest version ও মূল্যায়ন সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন মেহিকোর কবি, প্রাবন্ধিক ও শিক্ষাবিদ হোসে গরোসিত্মসা। মাত্র ২১ বছর বয়সে গরোসিত্মসা রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প নিয়ে ভূমিকা লিখেছিলেন, আলোচনা করেছিলেন তাঁর কথা888sport live football নিয়ে। ‘হোসে গরোসিত্মসার মূল্যায়নে রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প’ শীর্ষক 888sport liveে রয়েছে গুরম্নত্বপূর্ণ পর্যালোচনা।

অনেকেই জানি না যে, লাতিন আমেরিকার বহু দেশে বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যতালিকায় অমত্মর্ভুক্ত ছিল রবীন্দ্রনাথের রচনা, প্রাথমিক পর্যায়ে পাঠ্য ছিল রবীন্দ্রনাথের শিশুতোষ 888sport app download apk। ‘ফ্রিদা স্চুল্ৎস দে মামেত্মাবানির রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক রচনায় লেখক রবীন্দ্রনাথের শিশু888sport live football ও শিক্ষা-বিষয়ক নানা 888sport live কীভাবে লাতিন আমেরিকায় প্রভাব বিসত্মার করেছিল, তার বিবরণ প্রকাশ করেছেন, লিখেছেন কৌতূহলী 888sport live। বাঙালি পাঠকের কাছে ফ্রিদা স্চুল্ৎসকে রাজু আলাউদ্দিন যেমন পরিচিত করেছেন, তেমনই রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে ফ্রিদার নানামুখী তৎপরতা ও কাজের কথা উলেস্নখ করেছেন। তাতে ফুটে উঠেছে রবীন্দ্র-প্রতিভায় কীভাবে আলোকিত হয়েছে লাতিন শিশু-কিশোরদের মানসজগৎ।

নোবেল বিজয়ের পর থেকেই ইউরোপ ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রকাশিত হয়েছে রবীন্দ্ররচনার 888sport app download apk latest version। লাতিন আমেরিকাতেও গত শতাব্দীর প্রথম দিক থেকেই ছড়িয়ে পড়েছিল তাঁর রচনা। হিমেনেথ দম্পতি ছাড়াও বহু লেখক, 888sport app download apk latest versionক এগিয়ে এসেছিলেন, প্রকাশ করেছিলেন কবিগুরম্নর বহুমাত্রিক রচনাসম্ভার; তাঁদের মধ্যে প্রত্যেকের কথা রাজু আলাউদ্দিন তাঁর বইটিতে আলোকপাত করেছেন। হিমেনেথের কথা বহুল প্রচারিত হলেও পেদ্রো রেকেনা ঠিক বিপরীত, অধিকাংশ বাঙালিই জানেন না তাঁর সম্পর্কে। বইটিতে রেকেনা সম্পর্কে আলোচনার পাশাপাশি তাঁর 888sport app download apk latest version ও রবীন্দ্রপ্রীতির কথা গভীর দরদ দিয়ে প্রকাশ করেছেন লেখক। ‘রবীন্দ্রনাথের অকালপ্রয়াত স্পানঞল 888sport app download apk latest versionক পেদ্রো রেকেনা’ শীর্ষক রচনায় রাজু দেখিয়েছেন যে, তাঁর স্বল্পজীবনে কী অপরিমেয় 888sport apk download apk latest version ও ভালোবাসায় 888sport app download apk latest version করেছেন কবিগুরম্নর গুরম্নত্বপূর্ণ কিছু রচনা। প্রগাঢ় মমতায়, নিখাদ ভালোবাসায় প্রায় ছুঁয়ে-ছেনে রাজু আলাউদ্দিন সেইসব বিস্মৃত অধ্যায় শুধু প্রাণোজ্জ্বল করেননি, পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথকে ভালোবাসতেন – এমন বহু ঐতিহাসিক ব্যক্তিকে সজীব করেছেন, পরিচিত করেছেন এবং হাজির করেছেন বাঙালি পাঠকের দোরগোড়ায়। এর মধ্য দিয়ে আমরা লাতিন মহাদেশে রবীন্দ্রচর্চার ক্ষক্ষত্র যেমন অনুভব করতে পারি, তেমনই আবিষ্কার করতে পারি রবীন্দ্র-দুনিয়ার নতুন আবাসন।

 

পাঁচ

রাজু আলাউদ্দিনের ব্যতিক্রমী ও ভিন্নধর্মী সৃজনশীল বইটি পড়তে-পড়তে আমার বারবার মনে হয়েছে যে, খুব সম্ভবত বাংলা ভাষায় এখন পর্যমত্ম এই রকম আর একটি বইও রচিত হয়নি। অগ্রসর পাঠকদের কেউ কেউ হয়তো বলবেন, সমীর সেনগুপ্তের রবীন্দ্রসূত্রে বিদেশিরা বইটির কথা, তাতে রবীন্দ্রসান্নিধ্যে আসা প্রায় সব বিদেশির কথাই উঠে এসেছে বিসত্মারিতভাবে; কিন্তু একটি আসত্ম মহাদেশে কীভাবে রবীন্দ্রনাথ ‘প্রায় বিপস্নব’ ঘটিয়ে দিয়েছেন, জাগরণে-মননে কীভাবে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব রেখেছেন, সাংস্কৃতিক ও ভৌগোলিক যত দূরত্বই থাক, কবিগুরম্নর ওই প্রভাব যে এখনো বিদ্যমান, রাজু আলাউদ্দিনের পক্ষক্ষই তা আবিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে।

ইউরোপে ক্ষণস্থায়ী ভালোবাসার বিপরীতে লাতিন আমেরিকায় রবীন্দ্রনাথ পেয়েছেন দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই ভিত্তি এবং ভালোবাসা। ‘রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে হাইমে সাবিনেস্-এর 888sport app download apk’ শীর্ষক নিবন্ধ থেকে জানা যায়, কবির প্রতি ভালোবাসা যেন রবীন্দ্রনাথের সিণগ্ধতারই প্রকাশ। মেহিকোর বরেণ্য লেখক অক্তাবিও পাস রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে লিখেছেন, একই দেশের জনপ্রিয় কবি হাইমে সাবিনেস যে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে 888sport app download apk লিখেছেন, অনেকের কাছেই তা অজানা। হাইমে সাবিনেস তাঁর 888sport app download apkয় লিখেছেন, ‘প্রাচ্যের সকল 888sport app download apk আর রবীন্দ্রনাথের সিণগ্ধতার কাছে আমি অবশ্যই যাব। সকল কিছুর পরও, আমাদের তো একই মেঘ, একই চাঁদ-তারা আর, যদি একটু লক্ষ করি, একই সাগর।’ বস্ত্তত এই গ্রহ, এই সুর যেমন একই, ঠিক তেমনই একই মানুষের হাসি-কান্নার ইতিহাস। রাজনৈতিক-সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে লাতিনের সঙ্গে প্রাচ্যের ওই মিলটা যেন একটু বেশিই।

পরিশ্রমী লেখক রাজু আলাউদ্দিনের অনবদ্য রচনা দক্ষক্ষণে সূর্যোদয় পাঠ করতে গিয়ে বহু বিস্ময়ের মুখোমুখি হতে হয় আমার মতো অ-বিশেষজ্ঞ পাঠককে। কেননা এ এক গভীরতর সমুদ্রমন্থন, যার অনেক কিছুই থেকে যায় অদেখা, অনেক কিছুই রয়ে যায় অজানা। রবীন্দ্রনাথ থেকে বলা যায়, ‘কত অজানারে জানাইলে তুমি, কত ঘরে দিলে ঠাঁই/ দূরকে করিলে নিকট, বন্ধু, পরকে করিলে ভাই \’