অনুপম হাসান
বাংলা 888sport live footballের ইতিহাস পর্যালোচনায় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কেই সার্থক আধুনিক 888sport alternative linkের জনক হিসেবে গণ্য করা হয়। বঙ্কিমচন্দ্র উনিশ শতকের দ্বিতীয় ভাগে রক্ষণশীল হিন্দুপ্রধান সমাজবাস্তবতার আলোকে কৃষ্ণকান্তের উইল 888sport alternative linkের নায়িকা রোহিণীকে প্রথানুগ সমাজের রীতিনীতি ভেঙে আধুনিক জীবনতৃষ্ণা দিয়েছিলেন বটে, তবে তিনি নিজেও বোধহয় শেষাবধি 888sport promo codeর আধুনিক ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য মেনে নিতে পারেননি। ফলে সামাজিক নিয়মভঙ্গের অপরাধে রোহিণীর জীবনতৃষ্ণা ঔপন্যাসিক বঙ্কিমের হাতে শুকিয়ে গেছে তার করুণ মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। রোহিণীর ধারাবাহিকতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চোখের বালির বিনোদিনীকে বিশ শতকের প্রথমভাগে নির্মাণ করেও পারেননি তার ব্যক্তি-চাওয়াকে পূর্ণতা দিতে। তিনিও সমাজের নিয়মকে প্রাথমিকভাবে অস্বীকার করে আধুনিক ব্যক্তির চাওয়া-পাওয়াকেই বড় করে দেখাতে চেয়েছিলেন। এজন্যই বিধবা হয়েও বিনোদিনী প্রণয়াসক্ত হয়েছে বিহারীর প্রতি এবং মহেন্দ্রকে সঙ্গে নিয়ে দেশান্তরী হয়েছে। বিধবা বিনোদিনীর স্বাধীনতাকে এ-পর্যন্তই স্বীকৃতি দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ; এরপরই টেনে ধরেছেন তার জীবনতৃষ্ণার লাগাম। শেষাবধি বিনোদিনীর স্বাধীনতাকে এ-পর্যন্তই স্বীকৃতি দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ; এরপরই টেনে ধরেছেন তার জীবনতৃষ্ণার লাগাম। শেষাবধি বিনোদিনীর পরিণাম বঙ্কিমের রোহিণীর মতো ট্র্যাজিক না হলেও তার দেহে আবার বিধবার বসন জড়িয়ে দিয়ে বিনোদিনীকে জীবিত অবস্থায়ই মেরে ফেলেছেন রবীন্দ্রনাথ। অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথের পরপরই শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রক্ষণশীল হিন্দু সমাজের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে তৎকালীন ব্রাহ্ম সমাজের 888sport promo code অচলাকে প্রথানুগ সমাজের বিপক্ষে দাঁড় করিয়েছিলেন। সমাজ সংসারের নিয়মরীতির তোয়াক্কা না করেই শরৎবাবু তাঁর নায়িকাকে স্বামীর ঘর থেকে বের করে তুলে দিয়েছেন সুরেশের হাতে; কিন্তু শেষ পর্যন্ত 888sport promo codeর স্বাধীনতা, স্বাতন্ত্র্য আর অধিকারের প্রতি তথাকথিত 888sport apk download apk latest versionশীল শরৎচন্দ্র সেই বিদ্রোহিনী অচলাকে প্রেমের পথে সফল হতে দেননি। তাকে ফিরিয়ে নিয়েছেন মহিমের ঘরেই। স্বামীর ঘরে অচলার প্রত্যাবর্তনের ঘটনাকে মেনে নেওয়া গেলেও যখন তাকে মহিমের বিধবা বোনের কাছে থেকে ভবিষ্যৎ গন্তব্যের কথা জানতে হয়, তখন অচলার জীবনের ট্র্যাজেডি কোনো অংশেই রোহিণী কিংবা বিনোদিনীর চেয়ে কম ভয়াবহ মনে হয় না। তবে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু পদ্মানদীর মাঝির কপিলাকে অবলীলায় তার গমনপথে নিরুদ্বেগ যাত্রা করতে দিয়েছেন। এ বিবেচনায় দেখা যাচ্ছে, উনিশ শতকে বাংলা 888sport live footballের 888sport promo codeরা সমাজপ্রথার বিরুদ্ধাচরণ করে সমাজের নির্মম বলি হয়েছে; তবে 888sport promo codeর সে-স্বাধীনতাকে মানিকবাবু বিশ শতকের প্রথম ভাগের শেষের দিকে এসে স্বীকার করে নিয়েছেন। অতএব এটা বোঝা যায় যে, রোহিণী থেকে কপিলা পর্যন্ত বাংলা 888sport live footballে বাঙালি 888sport promo codeর যে-যাত্রা, সে-যাত্রায় সমাজপ্রথার শেকল 888sport promo codeর পা থেকে ধীরে ধীরে খুলে পড়েছে। সময়ের ক্রমবিবর্তনে বাঙালি 888sport promo codeর জীবনে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। বক্ষ্যমাণ আলোচনায় তৎকালীন সমাজবাস্তবতার প্রেক্ষাপটে বাংলা 888sport live footballে 888sport promo codeর এই ক্রমোত্তোরণ প্রক্রিয়ার বিশদ ব্যাখ্যা করার প্রয়াস পাওয়া গেল। এ-আলোচনায় প্রথম 888sport promo code রোহিণী এবং সে-ই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বাকি তিনজন কালিক বিবর্তনে বিনোদিনী, অচলা এবং কপিলায় রূপান্তরিত হয়েছে মাত্র। প্রসঙ্গত বলা দরকার, বাংলা 888sport live footballের ইতিহাসে এই চার 888sport promo codeই নানাভাবে আলোচিত ও সমালোচিত হয়ে আসছে অদ্যাবধি। কোনো সমালোচক করেছেন নিন্দা, কেউবা এদের প্রতিবাদী ভূমিকায় হয়েছেন প্রশংসায় পঞ্চমুখ। আমাদের এ-আলোচনায় মূলত রোহিণী, বিনোদিনী, অচলা ও কপিলার ভিন্ন ভিন্ন সময় ও সমাজ প্রেক্ষাপটে প্রতিবাদী সামাজিক ভূমিকার ঐক্যানুসন্ধানের প্রয়াস গ্রহণ করা হয়েছে।
অচল প্রথানুগ হিন্দু সমাজের বিধবা 888sport promo codeর ওপর চাপিয়ে দেওয়া সমাজনীতির নির্মম নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে জীবনপিয়াসী আধুনিকমনস্ক রোহিণী চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে ব্যক্তি-মানুষের চাওয়া-পাওয়ার কথা বলেছে। যৌবনে স্বামীহারা বিধবা 888sport promo codeর অন্তর্গত বেদনাচিত্র ফুটে উঠেছে রোহিণীর মানবিক প্রত্যাশায়। বঙ্কিমবাবু 888sport promo codeর এই অন্তর্যাতনার অসাধারণ বর্ণনাও দিয়েছেন 888sport alternative linkের ঘটনায় :
[…] কি অপরাধে এ বালবৈধব্য আমার অদৃষ্টে ঘটিল? আমি অন্যের অপেক্ষা এমন কি গুরুতর অপরাধ করিয়াছি যে, আমি এ পৃথিবীর কোন সুখভোগ করিতে পাইলাম না। কোনো দোষে আমাকে এ রূপ যৌবন থাকিতে কেবল শুষ্ক কাষ্ঠের মত ইহজীবন কাটাইতে হইল? যাহারা এ জীবনের সকল সুখে সুখী-মনে কর, ঐ গোবিন্দলাল বাবুর স্ত্রী – তাহারা আমার অপেক্ষা কোন গুণে গুণবতী – কোন পুণ্যফলে তাহাদের কপালে এ সুখ – আমার কপালে শূন্য? দূর হৌক – পরের সুখ দেখিয়া আমি কাতর নই – কিন্তু আমার সকল পথ বন্ধ কেন? (বঙ্কিম রচনাবলি, পৃ ৫০৩)
রোহিণীর এ-আক্ষেপ কেন? তা ব্যাখ্যার দাবি রাখে। এজন্য রোহিণী অবশ্য স্রষ্টাকে দায়ী করেছে – তা কতটা যথার্থ? অথবা নিয়তিকে রোহিণীর ব্যর্থ যৌবনের জন্য দায়ী করা কতটা যৌক্তিক? এ-কালের যুক্তিবাদী মানুষ কোনোভাবেই রোহিণীর এই ট্র্যাজিক জীবন পরিণামের পেছনে অনিবার্যভাবে সামাজিক সংস্কার ও পুরুষবাদী সমাজকে দায়ী করবেন। এছাড়া 888sport promo codeর অধিকার বঞ্চনার লক্ষ্যে ভগবানের নামে ধর্মীয় ও সামাজিক রীতিনীতি এবং প্রথাগত বিশ্বাসবোধ দায়ী। রক্ষণশীল সমাজবাস্তবতায় বঙ্কিমবাবু বিধবা রোহিণীর মাধ্যমে সমাজপ্রথার অসারত্বকেই প্রমাণ করতে চেয়েছেন। আর এজন্যই সামাজিক সংস্কার অস্বীকার করে রোহিণী পা বাড়িয়েছে জীবনের পথে, মানবিক প্রত্যাশাকে পূরণ করতে সে হাত বাড়িয়েছে গোবিন্দলালের দিকে। তবে এ-কথাও মনে রাখা দরকার, সামাজিক সংস্কার ত্যাগ করে খুব সহজেই কিন্তু গোবিন্দলালের নিকটবর্তী হতে পারেনি রোহিণী। এজন্য নিজের সঙ্গে নিজের মানসিক সংঘাত-সংঘর্ষে পরাস্ত রোহিণী এক পর্যায়ে আত্মহত্যার পথও বেছে নিতে চেয়েছে। কিন্তু গোবিন্দলাল দেখে ফেলায় রোহিণীর সে-চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। লেখক রোহিণীর সে-মানসিক সংঘাতের যথার্থ বর্ণনাও দিয়েছেন অসাধারণ কাব্যময় ভাষায় :
হে জগদীশ্বর, হে দীননাথ, হে দুঃখীজনের একমাত্র সহায়! আমি নিতান্ত দুঃখিনী, নিতান্ত দুঃখ পড়িয়াছি – আমায় রক্ষা কর – আমার হৃদয়ের এই অসহ্য প্রেমবহ্নি নিবাইয়া দাও – আর আমায় পোড়াইও না। আমি যাহাকে দেখিতে যাইতেছি – তাহাকে যত বার দেখিব, তত বার – আমার অসহ্য যন্ত্রণা – অনন্ত সুখ। আমি বিধবা – আমার ধর্ম্ম গেল – সুখ গেল – প্রাণ গেল – রহিল কি প্রভু? রাখিব কি প্রভু? – হে দেবতা – আমার প্রাণ স্থির কর – আমি এই যন্ত্রণা আর সহিতে পারি না।
(বঙ্কিম রচনাবলি, পৃ ৫১৫)
প্রণয়কাতর রোহিণীর এই অন্তর্দ্বন্দ্ব মূলত প্রচলিত সামাজিক বিশ্বাস ও রীতিনীতির সঙ্গে; নিজের মনকে প্রবোধ দিলেও রোহিণীকে হরিদ্রাগ্রাম ছেড়ে যাওয়ার বন্দোবস্ত করা হলে কিন্তু সে একেবারেই ভুলে যায় সমাজের কথা, সংস্কারের কথা। তখন সে শুধুই শুনতে পায় স্বীয় হৃদয়ার্তি : ‘এই হরিদ্রাগ্রাম আমার স্বর্গ, এখানে গোবিন্দলালের মন্দির। কৃষ্ণকান্ত রায় আমার মাথা মুড়াইয়া, ঘোল ঢালিয়া দেশছাড়া করিয়া দেবে? আমি আবার আসিব। […] আমি যাব না। কলিকাতায় যাব না – কোথাও যাব না।’ (বঙ্কিম রচনাবলি, পৃ ৫১৫) রোহিণীর মানসজগতের এসব বর্ণনা থেকে মনে হতেই পারে, সে প্রেমনিষ্ঠ এক 888sport promo code, যে গোবিন্দলালকে না পেলে তার জীবন বৃথা হয়ে যাবে। কিন্তু বঙ্কিমবাবু রোহিণীর অসামাজিক প্রণয় বাসনাকে খুব সহজ-সরলভাবে উপস্থাপন করেননি। এ-কারণে 888sport alternative linkের পরিণামে যখন লেখক রোহিণীর মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন তখন সরলভাবে বলা যায় না যে, বঙ্কিমবাবু নীতিবাদী হয়ে কিংবা সামাজিক সংস্কারকেই ধরে রাখতে জীবনপিয়াসী রোহিণীকে মেরে ফেলেছেন। বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর নায়িকা রোহিণীকে মেরে ফেলেছেন সত্য কিন্তু রোহিণীর মৃত্যুর জন্য কতটা রোহিণী নিজে দায়ী আর কতটা লেখক দায়ী তা বিচারের দাবি রাখে।
ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র যদি নীতিবাদের প্রতি অথবা সমাজ-সংস্কার সংরক্ষণে চূড়ান্তভাবে সচেতন হতেন তাহলে তিনি কেন পাঠকের সামনে রোহিণীর অসামাজিক প্রণয় উপস্থাপন করতে গেলেন? এ-প্রশ্ন সামনে রেখে রোহিণীর মৃত্যুর রহস্য পুনর্বিবেচনা করা হলে দেখা যায় আধুনিক জীবনতৃষ্ণা নিয়ে রোহিণী নামের যে-888sport promo code সমকালের সমাজব্যবস্থাকে অস্বীকার করতে উদ্যত হয়েছিল তার মৃত্যুর অন্যতম কারণ সে নিজেই। এর প্রমাণ মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে রোহিণীর নিজে বক্তব্যেই উচ্চারিত হয়েছে : ‘মরিব কেন? না হয় ইনি ত্যাগ করেন, করুন। ইঁহাকে কখনো ভুলিব না, কিন্তু তাই বলিয়া মরিব কেন? ইঁহাকে যে মনে ভাবিব, দুঃখের দশায় পড়িলে যে ইঁহাকে মনে করিব, এই প্রসাদপুরের সুখরাশি যে মনে করিব, সেও ত এক সুখ, সেও ত এক আশা। মরিব কেন?’ (বঙ্কিম রচনাবলি, পৃ ৫৪৯) এখানেই শেষ নয়, রোহিণী নিজের জীবন ভিক্ষা প্রার্থনা করে গোবিন্দলালকে বলেছে : ‘মারিও না! মারিও না! আমার নবীন বয়স নূতন সুখ। আমি আর তোমায় দেখা দিব না, আর তোমার পথে আসিব না। এখনই যাইতেছি। আমায় মারিও না।’ (বঙ্কিম রচনাবলি, পৃ ৫৪৯) রোহিণীর এই প্রার্থনা গোবিন্দলাল শোনেনি; তার হাতের পিস্তল গর্জে উঠেছে এবং রোহিণীর যৌবনভরা দেহ লুটিয়ে পড়েছে মাটিতে। কিন্তু কেন গোবিন্দলাল হত্যা করল জীবনপিয়াসী যুবতী রোহিণীকে? সে কি লেখকের পরিকল্পনামাফিক এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে? নাকি এর পেছনে গোবিন্দলালের নিজস্ব বুদ্ধি-বিবেচনা ক্রিয়াশীল ছিল? যদি গোবিন্দলালের নিজস্বতার পরিচয় পাওয়া যায়, তাহলে কোনোভাবেই এ-হত্যাকান্ডের জন্য একতরফা লেখক বঙ্কিমবাবুকে দায়ী করা যায় না। এ-প্রসঙ্গে প্রণয় এবং ঈর্ষার আন্তঃসম্পর্কের ব্যাখ্যা আবশ্যক। প্রণয়ে যদি বিশ্বাস না থাকে কিংবা প্রেমিক যদি ঈর্ষাম্বিত হয়ে পড়ে প্রিয়তমার প্রতি তাহলে সেখানে যে হত্যাকান্ডের মতো নির্মম ঘটনাও ঘটা অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়, তা শেক্সপিয়র তাঁর ওথেলো নাটকেই দেখিয়েছেন। সেখানে শেক্সপিয়র জানিয়েছেন, প্রণয়ের সঙ্গে ঈর্ষার সম্পর্ক ঘটলে তার ভয়াবহতা কতটা নির্মম হতে পারে! ওথেলো নাটকের নায়িকা ডেসডিমোনা অসতী ছিল না, তা দর্শক জানে, কিন্তু সেনাধ্যক্ষের কূটকচালে নায়ক ওথেলো পত্নীর প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেললে ডেসডিমোনাকে হত্যা করতে বাধ্য হয়। এই হত্যাকান্ডের জন্য যদি বিখ্যাত নাট্যকার শেক্সপিয়রকে দোষীসাব্যস্ত করা না হয়, তাহলে রোহিণীর মৃত্যুর জন্যও ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্রকে দায়ী করার সুযোগ কতটা তা ভেবে দেখা দরকার। কারণ, উভয় হত্যাকান্ডের পেছনেই ঘটনার বিন্যাস প্রক্রিয়ায় প্রণয়জনিত ঈর্ষা দায়ী। বিষয়টিকে একটু গভীর পর্যালোচনায় আনা হলে দেখা যায়, যে-গোবিন্দলাল প্রণয় তথা রোহিণীর জন্য সমাজ-সংসার-স্ত্রী ত্যাগ করে পরবাসী হয়েছিল, শেষাবধি তার মনেই প্রিয়তমা রোহিণীর প্রণয় সম্বন্ধে জন্মেছে ঘোরতর অবিশ্বাস ও আস্থাহীনতা। এর কারণও অবশ্য ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র যথারীতি বর্ণনা করেছেন :
রোহিণী ভাবিয়া থাকিতে, যদি এই আয়তলোচন মৃগ এই প্রসাদপুরকাননে আসিয়া পড়িয়াছে – তবে কেন না তাহাকে শরবিদ্ধ করিয়া ছাড়িয়া দিই। […] রোহিণী স্বীকৃত হইল যে, প্রদোষকালে অবকাশ পাইলেই, গোপনে চিত্রার বাঁধাঘাটে একাকিনী সে নিশাকরের নিকট গিয়া খুল�তাতের সংবাদ শুনিবে। (বঙ্কিম রচনাবলি, পৃ ৫৪৭)
কাজের লোক রূপচাঁদ এ-কথা জানলেও রোহিণীর অন্তরের কথা তখন পর্যন্ত পাঠকও বুঝতে পারেনি নিশাকরের ছদ্মবেশে রাসবিহারীর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ না ঘটা পর্যন্ত। রাত গভীর হলে যখন নদীর ঘাটে নিশাকরের সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্যে রোহিণী ঘর থেকে চুপিসারে বের হলো, তখন সে জানতেও পারল না, গোপনে গোবিন্দলাল তার পিছু নিল। নদীর ঘাটে পৌঁছার পর অপেক্ষমাণ রাসবিহারী কালবিলম্বের কারণ জিজ্ঞাসা করলে রোহিণীর জবাবে পাঠক স্তম্ভিত না হয়ে পারে না; সে বলে : ‘আমি যদি ভুলিবার লোক হইতাম, তা হলে, আমার দশা এমন হইবে কেন? একজনকে ভুলিতে না পারিয়া এদেশে আসিয়াছি; আর আজ তোমাকে ভুলিতে না পারিয়া এখানে আসিয়াছি।’ (বঙ্কিম রচনাবলি, পৃ ৫৪৮)। বলা বাহুল্য, এ-কথা গোবিন্দলালও যে শুনেছে তা বুঝতে বাকি থাকে না, যখন সে-সময় রোহিণীর গলা টিপে ধরে সে। সুতরাং এ-ঘটনা থেকে প্রণয়ে রোহিণীর বিশ্বাসঘাতিনী হওয়ার ব্যাপারটি অন্য কোনো প্রমাণের অপেক্ষা রাখে না। একদা যে রোহিণীর জন্য গোবিন্দলাল জমিদারি ত্যাগ করেছে, এমনকি ফুলের মতো পবিত্র নিষ্কলুষ স্ত্রী ভ্রমরকেও ত্যাগ করেছে, বিনা অজুহাতে, সেই প্রণয়ীই যদি ভিন্নজনের কাছে নিশীথ রাতে উপস্থিত হয়ে এমনতর বক্তব্য প্রদান করে সেক্ষেত্রে প্রেমিক গোবিন্দলালের হৃদয়ে ঈর্ষার সঙ্গে প্রতিশোধেরও আগুন জ্বলে ওঠা স্বাভাবিক। কিন্তু এ-পর্যায়ে প্রশ্ন ওঠে যে, বঙ্কিমবাবু কি ইচ্ছা করেই রোহিণীকে সহসা প্রণয়ঘাতিনী করে তুলেছিলেন প্রচলিত সমাজ-সংস্কার সংরক্ষণের তাগিদে? এর জবাবে আমাদেরকে পেছনে ফিরে যেতে হয়, যেখানে রোহিণীকে দেখা যায় হরলালের কার্যসিদ্ধির সহায়ক ভূমিকায়। হরলালের কার্যসিদ্ধির প্রয়োজনে এ-888sport promo code কৃষ্ণকান্ত রায়ের মতো বাঘের ঘরেও প্রবেশের দুঃসাহস দেখিয়েছিল; কিন্তু কেন রোহিণী উইল চুরির উদ্দেশ্যে কৃষ্ণকান্তের ঘরে প্রবেশ করেছিল? এ-প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেলে বোঝা যাবে রোহিণী চরিত্রের প্রকৃত স্বরূপ, কিংবা তার বিশ্বাসঘাতিনী হওয়ার পশ্চাৎ প্রেক্ষাপট ও রহস্য। হরলাল রায় মিথ্যে বিয়ের আশ্বাস দিয়েছিল রোহিণীকে উইল চুরির বিনিময়ে। হরলালের সে-আশ্বাসে রোহিণী উইল চুরি করে এনেছিল কৃষ্ণকান্তের ঘর থেকে। এরপর হরলাল উইল নিয়ে যেতে চাইলে রোহিণী তাকে স্পষ্ট জানায়, সে টাকার লোভে উইল চুরি করেনি। কিন্তু হরলাল রায় এ-সময় প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী বিয়ে করতে অস্বীকার করে তাকে চোরের অপবাদ দিলে রোহিণী তখন বলেছিল : ‘কে আমাকে চুরি করিতে বলিয়াছিল? কে আমাকে বড় লোভ দেখাইল? সরলা স্ত্রীলোক দেখিয়া কে প্রবঞ্চনা করিল? […] হায়! আমি তোমার অযোগ্য? তোমার মত নীচ শঠকে গ্রহণ করে, এমন হতভাগী কেহ নাই।’ (বঙ্কিম রচনাবলি, পৃ ৫০১) অর্থাৎ রোহিণী লোভে পড়ে হরলাল রায়ের কথামতো কৃষ্ণকান্ত রায়ের ঘর থেকে উইল চুরি করেছিল, এ-বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। কারণ, হরলাল যখন টাকার লোভ দেখিয়ে রোহিণীকে রাজি করাতে ব্যর্থ হয়ে বলেছিল – এখন পন্ডিতেরা বলছে ‘বিধবাবিবাহ শাস্ত্রসম্মত’।
এই আশ্বাসেই রোহিণী প্রভুর ঘরে চুরি করতে ঢুকেছিল। অতএব, রোহিণী যে শুরু থেকেই যৌবনে বৈধব্যের যন্ত্রণা নিবারণের লক্ষ্যে পুরুষসঙ্গী পেতে চেয়েছে তা শাস্ত্রসম্মত হোক বা না হোক, তাতে তার আসে-যায় না। এভাবে হরলালের কাছে প্রতারিত হওয়ার পরই রোহিণী কিন্তু গোবিন্দলালের প্রণয়াসক্ত হয়। এর পরের ঘটনা আগেই উলে�খ করা হয়েছে।
সুতরাং রোহিণীর পুরুষাসক্তি নতুন ঘটনা নয়। ফলে রাসবিহারী ওরফে নিশাকরের রূপমুগ্ধ হয়ে নিশীথ রাতে নদীর ঘাটে সাক্ষাৎ করতে যাওয়ার ব্যাপারটি ঔপন্যাসিক পরিকল্পনামাফিক করেননি, বরং তা রোহিণীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অন্তর্গত ব্যাপার এবং তার স্বকৃত ক্রিয়া। এমনকি গোবিন্দলাল যখন তাকে গুলি করতে উদ্যত হয় তখনো রোহিণীর দ্বিচারিণী 888sport promo code-স্বভাবের সুস্পষ্ট পরিচয় ফুটে উঠেছে। অর্থাৎ আধুনিকমনস্ক যে-রোহিণীকে ঔপন্যাসিক বঙ্কিমবাবু নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন সেই 888sport promo codeর ছিল না প্রেমনিষ্ঠা। বলা যায়, রোহিণী আধুনিকতার এক বিকৃত মানসিকতাসম্পন্ন 888sport promo code, যে-888sport promo codeর কাছে প্রেমের চেয়ে রূপের কদর বেশি, যার যৌবনের ও কামলিপ্সা পূরণের বাসনা তীব্র ও প্রধান বিষয়। বঙ্কিমচন্দ্র অবশ্য আধুনিকতাকে দায়ী করার উদ্দেশ্য নিয়েই যে রোহিণীর মতো বিকৃত মানসিকতার রূপমোহান্ধ চরিত্র সৃষ্টি করেছিলেন, ঢালাওভাবে সে-অভিযোগও করা যায় না। উনিশ শতকের আধুনিক বাঙালি সমাজে রোহিণীর মতো 888sport promo codeর অস্তিত্ব অবাস্তব ছিল না। বিশেষত আধুনিকতার অভিঘাতে রক্ষণশীল সমাজের বন্ধন শিথিল হওয়ার পরিণামে রোহিণীর মতো 888sport promo codeও সে-সমাজে থাকতে পারে, বঙ্কিমবাবু সেই সন্দেশ দিয়েছেন কৃষ্ণকান্তের উইল 888sport alternative linkের রোহিণী চরিত্রের মাধ্যমে আধুনিক পাঠকের কাছে।
সামগ্রিকভাবে রোহিণী চরিত্রের এ-আলোচনায় দেখার চেষ্টা করা হয়েছে সমকালীন সমাজবাস্তবতায় তার ট্র্যাজিক পরিণামের জন্য কতটা সে নিজে দায়ী আর কতখানি তার স্রষ্টা বঙ্কিমচন্দ্র দায়ী। এ পর্যালোচনায় এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, বঙ্কিমবাবু রোহিণীকে উনিশ শতকীয় আধুনিকতার ছাঁচে নির্মাণ করার চেষ্টা করলেও সময়, সমকাল আর সামাজিক বাস্তবতার সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে তাকে উপমহাদেশীয় পুরুষতান্ত্রিক সমাজে দ্বিচারিণীর অপবাদ দিয়েছেন। তারপরও রোহিণী সমকালের রক্ষণশীল হিন্দু সমাজের রীতিনীতির বিরুদ্ধে যে বলিষ্ঠ প্রতিবাদী এক 888sport promo code-চরিত্র তা অস্বীকার করার উপায় নেই। বলা ভুল হবে না, বাংলা কথা888sport live footballে বঙ্কিমবাবুই প্রথমবারের মতো 888sport promo codeর আত্মজৈবনিক ও নিতান্ত ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার নানা দিকের ব্যাখ্যা-বিশে�ষণ করেছিলেন রোহিণীর মাধ্যমে। এই বিবেচনায় তিনিই বাংলা 888sport live footballে 888sport promo codeর অন্তর্লোকের গূঢ় রহস্য আবিষ্কারের পথিকৃৎ। এ-কথাও সত্য যে, সামাজিক অসঙ্গতির কারণে বঙ্কিমবাবুর পক্ষে রোহিণীর জীবনচেতনাকে সম্পূর্ণভাবে স্বীকার করে নেওয়াও সম্ভব ছিল না তৎকালীন বাস্তবতায়। এ-প্রসঙ্গে মনে রাখা দরকার, এসব কথা পূর্বাপর বিচার-বিবেচনা না করেই রোহিণীর মৃত্যুর দায়ভার বঙ্কিমবাবুর ওপর চাপিয়ে দেওয়া ঠিক নয়; যেহেতু কথা888sport live chatীর দায় থাকে সমাজসত্যকে উপস্থাপন করা যথাযথভাবে। সেদিক থেকে দেখলে তৎকালীন সমাজে রোহিণীর জীবনতৃষ্ণাকে স্বীকৃতি দেওয়ার যে কোনো সুযোগ ছিল না, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এজন্যই কি বঙ্কিমবাবু তাঁর নায়িকাকে মেরে ফেলবেন? না তিনি মারেননি, বরং রোহিণী 888sport alternative linkের ঘটনা-পরম্পরায় নিজেকে এমন এক স্থানে নিয়ে গিয়েছিল, যেখানে ঘটনার অনিবার্য প্রবাহেই তার মৃত্যু ঘটেছে। উপরন্তু এ-কথা তিক্ত হলেও সত্য যে, রোহিণীর মৃত্যুতে পাঠকের অন্তরে বেদনার বদলে উষ্মা ও উৎকণ্ঠার অবসানে এক ধরনের শান্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে। তবে পাঠক উদ্বিগ্ন হয়েছে ভ্রমনের অকালমৃত্যুতে এবং গোবিন্দলাল সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করায়।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর সৃষ্টিকে বাঁচাতে পারেননি, কিন্তু একই ধরনের অপরাধ করা সত্ত্বেও রবীন্দ্রনাথ অবশ্য তাঁর নায়িকা বিনোদিনীকে মৃত্যুদন্ড দেননি। বিনোদিনীকে মৃত্যুদন্ড না দিলেও রবীন্দ্রনাথ তার শাস্তি মাফ করেননি। কারণ, সমাজের রীতিনীতি উপেক্ষা করে বিধবা বিনোদিনীর অন্যায়ভাবে ব্যক্তিগত চাওয়াকে বড় করে দেখায় তাকে শেষাবধি সন্ন্যাসব্রত গ্রহণে বাধ্য করেছেন। তার শরীরে জড়িয়ে দিয়েছেন রঙিন শাড়ির বদলে গেরুয়া বস্ত্র এবং চূড়ান্ত পরিণামে মহেন্দ্রের মায়ের সঙ্গে কাশীতে পাঠিয়ে দিয়েছেন ধর্মকর্ম পালনার্থে। অথচ মহেন্দ্র-বিনোদিনীর প্রণয় যখন বিচ্ছেদের মুখে, তখন বিহারীর বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে বিনোদিনী নিরুদ্বেগ অবহেলায় :
বিনোদিনী হাতজোড় করিয়া কহিল, ‘ভুল করিয়ো না – আমাকে বিবাহ করিলে তুমি সুখী হইবে না, তোমার গৌরব যাইবে – আমিও সমস্ত গৌরব হারাইব। তুমি চিরদিন নির্লিপ্ত, প্রসন্ন। আজো তুমি তাই থাকো – আমি দূরে থাকিয়া তোমার কর্ম করি। তুমি প্রসন্ন হও, তুমি সুখী হও।’ (888sport alternative link সমগ্র, পৃ ৩২৮)
অথচ এই বিনোদিনী বালবৈধব্যের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে শুধুই জৈবিক চাহিদা মেটাবার উদ্দেশ্যে রাতের অন্ধকারে ঢুকেছিল বিহারীর ঘরে। বিনোদিনী চরিত্রের এই জীবনতৃষ্ণা পরবর্তী পর্যায়ে তিরোহিত হওয়ার কারণ সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা যায় না 888sport alternative linkে বর্ণিত ঘটনার মাধ্যমে। বলা যায়, যথোপযুক্ত কারণ না দেখিয়েই রবীন্দ্রনাথ গৈরিক বসনে বিনোদিনীকে কাশীতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। যে-বিনোদিনী একদা বিহারীর ঘরে অনুপ্রবেশ করে কামবাসনা তৃপ্ত করতে চেয়েছে, সেখানে ব্যর্থ হয়েই কিন্তু বিনোদিনীর প্রণয়বাসনা শেষ হয়নি। পরবর্তী পর্যায় সে পেতে চেয়েছে বিবাহিত মহেন্দ্রকে এবং সেই চাওয়াকে পূরণে করতে বিনোদিনী করেনি এমন কোনো কাজ নেই। এমনকি মহেন্দ্রকে নিয়ে দেশান্তরি পর্যন্ত হয়েছে সে। বাস করেছে এক ঘরে, একই ছাদের তলায়। অবশ্য মহেন্দ্রকে নিজের সঙ্গী করার পেছনে বিনোদিনীর যতটা না প্রণয় ছিল, ততোধিক ছিল মহেন্দ্রের স্ত্রী আশালতার প্রতি ঈর্ষা। অকালবৈধব্যের কারণে বিনোদিনী যৌবন সুখ-বঞ্চিত হয়ে সমবয়সী আশার সুখ ও স্বামীভাগ্য স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেনি। রবীন্দ্রনাথ এই অভাগিনী বিনোদিনীর নির্মম জীবনকথা মিতব্যয়ী শব্দচয়নে প্রকাশ করেছেন এভাবে :
এক সময় মহেন্দ্র এবং তদভাবে বিহারির সহিত তাহার বিবাহের প্রস্তাব হইয়াছিল। বিধিনিবন্ধে যাহার সহিত তাহার শুভবিবাহ হয়, সে-লোকটির সমস্ত অন্তরিন্দ্রিয়ের মধ্যেই প��হাই ছিল সর্বাপেক্ষা প্রবল। সেই প��হার অতিভারেই সে দীর্ঘকাল জীবনধারণ করিতে পারিল না।
তাহার মৃত্যুর পর হইতে বিনোদিনী, জঙ্গলের মধ্যে একটিমাত্র উদ্যানলতার মতো, নিরানন্দ পল��র মধ্যে মুহ্যমানভাবে জীবনযাপন করিতেছিল। (888sport alternative link সমগ্র, পৃ ২০০৫)
দুঃখিনী বিনোদিনীর জীবনকথা এরপর ক্রমান্বয়ে জড়িয়ে যায় মহেন্দ্রের মা রাজলক্ষ্মীর সেবাপরায়ণ মূর্তিতে। অতঃপর রাজলক্ষ্মীর গৃহেই বিধবা বিনোদিনীর থাকা-পরার ব্যবস্থা হলো। কলকাতায় আসার পর মহেন্দ্র-আশার নব দাম্পত্যজীবনকে খুব নিকট থেকে পর্যবেক্ষণের সুযোগ হলো তার। আশালতা আর মহেন্দ্রের দাম্পত্য প্রণয় ক্রমেই বিনোদিনীর হৃদয়ের সুপ্ত প্রবৃত্তিগুলো জাগিয়ে তুলল। ক্রমশ বিনোদিনীর হৃদয়ে ঈর্ষা প্রবলতর হতে লাগল। রবীন্দ্রনাথ সংহত ভাষায় বিনোদিনীর সেই মনোবৃত্তির প্রকাশ ঘটিয়ে লিখেছেন :
ক্ষুধিতহৃদয়া বিনোদিনীও নববধূর নবপ্রেমের ইতিহাস মাতালের জ্বালাময় মদের মতো কান পাতিয়া পান করিতে লাগিল। তাহার মস্তিষ্ক মাতিয়া শরীরে রক্ত জ্বলিয়া উঠিল।
(888sport alternative link সমগ্র, পৃ ২১১)
এদিকে দীর্ঘদিন রাজলক্ষ্মীর গৃহে আশ্রিতা থাকার পরও একবারও মহেন্দ্র যখন তার সঙ্গে আলাপ পরিচয় করল না তখন একবার বিনোদিনীর মনে 888sport promo codeত্বের ঈর্ষা জেগে ওঠে; অনুরূপ ঈর্ষা জেগেছিল বঙ্কিমের রোহিণীর হৃদয়েও। বিনোদিনীর ঈর্ষার স্বরূপ বর্ণনা করে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন :
বিনোদিনীও দুদিন পূর্বে আক্রোশের সহিত মনে মনে বলিয়াছিল, ‘এতকাল বাড়িতে আছি, মহেন্দ্র যে একবার আমাকে দেখিবার চেষ্টাও করে না। যখন পিসিমার ঘরে থাকি, তখন কোনো ছুতা করিয়াও যে মার ঘরে আসে না। এত ঔদাসীন্য কিসের। আমি জড়পদার্থ। আমি কি মানুষ না। আমি কি স্ত্রীলোক নই।’ (888sport alternative link সমগ্র, পৃ ২১৫)
বিনোদিনীর এ-মনোভাবের মধ্যে স্পষ্টই ঈর্ষার আভাস পাওয়া যায়। মহেন্দ্র তাকে দেখুক বা না দেখুক তাতে বিনোদিনীর কী? বরং তার রূপ-যৌবন পরপুরুষ যাতে দেখতে না পারে, সে-ব্যাপারেই তো তার যত্নশীল হওয়া দরকার একজন বিধবা হিসেবে। সুতরাং বিনোদিনীর এই ঈর্ষাপরায়ণ মনোবৃত্তির মাঝেই লুকিয়ে ছিল সমাজের প্রচলিত বিধবার জন্য তার নিয়ম-কানুন অস্বীকার করার ইঙ্গিত। পরবর্তী পর্যায়ে বিনোদিনী ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার কাছে সামাজিক রীতিনীতি দুপায়ে দলেছে এবং উপেক্ষা করেছে। তবে এর পেছনেও অবশ্যম্ভাবী কারণ হিসেবে ছিল বিনোদিনীর প্রণয়বঞ্চিত হৃদয়ের ঈর্ষা। রবীন্দ্রনাথের বর্ণনায় তা নিম্নরূপ :
আশার প্রতি মহেন্দ্রের সোহাগ-যত্ন বিনোদিনীর প্রণয়বঞ্চিত চিত্তকে সর্বদাই আলোড়িত করিয়া তুলিত – তাহাতে বিনোদিনীর বিরহিণী কল্পনাকে যে-বেদনায় জাগরূপ করিয়া রাখিত, তাহার মধ্যে উগ্র উত্তেজনা ছিল। যে-মহেন্দ্র তাহাকে সমস্ত জীবনের সার্থকতা হইতে ভ্রষ্ট করিয়াছে, যে-মহেন্দ্র তাহার মতো স্ত্রীরত্নকে উপেক্ষা করিয়াছে, তাহাকে বিনোদিনী ভালোবাসে কী বিদ্বেষ করে, তাহাকে কঠিন শাস্তি দেবে না তাহাকে হৃদয়সমর্পণ করিবে, তাহা বিনোদিনী ঠিক করিয়া বুঝিতে পারে নাই। একটা জ্বালা মহেন্দ্র তাহার অন্তরে জ্বালাইয়াছে, তাহা হিংসার না প্রেমের, না দুয়েরই মিশ্রণ, বিনোদিনী তাহা ভাবিয়া পায় না; মনে মনে তীব্র হাসি হাসিয়া বলে, ‘কোনো 888sport promo codeর কি আমার মতো এমন দশা হইয়াছে। আমি মরিতে চাই কি মারিতে চাই, তাহা বুঝিতেই পারিলাম না।’ (888sport alternative link সমগ্র, পৃ ২৩১)
বিনোদিনীর এই মানস বিশ্লেষণ যদিও রবীন্দ্রনাথ সরাসরি ঈর্ষা বলতে চাননি, তিনি এটাকে প্রণয় ও ঈর্ষার মিশ্রিত সমসত্ত্ব হিসেবে উলে�খ করলেও প্রকৃতপক্ষে এটা বিনোদিনীর অন্তরের ঈর্ষাই, যে-কারণে শেষাবধি মহেন্দ্রকে ছিনিয়েই নিয়েছে আশালতার কাছ থেকে। কিন্তু তারপর আকর্ষণ হারিয়েছে বিনোদিনী হাতের মুঠোয় পাওয়া মহেন্দ্রের প্রতি। কেন আকর্ষণ হারাল বিনোদিনী? এটা কি ঘটনার অনিবার্যতা, নাকি লেখকের পরিকল্পনা? রোহিণীর মৃত্যুদৃশ্য বঙ্কিমচন্দ্রকে যতটা অনিবার্য করে তুলতে পেরেছিলেন, বিনোদিনীর ক্ষেত্রে সেটা তদ্রূপ হয়ে ওঠেনি। নিশ্চয় মহৎ লেখক রবীন্দ্রনাথের ব্যর্থতা নয়; বরং বলা ভালো, বিনোদিনীকে কামনা-বাসনায় যেভাবে নির্মাণের সূচনা করেছিলেন সেই ধারাবাহিকতায় চরিত্রটির পরিণাম রচনা করেননি তিনি। আর এটা সম্পূর্ণই যে স্বেচ্ছাকৃত তা বলা অবান্তর নয়। অবশ্য বিনোদিনী তার ঈর্ষার কথাটি নিজের মুখেই স্বীকার করে বিহারীকে বলেছে :
বিহারী। ইচ্ছা তোমার নাই? এ বিপত্তি কে ঘটাইল। মহেন্দ্র যে পথে চলিয়াছিল সে পথ হইতে তাহাকে ভ্রষ্ট করিয়াছে।
বিনোদনী। আমি করিয়াছি। তোমার কাছে লুকাইব না, এ সমস্তই আমার কাজ। আমি মন্দ হই যাই হই, একবার আমার মতো হইয়া আমার অন্তরের কথা বুঝিবার চেষ্টা করো। আমার বুকের জ্বালা লইয়া আমি মহেন্দ্রের ঘর জ্বালাইয়াছি। একবার মনে হইয়াছিল, আমি মহেন্দ্রকে ভালোবাসি, কিন্তু তাহা ভুল।
(888sport alternative link সমগ্র, পৃ ২৭৯)
বিনোদিনীর এই স্বীকারোক্তির পর আর তাকে প্রণয়িনী হিসেবে আখ্যায়িত করা যুক্তিসঙ্গত মনে হয় না। যে-888sport promo code ঈর্ষার জন্যই আরেক 888sport promo codeর সংসার ভাঙে তাকে আর যাই ভাবা হোক না কেন প্রেমিকা ভাবার সুযোগ নেই। অথচ রবীন্দ্রনাথ এ-888sport alternative linkের সূচনা অংশে বিনোদিনীর এই ঈর্ষার কথা স্বীকার করেননি, তিনি বরং 888sport alternative linkের কেন্দ্রীয় ঈর্ষাকে চিহ্নিত করেছেন এভাবে :
চোখের বালি গল্পকে ভিতর থেকে ধাক্কা দিয়ে দারুণ করে তুলেছে মায়ের ঈর্ষা। এই ঈর্ষা মহেন্দ্রের সেই রিপুকে কুৎসিৎ অবকাশ দিয়েছে যা সহজ অবস্থায় এমন করে দাঁত-নখ বের করত না। যখন পশুশালার দরজা খুলে দেওয়া হল, বেরিয়ে পড়ল হিংস্র ঘটনাগুলো অসংযত হয়ে।
[888sport alternative link সমগ্র (চোখের বালি), পৃ সূচনা]
হয়তো সচেতনভাবে রবীন্দ্রনাথ চেয়েছিলেন মহেন্দ্রের মায়ের ঈর্ষাজনিত জটিলতা ও ঘটনার আবর্তে কাহিনিকে দারুণতর করে তুলতে। কিন্তু ঘটনাপ্রবাহে বিনোদিনী এতটাই সক্রিয় ও স্বাধীন হয়ে উঠেছে যে, যার ওপর পরিণামে আর স্রষ্টা রবীন্দ্রনাথেরও কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। ফলে মায়ের ঈর্ষার চেয়ে বিনোদিনীর ঈর্ষা 888sport alternative linkের ঘটনাপ্রবাহকে বেশি প্রভাবিত করেছে। গল্পের ঘটনায় বিনোদিনীর ঈর্ষা মারাত্মক হয়ে ওঠার পেছনে রবীন্দ্রনাথ সরাসরি ইন্ধনও জুগিয়েছেন। কারণ, তিনি মহেন্দ্রের স্ত্রী আশালতার সঙ্গে বিনোদিনীর তুলনা করতে গিয়ে তার হৃদয়ে জাগিয়ে দিয়েছেন 888sport promo codeত্বের অহংকার ‘আমি কি স্ত্রীলোক নই’।
888sport promo codeর যদি এ-অহংকার চূর্ণ হয়ে যায়, তাহলে বলতেই হবে এটা তার অস্তিত্বের সংকট তৈরি করেছিল। এজন্যই বিনোদিনী স্বীয় অস্তিত্ব সবলে ঘোষণা করায় আশার সংসার হুমকির সম্মুখীন হয়েছে।
বিনোদিনী কোনোভাবেই তার 888sport promo code-অস্তিত্বে সংসারজ্ঞানহীনা আশার বিজয় সহ্য করতে চায়নি। কারণ, সেকালের পুরুষ-সমাজ একজন 888sport promo codeর মধ্যে যেসব সংসারজ্ঞান কামনা করতো তার সবই ছিল বিনোদিনীর। তাহলে সে কেন সংসার-সুখবঞ্চিত হবে? অথবা পুরুষসঙ্গ লাভ করতে পারবে না? যদি আশালতার সেসব গুণ না থাকা সত্ত্বেও সে সংসার, স্বামী ও দাম্পত্য সুখলাভের অধিকারিণী হয় তাহলে সে কেন আশার চেয়ে অধিকতর যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও তার চেয়ে সৌভাগ্যহীনা হবে? মূলত বিনোদিনীর অন্তর্জ্বালার অনল এই প্রশ্ন থেকেই শুরু হয়েছিল এবং সে প্রথাগত পুরুষশাসিত সমাজের পুরুষকে পরখও করে দেখতে চেয়েছিল যে, আদৌ 888sport promo code হিসেবে কোনো পুরুষের নিকট তার কদর আছে কিনা! আর যদি থাকেই তা কতখানি? প্রসঙ্গত এটাও 888sport app download for androidীয় যে, মহেন্দ্রের সংসার ভাঙার উদ্দেশ্যে বিনোদিনী যেসব কাজ করেছিল, সেসবের পেছনে বা পরোক্ষে বিহারীর প্রেম প্রত্যাখ্যানজনিত ঈর্ষাও খানিকটা ইন্ধন জুগিয়েছিল তা অনস্বীকার্য। কারণ বিনোদিনী জীবনধর্মকে স্বীকার করে নিয়েই একদিন বিহারীর কাছে তার ভালোবাসার কথা উজাড় করে বলেছিল :
[…] বিনোদিনী চৌকি হইতে ভূমিতে লুটাইয়া পড়িয়া, বিহারীর দুই পা প্রাণপণ বলে বক্ষে চাপিয়া ধরিয়া কহিল, ‘ঐটুকো দুর্বলতা রাখো ঠাকুরপো! একেবারে পাথরের দেবতার মতো পবিত্র হইয়ো না। মন্দকে ভালোবাসিয়া একটুখানি মন্দ হও। (888sport alternative link সমগ্র, পৃ ২৮১)
শুধু এ-কথা বলেই বিনোদিনী ক্ষান্ত হয়নি, সে কাম-বাসনাকে পরিতৃপ্ত করার প্রত্যাশায় আরো এগিয়েছে এবং সে-ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে ঔপন্যাসিক চমৎকারভাবে জানিয়েছেন :
বিনোদিনী বিহারীর এই স্তব্ধ-বিহবল ভাব অনুভব করিয়া তাহার পা ছাড়িয়া দিয়া নিজেই দুই হাঁটুর ওপর উন্নত হইয়া উঠিল, এবং চৌকিতে আসীন বিহারীর গলদেশ বেষ্টন করিয়া বলিল, ‘জীবনসর্বস্ব, জানি তুমি আমার চিরকালের নও, কিন্তু আজ এক মুহূর্তের জন্য আমাকে ভালোবাসো। তারপর আমি আমাদের সেই বনে-জঙ্গলে চলিয়া যাইব, কাহারও কাছে কিছুই চাহিব না। মরণ পর্যন্ত মনে রাখিবার মতো আমাকে একটা-কিছু দাও।’ (888sport alternative link সমগ্র, ২৮১)
বিনোদিনীর উপরোক্ত আচরণে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়, সে অত্যন্ত জীবনবাদী এক 888sport promo code, যে-888sport promo code জীবন-যৌবনের দাবিকে অস্বীকার করেনি। কারণ, সে ভালোবেসে কালকের জন্য অপেক্ষা করতেও নারাজ। সে নগদে বিশ্বাসী বলেই সেই গভীর নিস্তব্ধ রাতে বিহারীর সঙ্গে দৈহিকভাবে মিলনের স্পষ্ট প্রস্তাব দিয়েছে। তবে বিনোদিনীর এই দৈহিক মিলনের জন্য দেওয়া প্রস্তাবে শুধুই কামনা ছিল না, এজন্যই সে এই মিলনের মাধ্যমে 888sport promo codeর পূর্ণতা লাভের আকাঙ্ক্ষায় সন্তানের প্রত্যাশাও ইশারা-ইঙ্গিতে স্পষ্ট করেছে। কারণ, বিহারীর কাছ থেকে এক মুহূর্তের ভালোবাসা থেকে সে এমন কিছু পেতে চেয়েছে, যা সে মরণ পর্যন্ত 888sport app download for android রাখতে পারবে। অর্থাৎ বিহারীর সঙ্গে দৈহিক মিলনের মাধ্যমে সে সন্তানের আকাঙ্ক্ষাও ব্যক্ত করেছে। বিনোদিনীর প্রস্তাবে বাহ্যিক বা উপরিস্তরের পর্যবেক্ষণে মনে হতেই পারে যে, তা শুধুই যৌনপিপাসা নিবৃত্তির চেষ্টা। কিন্তু প্রকৃতপ্রস্তাবে ‘চিরদিন’ মনে রাখার প্রস্তাবনাকে গভীর পর্যালোচনায় নিলে বোঝা যায়, কামবাসনা পরিতৃপ্তির সঙ্গে সঙ্গে সন্তানের আকাঙ্ক্ষা করে 888sport promo codeজীবনের পূর্ণতা পেতে চেয়েছিল বিহারীর কাছে বিনোদিনী। কিন্তু জীবনবাদী বিনোদিনীর এই প্রস্তাব সেদিন বিহারী পাথরের দেবতা সেজে পায়ে ঠেলেছে। বলা যায়, উন্মুখ বিনোদিনীর চাওয়াকে চরম অবজ্ঞায় অবহেলায় উপেক্ষা করেছে। এরপর গল্পের কাহিনি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত হয়েছে অনিবার্য অভিঘাতে। ভালোবাসার অপমান সহ্য করতে পারেনি, তাই তার 888sport promo codeদেহের আকর্ষণ যে আছে বিহারীর সামনে অনেকটা তা প্রমাণ করার জন্যই মহেন্দ্রকে তার প্রতি আকৃষ্ট করতে উদ্বুদ্ধ করেছে বিনোদিনীকে। বিনোদিনীর এই আচরণের ব্যাখ্যায় বলা যায়, তার ঈর্ষাকে ভেতর থেকে ইন্ধন দিয়েছে বিহারীর প্রণয়-প্রত্যাখ্যান। সেদিন যদি বিহারী রাতের বেলা বিনোদিনীর চাওয়াকে দেবতা সেজে উপেক্ষা না করত, তাহলে 888sport alternative linkের গল্পই ভিন্নখাতে প্রবাহিত হওয়ার সুযোগ ছিল।
বিনোদিনী যখন ভালোবাসা বঞ্চিত হয়েছে তখন তার হৃদয়ে বৈধব্যের যন্ত্রণা আরো দ্বিগুণ হয়ে উঠেছে খুব স্বাভাবিকভাবেই। সে-যন্ত্রণার জ্বালা নিবারণ করেছে আশালতার সুখের দাম্পত্যে অবিশ্বাসের ছুরিকাঘাত করে। যখন বিনোদিনী জয়লাভ করেছে এই নির্মম-নিষ্ঠুর খেলায় তখন সে আকর্ষণ হারিয়েছে জীবনপিপাসা নিবৃত্ত করতে। কিন্তু গল্পের এই মোড়ে এসে রবীন্দ্রনাথ আর বিনোদিনীকে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য দিতে চাননি। তা দিলে পুরুষতন্ত্রের অহংকার চূর্ণ হয়ে যেত। যে-বিনোদিনী মুহূর্তের ভালোবাসাকে গ্রহণ করতে চায়, সেই বিনোদিনীই মহেন্দ্রকে জয় করার পর মুহূর্তেই যেন বদলে যায় : ‘যাও যাও, তুমি এ বিছানায় বসিয়ো না।’ (888sport alternative link সমগ্র, পৃ ৩২২)
কেন বসবে না মহেন্দ্র? এই বিনোদিনীই তো তাকে ঘর-সংসার স্ত্রীর প্রতি অবিশ্বাসী করেছে তার রূপ-যৌবনের আকর্ষণে, সেই 888sport promo codeই কেন মহেন্দ্রকে কিছুতেই তার কামবাসনা তৃপ্তির সুযোগ দিচ্ছে না? এর কারণ ব্যাখ্যা করে রবীন্দ্রনাথ জানিয়েছেন :
মহেন্দ্রকে বিনোদিনী কিরূপ প্রবলবেগে আকর্ষণ করিয়াছে, প্রচন্ড ঝড়ের মতো কিরূপ সমস্ত শিকড়-সুদ্ধ তাহাকে উৎপাটিত করিয়াছে, আজ তাহা অনুভব করিয়া তাহার হৃদয় আরো যেন অশান্ত হইয়া উঠিল। তাহার তো এই সমস্ত শক্তিই রহিয়াছে, তবে কেন বিহারী পূর্ণিমার রাত্রির উদ্বেলিত সমুদ্রের ন্যায় তাহার সম্মুখে আসিয়া ভাঙিয়া পড়ে না। (888sport alternative link সমগ্র, পৃ ৩২৩)
বিনোদিনীর এই উপলব্ধি বর্ণনার মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ স্পষ্ট করে দিয়েছেন কেন বিনোদিনী তার প্রতি মহেন্দ্রকে আকৃষ্ট করেছিল? অর্থাৎ বিনোদিনী দেখাতে চেয়েছে যে, তার দেহে 888sport promo codeত্বের সেসবই আছে, যা পুরুষকে আকর্ষণ করে; কিন্তু তারপরও কেন বিহারী আকৃষ্ট হয়নি তার প্রতি? বিনোদিনীর হৃদয়ে জাগা এ-প্রশ্নের সমাধান খুব সহজ নয়। কারণ, বিহারী যদি তার ভালোবাসাকে স্বীকৃতি দেয়, তাহলে সমাজে বিধবার প্রণয়ে অধিকার জন্মে; তা পুরুষতন্ত্রের রক্ষক রবীন্দ্রনাথ নিশ্চয় হতে দিতে পারেন না। এজন্য তিনি যখন বিনোদিনীর প্রতি বিহারীকে আকৃষ্ট হতে দেখান, তখন তিনি বিনোদিনীকে ভালোবাসার স্থূল চাওয়া-পাওয়ার ঊর্ধ্বে এক ধর্মীয় পবিত্রতায় স্নাত পদ্মের মতো করে তুলেছেন। ফলে বিহারীর বিয়ের প্রস্তাবকে সেই বিনোদিনী অনাদরে-অবহেলায় অবজ্ঞা করতে পারে খুব সহজেই : ‘ভুল করিয়ো না – আমাকে বিবাহ করিলে তুমি সুখী হইবে না, তোমার গৌরব যাইবে – আমিও সমস্ত গৌরব হারাইবে। তুমি চিরদিন নির্লিপ্ত, প্রসন্ন। আজো তুমি তাই থাকো – আমি দূরে থাকিয়া তোমার কর্ম করি। তুমি প্রসন্ন হও, তুমি সুখী হও।’ (888sport alternative link সমগ্র, পৃ ৩২৮)
বিনোদিনী কোন গৌরব হারানোর ভয় পায়? সমাজ-নির্ধারিত বিধবার নিয়মরীতি রক্ষার গৌরব? রবীন্দ্রনাথ যে বিনোদিনীকে রক্তমাংসের আধুনিক মানুষ হিসেবে সৃষ্টি করেছিলেন তাকে গল্পের এ পর্যায় এসে পুরুষতন্ত্রের স্বার্থেই মেরে ফেলেছেন। বৈধব্যের সংস্কার রক্ষার মধ্যে যে বিনোদিনী গৌরব খুঁজে পায়, তাকে অন্তত আধুনিক 888sport promo codeসত্তা হিসেবে আখ্যায়িত করার সুযোগ থাকে না। উপরন্তু মানবিক আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে যে-বিনোদিনীর বিকাশ ঘটিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ, তাকে শেষ পর্যন্ত ধর্মে অনুগতা করে 888sport apk download apk latest versionর আসনে বসিয়ে দিয়েছেন। শেষাবধি তিনি বিনোদিনীকে কাকিমা অন্নপূর্ণার সঙ্গে কাশীবাসী করেছেন। (888sport alternative link সমগ্র, পৃ ৩৩৬)
শুধু এখানেই ঘটনার ইতি টানেননি রবীন্দ্রনাথ, মহেন্দ্র যে বিনোদিনীকে কামনা করে ভুল করেছিল সেই ভুলের মাশুল হিসেবে কাশী যাওয়ার দিন মহেন্দ্র এসে বিনোদিনীকে বলে :
‘বৌঠান, মাপ করিয়ো।’ তাহার চোখের প্রান্তে দুই ফোঁটা অশ্রু গড়াইয়া পড়িল।’ (888sport alternative link সমগ্র, পৃ ৩৩৭)
যে-মহেন্দ্র কামনায়-বাসনায় একদা বিনোদিনীকে দৈহিকভাবে চেয়েছিল সেই বিনোদিনীকে রবীন্দ্রনাথ শেষাবধি এমন উঁচু আসনে বসিয়ে দিয়েছেন যে তাকে মহেন্দ্রর মতো মানুষও সামাজিক কারণে 888sport apk download apk latest versionয় প্রণাম জানাতে বাধ্য হয়। বিনোদিনী চরিত্রের এই রূপান্তর প্রকৃতপক্ষে দুটো কারণে ঘটিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ।
এক. তৎকালীন হিন্দু সমাজে বিধবা বিয়ের যে প্রচলন ঘটানোর আইনানুগ প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন রামমোহন ও বিদ্যাসাগর মহাশয়, সে-প্রয়াসের বিরোধিতা করে সামাজিক সংস্কারকে বড় করে দেখা।
দুই. পুরুষবাদী মানসিকতার কারণেই রবীন্দ্রনাথ একজন বিধবাকে কোনো বিবাহিত 888sport promo codeর মতো সামাজিক যৌন অধিকার দিতে প্রস্ত্তত ছিলেন না। ভারতীয় সমাজের পুরুষতন্ত্র একমাত্র বিবাহিত 888sport promo codeর যৌন অধিকার মেনে নিয়েছে; অন্যদের বেলায় তা গর্হিত অন্যায় বা মহাপাপ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। যদিও ভারতীয় বিবাহিত পুরুষ অবাধ যৌন স্বাধীনতা ভোগ করে, এমনকি রক্ষিতা রাখারও সামাজিক স্বীকৃতি ছিল উনিশ শতকে।
বিনোদিনীর কাশীবাসী হওয়ার মাধ্যমে মূলত জীবনবাদী এক 888sport promo codeকে 888sport apk download apk latest versionর আসনে অধিষ্ঠিত করে তার যৌবনের চাওয়াকে অস্বীকার করা হয়েছে। সুতরাং পরিণামে বিনোদিনীর জীবন যে ব্যর্থ হয়েছে বঙ্কিমবাবুর রোহিণীর মতোই, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বঙ্কিমচন্দ্র পিস্তলের এক গুলিতেই রোহিণীর জীবনপিয়াসা জন্মের তরে একেবারে স্তব্ধ করে দিয়েছিলেন; কিন্তু রবীন্দ্রনাথ তার চেয়েও বড় ও ভয়ংকর শাস্তি প্রদান করেছেন বিনোদিনীকে। রোহিণী মরে গিয়ে যৌবনের যন্ত্রণা থেকে অব্যাহতিলাভ করলেও বিনোদিনী ভরা-যৌবনে কাশীবাসী হয়ে তিলে তিলে মৃত্যুযন্ত্রণা অনুভব করেছে আমৃত্যু। রোহিণীর তুলনায় বিনোদিনীর শাস্তিই যে গুরু হয়েছে তা একটু গভীরভাবে বিচার করলেই স্পষ্ট অনুমান করা যায়। সুতরাং বঙ্কিমবাবুর রোহিণীর সম্প্রসারিত ও পুনর্নির্মিত 888sport promo codeই যে বিনোদিনী, তা নির্দ্বিধায় বলা যায় এবং বিনোদিনীর জীবনও পুরুষবাদী রবীন্দ্রনাথের হাতে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। রোহিণীর মৃত্যুর কারণে যদি বঙ্কিমবাবু সমালোচিত হন, তাহলে বিনোদিনীকে ভরা-যৌবনে কাশীবাসী করেও অন্যায় করেছেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর এই পুরুষবাদী মানসিকতারও সমালোচনা হওয়া দরকার।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.