বঙ্গবন্ধুর দেখা নয়াচীন

জেলখানায় বসে বা রাজনৈতিক নির্বাসনে থেকে বিশ্ব888sport live football ও চিন্তার ভান্ডারে বেশকিছু অমূল্য রতœ সংযোজিত হয়েছে 888sport live footballিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং সামাজিক আন্দোলনকর্মীদের হাত দিয়ে। বিশ্ব888sport live footballের অন্যতম প্রভাবশালী 888sport alternative link দন কিহোতে সার্ভেন্তেস লিখেছিলেন জেলে বসে। ইংরেজি 888sport live footballের আদি 888sport alternative link জন বিনিয়ানের পিলগ্রিমস প্রগ্রেসও রচিত হয়েছে জেলের মধ্যে। ম্যাক্সিম গোর্কি মা লিখেছিলেন রাজনৈতিক নির্বাসনে থেকে। এগুলো বিশ্ব888sport live footballের মহৎ সংযোজন। 888sport live footballের বাইরে সমাজনীতি, রাজনীতি, দর্শন প্রভৃতি বিষয়ক বইও জেলে বসে লেখা হয়েছে, যেগুলো পরবর্তীকালে
বিশ্বমানব-মুক্তি বা মানবসভ্যতা দর্শনের নতুন পথ বাতলে দিয়েছে। যেমন, ইতালির বিখ্যাত বুদ্ধিজীবী আন্তনিও গ্রামসির প্রিজন নোট দিনপঞ্জি-আকারে লেখেন জেলখানায় বসে। অবিভক্ত ভারতে জওহরলাল নেহ্রু জেলখানায় বসে লিখেছেন গুরুত্বপূর্ণ কিছু লেখা। আফ্রো-আমেরিকান রাজনৈতিক নেতা ও মানবাধিকারকর্মী মালকম এক্স তাঁর বিখ্যাত আত্মজীবনীর সূচনা করেন তাঁর সাত বছরের কারাজীবনে। মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র কারাগারে বসে লেখেন বার্মিংহাম জেল। মার্কো পলো তাঁর জগদ্বিখ্যাত 888sport slot gameকাহিনি লেখেন জেলে বসে। বিশ্বের উল্লেখযোগ্য জেল888sport live football বা রাজনৈতিক ভাষ্যের অতিসাম্প্রতিক সংযোজন হলো বঙ্গবন্ধুর তিনটি গ্রন্থ : অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা ও আমার দেখা নয়াচীন।
পাকিস্তানি শাসনের ২৪ বছরের মধ্যে ১২ বছরই বঙ্গবন্ধুকে কারাজীবন কাটাতে হয়েছে। ১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধুকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়ার সময় তৎকালীন পাকিস্তান সরকার কারাগারে লেখা বঙ্গবন্ধুর দুটো দিনপঞ্জি জব্দ করে। বঙ্গবন্ধুর ১৯৬৬ থেকে ১৯৬৯ সময়কালে রাজবন্দি হিসেবে 888sport app কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি থাকাকালে এ-দুটি দিনপঞ্জি তিনি লিখে যেতে পেরেছেন। ২০০৯ সালে বঙ্গবন্ধু-কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি তত্ত্বাবধানে ও উদ্যোগে এবং পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সহায়তায় দিনপঞ্জি দুটি উদ্ধার করা হয়, যা এখন পৃথক দুটি গ্রন্থ আকারে প্রকাশিত।
২০১২ সালে ইউপিএল থেকে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় অসমাপ্ত আত্মজীবনী। এখানে মোটা দাগে বঙ্গবন্ধুর শৈশব-কৈশোর, পরিবারের কথা, ছাত্রজীবনের আন্দোলন, পাকিস্তান-আন্দোলন, ভাষা-আন্দোলন, স্বাধিকার-আন্দোলন, বাঙালির প্রতিটি গণতান্ত্রিক সংগ্রামের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নানা চক্রান্ত, দুরভিসন্ধি ইত্যাদি বিষয় উঠে এসেছে। ২০১৭ সালে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয় কারাগারের রোজনামচা। এখানে বঙ্গবন্ধুর
১৯৬৬-৬৮ কালপর্বের কারা888sport sign up bonus স্থান পেয়েছে। ভাষা-আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা অর্জনের সোপানগুলির কথা বঙ্গবন্ধুর ভাষ্যে আমরা জানতে পারি। অবিভক্ত ভারতের ইতিহাস, এই উপমহাদেশের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, দেশভাগ, হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক, 888sport apps নামক রাষ্ট্রের জন্মকথা প্রভৃতি বিষয়-সংশ্লিষ্ট ইতিহাস-চর্চায় অত্যন্ত উল্লে­খযোগ্য সংযোজন এ-দুটি গ্রন্থ। একজন ছাত্রনেতার মহান রাজনৈতিক নেতা ও একটি জাতির প্রধান রূপকার হয়ে ওঠার ইতিহাস এখানে লিপিবদ্ধ আছে।
তবে বর্তমান গদ্যে আমি আমার আলোচনা আমার দেখা নয়াচীন গ্রন্থের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখব। গ্রন্থটি অমর 888sport cricket BPL rateে গ্রন্থমেলা ২০২০-এ বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয়েছে। গ্রন্থমেলার উদ্বোধন-মঞ্চে এর মোড়ক উন্মোচন করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকাশের দিক থেকে আমার দেখা নয়াচীন তৃতীয় হলেও রচনার দিক থেকে এটিই বঙ্গবন্ধুর প্রথম লেখা। ১৯৫৪ সালে কারাগারে রাজবন্দি থাকাকালে এই 888sport sign up bonusনির্ভর 888sport slot gameকাহিনিটি তিনি লেখেন। ১৯৫২ সালের ২ থেকে ১২ অক্টোবর চীনের পিকিংয়ে এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক শান্তি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তরুণ রাজনৈতিক নেতা শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। মনে রাখা প্রয়োজন, ১৯৪৯ সালে কমিউনিস্ট চীনের আত্মপ্রকাশ ঘটে, ঠিক এরপরই বঙ্গবন্ধুর এই চীন সফরের ঘটনা। দ্বিতীয়বার তিনি চীন সফরে যান ১৯৫৭ সালে পাকিস্তান সংসদীয় দলের নেতা হিসেবে। তখন তিনি 888sport live chat, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতি দমন ও ভিলেজ-এইড দফতরের মন্ত্রী। তবে সে-888sport slot gameের কোনো লেখা পাওয়া যায়নি। এই বইয়ে আমরা দেখি, বঙ্গবন্ধু পঞ্চাশের দশকের শুরুর দিকেই ভবিষ্যদ্বাণী করেন, ‘চীন একটি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হবে।’ আজ তাঁর সেই দূরদৃষ্টি আমাদের বিস্মিত করে।
গ্রন্থের শুরুতেই বঙ্গবন্ধু এই সম্মেলনে যোগদানের কারণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘অনেকে বলতে পারেন কম্যুনিস্টদের শান্তি সম্মেলনে আপনারা যোগদান করবেন কেন? আপনারা তো কম্যুনিস্ট না। কথাটা সত্য যে, আমরা কম্যুনিস্ট না। তথাপি দুনিয়ায় আজ যারাই শান্তি চায়, তাদের শান্তি সম্মেলনে আমরা যোগদান করতে রাজি। রাশিয়া হউক, আমেরিকা হউক, ব্রিটেন হউক, চীন হউক – যে-ই শান্তির জন্য সংগ্রাম করবে তাদের সাথে আমরা সহস্র কণ্ঠে আওয়াজ তুলতে রাজি আছি, ‘আমরা শান্তি চাই’। কারণ যুদ্ধে দুনিয়ার যে ক্ষতি হয় তা আমরা জানি ও উপলব্ধি করতে পারি; বিশেষ করে আমার দেশে – যে দেশকে পরের দিকে চেয়ে
থাকতে হয়, কাঁচামাল চালান দিতে হয়।’…
(পৃ ১৯)
এরপরেই তিনি স্বাধীন দেশ হিসেবে পাকিস্তান তৈরি হওয়ার পরও আমাদের অতৃপ্তি এবং কষ্ট কোথায় সেটা বোঝাতে বলছেন, ‘কথা সত্য, ‘পাকিস্তান’ নামটা পেয়েছি কিন্তু; আর কতটুকু স্বাধীন হয়েছি আপনারা নিজের দিকে তাকালেই বুঝতে পারবেন।’ (পৃ ১৯-২০)
তবে এই সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু নিজেদের দুরবস্থার কথা বলেননি। তিনি বিশ্বের কাছে সেসব উপস্থাপন করে ছোট হতে চাননি। তিনি বলেন : ‘মুসলিম লীগ সরকারের আমলে দেশের যে দুরবস্থা হয়েছে তা প্রকাশ করলে দুনিয়ার লোকের কাছে আমরা ছোট হয়ে যাবো।’
আত্মমর্যাদাবোধের পাশাপাশি তাঁর বিনয়ের দৃষ্টান্তও আমরা পাই। তিনি আকাশপথ থেকে ভূদৃশ্যের চমৎকার বর্ণনা দিচ্ছেন – ‘হংকংয়ের কাছে যখন গেলাম তখন মনে হতে লাগল, আহা দূর থেকে দেখতে কী সুন্দর দেশ! পাহাড়ের উপর থেকে আস্তে আস্তে একটা দেশ নিচের সমুদ্র পর্যন্ত নেমে আসছে, মাঝে মধ্যে নদী। একটা বাড়ি অনেক উপরে, একটা বাড়ি অনেক নিচে। সমুদ্রের পাড়ে জাহাজ ভিড়ে আছে, কোনো কোনো জাহাজ আবার ছেড়ে যাচ্ছে। আবার ছোট ছোট লঞ্চগুলি এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছে।’ (পৃ ২৪-২৫) এরপরই বলছেন : ‘আমি লেখক নই, আমার ভাষা নাই, তাই সৌন্দর্যটা অনুভব করতে পারছি, কিন্তু গোছাইয়া লেখতে পারছি না। পাঠকবৃন্দ আমায় ক্ষমা করবেন।’ (পৃ ২৫)
একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু এই 888sport slot gameকাহিনিতে গণচীনের শাসনব্যবস্থার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক রাজনীতির একটা তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেন। অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিবর্গের বক্তব্যের সারকথা তুলে ধরেন। তিনি ইরানের প্রসঙ্গে জানাচ্ছেন, ‘একজন বক্তৃতায় বললেন যে, সমস্ত ইরানের সম্পত্তির মালিক এক হাজার ফ্যামিলি। আর সকলে দিনমজুর।’ উত্তর কোরিয়া প্রসঙ্গে জানাচ্ছেন, আমেরিকা কীভাবে তাদের ওপর জীবাণু বোমা ছেড়েছে। জাপানের প্রসঙ্গে তাঁদের এক প্রতিনিধির বরাত দিয়ে জানাচ্ছেন, ‘লক্ষ লক্ষ জারজ সন্তান পয়দা করেছে আমেরিকানরা। আজ পর্যন্ত আমেরিকান সৈন্য আমাদের দেশে পড়ে আছে, আমাদের দেশকে রক্ষা করার নামে আমেরিকানদের যাবতীয় খরচ জাপানি জনসাধারণকে বহন করতে হয়।’ (পৃ ৪১) আমেরিকা থেকে ৩০ জন প্রতিনিধি এসেছেন। তাঁদের নেতার কথাও তিনি তুলে ধরেছেন : ‘আমেরিকার জনসাধারণ আজ আর যুদ্ধ চায় না, তবে শাসকগোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থের জন্য যুদ্ধ বাঁধাতে ব্যস্ত।’ এভাবে বঙ্গবন্ধু সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী ৩৭টি দেশ থেকে বেশ কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিবর্গের বক্তব্যের মূলকথা তুলে ধরেছেন।
বঙ্গবন্ধু নিজেও বক্তৃতা করেন। বঙ্গবন্ধু এই সম্মেলনে বাংলা ভাষায় বক্তৃতা করেন। এর কারণ হিসেবে তিনি বইতে লেখেন : ‘… আমিও বক্তৃতা করলাম বাংলা ভাষায়। ভারতবর্ষ থেকে বক্তৃতা করলেন মনোজ বসু বাংলা ভাষায়। বাংলা আমার মাতৃভাষা, মাতৃভাষায় বক্তৃতা করাই উচিত। কারণ, পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলনের কথা দুনিয়ার সকল দেশের লোকই কিছু কিছু জানে। … দুনিয়ার সকল দেশের লোকই যার যার মাতৃভাষায় বক্তৃতা করে। শুধু আমরাই ইংরেজি ভাষায় বক্তৃতা করে নিজেদের গর্বিত মনে করি।’
এমনকি যাত্রাপথে যে-দেশে যাত্রাবিরতি দিয়েছেন, সেখানকার রাজনৈতিক অবস্থার সম্পর্কেও কিছু কথা তুলে ধরেছেন। পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে চলে আসে 888sport appsের কথাও। যাওয়ার পথে প্রথম যাত্রাবিরতি পড়ে মিয়ানমারে। মিয়ানমার সম্পর্কে অনেক কথা তিনি বলেছেন। একটি জায়গায় বলছেন, ‘জনসমর্থন ছাড়া বিপ্লব হয় না। কম্যুনিস্টদের জনসমর্থন তত নাই। কারণ তারা মাঝে মাঝে রেঙ্গুন শহরের পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। যাকে তাকে ধরে নিয়ে টাকা আদায় করে, আর যে অঞ্চল তাদের অধিকারে যায় সেই অঞ্চলের জনগণের কাছ থেকে অর্থ ও খাদ্য আদায় করে। বোধহয় গভীর জঙ্গলে থাকে তারা, তাই জোগাড় করতে পারে না খাদ্য ও 888sport app, যা তাদের বিশেষ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, এটুকু জানবার সুযোগ হয়েছে আমার।’ (পৃ ২৪)
এরপরের যাত্রাবিরতি হয় হংকংয়ে। হংকং সম্পর্কে তিনি আমাদের জানাচ্ছেন : ‘হংকং ইংরেজি কলোনি, ইংরেজই শাসন করে চালায়, তবে হংকংয়ের বাসিন্দাদেরও প্রতিনিধি থাকে। একদিকে বিরাট বিরাট দালানকোঠা আর ব্যবসাবাণিজ্য, আর একদিকে লক্ষ লক্ষ গরিব রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করছে। সকলের চেয়ে বড় আয় 888sport promo code ব্যবসায়। তাই দিয়েই বহুলোক সংসার চালায়।’
হংকং থেকে নয়াচীনের পথে যাত্রা করেন ট্রেনে। তিনি সুযোগ পেলেই অবস্থানরত স্থান নিয়ে ছোট ছোট করে পাঠকদের কিছু না কিছু জানিয়ে দিচ্ছেন। যেমন স্টেশনে দাঁড়িয়ে জানাচ্ছেন যে, ‘ছোট স্টেশন। অনেক বই পাওয়া যায়।’ ট্রেন ছেড়ে দেওয়ার পর জানাচ্ছেন, ‘আমরা ক্যান্টন শহরে যাচ্ছি। এই শহরটা খুবই সুন্দর, অন্যতম শ্রেষ্ঠ শহর। ১৯৪৯ সালের শেষের দিকে লাল চীন সৈন্যবাহিনী এই শহর দখল করে এবং চিয়াং কাইশেক ফরমোজা দ্বীপে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।’ (পৃ ৩০) এরপর ট্রেন চলতে শুরু করলে বঙ্গবন্ধু ট্রেনের ভেতরের চিত্র ও নিয়ম সম্পর্কে খুটিনাটি বিষয় জানাচ্ছেন। তিনি এও জানাচ্ছেন যে, ‘কম্যুনিস্ট দেশ বলে সকল সমান হয়ে যায় নাই। ট্রেনে দু’রকম ক্লাস আছে, ‘নরম ক্লাস আর শক্ত ক্লাস’। ভাড়ায়ও ব্যবধান আছে। প্রায় দু’গুণ।’ (পৃ ওই)
এ-পর্যায়ে লক্ষ করছি বঙ্গবন্ধু অভ্যর্থনা জানাতে আসা চীনা শিশুদের আদর করছেন, ওদের ভাষা বুঝতে পারছেন না বলে আফসোস হচ্ছে তাঁর। তিনি হোটেলরুমে ফিরে দুয়েকটি চীনা শব্দ শিখে নিচ্ছেন যাতে সময়মতো চীনাদের সামনে বলতে পারেন। তিনি চীনের আর্থ-সামাজিক-কৃষি সকল বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে
নেওয়ার চেষ্টা করছেন। সবকিছুর সঙ্গে নিজের মন্তব্য জুড়ে দিচ্ছেন, যা থেকে বঙ্গবন্ধুর জ্ঞান ও প্রজ্ঞা সম্পর্কে আমরা ধারণা পেতে পারি।
বঙ্গবন্ধুর সূক্ষ্ম রসবোধ আমাদের প্রায়ই চোখে পড়বে। তিনি সফরসঙ্গী তফাজ্জল হোসেন (মানিক মিয়া) সম্পর্কে একটি জায়গায় বলছেন, ‘মানিক ভাই ভালো লিখতে পারেন, কিন্তু এত যে খেতে পারেন তা আগে জানতাম না। … জিজ্ঞাসা করলাম, মানিক ভাই পেটে কী হলো? বললেন দুর্ভিক্ষ হয়েছে।’ হংকংয়ের রাস্তায় ঘটে যাওয়া এই ঘটনাটিও আমাদের মাঝে হাসির উদ্রেক ঘটায়। বঙ্গবন্ধু লিখছেন : ‘আতাউর রহমান সাহেব, মানিক ভাই, ইলিয়াস ও আমি রাস্তায় বেড়াতে বেরিয়েছি। হঠাৎ ১৬/১৭ বৎসরের একটা মেয়ে আতাউর রহমান সাহেবের কোটে একটা গোলাপ ফুল লাগাইয়া দিতে অগ্রসর হয়। মেয়েটি কলারে হাতও দিয়াছে, খান সাহেব হঠাৎ চমকাইয়া উঠলেন। পরে ধাক্কা দিয়া ফুল ছুড়ে ফেলে রাগে ঘোঁতঘোঁত করতে করতে এগিয়ে চললেন। মেয়েটা আশ্চর্য হয়ে দূরে দাঁড়িয়ে রইল। আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, আমাদের মতো যুবকদের দিকে নজর না পড়ে আপনার ওপর পড়ার কারণ কী? আতাউর রহমান সাহেব তো রাগে অস্থির, আর মানিক ভাই তো তার ‘রাজনৈতিক মঞ্চের’ মতো ঘুরাইয়া ফিরাইয়া ওনার পিছনে লাগলেন।’ (পৃ ২৭-২৮)
লক্ষ করার বিষয়, বঙ্গবন্ধু হংকংয়ের পথের যৌনকর্মীদের তাচ্ছিল্য করে দেখছেন না। তিনি বলছেন, ‘এই মেয়েদের দোষ দিয়ে লাভ কী? এই সমাজব্যবস্থা। বাঁচবার জন্য এরা সংগ্রাম করছে, ইজ্জত দিয়ে পেটের ভাত জোগাড় করছে। হায়রে মানুষ!’ তিনি এভাবেই সবকিছুর কেন্দ্রে সমাজব্যবস্থাকে বসিয়ে মূল সমস্যার দিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে আহ্বান জানাচ্ছেন। আমরা অনেক সময় কোনো বিষয়কে বাইরে থেকে দেখি, বঙ্গবন্ধু সবকিছুকে মূল থেকে চিহ্নিত করতে পছন্দ করতেন। তিনি যেমন 888sport slot gameপথের বিরতিতে রেঙ্গুনে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে আমাদের জানাচ্ছেন যে, রাষ্ট্রদূতের অফিসকক্ষ রঙিন ছবি দিয়ে পরিপাটি করে সাজানো। সব ছবি তাঁর এবং তাঁর আত্মীয়স্বজনের। বঙ্গবন্ধু এই অপ্রয়োজনীয় খরচের হেতু খোঁজার চেষ্টা করছেন।
বইয়ের ভূমিকা লিখেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তাঁর ভূমিকায় আমরা বইটি সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারি। তিনি একটি জায়গায় জানাচ্ছেন, ‘চীন বর্তমান বিশ্বে অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তিশালী দেশ হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। ১৯৫২ সালে চীন 888sport slot gameের সময় গভীর দৃষ্টি নিয়ে নয়াচীন পর্যবেক্ষণ করেছিলেন এবং ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, সে-কথাই বাস্তবে রূপ পেয়েছে। 888sport slot gameের সময় আলাদা একটা খাতায় তিনি নোট নিয়েছিলেন সে খাতাটাও পেয়েছি এবং সেগুলি বইয়ের শেষাংশে দেওয়া আছে।’ (পৃ ১৬) উল্লেখ্য, গ্রন্থটি সম্পাদনা করেছেন প্রাবন্ধিক-চিন্তক শামসুজ্জামান খান। বইয়ের বিশেষ সংযোজন হলো বঙ্গবন্ধুর লিখিত ডায়েরির কয়েকটি পাতা এবং সফরের ছবি।