আবুল আহসান চৌধুরী
অন্নদাশঙ্কর রায়ের (১৯০৪-২০০২) পরিবার বংশপরম্পরায় বহুকাল ধরে উৎকলের প্রবাসী বাঙালি। তিনিও জন্মেছিলেন সেখানে – দেশীয় রাজ্য ঢেঙ্কানালে। তাঁর পূর্বপুরুষের বাস ছিল পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায় ভাগীরথীর তীরে কোতরং গ্রামে। পূর্ববঙ্গের সঙ্গে তাই তাঁদের কোনোকালেই যোগাযোগ ছিল না, তা সম্ভব হলো তাঁর চাকরির সুবাদে। ১৯৩১-এ বাঁকুড়া থেকে পদোন্নতি পেয়ে অন্নদাশঙ্কর প্রথম পূর্ববঙ্গে আসেন নওগাঁয় মহকুমা শাসক হিসেবে। ১৯৩৩-এ নওগাঁ থেকে বদলি হয়ে প্রথমে যেতে হয় চট্টগ্রাম, তারপর 888sport appয়। আবার মহকুমা শাসকের দায়িত্ব নিয়ে বাঁকুড়ায় যান ১৯৩৪-এ। পরের বছর, ১৯৩৫-এ, ওই একই পদে যোগ দেন কুষ্টিয়ায়। ১৯৩৭-এ রাজশাহীর জেলা-প্রশাসনের দায়িত্ব বর্তায় তাঁর ওপরে – কিন্তু বিশেষ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলা সরকারের অযৌক্তিক বিরাগভাজন হওয়ায় আবার ওই বছরেই চট্টগ্রামে যেতে হয় একধাপ নিচু পদে অতিরিক্ত জেলা শাসক হিসেবে। তিন বছরের মাথায় (১৯৪০) জজিয়তির দায়িত্ব নিয়ে কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা জজ হন।
এর পরের পাঁচ বছর পশ্চিমবঙ্গের নানা জায়গায় জেলা জজের দায়িত্ব পালনশেষে ১৯৪৬-এ ওই একই পদে শেষবারের মতো পূর্ববঙ্গে আসেন, ময়মনসিংহে। দেশভাগের মাত্র সপ্তাহখানেক আগে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ার জেলা জজ হিসেবে বদলি হন। দেশভাগ পর্যন্ত তাঁর আঠারো বছরের চাকরিজীবনে প্রায় দশ বছর অর্থাৎ অর্ধেকেরও বেশি সময় কেটেছে পূর্ববঙ্গে। এই বঙ্গে সাতটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা ও মহকুমায় কাজ করেছেন। তাঁর পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনজনের জন্মও এই ভূখণ্ডে। পূর্ববঙ্গে তাঁর 888sport live footballচর্চার ফসলও নগণ্য নয়। তাঁর বিদেশিনী স্ত্রী অ্যালিস ভার্জিনিয়া অর্নডর্ফ – পরে যিনি লীলা রায় নামে পরিচিত – তাঁর বাংলা-শেখার সূচনাও এখানেই।
নানা 888sport sign up bonusর সূত্রে তিনি বাঁধা ছিলেন এই বঙ্গের সঙ্গে। এখানকার মানুষ ও প্রকৃতি তাঁকে চিরকালই আকৃষ্ট ও মুগ্ধ করেছে। এরই ফলে একধরনের ভালোবাসা ও দুর্বলতা গড়ে ওঠে তাঁর মধ্যে। তাই বহুকাল আগে – তা প্রায় ষাট বছর হবে – তাঁর একটি লেখায় বাসনা পোষণ করেছিলেন এই বলে : ‘আমার শেষজীবন কাটাতে চাই কুষ্টিয়া জেলায়, বাংলা দেশের হৃদয় যেখানে।১ চোদ্দো বছর পর ওই একই কথার প্রতিধ্বনি শোনা গেল একটি বইয়ের ‘শুভকামনা’য় : ‘কুষ্টিয়ায় আমার যৌবনের কয়েকটি 888sport app download for androidীয় বছর কেটেছে। সেখানকার মাটি, সেখানকার মানুষ, সেখানকার মানুষের মুখের ভাষা ও অন্তরের প্রীতি আমি কি ভুলতে পারি? এককালে ভাবতুম সরকারী কাজ থেকে অকালে অবসর নিয়ে সেইখানেই 888sport live footballসাধনার আসন পাতব। রবীন্দ্রনাথের শিলাইদা সেখানে, লালন ফকিরের আস্তানা সেখানে, বাউলদের মিলনকেন্দ্র সেখানে। সুতরাং আমারও কুটীর হবে সেখানে। কিন্তু তা তো হবার নয়!’২ আবার সাতাশ বছর বাদে এই বঙ্গ নিয়ে 888sport sign up bonus-888sport app download for android-সংগ্রাম-পরিণতি সম্পর্কে গদ্য-পদ্য নানা রচনা সংকলিত হয়ে তাঁর যে-বই এদেশ থেকে বেরোল, তার নাম দিলেন আমার ভালোবাসার দেশ। বইয়ের সম্পাদক সুরজিৎ দাশগুপ্ত একটি হ্রস্ব বাক্যে এই বই ও তাঁর লেখক সম্পর্কে যে-অভিধা প্রয়োগ করেছেন তা-ই তাঁর শাশ্বত পরিচয় : ‘এই বই এক অনন্য বাঙালির 888sport appsের প্রতি অসীম ভালোবাসার চিহ্ন।’৩
দুই
পূর্ববঙ্গ ও তার মানুষের প্রতি অন্নদাশঙ্কর রায়ের ছিল অন্তরের গভীর টান। পূর্ববঙ্গের দুঃসংবাদে বিচলিত হয়েছেন, সাধ্যমতো লেখনীর মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন, একাত্ম হয়েছেন, সংহতি প্রকাশ করেছেন।দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশভাগ – সেই সঙ্গে বাংলা-ভাগ, অন্তর থেকে কখনোই তিনি মেনে নেননি। দেশভাগ-দাঙ্গা-দেশান্তর তাঁর অন্তরে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে, হন মর্মাহত। পূর্বদেশে বাঙালির ওপর দমন-পীড়ন-নিগ্রহ – বাঙালির ভাষা-888sport live football-সংস্কৃতির ওপর পশ্চিমদেশিদের আগ্রাসন – বাঙালির জাতিসত্তাকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র – এসব প্রসঙ্গে ‘ভিনদেশি’ বিশুদ্ধ বাঙালি অন্নদাশঙ্কর বিবেকের নির্দেশে – 888sport live chatীর দায়বদ্ধতা নিয়ে – মানবিক ভূমিকা পালনের প্রেরণায় প্রতিবাদে মুখর হন। ভাষা-আন্দোলনের কালে, সেই ১৯৫২ সালেই, ‘888sport appর কারবালা’ নামে লিখেছিলেন : ‘প্রাণ দিল যারা ভাষার জন্য/ জয় কি হবে না তাদের?/ জয় তো তাদের হয়েই রয়েছে/ জনতা পক্ষে যাদের।’ এই 888sport cricket BPL rateের ঘটনাকে 888sport app download for android ও নতুন তাৎপর্য দেওয়ার জন্যে পরের বছরেই (১৯৫৩) অন্নদাশঙ্করের পরিকল্পনা ও উদ্যোগে শান্তিনিকেতনে আয়োজিত হয় ‘888sport live footballমেলা’ – প্রকৃতপক্ষে যা ছিল দুই বাংলার 888sport live footballিক-মিলনমেলা।
888sport appsের স্বার্থসংরক্ষণ ও সুরক্ষায় অন্নদাশঙ্কর আগাগোড়া জোর-সওয়াল করেছেন – এতে কখনো কখনো তাঁকে মহলবিশেষের বিরূপতা সইতে হয়েছে। পূর্ববঙ্গের পীড়িত ও বিপন্ন লেখকের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়ে তাঁকে অন্নদাশঙ্কর ছাড়া আর কে আশ্রয় ও ভরসা দেবেন – 888sport live chatীর স্বাধীনতার প্রশ্ন তুলে আর কে সমর্থন জানাবেন! ফারাক্কার বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও গঙ্গার জলবণ্টনে 888sport appsের ন্যায্য হিস্যা প্রদানের জন্যে অন্নদাশঙ্কর ছাড়া আর কে কলম ধরবেন! সীমান্তের কথিত অনুপ্রবেশ সমস্যা নিয়ে মানবিক দৃষ্টিতে আন্তর্জাতিক আইনের প্রশ্ন তুলে তিনি তাঁর মতপ্রকাশ করেন – এতে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক শক্তি ক্ষুব্ধ হয়, ফলে তাঁর জীবন বিপন্ন হয়ে ওঠে – নিরাপত্তার জন্যে তাঁর আবাসে সরকারের পক্ষ থেকে পুলিশ মোতায়েন করতে হয়।
888sport appsের প্রতি অন্নদাশঙ্কর রায়ের ছিল চিরকালের আকর্ষণ ও অনুরাগ। এর পেছনে রয়েছে এই ভূখণ্ডের অনেক প্রিয় মানুষের সঙ্গ-সান্নিধ্য ও তাঁর পেশাজীবনের অমলিন স্নিগ্ধ 888sport sign up bonus। দেশভাগ তাঁকে গভীর আঘাত ও দুঃখ দিয়েছিল। ‘তেলের শিশি ভাঙল বলে/ খুকুর পরে রাগ করো/ তোমরা যে সব ধেড়ে খোকা/ বাঙলা ভেঙে ভাগ করো!/ তার বেলা?’ – এই ছড়ায় তাঁর সেই বেদনার দীর্ঘশ্বাস প্রচ্ছন্ন থাকেনি। তাই পূর্ববঙ্গের মানুষ যখন মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন রাষ্ট্র-রচনায় ব্রতী হয়, অন্নদাশঙ্কর তখন সক্রিয় সমর্থন, সহায়তা ও সাহস জুগিয়েছেন। সেই ক্রান্তিলগ্নে মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের সহায়তার জন্যে অর্থসংগ্রহ ও মানবিক সাহায্য প্রদানে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। 888sport appsের লেখক-888sport live chatী-বুদ্ধিজীবীদের জন্যেও সম্ভাব্য সবকিছুই করেন। পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংস অত্যাচারের প্রতিবাদে, বাঙালি জনগণের বিপন্নতায় সহানুভূতি জানিয়ে, বাঙালির স্বাধীনতার পক্ষে কলম ধরেন এই বিবেকি মানুষটি। মুক্তির লক্ষ্যে বাঙালির এই মহাজাগরণের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (১৯২০-৭৫) সংগত কারণেই অন্নদাশঙ্কর রায়ের মনোযোগের কেন্দ্রে অবস্থান করেন। তাঁর এই মুজিব-বীক্ষণ তিন পর্বে বিন্যস্ত : এক. মুক্তিযুদ্ধের কালপর্ব, দুই. স্বাধীন দেশের সময়কাল, তিন. লোকান্তরের পরপর্ব।
তিন
১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ – পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালি জনগোষ্ঠীর দুই যুগের ধারাবাহিক সংগ্রাম ছিল জাতিগত নিপীড়ন, রাজনৈতিক বঞ্চনা, অর্থনৈতিক শোষণ, ভাষা ও সাংস্কৃতিক দলনের বিরুদ্ধে। এই সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান – প্রথম পর্বে যৌথ ও উত্তরপর্বে এককভাবে।তার প্রকাশ ঘটে আটচল্লিশ ও বায়ান্নোর ভাষা-আন্দোলনে, চুয়ান্নোর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে, বাষট্টির শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট বাতিলের আন্দোলনে, তেষট্টি-চৌষট্টি থেকে স্বৈরসামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামে, ছেষট্টির বাঙালির মুক্তিসনদ ছয় দফা দাবি পেশে, আটষট্টির কথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায়, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে, সত্তরের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একক 888sport free betগরিষ্ঠতা লাভে, পাক-সামরিক-জান্তার ক্ষমতা-হস্তান্তর না-করে গণহত্যার পথ-অবলম্বনে এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে একাত্তরে বাঙালির সার্বিক মুক্তির লড়াইয়ে। পূর্ববঙ্গের এই ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে নানা সূত্রে অবহিত ছিলেন অন্নদাশঙ্কর রায়। কারো কারো সঙ্গে তাঁর চিঠিপত্রে যোগাযোগ ছিল – কলকাতায় পূর্ববঙ্গের লেখক-সাংবাদিক-888sport live chatী-শিক্ষাবিদ-বুদ্ধিজীবী যাঁরা আসতেন, তাঁদের অনেকেই অন্নদাশঙ্করের সঙ্গে দেখা করে যেতেন। কলকাতার নামি দৈনিক পত্রিকায় 888sport app-প্রতিনিধির পাঠানো সংবাদও একসময় পর্যন্ত নিয়মিত ছাপা হতো। এছাড়া ছিল বিদেশি গণমাধ্যমের নানা সূত্র। তাই পূর্ববঙ্গের খবর জানার কম-বেশি সুযোগ ছিল। তাঁর জীবনীকার লিখছেন : ‘এইসব যোগাযোগের ফলে অচিরে অন্নদাশঙ্কর হয়ে উঠতে লাগলেন দুই বাংলার ঐক্য ও সংহতির 888sport live chatিত প্রতীক, জীবন্ত প্রতিষ্ঠান।’৪ এই সূত্র ধরেই ১৯৭১-এ অন্নদাশঙ্কর হয়ে ওঠেন 888sport appsের মহান মুক্তিযুদ্ধের এক প্রবল সমর্থক ও মরমি সহায়ক – আর 888sport apps নামক মহাকাব্য যাঁর উদ্যোগ ও প্রেরণায় রচিত হয়, সেই ‘রাজনীতির কবি’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভূমিকা ও অবি888sport app download for androidীয় নেতৃত্ব তাঁকে মুগ্ধ করে এবং তিনি হয়ে ওঠেন তাঁর ‘হিরো’।
চার
888sport appsের অভ্যুদয় নিয়ে অন্নদাশঙ্কর রায় এক লেখায় বলেছিলেন : ‘সাতচল্লিশ সালের আগে আমরা কেউ স্বপ্নেও ভাবিনি যে বঙ্গ আবার দু’ভাগ হবে। দুই ভাগের নাম পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গ। … এরপর কেটে গেল চব্বিশ বছর। আমরা যারা এপারে বাস করি তারা ভাবতেই পারিনি যে ওপারে একটা মুক্তিযুদ্ধ বাধবে। আমরা খবরই রাখতুম না যে শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর সহকর্মীদের জিজ্ঞাসা করবেন, ‘আমাদের দেশ যখন স্বাধীন হবে তখন তার নাম কী হবে?’ এর উত্তরে একজন বলবেন, ‘পুব বাংলা’ আর একজন বলবেন, ‘পাক বাংলা’। মুজিবুর রহমান তখন বলেন, ‘না, আমাদের দেশের নাম হবে 888sport apps।’ তিনিই স্থির করেন, জাতীয় সংগীত হবে ‘আমার সোনার বাংলা’। 888sport apps নামটির একটি ঐতিহ্য ছিল আর সোনার বাংলা গানটির একটি জাদু ছিল। অমন প্রেরণাদায়ক নাম ও গান আর ছিল না। লক্ষ লক্ষ মানুষ অকাতরে প্রাণ দিল এই প্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে। নয় মাস তুমুল যুদ্ধের পর দেশ যখন স্বাধীন হল তখন তার নাম রাখা হল গণপ্রজাতন্ত্রী 888sport apps।’৫
888sport appsের মুক্তিসংগ্রামের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতে গিয়ে অন্নদাশঙ্কর আরো একটু খোলাসা করে বলেছেন : ‘একটা ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র কেমন করে ভাষার ইস্যুতে পঁচিশ বছরের মধ্যে দু’ভাগ হয়ে গেল তার কোনও নজীর ইতিহাসে নেই। … পার্লামেন্টে পূর্ব পাকিস্তানের সিট 888sport free bet পশ্চিম পাকিস্তানের 888sport free betর চেয়ে বেশি। দেখা গেল পূর্ব পাকিস্তানের আওয়ামী লীগ সমগ্র পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় পার্টি। তার নেতা হলেন শেখ মুজিবুর রহমান। পার্লামেন্টারি গণতন্ত্রের প্রথা অনুসারে তাঁরই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা। … কিন্তু মুজিবকে প্রধানমন্ত্রী না করায় অথবা পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধিকার না দেওয়ায় বিদ্রোহ ঘনিয়ে ওঠে। একাত্তর সালের সাতই মার্চ মুজিব ঘোষণা করেন, এবারকার সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। কোনও রকম রফা নিষ্পত্তি না করে সৈন্য সমাবেশ করায় আন্দোলন হিংসার পথ নেয়। পঁচিশে মার্চ থেকে স্বাধীনতার সংগ্রাম শুরু হয়ে যায়। গ্রেপ্তার হওয়ার পূর্বে মুজিব স্বাধীনতা ঘোষণা করে যান। … শেখ মুজিব তাঁর দেশের নামকরণ করেছিলেন 888sport apps। তাঁর বিশিষ্ট অনুগামীরা অস্থায়ী 888sport apps সরকার গঠন করেন ও তৎকালীন নদীয়া সীমান্তের মেহেরপুর মহকুমার একটি গ্রামকে মুজিবনগর নাম দিয়ে সেই অস্থায়ী সরকারের রাজধানী করেন। … সেই সরকারের প্রেসিডেন্ট ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর অনুপস্থিতিতে প্রেসিডেন্টের কাজ চালাতেন ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম। প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তাজউদ্দিন আহম্মদ। …’৬
এদিকে অন্নদাশঙ্কর রায় মুক্তিযুদ্ধের কাজে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন : মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে ও সমর্থনে পত্র-পত্রিকায় লিখে, সভা-সমিতিতে অংশগ্রহণ করে, শরণার্থী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তার জন্যে অর্থ সংগ্রহ করে, দেশছাড়া লেখক-888sport live chatী-শিক্ষাবিদ-বুদ্ধিজীবীদের যথাসম্ভব আশ্রয় ও কর্মের ব্যবস্থা করে। এ-কাজে স্ত্রী লীলা রায়ও ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে অন্নদাশঙ্কর ভারতে আশ্রিত 888sport appsের বুদ্ধিজীবী, শরণার্থী ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যে যে নৈতিক ও মানবিক সমর্থন জুগিয়েছিলেন – ভারতের আর কোনো বুদ্ধিজীবী তাঁর মতো এত আন্তরিক, স্বতঃস্ফূর্ত ও আত্মিকভাবে 888sport appsের মুক্তিসংগ্রামের পক্ষে সমর্থন, সহায়তা ও সহমর্মিতা দেখিয়েছেন – আপন অন্তরের তাগিদে দিনের পর দিন এ-বিষয়ে লিখে গেছেন – এমন দৃষ্টান্ত মেলে না।
মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বঙ্গবন্ধু তখন পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি – ফাঁসির আদেশ হয়েছে – তাঁকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলার জন্যে তাঁর চোখের সামনেই জেল-প্রাঙ্গণে খোঁড়া হয় কবর। যে-কোনো সূত্রেই হোক এই খবর দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে – বঙ্গবন্ধুর জীবন বিপন্ন। এ-নিয়ে পূর্ববঙ্গের মানুষের মনে নিদারুণ শঙ্কা ও প্রবল ক্ষোভ জাগে – পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি – বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক লেখক-888sport live chatী-বুদ্ধিজীবী এই খবরে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠেন। একদিন কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় এসে এ-বিষয়ে অন্নদাশঙ্করকে সবিস্তার জানান এবং কলকাতার ময়দানে আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত থাকতে তাঁকে অনুরোধ করেন। নির্ধারিত দিনে অন্নদাশঙ্করকে ময়দানের সভায় নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব বর্তায় live chat 888sport-অভিনেত্রী মাধবী মুখোপাধ্যায় ও তাঁর স্বামী অভিনেতা নির্মলকুমারের ওপর। কিন্তু সেই গাড়ি ময়দানে পৌঁছতেই বিপত্তি বাধে – প্রিয় 888sport live chatীকে একেবারে হাতের নাগালে পেয়ে উন্মত্ত ভক্তের দল গাড়ির দিকে ছুটে আসতে থাকে। তখন স্বাভাবিকভাবেই সন্ত্রস্ত মাধবী দ্রুত গাড়ি ঘুরিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছোটেন। অন্নদাশঙ্কর সভায় যোগ দিতে গাড়ি থেকে নেমে যান। কিন্তু সেই জনারণ্য ভেদ করে সভামঞ্চে পৌঁছনো পঁয়ষট্টি বছরের প্রৌঢ় অন্নদাশঙ্করের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। তিনি পরিচিতজনের সহায়তায় কোনোক্রমে বাড়ি ফিরে আসেন। বিপন্ন বন্দি বঙ্গবন্ধুর প্রাণরক্ষায় তিনি বিচলিত হয়ে ওঠেন – প্রবল আবেগে তখনি তিনি রচনা করেন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এক অবি888sport app download for androidীয় ছড়া – যা সমকালে ও উত্তরকালে মানুষের কণ্ঠে কণ্ঠে উচ্চারিত হতে থাকে – শেষে এই আট-পঙক্তির ছড়া লাভ করে এক ধ্রুপদি-888sport live chatের মর্যাদা – উৎকীর্ণ হয় মানুষের অন্তরে ও 888sport sign up bonus-স্মারকের গাত্রে :
যতকাল রবে পদ্মা যমুনা
গৌরী মেঘনা বহমান
ততকাল রবে কীর্তি তোমার
শেখ মুজিবুর রহমান।
দিকে দিকে আজ অশ্রুগঙ্গা
রক্তগঙ্গা বহমান
তবু নাই ভয় হবে হবে জয়
জয় মুজিবুর রহমান।
পাঁচ
স্বাধীন 888sport appsে অন্নদাশঙ্কর রায় চারবার এসেছিলেন : ১৯৭২, ১৯৭৪, ১৯৭৫ ও ১৯৯৬-এ। স্বাধীনতার পরপরই অন্নদাশঙ্করের গুণমুগ্ধ 888sport appsের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী সস্ত্রীক তাঁকে 888sport apps সফরের আমন্ত্রণ জানান। 888sport apps-ভারত মৈত্রী পরিষদের পক্ষ থেকেও ১৯৭২ সালের 888sport cricket BPL rateে ফেব্রুয়ারিতে আমন্ত্রণ ছিল 888sport appয়। কিন্তু প্রস্তুতির সময় কম থাকায় সে-যাত্রায় 888sport cricket BPL rateের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। ১৯৭২-এর ডিসেম্বরে অবশেষে অন্নদাশঙ্কর ভারত সরকারের প্রতিনিধিদলের প্রধান হিসেবে 888sport appয় আসেন – দীর্ঘ পঁচিশ বছর পরে। দ্বিতীয়বার তাঁর আসা হয় ১৯৭৪-এ 888sport cricket BPL rateে ফেব্রুয়ারির মুখোমুখি ‘বাংলা 888sport live football সম্মেলনে’ – এবারে এসেছিলেন 888sport apps সরকারের অনুরোধে ভারত সরকার-প্রেরিত লেখক-প্রতিনিধিদলের নেতা হিসেবে। পরের বছর (১৯৭৫) 888sport cricket BPL rateে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠানে আবার সরকারি আমন্ত্রণে 888sport app আসেন – তাঁর নেতৃত্বে একদল বাঙালি লেখকও সঙ্গী হন। অন্নদাশঙ্কর চতুর্থ ও শেষবারের মতো 888sport appsে আসেন ডিসেম্বর ১৯৯৬-এ, 888sport cricket BPL rate বছর পরে – বিজয় দিবসের রজতজয়ন্তী উৎসব উপলক্ষে – 888sport apps সরকারের আমন্ত্রণে। প্রথম তিনবারের সফরকালে বঙ্গবন্ধু জীবিত ছিলেন। দ্বিতীয়বারে যখন আসেন, তখনই প্রথম ও শেষবারের মতো সাক্ষাৎ হয় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে। ১৯৭৫-এর ফেব্রুয়ারিতে সাক্ষাৎ হয়নি দুজনের, কেন তিনি দেখা করেননি সে-ব্যাখ্যা তাঁর লেখায় দিয়েছেন।
তাঁর 888sport sign up bonus, অভিজ্ঞতা, পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের ভিত্তিতে 888sport apps ও বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে তিনখানা বই লেখেন, প্রকাশকালের হেরফের থাকলেও বিষয়ক্রম অনুসারে তা হলো :শুভোদয় (১৩৭৯ ব.), 888sport appsে (১৩৮৬ ব.) ও কাঁদো, প্রিয় দেশ (১৯৭৬ খ্রি.)। বিষয় ও চেতনার অভিন্ন সূত্রে গ্রথিত এই বই তিনটিকে তিনি ‘ট্রিলজি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। অবশ্য এর বাইরেও এই দুই প্রসঙ্গ তাঁর নানা বইতে স্থান পেয়েছে – যেমন, বিদগ্ধ মানস (১৯৯৭ খ্রি.), মুক্তবঙ্গের 888sport sign up bonus (১৪০৫ ব.), শতাব্দীর মুখে (২০০১ খ্রি.)। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এ-প্রসঙ্গের আরো কিছু লেখা এখনো অগ্রথিত। অন্নদাশঙ্কর ছাড়া আর কোনো ভারতীয় বাঙালি লেখক এমন সপ্রেম নিষ্ঠায় 888sport apps চর্চায় আগ্রহী ও নিবেদিত হননি। তাঁর জীবনীকার যে-আংশিক পরি888sport free betন দিয়েছেন, তা থেকে জানা যায় : ‘ঐতিহাসিক ১৯৭১-এর 888sport cricket BPL rateে ফেব্রুয়ারি থেকে ষোলই ডিসেম্বরের মধ্যে 888sport appsের মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গে অন্নদাশঙ্কর অন্তত ২৫০০০ শব্দের ১৭টি 888sport live লিখেছেন। তাছাড়া এই পর্বে লিখেছেন, ‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা/ গৌরী মেঘনা বহমান/ ততকাল রবে কীর্তি তোমার/ শেখ মুজিবুর রহমান’, ‘চেঙ্গিজকে ভাগিয়ে দিয়ে দম্ভ তার ভাঙালি, বাঙালি’ প্রভৃতি 888sport app download apk ও ছড়া।’৭ এই তালিকায় আরো যুক্ত হবে ১৯৭২ থেকে ২০০১ পর্যন্ত প্রকাশিত বই, অগ্রথিত রচনা, সাক্ষাৎকার ও পত্রাবলি।
ছয়
বাংলা একাডেমি আয়োজিত ‘বাংলা 888sport live football সম্মেলনে’ (১৪-২১ ফেব্রুয়ারি) যোগ দিতে অন্নদাশঙ্কর রায় দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীন 888sport appsে আসেন ১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে। তাঁর নেতৃত্বে এই সম্মেলনে অংশ নেন ভারতীয় লেখকদের একটি দল – তার প্রায় সবাই ছিলেন বাঙালি লেখক। বাংলা একাডেমি চত্বরে অনুষ্ঠিত এই 888sport live football সম্মেলন উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু। এই সম্মেলনেই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর প্রথম দেখা হয়। সেই মুহূর্তের কথা 888sport app download for android করে লিখেছেন তিনি : ‘উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর দক্ষিণপার্শ্বে শিক্ষামন্ত্রী, তাঁর পাশেই আমি। খুব কাছাকাছি পাই শেখ সাহেবকে। আমার অন্যতম হীরো। কিন্তু কথা বলার অবকাশ পাইনে। পেতুমও না, যদি না সম্মেলনের উদ্যোক্তারা আমাদের প্রত্যাবর্তনের দিন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করতেন।’৮ কথা না হলেও এই প্রথম সরাসরি দেখা হয় ১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমির সভামঞ্চে এবং সেখানেই নীরবে উপহার দেন তাঁর শুভোদয় বইটি, যার উপলক্ষ স্বয়ং বঙ্গবন্ধু। এক সপ্তাহের মাথায় দ্বিতীয়বার দেখা হতে পারত বিশে ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে শহিদ মিনারে ফুল দিতে গেলে, কিন্তু বয়সের কারণে অশক্ত শরীরে অন্নদাশঙ্কর যেতে পারেননি। সেই আক্ষেপ শোনা যায় তাঁর কণ্ঠে : ‘রাত বারোটায় গেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সঙ্গে দেখা হত। প্রথম মালাটি তিনি দেবেন। আমি গেলে আমিই দিতুম দ্বিতীয় মালা। সেটা ভারতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন। … এক অপূর্ব সুযোগ আমি হারালুম।’৯
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ ও মুখোমুখি আলাপের সুযোগ মেলে ২২ ফেব্রুয়ারি গণভবনে – এই ‘অন্তরঙ্গ আলাপে’র দিনটিকে অন্নদাশঙ্কর উল্লেখ করেছেন ‘অবি888sport app download for androidীয় দিন’ হিসেবে। এক আন্তরিক পরিবেশে এই খোলামেলা কথোপকথনের 888sport sign up bonus প্রকাশ পেয়েছে তাঁর ‘ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে’ 888sport liveে এবং এই প্রসঙ্গের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা যা ছিল 888sport sign up bonusতে, তা প্রকাশ করেছেন বঙ্গবন্ধু-নিধনের পরে লেখা ইন্দ্রপাতে। বঙ্গবন্ধু সেদিন অনেক কথা বলেছিলেন নানা প্রসঙ্গে – তাঁর 888sport sign up bonus-স্বপ্ন-সফলতার কথা। দিনটি কূটনৈতিক-রাজনীতির অনুষঙ্গে ছিল গুরুত্বপূর্ণ ও উত্তেজনাকর। অন্নদাশঙ্করের কথায় জানা যায় : ‘সেদিন তিনি বেশ খোশমেজাজে ছিলেন। সাতজন আরব পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর দ্বারস্থ হয়েছিলেন তাঁকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে লাহোরে ইসলামী শীর্ষ সম্মেলনে নিয়ে যেতে। তিনি তাঁদের সাফ বলে দিয়েছেন যে আগে স্বীকৃতি, তার পরে সম্মেলনে যোগদান। … আমাদের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের ঘণ্টাকয়েক যেতে না যেতেই পাকিস্তান দেয় স্বীকৃতি আর রাত পোহাতে না পোহাতেই শেখ উড়ে যান লাহোরে। সেখানে পড়ে যায় সংবর্ধনার ধুম।’১০
বঙ্গবন্ধু সেদিন তাঁর রাজনৈতিক জীবনের অনেক গোপন কথা ও অজানা কাহিনি অন্নদাশঙ্কর ও তাঁর সফরসঙ্গীদের কাছে বলেছিলেন। তাঁরা তাঁর কাছে জানতে চান, ‘888sport appsের আইডিয়াটা প্রথম কবে আপনার মাথায় এল?’ জবাবে সহাস্য বঙ্গবন্ধু জানান : ‘সেই ১৯৪৭ সালে। তখন আমি সুহরাবর্দী সাহেবের দলে। তিনি ও শরৎচন্দ্র বসু চান যুক্তবঙ্গ। আমিও চাই সব বাঙালীর এক দেশ। বাঙালীরা এক হলে কী না করতে পারত! তারা জগৎ জয় করতে পারত।’ … বলতে বলতে তিনি উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠেন। তার পর বিমর্ষ হয়ে বলেন, ‘দিল্লী থেকে খালি হাতে ফিরে এলেন সুহরাবর্দী ও শরৎচন্দ্র বোস। কংগ্রেস বা মুসলিম লীগ কেউ রাজী নয় তাঁদের প্রস্তাবে। তাঁরা হাল ছেড়ে দেন। আমিও দেখি যে আর কোনো উপায় নেই। 888sport appয় চলে এসে নতুন করে আরম্ভ করি। তখনকার মতো পাকিস্তান মেনে নিই। কিন্তু আমার স্বপ্ন সোনার বাংলা। সে স্বপ্ন কেমন করে পূর্ণ হবে এই আমার চিন্তা।’১১
তখন যে পরিবেশ-পরিস্থিতি ছিল, তাতে বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’র স্বপ্ন সফলের কোনো সম্ভাবনাই ছিল না। সে সুযোগ এলো ভাষা-আন্দোলনের সুবাদে – তিনি যুক্ত হলেন এই আন্দোলনে। বঙ্গবন্ধু আলোচনার সূত্র ধরে তাঁর 888sport live footballিক-অতিথিদের জানান : ‘ভাষাভিত্তিক আন্দোলনকেই একটু একটু রূপ দিই দেশভিত্তিক আন্দোলনে। পরে এমন একদিন আসে যেদিন আমি আমার দলের লোকদের জিজ্ঞাসা করি, আমাদের দেশের নাম কী হবে? কেউ বলে, পাক বাংলা। কেউ বলে, পূর্ব বাংলা। আমি বলি, না, 888sport apps। তারপর আমি স্লোগান দিই জয় বাংলা। … জয় বাংলা বলতে আমি বোঝাতে চেয়েছিলুম বাংলা ভাষা, 888sport apps ও বাঙালী জাতির জয়, যা সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে।১২ সেদিন বঙ্গবন্ধু কেমন বৈঠকি মেজাজে ছিলেন, সে-কথা বলতে গিয়ে অন্নদাশঙ্কর রায় ১৩ মার্চ ১৯৯৩ সালে তাঁর কলকাতার আবাসে আবুল আহসান চৌধুরীকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি কীভাবে এলো তার উল্লেখ করে ‘তিনি সেই গানটা গেলেন’ এবং ‘জয় বাংলা’ ধ্বনির উৎস সম্পর্কে জানিয়ে ‘সেই স্লোগান উচ্চারণ করলেন।’১৩ এই আলোচনার সূত্র ধরে বঙ্গবন্ধুর ধারাবাহিক রাজনৈতিক অর্জনের বিষয়ে অন্নদাশঙ্কর মন্তব্য করেছেন : ‘একটা কমিউনাল পার্টিকে ন্যাশনাল পার্টিতে রূপান্তরিত করা চারটিখানি কথা নয়। বারবার জেলে গিয়ে বারবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে তিনি একদিন সত্যি সত্যিই পেয়ে যান তাঁর স্বপ্নের 888sport apps। যে 888sport apps অবিভক্ত না হলেও সার্বভৌম ও স্বাধীন। আমাদের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের দিনই পেলেন পাকিস্তানের স্বীকৃতি। পরে ইউনাইটেড নেশনসে আসন। একজন ব্যক্তি তার পঞ্চান্ন বছর বয়সে এর বেশী সার্থকতা প্রত্যাশা করতে পারে কি? আর কেউ কি পারতেন?’১৪
পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি লেখকদের কাছে মহাকর্মব্যস্ত বঙ্গবন্ধু সেদিন খানিক ফুরসত পেয়ে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন – তাঁকে যেন কথার নেশায় পেয়েছিল সেদিন। তাঁর কারাজীবনের কাহিনি – জীবনের শঙ্কা – তাঁর গুপ্ত রাজনৈতিক পরিকল্পনার কথা, এসব সেদিন তিনি অকপটে প্রকাশ করেছিলেন। কারাগারেও যে তিনি নিরাপদ ছিলেন না, মৃত্যুকে যেন চোখের সমুখে দেখতে পেয়েছিলেন – সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ও আতঙ্কিত সময়ের কথা বঙ্গবন্ধু অতিথিদের জানিয়ে বলেছিলেন : ‘দেখুন, আমি দুই দুই বার মরতে মরতে বেঁচে গেছি। প্রথমবার আইয়ুব খানের বন্দীশালায়। ষড়যন্ত্রের মামলায়।আমার এক সাথী আমাকে হুঁশিয়ার করে দেয় যে সন্ধ্যাবেলা সেলের বাইরে গিয়ে নিয়মিত বেড়ানোর অভ্যাসটি বিপজ্জনক। পেছন থেকে গুলি করবে আর বলবে পালিয়ে যাচ্ছিল বলে গুলি করেছি। অন্যের বেলা ঘটেও ছিল ওরকম গুলি চালনা। দ্বিতীয়বার ইয়াহিয়া খানের কারাগারে। আমার সামনেই আমার কবর খোঁড়া হচ্ছে। বুঝতে পারছি যে আমার শেষ মুহূর্ত ঘনিয়ে আসছে। মনটাকে তৈরী করে নিই যে মরতে যখন হবেই তখন মিছে ভয় কেন? শান্ত মনে মৃত্যুর প্রতীক্ষা কর।’১৫
সেই আলাপচারিতায় বঙ্গবন্ধু প্রকাশ না-করার কড়ারে লেখক-অতিথিদের তাঁর একটি গোপন রাজনৈতিক পরিকল্পনার কথা জানান। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর সেই গুপ্ত-কথাটি প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ অন্নদাশঙ্কর এই কারণে যে : ‘আজ তিনি নেই। আমারও তো বয়স হলো একাত্তর। আর কতদিন আছি কে জানে! কেউ না কেউ লিখে না রাখলে ভাবীকাল জানতেই পাবে না শেখ মুজিব কী করেছিলেন ও কেন করেছিলেন। তাঁর নিষেধ তাঁর জীবৎকালে মান্য করেছি। এখন তিনি সব আপদ-বিপদের ঊর্ধ্বে। … তিনি অমর।’১৬ বঙ্গবন্ধু স্বাধীন 888sport apps প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের যে পরিকল্পনা করেছিলেন, সে বিষয়টিই তিনি জানান। তাঁর বর্ণিত তথ্য-বিবরণ থেকে স্পষ্টই বোঝা যায়, এটি পাকিস্তান সরকার কর্তৃক বঙ্গবন্ধু ও অন্যদের বিরুদ্ধে পূর্ববঙ্গকে সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের প্রয়াসের অভিযোগে যে ‘আগরতলা [ষড়যন্ত্র?] মামলা’ দায়ের করা হয়, সেই বিষয়ের কথা। এই প্রথম বঙ্গবন্ধু এই মামলায় বর্ণিত ঘটনা ও স্বাধীনতার পরিকল্পনা এবং এতে তাঁর সম্পৃক্ততার কথা সরাসরি স্বীকার করেন। বঙ্গবন্ধু একান্ত ঘরোয়া পরিবেশে অন্নদাশঙ্কর ও তাঁর সঙ্গীদের জানিয়েছিলেন : ‘আমার কী প্ল্যান ছিল, জানেন? অকস্মাৎ আমরা একদিন পাওয়ার সীজ করব। 888sport app শহরের সব ক’টা ঘাঁটি দখল করে নেব। আর্মিতে, নেভীতে, এয়ার ফোর্সে, পুলিশে, সিভিল সার্ভিসে আমাদের লোক ছিল। কিন্তু একটা লোকের বিশ্বাসঘাতকতার জন্যে সব পণ্ড হয়। নেভীর একজন অফিসার বিশ্বাস করে তাঁর অধীনস্থ একজনকে জানিয়েছিলেন। সে ফাঁস করে দেয়। তখন আমরা সবাই ধরা পড়ে যাই।’১৭ এই যে একজন বিশ্বাসহন্তার কারণে পরিকল্পনাটি ব্যর্থ হয়ে যায় – কথাগুলো বলতে গিয়ে, অন্নদাশঙ্কর লক্ষ্য করেছেন, বঙ্গবন্ধুর মধ্যে একটা ‘আক্ষেপ’-এর ভাব জেগে ওঠে। তবে ‘ঘটনাটি ঘটত কোন তারিখে’- অন্নদাশঙ্করের এই জিজ্ঞাসার জবাবে সেই তথ্যটি স্মিত হাসিতে উজ্জ্বল বঙ্গবন্ধু তখনই জানাতে চাননি।বঙ্গবন্ধু যে ক্ষমতার মোহের কাছে পরাজিত হতে চাননি, শাসনক্ষমতা আঁকড়ে থাকার ইচ্ছাও যে তাঁর ছিল না, জনগণের কাছেই ফিরে যেতে চেয়েছিলেন – সে সাক্ষ্য দিয়েছেন অন্নদাশঙ্কর। কিন্তু নানা কারণে তাঁর সেই ইচ্ছা পূরণ হয়নি। মুজিব প্রাণপণ চেষ্টা করেও মুক্তপুরুষ হিসেবে রাজনৈতিক আবিলতার বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি। এক জটিল ও বৈরী সময়ের আবর্তে তাঁর জীবন ও রাজনীতির ট্র্যাজেডি রচিত হয়েছে। প্রথম ও শেষ সাক্ষাতের প্রসঙ্গ তুলে অন্নদাশঙ্কর যা বলেছিলেন, তা খুব সংগত, যুক্তিগ্রাহ্য ও মর্মস্পর্শী : ‘… দুই দুই বার মরণের মুখ থেকে বেঁচে এসে তিন বারের বার তাঁকে মৃত্যুর কবলে পড়তে হলো। … এর কি কোনো দরকার ছিল? সাক্ষাৎকারের দিনই তো শেখ সাহেব আমাদের বলেছিলেন যে তিনি আর ক্ষমতার আসনে থাকতে চান না, কী করবেন, তাঁর দলের লোক যে তাঁকে যেতে দিচ্ছে না। তিনি স্পষ্ট করে বলেন যে তাঁর কাজ সারা হয়েছে। তিনি যা যা চেয়েছিলেন সব কিছুই পেয়েছেন।’১৮ – প্রাপ্তির পূর্ণতা থেকেই বঙ্গবন্ধু এ-কথা বলেছিলেন। প্রশাসন নয়, দলের কাজ করতেই বঙ্গবন্ধু বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন – তাঁর প্রকৃতি ও প্রতিভা ছিল সংগঠনমুখী। দলের প্রয়োজনে তিনি সহসাই যে উপভোগ্য ক্ষমতা ত্যাগ করতে পারেন, তার প্রমাণ তো দিয়েছেন পঞ্চাশের দশকেই, মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দিয়ে দলের দায়িত্ব গ্রহণ করে – দলকে সুসংগঠিত ও গণমুখী করাই ছিল তাঁর ব্রত, তাই লোভনীয় ওজারতি ত্যাগ করতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেননি।
যেহেতু সশস্ত্র মুক্তির লড়াইয়ের পথ ধরে জনগণের সমর্থন ও সম্পৃক্ততায় একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি, তাই দেশ ও জনগণের প্রতি তাঁর শুধু রাজনৈতিক নয়, নৈতিক দায়ও ছিল – সেই কর্তব্য বিসর্জন বা তা এড়িয়ে যাওয়া তাঁর পক্ষে সহজ বা সম্ভব ছিল না, কেননা – ‘শেখ মুজিবের নেতৃত্বে সেই অবশ্যম্ভাবী ঐতিহাসিক পরিবর্তনটি সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন হয়। তিনি ছিলেন ক্রান্তদর্শী পুরুষ। আপন ব্রতে নিবেদিত কর্মবীর। একটি স্বপ্ন নিয়েই তাঁর যাত্রারম্ভ। যাত্রাশেষও সেই স্বপ্নের রূপায়ণে।’১৯
সাত
বঙ্গবন্ধু ও 888sport apps নিয়ে অন্নদাশঙ্কর রায়ের প্রথম বই শুভোদয়। এই বইয়ের নামকরণের পেছনে একটি অভিনবত্ব ও চমক আছে। ‘ভূমিকা’য় লেখক উল্লেখ করেছেন : ‘‘শেখ শুভোদয়া’ নামে একখানি প্রাচীন পুঁথির সন্ধান পাওয়া গেছে। সেই পুঁথির নাম অনুসারে আমার এই গ্রন্থের নামকরণ। এবারেও একজন শেখ 888sport appsের পূর্ব গগনে উদয় হয়েছেন। তাঁর উদয়ও শুভোদয়। তাঁর নেতৃত্বেই 888sport apps বলে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র উদয় হয়েছে। তার উদয়ও শুভোদয়।’ আবার বইয়ের পরিচয়-বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলেছেন : ‘এই গ্রন্থটি এক হিসাবে একটি 888sport app download for androidগ্রন্থ। 888sport appsের মুক্তিযুদ্ধের স্মারক।’২০
বইটির অন্তঃসার হলো স্রষ্টা ও সৃষ্টি – বঙ্গবন্ধু ও 888sport apps – অঙ্গাঙ্গিভাবে যা জড়িত – তার কথা ও কাহিনি। এক অনুরাগীর পক্ষ থেকে 888sport appsের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটি ‘ট্রিলজি’উপাখ্যান লেখার দাবি ছিল, কিন্তু সে-ভার অন্নদাশঙ্কর অর্পণ করে রাখেন নবসৃষ্ট দেশের যোগ্য কোনো লেখকের ওপর। কিন্তু তিনিও তো মুক্তিযুদ্ধের একজন সাক্ষী – তাঁর ভাষায়, ‘দূরের সাক্ষী’ যদিও – তাঁর বক্তব্য তিনি ‘888sport live আকারে মাসের পর মাস পেশ’ করেছেন। এরপর তিনি যা বলেছেন, তা তাঁর বিবেকের কথা – অন্তরের অভিজ্ঞান : ‘সংগ্রামটা যতদিন চলছিল ততদিন আমার অন্তরে বিষাদ ছাড়া আর কিছু ছিল না।সংগ্রামের পরেও অনেকদিন অবধি। শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির পর থেকেই আমার বিষাদের ভাবটা কেটে আসছে। ত্রিশ লক্ষের মৃত্যুযন্ত্রণা ভোলা যায় না। আর ওই অগণিত 888sport promo codeর জীবনযন্ত্রণা।সদ্যোজাত সন্তানের মুখ চেয়ে মা যেমন তার প্রসবযন্ত্রণা ভোলে তেমনি সদ্যস্বাধীন 888sport appsের মুখ চেয়ে ভুলতে হবে এসব যন্ত্রণা।’২১
শুভোদয়ের বেশিরভাগ লেখারই সময়কাল ১৯৭১ থেকে ১৯৭২ – অর্থাৎ 888sport appsের মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিপর্ব থেকে স্বাধীনতা-লাভের অব্যবহিত পর পর্যন্ত। আর কিছু লেখার রচনাকাল ১৯৬৮-৬৯। তবে লেখাগুলোর বিষয়গত একটি অন্তর্নিহিত ঐক্য ও ধারাবাহিকতা আছে। প্রায় সব লেখাই মূলত পূর্ববঙ্গের পাকিস্তানপর্বের গণতান্ত্রিক সংগ্রাম, 888sport free betলঘু সমস্যা, দেশভাগের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার নানা কথা নিয়ে – কালক্রমে ধাপে ধাপে এগিয়ে এসব আলোচনার মূল কেন্দ্রে এসেছে 888sport appsের মুক্তিসংগ্রাম এবং সেই সূত্রে অনিবার্যভাবে বঙ্গবন্ধুর প্রসঙ্গ। মুক্তিযুদ্ধ তখনো চলমান – ফলাফল অনিশ্চিত, সেই সময়ে অন্নদাশঙ্কর লেখেন, ‘বন্দে ভ্রাতরম্’নামে একটি 888sport live। এখানে তাঁর প্রত্যয়-প্রত্যাশা-সিদ্ধান্ত এভাবে প্রকাশিত হয়েছে : ‘শেখ মুজিবর রহমান ও তাঁর নেতৃত্বে পূর্ববঙ্গের বাঙালী হিন্দু মুসলমান যে বীরত্ব দেখিয়েছেন তা ইতিহাসে অপূর্ব। কেবল বাংলার ইতিহাসে নয়, ভারতের ইতিহাসে। হয়তো মানুষের ইতিহাসে। তাঁদের হার হবে কি জিৎ হবে তা বিধাতাই জানেন। কিন্তু যেটাই হোক ইতিহাসে তাঁরা অমর।’২২ তাঁর এই মূল্যায়ন ঘটনাপ্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতে উত্তরকালে সমর্থিত হয়। এই সংগ্রামের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি পূর্বকথা 888sport app download for android করেছেন – যে নিগ্রহ-বঞ্চনা তা শেষপর্যন্ত ‘… পূর্ববাংলার লোক সহ্য করেনি। তারা জ্বলে উঠেছে। অভূতপূর্ব হরতাল, অভূতপূর্ব অসহযোগ, অভূতপূর্ব শাসনব্যবস্থার উপর নির্বাচিত জননায়কের নির্দেশ। ম্যাজিক, ম্যাজিক, সবটাই যেন ম্যাজিক। … দেশে একটার জায়গায় দুটো অথরিটি দেখা দেয়। একটা তো মিলিটারি, অপরটা সিভিল। … পূর্ববাংলায় দেখা গেল পাশাপাশি সিভিল তথা মিলিটারি, কেউ কারো অধীন নয়।’২৩ যে-ঘটনার উল্লেখ তিনি তাঁর লেখায় করেছেন, তা যথার্থই ‘অভূতপূর্ব’ – ইন্দ্রজালের মতোই বিস্ময়কর – বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই একাত্তরের মার্চে কিছুদিনের জন্যে পূর্ববঙ্গের প্রশাসন, প্রচারমাধ্যম, আর্থিক প্রতিষ্ঠান – সবকিছু পরিচালিত হয়। জনগণের ওপর কোনো রাজনৈতিক নেতার এমন সম্মোহনী প্রভাবের দৃষ্টান্ত ইতিহাসে বিরল।
মুক্তিযুদ্ধ চলার সময়েই অন্নদাশঙ্কর তাঁর লেখায় এই যুদ্ধের ফলাফল বা পরিণতি অনিশ্চিত জেনেও, তা কী হতে পারে তার নানারকম সম্ভাবনার কথা অনুমান করেছিলেন, যেমন – ‘লড়াইমাত্রেই দমের খেলা।যার দম যত বেশী তার জয়ের সম্ভাবনা তত বেশী। আমার বিশ্বাস শেখ মুজিবর রহমান এমন একজন মানুষ যিনি উভয় অর্থেই অদম্য। তাঁকে দমনও করতে পারা যাবে না, তাঁর দমও ফুরিয়ে যাবে না। এ লড়াই যদি তিনি দু’বছর চালিয়ে যেতে পারেন তা হলে সন্ধি হবে তাঁর শর্তেই। ইয়াহিয়া খান কিংবা জুলফিকার আলী ভুট্টোর শর্তে নয়। 888sport appsের স্বাধীনতার কমে তিনি রাজী হবেন না …। … এই যুদ্ধের শেষ পরিণতি যেটাই হোক না কেন সেটা বাঙালীর পক্ষে গৌরবজনকই হবে।’২৪ এই লেখা থেকে বঙ্গবন্ধুর নির্ভীকতা ও বিচারবুদ্ধি সম্পর্কে তাঁর গভীর আস্থা এবং সেই সঙ্গে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অকুণ্ঠ সমর্থনের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আর ‘যুদ্ধের শেষ পরিণতি’ যে ‘বাঙালীর পক্ষে গৌরবজনকই হবে’- তাঁর এই কথাটিও যথাযথভাবেই ফলেছিল।
এই মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি-চরিত্রের গুণগত পরিবর্তন এনেছিল – নিরীহ-নির্জীব-নিরুদ্যম বাঙালি রূপান্তরিত হয়েছিল লড়াকু জাতিতে। অন্নদাশঙ্করের পর্যবেক্ষণে বিষয়টি যথাযথ ধরা পড়েছে : ‘888sport appsের মুক্তিযুদ্ধ যে এইরকম মোড় নেবে তা আমি বা আমার বন্ধুরা কেউ কল্পনা করতে পারিনি। ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরামের দল রাতারাতি একটা সামরিক জাতিতে রূপান্তরিত হয়েছে। … সাত কোটি সন্তান এখন আর শুধু বাঙালী নয় এখন মানুষ হয়ে গেছে। শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের মতে কবিগুরুর উক্তি এখন ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে। কবিগুরু জীবিত থাকলে তিনিও সেই কথা বলতেন।’২৫ এটা যে কত বড় প্রাপ্তি তা 888sport app download for android করেছেন অন্নদাশঙ্কর এবং এর মূলে যাঁর অবদান, সেই বঙ্গবন্ধুকেও এই সূত্রে কৃতিত্ব দিতে ভোলেননি।
অনেক সংগ্রাম – অনেক ত্যাগ – অনেক মূল্যের বিনিময়ে বাঙালি তার আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা লাভ করে।অন্নদাশঙ্কর যাকে বলেছেন ‘এপিক সংগ্রাম’। সেই রাষ্ট্রের রূপ ও বৈশিষ্ট্য কেমন মহার্ঘ, তার আভাস মেলে অন্নদাশঙ্করের বক্তব্যে : ‘তুফানের শেষে আকাশ এখন পরিষ্কার। পূর্ববাংলা এখন স্বাধীন।স্বাধীন হয়ে তার নাম এখন 888sport apps। … সেও একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। সেও চায় গণতান্ত্রিক সংবিধান। তথা প্রজাতান্ত্রিক মর্যাদা। তার নামকরণ হয়েছে গণপ্রজাতন্ত্রী 888sport apps। … সেও সমাজতন্ত্রের অভিমুখে যাত্রা করতে উন্মুখ। … নতুন রাষ্ট্রের স্তম্ভ … চারটি। ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ। পার্লামেন্টারি গণতন্ত্র। ধর্মনিরপেক্ষতা। সমাজতন্ত্রের অভিমুখে গতি। … সোনার বাংলা, মোতির গণতন্ত্র, হীরার ধর্মনিরপেক্ষতা, পান্নার সমাজতন্ত্র – এই যদি হয় নীট লাভ তবে যা হারিয়েছে তা সার্থক। এসব জিনিস আরো সস্তায় মেলে না। মিললেও টেকে না।’২৬ এতে বেশ বোঝা যায়, 888sport appsের ঘোষিত চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতি – অন্নদাশঙ্কর যাকে তুলনা করেছিলেন সোনা-মোতি-হীরা-পান্নার সঙ্গে – তা তাঁকে আনন্দিত করেছিল মূলত এই কারণে যে, এই আদর্শে যদি রক্তস্নাত নবীন রাষ্ট্রটি পরিচালিত হয়, তবে কালক্রমে তা আধুনিক, প্রগতিশীল ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হতে পারবে। এই ধারণার মধ্যে 888sport apps সম্পর্কে তাঁর প্রবল আশাবাদ ও আন্তরিক শুভকামনা প্রতিফলিত হয়েছে।
শুভোদয় বইতে ‘888sport apps ও বাঙালী জাতীয়তাবাদ’ নামে একটি 888sport live আছে। এই 888sport liveে অন্নদাশঙ্কর সংক্ষেপে পাকিস্তানি শাসকদের ভ্রান্তি, বাঙালিদের প্রতি বঞ্চনা, বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ, সর্বাত্মক মুক্তির লড়াইয়ের সূচনা, স্বাধীন 888sport appsের অভ্যুদয় সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন।পাকবাহিনী পোড়া-মাটি নীতি গ্রহণ করায় পূর্ববঙ্গ অভিজ্ঞতার অতীত ক্ষতি ও ধ্বংসের মুখে পড়ে। এই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি নানা সমস্যা এড়িয়ে তার দেশনায়কের নেতৃত্বে কীভাবে আবার নতুন করে গড়ে উঠবে সে-সম্পর্কে তিনি বলেছেন : ‘… শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবকে এখন পদে পদে হুঁশিয়ার হয়ে কাজ করতে হবে। স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম যেমন ত্যাগ ও তপস্যাসাপেক্ষ, দেশের পুনর্গঠনও তেমনি ত্যাগ ও তপস্যাসাপেক্ষ। সংগ্রামের একটা উন্মাদনা আছে, পুনর্গঠনের সেরূপ কোন উন্মাদনা নেই। সেজন্য পুনর্গঠন অত্যন্ত নীরস। দেশের লোক যদি শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশমতো গঠনমূলক কাজে সর্বতোভাবে আত্মনিয়োগ করে তাহলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই 888sport apps নিরন্নকে অন্ন জোগাতে পারবে, বস্ত্রহীনকে বস্ত্র জোগাতে পারবে। এবং আরো পাঁচ বছরের মধ্যে পৃথিবীর প্রত্যেকটি বন্দরে তাদের বাণিজ্যের জাহাজ দেখা যেতে পারবে।’২৭ অন্নদাশঙ্কর ছিলেন 888sport appsের অকৃত্রিম বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষী। মুক্তিযুদ্ধে যেমন তিনি ছিলেন সহায়ক ও সমর্থক, তেমনি মুক্তিযুদ্ধোত্তর স্বাধীন দেশটির পুনর্গঠন-পুনর্নির্মাণ কীভাবে হবে এবং তার ভবিষ্যৎ কেমন সম্ভাবনাময়, সে ইঙ্গিতও দিয়েছেন। 888sport appsের স্রষ্টা বঙ্গবন্ধু নানা অন্তরায় ও প্রতিকূলতা সত্ত্বেও দেশ-পুনর্গঠনে যে আন্তরিক উদ্যোগ গ্রহণ করেন, তার ফলাফল অল্পসময়ের মধ্যে কিছু অংশে লক্ষ্যযোগ্য হয়ে ওঠে। কিন্তু মন্দভাগ্য দেশ ও জাতির – তাঁর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাঙ্ক্ষিত সময় তিনি পাননি, মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় ঘাতকের ঘৃণ্য বর্বরতায় তাঁকে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হয় – অসমাপ্ত থেকে যায় সোনার বাংলা গড়ার কাজ।
আট
১৯৭২, ১৯৭৪ ও ১৯৭৫-এ অন্নদাশঙ্কর আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে 888sport appsে এসেছিলেন, বঙ্গবন্ধুর জীবিতকালে। প্রথম দুবারের সফর নিয়ে তিনি বেশ কয়েকটি 888sport live লেখেন, কিন্তু তৃতীয়বারের সফর সম্পর্কে কিছু লিখতে নারাজ হন, এর পেছনে বিশেষ কারণ ছিল। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত লিখিত প্রথম দুই সফরনামার স্মারক পনেরোটি গদ্যরচনা গ্রন্থের শামিল হয় 888sport appsে নামে। এগুলো 888sport sign up bonusচারণার সঙ্গে ইতিহাসের তথ্য মিশিয়ে ঘটনার বিশ্লেষণ ও সেইসঙ্গে নিজের মন্তব্য জুড়ে দেওয়া মুক্তচিন্তার মননশীল 888sport live। এতে তাঁর নিবিড় পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য নয় এমন শোনাকথার বিবরণও যুক্ত। কোথাও কোথাও কিছু তথ্যভ্রান্তি ও অতিরঞ্জনের ভাবও মিলেমিশে গেছে – বক্তব্যের পুনরাবৃত্তিও চোখে পড়ে। তাতে অবশ্য তাঁর মূল বক্তব্যের বা সিদ্ধান্তের মৌলিক কোনো পরিবর্তন হয়নি।
এই বইয়ের ‘পুনরায়’ 888sport liveে লেখক ভারি সুন্দর একটি আশার বাণী উচ্চারণ করেছেন : ‘স্বাধীনতার আলো বাতাস গায়ে লাগলে 888sport appsের মাটিতে রেনেসাঁসের ফুল ফুটবে, রেফরমেশনের ফল ধরবে। ইতিমধ্যে তার লক্ষণ দেখা দিচ্ছে। জীবন সম্বন্ধে প্রচণ্ড কৌতূহল ও জিজ্ঞাসা। নতুন করে ভাবা, নতুন করে গড়া’২৮ ১৯৭৪ সালে বের হয় অন্নদাশঙ্করের বাংলার রেনেসাঁস বইটি। এর ‘ভূমিকা’য় বলা হয় : ‘প্রথম রেনেসাঁস ছিল কলকাতাকেন্দ্রিক। দ্বিতীয় রেনেসাঁস হচ্ছে 888sport appকেন্দ্রিক। এর পূর্বাভাস পার্টিশনের পূর্বেই সূচিত হয়েছিল 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনতিকাল পরে। … তখন একে বলা হতো ‘বুদ্ধির মুক্তি’ আন্দোলন। … এক্ষেত্রেও প্রবাহিত হচ্ছিল রিভাইভালের স্রোত। মুসলিম রিভাইভালের। … রিভাইভালের স্রোতের তোড়ে দেশ ভেঙে যায়। তারপর যখন ভাষার প্রশ্নে 888sport cricket BPL rateে ফেব্রুয়ারির শহীদের রক্তে 888sport appর মাটি রঞ্জিত হয়, তখন সে মাটিতে জন্ম নেয় দ্বিতীয় রেনেসাঁস। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের রক্ত তাকে আরো শক্তি যোগায়। ‘বাংলার রেনেসাঁস’ না বলে এর নাম রাখা যাক ‘888sport appsের রেনেসাঁস’।’২৯ 888sport appsের পুনরুত্থান নিয়ে অন্নদাশঙ্করের এই যে রেনেসাঁস-ভাবনা, যত দিন যাচ্ছে তার উজ্জ্বলতা ধীরে ধীরে প্রকাশ পাচ্ছে। হয়তো অনুকূল পরিবেশ ও প্রেরণায় তা একদিন বিশেষ সার্থকতা নিয়ে উপস্থিত হবে।
888sport appsের অভ্যুদয়ের পর 888sport appয় এসে অন্নদাশঙ্কর যে-পরিবর্তন দেখেছিলেন তা এক-অর্থে বিস্ময়কর বটে, তবে জনগণের সংগ্রামের মহিমায় তা অসম্ভব নয় মোটেও। তাঁর নিরীক্ষণে ধরা পড়েছে : ‘ইংরেজ আমলের মতো পাকিস্তানী আমলটাও হাওয়ার সঙ্গে গেছে। গন্ উইথ দি উইন্ড। … জাতির জনক বলে বিখ্যাত যে কায়দে আজম জিন্না তাঁর ফোটো দূরের কথা নামটাও খুঁজে পাওয়া যায় না। জিন্না অ্যাভিনিউ এখন বঙ্গবন্ধু সড়ক। জাতির পুনর্জন্ম হয়েছে। নতুন জনক বঙ্গবন্ধু। আর ওই যে চাঁদ-তারা আঁকা পাকিস্তানী নিশান এখন ওর জায়গায় উড়ছে সবুজ সোনালী [লাল] পতাকা। চব্বিশ বছরের মধ্যে ধর্মভিত্তিক প্রদেশ ভাষাভিত্তিক দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। এই যে রূপান্তর এটা কি বৈপ্লবিক নয়’?’৩০ এই ‘বৈপ্লবিক রূপান্তরের’ যিনি ঋত্বিক, অন্নদাশঙ্করের চোখে সেই মহানায়কের ছবিটি এই রকম : ‘বঙ্গবন্ধু সাধারণ মাপের মানুষ নন। দেখতেও যেমন দীর্ঘায়ত ব্যক্তিত্বেও তেমনি সমুচ্চ।’৩১
একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠন এবং প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি পালন সহজ নয়, সে-কথা অন্নদাশঙ্কর বারবার 888sport app download for android করিয়ে দিয়েছেন। নানা সমস্যার কথা তিনি উল্লেখ করেছেন – বিশেষ করে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকট-সমস্যার কথা। ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবোধই ছিল পূর্ববঙ্গের মানুষের জাগরণ ও সংগ্রামের প্রধান প্রেরণা। তাই আর-একটি সমস্যাও তাঁর নজরে আসে, তা ভাষাকেন্দ্রিক – শিক্ষার মাধ্যম হবে কোন ভাষা ও সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন বিষয়ে।
অফিস-আদালতে সরকারি নির্দেশ-মোতাবেক বাংলার ব্যবহার সম্পর্কে নানা অজুহাত ও অনীহা ছিল হতাশাব্যঞ্জক। অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব নিজে এ-বিষয়ে ছিলেন আক্ষরিকভাবেই আন্তরিক ও উদ্যোগী। এ-প্রসঙ্গে অন্নদাশঙ্করের ভাষ্য : ‘সরকারী কর্মচারীরা ইংরেজীর অভ্যাস ছাড়তে কুণ্ঠিত, কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কাছে যেসব ফাইল যায় তাদের উপর তিনি বাংলাতেই আদেশ দেন। 888sport app মন্ত্রীরা তাঁর অনুসরণ করেন। রাষ্ট্রপ্রধানও। 888sport appsের স্বাধীনতার আদি কারণ বাংলাভাষা। তার লক্ষ্যও জনগণের মুখের ভাষায় শিক্ষাদীক্ষা ও রাষ্ট্রকর্ম পরিচালনা। কিন্তু রাতারাতি বাংলা প্রবর্তনেও নানান বাধা।’৩২ দেশের সমস্যাসংকুল এমন নাজুক পরিস্থিতিতে অন্নদাশঙ্কর ভরসা রাখেন বঙ্গবন্ধুর সদিচ্ছা আর নেতৃত্বে।
নয়
মুক্তিযুদ্ধোত্তর 888sport appsে সমস্যা ছিল, সংকট ছিল – তার ওপরে ছিল নানা ষড়যন্ত্র – সে-ষড়যন্ত্র ছিল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক। একটা বহুমুখী বিস্ফোটকের মতো অবস্থা ছিল 888sport appsের। রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক সংকট, সামাজিক বিশৃঙ্খলা, অবৈধ অস্ত্রের অবাধ ব্যবহার, খুন-সন্ত্রাস-ডাকাতি-লুট-রাহাজানি, সেনাবাহিনী-রক্ষীবাহিনীর টানাপড়েন, পরাজিত স্বাধীনতা-বিরোধীদের তৎপরতা, মৌলবাদী শক্তির ক্রম-উত্থান, চরমপন্থী রাজনৈতিক শক্তির নাশকতা, রিলিফ বিতরণ ও উন্নয়নকাজে দুর্নীতি, কারো কারো ক্ষমতার অপব্যবহার, ভারত-বিরোধিতা, আওয়ামী লীগের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব-বিভাজন-উপদল সৃষ্টি, বিদেশি ষড়যন্ত্রে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ, কালো টাকার বাড়-বাড়ন্ত, চরম বেকারত্ব – এই ঘটনাবলি অনেকাংশে জাতীয় ঐক্যের অন্তরায় ও জন-অসন্তোষের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অন্নদাশঙ্কর কয়েকবার 888sport appয় এসে এই অবক্ষয় ও সংকট প্রত্যক্ষ এবং হতাশার সঙ্গে তার উল্লেখও করেন। ঐক্যবদ্ধভাবে এই অবস্থা উত্তরণে ও দেশের সার্বিক উন্নয়নের চিন্তায় বঙ্গবন্ধু একদলীয় শাসন ব্যবস্থার দিকে ঝুঁকে পড়েন। এই লক্ষ্যে ১৯৭৫-এর ২৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে গৃহীত সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর বলে দেশে সংসদীয় সরকারের বদলে রাষ্ট্রপতি-শাসিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরের মাসে, ফেব্রুয়ারির ২৪ তারিখে দেশের সব রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে গঠিত হয় একক রাজনৈতিক দল 888sport apps কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (‘বাকশাল’)। বঙ্গবন্ধু হন এর সভাপতি। এই পরিবর্তনে দেশে-বিদেশে কিছু প্রতিক্রিয়াও দেখা দেয়। অন্নদাশঙ্করও, তাঁর বিবেচনায়, এই ঝুঁকিপূর্ণ ও গণতন্ত্রের চেতনাবর্জিত ‘সোভিয়েত মডেলে’ তুষ্ট হন না, তিনি বলেন : ‘প্রথম ও দ্বিতীয়বার 888sport apps থেকে ফিরে আমি কয়েকটি 888sport live লিখি। তৃতীয়বার কিন্তু লেখনীর মুখ বন্ধ করি। মুখ খুললে মনে লাগত। দেশকে স্বাধীন করা যেমন তাঁর সুকীর্তি, তেমনি তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে তার মঙ্গল করতে যাওয়া তাঁর মতিভ্রম। তা বলে সপরিবারে নিধন তো তাঁর প্রাপ্য নয়। দারুণ শক ও শোক পাই। মৌনভঙ্গ করে লিখি কাঁদো, প্রিয় দেশ।’৩৩
জাতীয় সংকট উত্তরণে বঙ্গবন্ধু যে পথ ও পন্থা গ্রহণ করেছিলেন, তাতে অন্নদাশঙ্করের সায় ছিল না। অপ্রিয় সত্যভাষণের জন্যে চাই নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গি, বিবেকের নির্দেশ, সাহসী মনোভাব – অন্নদাশঙ্কর এই গুণাবলি অর্জন শুধু করেননি, নিত্য অনুশীলন করেছিলেন – তাই অনেক সময় তাঁর প্রিয় মানুষ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে একমত হতে পারেননি, ফলে তাঁর সমালোচনা করতেও কুণ্ঠাবোধ করেননি। তাঁর লেখায় তিনি উদাহরণ-সহযোগে নিজের যুক্তি ও মত তুলে ধরেন। তাঁর আপত্তির কারণ ছিল এই : ‘আমরা অবাক হয়ে দেখি 888sport appsের সংবিধান সংশোধিত হয়েছে। পার্লামেন্ট আছে, কিন্তু তাতে বিরোধী পক্ষ নেই। সরকারপক্ষই একমাত্র পক্ষ। … দুই পক্ষ নিয়েই গণতন্ত্র নামক পক্ষী। তার একটা পক্ষ ছেদ করলে তাকে গণতন্ত্র বলে চেনা যায় কি? তারপর প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা হলো সর্বময় কর্তার। … শেখ সাহেব স্বয়ং হলেন প্রেসিডেন্ট।’৩৪ ভারাক্রান্ত মনে অন্নদাশঙ্কর মন্তব্য করেছেন : ‘সংবিধানের আমূল পরিবর্তন মুজিবের জীবনের এ্যান্টিক্লাইমাক্স’।’৩৫ 888sport apps ও বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ অনুরাগী হিসেবে, তাঁর বিবেচনায় এই আত্মঘাতী পরিবর্তনকে, তিনি মেনে নিতে পারেননি – বিবেকের তাড়নায় বলতে বাধ্য হয়েছেন : ‘রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রয়োজন ছিল এ বিষয়ে আমিও নিঃসন্দেহ। কিন্তু পরিবর্তনটা অন্য কোনো উপায়ে ঘটানো যেত না, এ যুক্তি মেনে নেওয়া আমার পক্ষে সম্পূর্ণ অসম্ভব।’৩৬ বঙ্গবন্ধুর এই ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’ সম্পর্কে নিজের ভিন্নমত জানিয়ে অন্নদাশঙ্কর তাঁকে চিঠি লিখতে চেয়েছিলেন – পরে ভেবে দেখেন : ‘কিন্তু চিঠি লিখলেও কোনো ফল হতো না। কারণ শেখ সাহেবের অভীষ্ট ছিল দ্বিতীয় বিপ্লব।’৩৭ কেন ‘ফল হতো না’, তার বিশদ ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। দেশের কল্যাণ ও উন্নতির জন্যে বঙ্গবন্ধুর অভিপ্রায় ও সংকল্প যে সৎ ও মহৎ ছিল, তাতে অন্নদাশঙ্করের কোনো সংশয় ছিল না – তবে এর পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি সহমত পোষণ করতে পারেননি। তাই এই উদ্যোগের বিপদ সম্পর্কে তিনি সতর্ক করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এ-ছিল তাঁর ‘হীরো’র প্রতি গুণগ্রাহী শুভার্থীর পরামর্শ ও সৎ-সমালোচনা – বিদ্বেষ বা নিন্দার কোনো অভিসন্ধি ছিল না এখানে। তিনি ছিলেন সত্যসন্ধ ও গণতন্ত্রের পূজারি – স্তুতি ও তোষণে অভ্যস্ত বা বিশ্বাসী ছিলেন না – তাই 888sport appsের ইতিহাসের এক চরম ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকবদলের কালে বিবেকের তাড়নায় এই মূল্যায়নে বাধ্য হয়েছিলেন।
দশ
অন্নদাশঙ্করের সব কথাই গ্রহণযোগ্য, সব সিদ্ধান্তই অকাট্য, সব তথ্যই নির্ভুল – এ-কথা মনে করার কোনো কারণ নেই। তাঁর ভেতরেও আবেগ ও জনশ্রুতির প্রভাব সিদ্ধান্ত-নির্মাণে কখনো কখনো যে কাজ করেনি তা নয়। অন্নদাশঙ্কর তাঁর এক বন্ধুর দোহাই দিয়ে এক লেখায় উল্লেখ করেছেন : ‘আমার এক বন্ধু আমাকে অনেকদিন আগেই বলে রেখেছিলেন যে 888sport apps যারা হাসিল করেছে তারা বাংলা ভাষার নামে করলেও বাঙালী মুসলমানের জন্যেই করেছে। হিন্দুর অস্তিত্ব ওদের দিক থেকে একটা অবাঞ্ছিত উপসর্গ।’৩৮ অন্নদাশঙ্করের এই অনামা ‘বন্ধু’কে তাঁর ইতিহাসবিরোধী একদেশদর্শী ধারণার জন্যে যথার্থ শুভবুদ্ধির মানুষ হিসেবে গ্রহণ করতে দ্বিধা থেকে যায়। আর ‘বন্ধু’র এই মন্তব্য, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রেরণা, লক্ষ্য ও আদর্শ যে অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধ, তাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। আর এই তথ্য ও তত্ত্বকে মান্য করলে বা প্রশ্রয় দিলে মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর সারাজীবনের সম্প্রদায়-সম্প্রীতির চেতনাকেই অগ্রাহ্য করা হয়। ‘বন্ধু’র এই বক্তব্য ভিন্ন সূত্রে কথিত অন্নদাশঙ্করের নিজের কথাতেই তো খারিজ হয়ে যায়, যখন তিনি বলেন : ‘পূর্ব পাকিস্তানের লোক পশ্চিম পাকিস্তানের অগণতান্ত্রিক একাধিপত্য থেকে মুক্তি লাভ করতে ত্রিশ লক্ষ প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিল। … পূর্ব পাকিস্তানী মুসলমানদের সঙ্গে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানরাও যোগ দিয়েছিল। সুতরাং সেটা ছিল বাঙালীদের জাতীয় সংগ্রাম। ‘জয় বাংলা’ বলতে বোঝায় জয় বাংলা ভাষা, জয় 888sport apps ও জয় বাঙালী জাতি। এর মধ্যে কোনো সাম্প্রদায়িক বাছবিচার ছিল না। যারা প্রাণ দিল তাদের মধ্যে ভেদবুদ্ধি ছিল না। … গণপ্রজাতন্ত্রী 888sport apps রাষ্ট্রকে করা হল ধর্মনিরপেক্ষ। এই যে পরিবর্তন এটা ’৪৭ সালের পরিবর্তনের চেয়ে আরও অগ্রসর। এই যে নতুন রাষ্ট্র এটা পাকিস্তানের মত মুসলিম সম্প্রদায়ের একার রাষ্ট্র নয়। এটা ধর্মনির্বিশেষে দেশের সব সম্প্রদায়ের নাগরিকদের রাষ্ট্র। এখানকার নির্বাচনপদ্ধতিও অসাম্প্রদায়িক।’৩৯
মুজিব-হত্যার পর এই চেতনা ও পদ্ধতি সাময়িক বিনষ্ট হয়, কিন্তু তাই বলে মুক্তির অভিপ্রায় ও মুক্তিযুদ্ধের সূচনাকালীন আদর্শ ও চেতনা কী মিথ্যে হয়ে যায়! অনুদার ‘বন্ধু’র এই ধারণা এক বড় ভ্রান্তি ও বিতর্কের জন্ম দেয়।
এগারো
১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের প্রত্যুষে গণপ্রজাতন্ত্রী 888sport appsের রাষ্ট্রপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী সামরিক বাহিনীর কতিপয় দেশবৈরী ঘাতকের হাতে, দুই কন্যা বাদে, সপরিবার নিহত হন। দিনটি ছিল ভারতের স্বাধীনতা দিবস – সেই উপলক্ষে অন্নদাশঙ্কর ‘প্রীতি সম্মেলনে’ আমন্ত্রিত হয়েছিলেন রাজভবনে। সেখানেই এই মর্মান্তিক শোকাবহ খবরটি তিনি শোনেন তাঁর এক বন্ধুর কাছে। এই খবর শুনে তাঁর যে মানসিক প্রতিক্রিয়া হয়, সে-সম্পর্কে জানিয়েছেন : ‘আমার চোখে অন্ধকার নেমে আসে। আমি দুই হাতে তাঁর বাহু চেপে ধরি। নইলে মাথা ঘুরে পড়ে যেতুম।’৪০ এই অবিশ্বাস্য খবরটি তিনি ওই আসরে উপস্থিত আর-এক বন্ধুর কাছ থেকেও যাচাই করে নেন। এই শোক তাঁর অন্তরকে কাতর করে তোলে – ‘তাই আমার মন জুড়ে ধ্বনি ওঠে, ‘হে মোর দুর্ভাগা দেশ’। যখন শুনি মুক্তিদাতা মুজিব নিহত হয়েছেন। পশ্চিমাদের হাতে নয়, বাঙালীদেরই হাতে।’ ৪১ শুধু কী তাই, যিনি ছিলেন একটি রাষ্ট্রের স্থপতি – জাতির জনক – এই শতাব্দীর বিশ্ব-ইতিহাসের এক 888sport app download for androidীয় ব্যক্তিত্ব – তাঁকে যেভাবে সপরিবার হত্যা করা হয়েছে, তা মর্মান্তিক ও অকল্পনীয়! তাঁর মরণোত্তর অ888sport apk download apk latest version ও অবমাননা আরো বেদনাদায়ক ও দুর্ভাগ্যজনক। অন্নদাশঙ্কর ক্ষোভে-খেদে উল্লেখ করছেন : ‘তাঁর জন্যে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করা হয়নি। রাষ্ট্রীয় শোকদিবস পালন করা হয়নি। রাজকীয় অন্ত্যেষ্টি হয়নি। তাঁর শূন্যস্থান পূরণ করেছেন যিনি তিনি দেশবাসীর প্রতি ভাষণে তাঁর নামটা পর্যন্ত উল্লেখ করেননি। দেশের জীবন থেকে তাঁকে মুছে ফেলা হয়েছে। শুধু ইহলোক থেকে নয়। যেন তিনি বঙ্গবন্ধু ছিলেন না, ছিলেন বঙ্গশত্রু। একদিন আগেও যা কেউ কল্পনা করতে পারেনি। ঘাতকদের তা হলে কত বেশী প্রভাব! যেন তারা ঘাতক নয়, হর্তা কর্তা বিধাতা।’ ৪২
অন্নদাশঙ্করের অন্তরে এই শোকের আবেগ কেমন ফেটে পড়েছে, তার আরো একটি প্রমাণ মেলে তাঁর আরেক শোককাতর বন্ধু মনোজ বসুর উদ্দেশে যখন বলেন : ‘আসুন, আমরা দু’জনে বসে কাঁদি।’৪৩ শোকের গভীরতা কত অতলস্পর্শী হলে এমন কথা বলা যায়! জাতির জনকের এই যে নির্মম হত্যাকাণ্ড, – যা কিনা, অন্নদাশঙ্করের বিবেচনায়, ÔCrime of the centuryÕ I ÔCrime against the humanityÕ Ñ দুর্ভাগ্য ও অনুতাপের বিষয় – এর বিরুদ্ধে ‘888sport apps থেকে কোনও প্রতিবাদই উঠল না’, সেইসঙ্গে ‘ভারত থেকেও নয়’।৪৪ অবশ্য প্রত্যাশিত ব্যাপক প্রতিবাদ না হলেও প্রতিক্রিয়া তো কিছু হয়েইছিল, শওকত ওসমান প্রতিবাদে দেশত্যাগ করেছিলেন – তারপর এ-নিয়ে লিখেওছিলেন, দেশের ভেতরে থেকে নিরাপত্তার কারণে যা সম্ভব ছিল না – পশ্চিমবঙ্গে এ-বিষয়ে নাম করতে হয় মৈত্রেয়ী দেবীর। তবে কোনো প্রতিবাদই অন্নদাশঙ্করের গভীর শোকাবেগ, প্রবল দায়, অকৃত্রিম আন্তরিকতা ও নৈতিক সাহসকে অতিক্রম করতে পারেনি। তাঁর প্রতিবাদী শোকানুভূতি প্রকাশ পেয়েছে এইভাবে : ‘শেখ মুজিবুর রহমান শত অপরাধে অপরাধী হয়ে থাকতে পারেন, কিন্তু তাঁর নিধন যেভাবে হলো তা অমানুষিক। গভীরভাবে বিচলিত হয়ে আমি কাঁদতে কাঁদতে লিখি ‘কাঁদো, প্রিয় দেশ’।৪৫ এই মর্মস্পর্শী নামটি তিনি নেন অ্যালান প্যাটনের দক্ষিণ আফ্রিকা সম্পর্কে লেখা বিখ্যাত 888sport alternative link Cry, The Beloved Country থেকে।
মুজিব-হত্যাকাণ্ডে তাঁর দেশ ও সরকারের নীরবতা অন্নদাশঙ্করকে পীড়িত করেছিল। তাঁর প্রত্যাশা ছিল ইতিহাসের এক ঘৃণ্যতম ও মর্মান্তিক ট্র্যাজিক ঘটনার রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবাদ-জানানো ও শোক প্রকাশ করা হবে। এর ব্যত্যয় ঘটায় তাঁর ক্ষোভ ও বেদনা এবং কিছু পরিমাণে শ্লেষও প্রচ্ছন্ন থাকেনি – বলেছেন তিনি : ‘… 888sport appsের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ভারত সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থাকতে চায়। অমন যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যাঁর সঙ্গে শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর গভীর বন্ধুতা ছিল, তাঁর নির্মম নিধনের পর জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত হয়নি। জাতীয় শোকদিবস বা সপ্তাহ পালিত হয়নি। তিন দিনের আগে শ্রীমতী গান্ধী মুখ খুলে শোকটুকুও প্রকাশ করেননি বা করতে দেননি। কড়া সেনসরশিপ। শোক যদি বা প্রকাশ করা হলো নিন্দা করা নিষিদ্ধ হলো। আমরা 888sport live footballিকরা ইচ্ছা করে নির্বাক থাকিনি। আমাদের নির্বাক করে রাখা হয়েছে।’৪৬ তাঁর এই বক্তব্যের উৎস যে মানবিক বোধ ও বিবেকের দংশন এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর প্রীতি, অনুরাগ ও আকর্ষণ – সহজেই তা উপলব্ধি করা যায়। অন্নদাশঙ্করের প্রতিক্রিয়া এই সত্যকেই উন্মোচিত করে, সেদিন কূটনৈতিক কৌশলের কাছে মানবিক কর্তব্য পরাজিত হয়েছিল।
বারো
কাঁদো, প্রিয় দেশ – এই বইয়ের নাম-888sport live ও অন্য লেখাগুলোতেও মূলত 888sport apps ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আলোচনা রয়েছে। এই লেখাগুলোর মূল ভাব 888sport apps রাষ্ট্রের পূর্বাপর আদর্শিক রূপান্তর, বঙ্গবন্ধু-উত্তর এই দেশের সমস্যা-সংকট-ভবিষ্যৎ এবং প্রধানত বঙ্গবন্ধুর জন্যে শোকজ্ঞাপন ও তাঁর তথ্যনিষ্ঠ নির্মোহ মূল্যায়ন।
বঙ্গবন্ধু-হত্যার পর রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকারীদের বন্দুকের নলের মুখে 888sport apps ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিসর্জন দিতে বাধ্য হয়েছিল। সেই প্রেক্ষাপটে আলোচনা করতে গিয়ে অন্নদাশঙ্কর মন্তব্য করেছিলেন : ‘ধর্ম বনাম ভাষা, এইখানেই যে 888sport appsের ট্রাজেডী।’৪৭ কথাটি হয়তো সাময়িক সত্য, তবে শাশ্বত সত্য নয়। দেশভাগের পর পূর্ববঙ্গের বাঙালি, তারাই ভাষার জন্যে জীবন দিয়েছিল। ’৭৫-এর আগস্ট-ট্র্যাজেডির 888sport cricket BPL rate বছর বাদে পুনরায় মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর 888sport apps আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এ-কথাও 888sport app download for android করা প্রয়োজন যে, সাতচল্লিশের দেশভাগের আদর্শ ছিল ধর্ম এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা ছিল ভাষা। পূর্ববঙ্গ-888sport appsের বাঙালি ছাড়া কাছের ও দূরের আর-কোনো বাঙালি নিজের ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করতে এত মূল্য দেয়নি – অন্য ভাষা ও সংস্কৃতির
প্রভাব-প্রাধান্য মুক্ত হতে পারেনি – অস্বীকার-অগ্রাহ্য তো দূরের কথা!
অন্নদাশঙ্কর কালের প্রেক্ষাপটে ও আপন অভিজ্ঞতার আলোকে বঙ্গবন্ধুকে বিচার করেছেন – সেই মুজিব ইতিহাসের মুজিব, কিংবদন্তির মুজিব, মানুষের মুজিব। এই চিন্তানায়কের নিরপেক্ষ বিবেচনায় ও সূক্ষ্ম বিশ্লেষণে ইতিহাসের মহানায়কের যে অক্ষয় মূর্তি গড়ে উঠেছে তা এইরকম :
১. ‘ঐতিহাসিক ভূমিকা কার যে কখন সমাপ্ত হয় তিনি নিজেও তা জানেন না। মানুষকে ততখানি দূরদৃষ্টি দেওয়া হয়নি। আমার বিচারে শেখ সাহেবের ঐতিহাসিক ভূমিকার শেষ দিনটি ছিল যেদিন তিনি ইউনাইটেড নেশনসের অ্যাসেম্বলীতে 888sport appsের আসন থেকে বাংলা ভাষায় ভাষণ দেন। সঙ্গে সঙ্গে তার তর্জমা শোনানো হয় ও 888sport app দেশের সদস্যরা পৌনে এক ঘণ্টা ধরে শোনেন। পরে একে একে এগিয়ে এসে তাঁকে অভিনন্দন জানান ও তাঁর সঙ্গে করমর্দন করেন।
আমরা যারা বাংলা ভাষায় কথা বলি ও লিখি আমাদের পক্ষেও একটি আনন্দের দিন। আমরাও মনে মনে তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছি ও ধন্য ধন্য করেছি। সেইখানেই তাঁর জীবনের ক্লাইম্যাক্স।’ ৪৮
২. ‘আমার সঙ্গে সাক্ষাৎকারের জন্যে সেবার একজন সাংবাদিক এসেছিলেন। তাঁর প্রশ্নের উত্তরে বলি শেখ সাহেব অত্যন্ত দয়ালু মানুষ। কড়া হাতে শাসন করা তাঁর স্বভাবে নেই। মনে হলো সাংবাদিকেরও সেইরূপ ধারণা। সকলেই বুঝতে পারছিল যে শেখ সাহেব হালে পানি পাচ্ছেন না। কিন্তু তিনি ভিন্ন আর কে হাল ধরতে পারেন? দ্বিতীয় ব্যক্তি থাকলে তো? তাঁর মতো এত সাহসই বা কার? জনপ্রিয়তাই বা কার? মোহন ব্যক্তিত্বই বা কার?’৪৯
৩. ‘শেখ সাহেবকে নানাভাবে সাহায্য করেছিল ভারত ও পৃথিবীর 888sport app দেশ। পরের সাহায্যের উপরে নির্ভর করেই তিনি গৃহযুদ্ধ এড়াতে পেরেছিলেন। সাহায্য যখন কমতে কমতে তলানিতে ঠেকে তখন তিনি সংকল্প করেন যে তাঁর জাতিকে তিনি ভিখারীর জাতিতে পরিণত হতে দেবেন না। তাকে আত্মনির্ভর হতে শেখাবেন। যারা খাটবে না তাদের খাটাবেন। যারা নির্বিচারে বংশবৃদ্ধি করবে তাদের বংশবৃদ্ধি রোধ করবেন। 888sport appsের পত্রিকায় আমি এসব উপায়ের কথা পড়েছি যা সংস্কারমুক্ত পাশ্চাত্য দেশগুলির পক্ষেও ঘোরতর আধুনিক।’ ৫০
৪. ‘অতিদর্প নেপোলিয়নেরও ছিল, জুলিয়াস সীজারেরও ছিল। লোকে সে দোষ ভুলে গেছে। মনে রেখেছে শুধু এই উপকথা যে নেপোলিয়নের যুগটাই ছিল ফরাসীদের সব চেয়ে গর্বের যুগ। আর জুলিয়াস সীজারের যুগটাই ছিল রোমানদের সব চেয়ে গৌরবের যুগ। তেমনি 888sport appsের নাগরিকরাও মনে রাখবে এই উপকথা যে মুজিবের যুগটাই ছিল তাদের সব চেয়ে পৌরুষের যুগ। … মুজিব ছিলেন 888sport appsের আত্মা। তিনি রেখে গেছেন একটা ষবমবহফ। 888sport apps চিরকাল সেটা 888sport app download for android রাখবে।’ ৫১
৫. ‘শেখ মুজিবুর রহমান নেতাজী সুভাষের পরে বাঙালীদের সর্বশ্রেষ্ঠ বীর। দেশ দু’ভাগ হলেও জাতি দু’ভাগ হয়নি। জাতি তাঁকে চিরকাল মনে রাখবে। নিকট ভবিষ্যতে অত বড়ো বীর আর দেখা দেবেন বলে বিশ্বাস হয় না। তাঁর আত্মার শান্তি প্রার্থনা করি। সমবেদনা কে কাকে জানাবে? আমরাও শোকে মুহ্যমান। আমি এই সাতদিন নিরামিষ আহার করব।’ ৫২
তেরো
বঙ্গবন্ধুর প্রবল আত্মবিশ্বাস ছিল যে, কোনো বাঙালি তাঁর জীবনের শঙ্কার কারণ হবে না। তাই তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে আদৌ চিন্তিত ছিলেন না। শোনা যায়, বিদেশি গোয়েন্দা-সূত্রও তাঁকে এইধরনের যড়যন্ত্র সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছিল, কিন্তু তিনি তা আমলে নেননি। ঘনিষ্ঠজনদের সাবধানবাণীও তিনি সহাস্যে উপেক্ষা করেন। কিন্তু নানা মহলেই এই নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু যাঁকে নিয়ে দুর্ভাবনা, তিনি অসীম আস্থায় নিশ্চিন্ত ছিলেন। 888sport appয় অন্নদাশঙ্কর নৈশভোজের আমন্ত্রণ-রক্ষা করতে গিয়ে ভারতীয় পদস্থ কূটনীতিকের কাছেও বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ষড়যন্ত্রের কথা শোনেন। তাঁরাও চিন্তিত মনে নির্বিকার বঙ্গবন্ধুকে খবরটি জানিয়েছিলেন। সবচেয়ে মারাত্মক যে-তথ্যটি অন্নদাশঙ্কর জানিয়েছেন, তা প্রায়-অবিশ্বাস্য ও শিহরণ-জাগানো খবর। আগস্ট-ট্র্যাজেডির বছর দেড়েক আগের কথা। 888sport appsের এক সংস্কৃতিমনস্ক মুসলিম ভদ্রলোক শান্তিনিকেতনে এসেছিলেন তাঁর কন্যাকে বিশ্বভারতীতে ভর্তি করার উদ্দেশে।
কথাপ্রসঙ্গে তিনি তাঁর পূর্বপরিচিত এক ভদ্রমহিলাকে সরাসরিই এই কথা বলে বসেন : ‘দেখবেন রুচিরাদি, একদিন আমরা শেখ মুজিবকে সপরিবারে হত্যা করব।’ কথক এখানে বীতশ্রদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর পরিণামফলের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, নাকি প্রতিক্রিয়াশীলদের চরম মনোভাব সম্পর্কে অবহিত করেন এই কথা বলে, সেই বিষয়টি অস্পষ্ট। বক্তব্যের অর্থ-ব্যঞ্জনা যাই হোক, এ-কথা শুনে অন্নদাশঙ্কর বিস্মিত ও হতবাক হন বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর। ফলে মুজিব হত্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ তাঁর কাছে উন্মোচিত হয় – তিনি মন্তব্য করেন : ‘হত্যার পরিকল্পনাটি তাহলে বাকশাল গঠন ইত্যাদি স্বৈরাচারী পদক্ষেপের জন্য নয়। পাকিস্তান ভেঙে 888sport apps গড়ার জন্য। সেটাই শেখ মুজিবের আসল অপরাধ এবং তার জন্য একদিন তাঁকে চরম দণ্ড পেতে হল। তাও সপরিবারে।’৫৩ এই হত্যাকাণ্ডের পর যাঁরা রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন, তাঁদের মনোভাব ও কর্মকাণ্ডের ভেতর দিয়ে এই ধারণা নির্ভুল প্রমাণিত হয়। এতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শ যে শুধু ভূলুণ্ঠিত হয় তাই নয়, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত সংবিধান, রাষ্ট্রের চার মূল নীতি, ‘জয় বাংলা’ধ্বনি বিসর্জিত বা নিষিদ্ধ হয়। ভাষা-আন্দোলন, বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার 888sport apps আবার ধর্মীয় মৌলবাদ ও পাকিস্তানের আদর্শে উলটোপথে যাত্রা শুরু করে – 888sport apps প্রবেশ করে মধ্যযুগীয় চেতনা ও রক্ষণশীলতার অন্ধকার যুগে।
চোদ্দো
১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ – দীর্ঘসময়, এই কালপর্বে বুড়িগঙ্গা দিয়ে অনেক জলধারা প্রবাহিত হয়েছে। এরই প্রেক্ষাপটে এক প্রত্যাশিত অথচ অবিশ্বাস্য ঘটনার সাক্ষী হলো বাঙালি – আবার সমুখে এলো ‘শেখ শুভোদয়া’র আখ্যান – আরেক শেখের বিস্ময়কর আবির্ভাব ঘটলো – শেখ হাসিনার – বঙ্গবন্ধুর প্রিয় আত্মজার। মুজিবের – বঙ্গবন্ধুর – জাতির জনকের আদর্শিক উত্তরাধিকার যিনি বহন করেন। অনেক ধৈর্য-সাহস-সংগ্রামের ভেতর দিয়ে শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজকে সম্পন্ন করার ব্রত।
অন্নদাশঙ্কর প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যতদিন বঙ্গবন্ধু-হত্যার বিচার না হবে, ততদিন তিনি 888sport appsে আসবেন না। অক্ষরে অক্ষরে সে-কথা রেখেছিলেন। তিনি বলেছেন : ‘এই দেশ আমার প্রিয় দেশ। এই দেশের মানুষ আমার প্রিয় মানুষ। … আমি এই দেশের প্রতি একপ্রকার নাড়ীর টান অনুভব করি। এই দেশের মানুষের সঙ্গে আমার আত্মীয়তার ডোর পঞ্চাশ বছরেও ছিন্ন হয়নি। এখন আমার বয়স বিরানব্বই বছর। শরীর অপটু। গত নয় বছর আমি বিমানযাত্রা করিনি। একবার শিলাইদহ যাত্রার আহ্বান পেয়েছিলুম। সম্মত হইনি বয়সের ও শরীরের দোহাই দিয়ে। কিন্তু আসল কারণটি ছিল আমার অন্তরের মানা। যতদিন না মুজিব হত্যার প্রতিবাদ হচ্ছে ও মুজিবের 888sport sign up bonusসৌধ নির্মিত হচ্ছে ততদিন আমি 888sport appsে যাব না।’ ৫৪ ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা 888sport appsের প্রধানমন্ত্রী হন এবং সরকারের তরফে ‘মুজিব হত্যার প্রতিকারের চেষ্টা’, তাঁর ‘888sport sign up bonusরক্ষা’র প্রয়াস ও পনেরোই আগস্ট শোকদিবস পালনের উদ্যোগ গৃহীত হয়। ফলে তাঁর প্রত্যাশা পূরণ হয় এবং অবশেষে তিনি 888sport appsের ‘বিজয় উৎসবের রজতজয়ন্তী উপলক্ষে’ ১৯৯৬ সালের ১৪-১৮ ডিসেম্বর বিশেষ অতিথি হিসেবে 888sport app যাওয়ার 888sport apps সরকারের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন। অন্নদাশঙ্কর মন্তব্য করেছেন : ‘এই আমন্ত্রণটির জন্য আমি 888sport cricket BPL rate বছর ধরে প্রতীক্ষা করেছি।’ ৫৫
দীর্ঘ ব্যবধানে তাঁর 888sport sign up bonusর শহর 888sport appয় এসে যা দেখেন, তাতে খানিক বিস্মিত, খানিক উৎফুল্ল, খানিক হতাশ হন। তবে তিনি খুশি হন 888sport cricket BPL rate বছরের জমাট-বাঁধা দুঃখ-কষ্ট-শোকের নিরসন-প্রয়াসে। 888sport appয় খবরের কাগজের সঙ্গে আলাপে তিনি এবারের 888sport app-সফর সম্পর্কে মন-খুলে বলেন : ‘আমি খুব খুশি হয়েছি। এতকাল পরে একটা অন্যায়ের প্রতিকার হলো, যারা মুজিবকে হত্যা করেছিল, সেই ঘাতকদের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া অসহায়, এতিম মেয়েটি যে আবার এ দেশের প্রধানমন্ত্রী হবে এটা কেউ ভাবতে পারেনি। … আমি খুব খুশি হয়েছি। খুব খুশি হয়েছি।’ ৫৬ এ প্রসঙ্গে একটি তাৎপর্যপূর্ণ উক্তি করেন : ‘888sport cricket BPL rate বছর পরে আওয়ামী লীগ ফিরে আসায় বঙ্গবন্ধুর পুনর্জীবন হয়।’ ৫৭ তবে দীর্ঘকাল দেশবাসীর নীরবতা তাঁকে পীড়িত ও ক্ষুব্ধ করে। শেষবারের মতো 888sport appয় এলে এক দৈনিক পত্রিকা বিজয়ের রজতজয়ন্তী পালনের অংশ হিসেবে তাঁকে সংবর্ধনা দেয়। এই অনুষ্ঠানে স্পষ্টভাষী অন্নদাশঙ্কর খোলামেলা বলেন : ‘২১ বছর পর আজ মুক্তিযুদ্ধ ও শেখ মুজিব নিয়ে আপনাদের কর্মসূচিতে খুশি হয়েছি। কিন্তু ২১ বছর ঘুমিয়ে ছিলেন নাকি?’৫৮ ‘ঘুমিয়ে থাকা’র এই কথাটি বলে তিনি এদেশের মানুষকে আত্মগ্লানি থেকে মুক্তিলাভের জন্যে কঠিন আত্মসমালোচনার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু-হত্যার বিচার-প্রতিরোধক আইন ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলের বিল পাশ হওয়া প্রসঙ্গে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তিনি বলেছিলেন : ‘মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হবার ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে। তবে এ বিল পাস হওয়াটাই যথেষ্ট নয়। আংশিক কাজ হয়েছে মাত্র। মৃত্যুর আগে আমি মুজিব হত্যার বিচার এবং খুনিদের উপযুক্ত শাস্তি দেখে যেতে পারলে আমার কষ্ট লাঘব হবে।’৫৯ বঙ্গবন্ধু-হত্যার বিচার-প্রক্রিয়া অন্নদাশঙ্কর বেঁচে থাকতেই শুরু হয়। আদালতের রায়ে আত্মস্বীকৃত সব ঘাতকই সর্বোচ্চ দণ্ডে দণ্ডিত হয়। পলাতক ছাড়া, বঙ্গবন্ধুর খুনি অন্য আসামিদের দণ্ড যথারীতি কার্যকর হয়। অবশেষে দীর্ঘকাল পর দেশ হয় কলঙ্কমুক্ত।
বঙ্গবন্ধুর 888sport sign up bonus মানুষের মনে চিরস্থায়ী করে রাখা যায় কীভাবে অন্নদাশঙ্কর সে-বিষয়েও চিন্তা করেছেন।একটি 888sport sign up bonusসৌধ নির্মাণের প্রতি তিনি বরাবর জোর দিয়েছেন। ১৯৯৬-এ 888sport apps সফরের সময়ে তাঁর মনে হয়েছে : ‘শেখ মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনা এখন 888sport apps সরকারের প্রধানমন্ত্রী।শুনছি তিনি পিতার ধানমন্ডির বাসভবনকে একটি জাদুঘরে পরিণত করতে চান। অতি উত্তম সিদ্ধান্ত। কিন্তু সেটা বঙ্গবন্ধুর মতো বড় মাপের ব্যক্তির পক্ষে যথেষ্ট নয়। তিনি কি শের-এ-বাংলা ফজলুল হক সাহেবের চেয়ে কিংবা খাজা নাজিমউদ্দিন সাহেবের চেয়ে কিংবা শাহিদ সুহরাবর্দি সাহেবের চেয়ে কোনও অংশে খাটো? তাঁদের জন্য যদি 888sport sign up bonusরক্ষার ফলাও বন্দোবস্ত হয়ে থাকে তাহলে 888sport appsের প্রতিষ্ঠাতার জন্য নয় কেন?’৬০ তিনি এই 888sport sign up bonusসৌধের একটি রূপরেখা দিয়ে বলেছেন : ‘… বঙ্গবন্ধুর একটি 888sport sign up bonusসৌধ রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে নির্মিত হবে। সেটিকে কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের অনুরূপ করলে সেটি 888sport appর একটি দ্রষ্টব্যস্থান হবে।’৬১ বিষয়টি আরেকটু খোলাসা করে তিনি জানান : ‘আমার নিজের মতে মেমোরিয়ালটির নাম রাখা উচিত ‘মুজিব মিনার’। যেমন শহীদ মিনার। মুজিবও তো এক হিসাবে শহীদ। … মিনারটি যদি 888sport appর উচ্চতম প্রাসাদের [১৯৯৬-এর ধারণায়] চেয়েও উচ্চ হয় তাহলে সারা শহরবাসীর নজরে পড়বে তাদের বাড়ি থেকে। শীর্ষস্থানে যদি আলো জ্বালিয়ে রাখা হয় তাহলে অন্ধকারেও দেখতে পাওয়া যাবে একটি তারার মত। সেই আলো সারারাত জ্বলবে।’ ৬২ এই যে ‘আলো জ্বালিয়ে রাখা’র প্রসঙ্গ – এর একটি ভিন্নতর ব্যঞ্জনাও আছে। এই ‘আলো’ – 888sport app download for androidের-চেতনার প্রতীক। মুজিবমনস্ক অন্নদাশঙ্করের অন্তরে ছিল মুজিবের জন্যে গভীর অনুরাগ ও ভালোবাসা – তাই তাঁর 888sport sign up bonusরক্ষায় মনোকল্পনায় গড়ে তুলেছিলেন এক অক্ষয় ‘মুজিব মিনার’।
অন্নদাশঙ্কর ছিলেন 888sport appsের একান্ত সুহৃদ ও শুভাকাঙ্ক্ষী। এই দেশের প্রতি নিজের জন্মভূমির মতোই তাঁর টান – নিত্য তার কল্যাণ কামনা করেছেন। এই দেশকে নিয়ে ছিলেন আশাবাদী – অদূর ভবিষ্যতে উন্নয়নের শিখরে উঠতে পারবে বলে দৃঢ় বিশ্বাস ছিল তাঁর। ১৯৯৬ সালে তিনি বলেছিলেন : ‘পঁচিশ বছর একটা রাষ্ট্রের ইতিহাসে এমন কিছু বেশি সময় নয়। ভুলভ্রান্তি কাটিয়ে উঠে 888sport apps এখন দ্বিতীয় সিকি শতাব্দীতে পা দিয়েছে। সামনে তার নতুন দিগন্ত। আমরা কেন আশা করব না যে সিঙ্গাপুর, হংকং, থাইল্যান্ড, তাইওয়ান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো 888sport apps একটি ‘টাইগার’ নেশন হয়ে উঠবে। এ টাইগার, রয়াল বেঙ্গল টাইগার। তাই সবার সেরা।’৬৩ প্রায় দুই যুগ আগে 888sport appsের উন্নয়ন-সম্ভাবনা সম্পর্কে তিনি যে অনুমান করেছিলেন, তা আজ সত্যে পরিণত হতে চলেছে।
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর বিষণ্ন মনে অন্নদাশঙ্কর লিখেছিলেন : ‘তখন যেটা সত্য ছিল এখনো সেটাই সত্য যে 888sport apps বলতে বোঝাত মুজিবের দেশ আর মুজিব বলতে বোঝাত 888sport appsের প্রতিষ্ঠাতা পিতা।এত বড়ো একটা ঐতিহাসিক সত্যকে রক্ত দিয়ে মুছে ফেললে সত্যটা মুছবে না, রক্তটাই পরে একদিন মুছে যাবে। আমরা সেদিনের প্রতীক্ষায় থাকব ও তখন যদি নিমন্ত্রণ পাই সানন্দে গ্রহণ করব।যাব মুজিবের কবরে মালা দিতে। অশ্রুসিঞ্চন করতে।’৬৪ 888sport cricket BPL rate বছর পর সেই সুযোগ মিলেছিল। ১৯৯৬-এর ডিসেম্বরে শেষবারের মতো তাঁর প্রিয় 888sport appsে এসেছিলেন, তাঁর প্রিয় দেশের বিজয়-উৎসবের রজতজয়ন্তীতে – এসেছিলেন তাঁর প্রিয় মানুষ ও ‘নায়ক’ শেখ মুজিবের প্রতি শোকাঞ্জলি নিবেদন করতে।
পনেরো
মুক্তিযুদ্ধের কালে তাঁর ‘নায়ক’কে নিয়ে অন্নদাশঙ্কর রায় লিখেছিলেন – ‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা/ গৌরী মেঘনা বহমান ততকাল রবে কীর্তি তোমার/ শেখ মুজিবুর রহমান’ – কালোত্তীর্ণ এই ছড়াটি। আর বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর তাঁর কলম থেকে বেরিয়েছিল বঙ্গবন্ধু 888sport app download for androidে একটি শোকমথিত চতুর্দশপদী – যাতে তাঁর শোক-বেদনা-ক্ষোভ-ঘৃণা-ধিক্কার সমন্বিত রূপ পেয়েছে :
নরহত্যা মহাপাপ, তার চেয়ে পাপ আরো বড়ো
করে যদি যারা তাঁর পুত্রসম বিশ্বাসভাজন
জাতির জনক যিনি অতর্কিতে তাঁরেই নিধন।
নিধন সবংশে হলে সেই পাপ আরো গুরুতর।
সারা দেশ ভাগী হয় পিতৃঘাতী সে ঘোর পাপের
যদি দেয় সাধুবাদ, যদি করে অপরাধ ক্ষমা।
কর্মফল দিনে দিনে বর্ষে বর্ষে হয় এর জমা
একদা বর্ষণ হয় বজ্ররূপে সে অভিশাপের।
রক্ত ডেকে আনে রক্ত, হানাহানি হয়ে যায় রীত।
পাশবিক শক্তি দিয়ে রোধ করা মিথ্যা মরীচিকা।
পাপ দিয়ে শুরু যার নিজেই সে নিত্য বিভীষিকা।
ছিন্নমস্তা দেবী যেন পান করে আপন শোণিত।
888sport apps! 888sport apps! থেকো নাকো নীরব দর্শক
ধিক্কারে মুখর হও। হাত ধুয়ে এড়াও নরক।
কৃতঘ্নতা ও বর্বরতার বিরুদ্ধে সেদিন তাঁর আবেদন ছিল বাঙালির চেতনা ও বিবেকের কাছে, শুভবুদ্ধি ও মনুষ্যত্বের কাছে।
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের যে অবিশ্বাস্য নৃশংসতা ও অমানবিকতা, তা অন্নদাশঙ্করকে শোকে মুহ্যমান, বেদনায় বিদীর্ণ, হাহাকারে পূর্ণ করেছিল। তাঁর হৃদয়ের অবিরল রক্তক্ষরণ কখনো রুদ্ধ হয়নি – তাঁর সান্ত্বনাহীন শোকাশ্রু কখনো শুকায়নি। 888sport sign up bonus-অনুভবে মনন-মানসে বঙ্গবন্ধুকে যেভাবে উপলব্ধি ও আবিষ্কার করেছেন, তা স্বদেশি-বিদেশি-স্বভাষী-স্বধর্মী – আর কেউ করেননি – করতে পারেননি। শোকাবেগে কাতর হয়ে মানববাদী বিবেকী জীবন888sport live chatী অন্নদাশঙ্কর রায় গাঢ়-উচ্চারণে বাঙালির কাছে, স্বদেশির কাছে, মানুষের কাছে ইতিহাসের মহানায়কের জন্যে শোকজ্ঞাপনের ও গ্লানিমোচনের যে আহ্বান-আবেদন করেছেন, তার উল্লেখ করেই একালের বিষাদ-সিন্ধুর যবনিকা টানি :
কাঁদো, প্রিয় দেশ। কাঁদো মুক্তিদাতা মুজিবের জন্যে। তাঁর সেই পরিচয়টাই ইতিহাসে অমর হবে। কাঁদো তাঁর সহমৃতা সাধ্বী সহধর্মিণীর জন্যেও, বালক পুত্রের জন্যেও। কাঁদো, কাঁদো, প্রিয় দেশ। …
গোটা বঙ্গোপসাগরের জল দিয়ে এই রক্ত মুছে সাফ করা যাবে না। বরং রক্ত লেগে রাঙা হবে বঙ্গোপসাগরের নীল জল।
কাঁদো, প্রিয় দেশ। তোমার চোখে যত জল আছে সব জল ঢেলে প্রক্ষালন করো এই রক্তাক্ত হাত।৬৬
তথ্যসূত্র
১. অন্নদাশঙ্কর রায় : অপ্রমাদ। কলকাতা, ১৯৬০।
২. আবুল আহসান চৌধুরী : কুষ্টিয়ার বাউলসাধক। কুষ্টিয়া, জানুয়ারি ১৯৭৪।
৩. অন্নদাশঙ্কর রায় : আমার ভালোবাসার দেশ। 888sport app, ফেব্রুয়ারি ২০০১; পৃ ১৩ : ‘সম্পাদকের ভূমিকা’।
৪. সুরজিৎ দাশগুপ্ত : ক্রান্তদর্শী অন্নদাশঙ্কর। কলকাতা, আগস্ট ২০০২; পৃ ১৩৪।
৫. অন্নদাশঙ্কর রায় : শতাব্দীর মুখে। কলকাতা, ২০০১; পৃ ১১৮।
৬. অন্নদাশঙ্কর রায় : মুক্তবঙ্গের 888sport sign up bonus, কলকাতা, পৌষ ১৪০৫; পৃ ১১-১২।
৭. ক্রান্তদর্শী অন্নদাশঙ্কর : পূর্বোক্ত; পৃ ১৩৬।
৮. অন্নদাশঙ্কর রায় : কাঁদো, প্রিয় দেশ। দে’জ সংস্করণ : জানুয়ারি ১৯৯৮; পৃ ২১।
৯. মুক্তবঙ্গের 888sport sign up bonus : পূর্বোক্ত; পৃ ১৮-১৯।
১০. কাঁদো, প্রিয় দেশ : পূর্বোক্ত; পৃ ২২।
১১. ওই; পৃ ২২।
১২. ওই; পৃ ২২।
১৩. আবুল আহসান চৌধুরী : অন্তরঙ্গ অন্নদাশঙ্কর। 888sport app, ফেব্রুয়ারি ২০০৪; পৃ ৫২।
১৪. কাঁদো, প্রিয় দেশ : পূর্বোক্ত; পৃ ২৩।
১৫. ওই; পৃ ২১-২২।
১৬. ওই; পৃ ২১।
১৭. ওই; পৃ ২৩।
১৮. ওই; পৃ ২৩।
১৯. ওই; পৃ ২৪।
২০. অন্নদাশঙ্কর রায় : শুভোদয়, কলকাতা, শ্রাবণ ১৩৭৯; ‘ভূমিকা’।
২১. ওই; ‘ভূমিকা’।
২২. ওই; পৃ ৮৬।
২৩. ওই; পৃ ১৪৮-৪৯।
২৪. ওই; পৃ ৯২।
২৫. ওই; পৃ ১৮৩-৮৪।
২৬. ওই; পৃ ২০৩-০৫।
২৭. ওই; পৃ ২৭।
২৮. অন্নদাশঙ্কর রায় : 888sport appsে। কলকাতা, ভাদ্র ১৩৮৬; পৃ ১২।
২৯. অন্নদাশঙ্কর রায় : বাংলার রেনেসাঁস, কলকাতা, ভাদ্র ১৩৮১; ‘ভূমিকা’।
৩০. 888sport appsে : পূর্বোক্ত; পৃ ৪-৫।
৩১. ওই; পৃ ৫৫।
৩২. ওই; পৃ ৬১।
৩৩. ওই; পৃ ৪ : ‘ভূমিকা’।
৩৪. কাঁদো, প্রিয় দেশ : পূর্বোক্ত; পৃ ১২-১৩।
৩৫. ওই; পৃ ৪৬।
৩৬. ওই; পৃ ৪৬।
৩৭. ওই; পৃ ১৭।
৩৮. ওই; পৃ ২৫।
৩৯. ওই; পৃ ১২৫-২৬।
৪০. ওই; পৃ ২৫।
৪১. ওই; পৃ ৩১।
৪২. ওই; পৃ ৩১।
৪৩. ওই; পৃ ৯।
৪৪. মুক্তবঙ্গের 888sport sign up bonus : পূর্বোক্ত; পৃ ২৪।
৪৫. কাঁদো, প্রিয় দেশ : পূর্বোক্ত; ‘ভূমিকা’।
৪৬. ওই; পৃ ৫৪।
৪৭. ওই; পৃ ৫০।
৪৮. ওই; পৃ ৪৫।
৪৯. ওই; পৃ ১১।
৫০. ওই; পৃ ২৯।
৫১. ওই; পৃ ৫০-৫১।
৫২. ওই; পৃ ৫২।
৫৩. ওই; পৃ ৮২।
৫৪. ওই; পৃ ৯৯।
৫৫. ওই; পৃ ১১৯।
৫৬. ওই; পৃ ১১০।
৫৭. মুক্তবঙ্গের 888sport sign up bonus : পূর্বোক্ত; পৃ ৩৩।
৫৮. কাঁদো, প্রিয় দেশ : পূর্বোক্ত; পৃ ১০১।
৫৯. ওই; পৃ ১১০-১১।
৬০. ওই; পৃ ৮৪-৮৫।
৬১. ওই; পৃ ৮৩।
৬২. ওই; পৃ ৮৫-৮৬।
৬৩. ওই; পৃ ৯৮।
৬৪. ওই; পৃ ৫০। ৬৫. ওই; পৃ ১৮।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.