বন্ধু জিন ও অভ্যর্থনা

বুলবন ওসমান

ফজলের খেয়াল, বয়স যত বাড়ছে, কারণে-অকারণে জন্মভূমি চোখে ভাসে। মনে পড়ে হাওড়া জেলার ঝামটিয়া গ্রামের সেই তিনতলা ভবনটির কথা। তখন গ্রামেগঞ্জে যে-ভাবে আঁতুড়ঘরকে গোয়ালঘরে রূপান্তরিত করা হতো তাদের বেলা তেমনটি হয়নি। একেবারে উঠোনের পর বারান্দা, তারপর যে-দুটি পাকা কক্ষ এর পুবদিকের কামরায় তার জন্ম। মায়ের মুখে শোনা প্রথম সন্তান হিসেবে সে মাকে খুব ভুগিয়েছে। তিনদিন ব্যথার পর শুকতারাশোভিত আকাশ … ফজরের আজানের সময় সে নয়ন মেলে।

সার্থক জনম আমার … গানটি প্রায় মনের মধ্যে ইদানীং গুনগুন করে। এই আলোকেই নয়ন রেখে মুদব … ধ্রুবতারা। মানুষের জীবনে অজানার মধ্যে এই একটি, কোথায় কখন কীভাবে আসবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ! মানুষ যতই নিজেকে হোমোস্যাপিয়েন্স বা বুদ্ধিমান জীব ভাবুক আসলে অবস্থান হোমোইরেকটাস – সিধে হয়ে চলা জীব।

শরৎ সকাল। পঁয়ত্রিশ মিনিট বিমানযাত্রা সেরে 888sport app থেকে নেতাজি সুভাষ বিমান আড্ডা।

অভ্যাগত অনুজ মানিক অধীর চোখে সাদর সম্ভাষণ, দাদা, ভালো আছেন!

ভালো। এদিকের সব কুশল?

হ্যাঁ।

মানিক, প্রোগ্রামটা একটু বদল করা যায়!

কী রকম?

যেমন ধরো, এখান থেকে সরাসরি তোমার বাড়ি খানাকুল না গিয়ে যদি মামাবাড়ি ঝামটিয়া যাই!

তাহলে এখান থেকে হাওড়া স্টেশন … ওখান থেকে বাগনান। তারপর অটো মিলবে … ঝামটিয়া …

কত সময় লাগবে?

ধরুন আড়াই থেকে তিন …

লেটস্ স্টার্ট।

প্রিপেইড ট্যাক্সি ধরে তারা হাওড়া।

বাগনানের দুটো টিকেট।

দশ মিনিটের মধ্যে গাড়ি পাওয়া গেল। লোকাল ট্রেন … তবু বসার জায়গা পায়। মার্তণ্ড মাথার ওপর। গরমটা অবশ্য ছ্যাঁকা দেওয়া নয়।

ফজল ঘড়ি দেখে, ঠিক এক ঘণ্টা দশ মিনিটে বাগনান।

বছর চার আগের দেখা সেই বাগনান আর নেই। আগে স্টেশন থেকে পা ফেললেই সামনে পড়ত বাজার। রুই-কাতলা কাটা হচ্ছে। লোকে কাটামাছ কিনে বাড়ি যাচ্ছে। গিয়েই রান্না চাপাবে। ব্যবস্থাটা তার মনঃপূত হয়। ঘরে কিছু না থাকলেও অসুবিধা নেই। মাছ আর সামান্য তরিতরকারি কিনে নিলেই হলো। ঘরের লোকদের ব্যতিব্যস্ত হতে হবে না।

 সেই বাজার এখন নেই। পাকা দোকানদারির সার। এরপর বাসস্ট্যান্ড। অটো আছে।

আমরা জয়পুরের বাস ধরব। মাঝে খালনা। নেমে যাব। মানিকের উক্তি।

গোটা তিনেক বাস। প্রথমটিতে বসার জায়গা নেই। অগত্যা দ্বিতীয় বাসে তাদের অবস্থান।

প্রথমটি ছাড়ার আগে হেলপার কিশোর গলা ফাটায় … জয়পুর জয়পুর … খাল্লা … খাল্লা … ছেড়ে গেল … ছেড়ে গেল … জলদি আসুন … জলদি আসুন …

স্টার্ট নিয়ে গোঙাতে গোঙাতে বাসটি ছেড়ে যায়।

এবার দ্বিতীয় বাসের হেলপারের একই হাঁক … জয়পুর … জয়পুর … খাল্লা … ছেড়ে গেল … ছেড়ে গেল …

জগৎ-সংসারে রিলেরেস চলছে … অনাদিকাল …

দু-চারজন করে ক্রমে বাস ভরে ওঠে। প্রায় কুড়ি মিনিট অতিক্রান্ত। বাস ছেড়ে দেয়। চৈত্রের হাওয়া কিছুটা সেঁকা। তবে ছ্যাঁকা লাগার মতো নয়।

টাউনশিপ ছাড়তে কয়েক মিনিট। তারপর মাঠ। মাঝে মাঝে গৃহস্থ বাড়ি। পুকুর। এদিকে বাবলাগাছের আধিক্য। গোটা হাওড়াজুড়ে বাবলা। বৃক্ষহীন মাঠে বাবলার পিঙ্গল শোভা।

রোদ ঠিকরে পড়ছে।

বাস যত এগোয় ফজলের হৃদস্পন্দন বাড়ে। কখন মানিককে মামাবাড়ি দেখাবে। একটা অস্থিরতা।

বাগনানের চৌহদ্দি ছাড়িয়ে এবার খালনার আওতায়। মাঠের প্রশস্ত তেমনি আছে। দেখতে দেখতে ফজল বড়খালের দেখা পেল। এই খালটাই ঝামটিয়ার সীমানা ঘেঁষে খালনার পাশ দিয়ে প্রবাহিত।

এখানে খাতটা অনেক প্রশস্ত। ওপরে পাকা সেতু। আগে ছিল কাঠের। বড় গাড়ি প্রায় চলতই না। এপারে অবস্থান করতো। এখন জয়পুরের রাস্তা অনেক কমে গেছে। সব রাস্তা বেশ ভালোভাবে বাঁধানো।

খালনায় বেশ একটা ছোটখাটো টাউনশিপ গড়ে উঠেছে। বাড়িঘর কিছুটা অবিন্যস্ত। তবে জনসমাগম বোঝা যায়। বড় রাস্তা ছেড়ে ভেতরদিকের দোতলা বড় বড় বাড়ি নজরে আসে। জায়গাটার নাম ঝাউতলা।

খালনায় ফজলের সঙ্গে একজন যুবক ডাক্তারের বেশ ঘনিষ্ঠতা আছে। পরিবার বেশ অবস্থাপন্ন। তার ইচ্ছা করছিল ওর খোঁজ নিয়ে যায়। কিন্তু সঙ্গে মানিক থাকায় এবং তাকে মামাবাড়ি দেখাবার আকর্ষণটা চিন্তাকে স্থায়িত্ব দেয় না।

খালনায় বেশকিছু লোকের অবতরণ। দু-একজন জয়পুরগামী ব্যক্তির আরোহণ।

গাড়ি সামান্য এগিয়ে যাওয়ার পর বাঁয়ে একটি পাকা রাস্তা পড়ল। মোড়ে পৌঁছে বাস-সহকারী বলে, ঝামটিয়া নামুন।

আমরা এসে গেছি দাদা, নামুন … বলে মানিক।

জায়গাটা খুব অচেনা লাগাল ফজলের। এদিকে কখনো এসেছে বলে মনে পড়ে না।

রাস্তার মুখে কয়েকটা দোকানপাট। বাঁদিকে একটা ছোট মিষ্টির দোকান। দোকানি অনুপস্থিত। কাচের শোকেসে সাজান মিষ্টি নজর কাড়ে। হঠাৎ সে তার অনেকদিনের কাঙ্ক্ষিত মিষ্টি দেখতে পায় : দানাদার। অবশ্য মূল ছোট বেলনাকার নয়, গোল। হোক গোল, তার আশা পূরণ হওয়ায় সে উৎফুল্ল। এই মিষ্টি সে কাঁহা কাঁহা না খোঁজ করেছে, এমনকি রাজশাহী যা মিষ্টির আড়ত, তারাও এখন করে না। রাজশাহীর এক দোকানদারকে একবার ফজল জিজ্ঞেস করেছিল, আপনারা তো দানাদার করতেন? এখন করেন না কেন?

দোকানির জবাব, বিক্রি কম। লোকে এখন হেলথ কনশাস হয়ে গেছে। চিনি নাকি হোয়াইট পয়জন।

চমৎকৃত হয় ফজল। পুরো রহস্য পষ্ট।

মনে মনে বলে, মানুষ তো অনেক এগিয়েছে … কিন্তু সে তো পয়জনের নেশা কাটাতে পারল না। ছেলেবেলা থেকে এই পড়ন্তবেলায়ও মিষ্টি অপরিত্যাজ্য। অবশ্য মা-বাবার ডায়াবেটিস না থাকায় একদিক মজবুত। তাহলে ধরে নিতে পারে তার প্যানক্রিয়াসের ফাংশন এখনো নরমাল।

সে 888sport app মিষ্টি পরিদর্শন করে চলে। এমন সময় মাঠ থেকে দোকানি উঠে আসে।

কী নেবেন বাবু?

আপনার দানাদার কিলো কত?

আমরা পিস দরে বিক্রি করি। একটা চাট্টাকা।

চারটে দিন। মামাবাড়ি যাচ্ছি, বাড়িতে কেউ নেই। এমন কি বাড়িটার অস্তিত্ব আছে কি না তাও জানি না।

দুজন ভাগ করে খেতে খেতে ফজল বলে, মানিক আর কয়েকটা নিয়ে রাখব নাকি?

এত অনিশ্চয়তার মধ্যে কিছু না করাই ভালো, দরকার হলে ফেরার সময় নেবেন।

এই সময় একটা খালি অটো দেখতে পেল। মানিক এগিয়ে গিয়ে থামায়।

আমাদের একটু ঝামটিয়া পৌঁছে দাও।

বাবু, খালি গাড়ি যাচ্ছি। আমার ঘর ঝামটিয়া। আপনারা কোন বাড়ি যাবেন?

কবীরদের বাড়ি, পেছন থেকে বলে ফজল। ওর বাবার নাম শেখ আবদুল করিম।

চিনতে পেরেছি, আপনারা যাবেন দখিনপাড়া।

হ্যাঁ।

আমি থাকি দলুই পাড়ায়। আমি জামাই মানুষ।

খুব ভালো হলো। প্রেম করে বিয়ে করেছ নাকি?

ছেলেটি হাসে।

আমার বাড়ি জয়পুর। এখন ঝামটেতেই থাকি।

বুঝেছি।

দুজন উঠে বসে।

ঝামটিয়ার চৌহদ্দির মধ্যে প্রবেশ করতে পরিক্রম করতে হবে খাজুরদহ। তারপর ঝামটিয়া। খাজুরদহর কাছে পৌঁছতে ফজল বলে, এই ডানে পড়ে আমার বড়মাসির বাড়ি। ওরা সবাই কলকাতায়। মাসি-মেসো মারা গেছেন। একজন বাড়ি পাহারা দেয়।

ফজলের কাছে একটা জিনিস অবাক লাগে। সেই খালনার বন্যানিরোধক বাঁধের কাছ থেকে তিনতলা মামাবাড়িটা দেখা যেত। পাশে অন্য দু-একটা বাড়িও নজরে আসত। অথচ এখন চোখে পড়ছে না। গাছপালা বড় হয়েছে ঠিক, কিন্তু পূর্ণবয়স্ক হওয়ার পর গাছ তো আর তেমন বাড়ে না। তার মনে একটা অজানা শঙ্কা জমা হতে থাকে।

সামান্য এগিয়ে ডানে পেল ঝামটিয়া উচ্চ বিদ্যালয়। পাশে ভিটের ওর তার প্রাথমিক বিদ্যালয়। সম্ভবত ১৯৪০ সালে ঝামটিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত। এখানে সে দু-বছর পাঠ নেয়। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে। তাও চতুর্থ শ্রেণি পুরো করতে পারেনি। মে মাসে পশ্চিমবঙ্গে তার লেখাপড়ার পাট একেবারে চুকে যায়। দু-বাংলা পড়ে নতুন করে দাঙ্গার কবলে। ফজলকে বাবার কর্মক্ষেত্র চট্টগ্রাম পৌঁছতে হয়। একলা। দিন-পনেরো পর হাজির হয় পরিবারের 888sport app সদস্য। মা-ভাইবোন। সে অপরিচিত জায়গায় হাঁপিয়ে উঠেছিল।

তবে বাবার সঙ্গে কলকাতায় দু-বছর আগে ‘চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন’ সিনেমাটা দেখে চট্টগ্রামের প্রতি তার একটা ভালোবাসা তৈরি হয়েছিল। আর সেই পঞ্চাশের দশকে চট্টগ্রাম শহর আসলেই ছিল একটা সাজানো বর্ধিষ্ণু গ্রাম। উত্তর-দক্ষিণে লম্বাটে শহর। দু-তিনটে বড় রাস্তাকে কেন্দ্র করে বাড়িঘরদোর – মাঝে মাঝে নাতিউচ্চ টিলা … একটা ছবির মতো শহর। একটি মাত্র ছোট টাউন সার্ভিস বাস শহরকে জুড়ে রেখেছিল। মূল বাহন ছিল রিকশা। কিছু ঘোড়ার গাড়িও ছিল। রিকশার ভেঁপুটা ছিল মজার। বাঁশির মতো।

বাবু, আমরা এসে গেছি, অটোচালক সচেতন করে।

ফজল এখন সব ভালো করে চিনতে পারে। সামনেই ডানে কোম্পানি-পুকুর। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আমলে কাটা বেশ বড় এবং গভীর চৌকো পুকুর। এখনো সতেজ।

ডানে আল-বাঁধানো রাস্তা। দক্ষিণ পাড়াগামী।

মানিক আর ফজল নেমে আল ধরে। বাঁয়ে একটা সরু খাল। বড় জোয়ার হলে জলের ধারা হানা দেয়। সরু সোঁতাটার দুপাশে থেকে থেকে তালের সারি।

এবার ডানে একটা সরু রাস্তা ভিটের দিকে সোজা। অদূরে বাঁশঝাড় আর তার পেছনে একটা পুকুরের অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়।

ওটা মনে হয় বড়পুকুর, মুখ খোলে ফজল। এই পুকুরের পশ্চিমপাড়ে আমার মেজো মেসো আর মামার বাড়ি।

কোনো বাড়ির তো চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না?

আমার কাছেও এটা অবাক করা। বাড়িটা একসঙ্গে যুক্ত ছিল। আর ধসে গেছে বলে তো কোনো খবর পাইনি!

কোনো লোকজনের দেখাও তো পাচ্ছি না, বলে মানিক।

তবে পুকুরপাড়ে যখন গরু বাঁধা আছে, নিশ্চয় গৃহস্থবাড়ির অস্তিত্ব ঘোষণা করছে।

যথার্থ।

গুল্ম ভেদ করে তাদের ভিটেয় আরোহণ।

বাঁয়ে তিনতলা ভবনটির চৌহদ্দি প্রাকারের ফটকে উদোম গা লুঙ্গি পরা মস্তিষ্কে উষ্নীষের মতো গামছার শোভা। লোকটির ফর্সা চেহারা কৃষককুল থেকে পৃথক। ফজল চোখাচোখির পর ঠিক ঠাওর করতে পারে না। তাই উচ্চৈঃস্বরে গৃহিণীর নাম ধরে ডাক দেয়।

কুমকুম …

দরজায় বসে থাকা ব্যক্তি উঠে দাঁড়ায়।

ফজলদা না?

হ্যাঁ। তুমি খোকন?

হ্যাঁ। ভেতরে আসুন।

গৃহস্থকে তারা অনুসরণ করে।

ততক্ষণে গৃহিণীও হাজির।

আমার নাম শুনেই বুঝেছি ফজলদা।

খোকনের ছদ্মবেশটা খুব ভালো হয়েছে। একেবারে ধরতে পারিনি।

মাঠে গিয়েছিলাম, তাই কৃষকসাজ।

খুব ভালো। তোমরা আছো প্রকৃতির কোলে। আমরা জাহান্নামে।

যা বলেছেন। 888sport app আর দিল্লি দুই-ই জাহান্নামই বটে। একটা হিন্দু নরক, আর একটা মুসলমান দোজখ, বলে খোকন।

আচ্ছা খোকন, আমাদের মামাবাড়ি উধাও হলো কবে?

এই তো মাস দশেক হবে। পুরো বাড়ি ঠিক ছিল। কবীরভাই এসে দু-ঘরের ইট বিক্রি করেছিল। এখন এদিকে যে দেয়ালটা দেখতে পাচ্ছেন ওটা খাজুরদহর বুবু বকাবকি করাতে বাকি থেকে গেছে। কবীরভাই নিজেদের বাড়ির সঙ্গে মেজো ফুপুর বাড়ির ইটও বিক্রি করে দিয়েছে।

চলেন খোকনভাই, দাদার মামাবাড়িটা দেখি। আমার অনেক দিন থেকে ইচ্ছা ছিল, বলে মানিক।

খোকন তার গামছাটা মাথা থেকে খসায়। খালি গায়েই এগোতে থাকে।

ভিটে থেকে নেমে সামান্য ডানে গিয়ে আর এক ভিটেয় আরোহণ। ঘন গুল্মে ছাওয়া। সাবধানে বকের মতো পা ফেলে ফেলে এগোতে হয়। একটু পর সামনে একটা একতলা চাতাল … ঘন অন্ধকার। ছাদের কিছুটা এখনো আছে, কিন্তু অশ্বত্থ ডালপালায় ছেয়ে ফেলেছে।

মানিক তার ক্যামেরায় ভিডিও করতে করতে থেমে গেল।

কী হলো মানিক?

পা চুলকোচ্ছে।

পায়ে হাত দিয়ে দেখে একটা জোঁক বেশ আরামসে রক্ত শোষণে ব্যস্ত।

জোঁক!

তার হাঁকে খোকন ছুটে এসে একটানে ছুড়ে ফেলে। ততক্ষণে ফজলকেও দুটো জোঁক আক্রমণ করেছে।

বাধ্য হয়ে তাদের কিছুটা পিছু হটতে হয়।

এ তো শীতকাল ছাড়া কিছু করা যাবে না। মানিক পা চুলকোতে চুলকোতে বলে। তার ধারাবর্ণনায় ছেদ। এখন নতুন প্রসঙ্গ। জোক নয় জোঁক। একেবারে সিরিয়াস আলোচনা থেকে হাস্যরসাত্মক ব্যঞ্জনা।

খোকনের সাবধান বাণী :

পুরনো ভিটেয় সাপের বাস। ঝোপঝাড় মরে গেলে একটু পরিষ্কার হলে শীতকালে আবার আসবেন।

এবার খোকন পাড়ার উত্তরদিকের অংশটা দেখাতে নিয়ে যায়। পাকা তিনতলা বাড়িগুলো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে। মানিক বোঝে একসময় পাড়ার কি দাপট ছিল।

জানো মানিক, আমার এক নানা ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। দেশভাগের পর সবাই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গেল। আজ ভুতুড়ে চেহারা নিয়ে ভবনগুলো দাঁড়িয়ে। এদের কি রমরমা ছিল বুঝতে পারছ?

বুঝতে পারছি।

এরা সব উত্তর ভারত থেকে এসেছিলেন। ব্রিটিশ আমলেরও আগে। আমি তোমাকে নানাদের ছবি দেখাব। এমন কি আমার এক ভাই পুরো আমার নানার মতো। আমরা তো ওকে ঠাট্টা করে বলি, নানা … তবে নানাদের একটা কমন ফ্যাক্টর ছিল … ভুঁড়ি … সেটা আমার ভাইয়ের নেই। ও ছিল ওদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বেস্ট অ্যাথলেট। অনেক গুণে গুণান্বিত। গানও শিখত। রজনীকান্তের তুমি নির্মল কর, মঙ্গল করে, মলিন মর্ম মুছায়ে … একসময় বাবা প্রতিদিন সকালে ওকে গানটি গাইতে বলতেন। বলতে গেলে এটিই ছিল তার প্রার্থনাসংগীত। আমরা তখন ছিলাম চট্টগ্রামে। সে এক স্বপ্নের সময়। ঘরভরা কলকাকলি … আনন্দের ফোয়ারা। সব সময়ই হারিয়ে যায়। যদি পেছনযাত্রা করা যেত! এই যাত্রাটি এখনো মানুষের আয়ত্তে আসেনি। আর ওই মাত্রায় পৌঁছতে পারলে তো মহাশূন্যে মিলিয়ে যাওয়া! উধাও!!

ঠিক বলেছেন, আমার ছোটবেলাটা অবশ্য খুব কষ্টের ছিল। আপনাদের গ্রামের পাশে মুণ্ডেশ্বরী নদী, তার পারে আমরা। একসময় খুব দরিদ্র গ্রাম ছিল। আমাকে লেখাপড়ার খরচ জোগাতে মুটেগিরিও করতে হয়েছে। আজ আপনাদের সঙ্গে যে ওঠা-বসা করতে পারি এটা ভেবে আমি নিজেই কূল পাই না।

খানাকুল শহরে ফাঁকা মাঠের পাশে তিনতলা বাড়ি বানিয়েছ, তুমি তো সাক্সেসফুল ম্যান হে! বরং আমরাই সেই নিম্নমধ্যবিত্ত রয়ে গেলাম।

মানিক লজ্জিত দৃষ্টিতে বলে, কী যে বলেন দাদা!

দক্ষিণপাড়া ছাড়িয়ে তারা পশ্চিমদিকে কবরস্থানের আওতায়। ছোট একটা পুকুর। একসময় শান বাঁধানো ছিল। এখন জলের পাশে কয়েকটা সিঁড়ি টিকে আছে।

কবরস্থানের পরই বাগ্দিপাড়া। খালি গা, লুঙ্গি মালকোচা করে পরা লম্বা মতো এক বয়স্ক লোক এগিয়ে আসতে থাকে।

কাছে এলে দুজনই উৎফুল্ল।

আরে হারান!

ফজল ভাই তুমি!

দুজন কোলাকুলি করে।

আমাকে দেখতে পাবে নিশ্চয় আশা করোনি?

বলে হারান বীড়া।

কত বয়স হলো?

পঁচাশি।

তুমি তো বেশ শক্ত আছ! সেঞ্চুরি পার করতে হবে। আমরা কেক কাটব। কলকাতা থেকে বড় কেক আনব। শুধু খবরটা আমার কাছে পৌঁছা চাই। অবশ্য ভগবান যদি সে-ভাগ্য দেন।

তুমি তো থাকো 888sport appয়।

কলকাতা থেকে খবরটা পেয়ে যাব।

ঠিক আছে। ভগমান যদি আয়ু দেন …

আবার আমাকেও ততদিন বাঁচতে হবে। ফ্যাকড়া কম নয়।

ঠিক, ঠিক, মানিক কণ্ঠ মেলায়। আপনারা দুজনই বাঁচবেন। আমি ঈশ্বরের কাছে সব সময় প্রার্থনা করব।

কোরাস হাসি।

খোকনের তাড়া।

দাদা, চলুন, আপনার বউমা অপেক্ষা করবে।

অগত্যা প্রত্যাবর্তন।

অনেক দেরি করে ফেললেন। কখন থেকে আমি পথ চেয়ে! কুমকুমের অভিযোগ।

কী করব, হারান এসে গেল। ছোটবেলায় ওরা সবাই ছিল খেলার সাথি। ওর বাবা-মা মামাবাড়িতে প্রায় চব্বিশ ঘণ্টা পড়ে থাকত।

কবীরভাই এখান থেকে পাট উঠিয়ে দেওয়ার পর সব ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল।

মানিক, হারানদার বাবার নাম জানো?

কি?

মানিকচন্দ্র বীড়া।

মেদিনীপুরে বেশ কিছু বীড়া গোষ্ঠী আছে। এরা নিজেদের বর্গক্ষত্রিয় বলে।

তা মানি। সংক্ষেপে বাগ্‌দি। আমাদের এরাও তা বলে।

এটাই আসল। বাকিটা জাতে ওঠার কৌশল, মানিকের মন্তব্য।

সমাজটাকে এমনভাবে ভাগ করে রাখা হয়েছে, কার না ওপরে ওঠার ইচ্ছা জাগে বলো!

তা ঠিক।

হারান বীড়ার সঙ্গ ছেড়ে তারা খোকনের আবাসে।

এত দেরি কেউ করে? কুমকুমের উচ্চস্বর অবশ্য স্বামীর উদ্দেশে।

আরে ভাইয়ের বন্ধু হারান হাজির … সময় তো যাবেই।

এদিকে আমি সবকিছু তৈরি করে বসে আছি। খাবার-দাবার জুড়িয়ে এলো!

ভাইয়ারা কতদিন পরে এলো বলো তো! পুরো দৃশ্যপট বদলে গেছে। বেচারার মন খারাপ। এমন ধ্বংসস্তূপ দেখবেন ভেবেছিলেন?

সত্যি মনটা খারাপ হয়ে গেছে, ফজলের দীর্ঘশ্বাস। মানিককে আনলাম বড়মুখ করে।

কুমকুম খাবার বেড়ে তক্তপোশে একটা দস্তরখান মেলে দেয়।

ফজল-মানিক বাবুকেটে বসে।

গৃহস্থ খোকন পরে সাফ-সুতরো হয়ে খেতে বসবে। তাই অংশ নিতে পারে না। তদারকিতে মন দেয়।

ফজলের নজর কাড়ে জোড়া ডিম আর আলুর তরকারি। তার মা-নানি এই পদটা বড় ভালো রাঁধতেন। ডিমটাকে সিদ্ধ করে নিয়ে গায়ে তিন-চারটে লম্বালম্বি ছুরির পোঁচ দিয়ে কড়ায়ে তেল দিয়ে ভাজা। গা-টা বাদামি রং। এরপর হাঁড়িতে। বেশ একটা মাংস মাংস ঘ্রাণ ওঠে।

খিদেটা বেশ পেকেছে। ফজল কুমকুমের তারিফ করতে থাকে।

এই সময় খোকন বলে, দাদা, একটা কথা বলা হয়নি। আপনারা তো বাড়ির পেছন দিকে গেলেন না। গেলে একটা মজার জিনিস দেখতে পেতেন!

না বললে জানব কী করে, ফজলের অন্বেষা।

আপনাদের জন্মভূমির যে-কামরা তার পেছনের দেয়াল নতুন করে ত্যারচা করে করা হয়েছে।

কেন?

অনেকদিন থেকে ওই বাড়িতে নাকি এক জিনের বাস। যখন ওই ধারের দেয়াল ভাঙতে শুরু করেছে গম্ভীর কণ্ঠে জিনের হুকুম, এই দেয়াল যদি ভাঙিস, তোদের আর রক্ষা নেই! আমার আস্তানায় হাত দেওয়া! সেই গম্ভীর আওয়াজ শুনে মিস্ত্রিরা তো পড়িমরি করে দে জুট! আর কথাটা গোটা গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে অন্য কোনো মিস্ত্রিও আর  আসতে চায় না। বাধ্য হয়ে যেটুকু দেয়াল ভেঙেছিল আপনার ভাই কবীর সেটা কোনোরকম মেরামত করে দিয়ে এদিকে আর আসেনি।

এমন ঘটনা! আমাকে আগে বলোনি!

ভুলে গিয়েছিলাম।

তাহলে বলতে বাধ্য হচ্ছো যে জিনের বদৌলতে আমাদের জন্মভূমির কক্ষ রক্ষা পেয়েছে!

তা নয় তো কি! আর কেউ এই কাজ বন্ধ করতে পারত না।

ভরা দুপুর। এখন জিন-ভূতের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ নেই। ফজল আর মানিক দোতলায় বিশ্রামের জায়গা পায়। ডবল খাট, পশ্চিমের জানালা দিয়ে প্রচুর সূর্যালোক। ওদের বিশ্রামের ব্যবস্থা করে দিয়ে খোকন নিজেকে পরিচ্ছন্ন করার দায়িত্বে নিয়োজিত হতে নিচে গেল।

ফজল সিলিং কড়ি-বরগাগুলোয় নজর বুলোয় – দক্ষিণপাড়ার দালানগুলোর একটা চরিত্র আছে। প্রায় সব বাড়ি ত্রিতল। কড়ি-বরগাগুলো এক ধরনের। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়-তৃতীয় দশকে এরা পাকাবাড়ি তৈরিতে হাত দেয়। ফজল যখন জন্মগ্রহণ করে সব বাড়ি প্রায় ছিল নতুন। কিছুদিন আগেও তার জন্মকক্ষটি শক্ত-সমর্থ ছিল।

ইট বিক্রির ধান্দায় নামায় এর আয়ু অন্তত আরো দু-শতাব্দী বাড়ল!

খাবার পর শুয়ে শুয়ে ছেলেবেলার নানা ঘটনা চোখের সামনে ভাসতে দেখে ফজল। একটা জাদুর কাঠি-ছোঁয়ানো পাড়া। সব ঘুমন্ত। জনমানবের সাড়া নেই। বাঁশঝাড়ের শনশন আওয়াজ … থেকে থেকে ঘুঘুর ডাক … সবকিছু করুণ রসে 888sport app পড়ে।

খানিক পর মানিকের নাকডাকা শুনে ফজল উঠে পড়ে। পা টিপে টিপে সিঁড়ি ভাঙে।

কেউ সামনে পড়েনি।

সদর-দরজায় কাঠের খিল।

নিঃশব্দে খুলে দরজা ভেজিয়ে হাওয়া।

মামাবাড়ির ভিটের পেছন দিকে গিয়ে সে অবাক। সত্যি তো, তাড়াহুড়ো করে পেছন দিকটা গেঁথে দেওয়া হয়েছে।

ঝোপঝাড় ঠেলে সে দেয়ালের পাশে একটা ফোকর পেয়ে দাঁড়ায়। ফাঁকের কাছে গিয়ে সে গলা ভারি করে বলে ওঠে, জিনভাই, আছেন নাকি?

জিনভাই! কে হে? ও ফজল।

আপনি আমার নাম জানেন!

জানি। তোমরা পরপর চার ভাই আর এক বোন এই কামরায় ভূমিষ্ঠ হয়েছ। পাঁচজনের মধ্যে তিনজন মারা গেছে। তোমার মেজো ভাই মাঝে মাঝে আসে। খুব রসিক ব্যক্তি। আমার ভালো সময় কাটে। তোমার আর এক ভাইও আসে, খুব বিষণ্ন মুখ। কোনো কথা বলে না। আমি তো সবই জানি, তাই কিছু জিজ্ঞেস করি না। ওকে নীরব থাকতে দিই। তবে তোমার বোন এলে ঘর আলো হয়ে যায়। যেমন সুন্দর, তেমনি হাসিমাখা মুখ। সহজ-সরল মানুষ। সবার জন্যে অফুরান ভালোবাসা … বেচারা ভরাট সংসার ফেলে অসময়ে চলে গেল।

আপনার কত ভাগ্য, আপনি আমার বোনকে দেখতে পান। আমি পাই না। ওর কথা মনে পড়লে আর কিছু ভালো লাগে না।

ওকে বুঝি খুব ভালোবাসতে?

হ্যাঁ ভাই! অমন মানুষকে কেউ ভালো না বেসে পারে! যৌথ পরিবারে বিয়ে হয়েছিল। যখন বিদেশ থেকে আসত গুনেগুনে সবার জন্যে কিছু না কিছু উপহার নিয়ে আসত। প্রমাণসাইজ দুটো বাক্স থাকত ভরা। ওজন বেশি হলে ট্যাক্স দিত। প্রতিবার আমার জন্যে আনত ওষুধ আর বিছানার চাদর। সবগুলো এখনো ব্যবহারও হয়নি। ওর কথা মনে হলেই জীবনের সব আশা, সব আনন্দ উধাও হয়ে যায়। মনে হয় মিছে কাল গোনা।

দুঃখিত! কী বলে সান্ত্বনা দেব। এসব ক্ষেত্রে সান্ত্বনার কোনো ভাষা থাকে না। শুধু একটা কথাই বলব। নিজের কর্মে বিভোর থাকুন, মানুষের মঙ্গলচিন্তা করুন, মন শান্ত হয়ে আসবে।

ধন্যবাদ জিনভাই। আপনারা আমাদের মতো মাটি দিয়ে তৈরি নন, তাই সহজে সবকিছু মানতে পারেন।

এটা তোমার ভুল ধারণা। তুমি বলে ফেললাম। ভাই বলে সম্বোধন করেছ যখন … তুমি এসে যায় …

ঠিক করেছ। আমরা অনেক কাছের হয়ে গেলাম।

আমাদেরও রাগ-ঘৃণা এসব আছে। তোমরা একটা ভুল ধারণা নিয়ে বাস করো। তোমরা ভাব প্রাণের জগতে তোমরা শ্রেষ্ঠ। আর এই দুনিয়ার সবকিছু সৃষ্টি তোমাদের সেবায় নিয়োজিত। তাহলে তো তোমরা ঈশ্বরের পর্যায়ে চলে গেলে! কখনো ভেবে দেখেছ কি? আমরাও তো কখনো এরকম কল্পনা করিনি। এজন্যেই আমরা, জিনরা, সৃষ্টিতে মানুষের নিচে জায়গা চাই না। বলতে পারো এটা আমাদের বিদ্রোহ। যেমন তোমরা শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করো। তোমাদের শ্রেষ্ঠত্বের নমুনা দিই : হিরোশিমা ও নাগাসাকি। কে কাকে মারছে? মানুষ মানুষকে। আমরা জিনরা কখনো কেউ কাউকে আঘাত করি না। তোমরা যেন কী বলো? হ্যাঁ, ঐক্য বা একতা। আমাদের একতা আছে তোমাদের নেই। তোমরা শতধা বিভক্ত। তোমরা শ্রেষ্ঠ জীবরা বনে ঢুকে বাঘের ডেরায় হানা দিচ্ছো। সে বেচারা বন ছেড়ে গ্রামে ঢুকে পড়ছে। অমনি শত শত মানুষ তার পেছনে লাঠি হাতে ছুটছে। সে এখন যাবে কোথায়? তোমাদের এক 888sport apkী বলেছেন না, যদি আর একটা বিশ্বযুদ্ধ হয়, আর আণবিক বোমা বর্ষণ হয়, তাহলে তার পরের যুদ্ধটা হবে লাঠি হাতে। কথাটা কি অমূলক?

ফজল চুপ। নিশ্চুপ। বাক্হীন। নির্বাক। এমনধারা প্রশ্নের সম্মুখীন সে জীবনে হয়নি।

তাকে বেশিক্ষণ সময় না দিয়ে জিন প্রশ্ন তোলে : আচ্ছা, তুমি ধর্ম পালন করো।

কেন, মানবধর্ম। ত্বরিত উত্তর ফজলের।

তার উত্তর শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জিনের বিস্ময় প্রকাশ। এমনটা তোমার কাছ থেকে আশা করিনি। তোমরা মানুষরা আসলে নিজের পাতে ঝোল টানা ছাড়া অন্য কিছু চিন্তা করতে পারো না।

তা কেন? কত মানুষ নিজের সব ধন-সম্পদ বিলিয়ে দিচ্ছেন।

সেগুলো তো ব্যতিক্রম। একটা উদাহরণ দিই : রাস্তায় একটা কুকুর – ছেলেবুড়ো সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ো একটা ঢিল পাওয়া যায় কি না। কারণ, কুকুরটাকে মারতে হবে। কুকুর কুকুরের গন্তব্যে যাচ্ছে, তোমরা তোমাদের। তা কি হয়। কুকুরটা ঢিল খেয়ে খেউ করে উঠবে আর তোমাদের সমস্বরে হাসি। আনন্দ। কৌতুক। বিজয়।

ফজল চুপসে গেল।

ক্ষণিক নীরব থেকে বলল, ভাই, আমি নরেন দত্তের বাণীর কথা বিস্মরিত। তাই তিনি বিবেকানন্দ। বলেছেন, জীবে দয়া করে যেই জন, সেইজন সেবিছে ঈশ্বর। আমি সাধারণ মানুষ।

তোমাদের নিয়েই তো মুশকিল। বিপদে পড়লেই সাধারণ লোক। অন্যসময় অনন্যসাধারণ।

চাবুকটা জোরে পড়ল। ফজল আর্ত রব করে ওঠার পর্যায়ে।

বলেই বসে, ক্ষমা চাচ্ছি জিনভাই। তুমি আমাকে মাফ করে দাও।

আরো একটা ভুল করলে, আমার কাছে মাফ চাইছ কেন! মাফ তো চাইবে ঈশ্বরের কাছে – স্রষ্টার কাছে। স্রষ্টা তো দূত পাঠিয়েছেন! তোমরা তার কথা শোনো না।

ক্রমশ আক্রমণে ফজল খেই হারিয়ে ফেলতে লাগল। এরপর কী বলবে ভেবে পায় না।

তাকে উদ্ধার করার জন্যে যেন জিন ভিন্ন প্রসঙ্গ উত্থাপন করে।

জানো, প্রাণিজগৎ ছাড়াও মহাশূন্যে কত রকম ভাইরাসের বাস!

হ্যাঁ, জানি। ইবোলা, অ্যানথ্যাক্স, নানা রকম ফ্লুর ভাইরাস, প্রতিনিয়ত পৃথিবীতে হানা দিচ্ছে। মধ্যযুগে ছিল প্লেগ। শহরের পর শহর খালি হয়ে যেত। তারপর কলেরা, বসন্ত, টাইফয়েড … কত নাম করব। তোমাদের সামনে এসবের চেয়ে বড় বিপদ আসছে। এর সংক্রমণ হবে বিশ্বজুড়ে। ভয়াবহ সে-ভাইরাস। বহুরূপী। গিরগিটির মতো তোমাদের হিমশিম খাইয়ে দেবে টিকা বা ভ্যাকসিন আবিষ্কারে। এত বড় মহামারি তোমরা জীবনে দেখোনি!

ভয় ধরে যায় অজানা আতঙ্কে। ফজল বলে, তুমি কি করে জানলে ভাই?

আমরা মহাশূন্যে সর্বত্রগামী। আমরা টের পাচ্ছি। ওরা প্রায় এসে গেছে। অল্প কয়েকদিনের মধ্যে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করবে। জানি না কোথায় নামবে। তবে সম্ভবত ওরা চীনের বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করবে। য়ুহান প্রদেশে।

চীন তো নানা জ্ঞানে অগ্রগামী দেশ, ওরা কি পারবে মোকাবিলা করতে?

খুবই কষ্টসাধ্য। সম্ভবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপও বাদ যাবে না। তোমাদের ভারত, পাকিস্তান, 888sport apps কেউ রক্ষা পাবে না।

তার মানে এটা বিশ্ব-মহামারি?

একবারেই তাই। উন্নত, অনুন্নত, স্বল্পোন্নত কোনো দেশই বাদ যাবে না। যে-যেভাবে মোকাবিলা করতে পারবে তার ওপর নির্ভর করছে মরা-বাঁচা।

অর্থনীতি?

আগে তো জান সামলাও।

উৎপাদন বন্ধ থাকলে?

তোমাদের বাংলায় কখনো আকাল হয়নি?

রূঢ় বাস্তবের সামনে দাঁড়াতে হলো ফজলকে। মনে পড়ে ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের ইতিহাস, গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দুর্ভিক্ষ … 888sport apps স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৪-এর আকাল। নিজ চোখে দেখা। তার পাড়ার মায়েরা পর্যন্ত দল বেঁধে রুটি তৈরি করত।

অনেকটা স্বগতোক্তির মতো ফজল উচ্চারণ করে, শেষ বয়সটায় মানুষের সেবা করে কাটাব ভেবেছিলাম …

মানুষের সেবা? জিনের বিস্ময় প্রকাশ।

হ্যাঁ! ততধিক অবাক ফজল।

পরিণতি জানো?

না। আর পরিণতি তো কাজে না নেমে জানা যাবে না।

কে বলেছে?

ফজলের আরো বিস্ময়। জিনভাইয়ের এ-কেমন ধারা প্রশ্ন!

শেষে সে মুখ খুলতে বাধ্য হয়, একটু খুলে বলবে কী বলতে চাইছ?

বলছি। সক্রেটিসের নাম শুনেছ? ভদ্রলোক কি মানুষের মঙ্গলের কথা ভাবেননি? যিশু, তিনি সবার মঙ্গল চাননি? মহাত্মা গান্ধী কি খারাপ চেয়েছিলেন? তোমাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব দেশের লোকের মঙ্গল চাননি? এসবের পরিণতি কী? জবাব দাও।

ফজল ভীষণভাবে দমে গেল।

তার মুখ মুখে রা নেই দেখে জিন আবার মুখ খোলে।

মানুষের মঙ্গল করতে চাও ভালো কথা।  তোমাকে এবার একজন বিদ্যান লোকের কথা বলি : তার নাম ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। যাকে তোমরা বিদ্যাসাগর নামে চেনো। একদিন এক সকালে এক প্রতিবেশী এসে 888sport world cup rate করে, জানেন বিদ্যাসাগর মশাই, আপনার নামে দুজনকে গালাগালি দিতে শুনলাম।

বিদ্যাসাগর তো অবাক। সকালবেলা ঈশ্বরের নাম নিচ্ছে গালাগালি দিয়ে। তিনি ভাবলেন, আচ্ছা, মনে পড়ছে না তো, আমি তো ওদের কোনো উপকার করিনি! তাহলে কেন গাল দিচ্ছে!

ফজলের মুখে এবার স্মিত হাসি।

জিনভাই আর বোঝাতে হবে না।

আমি না বোঝালে কী হবে, তুমি তোমার ইচ্ছা পূরণ করেই ছাড়বে, তা-ও জানি। হাজার হলেও ইচ্ছা তো! আর সবাই জীবনে ইচ্ছাগুলো পূর্ণ করে মরতে চায়।

জিনভাই তুমি কি আমাদের ভগ্নস্তূপ জন্মঠাঁইটা দেখবে? বেঁচে থাকলে আর একবার এখানে আসার বাসনা রাখি।

আমি যদ্দিন আছি কেউ ভাঙতে পারবে না। তবে তুমি আর ফেরত আসতে পারবে কি না বলতে পারছি না। যে মহামারি আসবে তা সমস্ত পৃথিবীকে লণ্ডভণ্ড করে ছাড়বে। কোথাও পালানোর জো নেই। তখন যদি এখানে একবার কোনোমতে আমার কাছে আসতে পারো আমি তোমাকে রক্ষা করার আপ্রাণ চেষ্টা করব। বাকিটা স্রষ্টার হাতে।

ফজলের মনে একটা ভীতি শিরশির করে বইতে থাকে। ভেবে চলে, কেমন হবে সে মহামারি! কেমন হবে সেই অজানা শত্রু! বোমা, গুলি, রকেট দিয়ে তাকে মারা যাবে না। সে ভাইরাস। অণুজীব। অস্ত্রের গুদামঘরগুলো ডাস্টবিনে পরিণত হবে। আসলে এগুলো তো মানুষ-মারা অস্ত্র। মানুষ নিজেই তো আক্রান্ত। আর আক্রমণকারী ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র। মানুষের সাধ্য নেই যন্ত্রহীন চোখে সাক্ষাৎ পায়। বিশ্ব এমন করে অসহায় বোধে আগে কি কখনো আক্রান্ত হয়েছে? ফজল অজানা শত্রুকে যেন এই আঁধার স্থাপনার আশপাশে টের পাচ্ছে। সে তো দিন শুনছে। তাহলে সে তো সরাসরি টার্গেট।

মানুষের মঙ্গল করতে চাও, কিন্তু সামনে তোমাকে নিজের মঙ্গল নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকতে হবে। বিশেষ করে যারা পূর্ণবয়স্ক। তাদের সবাইকে নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হবে। জনসেবার আশা পরিপূর্ণরূপে ত্যাগ করো। এ-যুদ্ধ হবে নিজেকে বাঁচানোর। তারপরও নতুন যারা, যারা প্রাণ উৎসর্গ করে আনন্দ পায়, তারা একেবারে হাল ছেড়ে দেবে এমনটাও মনে করো না। এই পৃথিবীকে সবসময় বদল করে নতুনরা। পুরনোরা পথ-প্রদর্শক। অনাগত যুদ্ধে এ-ই আবার প্রমাণ হবে। আমি তোমাকে বলে রাখছি।

তোমাকে অনেক ধন্যবাদ ভাই। মনে আবার বল ফিরে পেলাম। ডুবে যাচ্ছিলাম হতাশায়। সাবধানে থেকো ভাই, আর কি বা বলার আছে বলো।

ঠিক। আমি এবার যাব। বেলা পড়ে এলো। সবাই খোঁজাখুঁজি করবে। ওরা তো জানে না যে আমি এখানে।

শুভেচ্ছা রইল।

শুভেচ্ছা জিনভাই। বিদায়।

বুকে ভীতিকর পাষাণ চেপে ফজল ফিরে চলে। অজানা ভয়ে সারা শরীর কেমন আড়ষ্ট। সারাবিশ্ব লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে – কথাটা তার কানে ধ্বনি-প্রতিধ্বনি হয়ে চলে অনর্গল। মানব-সৃষ্ট দুটি মহাযুদ্ধের মাঝ দিয়ে গেছে গত শতাব্দী, এ-শতাব্দীর মাত্র দুটি দশক অতিক্রান্ত হতে চলেছে, কী এমন মহামারি আসবে! আর সেটা মানব-সৃষ্ট নয়। সুতরাং কিছুটা যে অভিনব তা মনে করার অনেক কারণ।

বিকেলের ম্লান আলো তাকে কেমন মনমরা করে তোলে। একসময়ের ঝমঝমে এলাকা পাষাণপুরীর মতো। দীর্ঘ ছায়া। ভৌতিক আবহ। চারদিকে কোনো প্রাণের সাড়া নেই। এমনকি একটা ঘুঘুর ডাকও শোনা যাচ্ছে না। বাঁশঝাড়ের অভাব নেই। বাতাস স্থির। কালের গুহায় সে বন্দি। সময় এখানে স্থির। এখানে মানচিত্র নেই। নেই উত্তর দক্ষিণ, পুব পশ্চিম। বৃত্তায়িত চিন্তা মাথা ঘুরিয়ে দেয়। কিংকর্তব্যবিমূঢ় ফজল। এমন হচ্ছে কেন?

ধ্যান ভাঙে জোর কণ্ঠের আহ্বানে।

দাদা, কোথায় আপনি!

দূরে মানিকের মস্তিষ্ক নজর কাড়ে, সে জগৎ-সংসারে ফেরে।

আসছি …

দাদা, ছটার পর জয়পুর থেকে কলকাতা যাওয়ার বাস আর ছাড়বে না। আমাদের সময়মতো পৌঁছতে হবে।

আসছি। সেই একই উত্তর। ঘোর-না-কাটা কণ্ঠ। যান্ত্রিক একটা ধ্বনি মুখগহ্বর থেকে উচ্চারিত। কী যে তার অর্থ সে নিজেও অনুধাবনহীন।

পদযুগল একসময় ভিটে থেকে ফজলকে গন্তব্যে নিয়ে আসে।

মানিকের মুখে ব্যস্ততার ছায়া পড়তে পারে ফজল। সম্বিত ফেরে।

চলো, চলো, বেশ দেরি করে ফেলেছি। বাসের কথা মনে ছিল না।

বাড়ির সব সদস্য তখন দরজার বাইরে। একে একে বিদায়বার্তা দেওয়ার পরও সবাই পিছু ছাড়ে না। অনেকটা রাস্তা অনুসরিত।

দ্বিতীয়বার বিদায় নিয়ে ফজল-মানিক দ্রুত পা চালায়।

ভাগ্য ভালো। সেই অটোচালক ছেলেটিকে আবার পেয়ে যায়। উৎসাহ নিয়ে জয়পুর অভিমুখে তার যাত্রা।

ছটার বাস ধরতে পারবেন বাবু। খালি বসার জায়গা পাবেন কি না বলতে পারছি না।

সেটা তো তোমার দায়িত্ব নয়। সময়মতো পৌঁছে দাও তাহলেই হবে, মানিকের কর্তাতি।

ছেলেটি গিয়ার বদলাতে বদলাতে ঘোঁ ঘোঁ পথচারীকে সচেতন করে বা চেতন করে ছুট। আর সত্যি বাসস্ট্যান্ডে পাঁচটা পঁয়তাল্লিশে হাজির।

দাদা, উঠে পড়ুন। এদিক আমি সামলাচ্ছি।

ফজল বেশ ভালো একটা আসন পেল এবং মানিকের জন্যে পাশে বসার জায়গাও মিলল। ওম শান্তি।

ঝামটিয়ার জামাই ছেলেটি গাড়িতে উঠে ফজলের কাছ থেকে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে। ভালো লাগে ফজলের। সে পকেটে হাত দিতে যাচ্ছিল। মানিকের ইশারা। সে আগেই ও-পর্বের সমাপ্তি টেনেছে।

মানিক, ওর ফোন নম্বরটা নিয়ে নাও না! ভবিষ্যতে …

আমি আগেই নিয়ে নিয়েছি।

তথাস্তু!

সময়মতো বাস ছাড়ে।

ঘাড় ফিরিয়ে ফজল অঞ্চলটা দেখে মনে মনে উচ্চারণ করে : আর কোনোদিন কি আসা হবে! কে জানে।

ধীরে সন্ধ্যা নামছে। মনের মধ্যে আলো-আঁধারির খেলা। ক্ষুদ্র নগরীর রাস্তার বাতি জ্বলে গেছে। বাস শহর ছাড়িয়ে মুক্ত প্রান্তরের মাঝ দিয়ে এগিয়ে চলে। বাতাস শীতল। মধ্যাহ্নের মার্তণ্ডের তাপহীন। এরপরও স্বস্তি নেই ফজলের।

কী হলো দাদা, একেবারে চুপচাপ যে!

ভালো লাগছে না মানিক!

জন্মভূমি স্পর্শ করে এলেন, তা-ও মন ভালো নয়!

ওখান থেকেই তো সূত্রপাত। একা একা ওখানে না গেলে মন খারাপ হতো না!

গেলেন কেন, আমাকে না জানিয়ে।

তোমাকে সঙ্গে নিলে একটা বড় প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হতাম।

কী ব্যাপার!

ব্যাপার ভয়াবহ। ব্যক্তি ও সমষ্টি – সবার।

কী ব্যাপার দাদা! মানিক আগ্রহ নিয়ে ঝুঁকে পড়ে।

পৃথিবীতে মহামারি আকারে এক ভাইরাসের আগমন ঘটতে যাচ্ছে।

আপনি জানলেন কী করে?

আমার জন্মভূমি এই মৃত্যুবাণের তথ্যটি প্রদান করল।

মানিক ধন্দের মধ্যে। দাদার কী হলো! তিনি তো এমন হেঁয়ালি করে কথা বলেন না। রস করেন নানা প্রকারে। কিন্তু এ তো রসের আলাপ নয়। মরণবাণের বার্তা।

দাদা, একটু খোলাসা করবেন! আমি তো অতলে তলিয়ে যাচ্ছি!

শোনো যে-জিন আমার আঁতুড়ঘরে বর্তমান তার কাছ থেকে তথ্য।

আপনি এই ভূত-জিনে বিশ্বাস করেন?

শোনো, শেক্সপিয়র ভূত বিশ্বাসের যুগের মানুষ, তাই নাটকের শুরুতেই ভূতের আগমন। আমি ভূত বলছি না। কিন্তু জিন – এটা একটা 888sport apkেরও ভিত্তি। জনবিশ্বাসের মতো আমি বিশ্বাস করি না, কিন্তু এর ওপারে আরো কিছুর অস্তিত্ব তো থাকতে পারে। যা আমাদের দর্শনের ঝুলিতে নেই।

মানিক নীরব। এরপর সে আর কী বলবে।

কিন্তু পুরো ব্যাপারটা সে খুঁটিয়ে জানতে চায়। ফজল আদ্যোপান্ত জানায়।

মানিককেও গম্ভীরতা পেয়ে বসে। সারাবিশ্বে মহামারি! অজানা আতঙ্ক তার মতো সংবেদনশীল ব্যক্তিকে সঞ্চারিত করে।

কলেজ স্ট্রিট থেকে পরদিন বেলা নটায় দুজন নেতাজি সুভাষ বিমানপোতে রওনা দেয়। কেন জানি তাদের মধ্যে একটা অন্তর্লীন নীরবতা কাজ করে চলে। ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে একটি কথাও হয় না। এমনকি বই-পত্রিকা নিয়ে ছোটখাটো বাতচিতও নয়। কী সে মহামারি! কী তার রূপ! মানুষ পারবে তো মোকাবিলা করতে! মানুষের অসাধ্য তো কিছু নেই! তবে আজ পর্যন্ত পৃথিবী থেকে দারিদ্র্য তো দূর হলো না। আসলে সাধ্যের বাইরে অনেক কিছু থেকে যাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক শাখা দিয়ে এক নং গেট দিয়ে ফজল প্রবেশ করে।

বিদায়ের কোনো ঘনঘটা নেই। শুধু বিষাদ মেখে দুজনের দুদিক যাত্রা।

ফর্মালিটি শেষে মাত্র চল্লিশ মিনিটের মধ্যে 888sport app বিমানপোত।

পূর্বনির্দেশ মতো চার নং গেটে নিজ শকট দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফজলের স্বস্তি। ড্রাইভারের কুশল জানার পর থেকে নীরব। রাস্তাঘাট কেমন যেন অচেনা। ফাঁকা। দিন পনেরোই তো ছিল 888sport appর বাইরে! তবে এখানেও কেউ কি অগ্রিম জানতে পেরেছে! কিন্তু তা তো সম্ভব নয়! অবশ্য জিনরা সর্বত্রগামী। মানুষের বাহন লাগে। এমন কি দেবতারাও বাহননির্ভর। অবশ্য তাদের বাহন চরিত্রগতভাবে ডিজিটাল। মানুষের বাহন সে তুলনায় অ্যানালগ।

888sport appর যানজট তেমন করে ভেগাচ্ছে না। একরকম নির্বিঘ্নে যাত্রা। একেবারে নিজের পাড়ার গলির মুখে 888sport live chatকলার পাশে আটকে গেল। পুরো গলি ভরা লোক। নাট্যভবনের ফটক এই অঘটনের কারণ। ফজল ড্রাইভারকে প্রশ্ন করে : এখানে কিসের এত ভিড়?

স্যার, আজ ভারতের নাট্য-সম্মেলনের উদ্বোধন। মনে হয় বড় কেউ এসেছেন। অনেক পুলিশ চোখে পড়ে ফজলের।

সে ড্রাইভারকে শামুক গতিতে এগিয়ে যেতে বলে। কিছুটা কাজ দেয়। মানুষ ইঞ্চি ইঞ্চি করে সরে যেতে থাকে।

এমন সময় একজন কিশোরের কণ্ঠস্বর ফজলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

চৌদ্দো-পনেরো বছরের এক কিশোর তার সঙ্গীকে উচ্চরবে ডাকছে, জামাল … জামাল …

কি হলো! উত্তর আসে।

ফজলের নজরে আসে কিশোরটি।

ওই গাড়িটা দেখেছিস!

কোন গাড়ি …

ওই যে ছাইরঙের…

হ্যাঁ, চোখো পড়ছে …

লোকটাকে দ্যাখ …

কোন লোকটা?

ওই যে ভেতরে।

ভালো দেখতে পাচ্ছি না। আরে ওই যে লোকটা! যে-লোকটাকে ফুটপাথে দাঁড়িয়ে আমরা রোজ গাল দিই।