888sport appsের দেয়ালে গ্রাফিতির নতুন ইতিহাস …

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে দেশে গ্রাফিতির এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে। সংঘাত-সংঘর্ষে জুলাইয়ের প্রায় প্রতিটি দিনই ছিল বিবর্ণ।

সেদিন ছিল ২৮শে জুলাই। এটাও ছিল বিষণ্ন একটি দিন। এই দিনেই ঘোষণা হয় গ্রাফিতি কর্মসূচি। শুরু হয় শিক্ষার্থীদের কাজ। তাদের হাতেই নির্মিত হবে নতুন 888sport apps। কী এক অপার অনন্দে বিভোর তারা। নিজেরা টাকা জোগাড় করছে। রং-তুলি কিনছে। রং মেশাচ্ছে। দেয়াল পরিষ্কার করছে। তারপর যা হলো তা এক কথায় অবিশ্বাস্য। পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। কয়েকদিন ধরে দেশের দেয়াল জুড়ে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আঁকতে থাকে গ্রাফিতি। আজ পর্যন্ত পৃথিবীর আর কোনো দেশে এত অল্প সময়ে এত গ্রাফিতি আঁকা হয়েছে বলে জানা নেই।

দেয়াল জুড়ে আঁকা হয়েছে আন্দোলনের গৌরবময় গ্রাফিতি। এটি ছিল 888sport appsের ইতিহাসের নতুন এক অধ্যায়। একে 888sport app download for androidীয় করে রাখতেই শিক্ষার্থীদের এই উদ্যোগ। গ্রাফিতিতে রয়েছে তাদের রক্তের দাগ। বৈষম্যবিরোধী প্রতিবাদ, গণঅভ্যুত্থানের চিত্র। রাষ্ট্র সংস্কারের কথা, বদলে যাওয়া 888sport appsের গল্প। অসাম্প্রদায়িক বাংলার দৃশ্য। দুর্নীতি, অত্যাচারের অবসান, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, অধিকার প্রতিষ্ঠা, পরবর্তী প্রজন্মের প্রত্যাশাসহ আরো অনেক অনেক কিছু। শিক্ষার্থীদের আঁকা 888sport live chatকর্ম নজর কেড়েছে। প্রায় সবাই এর প্রশংসা করেছে। রক্তাক্ত জুলাইকে তারা গ্রাফিতিতে তুলে এনেছে। 888sport appsের শহরগুলো যেন স্লোগান আর স্লোগানের গ্রাফিতিতে রঙিন হয়ে উঠেছে। দেয়াল জুড়ে প্রতিবাদ, দেশপ্রেম, সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন।

দেয়ালে দেয়ালে লেখা হয়েছে – ‘বুকের ভিতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’, ‘পানি লাগবে পানি’, ‘গর্জে উঠেছিলাম বলেই 888sport appsে’, ‘তোর কোটা তুই নে, আমার ভাইকে ফেরত দে’, ‘বিকল্প কে – আমি, তুমি আমরা’, ‘ছিনিয়ে এনেছি বিজয় শিখিনি পরাজয়’, ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা ৩৬শে জুলাই’, ‘শোন ধর্ম আর দেশকে মিলাইতে যেও না, ফুলের নাম কি দিবা ফাতেমা চূড়া’, ‘রক্তাক্ত জুলাই’, ‘আপনি প্লিজ উত্তেজিত হবেন না’, ‘আমরা গড়ব আমাদের দেশ’, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো জুলাই’, ‘নাটক কম করো পিও’ ইত্যাদি স্লোগানের গ্রাফিতিতে ছেয়ে যায় 888sport apps।

কেবল বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ভবনের দেয়াল নয়, সীমানাপ্রাচীর, সড়কদ্বীপ, মেট্রোরেল ও উড়ালসড়কের স্তম্ভসহ কোথায় নেই গ্রাফিতি। এসব গ্রাফিতিতে রয়েছে দুই হাত প্রসারিত করে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সাহসিকতার প্রতীক আবু সাঈদের প্রতিকৃতি। আবু সাঈদের যে কত প্রতিকৃতি আঁকা হয়েছে এর যেন শেষ নেই। আছে মুগ্ধের প্রতিকৃতি। মুগ্ধের পানির বোতলের গ্রাফিতিও আছে। 888sport appsের দেয়াল যেন আজ রক্তাক্ত জুলাই।

আন্দোলনে আরো যারা জীবন দিয়েছে – ফাইয়াজ, তামিম, হৃদয়, ইফাজ, শুভ, শান্ত, রাসেল, সোহাগ, ফয়েজসহ আরো অনেক শিক্ষার্থীর প্রতিকৃতি গ্রাফিতিতে এসেছে। আরো আছে দারুণ সব গান ও 888sport app download apkর পঙ্ক্তিমালার গ্রাফিতি। ‘বল বীর বল উন্নত মম শির! শির নেহারি আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির…’!

‘…আঁধারে ভয় পেয়ো না আলো আছে আড়ালে/ আঁধার কেটে যাবে তুমি উঠে দাঁড়ালে…’। ‘…সব মানুষের স্বপ্ন তোমার, চোখের তারায় সত্যি হোক/ আমার কাছে দেশ মানে, এক লোকের পাশে অন্য লোক…’। এমন আরো অনেক কালজয়ী গান-পঙ্ক্তি। ছাত্রদের বীরত্বগাথা এই প্রথম নয় – ১৯৫২/ ’৬৯/ ’৭১ এমনকি ১৯৯০ সালেও তারা প্রমাণ করেছে কীভাবে অত্যাচারীর বিরুদ্ধে জয়ী হতে হয়।

ইতিহাসের এক অনন্য আন্দোলন হলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন। এটি 888sport appsের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংগঠন। ২০২৪ সালের ১লা জুলাই এটি সৃষ্টি হয়। প্রথমে কোটা সংস্কার ও পরবর্তীকালে অসহযোগ আন্দোলনে রূপ নেয়। ৮ই জুলাই ৬৫ সদস্যের কমিটি হয়। এদিকে দিন যতই যায় ততই আন্দোলন দুর্বার গতি ধারণ করে। এরই মধ্যে অনেক মামলা-হামলার ঘটনা ঘটে। কেউ আহত হয়, কারো মৃত্যু হয়, কেউ গুম হয়।

মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে গ্রাফিতি

888sport appsে মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে গ্রাফিতির মাধ্যমে প্রতিবাদ হয়ে আসছে। সে-সময় কামরুল হাসান এই ধারা শুরু করেন। তারপর নব্বইয়ের গণআন্দোলন পর্যন্ত 888sport live chatীরা গ্রাফিতি এঁকেছেন। সেই থেকে দেশের যে-কোনো আন্দোলনে গ্রাফিতি হয়ে উঠেছে প্রতিবাদের ভাষা। দেয়ালে কিছু উপস্থাপন করলে মানুষকে সেটা আকর্ষণ করে। তাই প্রতিবাদের একটা অন্যতম  অনুষঙ্গ হলো গ্রাফিতি। এই মুহূর্তে দরকার, জনগণের সরকার, অমুক ভাইকে ভোট দিন, অমুক ভাইয়ের সালাম নিন, এই মার্কায় ভোট দিন, সেই মার্কায় ভোট দিন – এভাবে বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক বক্তব্য, স্লোগান, ব্যক্তিগত কষ্টের কথা গ্রাফিতিতে এসেছে।

কষ্টে আছে আইজুদ্দিন

নব্বইয়ের দশকের একটি জনপ্রিয় গ্রাফিতি হলো ‘কষ্টে আছে আইজুদ্দিন’। কিন্তু আজ হয়তো অনেকেই সেই আইজুদ্দিনকে ভুলে গেছে। তখন পুরনো 888sport appর দেয়ালে, নীলক্ষেত, দোয়েল চত্বর, 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সীমানা প্রাচীরসহ বিভিন্ন জায়গায় ‘কষ্টে আছে আইজুদ্দিন’ দেখা যেত। অন্য জেলায়ও আইজুদ্দিন তাঁর কষ্ট ছড়িয়েছেন। অনেকে খোঁজ করেছেন – কে এই আইজুদ্দিন? কেন তিনি কষ্টে আছেন? কিসের কষ্ট তাঁর? খাওয়ার কষ্ট? টাকার কষ্ট? লেখাপড়ার কষ্ট, বেকারত্বের কষ্ট? প্রিয়জন ছেড়ে যাওয়ার কষ্ট? নাকি তিনি একজন কষ্টের 888sport live chatী? গ্রাফিতি 888sport live chatীরা রহস্যময়। তাঁদের কোনো কিছুই জানা হয় না। কিন্তু ইত্যাদির হানিফ সংকেত নাকি তাঁকে খুঁজে পেয়েছিলেন। জেনেছিলেন তাঁর কষ্টের কথা।

আবার প্রশাসনের লোকজন আইজুদ্দিনদের পছন্দ করে না। তাঁদের পালিয়ে থাকতে হয়। অনেক সময় পালিয়েও রক্ষা হয় না। আইজুদ্দিনেরও হয়নি। ২০১৫ সালে এক চুরির মামলায় নাকি তিনি গ্রেফতার হন। বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ার দুনিয়ায় তিন দশকেরও বেশি আগে কষ্টে জীবন কাটানো আইজুদ্দিনদের কষ্ট বোঝা অনেকের পক্ষেই, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের জন্য, কঠিন। রাষ্ট্র, সমাজ যখন এদের অবহেলা করে, তাদের যন্ত্রণা বোঝে না, তখন তারা বাসের সিটে, টয়লেটে, বেঞ্চে, গাছে, টাকায় নিজেদের কষ্টের কথা লিখে রাখে।

সুবোধ ভোর হবে কবে

এরপর চলে যায় অনেকদিন। সেটা ২০১৭ সালের কথা। তখন একদিন মিরপুরের দেয়ালে দেয়ালে ‘সুবোধ’ নামে একের পর এক গ্রাফিতি দেখা যেতে থাকে। অনেক মনে করেন, সুবোধই 888sport appsের সবচেয়ে জনপ্রিয় গ্রাফিতি। আগে এ-ধরনের গ্রাফিতি ছিল না। সুবোধ এত জনপ্রিয় হয় যে, গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়ায়ও সুবোধের গ্রাফিতি দেখা যায়। অনেকের প্রোফাইল পিকচারে সুবোধ আছে। কারো কারো গেঞ্জিতেও নাকি সুবোধ দেখা গেছে। সুবোধকে নিয়ে অনেক কৌতূহল। কেউ কেউ তাকে নিয়ে ফেসবুকে কমেন্ট করেছে। সুবোধ মানুষের ভাবনাকে জাগিয়ে তোলে।

সুবোধ গ্রাফিতির ভাষা ছিল, ‘সুবোধ ভোর হবে কবে।’ ‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা, এখন সময় পক্ষে না।’ ‘তোর ভাগ্যে কিছু নেই।’ ‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা, মানুষ ভালোবাসতে ভুলে গেছে।’ ‘সুবোধ এখন জেলে, পাপবোধ নিশ্চিন্তে বাস করে মানুষের মনে’ ইত্যাদি। কিন্তু কেউ জানে না কে এই সুবোধ? কেন তাকে কেউ ভালোবাসে না? কেন সে পালিয়ে বেড়ায়? পালালেও নগরের দেয়ালে রেখে যায় চিহ্ন। এতসব প্রশ্ন কে তাকে করছে? কাঁরা এটা এঁকেছিল? সুবোধ নাগরিকদের ভাবিয়ে তোলে। অনেকেই এর অংকন888sport live chatীর পরিচয় জানতে চায়। কিন্তু অজানাই থেকে যায় তাঁর পরিচিতি। গ্রাফিতি এমনই হয়। প্রশ্ন ছুড়ে দেয় বাতাসে। আর থেকে যায় মানুষের অন্তরে অগোচরে।

আবু বকর

সেটা ২০১০ সালের কথা। তখন ‘আবু বকর’ নামে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি থাকতেন স্যার এফ রহমান হলে। সে-বছরের ১লা ফেব্রুয়ারি শুরু হয় দুই পক্ষের গোলাগুলি। এতে আবু বকর মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। ৩রা ফেব্রুয়ারি তাঁর মৃত্যু হয়। তখন 888sport app বিশ^বিদ্যালয়ের দেয়ালে তাঁর গ্রাফিতি দেখা যায়।

এহসান রফিক, আবরার

তখন ২০১৮ সাল। সে-সময় সলিমুল্লাহ হলের শিক্ষার্থী এহসান রফিককে নির্যাতন করে চোখ নষ্ট করে দেওয়া হয়। আবার ২০১৯ সালে বুয়েটে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতিতে রফিকের নির্যাতন ও আবরারের মৃত্যুর প্রতিবাদ দেখা যায়।

পূর্ব বাংলা থেকে পূর্ব পাকিস্তান হয়ে 888sport appsে চিকামারা

ছুঁচো প্রাণীটিকে ‘চিকা’ বলে থাকে অনেকে। আবার দেয়াল লিখনকেও ‘চিকামারা’ বলে। তবে দেয়াল লিখনকে কেন চিকামারা বলা হয় সে এক রহস্য। এজন্য ফিরে যেতে হবে ১৯৪৭ সালে। সে-বছর দেশভাগের মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হয় ভারত ও পাকিস্তান। তখন 888sport app বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আনন্দে পাকিস্তানের পক্ষে দেয়াল লিখন শুরু করেন। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই তাঁদের মোহ কেটে যায়। বাংলা ভাষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে শুরু হয় পাকিস্তান সরকারের সীমাহীন বৈষম্য। তখন আবার সেই শিক্ষার্থীরাই দেয়ালে দেয়ালে লিখে এর প্রতিবাদ জানান। কিন্তু পুলিশের ভয়ে রাতে গোপনে লিখতে হতো তাঁদের। তাঁরা জিগাগাছের ডালের আগা থেঁতলে ব্রাশ বানতেন। ব্রাশের আগায় আলকাতরা দিয়ে স্লোগান লিখতেন।

এ-সময় একদিন হঠাৎ টহল পুলিশ তাঁদের কাছে আসে। তখন শিক্ষার্থীরা ব্রাশ দিয়ে ঝোপঝাড়ে আঘাত করতে থাকে। পুলিশ জানতে চায়, তাঁরা কী করছেন? শিক্ষার্থীরা বলেন, হলে চিকার যন্ত্রণায় তাঁরা থাকতে পারেন না। তাই চিকা মারছেন। তখন আবার 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ হল ছিল একতলা। তার উপর টিনশেডের স্যাঁতসেঁতে রুম। এর চারপাশে ঝোপঝাড়। হলের রুমে চিকার উপদ্রব ছিল। একই অবস্থা ছিল পুলিশের ব্যারাকেও। ফলে পুলিশ ছাত্রদের চিকা মারায় খুশিই হয়।

এরপর থেকে শিক্ষার্থীরা চিকামারার সময় দুই দলে বিভক্ত হতেন। একদল ঝোপঝাড়ে চিকা মারার ভান করতেন। আরেক দল দেয়ালে সরকারবিরোধী স্লোগান লিখতেন। এরপর থেকে দেয়ালে কিছু লিখতে গেলেই শিক্ষার্থীরা বলতেন যে, চিকা মারতে যাচ্ছি। এভাবে ‘দেয়াল লিখন’ শব্দটি ‘চিকামারা’য় পরিণত হয়। কবি হেলাল হাফিজ তাঁর এক লেখায়ও এমন অভিমত দিয়েছেন। সেই পূর্ব বাংলা থেকে পূর্ব পাকিস্তান হয়ে 888sport appsেও চিকামারা শব্দটি ব্যবহার হচ্ছে। রাজনৈতিক বক্তব্য, স্লোগান, ব্যক্তিগত কষ্টের কথা চিকামারায় এসেছে।

এই চিকামারা একধরনের গ্রাফিতি। তবে এখন আর চিকামারা তেমন দেখা যায় না।

১৯৪৮ সালে চিকামারা শব্দের প্রচলন হয়, ১৯৫২ সালে বিস্তার লাভ করে আর ১৯৬৯ সালে শব্দটি দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। উত্তাল রাজনৈতিক সময় দারুণ সব চিকা লেখা হতো। গ্রাফিতি রাতের অন্ধকারে এক-দুজন আঁকেন। কিন্তু চিকা রাজনৈতিক, দলীয় এবং সংগঠনিক। সবাই মিলে দলবেঁধে চিকামারে। চিকা ও গ্রাফিতির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। গ্রাফিতিতে ব্যক্তির রাগ, ক্ষোভ বেশি দেখা যায়। চিকায় দল ও সংগঠনের কথা থাকে। কিন্তু সময় যেতে যেতে এমন এক রাজনীতি এলো যেখানে বিরোধীদলকে প্রায় মাঠেই থাকতে দেওয়া হলো না।। এভাবে চিকামারার সংস্কৃতিও প্রায় হারিয়ে গেল।

গ্রাফিতির ধারণা

দেয়াল লিখন বা দেয়ালচিত্র হলো গ্রাফিতি। এর এক অদৃশ্য শক্তি আছে। গ্রাফিতিকে অনেক সময় সাধারণ কিছু মনে হয়। কিন্তু এর পেছনে থাকে এক গভীর বোধ। থাকে জীবন ও সমাজের দর্শন। এটা মানুষের অভিমতের বহিঃপ্রকাশ। এতে সূক্ষ্মভাবে সমাজের পচন, পরিণতি ও পরিত্রাণের প্রকাশ থাকে। অন্যায়, অত্যাচার, রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ নানা ঘটনা এর বিষয়। এটা যেমন সরকার উৎখাতের হুমকি হতে পারে, প্রতিবাদ হতে পারে, তেমনি রাজনৈতিক নেতানেত্রীর গুণকীর্তন হতে পারে, আবার কারো একান্ত কষ্টের কথাও এখানে থাকতে পারে।

বিপ্লবের প্রতীক

গ্রাফিতি একধরনের বিপ্লবের প্রতীক। আন্দোলনের সময়ে নানা কর্মসূচির মতোই গ্রাফিতিও গুরুত্ব পায়। অন্যায়-অবিচারের ব্যঙ্গাত্মক প্রকাশের মধ্য দিয়ে অত্যাচারী শাসককে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়। যে-প্রশ্নের উত্তর তারা দিতে চায় না। তখন মানুষের মধ্যে নানামুখী আলোচনা হয়। সরকার যদি এসব থেকে পরিত্রাণের চেষ্টা না করে তাহলে এর প্রভাব একসময় সরকারকে পতনের দিকে নিয়ে যায়। তাই অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশে দেয়ালে দেয়ালে প্রতিবাদ দেখা যায়। জগতের প্রায় সব দেয়ালই একজন গ্রাফিতি 888sport live chatীর ক্যানভাস হতে পারে।

১৯৬৮ সালের এক ঘটনা। ফ্রান্সে তখন শিক্ষাক্ষেত্রে সীমাহীন বৈষম্য চলছে। সে-বছরের মে মাসের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সরকারের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠে। শুরু হয় ব্যাপক আন্দোলন। তারা গ্রাফিতির ভাষায় প্রতিবাদ জানায়। বিপ্লব আরো জোরদার হয়। শিক্ষার্থীরা জীবন দেয়। কিন্তু অন্দোলন থামে না। একসময় সরকারের পতন হয়। দুনিয়া জুড়ে সেদিনের সফলতা ছড়িয়ে পড়ে।

গ্রাফিতির আর্ট হওয়ার দায় নেই

সব সময় গ্রাফিতি প্রতিবাদী নাও হতে পারে। তাই কেউ যখন লেখে ‘জীবন সুন্দর, এগিয়ে যাও’, ‘Sorry for your wall.’ ‘Follow the white rabbit’ এসবই গ্রাফিতি। মানুষ নানাভাবে তার অনাস্থা, খারাপ লাগা, আপত্তি ও ভালো লাগা জানাতে চায়। এভাবে 888sport live chatী নান্দনিক আর্টের বাইরে গিয়ে নিভৃতে নিজের মনের কথা লেখে। এটাই হলো গ্রাফিতি। গ্রাফিতির আর্ট হওয়ার দায় নেই। এটা শাসককে ধাক্কা দেয়। মানুষকে ভাবায়।

বিশ্ব-ইতিহাসে গ্রাফিতি

গ্রাফিতির ইতিহাস অনেক পুরনো। ঠিক কবে, কখন এর শুরু তা বলা কঠিন। তবে অনেকে মনে করেন, পশুর হাড় দিয়ে গুহায় খোদাই করেই প্রথম গ্রাফিতি আঁকা হয়। তবে প্রাচীন রোমে সমাধির দেয়াল, সিরিয়া, জর্ডান ও সৌদি আরবে গ্রাফিতি দেখা যায়। সে-সময়ও গ্রাফিতি বেশ অর্থপূর্ণ ছিল। সেখানে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ, সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবনা থাকত। সেই থেকে বিভিন্ন দেশের তরুণেরা দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সবচেয়ে বেশি গ্রাফিতি দেখা যায়। তখন আমেরিকার দেয়ালে দেয়ালে দেখা গেল টেকো মাথার এক লোক দেয়াল ধরে বসে আছে। সেখানে লেখা ছিল – ‘KILROY WAS HERE’। সে-সময় আবার আমেরিকার এক জাহাজ জার্মানদের হাতে ধরা পড়ে। তাই হিটলার ভাবলেন, এটা নিশ্চয়ই আমেরিকানদের কোনো হাই ইন্টেলিজেন্সের কোডনেম। অথচ এই কিলরয়ের রহস্য নাকি আজো অজানা।

বিশ্বের সেরা গ্রাফিতি

গ্রাফিতি888sport live chatীরা সাধারণত পরিচয় গোপন রাখেন। তাঁরা হলেন অন্তর্মুখী 888sport live chatী। ইংল্যান্ডের ব্যাঙ্কসি ছিলেন একজন বিখ্যাত কিংবদন্তি পথ-গ্রাফিতি888sport live chatী। তিনি রাজনৈতিক ও যুদ্ধবিরোধী গ্রাফিতির জন্য বিখ্যাত। লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে প্যালেস্টাইন পর্যন্ত তাঁর গ্রাফিতি দেখা যেত। ইসরায়েলের বিতর্কিত পশ্চিম তীর নিয়ে তিনি বিদ্রূপমূলক গ্রাফিতি তৈরি করেছেন। ব্যাঙ্কসির ছিল এক সিনেম্যাটিক রহস্য। আজো কেউ জানে না কে এই লোক? কোথায় তিনি থাকেন? আর কেনই বা দুনিয়া জুড়ে গ্রাফিতি আঁকেন? বিশ্বের দেয়াল, সড়ক আর সেতুতে ব্যাঙ্কসির গ্রাফিতি দেখা যায়। তাঁর সেরা গ্রাফিতির মধ্যে রয়েছে – ‘ফ্লাওয়ার থ্রোয়ার’, ‘দ্য মাইল্ড মাইল্ড ওয়েস্ট’ এবং ‘বেলুন গার্ল’ ইত্যাদি। তাঁর গ্রাফিতি অনেক উচ্চ মূল্যে বিক্রি হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘ডেভিড কো’কে বলা হয় ‘সৃজনশীল বিদ্রোহী’। তিনি ফেসবুকের নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গকে তাঁর নতুন কার্যালয়ের গ্রাফিতি এঁকে দেন। এজন্য তিনি কোনো টাকা না নিয়ে প্রতিষ্ঠানের একটি শেয়ার দাবি করেন। ২০১২ সালে যার মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ২০ কোটি ডলার।

ব্রাজিলের গ্রাফিতি888sport live chatী এদুয়ার্দো কোবরা ছিলেন দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তিনি এক বিশেষ ধরনের গ্রাফিতি আঁকতেন। তাঁর আলেচিত গ্রাফিতির মধ্যে রয়েছে – বিশ্বখ্যাত মানুষের মুখ, পরিবেশদূষণ, বৈশ্বিক উষ্ণতা, বন উজাড়, যুদ্ধ ইত্যাদি। তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ গ্রাফিতি এঁকে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লেখান।

এরিক ক্ল্যাপটন ইংল্যান্ডের বিখ্যাত রক গিটারিস্ট, গায়ক, গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক। তাঁকে মনে করা হয় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ গিটারিস্টদের একজন। সেটা ছিল ১৯৬৭ সাল। লন্ডনের ইসলিংটন স্টেশনের দেয়ালে ‘ক্ল্যাপটন ইজ গড’ নামে একটি গ্রাফিতি দেখা যায়। বিংশ শতাব্দীতে সেটিই ছিল নাকি বিশ্বের সেরা গ্রাফিতি।

ভিন্নমত

গ্রাফিতি নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। অনেকে মনে করেন, অন্যের বাড়ি বা প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে গ্রাফিতি এঁকে সৌন্দর্য নষ্টের অধিকার কারো নেই। আবার কখনো কখনো পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয় গ্রাফিতি888sport live chatীদের। আবার কখনো কখনো সন্ত্রাসীগোষ্ঠীও গ্রাফিতির মাধ্যমে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেয়। এছাড়া অনেকে পোস্টার লাগায়। নেতা-নেত্রীর বন্দনায় দেয়াল ভরে ফেলে। এসব থেকে বরং গ্রাফিতি ভালো। কলকাতার লেখক বীরেন দাশ শর্মা তাঁর গ্রাফিতি এক অবৈধ 888sport live chat গ্রন্থে লিখেছেন, ‘এক অর্থে গ্রাফিতি 888sport live football না হয়েও লেখার 888sport live chat, চিত্রকলা না হয়েও অঙ্কন888sport live chat।’

গ্রাফিতি সবসময়ই যে গোপনে আঁকা হয়, তেমনটা নয়। 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শামসুন্নাহার হলের নির্যাতন’ নিয়ে আঁকা ‘ড্রাগন গ্রাফিতি’ প্রশংসিত। ষাটের দশকে হেলাল হাফিজের ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয় 888sport app download apkর বিখ্যাত পঙ্ক্তি ‘এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময় …।’ দশকের পর দশক ধরে, এবং এখনো, জনপ্রিয় বিষয় গ্রাফিতি হিসেবে।