888sport appsের ভাষা-আন্দোলনের প্রেক্ষিতে হাসান হাফিজুর রহমানের ‘চোখের জলে ধোয়া’ 888sport app download apkর পর্যালোচনা

উনিশ শতকের আলোকায়ন বা রেনেসাঁস মূলত ছিল হিন্দু-বাঙালির। ইংরেজের উপনিবেশ ছিল যে ডিহি কলকাতা, সেই কলকাতাতেই সীমাবদ্ধ থেকেছিল এই আলোকায়নের প্রভাব। নগরকেন্দ্রিক ও হিন্দু-মধ্যবিত্ত শ্রেণিকেন্দ্রিক এই পরিবর্তন 888sport appর মুসলিম সমাজ ও মানসকে প্রভাবিত করেনি, এর কারণ বৃহত্তর মুসলিম সমাজ প্রায় সমস্ত উনিশ শতক জুড়ে ইংরেজ নামক শাসনক্ষমতাটির প্রিয়পাত্র হতে বা কাছাকাছি আসতে চায়নি। ইংরেজ ও তাদের পাশ্চাত্য সংস্কৃতি সম্পর্কে একভাবে বিরূপ মনোভাব পোষণ করত ভারতীয় মুসলিম সমাজ, সম্ভবত মুসলিম শাসনকে অপসারিত করে ভারতে কেন্দ্রীয়ভাবে ইংরেজ শাসনের ভিত্তি স্থাপিত বলেই এমনটা হয়েছিল বলে গোপাল হালদার মনে করেছেন।

ফলে যে উনিশ শতক নাগরিক হিন্দু-বাঙালির অনুগত প্রজা হয়ে ওঠার ইতিহাস এবং রাজানুগ্রহে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চার এক বিস্তীর্ণ আধুনিক পরিসর তৈরির যুগ, ব্রিটিশ প্রতিরোধী ফরায়েজী-ওয়াহাবি আন্দোলনে ব্যস্ত মুসলিম সমাজের বহুলাংশ স্বভাবতই সেই আধুনিকতা থেকে বঞ্চিত থেকে গেল। জাতীয়-রাষ্ট্রের ধারণাটি মুখ্যত আধুনিক ধারণা। ভারত-পাকিস্তান দেশবিভাজন, যা ধর্মপরিচয়ভিত্তিক দ্বি-জাতিতত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে সংঘটিত, এই আধুনিক জাতীয়-রাষ্ট্রের জন্ম দিতে, তার চাহিদা-প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তিগুলোর কাছে দায়বদ্ধ থাকতে পারবে না – এটাই স্বাভাবিক। দেড় শতক পরে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ-ভারত স্বাধীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান একত্রে একটি অখণ্ড মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীনতা পেল, সঙ্গে সঙ্গেই প্রায় ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সরকার

রাষ্ট্র-সংগঠনকে মজবুত করার জন্য এক ভাষা, এক জাতির আদর্শে একটিমাত্র ভাষা, উর্দুকে সরকারি ভাষার স্বীকৃতিদানের প্রস্তাব করল। এর ফলে পূর্ব পাকিস্তানের এক বিস্তীর্ণ বাংলাভাষী জনগোষ্ঠীর সমস্তরকম সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। সরকারি শিক্ষা, আদালত, অফিসের ভাষায় বাধ্যতামূলকভাবে উর্দু ব্যবহারের এই আরোপিত নীতি পূর্ব পাকিস্তানকে বিচলিত করেছিল। যদিও বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণের প্রস্তাব এর আগেই মুসলিম লীগের একটি অংশের দ্বারা পরিচালিত ‘গণ-আজাদী লীগ’ দেশভাগের অব্যবহিত পরেই পেশ করেছিল। এখানে বাংলাকে মাতৃভাষা হিসেবেও উল্লেখ করা ছিল। তবে এই সরকারি নীতির আরোপই একাংশের মধ্যে বিদ্রোহের আগুন জ্বেলে দেয়। যে-কোনো আব্রাহামিক ধর্মে একত্বের আদর্শটি গুরুত্বপূর্ণ। এক ঈশ্বর, এক ধর্মগ্রন্থ, এক আইনের নীতির মতোই সম্ভবত সারা পাকিস্তানের একটি সরকারি ভাষার দাবি উঠে আসে, তার পেছনে ধর্মীয় অনুশাসনগত প্রণোদনাও থাকতে পারে। পূর্ব পাকিস্তানের 888sport free betগরিষ্ঠ বাংলাভাষী মুসলিম জনগণ ধর্মীয়-সামাজিক অখণ্ডতার স্বার্থে প্রশ্নহীন আনুগত্যে সেই সরকারি নীতি মেনে নেবে – এমনটা ধরেও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পূর্ব বাংলার মানুষ মাতৃভাষা কেড়ে নেওয়ার এই নীতিকে আগ্রাসন হিসেবেই দেখেছিলেন। উর্দুকে একমাত্র সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকার করা সরকারি তরফেও সেদিনের মুসলিম-বাঙালি দাঁড়িয়েছিল; কিন্তু 888sport free betগরিষ্ঠরাই বাংলাকে আরেকটি রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি করেছিলেন। জাতীয় রাষ্ট্রের ধারণায় খাপ না খাওয়া, দুটি ভিন্ন সংস্কৃতি ও ভাষিক অঞ্চলকে, কেবল ধর্মের ভিত্তিতে এক করে দেখার নীতিটি আধুনিক সমাজে অচল, তা বেশিরভাগ মানুষই বুঝেছিলেন।  আসলে  ভাষাই  আমাদের  দৈনন্দিনের  পৃথিবীকে নির্মাণ ও মূর্ত করে তোলে। ভাষার ওপর আগ্রাসন আসলে ক্ষমতার আগ্রাসন। পশ্চিম পাকিস্তান আসলে সেই ক্ষমতাকেন্দ্র, যা অখণ্ডতার আদর্শের নামে পূর্ব পাকিস্তাকে একটি অর্থনৈতিক উপনিবেশ করে তুলতে চেয়েছিল। প্রমাণ হিসেবে বলা যায়, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ দেখিয়েছিলেন, পাকিস্তানের কোনো প্রদেশেই উর্দু মাতৃভাষা নয়। বাংলাকেও মাতৃভাষা হিসেবে অন্যসব ভাষার থেকে, এমনকি ধর্ম-ভাষা আরবির থেকেও আগে রাখার পক্ষপাতী ছিলেন তিনি। হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে প্রাথমিক শিক্ষার ভাষা ও প্রাদেশিক রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে স্বীকার করায় গুরুত্ব দেন তিনি। উর্দুর আগ্রাসনকে এমনকি ‘রাজনৈতিক পরাধীনতা’ বলতেও কুণ্ঠিত হননি

ড. শহীদুল্লাহ্। এতদসত্ত্বেও উর্দুর সমমর্যাদায় বাংলাকে স্বীকার না করাই সরকারের বিরুদ্ধে ভাষা-আন্দোলন সংগঠিত করে। পাক-সরকার এই সংগঠিত প্রতিবাদ-বিক্ষোভ বন্ধ করার জন্য 888sport appয় ১৪৪ ধারা জারি করে সবরকম মিছিল ও সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ১৯৫২ সালে একটি শান্তিপূর্ণ মিছিল এই ১৪৪ ধারা অমান্য করলে সরকারি পুলিশ মেডিক্যাল কলেজের সামনে মিছিলে গুলিবর্ষণ করে। এম.এ পাঠরত আবুল বরকত, আবদুল জব্বার ছাড়াও নিহত হন রফিক ও সালাম নামে চার যুবক। এই হত্যাকাণ্ডকে ঘিরেই ভাষা-আন্দোলনে অগ্নিসংযোগ ঘটে। গণদাবির মুখে নতিস্বীকারে বাধ্য পাকিস্তান সরকার ১৯৫৬ সালের সংবিধানে উর্দু ও বাংলাকে সমমর্যাদার রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকার করে নেয়।

হাসান হাফিজুর রহমানের অন্তিম শরের মত 888sport app download apkর বই থেকে নেওয়া ‘চোখের জলে ধোয়া’ 888sport app download apkটি ভাষা-আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে রচিত একটি 888sport app download apk হিসেবে পাঠ করা সম্ভব। এই 888sport app download apkর মধ্যে বারবার ধ্বনিত হয়েছে পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানের ওপর ভাষাগত আগ্রাসনের অনুষঙ্গ, যা ১৯৪৮-৫৬ কালপর্বে উর্দু ভাষার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বাঙালির আন্দোলনের ইতিহাসকে বারবার সামনে এনে হাজির করবে।

তিনটি স্তবকে বিভক্ত এই গদ্য888sport app download apkয় বর্ণনার ঢংটি ব্যবহার হলেও আদতে বর্ণনাকে ছাপিয়ে অনেক বেশি কিছু এই 888sport app download apkয় রয়েছে। একাধিক স্তরে একাধিক অর্থের সাযুজ্যে 888sport app download apkটি বর্ণনাত্মক চরিত্র ছেড়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ইতিহাসের ব্যাখ্যাকার হয়ে  উঠেছে। প্রথমাংশে বাঘা যতীন ও বরকতের মতো দুজন সংগ্রামী ‘শহীদে’র নাম আমরা পাই একত্রে, একই অনুষঙ্গে। ঘটনাচক্রে যার একজন পশ্চিমবঙ্গের তথা ভারতের, অন্যজন পূর্ব পাকিস্তানের। ভাষা-আন্দোলনের প্রেক্ষিতটি নজর করলে দেখা যাবে, এ আসলে রাষ্ট্রকাঠামোর সঙ্গে একজাতীয় অন্তর্ঘাত। ‘পাকিস্তানের’ গৃহযুদ্ধও বলা চলে। রাষ্ট্রশক্তি ‘পাকিস্তানে’র কাছ থেকে মাতৃভাষার অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার দাবিতে পশ্চিমবঙ্গ স্বতঃই হয়ে উঠেছে পূর্ব পাকিস্তানের সহমর্মী এবং তার বিরুদ্ধপক্ষে এসে দাঁড়িয়েছে পশ্চিম পাকিস্তানের উর্দু-আগ্রাসন। তাই হয়তো, ভাষা-আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকলেও বরকতের সঙ্গে উচ্চারিত হওয়া নামটি ভারতীয় বাঙালি যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ওরফে বাঘা যতীনের। একই মাতৃভাষার দুটি পৃথক অঞ্চলের ভৌগোলিক সীমানা পদ্মানদী ও রাজনৈতিক সীমানা কাঁটাতার দিয়ে বেঁধে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত করলেও পশ্চিমবঙ্গ এখানে নিছক ভারতের ‘এজেন্সি’ নয়, বরং এক অভিন্ন ভাষা-অঞ্চল হিসেবে তা 888sport appsের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে।

বাঘা যতীনের মতো তীব্র-একাগ্র সূর্যমুখী/ বরকতের রক্তাক্ত শার্টের জ্বলজ্বলে রঙ/ অবিনাশী সূর্য,

১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ পদযাত্রায় শামিল 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বরকতকে সরকারি পুলিশ গুলি করে মারে রাষ্ট্র-নির্দেশিত ১৪৪ ধারা অমান্য করার জন্য। সালাম, রফিক, জব্বার, বরকতদের এই নির্মম হত্যাকাণ্ড থেকে ‘চোখের অরুচি শ্রুতির বিরাগে’ যেন কবি মুখ ফিরিয়ে থাকতে চান, আবার অন্যদিকে বরকতের শার্টের উজ্জ্বল রক্তের গৌরবে শিহরিতও হন তিনি। আত্মোৎসর্গের গৌরবই আসলে ‘জ্বলজ্বলে’ রং দিয়েছে শাহাদাতের রক্তকে। আবার ‘অবিনাশী সূর্য’ আর দুই লাইন পূর্ববর্তী ‘তীব্র-একাগ্র সূর্যমুখী’ শব্দদ্বয় একই ইমেজে একে অন্যের বৈপরীত্যকে স্পষ্ট করছে। সূর্য অবিনাশী বলেই তা মাতৃভাষার পবিত্র অধিকার আদায়ের পথে আমাদের লক্ষ্যভ্রষ্ট করবে না। এই অবিনাশী কাক্সিক্ষত  লক্ষ্যই হলো সেই সূর্য, যার সামনে পুড়ে যাওয়ার ভয় না করে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় স্পর্ধিত সূর্যমুখী, বরকত-বাঘা যতীনরা। পুড়ে যাওয়ার ভয় না করে চোখে চোখ রাখে ‘অবিনাশী’ রাষ্ট্রশক্তির। ‘তীব্র একাগ্র’ একটি বিন্দুতে অনড়-অটল হয়ে প্রতিরোধ করে যায়।

দ্বিতীয় স্তবকে দমন-পীড়নের ইমেজ ফিরে ফিরে আসে বারবার। পশ্চিম পাকিস্তানের দমনমূলক পদক্ষেপগুলো বাংলাভাষী পূর্ব পাকিস্তানকে দীর্ঘদিন সহ্য করতে হয়েছিল। এক ভাষা, এক ক্ষমতা, এক চেতনার চেনা লবজ্ আসলে যে সমসত্ত্বীভবনের দিকে আমাদের নিয়ে যায়, সেখানে ভিন্নতার কোনো পরিসর নেই। আপাতভাবে উদারনৈতিক রাষ্ট্রভাবনার এমনকি ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যেরও বিপ্রতীপে অবস্থান করছে এই অগণতান্ত্রিক একীভবনের আদর্শ। এই আদর্শের ভিত্তিতে একটি ক্ষমতাতন্ত্র নিজের আধিপত্য কায়েম করতে চেয়েছিল কার্যত পূর্ব পাকিস্তানকে একটি উপনিবেশ হিসেবে ব্যবহার করেই।

বিনষ্ট বাতাসের দাপট কাঠফাটা/ ঠাঠা শব্দ আনে আত্মার গভীরে/ চোখে ঠেকে লিকলিকে পরিপার্শ্ব,/ ভয়াল আত্মরতি

‘বিনষ্ট বাতাস’ আসলে তৎকালীন সামাজিক বাতাবরণ। পূর্ব পাকিস্তান নিজের অবস্থান চিনে নিতে পারছে না। সে রাষ্ট্রযন্ত্রের হয়ে উচ্চারণ করবে, না মাতৃভাষার পক্ষে – এই নিয়ে তার দোলাচলতা কাটে না বলেই ‘রাজাকার’ শব্দেরা এসে পড়ে। একই ভাষার ভাষী, একই দেশের নাগরিক হলেও তাদের উদ্দেশ্য হয়ে যায় আলাদা। ‘ভয়াল আত্মরতি’ তাই এক ধর্মীয়-সামাজিক একত্বের কাল্পনিক ধারণায় নিজের অবস্থানকে স্থাপন করা এবং সক্রিয়ভাবে ভাষা-আন্দোলন দমনে মদদ দেওয়া অথবা জেনেবুঝেও নির্বাক থাকা। ‘কাঠফাটা’ ও ‘ঠাঠা’ শব্দ প্রখর রোদ্দুরের অনুষঙ্গ বোঝাতে ব্যবহৃত হয় বলে ভাবা যায়; এখানেও প্রতিকূলতা অর্থে খররৌদ্রের উপমায় কবি শব্দদুটি ব্যবহার করেছেন। তবে ‘ঠাঠা’ ধ্বন্যাত্মক শব্দ মেশিনগানের গুলির আওয়াজকেও দ্যোতিত করে তা মনে রাখলে প্রথম স্তবকে উল্লিখিত বরকতের মৃত্যুর পুনঃঅনুষঙ্গটিও যেন ভেসে ওঠে। আত্মার গভীরে আনা ঠাঠা শব্দের দ্রুতগতিসম্পন্ন বুলেট যেন আজ বরকতের হৃদয় থেকে প্রতিটি স্বজাতির বুকেও ছড়িয়ে পড়েছে। চোখে যে ‘লিকলিকে’ পরিপার্শ্ব ঠেকে, তা আসলে শাসনের, প্রহারের পরিপার্শ্ব। তাই ‘লিকলিকে’ বেতের চিত্রকল্পকে তুলে ধরছে যেন। ক্ষমতার এই বেত পিঠে আছড়ে পড়বে যদি ক্ষমতার শাসনকে অস্বীকার করতে চাওয়া হয়।

‘কান চিরে কামার্ত কৌরব’ শব্দবন্ধ হিন্দু মিথের পুনর্ব্যবহারে বুঝিয়ে দেয় কুরুবংশকে যেমন একটাই বংশ হয়েও ক্ষমতা বণ্টনের জন্য দু-ভাগ হতে হয়েছিল, আজকের পাকিস্তানের পরিস্থিতিও অনেকটা সেরকম। পূর্ব-পশ্চিমের এই বৈরিতায় আসলে একাধারে অন্যায্য ক্ষমতা দখলের লড়াই আছে, অন্যদিকে আছে মাতৃভাষার ন্যায্য অধিকারের দাবি। যেমনভাবে ধৃতরাষ্ট্রদের অন্যায্য ক্ষমতা দখলের বিরুদ্ধে পাণ্ডবরা ন্যায্য অধিকারের দাবি আদায়ে প্রতিপক্ষ হয়েছিলেন, লোভ-কামনায় জর্জরিত পররাজ্য আগ্রাসী পশ্চিম পাকিস্তানও আজকের দুঃশাসন হয়ে ন্যায়বিচারের প্রত্যাশী বাঙালির প্রতিপক্ষে দাঁড়িয়েছে। যতবার এই বাস্তব কবি দেখতে পান, কবিকে ফিরে আসতে হয়।

প্রথম ও দ্বিতীয় স্তবকে মৃত্যু, হত্যা, দমনমূলক নীতির পরিমণ্ডলে যে-আশাহীন বাস্তব বিম্বিত, তৃতীয় স্তবকে তার থেকে উত্তরণ ঘটে এক অতীত 888sport sign up bonusতে নিমজ্জনের মাধ্যমে। বলা যেতে পারে, এই অতীতচারণ, 888sport sign up bonusতে নিমজ্জন আসলে পলায়ন প্রবৃত্তিরই অন্য নাম। কিন্তু, ‘ফের হাঁসের পালকের মতো কূট ক্লেদ ঝেড়ে শাদা/ আমি হেসে উঠি। জেগে ওঠে 888sport sign up bonusর মৈনাক …।’ এখানে কূটক্লেদময় সরোবরে সাদা হাঁসের অবগাহন ও পুনরায় জেগে ওঠার চিত্রকল্পটি যেভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, বোঝাই যায়, এ আসলে 888sport sign up bonusতে ডুবে যাওয়া নয়, বরং ভেসে ওঠা। বরং বাস্তবের কূটক্লেদময়তায় সাময়িক ডুবই যেন সাদা হাঁসের অনন্ত ভেসে থাকা জীবনের অংশমাত্র। তাই হাঁসের ভেসে ‘ওঠা’ এবং জেগে ‘ওঠা’ 888sport sign up bonusর মৈনাক ইত্যাদিতে আসলে ওঠাটুকুই মুখ্য, ডোবা নয়। চিত্রকল্পে সময়ের তরল জলের ভরাডুবি ছাপিয়ে অতীত 888sport sign up bonusর মৈনাক যেভাবে ওঠে, তা থেকেই স্পষ্ট হয় 888sport sign up bonusর ভেতর পলায়ন নয়, 888sport sign up bonusর পাহাড়ে দাঁড়িয়ে এই অসময়ে, 888sport sign up bonusকাতরতাকে অতিক্রম করাই কবির উদ্দেশ্য। অর্থাৎ দ্বিতীয় স্তবকের আশাহীন বাস্তবকে লক্ষ করা কবির বারবার ফিরে আসা – আসলে ‘মুক্তিস্বপ্নে’র কাছে ফিরে আসা।

‘মুক্তিস্বপ্ন’ শব্দটি তৃতীয় স্তবকে

প্রথমবার এসে দ্বিতীয় স্তবকের ‘যতোবার …’ থেকে ‘আমি ফিরে আসি’ অংশের মধ্যবর্তী ব্যবহৃত মালোপমাটির অর্থকে এভাবেই পরিষ্কার করে দেয়। এবং এই প্রত্যাবর্তনের পথের লক্ষণও চিনিয়ে দিতে ভুল করেন না তিনি। প্রত্যেক শহিদই যেন গেরিলার ‘নম্র অহংকার’-এর শামিল। প্রতিটি শাহাদাত যেন প্রতিটি নবজন্ম। এভাবেই স্বজাতির মৃত্যু চোখের অরুচি ও শ্রুতির বিরাগ থেকে শাহাদাতের গৌরব পায় এবং নিরাশা থেকে আশার দিকে একটি বৃত্ত সম্পূর্ণ করে। নিছক যুদ্ধের জন্য যুদ্ধ নয়, ব্যবসা নয়, অবদমনের বিরুদ্ধে এই স্বাতন্ত্র্যরক্ষার যুদ্ধ বলেই এখানে নম্রতার সুর প্রবল, ঔদ্ধত্যের নয়।

888sport app download apkর শেষ লাইনে কবির সিদ্ধান্ত বা সংকল্প, ‘চোখের জলে ধোয়া রক্ত তীব্র-একাগ্র গান হয়ে ওঠে’ – লক্ষণীয়, প্রথম লাইনে সূর্যকে মুখোমুখি চ্যালেঞ্জ করা যে-সূর্যমুখীকে আমরা পেয়েছিলাম, সেও ছিল ‘তীব্র-একাগ্র’। এখন যেন সেই সূর্যমুখীই হয়ে উঠল গান। উভয়েরই সাধারণ ধর্ম, ‘তীব্র-একাগ্র’, তাই এখানে এসে প্রতিস্পর্ধার প্রতীক সূর্যমুখী, আর নান্দনিকতার দ্যোতক গান হয়ে গেল অভিন্ন। আত্মত্যাগের রক্ত তাই যেন আর বীভৎস নেই, তা গানের মতোই বিমূর্ত-সুন্দর হয়ে এক ভিন্ন নন্দনতত্ত্বের অবতারণা করে কবির সমস্ত ভাবনার আশাবাদকে দ্যোতিত করল।

তথ্যঋণ

১.        পূর্ব-বাংলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি ১ ও ২, বদরুদ্দীন উমর, আনন্দধারা।

২.       বাংলা 888sport live footballের রূপ-রেখা (দ্বিতীয় খণ্ড), গোপাল হালদার, অরুণা।