মামুন সিদ্দিকী
অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের গবেষণার অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র উনিশ শতকের পূর্ববঙ্গ। পূর্ববঙ্গের সামাজিক ইতিহাসের বিপুল ক্ষেত্রের পরিচয় তাঁর গবেষণার মাধ্যমে ইতোমধ্যে উঠে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে উনিশ শতকে ব্রাহ্ম-আন্দোলন, মুদ্রণ888sport live chat ও প্রকাশনা, মুদ্রিত পুঁথি, থিয়েটার ও নাটক, বঙ্গভঙ্গের পূর্ববঙ্গীয় প্রতিক্রিয়া, বুদ্ধিজীবী সমাজ ইত্যাদি। সংবাদ-সাময়িকপত্র তেমনই একটি অধ্যায়, যে-গ্রন্থমালার আওতায় এ পর্যন্ত পঞ্চদশ খ-টি বের হয়েছে ২০১৮ সালের অমর 888sport cricket BPL rateে গ্রন্থমেলায়।
উনিশ শতকে 888sport appsের সংবাদ-সাময়িকপত্র প্রথম খ-ে ছিল সংবাদ-সাময়িকপত্র নিয়ে আলোচনা। বাকি খ-গুলোতে সংকলিত হয়েছে
সংবাদ-সাময়িকপত্রের গুরুত্বপূর্ণ রচনা ও সংবাদ। প্রথম খ- বের হয় ১৯৮৫ সালে, বাংলা একাডেমি থেকে। গ্রন্থটির দে’জ সংস্করণ বের হয় ১৯৯৭ সালে। তখন অবশ্য নামকরণ করা হয় উনিশ শতকে পূর্ববাংলার সংবাদ-সাময়িকপত্র। গ্রন্থটির তৃতীয় প্রকাশ, তথা পরিবর্তিত সংস্করণ বের হয় ২০০০ সালে, বের করে অনন্যা। প্রচ্ছদ ধ্রুব এষ। তিন দশকে সংগৃহীত সংবাদ-সাময়িকপত্রের নানাবিধ দু®প্রাপ্য তথ্য বর্তমান প্রথম খ-ে সংযোজিত হয়েছে। সে অর্থে প্রথম খ-টি পূর্ণাঙ্গ।
উনিশ শতকে 888sport appsের সংবাদ-সাময়িকপত্র নিয়ে গবেষণা হয়নি বললেই চলে। কাজ যা হয়েছে সেখানে গুরুত্ব পেয়েছে কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গ। এই অভাববোধ থেকে পূর্ববঙ্গের প্রথম সাময়িকপত্র রঙ্গপুর বার্ত্তাবহ-এর প্রকাশকাল ১৮৪৭ থেকে 888sport appsের আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা ১৯০৫ সাল পর্যন্ত সময়কালে পূর্ববঙ্গের সংবাদ-সাময়িকপত্রের ইতিহাস রচনার কাজে তিনি মনোযোগী হন। সেক্ষেত্রে শুধু বাংলা ও ইংরেজি পত্রিকাকে তিনি বিবেচনায় নিয়েছেন। বলেছেন, দু-একটি সংস্কৃত, উর্দু বা ফারসি পত্রিকা থাকতে পারে। সেসব তিনি আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করেননি।
মুনতাসীর মামুন থরে থরে সংবাদ- সাময়িকপত্রের নাড়িনক্ষত্রের অনুসন্ধান করেছেন। গ্রন্থে মোট ১২টি অধ্যায়। অধ্যায়গুলোর কোনো শিরোনাম নেই, 888sport free bet নির্দেশ করে অধ্যায় বিভক্ত করেছেন। প্রতিটি অধ্যায় সংক্ষিপ্ত, কিন্তু মনোজ্ঞ, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও তথ্যে পরিপূর্ণ।
প্রথম অধ্যায়ে সংবাদ-সাময়িকপত্র বিষয়ক কাজের ভিত্তি অনুসন্ধান করে মুনতাসীর মামুন দেখিয়েছেন কেদারনাথ মজুমদারের বাংলা সাময়িক 888sport live football (১৯১৭) পথিকৃতের ভূমিকা পালন করলেও ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিনয় ঘোষ বাংলা সাময়িকপত্র গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। প্রথমোক্ত জনের দুই খ- সংবলিত বাংলা সাময়িকপত্র ও রচনা-সংকলন সংবাদপত্রে সেকালের কথা গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয়োক্ত জনের চার
খ–সংবলিত সাময়িকপত্রে বাংলার সমাজচিত্র এবং ভূমিকাস্বরূপ পঞ্চম খ- বাংলার সামাজিক ইতিহাসের ধারাও গুরুত্ববহ।
888sport appsে এক্ষেত্রে দুজন গবেষক – আনিসুজ্জামানের মুসলিম বাংলার সাময়িকপত্র ও মুস্তাফা নূরউল ইসলামের সাময়িকপত্রে জীবন ও জনমত-এর বিষয়বস্তু ও প্রকরণশৈলীর পর্যালোচনা করে মুনতাসীর মামুন দেখিয়েছেন, আনিসুজ্জামান তাঁর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিনয় ঘোষের গবেষণাকর্মে বাঙালি মুসলমান-সম্পাদিত পত্রিকার ধারা তেমনভাবে উঠে আসেনি, মুসলমান সম্পাদিত পত্রিকার কোনো উদ্ধৃতি নেই। ফলে বাংলার জনসমষ্টির চিন্তাজগতের পরিচয় কিছুটা হলেও খ-িত ও একদেশদর্শী হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আনিসুজ্জামান ১৮৩১-১৯২০ সাল পর্যন্ত বাংলায় মুসলমান-সম্পাদিত পত্রপত্রিকার তালিকা ও যথাসম্ভব সূচিপত্র এবং রচনা সংকলন করেছেন। মুস্তাফা নূরউল ইসলাম অভিন্ন উদ্দেশ্য থেকে তাঁর গ্রন্থে জোর দিয়েছেন সংকলনের ওপর।
প্রথমোক্ত দুজন গবেষকের গ্রন্থে কলকাতাকেন্দ্রিক প্রভাবশালী পত্রিকা স্থান পেয়েছে, আর দ্বিতীয়োক্ত গবেষকদ্বয় সেই অভাব থেকে তাঁদের রচনার ভিত্তি করেছেন মুসলমান সম্পাদিত সংবাদ-সাময়িকপত্রকে। সেক্ষেত্রে বাংলার বৃহত্তম অংশ পূর্ববঙ্গ হয়েছে উপেক্ষিত। মুনতাসীর মামুন অনেকটা খেদের সঙ্গে মন্তব্য করেছেন, ‘তাদের কাজ দেখে মনে হয় না যে, পূর্ববঙ্গ থেকে তৎকালে কোনো পত্র-পত্রিকা প্রকাশিত হতো।’
এখানেই তিনি খুঁজে পান উনিশ শতকে 888sport appsের সংবাদ-সাময়িকপত্র গবেষণার ভিত্তি ও শক্তি। লিখেছেন, এ গ্রন্থের উদ্দেশ্য দ্বিবিধ – পূর্ববঙ্গের সংবাদ-সাময়িকপত্রের তালিকা প্রণয়ন, যা এর বৈশিষ্ট্য, বিষয়বস্তু, প্রবণতা, যুগধর্ম তুলে ধরবে; দ্বিতীয়ত সংবাদ-রচনা সংকলন ও মূল্যায়ন। এবং এই কাজটি তিনি করেছেন একটি বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। বলেছেন, ‘এর মূল্যায়ন করা হবে সম্প্রদায়গত দিক থেকে নয় বরং শ্রেণিগত দৃষ্টিকোণ থেকে।’
গ্রন্থের দ্বিতীয় অধ্যায়ে লেখক লিখেছেন, উপর্যুক্ত ‘চারজন গবেষকের কাছে সংবাদ-সাময়িকপত্র, ইতিহাস আরো নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে সামাজিক ইতিহাস রচনার অন্যতম উপাদান বলে মনে হয়েছে।’ এক্ষেত্রে তিনি গবেষকদের চৌম্বক মন্তব্য ও পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন। তাঁরা যে সংবাদ ও রচনার শ্রেণিভেদ করেছেন তাও পর্যালোচনা করেছেন এবং তাঁদের বক্তব্যের সামান্যীকরণ করে লক্ষ করেছেন, ‘তারা সামাজিক ইতিহাস রচনা করতে চেয়েছেন এবং সংবাদ-সাময়িকপত্রকে ধরেছেন সামাজিক ইতিহাসের অন্যতম উদাহরণ হিসেবে।’ মুনতাসীর মামুন প্রশ্ন তুলেছেন, ‘তাদের সংকলনের গুরুত্ব কোথায়? বা অন্য কথায়, তাদের গ্রন্থকে কি সামাজিক ইতিহাস বলা চলে? বা তাদের সংকলন থেকে কি নির্দিষ্ট সমাজ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাই?’ তিনি দেখিয়েছেন তাঁদের কারো কাছে সমাজ মানে হয় হিন্দু, না হয় মুসলমান সম্প্রদায়। তার কারণ তিনি নির্ণয় করেছেন, পদ্ধতিগত সমস্যা। বলেছেন, তাঁরা সমাজ গঠনের কথা বলেননি, আর তাছাড়া সামাজিক ইতিহাসও নির্মাণ অসম্ভব। ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সংকলন-রচনা মূল্যায়নের পদ্ধতি তাঁরা উল্লেখ করেননি।
আবার পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে বুদ্ধিজীবীরা ঔপনিবেশিক শাসনে কী ধরনের চরিত্র ধারণ করেছিলেন, তা স্পষ্ট না হলে সামাজিক ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সংবাদ-সাময়িকপত্রের মূল্যায়ন সম্ভব নয়। এটি উপর্যুক্ত গবেষকবৃন্দ করেননি, গবেষকের পর্যবেক্ষণ, ‘তাদের গবেষণায় স্থান পেয়েছে স্ববিরোধী এবং বিভ্রান্তিকর উক্তি, যা হ্রাস করেছে গবেষণাকর্মের মূল্যকে।’
গ্রন্থের তৃতীয় অধ্যায়ে সামাজিক ইতিহাসের সংজ্ঞা ও পরিসর নিয়ে ঐতিহাসিক ও সমাজ888sport apkীদের মতামত পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন, ‘সব কিছু নিয়েই সমাজ, সব কিছুই উৎসারিত সমাজ থেকে।’ সামাজিক ইতিহাসের উপাদান সম্পর্কে লিখেছেন, ‘সব কিছুই হতে পারে সামাজিক ইতিহাস।’ ঔপনিবেশিক আমলে রিপোর্ট, গেজেটিয়ার, আদমশুমারি, সরকারি নথিপত্র ও ইংরেজ সিভিলিয়ানদের রচনার উৎস হিসেবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে লিখেছেন, ‘আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন যে, ভারত তখন শাসিত হতো একটি ঔপনিবেশিক সরকার দ্বারা।’ এবং সেইসব দলিলপত্রে তাদেরই দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পেয়েছে। এক্ষেত্রে উইলিয়াম হান্টার ও বিনয় ঘোষের উদাহরণ দিয়ে দেখিয়েছেন তথ্যের উৎস ও তথ্য প্রদানকারী শ্রেণি দৃষ্টি সম্পর্কে নির্মোহ না হলে কীভাবে বক্তব্য স্ববিরোধী হয়ে উঠতে পারে।
এক্ষেত্রে মুনতাসীর মামুন আরো কয়েকটি প্রত্যয় সম্পর্কে স্পষ্ট হতে চেয়েছেন। প্রথমত, সমাজগঠন। কারণ তাঁর মতে, ‘সমাজ ইতিহাসের সঙ্গে সমাজ গঠনের সম্পর্ক নিবিড়।’ দ্বিতীয়ত, উৎপাদন পদ্ধতি। কারণ উৎপাদন পদ্ধতির পরিবর্তনই শ্রেণিবিন্যাসের কারণ।
চতুর্থ অধ্যায়টি বিস্তৃত ও তাত্ত্বিক আলোচনায় পূর্ণ। একেক সময় একেক ধরনের উৎপাদন পদ্ধতি প্রধান হয়ে ওঠে, সেই পদ্ধতিই সমাজের কাঠামো ও চরিত্র নির্ধারণ করে। ১৮৪৭-১৯০৫ কালপর্বে পূর্ববঙ্গে ছিল ঔপনিবেশক উৎপাদন পদ্ধতি। মুনতাসীর মামুন এই উৎপাদন পদ্ধতির বৈশিষ্ট্যসমূহ পর্যালোচনা করে দেখিয়েছেন, ঔপনিবেশিক সমাজে সৃষ্টি হয়েছিল তিনটি শ্রেণি – জমিদার, মধ্যশ্রেণি এবং কৃষক।
প্রথমোক্ত দুই শ্রেণির চরিত্র সম্পর্কে মুনতাসীর মামুন লিখেছেন, ‘জমিদার শোষক হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছিলেন কোনো রকম দায়িত্ব ছাড়া। কর সংগ্রহ এবং জবরদস্তির মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছিল তার উদ্বৃত্তের। এই উদ্বৃত্ত তিনি লগ্নি করেননি 888sport live chatে বরং লগ্নি করেছিলেন নতুন জমিদারি বা মধ্যস্বত্ব কেনার দিকে বা মহাজনি ব্যবসায়।…. রাজনৈতিকভাবে জমিদাররা ছিলেন ঔপনিবেশিক সরকারের পক্ষে। কারণ এ শ্রেণি ছিল ওই কাঠামোরই ফল।’
মধ্যশ্রেণি সম্পর্কে তাঁর পর্যবেক্ষণ, ‘জমিদার এবং সাধারণ মানুষের মধ্যবর্তী স্তরের লোকদের সাধারণভাবে মধ্যশ্রেণির অন্তর্গত বলে ধরে নিতে পারি। মধ্যশ্রেণির এক বিরাট অংশ ছিল চাকরিজীবী। এ ছাড়া স্বাধীন পেশা, যেমন – আইনজীবী, ডাক্তার বা মধ্যস্বত্বের অধিকারী এবং ব্যবসায়ী প্রভৃতিও ছিলেন মধ্যশ্রেণির অন্তর্গত।… এই ভদ্রলোকেরাই সমাজে সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিলেন এবং অধিকাংশ সংবাদ-সাময়িকপত্রের মালিক/সম্পাদক ছিলেন।’ আরো লিখেছেন, ‘মধ্যশ্রেণি বা পেশাজীবী জমিদারদের মতোই সমাজে স্থিতিবস্থা বজায় রাখতে চেয়েছিলেন তার প্রমাণ ওই সময় তাদের পরিচালিত
পত্র-পত্রিকা।… তারা তুলে ধরেছিলেন শাসকের শিক্ষা সংস্কৃতি রুচি। শাসকদের ভাবাদর্শই আবার তারা সূক্ষ্মভাবে প্রকাশ করেছিলেন তাদের পরিচালিত পত্র-পত্রিকায়।’ এভাবে জমিদার ও মধ্যশ্রেণির বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন মুনতাসীর মামুন।
পঞ্চম অধ্যায়ে প্রথমত তুলে ধরেছেন উনিশ শতকে 888sport appsে ভাবনার জগতে আধিপত্যবাদ কীভাবে প্রসারিত হয়েছিল। ঔপনিবেশিক সমাজ গঠনের মধ্যে ব্যক্তি একই সঙ্গে এবং সমান্তরালভাবে যুক্ত শ্রেণি ও সম্প্রদায়ের সঙ্গে। মুনতাসীর মামুন দেখিয়েছেন, এই সমান্তরাল যুক্ততা তৎকালীন শ্রেণিবিন্যাস ও সম্প্রদায় বিন্যাসের ওপর প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল। ঔপনিবেশিক সমাজ গঠনের পরবর্তী পর্যায়ে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসার ও
কৃষিজ পণ্যের বিস্তারের ফলে সমাজ গঠনে শ্রেণিবিন্যাস ও সাম্প্রদায়িক বিন্যাসের মধ্যে ভিন্নতা সৃষ্টি শুরু হয়েছিল। অধস্তন মুসলমান ও হিন্দু সমাজ একাত্ম হয়ে ঔপনিবেশিক সমাজ গঠনকে চ্যালেঞ্জ করেছিল। গবেষকের পর্যবেক্ষণ, ‘যখনই ঔপনিবেশিক সমাজ গঠনের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ উৎসারিত হয়েছিল তখনই লক্ষ করি হিন্দু-মুসলমান সমাজের উচ্চ ও মধ্যশ্রেণি কৃষক বিদ্রোহ সম্পর্কে একই সুরে কথা বলেছে এবং ঔপনিবেশিক সরকারের কাছে আবেদন করেছে যাতে এই আন্দোলন ও বিদ্রোহের ব্যাপ্তি না ঘটে। কারণ ব্যাপ্তি ঘটলে তাদের ভাষায় সমাজে শান্তি ও শৃঙ্খলা বিঘিœত হবে।’
ইতালীয় সমাজ888sport apkী গ্রামসির তত্ত্বানুসারে বুদ্ধিজীবীর শ্রেণিবিন্যাস করে গবেষক লিখেছেন, ‘ঐতিহ্যবাহী বুদ্ধিজীবীরা সাধারণ মানুষকে প্রদান করেন আদর্শ ও দর্শন, যা শাসক শ্রেণিকে আবার সহায়তা করে আধিপত্য বিস্তারে, তুলে ধরে বিশ্বাসের ভিত্তি, যা আবার গ্রহণ করেন সাধারণ মানুষ।’ এভাবে গণআন্দোলনের সময় যে-বুদ্ধিজীবী জনতার কাতারে নেতৃত্ব দেন তিনিই পরিণত হন সৃষ্টিশীল বুদ্ধিজীবী হিসেবে। গ্রামসির এই তত্ত্বানুসারে গবেষক পূর্ববঙ্গের বুদ্ধিজীবী সমাজের চিন্তাজগৎ পর্যালোচনা করে বলেছেন, ধর্মের সঙ্গে যুক্ত এবং ধর্মনিরপেক্ষ পেশার সঙ্গে যুক্ত সবাই সরাসরি নির্ভরশীল ছিলেন ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র গঠনের সঙ্গে। ফলে ঐতিহ্যবাহী বুদ্ধিজীবীদের দুই অংশই সমর্থন দিয়েছিল ঔপনিবেশিক আধিপত্যবাদকে। প্রাধান্য বিস্তারকারী শ্রেণি ঔপনিবেশিক শাসকের সমর্থনে কীভাবে চিন্তার ক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তার করেছিল উনিশ শতকের পূর্ববঙ্গের প্রধান 888sport live footballিক মীর মশাররফ হোসেনের দুটি গ্রন্থ জমিদার দর্পণ ও উদাসীন পথিকের মনের কথা নিয়ে আলোচনা করে তা দেখিয়েছেন।
সম্প্রদায় হিসেবে হিন্দুর পরে ছিল মুসলমানের স্থান। পূর্ববঙ্গে মুসলমানরা 888sport free betগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও ছিল অধস্তন ভূমিকায়। রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও রাষ্ট্রপ্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা থেকে মুসলমানরা ছিল অনেক দূরে। ফলে সম্প্রদায় হিসেবে রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও হিন্দু সমাজের সঙ্গে মুসলমানদের দূরত্ব বেড়েই চলছিল। ধর্মীয় পুনর্জাগরণবাদ এই সম্প্রদায়কে করেছিল অতীতমুখী। হিন্দুরা আত্মসঞ্জীবনের চেষ্টা করছিল প্রাচীন ভারতের ঐতিহ্য থেকে, আর মুসলমানরা আর কিছু না পেয়ে দৃষ্টি নিবদ্ধ করল ইরান-তুরানের দিকে। হিন্দু পুনরুত্থানবাদী আন্দোলন মুসলমান সমাজকে বাধ্য করল স্বাতন্ত্র্যবাদী ভাবধারায় উজ্জীবিত হতে। উনিশ শতকের শেষের দশকে সেই সংকট হয়ে উঠেছিল প্রকট ও প্রখর।
অবশেষে মুনতাসীর মামুন উচ্চারণ করেন মৌলসত্য। ঔপনিবেশিক সমাজ কাঠামোয় ‘সমাজ গঠন অপরিণত বলে ব্যক্তি প্রধানত সম্প্রদায়ের সংলগ্ন, শ্রেণির সঙ্গে নয়। তাই সে সব সময় শ্রেণির বদলে আবিষ্কার করে সম্প্রদায়।’ উনিশ শতকের সমাজের এ এক নিদারুণ সত্য ও বাস্তবতা।
ষষ্ঠ অধ্যায়ে সংবাদ-সাময়িকপত্র ব্যবহারের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা রয়েছে। ১৮৫৭ সালে 888sport app থেকে প্রকাশিত 888sport app নিউজে দুদু মিয়া সম্পর্কে একটি সংবাদ তুলে ধরে গবেষক দেখিয়েছেন কীভাবে ‘পদ্ধতির হেরফেরের কারণে সামাজিক ইতিহাসের রূপই বদলে যেতে পারে।’ একটি বিষয় নির্মাণে সংবাদ-সাময়িকপত্র ও আরো কয়েকটি সূত্র ব্যবহার করে তুলনামূলক আলোচনা করেছেন। যেখানে সামাজিক ইতিহাসের উপকরণ হিসেবে ‘আত্মজীবনীর ব্যবহার প্রসঙ্গে লিখেছেন, আত্মজীবনী রচয়িতারা ছিলেন মধ্যশ্রেণির অন্তর্গত। অতএব তাঁদের রচনায় ও মনে যে শ্রেণিচরিত্র অটুট থাকবে তা স্বাভাবিক। লিখেছেন, ‘সামাজিক ঐতিহাসিকের দায়িত্ব সংবাদ-সাময়িকপত্রের গোপন সূত্রগুলো সাজানো, ব্যাখ্যা করা।’ সেজন্য গবেষকের মতে, ‘প্রথমত সংবাদ-সাময়িকপত্রের মালিক, সম্পাদকের সামাজিক ও শ্রেণিগত স্বার্থ নির্ধারণ, দ্বিতীয়ত তথ্য পুনরুদ্ধার ও তাকে সংবাদপত্রের মালিক এবং সম্পাদকের স্বার্থের সঙ্গে যুক্ত করা। তা হলেই তথ্যের সূত্র নির্মাণ করা এবং নির্ণীতকরণের মধ্য দিয়ে তথ্যের শ্রেণিকরণ সম্ভবপর’ হবে। বস্তুত লেখকের মোদ্দা কথা, বর্তমান সংকলনে সংবাদ-সাময়িকপত্রকে মধ্যশ্রেণি ও প্রবল শ্রেণির ভাবনার জগতের মাপকাঠি হিসেবে ধরে ‘নির্ণীত করার চেষ্টা করা হয়েছে ঔপনিবেশিক কাঠামোয় ব্যক্তির সম্প্রদায়গত ও শ্রেণিগত অবস্থানের মধ্যে বৈপরীত্য, সহমর্মিতা ও সহযোগিতা।’
সপ্তম অধ্যায়ে বাংলা সাময়িকপত্রের প্রকাশ, প্রকাশে বাধা ও প্রতিবন্ধকতা, এর গতিপ্রকৃতি, পূর্ববাংলায় সংবাদপত্রের প্রথম প্রকাশ, এর উদ্যোক্তা ও এর প্রত্যক্ষ প্রভাব এবং 888sport appsের মুদ্রণ888sport live chat নিয়ে আলোচনা করেছেন। মূলত মুদ্রণযন্ত্র, হরফের অভাব ইত্যাদির প্রতিবন্ধকতা
থাকলেও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ছিল প্রথম প্রতিবন্ধক। কঠোর সেন্সরশিপ, রোষদৃষ্টির কারণেই গবেষক মন্তব্য করেছেন, ‘সংবাদপত্র প্রকাশের প্রাথমিক উদ্যোগ
কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না।’
গবেষক দেখিয়েছেন, ১৮৫৭ সালের আগে প্রকাশিত দুটি সংবাদপত্র বাদ দিলে ১৮৫৭ থেকে ১৯০৫ সাল পর্যন্ত পূর্ববঙ্গে প্রকাশিত হয়েছিল ৮৭টি সংবাদপত্র, ১৯২টি সাময়িকপত্র। কলকাতার সঙ্গে এ-চিত্রের তুলনা করে লিখেছেন, ‘সে সময়কার পূর্ববঙ্গের চিত্রটি যদি মনে রাখি তা হলে পুরো ব্যাপারটা অকিঞ্চিৎকর মনে হবে না। কারণ পূর্ববঙ্গ ছিল তখন বনে-জঙ্গলে 888sport app, যার সঙ্গে বহির্বিশ্বের কেন, 888sport appsেরই অনেক অঞ্চলের সঙ্গে অনেক অঞ্চলের যোগাযোগ ছিল না। ’
১৮৫৭ সালে রঙ্গপুর বার্ত্তাবহ প্রকাশের নিমিত্তে রংপুরে স্থাপিত মুদ্রণযন্ত্রটিই পূর্ববঙ্গের প্রাচীনতম বাংলা মুদ্রণযন্ত্র। ১৮৬০ সালে 888sport app শহরের বাবুবাজারে ‘বাঙ্গালা যন্ত্র’ শুধু 888sport appতেই নয়, পূর্ববঙ্গের 888sport app অঞ্চলেও মুদ্রণযন্ত্র স্থাপনের পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছিল। এসব তথ্য বিবৃত করে গবেষক লিখেছেন, ষাটের দশক থেকেই 888sport appsের বিভিন্ন অঞ্চলে মুদ্রণযন্ত্র স্থাপিত হতে থাকে। এক্ষেত্রে তাঁর পর্যবেক্ষণ, ‘888sport appsের সংবাদ-সাময়িকপত্র বিকাশের সঙ্গে সম্পর্ক আছে ব্রাহ্ম আন্দোলনের।’ মূলত
ব্রাহ্ম-আন্দোলনের অভিঘাতে স্থাপিত হয়েছিল সভাসমিতি – সমাজ সংস্কারই ছিল তাদের প্রধান উদ্দেশ্য। তারই প্রকাশ শুরু হয়েছিল পত্র-পত্রিকায়। উনিশ শতকের প্রভাবশালী পত্রিকা 888sport appপ্রকাশ তাদেরই সৃষ্টি। সবাই চেয়েছিলেন তাঁদের কথা প্রকাশ করতে। এক্ষেত্রে মুনতাসীর মামুন লিখেছেন, ‘ব্রাহ্ম, রক্ষণশীল হিন্দু, পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত যুবক – সবার ক্ষোভ, আকুলতা প্রকাশের বা উঠতি মধ্যশ্রেণির হাতিয়ার বা মাধ্যম হয়ে উঠেছিল সংবাদ-সাময়িকপত্র বা বলা যেতে পারে সামাজিক কারণেই তা হয়ে উঠেছিল অনিবার্য।’
এ-অধ্যায়ে লেখক তিনটি সারণি প্রকাশ করেছেন। প্রথমত, উনিশ শতকে পূর্ববঙ্গে প্রচলিত সংবাদপত্রের 888sport free bet, দ্বিতীয়ত, উনিশ শতকে পূর্ববঙ্গে প্রকাশিত সাময়িকপত্রের 888sport free bet, তৃতীয়ত, উনিশ শতকে পূর্ববঙ্গে প্রকাশিত মোট সংবাদ-সাময়িকপত্রের 888sport free bet।
উপর্যুক্ত সারণি থেকে গবেষক অনুমিত সিদ্ধান্তে পৌঁছান, ‘ষাটের দশকে 888sport appsে যে বাঙালি বুদ্ধিজীবী শ্রেণিটির উদ্ভব হয়েছিল তা বিকশিত হয়ে উঠেছিল সত্তর থেকে নব্বই দশকের মধ্যে।’ পূর্ববঙ্গের সমাজ ও সংবাদ-সাময়িকপত্রের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে উল্লেখ করেছেন, ‘১৮৭১-৯০ এ বিশ বছরে দেখা যাচ্ছে, সংবাদ-সাময়িকপত্রের 888sport free bet বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং তা শুধু 888sport appর মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে ছড়িয়ে পড়েছিল মফস্বলে, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে গ্রামেও। ওই সময় প্রকাশিত সাময়িকপত্রগুলো ছিল বৈচিত্র্যময়। কী বিষয়ে না ওই সময় পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে? নতুন কিছু করার তাড়না এবং নতুনকে জানার আগ্রহই বোধহয় এর কারণ।’
অষ্টম অধ্যায়ে পৃথকভাবে রয়েছে সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্রের কালানুক্রমিক তালিকা ও পরিচয়। প্রতিটি সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্রের মৌলিক পরিচয় ফুটিয়ে তুলেছেন নানা সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে।
নবম অধ্যায়ে সীমিত তথ্যের ভিত্তিতে পূর্ববঙ্গের সংবাদপত্রের কতিপয় বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনা করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে সাপ্তাহিক পত্রিকার স্বল্পতা, চাহিদার অভাবহেতু স্বল্পায়ু, মুসলমান-সম্পাদিত সংবাদপত্রের স্বল্পতা, প্রচার888sport free betর অস্বাভাবিক স্বল্পতা, ব্যয়বাহুল্য, বিজ্ঞাপনের অভাব ইত্যাদি। লিখেছেন, ‘888sport appsে অধিকাংশ পত্রপত্রিকা যারা প্রকাশ করেছিলেন তারা ছিলেন ছোটখাটো উকিল, সমাজসেবী, ব্রাহ্ম প্রচারক বা শিক্ষক। একই ব্যক্তি একাধারে ছিলেন সম্পাদক, লেখক, সাংবাদিক সব কিছু। তাই দেখা যাচ্ছে, যতদিন প্রতিষ্ঠান, সমিতি বা উদ্যম টিকেছিল, ততদিন পত্রিকাও প্রকাশিত হয়েছিল।’ ফলে উনিশ শতকে 888sport appsের সংবাদ সাময়িকপত্রের অন্দরের চিত্রটি পাওয়া যায়, পাওয়া যায় বাস্তব অবস্থা।
দশম অধ্যায়ে উনিশ শতকে 888sport appsের সংবাদ-সাময়িকপত্রের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করেছেন। মূলত সংবাদ ও রচনার বিষয়বস্তু ছাড়াও আলোকপাত করেছেন সেসবের বৈশিষ্ট্য নিয়েও। লিখেছেন, ‘উনিশ শতকের সংবাদপত্রগুলো ছিল প্রধানত রচনাভিত্তিক। অর্থাৎ ছোটখাটো সংবাদ ছাড়া প্রায় ক্ষেত্রেই যে কোনো একটি সংবাদ বা বিষয়কে নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা ও মতামত ছাপা হতো। খবরের মধ্যে স্থানীয় খবর থাকত কিছু, আরো থাকত বিদেশি কাগজ থেকে সংগৃহীত খবর। মাঝে মাঝে ছাপা হতো মফস্বল থেকে পত্রিকার ভক্ত প্রেরিত সংবাদ। ছিল চিঠিপত্রের মতামত। তবে বিষয়ভিত্তিক রচনা বা কোনো ঘটনাকে কেন্দ্র করেই সম্পাদকরা নিজস্ব মতামত তুলে ধরতেন।’ সংবাদ ও খবরের বিষয়বস্তুর মধ্যে থাকত আঞ্চলিকতা (পূর্ববঙ্গ), কৃষক, জমিদার, নীলকর, চা-কর, সিভিল সার্ভিস, শিক্ষা ও সমাজ সংস্কার, মধ্যশ্রেণি এবং সাম্প্রদায়িক সম্পর্ক। এসব বিষয়ে বিভিন্ন পত্রিকার দৃষ্টিভঙ্গি পর্যালোচনা করেছেন গবেষক। যেমন শিক্ষা ও সমাজ সংস্কার অংশে তিনি বলেছেন, পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন সংবাদপত্রে শিক্ষাবিষয়ক মন্তব্য পড়ে মনে হয়েছে, সম্পাদকরা আগ্রহী ছিলেন স্ত্রীশিক্ষা, বিভিন্ন বিষয়ে বিদ্যালয় স্থাপন ও মাতৃভাষায় অধ্যয়নের প্রতি। গবেষক তাঁর বক্তব্যের সমর্থনে পত্রিকার উদ্ধৃতি তুলে দিয়েছেন। এ থেকে উনিশ শতকের পত্রপত্রিকার রূপরেখাটি উপলব্ধি করা যায়।
একাদশ অধ্যায়ে সংবাদ-সাময়িকপত্রের সম্পাদকের জীবনী পর্যালোচনা করে দেখিয়েছেন কী অপরিসীম কষ্ট ও পরিশ্রমে তাঁরা পত্রিকা প্রকাশ করেছেন। এমন কয়েকজন খ্যাতনামা সম্পাদকের মধ্যে রয়েছেন কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার, হরিশচন্দ্র মিত্র, শিশিরকুমার ঘোষ, কালীপ্রসন্ন ঘোষ, নবকান্ত চট্টোপাধ্যায়, হরিনাথ মজুমদার প্রমুখ। তাঁদের সম্পর্কে গবেষক লিখেছেন, ‘অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা সম্পন্ন পরিবারের ছিলেন না। আবার কম ক্ষেত্রে সাংবাদিকতা গৃহীত হয়েছিল সার্বক্ষণিক পেশা হিসেবে। বা বলা যেতে পারে, সাংবাদিক জীবন পেশা হিসেবে তখনো গ্রহণযোগ্য হয়নি বরং তা ছিল নেশা।’
দ্বাদশ অধ্যায়ে গবেষক লিখেছেন, ‘সংবাদ-সাময়িকপত্রের সঙ্গে সভা-সমিতির যোগ ছিল অনেক ক্ষেত্রে ওতপ্রোতভাবে। তাই সংবাদ-সাময়িকপত্র ও সভা-সমিতির উদ্ভব এবং বিকাশ একদিক থেকে বলতে গেলে 888sport appsের মধ্যশ্রেণির উদ্ভব ও বিকাশের সমান্তরালে হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের ইতিহাস।’ এই বিকাশের সঙ্গে কলকাতাকেন্দ্রিক উনিশ শতকের জাগরণের প্রভেদ নির্ণয় করে মন্তব্য করেছেন, ‘পূর্ববঙ্গে মধ্যশ্রেণির জাগরণ ঠিক একতরফাভাবে একটি সম্প্রদায়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠেনি। শুধু তা-ই নয়, কলকাতাকেন্দ্রিক নবজাগরণ ঠিক কলকাতার বাইরে ছড়িয়ে পড়তে পারেনি। কিন্তু পূর্ববঙ্গের সবকিছু 888sport appকে কেন্দ্র করেই বিরাজ করেনি। 888sport app হয়তো অগ্রণী ছিল কিন্তু এ জাগরণের রেশ 888sport appর বাইরে মফস্বলেও পৌঁছেছিল। তবে এটাও ঠিক ওটা একটি শ্রেণির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, এর রশ্মি হিন্দু-মুসলমান সাধারণ মানুষ বা কৃষকের কাছে পৌছেনি।’ এভাবেই মুনতাসীর মামুন উনিশ শতকে 888sport appsের সংবাদ-সাময়িকপত্রের ইতিহাস, পূর্ববাংলার জীবন, সমাজ ও ভাবধারার অতলস্পর্শী ব্যাখ্যায় ও সিদ্ধান্তে উপনীত হন এবং বলেন, ‘এভাবেই বোধহয় বাঙালি তথা ভারতবাসীর মনে সৃষ্টি হয়েছিল এক ধরনের জাতীয়তাবোধের।’ তারই প্রকাশ ঘটে ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে।
গ্রন্থের দুটি পরিশিষ্টে রয়েছে সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্রের সম্পাদকদের পত্রিকা প্রকাশের কালানুক্রমিক জীবনী। সেখানে সম্পাদকদের জীবনসংগ্রাম ও বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াইয়ের চিত্র ফুটে উঠেছে। সহায়ক তথ্যপঞ্জি ও নির্ঘণ্ট গ্রন্থটিকে দিয়েছে প্রামাণ্যরূপ।
চতুর্দশ খ-ের ‘ভূমিকা’য় তিনি বলেছিলেন, ‘বর্তমান খ-ের পা-ুলিপি শেষ করে নিজেকে ভারমুক্ত ও ক্লান্ত মনে হচ্ছে। যদি কখনো আরো কিছু
সংবাদ-সাময়িকপত্র খুঁজে পাই তা হলেও আমার পক্ষে আরেকটি খ- তৈরি সম্ভব হবে কিনা জানি না।’ সুখের খবর, ইতোমধ্যে আরো কয়েকটি খ-ের উপকরণ গবেষকের সংগ্রহে এসেছে। কাজটি তিনি শুরু করেছিলেন ছাত্রাবস্থায়, ১৯৭৩ সালে। ১৯৭৬-এর দিকে কলকাতায় বিনয় ঘোষের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। লিখেছেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ভক্ত। ২৪ বছরের একজন যুবককে যে সহৃদয়তার সঙ্গে তিনি গ্রহণ করেছিলেন তা বিরল। আমাকে তিনি এ কাজটি শেষ করতে বলেছিলেন।’ এরকম উৎসাহ থেকেই পরমানন্দে কাজটি করে গেছেন। উনিশ শতকে 888sport appsের সংবাদ-সাময়িকপত্রের সংকলন নিছক সংকলন হয়েই থাকেনি, এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিশ্লেষণ, তথ্য উপস্থাপন এবং সুগভীর চিন্তার প্রক্ষেপণ। তা একই সঙ্গে পূর্ববাংলার সামাজিক ইতিহাসের অমূল্য দলিলের অপূর্ব সংগ্রহ।
জাতির ঐতিহ্য ও মননসম্পদ, বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণের ঐতিহাসিক ও মূল্যবান দলিল হিসেবে উনিশ শতকে 888sport appsের সংবাদ-সাময়িকপত্রের ইতিহাস বিশেষ গুরুত্ববহ। সামাজিক ইতিহাসের অমূল্য উপকরণ হিসেবে শুধু নয়, এগুলোর ঐতিহাসিক গুরুত্ব শ্রেণিবিন্যাস ও চরিত্র, যুগধর্ম নির্ণয়ের সূচক, সম্পাদকদের শ্রেণিচরিত্র ও অবস্থা প্রভৃতি বিষয় মুনতাসীর মামুন যেভাবে তুলে ধরেছেন পূর্ববাংলা সংক্রান্ত কোনো গবেষণা তো বটেই, বাংলা সাময়িকপত্র গবেষণায়ও দুর্লভ। মূলত সাময়িকপত্র গবেষণার একটি দিকনির্দেশী ধারাও সৃষ্টি করেছেন তিনি। বহুকৌণিক ও নানামাত্রিক তাৎপর্য এবং দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার ফলে সংবাদ-সাময়িকপত্রের সংবাদ ও রচনার মূল সত্যটি বের হয়ে এসেছে। যে-তাত্ত্বিক কাঠামোতে এগুলোকে মূল্যায়ন করেছেন তাতে সংবাদ-সাময়িকপত্রের ইতিহাস তো বটেই, নির্মোহ বিশ্লেষণে যুগের অবিকাশ ও বিচ্যুতি, ঔপনিবেশিক যুগের বৈশিষ্ট্যসমূহ উঠে এসেছে। এজন্য অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনকে আন্তরিক অভিনন্দন।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.