888sport appsে রবীন্দ্রনাথ

বেঁচেছিলেন আশি বৎসর, গত হয়েছেন সত্তর বৎসর পূর্বে। এ বৎসর তাঁর, রবীন্দ্রনাথের জন্মের সার্ধশতবার্ষিকী পালন করা হচ্ছে। জাতীয় পর্যায়ে পালন করা হচ্ছে ভারতে ও 888sport appsে। এই দুই দেশে শুধু পৃথকভাবে নয়, যৌথভাবেও পালিত হবে এই সার্ধশতবার্ষিকী কবির জন্মের। এই বিরল ঘটনাকে ঐতিহাসিক বলতেই হয়, কারণ এর মধ্য দিয়ে যে-সত্যটি বেরিয়ে আসছে, তা হলো রবীন্দ্রনাথ আমাদের, ভারতের ও 888sport appsের। যৌথ উত্তরাধিকার। বলা যায়, একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে আরো একজন বাঙালি কবির বেলায়, – তিনি নজরুল ইসলাম।

এ থেকে যে-সিদ্ধান্ত সহজেই জানা যায়, তা হলো, 888sport live football ভূগোল মানে না। মানুষের সব ধরনের রস সৃষ্টি সম্বন্ধেই কথাটা সত্য, তা সে সংগীত হোক বা চিত্রকলা হোক। রবীন্দ্রনাথ যে-888sport live football সৃষ্টি করে গেছেন, তার অঙ্গেই রয়েছে মাতৃভূমির অনপনের ছাপ। তাঁর লেখার মাধ্যম তাঁর মাতৃভাষা। তাঁর ভাব-কল্পনার উৎস তাঁর মন, যে-মন আবার তাঁর দেশ ও কালের যৌথ সৃষ্টি। প্রতিভা ব্যাপারটাই এমন যে, আমরা এর দেখা পেলে একে চিনতে পারি, কিন্তু এর রহস্য আমরা কেউ বুঝি না। একই পরিবারে জন্মগ্রহণ করে, অনেকগুলি ভাইবোনের একজন হয়ে, কীভাবে কনিষ্ঠজনটি একজন রবীন্দ্রনাথ হয়ে উঠলেন, এর কোনো সহজ ব্যাখ্যা নেই।

এই যে ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথ, তিনি তাঁর সকল কীর্তি, সকল গৌরব নিয়ে বহু উচ্চের, বহু দূরের একজন হয়ে যাননি, আশ্চর্যজনকভাবে সমগ্র জাতির হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়েছেন। তাঁকে আমরা আমাদের পরম আপনজন বলে জেনেছি। এর একটা কারণ অবশ্যই যে তিনিও নিজেকে সেভাবেই দেখেছেন। এই আত্মীয়তাবোধটা পারস্পরিক। এটা সম্ভব হয়েছে মূলত তাঁরই কারণে। রবীন্দ্রনাথ বৃহৎ বিশ্বের পথে পা বাড়িয়েছেন জীবনে বহুবার, তবে শেষ পর্যন্ত স্বস্তি লাভ করেছেন বাংলার মাটিতে পা রেখে।

মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক

আমি তোমাদেরই লোক

আর কিছু নয় –

এই হোক শেষ পরিচয়!

বিশ্বপথিক রবীন্দ্রনাথ দূরে গেলেও হৃদয়ে সব সময় ধারণ করেছেন দেশের ছবি। যদিও উপেনের মুখ দিয়ে বলিয়েছেন, তবু সন্দেহ থাকে না যে কথাটা তাঁরই, যখন উপেন বলে –

নমোনমো নম, সুন্দরী মম জননী জন্মভূমি!

গঙ্গার তীর, স্নিগ্ধ সমীর জীবন জুড়ালে তুমি।

অবারিত মাঠ, গগনললাট চুমে তব পদধূলি –

ছায়াসুনিবিড় শান্তির নীড় ছোট ছোট গ্রামগুলি।

পল্লবঘন আম্রকানন, রাখালের খেলাগেহ –

স্তব্ধ অতল দিঘি কালোজল নিশীথশীতল স্নেহ।

বুক-ভরা-মধু বঙ্গের বধূ জল লয়ে যায় ঘরে

মা বলিতে প্রাণ করে আনচান, চোখে আসে জল ভরে।

 

এই পল্লী বাংলার প্রেমেই মজেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। পল্লীবাংলাই ছিল তাঁর স্বদেশ। কলকাতায় জন্মেছেন, বড় হয়েছেন, কিন্তু গঙ্গার বোটে বা শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে বাস করে যে-আনন্দ লাভ করেছেন; তারই টানে বারবার ছুটে এসেছেন শহর থেকে দূরে, নিভৃত পল্লীতে, এবং দীর্ঘ জীবনের অর্ধেক কাটিয়েছেন বীরভূমের রুক্ষ মাটিতে একটি ছায়াশীতল শান্তিনিকেতন গড়ে তুলতে।

রবীন্দ্রনাথ পল্লীর প্রকৃতিকে ভালোবেসেছেন, আর পল্লীর মানুষকে নিয়ে ভেবেছেন। তাদের অভাব, অশিক্ষা, অস্বাস্থ্য, আলস্য, কুসংস্কার নিজের চোখে প্রত্যক্ষ করেছেন ও চেষ্টা করেছেন পল্লীবাসী মানুষের দুর্দশা যতোটা সম্ভব লাঘব করতে। কাজটা সহজ হয়নি, যাদের উপকারের উপায় খুঁজেছেন, তারাই তাঁর সদুদ্দেশ্য বুঝতে চায়নি, বা বুঝতে পারেনি। শান্তিনিকেতনের পর অদূরে শ্রীনিকেতন গড়ার পেছনেও ছিল তাঁর একই চিন্তা, – একটি কৃষিভিত্তিক স্বাবলম্বী গ্রাম গড়ে তোলা। দেশের তেত্রিশ কোটি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের বৃথা চেষ্টা নয়, আমরা যে যেখানে আছি, সেই ক্ষুদ্র পরিসরে যে যতোটা পারি -; সেই চেষ্টায় নিয়োজিত হওয়া, – এই ছিল রবীন্দ্রনাথের উন্নয়ন-ভাবনার মূল কথা। কাজের সঙ্গে আনন্দের যোগাযোগ না হলে কাজ তার পূর্ণ মূল্য নিয়ে দেখা দেবে না। এই বিশ্বাস থেকে তিনি শ্রীনিকেতনে ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে বিভিন্ন আনন্দদায়ী, প্রাণসঞ্চারী উৎসব-আয়োজনের প্রবর্তনও করেছিলেন। এভাবেই সূচনা হয়েছিল শ্রীনিকেতনে হলকর্ষণ ও বৃক্ষরোপণ – দুটি উৎসবের।

রবীন্দ্রনাথ তাঁর দীর্ঘ জীবনে অনেক বিষয় নিয়ে চিন্তা করেছেন। তাঁর শিক্ষা ভাবনার পরিচয় ছড়িয়ে আছে অনেক 888sport liveে আর ভাবনাগুলি যে তাঁর নিজের, কোনো ধার করা বস্তু নয়, সে-বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ রাখেননি। তবে আমার মনে হয়েছে, পল্লী প্রকৃতি নিয়ে তাঁর 888sport liveগুলি তাঁর উন্নয়ন-ভাবনার সবচেয়ে উজ্জ্বল দলিল বলে গণ্য হওয়ার দাবি রাখে। এই রচনাসমূহে তাঁর কবি-হৃদয়ের আবেগ যেভাবে তিনি প্রকাশ করেছেন, তার তুলনা মেলা ভার। আমরা মাটির বুকে বাস করি, অথচ মাটির মর্ম বুঝিনে, মাটির চাহিদা জানিনে, মাটিকে অবজ্ঞা করে, অবহেলা করে আমরাই ঠকেছি। বলছেন, – ‘তারপর মাটির কথা, যে মাটিতে আমরা জন্মেছি। এই হচ্ছে সেই গ্রামের মাটি, যে আমাদের মা, আমাদের ধাত্রী, প্রতিদিন যার কোলে আমাদের দেশ জন্মগ্রহণ করছে। আমাদের শিক্ষিত লোকদের মন মাটি থেকে দূরে দূরে ভাবের আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে – বর্ষণের যোগের দ্বারা তবে এই মাটির সঙ্গে আমাদের মিলন সার্থক হবে। যদি কেবল হাওয়ায় এবং বাষ্পে সমস্ত আয়োজন ঘুরে বেড়ায় তবে নূতন যুগের নববর্ষণ বৃথা এলো। বর্ষণ যে হচ্ছে না তা নয়, কিন্তু মাটিতে চাষ দেওয়া হয়নি। ভাবের রসধারা যেখানে গ্রহণ করতে পারলে ফসল ফলবে, সেদিকে এখনো কারো দৃষ্টি পড়ছে না। সমস্ত দেশের ধূসর মাটি, এই শুষ্ক তপ্ত দগ্ধ মাটি, তৃষ্ণায় চৌচির হয়ে ফেটে গিয়ে কেঁদে ঊর্ধ্বপানে তাকিয়ে বলছে, ‘তোমাদের ঐ যা-কিছু ভাবের সমারোহ, ঐ যা-কিছু জ্ঞানের সঞ্চয়, ও তো আমারই জন্যে – আমাকে দাও, আমাকে দাও। সমস্ত নেবার জন্যে আমাকে প্রস্তুত করো। আমাকে যা দেবে তার শতগুণ ফল পাবে।’এই আমাদের মাটির উত্তপ্ত দীর্ঘনিশ্বাস আজ আকাশে গিয়ে পৌঁছেছে। এবার সুবৃষ্টির দিন এল বলে। কিন্তু সেই সঙ্গে চাষের ব্যবস্থা চাই যে।

মাটিতে ফসল ফলাবার আয়োজন এতদিনে হয়তো বেড়েছে, তবু রবীন্দ্রনাথের আকুতি তার আবেদন নিয়ে এখনো আমাদের কানে বাজছে। কারণ রবীন্দ্রনাথ তাঁর অন্তর দিয়ে যা উপলব্ধি করেছিলেন, তার প্রকাশ ঘটিয়েছেন তাঁর অপরূপ লেখার মাধ্যমে। তাঁর উপলব্ধির মধ্যে কোনো ফাঁকি ছিল না, এবং পল্লীপ্রকৃতি নিয়ে তাঁর কথা বলার যোগ্যতা নিয়ে কোনো সন্দেহকে তিনি গ্রাহ্য করেননি। পল্লীবাসীর প্রতি সত্যিকার 888sport apk download apk latest version, ভালোবাসা, সহানুভূতি দিয়ে, রাজশাহী-পাবনার গ্রামে গ্রামে ঘুরে তিনি যা দেখেছেন, তা শুধু চোখের দেখা নয়, হৃদয় দিয়ে তিনি পল্লী সমস্যা বুঝতে চেয়েছেন, ও তাঁর ক্ষমতায় যতোটা কুলোয়, সমাধানের চেষ্টাও করেছেন।

দেশের প্রতি, যে-দেশ বলতে তিনি বুঝিয়েছেন অধিকাংশ মানুষের বাসস্থান গ্রামকে, সেই গ্রামের প্রতি, সেই পল্লী প্রকৃতির প্রতি, রবীন্দ্রনাথের গভীর একাত্মতাবোধের পরিচয় ছড়িয়ে আছে তাঁর অসংখ্য 888sport liveে ও ভাষণে। প্রকৃতি ও পরিবেশ নিয়ে আজ বিশ্বময় আলোচনার খবর আমরা পাচ্ছি। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আজ পরিবেশের সুস্থতা রক্ষার নানা আয়োজন চলছে, কিন্তু আজ থেকে শতবর্ষ পূর্বে রবীন্দ্রনাথ এ-বিষয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে গেছেন। পরিবেশ-ভাবনার ইতিহাসে তিনি একজন আদি-ভাবুক। তাঁর ভাবনার ধারাবাহিকতায় আজ পরিবেশ-চেতনা সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। যাঁরা এখন ভাবছেন, তাঁরা রবীন্দ্রনাথের লেখায় আবিষ্কার করবেন একজন আধুনিক মানুষ।

তাঁর জীবদ্দশায় প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের সম্পর্ক ছিল একের প্রভুত্ব ও অন্যের দাসত্বের। ভারতের রাজনৈতিক দাসত্ব থেকে মুক্তির প্রয়াসে তাঁর সমর্থন ছিল নিঃশর্ত। কিন্তু দাসত্বের গ্লানি তাঁর চিন্তাকে বা অনুভূতিকে সংকীর্ণ করেনি – তিনি প্রাচ্য-সভ্যতার, তথা ভারতীয় সভ্যতার শক্তিকে চিত্তে ধারণ করে তারপর দৃষ্টি দিয়েছেন প্রতীচ্যের শক্তি ও সামর্থ্যের দিকে। এই শক্তির ভিত্তি দেখেছেন জ্ঞান ও 888sport apkের অনুশীলনে। বিশ্বাস করেছেন, এখন প্রতীচ্যের দেওয়ার কথা, প্রাচ্য যেন সবিনয়ে সেটা গ্রহণ করতে পারে। একই সঙ্গে, প্রাচ্য শুধু নেবে না, সে-ও দেবে, এবং তার সেই সভ্যতার দানকে প্রতীচ্য গ্রহণ করবে। এই দেবে আর নেবে, মেলাবে মিলিবে-তে তাঁর বিশ্বাস অটুট ছিল জীবনের শেষ পর্যন্ত। শান্তিনিকেতনে তিনি বহির্বিশ্বকে ডেকে এনেছিলেন – ওরা আসুক, দেখে যাক, ওরা শুধু শেখাতে আসবে না, শিখতেও আসবে। তাঁর এই বিশ্বাসের মূল্য দিয়েছে প্রতীচ্য, তারা শুধু কবি রবীন্দ্রনাথকে মান্য করেনি, তারা মান্য করেছে প্রাচ্যের এক ঋষিকে, এক মনীষীকে।

উনিশ শতকের বঙ্গীয় রেনেসাঁসের উজ্জ্বলতম প্রতিনিধি রবীন্দ্রনাথ। মৃত্যুর সত্তর বৎসর পরও তাঁর মহত্ত্বকে খর্ব করতে পারেনি কাল। রসস্রষ্টা কবি ও দেশব্রতী কর্মী রবীন্দ্রনাথের মধ্যে এক আশ্চর্য মিলন ঘটেছিল দুই ভিন্নধর্মী প্রতিভার। এ এক বিরল ঘটনা। তাঁকে নিয়ে 888sport appsে কোনো বিভ্রান্তি ছিল না কোনোদিন। এর প্রমাণ মিলেছে তাঁর জন্মশতবর্ষে এবং এখন। তাঁর জন্মের সার্ধশতবার্ষিকীতে। ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’- তাঁর এই গান 888sport appsের জাতীয়সংগীত। প্রতিদিন আমরা, 888sport appsের বাঙালিরা, এই গান গেয়ে এই গানের স্রষ্টা রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে আমাদের একাত্মতাই কি ঘোষণা করছি না?
(এ লেখাটি কালি ও কলমের রবীন্দ্রশতবার্ষিকী 888sport free betয় প্রকাশিত)