বাংলায় ব্রিটিশ শিক্ষা-তৎপরতা এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান

মহীবুল আজিজ

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের চার বছর বয়সে কলকাতা থেকে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয় – চার্লস লুসিংটনের দ্য হিস্ট্রি, ডিজাইন অ্যান্ড প্রেজেন্ট স্টেট অব দ্য রিলিজিয়াস, বেনেভোলেন্ট অ্যান্ড চ্যারিটেবল ইনস্টিটিউশন্স, ফাউন্ডেড বাই দ্য ব্রিটিশ ইন ক্যালকাটা অ্যান্ড ইট্স ভিসিনিটি। ততদিনে বাংলায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভূমি সংস্কারের পরিণতি চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হয়ে জমিদারশ্রেণির প্রজন্মান্তর ঘটে গেছে। বস্তুত ভারতবর্ষে পাশ্চাত্য শিক্ষা কোনোভাবেই স্থানীয়দের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় ছিল না, এর পুরোটাই ছিল ঔপনিবেশিক স্বার্থপুষ্ট। কোম্পানি থেকে ব্রিটিশ সরকারে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়ায় শিক্ষার        প্রকৃতি বদলেছে; কিন্তু সেটির অভিমুখ থেকে গেছে মোটামুটি একই। প্রশ্ন উঠতে পারে, শিক্ষার মতো একটি ব্যয়সম্ভব খাতে কোম্পানি কেন তাহলে অর্থ খরচ করার সিদ্ধান্ত নিল? আসলে শিক্ষার নেপথ্যে নিহিত ছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অন্যতর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। খ্রিষ্টান বিশ্বে তখন ক্যাথলিক-প্রোটেস্ট্যান্ট মেরুকরণের প্রক্রিয়ায় উভয় শিবিরের মধ্যে একটা পারস্পরিক প্রতিযোগিতার প্রতিবেশ বিদ্যমান, যা কখনো-কখনো দ্বান্দ্বিক পরিণামে পর্যবসিত হচ্ছিল। আমরা জানি, রানি এলিজাবেথের সঙ্গে ভ্যাটিকান চার্চের দ্বন্দ্ব শেষ পর্যন্ত খ্রিষ্টবিশ্বে প্রোটেস্ট্যান্ট মতবাদের সূচনা করেছিল। কিন্তু এর পরিণতি আরো দূরপ্রসারী হয়। ১৫৩৮ খ্রিষ্টাব্দে রোমান ক্যাথলিক পৃষ্ঠপোষিত জেসুইট মিশনারিদের সংগঠনের সূচনা বিশ্বে খ্রিষ্টধর্মে আনুষ্ঠানিক বিভক্তির একটি মাত্রা। এর বিপরীতে আট-নয়টি দেশ যেগুলো ক্যাথলিকধারার বাইরে বেরিয়ে যায়। এসবের নেপথ্যে ছিল লাতিন বাইবেলের 888sport app download apk latest versionের ঘটনা। ভ্যাটিকানের দৃষ্টিতে বাইবেল যেহেতু ঈশ্বরের ভাষা সেহেতু এর 888sport app download apk latest version ব্লাসফেমিসুলভ কাজ। অন্যদিকে ক্যাথলিকবিপরীত দেশগুলো নিজ-নিজ ভাষায় বাইবেল অনুসরণকে ঈশ্বরবিশ্বাসের অনুগামী বলেই বিবেচনা করে। পরিস্থিতির নেতৃত্ব নিয়ে নেয় রানি এলিজাবেথের দেশের শাসকেরাই। এরই ধারাবাহিকতায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের দুই বছরের মাথায় ১৭৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় লন্ডন মিশনারি সোসাইটি। প্রতিষ্ঠানটির উদ্দেশ্য ছিল ঈশ্বরের গৌরবময় বাণী ছড়িয়ে দেওয়া। এর ঠিক চার বছর পরে ১৭৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় চার্চ মিশনারি সোসাইটি তথা সিএমএস। এটি মূলত একটি ব্রিটিশ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। বিশ্বময় অ্যাংলিকান এবং প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিষ্টানদের একই ছাতার নিচে একই লক্ষ্যে কাজ করার একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান।

এভাবেই গড়ে ওঠে ধর্মীয় প্রচারণা এবং রাজ্যবিস্তারের সমান্তরাল ইতিহাস। ক্যাথলিকপন্থীরা পরিব্যাপ্তি ঘটায় আমেরিকা মহাদেশের ত্রিশোর্ধ্ব দেশে যে-দেশগুলো বর্তমানে লাতিন আমেরিকা নামে পরিচিত। তাছাড়া ফিলিপাইনের মতো এশীয় দেশে শক্ত ঘাঁটি তৈরি করে ক্যাথলিকেরা যেটি কালক্রমে ভিয়েতনাম, চীন, ভারতবর্ষ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। ক্যাথলিকদের পাশাপাশি বিশেষ করে ব্রিটেনের নেতৃত্বে প্রোটেস্ট্যান্টরাও পিছিয়ে থাকে না ধর্মীয় প্রচারণায়। ভারতবর্ষে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ঔপনিবেশিক বলয়কে রাজ্যবিস্তারী সাফল্য হিসেবে বিবেচনা করলেও এটি প্রোটেস্ট্যান্ট সাফল্যেরও একটি মাত্রা হিসেবে বিবেচ্য। কেননা, ১৭৫৭ সালে কোম্পানির যুদ্ধবিজয়ের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ভারতবর্ষে ধর্মীয় প্রচারণার প্রাতিষ্ঠানিক তৎপরতা মিশনারিদের কেন্দ্র করে জাঁকালোভাবে শুরু হয়ে যায়। পূর্বেকার বিচ্ছিন্ন ও ছোটখাটো প্রচেষ্টাগুলো সংঘবদ্ধ, কেন্দ্রীয় ও প্রশাসনিক পরিকল্পনায় বাস্তবায়িত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে। যেমন ধরা যাক, ব্রিটিশদের পূর্বে পর্তুগিজ পৃষ্ঠপোষকতায় ক্যাথলিকদের ভারতবর্ষে বিস্তৃতির সুযোগ ঘটে। মুম্বাই, কালিকট, বাংলা এসব অঞ্চলে ধর্মীয় প্রচারণা এবং শিক্ষাবিস্তারে ক্যাথলিকরা অর্জন করে কিছু সাফল্যও। 888sport app download for android রাখতে হয়, সীমিত আকারে হলেও পর্তুগিজরা তথা ক্যাথলিকরাই প্রথম ভারতবর্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। কিন্তু ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাফল্য চূড়ান্তভাবে ভারতবর্ষে প্রোটেস্ট্যান্ট সফলতার দরজা খুলে দেয়। বলা যায়, বিদেশি শাসনের প্রথম একশ বছর অর্থাৎ ১৭৫৭ থেকে ১৮৫৮ সাল পর্যন্ত ভারতবর্ষে মিশনারিরা তাদের কর্মকাণ্ড চালায় অবাধে এবং স্বাধীনভাবে। কোম্পানি হস্তক্ষেপ করত না তাদের কাজে এবং কোম্পানির কাছ থেকে প্রয়োজনীয় আর্থিক ও 888sport app পৃষ্ঠপোষকতা লাভে কোনো প্রকারের অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়নি মিশনারিদের। বস্তুত চিরস্থায়ী বন্দোবস্তেরও আগে থেকে খ্রিষ্টধর্ম প্রচারে মিশনারি তৎপরতা ছিল অবারিত এবং মিশনারিদের প্রত্যাশা ও স্বপ্ন ছিল, ভারতবর্ষের লোকেরা বিপুল 888sport free betয় ধর্মান্তরিত হবে, মানে খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত হবে। ব্রিটিশশাসিত ভারতের মিশনারিরা বিশ্বময় প্রভাববিস্তারকারী তাদের ক্যাথলিক প্রতিপক্ষের (ইতিবাচক অর্থে) সঙ্গে তাদের তৎপরতা দিয়ে একধরনের অলিখিত প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়। এরই পরিণামে ভারতবর্ষের বিভিন্ন ভাষায় বাইবেল, খ্রিষ্টধর্ম-সংক্রান্ত প্রচারপত্র এবং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাতৎপরতা প্রভৃতি পরিচালিত হতে থাকে।

১৮০০ সালে শ্রীরামপুর মিশন প্রতিষ্ঠা করেন উইলিয়ম কেরি এবং উইলিয়ম ওয়ার্ড। এক শ্রীরামপুর মিশন থেকেই বাংলাসহ ভারতবর্ষের 888sport app ভাষায় বিপুল পরিমাণে অনূদিত হতে থাকে বাইবেল। মারাঠি, গুজরাটি, পশতু, ফারসি, তেলেগু, সাঁওতালি, ওড়িয়া, হিন্দি ইত্যাদি বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত বাইবেল প্রচারে দক্ষতা এবং সুনামের অংশীদার হয়েছিলেন উইলিয়ম কেরি ও অন্য মিশনারিরা। ১৮০০ থেকে শুরু করে ১৮৩২ সাল পর্যন্ত শ্রীরামপুর মিশন প্রেস থেকে ২,১২.০০০ হাজার পুস্তক মুদ্রিত হয়, যেগুলোর অধিকাংশই ধর্মীয় প্রকাশনা। ১৮০০ সালের আগস্ট মাসে এখান থেকে প্রথম ছাপা হয় বাইবেলের সেন্ট ম্যাথুর বঙ্গানুবাদ। পঁচিশটি স্থানীয় ভাষায় বিরতিহীনভাবে বাইবেল প্রকাশ করে যায় মিশন। ১৮৮৩ সালে কলকাতায় শ্রীরামপুর মিশনের ধর্মীয় 888sport app download apk latest versionকর্মের একটি প্রদর্শনীতে উইলিয়ম কেরি-অনূদিত বাইবেলের ২৮,৬৭৫ কপি এবং 888sport app কাজের নমুনা স্থান পায়। (দ্রষ্টব্য : মহীবুল আজিজ, সরকারি ও মিশনারি শিক্ষা, পৃ ২৯) উইলিয়ম কেরি ফোর্ট উইলিয়ম কলেজে বাংলা গদ্যচর্চার কাজ শুরু করার আগেই বাইবেল 888sport app download apk latest version করে হাত মকশো করেছিলেন যথেষ্ট পরিমাণে। বাংলা গদ্যের চর্চার চাইতেও তাঁর উদ্দেশ্য ছিল ধর্মীয় প্রচারণা। অন্যভাবে বললে, নিজের বাংলা গদ্যের এবং 888sport app ভাষার চর্চাকে তিনি ধর্মপ্রচারণার কাজে লাগান। উনিশ শতকের গোড়ার দিকে কোম্পানির পৃষ্ঠপোষকতায় কলকাতার বাইরে যেসব পরীক্ষামূলক স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয় সেগুলোর প্রধানরা ছিলেন কার্যসূত্রে পেশাদার ধর্মপ্রচারক। পরে, পাশ্চাত্য শিক্ষাশ্রয়ী স্কুলপাঠ্য বইগুলোর প্রণেতা হন এঁরাই। ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি (প্রতিষ্ঠিত ১৮১৮) ইয়েটস, কিথ, স্টুয়ার্ট, পিয়ার্সন, হেয়ার, মে, লসন, রো, বেল, মারে, রিকেট প্রমুখ-রচিত পুস্তকাদি পরিবেশন করে। এসব ব্যক্তি ছিলেন মূলত মিশনারি। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের চার বছর বয়সে প্রকাশিত লুসিংটনের পূর্বোক্ত গ্রন্থে ভারতবর্ষে এবং বাংলায় মিশনারিদের প্রকৃত উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে ব্যক্ত –

আমাদের মহান উদ্দেশ্য হলো যারা ভ্রান্তিতে নিমজ্জিত তাদেরকে সত্যের অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতার দ্বারা পরিচালিত করা, তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোয় এবং তাদেরকে শয়তানের ক্ষমতা থেকে রক্ষা করে ঈশ্বরের সন্নিধানে নিয়ে যাওয়া। (বর্তমান 888sport liveকারের 888sport app download apk latest version, পৃ ৩৫)

কাজেই উইলিয়ম কেরিসহ সকলেরই অভিমুখ ছিল ধর্মীয় প্রচারণা। বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষা তাঁদের সেই উদ্দেশ্যের  নিরিখেই বিকশিত হয়েছিল। মিশনারিদের প্রতিষ্ঠিত স্কুলগুলোতে খ্রিষ্টধর্মের প্রচারণা ও প্রভাবের বিষয়টি ছিল স্বীকৃত। স্কুলগুলোর এমন ধর্মীয়ভাবাপন্নতার কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে স্কুল কর্তৃপক্ষ তথা বিদেশিদের নানারূপ দ্বন্দ্বেরও সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনায় স্থানীয়দের মনে এমন ধারণার জন্ম নেয় যে, কোম্পানির সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত মিশনারি স্কুলগুলো আসলে ভারতবর্ষের লোকেদের খ্রিষ্টধর্মে ধর্মান্তরিত করবে। বিশেষ করে একসময় স্কুলগুলোতে ধর্মীয় শিক্ষার ক্লাসে অখ্রিষ্টান শিক্ষার্থীদেরও বাইবেলবিষয়ক অধ্যয়নে অংশগ্রহণ ছিল বাধ্যতামূলক। স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলের জন্যে শিক্ষার্থীদের প্রদত্ত উপহারসামগ্রীর গায়ে আঁকা ধর্মীয় চিহ্ন (‘ক্রসচিহ্ন’) দেখে অভিভাবকদের অনেকেই তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে অনিচ্ছা প্রদর্শন করলে স্থানীয়দের দ্বারা তাদের বোঝানো হয়, তারা খ্রিষ্টানদের স্কুলের শিক্ষক এবং তারা এখনো ধর্মান্তরিত হননি।

মোটকথা, শিক্ষা, প্রাতিষ্ঠানিকতা, পুস্তকাদি সবকিছু মিলিয়ে উনিশ শতকের প্রথম অর্ধশতাব্দীকাল কোম্পানির শাসনামলে মিশনারি তৎপরতার প্রভাববলয় ছিল সুবিস্তৃত। শিক্ষাপরিকল্পনা, শিক্ষাপদ্ধতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে কোম্পানি নয়, মিশনারিদের প্রাধান্য ছিল একচেটিয়া। শিক্ষাকে ধর্মপ্রচারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে মিশনারিরা ছিল প্রবল আত্মবিশ্বাসী। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খ্রিষ্টধর্মের প্রাধান্য থাকবে না – এমনটি তারা ভাবতে অপারগ ছিল। শ্রীরামপুর মিশন থেকে লক্ষ-লক্ষ পৃষ্ঠা বাইবেল ও ধর্মীয় কাগজপত্রের প্রকাশনা মিশনারিদের উচ্চাশার বহিঃপ্রকাশ। তাদের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, প্রকাশ্য ধর্মপ্রচারণা এবং শিক্ষাক্ষেত্রে কুশলী ধর্মস্পৃষ্টতার পরিণামে বাংলায় এবং ভারতে প্রচুর ধর্মান্তরিত খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীর সৃষ্টি করবে। ১৮৪০ সালে চার্চ মিশনারি সোসাইটি বিলাতের পার্লামেন্টে দরখাস্ত করে যাতে সরকারি উদ্যোগে স্কুলগুলোতে ধর্মপ্রচারের ব্যবস্থা করা হয়। ১৮৪৪ সালে লর্ড হার্ডিঞ্জের আমলে সব স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু হয়। প্রস্তাবনা থাকে, পরীক্ষায় পাশ-ফেলের ওপর স্কুলগুলোর বার্ষিক অনুদান নির্ভর করবে। তখন মিশনারিরা সরকারি উদ্যোগটিকে সাদরে গ্রহণ করে না। কেননা কোম্পানির তত্ত্বাবধানে তাদের স্বাধীন গতিবিধির ওপর সেটিকে এক ধরনের নিয়ন্ত্রণ হিসেবে তারা বিবেচনা করে। ১৮৫২ সালে আলেকজান্ডার ডাফ স্কুলে বাইবেলপাঠ বাধ্যতামূলক করার ব্যাপারে উচ্চকণ্ঠ হন। ব্রিটিশ সরকারি শিক্ষাকে তিনি ‘অখ্রিষ্টানসুলভ’ বলে আখ্যা দেন। ১৮৫৩ সালে ডাফই আবার বলেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত স্কুলের পাঠ্যপুস্তক প্রকৃত শিক্ষার উপযোগী নয় এবং সরকার-অনুসৃত পরীক্ষাপদ্ধতিও সঠিক নয়। ১৮৫৪ সালে ব্রিটিশ সরকারের প্রথম শিক্ষাভাষ্য প্রকাশিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত মোটামুটি অর্ধশতাব্দী কালের প্রেক্ষাপটে বাংলার শিক্ষায় সরকারি-মিশনারি দ্বন্দ্ব ক্রমে প্রকট থেকে প্রকটতর হয়। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বেড়ে ওঠা, শিক্ষালাভ এবং নিজের শিক্ষকতা সবই বিকশিত-বিবর্তিত হয়েছে উনিশ শতকের মিশনারি-সরকারি দ্বান্দ্বিকতার পরিপ্রেক্ষিতে। তাঁর চৌত্রিশ বছর বয়সে প্রণীত হয় প্রথম ব্রিটিশ শিক্ষাভাষ্য এবং তাঁর তেষট্টি বছর বয়সে প্রণীত হয় দ্বিতীয় সরকারি শিক্ষাভাষ্য। প্রথম শিক্ষাভাষ্য প্রণীত হয় কোম্পানি আমলে এবং দ্বিতীয় শিক্ষাভাষ্য ব্রিটিশ সরকারি শাসনামলে। বস্তুত প্রথম শিক্ষাভাষ্যের সময়টাতে কোম্পানি আমল বিদ্যমান থাকলেও ব্রিটিশ সরকারি শিক্ষানীতির ক্ষেত্রে কোম্পানির প্রভাব লক্ষণীয় নয়। বিশেষ করে ভারতবর্ষে কোম্পানি যে তাদের ক্ষমতার শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছাচ্ছিল সে-বিষয়ে হয়তো তারাও ছিল সচেতন। ১৮৮৩ সালে প্রণীত দ্বিতীয় শিক্ষাভাষ্য ১৮৫৪-র শিক্ষানীতিরই সম্প্রসারণ। প্রথম শিক্ষাভাষ্যে ক্ষুব্ধ মিশনারিদের উষ্মা সহজেই প্রশমিত হয় না। তারা নানাভাবে সরকারি শিক্ষানীতির বিপ্রতীপে নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকে এবং সুযোগমতো শিক্ষানীতির সমালোচনায় প্রকাশ করে নিজেদের সরবতা। ১৮৭৯ সালে লন্ডনের মাইল্ডাম হলে একটি বক্তৃতায় মিশনারি ড. মারে মিচেল স্পষ্টভাবে বলেন, ভারতীয় ঐতিহ্যাশ্রয়ী শিক্ষা ছাত্রদের মনোজগতের উন্নতিতে কোনোই কাজে আসবে না। ওই বছরেরই অক্টোবর মাসে লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার হসপিটালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ড. সি ম্যাকনামারা ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মের গৌণ উপস্থিতির সমালোচনা করেন।

১৮৫৪ সালের ব্রিটিশ সরকারি শিক্ষাভাষ্য প্রকাশকালে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তাঁর শিক্ষা এবং পেশাগত জীবনে সাফল্য উদ্যাপনকারী একজন সামাজিক কর্ণধার। যদিও কর্মক্ষেত্রে বিবিধ জটিলতার অভিজ্ঞতাও তিনি লাভ করেন এ-কালপরিধিতে। বিদ্যায়তনিক শিক্ষা, পাঠ্যপুস্তকাদি, দেশীয় ও পাশ্চাত্য – দুই ধারার সমান্তরাল শিক্ষাপদ্ধতি, শিক্ষার প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, মিশনারি-সরকারি দৃষ্টিভঙ্গি, ভারতবর্ষীয় সনাতন ভাবধারা এবং বিকাশমান প্রতীচ্য ভাবধারা এ-দুয়ের পারস্পরিক অবস্থিতি, অবস্থিতিজনিত দ্বন্দ্ব ও সমন্বয় ইত্যাকার নানান বিষয়-সম্পর্কিত তাঁর মনোজাগতিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বিদ্যাসাগরের শিক্ষাচেতনাকে বোঝার পক্ষে প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে। সেইসঙ্গে তাঁর সামাজিক কর্মতৎপরতার বৈপ্লবিক প্রেরণা এবং সমকালীন সমাজমানসের পারস্পরিক দ্বন্দ্বের স্বরূপটিকেও বাদ দেওয়া যায় না। অর্থাৎ এক বহুমুখী ও স্র্রোতোস্বর খাতে প্রবহমান বিদ্যাসাগরের জীবনের আঙ্গিকে তাঁর চেতনা বিবেচ্য। ১৮৫৪ সালের প্রথম ব্রিটিশ শিক্ষাভাষ্যটি প্রকাশিত হয় জুন মাসে। বিদ্যাসাগর শিক্ষাসম্পর্কিত সরকারি সিলেকশন কমিটির নিকট তাঁর নিজস্ব 888sport world cup rate বা সুপারিশ পেশ করেন ১৮৫৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি। তাঁর 888sport world cup rate পেশের চার মাস পর প্রকাশিত শিক্ষাভাষ্য এবং বিদ্যাসাগরের পেশকৃত 888sport world cup rateটির তুলনামূলক বিচার-বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, ব্রিটিশ সরকার গঠিত শিক্ষা কমিশন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের শিক্ষাভাবনা ও পরিকল্পনাকে যথেষ্ট গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করেছিল। শিক্ষাভাষ্য প্রণয়নের পরবর্তী সরকারি শিক্ষা কার্যক্রমে সেই সত্যের প্রতিফলন লক্ষ করা যায়। বস্তুত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তাঁর শিক্ষা-888sport world cup rateে সরকারি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাক্ষেত্রে দেশীয় এবং পাশ্চাত্য শিক্ষার সুসমন্বয়ে এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থার রূপকল্প দাঁড় করান যে-শিক্ষা ব্যক্তিকে একই সঙ্গে করবে জ্ঞানী এবং ঐতিহ্যানুগামী। যে-শিক্ষা শিক্ষার্থীর জ্ঞানপিপাসু চেতনায় এককেন্দ্রিক রশ্মিপাতের পরিবর্তে সৃষ্টি করবে বহুরশ্মিক আপতন। তাছাড়া, একটি শিক্ষাকাঠামোকে সাংগঠনিক ও বাস্তবিক ভিত্তিভূমির ওপর প্রতিষ্ঠা করে সেটিকে টেকসই রূপে বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার উপায় ও পন্থা সম্পর্কেও বিদ্যাসাগরের প্রস্তাবনাসমূহ ছিল যুগোপযোগী। সবচেয়ে বড় কথা, চৌত্রিশ বছর বয়স্ক একজন ব্যক্তির শিক্ষাসম্পর্কিত 888sport world cup rateের বিভিন্ন প্রস্তাবনাকে ব্রিটিশ সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছিল 888sport world cup rateটির যৌক্তিকতা ও বাস্তবিকতার বৈশিষ্ট্যের কারণেই। পরবর্তীকালে, ১৮৮৩ সালে প্রকাশিত দ্বিতীয় শিক্ষাভাষ্য প্রকাশিত হলে এবং শিক্ষাসম্পর্কিত বিভিন্ন উদ্যোগ, শিক্ষাবিষয়ক প্রশ্নপত্রের ভিত্তিতে শিক্ষাভাবুকদের পর্যালোচনা ইত্যাদির আলোকেও দেখা যাবে, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের শিক্ষাভাবনা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ।

এখানে উনিশ শতকের কালিক বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে বিদ্যাসাগরের বেড়ে ওঠার রূপরেখাটি ধরা যাক। ভারতবর্ষে পাশ্চাত্য শিক্ষার ক্ষেত্রে পথিকৃৎ হিসেবে গণ্য করা হয় পর্তুগিজদের। বিশেষ করে রোমান ক্যাথলিক মিশনারিরা এক্ষেত্রে ছিল অগ্রবর্তী। চার ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সূচিত হয় পাশ্চাত্য তথা আধুনিক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার – (ক) চার্চ এবং মিশনারি কেন্দ্রগুলোর সংলগ্ন প্রাথমিক স্কুল, (খ) দেশীয় ছেলেমেয়েদের জন্যে অনাথ আশ্রম, যেখানে প্রাথমিক শিক্ষা ছাড়াও কৃষি এবং কাষ্ঠ888sport live chatের কাজ শেখানো হতো, (গ) উচ্চশিক্ষার নিমিত্ত জেসুইট কলেজ এবং (ঘ) ধর্মীয় শিক্ষার স্কুল, যেখানে পাদ্রি হওয়ার জন্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছিল। সপ্তদশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধজুড়ে ‘সোসাইটি ফর দ্য প্রোপাগেশন অব দ্য গসপেলে’র তৎপরতা শিক্ষাক্ষেত্রে মিশনারি ভাবধারার প্রচারে ব্যাপৃত থাকে। মূলত ইউরোপীয় ও স্থানীয়দের সম্পর্কের ফলে জন্ম নেওয়া ছেলেমেয়েদের শিক্ষাদানের চিন্তা থেকেই এসব স্কুলের অভ্যুদয়। লক্ষ করার বিষয়, বাংলায় এবং ভারতবর্ষে মিশনারিদের তৎপরতায় ডেনিশ, জার্মান, ফরাসি, ইংরেজ, ইতালীয় প্রভৃতি দেশের মিশনারি শিক্ষাবিদদের আগমনে ও শিক্ষাদানে একটা নতুন ধরনের শিক্ষা-কর্মকাণ্ডের সৃষ্টি হয়। কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র মুম্বাই, সুরাট, কালিকট, মালাবার, চেন্নাই, বাংলা ইত্যাদি অঞ্চলে স্কুল গড়ে উঠলেও বাংলায় সে-অর্থে সর্বজনীন শিক্ষা চালু হয় না। বলতে গেলে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিষয়টাই হয়ে যায় মিশনারি কর্মকাণ্ডের নামান্তর। কলকাতা শহরে এবং বর্ধমান, হুগলি, সুতানটি প্রভৃতি অঞ্চলে গড়ে ওঠা স্কুলগুলোও পাশ্চাত্যের মিশনারি আদলে বিকশিত হতে থাকে। ১৮১০ সালে উইলিয়ম কেরি এবং মার্শম্যানের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বেনেভোলেন্ট ফাউন্ডেশনের স্কুলকে বলা যায় মিশনারি হলেও জনমুখী শিক্ষাপ্রচারণা। স্কুলটি বাংলার দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত ছেলেমেয়েদের শিক্ষায় বিশেষভাবে মনোযোগী হয়। 

১৮৩১ সালে বাংলায় অনুষ্ঠিত হয় ব্রিটিশ ভারতের প্রথম শিক্ষাশুমারি। বিদ্যাসাগরের বয়স তখন এগারো বছর। সে-বছরেই রক্ষণশীল সনাতন গোষ্ঠীর কতিপয় সদস্যের ষড়যন্ত্রের পরিণামে ডিরোজিওকে হিন্দু কলেজ ত্যাগ করতে হয়। ১৮৩০ সাল থেকে শুরু হওয়া ইয়ং বেঙ্গলদের রক্ষণশীলতাবিরোধী আন্দোলন ১৮৩১-এর দিকে তুঙ্গস্পর্শী। তাদের মুখপাত্র এনকোয়ারার এবং জ্ঞানান্বেষণ-এ কৌলীন্য প্রথা এবং বহুবিবাহ সম্বন্ধে বিভিন্ন আলোচনা প্রকাশিত হতে থাকে। বিদ্যাসাগর ১৮২৫ সালে পাঁচ বছর বয়সে গ্রামের পাঠশালায় ভর্তি হয়ে পরে ১৮২৯-এ তিনি কলকাতা গভর্নমেন্ট সংস্কৃত কলেজে ভর্তি হন। ১৮৩০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রক্ষণশীল সনাতনদের প্রতিষ্ঠান ‘ধর্মসভা’। বিদ্যাসাগরের শিক্ষকদের অনেকেই ছিলেন এ-সভার সদস্য। কলকাতানিবাসী কিশোর বিদ্যাসাগরের পরিপার্শ্বে তখন রক্ষণশীল এবং উদারপন্থীদের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব চলমান। শিক্ষাশুমারি থেকে বাংলা অঞ্চলের একটা অবয়ব দৃশ্যমান হয়। দেখা যায়, বাংলা অঞ্চলে সে-সময়টাতে পুরুষ জন888sport free bet সাড়ে তিন কোটি। এদের মধ্যে লেখাপড়া জানা লোকের 888sport free bet ১৮ লক্ষ। আর, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার আওতাধীন লোক888sport free bet ১০ লক্ষ। বাংলার 888sport promo code888sport free bet তখন ছিল সাড়ে তিন কোটি। এদের মধ্যে লেখাপড়া জানা ৬১ হাজার এবং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার আওতাধীন ৩৬ হাজার। শুমারি এবং সে-সংক্রান্ত পর্যালোচনা এবং সরকারি ভাষ্য এবং অ্যাডামসের শিক্ষা-রিপোর্ট এসব মিলিয়ে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে, তখন দেশের পাঁচটি শ্রেণির শিক্ষার কথা ব্রিটিশদের পরিকল্পনাধীন ছিল। এ-শ্রেণিগুলো – অভিজাত, মুসলমান, অর্ধসভ্য (তাদের ভাষায়) আদিবাসী, নিম্নবর্ণ হিন্দু এবং অতি দরিদ্র। শুমারি থেকে দেশের অশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর যে-888sport free bet ও চিত্র পাওয়া যায় সেটি শোচনীয়। হয়তো ব্রিটিশ সরকারেরও তখন এ-উপলব্ধি হয় যে, এত বিপুলসংখ্যক মানুষের শিক্ষাব্যয় সামলানো তাদের পক্ষে অসম্ভব। আমরা এ-জায়গাটাতে কয়েকজন শিক্ষা-পরামর্শকের কথা 888sport app download for android করতে পারি যাঁরা বিভিন্ন সময়ে অশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর শিক্ষা সম্পর্কে ভাবিত ছিলেন। ১৮১৪ সালে রেভারেন্ড এম থমাসন, ১৮১৫-য় লর্ড ময়রা, ১৮২২ থেকে ১৮৩০ পর্যন্ত লর্ড এলফিনস্টোন, ১৮২৮-এ রেভারেন্ড ব্রাইস, ১৮৩৫-এ উইলিয়ম অ্যাডাম – এঁরা সকলেই জনশিক্ষার পক্ষে ওকালতি করেছিলেন। কিন্তু সে-জনশিক্ষা বিষয়টা খানিকটা তাত্ত্বিক শোনালেও এর বাস্তবিক রূপ সম্পর্কে প্রকৃত ধারণাটা পাওয়া যায় ১৮৩৫ সালে ব্যক্ত টি বি ম্যাকলের কথায়। তিনি বলেছিলেন, সকলের শিক্ষার দায়িত্ব সরকারের পক্ষে নেওয়া সম্ভব নয়, সরকার কেবল সমগ্র জন888sport free bet থেকে একটি নির্বাচিত শ্রেণিকে শিক্ষিত করে তুলতে পারে। ১৮৩৯ সালে লর্ড অকল্যান্ডের কথায় ম্যাকলেরই প্রতিধ্বনি ওঠে এবং সে-কথায় ব্রিটিশ সরকারের শিক্ষা-সম্পর্কিত পরিকল্পনার অনেকটাই আঁচ করা যেতে পারে। তাঁর বিশ্বাস ছিল, ব্রিটিশরা যদি একটি শ্রেণিকে পাশ্চাত্য তথা আধুনিক তথা ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলে তাহলে সেই শ্রেণিটিই কালক্রমে তাদের নিচে পড়ে থাকা অন্যতর শ্রেণিগুলিকে শিক্ষিত করে তুলবে। বাস্তবে তেমনটা কখনো হয়নি। শিক্ষিত শ্রেণি তাদের অর্জিত শিক্ষাকে অবলম্বন করে অধিকাংশ অন্য শ্রেণিগুলি থেকে দূরে সরে গেছে, অন্যতর শ্রেণিসমূহকে শিক্ষিত করে তোলা তো দূরের কথা।

১৮৩৫ সালে ব্রিটিশশাসিত ভারতে ফারসির পরিবর্তে ইংরেজি সরকারি ভাষার মর্যাদা লাভ করে। বিদ্যাসাগর তখনো শিক্ষার্থী এবং সে-বছরেই তাঁর বিবাহ হয়। সংস্কৃত কলেজে থাকাকালীন তিনি মূলত 888sport live football, অলংকার, বেদান্ত, 888sport sign up bonus, ন্যায় এসব বিষয়ই অধ্যয়ন করেন। ছাত্র হিসেবে প্রায় সকল শ্রেণিতেই তিনি কৃতিত্বপূর্ণ ফল লাভ করেন এবং পরীক্ষার কৃতিত্বের জন্যে অর্জন করেন বৃত্তি, শংসাপত্র, 888sport app download bd ইত্যাদি। লক্ষ করার বিষয় ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধি অর্জনকালে তাঁর বয়স মাত্র উনিশ বছর। ১৮৪১ সালের ২৯ ডিসেম্বর ২১ বছর বয়সে ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান পণ্ডিত নিযুক্ত হন। এখানে 888sport app download for android রাখা দরকার, সংস্কৃত কলেজের ছাত্র বিদ্যাসাগর সেখানে মূলত বাংলা এবং সংস্কৃত বিষয়েই অধ্যয়ন করেন। তাঁর জীবনী থেকে জানা যায়, ফোর্ট উইলিয়ম কলেজে চাকরি নেওয়ার পর থেকেই তাঁর ইংরেজি ভাষা-শিক্ষার পর্ব শুরু হয়। তাঁর এ-শিক্ষা যে অত্যন্ত মজবুত ভিত্তিপূর্ণ ছিল তার প্রমাণ তাঁর কর্মাদি। ইংরেজি ভাষার 888sport live footballকর্মের বাংলা 888sport app download apk latest versionে তাঁর মুনশিয়ানা উচ্চস্তরের। উইলিয়ম শেক্সপিয়রের কমেডি অব এর্রসের 888sport app download apk latest version ভ্রান্তিবিলাসে বিদ্যাসাগরের ভাষাগত দক্ষতা অতুলনীয়।  শিক্ষা কমিশনে পেশকৃত তাঁর ইংরেজিতে লেখা 888sport world cup rateের ভাষা-বিষয় এবং প্রকাশভঙ্গি বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে প্রাতিষ্ঠানিক ইংরেজি শিক্ষা অর্জন না করেও কেবল ব্যক্তিগত অধ্যবসায় দ্বারাও ইংরেজির মতো বিদেশি ভাষা রপ্ত করা যায়। সর্বোপরি একই ইংরেজি ভাষাকে 888sport app download apk latest versionের কাজে 888sport live footballের চারিত্র্য দ্বারা এবং দাফতরিক কাজে যোগাযোগের সূত্রিতা দ্বারা মণ্ডিত করার কুশলতা বিদ্যাসাগর-রচিত 888sport world cup rateে লক্ষণীয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষায় পাঠ্যসূচি কী হওয়া উচিত সে-বিষয়ে তিনি স্পষ্ট ও যুক্তিপূর্ণ ভাষায় তাঁর প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। এছাড়া বিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিদ্যালয়ের ধরন, শিক্ষক-প্রশিক্ষণ, বিদ্যালয়-পরিদর্শন, পরিদর্শক-নিয়োগ প্রভৃতি বিষয়ে প্রদত্ত বিদ্যাসাগরের 888sport world cup rateটি ঐতিহাসিক কারণেও অত্যন্ত মূল্যবান। ঐতিহ্যানুসারী শিক্ষায় শিক্ষালাভ করেও একজন শিক্ষাবিদ যে আধুনিক ভাবনায় কতটা অগ্রবর্তী হতে পারেন তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ বিদ্যাসাগর-রচিত 888sport world cup rateটি। 

১৮৫৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর-রচিত (ঈশ্বরচন্দ্র শর্মা স্বাক্ষরকৃত) ও সরকারি শিক্ষা কমিশনে পেশকৃত বাংলায় দেশীয় শিক্ষাবিষয়ক ইংরেজি 888sport world cup rateটি (১৮৫৫ সালে প্রকাশিত বাংলা প্রদেশের ‘রেকর্ডস্’ হিসেবে এটি বর্তমানে ইংল্যান্ডের ব্রিটিশ মিউজিয়মে সংরক্ষিত আছে।) বিশ্লেষণ করা যাক। 888sport world cup rateটি সর্বমোট উনিশটি প্রস্তাব সংবলিত।

প্রথম প্রস্তাবেই বিদ্যাসাগর দেশীয় তথা মাতৃভাষায় শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তাঁর ধারণা, একমাত্র দেশীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে পারলেই বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।

দ্বিতীয় প্রস্তাবে তাঁর বক্তব্য হলো, কেবল লিখতে-পড়তে পারা বা এক-আধটু অংক জানাটাই সম্পূর্ণ শিক্ষা হওয়া উচিত নয়। শিক্ষাকে সামগ্রিক করে তুলতে হলে, বিদ্যাসাগরের মতে, তাতে ভূগোল, ইতিহাস, জীবনী, গণিত, জ্যামিতি, দর্শন, নীতিশাস্ত্র, রাজনৈতিক অর্থনীতি, শারীরবিদ্যা প্রভৃতি বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকা চাই।

তৃতীয় প্রস্তাবে প্রকাশিত পুস্তকাদির মধ্য থেকে পাঠ্যবই হিসেবে যেগুলো উপযুক্ত সেগুলো সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য ও পর্যবেক্ষণ প্রতিফলিত। প্রথম শ্রেণিতে পাঁচ খণ্ডে শিশুশিক্ষা যেটির প্রথম তিনটি অংশে রয়েছে বর্ণ, বানান, পঠন; চতুর্থ অংশে কিছুটা প্রাথমিক জ্ঞান; পঞ্চম অংশে চেম্বারের শিক্ষাবিষয়ক রচনাবলি থেকে নীতিসম্পর্কিত পাঠ্য বিষয়বস্তুর 888sport app download apk latest version। দ্বিতীয় শ্রেণিতে পশ্বাবলি বা প্রাণিজগতের ইতিহাস। তৃতীয় শ্রেণিতে মার্শম্যান-অনূদিত বাংলার ইতিহাস। চতুর্থ শ্রেণিতে চারুপাঠ বা প্রয়োজনীয় ও বিনোদনমূলক বিষয়াবলির পাঠ। পঞ্চম শ্রেণিতে জীবনচরিত, চেম্বার-রচিত কোপার্নিকাস, গ্যালিলিও, নিউটন, স্যার উইলিয়ম হার্শেল, গ্রটিয়াস, লিনিয়াস, দ্যুভাল, স্যার উইলিয়ম জোন্স এবং থমাস জেনকিন্সের দৃষ্টান্তমূলক জীবনী।

তাঁর চতুর্থ প্রস্তাবে তিনি বলেন, গণিত, জ্যামিতি, প্রাকৃতিক দর্শন এবং নৈতিক দর্শন প্রভৃতি বিষয়ের প্রস্তুতি চলমান। ভূগোল, রাজনৈতিক অর্থনীতি, শারীরবিদ্যা, ইতিহাসবিষয়ক রচনাদি এবং জীবনচরিত সংকলন করতে হবে। ইতিহাস পর্যায়ে বর্তমান সময়ের জন্যে ভারতবর্ষ, গ্রিস, রোম এবং ইংল্যান্ডের ইতিহাস হলেই যথেষ্ট হবে।

পঞ্চম প্রস্তাবে বিদ্যাসাগরের অভিমত হলো, একটি স্কুলের জন্যে একজন করে শিক্ষক যথেষ্ট নয়। প্রতিটি স্কুলে কমপক্ষে দুজন করে শিক্ষক থাকা প্রয়োজন। প্রতিটি স্কুলে তিন থেকে পাঁচটি শ্রেণি থাকার কথা, সেক্ষেত্রে একজন শিক্ষকের পক্ষে তা দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করাটা বাস্তবসংগত নয়।

ষষ্ঠ প্রস্তাবে বলা হয়, যোগ্যতা ও 888sport app বিবেচনায় একজন পণ্ডিতের মাসিক বেতন হওয়া উচিত কমপক্ষে ৩০, ২৫ ও ২০ রুপি যথাক্রমে। সবগুলো পুস্তক চালু হয়ে গেলে একজন প্রধান পণ্ডিতের প্রয়োজন হবে যাঁর মাসিক বেতন হবে ৫০ রুপি।

সপ্তম প্রস্তাবে বলা হয় যে, এমন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে যাতে শিক্ষকগণ তাঁদের মাসিক বেতন তাঁদের স্ব-স্ব জায়গাতেই নিয়মিতভাবে পেয়ে যান।

অষ্টম প্রস্তাবে বিদ্যাসাগরের বক্তব্য হলো, চারটি জেলাকে কেন্দ্র করে কর্মকাণ্ড শুরু হতে পারে, যেমন, হুগলি, নদীয়া, বর্ধমান এবং মেদিনীপুর। সুবিধাজনক বিবেচনায় বর্তমানে ২৫টি স্কুলের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সেগুলো শহরে এবং গ্রামে হতে পারে, তবে কাছাকাছি ইংরেজি স্কুল এবং কলেজ আছে এমন জায়গায় নয়। ইংরেজি স্কুল-কলেজের কাছাকাছি হওয়াটা দেশীয় শিক্ষার পক্ষে অনুকূল হবে না।

নবম প্রস্তাবের বিষয় হলো, দেশীয় শিক্ষার সফলতা ব্যাপকভাবে নির্ভর করবে কার্যকর ও দক্ষ তত্ত্বাবধান এবং সাফল্য লাভ করা ছাত্রদের প্রদত্ত প্রণোদনার ওপর। দেশীয় লোকেদের মধ্যে, জ্ঞানের স্বার্থে জ্ঞানার্জনের বিষয়টি এখনো প্রকৃত উদ্দেশ্য বলে প্রতিভাত হয়নি। কাজেই লর্ড হার্ডিঞ্জের প্রস্তাব, যেটি বহুদিন ধরে বাস্তবায়িত হওয়ার অপেক্ষায়, বাধ্যবাধকতার সঙ্গে কার্যকর হওয়া উচিত।

দশম প্রস্তাবে বিদ্যাসাগরের বক্তব্য হলো, পরিদর্শনের পরিকল্পনার ব্যাপারে অন্য যে-কোনোটির চাইতে নিম্নেরটি অনেক কম ব্যয়সাপেক্ষ এবং অনেক বেশি কার্যকর হবে।

একাদশ প্রস্তাবটি এমন, মাসিক ১৫০ রুপি বেতন (888sport slot gameভাতাসহ) ধার্য করে দুজন দেশীয় স্কুল পরিদর্শক নিয়োগ দেওয়া হবে, একজন মেদিনীপুর ও হুগলি এবং অন্যজন নদীয়া ও বর্ধমানের দায়িত্বে থাকবেন। তাঁরা ঘন-ঘন স্কুল পরিদর্শনের কাজ করবেন, শিক্ষকদের ক্লাসগুলো পর্যবেক্ষণ করবেন, এবং শিক্ষকতার ধরন প্রয়োজনে সংশোধন করে দেবেন।

দ্বাদশ প্রস্তাবটি হলো, সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষকে পদাধিকারবলে হেড সুপারিনটেন্ডেন্ট মনোনীত করা হবে। তাঁর কোনো প্রকারের বাড়তি ভাতার প্রয়োজন নেই, তিনি বাৎসরিক অনধিক ৩০০ রুপি পাবেন 888sport slot game ভাতা হিসেবে। বছরে একবার তিনি স্কুলগুলো পরিদর্শন করবেন এবং দেশীয় স্কুলগুলোর পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্তৃপক্ষের নিকটে 888sport world cup rate পেশ করবেন।

ত্রয়োদশ প্রস্তাবে বলা হয়, ক্লাসের পাঠ্যবই প্রস্তুত ও নির্বাচন এবং শিক্ষক নির্বাচন করার দায়িত্ব হেড সুপারিনটেন্ডেন্টের ওপর বর্তাবে।

চতুর্দশ প্রস্তাবটি হলো, দেশীয় ভাষার স্কুলশিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্যে সংস্কৃত কলেজ ব্যতিরেকে সাধারণ শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে নরমাল স্কুলকেও বিবেচনায় নেওয়া যায়।

পঞ্চদশ প্রস্তাবে বিদ্যাসাগর বলেন, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, শ্রেণিপাঠ্য পুস্তকাদি প্রস্তুত এবং নির্বাচন, শিক্ষক নির্বাচন করা এবং সাধারণ তত্ত্বাবধান সব একত্র সন্নিবদ্ধ থাকবে একটা অফিসেই। এ-ধরনের ব্যবস্থায় বিভিন্ন জটিলতার নিরসন হবে।

ষোড়শ প্রস্তাবটি হলো, মাসিক ১০০ রুপি বেতনে একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারিনটেন্ডেন্ট নিয়োগ করা যেতে পারে। তাঁর দায়িত্ব হবে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণদানে এবং শ্রেণিপাঠ্য পুস্তকাদি প্রস্তুতকালে হেড সুপারিনটেন্ডেন্টকে সহায়তা করা এবং দেশীয় স্কুলসমূহ পরিদর্শনকালে তাঁর পক্ষে অফিস পরিচালনা করা।

সপ্তদশ প্রস্তাবে বিদ্যাসাগর জানান, গুরুমহাশয়দের তত্ত্বাবধানে থাকা বর্তমান পাঠশালা বা দেশীয় বিদ্যালয়গুলো একেবারে বেদরকারি প্রতিষ্ঠান। সাধারণত দায়িত্ব পালনে অদক্ষ শিক্ষকদের হাতে থাকা এসব স্কুলের অনেক উন্নতি দরকার। সুপারিনটেডেন্টদের কাজ হবে এসব বিদ্যালয় পরিদর্শন করা এবং শিক্ষকতার কায়দাকানুন সম্পর্কে শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া। উপর্যুক্ত শ্রেণিপাঠ্য পুস্তকাদির সম্ভাব্য উপযোগিতার পন্থাসমূহ পর্যবেক্ষণ করাটাও সুপারিনটেডেন্টদের দায়িত্বে থাকবে। বস্তুত, এসব স্কুলকে উপযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করানোর জন্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন সুপারিনটেডেন্টরা।

অষ্টাদশ প্রস্তাবের বক্তব্য হলো, দক্ষ শিক্ষকদের দ্বারা পরিচালিত হওয়া দেশীয় লোক এবং মিশনারিদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত স্কুলগুলো অবশ্যই মনোযোগ ও প্রণোদনার দাবিদার। এ-ধরনের স্কুলগুলো পরিদর্শন করে প্রণোদনার ব্যাপারে তাদের চাহিদা বিষয়ে 888sport world cup rate দেবেন সুপারিনটেন্ডেন্টরা। 

উনবিংশ বা সর্বশেষ প্রস্তাবে বিদ্যাসাগর বলেন, সরকারি স্কুলগুলোর মডেলে স্কুল প্রতিষ্ঠা করার জন্য তাঁদের আওতাভুক্ত শহর এবং গ্রামের লোকেদের উৎসাহিত করাটাও সুপারিনটেন্ডেন্টরা তাঁদের দায়িত্বের অংশ রূপে বিবেচনা করবেন।

বস্তুত চার্লস লুসিংটন, ম্যাকলে, শিক্ষাশুমারি, শিক্ষা কমিশন গঠন, ফারসির পরিবর্তে সরকারি ভাষা ইংরেজির প্রবর্তনা, তিন খণ্ডে অ্যাডামের বাংলার শিক্ষাবিষয়ক 888sport world cup rate রচনা প্রভৃতির ধারাবাহিকতায় ভারতবর্ষে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তার ও প্রসারের ব্যাপারে সরকারি কর্তৃপক্ষের তৎপরতা উত্তরোত্তর বাড়তে থাকে। কিন্তু শিক্ষাদান, স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা এবং পাঠ্যপুস্তকাদি প্রস্তুত ও নির্বাচন, স্কুল-কলেজের জন্যে শিক্ষক-নির্বাচন প্রভৃতি বিষয়ে সরকারি দৃষ্টিভঙ্গি ও বিবেচনা মিশনারিদের মতো হলো না। সমগ্র ভারতে শিক্ষা-তৎপরতা পরিচালনার বিষয়টি এতটাই বিপুল কর্মকাণ্ড যে সরকার বাধ্য হয়েই শ্রেণিশিক্ষার দিকে মনোযোগী হলো। অর্থাৎ সকল শিক্ষা সকলের জন্যে নয় এবং সকলের জন্যে শিক্ষাও নয়। তাছাড়া ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং মিশনারিদের উৎসাহে এরই মধ্যে বিদেশিদের পাশাপাশি দেশীয় ব্যক্তিরাও স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। মিশনারিদের তৎপরতায় বিশেষভাবে সৃষ্টি হলো দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও 888sport promo codeদের শিক্ষার সুযোগ। মিশনারিরা বোর্ডিং স্কুলও চালু করে শিক্ষায় প্রণোদনা জোগানোর লক্ষ্যে। দরিদ্র লোকেদের সন্তানদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে তারা একদিকে দরিদ্রের সহায়তা করে এবং অন্যদিকে ধর্মপ্রচারে নিয়োজিত মিশনারিদের প্রতি অনুকূল সামাজিক দৃষ্টি জাগরণের লক্ষ্যেও কাজ করে। সরকারি কর্তৃপক্ষ এবং কর্মকর্তাদের মধ্যে বরাবর পাশ্চাত্য শিক্ষার পাশাপাশি দেশীয় ভাষায় শিক্ষার বিষয়টিও গুরুত্ব পেতে থাকে। অর্থাৎ অভিজাতশ্রেণির তথা জমিদার-মহাজনদের সন্তান এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সন্তান সকলেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভ করবে। কিন্তু উভয়ের শিক্ষাপদ্ধতি একরকম হবে না। এরকম ভাবনা থেকেই দেশীয় ভাষায় স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। যেজন্যে আমরা দেখতে পাই, শিক্ষাভাষ্য প্রকাশ এবং কোম্পানির শাসন অবসিত হওয়ার পর মোটামুটি তিনটি প্রধান ধরনের স্কুল চালু হয়ে যায় – অ্যাংলো স্কুল, অ্যাংলো-ভার্নাকুলার স্কুল এবং ভার্নাকুলার স্কুল। একটু মোটাদাগে বিবেচনা করলে বোঝা যায়, বিদেশিদের এবং স্বল্পসংখ্যক দেশীয় অভিজাত শ্রেণির তথা জমিদার-মহাজনদের সন্তানদের জন্যে অ্যাংলো স্কুল, দেশীয় অভিজাত শ্রেণির সন্তানদের জন্যে অ্যাংলো-ভার্নাকুলার স্কুল এবং বাকি সকলের জন্যে অর্থাৎ আমজনতার জন্যে ভার্নাকুলার স্কুল।

বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষা এবং তাতে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদানকে দেখতে হয় মোটামুটি ষাট বছরের প্রেক্ষাপটে অর্থাৎ উইলিয়ম উইলবারফোর্স (১৭৫৯-১৮৩৩) থেকে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮২০-১৮৯১) এমন রূপরেখা বিবেচনায়। এ কেবল দুই ভিন্ন গোলার্ধে থাকা দুজন ব্যক্তিত্বের ঐতিহাসিক অবস্থানই নয়, বরং এই দ্বিত্বে ব্রিটেন এবং ভারতবর্ষের বৃহত্তর ঐতিহাসিক বাস্তবতার হদিস মেলে। রাজনীতিবিদ, সমাজসেবী এবং দাস-ব্যবসার বিলুপ্তকরণ আন্দোলনের এক খ্যাতিমান কর্ণধার উইলবারফোর্স ছিলেন ইয়র্কশায়ার অঞ্চল থেকে নির্বাচিত ব্রিটিশ পার্লামেন্টের (১৭৮৪-১৮১২) সংসদ সদস্য। তাঁর নেতৃত্বে দাসবিরোধী আন্দোলন সফল হয় ১৮০৭ সালে দাসব্যবসা-বিলুপ্তকরণ সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের মধ্য দিয়ে। ১৮৩৩ সালে চূড়ান্তভাবে দাস-ব্যবসার বিলুপ্তি ঘটে। ধর্ম, নৈতিকতা এবং শিক্ষা – এই তিনটি ক্ষেত্রে মানবতাবাদ-চর্চা এবং জীবন ও সমাজোন্নয়নমুখী সংস্কারের প্রবক্তা উইলবারফোর্স তাঁর গোটা জীবন উৎসর্গ করেন মানবতাবাদ প্রতিষ্ঠা এবং সমাজ সংস্কারের উদ্দেশ্যে। তাঁর আরো যেসব কাজ তাঁকে 888sport app download for androidীয় করে রেখেছে সেগুলো হলো, ভারতবর্ষে মিশনারি তৎপরতায় এবং সিয়েরা লিওনে মুক্ত উপনিবেশ গড়বার লক্ষ্যে নিবেদিত ‘সোসাইটি ফর দ্য সাপ্রেশন অব ভাইস’, ‘চার্চ মিশনারি সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠা এবং ‘সোসাইটি ফর দ্য প্রিভেনশন অব ক্রুয়েল্টি টু অ্যানিমেলস’ প্রতিষ্ঠা। বাংলা অঞ্চলে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরও তাঁর কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে মানবতাবাদ ও সামাজিক উন্নয়নের অনন্য নজির সৃষ্টি করেন। শিক্ষা-তৎপরতা, পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন, 888sport live footballকর্ম, 888sport app download apk latest version, সামাজিক সংস্কারমূলক গদ্য, বাল্যবিবাহ রদ এবং বিধবাবিবাহের প্রচলন ও বহুবিবাহ রদ, বিদ্যালয়-প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি বহুবিধ কাজের মধ্য দিয়ে উনিশ শতকের রেনেসাঁস-মানবে পরিণত হন তিনি। একদিক থেকে বিদ্যাসাগরের অবদানকে উইলবারফোর্সের অবদানের চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ বলা যেতে পারে। উইলবারফোর্স ছিলেন একটি স্বাধীন দেশের অধিবাসী এবং ক্ষমতাধর-প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। বিভিন্ন আন্দোলনে তিনি সঙ্গে পেয়েছেন দেশ-সমাজের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষকে। অন্যদিকে বিদ্যাসাগরকে এগোতে হয়েছে নানাবিধ বাধা উজিয়ে। রক্ষণশীল জনগোষ্ঠীর একটা বৃহদংশ তাঁর ওপর ছিল খড়্গহস্ত। শিক্ষিত-প্রভাব-প্রতিপত্তিশালীর রোষানলের সঙ্গেও লড়তে হয় তাঁকে। ১৮৪৬ সালে বিদ্যাসাগরের বয়স ছাব্বিশ বছর। সংস্কৃত কলেজের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি হিসেবে যোগ দেন মাসিক ৫০ টাকা বেতনে। সংস্কৃত কলেজে সেক্রেটারি থাকাকালে তাঁর অভিজ্ঞতা তাঁর পরবর্তী কর্মজীবনের বৃহত্তর সংগ্রামক্ষেত্রের সঙ্গে রচনা করে একটা যোগসূত্র। তাঁর বিদ্যাবত্তা এবং পাণ্ডিত্যের জন্যে ততদিনে তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়েছিল শিক্ষাসম্পর্কিত পরিধিতে। সংস্কৃত কলেজ কর্তৃপক্ষ কলেজের সার্বিক শিক্ষার উন্নতিকল্পে বিদ্যাসাগরের নিকট পরামর্শ চাইলে তিনি কলেজের সাংগঠনিক পুনর্বিন্যাস এবং সংস্কার প্রস্তাব করে 888sport world cup rate দেন। মূলত এটিকে কেন্দ্র করেই তাঁর সঙ্গে কলেজ-সেক্রেটারির বিখ্যাত ঐতিহাসিক দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। ইতিহাস লেখে বিদ্যাসাগরের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরেই কলেজ-সেক্রেটারি রসময় দত্তকে পদত্যাগ করতে হয় সংস্কৃত কলেজ থেকে। এই ঘটনাটিকে মোটেও ছোট করে দেখার উপায় নেই। রসময় দত্ত (১৭৭৯-১৮৫৪) ছিলেন কলকাতার বিখ্যাত কায়স্থ পরিবার রামবাগানের দত্ত পরিবারের সন্তান। টি.ও. ডান-রচিত বেঙ্গলি রাইটার্স অব ইংলিশ ভার্স : রেকর্ড অ্যান্ড অ্যান অ্যাপ্রিসিয়েশন গ্রন্থ থেকে রসময় দত্ত এবং তাঁর পারিবারিক পটভূমি সম্পর্কে জানা যায়। তিনি ছিলেন প্রথমত কলকাতার একজন নামকরা ব্যবসায়ী। পরে কলকাতার একটি কোর্টের বিচারপতিও নিযুক্ত হন। এশিয়াটিক সোসাইটির প্রথম ভারতীয় সদস্য ছিলেন রসময় দত্ত। কলকাতা হিন্দু স্কুলের তিনি প্রতিষ্ঠাতা। পরে রামমোহন রায়, রাধাকান্ত দেব এবং ডেভিড হেয়ারের সঙ্গে মিলে তাঁরা সেটিকে সংস্কৃত কলেজে পরিণত করেন। রসময় দত্ত ছিলেন সংস্কৃত কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ। কলকাতা স্কুল বুক সোসাইটি গঠনেও ছিল তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তাঁর দুই নাতনি ছিলেন বিখ্যাত অ্যাংলো-ভারতীয় কবি তরু দত্ত ও অরু দত্ত। রসময়ের পাঁচ সন্তানের তিনজনই  (গোবিন্দ – তরু দত্তের পিতা, হর ও গিরীশ) ইংরেজি ভাষায় কাব্য-রচনার জন্যে বিখ্যাত। বিশেষ করে অ্যাংলো-ভারতীয় 888sport live footballের ইতিহাসে খ্যাত ডাট ফ্যামিলি অ্যালবাম রামবাগানের দত্ত পরিবারটিকে প্রায় অমরতা এনে দিয়েছে। এ-পরিবারেরই উত্তরপুরুষ খ্যাতিমান রমেশচন্দ্র দত্ত এবং রজনী পাম দত্ত। বস্তুত কলেজের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি বিদ্যাসাগর তাঁর সংস্কার-প্রস্তাবে শিক্ষা ও পঠনপাঠনকে বিবেচনা করেন গুরুত্বের সঙ্গে। সংস্কৃত কলেজের শিক্ষার্থী হিসেবে তাঁর ছিল এক যুগের অভিজ্ঞতা। তাছাড়া মাত্র 888sport cricket BPL rate বছর বয়সে তিনি ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান পণ্ডিত নিযুক্ত হন। রসময় দত্তের মতো সামাজিক প্রভাব-প্রতিপত্তি না থাকলেও শিক্ষা-পাণ্ডিত্য-শিক্ষকতা এসব বিচারে নিঃসন্দেহে তিনি ছিলেন অগ্রবর্তী।  ইংরেজি-শিক্ষিত হয়েও রসময় ছিলেন গোঁড়া মানসিকতার প্রতিনিধি। অন্যদিকে বিদ্যাসাগর তাঁর নিজের এবং অক্ষয়কুমার দত্তের লেখা বই সংস্কৃত কলেজের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করেন। অক্ষয়কুমার তাঁর 888sport apkচেতনা ও সংশয়বাদী চেতনার জন্যে বিখ্যাত। বস্তুত বিদ্যাসাগর এবং অক্ষয়কুমার দুজনেই ছিলেন সেই সময়কার প্রেক্ষাপটে বৈপ্লবিকভাবে অগ্রসর চেতনার মানুষ। এমনকি বর্তমান যুগেও তাঁদেরকে ব্যতিক্রম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। কৃষকের পরিশ্রম এবং প্রার্থনার ফল সম্পর্কিত অক্ষয়কুমার-প্রদত্ত সমীকরণটি পৃথিবীর ইতিহাসেই এক উল্লেখযোগ্য উপস্থাপনা, যেমনটি উল্লেখযোগ্য জিওডার্নো ব্রুনোর পৃথিবীর গতি-সম্পর্কিত প্রথম লেখচিত্রটি।  বিদ্যাসাগরের যে-শিক্ষা 888sport world cup rate বর্তমান 888sport liveে উপস্থাপিত হয়েছে সেখানে দেখতে পাওয়া যাবে শিক্ষার্থীদের দর্শনশাস্ত্র পাঠের প্রয়োজনীয়তা তিনি অনুভব করেছেন। দর্শন-নীতিশাস্ত্র এবং গণিত-জ্যামিতি ও 888sport app বৈজ্ঞানিক পাঠের সমন্বয়ে মানস গঠনের পক্ষে ছিলেন বিদ্যাসাগর। জীবনচরিত পর্যায়ে তিনি উপস্থিত করেছেন এমনসব ব্যক্তির নাম যাঁরা নিজ-নিজ জায়গায় রক্ষণশীলতার বিপরীতে প্রগতির নিশানাবাহী। বিদ্যাসাগর নিজেও তাঁদের জীবনচরিত রচনা করেছেন বাংলা ভাষায়। তিনি যুক্তিতর্কের বাস্তবভিত্তিক সুস্থ চর্চাকে গ্রহণ করেন। তাই কলেজ পরিদর্শন করতে আসা বিদেশি সাহেবকে স্পষ্ট ভাষায় বলতে পারেন, সাংখ্য ও বেদান্ত দর্শনের মতো বিশপ বার্কলের দর্শনও ভ্রান্ত। এখানেই বিদ্যাসাগরের বাস্তব-888sport apkচেতন অগ্রসর মানসিকতার পরিচয় ফুটে ওঠে। এ-মানসিকতার জোরেই তিনি কলেজ-পরিচালন পর্ষদের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে যুক্তিতর্কে মেতেছিলেন। কলেজ থেকে পদত্যাগ করে চলে যান, পরে কলেজই আবার তাঁকে ফিরিয়ে আনে। বলা বাহুল্য, সামাজিক মানসের বিরূপতাকে প্রায় কালাপাহাড়ি এষণা দিয়ে জয় করতে হয়েছে তাঁকে। এসবের মধ্যে চলেছে তাঁর বিচিত্র সব লেখালেখি, সামাজিক গদ্য রচনা, যুক্তিতর্ক লড়াই, শিক্ষার্থীদের কল্যাণে বিচিত্র বিষয়নির্ভর পাঠ্যপুস্তক রচনা, সামাজিক সংস্কারমূলক কর্মযজ্ঞ, স্কুলপ্রতিষ্ঠা ইত্যাকার সমস্ত কর্মতৎপরতা।

১৭৯৩ সালে ইংল্যান্ডের অধিবাসী সমাজসেবী উইলিয়ম উইলবারফোর্স ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চার্টারে দুটো ধারা সংযোজনের জন্যে আবেদন জানান কর্তৃপক্ষের নিকটে। ধারা দুটোর মূল বিষয় ছিল ব্রিটেন থেকে ভারতবর্ষে স্কুলশিক্ষক পাঠানো। কিন্তু কোম্পানির কর্তাব্যক্তিদের এতে ছিল প্রবল আপত্তি। তাঁদের ধারণা ছিল, এতে করে কোম্পানির অভ্যন্তরীণ বিষয়াদিতে বাইরের হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। আবার, হাউজ অব কমন্সের অনেকেই ছিলেন উইলবারফোর্সের প্রস্তাবের সমর্থক। শেষ পর্যন্ত ১৮১৩ সালে কোম্পানির থাকা স্কুল এবং নবোদ্ভূত এসব স্কুল সম্মিলিত হয়ে বাংলায় একটা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা-সংস্কৃতির সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। এদিকে বছর বছর নিয়মিতভাবে সংস্কৃত ও আরবি পাঠ্যপুস্তকই ছাপা হতো। নতুন পরিস্থিতিতে সংস্কৃত ও আরবির সঙ্গে ইংরেজি ভাষায় পুস্তকাদি ছাপা হতে শুরু করলে বাইবেল, ধর্মপ্রচার এবং শিক্ষা সব মিলিয়ে প্রশাসনিক ও সামাজিক তৎপরতায় জাগলো বৈচিত্র্য। ১৮৩৫ সালের ১০ অক্টোবর উইলিয়ম বেন্টিংক সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ঘোষণা করলে সেটি প্রকাশনা 888sport live chatের জন্যে আশীর্বাদ হয়ে দেখা দেয়। ১৮৪৩ সালের দিকে বাংলা অঞ্চলে দেশীয় ভাষায় শিক্ষার বিদ্যালয় চালু হলে পুরনো ও প্রচলিত টোল-পাঠশালার অবস্থানে সূচিত হতে থাকে পরিবর্তন। এরই মধ্যে বাংলা অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মিলিয়ে শিক্ষক888sport free betর ক্ষেত্রেও ঘটে প্রবৃদ্ধি। ১৮৪৪ সালে লর্ড হার্ডিঞ্জ যখন ঘোষণা করলেন, এখন থেকে সরকারি চাকরি লাভের ক্ষেত্রে ইংরেজি শিক্ষায় লেখাপড়ার সনদ বাধ্যতামূলক। বস্তুত ১৮৩৫ সালে ফারসির পরিবর্তে সরকারি ভাষা হিসেবে ইংরেজিকে ঘোষণার প্রকৃত লক্ষ্য ও অভিমুখটি স্পষ্টতর হয়ে যায় লর্ড হার্ডিঞ্জের ঘোষণায়। এবং ১৭৯৩ সালে উইলিয়ম উইলবারফোর্সের ভারতে শিক্ষক প্রেরণের বিষয়টিও লর্ড হার্ডিঞ্জের ঘোষণায় ভারতবর্ষে পাশ্চাত্য শিক্ষার সর্বব্যাপী সম্ভাবনাকে করে তুললো দৃঢ়মূল।  

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের শিক্ষা-888sport world cup rateটির বিচার-বিশ্লেষণের ভূমিকা হিসেবে খানিকটা ঐতিহাসিক পর্যালোচনা প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে। কেননা, তাঁর প্রস্তাবপত্রটি একমুখী নয়, বহুমুখী। পাশ্চাত্য শিক্ষা, পাঠ্যপুস্তক, পাঠ্য বিষয়াবলি, স্কুলের ধরন, স্কুল পরিচালনার প্রক্রিয়া – এইসব নানা বিষয় তাঁর 888sport world cup rateে প্রতিফলিত হয়েছে। বলা যায়, বাংলায় ব্রিটিশ সরকারের সামগ্রিক শিক্ষা-কার্যক্রমের আঙ্গিকে বিদ্যাসাগরের 888sport world cup rateটি বিচার্য। ১৮৫৩ সালের ২৫ অক্টোবর ভারতবর্ষের গভর্নর জেনারেল ডালহৌসি (পরবর্তীকালে লর্ড ডালহৌসি, ১৮১২-৬০) একটি পত্র (ব্রিটিশ মিউজিয়মে ‘বেঙ্গল রেকর্ডস্’ হিসেবে সংরক্ষিত) লেখেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উদ্দেশে। পত্রটিতে তাঁরই লেখা পাঁচ বছর আগেকার অর্থাৎ ১৮৪৮ সালের আরেকখানা পত্রের কথা 888sport app download for android করিয়ে দেওয়া হয়। দেখা যাচ্ছে, ১৮৪৯ সালের ৩ অক্টোবর ১৪-সংখ্যক ডেসপ্যাচে ডালহৌসির সুপারিশসমূহ গৃহীত হওয়ার স্বীকৃতি মিলেছিল। ডালহৌসি তাঁর পূর্বোল্লিখিত চিঠিতে বাংলার ৩১টি জেলার প্রতিটিতে দেশীয় ভাষায় শিক্ষাপ্রচারে একটি করে সরকারি স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবের কথা 888sport app download for android করিয়ে দেন। প্রস্তাবটি অনুমোদিত হলে তখনকার মতো আটটি জেলা-স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। জেলা-স্কুল চালুর পরীক্ষামূলক পদ্ধতিটিকে শিক্ষাসাফল্য হিসেবে বিবেচনা করে ডালহৌসি সরকারকে অনুরোধ করেন ৩১টি জেলার সবগুলোতে সেরকম স্কুল প্রতিষ্ঠা করার জন্য। ১৮৫৪ সালের শিক্ষাভাষ্য প্রণয়নের পূর্বে স্থানীয় এবং কোম্পানির কর্মকর্তা এবং দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অনেকের নিকটেই সরকারের শিক্ষা-পরিকল্পনা সম্পর্কে লিখিতভাবে জানতে চাওয়া হয়। এটা বোঝা যায়, প্রায় সকলেই দেশীয় ভাষায় শিক্ষার গুরুত্ব অনুভব করেছিলেন। অনেকের 888sport world cup rateে শিক্ষার প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো সম্পর্কে পর্যালোচনা গুরুত্ব পায়। বিদ্যাসাগরের 888sport world cup rateে শিক্ষাসম্ভাব্য প্রায় সবগুলো দিকেরই প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায়। ১৮৫৩ সালের ৩ অক্টোবর বাংলা অঞ্চলের সেক্রেটারি সেসিল বিডনকে লেখা  ‘কাউন্সিল অব এডুকেশনের’ সচিব এফ.জে. মুয়াটের একটি পত্র-888sport world cup rate থেকে দেখা যায়, দেশীয় ভাষায় শিক্ষা প্রচলিত স্কুলগুলোতে জনমনে আশানুরূপ সার্থকতার ছাপ রেখেছে। মুয়াট প্রস্তাব করেন, যেসব ছাত্র পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফল লাভ করছে তাদের তাদের কোর্সের নামোল্লেখসহ একটি সুদৃশ্য সনদ দেওয়া যেতে পারে যে-সনদের এক পাশে থাকবে ছাত্রের বয়স, নাম, গোত্র, পিতামাতা, গ্রাম এবং ছাত্রটির সংক্ষিপ্ত পরিচিতি এবং অপর পাশে থাকবে প্রধান পরিদর্শক স্বাক্ষরিত একটি চারিত্রিক সনদ এবং তার অধীত বিষয়ে সাফল্যের বিবরণ। স্যার জন পিটার গ্রান্ট বাংলা সরকারের ১৮৪৯ সালের দেশীয় শিক্ষা-প্রস্তাবনাকে সমর্থন করে বলেন, প্রয়োজনে প্রচলিত স্কুলগুলোকে উঠিয়ে দিয়ে প্রতিটি জেলার কেন্দ্রীয় অবস্থানে জেলা-স্কুল প্রতিষ্ঠা করা যায়। কিন্তু গ্রান্টের দৃষ্টিতে জেলা-স্কুলের ধারণাটি ততক্ষণ পর্যন্ত সাফল্যের মুখ দেখবে না যতক্ষণ না জনগণকে দেশীয় শিক্ষায় শিক্ষাদানের জন্যে যোগ্য শিক্ষক পাওয়া যাবে। কাজেই যে-কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করার পূর্বে ভবিষ্যতের শিক্ষকদের  বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত।

পাশ্চাত্য শিক্ষা এবং এর সমান্তরালে দেশীয় ভাষায় শিক্ষা সম্পর্কে বাংলা অঞ্চলের আন্ডার সেক্রেটারি ডব্লিউ সেটন-কারের মন্তব্যের ওপর খানিকটা আলোকপাত করা যাক। ১৮৫৩ সালের ২১ জুলাই তিনি তাঁর 888sport world cup rate রচনা করেন। প্রথমেই সেটন-কার সরকারের দেশীয় ভাষায় শিক্ষার প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ বলে মন্তব্য করেন। ব্যর্থতার কারণটিও উল্লেখ করেছেন তিনি। তাঁর দৃষ্টিতে প্রায় দশ বছর ধরে সরকার দেশীয় ভাষা শিক্ষার যে-প্রাতিষ্ঠানিকতা চালিয়েছে সেটি আসলে বাস্তবে স্থানীয় তথা ভারতবর্ষীয় পদ্ধতি অনুসরণ করেনি। সেটন-কারের মূল্যায়নটিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হয়। ১৮৩৫ সাল থেকে, উইলিয়ম অ্যাডামের সময় থেকে শুরু করে ১৮৫৩ সাল পর্যন্ত বিবেচনা করে সেটন-কার বলেন, ভারতীয় শিক্ষাপদ্ধতি আদিম বা প্রথাগত ধরনের হলেও তা কার্যকরী। বিশেষ করে দেশের প্রজাসাধারণ, কর্মচারী, ছোটখাটো জমির মালিক, দোকানদার, জমিদারদের লোকজন, এরকম সব লোকের তা কাজে লাগে। এটা ধরেই নিতে হবে, প্রথাগত বিদ্যালয়গুলোর ছাপানো পুস্তকাদি থাকবে না। হয়তো তাদের ক্লাস হবে কোনো গোয়ালঘরে, কোনো একটা কাছারিঘরে, কিংবা কোনো পোড়ো মন্দিরে, অথবা একেবারে খোলামেলা কোনো গাছের নিচে। যে-গুরুমহাশয় তাদের বা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শিক্ষাদানে নিয়োজিত তাঁর উপার্জন নগণ্য, তাঁর খাওয়া-পরা, বার্ষিক বা সাপ্তাহিক অর্জন বলার মতো কিছু নয়। বলতে গেলে পুরো ব্যাপারটা খুবই নির্মম বাস্তবতা। তারপরেও এইসব বিদ্যালয়েই রায়তদের গ্রামবাসীদের পড়ালেখা শিখতে হবে। এখানেই তারা শেখে বেনিয়া-হিসাবনিকাশ, চাষবাসের নিয়মাবলি, নিত্যকার প্রয়োজনের লেখাজোখা, পাট্টা-কবুলিয়ৎ – যেগুলো তাদের সবসময় কাজে লাগে। যেগুলো নিয়ে প্রায়শ মামলা-মোকদ্দমা চলে। তারা এক জটিল সামাজিক চৌহদ্দির মধ্যে থাকে এসব লেখাপড়া শেখা জ্ঞান নিয়েই। পুরো ব্যাপারটা চলে গুরুমহাশয়ের 888sport sign up bonusর ওপর নির্ভর করে। সেটন-কার জানান, দশ বছর বয়সী একটা গ্রাম্য বালককে দেখেছেন গুরুমহাশয়ের কাছ থেকে শেখা বিষয়বস্তু 888sport sign up bonus থেকে অবিকল বলে যাচ্ছে। ছেলেটা জীবনে কখনো ছাপানো পুস্তক পড়েনি; কিন্তু অনেক বিষয়ে সে অনেক কিছু জেনে গেছে। সেটন-কারের দৃষ্টিতে, অনেক জেলার ক্ষেত্রেই দেখা গেছে স্থানীয় লোকেরা সরকারি স্কুলের চাইতেও তাদের নিজস্ব সেই প্রথাগত বিদ্যালয়ই বেশি পছন্দ করে। দেশীয় ভাষায় শিক্ষার প্রসঙ্গে সেটন-কারের অভিমত হলো, দেশীয় শিক্ষাকে আমূল বদলে দেওয়া আঙ্গিকে না নিয়ে যেমনটা আছে তার সঙ্গে খানিকটা সংগতি রক্ষা করে প্রজাসাধারণের কাজে লাগে এমন ভাবে করা উচিত। তবে তিনি দূর-প্রত্যন্ত এলাকার চাইতেও কলকাতার কাছাকাছি অঞ্চলে স্কুল প্রতিষ্ঠার পক্ষে মত দেন। কোনো কোনো অঞ্চলে, ধরা যাক বাংলার ফরিদপুরে (তাঁর মতে), লোকেরা এমনই অজ্ঞানতার তিমিরে যে সেখানে পুরনো ধরনের বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেও লাভ নেই। 888sport world cup rateের সবশেষে সেটন-কার যে-প্রস্তাবনা রাখেন সেটি নিঃসন্দেহে কৌতূহলোদ্দীপক। দেশীয় ভাষার স্কুলে যেসব ছেলে ভালো ফল করবে তাদের পরবর্তীকালে ইংরেজি স্কুলে ভর্তির জন্যে নির্বাচন করা হবে। দেশীয় ভাষায় শিক্ষার পূর্ববর্তী প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার নানা কারণের মধ্যে যেগুলো প্রত্যক্ষ, সেটন-কারের মতে, সরকার স্কুলগুলো অনেক বেশি রকমের ছড়িয়ে-ছিটিয়ে স্থাপন করেছে। তাছাড়া স্কুলগুলোকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণেরও কোনো উপায় নেই। আর, দেশীয় শিক্ষার যে-প্রথাগত রূপটা আগে থেকে ছিল সেটাকে কোনোভাবেই গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

প্রসঙ্গত, ১৮৫৩ সালের ২৩ জুলাই রসময় দত্ত-প্রদত্ত সংক্ষিপ্ত 888sport world cup rateটি লক্ষ করা যেতে পারে। তিনি লিখেছেন, সংস্কৃত কলেজ থেকে উত্তীর্ণ ছাত্রেরা দেশীয় শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার জন্যে সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত। তবে সেক্ষেত্রে আদর্শ শিক্ষক কেমন হওয়া উচিত তারও দৃষ্টান্ত দিয়েছেন রসময় দত্ত। তাঁর দৃষ্টিতে, হিন্দু কলেজ পাঠশালার শিক্ষক নিমাইচাঁদ দে-ই হতে পারেন দেশীয় শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার জন্যে প্রকৃত ব্যক্তি। রসময় দত্ত কয়েক বছর আগেকার কলকাতার কয়েকটি স্কুলের উল্লেখ করেন যেগুলো নিমাইচাঁদ দে-র মতো আদর্শ শিক্ষকেরা পরিচালনা করতেন; কিন্তু ইংরেজি শিক্ষার দ্রুত বর্ধনশীল চাহিদার কারণে সেসব স্কুল উঠে গেছে এবং সেই শিক্ষকগণ বেছে নিয়েছেন ভিন্নতর পেশা। রসময় জানান, গ্রামাঞ্চলে এখনো নিঃসন্দেহে যোগ্য শিক্ষক রয়েছেন। তাঁদের প্রণোদিত করতে পারলে তাঁরা গ্রাম্য স্কুলে শিক্ষকতায় যোগদান করতে পারেন। দেশীয় শিক্ষার স্কুলে শিক্ষকতার জন্যে ‘নরমাল স্কুলে’র প্রশিক্ষণকে অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হয়েছে রসময় দত্তের কাছে। লক্ষ করার বিষয়, যে-রসময় দত্ত সংস্কৃত কলেজে একসময় গুরুত্বপূর্ণ পদাসীন ছিলেন সেই তিনিই সংস্কৃত কলেজে পড়ুয়া ছাত্রদের দেশীয় শিক্ষাক্ষেত্রে ‘অযোগ্য’ (তাঁর ভাষায় ‘আনফিট্’) বলে মনে করেন। আসলে, রসময় ততদিনে সংস্কৃত কলেজ থেকে পদত্যাগ করে চলে এসেছিলেন এবং ১৮৫১ সালে ১৫০ রুপি বেতনে সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ পদে যোগদান করা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কেবল অধ্যক্ষ পদে কর্মরতই নয়, বছরের জানুয়ারি মাসে যোগ দিয়ে বছর শেষ হওয়ার আগেই তিনি সংস্কৃত কলেজের দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন সকলের জন্যে। তাঁর পূর্বে কলেজটিতে কেবল ব্রাহ্মণ এবং বৈদ্যরাই পড়তে পারতো। তাছাড়া, বিদ্যাসাগরের ‘বাল্যবিবাহের দোষ’ 888sport liveটি ছাপা হয়ে গেছে হিন্দু কলেজের সিনিয়র ছাত্রদের দ্বারা সম্পাদিত সর্বশুভঙ্করী পত্রিকায়। অর্থাৎ ব্যক্তি বিদ্যাসাগরের সঙ্গে পুরনো অপ্রীতিকর সম্পর্ক এবং তাঁর প্রতি রসময়ের ব্যক্তিগত উষ্মার দায় গিয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানের ওপর। তাছাড়া বিদ্যাসাগরের 888sport world cup rateে আমরা দেখতে পাই, তিনি শিক্ষকতার জন্যে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। অন্যদিকে রসময় সেটিকে অপ্রয়োজনীয় বলে মন্তব্য করেন। যদিও বিদ্যাসাগর যে-888sport world cup rate দেবেন আরো মাস-সাতেক পরে রসময়ের পক্ষে তা আগাম জানা সম্ভব ছিল না। এক্ষেত্রে আমরা এটি অনুমান করতে পারি, সংস্কৃত কলেজে অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি পদে থাকাকালে সেখানকার সেক্রেটারি রসময় দত্তের সঙ্গে এসব বিষয়ে বিদ্যাসাগরের মতবিনিময় হয়ে থাকতে পারে। এ-থেকে বোঝা যায়, বিদ্যাসাগর এবং রসময় ছিলেন দুজন দুই মেরুর বাসিন্দা। রসময় দত্ত আভিজাত্য-গর্বে অহংকারী আর বিদ্যাসাগর ছিলেন দেশবাসীর মঙ্গলভাবনায় সদাচেতন।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর-রচিত শিক্ষা-888sport world cup rateটিকে বহুমাত্রিক বলে অভিহিত করা যায়। ঔপনিবেশিক কাঠামোর মধ্যেই স্বদেশবাসীর শিক্ষাকে যতটা সম্ভব প্রগতিশীল ও আধুনিক করা যায় সেদিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছিল তাঁর। মাতৃভাষাকে অবহেলা করে শিক্ষা-সাফল্য অসম্ভব এটি তাঁর চেতনায় পূর্বাপর বিদ্যমান ছিল। শিক্ষার জন্যে শিক্ষা নয় বরং প্রকৃত জ্ঞানার্জনের জন্যে শিক্ষা, এমন ধারণার অনুসারী বিদ্যাসাগর 888sport apkের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করেন যাতে শিক্ষা হয়ে ওঠে সর্বাঙ্গীণ। নিজে তিনি ছিলেন সংস্কৃত কলেজের ছাত্র এবং সাংখ্য, দর্শন, বেদান্ত প্রভৃতি শাস্ত্র পাঠের নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে তিনি জেনেছেন, এসব শাস্ত্রের চাইতেও প্রয়োজনীয় লেখাপড়া শিক্ষার্থীদের নিকটে পৌঁছানো দরকার। তাঁর লক্ষ্য ছিল সেই দর্শন যা মানবমনকে জীবন সম্পর্কে করে তুলবে সচেতন। ন্যায়-অন্যায়ের বোধ বা নীতিশাস্ত্রের পাঠ যে ধর্মের জ্ঞানের চাইতেও অধিক প্রয়োজন সেটা বহুকাল আগেই উপলব্ধি করেন তিনি। পৃথিবীবিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনীপাঠকে তিনি বিশেষ গুরুত্ব দেন। বিদ্যাসাগর নিজেও এরকম বহু মনীষীর জীবনচরিত রচনা করেছিলেন। কেবল ইংল্যান্ড বা ব্রিটেন নয়, বিভিন্ন মানচিত্রের আলোকিত মানুষদের সম্পর্কে জানতে পারলে শিক্ষার্থীদের মনে যে আগ্রহ-অনুপ্রেরণার সৃষ্টি হবে সেটা উপলব্ধি করেই তিনি সুইডিশ লিনিয়াস, ফরাসি নিকোলাস দ্যুভাল, ডাচ হুগো গ্রটিয়াস – এঁদের জীবনী পাঠের প্রস্তাবনা দেন 888sport world cup rateে। বিদ্যাসাগর তাঁর পরিপার্শ্বই নয়, বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিষয়েও যে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল ছিলেন সেটা এক অর্থে বিস্ময়কর। তাঁর এসব নির্বাচন থেকে তাঁর জীবনবোধের পরিমিতি-সুরুচি এবং জ্ঞানপিপাসু মনের পরিচয় পাওয়া যায়। নিঃসন্দেহে বলতে পারা যায়, তখনকার যেসব কর্তাব্যক্তি বিদ্যাসাগরের 888sport world cup rateটি দেখেছেন নিশ্চয়ই তাঁর মানস-গঠন সম্পর্কে পেয়েছেন উচ্চ ধারণা। সেই ঔপনিবেশিক কালে বাঙালি মননের বিদ্যাসাগরীয় প্রতিনিধিত্ব তাঁর শিক্ষা-888sport world cup rateটির মাধ্যমে প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের মধ্যে রচনা করে সংযোগ। এটা সত্যি, কোম্পানি আমলের ১৮৪০-৫০-এর দশকের স্কুলগুলোর পাঠ্যসূচিতে সন্নিবেশিত ছিল পাশ্চাত্য জ্ঞানের নানা বিষয়। কিন্তু বিদ্যাসাগর ছিলেন সংস্কৃত কলেজের ছাত্র, যেখানে পাশ্চাত্য জ্ঞান ও পঠন-পাঠনের চাইতেও ভারতীয় বিদ্যার তথা সংস্কৃত 888sport live football-ধর্ম-শাস্ত্রের প্রাধান্য ছিল বেশি। ফোর্ট উইলিয়ম কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করার পর সম্পূর্ণ নিজের অধ্যবসায়ে তিনি ইংরেজি ভাষায় ব্যুৎপত্তি অর্জন করেছিলেন। তবে এটাও বলা যায়, আর্যভাষা সংস্কৃতের পারঙ্গমতা অন্য যে-কোনো (ইংরেজি, জার্মান, ফরাসি, ফারসি, লাতিন) ভাষাশিক্ষার পক্ষে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বিদ্যাসাগর চেয়েছিলেন দেশীয় এবং পাশ্চাত্য জ্ঞানের সমন্বয়ে একটি সামগ্রিক শিক্ষা। ১৮৪০-৫০ দশকের পাঠ্যসূচি লক্ষ করলে দেখতে পাবো (মহীবুল আজিজ, সরকারি ও মিশনারি শিক্ষা গ্রন্থে প্রদত্ত) সেখানে রয়েছে ওয়াট্সের দর্শন, গোল্ডস্মিথ, ক্রম্বি, স্টুয়ার্টের ইতিহাস, ইউক্লিড, শেক্সপিয়র, আর্নল্ড, স্টুয়ার্টের দর্শন, নিউটন, জনসন, এবারক্রম্বি, বেকন্, মিল্টন, হিউম, গিবন, হার্শেল এবং এরকম আরো সব পাশ্চাত্য রচনার সঙ্গে বিদ্যাসাগরের বেতালপঞ্চবিংশতি, হিন্দি, ফারসি, উর্দু ভাষার 888sport live football প্রভৃতি। বিদ্যাসাগর তাঁর 888sport world cup rateে যেসব মনীষীর জীবনচরিত পাঠের প্রস্তাবনা দেন সেসব লক্ষ করলেই বোঝা যায়, তিনি ছিলেন এক নব রেনেসাঁস-উদ্বেল মানব। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে সেরকমই রেনেসাঁসলোকে উদ্ভাসিত হতে পারে সেটাই চেয়েছিলেন তিনি। যেমন ধরা যাক কার্ল লিনিয়াস, নিকোলাস দ্যুভাল কিংবা হুগো গ্রটিয়াসের কথা। সুইডিশ 888sport apkী কার্ল লিনিয়াস (১৭০৭-৭৮) হলেন আধুনিক ট্যাক্সোনমির জনক। প্রাণিবিদ্যা, উদ্ভিদ888sport apk এবং চিকিৎসাশাস্ত্রে অবদান-রাখা লিনিয়াসকে বলা হয় উদ্ভিদ888sport apkের রাজপুত্র এবং আধুনিক পরিবেশ888sport apkের প্রবর্তক। তাঁর সম্পর্কে জ্যঁ জাক রুশো বলেছিলেন, ওঁর চেয়ে বড় 888sport apkী এই বিশ্বে নেই। লিনিয়াস সম্পর্কে গে্যঁটে বলেছিলেন, শেক্সপিয়র এবং স্পিনোজা ছাড়া আর যিনি তাঁকে প্রভাবিত করেছেন তিনি লিনিয়াস। লিনিয়াসের কথা বলতে গিয়ে অগাস্ট স্ট্রিন্ডবার্গ বলেছিলেন, লিনিয়াসের হওয়ার কথা ছিল কবি কিন্তু তিনি হয়ে গেছেন প্রকৃতি888sport apkী। ডাচ মানবতাবাদী, কূটনীতিক, আইনজীবী, ধর্মতাত্ত্বিক, বিচারক হুগো গ্রটিয়াস (১৫৮৩-১৬৪৫) তাঁর সৃষ্টিকর্মের দ্বারা প্রভাবিত করেছিলেন থমাস হব্স, জন লক, ইমানুয়েল কান্ট, জ্যঁ জাক রুশোর মতো প্রতিভাবানদের। ফ্রান্সে নির্বাসিত অবস্থায় গ্রটিয়াস দর্শন, রাজনৈতিক তত্ত্ব, আন্তর্জাতিক আইন ইত্যাদি বিষয়ে অনেক লেখালেখি করেন। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ দ্য ল’ অব ওয়ার অ্যান্ড পিস এবং দ্য ফ্রি সি’জ ধ্রুপদী গ্রন্থে পরিণত হয়েছে। ফরাসি পদার্থ888sport apkী এবং জ্যোতির্বিদ নিকোলাস ক্লদ দ্যুভাল ল্য রয় (১৭৩০-১৮১০) তাঁর ভাবনা ও তত্ত্ব দিয়ে আলোড়িত করেন 888sport apkবিশ্বকে। ১৮৫৬ সালে প্রকাশিত হয় বিদ্যাসাগর-রচিত চরিতাবলী, অর্থাৎ প্রথম শিক্ষাভাষ্য প্রকাশের দুই বছরের মাথায়। বিদ্যাসাগরের 888sport world cup rateটিকে সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছিল – পাঠ্যবিষয়, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো এবং শিক্ষকশ্রেণি – এই ত্রিমাত্রিক 888sport world cup rateটির সব প্রস্তাবনাই ছিল যুগোপযোগী। তাঁর প্রস্তাবিত  হুগো গ্রটিয়াস সম্পর্কে চরিতাবলী থেকে বিদ্যাসাগরের রচনা লক্ষ করলে তাঁর মানসবৈশিষ্ট্য এবং পাঠ্যসূচিতে তাঁর প্রস্তাবনার যুক্তি খুঁজে পাওয়া যাবে –

গ্রোশ্যস অত্যন্ত কুৎসিত সময়ে ভূমণ্ডলে আসিয়াছিলেন। ঐ কালে জনসমাজ ধর্ম ও দণ্ডনীতি বিষয়ক বিষম বিসংবাদ দ্বারা সাতিশয় বিসঙ্কুল ছিল। মনুষ্যমাত্রেই ধর্ম সংক্রান্ত বিবাদে উন্মত্ত এবং ভিন্ন ভিন্ন পক্ষের ঔদ্ধত্য ও কলহপ্রিয়তা দ্বারা সৌজন্য ও দয়া দাক্ষিণ্য একান্ত বিলুপ্ত হইয়াছিল।

ফোর্ট উইলিয়ম এবং সংস্কৃত কলেজের সাংগঠনিক-পরিচালনগত অভিজ্ঞতায় পরিপুষ্ট বিদ্যাসাগরের পক্ষে দেশের শিক্ষানিয়োজিত শিক্ষকদের এবং স্কুলের সমস্যা-সীমাবদ্ধতা প্রভৃতির স্বরূপ অনুধাবন করাটা সহজতর হয়েছিল। তাঁর 888sport world cup rateে থাকে সেই অভিজ্ঞতার আলোকসম্পাত। স্কুলে শিক্ষক888sport free bet, শিক্ষকদের মাসিক বেতন, স্কুলসমূহের পরিদর্শক, শিক্ষক-প্রশিক্ষণ, এমনকি পরিদর্শকদের 888sport slot gameভাতা – এসব বিষয় বিদ্যাসাগরের বাস্তব শিক্ষা-অভিজ্ঞতাসঞ্জাত। আমরা দেখতে পাই, ১৮২৪ সালে চার্লস লুসিংটন এবং ১৮৩৫-এ অ্যাডাম এবং ১৮৫৩ সালে সেটন-কার – এঁদের সকলেই দেশীয় শিক্ষকদের শীর্ণ উপস্থিতির দিকটিতে আলো প্রক্ষেপণের চেষ্টা চালিয়েছিলেন। শিক্ষকদের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ শ্রেণিকে নিম্ন-হীন অবস্থানে রেখে যে সুস্থ শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব নয় সে-বিষয়ে ব্রিটিশ সিভিলিয়ান এবং কর্তাব্যক্তিরা সচেতন ছিলেন। কাজেই বিদ্যাসাগর তাঁর 888sport world cup rateে সাধারণ শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক, পরিদর্শক, প্রধান পরিদর্শক প্রত্যেকের আর্থিক অবস্থা সম্পর্কেও সুনির্দিষ্ট মত ও পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। স্কুল বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনার ব্যাপারেও তাঁর সচেতন কুশলতা দৃষ্টি এড়ানোর নয়। হুগলি, নদীয়া, বর্ধমান, মেদিনীপুর প্রভৃতি চারটি কেন্দ্রীয় অঞ্চলের শহর/ গ্রামে নতুন স্কুল স্থাপনার ব্যাপারে তাঁর প্রস্তাবটি (আট-সংখ্যক) নিঃসন্দেহে লক্ষ করার মতো। দেশীয় শিক্ষার স্কুলগুলোর বিষয়ে তিনি বলছেন – ‘সেগুলো শহরে এবং গ্রামে হতে পারে, তবে কাছাকাছি ইংরেজি স্কুল এবং কলেজ আছে এমন জায়গায় নয়। ইংরেজি স্কুল-কলেজের কাছাকাছি হওয়াটা দেশীয় শিক্ষার পক্ষে অনুকূল হবে না।’ বিদ্যাসাগর ইংরেজি শিক্ষার বিরুদ্ধে কখনোই ছিলেন না। একই সঙ্গে তিনি বৃহত্তর জনগোষ্ঠী তথা সাধারণ মানুষের জন্যে দেশীয় শিক্ষার গুরুত্ব বিষয়েও সচেতন ছিলেন। আসলে তিনি চেয়েছেন ইংরেজি এবং দেশীয় ভাষায় শিক্ষা দুটোই সমান্তরালভাবে বিকশিত হোক। দেশীয় ছাত্রদের মেধা-মনন-সক্ষমতা সম্পর্কে তাঁর মনে হীনমন্যতা ছিল না। তিনি চেয়েছেন অর্থনৈতিকভাবে নিম্ন অবস্থানে থাকা ছাত্ররা  প্রণোদনা পেয়ে শিক্ষাক্ষেত্রে সাফল্য লাভ করুক। বস্তুত ঠাকুরদাস-সন্তান বিদ্যাসাগর নিজের জীবন দিয়েই দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের সমস্যা-সম্ভাবনা উপলব্ধি করেন। এ-প্রসঙ্গে বিদ্যাসাগরের নিজের লেখা আত্মজীবনীই সর্বশ্রেষ্ঠ সাক্ষ্য যেটির পাতায়-পাতায় ব্যক্ত হয়েছে তাঁর জীবনের সংগ্রামময়তার কাহিনি। মাত্র একটি অনুচ্ছেদ থেকেই পাঠ করা যায় জীবনাভিজ্ঞতার বর্ণনক্ষম বিদ্যাসাগরের সেই 888sport alternative linkোপম অপিচ বাস্তব বৃত্তান্ত –

ঠাকুরদাসের সামান্যরূপ এককানি পিতলের থালা ও একটি ছোট ঘটি ছিল। থালাখানিতে ভাত ও ঘটিটিতে জল খাইতেন।

তিনি বিবেচনা করিলেন, এক পয়সার শালপাতা কিনিয়া রাখিলে ১০/১২ দিন ভাত খাওয়া চলিবেক; সুতরাং থালা না থাকিলে, কাজ আটকাইবেক না; অতএব, থালাখানি বেচিয়া ফেলি; বেচিয়া যাহা পাইব, তাহা আপনার হাতে রাখিব। যে দিন, দিনের বেলায় আহারের যোগাড় না হইবেক, এক পয়সার কিছু কিনিয়া খাইব। এই স্থির করিয়া, তিনি সেই থালাখানি, নূতন বাজারে, কাঁসারিদের দোকানে বেচিতে গেলেন। কাঁসারিরা বলিল, আমরা অজানিত লোকের নিকট হইতে পুরান বাসন কিনিতে পারিব না। পুরান বাসন কিনিয়া, কখনও কখনও বড় ফেসাতে পড়িতে হয়। অতএব, আমরা তোমার থালা লইব না। এইরূপে কোনও দোকানদারই সেই থালা কিনিতে সম্মত হইল না। ঠাকুরদাস বড় আশা করিয়া থালা বেচিতে গিয়াছিলেন; এতক্ষণ, সে আশায় বিসর্জন দিয়া, বিষণ্ন মনে বাসায় ফিরিয়া আসিলেন।

এছাড়াও পিতৃদেব ঠাকুরদাসের ক্ষুধার্ত দিবসের কষ্ট এবং অজানা কোনো এক 888sport promo codeর মাতৃসুলভ পরিষেবার বিবরণ এমনভাবে দিয়েছেন বিদ্যাসাগর যে সেটি তাঁর সারাজীবনের সঞ্চয় বলেই প্রতিভাত হয়। সেই সঞ্চয়ে ঝিকিয়ে ওঠে তাঁর ভবিতব্যের কোনো আভাসও যখন বিদ্যাসাগর লেখেন – ‘পিতৃদেবের মুখে এই হৃদয়বিদারণ উপাখ্যান শুনিয়া, আমার অন্তঃকরণে যেমন দুঃসহ দুঃখনল প্রজ্বলিত হইয়াছিল, স্ত্রীজাতির উপর তেমনই প্রগাঢ় ভক্তি জন্মিয়াছিল।’ নিজের শিক্ষকতার এবং নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে বিদ্যাসাগর বাংলার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বাস্তবতা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন।

বিদ্যাসাগর-প্রদত্ত শিক্ষা-888sport world cup rateের দ্বাদশ এবং উনবিংশ প্রস্তাবদ্বয় বিশেষভাবে দৃষ্টি-আকর্ষক। 888sport world cup rateটি রচনাকালে বিদ্যাসাগর স্বয়ং সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ। ১৮৫১ সালে অধ্যক্ষ পদে যোগ দিয়েই তিনি পূর্বেকার নিয়ম পরিবর্তন করে কায়স্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরও কলেজে প্রবেশাধিকারের সুযোগ করে দেন। তাছাড়া পূর্বে কলেজে সাপ্তাহিক ছুটি ছিল ধর্মীয় রীতি-অনুযায়ী অষ্টমী ও প্রতিপদ-দিবসে। বিদ্যাসাগর সেই নিয়মের পরিবর্তে সাপ্তাহিক ছুটি করেন রোববার। এখন, প্রশ্ন ওঠানো যায়, নিজে সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ হয়ে কী করে তিনি সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষের নামই ‘হেড সুপারিনটেন্ডেন্ট’হিসেবে প্রস্তাব করেন। এ-প্রসঙ্গে বলা যায়, প্রথমত, বিদ্যাসাগর আসলে নিজের নাম নয়, প্রস্তাব করেন অধ্যক্ষের নাম (‘পদাধিকারবলে’)। সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে তিনি চিরকাল অধিষ্ঠিত না-ও থাকতে পারেন। দ্বিতীয়ত, দেশীয় শিক্ষাপ্রসার এবং প্রাতিষ্ঠানিকতা নির্মাণের মতো দুরূহ কর্ম-কর্তব্যকে এড়িয়ে না গিয়ে বরং স্বকাঁধে বহন করার দার্ঢ্য বিদ্যাসাগরের ছিল বলেই তিনি সেটি নিজের কাঁধে নিতে চেয়েছিলেন। বস্তুত এর সত্যতার প্রমাণ আমরা পাবো, ১৮৫৪ সালে সরকারি শিক্ষাভাষ্য প্রকাশিত হওয়ার পরেই। ১৮৫৪ সালের জুন মাসে শিক্ষাভাষ্য প্রকাশ পায় এবং ৩১ আগস্ট স্কুল-পরিদর্শন আনুষ্ঠানিকভাবে সূচিত হয়। ১৮৫৫ সালে তাঁকে মাসিক ২০০ রুপি বেতনে (বিদ্যাসাগরের প্রস্তাব ছিল মাসিক ১৫০ রুপি) দক্ষিণবঙ্গের স্কুল-ইন্সপেক্টর পদে নিয়োগ করা হয়। সরকার তাঁকে যোগ্য বিবেচনা করেই পদাসীন করেছিল। সরকারের সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল তার প্রমাণ পেতেও বিলম্ব হয় না। কেবল স্কুল পরিদর্শনের মধ্যেই নিজের দায়িত্ব সীমাবদ্ধ রাখেননি তিনি। সরকারের পাশাপাশি নিজের সামর্থ্য উজাড় করে দেন দেশের ও জাতির অবস্থার উন্নতির জন্যে। শিক্ষার মাধ্যমে যতটা উন্নতি করা সম্ভব তার সবটুকুই করেছিলেন বিদ্যাসাগর। শিক্ষক প্রশিক্ষণের জন্যে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন। সংস্কৃত কলেজে তিনি সনাতন ধর্মের উচ্চ-নিম্ন সকলের জন্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন। আর শিক্ষাভাষ্যের পর নিজেই তিনি স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে লাগলেন একের পর এক এবং ব্যবস্থা করলেন 888sport promo codeশিক্ষারও। ১৮৫৫ সালের আগস্ট থেকে চার মাসের মধ্যে তিনি ১৪টি মডেল  স্কুল স্থাপন করেন। ১৮৫৭ সালে তিনি স্থাপন করেন আটটি স্কুল। এভাবে ১৮৫৮তে ১৪টি এবং তাঁর স্কুল-প্রতিষ্ঠার অধ্যবসায় থাকে অব্যাহত। ১৮৫৮ সালে নদীয়া অঞ্চলে স্থাপন করেন একটি মেয়েদের স্কুল। ১৮৫৯ সালে নদীয়া অঞ্চলে প্রতিষ্ঠা করেন ইংরেজি-বাংলা স্কুল। ১৮৭৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেন মেট্রোপলিটান কলেজ। তিনি যে-স্কুলগুলো স্থাপন করেন সেখানে প্রায় দেড় হাজার ছাত্রী লেখাপড়া করার সুযোগ পায়। শুধু তা-ই নয়, দরিদ্র-নিম্নবিত্ত লোকেদের সন্তানদের সুবিধার্থে তিনি স্কুলে-কলেজে শিক্ষাব্যয় কমিয়ে দেন। স্থাপিত স্কুলগুলোতে শিক্ষক-প্রধান শিক্ষক নিয়োগে তাঁর ছিল বিশেষ প্রযত্ন। নিজের হাতে স্থাপিত স্কুলের প্রধান হিসেবে তিনি তাঁর বিশিষ্ট বন্ধু যুগের চাইতেও অধিক অগ্রসর অক্ষয়কুমার দত্তকে নির্বাচন করেন। অনেক স্কুলের দরিদ্র ছাত্রদের পাঠ্যপুস্তক, আহার, বস্ত্র ও চিকিৎসার ব্যবস্থাও তিনি করেছিলেন। তাঁর 888sport world cup rateটির উনবিংশ তথা সর্বশেষ প্রস্তাবে তিনি দেশের শহর-গ্রামের অবস্থাপন্নদের স্কুল প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। নিজে স্কুল স্থাপনের নজির সৃষ্টি করে বিদ্যাসাগর সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিকে শিক্ষাবিস্তারের সপক্ষে আনার প্রচেষ্টা চালান।

১৮৫৪ সালের ব্রিটিশ সরকারি শিক্ষাভাষ্য  (যেটি উড্’স্ ডেসপ্যাচ নামেও খ্যাত) এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের শিক্ষা-888sport world cup rateটি পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত এবং বাংলার শিক্ষার ইতিহাসে এটি একটি 888sport app download for androidীয় অধ্যায়। শিক্ষাভাষ্যে সর্বমোট ১০টি মূল প্রস্তাবনা স্থান পায়। ভাষ্যের সারমর্ম হলো : ইংরেজি শিক্ষা হবে সরকারি চাকরি লাভের একমাত্র উপায়। (১৮৪৪ সালে এ-বিষয়ে প্রথম প্রত্যক্ষ ঘোষণাটি দেন লর্ড হার্ডিঞ্জ।) দেশের প্রত্যেক প্রদেশে স্থাপন করা হবে শিক্ষা বিভাগ। ইংল্যান্ডের লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকরণে মুম্বাই, কলকাতা এবং মাদ্রাজে স্থাপন করা হবে বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিটি জেলায় অন্তত একটি করে সরকারি স্কুল (যেটি জেলা-স্কুল রূপেও পরবর্তীকালে পরিচিতি পায়।) প্রতিষ্ঠা করা হবে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করা হবে সরকার-অনুমোদিত প্রাইভেট স্কুল। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রসারে গ্র্যান্ট-ইন-এইড বা বিশেষ শিক্ষা অনুদানের আওতায় আসবে স্কুলগুলো। দেশীয় লোকেদের মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা হবে। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পদ্ধতিগত শিক্ষা অনুসৃত হবে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় 888sport promo codeশিক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। প্রাথমিক স্কুলে স্থানীয়দের মাতৃভাষা এবং ক্রমান্বয়ে ইংরেজি ও বাংলা এবং উচ্চস্তরে ইংরেজি ভাষা হবে শিক্ষার অবলম্বন। শিক্ষকদের যথাযথ পদোন্নতির ব্যবস্থা করা হবে এবং শিক্ষকদের জন্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। বস্তুত শিক্ষাভাষ্য প্রকাশের পর তিন বছরের মধ্যেই কলকাতা, মুম্বাই এবং মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। আরো পরে প্রতিষ্ঠিত হয়, ১৮৮২ সালে পাঞ্জাব এবং ১৮৮৭ সালে এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিটি প্রদেশে স্থাপন করা হয় শিক্ষা বিভাগ এবং ইংরেজি শিক্ষার ব্যাপক-ব্যাপকতর বিস্তার ঘটতে থাকে বাংলায় এবং ভারতবর্ষে। বিদ্যাসাগরের প্রস্তাবটি পাশাপাশি রেখে বিবেচনা করলে এমন ধারণা হওয়াটা স্বাভাবিক, শিক্ষাভাষ্য প্রণেতারা তাঁর 888sport world cup rateের নিরিখেই সরকারের প্রথম শিক্ষাভাষ্যটি প্রণয়ন করেছিলেন। ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষে দেশ ও জাতির জন্যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মতো একটি বিপুলায়োজন সম্ভাবনাকে বাস্তবসম্মতভাবে কাজে লাগিয়ে উন্নতির হাতিয়ারে পরিণত করার সচেতনতা বিদ্যাসাগরের 888sport world cup rateটির অক্ষরে-অক্ষরে প্রতিফলিত। বলা যায়, পরবর্তীকালে ১৮৫৮ সালে কোম্পানির কাছ থেকে ক্ষমতা ব্রিটিশ সরকারের নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার পর থেকে ১৮৫৪-র শিক্ষাভাষ্যই বাংলার এবং ভারতের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার আঙ্গিক হয়ে দাঁড়ায়।

১৮৫৪-র শিক্ষাভাষ্যের প্রবর্তনার পরিণাম এক অর্থে মিশনারিদের কোণঠাসা হয়ে যাওয়া। কোম্পানির যুগে মিশনারিরা যথেষ্ট স্বাধীনতাসহকারে শিক্ষা-তৎপরতা চালায়। শিক্ষাপ্রচার এবং বাইবেলাশ্রিত প্রচারণা চালায় তারা সমান্তরালে। শিক্ষাভাষ্যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাক্ষেত্রে ধর্মীয় নিরপেক্ষতা নিশ্চিত হলে মিশনারিদের জন্যে সেটি একটি গাত্রদাহের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর ১৮৫৮-র সনদ অ-নবায়নের ফলে মিশনারিরা চালকের আসন থেকে সরে পড়তে বাধ্য হয়। মিশনারিরা নানাভাবে সরকারি শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতে থাকে। একে ধর্মবিরোধী এবং যিশুশূন্য বলে তারা ব্যঙ্গও করে। ইংল্যান্ডের মাটিতে সভা-সমিতি করে তাদের পক্ষে জনমত সৃষ্টির চেষ্টাও অব্যাহত রাখে তারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শিক্ষাভাষ্য বহালই থেকে যায়। একদিক থেকে বলা যায়, প্রথম ব্রিটিশ শিক্ষাভাষ্যের ফলে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, অক্ষয়কুমার দত্তদের মতো ব্যক্তিদেরই জয় হয়। ব্রিটিশ শিক্ষানীতি যে রাতারাতি সবকিছু বদলে দিয়ে বৈপ্লবিক কোনো ফল সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসত তা হয়তো নয়; কিন্তু তখনকার জন্যে সেটি একটি বড় অবলম্বন হয়ে দাঁড়াল স্বদেশচেতনাজাগর মানুষদের জন্যে। এখানে আরেকটা কথা বলা প্রয়োজন। ব্রিটিশরা যে খুব বেশি রকমের উদারতা দিয়ে বা ভারতীয়দের নিঃস্বার্থ কল্যাণকামিতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৮৫৪-ও শিক্ষাভাষ্যের মতো একটি উদার-ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতির সূচনা করেছিল তা কিন্তু নয়। আসলে ব্রিটিশরা অনেকটা বাধ্য হয়েই তা করেছিল। অনেক হিসাব-নিকাশ কষেই তারা তেমন পদক্ষেপে এগোয়। কোম্পানি আমলে দেশীয়দের দলে-দলে ধর্মান্তরিত করার মানসে ব্যয় করা হয় প্রভূত অর্থ। ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানীয় ভাষায় এক বাইবেল 888sport app download apk latest version করার পেছনেই তারা ঢালে বিপুল পরিমাণ অর্থ। ব্রিটিশ ঐতিহাসিকগণই পরে পর্যালোচনা করে দেখান, মিশনারিদের প্রত্যাশা এবং বাস্তবের মধ্যে ছিল বিপুল প্রভেদ। কোম্পানি আমলে ভারতবর্ষের প্রথম মুসলমান আবদুল মসিহ্ ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করলে সেই সংবাদের প্রচারণার জন্যেই মিশনারিরা খরচ করে অনেক অর্থ। ওই পর্যন্তই। তাছাড়া অন্য ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য একই কথা। ভারতীয়দের ধর্মান্তরে মিশনারিদের আশানুরূপ সাফল্য না পাওয়ার কারণ হিসেবে ব্রিটিশদের কেউ-কেউ মনে করেন, যুগ-যুগ ধরে পালন করে যাওয়া পূর্বপুরুষদের ধর্ম খুব বেশি বাধ্য না হলে ভারতীয়দের কেউ পরিত্যাগে উৎসাহী হয় না। চরম দারিদ্র্যের কারণে অবশ্য অনেকেই ধর্মান্তরিত হয়েছিল। তাছাড়া মুঘল যুগে আওরঙ্গজেব এবং আরো কয়েকজন শাসকের কথা বলা যায় যাঁদের সময়ে ধর্মান্তরিত করার জন্যে জোর খাটানো হয়েছিল। মিশনারিরা জোর খাটায়নি বলে তারা যতটা প্রত্যাশা করে ততটা ফললাভ হয় না। প্রথম শিক্ষাভাষ্যের ছায়ায় মোটামুটিভাবে তিন দশককাল অতিবাহিত হয়ে যায়। এই তিন দশকে বিদ্যাসাগরের জীবনপর্ব পরিপূর্ণ হয়ে যেতে থাকে কর্মের বিপুলতায় এবং ঘটনাধারার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায়। ১৮৫৪-তে তিনি ছিলেন চৌত্রিশ বছর বয়সী এক কর্মযোগী পুরুষ এবং ১৮৮৩-তে তিনি তেষট্টি বছর বয়সী অধিকতর কর্মযোগী পুরুষ। তাঁর কাজের বিচিত্রতা ও জটিলতা এবং সবকিছুর মধ্যে তাঁর শিক্ষা-তৎপরতা বিদ্যাসাগরকে এক প্রবল ঘূর্ণায়মান ঝঞ্ঝার মধ্যে নিয়ে যায়; কিন্তু সমস্ত ঝড় সামলে তিনি এগোন। শিক্ষাভাষ্যের পরের বছর স্কুল পরিদর্শনের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি স্কুল স্থাপনের কাজ করতে হয় তাঁকে। এদিকে বিধবা বিবাহ আইনের জন্যে সরকারের কাছে আবেদনপত্র দাখিল করার জন্যে এক হাজার ব্যক্তির স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে থাকেন। বহুবিবাহ নিরোধের জন্যে আবেদনপত্র দেন সরকারের নিকটে। প্রকাশিত হয় তাঁর বিধবাবিবাহ প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড। এভাবে চলতেই থাকে তাঁর স্কুল স্থাপনার কাজ, বিধবা বিবাহ সংক্রান্ত তৎপরতা এবং তাঁর নিজের শিক্ষকতা। এক পর্যায়ে তাঁকে সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষের পদ ছেড়ে দিতে হয়। যশোর, নদীয়া এবং পাবনায় যখন নীলবিদ্রোহ চলছে তখন বিদ্যাসাগরের স্কুল প্রতিষ্ঠা হচ্ছে মুর্শিদাবাদে। তিনি সোমপ্রকাশ পত্রিকা বের করছেন, ‘তত্ত্ববোধিনী সভা’র  দায়িত্ব পালন করছেন এবং প্রকাশ করছেন নীলদর্পণ নাটকের ইংরেজি 888sport app download apk latest version এবং বন্ধু মাইকেলের মেঘনাদবধ কাব্য। আবার, তখনই, মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবনী থেকে জানা যায়, ইংল্যান্ড-প্রবাসী মাইকেলের প্রবল অর্থকষ্ট সামলাতে কবির অনুরোধে বিদ্যাসাগরকে রাজা যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর এবং অন্যদের সঙ্গে নিয়ে অর্থ জোগাড়ের কাজে লেগে যেতে হয়। সেই সময়টাতেই চলছে আদালত-মামলা, নীলদর্পণ নাটক 888sport app download apk latest versionের জন্যে পাদ্রি জেমস লংয়ের জরিমানা হচ্ছে। সব সামাল দিয়ে বিদ্যাসাগর দায়িত্ব নিচ্ছেন কলকাতা ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের এবং হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকা পরিচালনার। ১৮৬৬ সালে বিদ্যাসাগর হিন্দু মেলা প্রতিষ্ঠা করেন এবং সে-বছরেই শিকার হন মারাত্মক অসুস্থতার। আরোগ্য লাভ করলেও তাঁর শারীরিক সুস্থতা হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়ে। তারপরেও তাঁর কর্মধারা স্রোতস্বর গতিতে এগোয়। ১৮৮০ সালে বিদ্যাসাগর ব্রিটিশ সরকারের সি.আই.ই. খেতাব পেলে তাঁর শিক্ষা-কর্মকাণ্ড এবং তাঁর সামগ্রিক সামাজিক অঙ্গীকারবদ্ধ কার্যাবলির এক ধরনের স্বীকৃতি আমরা দেখতে পাই। এভাবেই উপস্থিত হয় দ্বিতীয় শিক্ষাভাষ্যের কাল।

১৮৮২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ভারত সরকার একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করে। কমিশনটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ১৮৫৪ সালের ১৯ জুলাই প্রকাশিত প্রথম শিক্ষাভাষ্যকে ভারতীয় শিক্ষানীতির মূল হিসেবে বিবেচনা করে বিগত ত্রিশ বছরের শিক্ষাক্ষেত্রের সামগ্রিক অবস্থা পর্যালোচনা করা এবং তার আলোকে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করা। বস্তুত ১৮৮৩ সালে প্রকাশিত দ্বিতীয় শিক্ষাভাষ্যের পূর্বেকার এই শিক্ষা কমিশন গঠন এবং কমিশনের শিক্ষা-পর্যালোচনা নিঃসন্দেহে বাংলার এবং বৃহত্তর অর্থে ভারতীয় শিক্ষার জন্যে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ২১ জন সদস্য এবং একজন সচিবকে নিয়ে গঠিত শিক্ষা কমিশনের সভাপতি ছিলেন ভাইসরয়ের লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সদস্য অ্যানালস্ অ্যান্ড অ্যান্টিকুইটিজ অব বেঙ্গল-খ্যাত ডব্লিউ ডব্লিউ হান্টার এবং সচিব মহীশুর এবং কুর্গের পাবলিক ইন্সট্রাকশনের পরিচালক বি.এল. রাইস। বার্মা (বর্তমানে মিয়ানমার) এবং আসাম ব্যতিরেকে প্রতিটি প্রেসিডেন্সি এবং প্রদেশ থেকে সদস্য নির্বাচন করা হয়। কমিশনের সদস্য ছিলেন খান বাহাদুর সৈয়দ আহমদ (পরে তাঁর পরিবর্তে তাঁর পুত্র সায়ীদ মাহমুদকে সদস্য নির্বাচিত করা হয়।), ভারত সরকারের অর্থসচিব ডি.এম. বার্বুর, কলকাতার চার্চ মিশনারি ডিভিনিটি কলেজের অধ্যক্ষ রেভারেন্ড ডব্লিউ আর ব্ল্যাকেট, ব্যারিস্টার আনন্দ মোহন বসু, বাংলা অঞ্চলের পাবলিক ইন্সট্রাকশনের পরিচালক এ. ডব্লিউ ক্রফ্ট, উত্তর-পশ্চিম প্রদেশের আগ্রা কলেজের অধ্যক্ষ কে. ডেইটন, মাদ্রাজের স্কুলসমূহের ইন্সপেক্টর জে. টি. ফাওলার, বেরার-এর কমিশনার এ.পি. হাওয়েল, মুম্বাইয়ের শিক্ষা-পরিদর্শক এইচ.পি. জ্যাকব, মুম্বাই সাতারার প্রথম অ্যাসিস্ট্যান্ট কালেক্টর ডব্লিউ লি-ওয়ার্নার, মাদ্রাজ ক্রিশ্চিয়ান কলেজের অধ্যক্ষ ডব্লিউ মিলার, মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি কলেজের গণিতের অধ্যাপক পি. রঙ্গনাদা মুদালিয়ার, বাংলা অঞ্চলের স্কুলসমূহের পরিদর্শক ভূদেব মুখোপাধায়, পাঞ্জাব অঞ্চলের স্কুলসমূহের পরিদর্শক সি. পিয়ার্সন, ভাইসরয়ের লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সদস্য মহারাজা স্যার যতীন্দ্র মোহন ঠাকুর, মুম্বাইয়ের ব্যারিস্টার কাশীনাথ ত্রিম্বুক তেলং, উত্তর-পশ্চিম প্রদেশের জৌনপুরের কালেক্টর জি.ই. ওয়ার্ড, নেগাপটমের (পরে ত্রিচিনোপলি) সেন্ট জোসেফ কলেজের রেক্টর রেভারেন্ড এ. জিন, মধ্যপ্রদেশের শিক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত ইন্সপেক্টর জেনারেল সি.এ.আর ব্রাউনিং এবং পাঞ্জাবের হাজি গোলাম হাসান।

কমিশন দেশের সামগ্রিক শিক্ষাকে বিভিন্ন পর্যায়ে বিন্যস্ত করে বিভিন্ন অঞ্চল সম্পর্কে পৃথক-পৃথক মূল্যায়ন সম্পন্ন করে। কমিশনকে বলা হয়েছিল প্রাথমিক শিক্ষা, প্রাইভেট এবং গ্র্যান্ট-ইন-এইড ধারার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্কুলগুলোর দেশীয় ব্যবস্থাপনায় ন্যস্তকরণ, স্কুলের বেতন-বৃত্তি, ঐতিহ্যিক দেশীয় পাঠশালা, মাধ্যমিক শিক্ষা, 888sport promo codeশিক্ষা-পরিদর্শন প্রভৃতি। ১৮৮২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি সভায় মিলিত হয় শিক্ষা কমিশন। এরপর আবার ১৮৮২ সালের ডিসেম্বর মাসের ৫ তারিখে কলকাতায় সভা করে কমিশন। পরবর্তীকালে আরো কয়েক মাস জুড়ে চলে কমিশনের সভা। সবশেষে ১৮৮৩ সালের ১৬ মার্চ কমিশন ২২২টি সুপারিশ গ্রহণ করে যেগুলোর মধ্যে ১৮০টি সুপারিশ ছিল সর্বসম্মত এবং বাকি ৪২টি 888sport free betগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে অনুমোদিত হয়। শিক্ষা কমিশনের বিপুল এ-কর্মধারার পরিণামে বহু বিষয় বেরিয়ে আসে। ভারতবর্ষে শিক্ষা যে ততদিনে গভীর ও ব্যাপ্ত শেকড় ছড়িয়ে দিয়েছে সেটা বোঝা যায় কমিশনের প্রচুরসংখ্যক সুপারিশ থেকে। তবে ছয়টি মূল বিষয় দাঁড়ায় শেষ পর্যন্ত – দেশীয় পাঠশালা এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক (কলেজিয়েট) শিক্ষা, শিক্ষা বিভাগের অভ্যন্তরীণ প্রশাসন যার মধ্যে পরিদর্শন এবং পরীক্ষাও অন্তর্ভুক্ত, শিক্ষা বিভাগের বহিস্থ যোগসূত্রাদি যার মধ্যে থাকবে গ্র্যান্ট-ইন-এইড পদ্ধতি এবং ব্যবস্থাপনার জন্যে স্কুলসমূহকে দেশীয় লোকেদের নিকটে ন্যস্ত করা, বিশেষ দৃষ্টির দাবিদার শিক্ষার্থীদের শিক্ষা নিশ্চিত করা, শিক্ষা সংক্রান্ত আইনকানুন। শিক্ষা কমিশন সরকারের নিকটে যে-888sport world cup rate পেশ করে সেটি প্রথম অধ্যায়ের ভূমিকাসহ সর্বমোট তেরোটি অধ্যায়বিশিষ্ট অর্থাৎ বারোটি মূল অধ্যায়ে বিন্যস্ত সমগ্র ভারতবর্ষের শিক্ষার বিষয়টি। ১৮৫৪ সালের শিক্ষাভাষ্যের পরবর্তী ত্রিশ বছরের এটি একটি সালতামামিও বলা চলে। এটির ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয় ভবিষ্যতের শিক্ষা-তৎপরতা এবং ব্রিটিশ সরকারের ১৮৮৩ সালের দ্বিতীয় শিক্ষাভাষ্য।  ১৮৮২ সালে গঠিত ব্রিটিশ সরকারের শিক্ষা কমিশনের 888sport world cup rateটির অধ্যায়-বিভাজন লক্ষ করা যাক – (ক) দ্বিতীয় অধ্যায় – ভারতবর্ষে শিক্ষার ঐতিহাসিক পর্যালোচনা। (খ) তৃতীয় অধ্যায় – ঐতিহ্যগত শিক্ষা। (গ) চতুর্থ অধ্যায় – প্রাথমিক শিক্ষা। (ঘ) পঞ্চম অধ্যায় – মাধ্যমিক শিক্ষা। (ঙ) ষষ্ঠ অধ্যায় – কলেজিয়েট শিক্ষা। (চ) সপ্তম অধ্যায় – শিক্ষা বিভাগের অভ্যন্তরীণ প্রশাসন : নিয়ন্ত্রণ, পরিদর্শন, পরীক্ষা, পাঠ্যপুস্তক। (ছ) অষ্টম অধ্যায় – শিক্ষা বিভাগের ব্যক্তি ও জনসম্পৃক্ততা : গ্র্যান্ট-ইন-এইড, প্রাইভেট। (জ) নবম অধ্যায় – বিশেষ দৃষ্টির দাবিদার শ্রেণির শিক্ষা : জমিদার ও অভিজাত সম্প্রদায়, মুসলমান জনগোষ্ঠী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি, নিম্নগোত্রীয় জনগণ এবং দরিদ্র। (ঝ) দশম অধ্যায় – 888sport promo codeশিক্ষা। (ঞ) একাদশ অধ্যায় – শিক্ষা সংক্রান্ত আইনকানুন। (ট) দ্বাদশ অধ্যায় – আর্থিক সারমর্ম। (ঠ) ত্রয়োদশ অধ্যায় – কমিশনের সুপারিশসমূহ। শিক্ষা কমিশন একই সঙ্গে মাদ্রাজ, মুম্বাই, বাংলা, উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ ও অযোধ্যা, পাঞ্জাব প্রভৃতি অঞ্চল থেকে নির্বাচিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে শিক্ষা সম্পর্কিত লিখিত প্রশ্নাবলির মতামত-888sport world cup rate গ্রহণ করে। বাংলা অঞ্চল থেকে সর্বমোট ৩১ জন ব্যক্তির লিখিত মতামত নেওয়া হয়। এঁরা হলেন – ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট খান বাহাদুর নবাব আবদুল লতিফ, ব্যারিস্টার আমীর আলী, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট খান বাহাদুর মৌলভী সৈয়দ আমীর হোসেন, লন্ডন মিশনারি সোসাইটির রেভারেন্ড জে.পি. অ্যাশটন, হুগলির ফ্রি চার্চ অব স্কটল্যান্ডের রেভারেন্ড ড. কে.এম. ব্যানার্জি (ইনি ইয়ং বেঙ্গল-খ্যাত রেভারেন্ড কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়) এবং রেভারেন্ড জে.ডি. ভট্টাচার্য, কলকাতা হেয়ার স্কুলের প্রধান শিক্ষক ভোলানাথ পাল, কলকাতা হিন্দু স্কুলের প্রধান শিক্ষক  চণ্ডীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা-নিবাসী মিসেস দ্য নিসেভিয়ে, কলকাতানিবাসী দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায় (ইনি প্রথম ভারতীয় এবং দক্ষিণ এশীয় মহিলা ডাক্তার কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের (১৮৬১-১৯২৩) স্বামী দ্বারকানাথ, ১৮৪৪-৯৮), ব্যারাকপুর চার্চ অব ইংল্যান্ড জেনানা মিশনের সুপারিনটেন্ডেন্ট মিস গুড, পাটনার জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেট জি.এ. গ্রিয়ার্সন, কলকাতা চার্চ অব স্কটল্যান্ড অ্যাসেম্বলিজ অ্যাসোসিয়েশনের অধ্যক্ষ রেভারেন্ড হ্যাস্টি, কলকাতানিবাসী মিস এ.এম. হোড়, ক্রিশ্চিয়ান ভার্নাকুলার এডুকেশন সোসাইটির রেভারেন্ড ডব্লিউ.এ. হবস, কলকাতা আমেরিকান মিশনের সুপারিনটেন্ডেন্ট মিস হুক, কলকাতা লন্ডন মিশনারি সোসাইটির সুপারিনটেন্ডেন্ট রেভারেন্ড ডব্লিউ. জনসন, রায় বাহাদুর ক্রিস্টদাস পাল সি.আই.ই., কলকাতা সেন্ট জেভিয়ের কলেজের রেভারেন্ড ই. লাফোঁ, বর্ধমানের ম্যাজিস্ট্রেট ডব্লিউ.আর.লারমিনি, কলকাতা ফ্রি চার্চ অব স্কটল্যান্ডের রেভারেন্ড কে.এস. ম্যাকডোনাল্ড এবং মিসেস কে.এস. ম্যাকডোনাল্ড, যশোর-নিবাসী রেভারেন্ড ফাদার ম্যারিয়েট্টি, রায় বাহাদুর ড. রাজেন্দ্রলাল মিত্র, লন্ডন মিশনারি সোসাইটির রেভারেন্ড জে.ই. পেইন, আসামের চেরাপুঞ্জি গভর্নমেন্ট নরমাল স্কুলের প্রধান শিক্ষক রেভারেন্ড জন রবার্টস, কলকাতা ফ্রি চার্চ ইনস্টিটিউশনের অধ্যক্ষ রেভারেন্ড জেমস রবার্টসন, কলকাতা-নিবাসী ড. মহেন্দ্রলাল সরকার, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এবং প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যক্ষ চার্লস এইচ টাওনে, উমেশচন্দ্র দত্ত এবং বাংলা অঞ্চলের গার্লস স্কুলসমূহের পরিদর্শক মিসেস হুইলার। উপর্যুক্ত সকলেই হয় শিক্ষাবিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-প্রধান, নয় উচ্চশিক্ষিত, কিংবা উচ্চপদাধিকারী এবং বিশেষজ্ঞ শ্রেণির ব্যক্তি ও ব্যক্তিত্ব। ব্রিটিশ শিক্ষা অবস্থা ও ব্যবস্থা সম্পর্কে এঁদের লিখিত 888sport world cup rate এবং শিক্ষা কমিশনের প্রদত্ত 888sport world cup rateের আলোকে বলা যায়, ১৮৫৪ সালে সেই প্রথম শিক্ষাভাষ্য প্রণয়নের পূর্বে এবং পরবর্তী ত্রিশ বছর ধরে একজন একক বিদ্যাসাগর শিক্ষাসম্পর্কিত সেই কাজগুলোই করে গেছেন যেগুলো আরো সুচারুরূপে এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে করা প্রয়োজন বলে শিক্ষা কমিশনের সিদ্ধান্ত। বিদ্যাসাগর প্রথাগত পাঠশালার মানোন্নয়ন করে ঐতিহ্য ও আধুনিক ধারার শিক্ষা-সমন্বয়ের কথা বলেছেন। প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং কলেজিয়েট পর্যায়ে শিক্ষাক্ষেত্রে ভাষা-মাধ্যম এবং পাঠ্যসূচি সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা দেন বিদ্যাসাগর। তাঁর প্রস্তাবিত পাঠ্যসূচি লক্ষ করলে দেখা যাবে একই সঙ্গে জ্ঞানার্জন, মনোবিকাশ এবং মহৎ জীবনচেতনা অর্জনের জন্যে শিক্ষার অবলম্বনকে গ্রহণ করবার চেতনাই বিদ্যাসাগরের 888sport world cup rateে আভাসিত। দক্ষ শিক্ষক, প্রশিক্ষণ, পরিদর্শন, পরীক্ষা, প্রণোদনা-বৃত্তি এসবের প্রস্তাবনাও বিদ্যাসাগর দিয়েছিলেন। শহরে-গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন তিনি এবং স্কুল-প্রতিষ্ঠাকল্পে সমাজের সক্ষম ব্যক্তিদের উৎসাহিত করার প্রস্তাবনা দেন বিদ্যাসাগর। কেবল প্রস্তাবনাই নয়, বিদ্যাসাগর নিজে ১৮৫৪ সাল থেকে পরবর্তী সময়ে দীর্ঘকাল ধরে ব্যাপৃত ছিলেন স্কুল-প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে। শিক্ষা কমিশন 888sport promo codeশিক্ষার প্রয়োজনীয়তার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করে। বিদ্যাসাগর 888sport promo codeশিক্ষায় কেবল চেষ্টা-অনুপ্রেরণাতেই সীমাবদ্ধ থাকেন না, তিনি 888sport promo codeদের শিক্ষার নিমিত্ত স্কুলও প্রতিষ্ঠা করেন। নিম্নগোত্রীয় ও দরিদ্র তথা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছাত্রদের জন্যে শিক্ষা কমিশন বিশেষভাবে ভাবিত ছিল। বিদ্যাসাগর স্বয়ং নিম্নগোত্রীয় ও দরিদ্র ছাত্রদের জন্যে প্রথমত শিক্ষাব্যয় কমিয়ে দিয়ে এবং দ্বিতীয়ত নিজের অর্থ খরচ করে শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন।  শিক্ষা কমিশন একটি শিক্ষা বিভাগের অভ্যন্তরীণ বহুবাচনিক যে-কাঠামোর সুপারিশ করে (চ. – সপ্তম অধ্যায়) বিদ্যাসাগর সে-বিষয়ে নির্দেশনামূলক প্রস্তাব (তাঁর-প্রদত্ত পঞ্চদশ প্রস্তাব) উপস্থাপন করেন তাঁর 888sport world cup rateে। মোটকথা, ভারতবর্ষের সামগ্রিক শিক্ষাকাঠামোর প্রয়োজনে ১৮৮৩ সালের ব্রিটিশ সরকারের দ্বিতীয় শিক্ষাভাষ্য প্রকাশের পূর্বে বহুজনের সমন্বয়ে ও বহু মত পর্যালোচনার আলোকে প্রণীত 888sport world cup rateের সুপারিশসমূহ ১৮৫৪ সালে প্রদত্ত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর-প্রদত্ত 888sport world cup rateের সমগোত্রীয়। অর্থাৎ প্রকৃত শিক্ষাবিদ এবং চিন্তাভাবনার দিক থেকে যথেষ্ট অগ্রসর চেতনাধারী বিদ্যাসাগর ভারতীয় শিক্ষাকাঠামো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা প্রকাশ করে গেছেন প্রথম ব্রিটিশ শিক্ষাভাষ্য প্রকাশেরও পূর্বে। আমরা, ইতোমধ্যে লক্ষও করেছি, ব্রিটিশ সরকারের প্রথম শিক্ষাভাষ্যে গৃহীত হয়েছিল ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সুনির্দিষ্ট অধিকাংশ প্রস্তাব। কাজেই ব্রিটিশ ভারতে ব্রিটিশ সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রচলনের ইতিহাস কখনোই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অনিবার্য ঐতিহাসিক সম্পৃক্ততার পর্বকে বাদ দিয়ে সম্পূর্ণাঙ্গ হয় না।