বাংলা সংগীতজগতের ত্রয়ী প্রতিভা

শান্তি সিংহ

রবীন্দ্র-প্রতিভার দীপ্তি সহস্রাংশুর কিরণমালা। তাঁর সমকালীন কিছু অনুজ কবি রবীন্দ্র-অনুরাগী। যথা – করুণানিধান বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৭৭-১৯৫৫), সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (১৮৮২-১৯২২), যতীন্দ্রমোহন বাগচী (১৮৭৮-১৯৪৮), কুমুদরঞ্জন মলিস্নক (১৮৮২-১৯৭১) প্রমুখ।

কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৮৬৩-১৯১৩) একদা 888sport apk download apk latest versionন্বিতচিত্তে তাঁর বিরহ প্রহসনটি (১৮৯৭) রবীন্দ্রনাথকে উৎসর্গ করেন। বইটিতে কবি উলেস্নখ করেন, ‘সব বিষয়ের দুটি দিক আছে। একটি সজীব, অপরটি লঘু। বিরহেও তাহা আছে। আমার এই গ্রন্থের উদ্দেশ্য – অল্পায়তনের মধ্যে বিরহের লঘু হাস্যকর অংশটুকু দেখানো।’

অথচ এই দ্বিজেন্দ্রলাল রায় সম্ভবত অমত্মর্লীন অসূয়া চেতনায় আনন্দ বিদায় প্রহসনে (১৯১২) রুচিহীনভাবে রবীন্দ্রনাথকে আক্রমণ করেন। যথা –

‘চন্দ্রাবলীর গীত –

কেন যামিনী না যেতে জাগালে না

বেলা হলো মরি লাজে –

আলুথালু এই করবী আবরি

এই আলুথালু সাজে।

জেগেছে সবাই দোকানি-পশারি

রাস্তায় লোক – আমি কুল888sport promo code

এখন কেমনে হাটখোলা দিয়া

চলিব পথের মাঝে।

 

১ শ্রোতা। কুরুচি! কুরুচি!

১ শ্রোত্রী। কিসে? কিসে?

চারি পাঁচজন শ্রোতা। অশস্নীল।

 

 

 

১ শ্রোত্রী। এটা রবীন্দ্রবাবুর একটা গানের অবিকল অনুকরণ।

২ শ্রোতা। রবীন্দ্রবাবুর গান কি সব শ্রীমদ্ভাগবত?

দ্বিতীয় অঙ্ক, তৃতীয় দৃশ্য]

দ্বিতীয় ভক্ত। এই একবার বিলেত ঘুরে এলেই ইনি

‘পি. ডি.’ হয়ে আসবেন।

তৃতীয় ভক্ত। ‘পি. ডি’ কী?

দ্বিতীয় ভক্ত। ‘ডক্টর অব পোয়েট্রি।’

তৃতীয় ভক্ত। ইংরেজরা কি বাঙ্গলা বোঝে যে, এঁর 888sport app download apk বুঝবে?

চতুর্থ ভক্ত। এ-888sport app download apk বোঝার ত দরকার নাই। এ শুধু গন্ধ। গন্ধটা ইংরেজিতে 888sport app download apk latest version করে নিলেই হোল।

দ্বিতীয় ভক্ত। তারপর রয়টার দিয়ে খবরটা এখানে পাঠালেই আর অ্যানড্রুর একটা ‘সার্টিফিকেট’ জোগাড় করলেই ‘পি. এল.’।

তৃতীয় ভক্ত। ‘পি. এল.’ কী?

দ্বিতীয় ভক্ত। ‘পোয়েট লরিয়েট’।

প্রথম ভক্ত। ইত্যবসরে একখানা মাসিক বের করো, মাসিক বের করো। আমরা ইত্যবসরে এঁকে একদম ঋষি বানিয়ে দেই –

তৃতীয় ভক্ত। আমার কিন্তু হাসি পাচ্ছে।’

সবিশেষ উলেস্নখ্য, এই প্রহসনটি কলকাতার মঞ্চে অভিনীত হতে গেলে, প্রথম সন্ধ্যার ‘শো’ রবীন্দ্র-ভক্তদের প্রতিবাদে বন্ধ হয়। শুধু তাই নয়, অভিনয়ের উদ্যোক্তারাও অপমানিত হন।

আমরা জানি, রবীন্দ্রনাথ ১২৯৮ সালের ফাল্গুনে, শিলাইদহ বোটে লেখেন কালজয়ী 888sport app download apk ‘সোনার তরী’। ওই 888sport app download apkর অমত্মর্নিহিত ভাব নিয়ে নানা বিতর্ক হয়েছে। ১৩১৩ সালের প্রবাসী পত্রিকায় দ্বিজেন্দ্রলাল লেখেন ‘কাব্যের অভিব্যক্তি’। 888sport liveটিতে তিনি ‘সোনার তরী’ 888sport app download apkর নির্মম সমালোচনা করেন। তাঁর মোদ্দাকথা ছিল – ‘সোনার তরী’ 888sport app download apk অস্পষ্টতা-দোষদুষ্ট।

একদা সুখ্যাত প্রাবন্ধিক সুখময় সরকার। তিনি প্রবাসী-সম্পাদক রামানন্দ ও যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধির সঙ্গে সুদীর্ঘকাল অমত্মরঙ্গভাবে সঙ্গ লাভ করেন। প্রবাসী পত্রিকা ১৩৬৮ সালের কার্তিক 888sport free betয় প্রকাশিত সুখময় সরকারের যোগেশ-রামানন্দের সাক্ষাৎকার 888sport sign up bonusকথা নিমণরূপ :

‘যোগেশ। অনেকদিন থেকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করব, ভাবছি। আপনি রবীন্দ্রনাথের অমত্মরঙ্গ বন্ধু; অথচ ‘প্রবাসী’-তে তাঁর ‘সোনার তরী’-র বিরুদ্ধ সমালোচনা ছাপিয়েছেন। এটা কেমন হল?

রামানন্দ। সমালোচনা করেছিলেন কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়। দ্বিজেন্দ্রলাল যদি অকবি, অরসিক, অব্যবসায়ী হতেন, তা হলে তাঁর সমালোচনা লঘুচিত্তের বামাগতি মনে করা চলত। কিন্তু তা যখন নয়, তখন সে-সমালোচনা প্রকাশ করব না কেন?’

রবীন্দ্রনাথ তাঁর সমকালীন দিঙ্নাগাচার্যদের স্থূলহস্তাবলেপ নীরবে অনেক সহ্য করেছেন। প্রসঙ্গত মাত্র দুটি কথা। আপাত-মজার অথচ মর্মামিত্মক বেদনার কারণ। ১৩১৬ সালের আষাঢ় মাসে কবি রচনা করেন – ‘আজি শ্রাবণঘন গহন মোহে  গোপন তব চরণ ফেলে/নিশার মতো নীরব ওহে, সবার দিঠি এড়ায়ে এলে’ গানটি। এই গানটি পরের মাসেই, (শ্রাবণ ১৩১৬) প্রবাসী পত্রিকায় ছাপা হয়। এই গানটির পরিপ্রেক্ষিতে সুরেশচন্দ্র সমাজপতি 888sport live football পত্রিকার ভাদ্র, ১৩১৬ 888sport free betয় আত্মপ্রত্যয়ে দীপ্ত হয়ে লেখেন – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ক্রমে অবোধ্য হইয়া উঠিলেন। চরণ কেমন করিয়া গোপন হইল, তাহা বুঝিতে পারিলাম না। সাপের পা গোপন বটে। কিন্তু এ গোপন চরণ কাহার?’

রবীন্দ্র-বিদূষণ মর্মামিত্মক রসিকতাও তৈরি করে। তাই রবীন্দ্রনাথের নোবেল-সম্মানপ্রাপ্তির পরেও, ১৯১৫ সালের এপ্রিলে বর্ধমান শহরে বর্ধমান রাজধন্য অষ্টম বঙ্গীয় 888sport live football সম্মেলন হয়। সেই 888sport live football সভায় রবীন্দ্রনাথকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি! ওই 888sport live football সম্মেলনে, 888sport live football-শাখার সভাপতি মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয়। তিনি বাংলা মঙ্গলকাব্য থেকে কবি মধুসূদন পর্যমত্ম সপ্রশংস আলোচনা করে, রবীন্দ্র-888sport app download apkকে চুটকি বলেন! তাঁর সুবিজ্ঞ অভিমত – ‘রবিবাবু নোবেল প্রাইজ পাইলেন… কিন্তু আমি জিজ্ঞাসা করি, ভবিষ্যতের কী হইতেছে? ঝোঁক যদি চুটকির উপর হয়, ক্রমে সে চুটকিও যে খারাপ হইয়া যাইবে।’

রবীন্দ্রনাথের নোবেল প্রাপ্তির পরের বছর। শিক্ষাবিদ উপাচার্য আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষায় রবীন্দ্রনাথের লেখা থেকে উদ্ধৃত করে প্রশ্নকর্তা ছাত্রদের মার্জিত-খাঁটি সুন্দর বাংলা (chaste and elegant Bengali) লেখার নির্দেশ দেন। রবীন্দ্রনাথের কোনো বই কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম. এ. পাঠ্যতালিকায় অমত্মর্ভুক্ত না-হওয়া দেখে, ১৩২৭ সালের কার্তিক 888sport free bet প্রবাসী পত্রিকায় ‘বিহারে গীতাঞ্জলি’ শীর্ষক লেখায় রামানন্দ লেখেন – ‘পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় রবীন্দ্রনাথের ‘গীতাঞ্জলি’-কে বি. এ. পরীক্ষার পাঠ্যপুসত্মক করিয়াছেন।… কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলায় এম. এ. পর্যমত্ম হইয়াছে, কিন্তু রবিবাবুকে বাদ দিয়া পাঠ্যপুসত্মক ও পরীক্ষিতব্য বিষয় নির্ধারিত হইয়াছে। ইহা কর্তাদের কাব্যরসিকতা ও বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক।’

কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের রবীন্দ্র-বিরোধিতা আলোচনায়, প্রসঙ্গক্রমে রবীন্দ্র-বিদূষণের কিছু কথা আলোচিত হলো। এবার দ্বিজেন্দ্রলালের 888sport live footballসৃষ্টি প্রসঙ্গে আবার ফিরে আসি।

মন্দ্র, হাসির গানে কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রীতিমতো উজ্জ্বল। ‘কালিদাস ও ভবভূতি’ দীর্ঘ রচনাটি তাঁর বিশেস্নষণী প্রতিভার পরিচয়। তাঁর লেখা সাজাহান, নূরজাহান, মেবার পতন, চন্দ্রগুপ্ত, সীতা, রানা প্রতাপ সিংহ প্রভৃতি নাটক নাট্যরসিকদের যথেষ্ট সমাদর পেয়েছে। এ-প্রসঙ্গে বলতেই হয় : নাটকের নাটকীয় উপাদানে আবেগদৃপ্ত সংলাপ ও অসাধারণ কাব্যসুরভিযুক্ত সংগীতগুলি বাঙালির মনোহরণের অন্যতম প্রধান কারণ। এ-প্রসঙ্গে সংগীতস্রষ্টা কবি দ্বিজেন্দ্রলালের অনন্যতা উলেস্নখযোগ্য। দ্বিজেন্দ্রলাল বলেন, ‘আমাদের রাগরাগিণীগুলি একটি আশ্রয় অবলম্বন করিয়া থাকে। ইংরেজি সংগীতের প্রতি গানের সুর নিরাশ্রয়। তাহারা কোনো নির্দিষ্ট ভিত্তি হইতে ওঠে না, বা কোনো নির্দিষ্ট স্থানে শেষ হয় না।… বিলিতি গানের সুরগুলি যেন হাউয়ের মতো একেবারে ঊর্ধ্বে উঠিয়া চলিয়া যায় এবং সেখানে অগ্নিস্ফুলিঙ্গরাশি প্রক্ষিপ্ত করিয়া শূন্যমার্গেই নিভিয়া যায়।’ তাই দ্বিজেন্দ্রগীতিতে এসেছে বিদেশি সুরবৈচিত্র। অথচ রবীন্দ্রনাথের বিদেশি সংগীত স্বীকরণশক্তি থেকে তা ভিন্নতর এবং নতুনত্বের দাবিদার। তারই পাশে বাংলার বাউল-কীর্তনের সুর, নিধুবাবুর টপ্পা কিংবা ভারতীয় সংগীতের আত্মিক ওজঃশক্তিকে আত্তীকরণ করেছেন তিনি।

দ্বিজেন্দ্রলালের সংগীতজ্ঞ পুত্র দিলীপকুমার রায়। তিনি 888sport sign up bonusকথায় লিখেছেন, ‘পিতৃদেব হেসে বলতেন : ‘তিনি (বিখ্যাত খেয়াল গায়ক সুরেন্দ্রনাথ মজুমদার) যত বড় গাইয়েই হোন-না-কেন রে, পঞ্চাশ বৎসরের মধ্যে তাঁকে লোকে ভুলে যাবে।’ আমি রাগ করে বলতাম, মরিয়া হয়ে – সে তো সবাইকেই যাবে। তাতে পিতৃদেব বলতেন, ‘না রে না। আমাকে, কি রবিবাবুকে [সংগীতস্রষ্টা রবীন্দ্রনাথ] ভুলে যাবে না। আমি যে কী-সব গান বেঁধে গেলাম – সেদিন তুইও বুঝবিই বুঝবি।’ দ্বিজেন্দ্রলালের গভীর অমত্মর্দীপ্ত অথচ অসূয়াহীন, সত্যসন্ধ মূল্যায়ন আমাদের আজ মুগ্ধ করে।

নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল অধিক প্রোজ্জ্বল হয়েছেন তাঁর নাটকে অনন্যসাধারণ সংগীত রচনা করে। সেসব সংগীত অসাধারণ শব্দ-চয়নের ব্যঞ্জনায়, উচ্চমানের কবিত্বশক্তিতে আমাদের মুগ্ধ করে। সেসব শব্দবন্ধের মাধুর্য-ঝংকার রবীন্দ্রনাথ-অতুলপ্রসাদ-রজনীকামত্ম-নজরুলের সংগীতে দেখা যায় না। এখানে দ্বিজেন্দ্রসংগীতের স্বতন্ত্র ও নিজস্ব ঘরানা। যথা –

আমরা – মলয় বাতাসে ভেসে যাবো

শুধু কুসুমের মধু করিব পান;

 

ঘুমোবো কেতকী সুবাস শয়নে

চাঁদের কিরণে কবির সণান।

(‘ইত্যাদি’)

এই গানটি ভীষ্ম নাটকের দ্বিতীয় অঙ্ক, ষষ্ঠ দৃশ্যে অম্বিকা-অম্বালিকার কণ্ঠে শোনা যায়। স্থান – কাশীরাজের উদ্যানের বহির্ভাগ। কাল – সন্ধ্যা। অন্য একটি অসাধারণ কাব্যব্যঞ্জনায় উজ্জ্বল গান –

আমরা এমনই এসে ভেসে যাই –

আলোর মতন, হাসির মতন,

হাওয়ার মতন, নেশার মতন

ঢেউয়ের মত ভেসে যাই।

আমরা অরুণ কনক কিরণে চড়িয়া নামি

আমরা সান্ধ্য রবির কিরণে অসত্মগামী

আমরা শরৎ ইন্দ্রধনুর বরণে

জ্যোৎসণার মত অলস চরণে

চপলার মত চকিত চমকে

চাহিয়া ক্ষণিক হেসে যাই।

আমরা সিণগ্ধ, কামত্ম, শামিত্ম সুপ্তিভরা

আমরা আসি বটে, তবু কাহারে দিই না ধরা;

আমরা শ্যামলে-শিশিরে, গগনের নীলে

গানে, সুগন্ধে, কিরণে-নিখিলে

স্বপ্ন-রাজ্য হতে এসে, ভেসে –

স্বপ্ন-রাজ্য দেশে যাই।

 

এই গানটি নূরজাহান নাটকে, চতুর্থ অঙ্ক, দ্বিতীয় দৃশ্যে আছে। স্থান – নূরজাহানের কক্ষ। কাল রাত্রি। নূরজাহান একাকিনী। জাহাঙ্গীরের প্রবেশ।

জাহাঙ্গীর বলেন, ‘তোমার সাম্রাজ্য তুমি শাসন কর প্রিয়ে! এখন নিয়ে এসো আমার সাম্রাজ্য – সুরা, সৌন্দর্য, সংগীত।’ শুরু হলো বাদ্যযন্ত্রের মধুর ধ্বনি। সুরা পান। সংগীত। নর্তকীদের নৃত্যের সঙ্গে এই সংগীতলহরি!

দ্বিজেন্দ্রলাল ভারতীয় রাগসংগীতের স্বকীয়তা অক্ষুণ্ণ রেখে ‘কোরাস’ গীতভঙ্গি আমদানি করেছেন। ‘বঙ্গ আমার জননী আমার’, ‘ধনধান্য পুষ্পভরা’, ‘আজি এসেছি, এসেছি’, ‘যখন সঘন গগন গরজে’ প্রভৃতি গানে অভিনব সুরবৈচিত্র ফুটে ওঠে।

 

দুই

রজনীকামত্ম সেন (১৮৬৫-১৯১০) স্বল্পায়ু কবিজীবনে বাঙালির প্রাণের কবি। তিনি কবি, ততোধিক গীতিকবি ও গায়ক888sport live chatী। এ-বছর তাঁর সার্ধশতজন্মবর্ষ। তাঁর স্বদেশি গান কিংবা দয়াল প্রেমময়ের প্রতি শরণাগতির আকুতিভরা মরমি গান তাঁর অকালপ্রয়াণের শতবর্ষ পরেও বাঙালি-হৃদয়ে আবেগসঞ্চারী। এখনো বেতারে-দূরদর্শনে কিংবা জনগণের কণ্ঠে আত্মনিবেদনের সুরে শোনা যায় – ‘তুমি নির্মল কর, মঙ্গল-করে/ মলিন মর্ম মুছায়ে…’, অথবা ‘তোমারি দেওয়া প্রাণে, তোমারি দেওয়া দুঃখ,/ তোমারি দেওয়া বুকে, তোমারি অনুভব…’। কিংবা, ‘(ওরা) চাহিতে জানে না, দয়াময়!/ চাহে ধন, জন, আয়ুঃ, আরোগ্য বিজয়…’। তাঁর লেখা ‘মায়ের দেওয়া মোটা কাপড়/ মাথায় তুলে নে রে ভাই,/ দীন-দুঃখিনী মা যে তোদের/ তার বেশি আর সাধ্য নাই…’। গানটি বাংলার স্বদেশি যুগে, বৃহত্তর বাংলার জনগণের মুখে-মুখে শোনা যেত। আচার্য-888sport apkী প্রফুলস্নচন্দ্র রায় তাঁর 888sport sign up bonusকথায় লিখেছেন, ‘মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নে রে ভাই’ – এই উন্মাদক-ধ্বনি প্রথমে যেদিন আমার কানে প্রবেশ করিল, সেইদিন হইতেই গীতরচয়িতার সঙ্গে পরিচিত হইবার ইচ্ছা মনোমধ্যে প্রবল হইয়া উঠিল। পরে রাজশাহী 888sport live football সম্মিলন উপলক্ষে রজনীকামেত্মর সহিত প্রথম চাক্ষুষ-পরিচয়ের সুবিধা হইয়াছিল।…’

(ভারতবর্ষ পত্রিকা, ভাদ্র 888sport free bet, ১৩২০)

পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জ মহকুমার ভাঙাবাড়ি গ্রামে, ১৮৬৫ সালের ২৬ জুলাই কামত্ম কবির জন্ম। বাবা গুরুপ্রসাদ সেন। মায়ের নাম – মনোমোহিনী দেবী। রজনীকামত্ম রাজশাহী স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করেন। এফ. এ. পাস করে কলকাতা সিটি কলেজ থেকে বি. এ. পাস। তিনি কলকাতায় বি. এল. পাসও করেন। তারপর রাজশাহীতে ওকালতি শুরু। তাঁর স্ত্রী হিরণ্ময়ী দেবী। 888sport app জেলার মানিকগঞ্জ মহকুমার বেউথা গ্রামে তাঁর পিত্রালয়। পুত্রকন্যাভরা সুখের সংসারে 888sport app download apk ও গান লেখা রজনীকামেত্মর শখ ছিল। রাজশাহী থিয়েটারে তিনি রবীন্দ্রনাথের রাজা ও রাণী নাটকে রাজার ভূমিকায় অভিনয় করে সুনাম অর্জন করেন।

প্রৌঢ়ত্বের শুরুতে, কবি ক্যান্সার রোগে আক্রামত্ম হন। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ২৮ মাঘ ১৩১৬ থেকে ২৮ ভাদ্র ১৩১৭ ভর্তি থাকেন। গলায় অপারেশন করায় বাক্শক্তিরহিত হন কবি। রোগযন্ত্রণাকাতর শরীরে, খাতায় পেনসিল দিয়ে মনের কথা প্রকাশ করতেন। গানও রচনা করেছেন।

রবীন্দ্রনাথ অসুস্থ কবি রজনীকামেত্মর প্রতি 888sport apk download apk latest versionযুক্ত আমত্মরিক ভালোবাসার টানে মেডিক্যাল কলেজে আসেন ১৩১৭ বঙ্গাব্দের ২৮ জ্যৈষ্ঠ। রবীন্দ্রদর্শনে পরিতৃপ্ত কামত্মকবি সেদিনই ঈশ্বরের প্রতি শরণাগতচিত্তে লেখেন আকুতিভরা সংগীত – ‘আমায় সকল রকমে কাঙাল করেছে/ গর্ব করিতে চুর,/ যশঃ ও অর্থ, মান ও স্বাস্থ্য/ সকলি করেছে দূর।/ ওইগুলো সব মায়াময়রূপে/ ফেলেছিল মোরে অহমিকা-কূপে/ তাই সব বাধা সরায়ে দয়াল/ করেছ দীন আতুর।…’

হাসপাতালে, রবীন্দ্র-দর্শনে প্রাণিত কবি রজনীকামত্ম। অথচ গলার অপারেশনে বাক্শক্তিরহিত। সে-অবস্থায় খাতায় পেনসিল দিয়ে লিখে রবীন্দ্রনাথকে জানান, ‘আর একবার যদি ‘দয়াল’ কণ্ঠ দিত। তবে আপনার ‘রাজা ও রাণী’ আপনার কাছে একবার অভিনয় করে দেখাতেম। আমি ‘রাজা’-র অভিনয় করেছি।’

রবীন্দ্র-সন্দর্শন-888sport sign up bonusমুগ্ধ  রজনীকামত্ম ১৫ আষাঢ়, ১৩১৭ (২৯/৬/১৯১০) রবীন্দ্রনাথকে দীর্ঘ চিঠি লিখেন –

 

শ্রীহরি

Medical College hospital

Cottage No. 12

Calcatta

29/6/10

 

দেব,

সেই সাক্ষাতেই পর আর কোনও সংবাদ জানি না।

ভরসা করি শারীরিক সুস্থ আছেন।

যেদিন চরণধূলায় এই কুটির পবিত্র করিয়াছিলেন, সেই

দিন হইতে তিল তিল করিয়া যেন ব্যাধির উপশম হইতেছে।                      এই উন্নতি স্থায়ী হয় না; কতবার মরিলাম, কতবার বাঁচিলাম।

এইরূপেই দিন যাইতেছে।…

১লা আষাঢ় তারিখ রাত্রিতে যে সংগীতটি রচনা

করিয়াছিলাম, তাহা আপনাকে দেখাইতে ইচ্ছা হইল, পত্রের

অন্যতর পৃষ্ঠায় নকল করিয়া দিলাম। পড়িয়া যদি ভাল লাগে,

দয়া করিয়া জানাইবেন।

 

প্রণত

রজনীকামত্ম সেন

 

চিঠির সঙ্গে রজনীকামত্ম-লিখিত গানটি নিমণরূপ :

 

যজ্ঞভঙ্গ

এই মুক্তপ্রাণের দৃপ্ত বাসনা

তৃপ্ত করিবে কে?

বদ্ধবিহগ মুক্ত করিয়া

ঊর্ধ্বে ধরিবে কে?

 

রক্ত বহিবে মর্ম ফাটিয়া

তীক্ষন অসিতে বিঘ্ন কাটিয়া,

ধর্ম-পক্ষে শর্ম-লক্ষী্য

মৃত্যু বরিবে কে?

অক্ষয় নব কীর্তি-কিরীট

মাথায় পরিবে কে?’

(‘ইত্যাদি’)

সবিশেষ উলেস্নখ্য, পরের দিন ১৬ আষাঢ়, গানটি রবীন্দ্রনাথ পান এবং ওইদিনই পত্রোত্তরে জানান – ‘আপনি যে গানটি পাঠাইয়াছেন, তাহা শিরোধার্য করিয়া লইলাম।’

 

হাসপাতালে কামত্মকবির ডায়েরির মুদ্রিত রূপ আমাদের অজানা নয়। সেই ডায়েরিতে শেষ লেখা কবি লেখেন নিজের স্ত্রীকে। তা হলো : ‘আমাকে দয়াল ডাকছে, আমি যাচ্ছি।’

রজনীকামেত্মর লেখা বাণী, কল্যাণী, অমৃত, আনন্দময়ী, বিশ্রাম, অভয়া, সদ্ভাব-কুসুম, শেষদান সংকলনগ্রন্থগুলি থেকে কবির স্বদেশপ্রীতি ও ঈশ্বরভক্তি তথা শরণাগতি এবং গর্ভধারিণী জননীর প্রতি ভালোবাসা, সামাজিক কৌতুক-নকশা, নীতিকথা প্রভৃতি নানা ভাব ফুটে ওঠে।

বাণী কাব্যগ্রন্থের ‘বঙ্গমাতা’, ‘জন্মভূমি’, ‘ভারতভূমি’, ‘তাঁতী ভাই’ ‘তাই ভালো’ প্রভৃতি 888sport app download apk দেশাত্মবোধক। আবার সেই বিখ্যাত 888sport app download apk – ‘মা’। যার শুরু এভাবে – ‘সেণহবিহবল, করুণা-ছলছল,/ শিয়রে জাগে কার িআঁখি রে’ – কিংবা ‘করুণাময়’ রচনায় – ‘(আমি) অকৃতী অধম বলেও তো কিছু/ কম করে! মোরে দাওনি!’ ‘বরের দল’, ‘বেহায়া বেহাই’, ‘হজমীগুলি’ লেখা কৌতুকরসসঞ্চারী।

কল্যাণী কাব্যে ‘নিষ্ফলতা’, ‘পাতকী’, ‘বিশ্বাস’ (দুটি গান), ‘কবে?’ ‘অস্তি’ প্রভৃতি ঈশ্বর শরণাগত চিত্তের বিখ্যাত গানগুলির পাশে ‘পুরোহিত’, ‘দেওয়ানি হাকিম’, ‘ডেপুটি’, ‘উকিল’, ‘উঠে পড়ে লাগ্’, ‘নব্য বাবু’, ‘পুরাতত্ত্ববিৎ’, ‘ঔদরিক’ গানগুলিতে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের হাস্যব্যঙ্গরস প্রবণতা নতুনভাবে ঝিলিক দেয়।

অমৃত কাব্যগ্রন্থে কবি রজনীকামত্ম দীপ্যমান। তবু রবীন্দ্রনাথের কণিকা বা চৈতালি কাব্যের কাব্যরীতি কবি রজনীকামত্মকে
প্রভাবিত করেছে। এই কাব্যের ‘সার্থকতা’, ‘বিনয়’, ‘পরোপকার’, ‘বৃথা দর্প’, ‘স্বাধীনতার সুখ’, ‘দাম্ভিকের শিক্ষা লাভ’, ‘শিক্ষা ও প্রবৃত্তি’, ‘পরিণতি’ প্রভৃতি 888sport app download apk শুধু শিশুপাঠ্য নয়, বড়দেরও চিত্তাকর্ষক।

শরৎকালে উমার পিত্রালয়ে আগমনের বিচিত্ররূপ রজনীকামেত্মর আগমনী কাব্যে বিধৃত। শাক্তকবি কমলাকামত্ম ভট্টাচার্য লিখেছেন –

জান তো জামাতার রীত, সদাই পাগলের মতো

পরিধানে বাঘাম্বর, শিরে জটাভার।

আপনি শ্মশানে ফিরে, সঙ্গে লোয়ে যায় তারে

কত আছে কপালে উমার।

(‘ইত্যাদি’)

কবি রজনীকামত্ম ‘কৈলাসের দুঃখবর্ণন’ গানে [সাহান-ঝাঁপতাল]

লিখেন –

‘শুনতে পাই, মা, হরের মুখে

অন্ন নাই, সে ভিক্ষা করে,

সারা রাত শ্মশানে থাকে,

ভস্ম মাখে, অজিন পরে।’

(‘ইত্যাদি’)

লক্ষণীয়, ‘অজিন’ মানে হরিণের চামড়া। শ্মশানবাসী ভোলা শঙ্কর ‘বাঘাম্বর’ বা কৃত্তিবাস। তিনি ‘অজিনধারী’ নন। কবি কমলাকামত্ম সঠিকভাবে লেখেন, তাঁর গানে। ভাবাবেশে কবি রজনীকামত্ম শব্দগঠনে প্রমাদ তৈরি করেছেন।

কবির বিশ্রাম, অভয়া, শেষদান সংকলন কবিপ্রতিভায় উজ্জ্বল নয়। শেষদান কাব্যে ‘ছিন্নমুকুল’ 888sport app download apkয় সত্যেন্দ্রনাথের ক্ষীণ প্রভাব ফুটে ওঠে। তুলনায় সদ্ভাব কুসুম আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। যদিও এই কাব্য রচনায় কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার রজনীকামেত্মর প্রেরণাসঞ্চারী। কারণ, ১৮৬১ সালে ‘সদ্ভাবশতক’ নামে একশ গীতি888sport app download apk রচনা করেন। রজনীকামেত্ম সেই কাব্যের প্রভাব স্পষ্ট।

পরিশেষে বলতেই হয়, রজনীকামত্ম মূলত গীতিকবি ও কামত্ম-সংগীতস্রষ্টা। তাঁর অমৃত কাব্যে রবীন্দ্রপ্রভাব থাকলেও স্বকীয়তায় অনেকখানি উজ্জ্বল।

তিন

রবীন্দ্রসংগীত, দ্বিজেন্দ্রগীতি, কামত্ম-সংগীতের প্রভাবমুক্ত অতুলপ্রসাদী গান। তাঁর গানে আছে দৃপ্ত স্বদেশচেতনা ও হৃদয়ের গভীর প্রেমার্তিমাখা অতলামত্ম বিরহের শূন্যতা। তাঁর প্রেমানুভবের ভাব-ভাষা-প্রকাশভঙ্গি রবীন্দ্র-দ্বিজেন্দ্র কিংবা রজনীকামত্ম-নজরুল থেকে স্বতন্ত্র। বিলেতযাত্রী অতুলপ্রসাদ ভেনিস বন্দরে, সে-দেশের নৌকা   – যার নাম ‘গন্ডোলা’, সেই গন্ডোলার মাঝিদের গানের সুরে মুগ্ধ হয়ে রচনা করেন বিখ্যাত স্বদেশি গান –

উঠ গো ভারতলক্ষ্মী,    উঠ   আদি-জগত-জন-পূজ্যা,

দুঃখ দৈন্য সব নাশি    করো    দূরিত ভারত-লজ্জা।

 

 

 

জননী গো, লহো তুলি বক্ষে

সামত্মবন-বাস দেহো তুলে চক্ষে

কাঁদিছে তব চরণতলে

ত্রিংশতি কোটি নর888sport promo code গো।

(‘ইত্যাদি’)

লক্ষেনŠয় খ্যাতিমান ব্যারিস্টার অতুলপ্রসাদ রাজনীতিতে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত হন। ১৯০৫ সালে, বেনারসে গোপালকৃষ্ণ গোখলের সভাপতিত্বে জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশন হয়। অতুলপ্রসাদ অভ্যর্থনা সমিতির সদস্যদের নেতা হন। মহামতি গোখলে একবার লক্ষেনŠতে অতুলপ্রসাদের আতিথ্যগ্রহণ করেন। গোপালকৃষ্ণ গোখলের অভ্যর্থনা উপলক্ষে বিখ্যাত স্বদেশি গান – ‘উঠ গো ভারতলক্ষ্মী’ গানটি গাওয়া হয়।

১৯১৩ সালে, রবীন্দ্রনাথের নোবেল 888sport app download bdপ্রাপ্তি। সেই বিশ্বসম্মানের প্রতি বাঙালির 888sport apk download apk latest version জানিয়ে অতুলপ্রসাদ রচনা করেন –

বলো বলো বলো সবে    শত বীণাবেণু-রবে

ভারত আবার জগৎসভায়   শ্রেষ্ঠ আসন লবে।

(‘ইত্যাদি’)

 

১৯১৪ সালে রবীন্দ্রনাথ রামগড়ে বেড়াতে যান। সেখানের ‘হৈমমত্মী’ শৈলাবাসে ওঠেন। রবীন্দ্রনাথের আমন্ত্রণে অতুলপ্রসাদ সেই ‘হৈমমত্মী’ শৈলাবাসে রবীন্দ্রনাথের অতিথি হন। সেই সময় রবীন্দ্রনাথ রচনা করেন – ‘এই লভিনু সঙ্গ তব, সুন্দর হে সুন্দর!’ গানটি। রবীন্দ্রনাথের কণ্ঠে গীত সেই গানটি শুনে গভীর পরিতৃপ্তি লাভ করেন অতুলপ্রসাদ।

অতুলপ্রসাদের একটি বিখ্যাত স্বদেশি গানেও আবহ রবীন্দ্রনাথের নোবেলপ্রাপ্তি প্রসঙ্গ –

 

মোদের গরব, মোদের আশা

আ মরি বাংলা ভাষা

তোমার কোলে, তোমার বোলে

কতই শামিত্ম ভালোবাসা।

 

 

 

বাজিয়ে রবি তোমার বীণে

আনল মালা জগৎ জিনে!

গরব কোথায় রাখি গো?

তোমার চরণ-তীর্থে আজি

জগৎ করে যাওয়া-আসা।

(‘ইত্যাদি’)

অতুলপ্রসাদের একটি বিখ্যাত স্বদেশি গান আজো সম্প্রদায় ভেদবুদ্ধির ঊর্ধ্বে আমাদের নিয়ে যায়, বিবিধের মাঝে ঐক্যের সন্ধান দেয়। সেই গানটির দুটি লাইন –

নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান

বিবিধের মাঝে দেখো মিলন মহান।

কিংবা, রামপ্রসাদী মালসী সুরে হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতি-ভাবনা –

দেখ্ মা, এবার দুয়ার খুলে

গলে-গলে এনু মা, তোর

হিন্দু-মুসলমান দু’ছেলে।

 

এসেছি মা, শপথ করে

ঘরের বিবাদ মিটবে ঘরে

যাব না আর পরের কাছে

ভাইয়ে-ভাইয়ে বিরোধ হলে।

(‘ইত্যাদি’)

অতুলপ্রসাদের কয়েকটি বিখ্যাত প্রেমসংগীত, যা হৃদয়বান বাঙালি নর-888sport promo codeর চিরকালের প্রিয়। যথা –

বঁধুয়া, নিদ নাহি িআঁখিপাতে।

আমিও একাকী, তুমিও একাকী

আজি এ বাদল-রাতে।

(‘ইত্যাদি’)

 

কে আবার বাজায় বাঁশি          এ ভাঙা কুঞ্জবনে

হৃদি মোর উঠল কাঁপি            চরণের সেই রণনে।

 

কোয়েলা ডাকল আবার          যমুনায় লাগল জোয়ার

কে তুমি আনিলে জল            ভরি মোর দুই নয়নে?’

(‘ইত্যাদি’)

তুমি মধুর অঙ্গে নাচো গো রঙ্গে, নূপুরভঙ্গে হৃদয়ে –

ঝিনিকি ঝিনিকি ঝিনিনি!?

(‘ইত্যাদি’)

যাব না, যাব না, যাব না ঘরে,

বাহির করেছে পাগল মোরে।

 

(‘ইত্যাদি’)

আর কত কাল থাকব বসে দুয়ার খুলে –

বঁধু আমার?

 

বিরহে দিন কাটিল,               কত যে কথা ছিল

কত যে মনের আশা মন-মাঝে রহিল;

কী লয়ে থাকব বলো, তুমি যদি রইলে ভুলে?

বঁধু আমার।

অতুলপ্রসাদ সেনের বাবা রামপ্রসাদ সেন। মা হেমমত্ম শশী। তাঁর জন্ম মামাবাড়িতে। নারায়ণগঞ্জ মহকুমার পাঁচদোনা গ্রামে। সেন পরিবারের আদি নিবাস ফরিদপুর জেলার মাদারীপুর পরগনার মগর গ্রাম। অ্যান্ট্রান্স পরীক্ষার সার্টিফিকেটে তাঁর জন্মসাল ১৮৭২ সালের ২৫ অক্টোবর। অথচ তাঁর জেঠতুতো ভাই সত্যপ্রসাদ সেনের অভিমত, ১৮৭১ সালের ২৫ অক্টোবর।

শৈশব থেকে সংগীতে আকৃষ্ট হন অতুলপ্রসাদ। তাঁর বাবা এবং মায়ের বাবা ব্রহ্মসংগীত গাইতেন। ১৮৮৪ সালে পিতৃহীন বালক অতুলপ্রসাদ মাতামহের কাছে পালিত হন। ১৮৯০ সালে, তাঁর বিধবা মা বিখ্যাত আইনজীবী দুর্গামোহন দাসকে বিয়ে করেন। প্রথম যৌবনে, পারিবারিক বিপর্যয়ে অতুলপ্রসাদ মানসিক স্থৈর্য কিছু হারান।

১৮৯২ সালে, কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার সময় তাঁর মামাদের উদ্যোগে তিনি ব্যারিস্টার হওয়ার জন্য বিলেত যাত্রা করেন। বিলেতে থাকার সময় তাঁর বড় মামা কৃষ্ণগোবিন্দ গুপ্ত সপরিবারে বিলেত যান। তখন মামাতো বোন হেমকুসুমের গান ও পিয়ানো-বেহালা বাজানোর দক্ষতায় মুগ্ধ হন অতুলপ্রসাদ।

১৮৯৫ সালে ব্যারিস্টার অতুলপ্রসাদ কলকাতা হাইকোর্টে সত্যেন্দ্রপ্রসাদ সিংহের জুনিয়র হিসেবে প্র্যাকটিস শুরু করেন। অবসর সময়ে রবীন্দ্র-দ্বিজেন্দ্রগীতির সঙ্গে রাধিকাপ্রসাদ গোস্বামীর কাছে উচ্চাঙ্গসংগীত চর্চা করতেন।

১৯০০ সালে, অতুলপ্রসাদ ও হেমকুসুম স্কটল্যান্ডের গ্রেটনাগ্রিনে গিয়ে আইনিমতে বিয়ে করেন। মামাতো বোনকে বিয়ে করার জন্য কলকাতায় নানা মহলে বিতর্ক ওঠে। তাই অতুলপ্রসাদ লক্ষৌনয় ব্যারিস্টারি শুরু করেন। কিন্তু শাশুড়ি হেমমত্ম শশীকে নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাদ শুরু হয়। সেই অশামিত্ম মর্মামিত্মক বিচ্ছেদের পর্যায়ে যায়। সেসব ঘটনাও রীতিমতো নাটকীয়।

প্রবাসী জীবনে ব্যারিস্টারি ও গান নিয়ে ব্যসত্ম থাকার চেষ্টা করেছেন অতুলপ্রসাদ। শিখেছেন উর্দু গজল-মুশায়েরা ও সংগীতের ধ্রম্নপদী রীতি। সেইসঙ্গে লিখেছেন গান। স্বদেশি আন্দোলনেও যুক্ত হয়েছেন।

দাম্পত্য অশামিত্ম চূড়ামত্ম রূপ নিলে কলকাতায় চলে আসেন অতুলপ্রসাদ। ‘মনডে’-ক্লাবে যুক্ত হওয়ায় সুকুমার রায়, অমল হোম, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, প্রশামত্ম মহলানবীশ এবং রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে যোগসূত্র গড়ে ওঠে। শামিত্মনিকেতনে তিনি ‘ওগো আমার নবীন সখী’ গান গেয়ে সবাইকে মুগ্ধ করেন। দ্বিজেন্দ্রলালের পুত্র দিলীপ রায় অতুলপ্রসাদের গুণমুগ্ধ বন্ধু ও অতুলপ্রসাদি গানের প্রচারক হয়ে ওঠেন। ১৯২৬ সালের ডিসেম্বর-শেষে, অতুলপ্রসাদ বন্ধু দিলীপকুমার রায়কে নিয়ে শামিত্মনিকেতনে আসেন। রবীন্দ্রসান্নিধ্যে এসে অতুলপ্রসাদের গুণমুগ্ধ সংগীতশ্রোতা অনেকে হন। সরলা দেবী ও ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণী অতুলপ্রসাদের অনেক গানের স্বরলিপি তৈরি করেন। ১৩৩১ সালের ২৪ অক্টোবর, কলকাতায় কবি অতুলপ্রসাদ থাকার সময় তাঁর গীতিগুঞ্জ সংগীত-সংকলন প্রকাশিত হয়। তার আগে, কাকলি প্রথম ও দ্বিতীয় খ– তাঁর গানের স্বরলিপি প্রকাশ পায়। ১৯৪৯ সালে, কলকাতার সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের পক্ষ থেকে গীতিগুঞ্জের আর একটি মান্য সংকলন হয়।

১৯৩৪ সালের ২৫ মে প্রয়াত হন অতুলপ্রসাদ সেন।

বাংলা সংগীতে, রবীন্দ্রসংগীতের পাশাপাশি সুর-তাল-লয়ে স্বতন্ত্র, অথচ শ্রম্নতিরম্য দ্বিজেন্দ্রগীতি, কামত্মসংগীত ও অতুলপ্রসাদী গানের সমাদর আজো অক্ষুণ্ণ। এখানেই এই ত্রয়ী সংগীত প্রতিভার যথার্থ মূল্যায়ন।