বাথরুমের দেয়ালে উৎকীর্ণ প্রতারিতের অভিজ্ঞান খেলারাম খেলে যার live chat 888sportিক বাস্তবতা

টোকন ঠাকুর

চলমান দৃশ্যের সত্যকে আমরা কীভাবে এড়িয়ে যেতে পারি, যখন দেখি, মানুষ রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে সামনে। অবশ্য আমরা জানি না, সে কতদূর যাবে, কার কাছে যাবে? সত্য যে, মানুষের পেছনে ফেরার রাস্তা নেই, যেতে হয় – যেতে হবে সামনেই। কিন্তু পেছনের যা কিছু রেখে আসা, ফেলে আসা ঘরবাড়ি-ঘটমানতা বা 888sport sign up bonusসমগ্র, তা কি আমরা দেখতে পাব রাস্তায় আমাদের চোখের সামনে দিয়ে এগিয়ে যাওয়া কোনো মানুষের দিকে তাকিয়ে? আমরা কি টের পাব, কোন তাড়না তাকে ডেকে নিয়ে যাচ্ছে, কোন প্রতারণা তাকে খেলিয়ে নিয়ে যাচ্ছে স্বরচিত ইচ্ছে-সুখের গুপ্ত-সুড়ঙ্গে?  যে-সুড়ঙ্গের অন্ধকার থেকে তার আর বের হওয়া হবে না! স্বীকার করে নিই, গোপনে-প্রকাশ্যে আমরাও চলেছি যে-যার মতো ব্যক্তিগত অভিযাত্রায়, এই অনিবার্য অভিযাত্রা থেকে আর ফেরা হবে না আমাদেরও। যদিও, ‘আমরা’ বলে আসলে নির্দিষ্ট কেউ নেই, কিন্তু বাবর আলী বলে একজন সুনির্দিষ্ট লোক আছে, আমরা তাকে চিনি, আমরা তাকে দেখি, আমরা তাকে খেয়াল করে দেখি এবং সে দেখায় প্রথমত তাকে অপছন্দই করি বেশি। এই অপছন্দের কারণ আছে। কারণগুলো খুব পরিষ্কার, আবার কারণগুলো খুব বিমূর্তও। এই স্পষ্ট-বিমূর্ত জীবনের বাহক বাবর আলী ঘোরাফেরা করে শেষাবধি অগাধ অপবাদ-নিন্দার মধ্যেই। নিন্দা তার প্রাপ্য বটে! জীবনপাতের উদ্দেশ্য যখন একটাই, পুরুষ হিসেবে, কমবয়েসি 888sport promo codeর ভেতরে যাওয়া, এক নয়, একাধিক 888sport promo codeর মধ্যে যেতে থাকা – তখন তা নিন্দাতেই সীমিত থাকার কথা নয়, হতে পারে তা অপরাধও বটে! সুতরাং বাবর আলী অপরাধী। তার শাস্তি প্রাপ্য। কিন্তু যে-অপরাধ তাকে শাস্তিযোগ্য করে তোলে, সে-অপরাধ একান্ত মনে পোষণ করেনি অন্তত এমন পুরুষপ্রাণী পৃথিবীতে কি খুব সচরাচর? কিংবা অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল ও স্বাধীন হলে 888sport promo codeও কি মিলবে তেমন? তাহলে বাবর আলীর দোষ কোথায়? যদিও, সামাজিক ছকে বেঁধে দেওয়া এই দোষ তর্কাতীত নয়, এই ‘দোষ’ দোষই বটে। ‘সভ্যতা’ বলছে।

বাবর আলী শনাক্ত হয়ে গেছে, এই তার দোষ? বাবর আলী তুলনামূলক খ্যাতিমান, দোষের এও এক কারণ। সামষ্টিকের জন্য বেঁধে দেওয়া প্রবহমান নৈতিকতার দরোজার ছিটকিনি সে খুলে ফেলেছে, এ তার দোষ! এটা দেখা যাচ্ছে, জন্ম-মৃত্যুর মধ্যবর্তী পৌরুষেয় সময়ে চূড়ান্তভাবেই যৌনতাকে তার ব্যক্তিগত সাংবিধানিক সত্যে পরিণত করেছে সে। যে কিনা, বাবর আলী, চলিস্নশ ছুঁইছুঁই অবিবাহিত লোকটি, সুন্দর করে মিথ্যে বলা যার করায়ত্ত, তার তো দোষ আছেই। তার প্রতি ব্যাপক সন্দেহ আছে। তাকে যতখানি সম্ভব আমাদের এড়িয়ে চলাও আছে, কারণ, বাবর আলীর প্রাপ্ত দার্শনিকতাকে আমরা প্রকাশ্যে পছন্দ করতে পারি না; কিন্তু গোপনে অনুগামী হয়ে থাকি সেই মোহময়তার। মাত্র একটি বাক্যের মধ্যেই নিহিত দর্শন, সেই দর্শনটা কী? দ্রষ্টব্য, এয়ারপোর্টের বাথরুমের দেয়ালে কোনো যুবক লাল পেন্সিলে লিখে রেখে যায় ‘খেলারাম খেলে যা’। যুবকটি বাথরুম থেকে বেরোনোর পর বাবর আলীই হয়তো সেই দর্শনবাক্যের প্রথম পাঠক কিংবা প্রকৃত পাঠক কিংবা সে দর্শনতত্ত্বের প্রায়োগিক প্রথম বিপস্নবী! কিংবা আরো কেউ বাবর আলী আছে, যাকে আমরা চিনি না। এ-দেশে বা দেশে দেশে বাবর আলীর 888sport free bet কতজন, তার কোনো পরি888sport free betন আছে? যে-যুবক বাথরুমের দেয়ালে লিখে রাখে ‘খেলারাম খেলে যা’ – আমাদের পরিচিত বাবর আলী টের পায়, এই অমোঘ বাক্যের দার্শনিক যুবক নিঃসন্দেহে প্রতারিত। প্রতারণা থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞানই তাকে যেন জানিয়ে দিয়েছে, ‘খেলারাম খেলে যা।’ পরাজয় থেকে, ব্যর্থতা থেকে যে অঙ্ক ফলিত হয় মননে, সেই অঙ্ক বড় নিষ্ঠুর এবং সত্য। যদিও এই সত্য পরাজয়ের পর অর্জিত, ব্যর্থতার ভেতর দিয়ে প্রাপ্ত। হয়তো এ শুধু জ্ঞানার্জিত সত্য। প্রস্রাব করার পজিশনে দাঁড়িয়ে, বাথরুমের দেয়ালে সেই সত্যই লিখে রেখেছে যে-যুবক, হয়তো পরবর্তীকালে তাকে আমরা আর চিনব না, তাকে দেখব না, কিন্তু তার রচিত বাক্যটি দেখব কিংবা পড়ব কিংবা সেই বাক্য আমাদের মনোজগৎকে খেলিয়ে নিয়ে বেড়াবে। এই বাক্যে প্রাণিত হয়ে সামর্থ্য-সাধ্য অনুযায়ী প্রয়োগ-সাফল্যে দৃশ্যমান দার্ঢ্য বাবর আলীকে আমরা চিনব, দেখব, তার গতিবিধি লক্ষ করব, তার মিথ্যে বলার কৌশলেও আমরা মুগ্ধ হব এবং লতিফা, বাবলী, মিসেস নফিস, ক্ষণমুহূর্তের দেখা সুষমা কিংবা জাহেদাকে বশ করে সম্ভোগ পর্যন্ত গমনে আমরাও বাবর আলীর সঙ্গে থাকব, এমনকি বাবর আলীকে দেখে আমাদের না-পারা জীবনীতে একটুখানি পারার সুখ নেব; কিন্তু সামাজিক নৈতিকতায় নিজেকে শুদ্ধ প্রমাণের প্রয়োজনীয় হিপোক্রেসি বা বহিরাচরণে ভদ্রতা ছড়িয়ে বলব – বাবর আলী একজন লম্পট, মিথ্যেবাদী! আমরা যে এরকমই করে থাকি বা এরকম বিশুদ্ধ হিপোক্রেসিতে অভ্যস্ত, সিদ্ধ, চলনে-বলনে – বাবর আলী তা জানে, ভালোভাবেই জানে। বাবর আলী তাই আমাদের পাত্তা দেয় না, সে বরং তার অর্জিত বাক্যনির্দেশ চর্চা করে চলে – ‘খেলারাম খেলে যা।’

বাবর আলী, তুমি কে ভাই? তুমি কোথায় যাচ্ছ, আর কোথা থেকে এলে? আসার সময় কী কী সঙ্গে নিয়ে এলে, কী কী হারিয়ে বা ফেলে এলে? এমন প্রশ্নের উত্তর লেখা আছে অকপট ভঙ্গিতে রচিত একটি 888sport alternative linkে। সৈয়দ শামসুল হকের আশ্চর্য ক্ষমতাময় এই ফিকশন – খেলারাম খেলে যা। প্রায় সাড়ে চার দশক আগে রচিত বাংলা 888sport live footballের সাহসী, সত্যপ্রবণ কিন্তু জিগীষা-চেতনায় একধরনের কৌশলগত কারণে মিথ্যেবাদী, কিশোরী-888sport promo code পটীয়সী চরিত্র বাবর আলী – যে কিনা খেলারাম খেলে যার প্রধান চরিত্র। জীবনের গভীরতম সত্যকে শুধু জ্ঞানে নয়, বেঁচে থাকার মধ্যে বা দৈনন্দিনতার মধ্যে নিয়ে এসেছে বাবর আলী। এটি তার ক্ষমতা। ফলে, স্বীকার করে নিতে হবে, সে ক্ষমতাবান। পুরো 888sport alternative linkে বাবর আলীর চূড়ান্ত কর্তৃত্ব বিরাজমান। খেলারাম খেলে যাতে বাবর আলীই হচ্ছে একমাত্র পরাশক্তি। তারপরও বাবর আলীর ব্যর্থ তা, পরাজয় গ্লানি – তা কি আমরা বিচক্ষণ-বিশ্লেষণের মাপকাঠিতে নিয়ে একটুও জোট-নিরপেক্ষ হয়ে ভাবব না? আমলে আনব না? তাই প্রায়-প্রায়ই, সদা কৌতুহলী মনে প্রশ্ন জাগে – কে তুমি ভাই, বাবর আলী?

কুড়িগ্রামের মনসুরদা নামক এক পরিচিত দারোগার কাছ থেকে লেখক সৈয়দ শামসুল হক কোনো এক সন্ধ্যায় শোনেন, যা, ‘কাহিনীও নয়, একটি বিবরণ মাত্র। কী একটা অপরাধের কারণে এক লোককে ধরে আনা হয় থানায়। অপরাধ স্বীকারকরণের পুলিশী উপায় – প্রহার। প্রহারে প্রহারে বিপর্যস্ত লোকটি একসময় তার অতীতের কথা বলতে শুরু করে যে, সে কতবড় হতভাগা। দেশভাগের পর লোকটি ভারত থেকে পাকিস্তান চলে আসে। দেশভাগের কিছু আগে তার এলাকায় হিন্দু-মুসলমানের দাঙ্গা হয়। আর, সেই দাঙ্গার সময় তার ছোটবোনটি ধর্ষিত হয় গুন্ডাদের হাতে। সে আর তার বোন বিকেলে বাড়ি ফিরছিল, তার কাছ থেকেই ছিনতাই হয় কিশোরী বোনটি। সে তাকে বাঁচানোর বদলে নিজেই প্রাণ নিয়ে পালায়। বোনটি চিৎকার করে তাকে ডাকতে থাকে – দাদা! দাদা! দূর থেকে দূরে মিলিয়ে যায় সে স্বর। লোকটি বলে, এখনো সে মাঝেমাঝেই বোনের ওই আর্তচিৎকারটি শুনতে পায়, তখন তার  জগৎ ভেঙে পড়ে, সে আর বাস্তব-অবাস্তব পাপ-পুণ্য ন্যায়-অন্যায় আর ভেদ করতে পারে না।’

দেখতে পাই, খেলারাম খেলে যা ফিকশনের শিরোনাম-প্ররোচিত চরিত্র বাবর আলীর উৎসবীজটি লুক্কায়িত অপরাধের মধ্যে, থানায় বসে, অপরাধী লোকটির বিপর্যস্ত, ঘোরাক্রান্ত স্বীকারোক্তির মধ্যে। দেখতে পাই, একটি দেশভাগ এই ক্যানভাসের গোড়ায় রয়েছে, রয়েছে হিন্দু-মুসলমান ঐতিহাসিক দাঙ্গা। দেখতে পাচ্ছি, কিশোরী বোনকে বিকেলে মাঠের মধ্যে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে কয়েকজন মানুষ, তাদের গুন্ডা বলি আর যাই বলি, তারাও মানুষ। যেন স্বাভাবিক, তবু প্রশ্ন জাগে মনে, থানায় ধরাপড়া লোকটি কিংবা 888sport alternative linkে রূপান্তরিত বাবর আলীকে না নিয়ে গিয়ে তারা তার কিশোরী বোন হাসনুকে কেন তুলে নিয়ে গেল?

সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা তো সম্প্রদায়গত, ধর্মাচ্ছন্ন। এতে করে কোনো কিশোরী মেয়েকে চূড়ান্ত খেসারত দিতে হবে কেন? বাড়ন্ত পৃথিবী থেকে হঠাৎ হারিয়ে যেতে হবে কেন? লক্ষণীয়, থানার লোকটি কিংবা বাবর আলী পালিয়ে নিজেকে বাঁচিয়েছে। এই গস্নানি-পরাজয় তাকে আমৃত্যু তাড়া করে ফেরে। যদিও, 888sport alternative linkের চরিত্র বাবর আলী নিজে তার অতীত ভাবতে চায় না, সে নিজেও বলে, ভাবনা তার শত্রু। কিন্তু এই শত্রু তাকে খেলারাম খেলে যা-প্ররোচিত জীবনের মধ্যেও হঠাৎ-হঠাৎই আকস্মিক কোপ মারে। বাবর আলী বোনকে হারানোর ভাবনায় পিষ্ট হয় নিজের মধ্যে, বাইরের কেউ তা জানে না। আমরা জেনেছি, একদিন বাবর আলীর নিজের একটা দেশ ছিল, এখন তা অন্যদেশ, বর্ধমান, যা ভারতের অংশ। তার বাল্যকাল, বয়ঃসন্ধিকালের দেশটা আজ আর তার দেশ নয়। সেই দেশ ভাগ হয়ে গেছে। কে ভাগ করেছে? শতভাগ সত্য, সেই ভাগ সে নিজে করেনি। অন্যের ইচ্ছায় সে তার দেশহারা, বাল্যকালহারা। এমনকি ঝাপসা হয়ে যাওয়া বাবা-মায়ের 888sport sign up bonusও তাকে অতটা তাড়িত করে না, কিশোরী ছোটবোন হাসনুকে হারানোর অসমর্থতা-পরাজয় যতটা ছোবল দেয় তার 888sport sign up bonus-সিন্দুকের ডালায়, হঠাৎ হঠাৎ! তাহলে এসব দেশভাগ-খেলার খেলারাম কে, বা কারা? জীবনের ব্যক্তিগত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তাদের, বাবর আলীর মতো?

যে-দেশে এসেছে বাবর আলী, সে মনে করে, এটি তার নিজের দেশ নয়। এখানকার কিছুই তাকে বাবা-মা-বোন বাড়িঘরদোর বা বাল্যকাল দেখাতে পারবে না, এটা সত্য। ফলে, শহর 888sport appর নাগরিক পেশায় প্রতিষ্ঠা পাওয়া যে-জীবন বাবর আলীর, টেলিভিশনে অনুষ্ঠান করে যেটুকু পরিচিতি তার – এসবের সামাজিক মূল্য তাকে বেশি আপ্লুত করে না। যদিও এ-প্রতিষ্ঠার বুনিয়াদে তার ‘খেলারাম খেলে যা’ জীবন একটা সুবিধা তাকে দিয়ে থাকে বটে, সেই সুবিধা তার অর্জিত। এই অর্জন সে ইচ্ছেমতো, খেলে খেলে খরচ করে চলে। এই অর্জন সে ব্যয় করে যৌনাবেগ তাড়িত হয়ে, প্রবিষ্ট হয়ে, কিশোরী-যুবতীর ভেতর, ভোগের নেশায়। দেখতেই তো পাচ্ছি, ভোগই জীবন – এই প্ররোচনা তাকে সারাক্ষণ আবিষ্ট, আচ্ছন্ন, আক্রান্ত, ধাবমান করে রাখে।

গত শতাব্দীর 888sport appsে ’৭০ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় তখনকার জনপ্রিয় সাময়িকী সন্ধানীতে ‘বাবরআলীনামা’ – খেলারাম খেলে যা। ক্রমবিকাশমান নগরজীবনের নাগরিক গন্তব্যে বাবর আলী মানবজীবনের এক রক্তমাতাল-পাতালপ্রবাহিত সত্য প্রতিষ্ঠা করে চলে। যদিও সেই কারণে, লাম্পট্যের দায় তার ঘাড়ে চাপিয়ে আমরা কিছুটা ভালো থাকতে পারি। সব্যসাচী কারিগর সৈয়দ শামসুল হক সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকা মানুষ, যা শক্তি। সৈয়দ হক সেই শক্তিতে চিত্রিত করেছেন বাবর আলীকে, প্রকারান্তরে বাবরের মধ্য দিয়ে যে-সত্যগুলো প্রতিভাত করেছেন – রচনাকালের সাড়ে চার দশক সময় পাড়ি দিয়ে এসেও সেই সত্য এখনো সত্য, হয়তো এ এক চিরকালের প্রভাবশালী সত্য। ফলে, খেলারাম খেলে যার বাবর আলী সবসময়ই বিরাজমান, বর্তমানেও বাবর আলী ঘুরছে-ফিরছে। তার ওপরে, ক্রমশ জীবন যেভাবে উন্মূল-ছিন্নমূল-শেকড়ছাড়া হয়ে উঠছে সনাতনী ব্যবস্থা ভেঙে ফেলে বা ছেড়ে এসে – এরকম সময়ে বাবর আলীদের 888sport free bet বেড়েছে কিনা, মনে মনে অনুমান করা যেতে পারে।

বাবর আলীর উদ্দেশ্য লক্ষ করি : কৈশোরোত্তীর্ণ তরুণীদের পটিয়ে সঙ্গমের দিকে নিয়ে যাওয়া, এতে তার কোনো অপরাধবোধ তো নেই-ই, বরং আছে এক আত্মগত জয়ের নেশা। চরিত্রটিই এমন যে, ‘ঝুঁকির মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকার প্রবল একটা আকর্ষণ চিরকাল অনুভব করেছে বাবর। বিপদ তার স্বাভাবিক পরিবেশ। উদ্বেগ তার পরিচ্ছেদ। এই দুয়ের বিহনে সে অস্বস্তি বোধ করে, মনে হয় বিশ্বসংসার থেকে সে বিযুক্ত। তাই বেঁচে থাকার প্রয়োজনে, স্বাভাবিকতার প্রয়োজনে, সে অবিরাম সৃষ্টি করে বিপদ আর ঝুঁকি।… অথবা তার কেবলই মনে হয়, কেউ যেন তাকে খুঁজছে। বাসা থেকে বেরোলেই মনে হয়, যেন কেউ তাকে খুঁজে পাচ্ছে না। তখন বাসায় ফেরার জন্য অস্থির হয়ে ওঠে। আবার বাসায় ফিরলে মনে হয় বাইরে, শহরে, কী যেন হয়ে যাচ্ছে যা সে জানতে পারছে না।’ আপাত অর্থে বাবরকে যৌনাকাঙ্ক্ষায় ছুটে বেড়ানো একজন নিঃসঙ্গ মানুষ মনে হলেও আত্মদ্বন্দ্বে অবতীর্ণ সে এমনভাবে, যেন তার মুক্তি নেই, যেন তার বিশ্রাম নেই, যেন তার কোথাও স্থিত হওয়ার নেই। স্থিতি আর বাবর আলী কখনো একসঙ্গে যাবে না – খেলারাম খেলে যার প্রধান চরিত্রটি তাই প্রতিষ্ঠা করে চলে সারাক্ষণ। কিন্তু এরকম বহুমুখী কামুক চরিত্রের মধ্যে রক্তবসতি গেঁড়েও, থেকে থেকে, হঠাৎ হঠাৎ তার মনে এসে তাকে ধাক্কা দেয় সেই পরাজয়, সেই ভয়াবহতা, দেশভাগের সময়কার সেই অমোচনীয় গস্নানি, সেই অসমর্থতা – তার ছোটবোন হাসনুকে টেনে নিয়ে গেল কয়েকজন গুন্ডা, বোনকে না বাঁচিয়ে সে নিজেকে নিয়ে পালিয়ে এলো! বাঁচার জন্য হাসনুর শেষ আর্তনাদ তাকে শিকার করে ফেরে ক্ষণে ক্ষণে, আমৃত্যু তাকে ছোবল মেরে যায় তার চলমানতার ফাঁকে ফাঁকে – ‘দাদা! দাদা!’

হাসনুকে সে বাঁচাতে পারেনি। এ-প্রসঙ্গে কথা888sport live footballিক আহমাদ মোস্তফা কামাল খেলারাম খেলে যা নিয়ে একটি রচনা লিখেছেন। আমি মনে করি, আহমাদ মোস্তফা কামালের লেখাটি লেখার প্রয়োজন ছিল এ-888sport alternative link গ্রন্থকারে প্রকাশের পরপরই কিংবা সন্ধানীতে প্রকাশের পরেই। বাবর আলী ও তার বাস্তবতা যথার্থ প্রাসঙ্গিক দৃষ্টিভঙ্গিতে তুলে ধরেছেন আমাদের প্রজন্মের শক্তিশালী কথা888sport live footballিক, আমার তর্কাতর্কির বন্ধু আহমাদ মোস্তফা কামাল। খেলারাম খেলে যা সম্পর্কে অশস্নীলতার যে-গুজব আমাদের মধ্যবিত্ত সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে প্রায়, তা যে খুবই বালখিল্য ও নিতান্তই নবশিক্ষিত এক রক্ষণশীল সমাজের আলস্যচর্চা – আহমাদ মোস্তফা কামাল সেই গুজবের প্রয়োজনীয় জবাব দিয়েছেন তাঁর রচনায়। কামালের রচনা পত্রিকায় প্রকাশ হয় ২০০১ সালে। যদিও ততদিনে সৈয়দ শামসুল হক-বিরচিত প্রবল শক্তিমত্তায় চিত্রিত খেলারাম খেলে যা লোকমুখে প্রায় ‘পর্নোগ্রাফি’র গালি বা ভৎর্সনা অর্জন করে ফেলেছে। এটি কোনো অগ্রসরমানতার উদাহরণ নয়, এটি দুর্ভাগ্যপীড়িত বাস্তবতা। সেক্ষেত্রে, প্রথম পাঠে খেলারাম খেলে যা লুকিয়ে পড়ার আবেগে অনেক পাঠকেরই বাবর আলীকে এপিঠ-ওপিঠ ধরতে ব্যর্থতা তৈরি হয়; কিন্তু পাঠক হিসেবে আরেকটু ম্যাচিউর হয়ে ওঠার দায় মিটিয়ে নিলে কিংবা জীবন-জগৎ-যৌনতা-ক্ষমতা-অর্থ-রাজনীতি-ইতিহাস-পাতিহাঁস মোদ্দাকথা জীবনচাষ সম্পর্কে অভিজ্ঞতার স্তর পুরু হয়ে উঠলে, তখন একবার হাতে নেওয়া প্রয়োজন রবীন্দ্রোত্তর বাংলা 888sport live footballের বহুমুখী ক্ষমতার লেখক সব্যসাচী সৈয়দ শামসুল হককে, আলোচ্য খেলারাম খেলে যা তো বটেই। এ কথা আজ আমিও স্বীকার করছি, একজন পাঠক হিসেবে, এত আধুনিক, এত এগিয়ে থাকা অভিনব লেখক সৈয়দ শামসুল হকের সৃষ্টির প্রতি যে-সম্মান প্রাপ্য ছিল,  যে-কদর যথার্থ তার সৃষ্টিকলার জন্য, আমরা তা দিতে কার্পণ্য করেছি অনেকটাই, সে হয়তো আমাদের চিরায়ত কৃপণসর্বস্ব স্বভাবের দোষে। তাই বাবর আলীর মতো একজন ‘দেশহীন’ 888sport sign up bonus-ছিন্ন চরিত্রকে বুঝতেও আমরা সমানভাবে ব্যর্থ হই। তা না হলে, খেলারাম খেলে যা নিয়ে একটি দুর্দান্ত ছবি কেন বানানো হয়নি আজো? ছবি হলে, বাংলা live chat 888sportে বাবর আলীকে তখন দেখতে পাবে আমাদের আপামর দর্শক, যারা হয়তো সরাসরি 888sport alternative linkের পাঠক হওয়ার সুযোগ ও সামর্থ্য রাখে না। কারণ বাবর আলীর অস্তিত্ব, অসহায়ত্ব, পলায়নপরতা এবং তা থেকে একদিন একগুঁয়ে প্রতিশোধ-পরায়ণতা – একে আমরা আমাদের সচেতন প্রজ্ঞায় ওভারলুক করতে পারি না। ‘কোনটা স্বাভাবিক? পালিয়ে আসা? না, লড়াই করা? গল্পে 888sport alternative linkে মানুষের আদর্শে রুখে দাঁড়ানোটাই চিরকাল নন্দিত। সিনেমাহলে তালি পড়ে। বই পড়তে পড়তে প্রশংসায় পাঠকের মুখ লাল হয়ে ওঠে। কিন্তু সে নিজে, নিজের প্রাণ নিয়ে পালিয়ে এসেছে। সে কি ঘৃণিত বলে চিহ্নিত হবে? নাকি আদর্শটাই ভুল?’ খেলারাম খেলে যার এই অংশ উদ্ধৃতির পরই কথা888sport live footballিক আহমাদ মোস্তফা কামাল বিশেস্নষণে গেছেন, ‘হ্যাঁ, বাবরের নিজের কাছেই প্রশ্ন আছে, ক্ষরণ আছে, দ্বন্দ্ব আছে। যদিও 888sport alternative linkের দু-একটি জায়গায় বাবর আলী বলেছে যে, অনুতাপ তার স্বভাববিরুদ্ধ, তার মধ্যে কোনো অনুতাপ নেই – কিন্তু কথাটি সত্য বলে মনে হয় না। ‘আমার মধ্যে কোনো অনুতাপ নেই’ – কথাটি বলার অর্থই হচ্ছে – এ নিয়ে আমার মধ্যে প্রশ্ন-দ্বন্দ্ব-ক্ষরণ আছে, নইলে আর ফলাও করে অনুতাপহীনতার কথা বলা হতো না। এ হচ্ছে নিজেকে আড়াল করার এক পদ্ধতিমাত্র। বাবর চরিত্রটি এখানে এসেই দ্বন্দ্ববহুল-বহুমাত্রিকতার পরিচয় দেয়, তার অন্তর্গত এই রক্তক্ষরণ আর দ্বন্দ্বটি খেয়াল না করলে পুরো 888sport alternative linkের কোনো মূল্যই থাকবে না। এবং সেটিই এই 888sport alternative linkের ভাগ্যে জুটেছে। যেসব পাঠক এ-888sport alternative link সম্বন্ধে বিরূপ ধারণা পোষণ করেন, তারা সম্ভবত বাবরের চরিত্রটিকে একমাত্রিক হিসেবেই চিহ্নিত করেছেন – সে লম্পট, কামুক, বিকৃত। তার মধ্যে খুব গভীর কিছু কষ্ট আছে, চোখ-ভিজে ওঠা কিছু বেদনা আছে, দ্বন্দ্ব আর ক্ষরণ আছে, অন্যমনস্ক পাঠক তা খেয়ালই করেননি।

শুধু বোনকে পশুদের কাছে ফেলে রেখে পলায়নই কি তার বেদনার একমাত্র কারণ? না, তা-ও নয়। সে নিঃসঙ্গ। যে অনিবার্য, পরিত্রাণহীন অন্তর্গত নিঃসঙ্গতায় প্রতিটি মানুষ যাপন করে তার দুর্বহ জীবন, বাবরের নিঃসঙ্গতা তার চেয়ে খানিকটা অধিক। দেশভাগ তাকে টেনে এনেছে এখানে। এ-দেশ তার নয়। এ-মাটির জন্য জন্মগত টান নেই তার, এবং সংগত কারণেই সে এখানকার কোনো কিছুর সঙ্গে সংলগ্ন বোধ করে না। তার যা কিছু মমতা বর্ধমানের জন্য, শৈশব-কৈশোরের 888sport sign up bonus যেখানে ফেলে এসেছে সে। এমনকি ঘরের কোণে লেবুগাছটির জন্যও তার গভীর প্রেম। সে স্বজনহীন। মা-বাবা প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে অন্তর্হিত, বোন অপহৃত ও নিহত, যার জন্যে বাবরের ভেতরে আছে গভীর গস্নানি ও কান্না। তার 888sport sign up bonus বলতে আছে এই একটিমাত্র ঘটনা, যা তাকে ক্ষত-বিক্ষত করে দেয়। এই পর্যবেক্ষণের পর খেলারাম খেলে যা থেকে কয়েকটি বাক্য যদি আমরা উদ্ধৃত করি, এক জায়গায় দেখব, লেখা : ‘এখন আরো একা লাগল বাবরের। রক্তের সঙ্গে যাদের সম্পর্ক তাদের কথা মনে পড়তেই এই বোধ বিরাট হয়ে উঠেছে – এখন তার চারপাশে এদেশে কেউ নেই। আপন কাকে বলে সে ভুলে গেছে বলেই যারা আপন তারা তাকে এমন একা করে যাচ্ছে।… আমার কেউ নেই। কেউ নেই। কোনো কিছু আমার নয়। না মাটি, না মন, না মানুষ।’

পৃথিবীতে, বাবর লড়াই করে পৃথিবীর সঙ্গে। যেন তার কোনো বড্ড প্রতিশোধ নেওয়ার আছে। এমনকী তার যে-বোনকে যৌনতার শিকারেই ছিনতাই হতে হয়েছিল, পরবর্তীকালে আমরা দেখি একদিন বাবরই আবার যৌনতার শিকারে বেরিয়ে পড়ে। বাবর জিততে চায় যৌনতার সামাজিক ট্যাবু ভেঙে, পৌঁছুতে চায় একজনের পর একজন নবীনার রক্ত-মাংসের নব-নব অজানাকে আবিষ্কারের আনন্দে। আমরা দেখছি, বাবরের কোনো দেশ নেই, পৃথিবীর মধ্যে থেকেও বাবর যেন পৃথিবীর কারো আর হয়ে উঠতে পারে না। তবু খেয়াল করে দেখলে টের পাওয়া যায়, নানামাত্রায় প্রতিভাত যে-বাক্য, যে-মন্ত্র, যে-মধুর নির্দেশ তার চক্ষু খুলে দেয়, খেলারাম খেলে যা তা শুধু যৌনতাপ্রসূতই নয়। শক্তি-ক্ষমতা কাঠামো অনুসারে মানুষের ইচ্ছার সমস্ত করাল-ভয়াল-দখলের মাঠে মাঠে এ খেলা যেন চলতেই থাকে। কারণ, সত্য যে, কথিত ‘সভ্যতা’র ওপরই আদ্যোপান্ত প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে এই দর্শন – ‘খেলারাম খেলে যা।’

জাগতিক কর্তৃত্বের সেই সত্য সত্য বটে। কিন্তু কই, জগতে গণমানুষকে শোষণ করা ‘সভ্যতা’র অভিভাবকদের সেই কর্তৃত্বকে নিয়ে তো কোনো কুৎসাপরায়ণতা নেই! তাতে তো আমাদের সবিশেষ নিন্দাজ্ঞাপন নেই! উচ্চারিত কোনো অভিযোগ নেই। বরং একটু খোশমেজাজের উপাদান হিসেবে আমরা অবগত – রাসপুটিনের যৌনাঙ্গ নাকি মমি করে রাখা আছে খুবই খরচ বহুল কোনো জাদুঘরে, মানুষ গিয়ে টিকিট কেটে সেই লিঙ্গ দেখে আসে। মানুষের ভেতরে এ কোন নেশা? কোন আনন্দ? তাহলে বাবর আলী দোষ করল কী? নাকি বাবর আলীকে দোষী সাব্যস্ত করলে, খুব অন্তর্গত ইচ্ছেকে গোপন রেখেও আমরা বিশুদ্ধ থাকতে পারি কিংবা আমরা এরকম বিশুদ্ধতার আচরণ দেখিয়ে চলতে পছন্দ করি, তাই?

হ্যাঁ, বাবর আলী আমাদের এই পছন্দকে পছন্দ করে না। তদুপরি বাবর তার পরাজয় ভেঙে একবার জয়ী হতে চায়। সে তার বোনকে বাঁচাতে না পারার ব্যর্থতায় ক্রনিক্যালি আক্রান্ত হয়ে থাকে। ফলে, আমরা দেখতে পাই, খেলারাম খেলে যা ফিকশনের প্রায় শেষ দিকে এসে বাবরের জীবনের শেষ তরুণী জাহেদাকে সে অর্জন করে, সত্য বললে শিকার করে। তারপর, ঘোর বিপদে এই জাহেদাকেও যখন তার কাছ থেকে আবার কয়েকজন যুবক ছিনিয়ে নিয়ে ধর্ষণ করতে যথাসাধ্য সচেষ্ট, কেন জানি, তখন জাহেদাকেই তার মনে হয় নিজের ছোটবোন হাসনু। কর্তৃত্ব ও আত্মরক্ষার সেই বিভ্রান্তির ভেতরে বাবর আলী জাহেদাকেই হাসনু বলে ডাকে। সে তার বোন হাসনুকে বাঁচাতে পারেনি কিন্তু সে জাহেদাকে বাঁচাতে চায়। সে এবার লড়াই বেছে নেয়। সাভারের শালবনের সন্ধ্যায়, কাঁঠালপাতা কেটে ফেরা তাগড়া গ্রামবাসীত্রয়ের সঙ্গে সে জীবনপণ আক্রমণ-প্রতিআক্রমণে যায়। গ্রামবাসী তিন যুবকও বাবর আলীকে পরাজিত করে তরুণী জাহেদাকে সম্ভোগে পেতে চায়, ধর্ষণ করতে চায় – এই চাওয়া যেন কালে কালে, জনে জনে চলতেই থাকে। প্রাণিজগতে এই চাওয়া এক খেলা। ফলে, খেলা চলতেই থাকে। খেলা যেন কখনই শেষ হয় না। তাহলে এয়ারপোর্টের বাথরুমের দেয়ালে লাল পেনসিলে যে-যুবক লিখে রেখেছিল – ‘খেলারাম খেলে যা’ সে কি তবে ভুল লিখেছিল? বাবর আলীকে আমরা চিনব বটে, কিন্তু সেই অজ্ঞাতপরিচয় যুবককে আমরা হয়তো আর মনে করতে পারব না। চিনব না তবু আমাদের মর্মে গেঁথে থাকবে আজীবন তার পৃথিবী সম্পর্কে চূড়ান্ত মূল্যায়ন – ‘খেলারাম খেলে যা।’

যে-জীবন প্রতারিত, বঞ্চিত, যেন সেই প্রতারণা-বঞ্চনাহেতু সে রেখে যায় এই অমোঘ সত্য – ‘খেলারাম খেলে যা।’ যেন পরাজিত কেউ গোত্রের অন্যদের পরাজয়ের হাত থেকে বাঁচিয়ে দিতে লাল পেনসিলে বাথরুমের দেয়ালে এই মধুর নির্দেশ কিংবা উপদেশবাণী রেখে যাচ্ছে পৃথিবীতে। সেই নির্দেশ কী? আমরা ভুলব না এয়ারপোর্টের বাথরুমের দেয়ালে লাল পেনসিলে যা লেখা ছিল…

নদী-নিমজ্জিত, নক্ষত্র-পীড়িত, ল্যান্ডস্কেপ-বর্ণিত বাংলা 888sport alternative linkের সারিতে বহু-বহুকাল অপবাদে ডুবে থেকেছে সৈয়দ শামসুল হকের এই বিরচনা, এই ডেসপারেট 888sport live chatকর্ম। ষাটের দশকের শেষপর্যায়ের শহর 888sport appর চরিত্র হলেও বাবর আলীর অস্তিত্ব এখনো বর্তমান, তদুপরি দাপুটে। 888sport alternative linkের শেষে দেখলাম, ক্ষত-বিক্ষত রাতের অন্ধকারে বাবরের গাড়িটা ব্রিজের রেলিং ভেঙে জাহেদাসহ সে নদীর মধ্যে পড়ে মৃত্যুপ্রতিপন্নতার দিকে গেলেও, গাড়িতে তখন হাসনু ছিল। কিন্তু হাসনু কোথায়? গাড়িতে তো জাহেদা। লংড্রাইভে জাহেদাকে সে রংপুরে নিয়ে গিয়েছিল। রাতে একসঙ্গে ছিল ডাকবাংলোতে। প্রথম রাতে সফল না হলেও পরের রাতে বাবর আলী জাহেদাকে নিজের করায়ত্তে পায়। সেই জাহেদার মুখের আদলের মধ্যে বাবর আলী তার এই বাঁচা-মরার অন্তিমে এসে, দেখতে পায় বহুদিন আগে বর্ধমানের মাঠের মধ্যে গুন্ডাদের কাছে ছিনতাই হয়ে যাওয়া তার বোন কিশোরী হাসনুর মুখ। পোকায় খাওয়া দাঁত ছিল হাসনুর। তবে এবার সে হাসনুকে বাঁচাতে পারল! বাঁচাল জাহেদাকে। গ্রামবাসী যুবকদের কাছ থেকে বাঁচালেও উদ্ভ্রান্ত এই এন্ড অব দ্য জার্নিতে ব্রিজের রেলিং ভেঙে গাড়ি পড়ে গেল রাতের নির্মমতায়, নদীর মধ্যে। সব শেষ।

কিন্তু বাবর আলী বিদ্যমান, থাকবেও। হয়তো বাবর আলী 888sport alternative link থেকে বেরিয়ে এখনো হেঁটে বেড়ায়, গাড়ি চালায়। কৌশলে মিথ্যে কথা বলে কৈশোরোত্তীর্ণাকে মুগ্ধ করে দেওয়ার জন্য বা সম্ভোগে পাওয়ার জন্য। তার দেশ নেই, 888sport sign up bonusলগ্ন পরিবার নেই, আপনজন নেই।

এ-কথা সত্য, সিনেমা নির্মাণচর্চার কয়েক বছর ধরে বাবর আলীকে চিত্রায়ণ করার স্বপ্ন ঘাঁই মারে আমার মাথায়। আমি দেখতে পাই বা দেখাতে চাই, 888sport appsের সিনেমায় সংযোজিত একটি সাহসী ছবি খেলারাম খেলে যা দর্শকের সামনে প্রদর্শিত হচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি, 888sport alternative linkকে যতখানি অপবাদ নিতে হয়েছে 888sport appsে বা বাংলা ভাষায়, খেলারাম খেলে যা live chat 888sportরূপে সেই অপবাদের দায়মুক্তি নেওয়ার ক্ষমতা রাখে। দায়মুক্তি দিতে পারে আপামর দর্শক। সম্ভবত পাঠকের চেয়ে দর্শকের ক্ষমতা বেশি, তাছাড়া তুলনামূলক দর্শক 888sport free betতেও অধিক। দর্শক নানামাত্রার, পাঠক সাধারণত একমাত্রিক। 888sport appsের কথা888sport live footballের live chat 888sportায়ন কিছু কিছু হয়েছে সত্য, এখনো হচ্ছে কিন্তু খেলারাম খেলে যাকে কেউ দর্শকের সামনে তুলে ধরতে চায়নি কেন – কথায় কথায় এমন কৌতূহল একদিন এক ঘরোয়া আড্ডায় সৈয়দ শামসুল হকের কাছে পেশ করেছি, সেদিন বিপজ্জনক চরিত্র বাবর আলীর লেখক আমাকে উত্তর দিলেন, ’৭০ সালে যখন এটি সন্ধানীতে বেরোয়, জহির রায়হান ছবি করতে চেয়েছিলেন, তারপর তো মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেল, যুদ্ধশেষে আমরা আরো অনেকের সঙ্গে জহির রায়হানকেও হারালাম।’

প্রায় সাড়ে চার দশক পরে দ্বিতীয়জন হিসেবে যখন আমি প্রস্তাব করি খেলারাম খেলে যা নিয়ে ছবি বানাব, তখন দুর্ধর্ষ বাবর আলীর প্রণেতা সব্যসাচী হক শোনালেন অনেক কথা। আস্থার সঙ্গে শুনিয়ে চললেন, খেলারাম খেলে যা নিয়ে তার ব্যক্তিগত জীবনেও নানান জায়গায় বিব্রত হওয়ার কথা। তারুণ্যে উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হক ডাক দিলেন তার স্ত্রী লেখক আনোয়ারা সৈয়দ হককে। আমার স্বপ্নের গন্তব্যে তার সমর্থন প্রচ্ছন্ন রেখে তিনি স্ত্রীকে বললেন, ‘টোকন ছবি করতে চায়।’

আনোয়ারা সৈয়দ হক জানতে চান, ‘কী নিয়ে ছবি? ছবির নাম কী?’ সে-ক্ষণে, এয়ারপোর্টের বাথরুমের দেয়ালে সেই অজ্ঞাত যুবকের লাল পেনসিলে লেখা কিংবা বাবর আলীর জীবনদর্শনই উচ্চারণ করলেন সব্যসাচী লেখক, যিনি সময়ের চেয়ে অনেক অগ্রসরমান, সৈয়দ শামসুল হক, তার মুখ থেকেই বেরোল – ‘খেলারাম খেলে খেলে যা।’

দুই

অনেকদিন তো হলো, শতবর্ষ পাড়ি দিয়ে দ্বিতীয় শতকে প্রবেশ করেছে বিশ্বlive chat 888sport888sport live chat। এদিকে 888sport appsের live chat 888sportের ইতিহাসও ছ’দশক অতিক্রম করে চলেছে। কিন্তু আর্ন্তজাতিকভাবে পৌঁছে নানান ভাষার, নানান জাতের, নানান নিরীক্ষাপ্রবণতার live chat 888sportের মুখোমুখি হতে পারা থেকে, ভালো-মন্দের মোকাবিলার যোগ্যতায় অংশ নেওয়া থেকে কেন জানি এখনো 888sport apps অনেক দূরেই থেকে যাচ্ছে। এই উষ্মা নিশ্চয়ই ভালো নয় কোনোভাবেই। আমাদের ছবি এখনো মেলোডি স্টোরি, নায়ক-নায়িকানির্ভর। তারা যে করেই হোক পর্দায় প্রেম করে চলে। নায়ক-নায়িকার নামেই ছবি দেখতে যায় দর্শক। লজ্জার কথা, এটি পিছিয়েপড়া সিনেমা-বাস্তবতার কথা। ভালো ছবির কথা নয়। নিরীক্ষায় নতুন কিছু নির্মাণরুচির কথা নয়। এখনো আমাদের ছবির ‘নায়ক’ মানেই ‘নায়িকা’কে স্বপ্নে দেখে নাচানাচি করে, তার কোমর ধরে গান গায়, অকারণে বিভোর হয়ে পড়ে। ‘নায়ক’ এখনো মারধর করে অসংখ্য প্রতিপক্ষকে পরাজিত করে দিতে সমর্থ। ‘নায়ক’ এখনো ইউনিভার্সিটিতে পড়ে, কেউ কেউ কলেজে পড়ে। সে পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়, তারপর পুলিশ ইন্সপেক্টর হয়ে চোর-ডাকাত-গুন্ডা ধরে বেড়ায়। নায়কের কোনো চরিত্র বিচ্যুতি হয় না, নায়ক যেন স্বপ্নালোকের কল্পনার মহৎ মানব, কিংবা নায়ক সব সময় প্রতিবাদী, পরোপকারী। চরিত্রে যুবক, তবু মাস্টারবেশন করে না। নায়ক যেন কখনই নিঃসঙ্গ হয় না। মিথ্যে কথা বলে না। খুব লাল্টুপল্টু দেখতে ছোকরারাই ‘নায়ক’ চরিত্র করে সিনেমায়। কিংবা নায়ক খুব দুঃখী, সমাজের 888sport app দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে ব্যস্ত থাকে। এ কী? এ তো রূপকথা! এ তো হীরামন-হারামন কাহিনিচিত্র! এই বাজার অর্থনীতির বিধিব্যবস্থার মধ্যে হাবুডুবু খেয়েও এরকম ‘নায়ক’ থাকতে পারে বর্তমান সমাজে? থাকলে, একদমই কল্পিত ‘নায়ক’ সে। এদিকে আমাদের এই ফেটে যাওয়া দর্পণ-বিম্বিত বহতা সময়টা কী রকম? এই সমাজে ‘নায়ক’ কে? কী তার রোল-পেস্ন? এখন কি ‘নায়ক’ প্রতিভাত হয় খুব সহজে? যার যার প্রতিপার্শ্ব বা নিজের বাস্তবতা কী দেখায়? এটা খুবই হাস্যকর, চলতি সমাজে যে ধরনের কেউ নেই সেই রকম চরিত্র বানিয়ে ‘সিনেমা’ নির্মাণের বাস্তবতা আর কোথায়, উপমহাদেশ ছাড়া? অবশ্য এই রকম নায়কোচিত চরিত্র যে পৃথিবীর সব live chat 888sport ইন্ডাস্ট্রি থেকেই উধাও হয়ে গেছে – তাও বলার দিন আসেনি। তবে এ-কথা আমরা জানি, বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভাষার live chat 888sport888sport live chatের নব-নব বিকাশ ঘটে চলেছে। 888sport apps, বাংলাভাষার live chat 888sportও কি live chat 888sportের বদলে যাওয়া নবতরঙ্গের মুখে নিজেকে বদলে নেবে না? 888sport live chatের 888sport app মাধ্যম সৃজনকলায় কত কত বাঁক পরিবর্তন ঘটিয়ে চলেছে, কিন্তু পুঁজি বিনিয়োগনির্ভর ও টেকনোলজিনির্ভর live chat 888sport888sport live chat কি সেই পরিবর্তনের মুখে নিজেকে বদলের জন্য দাঁড় করাবে না? তারপর নব চেতনার স্বাতন্ত্র্য বিকাশে এদেশের live chat 888sportও কি মুখোমুখি দাঁড়াবে না স্যাটেলাইট যুগের বাংলাভাষার দর্শক বা 888sport app ভাষার দর্শকের সামনে? সে-ক্ষমতা কি নেই আমাদের লালিত স্বপ্নের, পরিশ্রমের? কিংবা ক্ষমতা কি নেই আমাদের ছবি-নির্মাণচিন্তার স্বপ্নগ্রস্ত-শ্রমিকদের কিংবা ছবিতে বিনিয়োগকারী কোনো প্রতিষ্ঠানের? না থাকার কী আছে? 888sport appsের live chat 888sport888sport live chatের নবতরঙ্গের জাগরণ নিশ্চয়ই সমাসন্ন। বহুমুখী চর্চা ও সময়ের দাবিতেই সে-বাস্তবতা অনুভব করছি।

নানারকম চিন্তা-স্বপ্ন-প্রেম ছটফট করছে আমার মাথায়। ক্রমাগত সেই স্বপ্ন নির্মাণের লে-আউট প্রসারিত হয়েই চলেছে আমার করোটির মধ্যে। সত্য যে, লেখালেখিতে বাস করার অভিজ্ঞতা, ছবি আঁকানো বিশ্ববিদ্যালয়-ইনস্টিটিউটের বিদ্যানুশীলন আমাকে শেষ পর্যন্ত ছবি বানানোর দক্ষযজ্ঞে ঠেলে দিয়েছে। সেই ভঙ্গিতেই আমি  ব্ল্যাকআউট বানিয়েছি। ৯৭ মিনিটের ছবি ব্ল্যাকআউট। সাম্প্রতিক শহর 888sport appর আর্ট-কালচারে জীবন জড়ানো দুই যুবকের স্বপ্ন-স্বপ্নভঙ্গ-নৈরাশ্যবেদন-যৌন অবদমনকে কেন্দ্রে রেখে ইমেজপ্রধান ছবি – স্টোরি উইদাউট স্টোরি : ব্ল্যাকআউট। এরপর মুক্তিযুদ্ধ-সাম্প্রদায়িকতা এবং বর্তমানের ঘূর্ণাবর্ত-চক্রাকারে আটকে পড়ে অতীত-ভবিষ্যৎ সময়ের কাঠামো ভেঙেপড়া পুরেনো শহরের একটি মহলস্নার মানুষের মনোজগতে ঘটমান জাদুবাস্তবতা নিয়ে শহীদুল জহিরের ‘কাঁটা’ গল্পটি সরকারি অনুদানে নির্মাণাধীন, যা আমার দ্বিতীয় ছবি। এবং খুব শিগগিরই কাঁটা ছবির কাজ শেষ হয়ে পড়ছে। কিন্তু কয়েক বছর ধরেই, ইতিহাসের সঙ্গে ব্যক্তির আত্মদ্বন্দ্বের জটিলতায় একটি ছবি বানানোর নেশায় আমি আক্রান্ত। সেই নেশাদ্রব্য খেলারাম খেলে যা – সাড়ে চার দশক আগেই নেশাদ্রব্যের জোগানদাতা হয়ে আছেন সৈয়দ শামসুল হক। মনে মনে দেখতে পাই, পাঠকের অহেতুক বালখিল্য বিতর্কযুগ পেরিয়ে এসে খেলারাম খেলে যা চিত্রায়ণের পর অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহে বসে ছবির মধ্য দিয়ে দেখছে অগণন দর্শক, নিশ্চয়ই ‘খে. খে. যা’র দর্শক বাবর আলীকে মিসট্রিট করবে না!

দেশভাগ, গ্লানি-পরাজয়, ক্ষরণমুখী হয়েও ছবিতে, স্ক্রিনে দাবড়ে বেড়াবে বাবর আলী, তার সঙ্গে যুক্ত লতিফা, মিসেস নফিস, বাবলি বা জাহেদা যেমন, বারবার স্ক্রিনেই বাবর আলীর মুখোমুখি হবে প্রণেতা সৈয়দ শামসুল হক। এতে করে দূরত্ব মাপা যাবে। এবার মাপতে চাই। মাথায় নেই – এটি এখন ফটোগ্রাফি হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় উন্মুখ স্বাধীনতার অবাধ পটভূমি – বাথরুমের দেয়ালে উৎকীর্ণ প্রতারিতের অভিজ্ঞান, ভাবনায় নির্মাণাধীন ছবি – খেলারাম খেলে যা।

০১.০৮. ২০১৩, 888sport app