বারামখানা

আবু সাঈদ তুলু

  মরমি বাউলসাধক লালন শাহের জীবন ও আখড়াকেন্দ্রিক বিকাশ নিয়ে 888sport appর স্বনামধন্য নাট্যসংগঠন ‘থিয়েটার’ প্রযোজনা করেছে নাট্য বারামখানা। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মনের মানুষ 888sport alternative link-অনুপ্রাণিত এ-নাট্যটি রচনা করেছেন পান্থ শাহরিয়ার এবং নির্দেশনা দিয়েছেন দলের সদস্যা ত্রপা মজুমদার। বারামখানা নাট্যটির কাহিনি-888sport alternative linkে বিধৃত লালন শাহের জীবনচরিত আখড়াকে কেন্দ্র করে হলেও দেশবিভাগোত্তর এবং 888sport apps সময়ে আখড়াকেন্দ্রিক বিদ্যমান পরিস্থিতির উপস্থাপনই মুখ্য। লালন শাহ থাকাকালীন তাঁর আখড়া; সময়ের পরিক্রমায় আজকের দিনে আখড়াটির অবস্থাই নাট্যবিষয়। এ আখড়াকেন্দ্রিক জটিলতা, ধর্মব্যবসা, স্বার্থান্বেষী চিত্র, ক্ষমতার অপব্যবহার প্রভৃতির চিত্র অত্যন্ত সুনিপুণভাবে ফুটে উঠেছে নাট্যটিতে। গত ১৩ মার্চ 888sport appর সেগুনবাগিচার 888sport live chatকলার একাডেমীর মূল মঞ্চে নাট্যটির প্রদর্শনী হয়। ওই প্রদর্শনীর ওপর ভিত্তি করে লালনের জীবন ও বিকাশে আখড়াকেন্দ্রিক বিদ্যমান পরিস্থিতির উপস্থাপন, নির্দেশকের চিন্তন ও শৈল্পিকতার সহযোগমূলক আলোচনাই লেখাটির মূল অভীষ্ট।

বারামখানা নাট্যটি প্রযোজনা করেছে 888sport appsের স্বনামধন্য নাট্যদল ‘থিয়েটার’। এটি দলের ৪১তম প্রযোজনা। থিয়েটার 888sport appsের নাট্যাঙ্গনের অতিপরিচিত একটি নাট্যসংগঠন। ১৯৭২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি কবীর চৌধুরী, রামেন্দু মজুমদার, আবদুল্লাহ আল মামুন, ইকবাল বাহার চৌধুরী, ফেরদৌসী মজুমদার প্রমুখের নেতৃত্বে থিয়েটার নাট্যদলের যাত্রা শুরু হয়। নাট্যসংগঠনটি নাট্যশিক্ষণ ও পত্রিকায় প্রকাশের কৃতিত্বে গৌরবোজ্বল। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর নাট্য শিক্ষণ কার্যক্রমের বাইরে থিয়েটার নাট্যদলের তত্ত্বাবধানে দেশব্যাপী নাট্যশিক্ষা কার্যক্রম অত্যন্ত বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে 888sport appsের নাট্যচর্চায়। থিয়েটার-পৃষ্ঠিত ‘থিয়েটার স্কুল’কে নাট্যকার-নির্দেশক আবদুল্লাহ আল মামুনের মৃত্যুর পর নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘আবদুল্লাহ আল মামুন থিয়েটার স্কুল’। 888sport appsের নাট্যচর্চার নেতৃত্বেও এ-দলটির বলিষ্ঠ ভূমিকা রয়েছে। বর্তমান আন্তর্জাতিক থিয়েটার ইনস্টিটিউটের বিশ্বসভাপতি এ-সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতাসদস্য রামেন্দু মজুমদার। এ দল থেকে 888sport appsের নাট্যাঙ্গনের সবচেয়ে পুরনো হিসেবে স্বীকৃত থিয়েটার পত্রিকাটি রামেন্দু মজুমদারের সম্পাদনায় দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে প্রকাশিত হয়ে আসছে। তাছাড়া নাট্যচর্চায় বিশেষ কৃতিত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ থিয়েটার নাট্যদল প্রতি বছর ‘মুনীর চৌধুরী সম্মাননা পদক’ ও ‘মোহাম্মদ জাকারিয়া 888sport sign up bonus পদক’ দিয়ে আসছে। ১৯৮২ সালে দলটি ভাগ হয়ে যায়। থিয়েটারের এ-মূলধারাটি থিয়েটার বেইলি রোড নামে নাট্যকর্মীদের কাছে অতিপরিচিত। এ-নাট্যদলের উল্লেখযোগ্য প্রযোজনাগুলো হচ্ছে – সুবচন নির্বাসনে, এখন দুঃসময়, পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, ম্যাকবেথ, ক্রীতদাস, ঘরে বাইরে, থিয়েটারের পালা বদল, কুরসী, বিষলক্ষ্যার ছুরি, দ্যাশের মানুষ, আস্তিগোনে, কৃষ্ণকান্তের উইল, মেরাজ ফকিরের মা, চিঠি, স্বপ্নগিরি প্রভৃতি।

থিয়েটারে ৪১তম প্রযোজনা এ-বারামখানা নাট্যটি, যাতে লালনের জীবনপ্রবাহ ও আখড়াকেন্দ্রিক বিদ্যমান পরিস্থিতি উপস্থাপিত হয়েছে। 888sport appsি সংগীত ও সংস্কৃতিতে লালনকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার অপেক্ষা রাখে না। বাউল গানের একজন গুরুস্থানীয় সাধক হিসেবে লালনের পরিচিতি চারদিকে। বাউলধারাকে অত্যন্ত জনপ্রিয়তায় নিয়ে গেছেন বাউলস্রমাটখ্যাত লালন শাহ। 888sport live footballিক মীর মশাররফ হোসেনের সম্পাদনায় লালনের মৃত্যুর পর হিতকরী পত্রিকায় প্রথম লালন সম্পর্কে  সংবাদ-নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। লালন ছিলেন একাধারে বাউলসাধক, রচনা করেছেন সাধন-ভজনমূলক অসংখ্য সংগীত; সুর করেছেন এবং নিজেও গেয়েছেন। সাধারণত লালন ফকির নামে তিনি  পাঠক-পরিচিতি পেলেও তাঁকে অনেকে লালন সাঁই, লালন ফকির, লালন শাহ বা মহাত্মা লালন নামেও অভিহিত করে থাকেন। লালনের জীবনচরিত নিয়ে এখনো অনেকাংশে ধোঁয়াশাই বিদ্যমান। জীবনপরিক্রমটির বেশিরভাগই লালনের গানের ওপর ভিত্তি করেই বিবেচিত হয়ে থাকে। হিতকরী পত্রিকার সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ‘ইহার জীবনী লিখিবার কোন উপকরণ পাওয়া কঠিন। নিজে কিছু বলিতেন না। শিষ্যরা তাহার নিষেধক্রমে বা অজ্ঞতাবশত কিছুই বলিতে পারে না।’ যা হোক, নানা তথ্যে দৃষ্ট হয়, লালন শাহ ১৭৭৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালীতে ১৮৯০ সালে মৃত্যুবরণ করেন। বাংলা পিডিয়ায় লালন শাহের জন্মসাল ১৭৭২ হিসেবে উল্লিখিত রয়েছে। জন্মস্থান সম্পর্কে নানা বিতর্ক থাকলেও অনেকে মনে করেন, বর্তমান যশোর জেলার ঝিনাইদহ মহকুমার হারিশপুর গ্রামে লালনের জন্ম। কেউ কেউ মনে করেন, কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানার ছাপড়া ইউনিয়নের অন্তর্গত ভাড়ারা গ্রামে তাঁর জন্ম। অনেকের মতে, যশোর জেলার ফুলবাড়ি গ্রামে লালনের জন্ম। লালনের জীবন সম্পর্কে প্রচলিত – লালন তরুণ বয়সে একবার তীর্থ888sport slot gameে বের হয়ে পথিমধ্যে গুটিবসন্তে আক্রান্ত হন। তখন তাঁর সাথিরা তাঁকে মৃত ভেবে পরিত্যাগ করে চলে যায়। নদীতে ভেসে আসা মুমূর্ষু লালনকে উদ্ধার করে এক মুসলিম পরিবার। ওই পরিবারটি তাঁকে বাড়িতে নিয়ে সেবা-শুশ্রূষা দিয়ে সুস্থ করে তোলে। সুস্থ হয়ে নিজ সমাজে ফেরত গেলে ওই সমাজ মুসলমান সংসারে সেবা-শুশ্রূষার অজুহাতে তাকে পরিত্যাগ করে। ফলে লালন চলে আসেন ছেঁউড়িয়ায়। এরপর লালন দীক্ষিত হন এবং কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় স্ত্রী ও শিষ্যসহ বসবাস করতে শুরু করেন। বিভিন্ন তথ্যে লালনের গুটিবসন্ত রোগে এক চোখ হারানোর কথাও পাওয়া যায়। যা হোক, লালন প্রখ্যাত সাধক সিরাজ সাঁইয়ের দ্বারা প্রভাবিত হন ছেঁউড়িয়ায়। পরবর্তীকালে লালনের সামান্য জমি ও ঘরবাড়িও হয়েছিল। আমৃত্যু লালন শাহ সাধনা করে গেছেন। বিচ্ছিন্ন নানা তথ্যে লালনের অশ্বারোহণে দক্ষতার পরিচয়ও পাওয়া যায়। বৃদ্ধ বয়সে অশ্বারোহণের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় যেতেন বলেও উল্লেখ পাওয়া যায়। তাঁর সাধনসঙ্গী স্ত্রীর নাম ছিল বিশাখা। তাঁর ঔরসজাত কোনো সন্তানাদি ছিল না।

লালন হিন্দু ছিল নাকি মুসলমান ছিল, এ নিয়ে নানা বিতর্ক বিদ্যমান। তার মুত্যুর পর প্রকাশিত প্রবাসী পত্রিকার নিবন্ধ- রচিয়তা বসন্ত কুমার পাল বলেছেন, ‘সাঁইজি হিন্দু কি মুসলমান,  এ-কথা আমিও স্থির বলিতে অক্ষম।’ তবে বিভিন্ন তথ্যে দৃষ্ট যে, লালনকে কোনো প্রচলিত ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করতে দেখা যায় না। অধিকাংশেরই অভিমত – লালন ছিলেন ধর্মান্তরিত মুসলিম; কিন্তু ধর্মীয় কোনো আচারের মধ্যে নিষ্ঠ ছিলেন না। অনেকে ধর্মীয় প্রাধান্যের বাইরে তাঁর মানবতাকে বড় করে দেখেন। তবে তাঁর গানে হিন্দু-মুসলিম শাস্ত্র সম্পর্কে গভীর জ্ঞানের পরিচয় পাওয়া যায়।

ছেঁউড়িয়ায় বসবাসকালে সেখানেই একটি আখড়া তৈরি করেন লালন। আখড়ায় লালন নিয়মিত সাধন-ভজন করতেন। ধীরে ধীরে তাঁর শিষ্য জুটতে থাকে। আখড়ায় বসে লালন শাহ তাঁর শিষ্যদের নীতি ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানের শিক্ষা-দীক্ষা দিতেন। তাঁর অধিকাংশ শিষ্যই তাকে সাঁই বা সাঁইজি বলে সম্বোধন করতেন। লালন প্রতি বছর শীতের সময় আখড়ায় একটি ভান্ডারা বা উৎসবের আয়োজন করতেন, যে-উৎসবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা শত শত শিষ্য ও ভক্ত একত্রিত হতো।  সে-উৎসবে সংগীত ও বাউলতত্ত্ব নিয়ে আলোচনা হতো। অধুনা 888sport appsের চট্টগ্রাম, রংপুর, যশোরসহ অনেক দূর-দূরান্তের শিষ্যরা একত্রিত হতো সে-উৎসবে। তৎকালীন বাংলা অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানের অনেক লোক লালন ফকিরের শিষ্য ছিল। শোনা যায়, তখন তাঁর শিষ্যের 888sport free bet প্রায় দশ হাজারের বেশি ছিল।

লালন শাহের মৃত্যুটা অনেকটা নাটকীয়। লালন শাহ ১১৬ বছর বয়স পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। ১৮৯০ সালে ১৭ অক্টোবর তাঁর মৃত্যু হয়। কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ায় নিজ আখড়ায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। নানা তথ্যে বিধৃত হয় যে, মৃত্যুর কিছুদিন আগে থেকেই নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো – পেটের সমস্যা ও হাত-পায়ের গ্রন্থির সমস্যা। লালন অসুস্থ অবস্থায় শুধু দুধ ছাড়া আর কিছু খেতেন না। এই অসুস্থ অবস্থায় তিনি মাছও খেতে চাইতেন না। জীবনের শেষ রাতেও লালন সারারাত ধরে মৃত্যুর শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত গান করেছেন। শেষরাতের দিকে হঠাৎ শিষ্যদের ডেকে বলেন, ‘আমি চলিলাম’। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই লালন শাহ ইহলোকের লীলা সাঙ্গ করেন।    মৃত্যু-পরবর্তী বিষয়ে লালনের কোনো নির্দেশ না থাকায় হিন্দু বা মুসলমান কোনো ধরনের সুনির্দিষ্ট ধর্মীয় রীতি-নীতিই তার পক্ষে পালন করা সম্ভব হয়নি। লালনের অন্তিম ইচ্ছা অনুসারে ছেঁউড়িয়ায় আখড়ার মধ্যে তাঁর বসবাসের ঘরে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। আজো সারাদেশ থেকে বাউলরা প্রতি অক্টোবরে ছেঁউড়িয়ায় মিলিত হয়ে লালনের প্রতি 888sport apk download apk latest version নিবেদন করে। তাঁর মৃত্যুর কয়েকদিন পরেই মীর মশাররফ হোসেন-সম্পাদিত হিতকরী পত্রিকায় তাঁর প্রথম মৃত্যুনিবন্ধ প্রকাশিত হয়।

888sport appsের বাউলসংগীতের নাম আন্তর্জাতিক মহলে অত্যন্ত সুপরিচিত। নানা তথ্যমতে বাউল লালন সতেরো শতকে জন্ম নিলেও উনিশ শতকে লালনের গানের জন্যই অসম্ভব জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। বাউলত্বকে ছাড়িয়ে লালনের গান বাংলা সংগীতের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। বাউলরা সাধারণত দলবদ্ধভাবে আখড়ায় অথবা একহাতে একতারা বাজিয়ে ঘুরে ঘুরে গান করেন। ২০০৫ সালে ইউনেস্কো বাউল গানকে ঐতিহ্যের শ্রেষ্ঠ সম্পদ বলে ঘোষণা করেছে। বাউলরা সাধারণত অসাম্প্রদায়িক এবং উদার মনের আধ্যাত্মিক সাধক। লালন-চেতনে বাউল, বৈষ্ণবধর্ম ও সুফিবাদের প্রভাব অত্যন্ত সুষ্পষ্ট। বাউলদের সাধনা সাধারণত মিথুনাত্মকপ্রধান। দুই ধরনের বাউল লক্ষ করা যায় – একটি গৃহী বাউল এবং অন্যটি গৃহত্যাগী সন্ন্যাসী বাউল। বাউলরা আত্মঃতত্ত্বকে সন্ধানের মাধ্যমে স্রষ্টার সন্ধানে ব্যাপৃত থাকেন। তাঁদের গানের মধ্য দিয়েই তাঁদের দর্শন প্রকাশিত হয়ে পড়ে। লালনের গান দ্বারা রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে কাজী নজরুল ইসলামসহ অনেকেই প্রভাবিত ও অনুপ্রাণিত হয়েছেন। এমনকি এলেন গিন্সবার্গ নামে বিদেশিও লালন দ্বারা প্রভাবিত। দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগ হয়। ওই সময় লালন পরিচয় নিয়ে নতুন করে নানাবিধ বিতর্কের জন্ম নেয়। ১৯৬৩ সালে ছেঁউড়িয়ায় লালনের আখড়া ঘিরে ‘লালন লোক888sport live football কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠিত হয়।   স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে ১৯৭৮ সালে 888sport live chatকলা একাডেমীর অধীনে লালন লোক888sport live football কেন্দ্রের বিলোপ ঘটিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘লালন একাডেমী’। প্রতি বছর লালনের মৃত্যুদিবসে ছেঁউড়িয়ার আখড়ায় 888sport app download for androidোৎসব অনুষ্ঠিত হয়। সে-উপলক্ষে সেখানে কয়েকদিনব্যাপী মেলাও বসে। দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য লালনভক্ত মানুষ এসে ভিড় করে 888sport app download for androidোৎসবে ও দোল পূর্ণিমায়। লালনের আধ্যাত্মিক দর্শনের অনুসরণে অনেকেই দীক্ষা নেন। ২০১০ সাল থেকে ছেঁউড়িয়ায় পাঁচদিনব্যাপী উৎসব পালিত হচ্ছে। লালনের গানে ফুটে উঠেছে – আত্মতত্ত্ব, দেহতত্ত্ব, গুরু বা মুর্শিদতত্ত্ব, প্রেমভক্তিতত্ত্ব, সাধনতত্ত্ব, মানুষ-পরমতত্ত্ব, আল্লা-নবীতত্ত্ব, কৃষ্ণ-গৌরতত্ত্ব ও মানবতাবাদী সমকালীন নানা বিষয়। আধ্যাত্মিক ভাবধারায় লালনের প্রায় দুই হাজার গানের সন্ধান পাওয়া যায়। লালনের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গান হচ্ছে – ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়’, ‘আমি অপার হয়ে বসে আছি’, ‘সবলোকে কয় লালন কী জাত সংসারে’, ‘জাত গেল জাত গেল বলে’, ‘আপন ঘরের খবর নে না’, ‘আমারে কি রাখবেন গুরু চরণদাসী’, ‘মন তুই করলি একি ইতরপনা’, ‘সেখানে সাঁইর বারামাখানা’, ‘আমার আপন খবর আপনার হয় না’, ‘দেখ না মন, ঝকমারি এই দুনিয়াদারি’, ‘ধর চোর হাওয়ার ঘরে ফান্দ পেতে’, ‘সব সৃষ্টি করলো যে জন্য’, ‘সময় গেলে সাধন হবে’, ‘আছে আদি মক্কা এই মানবদেহে’, ‘তিন পাগলে হলো মেলা নদে এসে’, ‘কে বানাইলো এমন রঙমহলখানা’, ‘এসব দেখি কানার হাটবাজার’, ‘মন সহজেই কী সই হবি’ ইত্যাদি।

লালন শাহের জীবন-দর্শনসহ নানাবিধ বিষয় নিয়ে রচিত হয়েছে 888sport app download apk, 888sport alternative link, live chat 888sport, ছোটগল্প প্রভৃতি। লালনের গানে ফুটে উঠেছে মানুষের মাঝে বাস করে এক অজানা-অচেনা মনের মানুষ। তাঁর অসংখ্য গানে এ-মনের মানুষ প্রসঙ্গটি এসেছে। কথা888sport live footballিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লালনের জীবনী নিয়ে রচনা করেছেন মনের মানুষ শিরোনামে 888sport alternative link। এ-888sport alternative linkে বর্ণিত লালন-জীবনচিত্র প্রচলিত লালন-জীবনপরিচিতির অনেকাংশে অনুগামী নয়। এখানে লালনকে হিন্দু কায়স্থ হিসেবে নাম দেওয়া হয়েছে লালন চন্দ্র কর। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘888sport alternative linkটি লালন ফকিরের প্রকৃত ঐতিহাসিক তথ্যভিত্তিক জীবনকাহিনি হিসেবে একেবারেই গণ্য করা যাবে না। কারণ তাঁর জীবনের ইতিহাস ও তথ্য খুব সামান্যই পাওয়া যায়।… লালনের জীবনের মূল ভাব ও আদর্শ ফুটিয়ে তোলাই আমার এই রচনার উদ্দেশ্য। কাহিনিটি আধার মাত্র। আরেকটি কথাও উল্লেখ করা উচিত। সে-কালে কুষ্টিয়া জেলার মানুষের মুখের ভাষা আমি সংলাপে ব্যবহার করিনি। তা আমার অসাধ্যও বটে। কোথাও কোথাও সামান্য আভাস দিয়েছি মাত্র। (মনের মানুষ 888sport alternative linkে লেখককের বক্তব্য)। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মনের মানুষ অবলম্বনে গৌতম ঘোষের পরিচালনায় live chat 888sport নির্মিত হয়েছে। live chat 888sportটি অস্কারের জন্য মনোনীত হলেও লালন সম্পর্কিত তথ্যগত ভুলের জন্য অস্কার 888sport app download bdপ্রাপ্তি ঘটে না। এক্ষেত্রে তানভীর মোকাম্মেলের ১৯৯৬ সালে তথ্যচিত্র অচিন পাখি এবং ২০০৪ সালে লালন নামে live chat 888sport লালন ফকিরের জীবন ও বাউল দর্শন ফুটিয়ে তোলার ক্ষেত্রে অনন্যসাধারণ।

লালন গানে নিজেকে ফকির হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ভক্তদের মধ্যে সাঁই বা সাঁইজি বলার প্রবণতা ছিল। লালন দর্শনের পরিভাষাগুলো শুধু দীক্ষাপ্রাপ্ত বাউলদের কাছেই স্পষ্ট। লালনের দর্শনে সাঁই বা স্রষ্টার অবতার হিসেবে পরিভাষাটি দেখা যায়। তাই ভক্তদের মধ্যে লালনকে সাঁই বলে সম্বোধন করার রীতিও প্রবল। লালনের দর্শনে দেখা যায়, প্রত্যেক মানুষের মধ্যে স্রষ্টার আবাস। মানবাত্মাকে অত্যন্ত রহস্যময়, অস্পৃশ্য, অধরা কিংবা অজানা-অচেনা এক সত্তা রূপে কল্পনা করতেন লালন শাহ।

লালন বা বাউল দর্শনের কিছু পরিভাষা রয়েছে। অধিকাংশ পরিভাষাই সাধারণের বোধগম্য নয়। একমাত্র দীক্ষাপ্রাপ্ত বাউল ছাড়া সে-পরিভাষাগুলো জ্ঞাত হতে পারে না। তবে কিছু পরিভাষা রয়েছে যেগুলো সবাই কমবেশি জেনে থাকেন। থিয়েটার-প্রযোজিত এ-নাট্যটির নামকরণ করা হয়েছে বারামখানা। জনশ্রুতে বারামখানা পরিভাষার নানা বিশ্লেষণ হতে দেখা যায়। বাউল-সাধনা মিথুনাত্মক হিসেবে এ-বারামখানা বলতে অনেকে স্ত্রী-অঙ্গবিশেষকে বোঝাতে চান। আবার বারামখানাকে লালনের বসবাসের জায়গা বা আখড়া হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। অনেকে বারামখানা বলতে স্রষ্টার বসবাস বা আবাসখানা হিসেবে উল্লেখ করেন। এ-নাটকে ‘বারামখানা’ লালনের বসবাস বা আখড়াকেন্দ্রিক প্রবহমান ও বিকাশমান ধারা বিবেচনায় বসবাসস্থল বা আখড়াকে বুঝিয়েছেন নির্দেশক।

 

নাট্যকার 888sport alternative link মনের মানুষকে প্রধান কাঠামো হিসেবে ধরে নিয়ে পাকিস্তান-888sport apps পর্বসহ বিস্তর সংযোজন করেছেন নাট্যটিতে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মনের মানুষ 888sport alternative linkে বিধৃত চিত্রটি বারামখানা নাট্যের একটি অংশমাত্র। বারামখানা নাট্যটি লালন শাহের আখড়াকেন্দ্রিক বিদ্যমান পরিস্থিতি। লালন শাহ থাকাকালীন তার আখড়া; সময়ের পরিক্রমায় আজকের দিকে আখড়াটির অবস্থা কেমন তার চিত্র অত্যন্ত সুনিপুণভাবে ফুটে উঠেছে নাট্যটিতে। বারামখানা নাট্যটির কাহিনিবিন্যাস তিনটি পর্বে বিভক্ত। প্রথমটি লালনের জীবন ও বিকাশ, দ্বিতীয় পর্বটি ১৯৪৭-পরবর্তী দেশবিভাগের ফলে লালনের আখড়ার পরিস্থিতি-পরিণতি, তৃতীয় পর্ব স্বাধীনতা-পরবর্তী 888sport apps পর্যায়ে লালনের আখড়ার অবস্থা। বারামখানা নাট্যের কাহিনিবিন্যাসের প্রথম অংশটুকু নাট্যকার ও নির্দেশক 888sport live footballিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মনের মানুষ 888sport alternative link থেকে গ্রহণ করেছেন। ছোট পরিসরে হলেও মূলত দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্বটিই এ-নাট্যটিকে মাধুর্যমন্ডিত করেছে।

থিয়েটার-প্রযোজিত এ-নাট্যটি প্রসেনিয়াম মঞ্চ বিন্যাসে উপস্থাপিত হয়। শুরুতেই লালনের আখড়ায় সাদা পোশাকপরিহিত 888sport promo code ও পুরুষ ভক্তবৃন্দ। মঞ্চটিতে ওপর থেকে গাছের ডাল-পাতা ঝুলিয়ে জঙ্গলাকীর্ণ বাসের আবহ সৃষ্টি করা হয়েছে। পেছনের সায়াক্লোমায় পানি ও চাঁদের দৃশ্য আলোয় প্রক্ষেপণের মাধ্যমে রাতের দৃষ্ট স্পষ্ট। হালকাভাবে গান বাজাতে থাকে ‘শুনিলে প্রাণ চমকে ওঠে দেখতে যেন ভুজঙ্গনা, সেখানে সাঁই বারামখানা।’ এক ভক্তিমূলক আবহের মধ্য দিয়ে নাট্যের শুরু হয়। ধীরলয়ে গান বাজতে থাকে। একজন ভক্ত ম্যাচ দিয়ে কুপিতে আলো জ্বালায় এবং অন্যজন সে-আগুন থেকে তার কুপিতে আগুন জ্বালায়। নৈর্ব্যক্তিকভাবে অগ্নি হস্তান্তর ও সঞ্চালনের মধ্য দিয়ে বাউলচেতনার পরম্পরা বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে দৃশ্যে। ধীরে ধীরে সবার অগ্নি প্রজ্জ্বলিত হয়ে ওঠে। সবাইকে অগ্নি জালিয়ে দেওয়ার এ-দৃশ্যটি এক মাধুর্যমন্ডিত ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করে দর্শকহৃদয়ে। ভক্তি ও গানের অনবদ্য গানে দৃশ্যটি হয়ে ওঠে অত্যন্ত প্রাণবন্ত ও নান্দনিক। কাহিনিবিন্যাসের ধারায় মূল ঘটনাপ্রবাহ এবং প্রবাহের সঙ্গে গানের মাধ্যমে লালনের দর্শনটি ব্যাখ্যাত হতে থাকে। দলীয় টিমওয়ার্ক-সংগীত ও কোরিওগ্রাফিতে অনন্য হয়ে ওঠে দৃশ্যটি। গান বাজতে থাকে আত্মতত্ত্ব – যেজন জেনেছে দিব্যজ্ঞানী সেজন হয়েছে। বাউলদের আচরণ প্রমাণ করে, তাঁরা সম্ভবত ভেকধারী বাউল সম্প্রদায়। সাধনমার্গীয় চরিত্রাভিনয়ে আরো স্থিতধী অভিনয় প্রয়োজন। লালন আখড়া জীবনের ধারায় 888sport sign up bonusচারণ শুরু হয়। লালনের সাধন পর্যায় থেকে ফ্ল্যাশব্যাক শুরু হয়। লালনের অতীতের কাহিনি উপস্থাপিত হয়। তীর্থযাত্রা, গঙ্গাস্নান প্রসঙ্গ, কীভাবে যাত্রাপথে লালন অসুস্থ হলে পড়েন। লালনের সঙ্গীরা কীভাবে তাকে ফেলে চলে যায় সে কাহিনি। এখানের পালকি সাজেশনটি অত্যন্ত চমৎকার।

লালনের অতীত বর্ণনায় ফ্ল্যাশব্যাকের এ-দৃশ্যে আখড়ায় বিদ্যমান পারিপার্শ্বিকতায় ব্যবহৃত গাছের পাতার সাজেশনও এ-সময় দৃশ্যমান ছিল। এক্ষেত্রে নির্দেশকের মনোযোগ প্রয়োজন। ঘটনার রূপান্তর হলেও দৃশ্যান্তরটিতে যৌক্তিকতার অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। ভাষ্যকারের বর্ণনায় লালনের বেঁচে ওঠা; মুসলমান সমাজের রাবেয়ার সেবা প্রসঙ্গসহ লালনের বেড়ে ওঠার প্রচলিত কাহিনি এটি। তারপর ফ্ল্যাশব্যাক শেষ হয়। ফ্ল্যাশব্যাকের পরিবর্তনকে অন্যরূপ ইমেজ বা আলো ব্যবহার স্পষ্ট নয়।

গানের সঙ্গে কৃষ্ণের কাহিনির ননী চুরি করে খাওয়ার প্রসঙ্গও উপস্থাপিত হয়। মনের মানুষ 888sport alternative linkে বিধৃত চিতা থেকে বেঁচে যাওয়া মেয়ের কাহিনি উপস্থাপিত হয়। ঘণ্টা বাজতে থাকে। চিতায় নিয়ে যাওয়া হচেছ একটি মেয়েকে। দুজন বাউলকে দেখে সহমরণের আয়োজনকারী পালিয়ে যায়। অজ্ঞান পড়ে থাকে মেয়েটি। মেয়েটিকে লালনের আখড়ায় আনা হয়। জ্ঞান ফিরলে মেয়েটি প্রশ্ন করে, সে কোথায় এসেছে – স্বর্গে নাকি নরকে। পরেই নাট্য উপস্থাপনাটিতে জমিদারের সঙ্গে লালনের দ্বন্দ্ব উপস্থাপিত হতে দেখা যায়। এ-লড়াইয়ে দৃশ্যটি সিনেমাটিক হলেও অত্যন্ত প্রাণবন্ত ছিল। মনের মানুষ 888sport alternative linkে বিধৃত কমলার মিথুনাকাঙ্ক্ষা অত্যন্ত শৈল্পিকভাবে উপস্থাপিত হয়েছে নাট্যটিতে। মূল 888sport alternative linkে বর্ণিত ভাষার ক্ষেত্রে অনেকাংশে আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহারের রূপ দেখা যায়। রাতের দৃশ্য বা আলো ব্যবহারের আলো-নির্দেশককে মনোযোগী হওয়া উচিত। জমিদারের সঙ্গে পুনর্দ্বন্দ্ব উপস্থাপিত হয়। ভাষ্যকার এগিয়ে আসে।

মঞ্চের ডানপাশে উঁচু বেদিতে লালনের আবক্ষের অনেকগুলো স্কেচ-চিত্র থাকে। ভাষ্যকার একটি করে ছবি ওল্টাতে থাকেন এবং মধ্যমঞ্চে লালন ও ভক্ত সম্প্রদায়ের সংগীত চলতে থাকে। ভাষ্যকারের বর্ণনা ও একেকটি পাল্টানোর সঙ্গে সঙ্গে গানের পরিবর্তন ঘটতে থাকে। এ-গানগুলোর মধ্যে দিয়ে লালন-চেতনার একটি সাধারণ পরিচয় ফুটে ওঠে দর্শকের সামনে। ভাষ্যকারের   এ-বর্ণনায় রবীন্দ্রনাথ প্রসঙ্গ, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ প্রসঙ্গসহ লালনের মৃত্যু প্রসঙ্গ স্থান পায়। ‘মিলন হবে কত দিনে’ গানটির মধ্যে চৈতন্যঘরানার নৃত্য পরিবেশিত হয়। গানগুলো পুরোটা উপস্থাপিত হয়নি। শুধু গানের মুখ অথবা প্রথম অন্তরাটি উপস্থাপন করা হয়েছে। মূলত লালন দর্শক সম্পর্কে এ-দৃশ্যটিতেই একটি সাধারণী পরিচয় বিধৃত হয়। এ বর্ণনার অন্তে লালনের মৃত্যু হয়। লালনের অন্তিম ইচ্ছা অনুসারে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয় তার বসবাসের ঘরের মধ্যেই।

নাট্যটির বিষয়বিন্যাসে প্রথম পর্বে শেষে শুরু হয় দ্বিতীয় পর্ব। ১৯৪৭-পরবর্তীকালে লালন আখড়ার পরিস্থিতি বা অবস্থা। নাট্যে বর্ণিত হয় দেশবিভাজনের পর লালনের আখড়া হয়ে ওঠে লালনের মাজার। মুসলিম ধর্মীয় নেতার আগমন ঘটে লালনের আখড়াকে ভেঙে গম্বুজওয়ালা মাজার বানানোয়। মঞ্চের পেছনের দৃশ্যেও কিছুটা পরিবর্তন হয়। একটি গম্বুজের সাজেশনওয়ালা প্রবেশমুখ লক্ষ করা যায়। দেশবিভাজনের পরিপ্রেক্ষিতে এ-অবস্থা দর্শককে ভাবিত করে তোলে। মাজারে এক দম্পত্তির আগমন ঘটে দোয়ার আশায়। মাজার জিয়ারত প্রসঙ্গ ও খাদেমের কথোপকথনের মধ্য দিয়ে ফুটে ওঠে মাজার নিয়ে ভন্ডামি-ব্যবসাসহ পরিস্থিতি। মারামারি-গোলাগুলি, মাজারের পরিচালনা কমিটি প্রভৃতির মধ্য দিয়ে নির্দেশক তুলে ধরেন দেশ-বিভাগোত্তর লালনের মাজারকেন্দ্রিক বিদ্যমান লোভাতুর ব্যবসায়ী চিত্র-পরিস্থিতি। খাদেমের ফোনের রিংটোন ‘মন দোলে প্রাণ দোলে’র নৈর্ব্যক্তিক রূপের মধ্য দিয়ে তৎকালীন পরিস্থিতি দর্শকের বুঝতে কোনো সমস্যা হয় না। তবু প্রশণ থেকে যায়, ওই সময়ে মোবাইল ফোন ব্যবহৃত হতো কিনা? হালকা জিকির ও গাঁজা যেন অবিচ্ছেদ্য রূপে বিরাজমান হয় লালনের মাজারে। এরই মধ্যে একটি অসহায় 888sport promo codeচরিত্র প্রবেশ করে মঞ্চমাজারে। মেয়েটির প্রতি সহমর্মিতা, খাদেমের সাধনসঙ্গী হওয়ার আহবানসহ নানাবিধ চিত্র অঙ্কিত হয়ে ওঠে দর্শকের মনের মধ্যে। খাদেম বারবার সাদা কাপড় দিয়ে মেয়েটিকে জড়াতে চায়, কিন্তু মেয়েটি সরে যায়। এ নৈর্ব্যক্তিক অত্যন্ত চমৎকার। এর মধ্যে দিয়ে 888sport promo codeর বৈরাগ্যের বিপরীতে চাওয়া-পাওয়া, আশা-আকাক্ষাসহ বাউলভক্ততার একটি পরিচয়ও বিধৃত হয়। খাদেমের লোভাতুর আকাঙ্ক্ষা, ভন্ডামি ও ব্যবসায়িক চিত্রও অাঁচ করা যায় এ-থেকে। অত্যন্ত শৈল্পিক ও অনবদ্য হয়ে ওঠে দৃশ্যটি। মাজারে নেশা করে পড়ে থাকার দৃশ্যও দেখা যায়। মূলত এ-পর্বে স্থান পায়, আখড়া ঘিরে ভন্ডামি, দেশবিভাজনের ফল, নেশা, ব্যবসায়ী স্বার্থ প্রভৃতি।

ঘটনাবিন্যাসের তৃতীয় পর্বে উঠে আসে স্বাধীনতাত্তোর 888sport appsের বাস্তবতা। লালনের আখড়াকে কেন্দ্র করে মেলা বসে। মেলায় লালনের গান করতে আসে 888sport app থেকে আসা লালনকন্যা নামে খ্যাত 888sport live chatী সুইটি। দৃশ্যে সুইটির মধ্যে বাউলত্বের তেমন কিছুই খুঁজে পাওয়া যায় না। অত্যন্ত চমৎকার নৈর্ব্যক্তিকতার নিরিখে ফুটে ওঠে লালনের সাধনা না বুঝেই বা সাধনা না করেই 888sport live chatী-পরিচয় এবং আবার লালনের গানের প্রতিনিধিত্ব করা। আধুনিক ও  প্রযুক্তিগত মিথস্ক্রিয়া হলেও সত্যিকার লালন-সাধনা উপেক্ষিত। মেলায় বিভিন্ন দোকান, টিভি ক্যামেরা, ফেরিওয়ালা এবং মদ্যপান ও গাঁজা ইত্যাদি দেখা যায়। মন্ত্রীমহাশয় উঠে আসেন মঞ্চে; ভাষণ দেন। লালন-মাজার হয়ে ওঠে লালন কমপ্লেক্স। মঞ্চের সামনের অংশে ওপর থেকে ইটের সাজেশনের কমপ্লেক্স বিল্ডিং নেমে আসে। নাট্যের শুরুতে যে-সংগীত দিয়ে শুরু হয়েছিল, সে-মিউজিক বাজতে থাকে। দোতরা-ঢোল ও ‘যেখানে সাঁই বারামখানা’ প্রথম গানের মধ্য দিয়ে নাট্য-উপস্থাপনাটি শেষ হয়। এ নাট্য-দর্শনে সাধারণ দর্শকমন্ডলী যেমন বিনোদিত হবে, তেমনি দর্শককে লালন শাহকে নানা প্রশ্ন, লালন দর্শন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা এবং আখড়াকেন্দ্রিক নানা বিষয় যেমন ধর্মীয় আধিপত্য-ভন্ডামি-ব্যবসাচিত্র প্রভৃতির সত্যিকার রূপ অনুসন্ধানেও প্রবৃত্ত করবে।

বারামখানা নাট্যে প্রায় প্রত্যেক অভিনয়888sport live chatীই চরিত্রানুযায়ী ও প্রাণবন্ত অভিনয় করেছেন। তবে লালন চরিত্রের অভিনয়ে আরো স্থিতধী হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল। সাধনীয় চরিত্রবৈশিষ্ট্যে অত্যন্ত স্থিরতা-স্থিতধী ও স্থৈর্য দাবি রাখে। প্রসেনিয়াম মঞ্চবিন্যাসে নাট্যটি উপস্থাপন হলেও বিষয়টি 888sport appsি জীবনবোধের অত্যন্ত গভীরতর। নাট্যে আলো প্রক্ষেপণ কখনো কখনো দৃশ্যপোযোগী হয়েছে আবার কখনো কখনো ফ্ল্যাট হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। সংগীতও ছিল অসাধারণ এবং দলের টিমওয়ার্ক ছিল অত্যন্ত  প্রাণবন্ত-উচ্ছল। অত্যন্ত শৈল্পিক ও যুগোপযোগী উপস্থাপনা। এমন শৈল্পিক নাট্য-নির্দশনার জন্য নির্দেশক নিঃসন্দেহে কৃতিত্বের দাবি রাখেন।

বারামখানা নাট্যের নির্দেশক ত্রপা মজুমদার প্রচারপত্রে বলেন, ‘লালন… একটি বিশাল ক্ষেত্র… জানার জন্য, বোঝার জন্য! সেই লালন সাঁইকে নিয়ে মঞ্চে কাজ করার সাহস হয়তো কখনোই হতো না, যদি না সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মনের মানুষ 888sport alternative linkটি হাতে এসে পড়ত। 888sport alternative linkটি পড়ে মনে হলো লালনের জীবনটাই যেন একটা নাটক। আর সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় প্রাপ্ত তথ্যকে আশ্রয় করে নিজস্ব কল্পনা মিশিয়ে সেই জীবন-নাটককে দিয়েছেন এক অসাধারণ 888sport live footballরূপ। 888sport alternative linkটি পড়ে নাট্যকর্মী বন্ধু পান্থ শাহরিয়ারও আন্দোলিত হলেন আমারই মতো। সাহসী হলেন মঞ্চের জন্য নাটক লিখতে। শুরু হলো আমাদের অনুসন্ধানী যাত্রা – কিছু পড়ালেখা, লালন আখড়া ঘুরে আসা আর কিছু মানুষের সঙ্গে কথা বলা আমাদের ভাবনাকে নিয়ে গেল মনের মানুষ 888sport alternative link থেকে আরো অনেকটা সামনে। নিজেদের মনে জাগল হাজারো প্রশ্ন; যার কিছু কিছু দর্শকের সামনের তুলে ধরা আমার উচিত মনে করলাম। আর এ-ভাবনা থেকেই তৈরি হলো বারামখানা। যে-ধর্মনিরপেক্ষতা লালনের ভিত্তি, সেই লালন-দর্শন কি আজ ধর্ম, রাজনীতি আর বাণিজ্যের অশুভ চক্রে পড়ে তার মূল থেকে দূরে সরে যাচ্ছে না? এটাই কী লালন সাঁইকে সম্মান দেখানোর, তাঁর দর্শনকে বিশ্বদরবারে পৌঁছে দেওয়ার সঠিক পথ? সকলের মনে জাগা এই প্রশ্নগুলো আজ তুলে ধরলাম আমাদের সামনে।… বারামখানা কোনো গবেষণাপত্র নয়। কেউ যদি এ থেকে সত্য-মিথ্যা যাচাই করতে যান, তবে আমরা বিনীতভাবে বলব, আমাদের উদ্দেশ্য  দলিল নয়, আমরা লালনকে তুলে ধরেছি একটি ‘প্রতীক’ হিসেবে। এদেশে কীভাবে সবকিছুতেই নিজস্ব স্বার্থে ব্যবহার হয়, তাকে নিয়ে রাজনীতি চলে, বাণিজ্য হয় – তা তুলে ধরাই আমাদের লক্ষ্য। প্রযোজনা হিসেবে বারামখানা নিঃসন্দেহে আরো অনেক উচ্চতর স্তরে পৌঁছাতে পারত। তবে আমরা আশা করি, আমাদের এই সামান্য প্রচেষ্টা আপনাদের কিছুটা হলেও স্পর্শ করতে সক্ষম হবে।’

লালন বাংলা ভাষা, বাংলা গান-সাধনা ও 888sport appsের এক সম্পদ। তাঁর গানে আধ্যাত্মিক সাধনের বিকাশমান রূপ দৃষ্টিগ্রাহ্য। নানা ব্যঞ্জনা-উপমা ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে তুলে ধরেছেন বাউল সাধনমার্গের অনবদ্য পথ। এমন মরমি সাধন কালের স্রোতে বিরল। এমন মহৎ ও মানবতাবাদী আধ্যাত্মিক সাধকের জীবনচরিত এবং সাধনীয় আখড়াকেন্দ্রিক বিকাশমান পরিস্থিতি নিয়ে থিয়েটার নাট্যগোষ্ঠী নাট্য উপস্থাপন করার জন্য নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। লালন জীবনচরিত নিয়ে বিভ্রান্তি দূর হোক; সবার কাছেই সহজবোধ্য হয়ে উঠুক লালনের দর্শন; আখড়াকেন্দ্রিক সব রকমের ভন্ডামি বিদূরিত হোক। 888sport appsের ঘরে ঘরে লালনের মতো অসংখ্য সৃষ্টিশীল সাধকের জন্ম হোক; 888sport appsের নাট্যচর্চা উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির প্রান্তে পৌঁছাক এটা আমাদের সবারই একান্ত কাম্য।

বারামখানা নাট্যের কলাকুশলী হচ্ছেন – অভিনয়ে : রামেন্দু মজুমদার, ত্রপা মজুমদার, তানজুম আরা পল্লী, তামান্না ইসলাম, কাওসার রাজীব, আবদুল্লাহ আল মামুন জুয়েল, রাশেদুল আওয়াল শাওন, ইসমত আরা, রবিন বসাক, নূরে খোদা মাসুক সিদ্দিক, সফিউর রহমান মানু, জোয়ারদার সাইফ, তানভীর হোসেন সামদানী, মোহাম্মদ আতিকুর রহমান,  কল্যাণ চৌধুরী, এরশাদ হাসান,  জোয়ারদার সাইফ, রবিন বসাক, আসমা হেনা, পরেশ আচার্য্য, নূরে খোদা মাসুক সিদ্দিক, শেকানুল ইসলাম শাহী, মারুফ কবির,  কানিজ ফাতেমা সোনিয়া, কল্যাণ চৌধুরী, তাহমিনা 888sport sign up bonus, শেকানুল ইসলাম শাহী; সংগীত দল : কার্তিক, বিশ্বজিৎ বৈরাগী, তন্ময় ঘোষ, পল্লী, 888sport sign up bonus, কল্যাণ, রবিন, তানভীর, রাজীব, হেনা, ইসমত, আতিক; নেপথ্যে মঞ্চ ও আলোক পরিকল্পনা : মো. সাইফুল ইসলাম;  পোশাক পরিকল্পনা : ওয়াহিদা মল্লিক জলি; সংগীত-পরিকল্পনা : কার্তিক; লাঠিখেলা পরিচালনা : সাইদুর রহমান লিপন; মঞ্চ-ব্যবস্থাপনা : খুরশীদ আলম এবং প্রযোজনা উপদেষ্টা : রামেন্দু মজুমদার। বারামখানা নাট্যটি রচনায় পান্থ শাহরিয়ার এবং নির্দেশনায় রয়েছেন ত্রপা মজুমদার।