বালক, তুমি একদিন / দ্বিতীয় পাঠ

বালক, তুমি একদিন কবি হবে, আমি সেই দিনের জন্যে শোক করছি।

আমি এই ধনুক থেকে ছুড়ে দিচ্ছি তীর, নৌকো থেকে দিয়ে দিচ্ছি গতি,

নদী থেকে জালের টানে তুলে ফেলছি মহাশোলের সিঁদুরপরা মুড়ো,

আছড়ে ফেলছি তোমার তকতকে নিকোনো উঠোনে, বালক, এই শোক।

অবিরাম তোমার কণ্ঠ থেকে এখন উচ্চারিত হচ্ছে যে শব্দসকল, আমি

তার ভেতরে এখন পুরে দিতে চাইছি এই আমার সহস্রকালের বীজ এবং

বীজ থেকে উদ্গত বৃক্ষ, এবং বৃক্ষ থেকে খসে পড়া খসখসে বাকল যে,

বাকলের অপর পিঠে যে লাল, সেই লাল বস্তুত রক্তের- আমাদের রক্তই।

আর আমি এ কথাও বলতে চাইছি যে, শব্দ একদিন থামিয়ে দেয়া হবে,

আর সেই থামিয়ে দেয়া শব্দের ভেতরে যে নীরবতা, এবং সেই হানা দেয়া

নীরবতার ভেতরে যে পাথর, সেই পাথরের ভেতরে যে প্রস্তরিত স্বপ্নাষ্ম,

সেই পাথরটাই একদিন পড়বে তোমার করোটির ওপর প্রচ- আছড়ে।

তুমি তাকে শব্দবহুল হাতে তুলে ধরবে তোমার মাথার ওপরে এবং

তোমাকে ওভাবেই ধরে রাখতে হবে একটি জীবন। একটি জীবন

যাবে ওভাবেই। এর আগেও আমরা এ রকম অনেকবার দেখেছি, বালক,

আরো একবার আমরা দেখতে পাবো যখন তুমি কবি হবে আমাদের,

যখন তোমার চারদিকে বর্ষার লকলকে ঘনসবুজ লতা বেড়ে উঠবে-

আমাদের এই গ্রাম, গ্রামের ভেতরে বাড়ি, বাড়ির ভেতরে মানুষ, এবং

মানুষের ভেতরে না রক্ত না মাংস না মেদ না মজ্জা, স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎ।

বালক, তোমাকে মাথার ওপরে ধরে রাখতে হবে ওই পাথরের ভার,

না তুমি নামাতে পারবে, না আছাড় মেরে ভাঙতে পারবে তার গঠন।

একটি জীবন তুমি স্পষ্টই দেখতে পাচ্ছি ধরে আছো মাথায় পাথর।

জন্ম তোমার সমতলে হলেও, তুমি দেখতে পাবে চারদিকে তোমার

জমি কী উত্তল যেদিন তুমি কবি হবে। আর সে কী উত্তল ভূভাগ!

মানচিত্রের মতো নীল স্থির নয়, অনবরত ফুঁসছে আর ঠেলে ঠেলে উঠছে

থসথসে, গলিত, অগ্নিময়। আর তার ভেতরেই দাঁড়িয়ে তোমার পা!

ব্রহ্মপুত্রে স্নান করে ওঠা তোমার শরীরের সেই আবশ্যিক অঙ্গ – পা!

সেই পায়ের প্রতিটি ক্ষেপণে তোমাকে অগ্রসর হতে হবে, বালক,

পায়ের প্রতিটি ক্ষেপণে ভার হয়ে আসবে তোমার গতি, পুড়ে যাবে,

তোমাকে তবু হাঁটতে হবে, সমতলে নয়, চারদিকের উত্তলেই বটে,

তোমাকে আরোহণই করতে হবে সমতলে জন্ম নিয়েও প্রতি পদক্ষেপে।

আর কী সেই শিখর? সেই শিখরের বিষয়ে সংবাদ কী আসলে? ওটাই

শেষ পর্যন্ত তোমাকে বর্ণনা করতে হবে তোমার সব মেধাবী 888sport app download apkয়,

কিন্তু পড়ে থাকবে, বলতে গেলে আজীবনই, কালো চুলের ভেতরে চাঁদ,

প্রিয় মুখের ভেতরে ভোর, লাল রক্তের ভেতরে ব্রহ্মপুত্র, ওদিকে ওই

নদীর ভেতরে নৌকোর ধাবন, পাখিদের তুমুল গান, প্রসবের চিৎকার,

বস্তুত একেকটি জন্মের ভেতরে জাতিগোষ্ঠির জীবন ও প্রকরণের কথাই

তাকিয়ে থাকবে তোমার বর্ণনার অপেক্ষায়, হে দূরপ্রান্ত বালক।

বালক, তুমি কবি হবে একদিন, আমি সেই দিনের জন্যে শোক করছি।

তোমার চারদিকে উত্তল হবে জমি, অবিরাম ফুঁসে উঠে টেনে ধরবে পা,

তুমি পা ফেলবে, গলিত পিত্তলের পেট থেকে তুলতে পারবে না পা,

এই পিত্তল যদি কেউ গলিয়ে থাকে পঞ্চপ্রদীপের 888sport promo code নির্মাণের জন্যে

তবে সেই 888sport promo codeতো কবেই হারিয়ে ফেলেছে তার গর্ভ, তার গৃহ,

তার চোখ আর তার মাতৃস্তন, এবং সেই কারিগরও ডুবেছে কালীদহে!

তুমি দেখতে পাবে, বাকলের ভেতর থেকে টসটস করে পড়ছে রক্ত,

পাখিদের ডানা থেকে নীল পড়ে যাচ্ছে দ্রুত ফোঁটায়, যদিবা বাদ্যধ্বনি,

তার ভেতরে আর সঙ্গীত নেই, এখন শুধু শেকলেরই ধারালো ঝনঝনা!

তোমাকে বন্ধুদের কাছে যেতে হবে কিন্তু মুখ ফিরিয়ে রাখবে তারা,

তোমাকে কেউ শকট দেবে না যাত্রার, কিংবা সংবাদও দেবে না পথের,

বরং তারা তোমাকে তুলে ধরে দেখাবে তাদের পা, যেখানে পা নেই,

তারা তোমাকে সোল্লাসে পেড়ে ফেলতে চাইবে তাদেরই মতো!

তুমি একের পর এক শহরে দেখবে দীপ নির্বাপিত, সরাই খাদ্যশূন্য,

সড়কের পর সড়কে শুধু লাশই দেখবে, দু’একটি দরোজা যদি খোলা,

সেখানেও মানুষেরা শীতে কুঁকড়ে, মৃত বলেই মনে হবে তাদের,

আর যদি কোথাও কয়েকজন মাথা ঝুঁকিয়ে কী একটায় ব্যস্ত যেন,

আলাপ বা আলোচনায়, কোনো কন্যার বিয়ের বা নবান্নের উৎসবের,

তবে না! ঝুঁকে পড়ে ছুরিতে ওরা শান দিচ্ছে নিজেদেরই কর্কশ তালুতে!

বালক, তুমি একদিন কবি হবে আর এই সমাচারের ভেতর দিয়ে যাবে,

আর এইসবে অনবরত রঞ্জিত ও সজ্জিত হবে তোমার শব্দসকল, এই

তারা অভিধাসকল বদলে দেবে শব্দের, বাক্যের বিন্যাসে বদল ঘটাবে,

এমনই সেদিন তুমুল হবে সব, করতালে ভরে উঠবে আমাদের গ্রাম

ও নদীধারা, বাঁশবনের দীর্ঘতা ও গোরস্তান শ্মশানের গভীর গোপনীয়তা

যার ভেতরে হাড় বা ভস্ম নয় আমাদের গূর্বগত, বরং তারা অপেক্ষায়।

বালক, তুমি কবির পায়ে যেদিন ভাঙবে তোমার স্বদেশ ও স্বভাষা,

আমার ভেতরেই তো তুমি আমার দূরপ্রান্ত বালক, আমারই দ্বিতীয়,

আমার মতোই তুমি আরো দেখবে, যেমন একদা আমিও দেখেছি,

দেখতে পাবে বৃক্ষ, যদিও তা দগ্ধ, সেই বৃক্ষেরই রচনা এক তোরণ।

প্রবেশ করলেই হঠাৎ তুমি পৌঁছে যাবে ইন্দ্রজালের ভেতরে- দেখবে

এক নদী, একদিন ছিলো সে মহা নদ, কিন্তু এখনো সে পুরাতন খাতে

তার বুকের জল ধরে রেখেছে দুর্ভিক্ষের ভেতরেও শরীরের রক্ত ধারা।

এই নদীটির শব্দ তুমি কান পাতলে শুনতে পাবে ঠিক, আর, অন্ধকারে

ভেসে যাচ্ছে তীর, সেখানে তুমি দেখবে এক মিস্তিরিকে এখনো ধীর,

ব্যস্ত, নিবেদিত, নিঃশব্দে সে কাঠ আনছে কাঁধে করে, র‌্যাঁদার পর র‌্যাঁদা,

পেরেকের পর পেরেক, পালিশের পর পালিশ, বাটালির পর বাটালি,

হাতের নরুনে সে ফুটিয়ে তুলছে নৌকোর গলুইয়ে একটি চোখ,

সেই চোখ ভিজিয়ে দিচ্ছে নদী ও অন্ধকার একই সঙ্গে ঝলকে ঝলকে।

বালক, একদিন কবি হবে তুমি, একদিন দগ্ধ বৃক্ষের ওই তোরণ দিয়ে

তুমিও উপনীত হবে ওই নদীটির তীরে, তুমি ওই অন্ধকারের ভেতরে

ওই নৌকোর নিঃশব্দ নির্মাণের অনুরূপ কথা লিখতে চাইবে 888sport app download apkয়,

ওই 888sport app download apk তুমি পরিয়ে দিতে চাইবে পাখিদের উড্ডীন পাখায়,

ওই তোমার 888sport app download apk তুমি লাগিয়ে দিতে চাইবে নৌকোর উন্মুখ গ্রীবায়,

তার গলুইয়ের চোখ থেকে জল ও অমাবস্যা মুছে ফেলে তুমি তাকে

প্রস্ফুটিত করতে চাইবে, জানি, একদিন আমাদেরই গ্রামটির দিকে।

তুমি ভাষা ছেনে রঙ তুলে আনতে চাইবে ওই নৌকোটির জলযাত্রায়,

তুমি শব্দের ধাবনের সঙ্গে মিলিয়ে দিতে চাইবে সমস্ত আমাদের যাত্রা,

শব্দের পর শব্দ জুড়ে তুমি চৈত্রের ঘুড়ি হয়ে উঠতে চাইবে আকাশে,

ইতিহাসের দীর্ঘ সূত্রকে তুমি মেধাবী কাঁচ ও বালিতে, সংঘের আঠায়

ধারালো করতে চাইবে মাঞ্জায়, তুমি একই সঙ্গে তেরোশত নদীতে

অস্থির ছুটবে এবং স্বপ্নের নীলিমায় আবার ঘুড়ি তুলে দেবে, বালক,

তুমি বাদ্যযন্ত্রগুলোকে শেকলের ঝনঝনা থেকে বের করে একদিন

উৎসবের উঠোনে বাজাবে। বালক, আমি তোমাকে সতর্ক করে দিই,

তুমি সেই নদীতীরে পৌঁছুবার আগেই ওরা ছুরিতে তোমার পায়ের রগ

কেটে দেবে, চাপাতিতে ঝুলিয়ে দেবে তোমার চোয়াল। আমি শোক

করছি সেই দিনটির জন্যে, তোমার জন্যে নয়, বালক, তুমি কবি হবে।

শোক সেই দিনটির জন্যে যখন 888sport app download apkর বিরুদ্ধে কেউ ছুরি শান দেবে॥ ২২শে পৌষ ১৪১০ 888sport app