বিজন চৌধুরী

আনিসুজ্জামান

বিজন চৌধুরীর জন্ম ফরিদপুরে, ১৯৩১ সালে। বড়ো হতে হতে জেনেছেন বিশ্বযুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, অনুভব করেছেন পরাধীনতার বেদনা। ঝুঁকেছেন বামপন্থী রাজনীতির দিকে। তাঁর এক দাদার সঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টির কিছু সম্পর্ক ছিল। তারও প্রভাব পড়েছিল বিজনের ওপরে। ওদিকে চিত্রকলার প্রতি আগ্রহ আশৈশব। ১৯৪৫ সালে তিনি ভর্তি হন কলকাতার গভর্নমেন্ট কলেজ অফ আর্টস অ্যান্ড ক্রাফ্টসে। সেখানে থাকতেই দেখেছেন ভারতে ইংরেজ শাসনের অবসান, দেশভাগ, ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের পত্তন। কিন্তু ইংরেজ বিদায় নিলেও মানুষের দৈনন্দিন সমস্যার ভার কমে না। বিজনরা একবার ‘ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়’ স্লোগান তুলেছেন। তারপর অন্নবস্ত্রআশ্রয়ের সমস্যা নিয়ে আন্দোলনে রেমেছেন। ১৯৪৯ সালে পশ্চিমবঙ্গে দেখা দেয় নিদারুণ খাদ্যাভাব, খাদ্যের দাবিতে মানুষ পথে নামে। মেয়েদের এমনি এক মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে মানুষ ফেটে পড়ে বিক্ষোভে। এই ঘটনার কয়েকদিনের মধ্যেই আর্ট কলেজের বার্ষিক প্রদর্শনীতে প্রধান অতিথিরূপে আমন্ত্রিত হন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল। তখন কলেজের রাজনীতিসচেতন ছাত্রেরা রাজ্যপালের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এবং তাঁকে প্রদর্শনীতে ঢুকতে বাধা দেয়। রাজ্যপাল ফিরে যান, কিন্তু বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে কলেজ থেকে বহিষ্কৃত হন গীতা সেন, রেবা হোর, রমেন চক্রবর্তী, সোমনাথ হোর, বিজন চৌধুরী, দেবদাস চক্রবর্তী এবং আরো পাঁচজন। সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের পরামর্শে বিজন চৌধুরী চলে আসেন চট্টগ্রামে, সীমান্ত পত্রিকার সম্পাদক মাহবুব-উল আলম চৌধুরীর আশ্রয়ে, তারপর সেখান থেকে 888sport appয়। দেবদাস চক্রবর্তী কিছুকাল ভারতে অন্যত্র ভর্তি হওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করে 888sport appয় এসে যোগ দেন বিজনের সঙ্গে। তখন পাসপোর্ট-ভিসার বাধা ছিল না, ভারত-পাকিস্তানে  আসা-যাওয়া ছিল সহজ।
জয়নুল আবেদিনের চেষ্টায় এবং কয়েকজন বিশিষ্ট 888sport live chatী ও 888sport live footballিকের সহযোগে ১৯৪৮ সালে 888sport appয় প্রতিষ্ঠিত হয় চারু ও কারুকলা ইনস্টিটিউট। বিজন ও দেবদাস সেখানেই ভর্তি হবেন বলে সংকল্প করেন। ইনসটিটিউটের প্রথম ব্যাচের ছাত্র আমিনুল ইসলাম এভাবে লিপিবদ্ধ করেছেন বিজন চৌধুরী ও দেবদাস চক্রবর্তীর সঙ্গে তাঁর প্রথমে সাক্ষাতের বিবরণ :
বিজন ও দেবদাস এ দুজনের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের মধ্যে ছিল এক চমৎকার নাটকীয়তা। আমি [আর্ট] স্কুলের ছুটির পর প্রায়ই সদরঘাটের দিকে যেতাম স্কেচ করতে। সঙ্গে আরো দু-একজন বন্ধু থাকত, কিন্তু সেদিন একাই গিয়েছিলাম। রূপমহল সিনেমার কাছে গিয়ে মনে হলো এককাপ চা খেয়ে যাই সেই প্রসিদ্ধ সিনেমা কেবিনে। এখানকার চপ-কাটলেটের সুখ্যাতি ছিল।… সেই সিনেমা কেবিনে ঢুকে চা আর একটা সিঙাড়া নিয়ে বসেছি। হঠাৎ দেখলাম অদূরেই দুজন আমারই বয়সী [,] অপরিচিত একজন স্কেচ করছে চায়ের টেবিলে বসে বসেই। আমার চা খাওয়া হয়ে গেলে কৌতূহলী চোখ নিয়ে ওদের টেবিলে গিয়ে নিজেই আলাপ করলাম আর স্কেচ খাতাটা দেখতে চাইলাম। খাতাটার অনেকগুলো কাজ দেখে মুগ্ধ হলাম। সমস্ত ঘটনা শুনে তাদের 888sport appয় ভর্তি হওয়া, থাকা-খাওয়ার ব্যাপারে আমার সর্বাত্মক সাহায্যের আশ্বাস দিলাম। এদেরই একজনের নাম বিজন চৌধুরী আর-একজনের নাম দেবদাস চক্রবর্তী। ওরা সেদিন দুপুরেই স্কুলে গিয়ে আবেদিন সাহেবের সঙ্গে দেখা করে এসেছিল এবং ভর্তি হওয়ার আশ্বাস পেয়ে এসেছিল। বিজন যেহেতু কলকাতায় তৃতীয় বর্ষ আর দেবদাস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল, সেজন্য বিজন আমাদের সঙ্গে তৃতীয় বছরে আর দেবদাসকে প্রথম বছরে ভর্তি হতে হবে বলে আবেদিন সাহেব জানিয়েছিলেন।
এই আশ্বাসের ভিত্তিতে ওরা পরদিনই কলকাতা চলে যায় 888sport appয় চলে আসার প্রস্ত্ততি নিতে। মাসখানেকের মধ্যেই ফিরে এসে যথারীতি ক্লাস শুরু করে। ফিরে আসার পর বেশ কিছুদিন বিজন আমার সঙ্গেই ছিল। আর দেবদাস উঠেছিল 888sport appর ওয়ারী পাড়ায় সদ্যপ্রতিষ্ঠিত এক ব্লক তৈরির কারখানার স্বত্বাধিকারীর বাসায়। পরবর্তীকালে ওই ব্লক তৈরির কারখানার সূত্রে বেশ কিছু কমার্শিয়াল কাজ পেতে শুরু করলে দুজনে মিলে শাঁখারিবাজারে এক বাড়ি ভাড়া করে উঠে যায়।
888sport appয় এসে বিজন চৌধুরী 888sport live chat ও রাজনীতিচর্চার অনুকূল পরিবেশ পেয়েছিলেন। আর্ট ইনসটিটিউটে তাঁর শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন জয়নুল আবেদিন, সফিউদ্দিন আহমদ, কামরুল হাসান, আনোয়ারুল হক, খাজা শফিক আহমেদ ও শফিকুল আমিন। তাঁর সহপাঠীদের মধ্যে ছিলেন আমিনুল ইসলাম ও হামিদুর রহমান, নিচের দুই ক্লাসে পড়তেন মুর্তজা বশীর, কাইয়ুম চৌধুরী, রশিদ চৌধুরী, আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ জাহাঙ্গীর এবং কাজী আবদুল বাসেত, অকালমৃত দুই 888sport live chatী – কৌতুকাভিনয়ের জন্যে বিশিষ্ট কাজী আবদুর রউফ ও সুলতান নামে অধিকতর পরিচিত এহসানুল আমিন, সেই সঙ্গে দেবদাস চক্রবর্তী। আর্ট ইনসটিটিউটের ছাত্রদের প্রায় সকলেই এবং শিক্ষকদের অনেকেই বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে – অন্তত প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে – সংশ্লিষ্ট ছিলেন। কাজেই বিজন তাঁর চারপাশে একটি মানবিক পরিমন্ডল লাভ করেছিলেন। গোপন কমিউনিস্ট পার্টির তিনি সদস্য ছিলেন। তবে প্রকাশ্যে কিছুটা কাজ করতেন পাকিস্তান 888sport live football সংসদে। ১৯৫১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠনটির সভাপতি ছিলেন কাজী মোতাহার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ আহ্মদ। কামরুল হাসান ছিলেন এর একজন সহ-সভাপতি, আমিনুল ইসলাম এতে সক্রিয়। প্রতি পক্ষে এর একটি 888sport live footballসভা অনুষ্ঠিত হতো সওগাত প্রেসে – মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের আনুকূল্যে। বিজন সেখানে নিয়মিত যেতেন। আলোচনায় সরাসরি অংশগ্রহণ করতেন না, কিন্তু সভা হয়ে যাওয়ার পরে অনেক কথা বলতেন। তিনি তখন সমাজতান্ত্রিক বাস্তবতার তত্ত্বে আস্থাবান। ওই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই তিনি 888sport live football888sport live chatের বিচার করতেন।
দেখতে দেখতে রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলনের সময়টা এসে পড়ে। ভাষা-আন্দোলনের পোস্টার অাঁকেন বিজন। কে না পোস্টার লিখছেন তখন! যুবলীগ অফিসে বসে সংগীত888sport live chatী আলতাফ মাহমুদ আর শাঁখারিবাজারে বিজনের প্রতিবেশী ও বন্ধু কালিদাস চক্রবর্তী; আর্ট ইনসটিটিউটে আমিনুল ও বিজন; জগন্নাথ কলেজে সবুর; পিতা মুসলিম লীগ দলের নেতা, তাঁর বাড়িতে বসেই পোস্টার লিখছেন রশিদ চৌধুরী। 888sport cricket BPL rateে ফেব্রুয়ারির গুলিচালনা সবার মনেই গভীর রেখাপাত করে গেল। রাজনৈতিক মানুষ হলে তো কথাই নেই, অরাজনৈতিক মানুষের মনেও। কালিদাস বোধ হয় এ-সময়েই গ্রেপ্তার হলেন। তাঁর সংসার দেখার খানিকটা দায়িত্ব পড়ল বিজনের ওপরে। সেখানেই কালিদাসের বোনদের সঙ্গে আলাপ এবং মেজ বোনটির সঙ্গে প্রণয়। পরে তাঁরা বিয়ে করেন যখন, তখন নাকি একপক্ষের অভিভাবক ছিলেন জয়নুল আবেদিন, অন্যপক্ষের কামরুল হাসান।
১৯৫৩ সালে হাসান হাফিজুর রহমান 888sport cricket BPL rateে ফেব্রুয়ারি নামে গল্প-888sport app download apk 888sport live গান-ঘটনাপঞ্জির একটি সংকলন প্রকাশের উদ্যোগ নিলেন। স্থির হলো, তার প্রচ্ছদ অাঁকবেন আমিনুল ইসলাম আর বিজন ও মুর্তজা বশীর করে দেবেন কালি ও কলমের স্কেচ এবং কাঠখোদাই। তাই হলো। সাদা জমিনের ওপরে রক্তরঞ্জিত কাঁটাতারের ছবি দিয়ে আমিনুল প্রচ্ছদ করে দিলেন, প্রচ্ছদের অক্ষরবিন্যাসও হলো সাদামাটা – যাতে কাঁটাতার থেকে দৃষ্টি সরে না যায় পাঠকের। বিজন ও বশীর ছবি অাঁকলেন মিছিলের, পোস্টার-হাতে মাটিতে পড়ে যাওয়া শহিদের। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে বাজেয়াপ্ত হয়ে গেল বইটা – কিন্তু তা হয়ে রইল এদেশের 888sport live footballের এক মাইলফলক।
এই ১৯৫৩ সালেই বিজনদের ফাইনাল পরীক্ষা হয়ে গেল। ফল বের হলে দেখা গেল, দুজন পেয়েছেন প্রথম শ্রেণি – তার মধ্যে বিজন প্রথম, আমিনুল দ্বিতীয়। কিন্তু তা নিয়ে কারো মনেই কোনো বিকার নেই। সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পাশাপাশি তখন চলছে বিশ্বশান্তির জন্যে আন্দোলন। কমিউনিস্ট পার্টির সিদ্ধান্তক্রমে 888sport app জেলা শান্তি কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হলো। জগন্নাথ কলেজে হলো 888sport app জেলা শান্তি সম্মেলন, সম্মেলনে গঠিত হলো কমিটি। রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী জমিরউদ্দীন (পরে 888sport appsের রাষ্ট্রদূত) আর 888sport live chatী আমিনুল ইসলাম হলেন সম্পাদক, বিজন ও আমিও থাকলাম কমিটিতে। কিছুদিন পরে আমিনুল চলে গেলেন ইতালিতে উচ্চশিক্ষা নিতে। বিজন আর আমি সংগঠনের হাল ধরে রইলাম কিছুকাল। ওই কিছুকালই। তারপর তা বন্ধ হয়ে গেল।
প্রথম শ্রেণি লাভ করেও ইনসটিটিউটে চাকরি পেলেন না বিজন। অন্যত্রও নয়। খুচরো কাজ করেই চলে। তবে খুব একটা খারাপ ছিলেন এ-সময়ে, তা বলা যাবে না। রাজনৈতিক ঝড়-ঝাপটাই গায়ে লাগছে বেশি। ১৯৫৪র সাধারণ নির্বাচন, যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা-গঠন ও তাকে জোর করে ক্ষমতা থেকে সরানো, যুক্তফ্রন্টের ভাঙন, আওয়ামী লীগ বাদ দিয়ে যুক্তফ্রন্টের সরকার গঠন ও তার পতন, আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভা গঠন। কেন্দ্রে  পাকিস্তান মন্ত্রিসভাও আজ গঠিত হচ্ছে, কাল পতিত হচ্ছে। লাভের মধ্যে লাভ ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রথম সংবিধানে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার স্বীকৃতি এবং পূর্ববঙ্গে স্বতন্ত্র নির্বাচনপ্রথা হটিয়ে যুক্ত নির্বাচনপ্রথার প্রবর্তন। এই করতে করতে দেশে সামরিক শাসন নেমে এলো ১৯৫৮ সালে।
কালিদাস চক্রবর্তী তখন যক্ষ্মায় ভুগছেন, তার মধ্যেও পুলিশ খবর নিয়েছে তাঁর। বিজনের কাছেও বার্তা এলো : পালাও, নইলে জেলে নেবে। অনিচ্ছাসত্ত্বেও দেশ ছেড়ে চলে গেলেন তিনি।

কলকাতায় এসেই অন্য 888sport live chatীদের সঙ্গে মিলে বিজন প্রতিষ্ঠা করলেন সোসাইটি অফ কনটেমপোরারি আর্টস। ১৯৫৯ ও ১৯৬০ সালে কলকাতায় তার প্রদর্শনী হলো। যৌথ প্রদর্শনী দুটির সাফল্য সত্ত্বেও সংগঠনটি বেশিদিন চালানো গেল না। এবার দেখা দিলো ক্যালকাটা পেইনটার্স। ১৯৬৪ ও ১৯৬৫তে তার উদ্যোগেও সফল যৌথ প্রদর্শনী হলো, প্রদর্শনী হলো পরেও।
পশ্চিমবঙ্গে বিজনের প্রতিভার স্বীকৃতি মিলেছে নানাভাবে। তার মধ্যে ১৯৬৩ সালে অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস 888sport app download bd, ১৯৭৮ সালে রবীন্দ্র-ভারতীর দেওয়া সম্মান, আর ১৯৯৫ সালে অবনীন্দ্রনাথের নামাঙ্কিত 888sport app download bd বিশেষ উল্লেখযোগ্য। আশির দশকে তিনি যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স ঘুরে এসেছেন – পাশ্চাত্য চিত্রকলার সঙ্গে প্রত্যক্ষ পরিচয়ের সুযোগ পেয়েছেন।
ভারতে এসে কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে বিজনের যোগ পুনঃস্থাপিত হয়। চীনের ভারত-আক্রমণ তাঁর রাজনৈতিক চেতনায় প্রবল আঘাত হানে। তবে এই সূত্রে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি যখন দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায়, তখন তিনি যোগ দেন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-তে। সি পি এমের লেখক-888sport live chatী গোষ্ঠীর একজন নেতৃস্থানীয় পুরুষ হয়ে ওঠেন তিনি এবং বালী অঞ্চলে সি পি এমের প্রার্থীরূপে স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়লাভ করেন। ততদিনে বিজন বালীতে বাড়ি বানিয়েছেন এবং স্ত্রী-কন্যাদের নিয়ে সুখে সংসার করছেন। তাঁর বাড়ি হয়ে ওঠে লেখক-888sport live chatীদের এক আড্ডার ক্ষেত্র। স্ত্রীর আকস্মিক মৃত্যুতে সে-আনন্দস্রোত থেমে যায়। শোক সামলে নিয়ে বিজন কর্মক্ষেত্রে ফিরে আসেন, কন্যা তাঁর দেখাশোনার ভার নেয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের চারুকলা বিষয়ক কমিটিতে তিনি উপদেষ্টা নিযুক্ত হন। কলকাতা বিমানবন্দর, পশ্চিম বঙ্গের ন্যাশনাল গ্যালারি অফ ফাইন আর্টস এবং গগনেন্দ্র আর্ট গ্যালারিতে ম্যুরাল কিংবা চিত্র রচনার জন্য তিনি আমন্ত্রিত হন। বিশ্বভারতী থেকে রবীন্দ্রনাথের লক্ষ্মীর পরীক্ষা নাট্যের সচিত্র সংস্করণ প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হলে বিজনকেই তাতে চিত্রাঙ্কনের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
তারপর কী থেকে কী হয়। সকল বন্ধন কাটিয়ে বিজন চৌধুরী চলে যান ২০১২ সালের মার্চ মাসের ১৬ তারিখে।
ছাত্রজীবনেই শক্তিশালী ড্রইংয়ের জন্যে বিজন চৌধুরী শিক্ষকদের প্রশংসা লাভ করেছিলেন। জলরং ও তেলরঙের কাজও তিনি করেছেন তখন, ছাপচিত্রেও হাত দিয়েছেন। এসবের মধ্যেও তাঁর ড্রইংয়ের দক্ষতা দৃষ্টিগোচর হয়। পরবর্তীকালেও বিজনের ড্রইংয়ে স্বল্পপরিসরে মানুষের জীবনের নানাদিক ধরে রাখার পারদর্শিতা দেখে মুগ্ধ হতে হয়।
বিজনের শিক্ষা ও রাজনৈতিক চেতনা তাঁকে বিশ্বসংস্কৃতিকেই নিজের বলে ভাবতে শিখিয়েছিল। তবু দেশজ চিত্রকলার সঙ্গে নিজের সম্পর্ক-স্থাপনের একটা প্রয়াস তাঁর মধ্যে পূর্বাপর দেখা যায়। হয়তো এর মূলে জয়নুল আবেদিন ও কামরুল হাসানের প্রেরণা ছিল। আবার এদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও জনগণের প্রতি আনুগত্যের বোধটি তিনি লাভ করেছিলেন রাজনৈতিক সচেতনতা থেকেও। তাই বিজনের ছবিতে আধুনিক জ্যামিতিক কাজ যেমন দেখি, তেমনি দেখতে পাই পটের ধরন এবং কালীঘাটের চিত্রকলার একটা রূপ। রেনেসাঁসের 888sport live chatীরা যেমন মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তি ফুটিয়ে তুলেছিলেন পেশিবহুল নর888sport promo codeর ছবি এঁকে, বিজনের অনেক ছবিতে আমরা তা পাই। একই ক্যানভাসকে কয়েকটি খোপে ভাগ করে বিজন যেমন করে নর888sport promo codeর এবং তার পশ্চাৎপটের আকার বা অবয়ব ভেঙে দেন, তাও তিনি নেন পাশ্চাত্য 888sport live chatের ঐতিহ্য থেকে। আবার কালীঘাটের চিত্রে যেমন, বিশেষ করে, গুরুভার রমণী দেখা যায়, তার সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গই যেন স্ফীত ও লম্বিত, বিজনের ছবিতে আমরা তা পাই, তুলির মোটা টানে তা বেশ রীতিবদ্ধ হয়ে ধরা পড়ে।
বিজনের ছবির বিষয় কৃষক-মজুর-গৃহস্থ রমণীর জীবন থেকে শুরু করে ইতিহাস ও পুরাণ পর্যন্ত সুবিস্তৃত। তাঁর কিছু কিছু প্রবণতার পরিচয় আমরা পাই ঘোড়া ও মোষের ছবির মধ্যে। তাঁর ঘোড়া আমাদের গাড়িটানা ঘোড়া নয়, ইতিহাস-আগত রীতিমতো যুদ্ধের ঘোড়া, তবে তার সঙ্গে কোথায় যেন আমাদের দেশীয় কাঠের ঘোড়ার রূপ তিনি মিলিয়ে দেন। 888sport promo code ও পুরুষ উভয়কেই তাঁর ঘোড়ার সওয়ার হতে দেখি। তাঁর মোষ জয়নুলের ষাঁড়ের মতো বিদ্রোহী নয়, বরঞ্চ অত্যাচারী। ঘুড়িকে ঘিরে তিনি রচনা করেছেন মানুষের আকাশ ছোঁয়ার স্পর্ধা। আবার তা স্থাপিত হয়েছে 888sport live chatীর বাল্য888sport sign up bonusপ্রণোদিত পটভূমিতে – যেখানে যুবক ও বালকের স্পষ্ট ভূমিকা আছে। 888sport promo codeর নানা রূপ দেখি তাঁর কাজে – ক্রীতদাসী, বিরহিণী, রূপচর্চাকারী, আধুনিকা, বারবিলাসিনী, পুরুষের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী আশ্লেষরতা। তাঁর পুরুষ কোথাও খেটে-খাওয়া মানুষ, উৎপীড়িত, কোথাও বা উৎপীড়নকারী; কোথাও পাখিওয়ালা – হাতের খাঁচায় পাখি, কাঁধের লাঠিতে পাখি; কোথাও জেলে – নৌকার একটা আভাস সেখানে আছে বটে, কিন্তু সর্বাঙ্গে খেলে যাচ্ছে নদীর স্রোত আর নানা আকারের মাছ। বিজনের কাজ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অবয়বধর্মী। কিন্তু তারই মধ্যে তিনি রঙিন কল্পনার জগৎ সৃষ্টি করেন, বিমূর্ততার আভাস এনে দেন।
বিজন চৌধুরী আমৃত্যু সক্রিয় ছিলেন চিত্র888sport live chatে, অনুগত ছিলেন 888sport live chatসত্যের প্রতি, মানুষের প্রতি।
বিজনের সঙ্গে আমার যোগ ছিল ১৯৫১ সাল থেকে – যোগাযোগটা ঘটেছিল আমিনুল ইসলামের মাধ্যমে। ১৯৫৮ সালের প্রায় সিকি শতাব্দী পরে কলকাতায় তাঁর সঙ্গে দেখা হয় ম্যাক্স মুলার ভবনে। আমিনুল, প্রকাশ কর্মকার ও আমি একরাত বিজনের বালীর বাসায় কাটিয়েছিলাম সেবারে। তারপর বেশ ঘনঘনই দেখা হয়েছে কলকাতায় এবং 888sport appয়। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের আর্ট ক্যাম্পে এসে বিজন উচ্ছ্বসিত হতেন, মহা উৎসাহে বড়ো ক্যানভাস নিয়ে ছবি অাঁকতে বসতেন। বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করতেন, নতুন প্রজন্মের অনেকের সঙ্গে পরিচয় করে নিতেন। বড়ো ভালো মানুষ ছিলেন তিনি – একথা সবাই বলবে। শিশুসুলভ সারল্য ছিল, মধুর হাসি ছিল মুখে। ছোটোবড়ো সকলের সঙ্গে অন্তরঙ্গভাবে মিশতেন। 888sport apk download apk latest versionলাভ করার মতো মানুষ ছিলেন বিজন চৌধুরী – জীবনে ও মরণে।