মা এবং সন্তানের মাঝে তুলনা করতে গিয়ে একটা খুব সুন্দর কথা বলা হয়, কথাটা হচ্ছে : ‘কুপুত্র যদি বা হয়, কুমাতা কখনো নয়।’ সন্তানের জন্যে মায়ের ভালোবাসা দিয়েই একটা জীবন শুরু হয় তাই মায়ের উপর এতো বড় একটা বিশ্বাস থাকবে বিচিত্র কী? কুপুত্র এবং কুমাতা নিয়ে এই কথাটা একটু পরিবর্তন করে আমরা 888sport apk আর প্রযুক্তির জন্যে ব্যবহার করতে পারি, কথাটি হবে এরকম : ‘কু-প্রযুক্তি যদি বা হয় কু-888sport apk কখনো নয়।’ যার অর্থ 888sport apkটা হচ্ছে জ্ঞান, প্রযুক্তিটা হচ্ছে তার ব্যবহার। জ্ঞানটা কখনোই খারাপ হতে পারে না, কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে প্রযুক্তিটাও ভয়ংকর হতে পারে। আইনস্টাইন যখন তাঁর আপেক্ষিক তত্ত্ব নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে করতে লিখলেন ঊ = সপ২ তখন তাঁর বুক একবারও আতংকে কেঁপে উঠেনি। কিন্তু দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের শেষের দিকে যখন হিরোশিমা আর নাগাসাকি শহরে নিউক্লিয়ার বোমা এক মুহূর্তে কয়েক লক্ষ মানুষকে মেরে ফেলল তখন সারা পৃথিবীর মানুষের বুক আতংকে কেঁপে উঠেছিল। এখানে ঊ = সপ২ হচ্ছে 888sport apk আর নিউক্লিয়ার বোমাটা হচ্ছে প্রযুক্তি – দুটোর মাঝে যোজন যোজন দূরত্ব।
প্রযুক্তি সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রথমেই একটা কুৎসিত উদাহরণ দিয়ে সবার মন বিষিয়ে দেওয়ার আমার কোনো ইচ্ছা নেই। কিন্তু মানুষ ক্রমাগত 888sport apk আর প্রযুক্তিকে গুলিয়ে ফেলে, কাজেই দুটো বিষয়কে একটু জোর করে হলেও আলাদা করে রাখা ভালো। 888sport apkের একটা গ্রহণযোগ্যতা আছে, আজকালকার ধর্মের বইগুলো দেখলেই সেটা বোঝা যায়। ধর্মীয় কোনো একটা মতকে সাধারণ মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করার জন্যে ফুটনোটে লেখা হয় ‘ইহা 888sport apk মতে প্রমাণিত।’ 888sport apkের এই ঢালাও গ্রহণযোগ্যতাকে ব্যবহার করে প্রযুক্তি যদি ছদ্মবেশে আমাদের জীবনের মাঝে জোর করে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করে তার থেকে আমাদের একটু সতর্ক থাকা উচিত।
এটি কেউ অস্বীকার করবে না, প্রযুক্তির কারণে আমাদের জীবন অনেক সহজ হয়ে গেছে। যোগাযোগ-ব্যবস্থার কথা ধরা যাক, প্লেন-গাড়ি-জাহাজ করে আমরা চোখের পলকে এক দেশ থেকে আরেক দেশে চলে যাই। এক সময়ে প্রকৃতির সাথে আমাদের যুদ্ধ করতে হতো, আজকাল আমরা তার অনেকটাই আমাদের দখলে নিয়ে এসেছি। আজকাল আমাদের দেশেই উচ্চবিত্ত মানুষেরা গরমের দিনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে শীতল হিমেল বাতাসে শরীরকে জুড়িয়ে রাখতে পারেন। এরকম উদাহরণের কোনো শেষ নেই, জীবনকে সহজ করার জন্যে চমৎকার সব প্রযুক্তি, এর বিরুদ্ধে কারো কী কিছু বলার আছে? একটু ঘুটিয়ে দেখলে কেমন হয়?
প্লেন-গাড়ি-জাহাজে (কিংবা কলকার-খানায়) আমরা জ্বালানি তেল বা গ্যাস ব্যবহার করি, সেটাকে পুড়িয়ে তার থেকে শক্তি বের করে এনে সেই শক্তিটাকে ব্যবহার করি। এই শক্তিটাকে ব্যবহার করার জন্যে আমাদের একটা মূল্য দিতে হয়। সেই মূল্যটার নাম হচ্ছে কার্বন ডাই-অক্সাইড। যখনই বাতাসে আমরা কিছু পোড়াই তখনই আমরা কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস তৈরি করি। এটি কোনো বিচিত্র গ্যাস নয়, আমরা নিশ্বাসের সময় ফুসফুসে অক্সিজেন টেনে নিয়ে প্রশ্বাসের সময় কার্বন ডাই-অক্সাইড বের করে দিই। পৃথিবীর সব জীবিত প্রাণী নিশ্বাসে নিশ্বাসে অক্সিজেন টেনে নিয়ে কিংবা কলকারখানা-গাড়ি-প্লেনের ইঞ্জিনে জ্বালানি তেল পুড়িয়ে এক সময়ে পৃথিবীর সব অক্সিজেন শেষ করে ফেলবে তার আশংকা নেই। তার কারণ পৃথিবীর জীবিত প্রাণীর জন্যে প্রকৃতি খুব সুন্দর একটা ব্যবস্থা করে রেখেছে, আমরা নিশ্বাসে যে অক্সিজেন খরচ করে কার্বন ডাই-অক্সাইড তৈরি করে ফেলি, সবুজ গাছপালা সেই কার্বন ডাই-অক্সাইডকে সালোক সংশ্লেষণের ভেতর দিয়ে তাদের খাবার তৈরি করার জন্যে ব্যবহার করে। তাদের খাবার আসলে আমাদেরও খাবার, শুধু যে খাবার তা-ই নয় সালোক সংশ্লেষণের সেই প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে সবুজ গাছপালা কার্বন ডাই-অক্সাইড থেকে সেই অক্সিজেনটা আবার আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়। পৃথিবীতে বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের জন্যে আমরা সবুজ গাছপালার কাছে অসম্ভব রকম ঋণী। সবুজ পৃথিবী শুধু যে দেখতে সুন্দর তা নয় (আমাদের চোখের রেটিনা সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীল এই সবুজ রংয়ে) আমাদের নিশ্বাসের নিশ্চয়তা আসে এই সবুজ গাছপালা থেকে।
পৃথিবীতে বেশি বেশি জ্বালানি পোড়ানোর কারণে অক্সিজেন কমে যাবে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড বেড়ে যাবে সেটি অবশ্যি এখনো দুশ্চিন্তার বিষয় নয়, দুশ্চিন্তার বিষয় আসলে অন্য একটি বিষয়, যারা পৃথিবীর খোঁজখবর রাখেন তারা নিশ্চয়ই সেই বিষয়টির কথা জানেন, বিষয়টি হচ্ছে গ্রিনহাউস এফেক্ট। গ্রিনহাউস জিনিসটির আমাদের দেশে সেরকম প্রচলন নেই, আমাদের দেশে তাপমাত্রা কখনোই খুব একটা বেশি কমে যায় না তাই শীতে গাছপালা বাঁচিয়ে রাখার জন্যে (বা সবুজ রাখার জন্যে) গ্রিনহাউস তৈরি করতে হয় না। শীতের দেশে গ্রিনহাউসের প্রচলন আছে, যেখানে বাইরে কনকনে ঠান্ডা থাকলেও ভেতরে গাছপালাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে একটা আরামদায়ক উষ্ণতা। গ্রিন হাউস ব্যাপারটি আসলে খুব সহজ – একটা কাচের ঘর। সূর্যের আলো কাচের ভেতর দিয়ে গ্রিনহাউসে ঢুকে কিন্তু বের হতে পারে না, তাপটাকে ভেতরে ধরে রাখে। প্রশ্ন উঠতে পারে কাচের ভেতর দিয়ে যেটা ঢুকে যেতে পারে সেটা তো বেরও হয়ে যেতে পারে – তাহলে ভেতরে আটকে থাকে কেন? তার কারণ আলো হিসেবে যেটা কাচের ভেতর দিয়ে গ্রিনহাউসে ঢুকে যায় সেটি ভেতরকার মাটি দেয়াল বা গাছে শোষিত হয়ে যায়। তারপর সেগুলো যখন বিকীরণ করে তখন সেটা বিকীরণ করে তাপ হিসেবে। আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য ছোট বলে সেগুলো কাচের ভেতর দিয়ে চলে যেতে পারে, তাপের তরঙ্গদৈর্ঘ্য লম্বা, সেগুলো কিন্তু কাচের ভেতর দিয়ে যেতে পারে না। তাই আলো হিসেবে শক্তিটুকু গ্রিনহাউসের ভেতরে ঢুকে তাপ হিসেবে আটকা পড়ে যায়।
মানুষ অনেকদিন থেকেই এরকম ছোট ছোট গ্রিনহাউস তৈরি করে এসেছে, কিন্তু গত এক শতাব্দীতে তারা নিজের অজান্তেই বিশাল একটা গ্রিনহাউস তৈরি করে বসে আছে। এই গ্রিনহাউসটি হচ্ছে আমাদের পৃথিবী এবং কাচের ঘর হচ্ছে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস। কাচ যেভাবে গ্রিনহাউসের ভেতরে সূর্যের আলোটাকে তাপে পরিণত করে সেটাকে আটকে রাখে, কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসও হুবহু সেই একই উপায়ে পৃথিবীতে তাপ আটকে রাখে। তাই পৃথিবীর বায়ুম-লে যদি কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে যায় তাহলে পৃথিবীর তাপমাত্রাও বেড়ে যায়। 888sport apkীরা অনুমান করছেন, মানুষের জ্বালানি ব্যবহার করার কারণে বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ প্রায় ১৪ শতাংশ বেড়ে গেছে। তার কারণে এই শতাব্দীর শেষে পৃথিবীর তাপমাত্রা যেটুকু হওয়া দরকার তার থেকে দুই কিংবা তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি হয়ে যাবার আশংকা করছেন। মনে হতে পারে এটি আর এমন কী – কিন্তু আসলে এই দুই/তিন ডিগ্রিই পৃথিবীর অনেক কিছু ওলট-পালট করে দিতে পারে। পৃথিবীর মেরু অঞ্চলে বিশাল পরিমাণ বরফ জমা হয়ে আছে, পৃথিবীর তাপমাত্রা অল্প একটু বাড়লেই সেই বরফের খানিকটা গলে গিয়ে নিচু অঞ্চলকে প্লাবিত করে দেবে। সবার আগে পানির নিচে তলিয়ে যাবে যে দেশটি তার নাম হচ্ছে 888sport apps – তার কারণ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই দেশটির গড় উচ্চতা মাত্র বিশ ফুট। প্লেন-গাড়ি-জাহাজ আর বড় বড় কলকারখানায় জ্বালানি পুড়িয়ে বিলাসী জীবনযাপন করবে পাশ্চাত্যের বড় বড় দেশ আর তার জন্যে পুরো দেশকে পানির নিচে
তলিয়ে দেবার মূল্য দেবে 888sport apps – এর থেকে বড় অবিচার আর কী হতে পারে? প্লেন-গাড়ি-জাহাজ চালানোর মতো নিরীহ একটা প্রযুক্তি পৃথিবীতে কতো বড় সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে কেউ কী খেয়াল করে দেখেছে?
জীবনকে আরামদায়ক করার কথা বলতে গিয়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরের কথা বলা হয়েছিল। শুধু যে ঘর তা নয় ইরাকযুদ্ধের সময় আমরা জেনেছি সাজোয়া বাহিনী জীপ ট্যাংক সবকিছুই এখনই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, যুদ্ধ করার সময় সৈনিকদের আর গরমে কষ্ট করতে হয় না। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের জন্যে যে যন্ত্রপাতি তৈরি করা হয় কিংবা এরোসলে থাকে যে গ্যাস তার নাম ক্লোরোফ্লোরোকার্বন সংক্ষেপে সিএফসি। নিরীহ নামের সিএফসি গ্যাস কিন্তু মোটেও নিরীহ নয়, মানুষের তৈরি এই বিপজ্জনক গ্যাসটি ধীরে ধীরে বায়ুম-লে ছড়িয়ে পড়ছে তারপর উপরে উঠে আমাদের প্রতিরক্ষার যে ওজোন আস্তরণ সেটাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খেতে শুরু করেছে। ওজোন আমাদের পরিচিত অক্সিজেন-পরমাণু দিয়ে তৈরি। আমরা বাতাসের যে অক্সিজেনে নিশ্বাস নিই সেই অণুটি তৈরি হয়েছে দুটি অক্সিজেনের পরমাণু দিয়ে, ওজোন তৈরি হয়েছে তিনটি অক্সিজেনের পরমাণু দিয়ে। অক্সিজেন না হলে আমরা এক মুহূর্ত থাকতে পারি না কিন্তু ওজোন আমাদের জন্যে রীতিমতো ক্ষতিকর। কলকারখানা বা গাড়ির কালো ধোঁয়া থেকে অল্প কিছু ওজোন আমাদের আশেপাশে আছে কিন্তু পৃথিবীর মূল ওজোনটুকু বায়ুম-লে ১২ থেকে ৩০ মাইল উপরে। ওজোনের খুব পাতলা এই আস্তরণটি সারা পৃথিবীকে ঢেকে রেখেছে, সূর্যের আলোতে যে ভয়ংকর আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি রয়েছে ওজোনের এই পাতলা আস্তরণটুকু সেটা শুষে নিয়ে আমাদেরকে রক্ষা করে। ওজোনের এই পাতলা আস্তরণটা না থাকলে আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি সরাসরি পৃথিবীতে পৌঁছে আমাদের সর্বনাশ করে ফেলতো।
কিন্তু সেই সর্বনাশটিই ঘটতে যাচ্ছে সিএফসি দিয়ে। পৃথিবীর বায়ুম-ল দিয়ে ভেসে ভেসে সিএফসি যখন ওজোন আস্তরণে পৌঁছায় তখন একটা ভয়ংকর ব্যাপার ঘটে। আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি সিএফসিকে ভেঙে তার ভেতর থেকে ক্লোরিন নামের একটা গ্যাসকে মুক্ত করে দেয়। এই ক্লোরিন গ্যাস ওজোনের সাথে বিক্রিয়া করে সেটিকে অক্সিজেনে পালটে দেয়। যে ওজোন আমাদের আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি থেকে রক্ষা করতো সেটি না থাকার কারণে পৃথিবীতে সেই ভয়ংকর রশ্মি এসে আঘাত করতে শুরু করেছে। এক শতাংশ ওজোন কমে গেলে পৃথিবীতে দুই শতাংশ বেশি আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি পৌঁঁছাবে আর পৃথিবীর মানুষের ত্বকে ক্যান্সার হবে পাঁচ শতাংশ বেশি। শুধু যে ক্যান্সার বেশি হবে তা নয় মানুষের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে, ম্যালেরিয়া টাইফয়েড – এ ধরনের রোগ হবে অনেক বেশি। গাছপালাও দুর্বল হয়ে যাবে, সহজে বড় হতে চাইবে না। পৃথিবীতে ভয়াবহ একটা দুর্যোগ শুরু হয়ে যাবে।
888sport apkীরা দেখেছেন ওজোনের আস্তরণটুকু ভয়াবহভাবে কমতে শুরু করেছে। শুধু যে কমতে শুরু করেছে তা নয় অ্যান্টার্কটিকার ওপর ওজোনের আস্তরণটি রীতিমতো ফুটো হয়ে গেছে – সেটি ছোটখাটো ফুটো নয়, তার আকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমান। কী ভয়ংকর কথা – আমাদের জীবনযাত্রার একটু বাড়তি আরামের জন্যে এমন একটা প্রযুক্তি বেছে নিয়েছি যেটা পৃথিবীতে প্রাণিজগতের অস্তিত্বকে নিয়েই টান দিয়ে বসেছে। এরকম উদাহরণ কিন্তু আরো অনেক আছে – দিয়ে শেষ করা যাবে না।
888sport apk নিয়ে কোনো সমস্যা হয় না কিন্তু প্রযুক্তি নিয়ে বড় বড় সমস্যা হতে পারে। তার একটা বড় কারণ হচ্ছে 888sport apkকে বিক্রি করা যায় না কিন্তু প্রযুক্তিকে বিক্রি করা যায়। আইনস্টাইন ঊ = সপ২ বের করে একটি পয়সাও উপার্জন করেননি (তাঁর নোবেল প্রাইজটি এসেছিল ফটো ইলেকট্রিক এফেক্টের জন্যে) কিন্তু নিউক্লিয়ার বোমা বানানোর প্রতিযোগিতায় সারা পৃথিবীতে কতো বিলিয়ন ডলার হাত-বদল হচ্ছে সেটি কি কেউ চিন্তা করে দেখেছে? প্রযুক্তি যেহেতু বিক্রি করা যায় তাই সেটি নিয়ন্ত্রণ করে ব্যবসায়ীরা, বহুজাতিক কোম্পানিরা। পৃথিবীতে বহু উদাহরণ আছে যেখানে ব্যবসায়ীরা (বা কোম্পানিরা) তাদের টাকার জোরে একটা বাজে প্রযুক্তিকে মানুষের জীবনে ঢুকিয়ে দিয়েছে। মাত্র কিছুদিন হলো আমরা ভিসিডি-ডিভিডি দিয়ে ভিডিও দেখতে শুরু করেছি। এর আগে ভিডিও দেখার জন্যে আমরা ভিডিও ক্যাসেট প্লেয়ারে ভিএইচএস ক্যাসেট ব্যবহার করতাম। প্রথম যখন এই প্রযুক্তিগুলো বাজারে এসেছিল তখন দুধরনের ভিডিও ক্যাসেট ছিল, একটা হচ্ছে বেটা যেটা ছিল আকারে ছোট, আধুনিক এবং উন্নত। অন্যটি হচ্ছে ভিএইচএস যেটা আকারে বড়, অনুন্নত এবং বদখত। কিন্তু ভিএইচএস ক্যাসেটটি ছিল শক্তিশালী বহুজাতিক কোম্পানি এবং রীতিমতো জোর করে বাজারে ঢুকে সেটি উন্নত বেটা প্রযুক্তিটিকে বাজারছাড়া করে ফেলল। প্রযুক্তির বেলায় দেখা যায় কোনটি উন্নত সেটি বিবেচ্য বিষয় নয়, কোন কোম্পানির জোর বেশি সেটিই হচ্ছে বিবেচ্য বিষয়।
ব্যবসায়িক কারণে শুধু যে নিচু স্তরের প্রযুক্তি বাজার দখল করে ফেলে তা নয় অনেক সময় অনেক আধুনিক প্রযুক্তিকেও ইচ্ছে করে বাক্সবন্দি করে রাখা হয়। এর সবচেয়ে ভালো উদাহরণটি টেলিভিশনকে নিয়ে। বর্তমান পৃথিবীতে টেলিভিশন দেখেনি সেরকম মানুষ মনে হয় একজনও নেই – সবারই নিশ্চয়ই টেলিভিশন নিয়ে একটা নিজস্ব মতামত আছে। তবে টেলিভিশনের যে বিষয়টি নিয়ে কেউ বিতর্ক করবেন না সেটি হচ্ছে তার আকারটি নিয়ে। টেলিভিশনের আকারটি বিশাল। টেলিভিশনের ছবি দেখা যায় সামনের স্ক্রিনটিতে, তাহলে শুধু সেই স্ক্রিনটিই কেন টেলিভিশন হলো না, তাহলে সেটি জায়গা নিত অনেক কম এবং আমরা ছবির ফ্রেমের মতো সেটিকে ঘরের দেয়ারে ঝুলিয়ে রাখতে পারতাম। যারা এসব নিয়ে একটু আধটু চিন্তাভাবনা করেছেন তারা জানেন টেলিভিশনের প্রযুক্তিটি তৈরি হয়েছে ক্যাথড-রে টিউব দিয়ে। এই টিউবে পেছন থেকে টেলিভিশনের স্ক্রিনে ইলেকট্রন ছুড়ে দেওয়া হয়, বিদ্যুৎ এবং চৌম্বকক্ষেত্র দিয়ে সেই ইলেকট্রনকে নাড়াচাড়া করে টেলিভিশনের স্ক্রিনে ছবি তৈরি করা হয়। ইলেকট্রনের আসার জন্যে স্ক্রিনের পেছনে অনেকখানি জায়গা দরকার, টেলিভিশনটি তাই ছোট হওয়া সম্ভব নয়।
কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, আজ থেকে প্রায় ত্রিশ বছর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরসিএ টেলিভিশন কোম্পানির একজন প্রযুক্তিবিদ একটি নতুন ধরনের টেলিভিশন আবিষ্কার করেছিলেন, সেখানে ক্যাথড-রে টিউব ব্যবহার করা হয়নি বলে টেলিভিশনটি ছিল পাতলা ফিনফিনে, ইচ্ছে করলেই দেয়ালে ছবির ফ্রেমের মতো ঝুলিয়ে রাখা যায়। যুগান্তকারী এই নতুন প্রযুক্তিটি মান্ধাতা আমলের অতিকায় টেলিভিশনগুলোকে অপসারণ করার কথা ছিল, কিন্তু সেটি ঘটেনি। আরসিএ কোম্পানি ভেবে দেখল যে তারা প্রচলিত ধারার টেলিভিশন তৈরি করার জন্যে কোটি কোটি ডলার খরচ করে বিশাল ফ্যাক্টরি তৈরি করেছে। এখন এই নতুন ধরনের পাতলা ফিনফিনে টেলিভিশন তৈরি করতে হলে শুধু যে আবার কোটি কোটি ডলার দিয়ে নতুন ফ্যাক্টরি বসাতে হবে তা নয় আগের ফ্যাক্টরিটি অচল হয়ে যাবে। তারা ইতোমধ্যে প্রচলিত টেলিভিশনের একটা বাজার দখল করে রেখেছে সেটা হাতছাড়া হয়ে যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক রকম অর্থনৈতিক ঝামেলা। সবকিছু চিন্তাভাবনা করে প্রযুক্তির এতো চমৎকার একটা আবিষ্কারকে তারা আক্ষরিক অর্থে বাক্সবন্দি করে আবার আগের মতো পুরানো ধাঁচের টেলিভিশন করতে লাগল। সেই 888sport apkী ভদ্রলোকের কেমন আশাভঙ্গ হয়েছিল আমি সেটি খুব পরিষ্কার বুঝতে পারি।
প্রায় দুই যুগ পরে সেই নতুন প্রযুক্তিটি আবার নতুন করে আবিষ্কার করা হয়েছে, আমরা সেটি ল্যাপটপ কম্পিউটারের স্ক্রিনে দেখতে শুরু করেছি। আগামী কিছুদিনের ভেতরে হয়তো টেলিভিশন আকারেও দেখতে পাব, সময়ের বহু পরে!
এতোক্ষণ পর্যন্ত আলোচনাটি হয়েছে এক-চক্ষু হরিণের মতো, প্রযুক্তি সম্পর্কে শুধু নেতিবাচক কথাই বলা হয়েছে, কিন্তু কেউ যেন মনে না করে সেটিই একমাত্র কথা, অর্থাৎ 888sport apkের তুলনায় প্রযুক্তিটি এত তুচ্ছ যে আমরা সব সময়ে সেটিকে শুধুমাত্র উপহাসই করব। প্রথমত আমাদের বর্তমান এই সভ্যতাটি হচ্ছে প্রযুক্তির দেওয়া একটি উপহার। 888sport apkের গবেষণা করতে এখন প্রযুক্তিকে ব্যবহার করতে হয়, শুধু তা-ই নয় কিছুদিন আগে পদার্থ888sport apkের নোবেল 888sport app download bd 888sport apkীদের সাথে সাথে একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারকে দেওয়া হয়েছে! যে যন্ত্রটি দিয়ে পরীক্ষাটি করা হয়েছে তার যান্ত্রিক সমস্যাটির সমাধান করে দিয়েছিলেন বলে পরীক্ষাটি করা সম্ভব হয়েছিল।
আমাদের চারপাশে প্রযুক্তির এত চমৎকার উদাহরণ আছে যে তার কোনো তুলনা নেই। আমরা সবাই ফাইবার অপটিক কথাটি শুনেছি। কাচ দিয়ে তৈরি চুলের মতো সূক্ষ্ম অপটিক্যাল ফাইবারের কোরটুকু এতো ছোট যে সেটি মাইক্রোস্কোপ দিয়ে দেখতে হয়, এই ক্ষুদ্র একটিমাত্র কোরের ভেতর দিয়ে কয়েক কোটি মানুষের টেলিফোনে কথাবার্তা এক সাথে পাঠানো সম্ভব। এই অসাধ্য সাধন তো প্রযুক্তিবিদরাই করেছেন! অপটিক্যাল ফাইবারের ভেতর দিয়ে তথ্য পাঠানোর জন্যে আলোকে ব্যবহার করা হয়। আলোটি যেন কাচের ভেতরে শোষিত না হয়ে যায় সেজন্যে প্রযুক্তিবিদদের কাচটিকে স্বচ্ছ করতে হয়েছে। প্রথমে যখন শুরু করেছিলেন তখন এক কিলোমিটারে আলো শোষিত হতো ১০০০ ডিবি। প্রযুক্তিবিদরা পরিশোধন করে সেটিকে এতো স্বচ্ছ করে ফেললেন যে এখন এক কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবারে আলো শোষিত হয় মাত্র ০.২৫ ডিবি। কাচকে কতগুণ পরিশোধিত করতে হয়েছে সেটি যদি 888sport free bet দিয়ে লিখতে চাই তাহলে ১-এর পরে চারশত শূন্য বসাতে হবে!
(১-এরপরে পাঁচটি শূন্য বসালে হয় লক্ষ, সাতটি শূন্য বসালে হয় কোটি, কাজেই আমি যদি এটিকে কথায় বলতে চাই তাহলে বলতে হবে দশ কোটি কোটি কোটি কোটি … মোট সাতান্নবার!) পৃথিবীর ইতিহাসে এরকম আর কোনো উদাহরণ আছে বলে আমার জানা নেই!
কাজেই প্রযুক্তিকে বা প্রযুক্তিবিদদের কেউ যেন হেলাফেলা না করে। আমাদের নতুন পৃথিবীর সভ্যতাটুকু তারা আমাদের উপহার দিয়েছেন কেউ যেন সেটি ভুলে না যায়। শুধু মনে রাখতে হবে পৃথিবীতে লোভী মানুষরা আছে, অবিবেচক মানুষরা আছে তারা অপ্রয়োজনীয় প্রযুক্তি কিংবা অমানবিক প্রযুক্তি দিয়ে পৃথিবীটাকে ভারাক্রান্ত করে ফেলতে পারে, জঞ্জাল দিয়ে ভরে তুলতে পারে।
পৃথিবীটাকে জঞ্জালমুক্ত করার জন্যে আবার তখন আমাদের 888sport apkী আর প্রযুক্তিবিদদের মুখের দিকেই তাকাতে হবে। তারাই পারবেন আমাদের সত্যিকারের পৃথিবী উপহার দিতে। – ৫.৩.০৪

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.