888sport app download apk latest version : শামসুজ্জামান হীরা
মহিলাটি রান্নাঘরে কফি বানাচ্ছিলেন। এমনকি দিনের বেলায় যখন কাজের লোকেরা থাকে তখনো নিজ হাতে কফি বানাতে তিনি পছন্দ করেন। ভালো কফির গন্ধ তাঁকে প্রশান্তি দেয়। তাছাড়া, রান্নাঘর তাঁর এক নিজস্ব জগৎ। তাঁর স্বামী কখনো সেখানে যান না।
স্বামী তাঁর এখন বসার ঘরে এবং তাঁর কাছে থালাবাটির ঠোকাঠুকিতে তৈরি আওয়াজ অন্য কোনো জগৎ থেকে আসা বলে মনে হচ্ছিল। কাচ লাগানো বইয়ের আলমারি থেকে তিনি একটা বই টেনে নিলেন। সোফায় বসে এলোমেলোভাবে বইয়ের পাতা ওল্টালেন; কিন্তু পড়লেন না কিছুই। বইটিকে তাঁর পাশে রেখে দিলেন।
একটা কাঠের ট্রে দু-হাতে ধরে মহিলা ঘরে প্রবেশ করলেন। কাঠের তৈরি জিনিসের স্পর্শ তিনি উপভোগ করেন। কামরার এক কোনায় রাখা টেবিলে তিনি ট্রে-টা রাখলেন। তারপর সাইড টেবিলের ব্যবস্থা করলেন, একটা তাঁর স্বামীর জন্য অন্যটা নিজের জন্য। স্বামীর দিকে মুখ করে তিনি কফি নিয়ে বসলেন। তিনি দেখলেন স্বামীর দৃষ্টি তাঁর দিকে নয়, তাঁর পাশ দিয়ে অন্য কোথাও অন্য নিবদ্ধ। তিনি যেন তাঁর কফির কাপটি দেখেননি, মহিলা যেন তাঁর কাছে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালেন। কিন্তু না, ছোট্ট এক টুকরো কাগজ মেঝে থেকে কুড়িয়ে নিয়ে নিজ জায়গায় ফিরে গেলেন। তিনি চাইতেন তাঁর বাসা যেন নিখুঁতভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে।
‘আজ রাতের আগ পর্যন্ত চলে যাওয়ার চিন্তা আমাকে ভাবায়নি।’ মহিলা বললেন, এবং তা সত্য নয় জেনেই। তাঁর মন্তব্যটি যে অতি মামুলি, এটা তিনি বুঝতে পারলেন এবং চুপ করে রইলেন।
লোকটা তাঁর দিকে না তাকিয়ে কফির কাপ নিয়ে খেলা করছিলেন। তিনি সবকিছু নিয়েই ভাবছিলেন, আবার কিছু নিয়েই নয়। হঠাৎ তাঁর মধ্যে এক তিক্ততা বোধের জন্ম হলো : স্ত্রী কেন তাঁকে সবসময় বিচার করে? তার নীরব অভিযোগগুলি অন্তত মুখ ফুটে কেন সে বলতে পারে না?
মহিলা ভাবলেন, লোকটাও নিশ্চয়ই চলে যেতে কষ্ট পাচ্ছে। পনেরো বছর কারো জীবনে কম সময় নয়, এবং ঈশ^র জানে, আমি তার জন্য সময়টা খুব সহজ করিনি। হঠাৎ দরদে তাঁর মন ভরে উঠল। তিনি এক প্রীতিকর এবং পবিত্র সংকল্প করলেন। আমি তাকে বুঝতে চেষ্টা করব। আজ রাতে আমি আমার হৃদয় তার সামনে মেলে ধরব। তারপর তিনি স্বামীর কাছে গিয়ে তাঁর বাঁ-হাত তাঁর কাঁধের ওপর রাখলেন : শুতে এসো, পার্টির কোলাহলে তুমি নিশ্চয়ই ক্লান্ত হয়ে পড়েছ।
ভদ্রলোক তাঁর কাপটা রাখলেন, কাঁধের ওপর রাখা তাঁর স্ত্রীর হাত আলতোভাবে সরানোর আগে তাতে মৃদু চাপড় দিলেন। ‘যাও, একটু পরেই আসছি।’ মহিলা তাঁর স্বামীর কণ্ঠস্বরে কেমন অধৈর্যের ভাব লক্ষ করলেন। ভদ্রলোকও বেশ রেগে আছেন এজন্য যে, তাঁর হাত স্থির হচ্ছে না।
আমার হাত দুটো দৃঢ়তা হারাচ্ছে, ভদ্রলোক ভাবলেন। নাকি আমি বেশি পান করে ফেলেছি? না, আমার হাত হঠাৎই দুর্বল হয়ে পড়েছে, খুব দুর্বল। সে আমাকে দেখে হাসছিল। এটা কি আমার দোষ, কোন সে-দোষ? আমি তো কাজটা করতে চাইনি। এটি আমার উদ্দেশ্য কখনোই ছিল না, অনুপস্থিত স্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি জোর দিয়ে বলে চলেছিলেন। ওই ছোকরাটা আমাকে এটা করতে বাধ্য করেছে, তিনি অনিশ্চিতভাবে ফিসফিস করে বললেন, দেয়াল-ঘেঁষে রাখা নিচু একটা কাবার্ডের কাছে গেলেন এবং সেখানে রাখা একমাত্র হুইস্কির বোতলটা তুলে নিলেন। স্কচ, জনি ওয়াকার, জন্মসাল ১৮৪০ এবং এখনো চলেছে জোরপায়ে। তিনি একটু হাসলেন। গ্লাসে ঢাললেন এবং গিলে নিলেন। আরো একবার ঢাললেন, এবং এক ঢোকে গিলে ফেললেন, তারপর ফিরে গিয়ে আসনে বসে বোতলটা পাশে রাখলেন। যা কখনো ঘটেনি তা কেন Ñ বেশ Ñ হয়তো ঘটেছে, কিন্তু তিনি কখনো তা ঘটাতে চাননি Ñ কীভাবে তা এখন তাঁকে পীড়িত করবে?
আফ্রিকায় তাঁর শেষ মাসগুলির কদিন আগ পর্যন্তও তিনি ঘটনাটি ভুলে গিয়েছিলেন। তারপর সে-দৃশ্যগুলি স্বপ্নে দেখা দিতে শুরু করল। দিন এবং রাত দ্রুত চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কল্পনাশক্তি যেন তাঁর আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠছিল। প্রথমে শুধু রাতের বেলাতেই চেহারাটা তাঁর সম্মুখে হাজির হয়েছে। বিছানা তাঁর জন্য এক আতঙ্কে পরিণত হয়েছিল। তারপর, হঠাৎ করেই গত কয়েকদিন প্রকাশ্য দিবালোকে চেহারাটা তাঁর সামনে এসে উপস্থিত হতে শুরু করেছে। ওই লোকটা ছাড়া অন্য যেসব মাউ মাউ১ সন্ত্রাসীকে তিনি নিপীড়ন করেছিলেন, হত্যা করেছিলেন, তারা কেন আসে না?
অবশ্য তিনি জানতেন, ছোকরাটা অন্যদের মতো ছিল না। সে তাঁর ‘শামবা বয়’২ হিসেবে কাজ করত। চমৎকার, ধর্মভীরু, বাধ্য বালক। তার মতো ছেলেদের মধ্যে সে ছিল এক আদর্শ। তিনি ছেলেটাকে ভালোবাসতেন এবং প্রায়ই এটা-সেটা উপহার দিতেন। পুরনো জুতা, পুরনো কাপড় Ñ এরকম কিছু। তাঁর মনে পড়ে, ছেলেটার চেহারায় কৃতজ্ঞতার ছাপ এবং আনন্দের অঙ্গভঙ্গি, কিছুটা মজার মনে হলেও, ওকে কিছু দেওয়াটা সার্থক করেছিল। এই যে এখানকার মানুষদের জন্য কিছু করার অনুভূতি, এটাই অন্য অনেক অপ্রিয় জিনিসকে সহনীয় করে তুলত। এখানে, আফ্রিকায়, মনে হতো যেন বা কিছু করা হচ্ছে যার ফল দৃশ্যমান, অনুভব করা যায় তেমন কিছু একটা, এমন কিছু যা সহসাই প্রশংসার দাবি রাখে। ইউরোপের মতো নয়, যেখানে তুমি কী করছ, কেউ তা নিয়ে ভাবছে বলে মনে হয় না, সেখানে পূর্ব লন্ডনের দরিদ্ররা পর্যন্ত তাদের দেওয়া সুবিধা কাজে লাগাত না। কল্যাণরাষ্ট্র। ধুশ-শ-শ-শ! এ-ধরনের ভাবনা তাঁকে একটা ধারণা দেয় যে, ছেলেটা চাকরের থেকে বেশি কিছু একটা ছিল। ছেলেটার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল অনেকটা পিতৃসুলভ … দায়িত্বশীল, এবং ছেলেটা যেন তাঁরই। এক বড়দিনে হঠাৎ ছেলেটা উপহার হিসেবে দেওয়া লং কোট এবং দশ শিলিং তাঁর দিকে ছুড়ে মারে। উচ্চস্বরে হেসে ওঠে এবং চাকরি ছেড়ে দেয়। অনেকদিন পর্যন্ত তিনি সেই অট্টহাসি ভুলতে পারেননি। এটা তিনি মাফ করে দিতে পারতেন। কিন্তু ছেলেটার অন্তর্ধানের খবরে তাঁর স্ত্রীর চেহারায় যে শোক এবং যন্ত্রণার চিহ্ন ফুটে উঠেছিল তাতে অন্য কিছুর আভাস ছিল। এজন্য তিনি কখনোই ছেলেটাকে ক্ষমা করতে পারেননি। পরে যখন মাউ মাউ যুদ্ধ শুরু হলো, একজন স্ক্রিনিং অফিসার হিসেবে ছেলেটার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়।
বহু বছরের সংযম এবং বাহ্যিক সম্মানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যই যেন তিনি অনবরত মদ্যপান করে চললেন। ছাদ, মেঝে, চেয়ারগুলি যেন বাতাসে সাঁতার কাটছিল। নিজেকে নিজেই বোঝালেন, কিছুক্ষণ গাড়ি চালিয়ে এলে আমি ভালো বোধ করব, অল্প কিছুক্ষণের জন্য হলেও; সেই ছেলেটার বিদ্রƒপের হাসিকে পরোয়া
না-করে স্খলিত পায়ে তিনি বেরিয়ে গেলেন।
তিনি গাড়িতে উঠলেন। গাড়ির হেডলাইটের আলো অন্ধকার ঠেলে দূরে সরিয়ে দিলো। কোথায় যাচ্ছেন তিনি জানতেন না। তিনি নিজেকে যেন পথের মর্জির ওপর ছেড়ে দিলেন। কখনো কখনো কোনো পরিচিত গাছ বা সাইনপোস্ট তিনি চিনতে পারছিলেন, পরমুহূর্তেই তিনি প্রায় চেতনা হারিয়ে ফেলছিলেন এবং অন্ধের মতো গাড়ি চালাচ্ছিলেন। এভাবে কখনো তন্দ্রা, কখনো জাগরণের মাঝে নিজেকে স্টিয়ারিং হুইল ধরে রেখে গাড়ি চালাতে হয়। তিনি সংকীর্ণ বাঁক এবং কোনা এড়িয়ে বিপরীত দিক থেকে আসা একটা কি দুটো গাড়ির সঙ্গে আশ্চর্যজনকভাবে সংঘর্ষ এড়িয়ে গাড়ি চালাতে থাকলেন। আমি কী করছি? আমি পাগল, তিনি বিড়বিড় করে বললেন, এবং অপ্রত্যাশিতভাবে রাস্তা ছেড়ে ডান দিকে গাড়ির গতিপথ পরিবর্তন করলেন। রেলক্রসিংয়ের কাছে ধাবমান ট্রেনের সঙ্গে অল্পের জন্য সংঘর্ষ এড়াতে সক্ষম হলেন। ঘাসের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে তিনি বনের মধ্যে ঢুকে পড়লেন। প্রচণ্ড ঝাঁকুনি, কাটা গাছের গুঁড়ির সঙ্গে ঘষা লাগিয়ে আবারো আশ্চর্যজনকভাবে একটা গাছের সঙ্গে সরাসরি ধাক্কা খাওয়া থেকে রক্ষা পেলেন তিনি। আমাকে এসব বন্ধ করতে হবে, তিনি ভাবলেন, এবং তিনি যে এখনো মানসিক ভারসাম্য হারাননি এটা প্রমাণ করার জন্য কড়া ব্রেক কষে আকস্মিকভাবে গাড়িটাকে থামালেন।
অন্ধকারের মধ্যে তিনি কারো ধর্মীয় কৃত্যের আওয়াজ পেলেন। কোথায় যেন পড়েছিলেন, প্রথম দিকের কিছু কিছু ইউরোপীয় বসতি স্থাপনকারী তাদের অভিশাপ মোচনের জন্য আফ্রিকান তান্ত্রিকদের কাছে যেত। তিনি এগুলিকে যুক্তিবিরুদ্ধ বিবেচনা করতেন : কিন্তু কী হলো এখন তাঁর, এখন যা তিনি দেখতে পাচ্ছেন তা নিশ্চয়ই যুক্তির স্বাভাবিক নিয়মের বিরুদ্ধে কাজ করছে। না, তিনি এখানে এই অন্ধকারে তাঁর মধ্য থেকে দৃষ্টিবিভ্রম ঝেড়ে দূর করবেন। ধারণাটা আকর্ষণীয় এবং তাঁর এ-অবস্থায় অপ্রতিরোধ্য। আফ্রিকা তোমার সঙ্গে এটা, ন্যাংটো করে, তিনি গা থেকে কাপড় খুলে ফেলতে ফেলতে ভাবলেন। টলতে টলতে গাড়ি থেকে নেমে বনের মধ্যে কিছুদূর পর্যন্ত হেঁটে গেলেন। অন্ধকার এবং জঙ্গলের গা ছমছম-করা গুঞ্জনধ্বনি তাঁর চারদিকে বেজে চলেছিল। তিনি ভয় পেলেও উঠে দাঁড়ালেন। এরপর কী? তিনি আফ্রিকার জাদু সম্পর্কে কিছু জানতেন না। নিজ বাড়িতে কিছু অবাস্তব জিনিস সম্পর্কে তিনি জেনেছিলেন, যেমন ফেয়ারি ফোক৩, রোয়ান ট্রিজ৪, স্টোলেন বেবিজ৫ এবং কেলপিজ৬। তিনি পড়েছেন বা শুনেছেন, কারো ক্ষতি করতে চাইলে তুমি তার একটি মোমের মূর্তি বানাও এবং গভীর রাতে তার চোখে পেরেক বিঁধিয়ে দাও। তাঁকে হয়তো এমনটি করতে হবে, তিনি তাঁর সাবেক শামবা বয়ের একটা মূর্তি বানিয়ে তার চোখ ফুটো করে দেবেন। তারপর তাঁর খেয়াল হলো, তিনি তো সঙ্গে করে মোম আনেননি। তখন তিনি একা বনের মধ্যে উন্মত্তের মতো নাচতে লাগলেন। না, এতে কোনো কাজ হবে না, তিনি ভাবলেন। অন্ধকারের বিষয়গুলি নিয়ে তিনি লজ্জিত হলেন। আমি জানতে চাই, কী এমন ঘটল যে আমার স্ত্রী আমাকে দেখে হাসে। তিনি গাড়িতে ফিরে গেলেন, এটা খুঁজে বের করার প্রত্যাশা নিয়ে যে, কেনিয়াসহ সর্বত্র কেন সবকিছু ভেঙে পড়ছে। তিনি কখনোই ভাবেননি যে, একটা সময় আসবে, যখন সরকার তাঁকে অবসরে পাঠাবে এবং তাঁর বদলে একজন কৃষ্ণাঙ্গকে তাঁর জায়গায় বসাবে। কী লজ্জার বিষয়! এবং তাঁর স্ত্রী তাঁর দিকে ওই দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। প্রথমটার থেকে আরো অপ্রতিরোধ্য একটি চিন্তা এখন তাঁকে আচ্ছন্ন করল। আমি আমার স্ত্রীকে লিখব। আমি সারা দুনিয়াকে লিখব। তিনি একটা নোটবই বের করলেন এবং ক্ষিপ্ত হয়ে লিখতে শুরু করলেন। লেখার অনুপ্রেরণা ইতোমধ্যে ভেতর থেকে তাঁকে হালকা এবং চনমনে করে তোলে। গাড়ির ভেতরের নিষ্প্রভ আলো কাগজের পাতায় পড়ছিল, কিন্তু তিনি কিছু মনে করলেন না, কেননা শব্দগুলি, ধারণাগুলি সব তাঁর মাথায় ছিল, তিনি তাঁর জীবনটাকে কাটাছেঁড়া করে পরীক্ষা করতে চাইলেন, সেইসঙ্গে নিজেকে রক্ষা করতে চাইলেন তাঁর স্ত্রী ও পৃথিবীর কাছ থেকে।
… আমি জানি, তুমি আমাকে ওই মুখটির সামনে কাঁপতে দেখেছ। আমাকে আঘাত দিতে পারে, তুমি সম্ভবত সেজন্য কোনো মন্তব্য করতে চাওনি। কিন্তু তুমি সবসময়ই আমাকে দেখে হেসেছ, হাসোনি? অস্বীকার করতে চাও? আমি তোমার চোখে এবং তাকানোর মধ্যে এটা দেখেছি। আমি জানি, তুমি আমাকে ব্যর্থ ভাব। আমি জ্যেষ্ঠ জেলা কর্মকর্তার৭ ওপরে উঠতে পারিনি। আফ্রিকা আমার সর্বনাশ করেছে, কিন্তু কখনো আমি সত্যিকার অর্থে কোনো সুযোগ পাইনি। আহ্, তোমার নীল চোখ নিয়ে ওভাবে আমার দিকে তাকিয়ো না, ভাবখানা এমন যে, আমি তোমাকে মিথ্যা বলছি। হতে পারে, তুমি বলছ, সব মানুষেরই একটা সময় থাকে। ঠিক আছে, আমি এটাকে উপেক্ষা করেছি। কিন্তু সেই সময়টাই বা কি ছিল? আহ্, আমি ক্লান্ত।
তিনি থামলেন এবং যা তিনি লিখেছিলেন তাতে চোখ বুলালেন। আরেক পাতা ওল্টালেন। তরঙ্গের মতো অনুপ্রেরণা আসতে শুরু করল। যা প্রকাশ পাওয়ার জন্য ব্যাকুল ছিল, তার হাতের গতি তা লেখার জন্য যথেষ্ট ছিল না।
… খারাপ কী ঘটল? আমি নিজেকে প্রশ্ন করে চলি। এটা কি ভুল ছিল, আমাদের পুঁজি, আমাদের জ্ঞান আর আমাদের বহু বছরের খ্রিষ্টীয় সভ্যতার সাহায্যে আমরা একটা অন্ধকার দেশকে আলোকিত করতে এবং ইতিহাসের মঞ্চে তুলে ধরতে চেয়েছিলাম। আমি আমার ভূমিকা পালন করেছি। আমার চাকরিতে উন্নতি ধীরে হয়েছিল, তাতে কী এসে-যায়?
উত্থান-পতন ছিল, তাতেই বা কী
এসে-যায়? অনেক হতাশাজনক মুহূর্ত ছিল। যে কুঁড়েঘরগুলি আমরা পুড়িয়ে দিয়েছিলাম, সেগুলির কথা আমার মনে পড়ে। এসব সত্ত্বেও আমি নিজেকে প্রশ্ন করি : আমি কি এত নিচে নেমেছিলাম? শেষ পর্যন্ত কুঁড়েঘরে আগুন লাগানো, এবং বেশি বেশি কুঁড়েঘর পোড়ানোর মধ্যে আমার জীবন কি সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছিল? আমার জীবন কি এক কানাগলিতে এসে ঠেকেছিল? এবং তা সত্ত্বেও আমরা চাই না যে, বহু বছরে এবং বহু প্রাণের বিনিময়ে যা গড়ে উঠেছে, পশ্চাৎগামী সহিংসতা তা ধ্বংস করে দিক। আমি যখন হতাশার শেষ সীমায় নিমজ্জিত তখন আমার দেখা হয় সেই ছেলেটার সঙ্গে Ñ আমাদের মালি, সেই শামবা বয়। তোমার কি তাকে মনে আছে? যে আমার দেওয়া উপহার ছুড়ে ফেলেছিল এবং নিরুদ্দেশ হয়েছিল, হয়তো বনে? চেহারায় সেই দানব Ñ দানবের মতো অবজ্ঞাভরা হাসি নিয়ে সে অফিসে দাঁড়িয়েছিল। তোমার জন্য যখন সে কাজ করত তখনকার
ভৃত্যসুলভ বিনয়ী চেহারা তার আর ছিল না। আমার ওপর সে তার সেই অদ্ভুত প্রভাব ফেলেছিল Ñ তোমাকে যে দুঃখ সে দিয়েছে, যখন সে-কথা মনে হলো – বুঝলে – আমার ভেতরটা রাগে টগবগ করতে লাগল Ñ আগে কখনো যা অনুভব বোধ করিনি তেমন এক ভয়ংকর ক্রোধ Ñ আমি ছেলেটার সেই অবজ্ঞার বাঁকা হাসি সহ্য করতে পারছিলাম না। আমি উঠে দাঁড়ালাম এবং তার মুখের ওপর থুথু ছিটালাম। বাঁ-হাতের চেটো দিয়ে থুথু মোছার সময়েও তার চেহারা থেকে সেই উদ্ধত চাহনি দূর হলো না। আশ্চর্য নয় কী, আমি তার নাম এখন ভুলে গেছি, আসলেই আমি কি তার নাম কখনো জানতাম? তুমিও কি জানতে? আমার শুধু মনে আছে, সে ছিল শামবা, এবং সেখানে, অফিসে তার চোখে সহিংসতা দেখেছিলাম। তাকে আমি ভয় পেয়েছিলাম। তুমি এটা বিশ^াস করতে পারো? আমি, এক কালো মানুষের ভয়ে ভীত? আমার সাবেক মালিকে ভয় পাই? তারপর কী ঘটল, আমি মনে করতে পারছি না, আমি ব্যাখ্যা করতে পারছি না, আমি নিজের মধ্যে ছিলাম না, আমি শুধু লোকটার চেহারা দেখছিলাম। রাতে, সকালে আমি তার দেঁতো হাসি, অবজ্ঞার হাসি, উদ্ধত উপেক্ষা দেখে আসছি। সে কিছুই স্বীকার করবে না। আমি হুকুম দিলাম। তাকে বনে নিয়ে যাওয়া হলো। সে-ই তাকে আমার শেষ দেখা …
তিনি প্রচণ্ড ক্রোধে লিখলেন; খণ্ড খণ্ড ছবির মিছিল চলল, মিলেমিশে গেল, ঠোকাঠুকি লাগল : যেন তিনি কিছুদিন আর বাঁচবেন, এবং তাঁর আত্মাকে কিছু একটা থেকে পরিশুদ্ধ করতে চাইছেন। ফাঁসিতে ঝুলে পড়ার আগে যেন পুরোহিতের কাছে স্বীকারোক্তি। তিনি এখন কাঁপছেন। কিন্তু এখনো তিনি ঘোরে আচ্ছন্ন –
… আমি এগুলি তোমার কাছে লিখছি, এই বনে আমি একা, এবং জগতেও। আফ্রিকাকে বিদায় জানিয়ে আমি ইংল্যান্ডে তোমার সঙ্গে এক নতুন জীবন শুরু করতে চাই …।
এবং এখন তিনি আবিষ্কার করলেন, তাঁর পরনে কোনো কাপড় নেই এবং তাই তিনি এমনভাবে কাঁপছেন। তিনি তাঁর নগ্নতার জন্য লজ্জা পেলেন এবং দ্রুত কাপড় পরে নিলেন। কিন্তু তাঁর স্বীকারোক্তি লিখে রাখাটা চালিয়ে যেতে পারলেন না, এবং তা পড়তে ভয় পেলেন, যদি কখনো তিনি তাঁর মত পাল্টে ফেলেন। মদের ঘোর তাঁর অনেকটাই কেটে গেছে, কিন্তু আজ রাতে তাঁর স্ত্রীর কাছে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করার সম্ভাবনায় তিনি খুব উত্তেজিত।
স্ত্রী তখনো ঘুমাননি। তিনিও তাঁর স্বামীর অপেক্ষা করতে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যেন আফ্রিকার শেষ রাত্রিটি তাঁরা একসঙ্গে ভাগ করে নিতে পারেন। বিছানায় শুয়ে তিনি তাঁর জীবনের সুদূর অতীতের দিনগুলিতে চলে গেলেন, স্বামীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা মনে এলো। প্রথমে, কেনিয়ায় তাঁদের শুরুর দিকের দিনগুলিতে তিনি সভ্যতা প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁর স্বামীর প্রবল আগ্রহ এবং উচ্চাভিলাষের ব্যাপারে উৎসাহী হতে চেষ্টা করেছেন। তিনি নিজেও তাঁর ভূমিকা পালন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন, জীবনকে একটা উদ্দেশ্য দিতে চেয়েছিলেন। তিনি পাহাড়চূড়ার 888sport promo codeদের কিছু সভায় যোগ দেন, আধো আধো সোয়াহিলি বলাও শিখে ফেলেন। তারপর তিনি আফ্রিকাকে বুঝতে চেষ্টা করেন, এর কেন্দ্র স্পর্শ করতে চান, আঙুলের ওপর বিশাল এই মহাদেশের স্পন্দন অনুভব করতে চান। সেই দিনগুলিতে তাঁরা ছিলেন ঘনিষ্ঠ, তাঁদের হৃৎস্পন্দন মনে হতো একসঙ্গে চলছে। কিন্তু সময় গড়িয়ে গেলে তাঁর স্বামী ক্রমশ দূরে সরে যেতে থাকেন। তিনি তাঁর শুরুর উৎসাহটা হারিয়ে ফেলেন : যে ধারণাগুলি আগে এতো উজ্জ্বল হয়ে দেখা দিত, সেগুলি এখন তাঁর চোখে ঝাপসা ও বিবর্ণ হয়ে ধরা পড়ে। কাউকে সভ্য করার জন্য তাঁরা কে? সভ্যতা জিনিসটা আসলে কী? এবং যত দ্রুত তাঁর স্বামী মই বেয়ে ওপরে উঠতে চেয়েছিলেন তত দ্রুত উঠতে পারেননি, এজন্য কি তিনি বিরক্ত হয়েছিলেন? এই মরচেধরা জিনিসটার ওপর তিনি কিছুটা অধৈর্য হয়েছিলেন, যা তাঁর স্বামীকে দূরে নিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু তিনি তাঁকে বিরক্ত করেননি, তাঁর পেশাগত উন্নতির ক্ষতি করতে চাননি। তাই তিনি পার্টিতে গেছেন, খুচরো আলাপ সেরেছেন, এবং মনে মনে কাঁদতে চেয়েছেন। তাঁর কি বলা উচিত ছিল, তাহলে, তিনি এখন চিন্তা করছেন বিছানায় এপাশ-ওপাশ গড়াগড়ি করে, এতো রাতে স্বামীর গাড়ি চালানো নিয়ে উদ্বেগ বোধ করে। তিনি গ্রামের জমায়েতে যাওয়া বন্ধ করলেন। একা থাকতে চাইলেন। তিনি আফ্রিকাকে বুঝতে চাইলেন না। কেন চাইবেন? ইউরোপ, বা অস্ট্রেলিয়া – যেখানে তিনি জন্মেছেন, সেসব দেশ সম্পর্কে জানতে তো চেষ্টা করেননি। না। তোমার ছোট তালুতে একটা মহাদেশের অর্থ কখনোই তুমি জানার আশা করতে পার না, তুমি শুধু ভালোবাসতে পার। তিনি নিজের মতো করে তাঁর জীবন যাপন করতে চাইলেন, কারো উঁচুতে ওঠার সহায়তাকারী হিসেবে নয়, যা জীবনের পূর্ণতার প্রতিশ্রুতি দেয় না।
তাই তিনি একাকী গ্রামের দিকে হাঁটতে বেরোতেন। বাচ্চাদের যখন খেলা করতে দেখতেন, ভাবতেন একটা বাচ্চা পেলে তাঁর কেমন লাগবে। কখন তার প্রথম আবির্ভাব হবে এই অদ্ভুত জগতে? ঘন কলার ঝাড় এবং নির্জন ঝোপ ও বন দেখে তিনি বিস্মিত হতেন। এটা ছিল ইমার্জেন্সির ঘোষণার ঠিক আগে, যখন নির্ভয়ে একাকী যে-কোনো জায়গায় যাওয়া যেত।
এমনই এক বেড়ানোর দিনে, কলাগাছের ঘন ঝাড়ের আড়ালে সেই ছেলেটা তাঁর সঙ্গে যৌনলীলায় লিপ্ত হয়। মুক্তি। এবং এরপর তাঁদের উন্মাতাল যৌন মিলন তাঁকে তাঁর স্বামী ও 888sport app জেলা কর্মকর্তা থেকে চূড়ান্তভাবে বিচ্ছিন্ন করে।
ঘরে ফিরে ভদ্রলোক দেখলেন তাঁর স্ত্রী তখনো ঘুমাননি। নিরুত্তাপ নির্লিপ্ততা নিয়ে তিনি তাঁর বিছানার দিকে এগোলেন। বাতি জ্বালালেন না, কোনো কথা না বলে বিছানার পাশে বসলেন।
`এতক্ষণ কোথায় ছিলে?’
`ড়ি নিয়ে একটু বেরিয়েছিলাম, শেষবারের মতো পুরনো জায়গাগুলি দেখতে।’
`বেশ, এখন বিছানায় এসো। হা ঈশ^র, তোমার শরীর কী ঠান্ডা! আর এখানে আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছি আমাকে উষ্ণতা দেবে বলে।’
`তুমি তো জানো, রাতের বেলা সবসময়ই কনকনে ঠান্ডা থাকে।’
`এসো তাহলে।’
তাঁর মনে হলো, এই অন্ধকারে তাঁকে এখন তাঁর প্রেমিক সম্পর্কে বলতে হবে। তিনি তাঁর স্বামীর চেহারার দিকে তাকাতে চাইলেন না, যদি তাতে তিনি মত পরিবর্তন করে ফেলেন। কথা শুরু করার একটা পথ বের করার জন্য তিনি তাঁর স্বামীর মাথায় হাত বোলাতে লাগলেন। এখনই। তাঁর হৃৎপিণ্ড ধুকপুক করছে। তিনি কি ভয় পেয়েছেন?
`আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই।’ স্বামীর মাথা থেকে তিনি তাঁর হাত সরালেন এবং থামলেন, পরের শব্দগুলি বেরিয়ে আসতে চাইছিল না। ‘তুমি কি আমাকে মাফ করবে?’
`অবশ্যই করব, সবকিছুই।’ তাঁর গলায় অধৈর্য। নোটবইয়ে অসঙ্কোচে যা কিছু তিনি লিখেছেন তার থেকে বেশি আর কী তাঁর স্ত্রী বলতে পারেন। তিনি স্ত্রীকে বলতে চাইছিলেন, কীভাবে তিনি তাঁর জীবন থেকে সেই মালি ভূতটাকে ঝেড়ে ফেলেছিলেন। তিনি অপেক্ষা করছিলেন এই আশা নিয়ে যে, তাঁর স্ত্রী দ্রুত তাঁর কথা শেষ করবেন। তাঁর ইচ্ছা ছিল তাঁকে নোটবইটা দেওয়ার এবং বাথরুমে গিয়ে তাঁকে ওটা পড়তে সময় করে দেওয়ার, যাতে তিনি তাঁর নগ্ন আত্মাটাকে দেখতে পান।
‘অবশ্যই আমি তোমার যে-কোনো কিছু ক্ষমা করতে পারি,’ উৎসাহ দেওয়ার ভঙ্গিতে তিনি বললেন। ‘বলো’, তিনি অন্ধকার ঘরে মৃদুভাবে ফিসফিসিয়ে বললেন।
তিনি তাঁর স্বামীকে সেই শামবা বয় সম্পর্কে – তাঁর প্রেম সম্পর্কে বললেন।
স্বামী শুনলেন এবং তাঁর মনে হলো, শরীর থেকে যেন তাঁর সব শক্তি ও রক্ত উবে যাচ্ছে।
তিনি কি তাঁর স্ত্রীকে ক্ষমা করবেন? তাঁর স্ত্রী কেবল মালিটার সঙ্গে একটা নতুন জীবন শুরু করতে চাইছিল। স্ত্রী তাঁর কথা শেষ করলেন। তাঁর কণ্ঠস্বর অন্ধকার নীরবতায় মিলিয়ে যাচ্ছিল। তিনি নিজের হৃৎপিণ্ডের শব্দ শুনছিলেন, তাঁর স্বামীর কথা শোনার জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
কিন্তু তাঁর স্বামী কিছু বললেন না। কেমন এক অসাড়তা তাঁর সারা দেহের কোষে কোষে নিঃশব্দে ঢুকে পড়েছিল, ঢুকে পড়েছিল তাঁর চেহারায়, তাঁর অন্তরে। লোকটা। তাঁর মালি। একটা উত্তরের জায়গায় উঠে দাঁড়ালেন এবং দরজার দিকে হাঁটা দিলেন।
`লক্ষ্মী সোনা, প্লিজ!’ তিনি বলে উঠলেন। প্রথমবারের মতো তাঁর স্বামী কোনো কথা না বলায় অন্ধকার এক আতঙ্ক তিনি অনুভব করলেন। ‘যেও না। এটা অনেক দিন আগের ঘটনা, ইমার্জেন্সিরও আগে।’
কিন্তু তিনি হেঁটে চললেন, দরজা পেরিয়ে বসার ঘরে গিয়ে থামলেন। আগে যেখানে বসেছিলেন সেই সোফায় তিনি ঠিক আগের মতো বসলেন। তিনি শেষ না-করা কফির কাপে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আঙুল চালাতে লাগলেন।
ব্রিটিশ পুঁজিবাদের সেবায় নিয়োজিত তাঁর সব নৈতিক আদর্শের দৃষ্টিকোণ থেকেই তিনি ছিলেন এক ব্যর্থ মানুষ। তিনি কখনো নিজেকে অন্য কোনো আলোকে না দেখে একজন উপযুক্ত স্বামী হিসেবেই দেখেছেন। একজন মানুষ বা স্বামী হিসেবে তাঁর স্ত্রীর সততা সম্পর্কে সন্দেহ করার মতো কোনো কারণ তাঁর নিজের মধ্যে ছিল না কখনো। তাহলে কী করে, এই স্ত্রীলোকটা, তাঁর স্ত্রী, পারল ওই লোকটার সঙ্গে শুতে, ওই জীবটার সঙ্গে? নিজেকে কীভাবে সে এতো সস্তা করতে পারল? তাঁর হাজার বছরের নাম কাদায় টেনে নামাল, এমন জঘন্য কাদায়?
দীর্ঘদিন ধরে তিনি একটা স্বপ্নের পেছনে ছুটছিলেন। চারপাশের বাস্তবতা সত্ত্বেও তিনি স্বপ্নকে হারিয়ে যেতে দেবেন না। তাঁর ঔপনিবেশিক লক্ষ্য এবং চূড়ায় ওঠার সাধ থেকে তিনি তাঁর ঘরকে অবহেলা করেছেন এবং অন্য আরেকজন এসে তা দখল করেছে। এটাতে, সম্ভবত তিনি একা ছিলেন না। কিন্তু তিনি কী করে তা জানতে পারবেন, যখন তিনি একটি ঘরের মাঝখানে বসে আছেন এবং ফাঁকা দেয়ালগুলি তাঁর দিকে চেয়ে আছে? কফির কাপটা তাঁর হাত থেকে পড়ে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল। তিনি উঠে দাঁড়ালেন এবং ঘরের মধ্যে হাঁটাহাঁটি করলেন, ধীর পায়ে, কোনো কিছুর দিকে না তাকিয়ে, না গতকাল, না আগামীকাল, কোনোকিছুর দিকেই তাকালেন না। তারপর তিনি নোটবইটা তুলে নিলেন এবং এর ভেতরের একটা পাতায় চোখ মেললেন :
আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ মানুষকে তার পরিবারের ভেতর এবং সমাজের সর্বত্র নৈতিকতার একটা অতি কঠোর বিধি গ্রহণ করা উচিত। কারণ আমাদের এমন নীতি-আদর্শ স্থাপন করতে হবে, যা আমাদের আফ্রিকান প্রজারা স্পর্শ করতে চাইবে।
তিনি নোটবইটা বন্ধ করলেন এবং রান্নাঘরের দিকে হেঁটে গেলেন, যেখানে আগে কখনো তিনি যাননি। একটা ম্যাচ নিলেন এবং কাঠি ঠুকে আগুন ধরালেন। নোটবইটাকে তিনি আগুনে পুড়তে দেখলেন। আগুনের শিখা দেখলেন, দেখলেন তাঁর মাংস পুড়ছে, কিন্তু তিনি কোনো যন্ত্রণা বোধ করলেন না, কিচ্ছু না। লোকটার ভূত তাঁকে চিরকাল তাড়িয়ে বেড়াবে। আফ্রিকা।
লেখক-পরিচিতি
কেনিয়ার লিমুরু শহরের কাছে কামিরিথুতে ৫ই জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গ’ওর জন্ম। ঔপনিবেশিক আমলে ব্যাপটাইজ করে তাঁর নাম রাখা হয়েছিল জেমস নগুগি।
তিনি উগান্ডার ম্যাকেরেরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৩ সালে ইংরেজিতে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬২ সালে তাঁর লেখা ঞযব ইষধপশ ঐবৎসরঃ নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। ইংল্যান্ডের লিডস বিশ^বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে ১৯৬৪ সালে তাঁর প্রথম 888sport alternative link ডববঢ় ঘড়ঃ, ঈযরষফ প্রকাশিত হয়। এটা কোনো পূর্ব আফ্রিকান লেখকের ইংরেজিতে লেখা প্রথম 888sport alternative link। ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর সাড়া জাগানো 888sport alternative link অ এৎধরহ ড়ভ ডযবধঃ। এই 888sport alternative linkে ফ্যানোনিস্ট মার্কসিজমের প্রতি তাঁর আগ্রহ লক্ষ করা যায়। প্রচণ্ড বর্ণবাদ ও উপনিবেশবাদবিরোধী একজন লেখক হিসেবে তিনি বিশ^ব্যাপী খ্যাতি লাভ করেন। তিনি ইংরেজি ভাষা, খ্রিষ্টধর্ম এবং তাঁর নাম জেমস নগুগিকে ঔপনিবেশিক ক্ষতচিহ্ন আখ্যা দিয়ে যেসব ত্যাগ করেন এবং ফিরে যান নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গ’ও নামে; লেখালেখিও করতে থাকেন মাতৃভাষা গিকুয়ু এবং সোয়াহিলিতে।
স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে লেখালেখি ও নাটক মঞ্চায়নের কারণে তাঁকে কারাবরণ করতে হয়। বৎসরাধিককাল কারাবাসের পর তিনি দেশত্যাগ করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন।
বর্তমানে তিনি আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, অ্যার্ভিনের ‘ইংরেজি ও তুলনামূলক 888sport live football’-এর একজন বিশিষ্ট অধ্যাপক (Distinguished Professor)।
‘বিদায় আফ্রিকা’ গল্পটি তাঁর FIGHTERS AND MARTYRS গল্পগ্রন্থ থেকে নেওয়া ‘GOODBYE AFRICA’ গল্পের 888sport app download apk latest version।
টীকা
১. Mau Mau : ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে কেনীয়দের স্বাধীনতা সংগ্রামের সশস্ত্র সংগঠন।
২. মালি, সোয়াহিলি ভাষা।
৩. Faerie Folk, জার্মানি, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ইত্যাদি দেশের লোকগাথা।
৪. Rowan Trees, স্কটল্যান্ডের লোককাহিনি।
৫. Stolen Babies, আয়ারল্যান্ডের লোককথা।
৬. Kelpies, স্কটল্যান্ডের লোককাহিনি।
৭. Senior D.O।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.